কাজলদিঘী (ষষ্ঠ কিস্তি)

কাজলদিঘী

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

ষষ্ঠ কিস্তি
—————————

আকাশে সূর্য্য ওঠার পূর্বাভাস, আমি পাজামা পাঞ্জাবী পরে সিগারেটের প্যাকেট মোবাইলটা পকেটে ঢোকালাম, নীপার কাছে গিয়ে ওর পাছুতে হাত রাখলাম, নীপা আমার দিকে তাকালো, ওর আয়ত চোখ দুটি ভিজে কাদা হয়ে গেছে, আমি কিছু বললাম না, ওর কপাল ঠোঁট ছোঁয়ালাম, বেরিয়ে এলাম। নীচে নেমে দরজাটা ভেতর থেকে টেনে বন্ধ করলাম, খামারে এসে দাঁড়ালাম, পেছন ফিরে তাকালাম, নীপা জানলা থেকে মুখ সরিয়ে নিল, আমি মাঠের পথ ধরলাম।

প্রথমে পড়বে চন্দ্র পাড়া, তারপর তাঁতী পাড়া, তারপর কামার পাড়া, একেবারে শেষে হাঁড়ি পাড়া, হাঁড়ি পাড়া পেরিয়ে আমার গন্তব্যস্থল দীঘা আড়ি। আমার এক সময়ের সবচেয়ে মনকারা জায়গা, আমি ওখানে গেলে কেমন যেন নিজের মধ্যে নিজে হারিয়ে যাই। সোনাঝড়া রোদ কচি ধান গাছের গায়ে আবির লাগিয়ে দিয়েছে, এরি মধ্যে কেউ কেউ মাঠে নেমে পরেছে, এখন বাছার (আগাছা পরিষ্কার করা) সময়, কয়েকদিন পর, ধানের বুকে শীষ আসবে, এই সময় একটু যত্ন আত্তি করতে হয়। কেউ আমার দিকে তাকালো, কেউ তাকালো না, সাঁওতাল মেয়েগুলো নীচু হয়ে ওদের ভাষায় মিহি সুরে গান করছে, ওদের শরীরগুলো সত্যি দেখার মতো, কালো কষ্টি পাথরে কোন শিল্পী যেন কুঁদে কুঁদে ওদের সৃষ্টি করেছে। খালি গায়ে বুকের ওপর কাপড়টাকে পেঁচিয়ে পরেছে, নীচু হয়ে কাজ করায় ওদের অনাবৃত বুকের কিছুটা দেখা যাচ্ছে, আমি আর চোখে মাঝে মাঝে ওদের দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি।

হাঁড়ি পারা পেরিয়ে চলে এলাম দীঘা আড়ি, আঃ যেমন দেখেছিলাম আজ থেকে দশ বছর আগে ঠিক তেমনি আছে, বরষার সময় দুকুল পেরিয়ে জলের ঢল নামে, এখন জল অনেকটা মরে গেছে, তবু যেটুকু আছে তা নয়নাভিরাম, মাঝখানে পানকৌড়ি আর সরাল পখির হুটো পুটি, আকাশ থেকে ডানা মেলে ঝুপ করে জলে আছড়ে পরছে বক, কোকিলের কুহু কুহু স্বর চারিদিক ম ম করছে, এত প্রচন্ড নিস্তব্ধতা যে নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ নিজে শুনতে পাচ্ছি। কালীচরণের ঝিকে নিয়ে ভানুর সেই কীর্তিকলাপের জায়গায়টায় একটু থমকে দাঁড়ালাম, চোখ বন্ধ করলে এখনো সেই দৃশ্য আমি দেখতে পাই। পায়ে পায়ে আমার সেই চেনা ঝোপের ধারে এসে বসলাম, এখন অনেকটা নোংরা হয়ে গেছে, কেউ হয়তো আসে না, আমার মতো পাগল কজন আছে, আমি একটু পরিষ্কার করে বসলাম, পেছনটা ভিজে গেল, বুঝলাম, সারারাতের শিশির স্নাত ঘাসগুলি আমাকে স্নান করিয়ে তার কোলে জায়গা দিল। দীঘির জল কাঁচের মত ঝকঝকে, স্থির। মাঝে মাঝে একটা দুটো মাছ লেজ নেড়ে দীঘির জলে কাঁপন তুলছে, কাঁপা কাঁপা ঢেউগুলি কিছু দূরে গিয়ে আবার মিলিয়েও যাচ্ছে। সূর্যের আলো এসে পরেছে দীঘির জলে, তার আলো ছায়ার স্পর্শ গাছের ডালে, তার পাতায়।

ঝন ঝন করে ফোনটা বেজে উঠলো, মনেই ছিলো না, পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম, মিত্রার ফোন।
-কখন ঘুম থেকে উঠলি।
-চারটে।
-যাঃ।
-হ্যাঁরে।
-এখন কোথায়।
-আমার স্বপ্নের সেই জায়গায়।
-কোথায় বসে আছিস বলতো পাখির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।
-সে অনেক কথা, ফোনটা অফ করিস না কথা না বলে শুধু শুনে যা। আমি লাউড স্পিকার মুডে এলাম, মিত্রা মনে হয় গাড়ি করে কোথাও যাচ্ছে, গাড়ির হর্ণের আওয়াজ পাচ্ছি।
-কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি।
-হারিয়ে যাই নি, হারায়ে খুঁজি।
-বাবাঃ কবি কবি ভাব, ছন্দের অভাব।
-শুনলি।
-হ্যাঁ। লাইভ।
-সত্যি তাই। আমি সেই ঝিলের ধারে একা।
-একা একা কেন, দোকা করে নে।
-কে আসবে বল।
-চাইলেই পাবি।
-সব চাওয়া, পাওয়া হয়ে ওঠে না।
-ঠিক বলেছিস বুবুন।
-জানিস মিত্রা এখানে এই সকালটা এতো ভালো লাগে তোকে বোঝাতে পারব না, পৃথিবীতে অনেক কিছু আছে যা ভাষা দিয়ে বোঝানো যায় না, তাকে অনুভব করতে হয়।
-কবে আসছিস।
-ঠিক নেই।
-তার মানে।
মিত্রাকে এখানকার সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।
-বুঝেছি তুই অনেক সমস্যায় পরে গেছিস। দাদাকে বলেছিস।
-এখনও বলি নি।
-হ্যাঁরে তুই বড়মাকে ফোন করিস নি।
-কেনো।
-গতকাল বড়মা আমায় প্রায় পনেরো বার ফোন করে তোর খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ভেবেছে, আর কাউকে তুই ফোন করিস আর না করিস আমাকে অবশ্যই করবি।
-বড়মার ধারণাটা অন্যায় না। সবাইকে ফাঁকি দিতে পারি, বড়মা ছোটমাকে ফাঁকি দিতে পারবো না।
-কাকার ব্যাপারে কি ডিসিসন নিলি।
-আজ বারোটার পর জানতে পারবো।
-আমাকে জানাস।
-জানাবো।
-ভুলে যাবি।
-নারে বিশ্বাস কর এখানে মাঝে মাঝে টাওয়ার থাকে আবার চলে যায়। তোরা বরং ফোন করিস না, আমিই তোদের করবো। ওদিককার খবর কি।
-হিমাংশু সমস্ত এ্যারেঞ্জ করে দিয়েছে। তুই এলে ফাইন্যাল হবে।
-তুই এখন কোথায়।
-সকালে কি মনে হলো, একটু গঙ্গার ধারে গেছিলাম, স্নান করলাম, অনেক পাপ করেছি, এখন ফিরছি।
-একা না কেউ সঙ্গে আছে।
-আমি তোরই মতো, তুই ঝিলের ধারে একা, আমি গঙ্গার থেকে একা ড্রাইভ করে ফিরছি।
-অফিসে গেছিলি।
-না । তুই বারণ করেছিস। অমান্য করতে পারি না।
-আমি কে।
-শুনতে ইচ্ছে করছে। বাঁদর।
হাসলাম।
-হাসছিস । তোর লজ্জা করে না।
-না।
-হ্যাঁরে টাকা পয়সা সঙ্গে আছে।
-খুব বেশি নেই।
-তোর ঠিকানা বল।
-তুই বাড়ি ফিরে যা, প্রয়োজন হলে বলবো।
-উঃ তুই মচকাবি তবু ভাঙবি না।
-এইটুকু নিয়েই তো বেঁচে আছি। এই পৃথিবীতে আমার বলে কে আছে বল।
-চোখ মেলে তাকা, বুঝতে পারবি।
হাসলাম।
-আবার বোকার মতো হাসছিস।
-আসবি এখানে।
-তুই বললেই ছুটে চলে যাব।
-থাক।
-থাক কেন।
-উঃ তুই বড় জালাতন করিস।
মিত্রা কোন কথা বলছে না। খালি গাড়ির হর্নের আওয়াজ, ক্যাঁচ করে ব্রেক চাপার শব্দ, বুকটা ধরাস করে উঠলো।
-কি রে কথা বলছিস না কেনো, মিত্রা মিত্রা।
-এখন রাখি। গলাটা ধরা ধরা।
-কি হয়েছে বলবি তো।
-তোর এই সময় আমি কি তোর পাশে থাকতে পারি না।
-কাঁদছিস কেনো।
-কই কাঁদলাম।
-আমি দেখতে পাচ্ছি।
-ধ্যুস।
-ঠিক আছে এখানে ডেটটা ফাইন্যাল করে তোকে জানাবো।
-জানাবি ঠিক।
-বললামতো জানাবো।
-বিকেলে একবার ফোন করিস, বড় একারে।
-আচ্ছা।

মিত্রা ফোনটা রেখে দিল, কয়েকজন লোক দীঘির পাড়ে এসেছে, ওরা মনে হয় মাছ ধরবে, ওদের কাঁধে জাল দেখছি, কলকাতার ভেঁড়িতে মাছ ধরা দেখেছি, আর এখানকার দীঘিতে মাছ ধরা দেখেছি দুয়ের মধ্যে কত তফাত। না আর বসে থাকা যাবে না, সূর্যের রং বলছে অনেক বেলা হয়েছে, মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে, সময় দেখলাম, নটা বাজতে যায়।

ফেরার পথে অনেকের সঙ্গে দেখা হল, কাউকে চিনতে পারলাম কাউকে পারলাম না, স্মৃতি থেকে মুছে গেছে, চন্দ্র পাড়ায় অনাদির বাড়ির কাছে এলাম, দুটো বাচ্চা, ওদের খামারে খেলা করছে, ধুলোয় ঢাকা শরীর, হাসলাম, আমিও একসময় এরকম ছিলাম, গ্রামের ছেলেরা ধুলো ঘাঁটতে খুব ভালবাসে, মেয়েটা মনে হচ্ছে বড়। কত বয়স হবে পাঁচ কি ছয়, ছেলেটা তিন কিংবা চার, একজন আর একজনের মাথায় ধুলো দিচ্ছে, আমি খানিকক্ষণ ওদের খেলা দেখলাম, ওরা মাঝে মাঝে আমার দিকে জুল জুল করে তাকাচ্ছে।
-অনাদি বাড়ি আছিস
একজন বছর চব্বিশের অটপৌরে ভদ্রমহিলা উঁকি দিয়েই আবার ভেতরে চলে গেলো, গরুগুলো খামারের এক পাশে বাঁধা, খড় চিবোচ্ছে, অনাদিরা এ গাঁয়ের সম্ভ্রান্ত কৃষক, ভালো পয়সা আছে, তাছাড়া এখন গ্রাম পঞ্চায়েত হয়েছে, নিশ্চই কিছু পয়সাকড়ি করেছে, একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন, প্রথমে ঠাহর করতে পারি নি, পরে বুঝলাম, কাকাবাবু, অনাদির বাবা।
আমি এগিয়ে গেলাম, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম, কাকাবাবু থাক থাক করলেন।
-কে বাবা।
-আমি অনি।
-আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এ কি করলি অনি এই সাত সকালে।
-কি করলাম।
-তুই আমাকে প্রণাম করলি।
-কেনো!
-তোরা ব্রাহ্মণ, আমরা কায়েত। কায়েতের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে নেই।
-ওঃ , তোমরা আমরা গুরুজন।
কাকু আমার গায়ে মাথায় হাত বোলালেন, সৌদামিনি ও সৌদামিনি দেখবে এসো কে এসেছে, জানিস বাবা কাল তোর ঘরে গেছিলাম, তোকে একবার দুচোখ ভরে দেখতে।
-কেনো।
-তুই কত বড় হেয়েছিস, চারিদিকে তোর কত নামডাক।
-এই তো আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কোথায় বড় হয়েছি।
কাকীমা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন, কে এসেছে গো, কে এসেছে।
-আমাদের অনি এসেছে গো দেখো দেখো।
তাকিয়ে দেখলাম, বারান্দা থেকে সেই ভদ্রমহিলা উঁকি দিয়ে আমাকে দেখছেন। বাচ্চাগুলো পায়ে পায়ে আমার কাছে এসে হাজির। কাকীমা কাছে এলেন, আমি নীচু হয়ে প্রণাম করতে গেলাম, কাকীমা হাত ধরে ফেলেছেন, না বাবা তুই প্রণাম করিস না, তোর বাপ মাকে আমরা প্রণাম করতাম, আজ বেঁচে থাকলে তারা দেখতো তাদের অনি কত বড় হয়েছে।
মাথা নীচু করলাম, ও কাঞ্চন আয় এদিকে আয় দেখে যা, অনিকে।
-কেনো আমি কি কোনো দ্রষ্টব্য বস্তু।
-না রে তোর কথা প্রায় আলোচনা হয়, ওরা তোকে দেখে নি। ভাবে লোকটা কে।
-মেয়েটি কাছে এলো, বেশ দেখতে, অযত্নে মরচে পরে গেছে। ঘোমট দেওয়া। আমায় প্রণাম করতে চাইলো। আমি বললাম থাক থাক, প্রণাম করতে হবে না।
কাকীমা বললেন, অনাদির বউ।
-তাই নাকি।
-একটা ছেলে একটা মেয়ে।
মাথা নীচু করে হাসলাম।
-একটু চা করি, বসুন। কাঞ্চন বললো।
-না। থাক আর একদিন এসে খাবো। অনেক সকালে বেরিয়েছিলাম, কেউ জানে না।
-কোথায় গেছিলি। কাকা জিজ্ঞাসা করলেন।
-দীঘা আড়ি।
কাঞ্চন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। ওর আয়ত চোখে কত বিস্ময়, ঘোমটা সরে গেছে, মাথার সিঁদুর ফিকে, এলোমেলো চুল মুখের ওপর এসে পরেছে।
-কাকা, অনাদি কোথায়।
-ও আর দিবাকর রাত থাকতে বেরিয়েছে, বললো একটু টাউনে যাবে কি কাজ আছে।
-ও। ঠিক আছে আমি আসি।

বড়মতলার পুকুর ঘাটে সেই পেয়ারা গাছটা এখনো অটুট, কয়েকটা বাচ্চা গাছটার ডাল ধরে দাপা দাপি করছে, পেয়ারা ছিঁড়ে খাচ্ছে, গ্রামের ভাষায় এজমালি গাছ, সবার অধিকার। এক সময় এর ডালে কত নাচানাচি করেছি, গ্রীষ্মের দুপুরে ওর ডাল থেকে, পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছি, মনট কেমন আনচান করে উঠলো, আরে দাঁত মাজা হয় নি। আমি কাছে গিয়ে একটা সরু ডাল ভেঙে নিয়ে দাঁতনের মতো করে নিলাম, কিছুক্ষণ গাছটার তলায় দাঁড়ালাম, মগডালে, কয়েকটা পেয়ারা হয়েছে, কিছুতেই লোভ সামলাতে পারলাম না, বাচচাগুলোকে ঈশারায় কাছে ডেকে নিলাম, ওরা প্রথমে কিছুতেই আসতে চায় না, তারপর আমার ওপর বিশ্বাস জন্মালো কাছে এগিয়ে এলো, আমি গাছে উঠলাম, মগডাল থেকে পেয়ারা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ওদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে ফেললাম, ওদের সে কি আনন্দ কি চেঁচামিচি, আমি দুটো পেয়ারা ওদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক হিসাবে চেয়ে নিলাম, কে আমাকে পেয়ারা দেবে তার কমপিটিশন লেগে গেলো, আমি এদের কাউকে চিনি না জানি না, সবাই কাকু আমারটা নাও, কাকু আমারটা নাও, আমি দুজনের কাছ থেকে পেয়ারা নিলাম। বড়মতলার পুকুর ঘাটে মুখ ধুলাম। বাড়ির পথ ধরলাম।

খামারে উঠতেই নীপার গলা শুনতে পেলাম, ঐ উনি আসছেন, মূর্তিমান বিভীষিকা, যাও ভাইপোর কাছে হিসাব চাও তিনি কখন কোথায় গেছিলেন।
কাকা আমতা আমতা করছে নীপার কথায়।
আমি দাওয়ায় পা রাখলাম।
-দীঘা আড়ি ছাড়া কি তোমার আর জায়গা নেই। নীপা বললো।
মুখ নীচু করে হাসলাম। চারিদিকে চোখ বোলালাম, আরো অনেকে বসে আছেন, কাউকে চিনি না।
কাকীমা বললেন, ওঃ গিন্নী হয়ে গেছেন ধমক্কাচ্ছে দেখ ছেলেটাকে কেমন। হ্যাঁরে বাবা চাটা কিছু না খেয়ে কোথায় গেছিলি।
বললাম।
-সে তো আমি এখুনি শুনলাম, কালিচরণের ঝির কাছ থেকে।
একটু চমকে গেলাম। কালিচরণের ঝি।
-হ্যাঁ। ওতো বাইশটিকীর কাছে মাঠে কাজ করছিল তোকে দেখেছে।
-ও।
-কি খাবি।
-কিচ্ছু না।
-তার মানে।
-কলকাতায় এত সকালে খাওয়া জোটে না।
-তুইতো তোর সাহেবের বাড়িতে থাকিস।
-থাকতাম । এখন থাকি না।

কাকীমা একটু অবাক হলেন। নীপা তোর জন্য আলু ভেজে রেখেছে মুড়ি দিয়ে মেখে দেবে বলে।
নীপার দিকে তাকালাম, ভেঙচি কেটে মুখটা ঘুরিয়ে নিল। দাও একটু খানি, বেশি না।
নীপা ছুটে চলে গেলো।
-তুই চিনতে পারিস এদের। কাকা বললেন।
-না।
-এরা পাশের গ্রাম থেকে এসেছে।
আমি বললাম, ও। নমস্কার করতে আর পারছিনা। কালকে থেকে নমস্কার করতে করতে কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে। ক্যাবলা ক্যাবলা চোখে সবার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম।

-তোমার কথা অনেক শুনি গো ছোটবাবু।
বুঝলাম কাকা বড়বাবু, আমি ছোটবাবু।
-তা বউমাকে সঙ্গে আনলে না কেনো।
কাকা ধমকে উঠলেন, ছুঁচচা ও এখনো বিয়েই করে নি, বউমা।
-তা কি করে জানব বলতো বড়বাবু।
নীপা মুড়ির বাটি দিতে এসে ফিস ফিস করে বললো, ওপরের ঘরে এসো কথা আছে।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
মুড়ি খেলাম। চা খেলাম। অনাদি আর দিবাকর বাইক নিয়ে খামারে এলো। খামার থেকেই আমাকে দেখতে পেয়েছে। পায়ে পায়ে দাওয়ায় এলো।
-কে এলো।
অনাদি বললো স্যার আমি অনাদি। দিবাকার কাকার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
-কে।
-স্যার আমি দিবাকর।
-বাবাঃ অনি এসেছে, তাই তোদের দেখা পাই।
দিবাকর মাথা চুলকাচ্ছে, নীপা ছুটে চলে গেলো। ব্যাপরটা বুঝলাম না। অনাদি বললো, চল একটু কথা আছে।
আমি কাকাকে বললাম, কাকা আমি যাই ওরা এসেছে, ওদের সঙ্গে কথা বলি।
-যাও।
ও বাড়িতে গেলাম, ঘরে ঢুকতেই নীপা কট কট করে আমার দিকে তাকালো, ঘর গোছাচ্ছিলো, আমার পেছন পেছন অনাদি, দিবাকর ঢুকলো।
-এই নীপা একটু কড়া করে চা বানা।
-সে আর বলতে, সব চা খোর এক সঙ্গে জড়ো হয়েছো।
-ঠিক বলেছিস।
-মুড়ি খাবে।
-সকাল থেকে পেটে কিছু পরে নি।
-কি রাজ কার্যে গেছিলে।
-সে অনেক কাজ তুই বরং একটু চা নিয়ে আয় পরে মুড়ি আনবি।
নীপা চলে গেলো।
অনাদি প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করলো, আমি বললাম রাখ, আমি এক প্যাকেট শখ করে কিনে এনে ছিলাম, কটা আর খাব, তোরা খা। প্যাকেটটা বার করলাম, অনাদি দেখে বললো,
-আরি বাবা, এত দামি সিগারেট খাবো না।
-এটা কি দামি সিগারেট।
-হ্যাঁ।
-জীবনে প্রথম নিজের হাতে কেনা। বলতে পারবো না।
-কলকাতায় তোকে সাংবাদিক বলে কেউ চেনে।
আমি চুপ থাকলাম।
অনাদি একটা সিগারেট বার করলো, দিবাকরকে একটা দিলো। আমিও একটা সিগারেট ধরালাম।
-তুই শালা বললি সিগারেট খাস না, যে ভাবে খাচ্ছিস এতো পাক্কা সিগারেট খোরের মতো টান।
-আমার বসের নকল করা।
ওরা হাসলো।
-শোন অনি সব ব্যবস্থা করেছি। মাইক্রো সার্জারি হবে, খরচ একটু বেশি তবে কয়েক ঘন্টার ব্যাপার কাকাকে নার্সিং হোমে ঘন্টা পাঁচেক থাকতে হবে, তারপর ছেড়ে দেবে।
-তাহলে খুব ভালো।
-কিন্তু ভাই রগঢ়াটা অনেক বেশি।
-কতো।
-পঁয়ত্রিশ চাইছে।
-এখানে এটা ঠিক আছে, কলকাতা হলে হাজার পঁচিশের মধ্যে হয়ে যেতো।
-তুই এর রেট জানিস।
-হ্যাঁ।
-অমিতাভদার করিয়েছি।
-এই নার্সিং হোমটা এখানে খুব নাম করেছে। ইকুইপমেন্টও বেশ ভালো।
-কোথায়। স্টেশনের পাশে বম্বে রোডের ধারে।
-তাহলে তো একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।
-সে হয়ে যাবে।
নীপা মুড়ির বাটি নিয়ে ঢুকলো, তুমি তো এক পেট গিললে আবার হবে নাকি।
-না। তবে একটু চা হলে ভালো হয়।
-হবে। অনিদা চা কি এখুনি আনবো না পরে।
-তোর আনতে আনতে মুড়ি টেনে দেবো, চাষার ছেলে।
আমি হাসলাম।
-তোকে খুব শাসন করছে না।
-সে আর বলতে, আমি তো খুব ভয় পেতে শুরু করেছি।
-তুই জানিস না, এ তল্লাটের দিদিমনি বলে কথা।
-অনাদিদা ভাল হচ্ছেনা বলে দিচ্ছি।
-তুই খালি সাপ্লাই লাইনটা ভাল রাখ তাহলে তোর কোন গুণের কথা অনিকে বলবো না।
নীপা বেরিয়ে গেলো, দিবাকর বললো দাঁড়া একটু আসি। বলে বেরিয়ে গেলো। অনাদি হাসলো।
মুড়ি খেতে খেতে অনাদি বললো, তুই রাজি হলে আজই বুক করতে হবে।
-কত লাগবে।
-পাঁচ লাগবে।
-পাঁচ কি হাজার না পাঁচশো।
-গান্ডু হাজার হাজার।
-চল তাহলে দিয়ে আসি।
-অনি আছিস নাকি।
বাসুর গলা মনে হলো। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম কে বলতো।
-আবার কে বাসু হারামজাদা।
-ওকেতো দুপুরে আসতে বললাম।
-শালার এই কদিন ব্যবসা লাটে। অনাদি বললো।
অনাদি বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেলো। এসো সেগোরা এসো, একটু মেরে দিয়ে যাও।
বুঝলাম বাসু একলা না। আরো অনেকে এসেছে। সিঁড়িতে হুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ আমার ঘর ভরে গেলো। কালকে যারা দলে ছিলো না, তারাও এসে হাজির। সকলেই আমাকে দেখে খিস্তির বন্যা বইয়ে দিলো। সঞ্জীব, চিকনা, পলা। অনাদি বললো সঞ্জীব এখন বর বেওসায়ী।

সঞ্জীব অনাদিকে তেরে খিস্তি দিলো, হারামী বাঁধে মাটি ফেলা নিয়ে কত ঝেড়েছিস বল।
আমি বললাম থাম থাম।
-কেনো থামবো বল অনি, যখনি শালার সঙ্গে দেখা হবে তখনি আমাকে এইভাবে বলবে।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তোর এখনো মাথাটা……..
নীপা ঢুকলো। সবাইকে দেখে ও চোখ দুটো এমন করলো…….আমি আর চা করতে পারবো না।
চিকনা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, এই কথা, চল দেখিয়ে দে চায়ের জায়গাটা তারপর বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।
-হ্যাঁ চলো না, মনিমা আছে দেখতে পাবে।
-ওরে বাবা, তাহলে আমি নেই, ভানু তুই যা।
স্যার বসে আছেন।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, নীপা যাও একটু কষ্ট কর আমার জন্য।
-তোমার জন্য করতে আমার একটুও অসুবিধা নেই। এদের জন্য পারবো না।
-দেবী দেবী কেন তুমি ক্রোধান্বিত আমাদের ওপর, আমরা তো তোমায় আবাহন করিতেছি……..।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম পলার কথায়।
নীপা কট কট করে পলার দিকে তাকালো। আমাদের ড্রেস মেটেরিয়াল রেডি।
-রেডি ম্যাডাম যখন যাবেন পেয়ে যাবেন।
নীপা চলে গেলো, অনাদি বললো দাঁড়া অনির একটা ব্যাপার নিয়ে আমি আর দিবাকর সকালে ব্লুপ্রিন্ট নার্সিং হোমে গেছিলাম এই আসছি। সবাই চুপ করে গেলো। অনাদি সমস্ত ব্যাপারটা বললো, স্যারের এরকম অবস্থা আমরা কেউ জানি না।
-তোরা খোঁজ খবর রাখিস নি।
-আমাদের হাটের কোন ডাক্তারবাবুকে দেখিয়েছিলেন।
-ছাড় ও সব কথা।
-কাজের কথায় আসি। পরশু যদি অপারেশনের ব্যবস্থা করি তোদের পাবো তো।
-হারামী এটা আবার জিজ্ঞাসা করতে হয়, নেতা হয়েছিস না ঘর মোছার নেতা। চিকনা বললো।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে। ভানু গাড়ির ব্যাপারটা।
-চল যাচ্ছি তো, গোড়ার সঙ্গে কথা বলে চলে আসবো।
-কখন বেরোবি। চিকনা বললো
-তাহলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে বেরিয়ে যাই চল।
ঠিক হলো আমরা ছজন যাব, বাসুর একটা বাইক অনাদির একটা বাইক আর চিকনার একটা বাইক। সঞ্জীব ভানু আর আমি। আর সবাই বললো আমরা কি আঙুল চুষবো।
না হাতের কাজ শেষ করে নে, পরশুদিন ওখানে সবাইকে যেতে হবে। সারাদিন লেগে যাবে।

সবাই মেনে নিল অনাদির কথা।

নীপা চা নিয়ে এলো, হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো কত কি হলো, সবার মধ্যমনি, নীপা আমাদের আড্ডায় কিছুক্ষণ অংশগ্রহণ করলো। চিকনা ধমকে বললো বড়দের আড্ডায় ছোটদের থাকতে নেই।
-আমি এখন এ্যাডাল্ট।
নীপা এমনভাবে কথা বললো সবাই হেসে উঠলো, সঞ্জীবের দিকে তাকিয়ে বললাম, হ্যাঁরে তোর দোকানে টিভি আছে।
আনাদি বললো আছে মানে কি চাই বল।
-দেখলি ব্যবসার কথা হলেই কেমন টোকে।
-উঃ সব কথা গায়ে মাখিস কেনো। আমি বললাম।
-এই হলো কাল, তোর কথা ভাঙিয়ে কত কাজ বাগায় জানিস ও।
-সে তো ভালো।
-হ্যারে শালা আমি করি, তুই করিস না।
সঞ্জীব হেসে বললো করি তবে কম। তবে একটা কথা কি জানিস তোকে সবাই বেশ ধসে।
-কি রকম।
-সেদিন ভানুর একটা ব্যাপারে বিডিওর কাছে গেছিলাম, শালা কিছুতেই করবে না, যেই বললাম ঠিক আছে আমার বন্ধুরে তাহলে একবার ফোন করতে হবে।
-শালা তোর নাম শুনেই বলে কিনা, আপনি একটু ঘুরে আসুন আপনার কাজ হয়ে যাবে। শালা সত্যি বলছি অনি কাজটা হয়ে গেলো। তুই শালা এখন মিনিস্টার হয়ে গেছিস।
সবাই হো হো করে হাসলো। সিগারেটের প্যাকেটে মাত্র দুটো সিগারেট পরে আছে। চিকনা একটা আমাকে দিয়ে বললো, এটা কাউন্টার হবে। ভানু বললো, আমি ফার্স্ট, চিকনা বললো, ইঁট পাতো। আমি হেসে ফেললাম।

বাসুকে আলাদা করে বললাম, নীপা তোর দোকানে আজ যাবে কিছু জামা কাপড় কিনতে তুই তো থাকবি না, তাহলে কি হবে, বাসু খিস্তি করে বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না। সঞ্জীবকে বললাম, তোর দোকানে একটা ভাল টিভি যদি থাকে আজ একটু লাগিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর। সঞ্জীব আমার দিকে তাকলো, গান্ডু।

সবাই চলে গেলো, ঠিক হলো এখান থেকে, বারোটার সময় বেরোব ওরা বাইক নিয়ে যে যার চলে আসবে। আমি ও বাড়িতে গিয়ে কাকার সঙ্গে সব আলোচনা করলাম, নীপা ,কাকীমা, সুর মাসিও ছিল, ওরা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আছে। আমি কাকাকে বললাম তুমি অনুমতি দাও আমি এখানে থাকতে থাকতে সব কাজ সেরে যেতে চাই। কাকা কেঁদে ফেললেন, চশমা লাগিয়েও আমি আবঝা দেখি বুঝলি অনি, যার চোখ নেই পৃথিবী তার কাছে অন্ধকার। তোর লেখা আমি পরতে পারি না, নীপা পরে পরে শোনায় ঘরে একটা টিভি নেই, মেয়াটা সারাদিন কি করে বলতো সন্ধ্যায় চিকনাদের বাড়িতে যায় একটু টিভি দেখার জন্য।

আমি গুম হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। কাকীমার দিকে তাকিয়ে বললাম, পান্তা খেয়ে বেরোবো।
-সে কি রে মেয়েটা তোর জন্য সেই সাত সকাল থেকে রান্না করলো।
নীপার দিকে তাকালাম, ঠিক আছে, আমি স্নান সেরে আসি ওরা এসে পরবে এখুনি।
আমি ওবাড়ি হয়ে পুকুর ঘাটে চলে গেলাম, স্নান সেরে ঘরে এসে দেখি নীপা দাঁড়িয়ে আছে খাটের কাছে, কি যেন করছে। আমাকে দেখেই মুখটা গম্ভীর করে নিল। আমি বললাম কি হলো আবার।
-কি হয় নি তাই বলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
-তুমি যে এরি মধ্যে এতো সব প্ল্যান ভেঁজেছো আমাকে জানিয়েছো।
-সময় পেলাম কোথায়।
-কেনো কাল থেকে সময় পাও নি।
হাসলাম।
ও এগিয়ে এসে আমার টাওয়েলটা চেপে ধরলো।
-এই খুলে যাবে খুলে যাবে।
-যাক খুলে, আমি কি তোমার কেউ নই।
-কে বলেছে তুমি কেউ নও।
-তাহলে।
-আচ্ছা আচ্ছা ঘাট হয়েছে।
ও টাওয়েল ছেড়ে দিয়ে আয়না চিরুনিটা এগিয়ে দিল।
আমি চুল আঁচড়ালাম।
আমায় একটা জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি এগিয়ে দিল।
আমি বললাম এটা নয় পাজামা পাঞ্জাবী দাও। এগুলো কলকাতার জন্য।
-না।
-কেন?।
-এটা পরলে তোমাকে দারুন স্মার্ট লাগে।
হাসলাম। দাও।
জাঙ্গিয়াটা পরতে গিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও হাসছে।
-পরো।
-তুমি যাও।
-না। ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গে কথাই বলবো না।
-সে কি।
-লজ্জা করে না।
-কেনো।
-ঐ অবস্থায় একটা মেয়েকে কেউ ছেড়ে দিয়ে যায়। পাষন্ড।
হাসলাম।
-নীপা আমার জন্য ওদের একটু চা করে দাও। নীপা মুখ ভেঙচালো।
আমি নীপার সামনেই জাঙ্গিয়া পরে ফেললাম, টাওয়েলটা মিটসেফের ওপর রেখে, প্যান্টটা পরতে গেলাম, নীপা এগিয়ে এসে আমাকে জাপ্টে ধরলো। আমি শুধু জাঙ্গিয়া পরে আছি।
-নীপা ছাড় কেউ এসে যাবে।
-আসুক।
-গালটা দেখিয়ে বললো একটা দাও।
হাসলাম। ওর মাইটা একটু টিপে দিয়ে চুমু খেলাম, নীপা আমার নুনু চেপে ধরলো।
-এখন থাক ফিরে আসি।
-না এখন।
-এরকম পাগলামো করে নাকি কেউ।
-আমাকে কে পাগল করেছে।
হাসলাম।
-হাসলেই সাত খুন মাপ।
-ঠিক আছে আজ সারা রাত তোমার সঙ্গে…….।
-থাক।
নীপা আমাকে ছেড়ে সরে গেলো। আমি প্যান্ট জামা পরলাম, নীপা আমায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে।
-কি দেখছো।
-তোমাকে যত দেখছি হিংসে হচ্ছে।
-কেনো।
-আজ যারা এ বাড়িতে এসেছিল জানো তারা কেউ এই কয় বছরে আসে নি।
-জানি, ওরা তা স্বীকার করেছে।
-তাও ওদের সঙ্গে তুমি রিলেশন রাখবে।
-পৃথিবীতে একটা মশারও কিছু না কিছু অবদান আছে।
-রাখো তোমার তত্ব কথা।
-এবার দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীপা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কেঁদে উঠলো। তুমি কিছুদিন আগে আসোনি কেনো অনিদা। তাহলে আমাদের এই অবস্থা হতো না।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি তো এসে গেছি।
নীপার কান্না থামে না।
আমি ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম, নীপা কাঁদুক, কিছুক্ষণ কাঁদলে ও বরং হাল্কা হবে, নীপার চোখের জলে আমার বুক ভিঁজেছে, আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিলাম, কপালে একটা চুমু খেলাম, এবার চলো।

ওরা ঠিক সময়ে চলে এসেছে। আমি ওদের সঙ্গে বেরিয়ে পরলাম, আমি বাসুর বাইকে বসেছি, যেতে যেতে টুকরো টুকরো অনেক কথা হলো। এও জানলাম বাসুর দোকানে কাকার প্রায় হাজার পাঁচেক টাকা ধার আছে। বাসুকে বললাম এখানে এসবিআইএর এটিএম আছে রে। ও বললো আছে। আমি বললাম তুই প্রথমে ওখানে আমাকে একবার দাঁড় করাবি। তারপর নার্সিং হোমে যাব। ও বললো ঠিক আছে। এটিএম থেকে একবারে টাকা তুলতে দিল না। পাঁচবারে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুললাম। নিয়ে এসেছিলাম দশ হাজার টাকা, অনেক টাকা খরচ হয়েছে, কি আর করা যাবে। নার্সিং হোমে পৌঁছলাম প্রায় দেড়টা নাগাদ। ওখানে সব কাজ মিটতে মিটতে প্রায় সাড়ে তিনটে বাজলো। অনাদির সঙ্গে বেশ চেনা পরিচয় আছে দেখলাম, আমার কোন পরিচয় এখানে দিলাম না, ওদেরও বারণ করে দিয়েছিলাম। নার্সিং হোমে পঁচিশ হাজার টাকা জমা দিলাম, এরপর ভানু গাড়ির ব্যবস্থা করলো, দুখানা টাটা সুমো, ওখানে টাকা মেটালাম, মোবাইলের টাওয়ারটা দেখলাম বেশ ভালো। অমিতাভদাকে ফোন করে সব জানালাম, অমিতাভদা বড়মাকে দিলেন, আমি বড়মার সঙ্গে কথা বললাম, বড়মার এক কথা, আমি যাব, তুই না করিস না, বহুবার বারণ করলাম, শুনলো না, বাধ্য হয়ে ঠিকানা পত্র সব দিলাম, এরপর মিত্রাকে ফোন করলাম, মিত্রাকে সব জানালাম, ওকেও বললাম, এসে কি করবি, শুধু শুধু এতদূরে আসবি, আবার ফিরতে হবে তো। কিছুতেই আমার কথা শুনলো না, বাধ্য হয়ে বললাম, বড়মারা আসবে, তুই বড়মার সঙ্গে চলে আয়, আর যখন আসবি আমার একটা উপকার কর, বল কি করবো, তুই আমার জন্য একটা মোবাইল কিনে আনিস, এই মোবাইলটা কাকার কাছে রেখে যাবো, আমি এখান থেকে একটা সিম কার্ড নিয়ে নিচ্ছি, আসার সময় মোবাইলটা ফুল চার্জ দিয়ে নিয়ে আসবি।
এতোক্ষণ খেয়াল করিনি, দিবাকর, বাসু আমার পাশে দাঁড়িয়ে, ওরা অবাক হয়ে আমার কথা শুনছিল। দিবাকরের চোখে বিস্ময়, বাসু জিজ্ঞাসা করলো
-হ্যাঁরে অনি বড়মা কে।
ওকে সব বললাম, শুনে তো ওর মাথা খারাপ,
দিবাকর জিজ্ঞাসা করলো, মিত্রা?
বললাম সব কথা। দিবাকর হাসতে হাসতে বললো, তুই শালা তোর মালকিনকে তুই তুই করে বলছিস,
কি করবো বল, ভাগ্যচক্রে ওর সঙ্গে আমি এক সাথে পড়াশুনো করেছি
-উরি শালা তুই তো বড়গাছে মই বেঁধেছিস।
আমি বললাম নারে, ও বিবাহিত ওর স্বামী এশিয়ার রিনাউন্ড একজন ডাক্তার।
শুনেতো ওরা থ। কথাটা ভানু, অনাদি, সঞ্জীবের কাছে পোঁছতে বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। ওরা তো এই মারে সেই মারে।
অনাদি বললো তুই শালা কি করে, নীলকন্ঠ।
আমি হাসলাম।
সঞ্জীবকে বললাম, তুই তো ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা করছিস আমায় একটা সিম জোগাড় করে দে না।
-কেনো
-দরকার আছে।
-একখান তো আছে।
-কাকাকে দিয়ে যাব।
-সেট।
-ঐ তো আনতে বলে দিলাম। কাল এসে যাবে।
-তোরটা কি ।
-এন ৯৫ ।
-আরি বাবা এই তল্লাটে কারুর নেই। চল আমার বস, মগার দোকানে।
-সেটা আবার কে ?
-আমার মহাজন। আমি কলকাতা যাই না ওর কাছ থেকেই মালপত্র নিয়ে যাই।
-কলকাতা থকে মাল নিয়ে এসে ব্যবসা করতে পারিস। আমি ঠেকগুলো সব চিনিয়ে দেবো। দেখবি দুটো পয়সার মুখ দেখতে পারবি।
-বুঝলি অনি ক্যাপিটেল চাই।
-সে তো মহাজন দেবে।
-কি বলছিস তুই।
-হ্যাঁ । তোকে মাল পাঠাবে তুই যদি ঠিক ঠিক বিক্রি করে পয়সা দিস, আর কোন অসুবিধা নেই। ধান্ধা ভালো।
-ঠিক আছে তোর কাজ মিটুক বসে কথা বলা যাবে।
ওর বস মগার দোকানে এলাম। সঞ্জীব প্রথমেই ট্রাম্প কার্ড খেললো।
-মগাদা এই সেই বিখ্যাত অনি।
উনি চেয়ার ছেড় উঠে দাঁড়ালেন। জোড় হাত করে নমস্কার করলেন।
-বসুন, বসুন আপনার লেখাতো পড়িই, তাছাড়া সঞ্জীবের মুখ থেকে আপনার অনেক কথা শুনেছি। ভদ্রলোক একেবারে গদ গদ।
সঞ্জীব বললো একটা সিম চাই অনির, আমাদের এখানে যার টাওয়ার সবচেয়ে ভালো সেটা দাও।
-কার নামে হবে।
-স্যারের নামে।
-ওর যে কিছু কাগজপত্র চাই।
-কি লাগবে।
-ভোটার আইডি, এ্যাড্রেস প্রুফ।
-সে তোমাকে অনাদি দিয়ে দেবে।
-ঠিক আছে।
-সেট।
-কলকাতা থেকে আসছে।
-কেনো। আমার কাছে তো আছে, কলকাতার দামেই……
-যে সেট ওর দরকার তা তোমার কাছে নেই।
-কি।
-ব্ল্যাক বেরি।
-না। আমার কাছে নেই।
-এ্যাকটিভেশন কি আজ হয়ে যাবে। আমি বললাম।
-হ্যাঁ রাতের দিকে আপনি একটা ম্যাসেজ পাবেন।
-ঠিক আছে।

কাজ শেষ হতে হতে প্রায় পাঁচটা বেজে গেলো, চকে এসে পৌঁছলাম, পৌনে ছটা নাগাদ। পরিদার দোকানে আড্ডা, পরিদার সঙ্গে দেখা হলো, সেই ছেলেটি আজ আমায় দেখে চিনে ফললো, আরো অনেকে এলো, যারা আমার লেখার ফ্যান। বেশ উপভোগ করছিলাম ব্যাপারটা। ওখানে বসে কাল সকালের সমস্ত ব্যাপার চক আউট করে নিলাম, দুটো গাড়ি তিনটে বাইক। আমি অনির হাতে টাকা দিলাম, তেল কেনার জন্য, সঞ্জীব তেরে খিস্তি করলো, টাকা ফেরত নিয়ে নিলাম। সঞ্জীব আমার কানের কাছে এসে বললো, খবর এলো, তোর বাড়িতে টিভি লাগানো হয়ে গেছে, আমার পোলাটা এখনো ঘন্টাখানেক তোর ওখানে থাকবে, ট্রেনিং পর্ব চলছে।
আমি সঞ্জীবের দিকে তাকালাম। তুই এতো প্রম্পট জানতাম না। ও হাসলো।
-তোর টাকাটা।
-তোর কাজ শেষ হোক, তারপর দিস।
-ঠিক আছে।
সবাই একসঙ্গে বেরোলাম, আমি অনাদির বাইকে উঠলাম।
চারিদিক অন্ধকার, জ্যোৎস্না রাত বিশেষ কিছু অসুবিধা হচ্ছে না। অনাদি আমাকে টেস্ট রিলিফের বাঁধের কাছে নামালো। আমি অনাদির গাড়ি থেকে নামলাম।
-সারাদিন তোর সঙ্গে থাকলাম, তুই একটা কথা আমাকে বললি না।
-কি।
-সকালে তুই আমার বাড়ি গেছিলি।
-হ্যাঁ। লজ্জা পেয়ে গেলাম।
-তুই কাঞ্চনকে চিনতে পারিস নি।
-কাঞ্চন!
-শালা, সামন্ত ঘরের কাঞ্চন। উনা মাস্টারের কাছে পড়তো।
-হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, আমাদের থেকে কয়েক ক্লাস জুনিয়র ছিল।
-হ্যাঁ। তুই এককাপ চাও খাস নি।
অনাদিকে জড়িয়ে ধরলাম, আমি কাকাকে কথা দিয়েছি, একদিন গিয়ে চা খেয়ে আসবো।
-হ্যাঁ বাবা বলেছেন। বাবা তোর আগেকার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন।
আমি মাথা নীচু করলাম।
-তোকে এই গ্রামের সকলে ভালবাসে।
-দেখছি তাই। আমি কি সেই ভালবাসার মর্যাদা রাখতে পারবো।
-কেন পারবি না। তুই আমাদের গর্ব। সঞ্জীব তখন মিথ্যে কথা বলে নি।
আমি অনাদির চোখে চোখ রাখলাম। কাঞ্চনকে একটু যত্ন নে। মরচে পরে গেছে।
-তুই বলিস গিয়ে।
হাসলাম।
-হ্যাঁরে তুই বললে কাজ হবে।
-আচ্ছা কাকার ব্যাপারটা মিটুক, যাব।
অনাদি চলে গেলো।

সন্ধ্যে হয়ে গেছে। দূরের ঘর গুলোয় এখন লম্ফ জলে না। কারুর ঘরে লাইট জ্বলছে। জ্যোতস্না রাতটা দারুন সুন্দর লাগছে। কাল কিংবা পরশু পূর্ণিমা। কাকা যদি পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পায় তাহলে আমার এই পরিশ্রম সার্থক। আরও কত কথা মনে পড়ছে, সত্যি কলকাতা আমায় এইভাবে কখনো আপন করে নেয় নি। নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কলকাতাই আজ আমাকে এই আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, আর অমিতাভদার কথা মনে পরছে, উনি না থাকলে আজ কোথায় ভেসে যেতাম, বড়মা আমার মায়ের থেকেও বড়। কাকে বাদ দিয়ে কাকে ছাড়বো। কখন যে বাড়ির গেটের কাছে পৌঁছে গেছি জানি না। দরজাটা ভেজানো। একটু টানলে খুলে যায়। আমি খুব সন্তর্পনে দরজাটা খুলে ভেতরে এলাম। মনে হচ্ছে ওপরে কেউ আছে। ঘরের লাইটটা জ্বলছে। আমি আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠলাম, ঘরের ভেতরে উঁকি মারতেই অবাক হলাম, নীপা আমার জিনসের প্যান্ট গেঞ্জি পরে বড় আলমারির সামনে যে আয়নাটা আছে, তার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাচ প্র্যাকটিশ করছে, নীপাকে দেখতে দারুণ সুন্দর লাগছে, আমার গেঞ্জিটা ওর বুকে বেশ টাইট, মাই দুটো খাড়া খাড়া হয়ে আছে, জিনসের প্যান্ট পরায় ওর সামনের অংশটা ভীষণ লোভনীয় লাগছে, আমি কোন শব্দ করলাম না, নীপা গুন গুন করে গান গাইছে, কোন একটা পপুলার হিন্দী গানের সুর। মনে হচ্ছে ছুটে গিয়ে ওকে জাপ্টে ধরে একটু চটকা চটকি করি।

আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি, মাঝে মাঝে নীপা হাতদুটো ওপরে তুলে শরীরে হিল্লোল তুলছে, গেঞ্জিটা কোমর থেকে সামান্য উঠে যাচ্ছে, অনাবৃত অংশে ভাঁজ পরছে, আমি স্থির থাকতে পারলাম না। ঘরের মধ্যে এলাম। আমাকে দেখে নীপা ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলো, ও বুঝতে পারে নি আমি এই সময় হঠাত চলে আসতে পারি। হাত দিয়ে মুখ ঢাকছে। ও আলমারীর পাশে গিয়ে লুকোনোর চেষ্টা করলো।

আমি বড় আলোটা নিভিয়ে দিয়ে ছোট আলোটা জাললাম, আস্তে আস্তে নীপার কাছে গেলাম। নীপা ত্রস্ত হরিনীর মতো পালাবার চেষ্টা করলো, আমি ওকে বুকের সঙ্গে বাঁধলাম।

নীপা আমার ঠোঁটে হাত দিয়ে না না করছে। আমি ওকে আমার শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে চাইলাম, নীপা বাধা দিচ্ছে, নীপার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। নীপার চোখ বন্ধ হলো। আমি আস্তে করে গেঞ্জিটা তুললাম, ভেতরে কিছু পরা নেই। ওর মাইতে হাত দিলাম। নীপা ছট ফট করছে। আমি পেন্টের চেনটা খুলে ভেতরে হাত ঢোকালাম, ভেতরা কিছু পরা নেই, একেবারে ওর পুশিতে হাত ছুঁইয়ে দিয়েছি। নীপা কেঁপে কেঁপে উঠলো।
নীপা এই নীপা, নীচে এক মহিলার কন্ঠস্বর পেলাম, নীপা আমার হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেলো।

-কি হয়েছে মা।
-হ্যাঁরে অনিকে দেখেছিস।
-অনিদাতো সেই দুপুরে বেরিয়েছে।
-সে তো আমি জানি।
-ফিরে এসেছে
-হ্যাঁ, দিবাকর এসেছে। কি দরকার।
-তাহলে দেখো আবার কোন বন-বাদারে গিয়ে বসে আছে।
-তুই কি করছিস ওপরে।
-নাচ প্র্যাকটিস করছি।
-অনি এলে ওকে একবার ও বাড়িতে পাঠাস।
-আচ্ছা।

নীপা খাট থেকে নেমে কোমরে হাত দিয়ে আমার দিকে কট কট করে তাকালো।
আমি খিল খিল করে হাসছি।
-শয়তান, ছুটে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো, আমার ঠোঁটে সজোরে একটা কামড় বসালো।
আমি উঃ করে উঠলাম।
-এখুনি একটা বিপদ ডেকে আনছিলে।
আমি ওর দিকে তাকালাম। ও আমার বুকে মুখ ঘষছে, আমার ঠোঁটটা একটু চুষে বললো, এখন না রাতে।
আমি বেরিয়ে আসছিলাম, নীপা আমার হাত টেনে ধরলো, আমার গালে একটা দাও, আমি ওর গালে একটা চুমু দিলাম, শোনো সামনের দরজা দিয়ে নয় পেছনের দরজা দিয়ে বেরোও, তারপর বাকিটা তুমি ম্যানেজ করবে, বারান্দায় অনেক লোকের ভিড়। সবাই তোমার কীর্তিকলাপ দেখছে।
আমার কীর্তিকলাপ।
হ্যাঁ। কাকা বলেছে, আর টিভি চলে এলো।
হাসলাম।

আমি পেছনের দরজা দিয়ে বেরোলাম, চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। স্টেশনের ওখান থেকে দু প্যাকেট সিগারেট কিনে এনেছি। চাঁদের আলো বাঁশঝাড়ের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে, নীচে এসে পরেছে, জোনাকিগুলোর আলো নিভছে জ্বলছে, একটা স্বপ্নিল পরিবেশ, আমি বাঁশগাছের তলায় শুকনো পাতার ওপর বসলাম, একটা সিগারেট ধরালাম, ঝিঁ ঝিঁ পোকার তারস্বর ডাক, আকাশটা পুকুরের জলে, পুকুরের স্থির জলের দিকে তাকিয়ে আমি তারা গুনলাম, কলকাতার আকাশে এত তারা দেখা যায় না। হঠাৎ একটা সর সর আওয়াজে চমকে তাকালাম, একটা সাপ বাঁশ গাছ থেকে নেমে পাশ দিয়ে চলে গেলো। একটু ভয় পেয়ে গেলাম, যতই আমি গ্রামের ছেলে হই আজ দশ বছর কলকাতায় আছি, না থাকাটা ঠিক নয়। পায়ে পায়ে পেছনের পথ ধরে বারান্দায় এলাম। ওখানে তখন তারস্বরে টিভি চলছে, একটি ছেলে টিভির সামনে বসে আছে। বাকি সবাই টিভির দিকে মুখ করে।

ওখানে তখন হুলুস্থূলু কান্ড একদিকে টিভি, আর একদিকে দিবাকরকে সবাই গাল-মন্দ করছে, এমন কি নীপাও ছেড়ে কথা বলছে না, দিবাকার বার বার বোঝাবার চেষ্টা করছে, ও অনাদির সঙ্গে এসেছে, তবু কে বোঝে কার কথা, অনাদিরও শ্রাদ্ধ শান্তির ব্যবস্থা চলছে, আমাকে দেখে সকলে চুপ, নীপা গলা চড়িয়ে বললো কোথায় যাওয়া হয় শুনি, বাড়িতে লোকজন বলে তো কিছু আছে।
আমি আস্তে আস্তে বেঞ্চের ওপর এসে বসলাম।
-দেখছিস তো আমার অবস্থা।
-কি হয়েছে।
-তুই ফিরিস নি।
-কাকা কোথায়।
-তোকে খুঁজতে খামারে গিয়ে বসে আছে।
আমি উঠে গেলাম, খামারে গিয়ে কাকাকে নিয়ে এলাম।
-কোথায় গেছিলি।
-হারুর কালাতে।
-ওখানে কি করতে গেছিলি।
-দেখতে।
-এই রাতের বেলা, জায়গাটা ভাল নয়।
-ঠিক আছে আর যাবো না।
কাকা বারান্দায় নিজের চেয়ারে বসলেন।
-দেখেছো আমার ভাইপোর হাল, কোথায় দীঘা আড়ি কোথায় হারুর কালা, এই সব করে বেরাচ্ছে সকাল থেকে।
আমি কাকার কথায় কান দিলাম না।
কাকীমার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটু চা খাওয়াবে।
-কেন কাকীমা বুঝি চা দেন, এইবার থেকে কাকীমাই দেবেন। নীপা বললো।
আমি চুপচাপ থাকলাম। দিবাকরকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে রে।
-একটু খামারে চল।
-আমি ওর সঙ্গে পায়ে পায়ে এলাম।
-তোকে একটা কথা বলি, মনে কিছু করিস না।
-কি হয়েছে বলবি তো।
-কাল আমি যেতে পারবো না।
-ঠিক আছে, তাতে কি আছে, ওরা তো আছে।
-আচ্ছা।
দিবাকর চলে গেলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/F67U8tO
via BanglaChoti

Comments