টান BY (ডিমপুচ) (পর্ব-৩)

টান

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-৩
—————————

কালকা মেলের টিকেট কেটে দিপু দেখল ট্রেন ছাড়ার সময় বেশ পরে। দোতলা ওয়েটিং রুম এর পাশের বারান্দায় এসে দাড়ালো। সামনে গঙ্গা
বয়ে যাচ্ছে, অসংখ লোকের আনাগোনা ব্যস্ত স্টেশন এ।” রবি, এখান থেকে ভারতের সব জায়গায় যাওয়া যায়, আবার সব জায়গা থেকে
আসা যায়। তাহলে এটাকে তো আসা যাওয়ার মিলনস্থল বলা চলে। বাবার চিতা ভস্যযদি এখানে ছড়িয়ে দেওয়া যায় .তাহলে তো মানুষের
পায়ে পায়ে তা সমস্ত ভারতবর্ষে ছড়িয়ে যাবে, তাই না? ছোটকা এখনই ছড়িয়ে দিতে পারে, বাবা তো মানুষের জন্য কাজ করার জন্য জেল
খেটেছে , তাহলে মানুষের পায়ে পায়ে ছড়িয়ে গেলে কি অসুবিধা। কিন্তু আমি জানি ছোটকা কিছুতেই তা করবে না। ওই ইলাহাবাদ এই
বিসর্জন দেবে।বাবাকে খুব ভালবাসত যে।আজ খুব বাবার কথা মনে পরছে রে চুদি। মিছি মিছি লোকটাকে মেরে ফেলল। সুন্দর দেখতে ছিল।
লেখা পড়ায় ভালো ছিল।তাকে মেরে ফেলল। যদি কোনদিন, যে মেরেছে তাকে পাই, তাহলে জিজ্ঞাসা করব, কেন ওই নিরীহ লোকটাকে
মারলো আর আমাকে সারা জীবন এর জন্য অনাথ করে দিল। দেখা হবেই রে রবি, আমি জানি কে মেরেছে, দেখা আমি করবই। তুই
দেখে নিস, একটু খালি সময় লাগবে। রাধা মাসি কে জানিয়ে দেখা করব। কাকিমাকে বলে লাভ নেই, ভয় পাবে, আমাকে দেখা করতে দেবে
না। রাধা মাসি তা না। ও আমাকে সাহস যোগাবে, সাহায্য করবে। তুই আমার সাথে থাকিস। কিন্তু দ্যাখ , এই ৩দিনে এত কিছু ঘটল, কিন্তু
আমার জন্মদিন কবে কেউ জানেনা। কি আশ্চর্য ,তাই না ?”

ট্রেন প্লাটফর্ম এ দেওয়ার পর দিপু unreserved কামরা দেখে বুজলো যে ওকে বসে, তাও মাটিতে, যেতে হবে। তাই হোক,এক নতুন
অভিজ্ঞতা হবে। দিপুর সব চাইতে বড় ট্রেন ভ্রমন, রানাঘাট অবধি। এ ছাড়া বার ৩ চন্দননগর আর বান্ডেল গেছে। কামরায় উঠে সে, দরজার কাছেই দাড়ালো । গাড়ি চলতে সুরু করলে ,দরজা এক ব্যক্তি বন্ধ করে তাতে হেলান দিয়ে বসলো।দিপু মুখ কাচুমাচু করে তাকে চোখ দিয়ে
জিজ্ঞাসা করলো একটু বসতে পারবে কিনা। লোকটি একটু সরে ওকে বসার জায়গা করে দিল আর একটা কাগজ দিল, তাতে বসার জন্য।
একটু পর লোকটি ওকে জিজ্ঞাসা করলো কত দূর যাবে, কি কারণে এইসব। যখন শুনলো যে দিল্ল্হী যাবে, ওকে পরামর্শ দিল চেকারকে বলে
যদি কিছু করা যায় তা দেখতে। দিপু আর কি করবে,ওর কোনো ধারনা নেই এই ব্যাপারে, ও চুপ করে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
ঘন্টা খানেক বাদে কি মনে করে একটা সিগারেট ধরালো। ঠিক তখনি চেকার এসে উপস্থিত। চেকার লোকটি প্রায় ৫৫-৬০ বছরের। টিকিট দেকতে চাইলে,দিপু তারাতারি সিগারেটটা লুকিয়ে টিকেট বার করে দিল। ওর সিগারেট লোকানো দেখে চেকার অদ্ভূত
দৃষ্টিতে দিপুর দিকে তাকালো। “সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র” দিপুর ওই সুন্দর চেহারা, আর নিষ্পাপ মুখ দেখে চেকার একটু তাকিয়ে থাকলো।
তারপর বাকি দের টিকেট চেক করে আবার দরজার কাছে এসে দাড়ালো। দিপু তখন ভাবছে যে ওকে বলবে নাকি কিছু করার জন্য।চেকার
নিজেই এসে জিজ্ঞাসা করলো
…….আপনি এতদূর এই ভাবে যেতে পারবেন? সাথে লাগেজ কি আছে?
…….কিছুনা সার, খালি এই ব্যাগটা আছে।
……দিল্লি কি চাকরির জন্য যাচ্ছেন?
……ওই রকমই, একজন বলেছে যে কিছু একটা করে দেবে, তাই যাওয়া। চেকার এরপর খুটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞাসা করলো বাড়িতে কে আছে,
ও কতদূর লেখাপড়া করেছে এইসব। বোধহয়, কেউ নেই শুনে আর econ. hons শুনে একটু দয়া হলো।
স্কুল এর নামটা শুনে, বোঝাগেল বেশ impressed. ওর একেবারে গায়ের কাছে এসে বলল,
……সামনে যেখানে দাড়াবে, আপনি আমার সাথে নেমে আসবেন, দেখি যদি কিছু করা যায়। আমি ধনবাদ অবধি যাব , মনে হয় তার ভিতর
একটা বসার জায়গা করে দিতে পারব।
……সার, তা হলে খুব ভালো হয়। বলে দিপু তার সারা জীবনের ট্রেন ভ্রমনের কাহিনী শোনালো । চেকার হো হো করে হেসে উঠলো। এরপর
চেকার, ট্রেন দাড়াতেই দীপুকে নিয়ে নেমে পিছন দিকে বেশ জোরে,প্রায় দৌড়ানোর মতই হাটতে লাগলো।একটি reserved কামরার কাছে
এসে “বিশ্বাস, বিশ্বাস , শুনে যাও” বলে হাঁক মারলো। কামরার ভিতর থেকে এক ব্যক্তি তারাতারি এসে
…..কি ব্যাপার প্রসাদজি , কি হয়েছে ?
…..এই ছেলেটি জীবনে almost প্রথম ট্রেন চড়ছে ,একটা বসার কিছু করে দাও । একেবারে বাচচা ছেলে। বিশ্বাস দিপুর দিকে তাকিয়ে উঠে
আসতে বলল। দিপু কামরায় উঠে হাতজোড় করে নমস্কার করলো। বিশ্বাস অদ্ভূত চোখে, যেন জীবনে প্রথম কেউ তাকে নমস্কার করছে,
তাকিয়ে ওকে একটা সিট্ দেখিয়ে বলল
……আপনি এইখানে বসুন, এইটা আমার সিট্, কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলবেন আমি আপনাকে বসতে দিয়েছি। আর আমি ধনবাদে নেমে
যাব, আমার জায়গায় যিনি উঠবেন তাকে আমি বলে যাব। আপনি বসুন।প্রসাদজি পরশু retire করবেন, তাই তার কথা রাখতেই হবে। বলে
একটু হাসলো। দীপুও হেসে প্রত্যুতর দিল।
দিপু সিট্ এ বসে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো। দ্রুত চলে যাচ্ছে ঘন অন্ধকার, মাঝে মাঝে দুই একটা আলোর ঝলকানি,জোনাকি পোকার
মতো চমক দিচ্ছে ” রবি, বসুধা কুটুম্বকম ,স বান্ধব পদে পদে”, কথাটা অন্তত গত ৩ দিন আমার জীবনে লেগে গেছে। রাধা মাসি আমার কে
হয়? কোনো রকম রক্তের সম্পর্ক নেই, কিন্তু দ্যাখ, কি না করলো আমার জন্য। এখানে,জীবনে প্রথম ট্রেন চড়া বলতে পারিস। চেকার কে
জীবনে আর দেখব না হয়ত, কিন্তু আমার স্মৃতির মনিকোঠায়, এই প্রসাদজি আর বিশ্বাস ঠিক থেকে যাবে। অনেকেই ট্রেন যাত্রার অনেক
বাজে অভিজ্ঞতা বলে, হয়ত ঠিক, কিন্তু আমার বেলায় সম্পূর্ণ উল্টো। পদে পদে না হলেও, বন্ধুত্যর হাত তো কেউ না কেউ এগিয়ে দিচ্ছে।
না রে,এখনো অবধি তো, বাজে কোনো কিছুই হয়নি, বাড়ি থেকে বেরুনোর পর। দেখা যাক দিল্লি তে কি হয়। খারাপ কিছু হবে বলে মনে
হয়না। তুই থাকিস, কেমন” কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুজতেই পারেনি। ঘুম ভাঙ্গলো। তখন ঘড়ি দেখে প্রায় ৫টা। খিদে পেয়েছে। ব্যাগ থেকে,
রাধার দেওয়া, পাউরুটি,ডিম খেয়ে জল খেল। আকাশ আস্তে আস্তে ফর্সা হচ্ছে, তারারা একে একে সরে যাচ্ছে, দিপুর অজান্তে মুখ দিয়ে
বেরিয়ে আসলো, “রাতের সব তারা থাকে দিনের আলোর আড়ালে। ” দুপাশে দ্রুত চলে যাচ্ছে, গ্রাম ,জনপদ,মানুষের বহতা জীবন।জীবন ট্রেন এর মতই
বহতা। থেমে থাকেনা, তুমি থামলেই, তোমার গায়ে শ্যাওলা ধরবে, মন খারাপ হবে, তার থেকে চলতে থাক, যা হবে দেখা যাবে।
“চরৈবতি।”কিন্তু সব সময় চলতে পারলে ভালই হত, কেননা গয়া স্টেশন এ গাড়ি থামতেই, দিপুর মনে হলো সমস্ত জায়গাটাই বোধহয়
পায়খানা। দু ধারে সার বেধে লোক পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে প্রাতকৃত সারছে। আর দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত । আচ্ছা ওই লোকগুলোর এই দুর্গন্ধ
লাগছে না, কেউ কেউ তো আবার দিব্বি দাঁতন দিয়ে দাঁত মাজছে।কি করে পারে, বোধহয়,ছেলেবেলা থেকে এই গন্ধ নাকে গিয়ে গিয়ে আর দুর্গন্ধ মনে হয়না।
কিন্তু মেয়েরাও তো দিব্বি, খোলা মাঠেই ওই একই কাজ করছে। আব্রুর ব্যাপার নেই কোনো। কি আশ্চর্য , ঘোমটা টানা
এক হাত, ওদিকে মাঠের মধেই কাজ সারছে। আসলে লজ্জা ,শরম , আব্রু এই সবই আপেক্ষিক। স্থান ,কাল পাত্র পেক্ষিক ।
দিপু বুঝলো, যে পায়খানায় যেতে হলে এটাই সেরা সময়। কিন্তু যাবে কিভাবে।একে তো ব্যাগটা আছে, তারউপর জায়গা ছাড়লেই অন্য কেউ
বসে যেতে পারে। কি করবে ভাবছে, একটি ছেলে দিপুর বয়েসী এসে সিগারেট ধরালো, দিপু ছেলেটিকে দেখল একটু সময়, তারপর
ইংরাজিতে ছেলেটিকে বলল . তার জায়গা আর ব্যাগটা নজর রাখতে ও একটু টয়লেট এ যাবে।ইংরাজির মাহাত্য বুঝলো দিপু। ছেলেটি সঙ্গে
সঙ্গে দিপুর জায়গায় বসে ওকে নিশ্চিন্ত করলো।দিপু একটা সিগারেট ধরিয়ে পায়খানায় ঢুকলো।মিনিট ৭-৮ ভিতর কাজ সেরে ফিরল। দাঁত মেজে ছেলেটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে। নিজের সিট্ এ বসলো।ছেলেটি দিপুর সাথে আলাপ জমালো। ওর পুরো
ফ্যামিলি সাথে যাচ্ছে। বলল দিপু ইচ্ছা করলে ওর সাথে আসতে পারে। সাথে মা,বাবা, আর বোন্ আছে। দিপু জিজ্ঞাসা করলো জায়গার
অসুবিধার কথা, ছেলেটি পাত্তা দিলনা। দিপু ছেলেটির সাথে ওদের জায়গায় গেল। ছেলেটির নাম বিষ্ণু। অর বাবা মা আর বোন্ এর সাথে
পরিচয় করিয়ে দিল। ওরা উত্তর প্রদেশের লোক।বেড়াতে বেরিয়েছিল। আন্দামান ঘুরে দিল্লি যাচ্ছে।
…..প্রিয় , তুমি আগে কখনো দিল্লি গেছ ? বিষ্ণুর বাবা জিজ্ঞাসা করলো
…..না আঙ্কেল ,বলতে পারেন এটাই আমার প্রথম ট্রেন যাত্রা। চেকার ভদ্রলোক খুব ভালো, কি মনে করে আমাকে এই জায়গাটা দিয়েছেন।
আমার কোনো ধারনাই নেই।আমার কাছে, দিল্লি আর দামাস্কাস দুটিই সমান। দিপুর কথা বলার ভঙ্গি তে সবাই হেসে উঠলো।
……তোমার বাবা, মা তারা কি কলকাতায় থাকেন ? বিষ্ণুর মা জিজ্ঞাসা করলেন
……কেউ নেই। খালি এক কাকিমা আর কাকা আছেন তারা আহমেদাবাদ চলে গেছেন আজ ৩ দিন। সেই জন্যই আমি দিল্লি যাচ্ছি। একজন
আমাকে দিল্লি যেতে বলেছেন , কিছু একটা হয়ে যাবে আশা করি।
…….কেউ নেই, মামা বাড়ির কেউ ? ভদ্রমহিলা সহানুভূতির স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন।
…….না আন্টি , তারা আছেন কিন্তু আমি তাদের চিনিও না। আসলে বাবা ,মা না থাকলে যা হয় আরকি। ওই কাকিমাই আমার সব। কাকা
ট্রান্সফার হয়ে গেলেন তাই আর কলকাতায় কি করব, দেখি দিল্লিতে। কিছু একটা হবে। ইচ্ছা করেই বিরজুর প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেল বিষ্ণু দিল্লিতে পরে। এইবার law এ ভর্তি হয়েছে। বোন্ টা ba পরে, ইতিহাস নিয়ে। মেয়েটির বেশ মিস্টি চেহারা। নাম,সহেলী।আলাপিও বটে। দিপু বেশ গুছিয়ে ওদের সাথে আড্ডা দিতে লাগলো। সকালের চা,জলখাবার ওরাই দিল। পয়সা দেবার চেষ্টা করতেই সবাই রে রে করে উঠলো। কিছুক্ষণ পর দিপুর খুব ঘুম পেল। ওদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে দিপু ওপরের বাংক এ উঠে লম্বা হয়ে ব্যাগটা মাথায় দিয়ে ঘুম। টানা ৫ ঘন্টা ঘুমালো। বেলা ২ টো নাগাধ ঘুম ভাঙ্গলো। আবার আড্ডা,. দিপুর সবচাইতে যেটা আশ্চর্য লাগলো এই ট্রেন যাত্রায় তা হলো, কত সহজে একেবারে অপরিচিত মানুষ কাছা কাছি আসে। জানালা দিয়ে নতুন নতুন শহর , নগর দেখতে দেখতে প্রায় দিল্লির কাছা কাছি পৌছে গেল। বিষ্ণু নিজেদের ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিয়ে দীপুকে বলল ও যেন যোগাযোগ করে। ভদ্রমহিলা দিপুর মাথায় হাত রেখে বিড় বিড় করে কি বলল। সহেলীও ওকে তাদের বাড়িতে যেতে বলল। রাত ৮টা নাগাধ দিপু রাজধানীতে পা রাখল। কিন্তু সেই রাত্রে আর কোথাও না গিয়ে প্রথমেই প্লাটফর্ম এ রেস্টুরান্ট এ গিয়ে পেট ভরে ভাত , তরকারী, ডাল ,ডিম খেয়ে ওয়েটিং রুম এ ঢুকলো। সমস্ত ঘরটাতে প্রায় ১৫০ জন লোক শুয়ে বসে আছে। পা ফেলার জায়গা নেই। হটাত নজরে এলো, একটা দরজার পাশে একটা বড় কালো লোহার বাক্স। বেশ পুরানো।দিপু চুপ করে গিয়ে তার উপর বসলো। একটু পর বুজতে পারল,কেন কেউ ওখানে বসেনি। পাশের দরজাটা, ঘরটার টয়লেট এ যাবার। যতবার কেউ যাচ্ছে, ওই টয়লেট এর দুর্গন্ধ দিপুর নাকে আসছে। কিন্তু কিছু করার নেই দিপু চুপ করে ঘরটা দেখতে লাগলো। ।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল মাত্র রাত ১১টা বাজে।কি করবে,দিপু ঘরের দিকে মন দিল।ওর সামনেই ৬-৭ ফুট দুরে এক দেহাতি পরিবার সুয়ে আছে,দুটি বাচ্চা আর স্বামী স্ত্রী। বৌটা কোলের বাচ্চা কে বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমাচ্ছে। আশ্চর্য লাগলো
দিপুর, ঘুমের মাঝে যেই বাচ্চাটা মার কোল থেকে একটু সরে গ্যাছে, বৌটা অমনি ওই ঘুমের ভিতরই বাচ্চাটাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে
আসছে। কি করে টের পায়, এই গভীর ঘুমের ভিতর,এই বোধহয় মাতৃস্নেহ। স্বামীটা অন্য বাচ্চাটাকে নিয়ে একটা বাক্সর উপর মাথা দিয়ে
ঘুমাচ্ছে। মাঝে মাঝে বিচি চুলকাচ্ছে।শালার দাদ আছে নিশ্চই। একটু দুরে একটি পরিবার,বৌটা নতুন বিয়ে হওয়া মতন,পাশে শাশুড়ি তাকে
আড়াল করে ঘুমাচ্ছে। বরটা অন্য পাশে বসে আছে। জিনিস পত্র পরিবারটির মাজখানে। সাবধানী আছে। এক মোটা আর তার বউ,সেটাও
মোটা , পাশাপাশি ঘুমাচ্ছে। লোকটার বিকট নাক ডাকার আওবাজ।উফ, এই টয়লেট এর গন্ধ ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু কি করবে।দিপুর চোখ,
ওই গন্ধর ভিতরও বুজে আসল। কিছু শব্দে , ঘুম ভাঙ্গলো। দেখল, ভোর ৪টে বাজে। কিছু পরিবার চলে যাচ্ছে। দিপু তড়াক করে লাফ দিয়ে
তাদের এক জনের জায়গায় মাটিতেই, সুয়ে পড়ল। তাদের কাগজ পাতা ছিল। এক ঘুমে রাত কাবার। বেলা ৭টার একটু আগে ঘুম ভাঙ্গলো।
উঠে ব্যাগ কাধে নিয়ে পেচ্ছাপ করে, চোখে মুখে জল দিয়ে বাইরে এলো। ভারতের রাজধানী, একটু একটু করে জাগছে। বাচ্চারা স্কুল যাচ্ছে।
একটা চায়ের দোকান দেখল যেখান থেকে std করা যায়। প্রথমেই রাধাকে phone করলো।একবারেই পেয়ে গ্যালো
…….হাঁ .মাসি ঠিকঠাক পৌছেছি, না কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি এখনি ওনার বাড়িতে যাচ্ছি , এখানেই বাস পাওয়া যাবে।চিন্তা করনা।
ঠিক আছে তুমি ওনাকে ফোন করে দাও। আচ্ছা , রাখলাম। পয়সা মিটিয়ে দিপু এক পুলিশ কে জিজ্ঞাসা করে বাস নম্বর জেনে , রয়না দিল।
বাসে এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করতে তিনি কোথায় নামলে সুবিধা হবে বলে দিলেন,এমনকি স্টপ আসলে ওকে নামতেও সাহায্য করলেন।
বাস স্টপ থেকে হেটে মিনিট ১০ পর বাংলোটা দেখতে পেল। সামনে পুলিশ পাহারায়। দিপু গিয়ে পুলিশকে ভিতরে যাবার অনুমতি চাইতেই
সে বলল
……..কলকাতা থেকে আসছেন ? সাহেব আমাকে বলে দিয়েছেন একটু আগে, যান ভিতরে যান। আস্তে আস্তে দিপু ভিতরে ঢুকলো।
সামনেই একটা বড় ঘর, কয়েকজন লোক দাড়িয়ে, আর একজন বসে। দীপুকে দেখেই একজন বলে উঠলো
…….এইত এসে গ্যাছে, আসুন আসুন, ভিতরে আসুন। দিপু ভিতরে ঢুকলো।
দিপু ঢুকে দেখল ঠিক মাজখানে একজন বসে আছে, লম্বা দারুন স্বাস্থ্য, পিছন দিকে আচড়ানো চুল,দাড়িগোফ কামানো , বছর৪০-৪২ বয়েস হবে। দীপুকে দেখে কাছে আসতে বললেন। এইখানে দিপু একটা চাল দিল, ও ঝপ করে ভদ্রলোকের পায়ে হাতদিয়ে প্রনাম করলো।
ভদ্রলোক উঠে দাড়িয়ে দিপুর কাধে হাত রেখে সহাস্সে ইংরাজিতে বললেন
…… রাধা সকাল থেকে দুবার ফোন করেছে, যে তুমি এসেছ কিনা..আরে রাধা তোমাকে এখানে কেন পাঠালো, তুমি তো বম্বে গেলে পারতে।
মডেল বা হিরো হয়ে যেতে। এস, বলে ওকে একটু পাশে নিয়ে বললেন,
…….তিনটে লোক আমাকে কিছু করতে বললে, আমি তা করবই। এক, আমার দলের যিনি নেতা, ২।আমার স্ত্রী আর তিন ,ওই রাধা। এই
তিনজন আমাকে বললে আমাকে করতেই হবে। তুমি কোন সাবজেক্ট নিয়ে পরেছ?
……ইকোনমিক্স এ অনার্স।
…….বাহ, এখন তুমি বিশ্রাম নাও। এই মুকেশ, বাংলা জানে একটু একটু, ওর ঘরেই তুমি আপাতত থাক। খাবার ওর সাথেই খাবে। আর
দিল্লি শহর ঘুরে দ্যাখো। মোটর সইকেল চালাতে জানো , লাইসেন্স আছে ?
…….সার, আমি গাড়িও চালাতে জানি। আর সেই সূত্রেই রাধা মাসির সাথে পরিচয়।
…….বাহ, খুব ভালো। হয়ে যাবে কিছু একটা , রাধা পাঠিয়েছে .,না করলে খেয়ে ফেলবে আমাকে। আমার স্ত্রী আর রাধার খুবভাব। দুজনে
আমাকে শেষ করে দেবে।আমি রাধাকে জানিয়ে দিচ্ছি যে তুমি পৌছে গ্যাছো। হেসে বললেন।
তারপর , ডাক দিলেন “মুকেশ , ওকে তোর্ সাথে নিয়ে যা, নাস্তা পানির ব্যবস্থা করে দে। তোর্ ওখানেই একটা চৌকি পেতে বিছানা দিয়ে দে।
খাবার তোর্ ওখানেই। ঠিক আছে”। দিপু মুকেশের সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে বাংলোর পিছন দিকে একটা ঘরে ঢুকলো।
বড়ই ঘর দুজনের পক্ষ্যে,সাথে বাথরুম আছে।
মুকেশ ,প্রথমেই দীপুকে বলে দিল যে ও মাসে একবার কলকাতা যায় চা আনতে। ও এখানে অনেক দোকানে চা সাপ্লাই করে।বিরজুর সাথে
২ বছর আছে। লেখাপড়া বিশেষ কিছু হয়নি। রাতে মুকেশ রান্না করে খায় ,দিপুর যদি আপত্তি না থাকে তো খেতে পারে। আপত্তি? পেলে বর্তে
যায়। সুরু হলো দিপুর দিল্লির জীবন। পরের ৫ দিন সুধু mpর একটা পুরনো রাজদূত বাইক নিয়ে দিল্লি চক্কর মারলো। দেখার যে কটা জিনিস
আছে মোটামুটি দেখল। এক রাত্রি বেলা বিরজু ওকে ডেকে পাঠালো। সামনে বসিয়ে
……শোনো , প্রতিদিন আমার সাথে অন্তত ২০ জন লোক সকালে দেখা করতে আসে। কাল থকে তুমি, যারাই আসবে, কি কারণে আসছে,
নাম ধাম সব একটা খাতায় লিখে রাখবে। আর তাদের দেওয়া দরখাস্ত ফাইল করে রাখবে। তোমার টেবিল এর ডান দিকের ড্রআর খোলা
রাখবে। প্রতেকেই, ১০,২০, ৫০তোমাকে ওখনে দিয়ে যাবে। ওই টাকাতেই এখানে যারা আসে তাদের চা বিস্কিট ,তা ছাড়া ৮-১০ জন যারা এখানে থাকে, যেমন পার্টির লোক আছে, এ ছাড়া তুমি মুকেশ এরা আছো ,এদের খরচা চলে। কাউর কাছে চাইবে না, কে কত
দিল দেখবে না। কেউ যদি না দেয় , তো কিছু বলবে না, বা অন্য ভাবে নেবে না। লোকে খুশি হয়েই দেবে। সেটা তোমার ব্যবহারের উপর
নির্ভর করবে। এখন যে আছে, সে ইংরাজি একেবারেই বলতে পারেনা। আমি,ওই দরখাস্তর ওপরে ইন্সট্রাকশন দিয়ে দেবে, তুমি ইংরাজিতে
লিখে টাইপ করে আমাকে দিয়ে সই করে পাঠাবে। টাইপ জানো তো? জানো ? বাহ ,গুড। ফুল হাতা জামা জুতো পরবে।
আর লোক বুঝে ইংরাজিতে কথা বলবে। তোমার ইংরাজি বেশ ভালো। কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাবে। আর সব থেকে বড় কথা যেটা ,
যে কি লিখলে, বা কাকে লিখলে ,কেন লিখলে,সম্পূর্ণ গোপন রাখবে। কোনো ইন্সট্রাকশন পছন্দ না হলে,খোলা মনে আমাকে বলবে।অন্য
কাউর সাথে আলোচনা করবেনা। কাল সকাল ৭টা থেকে তোমার কাজ সুরু। খাতা পেন সব ড্রআরএর ভিতর চাবি দিয়ে চাবি নিজের কাছে
রাখবে। টাকা ,তুমিও রাখতে পারো আমাকেও দিতে পারো।আমি এই কাজের জন্য তোমাকে আলাদা করে ১০০০ টাকা দেব। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই.
……..সার টাকা আপনি রাখুন, বাকিটা আমি সব করব, পরের দিন সকাল ৭টা থেকে দিপুর নতুন জীবন সুরু হলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/6HOPzfd
via BanglaChoti

Comments