টান BY (ডিমপুচ) (পর্ব-১৬)

টান

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-১৬
—————————

শনিবার সন্ধ্যা ৭টার একটু পরে দিপু, পূবা , তপু, কৌশিক, ছন্দা আর ছন্দার শ্বশুর অসীম গুহ দিল্লির সবচাইতে নামী হোটেলের রেস্টুরান্ট এ এসে উপস্থিত হলো। আগের থেকেই পূবা টেবিল বুক করে রেখেছিল, তাই কোনার দিকে একটা বড় টেবিল এ ৩ জন করে বসলো। দিপু কৌশিক আর তপু একদিকে আর পূবা , পাসে ছন্দা আর তার পাসে অসীম।
পূবা ছন্দার ছেলেকে দেখেই নিজের কোলে নিয়ে নিল
,……কতদিন পর কোলে নিলাম বাচ্চা, তপুর পর আজ ….আদর সাথে বাচ্চার সাথে কথা। শিশুটি এত লোক দেখে ভয় তো দুরে থাক খল খল করে হেসে যাচ্ছে,আর এর জামা তো এই গ্লাস এর জলে হাত, কখনো মা বা দাদুর দিকে হাত বাড়াচ্ছে, ১ মিনিট এর ভিতর টেবিল প্রানবন্ত হয়ে উঠলো অতি ক্ষুদ্র আঙ্গুল, আর তার সঞ্চালনে। অসীম বেশ সু পুরুষই এখনো আছেন। দেখে বোঝা যায়না ৫১ বছর বয়েস আর যথেষ্ট রসিক। বসেই
………আরে ,এ যে দেখি bachelor আর married ক্রিকেট ম্যাচ , তা হোক। শোন সবাই, পূবা দেবী আপনিও শুনুন, আমরা প্রথমে খুব অল্প পানীয় নেব। তপু নেবে কিনা সেটা তপুর দাদা আর মা ঠিক করবে, তবে আমি বলি অল্প নিলে …..বলে পূবার দিকে তাকালেন। পূবা দিপুর দিকে তাকালো চোখে জিজ্ঞাসা
………তপু, তুই কি আজ একটু আরো পাকবি, ইচ্ছা করছে কি? ভনিতা না করে বল …….দিপু বেশ গম্ভীর হবার চেষ্টা করছে কিন্তু হাসি চাপতে পারছেনা
……..কি? কি না করে? ভনিতা মানে কি মা? ….তপু দিপু আর পূবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো …পূবা হেসে দীপুকে ইঙ্গিত করে দেখালো ” দাদা, কি মানে রে?”
………খুব সোজা মানে রে তপু, এই ধর তুই কাউর সাথে প্রেম করতে চাস, কিন্তু এমন ভাব দেখাস যে প্রেম জিনিষটা যে কি সেটাই তুই জানিস না, এইটা ভনিতা ..তপু ঝাপিয়ে পড়ল দিপুর উপর দুম দুম করে কিল মারতে লাগলো।
………আর কোনো উধাহরণ মাথায় আসলোনা , প্রেম, তুই কর গিয়ে আমার দরকার নেই। রাগ আর হাসি মিশিয়ে তপু আবারো কিল মারলো
……..আরে আমি তো করতেই চাই, তোকে বললাম তোর্ বন্ধুদের সাথে আলাপ করিয়ে দিতে, তুই পাত্তাই দিলিনা এতদিন হয়ে গেল, কি হলো আলাপ করাবি না?
………মা! দাদা কিন্তু পিছনে লাগছে, ভালো হবেনা কিন্তু
………পিছনে কোথায় ও তো সামনেই লাগছে, কি ছন্দা তুমি কি বল …..গম্ভীর মুখে কৌশিক বলল
……..ওহ। তুমিও আছ সাথে, পড়ব না তোমার কাছে, …তপু হাসি মুখেই উত্তর দিল
………কি পড়বি না রে তপু , প্রেম এ পরবি না ? ……খুব গম্ভীর মুখে দিপু জিজ্ঞাসা করলো …..সবাই হো হো করে হেসে উঠলো, এমনকি ছন্দার ছেলে পর্যন্ত তৈয় , তৈয় করে সবার সাথে হি হি করে হেসে উঠলো. তপু আবারো কিল মারতে লাগলো দীপুকে, সাথে অনুযোগ ,,” মা তুমি কিছু বলছ না কেন? তখন থেকে আমার পিছনে লাগছে?
……..আবার পিছনে, আরে বাবা প্রিয় তো সামনেই লাগছে ……কৌশিক এবার যোগ দিল, তপু এইবার উঠে পড়ছে রেগে। দিপু হাত ধরে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে পকেট থেকে সবচাইতে বড় ক্যাডবেরি বার করে দিল ….” এইবার একটু হাস” বলে গালে চুমু।
……….তপু যে কোনো জিনিসই সবাইকে দিয়ে খেতে হয়, এইটা কিন্তু আমি তোমাকে শিখিয়েছি………..কৌশিকের গম্ভীর স্বর বলল ,হাত পেতে,হাসি মুখে …….তপু এইবার হেসে ক্যাডবেরি ভেঙ্গে প্রতেক কে দিল
……..কৌশিক, তুই খুব ভালো শিক্ষক ….আবার দিপুর টিপ্পনি
………তোর্ বন্ধু, সে ভালো শিক্ষক না হয়ে যায়। তুই যে কি জিনিস আমার চাইতে ভালো এখানে আর কেউ জানেনা। একের নম্বরের বিচ্ছু …..এই প্রথম ছন্দা কিছু বলল হাসতে হাসতে
……….আচ্ছা কৌশিক, তুই আর আমি একসাথে ১৪ বছর পরেছি। আমি কি বিচ্ছু , তুই আমাকে সাপোর্ট দে ……দিপু যেন দয়া চাইছে
…..কৌশিক এর মুখ দিপুর দিকে তাকিয়ে হাসছে
….কৌশিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই পানীয় হাজির। ছন্দা আর তপু বিয়ার বাকিরা স্কচ। দিপু আর কৌশিক প্রথমেই পূবার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে অনুমতি চাইল, পূবা ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিল, অসীম স্কচ এ চুমুক দিয়ে
……এর সাথে তুলনা চলে একমাত্র কালিমার্কা এক নম্বরের। প্রিয়, কৌশিক খেয়ে দেখেছ কখনো?
…….প্রিয় ঘার নাড়াল, কৌশিক ও তাই।
…….আসলে আমাকে বাড়িতে তারাতারি ফিরতে হত। অফ, ওই কাকিমা, জেগে বসে থাকবে কখন আমি ফিরব। কতদিন বলেছি তুমি খাবার ঢাকা দিয়ে রাখবে, ‘না, তুই দিনে একবার খাস, কি লাগে না লাগে, ঢাকা দেওয়া ঠিকনা’। এখন বুঝি, এর পিছনে সুক্ষ কারণ ছিল, জেগে বসে থাকলে আমি তারাতারি বাড়ি ফিরব আর সামনে বসে খাওয়ালে মদ খেয়ে ফিরব না তাই জেগে থাকত। একদিন কালী পুজোর দিন বলে গেছিলাম, সেই দিন খেয়ে দেখেছি। গন্ধ বাদ দিলে সত্যি ভালো।
……….গন্ধ কাটানোর জন্য কোক মিশিয়ে নিলেই হয়, আমি IMFL কখনো খাইনা , বিশ্রী একে বারে। বিদেশে থাকতে এমন কোনো দামী পানীয় নেই খাই নি, কিন্তু এক নম্বরের সাথে প্রেম হয়েছিল।শিবপুরে পড়ার সময় ঐটাই আমাদের প্রেম ছিল। পূবা দেবী, ওই খেয়েই জীবন নিয়ে ওই রকম ফিলোযোফিস করা যায়,

মনে করো,গাড়ি রেখে ইস্টিশান দৌড়ুচ্ছে ,নিবন্ত ডুমের পাশে তারার আলো মনে কর, জুতো হাটছে, পা রয়েছে স্থির –আকাশ-পাতাল এতল -বেতোল মনে কর,শিশুর কাঁধে মড়ার পাল্কি ছুটেছে নিমতলা-পরপারে বুড়োদের লম্বালম্বি বাসরঘরী নাচ সে বড়ো সুখের সময় নয়,
সে বড়ো আনন্দের সময় নয়।

পূবা একটু অবাক হয়েই দেখল,অসীম কে
………ঐটা আমার সবচাইতে প্রিয় কবিতা। ওই রকম ভাবে জীবনের কথা বলা, ভাবা যায়না। খালি মাথায় ওই কবিতা বেরুবে না ….বলে পূবা হাসে
…….ছন্দার শাসুরীর এই কবিতাটা খুব প্রিয় ছিল। জীবনকে নিয়ে অন্য রকম ভাবনা ভাবতে হলে সমাজের প্রচলিত গন্ডির বাইরে বেরুতে হবেই, না হলে হবেনা, অসীম বেশ বড় করে চুমুক দিল এইবার. সবাই পানীয় তে মন দিয়েছে, ছন্দার ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে পূবার কোলে, কৌশিক দিপুর দিকে তাকিয়ে
………প্রিয়র শয়তানির আমি একটি মাত্র example দেব, কি রে প্রিয় বলি, তুই অদ্রীশ কে কি করেছিলি? .দিপু এক গাল হেসে ঘার নেড়ে, চুমুক দিল গ্লাস্সে
” কি example কৌশিক? বললেনা তো?” পূবার চোখ মুখে কৌতুহল, …কৌশিক গ্লাস এ চুমুক মেরে দিপুর দিকে তাকিয়ে
….অদ্রীশ আমাদের সাথে পরত। বিশাল বড়লোকের ছেলে। খুব ফাট দেখাত। লেখাপড়ায় এভব অ্যাভারেজ, মেয়েদের পিছনে খুব লাগত। বড়লোকের ছেলে বলে, বাকিরা একটু রয়ে সয়ে চলত।একদিন স্কুল এ কিসের যেন একটা অনুষ্ঠান। প্রতেকে এই ভালো জামা কাপড় পরে এসেছে। প্রিয় আমাকে বলল ” আজ ওকে দেখাবো। ব্যাটার ফুটানি ঘুচাব।” ক্লাস এ teacher এর টেবিল একটা গ্লাস ছিল আর ঢাকা দেয়ার একটা ডিশ। প্রিয় গ্লাস টা টইটুম্বুর জল দিয়ে ভর্তি করে ডিশ দিয়ে চাপা দিয়ে উল্টে দিয়েছে। দেখ মনে হবে , খালি একটা গ্লাস উল্টো করে ডিশ এর উপর আছে। একটু পর অদ্রীশ এসেছে। কথা বলতে বলতে প্রিয় হঠাত ” দাড়া একটা ম্যাজিক দেখাই এই অদ্রীশ গ্লাস টা দে তো” অদ্রীশ গ্লাস টা ধরে যেই টান মেরেছে সব জল ওর প্যান্টের উপর। হা হা করে সমস্ত ক্লাস হেসে উঠেছে , অদ্রীশ রেগে ” এটা কি হলো প্রিয়, তুই কিন্তু ভালো করলি না,”
………তুই ব্যাটা প্যান্টে হিসি করবি আর আমার দোষ,এত বয়েস হলো এখনো প্যান্টে হিসি করিস ……প্রিয় গম্ভীর মুখে যেই কথা গুলো বলেছে , ক্লাস এর যত মেয়ে ছিল এক সাথে ” ও পিসি , ও পিসি , খোকা বাবুর প্যান্টে হিসি “. রেগে মেগে অদ্রীশ গালাগাল দিতে দিতে বেরিয়ে গেল । তারপর থেকে ও আর বারফাট্টাই দেখা নি। এই হচ্ছে প্রিয় .
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ছন্দা হাসতে হাসতে ……. আরে এ তো তুচ্ছ। ও স্নিগ্ধা কে যা করেছিল তার জবাব নেই। কি রে প্রিয় বলব? …দিপু হাসিতে ভেঙ্গে পরে
………তুই সাপোর্ট দিয়েছিলি ভালো, হাঁ বল।ছন্দা আর তপু বাদ দিয়ে বাকিদের গ্লাস শেষ। আবার আসল, ছন্দা বলা সুরু করলো
………আমাদের সাথে স্নিগ্ধা বলে একটা মেয়ে পড়ত । সুন্দরী, পয়সা আছে বাড়ির । কিন্তু সে সব সময় ছেলেদের সাথে ঘুরবে, আজ একটা তো কাল আরেকটা আর তাদের ঘার ভেঙ্গে খাবে সিনেমা দেখবে,মানে এক কোথায় ছেলে গুলোকে নাচাবে । প্রিয় ওকে পাত্তা দিতনা । কিন্তু ও প্রিয়র সাথে মেশার জন্য খুব উদগ্রীব ছিল। ওই একটু নাচাবে আরকি। একদিন প্রিয় আমাকে বলল ‘দ্যাখ আজ ওকে ঘোল খাইয়ে ছাড়ব’ এই বলে প্রিয় স্নিগ্ধা কে নিয়ে হাজরা মোড়ের সিনেমা হল এর উপরে খেতে গ্যাছে। প্রিয়র পকেটে তো ২ টাকাও নেই, গিয়ে যত দামী দামী খাবার আছে অর্ডার দিয়েছে। স্নিগ্ধা ওকে জিজ্ঞাসা করেছে ” কি রে প্রিয় আজ কি হলো তোর্ , এত খাবার খাওয়াচ্ছিস ”
….আরে আজ প্রথম তোর্ সাথে এলাম তাই আরকি, …এই বলে খাবার তো যথারীতি আগে শেষ করেছে। তারপর কফি নিয়ে তিন চারবার চুমুক দিয়ে
…….. স্নিগ্ধা, একটু বস, সিগারেট নিয়ে আসি। ……বাইরে বেরিয়ে সোজা বাড়ি। তার পরের দিন কলেজ কামাই তারপর ২ দিন ছুটি ছিল, ৪ দিন পর কলেজে এসেছে। এদিকে স্নিগ্ধা তো কফি শেষ করে বসে আছে, ১৫ মিনিট পার, প্রিয় নেই। আধ ঘন্টা পার প্রিয় নেই। ১ ঘন্টা পর হাতের ঘড়ি জমা রেখে বেরিয়েছে। কলেজে এসে আমাকে দেখে রাগে অপমানে প্রায় কেঁদে দেয়। ” একবার পাই ওকে, আমার একদিন কি ওর একদিন, জানওয়ার, ছোটলোক, ইতর, ভিখারী, খেতে পায়না ভিখ্যা করতে পারে তো, চোর ” …যা খুশি বলছে . আমি তো হাসিতে ফেটে যাবার যোগার। আমি যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিনা, এইভাবে
………খুব অন্যায়, ছি, তোর্ মত ভালো মেয়ের সাথে কেউ এইরকম করে, তুই ইউনিয়ন কে বল …অমি তো জানি, ইউনিয়ন এর ছেলেরা উল্টে প্রিয়কে মাথায় তুলবে। ও তো হিরো। ৪ দিন পর প্রিয় এসেই বাস স্টপ এ আমাকে ধরেছে
………শোন ছন্দা, তুই ক্লাস এ সবাইকে ডাকবি। দেখিস যেন মেয়েরা বেশি থাকে আর অরবিন্দ কে রাখবি, ব্যাটা স্নিগ্ধার চামচা। আমি দাড়ি কাটিনি , চুলে তেল দিই নি, ওকে বলব ঠাকুমা মারা গ্যাছেন। তুই খালি দেখে যা।আমি ক্লাস এ গিয়ে সবাইকে জড়ো করেছি, একটু পর প্রিয় আসল। মুখ সুখন, তেলবিহীন চুল এলোমেলো, পায়ে হাওয়াই চপ্পল। আমি দেখেই
……….কিরে প্রিয় কি হয়েছে, কেউ মারা গ্যাছেন? …..কি বলব। প্রিয় আমাকে প্রায় মেরে ফেলার উপক্রম করেছিল। কেঁদে দিল, ফোস ফোস করে, চোখ দিয়ে জল বার করে সুপার্ব এক্টিং
……..
ওই দেখে সবাই তো ” কি হয়েছে, কি হয়েছে প্রিয়”
………কি বলব মাইরি, স্নিগ্ধা কে নিয়ে জীবনে প্রথমবার গেছি, খেয়ে সিগারেট কিনতে নেমেছি, দেখি ছোটকা। আমাকে দেখেই
……….. তোকে খুঁজে খুঁজে হয়রান আর তুই এখানে খেয়ে বেড়াচ্ছিস …….আমি তো ছোটকা কে দেখে অবাক
……..কি হয়েছে ছোটকা, তোমাকে এত উতলা লাগছে কেন ?
……..এক্ষুনি বাড়ি চল, তোর্ জন্য সবাই বসে আছে। মা মারা গেছেন তুই না গেলে কিছু হবে না তুই বাড়ির বড় নাতি , এক্ষুনি চল ……আচ্ছা বল এরপর কাউর মাথা ঠিক থাকে। ঠাম্মা আমাকে কলে পিঠে মানুষ করেছেন, তার চলে যাওয়া আমার কাছে কি বেদনা দায়ক কি বলব। স্নিগ্ধা তোকে আরেকদিন খাইয়ে দেব কিছু মনে করিস না ,কেমন
………সব মিথ্যা কথা , চোর কোথাকার, তুই বললেই পারতিস আমি তোকে খাওয়াতাম ……..স্নিগ্ধা পারলে ওকে ছিড়ে খায়। ব্যাস যেই এই কথা বলেছে ক্লাস এর সব মেয়ে স্নিগ্ধা কে ছি ছি করে উঠলো। আমি আবার বললাম
……..এই সবাই চাঁদা দে তো, স্নিগ্ধার টাকা মিটিয়ে দেই, এত ছোট মন তোর্, বলছে ঠাকুমা মারা গেছে, চল ওর বাড়িতে চল, যদি সত্যি হয় তাহলে কিন্তু সবাইকে খাওয়াতে হবে। ……বাকিরাও “ স্নিগ্ধা এটা কিন্তু বারাবাড়ি হচ্ছে, গুরুজন কে নিয়ে কেউ মিথ্যা বলে! তুই কি রে , ছি “

স্নিগ্ধা আর কি করবে, একেবারে একা হয়ে গেছে, রেগে মেগে ক্লাস ই করলনা। এর পরের ঘটনা আরো সাংঘাতিক। এর ২ দিন পর প্রিয় যথারীতি দাড়ি কেটে, চুলে তেল দিয়ে, কলেজ এ এসেছে। স্নিগ্ধা দেখেই
…….দ্যাখ বলেছিলাম না, মিথ্যুক কোথাকার হ্যাংলা, আজ দেখ, ……প্রিয় ওকে দেখল, তারপর একটু করুনা করার মত মুখ করে
……..কি বলব বলত তোকে, কিছু বুঝিস না। শোন কাল রাতে ঠাম্মা ছোটকা কে স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন ” পুনু, দিপু বাচ্চা ছেলে, তুই ওকে কেন অসৌচ করাচ্ছিস, ওকে করতে হবেনা। দিপুর কষ্ট আমি দেখতে পারিনা, কালকেই ওকে স্নান করিয়ে দিবি।” ….. সকালে উঠেই কাকিমা আমাকে বলল “তোকে আর করতে হবে না, আর তুই বাইরে মাছ মাংশ খাস”..তাই আজ আমি এইরকম। মনটাকে একটু ভালো কর। আর সেই দিন খেয়ে আমার পেট খারাপ হয়ে গেছে, তুই এত গালাগাল দিয়েছিস যে খাবার হজম হয়নি। এই বলে ক্লাস এর দিকে তাকিয়ে ” সবাই শোন, স্নিগ্ধার পয়সায় খেলে কিন্তু অবধারিত পেট খারাপ। আমি তোদের বন্ধু বলে সাবধান করে দিলাম” …এই হচ্ছে প্রিয়। ..তপুর হাসির দমকে সমস্ত রেস্টুরান্ট ঘুরে দেখছে , তার সাথে পূবা আর অসীম। নেশা কাটিয়ে দেবার জন্য এই একটা ঘটনা যথেষ্ট।

হাসি থামতে তপু দীপুকে জড়িয়ে গালে চুমু ” my sweet dada”….তোর্ মাথায় খেলেও বটে …..বলে আবার হাসি। পূবা এতক্ষণ হেসে মুখচোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
………দিপু, মা তার কতদিন আগে মারা যান?
………৪ বছর হবে, আরে ভুল তো বলি নি। ঠাম্মা তো মারাই গেছিলেন, খালি সময়টা নিজের মত করে নিয়েছি, বেশি কিছু না।
……..তবে একটা কথা মানতে হবে, প্রিয়র অঙ্ক।মনে আছে, সেকেন্ড ইয়ার এ সার, ক্যালকুলাস এর সবচাইতে কঠিন চাপ্টার সেখাছেন। প্রথমে বুঝিয়ে একটা অঙ্ক বোর্ড এ লিখেছেন। তারপর সমস্ত ক্লাস কে বুঝিয়ে অঙ্ক টা করছেন। বোধ হয় ৩-৪ মিনিট হয়েছে , প্রিয় ” সার উত্তর তা কি এই “pkc অবাক হয়ে তাকিয়ে অঙ্ক করা থামিয়ে চুপ করে দেখলেন,তারপর আবেগ, ভালোবাসা, স্নেহ সব মিশিয়ে
………প্রিয়দর্শি, তোদের পড়ানো আমার জীবিকা, কিন্তু তার ভিতরও satisfaction খুঁজে পাই তোর্ মত ছেলে পেলে। তুই একটা বছর নষ্ট কর, আমি তোকে নিয়ে প্রিন্সিপাল এর কছে যাব। তুই আবার ফার্স্ট ইয়ার এ ভর্তি হ অম্ক নিয়ে। একটু সুখ পাই রে পড়িয়ে! এই অঙ্কটা এই চাপ্টারের সবচাইতে কঠিন, তুই এই ২-৩ মিনিট এর ভিতর ঠিক করে করলি কি করে? তুই exceptional….এই বলে যেই সার বোর্ড এর দিকে ঘুরেছেন, প্রিয় দাড়িয়ে বাঁ হাতে জামার কলার তুলে দুবার নাচিয়ে দিল। এই হচ্ছে প্রিয়দর্শি, আমার সব চাইতে প্রিয় বন্ধু … হাসিতে মুখ ভাসিয়ে, ছন্দা ঝুকে দু হাত দিয়ে প্রিয়র হাত চেপে ধরল।
……….আসলে অঙ্ক ব্যাপারটা আমার ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছেন পঙ্কজ বাবু আর সবিতা দেবী, আমার বিশেষ ক্রিতিত্য নেই, আর এইটার ভিতরেও কিছু ঢুকে গেছে , গম্ভীর ভাবে বলে দিপু তপুর মাথায় আলতো চাটি মারলো, দিপুর কথা শুনে বাকিরা একটু অবাক হলো পূবা বাদ দিয়ে। তপুও ক্ষনিকের জন্য ধরতে পারেনি তারপরেই দমফাটা হাসিতে ফেটে পড়ল তপু। অসীম জিজ্ঞাসু চোখে পূবার দিকে চাইতে
………পঙ্কজ আর আমার প্রথম সন্তান দিপু। আমার নাম সবিতা,….”. কিন্তু অন্তরে অতলান্তিক সাগরের ঢেউ উঠেছে,এত সুখ, এত গর্ব,এত খুশি আগে কবে হয়েছে মনে পরছেনা। একেই কি সন্তান সুখ বলে? এত আনন্দ আমি কি করে রাখব দিপু, তুই যা চাবি তাই দেব দিপু, খালি কিছু আবদার কর। অন্তত একবার বল ‘মা আমার এইটা চাই’. আমার আজকের মত সুখ,শান্তি কোনদিন আসেনি রে দিপু। তুই সবার সামনে আমাকে উঁচু করে দিলি”। দিপু মায়ের অন্তরের কথা কি ভাবে শুনতে পেল? কি ভাবে মা এবং সন্তান পরস্পরের মনের কথা শুনতে পায়, না হলে কেন দিপু বলবে
………..মা, একটা কথা বলছি, সম্ভব হলে রেখো …দিপু আন্তরিক ভাবে বলল
…………বল, সবার সামনে কথা দিলাম যা বলবি তাই করব, বল …..দিপু একটু চুপ করে মা কে দেখল
…….কিছু খারাপ ভেবে নিওনা। তোমার ছেলে চরিত্রিহীন না। আমার পরচিত একটি মহিলা, বছর ৩১-৩২ হবে তাকে নিয়ে বলছি। এই বলে দিপু মঞ্জুর কথা বলল সবিস্তারে,তারপর ….যদি সম্ভব হয় তাহলে মঞ্জু দির একটা চাকরি বা অন্য কোনো পয়সা রোজগারের উপায় বার কর। ওদের প্রেম আমাকে বাকরুধ্হ করে দিয়েছিল। মনে মনে ঠিক করেছিলাম তখনি, যে তোমাকে বললে হয়ত তুমি কোনো উপায় বার করতে পারবে। পূবা মুগ্ধ নয়নে দিপুর দিকে তাকিয়ে আন্তরিক কন্ঠে
……..তুই আমার সাথে দেখা করতে বল, নিশ্চই কিছু করব যাতে ওকে আর ওই ঘৃণ্য কাজ না করতে হয়। হাসি মুখে দিপুর দিকে চেয়ে, প্রশংসা মিশ্রিত স্বরে ‘”দিপু তুই আমাকে প্রতিদিন অবাক করছিস, এই রকম এক মহিলার জন্য সমবেদনা তুই উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছিস। পঙ্কজ মিছি মিছি জেল খাটেনি, সে তার ভাবনা তোর্ মাঝে রেখে গেছে।“ …
প্রচুর খাবার এসেছে, যথারীতি দিপু নিজের কাবাব খেয়ে ছন্দার থেকে তুলে নিয়েছে, আর ছন্দা হাতে ছোট্ট করে চাটি মেরেছে, পূবা আরো কাবাব অর্ডার দিল।বাকিরা না না করে উঠতেই ” আহ, আসুক না, কেউ না খেতে পারে আমি আর কৌশিক আছি, ঠিক খেয়ে নেব, ছন্দা তুই কিন্তু ভাগ পাবিনা”
……….ভাগের কি দরকার,তোর্ থেকে খাব …..যা হোক খাওয়া শেষ। অসীম চুপ করে খাবার খাচ্ছে, দেখে পূবা জিজ্ঞাসা করলো
……..আরে আপনি তো কিছুই বলছেন না, কিছু বলুন।

….পূবা দেবী, কি বলব, আমার গত 7 বছরে সবচাইতে আনন্দের দিন আজকে। এই সুন্দর ছেলেমেয়েগুলো আমাকে আজ অনে …..ক পিছনে নিয়ে গেছে। আজ আমরা সবাই বন্ধু, যদিও তপু খুবই ছোট , তবুও ওর সামনেই স্বীকার করছি, সুরমার মৃত্যু আমাকে একেবারে শেষ করে দিয়েছিল। আমার পদস্থলন হয়েছিল, সেইটা সুরমা জানত। ওই দেশের সামাজিক অবস্থায় হয়ত সেইটা খুব আশ্চর্য নয়, কিন্তু আমাদের মূল্যবোধ অন্য রকমের, তাই আমি পদস্থলন ই বলছি। আমার খুব নামডাক ছিল কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে, তার ফলে নারী জীবনে আসার সুযোগ ছিল আর এসেও ছিল । কিন্তু যেদিন অফিস এর পর ডাক্তার এর চেম্বারে শুনলাম রক্তের ওই মারণব্যাধি , আমার মনে হলো আমি এক ধু ধু প্রান্তরে একা দাড়িয়ে,ঘন আঁধারে কিছু দেখতে পারছিনা, কোনো আলো নেই, কোনো শব্দ নেই, চাঁদ তারা কিচ্ছু নেই, এক বিরাট অখন্ড নিরবতা, কোনো অদৃশ্য টান আমাকে কৃষ্ণ গ্বহবরে নিক্ষেপ করেছে, যেখানে আলো পর্যন্ত হারিয়ে যায়। কোনো দিক বুজতে পারছিনা, কি করব বুজতে পারছিনা, আমি একা, যার আমার পাশে থাকার কথা ,নেই, সে নেই আমি একা। আমার দুই সন্তান তো আমার না, ওরা তো মায়ের সন্তান। আমারতো একমাত্র সুরমা, আর কেউতো আমার নিজের নয়, সুরমাই যদি না থাকে , তাহলে এই নশ্বর শরীর ছাড়া আমার নিজের আর কিচ্ছুটি রইলোনা, জীবন কি তাহলে সুরমার অবর্তমানে, খালি ভেসে চলা,উদ্দেশ্য হীন ভাবে ? বাঁচার মানে কি তাহলে ? তিতলি , আমার মেয়ে আমাকে ক্ষমা করেনি, করবেও না, না খেয়েও থাকলে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না ” তুমি খেয়েছ?” আমার ওই বিপুল সম্পদ,সাস্থ্য, জ্ঞান, বুধ্হী সব নিরর্থক, খালি ডাক্তারের রিপোর্ট সত্যি। খালি মনে হলো এ আমার পাপ, না হলে সুরমার মত ঐরকম প্রাণ শক্তিতে ভরপুর একজনের কেন হবে, আমার পাপ তার উপর বর্শিয়েছে।…….. একটানা আবেগ মথিত স্বরে বলে অসীম চুপ করে টেবিল এর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়, তারপর

“রাত কত হলো, উত্তর মেলেনা”

সব ছেড়ে দিলাম। বাড়ি গাড়ি সব বেচে এখানে চলে এলাম। আর যাই হোক দেশের মাটিতেই হোক। ৭ মাস ১৮ দিন বেচে ছিল, তারপর। একেবারে শেষ অবস্থায় ধরা পরে। এই ৭ মাস ১৮ দিন খালি চান খাওয়া ছাড়া ওর পাশ থেকে নড়িনি। ওর মুখের প্রতিটি বলিরেখা দেখতাম আর মনের মনিকোঠায় জমা রাখতাম, এই ভেবে যে আমার সুরমার এই খানে চামড়া এইরকম ছিল। চোখের কোনা এইরকম, থুতনি এইরকম, সব প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত দেখতাম আর মনে রাখতাম।বার বার ঘন্টার পর ঘন্টা খালি দেখে যেতাম, আর যদি না দেখতে পাই, ঘুমাতামনা, যদি জেগে উঠে আর না দেখতে পাই। শেষের আগের দিন শেষের কবিতার শেষ কবিতাটির কিছু অংশ শেষ বারের মত আবৃতি করে শোনালো, পূবা দেবী আজ পর্যন্ত কোনো মানুষ ওই ভাবে ওই আবৃতি করতে পারেনি , ,

আজ ও আমার সমস্ত শরীরে প্রতিধ্বনিত হয়

….” কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।

.তারি রথ নিত্যই উধাও

জাগাইছে অন্তরিক্ষে হৃদয়স্পন্দন ,

চক্র -পিষ্ঠ আঁধারের বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন।

.ওগো বন্ধু,সেই ধাবমান কাল

.জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল –

.তুলে নিল দ্রুতরথে দুঃসাহসী ভ্রমনের পথে

. তোমা হতে বহু দুরে। ………হে বন্ধু বিদায়।

ফিরবার পথ নেই জানি পূবা দেবী, কিন্তু এই ৭ বছর পার হয়ে গেলেও ওকে ভুলতে পারিনি।
……আমি ১৭ বছরেও পারিনি। খুব আস্তে শোনা গেল পূবাকে
…কিন্তু আজ সন্ধ্যা আমার এক অপূর্ব সন্ধ্যা, বেশ কিছুক্ষণ অন্য কিছু মনে ছিল না, তার সম্পূর্ণ কৃতিত্য আমার নবীন বন্ধুদের।
কেউ লক্ষ্য করলনা নিজের অজান্তে তপু কৌশিকের হাত জোরে চেপে ধরে আছে। দিপুর মনে এক ৪০ পেরিয়ে যাওয়া নারীর ছবি।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/xA62lQB
via BanglaChoti

Comments