কাজলদিঘী (চতুর্দশ কিস্তি)

কাজলদিঘী

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

চতুর্দশ কিস্তি
—————————

ওখান থেকে বাসে করে এলাম গঙ্গার ধার, আমার পরিচিত জায়গা। ঠিক জায়গায় এসে বসলাম, চারিদিক শুনশান। আমি জানি কখন আমার দূত এসে আমার পাশে বসবে। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিলো, কিন্তু খেলাম না, ইসলাম ভাই জানে আমার কোনো নেশা নেই। ইসলাম ভাই-এর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো, দামিনী মাসি, সোনাগাছিতে যার কাছে আমি একসময় কাটিয়েছি। এখনো গেলে মাসির হাতে এটা ওটা গুঁজে দিয়ে আসি। মাসি প্রথম প্রথম নিত না, একদিন বললাম, তোমার তো কোন সন্তান নেই মাসি, আমি যদি তোমার ছেলে হতাম তুমি কি নিতে না। মাসি কেঁদে ফেলেছিলো, তারপর থেকে মাসি আর না বলে না। প্রথম মোবাইল হাতে আসার পর, মাসিকে নম্বর দিয়ে এসেছিলাম, যদি কখনো প্রয়োজন হয় আমাকে ডেকে নেবে।

কেন জানি না আজ সকাল বেলা অফিস থেকে বেরোবার পর থেকেই মনে হচ্ছে যেনো আমাকে কেউ ফলো করছে। ইসলাম ভাইকে ব্যাপারটা বলতে হবে, কিন্তু আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। কাউকে সেই ভাবেও দেখতে পাচ্ছি না। তবু কেন মনে হচ্ছে। অনেক লোক আশপাশ দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে, কাউকেই সেই ভাবে মনে পরছে না। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আবিদ এলো, এই ছেলেটি খুব ভালো, বাদাম বিক্রি করে, কিন্তু খদ্দের চেনে কারা ওর কাছ থেকে নেশার দ্রব্য কিনবে। ওই যে কথায় আছে না রতনে রতন চেনে শুয়োরে চেনে কচু। আমার কাছে এসে বললো, তুমি বসে বসে বাদাম খাও, দাদার আসতে দেরি হবে।
-কেনো।
-দাদা একটা কাজে গেছে।
-বলবি না।
-তোমায় না বলার কি আছে। তুমি দাদার খাস লোক।
হাসলাম।
-তোমার কি খুব জরুরি দরকার আছে।
-না। অনেক দিন আসিনি, তাই এলাম।
-তোমার নম্বরটা দাও, দাদা এলে ফোন করতে বলবো।
-আচ্ছা।
আমি বাদাম খেতে খেতে হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
সনাতনবাবুকে একটা ফোন করলাম, সনাতন বাবু প্রথমে ঠিক বুঝতে পারেন নি, না বোঝাই স্বাভাবিক, আমার নম্বর ওনার কাছে নেই, পরিচয় দিতেই বললেন, আরে অনিবাবু যে, ওঃ আজ মিটিংএ যা দিলে না আমার শরীর জুড়িয়ে গেলো।
-কেনো দাদা।
-জানো এই কদিনে ব্যাপারটা আমার রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলো।
-এবার আপনি শান্তিতে কাজ করতে পারবেন।
-আচ্ছা অনি তোমাকে যদি ছোটবাবু বলি খুব অন্যায় হবে।
-আপনার ছেলেক যদি আপনি ছোটবাবু বলে খুশি হোন আমার আপত্তি নেই।
-এই তো তুমি একটা ছোট্ট লেজুর জুড়ে দিলে।
-ঠিক আছে যে জন্য ফোন করেছিলাম।
-বলো।
-আপনার হাতের কাছে কাগজ কলম আছে।
-আছে।
-লিখে নিন।
-কামিং সিক্স মান্থের বাজেট, ইনকাম এ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার, বিশেষ করে এ্যাড কত টাকার এসেছে এবং এ্যাড ডিপার্টমেন্টর পেছনে আমাদের কত খরচ হয়েছে।
-ঠিক আছে।
-এবার সার্কুলেসন এটারও ডিটেলস।
-নেক্সট।
-আমাদের কতগুলো নিজস্ব গাড়ি আছে।
-২৫টা।
-এদের ডিটেলস এবং এছাড়া কতো গাড়ি ভাড়ায় আছে তার কত খরচ হচ্ছে তার ডিটেলস।
-আচ্ছা।
-প্রেসের স্ক্র্যাপ কারা কেনে, কত দামে কেনে, কত টাকার স্ক্র্যাপ বিক্রি হয় তার কোন বাজেট আছে কিনা। এমনকি প্রেসের পেছনে আমাদের কতো খরচ হয়।
-ঠিক হ্যায়।
-এই কয়েকটা জিনিস কাল ১২টার মধ্যে মিত্রার টেবিলে পৌঁছে দেবেন।
-ম্যাডাম কাল কখন আসবেন।
-বলতে পারবো না।
-তাহলেকি ম্যাডাম এলেই দেবো।
-তাই দিন।
ফোনটা কেটে দিলাম।
ময়দান পেরিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে আসতেই, দূর থেকে চম্পকদাকে প্রেস ক্লাবের লনে দেখলাম। লোকটাকে দেখে মনে হলো না, এর সঙ্গে চম্পকদার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে। আমি আড়ালে চলে গেলাম, একটু ফলো করলাম। চম্পকদা কিছু টাকা দিলেন। ফোনটা বেজে উঠলো। টিনার নামটা ভেসে উঠেছে। এরি মধ্যে টিনার ফোন। এই তো কয়েক ঘন্টা আগে দেখা হলো।
-হ্যালো।
-বলো টিনা।
-তুমি কোথায়।
-মনুমেন্টের তলায়।
-তাই এতো চেঁচা মেচি। তুমি কি এখন ফ্রি আছ।
-কেনো গো।
-তাহলে আমার অফিসে আসতে পারবে একবার। যদিও তোমাকে বলা উচিত নয়।
-প্রথমে বলো উচিত নয় কেনো।
-তুমি একজন ওই রকম বিগ হাউসের ওয়ান অফ দেম ডিরেক্টর।
-এই সংকোচ থাকলে তোমাদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।
-রাগ কোরো না। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো ফোনই করতাম না।
-এই তো ঠিক কথা বলেছো। আমার যে কতগুলো ছোটো খাটো কাজ আছে। তুমি কটা পযর্ন্ত অফিসে থাকো। আমি যদি পাঁটচার পর যাই অসুবিধে আছে।
-একেবারে না।
-ঠিক আছে, আমি চলে আসবো। কিন্তু তোমার অফিসটা যে চিনি না।
-শান্তি নিকেতন বিল্ডিং, থারটিনথ ফ্লোর, রুম নং ফোর।
-ঠিক আছে।
রাস্তা পেরিয়ে ওয়াই এম সিএর গেটে এলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। আবার ফোনটা বেজে উঠলো। দেবাশিস।
-কি হলো রে।
-গুরু তোমার গপ্পগুলো দারুন। তুমিযে এতটা তিলুয়া হারামী ছিলে জানতাম না। তুমি আমার বৌয়ের পাছা টিপে দিয়ে বলেছিলে, মা আমাদের কলেজে, অনেক বড় বড় মনীষীরা পরেছেন, তোমার এই পোষাক যদি তারা দেখতেন, লজ্জা পেয়ে যেতেন। তারপর থেকে ও কোনো দিন আর অড লুকিং জামা কাপড় পরে কলেজে আসেনি।
হাসলাম।
-আচ্ছা গুরু, মুতে কখনো নিজের নাম লেখা যায়।
-হো হো করে হেসে ফেললাম। কে বলেছে নির্মাল্য।
-সত্যি গুরু তোমার জবাব নেই। তোমার কাছে গিয়ে ক্লাস করতে হবে।
-চলে আয়।
-মিলিরটা ক্লাসিক। আমরা মালটাকে এখনো চুমু খেতে পারলাম না, আর তুমি ওই সময়, অতো লোকোর সামনে আবার সাক্ষী রেখে। গুরু তোমার পায়ের ধুলো একটু দিও মাদুলী করবো।
-তোর সামনে কে আছে।
-কেউ নেই। আমি একা। বাই দা বাই তোমার কাজ করে দিয়েছি। কবে আসবে বলো।
-হঠাৎ তুই থেকে তুমিতে চলে গেলি।
-না গুরু এবার এটা মেনটেন করবো। পারলে অনিদা বলবো।
-হারামী।
দেবাশিস হাসলো।
-কালকে তোমার নামে অফিসে একটা চিঠি পাঠাবো।
-না। আমি গিয়ে তোর কাছ থেকে কালেকসন করবো।
-কবে আসছো।
-দেখি যদি পারি আগামীকাল যাবো, তবে সেকেন্ড হাফে। যাওয়ার আগে একটা ফোন করে নেবো।
-আচ্ছা।

টুক করে সদর স্ট্রিটে ঢুকে পরলাম, সোজা চলে এলাম, মির্জা গালিব স্ট্রিট। এগুলো আমার পুরোনো ঠেক, আমার উত্তরণ এখান থেকে। আমাকে বছরের পর বছর এরা নিউজ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলো। রতনের চায়ের দোকানে এলাম। রতন ওর আসল নাম নয় ওর আসল নাম, সহিদুল। আমি আমার জায়গায় গিয়ে বসলাম। রতন কাছে এসে গলা নামিয়ে বললো, গুরু গজব হয়ে গেছে।
ওর দিকে তাকালাম। ইশারায় আমাকে অপজিটে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে যেতে বললো। আমি গেলাম, রতন আমার একটুক্ষণ পর এলো।
-বল কি হয়েছে।
-মনু।
-কি হয়েছে মনুর।
-পুলিশ নিয়ে গেছে।
-কেনো।
-রিজ হোটেলে চারজনকে এনে রেখেছিলো, ইসলাম ভাইয়ের জন্য মাল নিয়ে। ওরা টিপ দিয়ে দিয়েছে। মনু সমেত ওদের তোলতাই করে নিয়ে গেছে।
-ইসলাম ভাই কোথায়।
-থানায়।
-রফা হয়েছে।
-না।
-অনেক চাইছে।
-ওই চারটে গ্যারেজ হবে। ইসলাম ভাই, মনু ছাড়া পেয়ে যাবে।
-এখানকার ওসিটা হারামী, বহুত খাঁই।
-মাল।
-আমার দোকানে।
-ওরা পায় নি।
-কিছু পেয়েছে।
-ঠিক আছে যা। শোন। একবার ইসলাম ভাইকে খবর দে।

সন্দীপকে একটা ফোন করলাম।
-বল।
-খবর কি।
-ফাইন। মাঝে সুনীতদা কার একটা লেখা নিয়ে অমিতাভদার সঙ্গে কেচাল করছিলো। বললো এটা অনির ব্যাপার ওর সঙ্গে কথা বলে নাও। আমার এখতিয়ারের মধ্যে নয়। বেশ চুপ।
-শোন একটা ফোন কর লালবাজারে, নারকোটিকস ডিপার্টমেন্টে। বল এখুনি একটা ঘটনা ঘটেছে, মির্জা গালিব স্ট্রীটের রিজ হোটেলে, ঘটনাটা কি।
-তারপর।
-কি বলে শুনবি। ফিডব্যাকটা এখুনি দে।
-তুই কোথায়।
-যা বলছি কর।
-আচ্ছা।
রতন এলো।
-কি হলো।
-ইসলাম ভাই আসছে।
-ঠিক আছে।
সন্দীপের ফোন।
-কি হলো।
-না এরকম ঘটনা ঘটে নি।
-শুয়োরের বাচ্চারা চেপে যাচ্ছে। ঠিক আছে। ফোনটা বিজি রাখবি না।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণের মধ্যে ইসলাম ভাই চলে এলো। আমাকে দেখেই একগাল হেসে বুকে জড়িয়ে ধরলো। তুই কতদিন পরে এলি, প্রায় দুমাস।
-ছিলাম না। তোমার খবর।
-সাল্টে দিয়েছি।
-মনু।
-দুদিন ভেতরে থাকুক। বার করে নেবো। অসুবিধে কি। চল চা খাই।
রতনের দোকানে এসে বসলাম। রতন নিজে হাতে চা বানিয়ে দিলো। চা খেতে খেতে, ইসলাম ভাই বললো, তোকে টেনসন নিতে হবে না। এই সব ছোটো খাটো ব্যাপার, বড় ব্যাপার হলে তোকে জানাবো। তুই একটা নিউজ মার তো।
-কি হয়েছে বলো।
-চা খেয়ে নে তোকে নিয়ে যাবো। কিন্তু তোকে নিয়ে গিয়ে লাভ কি, তোর তো কোন ভালো ফোনও নেই যে তুই ছবি তুলবি।
-আছে নতুন একটা কিনেছি।
-তুই ঘাটে গেছিলি কেনো।
-তোমার সঙ্গে দেখা করতে।
-তোর পেছন পেছন কে গেছিলো।
-জানিনা তো।
-তোর অফিসে কোনো গন্ডগোল হয়েছে।
-তা একটা হয়েছে।
-কি হয়েছে।
-তোমায় পরে বলবো।
-ইসলাম ভাই জানে।
হাসলাম। জিজ্ঞাসা করছো কেনো।
-তোর মুখ থেকে শুনতে চাই। কবে বিরিয়ানি খাওয়াবি।
-যেদিন বলবে।
-তোর পেছনে ওরা টেমি লাগিয়েছে। তুই কোথায় যাচ্ছিস কি করছিস, এইসব।
-তুমি কি করে জানলে।
-তুই যেমন সাংবাদিক আমার ব্যবসাটাও তো এটা। আবিদ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ভুল খবর যাবে। কিছুতো টাকা কামিয়ে নিই তোর অফিসের।
হাসলাম।
-না হলে রফা করলাম কি করে।
-তুমি ছেলেটার সাথে আলাপ করিয়ে দেবে।
-দেবো। এখন না।
-কেনো।
-সবে লাইনে নতুন এসেছে। তোকে চেনে না।
-ও।
-তুই যেদিন লোকটাকে ছাঁটবি। ফোন করবি ওর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবো। ও এখন থেকে সব ভুল নিউজ দেবে। তুই লোকটাকে ছাঁটতে চাস।
-হ্যাঁ।
-ছেঁটে দে।
-একমাস সময় দিয়েছি।
-দেখেছিস কি হারামী তোর মতো একটা ছেলের পোঁদেও লোক লাগিয়েছে।
-তোমার কাছে এই জন্য এসেছিলাম। জানিনা সকালবেলা অফিস থেকে যখন বেরোচ্ছিলাম তখনি মনটা কু গাইছিলো।
-তাজে কেনো গেছিলি।
-আমার এ্যাডের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে। ওরা এ্যাড ওয়ার্ল্ডের এক একটা ফিগার।
-ইসলাম ভাই যতদিন থাকবে তোর ক্ষতি কেউ কোনোদিন করতে পারবে না। আল্লাহ কসম অনি। আজ দশ বছর তোকে দেখছি, তুই কোনোদিন ইসলাম ভাই-এর কাছে হাত পেতে কিছু চাস নি। সব শুয়োরের বাচ্চারা ধান্দাবাজ, আমার কাছে যারা আসে, তারা আসে ধান্দা করতে, তুই খালি আসিস নিউজ নিতে, একদিন আমি মাগী নিয়ে ফুর্তি করছি, কেউ ছিলনা সেদিন, দামিনী বুড়ীর কথায় তুই মালের বোতল এনে দিয়েছিল, সেইদিন তোকে চিনেছিলাম, আজ তুই মালিক হোস আর যাই হোস, তুই আমার কাছে পত্রকার অনি। জানিস অনি, এই পৃথিবীতে এসেছি বাঁড়ার ঘায়ে, চলে যাবো খাঁড়ার ঘায়ে। আজ তোর সঙ্গে বসে কথা বলছি, কাল আমি নাও থাকতে পারি। আমাকে নিয়ে একটা লেখা লিখিস।
হাসলাম।
-চল যাই।
-চলো।
ও আমাকে মিউজিয়ামে নিয়ে এলো পেছনের দরজা দিয়ে, যেখানে ট্যাক্সি ডার্মি সেক্সন, অফিস তখন শুনসান, এই সেক্সনে মৃত পশুদের চামড়া দিয়ে মডেল তৈরি হয়, যে গুলো মিউজিয়ামে দর্শকদের জন্য রাখা হয়, দেখলাম ঘুরে ঘুরে কিভাবে নষ্ট হচ্ছে নাম করা সব পশুদের চামড়া, যারা একসময় চিড়িয়াখানায় মারা গেছিলো, আমরা তাদের নিউজ করেছিলাম। ছবি সব মোবাইলে তুললাম, কাকপক্ষী কেউ টের পেল না।
ইসলাম ভাই চলে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকালাম, অনেক বেজে গেছে, টিনার কাছে যাবার সময় চলে গেছে, আমি টিনাকে ফোন করলাম, টিনা ফোন ধরেই হেসে ফললো।
-ভুলে গেছিলে নিশ্চই।
-না একটা কাজে আটকে গেছিলাম।
-তুমি এক কাজ করো, বিড়লার সামনে দাঁড়াও আমি তোমাকে গাড়িতে তুলে নেবো।
-ঠিক আছে।
আমি বাস ধরে তাড়াতাড়ি বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সামনে চলে এলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর টিনা এলো। নিজেই ড্রাইভ করছে, ছোট্টগাড়ি, অল্টো। আমি দরজা খুলে সামনের সিটে বসলাম।
-চলো আমার ফ্ল্যাটে।
-কোথায় তোমার ফ্ল্যাট।
-নিউটাউনে।
-বাবা অতদূরে।
-অফিস দিয়েছে।
-তুমি কি এখানে একা থাকো নাকি।
-দোকা পাবো কোথায়।
হাসলাম।
-তুমি বললে কালকেই জোগাড় করে দিতে পারি।
-সে তুমি কেনো, আমি চাইলেই লাইন পরে যাবে।
-তাহলে আর অসুবিধা কিসের।
-আমার মতো কালটি মেয়েকে কে পছন্দ করবে বলোতো।
দেবাশিসেরর কথাটা মনে পরে গেলো, তাহলে কি টিনা……
-কালো জগতের আলো।
-ওটা তুমি বলছো, লোকে বলে না।
-তুমি এতো বড় পোস্টে রয়েছো, ছেলের অভাব হবে না একটু চেষ্টা করো, বাবা মাকে বলছো না কেনো।
-বাবা মারা গেছেন, মা আছেন, আর দাদা। ওরা দিল্লীতে থাকে। দাদা ওখানে সিফ্ট করেছে। মা দাদার কাছেই থাকে।
-তুমি ট্রান্সফার নিয়ে চলে যাচ্ছনা কেনো।
-ছোট থেকে কলকাতায়। সব কিছুতো এখানে। যেতে ইচ্ছে করে না।
-তারমানে রান্নাবান্না সবই তোমায় করতে হয়।
-একজন কাজের মাসি আছে। ওই সব করে দেয়। রাতে আমি গরম করে নিই।
-সময় কাটে কি করে।
-অফিসে কাজের চাপ থাকে, রাতে ইন্টারনেটে চ্যাট।
-তোমার কাছ থেকে নেটটা শিখতে হবে। শিখিয়ে দেবে।
-কেনো দেবো না। তোমাকে শেখাবো এটা তো আমার সৌভাগ্য।
-শেখাবার জন্য কত দিতে হবে।
টিনা আমার দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো। ওটা সময় মতো চেয়ে নেবো।
-কালকে থেকে ক্লাস নাও।
-ঠিক আছে।
কথা বলতে বলতে কখন টিনার ফ্ল্যাটে চলে এলাম বুঝতে পারলাম না।

গাড়ি পার্কিং প্লেসে রেখে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে আসছিলাম। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে টিনা আলাপ করিয়ে দিলো, তাদের হাব ভাবে বুঝলাম তারা গদ গদ। লিফ্ট বক্সের সামনে এসে টিনা বোতামে হাত রাখলো। আমরা লিফটে উঠলাম। টিনা ৭ নম্বরটা টিপলো। বুঝলাম আটতলা। বাবাঃ অনেক উঁচু। টিনা লক খুলে আলো জ্বাললো।
-এসো আমার স্যুইট হোমে।
ভেতরে এলাম। ছোট্ট কিন্তু ভীষণ সাজানো গোছানো। মেঝেতে নারকেল দড়ির কার্পেট, দেয়ালে পুরুলিয়ার ছৌনাচের মুখোশ, টিনার রুচি আছে। আমার ফ্ল্যাটের মতো। একটা বসার ঘর আর শোওয়ার ঘর। আমি বাইরে রাখা সোফায় গা এলিয়ে দিলাম, যাও তুমি চেঞ্জ করে নাও।
-কি খাবে।
-কিচ্ছু না।
-প্রথম দিন এসেছো তোমায় কিছু না খাইয়ে ছাড়ছি না।
-আচ্ছা গরম চা খাওয়াও।
-ওটা তো আছেই, আর।
-ভালো লাগছে না।
টিনা ভেতরের ঘরে চলে গেলো। আমি বসে বসে সেন্টার টেবিলে রাখা ভোগ ম্যাগাজিনটা তুলে নিলাম, ব্যাক কভারে টিনাদের এ্যাড চোখে পরলো। একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম, সিটি অফ ক্যালকাটা বাই রঘু রাই। রঘু রাই-এর ছবির ওপর আর্টিকেলটা, পড়া শেষ হতে দেখলাম, নিচে লেখা আছে অনুলিখন টিনা মজুমদার। দারুন টান টান লেখা।
-বাবাঃ তোমার চোখ আছে।
-কেনো।
-ঠিক ওই আর্টিকেলটা বেছে নিয়েছো না।
হাসলাম।
-এবার বলো, তুমি কবে থেকে এতো ভালো লিখতে জানলে।
টিনা আমার দিকে তাকিয়ে চোরা চাহনি হানলো।
-তোমার থেকেও ভাল লিখি
হাসলাম। অবশ্যই। ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ওর ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলাম।
-তোমরতো সব পর পর সাজানো থাকে কথা। কি দেখছো।
-তোমায়।
টিনা টেবিলের বইগুলো একটা হাত দিয়ে সরিয়ে, প্লেটটা রাখলো। অনেক মিষ্টি।
-এতো খাবো না টিনা।
-একটুও বেশি না খেয়ে নাও। সেই দুপুরে আমাদের সঙ্গে খেয়েছো, তাই তো।
-আমি একটা নিয়ি নিচ্ছি, তুমি চা খাওয়াও।
-না তোমাকে সব খেতে হবে।
-খাওয়া কি পালিয়ে যাচ্ছে, আমি তো আসবো বললাম।
একটা মিষ্টি নিয়ে মুখে দিলাম, ভীষণ ঠান্ডা, বুঝলাম ফ্রিজ থেকে বার করা।
-কি হলো খাও নি।
টিনা চায়ের কাপ হাতে হাজির। টেবিলে রেখে আমার অপরজিট সোফায় বোসলো। কিছুক্ষণ আগে দেখা টিনার সঙ্গে এখন দেখা টিনার অনেক পার্থক্য। একটা ঢলঢলে ঘাঘরা রাজস্থানী স্টাইলের পরেছে, বেশ জমকালো, কালার কম্বিনেশন এতো ভালো ওর কালো রংকে আরো উজ্জ্বল করেছে, টিনা, নীপা-মিত্রা ওদের থেকে একটু ভারী, কিন্তু দেখলে বোঝা যায় না। দেবাশীষের কথাটা বারে বারে মনে পরে যাচ্ছে।
-আর একটা খাও প্লিজ।
-না। মিষ্টি বেশি খাই না। তুমিও তো কিছু খাও নি। তুমি বরং একটা খাও।
-আমি ফিরে এসে কিছু খাই না একটু কমপ্লান বা হরলিকস খাই শুধু, এমনিতেই যা মোটা। আবার মিষ্টি খেতে বলছো।

-কোথায় তুমি মোটা।
-তুমিই প্রথম বললে আমি মোটা নয়।
চায়ের কাপটা তুলে ঠোঁটে ছোঁয়ালাম।
টিনা আমার দিকে তাকালো। মিষ্টি ঠিক আছে।
-বুঝি না।
তার মানে।
-ওই আর কি, আমি মনে করি গরম জল খাচ্ছি।
-তুমি কি গো।
-আমি আমার মতো।
-তুমি জিজ্ঞেস করলে নাতো তোমায় কেনো ডেকেছি।
-কি করে জানবো, তুমি ডাকলে দেখলাম আমার সময় আছে, চলে এলাম।
-দেবাশিস তোমায় পয়সার কথা বলেছে।
-কেনো।
-বলো না।
-তোমাদের এই প্রফেসনে ব্যাপারটা রয়েছে।
-অস্বীকার করছি না।
-তাহলে। অন্যভাবে নিও না, তুমি কোনো ইতসতঃ করবে না।
-এ কি বলছো অনিদা। তুমি ভুল বুঝো না।
-কেনো ভুল বুঝবো। তোমাদের যেটা প্রফেসন সেটাকে মানতে হবে।
-আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা।
-কি রকম। সঙ্কোচ করার কিছু নেই।
-আমার ওপরের যে বস আছে, তিনি টাকাও চান আবার এনটারটেনমেন্ট চান।
-অসুবিধে নেই। কিন্তু কি রকম এনটারটেনমেন্ট, সঙ্কোচ না করেই বলো।
-আমি মেয়ে কিন্তু কি করবো, চাকরি করি, কালো ধুমসি বলে বেঁচে গেছি।
হেসে ফেললাম।
-তুমি হেসো না। এরা এই রকম, কলকাতায় আমার বস একজন ছেলে। আমি তোমার ফাইলটা আজই পাঠিয়েছি, ২৪ কোটির বাজেট দিয়ে, কামিং তিন মাসে। তোমার খরচ পরবে, লাখ তিরিশেক।
-এটা আমাকে ফেস করতে হবে না তোমাকে।
-তোমাকে ফেস করতে হবে। সেই জন্যই তোমায় বোম্বে যেতে বলছিলাম।
-বিপদে ফেললে, এ কাজ কোনো দিন করিনি।
-ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।
-না তোমায় টেনসন নিতে হবে না, আমার একটা নতুন জগত দেখা হবে।
-না না আমি ব্যবস্থা করবো।
-তুমি আমার জন্য আর কতো করবে।
-আমার বসকে বোলবো। দেখি না কি করে।
-তোমার বন্ধুরা জানে।
-না জানার কি আছে। দেবাশিস ধোয়া তুলসী পাতা নাকি।
-অদিতি, মিলি, নির্মাল্য?
-সব এক গোয়ালের গরু, আপার লেবেলে শরীরটা কিছু নয়, সেখানে টাকাটাই সব।
-তার মানে আমাকেও সেই হতে হবে নাকি।
-তোমার মধ্যে সেই প্রটেনসিয়ালিটি আছে, কিন্তু তুমি তা নও।
-কি করে জানলে।
-তোমার মুখের মধ্যে তার একটা ছাপ থাকতো।
-তুমি এতো বোঝো।
-বুঝতে হয়েছে।
-তুমি এগিয়ে যাও, আমি ঠিক সামলে দেবো।
-পারবে?
-দেখি না সামলাতে পারি কিনা। তুমি কবে খবর দেবে।
-কামিং উইকে।
-আমার নেট শেখার ব্যাপারটা।
-তুমি এলেই হয়ে যাবে।
-তোমায় ফোন করবো। রবিবার ফাঁকা আছো।
-আছি।
-দেখি বিকেলের পর আসবো। অসুবিধে নেই।
-না। একটা ফোন করে নিও।
-ঠিক আছে।

টিনার কাছ থেকে উঠে চলে এলাম, টিনা নীচ পযর্ন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলো। লাকিলি নিচে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম, উঠে পরলাম। অমিতাভদার বাড়িতে যখন এলাম রাত দশটা বেজে গেছে। পা দিতেই দেখলাম, তিনজনে বসে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে। আমি ঢুকতেই ছোটমা বললেন, আসুন স্যার, আপনার কথাই হচ্ছে।
আমি বড়মাকে, ছোটমাকে প্রণাম করে বড়মার পাশে বসলাম। মিত্রা একটা সোফা দখল করে আছে, ছোটমাও একটা সোফা দখল করে আছে।
-দাদারা আসে নি।
-বলল তো অফিস থেকে বেরিয়েছে। বড়মা বললেন।
-হ্যাঁরে তুই কি রে।
-আমি মানুষ। খুব সাধারণ মানুষ।
-দাওনা দাও ওর কানটি মূলে। ছোটমা বললেন।
মিত্রা চোখবন্ধ করে হাসছে।
-তোর কীর্তি কলাপ শুনছিলাম মিত্রার মুখ থেকে।
মিত্রার দিকে তাকালাম
-আমার! সে আর নতুন কি আছে।
-একটা মেয়েকে নিয়ে গেছিস, থাকার জায়গা পযর্ন্ত ঠিক করিস নি।
-আমি নিয়ে যাবার আগে কন্ডিশন করে নিয়েছিলাম, জিজ্ঞেস করো।
-মিথ্যুক একেবারে বাজে কথা বলবি না। তুই আমায় বলেছিলি, ওখানে বাথরুম নেই।
-সেটা আবার বলতে হয় নাকি, গ্রামে আলাদা বাথরুম থাকে নাকি, পুরো গ্রামটাই বাথরুম।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-বাঁচা গেলো, তোমরা আর বিরক্ত করবে না। যাবার জন্য।
-বিরক্ত করবো না মানে, এক মাসের মধ্যে বাথরুম ঠিক করবি অতো সুন্দর জায়গা খালি একটা বাথরুমের জন্য যেতে পারবো না। ছোটোমা বললেন।
-একটু চা খাওয়াবে।
-মিত্রা ফ্লাক্সটা নিয়ে আয়তো।
মিত্রা উঠে চলে গেলো। রান্নাঘরের দিকে। বুঝলাম, মেয়ে করিতকর্মা হয়ে উঠেছে এই কদিনে।
-অনি পীর সাহেবের গল্পটা একবার বোলবি। বড়মা বললেন।
-কেনো শোনো নি।
-মিত্রা ঠিক মতো বলতে পারে নি।
-যখন যাবে তখন দেখিয়ে দেবো।
মিত্রা ফ্লাস্ক আর কাপ নিয়ে এলো।
টেবিলের ওপর তিনটে কাপ রেখে চা ঢাললো। বাইরে গাড়ির হর্ন বাজলো।
-এই রে এলেন সব। ছোটমা বললেন।
মিত্রা আরো দুটো কাপ নিয়ে এলো। আমি উঠে খাওয়ার টেবিলের ওখান থেকে দুটো চেয়ার নিয়ে এলাম।
মল্লিকদা ঢুকলেন।
-আসুন আপনার জন্য জায়গা খালি আছে এবং কাপে চাও রেডি। ছোটমা বললেন।
মল্লিকদার সে কি হাসি
-এতো সৌভাগ্য আমার।
বলতে বলতেই অমিতাভদা ঢুকলেন
-সুপার্ব নিউজ, তুই কোথা থেকে খবর পাস বলতো।
সবাই আমার দিকে চাইলো। এমনকি মল্লিকদা পযর্ন্ত।
-তোর নিউজটা ফলোআপ কোরলো সন্দীপ, তারপর ওরা সত্যি সত্যি প্রেস রিলিজ করলো।
-তুমি ওটা ছেপেছো!
-কেনো।
-ওটা উইথড্র করো। ওই নিউজ কেউ ছাপে নাকি।
-তুই কি করে বুঝলি।
-আমি বলছি, পরে সব কথা বলবো, তুমি আগে তোলো ওই নিউজটা।
-কাগজ ছেপে বেরিয়ে গেলো।
-দাঁড়াও আসছি, বলে বাইরে এলাম।
ওরা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। ইসলামভাইকে ফোন করলাম, সব কথা বললাম, ও বললো ঠিক আছে, তুই বেটা সবেতেই ঘাবরে যাস, আমি নিজের ঘারে দোষ না নিয়ে অন্যের ঘারে চাপিয়ে দিয়েছি। বেশ করেছে ছাপুক। আমার বরং ভালো হবে।
আবার নিজের জায়গায় এলাম।
-কি হয়েছিলো।
-কিছু না।
-কিছু না বললে হবে, তুই উঠে চলে গেলি, কার সঙ্গে ফুসুর ফুসুর গল্প করলি। মল্লিকদা বললো।
-আর একটা নিউজ আসার কথা ছিলো তাই জানলাম এসেছে কিনা।
-কি নিউজ?
-এখানে বলতে হবে।
-বল না।
-বললে আপত্তি কোথায় আমরা কি নিউজের বাইরের লোক। অমিতাভদা বললেন।
-মধুচক্রে মন্ত্রীপুত্র।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন
-কোন মন্ত্রী রে।
-তোমায় জানতে হবে না।
-তুই নিউজ দিলেই আমি ছেপে দেবো নাকি।
-আজকেরটা ছেপেছো কেন। নাও চা খাও।
-দেখেছিস মল্লিক কেমন সাসপেন্স।
বড়মা মুচকি হেসে মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন
-যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল।
সবাই মুখ নিচু করে হাসছে। আমি গম্ভীর।
-তুমি চেয়ারে গিয়ে বোসো। অনি এখানে বসুক। বড়মা ঠেলে অমিতাভদাকে উঠিয়ে দিলেন। আমি বড়মার পাসে গিয়ে বসলাম।
-কি ঠিক বলিনি বলো, সব একদিনে হয়ে গেলে চলবে কি করে। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-একেবারে দিবি না। তুই আসার পর থেকেই তোকে অফিস থেকে ঠেলে বার করে দিয়েছে, না।
-না। আমি বললাম।
-না! বড়মা বললেন।
-হ্যাঁ আজ আমি স্ব ইচ্ছায় বেরিয়েছি, কিছু কাজ ছিলো।
অমিতাভদা কাপটা রেখে হাততালি দিয়ে উঠলো
– কি এবার বলো। খালি আমি না।
এই দেখে মিত্রার কি হাসি ফুলে ফুলে উঠছে।
-ওরে থাম থাম, বিষম লেগে যাবে। ছোটমা বলে উঠলেন।
-নাও রেডি হয়ে নাও খেতে বসে আবার সেকেন্ড ইনিংস শুরু করবো।
-তার মানে।
-আরে বাবা সবে টস করে ফার্স্ট ইনিংস খেললাম, এবার সেকেন্ড ইনিংসটা খেলতে হবে না।
আমি নিজের ঘরে চলে এলাম। জামাকাপড় ছেড়ে, বাথরুমে গেলাম, দেখলাম ঘরটা আজ বেশ পরিষ্কার। মনে হচ্ছে কোনো মহিলার হাত পরেছে।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে এলাম।
দেখলাম সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
-তুই মেয়েদেরও বেহদ্দ। ছোটমা বললেন।
মিত্রা মুচকি হাসলো।
আমি কথাটা গায়েই মাখলাম না, এমন ভাব করে বড়মার পাশে এসে বসলাম।
ছোটমা খাবার পরিবেশন করছেন।
আমি বললাম, একসঙ্গে নিয়ে চলে এসো।
-তারপর বলবি আজকের খাওয়াটা ঠিক জোমলো না।
মল্লিকদা শুরু করে দিয়েছেন।
আমিও হাত লাগালাম।
-তুই তাহলে নিউজটা দিবি না।
-সন্দীপকে ফলোআপ করতে বলো।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে উঠলো।
-কি তেঁয়েটে দেখেছিস। নিউজটা ভালো নিউজ। যদি কেউ তোর আগে করে দেয়।
-দেবে।
-তাহলে আমাদের কাগজের ক্রেডেনসিয়াল কমে যাবে।
-অনি দিয়ে দে অতবার করে বলছে। বড়মা বললেন।
হাসলাম।
-সাতদিন পরে পাবে। ছবি হোক।
-কাকে পাঠাবি।
-কি?
-ফটোগ্রাফিতে?
-আমাদের হাউসের?
-হ্যাঁ।
-তুমি সত্যি আমাকে জেলে পুরবে নাকি।
-তুই সঠিক নিউজ করলে জেলে পুরবে কেনো।
-ঠিক আছে তোমায় ভাবতে হবে না। বড়মা যখন বলেছে, ঠিক সময়ে পেয়ে যাবে।

বড়মা একটা চিংড়িমাছ নিজের পাত থেকে আমার পাতে তুলে দিলেন।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।
-তোকেও দিচ্ছি দাঁড়া।
-দিও না পেট খারাপ করবে। অভ্যেস নেই।
-বলেছে, তোর যেন কতো অভ্যেস আছে, খাস তো ওই চুনো মাছের টক আর পান্তা।
-ওই খেয়ে কি বলেছিলি বলবো সবার সামনে।
মিত্রা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
-বোস বোস আমি তোর মতো অকৃতজ্ঞ নই।
ছোটমা মিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে কি বোললো মিত্রাও ফিস ফিস কের বললো, তারপর ছোটোমার ফুলে ফুলে সে কি হাসি। বুঝলাম ছোটোমার কাছে মিত্রা পেট খালাস করেছে।
কেউ ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না, আমি বুঝেছি।
-তুই কি বলবি বলেছিলি।
মিত্রার দিকে তাকালাম
-অফিস সম্বন্ধে তুই কতটুকু জানিস।
-এতদিন আমি দেখি নি, বকলমে সুনীতদা দেখতো। যেহেতু ও সম্পর্কে ওর ভাগ্নে হয়।
-এখন যদি কাগজের স্বার্থে ওই লোকটাকে তাড়াই তোর কোনো আপত্তি আছে।
-কেনো তাড়াবি! সুনীত কাজ জানে। অমিতাভদা বললেন।
-তোমার কাছে পরে আসছি, তবে এই উত্তরটা তোমায় দিচ্ছি।
-বল
-তোমার পেটে যদি ৫০০ গ্রাম সাইজের একটা টিউমার হয়, তুমি হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট করবে না, অপারেশন করে কেটে বাদ দেবে।
-অপারেশন করবো।
-আমিও তাই চাইছি।
সবাই চুপ। মল্লিকদার হাত থেমে গেছে।
-তুই কি করে বুঝলি।
-আমি যদি প্রমাণ করে দিই।
-আর চম্পকবাবু। তুইতো ওদের একমাস সময় দিয়েছিস।
-না জেনে অনেক বেশি সময় দিয়ে দিয়েছি।
-তুই সনাতন বাবুকে ফোন করেছিলি। মিত্রা বোললো।
-হ্যাঁ।
-ওই ডকুমেন্টসগুলো কালকের মধ্যে দিতে পারবে না।
-তোকে ফোন করেছে কেনো। আমাকে বলতে পারতো।
-তোকে বলতে পারছে না।
-কেনো। আমি বাঘ না ভাল্লুক।
-তা জানি না।
-জানবি না মানে তুই মালিক। তোর জানা উচিত। তুইতো এর জন্য পয়সা দিচ্ছিস মাসে মাসে।
-এ ভাবে ভাবি নি।
-তুই কি বলেছিস।
-বলেছি ঠিক আছে আমি অনিকে বলে দেবো।
-বেশ সাতখুন মাপ।
-ওকে কাল সকালে ফোন করে বলে দিবি, আমি যা চেয়েছি সেটা কালকেই ওকে দিতে হবে। সব ঘুঘুর বাসা।
-ওঃ। তুই ওকে বলছিস কেনো তুই নিজে বলবি। অমিতাভদা বললেন।
-ও নিজে দায়িত্ব নিয়েছে তাই ওকে বলতে বলছি। ঠিক আছে এরপর থেকে আমার কোন ব্যাপারে তুই ফোন রিসিভ করবি না। তুই হচ্ছিস ওদের শেল্টার। ওরা সব পেয়ে বসেছে।
অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি তো মিত্রার বাবার আমল থেকে আছো। তুমি কতটুকু জানো হাউস সম্বন্ধে।
-কিছু জানি না।
-তার মানে। অফিসে গেছো, নিজের চেয়ারে বসেছো, কাজ করেছো, চলে এসেছো।
-তা বলতে পারিস।
-মরণ। বড়মা বললেন। আমাকে যে রাতে শুয়ে শুয়ে গল্প বলতে এটা করেছি সেটা করেছি।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-এখন ও যখন জিজ্ঞেস করছে বলতে পারছো না। ও নিশ্চই কোনো কিছু বুঝতে পেরেছে।
-তুমি ঠিক বলেছো। এটাতো মাথায় আসে নি।
-এ ঘটনাগুলো তোমার কাছ থেকে পরে নেবো। এখন বলো চম্পকবাবুর সম্বন্ধে কি ডিসিসন নিয়েছো।
-আমরা চাইছি ওরা একটা মাস থাকুক। কি মা তুমি কি বলো।
মিত্রা মাথা দোলালো।
-মল্লিক তুই বল না।
মল্লিকদা মাথাও দোলায় না মুখও তোলে না। চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।
-একচুয়েলি তোমরা চাইছো ওদের রাখার জন্য, আর আমি দাবি করছি না রাখার জন্য। চাওয়া আর দাবি করার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
আমার কথা বলার মধ্যে এমন কিছু ব্যাপার ছিলো, সবাই আমার মুখের দিকে তাকালো।
আমি আর বসলাম না। মুখ ধুয়ে ওপরে চলে এলাম।
বুঝতে পারলাম বড়োমা, ছোটোমার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
নিজের ঘরে ঢুকে আলোটা জ্বালতে ভালো লাগলো না। রাস্তার নিওন আলোর মিহি আলো বাগানের আম গাছটার ফাঁক দিয়ে আমার ঘরে এসে পড়েছে, সেই মিহি আলোয় ঘরের অনেকটা অংশ আলোকিত। জানলার সামনে দাঁড়ালাম, হাজারো চিন্তা মাথার মধ্যে কিল বিল করছে, বিশেষ করে চম্পক, সুনীত এই দুটোকে যে করেই হোক ছেঁটে ফেলতে হবে। চম্পক এতদূর এগিয়েছে সুনীতের সাহায্য ছাড়া নয়। এতদিন অনেক কিছু ভোগ দখল করেছে, কিছুতেই ও সহজে ছেড়ে দেবে না, বিষধর সাপকে একটা আঘাতেই আধমরা করে দিতে হবে, তারপর মেরে পুরিয়ে দিতে হবে। এই দুটোকে বেশিদিন রাখলে, আরো কয়েকটা জন্মে যেতে পারে আবার তাদের পেছনে সময় ব্যায় করতে হবে। না কোনো বাধা আমি মানবো না। আগামী শুক্রবার মিটিং কল করতে হবে, তার আগে ইসলাম ভাই-এর কাছ থেকে লাস্ট আপডেট নিতে হবে। ও বলেছে ও সব জানে। মিত্রার কি সুনীতের ওপর কোনো দুর্বলতা আছে, থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, যতই হোক ওর হাজবেন্ডের ভাগ্না বলে কথা।

পিঠে নরম হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালাম, মিত্রা আমার পেছনে
-তুই বৃথা রাগ করছিস আমার ওপর। আমি জানি তুই সারাদিন অনেক খবর জোগাড় করেছিস, তাই তুই এই কথা বলতে পারছিস। কিন্তু তোকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। তুই ভাবিস না আমরা তোর কাজে বাধা দিচ্ছি।
-যা শুয়ে পর, আমাকে একটু একা থাকতে দে।
-আমি এখানে থাকবো। বড়মা বলেছেন।
-বড়মা বললেই সব হয় না, এটা আমার বাড়ি নয়। তাছাড়া অমিতাভদা, মল্লিকদা আছেন।
-ওরা সবাই নিচে বসে আছেন।
-কেনো।
-তুইতো কথা শেষ করিস নি।
-আজ আর কথা বলতে ভালো লাগছে না। যা বলার আগামী শুক্রবার বোলবো।
-আজ কেনো নয়।
-যা বলছি শুনে যা, শুক্রবার মিটিং কল করবি। জানাবি সোমবার। আমি তোকে কিছু হোম টাস্ক দেবো, ভালো করে কাজগুলো বোঝার চেষ্টা করবি। মাথায় রাখবি, তোর অফিস একটা ঘুঘুর বাসা। দাদা সহজ সরল, দাদার দ্বারা এ্যাডমিনিস্ট্রেসন চলবে না। তোকে তৈরি হতে হবে। যদি কাগজ বাঁচাতে চাস। আর এই কদিন আমাকে একবারে বিরক্ত করবি না।
মিত্রা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, এই অনির সঙ্গে ওর পরিচয় নেই।
-ব্যাঙ্কের সিগনেচার অথরিটি কে।
-আগে ও ছিলো মাস কয়েক আমাকে দিয়েছে।
-তোর কিংশুক, অরিন্দম ভালো ছেলে বলে মনে হয়।
-এটাও তো ওর রিক্রুটমেন্ট।
-সবই ও ও ও, তুই কি শিখন্ডি। শেয়ারটা কার তোর না ওর।
-তুই বৃথা রাগ করছিস।
চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
আমি কি করবো বল সব বুজে শুনে চুপ থাকতাম, তুই আসার পর একটু বল পেয়েছি।
-আমাকে কেন জড়ালি এর মধ্যে মনে হয় তোর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ভেঙ্গে যাবে।
-কি বলছিস বুবুন।
-আমি ঠিক বলছি। কাল থেকে টের পাবি।
-সব শেষ হয়ে যাক, তুই আমাকে ছারিস না।
-আমার টাকাটা কে দিয়েছে।
-আমার একটা প্রপার্টি ছিলো সেইটা ওদের দিয়ে দিয়েছি, তার বিনিময়ে ওরা ট্রান্সফার করেছে।
-আমাকে জানিয়েছিলি।
-সে সময় তুই দিস নি।
-ঠিক আছে। ঠিক আছে এখন চলে যা।

মিত্রা আমাকে ছেড়ে দিল।

ঘরের লাইটটা জলে উঠলো, পেছন ফিরে তাকালাম, সবাই ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, বুঝতে বাকি রইল না, ওরা সব শুনেছে।
দাদা কাছে এগিয়ে এলেন। আমার কাঁধে হাত দিয়ে মুখটা তুলে বললেন
-আমাকে বল আমি তোকে সাহায্য করতে পারি।
-তুমি পারবে না।
-আচ্ছা তুই বলেই দেখ না।
-আগামী শুক্রবারের পর সব দেখতে পাবে নিজের চোখে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম- তোকে বলে রাখলাম আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো চেকে সই করবি না।
-আচ্ছা। মিত্রা মৃদু স্বরে বললো।
বড়মা বললেন
-বলনা তুই । কিছু একটা হয়েছে, যা তুই জানিস এরা কেউ জানে না।
-তুমি ঠিক ধরেছো। আমি এখন কিছু বলবো না, এরা মাইন্ড গেম খেলবে, আমি খেলবো পাওয়ার গেম। তোমরা যাও আমাকে একটু ভাবতে দাও।
-তোমরা তিনজনেই এই কয়টা দিন দশটার মধ্যে অফিসে যেও, আর চোখ কান খাঁড়া রেখো। প্রয়োজনে আমি তোমাদের ফোন করবো। তোমরা কেউ ফোন করবে না।
-আচ্ছা। দাদা বললো।
-কাল আমি খুব ভোর ভোর বেরিয়ে যাবো।
-আমি উঠে পরবো বল তুই কখন যাবি। বড়মা বললেন।
-আমার জন্য ব্যস্ত হবে না।
বড়মার মুখটা শুকিয়ে গেলো। আমার চাল-চলন কথাবার্তা শরীরী ভাষায় ওরা বুঝলো আমি এই মুহূর্তে ঠিক নেই।

ওরা সবাই চলে গেল। মিত্রা আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

আমি অনেকক্ষণ জানলার ধারে দাঁড়িয়েছিলাম, ঘুম এলো না। মিত্রা অনেকক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল। আমি কোনও পাত্তা দিলাম না।

সকাল হতে বেরিয়ে এলাম, আমাকে একমাত্র দোতলার বারান্দা থেকে মিত্রা দেখল, বুঝতে পারছি মিত্রা খুব কষ্ট পাচ্ছে, তবু আমি পেছন ফিরে তাকালাম না, সোজা গেট পেরিয়ে চলে এলাম। বড়মাকে দেখতে পেলাম না।

এই কদিন অফিসের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ রইলো না। সাতদিনে সাত ঘন্টা গিয়েছি কিনা সন্দেহ। রবিবার অনাদিরা এসেছিলো, ওদের সঙ্গে বসতে পারি নি, মিত্রার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি, মিত্রা ওদের সঙ্গ দিয়েছে। আমার সঙ্গে ফোনে একবার কথা হয়েছে। সনাতন বাবু খ্যাপে খ্যাপে সমস্ত কাগজপত্র দিয়েছেন, একবারে দিতে পারেন নি। হিমাংশুকে কাগজ দিয়ে বলেছি এই বছরের পরিস্থিতি জানা, ও কাগজপত্র দেখে অবাক হয়ে গেছে, বলেছে অনি আমার পক্ষে একে রিকভার করা সম্ভব নয়, তবে চেষ্টা করবো, অমিতাভদার বাড়িতে যাই নি বললেই চলে, বড়োমা বার বার ফোন করেছে। একটা কথাই বলেছি, বিরক্ত করবে না। আমি এ কদিন ইসলাম ভাই-এর সঙ্গে থেকে সমস্ত ডকুমেন্টস জোগাড় করলাম, রাতে আমার ফ্ল্যাটে থেকেছি।

ইসলাম ভাইকে একদিন অভিমান করে বলেছিলাম, তুমি সব জানা সত্বেও এই কাজ করলে কেনো, ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে বলেছিলো, তোর মালিক হওয়ার আগেই কাজগুলো সাল্টেছি। তুই মালিক হওয়ার পর একটাও অন্যায় কাজ করিনি। জানি তুই আমার কাছে, আসবি জিজ্ঞাসা করবি। আমি তোর চরিত্রটা জানি। তবে তোকে কথা দিচ্ছি, ওরা এগুলো কোনোদিন পাবে না। সব অরিজিন্যাল আমার কাছে, এখনো আমার টাকা বাকি, দিলে পাবে, তুই যা ভাল বুঝবি এবার কর, আমি তোর মতে মত দেবো। আমি তাজ্জব বনে গেলাম সুনীত-চম্পকবাবুর কান্ডে। মাঝে একদিন দামিনী মাসির কাছে গেছিলাম। আমার পৌঁছোবার আগেই ইসলাম ভাই গিয়ে দামিনী মাসীকে সব বলে এসেছে। দামিনী মাসী বলেছে, ও যদি তোর কাজ না করে আমাকে বলবি, আমি ঝাঁটা মেরে ওকে কলকাতা থেকে বিদায় করবো, ওর মতো কত ইসলামকে আমি দেখলাম। আমি মাসির কথায় হেসেছি।

টিনা, অদিতি, দেবাশিস, নির্মাল্য, মিলি আমায় কামিং তিন মাসের জন্য ১২০ কোটির টাকার এ্যাড প্যাকেজ জোগাড় করে দিলো, ওদের বললাম, তোরা আমাকে অন্যান্য এ্যাড হাউসের ব্যাপারে সাহায্য কর। ওরা কথা দিয়েছে। যত দিন এগিয়েছে, আমাকে দেখে মিত্রার মুখ শুকিয়ে গেছে, আমার কান্ড-কারখানা দেখে শেষে ও ভয় পেয়ে গিয়ে, আমাকে জড়িয়ে ধরে, একদিন রাতে প্রচন্ড কাঁদলো। আমি চলে এলাম।

মিত্রা আমার কথামতো এই কদিন কাজ করেছে, এই কয়দিনে ও যেন পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছে। মিত্রার কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সুনীতদা এবং চম্পকবাবু ইররেগুলার। আমি ওকে চুপচাপ থাকতে বলেছি।

শুক্রবার আমি মিটিং আরম্ভ হওয়ার এক ঘন্টা আগে অফিসে ঢুকলাম, বুঝতে পারলাম অফিসে একটা চাপা উত্তেজনা, চারিদিকে ফুস ফুস গুজ গুজ। নিউজরুমে গেলাম, মল্লিকদা কাছে এলো, কিরে সব ঠিক আছে তো। মল্লিকদার দিকে তাকালাম। ওরা মলদের (মলরা আমাদের হাউসের ৫ পার্সেন্ট শেয়ার হোল্ডার) হাত করেছে। হাসলাম।
-তুই হাসছিস কেনো।
-তুমি হাসির কথা বললে তাই।
-ওরাও তো শেয়ার হোল্ডার।
-তো।
-আমার মাথায় কিছু আসছে না।
-সব আসবে এতদিন বহাল তবিয়েতে ছিলে। তাই কিছু বোঝার দরকার পরে নি।
-তুই ঠিক থাকলেই সব ঠিক।
-আমি বেঠিক কোথায়।
-কি সব করেছিস, তোর ওপর সবাই খেপচুয়াস। দেখে নেবো, প্রয়োজনে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেব ভাব।
-একচুয়েলি মৌচাকে ঢিল পরেছে। একটু আধটু হুল ফুটবেই, তাই বলে কি মধু খাবো না।
-হেঁয়ালি রাখ। দাদার প্রেসার বেরে গেছে, কাল ভীষণ শরীর খারাপ হয়েছিল।
-আমাকে খবর দাওনি কেনো।
-দাদা বারণ করলো।
-তাহলে বলছো কেনো।
-তোর বড়মা, ছোটমা কাঁদছে আর ঠাকুর ঘরে বসে আছে।
-আজকের পর আর বসতে হবে না।
ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রার ফোন।
-কি হলো।
-তুই কি অফিসে এসেছিস।
-হ্যাঁ।
-একবার আসবি।
-এখন না, ১১টার সময়।
-আমার কিছু কথা ছিলো তোর সঙ্গে।
-কি বিষয়ে।
-আজকের মিটিং-এর বিষয়ে।
-নিজে নিজে ঠিক কর সব।
মিত্রা চুপ করে গেলো।
ফোনটা কেটে দিলাম। নিজের কয়েকটা কাজ করে নিলাম, সন্দীপ আমার ধারে কাছে এলো না। অন্যান্য ছেলেগুলোরও কোনো বালাই নেই। তারা জানে কাজ করছি, মাসে মাসে মাইনে পেলেই হলো।
হিমাংশুর ফোন।
-তোদের অফিসে ঢুকছি।
-মিত্রার ঘরে গিয়ে বোস।
-তুই কখন আসছিস।
-জাস্ট দশ মিনিট পর।
-সব রেডি।
-হ্যাঁ।
ঠিক এগারোটায় আমি মিত্রার ঘরের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম, দেখলাম, আমার জায়গাটা মিত্রার ঠিক পাশেই। আমার একদিকে মল্লিকদা, আর এক দিকে অমিতাভদা। আমার ঠিক অপরজিটে মলরা, চম্পকদা, সুনীতদা আর সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে।

সবার চোখে মুখেই চাপা টেনসন।

প্রথমে সনাতনবাবু কামিং ৬ মান্থের বাজেট কি হবে তা পরে শোনালেন। তাতে এ্যাডের বাজেট দেখে চম্পকবাবুর মুখ শুকিয়ে গেলো। পর পর সব ডিপার্টমেন্টের কি কি টাকা ঠিক করা হয়েছে, তা পরে শোনানো হলো। সবারই মুখ শুকিয়ে গেছে। মিত্রা প্রথমে মল বাবুকে বাজেটের ওপর বলতে বললেন। মলবাবু বললেন
-ম্যাডাম আমি ৫ ভাগ শেয়ার হোল্ড করে আছি। আমার কোন কথা নেই। আপনি বরং বলুন আমরা মেনে নেবো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার কিছু বলার আছে।
আমি শুরু করলাম।
-আমি পনেরো দিন হলো কোম্পানীর মালিক হয়েছি। তাতে হিসাবে অনেক গরমিল দেখলাম, আপনারা দুজনে কেউ তা জানেন।
মল এবং মিত্রা দুজনেই অস্বীকার করলো।
-সনাতানবাবু।

সনাতানবাবু আমার মুখের দিকে তাকালেন।

-ইনটারন্যাল অডিটে কিছু ধরা পড়েছে?

সনাতানবাবু চুপ করে রইলেন।

-আরে হ্যাঁ না কিছু বলুন?

-ধরা পড়েছে।

-সেই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেছিলেন?

-এই মিটিংটা হুট করে হবে জানতাম না। তাহলে আনিয়ে রাখতাম।

-সাত দিনের নোটিস দেওয়া হয়েছিল।

-আপনি নিজে চোখে সব দেখেছেন।

-আমি পনেরো দিনের মালিক। আপনি বলুন, কে কি নিয়েছে?

-মল বাবু অনেক বেশি টাকা তুলেছেন।

মল হই হইকরে উঠলো।

আমি মলের দিকে তাকালাম।

আমার বরফঠান্ডা চোখের দিকে তাকিয়ে মল কেন জানিনা ঘাবড়ে গেল।

-আপনি নতুন এসেছেন আপনি কিছু জানেন না। চিল্লিয়ে উঠলো।

মলকে পাত্তাই দিলাম না।

এবার চম্পকবাবুর দিকে তাকালাম।
-চম্পকবাবু গত ৬ মাসে আমাদের এ্যাডের যা বাজেট ছিলো তার কত এসেছে।
-টার্গেট ৯০ ছিলো ৫০ এসেছে।
-কত কমিশন বাদ গেছে।
-১৩ কোটি।
-এনটারটেইনমেন্টের পেছনে কত খরচ হয়েছে।
-৬ কোটি। তুমি কি এই জন্য মিটিং ডেকেছো নাকি।
-আপনি এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো।
-তুমি উত্তেজনার সৃষ্টি করছো।
-আপনার এ্যাড ডিপার্টমেন্ট গত ৬ মাসে ৬ কোটি টাকা এন্টারটেইনমেন্টের পেছনে খালি খরচ করেছে।এই বিষয়ে আপনার কোনও বক্তব্য আছে।

-না।

  -আচ্ছা আগামী ৬ মাসের বাজেট ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি। এ নিয়ে আপনি কি বলেন।
-এটা এ্যাবসার্ড।
-আপনার রেসিও অনুযায়ী এই এ্যাড যদি পাওয়া যায় তাহলে ১০০ কোটি কমিশন এবং এনটারটেইনমেন্টের পেছনে খরচ হবে। তাই তো।
চম্পকদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে, সকলে একটু নড়েচড়ে বসলো।

এনটারটেনমেন্টের পেছনে খরচ হবে লাম-সাম ১৫ থেকে ২০ কোটি। তাই তো?

সবাই চুপচাপ।

-চম্পকবাবু উত্তর দিন।
-এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তোমরা আমাকে না জিজ্ঞেস করে বাজেট করেছো।
-আপনি বাজেট করে যা এনেছেন তা কি ঠিক।
-তুমি কি বলতে চাও?
-গত সপ্তাহে আপনি এনটারটেইনমেন্টের নামে, দেড়লাখ টাকার একটা বিল জমা দিয়েছিলেন। খ্যাপে খ্যাপে সেই টাকা আপনি নিয়ে নিয়েছেন। টাকাটা আপনি কোথায় খরচ করলেন।
-তোমাকে তার কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি।
-আমি মালিক হিসেবে আপনার চাকরিটা খেতে পারি, শুধু তাই নয়, এই ঘর থেকে আপনাকে শ্রীঘরে ঢোকাতে পারি। জামিন অযোগ্য মামলায় আপনাকে ফাঁসাতে পারি, কালকে কাগজে সুন্দর করে একটা আর্টিকেল লিখতে পারি, উইথ ফটোগ্রাফ। যাতে আপনার সাধের সংসার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এই সমাজে আপনি আর কোনওদিন মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবেন না।  আপনি কোন অপশন বেছে নেবেন।

সবাই দেখলাম একটু নরে চরে বসলেন, মল আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। সুনীতবাবুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, দাদা, মল্লিকদার মাথা নীচু।
-আমার হিসেব অনুযায়ী কোম্পানী আপনার কাছে ৬ কোটি টাকা পায়।
-এটা অন্যায় ভাবে আমার ওপর প্রেসার করা হচ্ছে।
-তারমানে আমি যা বলছি তার কিছুটা মেনে নিচ্ছেন। পুরোটা নয়।
চুপচাপ।
-তাহলে আর একটা কথা বলি।
-অনি থাক। মিত্রা বললো।
-কেনো। থাকবে কেনো। তুই বল, আমার শোনার দরকার আছে। অমিতাভদা বললেন।
-উনি আমাদের হাউসের এ্যাড অন্য জায়গায় দিতেন। সেখান থেকে বেশি কমিশন পেতেন।

চম্পকবাবু চমকে আমার মুখের দিকে তাকালেন।

-আমার কাছে তার প্রমাণ আছে, আমি কখনও ইয়লো জার্নালিজম করি না।

-কি চম্পক অনি ঠিক কথা বলছে। অমিতাভদা বললেন।
চম্পকদা অমিতাভদার কাছে ছুটে এসে পায়ে ধরে ফেললেন
-আমায় ক্ষমা করুন দাদা, আপনার ওপর অনেক অন্যায় করেছি, আমি সত্যি বলছি, মল আর সুনীতের পাল্লায় পরে এসব করেছি, ওরাও সব ভাগ পেয়েছে দাদা আমি একা নিই নি।
আপনি অনির হাত থেকে আমাকে বাঁচান, আমি জানি ওর কাছে সব ডকুমেন্টস আছে, আপনি এই হাউসের সবচেয়ে সিনিয়র পার্সন আপনার কথা অনি ফেলতে পারবে না। ম্যাডাম মেনে নেবেন।
-কি হে মল। চম্পক কি বলে।
-উনি প্রমাণ করতে পারবেন।
-তাই নাকি মলবাবু। আমি বললাম।
-আপনি কোনো কথা বলবেন না। আমি চম্পকের সঙ্গে কথা বলছি।
-আপনার বাড়িতো রাজস্থানে, চৌমহিনি, ট্যাঙ্করোড….।এ্যাকাউন্ট নম্বর….  আপনার ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট এতোক্ষণে সিল হয়ে যাবার কথা। একটা ফোন করুন তো আপনার ব্যাঙ্কে। দেখুন এ্যাকাউন্টের পজিসন কি।
-এটা আপনি কি করছেন অনিবাবু।
-তাহলে সত্যি কথা বলুন।
-কিছু দিয়েছে, যতসামান্য।
-বাইপাসের প্রমোটিংয়ে কত ঢেলেছেন।
-ওটা আমার মাদার বিজনেস।
-হিমাংশু জেরক্সটা মলের হাতে দে। অরিজিন্যাল আমার কাছে।
-হিমাংশু জেরক্সটা এগিয়ে দিলো।
মল উঠে এসে আমার হাত জড়িয়ে ধরলো। পারলে আমার পায়ে পরে যায়।
-আপনি এতো বড় ক্ষতি আমার করবেন না। আমি একেবারে মরে যাবো। আমি বুঝে গেছি সব।
-ব্যবসায়ী মানুষ তাড়াতাড়ি আপনাকে বুঝতেই হবে।
অমিতাভদা, মল্লিকদা, মিত্রা সব মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে ব্যাপারটা কি হলো, মল এরি মধ্যে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছে। ঘরের অন্য ডিপার্টমেন্টর সকলের মুখ থমথমে।
-আপনি যা বলবেন আমি করে দেবো। এটা শো হলে আমার ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে।
-আমার দুটো জিনিস চাই, মির্জা গালিব স্ট্রীটের জায়গাটা, আর তোমার ৫ পার্সেন্ট শেয়ার।
সুনীতদা উঠে দাঁড়িয়ে ধপ করে বসে পরলেন, সবাই দেখলো ব্যাপারটা, কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, হিমাংশু চল লালবাজার থানায়।
-না না এটা কোনো সমাধান হলো। আপনি জোর জবরদস্তি করছেন। মল আমার হাতটা চেপে ধরলো।
-কি সুনীতদা জোর জবরদস্তি না হকের জিনিষ। কোনটা।
সুনিতদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
-আমি বেশি সময় দিতে পারবো না। আমার কথা মানবেন না তিনজনকেই ভেতরে পুরবো।
অমিতাভদা উঠে দাঁড়ালেন
-তুই কি আরম্ভ করেছিস বলতো।
আমি কে, সঙ্গে কি নিয়ে ঘুরছি। গত বাহাত্তর ঘণ্টায় এরা তা জোগাড় করে ফেলেছে। তোমার মাথায় এসব ঢুকবে না।

সুনিতদা, চম্পকদা, মল আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

সেটার প্রমাণ তোমাকে নতুন করে দেখাতে হবে না।

দাদা, মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

-আমি কি সেটার প্রমাণতো পাচ্ছ। আমি চাইলেও এরা এ ঘর থেকে আমাকে বেরতে দেবে না, ওই দরজায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকবে তিনজনে। ওদের প্রাণের পাখি আমার কাছে। তোমরা তো বলতেই দিলে না। এরাও এই ছকটা কষেছিল। আমি কিন্তু এদের একটাকেও ছারবো না। খাবি খাইয়ে ছেড়ে দেব।
সুনীতদা এগিয়ে এলেন
-তুই যা বলবি তাই করবো। তুই বল কি করতে হবে।
-খালি সই করতে হবে।
-আজকেই করতে হবে।
-হ্যাঁ। ডিড তৈরি আছে, পরে নাও সই করো।
-হিমাংশু ডিড ওদের হাতে দিয়ে দাও।

হিমাংশু চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে দাদার পাশে রাখা এ্যাটাচি থেকে ডিড বার করে ওদের এগিয়ে দিল।

দাদা, মল্লিকদা, মিত্রা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
-আপনি এটা ঠিক কাজ করছেন না অনিবাবু।
-মল তোমার কাছে এখনো ৫০ কোটির হিসাব চাই নি।
-সেটাও কি আমি একা লিয়েছি। সবাই লিয়েছে। মল এবার নিজের ফরমায় এলো বাংলা হিন্দী।
-কারা কারা নিয়েছে?
-চম্পক আছে, সুনীত আছে, কিংশুক আছে, অরিন্দম আছে, ড: ব্যানার্জি আছে,  ম্যায় সনাতন ভি আছে।
-আমি তোমার কাছ থেকে বুঝছি আর তুমি ওদের কাছ থেকে বুঝে নাও।
-এটা কি বলছো অনি। সনাতনবাবু বললেন।
-কেনো।
সনাতনবাবু কোনও কথা বলতে পারছেন না।
-নাওয়ার সময় অনির কথা মনে পরে নি।
সবার মাথা নত।
-সই না করলে সবকাটাকে তোলতাই করাবো। হিমাংশু দুটো ডিড আছে দেখে শুনে সই করাবি।
হিমাংশু মাথা নিচু করে কাজ করে চলেছে।
রেজিস্টারার ম্যাডাম এসেছে।
-হ্যাঁ।
-এখানেই রেজিস্টার করাবি। সাক্ষী সাবুদ, অমিতাভদা, মল্লিকদা, মিত্রা। আমি নিউজরুমে গিয়ে বসছি। আধাঘন্টা সময় দিলাম। তারপর আবার মিটিং স্টার্ট হবে।
মল আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। তুমি ক্যাশ লাও।
-আমার এক কথা।
-তাহলে আমিও তোমায় বললাম, আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো না।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলাম, ভয়েস অন করলাম।
ইসলামভাই-এর গলাটা গম গম করে উঠলো।
-কি রে অনি, মল নাকুর নুকুর করছে। ও শালা মেড়ো আছে। ও জানে না তোর বুদ্ধির কাছে ওরা বাচ্চা।
-কার গলা শুনতে পাচ্ছ।
মল আমার দিকে ফ্যাকাসে চোখে তাকিয়ে আছে, ও যার ওপর নির্ভর করে এতোক্ষণ দাপাদাপি করছিলো সেটা যে এই ব্যক্তি সেটা ও বুঝে ফেলেছে।
-তুমি কথা বলো।
মলের গালে, চম্পকদার গালে, সুনীতদার গালে কে যেন কষে থাপ্পর মারলো।
-দে।……কি মল বাবু।
-হ্যাঁ বল ইসলাম ভাই।
-অনি যা বলছে চুপচাপ করে নিন, আপনার ভালো হবে, অনিকে আপনার থেকেও বেশি দিন দেখেছি, ও খারাপ ছেলে নয়। আর শোনেন চম্পক আর সুনীতকেও বলে দিন। ও যা বলে আজ থেকে যেনো কথা শুনে চলে, না হলে ওদের ক্ষতি হবে।
আমি অনিকে রিকোয়েস্ট করেছি, ওদের চাকরি যাবে না, ওর কথা যেন শোনে। না হলে বিপদ আছে। অনিকে দেন।
-হ্যাঁ বলো।
-তুই কাল দামিনী বুড়ীর কাছে গেছিলি।
-হ্যাঁ।
-কেনো ইসলাম ভাই-এর ওপর বিশ্বাস ছিলো না।
-মনটা ভালো লাগছিলো না।
ইসলাম ভাই হো হো করে হেসে উঠলো।
-আজ গিয়ে বলে আসবি।
-ঠিক আছে।
ফোনটা বন্ধ করলাম, সবাই কথা শুনলো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, দামিনী মাসীর গল্পটা একমাত্র মিত্রা জানে, ও মাথা নীচু করে আছে।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
ঘরের বাইরে দেখছি প্রচুর লোকের আনাগোনা। আমায় দেখতে পেয়ে, পরি কি মরি করে পালাচ্ছে। আমি সোজা ক্যান্টিনে চলে গেলাম, চায়ের কথা বলতেই বটাদা তুড়ন্ত চা নিয়ে চলে এলো,
আমি ফোনটা বার করে, বড়মাকে ফোন করলাম।
-হাঁপাচ্ছ কেনো?
-ঠাকুর ঘর থেকে দৌড়ে এলাম। জানি তুই ফোন করবি।
-তোমার ঠাকুর কি বললো।
-তুই জিতবি।
-তাই হয়েছে।
-হ্যাঁরে অনি সত্যি তুই জিতেছিস।
-হ্যাঁ।
-তুই ছোটর সঙ্গে কথা বল।
-দাও।
-জানিস অনি এই কটা দিন মনটা ভীষণ খারাপ ছিলো। তুই ভাল আছিসতো, মনটা খালি কু গাইতো।
-আমি কোন অন্যায় কাজ করিনি।
-জানি। কাল দাদার শরীরটা ভীষণ খারাপ ছিলো।
-জানি।
-তুই জানিস।
-হ্যাঁ।
-তুই কি সাংঘাতিক ছেলে রে।
-পরে ফোন করবো।
সন্দীপ কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারি নি। মিটি মিটি হাসছে। তুই সত্যি বস।
-কেনো।
-বোড়ের চালে রাজা কিস্তি মাত।
হাসলাম।
ফোনটা বেজে উঠলো।
হিমাংশুর ফোন।
-সই কমপ্লিট।
-হ্যাঁ। তোকে সই করতে হবে।
-যাচ্ছি।
-তুই নিউজরুমে থাক, সেকেন্ড ইনিংসটা খেলে আসি।
সন্দীপ হাসলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/Ez4pLmk
via BanglaChoti

Comments