টান BY (ডিমপুচ) (পর্ব-১৮)

টান

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-১৮
—————————

oct. এর প্রথম দিকে প্রণব সপরিবারে দিল্লি বেড়াতে এলো , প্রধানত পূবার সাথে দেখা করবে আর মেয়েদের আগ্রা দেখাবে। দীপুই এয়ারপোর্ট এ রিসিভ করে নিজের বাড়িতে তুলল। ফ্লাট দেখে সবাই দারুন খুশি,সন্ধ্যা বেলা পূবা আর তপতী সাথে বিরাট ২ টো টিফিন বাক্স ড্রাইভার এর হাতে। প্রণব ভিতরের ঘর থেকে বেরিয়ে পূবাকে দেখে থমকে দাড়িয়ে পড়ল। চোখ কি চিক চিক করছে ? প্রনাম করবে বলে ঝুকেছে পূবা দুই হাতে জড়িয়ে …” পুনু , তুই আর আমি বন্ধু ছিলাম না, ..কথা জড়িয়ে আসছে পূবার, গলার কাছে কি যেন আটকে আছে,কথা বলতে অসুবিধা অনুভব করছে , ….তুই আমাকে প্রনাম করিস না পুনু , বন্ধুকে প্রনাম কর …শেষের কথা গলার কাছে দলা পাকিয়ে গেল প্রণবের।

…. বড় বৌদি ,…দুই হাতে জড়িয়ে পরস্পরকে ,কান্না চাপার প্রানপন চেষ্টা করছে দুজনেই, চোখ কতক্ষণ জল ধরে রাখতে পারে ? গড়িয়ে গাল ভিজিয়ে দিল দুজনেরই, কনা এই অতিব সুন্দর টান দেখে চোখে আঁচল চাপা দিল। তপু আর দিপু হাত ধরে থাকলো,মিনিট ২ পর দুজনেই স্বাবাভিক অবস্থায় ফিরল। শ্রাবনের জলভরা মেঘের চোখ নিয়ে পূবা ,কনার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিল
…….তোকে আমার হিংসা হয়, তুই দীপুকে বড় করেছিস, আমি পারিনি। তুই দিপুর সত্যি কারের মা রে কনা, …কনা ঝুকে প্রনাম করে,
…….কিছুই করতে পারিনি দিদি, প্রবল ইচ্ছা থাকলেও করতে পারিনি, ও নিজেই বড় হয়েছে, মানুষ হয়েছে, দিপুর মত ছেলে পাওয়া সাত জন্মের ভাগ্য দিদি, কোনদিন কিছু চাইত না, ও যদি বলত ওর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা, গয়না বিক্রি করে মাস্টার রাখতাম। জানো, আমরা বাড়ি ছাড়ার আগের দিন ওর ছোটকা জিজ্ঞাসা করেছে’ তোর্ টাকা আছে তো ‘…বলে হাঁ, আছে ১৮ টাকার মত, চলে যাবে। ভাবতে পার , তবুও বলবেনা, যে আমায় দাও,বুঝে নিতে হত। এই হারটা আমায় দিয়েছে, আমি চিরকাল পরব। দিপু তুই একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস, যেদিন আমি তোকে মাদুলি পরিয়ে দিলাম, তার পর থেকে তোর্ জীবন আমূল পাল্টে গেছে। বাবা, মা এদের আশির্বাদ সাথে থাকলে ভালো হবেই।
….আরে তাইত। আশ্চর্য,খেয়াল করিনি আগে, you are great kakima. সুধু ওই রাত জেগে বসে থাকা, উফ, ১০টার ভিতর ফিরতেই হত। বসে থাকবে খাবার নিয়ে।

…….দিপু প্রথম দিনই আমাকে বলেছে, ” কাকিমা না থাকলে আমি ভেসে যেতাম”, তুইই করেছিস, দিপু তুই পুনু কে কিছু দিসনি, ,বোনেদের ও দিসনি, কেন? দিতে হয়, তুই এখন রোজগার করছিস, দিতে হয় ..প্রণবের দুই মেয়ে এসে প্রনাম করলো পূবাকে।
………….বলেনিত কেউ, কালকেই দেব, তোমাকেও দেব, কাকিমা তুমি কাল আমার সাথে যাবে, মাসি বলল কাকিমার জন্য নিয়ে যা, ইশ, sorry ছোটকা। এই তোরা বল কি নিবি।
…..বাহ, সবাই পাবে আর আমি বাদ? তপু বলল
……ঠিক আছে, সবার জন্য কাল কিনব। আমি এখন বেশ ভালো পয়সা রোজগার করি কাকিমা, পয়সা হ্যায় মেরা আভি, তুমিও তো কিছু বলে দাওনি মা …বেশ খুশি আজ দিপু ….সবাই হেসে উঠলো একসাথে।
…….মিনি, নিনি ইনি তোদের বড় জ্যাঠাই মা ,..প্রণব আস্তে করে বলল …পূবা দুই মেয়েকে কাছে টেনে
…….দুটি তো তপুর মুখ বসানো , না রে পুনু,
……..হাঁ বড় বৌদি, সবকটাকেই দেখলেই বোঝা যায় বোন্ বলে
……..বড় বৌদি ..তপু আর নিজের দুই মেয়েকে অন্য ঘরে যেতে বলে ……মা মৃত্যুর আগে তোমাকে খুব দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তোমার কোনো খোজ আমি যোগার করতে পারিনি, তোমার বাবা বা ভাই কেউ কিছু খবর দিতে পারেনি, তোমার উপর খুব রাগ হয়েছিল, কোনো সম্পর্ক না রাখার জন্য। তোমার তো মাত্র ২১ বছর বয়েস, তুমি কি সারা জীবন বিধবা থাকবে, আমরা কেউই চাইনি সেটা, কিন্তু কোনো যোগাযোগ না রাখতে অভিমান হয়েছিল, খুব মনে হত তুমি আর আমি সিনেমা যেতাম,মেনকা, প্রিয়া, বসুস্রী। কত সিনেমা একসাথে দেখেছি বল, “ববি , ইয়াদো কি বরাত, শোলে , এন্টার দি ড্রাগন, সতরঞ্জ কি খিলাড়ি, কলকাতা ‘৭১ ” আরো কত সিনেমা আমরা দুজনে দেখেছি, আর সেই তুমি আমাকে একদম ভুলে গেলে, খুব অভিমান হয়েছিল, না লুকিয়ে সত্যি বলছি …..পূবা এসে প্রণবের পাসে বসে দুই হাত নিজের হাতে নিয়ে
…….ভুলিনিরে, কিছুটি ভুলিনি, শীতের রাতে এক লেপের তলায় শুয়ে, তোতে আমাতে গল্প, কিচ্ছু ভুলিনি, কিন্তু কেন যোগাযোগ রাখিনি পরে বলব, দিপু হয়ত কিছু বলেছে, আজ না রে, আর শোন আমি ওই বাড়িতেই, তিনতলার সেই ঘরেই থাকব, কয়েকটা বছর যেতে দে। তপুর একটা ভালো ছেলের সাথে দিপু বিয়ে দিক, সব ছেড়ে ওই বাড়িতেই থাকব। ব্যবসাটা দুই ভাই বোনের ভিতর ভাগ করে দিয়ে দেব। সব থেকে মিস করতাম মাকে। নিজের মার থেকেও ভালবাসতাম, কিন্তু অপরাধ করেছি পুনু, ক্ষমার অযোগ্য, তবুও বলি, ক্ষমা করেদে। তোদের সাথেই শেষ জীবন কাটাব, কথা দিলাম।
……..আজ এই কথা গুলো থাকনা, এখন তো ফিরে পেলে, পরে বলতে।
……..নারে কনা, পুনুর কোথায় কোনদিন মনে করবনা। খুব ভালবাসত আমাকে, বোন্ ছিলনা, আমাকে পেয়ে সেই আশ মিটিয়েছিল, তুই কাছে আয় ….বলে ব্যাগ থেকে এক জোড়া ভারী বালা বের করে কনাকে দিয়ে …..মা তার বেশিরভাগ গয়না আমাকে দিয়েছিলেন, একটাও ভাঙ্গিনি বা কাউকে দিইনি , নিজের জন্য দুই একটা রেখে বাকি গুলো ৩ মেয়েকে দেব বিয়ের সময়, এই দুটো তুই নে,please না করিস না …..কনা অবাক হয়ে চেয়ে রইলো
………আরে নাও, বাপের বাড়ির থেকে পাওয়া কত গয়না দাদাকে দিয়েছে পার্টি করার জন্য, অমি তো জানি,

রাত প্রায় ১২ টা অবধি গল্প চলল। তার ২ দিন পর সবাই মিলে আগ্রা ঘুরতে গেল। সাতদিন পূবা রোজ বাড়ি থেকে দুবেলা খাবার পাঠিয়েছে।বিরজুর বাড়ি তে দিপু আর পূবা , কনা আর প্রণব কে নিয়ে এলো। বিরজু অসম্ভব খুশি ওদের দেখে
….অফ, দিপুর মুখে তো কাকিমার কত কথা শুনেছি, আজ পরিচয় হলো কাকিমার সাথে। কাকিমা না মা, পূবা দেবী? আপনি তো একেবারে পাল্টে গেছেন, কিসের ছোয়া লেগেছে? পূবা হেসে দীপুকে দেখিয়ে দিল। বিরজু হেসে দীপুকে কাছে ডেকে বসিয়ে ….”.আমার স্ত্রী শোভা মানত করেছে যে আমাদের সন্তানেরা যেন দিপুর মত হয়। এইরকম সন্তান যে কোনো বাড়ির সবাইয়ের গর্ব, দিপু আমার অত্যন্ত বিশ্বাসের পাত্র। রাধা জীবনে এই একটা ভালো কাজ করেছে, দীপুকে আমার কাছে পাঠিয়েছে। আমার দাদা, বৌদি, ভাইঝি সবাই দিপুর কথা জিজ্ঞাসা করে। প্রণব বাবু, অসাধারণ স্মৃতিশক্তি, আপনার ছেলেই বলব। কাকিমা ভাগ্যবতী আপনি। অবাক করেছেন আমাকে পূবা দেবী, আমার খুব ভালো লেগেছে, আপনার এত সুন্দর রূপ আগে দেখিনি,মনে করবেন না আমার কথায় ।
……কি যে বলেন MP সাহেব, কোনটা মন থেকে বলা, আমি বুজতে পারি …হাসি মুখে উত্তর দিল পূবা, পুনু আর কনা, এমনকি বিছানায় সুয়ে থাকা সঞ্জীব কে পর্যন্ত দেখে এলো। বিদায়ের দিন পূবা আর দিপু গিয়ে এয়ারপোর্ট এ ছেড়ে এলো। পূবা ,তপুর জয়েন্ট এর পরিখ্যার সময় ওই বাড়িতে গিয়ে থাকবে বলে কথা রইলো।
dec এর ১৩ তারিখ। পূবার জীবনের এক স্বরনীয় দিন। অসীম গুহ,পূবার ফ্যাক্টরি তে কনসালটেন্ট হিসাবে জয়েন করেছেন। ছন্দা, সৌগতর সাথে আবার সমুদ্রে ভাসতে গেছে। বিকাল বেলায় অসীম
…..পূবা দেবী, আজ গাড়ি আনিনি, আমাকে একটা জায়গায় একটু পৌছে দেবেন। লোটাস টেম্পলে যাব, না না * দের মন্দির না, অন্য ধর্মের উপাসনা ঘর, গেছেন কোনদিন? না গিয়ে থাকলে চলুন একটা অভিজ্ঞতা হবে, আমি সপ্তাহে অন্তত একদিন যাই সুরমার সাথে কথা বলি, আপনিও আপনার হারিয়ে যাওয়া কাউর সাথে কথা বলতে পারেন সেখানে। সুরমা তো ডাকলেই চলে আসে, গিয়েই দেখুন না, ভালো না লাগলে আর কোনদিন যাবেন না ……পূবা অবাক হয়ে তাকিয়ে
……….চলুন, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে আসি

পূবার অফিস থেকে ওই জায়গা কিছুটা দুরে। গাড়িতে চুপ করে বসে দুজনে
……পূবা দেবী, খেয়াল করেছেন কখনো, ইসলাম, চ্রিস্টান আর ইহুদি দের ধর্ম একই জায়গা থেকেই বলা যায়, সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। যিশু, হজরত মোহাম্মদ (sa)বা মোজেস মোটা মুটি একই পরিবেশ থেকে তাদের মত প্রচার করেন। আশ্চর্য লাগে , কি করে একই পরিবেশে থেকেও প্রায় একই জনজাতি ৩ টি আলাদা আলাদা ধর্ম গ্রহণ করেছে। বৌধ্হ ধর্ম আর * ধর্মও একই পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সব ধর্মই শিখিয়েছে সৎ হতে, মানুষকে ভালবাসতে,সাহায্য করতে। এর ভিতর ইসলাম ধর্ম স্বতন্ত্র , কেন জানেন? পূবা না বলল
…….একমাত্র ইসলাম ধর্মেই সাম্যর কথা বলে। দেখবেন পৃথিবীর পিছিয়ে পরা, দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। আফ্রিকার বিরাট জনসংখ্যা ওই ধর্ম কে বরণ করেছে। কেসিয়াস ক্লে ,বিশ্বর সেরা মুষ্টিযোদ্ছা নিজের সরকারের বিরুধ্যে গিয়ে ওই ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ইউরোপ এর বিশাল অংশ এক সময় ইসলাম ধর্ম চারণ করত, এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাও তাদের হাতেই ছিল এখন খালি তুর্কিরা আছেন। প্রচুর মসজিদ গুড়িয়ে গির্জা উঠেছে, যেমন ভারত বর্ষে, বৌধ্য মন্দির গুড়িয়ে মন্দির উঠেছে। এক বছর আগে আমাদের দেশেই ৪০০বছরের মসজিদ আমরা গুড়িয়ে দিলাম আর সরকার কিছু করলনা।
………ঔরংগজেব শুনেছি , কাশির প্রাচীন মন্দির গুড়িয়ে মসজিদ করেছেন, বর্তমানে মহাদেব মন্দিরের পাশেই সেই মসজিদ আছে। ওই দোষে মোটামুটি সবাই সমান
…….ঠিক বলেছেন কিন্তু ঔরংগজেব কেন করেছিলেন সেইটা কি জানেন ? জানেননা শুনুন ,ঔরংগজেব তার সৈন্য নিয়ে পূর্ব ভারতের দিকে যাওয়ার পথে বিশ্রামের জন্য কাশীতে শিবির গাড়েন । সেনাপতিদের অধিকান্সই * ছিলেন, তাদের সাথে তাদের স্ত্রী রাও ছিলেন। আর ছিলেন ভালো সংখায় ছোট ছোট রাজা এবং রাজ মহিষীরা। এই রাজ মহিষীরা এবং * সেনাপতিদের স্ত্রী রা গঙ্গা স্নানে যান। সঙ্গে সৈন্য ছিল, কিন্তু তার ভিতরেও এক * রমনী কে চান করে ফেরার সময় পাওয়া যায়না। ২ দিন ধরে খুজেও পাওয়া যায়না, এক চর এসে ঔরংগজেব কে খবর দেয় যে মন্দিরের গর্ভ গৃহে তাকে লুকিয়ে রেখেছে।ঔরংগজেব আবারও চর পাঠায় এবং সেও একই খবর দেয়। তখন ঔরংগজেব সৈন্য পাঠায়, মন্দিরের ভিতরে। সৈন্য গিয়ে গর্ভ গৃহের একেবারে তলায়, যৌন অত্যাচারে ক্ষত বিখ্যত, সেই মহিলার মৃত দেহ উধ্হার করে। সেই মৃতদেহ দেখে, ঔরংগজেব আদেশ দেয় মন্দির গুড়িয়ে দিতে এবং মন্দিরের সব কটি পান্ডাকে হত্যা করতে। তারপর সেইখানে ওই মসজিদ গড়ে ওঠে আর মন্দির পাশে সরে যায়। আমি এই টা জেনেছি পশ্চিম বঙ্গের বহুল প্রচারিত এক বাংলা সংবাদপত্রের উত্তর সম্পাদকীয় একটা লেখা থেকে। যতদুর মনে পড়ছে লেখকের নাম গৌতম, পদবিটা মনে নেই। ছেলেবেলায় ইতিহাস এ পরেছি জিজিয়া কর * দের উপর চাপানো হয়েছিল ঔরঙ্গজেব এর সময়। খুব খারাপ , কিন্তু আপনি বা আমি কি স্কুল এর ইতিহাসে পড়েছি, সিপাই বিদ্রোহ দমন করে, সুশিক্ষিত, সংস্কৃতিবান, গণতন্ত্র দেশের ব্রিটিশ সৈন্যরা কামানের সামনে বিদ্রোহীদের বেঁধে গোলা ছুরত , শহর, বা লোকালয়ে গাছের ডালে বিদ্রোহীদের ফাঁসি দিত ? না, আমাদের ওই সব পড়ানো হতনা , এখনো হয়না। কারণ আমাদের শাসক শ্রেণী, ব্রিটিশ দের অনুকরণ করে। শাসক শ্রেনীর ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক সব কিছুই ওদের থেকে ধার নেওয়া, দেশের মানুষকে নিজের পায়ে দাড়াতে না দেওয়া, সত্য কে আড়াল করে নিজেদের স্বার্থ গুছিয়ে নেওয়া, যাতে আম * ‘. এক না হয়। তাহলে ওদের মুশকিল, তাই সুচতুর ভাবে খালি জিজিয়া কর পড়ায়,যাতে * রা ‘.দের উপর রেগে থাকে। * ‘.ের এই বিভেদ ব্রিটিশ দের সৃস্টি, divide and rule পলিসি চালিয়ে ১৯০ বছর ফোফা করে দিয়েছে আমাদের।
……….গুহ সাহেব, আপনিও কি আমার পঙ্কজ এর মত রাজনীতি তে জড়িয়ে পরেছিলেন, এই কথাই তো পঙ্কজ বলত।
………আমার ছোট ভাইটি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে, আমার এক মাত্র ভাই, কোনো বোন্ নেই আমাদের পূবা দেবী …..উদাস মুখে বাইরের ঘনায়মান অন্ধকারের দিকে চেয়ে রইলো অসীম।

বিরাট জায়গা নিয়ে ওই উপাসনা ঘর। সম্পূর্ণ হয়নি এখনো, কিন্তু পরিবেশ সুন্দর, ভিতরে ঢুকে আবছা অন্ধকার ঘরে অসীম আর পূবা একটু তফাতে বসলো। পূবার পাসে ৬০ বছরের মত বয়েস হবে, আভিজাত্য পূর্ণ, বোরখা পরা কিন্তু মুখ ঢাকা নেই এক ভদ্র মহিলা বসে। পূবা চোখ বন্ধ করে মনে মনে পঙ্কজকে স্বরণ করলো
………প্রভা, প্রভা, আমি এসেছি প্রভা …..চমকে উঠে পূবা চেয়ার এ সোজা হয়ে বসলো,ঘাম বেরিয়ে গেছে পূবার … জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে,একটু থেমে খুব আস্তে ” মাস্টারমশাই ,”
……..হাঁ, প্রভা , এইত আমি, তোমার ভিতরেই আছি প্রভা, কেমন আছ তুমি,
………ভালো আছি মাস্টারমশাই, কতদিন পর প্রভা ডাক শুনলাম। কেউ জানেনা,এইনাম, খালি তুমি,এই নামে আমায় ডাকতে পঙ্কজ,
……..প্রভা দিপু কেমন হয়েছে, কিরকম দেখতে ওকে, তোমার মত না আমার মত ? নিশ্চই বড় হয়ে গেছে
……..পঙ্কজ, ওকে যে কি সুন্দর দেখতে কি বলব, রেল এর এক বড় অফিসার দীপুকে বলেছে, সে জীবনে যৌবনের সৌমিত্র চ্যাটার্জি ছাড়া কোনো বাঙালি কে এত সুন্দর দেখেনি। মুখের কাঠামো আমার মত, কিন্তু নাক, চোখ,কপাল চুল ঠিক তোমার মত। আর কি বিচক্ষণ কি বলব, ২৩ বছরের ছেলে কিন্তু বিচক্ষণতায় ৬০ বছরের।
…….খুব লম্বা না!, চুল কি কোকড়ানো?
…….৬ ফুট লম্বা, না চুল তোমার মত, তপতী আমাদের মেয়ে তার চুল কোকড়ানো
……..তপতী, সূর্য তনয়া, খুব সুন্দর নাম দিয়েছ প্রভা।আমার মেয়ে? খুব হাসে না, ছটফটে ?
…….সবসময় হাসে, হেসে গড়িয়ে যায়,
…….. নিষ্পাপ মুখ নিশ্চই, বন্ধুদের সাথে খুব কথা বলে না? প্রভা আমি দেখতে পারছি, চঞ্চল তপতী,স্কুল এর পোশাকে, মাথায় কোকড়ানো এক রাশ চুল নিয়ে দ্রুত পায়ে হেটে যাচ্ছে, হাসিতে ভরিয়ে দিচ্ছে, সূর্য্য পর্যন্ত মুখ লুকায় তার হাসির সামনে,বন্ধুরা জড়িয়ে ধরছে , তাইনা প্রভা?
…….হাঁ , মাস্টারমশাই।
…বল, বল প্রভা, তুমি বলে যাও আমার তপতির কথা। বাড়ি তে তপতী, ঢুকেই ‘মা ‘ খিদে পেয়েছে, খাবার দাও, তুমি দৌড়ে গিয়ে ব্যাগ খুলে নিলে, জুতো খুলে ছুড়ে দিল তপতী, তুমি রাগ করলে আর অমনি তোমাকে জড়িয়ে গালে চুমু দিল, তুমি হেসে দিলে প্রভা, তাইনা? বলে যাও প্রভা, তপতী বাড়িতে এলে কাজের লোকেরা পর্যন্ত হাসে, তাইনা প্রভা? তোমার বন্ধুরা সবাই তপতী কে দেখলে জড়িয়ে ধরে, তোমার গর্বে বুক ভরে ওঠে, প্রভা বল, থামবে না বলে যাও, তপতী স্কুল না গেলে দিদিমনিদের ক্লাস এ মন বসে না, খালি খুঁজে বেড়ায় সেই সদা হাস্যমুখটির, বন্ধুদের টিফিন খেতে ভালো লাগেনা , তপতী স্কুল বাস এ উঠলে, ড্রাইভার এর মুখ হাসিতে ভরে ওঠে, আরো ভালোবেসে বাস চালায়, এই ভেবে আমার বাস এ তপতী আছে ঠিক না প্রভা, আমি ঠিক বলছি তো, তাই তো প্রভা ? ওই তো ,ওই যে ,স্কুল এর রেজাল্ট হাতে সবার মাঝে তপতী, দেখো প্রভা, কেমন হাতের রেজাল্ট আকাশের দিকে তুলে লাফ দিচ্ছে তপতী,খুশি ছড়িয়ে পড়ছে সবাইয়ের মাঝে, কি অপূর্ব প্রভা, ছুটে যাচ্ছে তোমাকে দেখে, কল কল করে কত কথা বলছে, লক্ষ্য তারার দ্যুতি ওর মুখে .
………তাই তো মাস্টার মশাই,ঠিক তাই, খুব সুন্দর আঁকে, দিপু ওকে অঙ্ক করায় । দিপু অঙ্কে সবার চাইতে ভালো, তপতী এইবার জয়েন্ট এ বসবে কলকাতায়, যাদবপুর এ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে, পঙ্কজ
………দারুন হবে প্রভা।
….. প্রভা , ওই তো তপতী দিপুর গলা দুই হাতে জড়িয়ে পা জোড়া করে ছোট ছোট লাফ দিয়ে দিপুর গালে চুমু দিচ্ছে, বাতি নিবিয়ে দিও প্রভা, ওই হাসির আলো সারা ঘর ভরিয়ে দেবে,ঠোট ফুলিয়ে অভিমান করেছে, দিপু বকেছে বলে, দিপু গালে চুমু দিল, প্রভা, আহ, প্রভা কি নির্মল, কি নিষ্পাপ হাসি , প্রভা খুব ইচ্ছা করছে একবার, সুধু একবার যদি বুকে নিতে পারতাম

হাজার তারার আলোয় ভরা, চোখের তারা তুই

স্বপ্ন দিয়ে সাজাই তোকে, কান্না দিয়ে ধুই

কোথায় ছিলি কোথায় এলি, চাঁদের কনা তুই

স্বপ্ন দিয়ে সাজাই তোকে , কান্না দিয়ে ধুই

আর পারলনা,ডাক ছেড়ে পূবা হু হু করে কেঁদে উঠলো, সবাই চমকে ঘুরে দেখে , পাসে বসা সেই বয়স্কা মহিলা দু হাতে পূবাকে জড়িয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।সম্পূর্ণ অজানা, অচেনা, অন্যধর্মের, ক্ষনিকের সাথী এক মায়ের বয়েসী মহিলার বুকে মুখ রেখে আকুল কান্না কাঁদছে, সফল ব্যবসায়ী, ক্ষুরধার বুদ্ধি , প্রচন্ড ব্যক্তিত্য সম্পন্ন পূবা মালহোত্রা। উপাসনা ঘরের প্রতিটি মানুষ অবাক হয়ে জীবনের এক অনন্য দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইলো। মহিলা পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বাকিদের চোখের ইশারায় সরে যেতে বলে, ” সব ঠিক হো জয়াগী, বেটি , রো . বেটি রো , জী ভরকে রো, উপরবলা দেখ রাহী হ্যায , রো বেটি, রো ” পরম মমতায় ২ aug ১৯৭৬ এর ১৭ বছর ৪ মাস ১১ দিন পর ক্রন্দনরত সবিতার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, এই বোরখা পরিহিত এক অপরিচিত মা । কোন টানে এক অপরিচিত ৪০ বয়েসের নারীকে বুকে টেনে নিতে পারে ভিন্ন ধর্মের এক মা?

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/bUQz0rW
via BanglaChoti

Comments