কাজলদিঘী (অষ্টম কিস্তি)

কাজলদিঘী

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

অষ্টম কিস্তি
—————————

সকালে মিত্রার ডাকে ঘুম ভাঙলো, সেই এক চিত্র, মিত্রা ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়েছে, সেই লালপাড় শাড়ি, মাথায় একগাদা সিঁদুর, মা মা, ঘরের গৃহিণী ভাব। আমি উঠে বসে রেডি হয়ে পরলাম, তাড়াতাড়ি। দুজনে সেই লুচি বাটি চড়চড়ি খেয়ে বেরিয়ে পরলাম।

হিমাংশুর অফিসে এলাম সাড়ে দশটা নাগাদ, অমিতাভদা, মল্লিকদা, মিত্রা আমার হয়ে স্বাক্ষী দিলেন, ওখানে এক ঘন্টার কাজ ছিল। কাজ শেষে, হিমাংশুকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললাম, আমাকে একটা আছোলা বাঁশ দিলি, বেশ চলছিলো, কিন্তু তুই থামিয়ে দিলি। হিমাংশু হেসে বললো, সব ভালো যার শেষ ভালো। তোকে মিত্রার সঙ্গে জুড়ে দিলাম, না হলে মিত্রার একার পক্ষে কন্ট্রোল করা সম্ভব হতো না।

ওর দিকে তাকালাম। ও আমার মিত্রার সম্বন্ধে কোন আঁচ করতে পেরেছে কিনা। ওর চোখ সেই কথা বলছে না।
-এরপর আমার করণীয় কি আছে।
-খাতা পত্রগুলো সাজিয়ে নিই। আর একজন যে ডিরেক্টর আছে, তাকে জানাতে হবে। এখন আমার অনেক কাজ।
-তোর কাজ কবে শেষ হবে।
-আগামী সপ্তাহে কমপ্লিট করে ফেলবো ভাবছি।
-শেষ কর আমি তোর সঙ্গে বসবো, কতগুলো স্ট্রাটিজি নিয়ে।
-ঠিক আছে। তুই কবে যাচ্ছিস।
-তোর এখান থেকে বেরিয়ে বড়মার সঙ্গে একবার দেখা করবো, তারপর চলে যাবো।
-ফিরবি কবে।
-তুই অফিসের সম্বন্ধে সব জানিস তো।
-হ্যাঁ, মিত্রা কিছু কিছু বলেছে, তুই ঠিক ডিসিশন নিচ্ছিস।
-মিত্রা একা পরে গেছে।
-বুঝতে পেরেছি। তুই ওদিকটা সামলা আমি এদিকটা সামলে দেবো।
-এখন যারা আছে, সব বিষ মাল।
-জানি, খালি ধান্দাবাজি। তবে ঘুঘুর বাসা পরিষ্কার করতে তোকে হিমশিম খেতে হবে।
-জানি, তবে ওটা সামলাতে আমার বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।
-ঠিক আছে, তোর সময় নষ্ট করবো না। তুই যা এখন, কলকাতায় ফিরলে আমায় একবার নক করিস।
-ঠিক আছে।

হিমাংশুর ওখান থেকে বেরিয়ে এসে, বড়মার কাছে এলাম। মিত্রা আসতে চাইছিল না। আমিই ওকে জোর করে নিয়ে এলাম। বড়মা প্রথমে মিত্রাকে দেখে একটু অবাক হয়েছিলো, ছোটমা ক্যাজুয়াল। সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম, তারপর আমরা চারজনে মিলে ঠিক করলাম পরবর্তী স্ট্রাটেজি, অমিতাভদার পাকা মাথা কয়েকটা ভাল ডিসিশন নিলো, আমি সেগুলো মেনে নিলাম। বুঝলাম মেইন অপারেটর হবে সনাতন ঘরুই। দাদা সেরকমই ছক করলো, মিত্রা আমি সেগুলো মেনে নিলাম, আমি একটা খালি প্রস্তাব রাখলাম, আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো, আমার কোন জায়গা পরিবর্তন হবে না। মিত্রা প্রথমে মানতে চাইছিল না, ওকে ব্যাপারটা বোঝালাম, ও বুঝতে পারলো, ফাইন্যাল ডিসিশন হলো, আগামী সপ্তাহে শুক্রবার মিটিং কল হবে, সেখানে মিঃ সনাতনের হাত দিয়েই সকলকে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সাইনিং অথরিটি এই মুহূর্তে মিত্রার হাতেই থাকবে। মিত্রাই সোল পাওয়ারের অধিকারী। মিত্রা মেনে নিলো। এ কদিন মিত্রা দাদার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবে, প্রয়োজন পরলে আমায় ডাকবে। আমি চলে আসবো। আমার দেখা মিলবে সেই শুক্রবার।
মল্লিকদা, ছোটমা, বড়মা এতক্ষণ নিরব দর্শক ছিল, কথা শেষ হতে ছোটমা বললেন, হ্যাঁরে অনি, তোর মা-বাবার কোন ছবি তোর কাছে নেই।
ছোটমা এ ভাবে কোনদিন কথা বলেন নি, আমি স্থির দৃষ্টি নিয়ে ছোটমার দিকে তাকালাম।
-আছে।
-তোর মনে পড়ে ওনাদের।
-না। আবঝা আবঝা।
-আমাকে ছবিটা দিবি।
-কেনো।
-আমি বাঁধিয়ে ঠাকুর ঘরে রাখবো।
হাসলাম।
-তোর মতো ছেলের যিনি জন্ম দেন তিনি মহাপ্রাণ।
খাওয়ার টেবিলে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।
-ঠিক আছে তোমায় দেবো।
-তুই ওই ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দে।
-কেনো।
-এখানে চলে আয়। এতো বড় বাড়ি এতো গুলো ঘর।
আবার তাকালাম ছোটমার দিকে।
-তোকে নিয়ে এ কদিন আমি আর দিদি খালি ভেবেছি।
-আমিও কি মহাপ্রাণ।
এমন ভাবে কথাটা বললাম, সবাই হেসে ফেললো, মল্লিকদা চেঁচিয়ে উঠলেন, কি, বলছিলাম না, অনির বিকল্প অনি নিজেই। ওর মাথার মধ্যে আর একটা মাথা আছে।
-এই শুরু করলে।
-না না।
-বলবো ছোটমাকে।
-এই তো তোর সঙ্গে কি আমার কোন প্রাইভেট টক থাকতে পারে না।
-তাহলে এখন শুধু চিংড়ি মাছের কালিয়া খেয়ে যেতে হবে।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে বলে উঠলেন ঠিক ঠিক, কি হে দাও।
ছোটমা মৃদু হেসে বললেন, তোমার ভাগেরটা শেষ হয়ে গেছে, খালি আনি আর মিত্রার ভাগেরটা আছে।
বড়মা ছোটমার দিকে তাকিয়ে বললেন, যা না, ও বেলার জন্য রাখতে হবে না।
ছোটমা রান্নাঘরের দিকে গেলেন, বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কবে আসবি।
-কেনো। বৃহস্পতিবার রাতে।
-এতদিন কি করবি।
-অনেকগুলো কাজ আছে, একেবারে শেষ করে আসবো।
বড়মা চুপ করে রইলেন, আমি উঠে গেলাম বড়মার কাছে, বড় , মিত্রা পাশাপাশি বসে আছে, আমি বড়মার গলা জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম, কেনো মিত্রাকে তো রেখে যাচ্ছি। মিত্রা আমার কথা শুনতে পেয়েছে, আর কেউ শুনতে পায় নি। বড়মা আমার দিকে তাকালেন, চোখ দুটো জলে ভোরে উঠেছে।

ছোটমার আনা চিংড়িমাছ, সকলে ভাগ করে খেলাম। খাওয়া শেষ হতে বড়মার ঘরে গিয়ে বললাম, টাকা দাও। বড়মা আমার দিকে তাকালেন, এই প্রথম বড়মার কাছে টাকা চাইলাম। বড়মা আমাকে বুকে টেনে নিলেন, আমার শান্তির নীড়, জীবনে প্রথম বড়মার কাছে মুখ ফুটে টাকার কথা বললাম, বড়মা আলমারি খুলে টাকা দিলেন, সেদিন নিয়ে গেছিলাম, তুই রাগ করবি বলে তোকে দিতে সাহস পাই নি, তাই নিয়ে তোর দাদা বাড়িতে এসে আমার ওপর কি হম্বি তম্বি। ছোটও নিয়ে গেছিলো। আমি হাসলাম। কখন যে ছোটমা পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিল জানি না। আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
-কি বাবু সাহেব মচকেছেন না ভেঙেছেন।
ছোটমার কাছে এগিয়ে এলাম, দুটো কাঁধে হাত রাখলাম, কোনটা হলে তোমার ভালো লাগবে।
-দুটোই।
-ঠিক আছে। এবার থেকে তাই হবে।
ছোটমার চোখ দুটো টল টল করছে।
-তোমরা সবাই এরকম করলে আমার পক্ষে লড়াই করা মুস্কিল হয়ে পরবে।
-না রে অনি আমরা সবাই এতোদিন মাঝ সমুদ্রে ভাসছিলাম, এখন একটা নৌকায় উঠতে পেরেছি, সেটাও যদি ফুটো হয়ে যায়, সেই ভয়ে আমরা সব….।
নীচু হয়ে ছোটমার বুকে মাথা রাখলাম, অনি সেই অন্যায় কোন দিন করবে না।
-জানি বলেই তো হারাবার ভয়টা বেশি।
-কিচ্ছু হারাবে না।
-ওই মেয়েটার চোখ দুটো দেখেছিস।
-দেখেছি।
-সব তোমায় বলবো, সময় আসুক।
-তুই কি বলবি আমি জানি।
ছোটমার চোখে চোখ রাখলাম।
-সবাই আশ্রয় চাইবে, তুই আশ্রয় দিতে পারবি না, থাকার জায়গা দিবি এই তো।
-হয়তোবা তোমার কথা ঠিক, হয়তোবা নয়। ঠিক আছে, আমায় এখন যেতে হবে, না হলে অনেক রাত হবে পৌঁছতে।
ছোটমা বড়মাকে প্রণাম করে বাইরে এলাম, মল্লিকদা, অমিতাভদা, মিত্রা বসে কথা বলছে।
আমি প্রণাম করলাম, মিত্রাকে বললাম, আমাকে একটু স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দে।
ও উঠে দাঁড়ালো।
বড়মা এগিয়ে গেলেন মিত্রার দিকে, এ কদিন তুমি একবার করে এসো না। ভাল লাগবে।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো। আমার চোখের ইশারা ও বুঝতে পেরেছে। ও নীচু হয়ে বড়মা, ছোটমাকে প্রণাম করলো, অমিতাভদাকে, মল্লিকদাকে প্রণাম করলো, ওরা আজ কোন বাধা দিলো না।

অমিতাভদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম, ইসমাইল গাড়ি চালাচ্ছে।
-তোর কটায় ট্রেন। আড়াইটের পর ১ ঘন্টা অন্তর, আমায় ঘন্টাখানেক সময় দে।
মিত্রার দিকে তাকালাম, ওর চোখ কিছু বলতে চায়, আচ্ছা।
-ইসমাইল, গড়িয়াহাটমে উস দুকানসে চলিয়ে।
-জি ম্যাডাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে গড়িয়াহাটের একটা জামাকাপড়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালাম। মিত্রা আমাকে নিয়ে নামলো। আমি ওর পেছন পেছন দোকানের মধ্যে ঢুকলাম, ও নীপার জন্য একটা লং স্কার্ট আর খুব সুন্দর একটা গেঞ্জি কিনলো, আমার দিকে তাকিয়ে বললো কিরে নীপা পরবে তো, আমি বললাম, তুই যখন দিচ্ছিস নিশ্চই পরবে, মিত্রা ওর জন্য একটা সাদা হাতের কাজ করা সালোয়ার কিনলো, সেদিন ও যেরকম একটা পরেছিলো, কাকার জন্য ধুতি পাঞ্জাবি, আর কাকীমা আর সুরমাসির জন্য কাপড় কিনলো, আমি কোন বাধা দিলাম না। আমায় বললো তোর জন্য একটা জিনস আর গেঞ্জি কিনবো তোর কোন আপত্তি আছে, আমি মাথা দুলিয়ে বললাম, কেন তবে আমি নিয়ে যাব না, ফিরে এসে, তোর বাড়িতে উঠবো, শুক্রবার ওই প্যান্ট গেঞ্জি পরবো, ও আমার দিকে গভীরভাবে তাকালো, মিটি মিটি হাসলো।
-হাসছিস যে।
-না ঠিক আছে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোর কোন পছন্দ আছে।
-না। তুই যা কিনে দিবি তাই পরবো।
ও নিজের মনের মতো করে একটা জিনসের প্যান্ট গেঞ্জি কিনলো। দেখলাম বিল প্রায় বিশ হাজার টাকা হয়ে গেছে। আমি কিছু বললাম না। আমাকে বাড়ির জন্য কেনা জামা কাপড়গুলো ধরিয়ে দিলো, ওগুলো নিয়ে যা। আমি বললাম নিয়ে আমি যাচ্ছি, তবে তুই একটা কাজ কর, কাকার নাম করে একটা চিঠি লিখে দে। ও কাউন্টার থেকে একটা প্যাডের কাগজ নিয়ে খস খস করে কাকার নাম করে একটা চিঠি লিখে দিলো। দেখতে দেখতে তিনটে বেজে গেলো। দুজনে মিলে কফি সপে বসে এককাপ করে কফি খেলাম।
-এখন আমি কি করি বলতো।
-কেনো, ক্লাবে যা।
-দিন সাতেক হলো ক্লাবের দরজা মারাই নি।
-কেনো!
-ভালো লাগেনা।
-বাড়ি যা, পড়াশুনো কর।
-কি পড়বো।
-বই পড়।
-এখন আর ভালো লাগে না।
-সব কিছুতেই ভালো লাগে না ভালো লাগে না, বললে চলে, ভালো লাগাতে হবে।
-তুই মাস্টারি করিস না।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-তোকে ছাড়া আমি একমুহূর্ত চলতে পারছি না।
-ঠিক আছে, আমায় দিন কয়েক সময় দে। ওই দিকটাও তো দেখতে হবে।
-বুঝি, কিন্তু মন মানে না।
মিত্রা আমার হাতটা চেপে ধরলো, জানিস বুবুন, তুই আমাকে এই কয়দিনে একটা নতুন জীবন দিয়েছিস, আমি আর অতীতে ফিরে যেতে চাই না। গত সাত বছর জীবনটা যন্ত্রের মতো চালিয়েছি, তুই এ কদিনে আমার জীবনটাকে একেবারে ওলট পালট করে দিয়েছিস।
-সে তো বুঝলাম। কিন্তু তোর ওপর অনেক দায়িত্ব। সেটা বুঝতে পারছিস তো।
-পারছি। তুই অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস।
-জানি। কিন্তু সেটাতো তোর স্বার্থে।
-জানি।
-ঠিক আছে, তুই যদি মনে করিস অফিসে যাবি তো যা। কিন্তু মনে রাখবি তোর ওপর একটা প্রেসার তৈরি করা হবে। তুই ওটা রিকভার করতে পারবি তো।
-পারবো। ঠিক আছে, কাল থেকে তুই অফিসে যা।
-কিছু হলে আমাকে একবার জানাবি।
-তুই মন থেকে বলছিস।
-হ্যাঁ, মন থেকে বলছি।
-তুই কবে আসবি।
-তিনটে দিন আমায় সময় দে।
-তারমানে তুই মঙ্গলবার আসবি।
-হ্যাঁ।

স্টেশনে এসে মিত্রাকে ছেড়ে দিলাম, মিত্রার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। আমি একবার তাকিয়ে আর ওর দিকে ঘুরে তাকালাম না। টিকিট কাউন্টারে এসে টিকিট কাটলাম, ট্রেন মিনিট পনেরো পর। তিন প্যাকেট সিগারেট নিলাম। অনাদিকে একটা ফোন করে বলে দিলাম, আমি ট্রেনে উঠলাম, তোরা স্টেশনে কাউকে পাঠা। অনাদি ওপ্রান্ত থেকে বললো, ঠিক আছে।

ট্রেনে যেতে যেতে মিত্রা তিনবার, নীপা একবার, অনাদি দুবার, চিকনা বাসু একবার করে ফোন করেছে। লোকাল ট্রেনে খুব একটা যাওয়া অভ্যাস নেই, যাইও না, তবু নিজেকে মানিয়ে নিলাম। দেখতে দেখতে দুটো ঘন্টা কেটে গেলো। স্টেশনে নামতেই দেখলাম, চিকনা আর সঞ্জীব দাঁড়িয়ে আছে, সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে।

স্টেশনে নামতেই চিকনা আমার কাছ থেকে, ব্যাগটা নিয়ে নিলো, সঞ্জীবকে জিজ্ঞাসা করলাম, কিরে সব ঠিক আছে, চিকনা খেঁকিয়ে উঠলো, ও শালা কি জানে, সকাল থেকে ওর দেখা পাওয়া গেছে, অনাদি ফোন করতে বাবু এলেন। সঞ্জীব কিছু বলতে যাচ্ছিলো, আমি বললাম, ঠিক আছে, ঠিক আছে, আর কেউ আসে নি।
-হ্যাঁ বাসু এসেছে।
-কোথায়।
-বাইরে আছে।
স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে এলাম। আসার সময় চিকনা, টিটিকে বললো, কি বলেছিলাম না, এই হচ্ছে অনি। ভদ্রলোক বুকের কাছে হাত তুলে নমস্কার করলেন, আমিও প্রীতি নমস্কার করলাম। চা খেতে খেতে বড়মাকে একবার ফোন করলাম, জানালাম আমি পৌঁছে গেছি। মিত্রাকে ফোন করলাম, বললো বাড়িতে আছে, গলাটা ভীষণ ভারী ভারী।
-কি করছিস।
-একটা সিনেমা দেখছি।
-কি সিনেমা।
-শুনবি।
মিত্রা মোবাইলটা টিভির কাছে ধরলো, এক দুজেকে লিয়ে। আমি মিত্রা কলেজ লাইফে প্রথম দুজনে কলেজ কাট মেরে সিনেমাটা দেখেছিলাম, মিত্রাই দেখিয়েছিলো।
হাসলাম।
-কিরে শুনলি।
-হ্যাঁ।
-তোর কিছু মনে পড়ে।
-প্রথম কলেজ কাট মারার কথা মনে পড়ছে।
-বাড়িতে এসে ভেবেছিলাম ক্লাবে যাব, টিভিটা খুলতেই দেখলাম, সিনেমাটা শুরু হয়েছে, বসে গেলাম
-ভাল করেছিস।
-যে টাস্কগুলো দিয়ে এসেছি মন দিয়ে করিস। ফিরে গিয়ে ধরবো।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফললো।
মেঘ কাটলো।

আমি বাসুর পেছনে বসলাম, ঘন্টা খানেক লাগলো, বাড়িতে পৌঁছাতে, আস্তে আস্তে সবার মুখেই মিত্রার প্রশংসা ঝরে পরছে, অতো পয়সা যার তার কোন দেমাক নেই, ওরা জানতো না, এই নার্সিং হোমটা মিত্রার হ্যাজবেন্ডের, দূর ছাই আমিও কি জানতাম, জানলামতো সেই দিন। চিকনা তো বলেই ফেললো, গুরু আমার জন্য তোমার ওখানে একটা কাজ দেখো না, যদি টেবিল মোছার চাকরিও থাকে তাতেও কোন আপত্তি নেই। আমি খালি বললাম, আফটার অল তুই আমার বন্ধু আজ নয় কাল কেউ না কেউ জানতে পারবে, তখন। ও প্রায় আমার হাতে পায়ে ধরে, আমি বললাম একটু সবুর কর, সব ঠিক হয়ে যাবে।
চিকনা ধাতস্ত হলো।

বাড়ি পৌঁছলাম, সন্ধ্যা মাথায় নিয়ে। রাস্তায় কোথাও দাঁড়াই নি। খামারে গাড়ি রেখে আমরা চারজন ঢুকলাম, বাইরের বারান্দায়, টিভি চলছে, অনেক লোক বসে দেখছে, কাকাও আছে। আমি আসাতে কাকা চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তুই যা বলেছিস সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। নীপা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, চেঁচিয়ে উঠলো, বলবো অনিদাকে সকালের কথা। না না বলিস না, ওইটুকুতো খালি অন্যায় করেছি।

নীপার দিকে এতোক্ষণ খেয়াল করিনি, কয়েকদিন আগে দেখা নীপার সঙ্গে আজকের দেখা নীপার অনেক পার্থক্য, বিশেষতঃ নিজেকে সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রে, শহুরে মেয়েরা বিকেল বেলা যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে, পরিষ্কার জামা কাপড় পরে নিজেকে সাজিয়ে তোলে, সেইরকম, আমার চোখের চাহুনি নীপা ধরে ফেলেছে। নীপা মাথা নীচু করে ফেললো।
-কি করেছো।
-একটু জল নিয়ে মাথায় দিয়েছি।
-খুব অন্যায় করেছো। ডাক্তার তোমায় বারণ করেছে। চোখে যায় নি তো।
-না।
-ওষুধ গুলো ঠিক ঠিক দিয়েছো।
-ওই তো নীপাকে জিজ্ঞাসা কর। ওঃ যেন ডাক্তারনী।
কাকা এমন ভাবে কথা বললো সবাই হেসে ফেললো। চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ওটা নীপার হাতে দে। চিকনা নীপার হাতে ব্যাগটা দিল।
-এটা আবার কি।
ভেতরে গিয়ে খুলে দেখো। কাকীমা সুরমাসির সঙ্গে কথা বলে আমি কাকাকে বললাম ও বাড়িতে যাচ্ছি, কাকা বললো আচ্ছা। নীপাকে বললাম, একটু বেশি করে চা করে নিয়ে এসো। নীপা মুখ বেঁকিয়ে ভেতরে চলে গেলো।
-বাসু, অনাদি কই। আমি বললাম।
পচা বললো, একটু বাজারের দিকে গেছে। এখুনি এসে পরবে। ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, আয়।

ওরা আমার পেছন পেছন আমার দোতলার ঘরে এলো। ঘরটা বেশ চকচকে, আগের দিনের থেকে মনে হয় কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে, খাটটা ঠিকই আছে, খালি, আলমারিটা জায়গা বদল করেছে, তাতে ঘরের জায়গাটা অনেক বেড়ে গেছে, একটা বসার সোফা ঢুকেছে দেখছি, মনে মনে হাসলাম।

পচা পাঁচু, ভানু আর যারা ছিল তাদের সবারই এক কথা, মিত্রার মতো মেয়ে হয় না। আমি ওদের কথায় মুচকি হাসলাম, ভানু একধাপ এগিয়ে বললো, হ্যাঁরে অনি ও কি তোর বউ।
-বউ হলে ভালো হতো না। পাঁচু বললো।
ভানু হেসে ফেললো।
চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো, গান্ডু তুমি কি কালীচরণের ঝি পেয়েছো।
আবার কালীচরণের ঝি এর কথা আসছে কেনো। আমি বললাম।
আরে গান্ডুটা এখন সময় পেলে এককাট লাগিয়ে চলে আসে।
আমি ভানুর দিকে তাকালাম। ভানু হাসছে।
-না রে অনি, ওরা মিছে কথা বলছে।
চিকনা আরো গলা চড়িয়ে বললো, ওর বাচ্চাগুলো তোর, না ওর বরের বোঝা মুস্কিল।
-থাম। আমি চিকনাকে বললাম।
-সত্যি তোদের কোন জ্ঞান বুদ্ধি নেই, ছেলেটা অতোদূর থেকে এলো একটু বসতে দিবি, একটু থিতু হতে দিবি, না কালীচরণের ঝি……..সঞ্জয় বললো।
-কে রে সতী খানকি। চিকনা বললো।
-দেখলি অনি দেখলি, তুই এর বিচার কর।
আমি ওদের কীর্তি কলাপ দেখে হাসছি, বাসু স্পিকটি নট।
অনাদি এলো, কি তোরা শুরু করেছিস বলতো, নীচ থেকে শোনা যাচ্ছে, এটা কি তেঁতুল তলা।
তেঁতুল তলা আমাদের আড্ডার ঠেক। সবাই যখন এক সঙ্গে ওখানে বসতাম আশপাশ দিয়ে বড়রা কেউ যেতো না।
অনাদি এসে আমার পাশে বসলো, কখন এলি।
-এই তো আধঘন্টা হবে। কালকের এ্যারেঞ্জমেন্ট কিছু করেছিস।
-হ্যাঁ গোরাকে বলে রেখেছি। একটু বেলায় বেরোবো।
-কটার সময়
-এই আটটা নাগাদ।
-কটা গাড়ি বলেছিস।
-একটা বলেছি, ফালতু লোকজন বেশি গিয়ে তো লাভ নেই। ঘন্টা খানেকের ব্যাপার।
-হ্যাঁ।
-তারপর তোর যা ফর্মা, বেশিক্ষণ বসতেও হবে না।
হাসলাম।
-সত্যি অনি তুই কিছু খেল দেখাচ্ছিস।
-কি বলেছিলাম, এবার বিশ্বাস হচ্ছে, চিকনা বললো।
নীপা মুখটা বারিয়ে বললো, সঞ্জুদা একটু ধরো তো।
সঞ্জু পরি কি মরি করে ছুটে গেলো।
নীপার পেছনে একটা মেয়েকে দেখলাম। অনাদি বললো, আর কে এসেছে তোর সঙ্গে, শেলিদি।
-ও। চিনতে পারলি না। অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
-শেলি ভেতরে এসো।
মেয়েটি ভেতরে এলো, চোখমুখ বেশ টানা টানা, চকচকে, ফর্সা, মুখটা লজ্জায় বুকের কাছে নেমে এসেছে।
-তুমি অনিকে আগে দেখেছো।
-শেলি মাথা দুলিয়ে বললো হ্যাঁ।
-কোথায় দেখলে।
-সেদিন বাজারে, নীপা আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
আমি খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম, চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো দেখে রাখ পরে সমস্ত ডিটিলসে তোকে বলবো, মেয়েটি ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
-তোমরা সত্যি না এক এক পিস। নীপা বললো।
-দিদিমনি, এই ভাবে বলবি না।
-তুমি আগে এটা খেয়ে নাও।
-কি।
-নুন চিনির জল।
-কেনো।
-জানিনা, মাকে গিয়ে বলো।
-ওঃ যা বলছে করনা বাবা। অনাদি বললো।
আমি নিঃশব্দে জলটা খেয়ে নিলাম, বেশ ভাল লাগলো।
-মুড়ি বেশি খাবে না।
-তুই বললে, ওকে এক মুঠাও দেবো না। চিকনা বললো।
-গেলো না প্রাণ ভরে কে বারণ করেছে।
-চিকনাটা বড় বাড়াবাড়ি করছে না রে নীপা।
-হ্যাঁরে সে…….
-বলোনা বলো, অনিদার মুখ থেকে ওই রকম ভাষা শুনেছো কোন দিন।
-তোর পায়ে পরছি, এই কান মুলছি, আর হবে না।
নীপা হো হো করে হেসে ফেললো। এই নিয়ে কবার হলো।
-নিরানব্বই বার, একশো হলেই তুই গলাটা ঘেঁচ করে দিস। চা টা ঢাল।
-তুমি ঢেলে নাও।
-নীপা ওকে ঢালতে দিও না, তাহলে আমরা কেউ পাবো না। বাসু বললো।
নীপা একবার কট কট করে চিকনার দিকে তাকালো।

-ঠিক আছে ঠিক আছে বাসু যা বললো তাই হবে।
নীপা চা ঢাললো, চিকনা সকলকে এগিয়ে দিলো।
-অনিদাকে পর্শুদিনের কথা বলেছো।
অনাদি নীপার দিকে তাকিয়ে বললো, না। কালকের দিনটা যাক বলবো।
-কাজের মানুষ বলে কথা, আবার কালকেই বলে বসবে বুঝলি তোরা একটু সামলা আমার কাজ পরে গেছে।
-ওঃ তুই সব কথায় গেরো দিস কেনো।
নীপা এলো চুল দুলিয়ে চলে গেলো।
আমরা চা খেলাম, কালকে কারা কারা যাব ঠিক হলো। চিকনা আমি বাসু অনাদি যাবো, কোন বাইক নিয়ে যাব না। আর সবাইকে অনাদি বললো তোরা ওই দিকটা সামলে নে, তারপর আমরা তো ফিরে আসছি। ওরা বললো ঠিক আছে।
আমি অনাদিকে বললাম, পর্শুদিন কি আছে রে।
-আরে রাস আছে।
-ও রথ শহরের মাঠে।
-হ্যাঁ।
-যাক প্রাণ ভরে জিলিপি খাওয়া যাবে।
-আচ্ছা কলকাতায় গিয়ে কি তোর কোন উন্নতি হয় নি।
-কেনো।
-তুই কি সেই অনি, যে মেলায় ঘুরে ঘুরে জিলিপি, ছোলা সেদ্ধ খাবি।
-হ্যাঁ। আমি সেই অনি, ঠিক আছে তোদের জন্য একটা সারপ্রাইজ তোলা রইলো।
-কি বল না।
-সেদিন বলবো।
-ঠিক আছে।

সবাই চলে গেলো। আমি পুকুর ঘাটে গিয়ে, হাত মুখ ধুয়ে কাপর জামা ছাড়লাম, আমার পেটেন্ট ড্রেস পরে খেতে বসলাম, কাকাকে জিজ্ঞাসা করলাম, চোখের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা, কাকা বললেন আগের থেকে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছেন, মিত্রার চিঠিটা উনি নিজে পরেছেন, ওনার মুখ থেকেও মিত্রার স্তুতি শুনলাম, কাকীমা, সুরমাসিও মিত্রার সম্বন্ধে একেবারে গদ গদ, সত্যি মেয়েটার কি ভাগ্য, সব থেকেও কিছুই নেই।
আমি বেশি কথা বাড়ালাম না, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম, কালকের যাওয়ার ব্যপারটা, কাকাকে বললাম, কখন যাব তাও বললাম। কাকা আমার প্রত্যেকটা কথায় খালি মাথা নেড়ে গেলেন। কিছু বললেন না।
আমি মুখ ধুয়ে ঘরে চলে গেলাম।

অন্ধকার দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে, জানলার পাল্লাটা খুলে, ঘরটা অন্ধকার করে দিলাম, বাইরের রং আরো পরিষ্কার হলো, সত্যি পর্শুদিন পূর্ণিমা, চাঁদের রূপ তাই বলছে, গাছের পাতা, গলানো রূপোর অলংকারে সজ্জিত, সেই ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঝিঁ ঝিঁ, জোনাকীর আলো, যত দেখছি তত যেন আমার কাছে নতুন, কিছুতেই পুরনো হতে চায় না, প্রত্যেকটা রাতের একটা আলাদা আলাদা রূপ আছে, আমি যেন সেই রূপ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছি, একটা সিগারেট ধরালাম, দূরে কেউ যেন হেঁটে যাচ্ছে, বাঁশঝারের ভেতর দিয়ে, হাতের টর্চলাইটটা একবার জলছে, একবার নিভছে, মাঝে মাঝে গাছের পাতাগুলো নড়ে চড়ে উঠছে, বুঝতে পারছি, রাত পাখিরা শিকারের লোভে, হানা দিচ্ছে এডালে ওডালে, এই আলো আঁধারিতে তাদের দেখা যায় না, চেনা যায় না, বোঝা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়, ভাবতে ভাবতে নিজে কোথায় হারিয়ে গেলাম। হঠাত পিঠে নরম বুকের ছোঁয়ায় নিজেকে ফিরে পেলাম।

আমার গালে একটা চুমু দিয়ে নীপা বললো, যখনই একা থাকো দেখেছি, তুমি কোথায় হারিয়ে যাও। আমি নীপার হাত দুটো, টেনে নিয়ে গলায় জড়িয়ে নিলাম, জানো নীপা এই একটা জায়গায় আমি ভীষণ ভাবে স্বাধীন, আমার কোন পিছু টান নেই।
নীপা চুপ থাকলো।
আমিও চুপ চাপ আছি। নীপা ওর পুরো শরীরের ভর দিয়ে আমার পিঠে শুয়ে আছে।
-কখন এসেছি, জানো।
-না।
-আমার সব কাজ শেষ।
-তাই।
-হ্যাঁ।
-তাহলে তো আধঘন্টার ওপর হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ। তুমি কি ভাবছিলে বললে নাতো।
-কিচ্ছু না।
-ভাবছো, এই আপদগুলো আমার সব কিছু নষ্ট করে দিতে বসেছে।
আমি ঘুরে পরলাম, নীপা আমার বুকে। সেই নাইটিটা পরেছে, ওর নরম বুক আমার বুকে চেপে বসে আছে।
-বলতে নেই ও কথা।
-তাহলে বলো।
-কি বলবো।
-কি ভাবছিলে।
-সত্যি বলবো।
-হুঁ।
-আমি অন্ধকার দেখতে খুব ভালবাসি। কতরাত আমি একা একা রাতের অন্ধকারে এদিক সেদিক ঘুরে বেরিয়েছি।
-তোমার ভূতের ভয় করে না।
-না। তবে মানুষকে ভয় পাই। আর সাপ।
নীপা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে হাসলো। ওর কোমর দুষ্টুমি করছে, বুঝতে পারছি ভেতরে কিছু পরা নেই, ওর পুশির খোঁচা খোঁচা চুল আমার তলপেটে ফুটছে।
-মিত্রাদি সত্যি খুব বড় মনের মানুষ।
-তাই।
-আমি নতুন করে কি বলবো, তুমি তো সব শুনেছো। কালকে থেকে খালি মিত্রাদিকে নিয়েই আধবেলা কেটে গেছে।
-তোমার ব্যক্তিগত ভাবে কি মনে হলো বললে নাতো।
-বললে তুমি বিশ্বাস করবে।
-হুঁ।
-মিত্রাদি তোমায় ভীষণ ভালবাসে। তুমি মিত্রাদির প্রথম প্রেমিক।
-কে বললো তোমায়।
-মিত্রাদি নিজে।
-মিত্রাদির কথায় তোমার কিছু মনে হয় নি।
-হ্যাঁ, প্রথমে ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেছিলো। তারপর ভাবলাম, ওই জায়গায় আমি থাকলেও ওই একি অবস্থা হতো।
-তোমার সঙ্গে এই সব করেছি, তাহলে খুব অন্যায় করেছি বলো।
-একেবারে নয়, তোমার সঙ্গে মিত্রাদির শারীরিক সম্পর্ক থাকলেও আমি করতাম।
-কেনো।
-জানিনা অনিদা, সব চাওয়া পাওয়া হয় না, কিন্তু কিছু পাওয়া চাওয়ার উর্ধে।
আমি নীপাকে জাপ্টে ধরলাম। তোমার হিংসে হয় না।
-কি বলছো অনিদা, মিত্রাদিকে আমি হিংসে করবো।
-কেনো নয়।
আমি যদি মসাইএর কাছে না এসো পরতাম তাহলে কোনদিন চেষ্টা করলেও তোমার আর মিত্রাদির কাছে পৌঁছতে পারতাম। এই যে তোমার বুকে শুয়ে আছি এই গ্রামের কতো মেয়ে তা স্বপ্নে দেখে তা তুমি জানো।
হাসলাম।
-জানো অনিদা তোমরা দুজন আমার কাছে আদর্শ। আর শরীরের কথা বলছো, আমি তোমার কাছে ধরা দিয়েছি, তোমার আদর খাব বলে। তোমার অনেক কথা শুনেছিলাম, তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে, সব যেনো আমার কাছে মিথ মনে হতো, যখন দেখলাম তোমায়, আমার সেই স্বপ্নের রাজপুত্রকে দেখলাম, আমি লোভ সামলাতে পারি নি, বিশ্বাস করো। এই গ্রামের অনেকে আমাকে চেয়েছে, কেউ সহসা হাত বারাতে পারে নি, খালি তোমার জন্য সযত্নে সব তুলে রেখে ছিলাম।
-যদি আমি না আসতাম।
-আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো তুমি আসবে, তোমাকে আসতে হবেই।
আমি নীপার মাথাটা কাছে টেনে নিয়ে ওর ঠোঁটে চুমু খেলাম।
-মিত্রাদি আজ যে কাপড় জামা পাঠিয়েছে, তা দেখে মসাই কেঁদে ফেলেছিলেন, আমি বললাম তুমি এ কি করছো, তারপর আমি অকপটে মিত্রাদির সমস্ত কথা মসাইকে বলেছি।
-কাকা শুনে কি বললো।
-মসাই বললো ও দাতা কর্ণ।
হাসলাম।
-তোমার বাবাকে মনে পরে না ।
-না। আবঝা আবঝা।
-মসাই-এর কাছে থেকে ওনার অনেক কথা শুনেছি।
-ভাল না খারাপ।
-ভাল না হলে তোমার মতো সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় কি করে। আমায় একটা কথা দেবে।
-বলো।
-জানি আমি তোমাকে কোনদিন পাব না। তবে আমায় একটা সন্তান উপহার দেবে। আমি তাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো, তাকে নিয়ে আমি আমার স্বপ্নের তরী রচনা করবো।
-কি পাগলামো করছো।
-না গো সত্যি বলছি। তোমাকে পাবো না, ঠিক কিন্তু তোমার সন্তান আমার কাছে গচ্ছিত থাকবে।
-আমার সন্তানের প্রতি আমার কোন দায়িত্ব থাকবে না।
-তোমার দ্বারা তা হবে না, তুমি যাযাবর।
হাসলাম। ধীরে ধীরে ওর নাইটিটা ওপরে তুললাম। আমি চরিত্রহীন।
-তুমি চরিত্রহীন নও, মেয়েরা তোমার চরিত্র হনন করে, তুমি নিজে থেকে তো চাও না।
মিত্রা আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। আমি ওর পাছা দুটো টিপছি। অন্ধকারেও মিত্রার মুখটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
-আমার সঙ্গে সেক্স করতে তোমার কোন সঙ্কোচ হয় না।
-একেবারেই না।
-যদি তোমার বিয়ে হয়, তাহলে তুমি তাকে ঠকালে।
-সে যে কারুরু সঙ্গে সেক্স করে নি তাতেই বা বিশ্বাসের কি আছে।
-গেঞ্জিটা ধুয়েছিলে।
-এই দেখো সেটাই তো তোমায় বলতে ভুলে গেছি।
-কি হয়েছে।
-সকালে তো তাড়াহুড়ো করে চলে গেলাম, ফিরে এসে বিকেল বেলা সাবান দিচ্ছিলাম, মা বললো কিরে এবার তোর এতো তাড়াতাড়ি শরীর খারাপ হয়ে গেলো, আমি মুখ নীচু করে হাসবো না কাঁদবো, মুখ ঝামটা দিয়ে বললাম, তুমি এখান থেকে যাবে, মা কাঁচু মাচু করে বললো, জিজ্ঞাসা করাও অন্যায়, আমি বেশ গম্ভীর হয়ে বললাম, ন্যায় অন্যায় জানি না, তোমার সঙ্গে বক বক করার আমার সময় নেই আমার অনেক কাজ আছে।
-সে কি বলবো অনিদা, পরি কি মরি করে তোমার গেঞ্জিটা ধুয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ওপরে এসে শুকোতে দিই।
নীপা হেসে আমার বুকের ওপর কুটু কুটি খাচ্ছে, আমি ওর নাইটির তলা দিয়ে বুকে হাত দিলাম, মাইদুটো সত্যি সুন্দর যেন কঁয়েত বেল। একেবারে হাতের সাইজ।
-আমারটাতে বেশ বালিশের ওয়ারের মতো খুলে নিলে, তোমারটা গিঁট বেঁধে রেখেছো কেনো।
-ও গেঁট তুমি খোলো।
-কেনো।
-কেনো আবার, তুমি করবে তুমি খুলবে।
হাঁ, আমারি খালি শখ তোমারতো কোনো শখ নেই।
নীপা কোমরটা একটু তুলে আমার বুকের ওপর ওর বুক রেখে পাজামার গেঁটটা খুলে, পাজামাটা কোমর থেকে নামিয়ে দিলো। আমি খালি কোমর তুলে ওকে একটু সাহায্য করলাম। নীপা মিটি মিটি হাসছে।
-তোমারটা খোল।
-খোলার আর বাকি কি রেখেছো।
-যে টুকু অঙ্গে আছে সেটুকু সঙ্গে রেখে লাভ কি।
-উঃ সত্যি তুমি পারো। নাও হয়েছে এবার, নীপা আমার তলপেটের ওপর বসে নাইটিটা হাত তুলে খুলে ফেললো, আমি ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম।
-অনিদা আজ তুমি কিছু করবে না, যা কিছু করার আমি করবো, তুমি একটা ভীতুর ডিম।
-ভীতুর আবার ডিম হয় নাকি।
-হয় বাবা হয়, এই মুহূর্তে হয়, তোমার সঙ্গে আর কথা বেচা বেচি করতে পারি না।
-আমি নীপার মাইদুটো আয়েশ করে টিপছি, নীপা পেছনে হাত বেঁকিয়ে খোঁপা বাঁধছে।
-উঃ কি করছো কি ঝুলে যাবে, কেউ তখন বিয়ে করবে না।
হাসলাম।
নীপা আমার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো, আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো, আমার ঠোঁট যেন কামরে খেয়ে নিতে চাইছে। আমি কিছু বললাম না, কিছুক্ষণ চোষার পর বললো, অনিদা তোমার জিভটা বার করো।
-কেনো।
-বার করো না।

আমি জিভ বার করলাম, নীপা ঠোঁট দিয়ে আমার জিভ চুষছে, আমার তলার ঠাকুর জেগে নীপার তল পেটে গোঁতা মারছে। নীপা কোমর দুলিয়ে আমার নুনুটাকে ওর পুশির তলায় নিয়ে নিলো, তারপর নিজে থেকেই কোমর দুলিয়ে আমার নুনুর সঙ্গে খেলা করতে আরম্ভ করলো, আমি শুয়ে আছি। মাঝে মাঝে আমার হাতটা নীপার দুপাশের মাই ধরছে না হলে ওর পিঠে চলে যাচ্ছে, নীপা ঠোঁট ছেরে বুকে নামলো, আমার নিপিল দুটো কিছুক্ষণ চুষলো, তারপর আমার নাভির কাছে চলে গেলো, জিভটা নাভিকে মাঝখানে রেখে, গোল করে চক্কর দিলো, তারপর আস্তে আস্তে নিচে নামলো, আমি কোন সাড়াশব্দ করছি না, নীপা আমার শরীরটা নিয়ে মনের মতো করে খেলে যাচ্ছে, আমি জানি শেষ খেলাটা আমাকেই খেলতে হবে।

নীপা আমার নুনুর কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো, দুবার হাত দিয়ে নেড়ে খিল খিল করে হেসে বললো, দেখো, অনিদা তোমারটা কিরকম রাগে ফুঁসছে।
-ওর আর দোষ কি, তুমি যেভাবে ওকে খোঁচা মারলে এতক্ষণ।
-শয়তান।
নীপা আমার নুনুতে চুমু খেলো, তারপর আস্তে আস্তে মুখে পুরে নিয়ে আইসক্রিমের মতো চুষতে লাগলো, মাঝে মাঝে আমার খেঁজুর কুলের মতো বিচি দুটো টিপছে।
-নীপা আমারটা কিন্তু তোমার মুখের মধ্যেই বমি করে দেবে।
নীপা নুনু থেকে মুখ তুললো। প্লীজ অনিদা এই রকম কোরো না। আমি তোমাকে আমার মতো করে পেতে চাই।
-সবটাই কি আমার হাতে নাকি।
-আমি জানি না যাও।

নীপা আবার মুখ দিলো, এবার চোষাটা আগের থেকে আরো তীব্র হলো, আঁচড়ে কামরে আমার নুনুকে একাকার করে দিলো। আমি আর পারলাম না উঠে বসে ওকে জাপ্টে ধরে চুমু খেতে আরম্ভ করলাম, ওর মাই দুটো চুষতে চুষতে দাঁত বসিয়ে দিলাম, নীপা মুখে কোন শব্দ করছে না, খালি ওর ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ কানে ভেসে আসছে, আমি ওকে বিছানায় চিত করে শুইয়ে দিয়ে, দুটো পা ফাঁক করে দিলাম, পুশির ওপর হাত রাখলাম, পুশিটা ভিজে কাদা হয়ে গেছে, আমি নীচু হয়ে নীপার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, নীপা চোখ বন্ধ করে আছে, কানের লতিতে জিভ ছুঁইয়ে ফিস ফিস করে বললাম, ঢোকাই, নীপা চোখ খুললো, মিটি মিটি হাসছে, আমি উঠে বসে আমার নুনুটাকে শক্ত করে ধরলাম, ওর পুশির লিপসে দু-তিনবার ওপর নিচ করে ঘষলাম, নীপার কোমর নদীর আলতো ঢেউয়ে নৌকোর মতো দুলে উঠলো, আমি এই অন্ধকারেও ওর পুশির গর্ত খুঁজে পেলাম, আস্তে করে, চামড়াটা সরিয়ে নিয়ে মুন্ডিটা গর্তে রেখে চাপ দিলাম, মুন্ডিটা ঢুকে গেলো, নীপা একটু কেঁপে উঠলো, চারিদিক নিস্তব্ধ, আমি আবার চাপ দিলাম, এবার অনেকটা চলে গেলো, নীপা ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরেছে, আমি আবার চাপ দিলাম, এবার পুরোটা চলে গেলো, যেন আমি শক্ত মাটিতে মুগুর পুঁতলাম, নীপা নিথর হয়ে শুয়ে আছে, আমি কিছুক্ষণ এই অবস্থায় হাঁটু মুড়ে বসে রাইলাম, তারপর আস্তে আস্তে হাতের ওপর ভর দিয়ে নীপার বুকে শুলাম।
-লেগেছে।
নীপা মাথা দোলালো, না।
আমি ওর ঠোঁট চুষলাম, নীপাও আমার ঠোঁট চুষছে।
-ভেতরটা কিরকম করছে।
নীপা ফিস ফিস করে বললো, দপ দপ করছে।
-বার করে নিই।
-না। না।
-কেনো। তোমার কষ্ট হচ্ছে।
-ভালো লাগছে।
নীপার ভেতরটা এতো টাইট আগে কখনো মনে হয় নি। করবো?
-একটু পরে, তুমি আমার বাঁদিকের মুনুটা একটু চুষবে।

আমি নীপার বাঁদিকের মুনুতে জিভের ছোঁয়া দিলাম, বোঁটাদুটো বেশ শক্ত, চেরি ফলের মতো, আমি বোঁটার চারপাশে জিভ দিয়ে গোল করে ঘোরালাম, নীপা ওঃ ওঃ করে উঠলো, মুখ তুললাম, কি হলো।
-সেক্সে এতো আনন্দ আগে জানতাম না।
আমি নীপার চোখে জিভ ছোঁয়ালাম। নীপা আমার থুতনিতে চুমু খেলো। অনিদা এবার আস্তে আস্তে করো। আমার ভেতরটা ভিজে গেছে

আমি একটুখানি বার করে আবার ঢোকালাম, নীপা আমার পিঠে হাত রাখলো, আস্তে আস্তে গতি বাড়ালাম।

নীপা দুলছে, মাঝে মাঝে দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে, আমি এবার হাতের ওপর ভর দিয়ে নীপাকে করছি, নীপা পাদুটো একটু তুলে ফাঁক করলো, আমি যেন যাওয়া আসা করার সুপ্রশস্ত রাস্তা পেলাম, গতি বাড়ালাম, নীপার মাথা দুপাশে দুলছে, আমার হয়ে যাবে, সত্যি ভেতরটা এতো টাইট মনে হচ্ছে আমার নুনু দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যাবে, তারি মধ্যে নীপা পুশির লিপস দিয়ে চাপছে, আমি গতি বারালাম, বেশ সুন্দর ভাবে যাওয়া আসা করছে, একটা ফচাত ফচাত আওয়াজ আমাকে মাতাল করে দিলো, নীপা মাথাটা পেছন দিক করে কেঁপে কেঁপে উঠলো, আমি থামলাম না, নীপা আমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে, মাথাটা তুলে আমার ঠোঁটে ছোঁয়ালো, আমি ওর পুশি থেকে আমার নুনু টেনে বার করে ওর তল পেটে রাখলাম, কাটা সিঙ্গি মাছের মতো কাঁপতে কাঁপতে আমার নুনু থেকে রস বেরোতে আরম্ভ করলো, প্রথমটা ছিটকে গিয়ে নীপার বুকে পরলো তারপর ওর নাভি মূলের কাছে, তারপর ঠিক পুশির ওপরে, অনেক ক্ষণ কাঁপা কাঁপি করার পর আমার নুনুর রাগ পরলো। জীবনের প্রথম নিজের রস বের হতে দেখলাম। এ এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। নীপা আমার নুনুটাকে ধরে আদর করলো, ওর বুক থেকে আমার শরীর নিঃসৃত রস গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে।

পরদিন ঠিক সময়ে আমরা বেরিয়ে গেলাম, আজ নীপা মিত্রার দেওয়া লং স্কার্ট আর গেঞ্জিটা পরেছে, সামনে একটা ওড়না জড়িয়ে নিয়েছে, নীপাকে আজ একেবারে অন্যরকম লাগছে, চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো, হ্যাঁরে দিদিমনি, তুই করেছিস কি, আলো ঝড়ে পরছে, আজ তুই অবশ্যই আওয়াজ খাবি, নীপা চিকনার দিকে কট কট করে তাকিয়ে বললো, তুমি বউনি করলে। কালকে এটাই তুমি বয়ে এনেছিলে। সরি ম্যাডাম, অন্যায় হয়েছে। আর একখানা বাকি আছে, কাল রাস পূর্ণিমার মেলা বেশ আপনি বলি দিবেন। সকলে হো হো করে হেসে ফেললো, সত্যি চিকনা তুইও পারিস, আমি বললাম। কি নিয়ে থাকি বলতো অনি এইভাবেই কেটে যাচ্ছে।

নার্সিং হোমে পৌঁছলাম, সাড়ে নটা নাগাদ, রিসেপশন কাউন্টারের ভদ্রমহিলা আমাকে চিনতে পেরেছেন। আমাকে দেখেই বললেন, বসুন স্যার, আমরা সবাই বসলাম, উনি ইন্টারকমে কার সঙ্গে কথা বললেন, একজন ভদ্রলোক ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন, পরিচয় দিলেন ডঃ দেবাশীষ বসু, এও জানালেন মিঃ রঙ্গনাথন থাকতে না পারার জন্য উনি ক্ষমা প্রার্থী, তবে মিঃ রঙ্গনাথন ওনাকে সমস্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন, আমার কি কি করণীয় ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনি বললেন সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা কাকাকে ভেতরে নিয়ে গেলো, আমি নীপাকে সঙ্গে যেতে বললাম, নীপা প্রথমে যেতে চাইছিলো না, আমি অনি আর বাসুকে পাঠালাম নীপার সঙ্গে মিনিট পনেরো পর ওরা বেরিয়ে এলো, কাকার চোখে একটা চশমা দেখলাম, চোখটা একটু লাল লাল।

-কি হলো।
-ঠিক হয়ে গেছে। কাকা বললেন।
-তুমি দেখতে পাচ্ছ।
-হ্যাঁরে তোকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। তবো কাল আর একটা চশমা দেবে বলেছে।
-ঠিক আছে তুমি বোসো।
ওরা সবাই বসলো।
অনাদি বাসুর সঙ্গে কথা বললাম, ওরা বললো রেটিনাটা একটু কমজোরি হয়ে পরেছে, এখন নয় বছর তিনেক পরে অকেজো হবে। তবে কাকা চোখে বেশি স্টেইন দিতে পারবে না।

-আচ্ছা। আমি রিসেপসনে গেলাম, ভদ্রমহিলাকে বললাম, ডঃ বাসুর সঙ্গে একটু কথা বলবো। উনি কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে, আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। ডঃ বাসু আমাকে বসতে বললেন, তারপর কাকার বিষয়ে সব জানালেন, অনাদি যা বললো, তাইই। চশমাটা কালকে একটা সময় এসে নিয়ে যেতে হবে। আমি বললাম, দুপুরের দিকে যদি আসি আপত্তি আছে কিনা, উনি বললেন না, আমি রেডি করে রেখে দেবো, কাকাকে সঙ্গে আনতে হবে কিনা, উনি বললেন না আনতে হবে না, যাকে হোক একজনকে পাঠিয়ে দিন দিয়ে দেবো। আমি এবার পয়সার কথায় এলাম, টোটাল ব্যালেন্স কতো বাকি আছে, আমায় কতো দিতে হবে। উনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন, কেনো মিঃ রঙ্গনাথন আপনাকে কিছু বলে নি। আমি বললাম , না। আপনি কিছু পাবেন না, বরং আপনি যে টাকাটা জমা দিয়েছেন, সেটা রিফান্ড হবে। কেনো, আমি জিজ্ঞাসা করলাম। সে তো জানি না স্যার ওটা মিঃ ব্যানার্জী জানেন। উনি টেবিলে রাখা বেলটা বাজালেন একজন বেয়ারা এলো তাকে উনি আমার ব্যাপরটা বলতেই উনি বেরিয়ে গেলেন, কিছুক্ষণ পর একজন ভদ্রলোক এসে একটা খাম দিয়ে গেলেন, উনি খামটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, মনে কিছু করবেন না, এটা আমার ডিউটি। ওনাকে বললাম, কাল আমি আসবো, আপনি থাকবেন তো, উনি বললেন অবশ্যই।

ওখানে কিছু মিষ্টি চা খেয়ে আমরা সকলে ফিরে এলাম, ফিরতে ফিরতে বেলা গড়িয়ে গেলো, বাসুকে বললাম, তুই দোকানে থাকছিস তো, ও বললো হ্যাঁ।
-তুই থাকবি কি করে ? অনাদি বললো। ওদিককার কাজ সামলাবে কে।
-ঠিক বলেছিস। মনেই ছিলো না।
-তুই ওখানে চলে আয়।
-না। একেবারে কাল যাব।
-তুই তাহলে একটু রাতের দিকে আয়। এই সাতটা।
-ঠিক আছে তোকে যেতে হবে না, আমরাই আসবো। অনাদি বললো।
-ঘরে ফিরে এলাম, নীপা ও বাড়িতে গেছে, কিছুক্ষণ পর এসে বললো, ভাত খাবে না।
-না। এখন খেতে ভাল লাগছে না। তুমি আমাকে একটু চা দাও।
-আমি কিন্তু এখন তোমাকে সময় দিতে পারবো না বাপু, আমার নাচের রিহার্শাল আছে।

-তাই।
-হ্যাঁ।
-কি নাচ করবে।
-চিত্রাঙ্গদা।
-ওরে বাপ রে সে তো বিরাট ব্যাপার। অর্জুন কে হয়েছে।
-আমি মশাই আমি। তারপর আমার কাছে ছুটে এসে জাপ্টে ধরে বললো, তুমি কাল যাবে তো।
-নিশ্চই যাবো। কখন শুরু তোমাদের অনুষ্ঠান।
-এখন তো তাড়াতাড়ি রাত হয়ে যায় এই ছটা ধরো।
-তার মানে কাল তোমার নাগাল পাওয়া যাবে না।
-না ঠিক তা নয়, একটার পর থেকে মাঠে চলে যাবো, একটু স্টেজ রিহার্শাল করতে হবে না।
-ঠিক ঠিক।
-কালকের কথা কিছু বললে নাতো।
-সে জন্য আজ রাত আছে।
-পাজি কোথাকার। দাঁড়াও তোমার চা নিয়ে আসি।
নীপা এক দৌড়ে চলে গেলো।

আমি জানলার ধারে। বার বার নীপার বলা কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। কাকা, কাকিমা, সুরোমাসি, নীপা। এরা এতদিন আমার অবর্তমানে কত কথা শুনেছে। নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগছে। বার বার মনে হচ্ছে এ আমি কি করলাম।

হুড়ুম-দুড়ুম শব্দ করে নীপা ঘরে ঢুকলো।

আচ্ছা জানলা দিয়ে গাছ দেখা ছাড়া তোমার কোনও কাজ নেই?

আমি হাসলাম।

সবাই চলে এসেছে। আমি এখন যাচ্ছি।

যাও।

নীপা চলেগেল।

চা খেয়ে এ বাড়িতে কাকার কাছে এলাম, বললাম আমি একটু আসছি।
কাকা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, সন্ধ্যে হয়ে আসছে, এই সময় কোথায় যাবি।
-দেখি।
-টর্চটা নিয়ে যা।
-দাও।
কাকা কাকীমাকে ডাকলেন, কাকীমা টর্চটা দিয়ে গেলেন, বললেন তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
-আচ্ছা। নীপাকে আশে পাশে কোথাও দেখতে পেলাম না।

আমি বেরিয়ে এলাম, আমাদের পুকুর পাড়ের পেছনের রাস্তা ধরে, বাঁশ বাগানের ভেতর দিয়ে একবারে খাল পাড়ে চলে এলাম, এই খালে কত নৌকা চালিয়েছি, আমি আর ভানু, সামন্তদের নৌকা, সে দিনগুলোর কথা মনে পরে গেলো, অনাদিরা তখনো এতো ক্লোজ হয় নি। টেন পরার সময় আমরা সবাই দলবদ্ধ হলাম, কিন্তু ভানু ভানুর জায়গায় রইলো। ও আমাদের থেকে বয়সে বড়, কিন্তু ওই যে সিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকলো আর বেরোতে পারলো না।

গোধুলি শেষে, ঘন কুয়াশার মতো সন্ধ্যা নেমে আসছে একটু একটু করে। আকাশের দিকে তাকাতে, তারা গুলো মিট মিট করে জলছে, আমি পায়ে পায়ে হারুর কালায় এসে পরলাম, দূরে শ্মশানটা দেখা যাচ্ছে, আমি পুকুর পাড়টায় বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম, নিঝুম কেউ কোথাও নেই, জোনাকিগুলো আলো ছড়িয়ে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে, দুএকটা আমার গায়ে এসেও বসছে, মাথার ওপর বড় বড় শাল, কদম গাছগুলোয় পাখিরা কিচির মিচির শব্দে জায়গাটাকে মাতিয়ে তুলেছে, আমি একটা বটগাছের তলায় বসলাম, মিত্রাকে সকাল থেকে ফোন করা হয় নি। মোবাইলটা পকেট থেকে বার করলাম, একটা সিগারেট ধরালাম। এখানে দেখছি টাওয়ারটা ফুল। মিত্রাকে ডায়াল করলাম।
-হ্যালো।
-তুই কোথায়।
-তোর ঘরে, ছোটমার সঙ্গে গল্প করছি, আর তোর আদরে ভাগ বসাচ্ছি।
হাসলাম।
-হাসছিস, তোর হিংসে করছে না।
-একেবারে না।
-জানিস এসে চিংড়ি মাছের কালিয়া, শুক্তো দিয়ে ভাত খেলাম।
-বাঃ বাঃ।
-তোর লোভ হচ্ছে না।
-চিংড়ি মাছটা শুনে একটু লোভ হচ্ছে, তবে ঠিক আছে, বড়মা আমার জন্য নিশ্চই তুলে রাখবেন।
-না মশাই যেটুকু আনা হয়েছিল সব শেষ করে দিয়েছি।
-অফিসে গেছিলি।
-না।
-এখানে কখন এসেছিস।
-সেই সকালে।
-দাদা বাড়িতে আছেন।
-না।
-মল্লিকদা।
-দুজনেই একসঙ্গে বেরিয়েছে।
-ও।
-বড়মা কোথায়।
-নিচে কারা এসেছেন কথা বলছেন।
-ও। তুইতো এখানে আসতে চাইছিলি কাল আসবি।
-হ্যাঁ। মিত্রার কথায় উচ্ছলতা, আমি ওর চোখমুখ দেখতে পাচ্ছি।
-কি করে আসবি।
-তুই এসে নিয়ে যাবি।
-হবে না। তোকে একলা আসতে হবে।
-যাব।
-এখানে আসার কতগুলো শর্ত আছে।
-বল।
-এখানে কাপড় ছাড়া কিছু পরা যাবে না।
-তাই পরবো।
-খোলা আকাশের নীচে বাথরুম করতে হবে, তোর টাইলস বসানো এক্সিকিউটিভ বাথরুম পাবি না।
-সে কি রে।
-হ্যাঁ।
-ঠিক আছে তাই করবো। কিন্তু কেউ যদি দেখে ফেলে।
-দেখলে দেখবে।
-তার মানে।
-হ্যাঁ।
-তুই এই ব্যাপারটা একটু দেখ।
-হবে না।
-অগত্যা।
-টেবিল চেয়ার পাবি না। মাটিতে বসে খেতে হবে।
-এটা পারব।
-গাড়ি নিয়ে কোথাও যাওয়া যাবে না, মাঠে মাঠে হেঁটে হেঁটে ঘুরতে হবে।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ পারবো।
-বড়মা-ছোটমার সঙ্গে কথা বল, ছোটমাকে দে।
-ছোটমা তোর সব কথা শুনেছে।
-ও।
-ছোটমা হো হো করে হাসছে, সত্যি অনি তুইনা একটা……।
-কি বলো….।
-না । ফিরে আয় বলবো।
-কে এসেছে নিচে।
-দাদার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের মেয়ে।
-বয়েস কতো।
-সে জেনে তোর লাভ।
-একটু……
-বুবুন খারাপ হয়ে যাবে বলছি। মিত্রার গলা, ছোটমা হাসছেন।
-সত্যি তো, বেল পাকলে কাকের কি।
-তুই এখন কোথায় পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনছি, সেই জায়গায়।
-না।
-তাহলে।
-শ্মশানে বসে আছি।
ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলেন, তুই এই ভর সন্ধ্যে বেলা শ্মশানে বসে আছিস, তোর কি একটুও ভয় ডর নেই।
-জায়গাটা দারুন।
-তুই আগে ওখান থেকে চলে আসবি, আমি দিদিকে বলে দিচ্ছি।
-উঃ তোমাদের নিয়ে আর পারা যাবে না, ঠিক আছে চলে যাচ্ছি, মিত্রাকে বলো কিছুক্ষণ পর ফোন করতে।
-আচ্ছা, তুই চলে যা ওখান থেকে। মিত্রা বললো।
-যাচ্ছি রে যাচ্ছি।

চারিদিকে ঘন অন্ধকার, পাখির কিচির মিচির শব্দটা কিছুটা ম্লান হয়ে এসেছে, আকাশের তারাগুলোকে এখন বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, চাঁদ উঠেছে, তার স্নিগ্ধ আলোর পরশে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, আমাদের হাই স্কুলের টালির চালটা আবছা দেখা যায়, দূরে ওই অশ্বত্থ গাছের তলাটা পীর সাহেবের থান, আমরা প্রত্যেক দিন স্কুলে যাওয়া আসার পথে ওখানে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতাম। ওর ঠিক পাশেই, প্রচুর কুলের গাছ, কুল পাকার আগেই গাছ পরিষ্কার হয়ে যেতো, কুল খাওয়ার যম ছিল পুনি আর সৌমি। ওরা এখন কোথায় হারিয়ে গেছে জানি না, অনাদিকে একবার জিজ্ঞাসা করতে হবে। ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রার ফোন।
-হ্যালো।
-অনুমতি পেয়ে গেছি, তুই বড়মার সঙ্গে কথা বল। বলো, বলো না ও ঠিক শুনতে পাবে।
বুঝলাম, ও ভয়েস মুডে দিয়ে রেখেছে।
-হ্যাঁরে তুই নাকি শ্মশানে বসে আছিস।
-হ্যাঁ।
-এখনো!
-হ্যাঁ, ওখান থেকেই তোমার সঙ্গে কথা বলছি।
-তোর কি কোন ভয় ডর নেই।
-গ্রামের ছেলের ভয় থাকতে নেই।
-পাকামো করতে হবে না। এখুনি বাড়ি যা।
-যাবো। মিত্রার সঙ্গে কথা হয়েছে।
-ও একটা মেয়ে কি করে যাবে।
-আফটার অল ও একটা কোম্পানীর মালিক তো। সব সময় লেংবোট নিয়ে ঘুরলে চলবে।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি যেতে পারবো, তুই নারসিং হোমের কাছে চলে আসবি আমি ওই রাস্তাটা পর্যন্ত চিনে চলে যেতে পারবো।
-আচ্ছা।
-কখন যাবো বল।
-একটা ফোন এসেছে, পরে বলছি।
মিত্রাকে ছাড়তেই সন্দীপের গলা ভেসে এলো।
-কি হয়েছে।
-কখন থেকে তোকে ট্রাই করছি কিছুতেই পাচ্ছিনা।
-কেনো।
-এখানে সব গজব হয়ে গেছে।
-তোদের মালকিন কোথায়।
-সে নাকি তোর সঙ্গে ভেগেছে।
-আমার সঙ্গে।
-হ্যাঁ। সেরকমি তো শুনছি।
-এ খবর কোথা থেকে পেলি।
-কাল সব পাকা খবর পাবো। তোকে বিকেলের দিকে ফোন করবো। আমারতো সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
-কেনো।
-সুনীত যা বারাবারি আরম্ভ করেছে না, কি বলবো। সব নয়া নয়া মাল এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিচ্ছে।
-খাতা কলমে না মৌখিক।
-মৌখিক, ম্যাডাম নাকি ওকে সমস্ত পাওয়ার দিয়ে তোর সঙ্গে লন্ডন গেছে।
-তোর কি মনে হয়।
-সে তো আমি বুঝতে পাচ্ছি, কিন্তু মন মানে না।
-বাড়িতে গিয়ে মাথায় সিঁদুর আর হাতে চুরি পরে বসে থাক।
-দূর তোকে মন খুলে দুটো কথাও বলতে পারবো না।
-বলবি না। কাল লেটেস্ট নিউজ চাই।
-আচ্ছা।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/cgbinNE
via BanglaChoti

Comments