টান BY (ডিমপুচ) (পর্ব-১৭)

টান

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-১৭
—————————

কৌশিককে iit তে নামিয়ে পূবা দিপুর বাড়িতে আসল,দীপুকে ছাড়বার জন্য।ছন্দা আর শ্বশুর নিজেদের গাড়িতেই চলে গেছে।
……….মা, তুমি কোনদিন আমার ডেরা দেখনি না, এস আজ দেখে যাও। খুব একটা খারাপ ভাবে নেই, বাড়ি ছাড়ার সময় কল্পনার অতীত ছিল, এই রকম জায়গায় এই আস্তানা, এস। পূবা আর তপতী হাসি মুখে নেমে, উঠে রাধার ফ্লাট এ ঢুকে প্রথমেই বারান্দায় এসে দাড়ালো। একে একে সব ঘর, রান্না ঘর , বাথরুম সব ঘুরে ঘুরে দেখল, তপু আগেই দেখেছে, আজ মায়ের সাথে প্রথম। বাথরুম দেখে পূবা একটু নাক কচকালো
……….দিপু, রোজ পরিষ্কার করবি, পৃথিবী উল্টে গেলেও রোজ পরিষ্কার করবি, এইটা দেখেই একটি মানুষ কে অনেক খানি বোঝা যায়।
..দিপু হাসলো, দিপুর রান্নার সরঞ্জাম দেখে পূবা হেসে দিল,
……….না না , রাধা মাসি আসলে সব কিছু বার করি , কি হবে একলা মানুষ এতেই যথেষ্ট। হাসি মুখে বিদায় নেবার জন্য পূবা দরজার কাছে পৌছেছে
………মা, একটু কাছে এস
……..কেন রে দিপু , কিছু বলবি, দিপুর কাছে এসে দাড়ালো পূবা, দিপু মুখ ঝুকিয়ে পূবার কপালে চুমু খেয়ে কাঁধে মুখ রেখে
……..আমি তোমাকে আর তপুকে খুব ভালোবাসি মা, সত্যি বলছি, বেড়ে ওঠার বেলার না পাওয়ার ব্যথা আর নেই। তপু এদিকে আয়, ভালবাসার কন্ঠে ডেকে , তপুকে আর পূবাকে দু হাতে জড়িয়ে দুজনের মাঝে দিপু মুখ লুকালো, পূবা দু হাতে দিপুর মাথা ধরে, হাত বোলাতে বোলাতে
……..আমার যে আছে রে দিপু, আমি যে তোকে ধীরে ধীরে বড় হতে দেখতে পেলামনা দিপু। তুই তো এখন আর কোনো কিছু আবদার করবি না, অবাধ্য পনা করবিনা, তোকে শাসন করার কোনো সুযোগ আমি যে আর পাবনা রে দিপু, আমার ভিতর সেই বঞ্চনা চিরদিন থেকে যাবে দিপু। কনা কে হিংসা হয়, সে দেখেছে, তার মত করে সে তোকে শাসন করেছে, তোর্ অজান্তে ,কিন্তু ” আমি রব নিষ্ফল হতাশার দলে “, ..হঠাত দিপু সোজা হয়ে
………ওহ ওহ বলতেই ভুলে গেছি, মেঝকাকা রাজি হয়েছেন, এখন আমি কি করব।
……..বাহ, তুই এখুনি, ফোন করে পার্টিশন ডিড,এর xerox করে রাখতে বল। মা, তোর্ দাদুর মৃত্যুর পর কোর্ট এ গিয়ে বাড়ির পার্টিশন করেন। নিজে কোনো ভাগ রাখেন নি, তিন ছেলেকে তিনটে তলা ভাগ করে দিয়েছিলেন। তাতে তিন ভাইয়ের নাম পার্টিশন ডিড, হয়। ঐটাই বাড়ির দলিল। আমার উকিলকে আমি এখুনি ফোন করে বলছি, কাল বিকালে গিয়ে পবিত্রর কাছ থেকে xerox নিয়ে sale deed তৈরী করতে। তুই পবিত্রকে বলবি, যে উকিল ওকে একটা চিঠি দেবে, আর তার কপি received করিয়ে নেবে, আসল partition deed যেন না দেয়। উকিল ওখানেই xerox কপির সাথে মিলিয়ে আসল ওকে ফেরত দেবে। উকিল সাত দিনের ভিতর তৈরী করে পবিত্র কে একটা xerox কপি দেবে। পবিত্র কে বল দিল্লির টিকেট কাটতে, aug. এর ৭-৮ তারিকের। ফেরার টিকেট তুই করে দিবি, আর তুই তিন জনকেই আসতে বলবি, দিল্লি ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিবি। আমার বড় গাড়িটা আমি দিয়ে দেব তোকে। ইচ্ছা করলে নিজের উকিল কেও আনতে পারে, যদিও তার প্রয়োজন নেই। টাকা কতটা নগধ নেবে আর কতটা ড্রাফট নেবে জেনে নে,এক্ষুনি পূবা ফোন কর। ….দিপু অবাক হয়ে চেয়ে
………সতিই, তুমি কি জাননা বলত, এই সব খুটি নাটি শিখলে কথা থেকে …… হেসে দিল, দিপুর হাত ধরে
………ব্যবসা চালাতে হলে অনেক কিছুই জানতে হয়, তুইও জেনে যাবি , নে ফোন কর, তুই স্টেশন এ আনতে যাবি ….দিপু মার কথামত সব জানালো। মেঝকাকা রাজি হলো।
…….মেঝকাকা, তুমি কিন্তু বুলবুলি, আর কাকিমাকে নিশ্চই আনবে, আমি মথুরা, বৃন্দাবন, তাজমহল সব দেখিয়ে দেব, চিন্তা করার কিছু নেই, আমার ৩ খানা ঘর। …দিপু ফোন ছাড়া মাত্র পূবা ,কলকাতার উকিলকে ফোন করে সব বুঝিয়ে দিল,সে যেন নিশ্চই চিঠির কপি সই করিয়ে নেয় , অন্তত ৪ বার মনে করালো ।আর পুবার কথা ঘুনাক্ষরেও প্রকাশ করবে না।
……..দিপু, কোনো ঝামেলার কাজ ফেলে রাখবি না, কেননা আজ হোক বা কাল বা পরশু বা ২ বছর পর,ওই ঝামেলা থাকবেই, বরঞ্চ আরো বাড়বে, তাই ঝামেলার কাজ আগে করবি আর চিঠি তে সই করানোর কথা কেন বললাম জানিস ? ….দিপু বোকার মত মাথা নেড়ে না বলল
…….কোনো ভাগের সম্পত্তি বিক্রি করতে হলে,প্রথমে শরিক কে অফার করতে হবে। চিঠিতে সই করিয়ে নেওয়া মানে তুই কিনতে রাজি আছিস, এরপর পবিত্র আর কিছুতেই অন্য কাউকে বিক্রি করতে পারবে না, আর যদি করে, ১০০ হাত জলের তলায় পাঠিয়ে দেব। বিক্রির টাকা উকিলের পিছনে খরচা করিয়ে ছাড়ব, বুঝেছিস ….হাসি মুখে পূবা বলল।
………তপু, একটু পায়ের ধুলো নিয়ে কাগজে মুরে আমাকে দিস কাল, দিপুর গম্ভীর স্বরে পূবা আর তপু হেসে উঠলো
……..ব্যবসায় অনেক কিছুই করতে হয় এমনিতে যেটা করবনা, এটাও লেনদেনের ব্যাপার, আর এখানে আমার সন্তানেরা জড়িয়ে, প্রাণ দিয়ে দেব কিন্তু হার মানবনা। পূবা এখনো হেসে চলেছে। দরজার বাইরে এসে দিপু ……মা এক মিনিট দাড়াও …..বলে পার্বতীর দরজায় বেল বাজাল।সুধীর দরজা খুলতে
……..ম্যাডাম কই ? আমার মা এসেছেন, আলাপ করিয়ে দেব, পার্বতী ছুটে বাইরে এসে পূবাকে ভিতরে আসার অনুরোধ করলো, পূবা পরে আসবে বলে সৌজন্য বিনিময় করে প্রশান্ত মনে বিদায় নিল, এই আশায় যে আবার সিগ্রী দিপুর বাসায় আসবে। গাড়িতে ওঠার মুখেই
………মা, তুমিত বরিশালের মেয়ে, মাংসর ঝোল রাধতে পার, কষা টসা না, সিম্পল ঝোল, রাধা মাসি সবকিছুই ভালো রাধেন, কিন্তু মাংসর ঝোল রাধতে পারেননা, তুমি পারো ?
…….. সামনের শনিবার এইখানে আবার আমরা মিলিত হব, মাংসর ঝোল আর ভাত খাব,ঠিক আছে ? হাসি প্রায় কান এঁট করে দেবে
…….কি কি লাগবে বলে দিও সব কিনে রাখব
………. কিছু না, আরো কিছু আবদার, ব্যাস ….
পূবা সত্যি ভালো রাধে। দিপু শেষ কবে এত ভাত খেয়েছে,নিজেই মনে করতে পারেনি।
…………..মা, তুমি অসীম বাবুকে তোমার ফ্যাক্টরি তে কনসালটেন্ট হিসাবে নিলেই তো পার, উনি বেশ জ্ঞান গম্মি ওলা বলেই মনে হয়
………কথা হয়ে গেছে, নিমরাজি হয়েছেন। মনে হয় ছন্দা আবার সমুদ্রে ভাসলে উনি করবেন, দেখা যাক। আচ্ছা দিপু, তপু কি পারবে জয়েন্ট এ , কি মনে হয়?
……..পারবে বলেই আমার আর কৌশিকের বিশ্বাস। অঙ্কে বেশ ভালো, আমাদের স্কুলের যাদের চান্স পেতে দেখেছি, তাদের অনেকের থেকেই ভালো, আরে বহিন কিসকা হ্যায়,এ তো দেখিয়ে ……দিপু আজ খুশিতে ভরপুর।
……..তুই দিলেই পারতিস দাদা , ঠিক পেতিস ,
……এখন মনে হয়, দিলেই পারতাম। অঙ্কে আমি ৯০% হেসে খেলে পেতাম আর physics,কেমিস্ট্রি তেও খারাপ ছিলাম না, যাকগে, ইঞ্জিনিয়ার হলে তো তোকে পেতাম না, বা মাকেও পেতামনা। এইগুলো কি কম পাওয়া , বল …দিপুর কথায় কোনো আফসোস নেই ,…..কি জানিস তপু, আমাদের সবারই জীবন যেন ” পুতুল নাচের ইতিকথা ” আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে সুতোর টানে নেচে চলেছি। ভগবান,ভাগ্য এইগুলোতে আমার খুব একটা বিশ্বাস নেই।কিন্তু এইটা বুঝি আমি চাইলেই সব কিছু পাব না, চেষ্টা করতে পারি এই পর্যন্ত,তুই ইঞ্জিনিয়ার হলে আমার না পাওয়া, পাওয়া হবে।
………মা, একটা পরামর্শ দাও। আমাদের পাড়ায় নিতাই দার মোটর গ্যারাজ ছিল মনে আছে? পূবা ঘার নেড়ে হাঁ বলল ……তার ছেলে শিবু আমার ওই পাড়ায় একমাত্র বন্ধু ছিল। লেখাপড়া স্কুল ফাইনাল পাস করেছিল কোনো প্রকারে, কিন্তু মোটর এর কাজ ভালো জানে। এখন শিবু মিস্ত্রী যোগার করে পাড়ার বাড়িতে ছোট খাট কাজ করে, যেমন রং করানো, অল্প মেরামতি এইসব। ও কিছু টাকা চেয়েছে, একটু বড় করে করবে বলে, ওকে দিয়ে বাড়ির মেরামিতি করলে কি রকম হয়? ও আমার সাথে বেইমানি করবে না। ওকে বলে আমি জয়েন্ট এর প্রশ্ন পত্র আনিয়েছি, যেহেতু পাড়ার আমি ছাড়া ছোটবেলার থেকে ওর সাথে কেউ মিশত না , তাই আমার প্রতি ওর দুর্বলতা আছে। আর তপু ওখানে থেকে পড়লে, শিবুর বোন্ এর মত জানলে কেউ কিছু করতে সাহস পাবেনা। আমি তোমার আর তপুর ব্যাপারে ,খুলে বলিনি, ইঙ্গিত দিয়েছি। ও তো শুনে ” সেকিরে জ্যাঠাই মা ওখানে,” আমি ওকে বলেছি যে এখনো sure না, হলেও হতে পারে। ওকেও কি মেঝকাকার সাথে আসতে বলব? ওরা চলে গেলে না হয় খুলে বলব বা তোমাদের সাথে আলাপ করিয়ে দেব। ও তো তোমাদের দেখলে অজ্ঞান হয়ে যাবে। একটু শুনেই যা ভক্তি, বাপরে। তুমি কি বল?
…….খারাপ প্রস্তাব না, তুই আসতে বল , কথা বলে দেখি। আমি ১৫ মিনিট কথা বললেই বুজতে পারব কি রকম ছেলে। কতদিন পর এই নামে কেউ ডাকলো আমায়
………আর একটা ভালো খবর আছে। ছোটকা nov.dec. এর ভিতর কলকাতায় ট্রান্সফার হয়ে যাবে। তার আগে লিভ ফেয়ার নিয়ে দিল্লি আসবে, আমাকে বলেছে ” বড় বৌদিকে দেখব রে, আমরা খুব বন্ধু ছিলাম”
……..আমারও পুনুকে দেখতে ইচ্ছা করে। পুনু আমার থেকে ২ মাসের ছোট। আমরা শীতকালে ওই ৩ তলার ঘরে এক লেপের তলায় শুয়ে গল্প করতাম, পঙ্কজ আসলে অন্য পাসে সুতো আর লেপ ধরে টানতো, পুনুর লেপ সরে যেত আর তাই নিয়ে দুই ভাই ঝগড়া। দিপু, কোনদিন দুজনেরই কোনো রকম পাপ মনে আসেনি। তোর্ বাবাও আমাদের প্রশ্রয় দিত। আসলে ওই বাড়ির আমি প্রথম বউ বললে বউ, মেয়ে বললে মেয়ে, তাই পুনু বোন্ হিসাবেই আমাকে নিয়ে মনের স্বাদ মেটাত। পবিত্র আমার থেকে ৩ বছরের বড় ছিল,সেও কিন্তু আমায় খুব ভালবাসত ” বৌদি, গরম কাটলেট এনেছি, বা বৌদি, রাধুর দোকানের কিমা কারি এনেছি তোমার জন্য “. ওর বিয়েটা ভালো হয়নি। ছোট মনের বৌটা। কত স্মৃতি ফিরে এলরে দিপু। স্মৃতি সততই সুখের হয়। কিন্তু ওরা আসার আগে তুই এই ঘরবাড়ি পরিষ্কার কর, রাধাদী কিছু বলে না তোকে? বড় বেশি আস্কারা দেয় তোকে। রাধাদির ফোন নম্বর আমায় দে তো, বাড়ি গিয়ে ঝগড়া করি। ….এ কোন পূবা ? তপুর মুখ বেশ বড় হা হয়ে গেছে, এই মহিলাই কি আমার মা? দাদার কি পরশ পাথর আছে ?
……..তপু তোর্ মাত্র একটা, আমার কিন্তু তিনটে মা , ইঞ্জিনিয়ার হলে কি পেতাম …দেবতারা আকাশ থেকে এই ঘরটাতে খুশির রেনু বর্ষণ করেছেন?
পবিত্রর দিল্লি আসা, রেজিস্ট্রি হওয়া দিল্লি ঘুরে দেখা সব নির্বিগ্নে মিটল । শিবুও জীবনে প্রথম দিল্লি এলো। দেখে তো তাজ্জব ..” গুরু এখানকার মাগী গুলো তো দারুন রে, তুই লাগাসনা?”…..দিপু মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলল। মেঝকাকা,কাকিমা বুলবুলি, দিপুর আথিতেঅতায় মুগ্ধ। মন থেকেই আশির্বাদ করলেন দীপুকে। যতই হোক বাড়ির প্রথম সন্তান। ফিরে যাবার আগের দিন।
…….মেঝকাকা, তোমার আমার মাকে মনে আছে? দেখলে চিনতে পারবে ?
…….মরার দিন পর্যন্ত চিনতে পারব রে দিপু। আমাদের বাড়ির প্রথম বউ,তোর্ ঠাম্মার মেয়ে, তাকে চিনতে পারব না, কেন হঠাত জিজ্ঞাসা করছিস?
……এখনো sure নই, আমি একটা মেয়েকে অঙ্ক করাই, আমার পরচিত অনেকেই বলে যে আমার মুখ নাকি বসানো। কিন্তু সে আমার থেকে অনেক সুন্দর দেখতে, দেখলে চোখ ফেরানো যায়না , কিন্তু ওরা ‘মালহোত্রা’, তাই জিজ্ঞাসা করিনি কোনদিন। ভাবছি ছোটকা এলে ওর মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দেব,তখন বোঝা যাবে। উনি এখন দিল্লিতে নেই, নাহলে তোমার সাথেও আলাপ করিয়ে দিতাম, তাহলেই বোঝা যেত। কিন্তু একটু বাধ বাধ লাগে, মহিলা এখন প্রচন্ড বড়লোক, ভাবতে পারে পয়সার লোভে খুঁজে বার করেছি। …দীপুকে জীবনের সব থেকে আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়ে উত্তর দিলেন মেঝ কাকিমা

……. সত্যি যিনি নিজের সন্তান সম্বন্ধে যিনি এইরকম ভাবতে পারেন, তুই তার থেকে সাবধানে চলিস। আমি জ্ঞানত কোনো মাকে তার সন্তান নিয়ে এইরকম ভাবতে দেখিনি, এইরকম ভাবনা তোর্ ভুল হতেও পারে। দেখবি সত্যি হলে উনি আকুল হয়ে তোকে জড়িয়ে কাঁদবেন, তুই মহিলা কে জিজ্ঞাসা কর তোর্ বাবার নামে কাউকে চেনে কিনা। ওই এক প্রশ্নেই তুই সব উত্তর পেয়ে যাবি। দিপু অবাক হয়ে মেঝো কাকিমাকে দেখছে। মানুষ চেনা সবচাইতে কঠিন, কোন টান, স্নেহ, ভালবাসা ফল্গুধারার মতন অন্তরে বয়ে চলেছে, মানুষ নিজেই তা জানেনাl
পবিত্রদের রাজধানীতে তুলে দিয়ে শিবু আর দিপু বাইরে এসেই, দিপু পূবাকে ফোন করে
………মা, সব কিছু ঠিক আছে। তুমি আজ একবার তপুকে নিয়ে আসবে, শিবু কে চমকে দেব
………ঠিক আছে, আমি আর তপু আজ ৭-৩০ নাগাধ যাব, রাতের রান্না করিস না, আমি নিয়ে যাব
যথা সময় মা আর মেয়ে আসল। ড্রাইভার এর হাতে এক বিরাট টিফিন বাক্স। ঘরে ঢুকে বসে
…….এই ছেলেটা কে রে দিপু, এই তোর্ নাম কিরে? …শিবু উত্তর দেবে কি, মাছি ঢুকে যাবে এইরকম হা করে দুজনকে দেকছে, হঠাত, সাষ্টাঙ্গে সুয়ে পরে
…..জ্যাঠাই মা , তুমি , ওরে বাবা এ কি সাংঘাতিক ব্যাপার রে দিপু। পুরো পাগল হওয়ার ব্যাপার গুরু, জ্যাঠাই মা, আমি শিবু, আমার বাবার মোটর গ্যারেজ ছিল, আমি গেলেই তুমি,পড়া ধরতে, আর আমি কেটে পরতাম, একবার কেক খাইয়েছিলে এখনো আমার মনে আছে,.. তুমি! আমি মরে যাব রে দিপু। এই তোর্ বোন্, উফ, এই তুই এত সুন্দর কেন রে, কোন রেশন এর চাল খাস? শিবুর কথা বলার ভঙ্গিমা আর সরলতা পূবা ,তপু দুজনেরই ভালো লাগলো। তপু তো হি হি করে তার স্বভাব অনুযায়ী হাসিতে ভেঙ্গে পড়ছে, পূবা হাসি মুখে দেখছে,
…….তোর্ বাবা কেমন আছেন রে,শিবু?
……ওই না থাকার মতই, হাপানিতে কষ্ট পায় খুব,শীতকালে বেড়ে যায়, জ্যাঠাই মা, please পড়া ধরনা, কিচ্ছু লেখাপড়া শিখিনি …এইবার তপুর বাড়ি কাপিয়ে হাসি , সাথে পূবা আর দিপু
……….শিবু, তোর্ কথা দিপু আমাকে বলেছে।তুই বড় হয়েছিস, সব বুঝিস, তাই এই সাখ্যাত এর কথা কাউকে বলবিনা। তপু যদি কলকাতায় থেকে লেখাপড়া করে তুই একটু ওকে দেখবি তো, পাড়ার চ্যাংরা ছেলের তো অভাব নেই, তাই আরকি।
……..কি বলছ জ্যাঠাই মা, আমি মোটর মেকানিক এর ছেলে বলে কেউ তাদের ছেলেকে আমার সাথে মিশতে দিতনা, একমাত্র তুমি দীপুকে কোনদিন বারণ করনি, আর আমি আমার বোন্ কে দেখবনা, কোনো বাপের ব্যাটার হিম্মত নেই ওই অঞ্চলে শিবুর বোন্ কে কিছু বলে,হারামির হাত ভেঙ্গে দেব, বলেই জিভ বার করে …,মুখ খারাপ করে ফেলি জ্যাঠাই মা, ক্ষমা করে দিও, কি রে তপু কোন রেশন বললি না তো ? শিবুর বেশ রস জ্ঞান আছে, আর হাসি মুখ সব সময়, ভাষা একটু অন্যরকম কিন্তু সম্মান দিয়ে কথা বলতে পারে
……..হতভাগা, তুই একবারে চিনলি কি করে ? আমিও তো চিনতে পারিনি
…….একমাত্র জ্যাঠাই মা ছাড়া , এখন ছোট কাকিমা, ওই পাড়ার আর কোনো বাড়ির কোনো মহিলা ছেলেবেলায় আমাকে মানুষ বলে মনে করতনা, মেঝো কাকিমাও আমাকে দেখলে, বুলবুলিকে পাসে সরিয়ে নেয়, বড় অপমান লাগে, আর বাবা জ্যাঠা কে খুব শ্রদ্ধা করত,এখনো বলে ” ওই রকম মানুষ এই পাড়ায় আর হবে না, দেবতা ছিলেন”, আর আমি জ্যাঠাই মা কে চিনব না! আমি লেখাপড়া শিখিনি, কিন্তু মানুষ চিনতে ভুল হয়না। তুমি নিশ্চিন্তে থাক জ্যাঠাই মা, প্রাণ থাকতে কেউ তপুর চুল ছুঁতে পারবেনা,……সফল ব্যবসায়ী পূবা বুজলো শিবু অন্তত তাদের ব্যাপারে uncut diamond, ঘষে নিলে দ্যুতি বেরোবে।
……..নিতাই দা আর পঙ্কজ এক সাথে পার্টি করত। নিতাই দা অনেক ছেলেকে গ্যারেজে রাতে লুকিয়ে রাখত,পঙ্কজের সব চাইতে বিশ্বাসী ছিল নিতাই দা, তুই বলিস বাবাকে আমি কিন্তু কিছুটি ভুলিনি …পূবার কথা শুনে শিবু ডান হাতের কনুই ভাজ করে চোখ মুছলো ,
… ……..আমার খুব ভালো মনে আছে, হেমন্ত বসু যেদিন খুন হলেন , সেইদিন সুধু পঙ্কজের পার্টি নয়,অন্য বাম দল, এখন যারা ক্ষমতায়, তাদের ছেলেদেরও নিতাই দা ৩ দিন গ্যারেজ এ লুকিয়ে রেখছিল। গ্যারেজ বন্ধ রেখেছিলেন, খুব সাহস ছিল, আর কি পেটানো শরীর, পঙ্কজের বডি গার্ড ছিল নিতাই দা, তুই বলিস শিবু সব মনে আছে। ৭২ এর পর তো ওই গ্যারেজ এর পিছন দিকের দরজা দিয়ে প্রতি রাতে অন্তত ৮-১০ টা ছেলে ঢুকে ঘুমত আর দিনের ৭ টার ভিতর বেরিয়ে যেত। সারাদিন মনুমেন্ট এর তলায় বা ইডেন গার্ডেন এ ঘুরে বেড়াত আর রাতে নিতাই দার গ্যারেজ। খাবার এর পয়সা দিত পঙ্কজ, কি দারুন দিন ছিল সেইসব। পূবার স্মৃতি চারণ বাকিদের ছুয়ে গেল …চুপ করে বেশ কিছু সময় পার হলো

খাওয়া দাওয়া শেষ হলে, পূবা ,শিবু আর দিপু বসে ঠিক করলো শিবু ছোট করে প্রমোটারী ব্যবসায় নামবে। দিপু, ওকে প্রথমে ৫ লক্ষ্য দেবে, ফার্ম দিপু আর শিবুর নাম হবে,কিন্তু কাজ সব শিবু কেই করতে হবে। শিবু অবাক হয়ে পূবার দিকে চেয়ে কেঁদে দিল।
…….আরে তুই কাঁদছিস কেন, হতভাগা ,দিপু হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলো
…….জ্যাঠাই মা, তুমি ৫ লক্ষ্য দিতে বলছ, কিন্তু পাড়ায় কেউ ৫০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করে নি কোনদিন। কাঁদবনা, তো কি, দিপুর সাথে কোনদিন বেইমানি করবনা, তাহলে যেন আমার কুষ্ঠ হয়
…….ব্যাটা, নেকামি করছিস, অন্য রোগ বল,কুষ্ঠ এখন বেমালুম সেরে যায়, বল তাহলে যেন তোর্ aids হয়
…….ধ্যাত , তুই কিরে, মায়ের সামনে নোংরা রোগের কথা বলছিস , ..শিবু এইবার একটু ধাতস্ত হলো
……..শিবু, আমি ১৫ বছর পর কলকাতা যাব, তুই পুনু আর কনার সাথে কথা বলে, বাড়ির মেরামতি করবি, আর একটা করে বাথরুম প্রতি তলায় করতে হবে। কর্পোরেশন থেকে পার্মিসিওন বার করা তোর্ দায়িত্য, টাকা যা লাগে আমি দেব,কিন্তু ঝামেলা তোর্, লাভ তোর্, রাজি,?..শিবু শুয়ে পরে পূবার পা ছুয়ে কথা দিল।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/VAN6JoO
via BanglaChoti

Comments