কাজলদিঘী (নবম কিস্তি)

কাজলদিঘী

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

নবম কিস্তি
—————————

সন্দীপের ফোনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো, সুনীতের নতুন চাল, নাঃ একটা কিছু করতে হবে। কাল সন্দীপের কাছ থেকে নিউজটা নিই আগে তারপর।

পায়ে পায়ে শ্মশানের একেবারে ভেতরে চলে এলাম, কয়েকদিন আগে কাউকে হয়তো দাহ করা হয়েছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পোড়া কাঠের টুকরো, শহুরে শ্মশানের মতোনয়, চারিদিকে শ্মশানের সেই ঘন জঙ্গল আর নেই, অনেক পরিষ্কার হয়েছে, কাকার মুখ থেকে এই শ্মশান সম্বন্ধে অনেক গল্প শুনেছি। অনেক মিথ এই শ্মশানকে নিয়ে তৈরি হয়ে আছে, সেই মিথের খোঁজেই আমি প্রথম শ্মশানে আসি যখন আমি টেনে পরি, আমার মা-বাবাকে এই শ্মশানে একই সঙ্গে দাহ করা হয়েছিল পাশাপাশি চিতায়, সেই জায়গাটা খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছি, কাকা কখনো বলতেন পূব পারে যে অশ্বত্থ তলা আছে, তার কোল বেয়ে পোরানো হয়েছিল, আমি সেই অশ্বত্থ গাছ খুঁজে পেয়েছি, কিন্তু তার কোল খুঁজে পাই নি, এখনো সেই গাছটা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, আমি পায়ে পায়ে সেখানে গেলাম, মা বেঁচে থাকলে তার ছেলের কীর্তি হয়তো দেখে যেতে পারতেন, মনটা ভারি হয়ে গেলো, পারতপক্ষে এই সব চিন্তা করতে ভাল লাগে না, তবু মনে এসে যায়, পরিবেশ পরিস্থিতি মেনে।

একটা সিগারেট ধরালাম। মিত্রাকে ফোন করতে ইচ্ছে করছে। পকেট থেকে ফোনটা বার করে, ডায়াল করলাম।
-হ্যাঁ বল।
-কোথায়?
-ফিরছি।
-তুই এখনো ফিরিস নি।
-কি করে বুঝলি।
-ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছি।
হাসলাম।
-কেন এরকম করছিস অনি ফিরে যা না। রাত বিরেতে কোথায় কি হবে।
-না রে আমার কিছু হবে না, দেখবি। বড়মা কি বললো।
-বললো সাবধানে যাস, ও একটা পাগল তুই ওর পাল্লায় পরে পাগল হোস না।
-কালকে তুই বড় গাড়িটা নিয়ে আসিস না।
-কেনো।
-এখানে রাখার জায়গা হবে না।
-তাহলে।
-ছোট গাড়িটা নিয়ে আসিস। তোর সঙ্গে কে আসবে।
-আমি একা ড্রাইভ করে যাবো।
-না। বাইরুটে একলা আসিস না। ইসমাইলকে নিয়ে আসিস।
-আচ্ছা।
-দাদার সঙ্গে দেখা হলো।
-হ্যাঁ, আমি যখন বেরোচ্ছি তখন দেখা হলো, দাদা ঢুকছেন।
-বলেছিস।
-না। বড়মা বলেছেন।
-ঠিক আছে।
-আসার সময় তুই একটা কাজ করবি।
-বল।
-কিছু বাজি কিনে আনবি।
-সে কোথায় পাবো।
-ক্যানিং স্ট্রীটে।
-এখন তো অনেক রাত হলো। দোকান সব বন্ধ হয়ে যাবে।
-কটা বাজে।
-আটটা। ঠিক আছে দেখছি।
-কাল এখানে একটার মধ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করিস।
-ঠিক আছে।
ফোন কাটতে না কাটতেই অনাদির ফোন।
-তুই কোথায়।
হাসলাম। কেনো।
-আমরা কখন থেকে এসে বসে আছি।
-আমি শ্মশানে।
-একা।
-হ্যাঁ। দোকা পাবো কোথায়।
-সত্যি তোর মাথায় কি ছারপোকা আছে।
-তা আছে বইকি।
-ঠিক আছে, তুই বোস।

মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই দেখি বাইকের আওয়াজ, হেডলাইটটা প্রথমে ক্ষীণ তারপর উজ্জ্বল হলো, আমি অশ্বত্থ তলায় বসে আছি। বাইকে দুজন আরোহী, চাঁদের আলোয় যেটুকু দেখতে পাচ্ছি, চিকনা আর সঞ্জীব বলে মনে হচ্ছে, ওরা আমায় দেখতে পাচ্ছে না, তারপর অনি অনি বলে চিৎকার করলো, আমি সাড়া দিলাম।
তাড়াতাড়ি আয় ভাই, জীবনে এখনো অনেক কিছু পাওয়ার আছে, মরতে চাই না। ওদের গলার স্বরে যে কাকুতি মিনতি ছিল, তা শুনে আমি হেসে ফেললাম।

আমি ধীর পায়ে ওদের কাছে এলাম। আমি খালি বসার অপেক্ষা, চিকনা বাইক ছোটালো রুদ্ধশ্বাসে আমি মাঝখানে সঞ্জীব আমার পেছনে, গুম হয়ে আছে।

মিনিট তিনেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম, দেখলাম খামারে একটা জটলা, আমি গাড়ি থেকে নামতে চিকনার গলার শব্দ পেলাম, খিস্তি বাদে যা যা বিশ্লেষণে আমাকে আবাহন করার দরকার তাই করলো, সঞ্জীবও বাদ গেলো না, নীপা আরো গলা চড়িয়ে যা নয় তাই বললো, আমি মাথা নীচু করে শুনে গেলাম, কোন উত্তর দিলাম না। অনাদি খালি কাছে এসে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললো, চল ঘরে চল।
আমি ঘরে এলাম। আমার পেছন পেছন ওরা সবাই এলো।

সবাই কেমন গুম হয়ে আছে। চিকনা ঘরের সোফায় মাথা নীচু করে বসে আছে, আমি নিস্তব্ধতা ভেঙে চিকনার কাছে একটা সিগারেট চাইলাম। চিকনা উঠে এসে আমার পা ধরে ফেললো, এ কি করছিস তুই। না অনি সত্যি বলছি আমি ভুল করে ফেলেছি।

আমি ওর হাত ধরে দাঁড় করালাম, তুই ভুল করিস নি, ঠিক করেছিস।
-আমি তোকে অনেক বাজে বাজে কথা বলেছি।
-না তুই একটুও বাজে কথা বলিস নি। তোর জায়গায় আমি থাকলেও তোর মতো ব্যবহার করতাম।
চিকনা চোখ মুছছে।
-তোরা আমাকে ভীষণ ভালবাসিস, তাই তো, তোদের আমাকে হারাবার ভয়, তাই তো।
চিকনা মাথা দোলাচ্ছে, সঞ্জীব অপরাধীর মতো আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
-ওরে শ্মশানটা পবিত্র জায়গা। ওখানে ভয়ের কিছু নেই, ভয় করলেই ভয়।
-শালা অনাদিটার জন্য। তখন বাসুর দোকানে যাওয়ার ব্যাপারটা ফাইন্যাল করলেই সব লেটা চুকে যেতো।
-তুই ওখানে কি বাল ছিড়লি এতোক্ষণ বল।
আমি হেসে ফেললাম।
অনাদি মুখ নীচু করে হাসছে। দোষ করলি তুই, ঝাড় খাচ্ছি আমি, দেখছিস তো।
-সেগো মারানি, পার্টি করছে। তোর জন্য অনিকে আমি……
নীপা চায়ের মগ নিয়ে ঘরে ঢুকলো। গম্ভীর কোন কথা না বলে ট্রেটা রেখে চলে গেলো। বুঝলাম, চিকনার মতো ওরও চোখ ছল ছল করছে।
অনাদি সবাইকে চা ঢেলে দিলো। চা খাওয়া হলো, আমি মেলার খবর নিলাম, শুনে মনে হচ্ছে বেশ বর ফাংশন হবে, অনাদি মেলা কমিটির সেক্রেটারি, সঞ্জয় অনাদির অধস্তন, বাসু প্রসিডেন্ট। আমি অনাদিকে বললাম, হ্যাঁরে প্রেসিডেন্টের তো কোন কাজ কর্ম নেই তোদের প্রোগ্রামে।
-আছে, তবে হাল্কা।
-ওই জন্যই তো বাসু ওই পোস্টটা নিয়েছে। চিকনা বললো।
বাসু হাসছে, আমিও হাসছি।
-তোকে কি পোস্ট দিয়েছে।
-ফাংশন।
-আরি বাবা এ তো গুরু দায়িত্ব।
-আমি সঞ্জয়কে দিয়ে দিয়েছি, বলেছি এই দায়িত্ব তুই নে আমি মাঠের দায়িত্বে থাকবো।
-মাঠের আবার কি দায়িত্ব।
-দেখবি কাল, জুয়ার বোর্ড বসবে, ভাকুর ঠেক বসবে আরো কতো কি হবে। হাতের সুখ করতে হবে কাল।
-যে রকম আমায় করে ফেলছিলি আর একটু হলে।
চিকনা অপরাধীর মতো চোখ করে বললো, তুই আর ওই কথা মনে করাস না।
-হ্যাঁরে দিবাকর কোথায়?
-ও শালা কলকাতায় গেছে, কি ইন্টারভিউ দিতে। চিকনা বললো।
-ও থাকবে না কালকে।
-হ্যাঁ, একটু হামবড়াক্কি ভাব করতে হবে না। দেখবি কাল খালি স্টেজের পাশে, মেয়েদের পেছন পেছন ঘুর ঘুর করছে।
-ও এখনো বিয়ে করে নি।
-সকালে যে মেয়েটা এসেছিল ওটাকে পটানোর ধান্ধা করছে, ভানুকে জিজ্ঞাসা করবি ডিটেলস পাবি। তোকে তো ও দুচোখে দেখতে পারে না। সেদিন তুই তো বাজার থেকে চলে এলি, আমায় বললো, অনিকে দেখে অতো আদিখ্যেতার কি আছে। দিলাম শালা বাপ তুলে। শুর শুর করে কেটে পরলো। ও তোকে একদম সহ্য করতে পারে না।
-ওর একটা জেলাস কাজ করে সব সময়। বাসু বললো।
-সব সময় খিস্তি দিস না, বয়স হয়েছে তো।
-দেখ অনি খিস্তির কি মহিমা কাল বুঝতে পারবি।
হাসলাম। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কাল বাসুকে আমার সঙ্গে একটু ছাড়বি।
-হ্যাঁ, তুই ওকে নিয়ে স্যারের চশমা আনতে যাবি তো।
-হ্যাঁ। ও থাকা যা না থাকাও তা। সঞ্জয় বললো।
-তাড়াতাড়ি চলে আসিস। আজকে যে খেল দেখালি তুই ।
হাসলাম।
-হাসিস না, জানিস গত সপ্তাহে হাঁড়ি পারার একটা মেয়ে ঘাস কাটতে গেছিলো ওখানে, ওকে ভূতে ধরেছিলো। গুনিনকাকার কাল ঘাম ছুটে গেছে, ভূত তাড়াতে।
-দূর, যত সব আজগুবি, কই আমাকে তো ভূতে ধরলো না।
-জানিনা, তোর সঙ্গে তর্ক করে পারবো না।
-নারে অনি আমিও শুনেছি ব্যাপারটা, বিশ্বাস হয় না তবু বিশ্বাস করি। বাসু বললো।
আমি মিট সেফের কাছে উঠে গেলাম, মানি পার্টস থেকে কুড়ি হাজার টাকা বার করলাম। সঞ্জয় আর বাসুকে ভাগ করে দিয়ে বললাম, ব্যালেন্সটা আমায় বলিস কাল দিয়ে দেবো।
ওরা না গুণেই টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।
আমি বললাম, গুণে নে।
সঞ্জয় আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, তুই কি কম দিবি।
-না। তবু টাকা পয়সার ব্যাপার গুণে নে।
-না থাক, বাড়িতে গিয়ে গুণবো।
ওরা চলে গেলো।

আমার শ্মশানে যাওয়াটা যে খুব অন্যায় হয়েছে, রাতে খেতে বসে তা বুঝলাম, কাকীমা স্নেহের বকাবকি করলো, সুরমাসি মুখে কিছু না বললেও, ভূতের গুণাগুণ বিচার করলো, নীপা বার কয়েক সুরমাসির দিকে বিরক্তিপূর্ণ ভাবে চাইলো, কাকাও অনেক কথা বললো, বোঝালো, আমি বোবার শত্রু নেই, এই ভাবে গোগ্রাসে গিলে চলে এলাম। বসা মানে কথা বাড়বে। সোজা নিজের ঘরে এসে খাটের পাশে গোছানো আমার কাপড় গেঞ্জি পরে টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম।

আমি ঘুমোই নি, ঘুমোনোর ভান করে পরেছিলাম, নীপা ঘরে এলো, তার কাজ সারছে, আর খালি ফুঁপিয়ে যাচ্ছে, আমি কোন কথা বললাম না, তারপর নীপা দরজাটা ভেজিয়ে বাইরে চলে গেলো, আমি বুঝলাম, আজ বহুত গজব হয়ে গেছে, এ ভুলের সংশোধন আমাকেই করতে হবে, শ্মশান নিয়ে এতো কুসংস্কার এই গ্রামের মানুষের মধ্যে আছে, তা কল্পনার অতীত, বেশ মনে পরে একবার কাকার কাছে বেধড়ক মারও খেয়েছিলাম। কি করবো, নীপা বাইরে শোবে এটাও মেনে নিতে পারছিনা।

বিছানা ছেড়ে উঠলাম, দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, নীপা ওর বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ফুলে ফুলে কাঁদছে। আমার ভীষণ হাসিও পাচ্ছে, আবার করুণাও হচ্ছে, একটা ছোট্ট ব্যাপার নিয়ে এতো বড় একটা ঘটনা ঘটতে পারে আমার জানা ছিলো না। অনাদি যদি ফোনটা না করতো, তাহলে কিছুই হতো না।

আমি দরজাটা আস্তে করে খুলে নীপার পাশে গিয়ে বসলাম, ওর পিঠে হাত রাখলাম, ফোঁপানিটা আরো বেড়ে গেলো, আমি ওর পাশে শুয়ে জোর করে ওকে বুকে টেনে নিলাম। ও আমার বুকে মুখ ঢাকলো। আমি ওকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে উঠে বসলাম, তারপর পাঁজাকোলা করে তুলে ঘরে খাটের ওপর শোয়ালাম, নিজে নিজেই বলে উঠলাম,

-কি ভারীরে বাবা, এইটুকু একটা মেয়ে এতো ভারি হতে পারে আমার জানা ছিল না। যাক ফাঁকতালে কোলে চড়া হয়ে গেলো।
আমি কথাটা এমন ভাবে বললাম, নীপা ফিক করে হেসে ফেললো, তরাক করে উঠে বসে আমার বুকে দুচারটে ঘুসি মারলো।
আমি ওর হাত দুটো ধরে হাসতে হাসতে বললাম, বুকটা ভেঙে গেলে আর শুতে পারবে না।
-যাও আমার শোবার দরকার নেই।
জিভ দিয়ে চু চু চু করে বললাম ও কথা বলতে নেই। দেখো দেখিনি অতো সুন্দর মুখটা কেমন ভাতের হাঁড়ির পেছনের মতো লাগছে।
নীপা আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো, দাঁত বসালো, আমি উঃ করে উঠলাম, নীপা আমার গেঞ্জিটা তুলে দাঁত বসানো জায়গাটায় হাত বোলাচ্ছে,
-জুতো মেরে গরু দান।
নীপা আমার দিকে তাকালো। তুমি ভীষণ স্বার্থপর। নিজেরটা ছাড়া কারুর কথা ভাবো না।
-আরি বাবা আমি ভগবান নই, আমিও অন্যায় করতে পারি…..
-তুমি কেনো ওখানে গেছিলে।
-ভালো লাগে বলে।
-তোমার ভালো লাগার আর কোন জায়গা নেই।
-না।
-দিনের বেলা মানুষ যেতে ওখানে ভয় পায় আর তুমি রাতে…..
-আচ্ছা বাবা, আর হবে না, এবার গেলে তোমরা জানতেও পারবে না।
-আমার গা ছুঁয়ে কথা দাও, তুমি আর যাবে না।
-আমি তোমার গা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করার পর যদি যাই তাহলে কি হবে।
-আমি মরে যাবো।
-আর আমি ঢোল বাজিয়ে লোককে বলে বেরাবো নীপা মরিয়া গিয়া প্রমাণ করিলো সে মরে নাই।
-উঃ তোমাকে নিয়ে পারা যাবে না।
মেঘ কাটলো, নীপাকে বললাম, জলের জগটা নিয়ে এসো, আকন্ঠ জল খাই।
-জল খেলে পেট আই ঢাঁই করবে করার সময়।
আমি ওর দিকে তাকালাম, নীপা কোমর দুলিয়ে চলে গেলো মিটসেফের কাছে, জলের জগটা নিয়ে এলো, জল খেলাম, নীপা জলের জগটা নিচে নামিয়ে রেখে আমার পাশে বসলো।
-খুব ছোট বেলার একটা কথা মনে পরে যাচ্ছে, জানো নীপা।
-কি।
-তোমার মেঘনাদ পন্ডিতকে মনে পরে।
-হ্যাঁ।
-আমরা শেষের এক বছর পরেছিলাম।
-আমাদের খুব মারতো। একদিন সন্ধ্যে বেলা কাকার সঙ্গে দেখা করতে এলো, আমি তখন ঐ বাড়ির বারান্দায়, বসে পরছিলাম, খুব জোর পেচ্ছাপ পেয়েছে, কিন্তু নিচে নামা যাবে না, কাকাতো আছেই তার ওপর পন্ডিত মশাই, কি করা যায়, পা টিপি টিপে, বারান্দার কোনায় গেলাম, দেখলাম মেঘনাদ পন্ডিত ঠিক চালের তলায় দাঁড়িয়ে, দিলাম মুতে, চাল থেকে জল গড়িয়ে মেঘনাদ পন্ডিতের গায়ে, মেঘনাদ পন্ডিত হঁ হঁ করে উঠলো দেখলে আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিলে, কাকা অবাক হয়ে বললেন, কে। কে আবার এতগুলো বেড়াল পোষো কেনো বলতো, ওদের খাওয়ার খরচতো আছে।

নীপা হেসে কুটি কুটি খাচ্ছে, একবার আমার গায়ে ঢলে পরে একবার বিছানায় শুয়ে পরে, হাসির চোটে ওর বুক কাঁপছে, আমি ওর কাঁপা বুকের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে গেলাম।
-তুমি এতো দুষ্টু ছিলে।
-দুষ্টু বললে ভুল হবে, সেই মুহূর্তে আমার কিছু করার ছিল না।
নীপা আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো, অনিদা তুমি তখন খুব রাগ করেছিলে তাই না।
-একদম নয়।
-আমি তোমার সমস্ত কথা বাইরে দাঁড়িয়ে শুনেছি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তো……
আমি নীপার মাথাটা ধরে আমার ঠোঁট দিয়ে ওর ঠোঁট চেপে ধরলাম।

নীপার ঠোঁট দুটো সামান্য উষ্ণ, এক ডাকেই নীপা সারা দিলো, দুজনে দুজনের ঠোঁট চুষছি, জিভ চুষছি, ওই অবস্থায় নীপাকে আস্তে আস্তে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলাম, আমি নীপার বুকে, ঠোঁট থেকে ঠোঁট তুললাম, নীপা নিজের জিভ দিয়ে ওর ঠোঁট চাটছে, আমি ওর নাইটির সরু ফিতে কাঁধ থেকে সরিয়ে দিয়ে বুকের থেকে নাইটিটা নামালাম, নিটোল মাইদুটো লাফিয়ে আমার চোখের সামনে চলে এলো। আমি ডানদিকের টায় হাত রেখে বাঁদিকের মাইতে মুখ দিলাম, চকাত করে একটা আওয়াজ হলো, উঃ আস্তে।
-কেনো, কেউ শুনতে পাবে নাকি।
-দেওয়ালেরও কান আছে।
আমি আবার ওর মাই চোষায় মনোনিবেশ করলাম। একবার বামদিক একবার ডানদিক। মাঝে মাঝে ঠোঁট চলে যাচ্ছে নীপার ঠোঁটে। নীপা আমার নুনুতে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই হাত পাচ্ছে না, আমি অনেকটা নীচু হয়ে ওর মাই চুষছি। ও দুতিনবার চেষ্টা করার পর আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো, আমার নুনুটা খামচে ধরে বললো, খালি নিজে মজা নেবে না, আমি কি শুকনো থাকবো নাকি।
হাসলাম।
নীপা মুখ ভেঙচে হাসলো। খোল, খোল তোমারটা।
-খোলাই তো। কাপড় সরালাম, নীপা আমার নুনুটা খামচে ধরলো।
-তুমি পরে রয়েছো কেনো, খোলো।
নীপা নাইটিটা খুলে ফেলেই আমার নুনুর ওপর ঝুঁকে পরলো, আমি বসে আছি, নীপার সম্পূর্ণ নগ্ন পাছাটা দেখতে পাচ্ছি, ফোলা ফোলা পাছা দুটো কি মসৃন, আমি একটু হাত বোলালাম ওর খোলা পাছায়, মনে মনে ইচ্ছে হলো নীপাকে আজ পেছন থেকে করবো, নীপা কি রাজি হবে। নীপা আমার নুনুতে মুখ দিয়েছে। আমি দুহাতে দুপাশের মাই টিপছি। মাই দুটো বেশ শক্ত হয়েছে।
-নীপা।
-উঁ। চলো নীচে যাই।
নীপা আমার নুনু থেকে মুখ তুললো। কেনো।
-চলো না।
আমি খাট থেকে নীচে নেমে দাঁড়ালাম, নীপা নীচে নেমে এলো, আমি ওকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে ওর ঘাড়ে চুমু খেলাম, আমার নুনু ওর পাছুতে ধাক্কা মারছে।
-ওরে বদমাশ, পেছন থেকে করার শখ জেগেছে মনে। আমি ওর মাইদুটোয় হাত দিয়ে মাথা দোলালাম।
-না।
-কেনো।
-ব্যাথা লাগবে।
-ব্যাথা লাগলে করবো না।
-এতো বিটকেল বুদ্ধি তোমার মাথায় আসে কি করে বলোতো।
আমি কোন উত্তর দিলাম না, ওর মাই টিপে চলেছি।
-কি গো খালি টিপেই যাবে, করবে না।
আমি নীপার সামনে এলাম, ওকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে একবার উঁচুতে তুলেই নীচে নামালাম।
-উঃ আমার বুক ফেটে যাবে।
হাসলাম।
মাটিতে বসে পরলাম, ওর পুশিটা দেখছি, আজ নীপা সেভ করেছে, একেবারে কোন চুল নেই, আমি ওর পুশিতে আঙুল ছোঁয়ালাম, নীপা দূরে সরে গেলো, না একেবারে হাত দেবে না, সুরসুরি লাগে।

-ঠিক আছে আঙুল দেবো না, এসো, নীপা কাছে এগিয়ে এলো আমি ওর পাছুটা জাপ্টে ধরে ওর পুশিতে জিভ দিলাম, নীপা পা দুটো সামান্য ফাঁক করলো, আমি ওর পুশির চেরা অংশে জিভ দিয়ে ওপর নিচ করলাম, নীপা পা দুটো আরো ফাঁক করলো, এবার জিভ দেবার অনেকটা জায়গা পেলাম, পুশির দুপাশটা ভাল করে জিভ দিয়ে ওপরে জিভ দিলাম, নীপা উঃ করে উঠলো, ওর মাই দুটো আমের মতো ঝুলছে, নীপা আমার কাঁধে হাত রাখলো, কোমরটা আমার মুখের ওপর চেপে ধরে কোমর নাড়াচ্ছে, আমি নীপার পুশির ভগাঙ্কুরে দাঁত দিলাম, নীপা ছিটকে দূরে চলে গেলো, ঘার দুলিয়ে না না করছে, আমি হাসতে হাসতে ওকে কাছে ডাকছি। নীপা কাছে এলো না। আমি উঠে দাঁড়ালাম, নীপা দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো, আমার ঠোঁট দুটো যেনো ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে, আমি ওর বাঁদিকের মাই টিপছি।

-অনিদা আর পারছি না।
-চলো।
-তুমি যে বললে……
হাসলাম।
-ওঃ আমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে মারলে।
আমি নীপাকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরলাম। চলো খাটে।
-কেনো। তুমি যে বললে।
-ঠিক আছে চলো না।
খাটের কাছে এসে নীপাকে হাঁটু মুরে বসে, পাছুটা উঁচু করে তুলতে বললাম।
-আমি জানিনা যাও তুমি আমাকে দেখিয়ে দাও।
আমি ওকে পোজটা দেখিয়ে দিলাম, নীপা আমার নুনুটা পেছন থেকে ধরে মুচরে দিয়ে খিল খিল করে হেসে উঠলো। আমার দেখানো মতো নীপা খাটের ওপর পাছুটা উঁচু করে নীচু হয়ে বসলো। নীপার পাছুটা সত্যি মোমের মতো মোলায়েম, আমি ওর পাছুর ফুটোটা দেখতে পাচ্ছি, পরিষ্কার কোন স্পট নেই, ঠিক তার নীচে পুশির পার দুটো ফুলে ফুলে আছে, আমি একবার আঙুল দিলাম, নীপার কোমর কেঁপে উঠলো, কি হলো।
-তোমায় বললাম না আঙুল দেবে না।
-কেনো।
-জানিনা যাও।
-ওটা লাগাবো।
-লাগাও। আস্তে।
-আচ্ছা।
আমি নুনুর চামরাটা সরিয়ে নীপার পুশির ফুটোয় রেখে একটু চাপ দিলাম, নীপা এগিয়ে গেলো। কি হলো।
-তোমায় বললাম না আস্তে, তুমি কি শাবল দিয়ে মাটি খুঁরছো।
হাসলাম।
আবার আমার নুনু ওর পুশির গর্তে রেখে, ওর কোমর চেপে ধরলাম, একটু চাপ দিলাম, সামান্য ঢুকলো, নীপা উঃ উঃ করছে, কি হলো।
-পারবো না, যাও।
-থাক তাহলে।
-ওমনি রাগ হয়ে গেলো না। দাঁড়াও।
নীপা খাট থেকে নিচে নেমে এলো, কোমর দুলিয়ে মিট সেফের কাছে গেলো, ড্রয়ার খুলে একটা কি নিলো
-দেখি।
-কি।
-একটু ভেজলিন লাগিয়ে দিই।
-কি হবে।
-তোমারটা শুকিয়ে গেছে। তাই লাগছে।
-কি করে বুঝলে।
-মেয়েরা সব বোঝে।
আমি দাড়িয়ে রইলাম, নীপা আমার নুনুতে ভাল করে ভেজলিন লাগিয়ে দিলো, তারপর আবার মিটসেফের ড্রয়ার খুলে ওটা রেখে এলো।
-নাও চলো।
আমি হাসছি।
-হেসো না, তুমি আনন্দ করবে, আমি কষ্ট করবো।
আমি নীপার মাইদুটো টিপে বললাম, তুমি আনন্দ পাবে না।
-পাবো বলেই তো এতো কষ্ট পাই। নীপা আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে আবার খাটের ওপর যেমন ভাবে বসেছিলো সেই ভাবে বসলো।
আমি আস্তে করে আমার নুনুটা ওর পুশিতে রেখে, ওর কোমরটা ধরে চাপ দিলাম, সত্যি বেশ কিছুটা ঢুকেছে।
-অনিদা বেশি দেরি কোরে না ঢুকিয়ে দাও, ভেতরে একবার ঢুকে গেলে আর জ্বালা করবে না।
আমি নীপার কথা মতো এক ঠেলা দিলাম, সত্যি পুরোটা ঢুকে গেছে, নীপা কোমর দুলিয়ে একটু কেঁপে উঠলো।
নীপার পাছুর ফুটোটা আমার নুনুর ঠিক ওপরে।
-গন্ধ জায়গায় একেবারে হাত দেবে না।
হাসলাম।
আস্তে আস্তে নীপার পিঠে শরীরটা ছেড়ে দিলাম, আমার মুখ এখন নীপার ঠোঁটের নাগালে, নীপা ঘার ঘুরিয়ে আমার ঠোঁট চুষলো।
-পেরেছি।
আমি মাথা দুলিয়ে বললাম, হ্যাঁ।
নীপা কোমরটাকে একটু নীচে নামিয়ে পেছন দিকে ঠেলা দিচ্ছে।
-করো।
-না তুমি করো।
-তোমার ভেতরটা কি টাইট।
-প্রথম প্রথম এরকম থাকে তারপর নরম হয়ে যায়।
-তুমি এতো কি করে জানলে।
-হলুদ বই পরে।
এখানে পাওয়া যায়।
-কতো চাই তোমার। শেলিদির কাছে যাও না, ওটা একটা লাইব্রেরী।
-শালি করেছে।
-হ্যাঁ দিবাকরদা ফাঁক পেলেই করে।
-তুমি বলেছো নাকি শেলিকে আমি করেছি তোমায়।
-পাগল।
-আমি কোমর নারাচ্ছি, নীপাও কোমরটা পেছনে ঠেলছে, বেশ মজা লাগছে।
-অনিদা, একটু টেপো।
-কি।
-এটাও বলে দিতে হবে।
-আচ্ছা আচ্ছা।
-এই ভাবে আমি কিন্তু বেশিক্ষণ রাখতে পারবো না।
-আমিও পারবো না।
-করো তাহলে।
আমি মনোযোগ সহকারে কোমর দোলাতে আরম্ভ করলাম, আমারটা পুরো বেরোচ্ছে না কিছুটা বেরোচ্ছে, আমি তাড়াতাড়ি করতে পারছি না। নীচু হয়ে নীপার পুশির ভগাঙ্কুরে হাত দিলাম।
-ওঃ ওখানে আবার হাত দিচ্ছ কেনো।
-কেনো।
-ওটা আমাদের চাবি।
-আচ্ছা আচ্ছা।

আমি করতে শুরু করলাম, এবার গতিটা একটু বাড়ালাম, আর থামলাম না, নীচু হয়ে নীপার ঠোঁট চুষলাম, মাইতে হাত রাখলাম, এবার যেন একটু জোরে করতে শুরু করেছি, নীপা আঃ করে পা দুটো ফাঁক করে, বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলো, আমার নুনুটা শক্ত হয়ে লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে, আমার কোমর দুলছে, আমি কিছু বোঝার আগেই আমার নুনু থেকে রস ছিটকে গিয়ে নীপার মুখে পরলো, তারপর ওর শরীরে, আমি নীপার পুশির দিকে তাকালাম, সাদা ফেনার মতো রস ওর পুশির গর্তের গা বেয়ে গড়িয়ে পরছে। নীপা আমার কাপড়টা দিয়ে ওর মুখ মুছছে। আমি আমার নুনুটাকে শক্ত করে ধরলাম।

নীপা মুচকি হেসে বললো। এখন ধরে কি হবে, আমাকে তো বৃষ্টির জলে একেবারে স্নান করিয়ে দিলে।
তখনো আমার নুনুটা ধিকি ধিকি কাঁপছে।

পরদিন সকালে নীপা এসে যখন ডাকলো, তখন সাড়ে নটা বেজে গেছে, আমি হুড় মুড় করে উঠে বসলাম, নীপা মিত্রার দেওয়া সেই লং-স্কার্ট আর গেঞ্জিটা পরেছে, গোল গলার গেঞ্জিটা নীপাকে দারুণ মানিয়েছে, মাই দুটো উঁচু উঁচু লাগছে, এই মুহূর্তে, ওর বুক ওরনাতে ঢাকা নেই। আমি ওর বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
-কি দেখছো।
-তোমাকে। দারুন মানিয়েছে।
-মিত্রাদির চয়েস আছে, কি মোলায়েম।
আমি খাটে বসে আছি, নীপার স্নান হয়ে গেছে, মাথায় শ্যাম্পু করেছে, চুলটা কালো মেঘের মতো ফুলে আছে।
-মিত্রাদি ফোন করেছিলো।
-তোমায়।
-হ্যাঁ।
-কি বললো।
-তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলো, আর বললো ওকে গুঁতিয়ে তোল, না হলে ওর ঘুম ভাঙবে না।
হাসলাম।
-হাসলে যে।
-শেষের কথাটা বাড়িয়ে বললে।
-ঠিক আছে, তুমি ফোন করে জেনে নাও।
-ঠিক আছে।
-ওঠো বিছানাটা গুছিয়ে দিই, তুমি দাঁত মেজে নাও।
-ঘুটের ছাই আছে।
-কেনো।
-অনেক দিন ঘুটের ছাই-এ দাঁত মাজিনি।
-তুমি সত্যিই গাঁইয়া।
-আমি শাঁইয়া কে বলেছে।
-কি বললে।
-শাঁইয়া। গ্রামের লোকেরা যদি গাঁইয়া হয়, শহরের লোকেরা শাঁইয়া।
-সত্যি তোমার মাথা বটে।
হাসলাম।
-তুমি ক্যাবলার মতো হেসো নাতো।
-আমি ক্যাবলা।
-তা নয় তো কি।
-কাল রাতের কথা মনে আছে।
নীপার চোখ মুখ চক চক করে উঠলো।
-উঠবো দেখবে।
-না না প্লিজ প্লিজ সবে স্নান করে এসেছি।
-ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম।
-তোমার সারপ্রাইজের কথা বললে নাতো।
-কি করে জানলে।
-কাল রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সমস্ত কথা শুনেছি।
-আমি মাথা নীচু করলাম।
-দিবাকরদা তোমায় একেবারে সহ্য করতে পারে না।
-এটা ওর স্বভাব। সেই ছোট থেকে।
-কেনো।
-ও স্কুলে ফার্স্ট হতো আর আমি সেকেন্ড, কিন্তু ফাইন্যালে গিয়ে, ওকে বিট করলাম।
-মসাই বলেছে, তুমি স্টার পেয়েছিলে, সাতটা বিষয় লেটার, আচ্ছা অনিদা তুমি বাংলায় লেটার পেলে কি করে।
-কি করে জানবো, হয়তো ভালো লিখেছিলাম।
-জানো তোমার পর কেউ এখনো পর্যন্ত বাংলায় লেটার পায় নি। উনা মাস্টার পদে পদে সবাইকে শোনায়।
-স্যার আমাকে খুব ভালবাসতেন।
-তোমার মাথাটা আমার ফাঁক করে দেখতে ইচ্ছে করে।
-ঠিক আছে একদিন দেখাবো।
আমি বিছানা থেকে উঠে, নীপার কোমরে একটা খোঁচা মারলাম।
-আ।
-কি হলো।
আমার হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বললো যাও মুখ ধুয়ে এসো।
আমি বেরিয়ে এলাম।
পুকুর ধারে একটা কচি বাঁশের ডগা নিয়ে দাঁতন বানালাম, বেশ কিছুক্ষণ ভাল করে রগড়ে পুকুরে মুখ ধুয়ে চলে এলাম।
নীপা চা বিস্কুট নিয়ে হাজির।
চা খেতে খেতে নীপাকে বললাম তুমি কখন বেরোবে।
-একটা নাগাদ।
-তাহলে তোমার সঙ্গে আমার সেই বিকেলে দেখা হবে।
-আজকে না গিয়ে যদি কালকে যাও।
-কেনো।
-তাহলে তুমি আমার সঙ্গে যেতে।
-তাহলে কি হতো।
-আমার বুকটা ফুলে যেতো।
-তোমার বুকটা তো এমনি ফোলা ফোলা দেখছি, আর ফুলিয়ো না, খারাপ দেখাবে।
নীপা ছুটে এসে, আমার মাথাটা ধরে বললে, একেবারে মাথাটা ভেঙে দেবো। খালি মাথায় কু বুদ্ধি।
নীপার বুক আমার মুখের কাছে। নীপাকে আজ ভীষণ মিষ্টি লাগছে।
-সকাল বেলা চিকনাদা এসে একবার তোমার খোঁজ করে গেছে। আমাকে বললো এককাপ চা দে, চা খেয়ে চলে গেলো। তুমি আজ না গেলে নয়।
-আরে বাবা, যেতে আসতে যতটুকু টাইম লাগে।
-ঠিক আছে, যাও।
নীপা মিটসেফের কাছে চলে গেলো, কি যেনো খোঁজাখুঁজি করছে, মিটসেফের ওপরে। আমি ডাকলাম, নীপা, নীপা ফিরে তাকালো। আমার মানিপার্টসটা নিয়ে এসো।
নীপা আমার মানিপার্টসটা হাতে করে নিয়ে এলো। আমি ওখান থেকে তিনটে একশো টাকার নোট বার করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। রাখো।
-কি হবে।
-রাখো না।
-না।
-আমি একদিন মেলায় গিয়ে কষ্ট পেয়েছি এটার জন্য, আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও।
নীপার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। নাও। নীপা টাকাটা হাতে নিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো, তুমি এতো ভাব।
-ভাবি না ফিল করি।
নীপা গলা জড়িয়ে আমার কোলে বসলো।
কাঁদে না। কান্না দুর্বলের প্রতীক, দাঁতে দাঁত চেপে লড়বে সব সময়, কাউকে এক তিলার্ধ মাটি বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেবে না।
নীপা আমার দিকে তাকালো, আমার চোখের আগুনে ও পরিশুদ্ধ হলো, আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললো -আমি পারবো অনিদা।
-নিশ্চই পারবে, আমি তো আছি।
নীচ থেকে কাকার গলা পেলাম, আমার নাম করে ডাকছে, আমি জানলা দিয়ে মুখ বার করে বললাম, কি হয়েছে।
-তোর কাকীমা জিজ্ঞাসা করলো কখন বেরোবি।
-এই তো স্নান করেই বেরিয়ে যাব।
-খাবি না।
-না । এসে খাবো।
-সে কি হয় নাকি।
-ঠিক আছে তুমি যাও আমি যাচ্ছি।
নীপা আমার দিকে তাকালো। কাছে এসে আমায় প্রণাম করলো।
-এটা কিসের জন্য।
-তোমার সম্মানটা যেন আজ রাখতে পারি।
-নিশ্চই পারবে। যাও।

আমি উঠে পড়ে স্নান করে রেডি হলাম, কাকীমা খাওয়ার কথা বললো, আমি বললাম, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো, তুমি চিন্তা করো না, পারলে একটু মুড়ি আর চা দাও।
সুরমাসি মুড়ি আর চা নিয়ে এলো, আমি সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করলাম, হ্যাঁগো চিংড়িমাছের টক আছে।
সুরমাসি হাসলো। কেনো।
-এসে চিংড়িমাছের টক দিয়ে পান্তা খাবো।
-আছে।
বাসু ঠিক সময় এলো, মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম, ১১.৩৫ বাজে। বাসুকে বললাম, চা খাবি।
-বানাতে হবে নাকি।
তা তো বলতে পারবো না। ঠিক আছে সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করি দাঁড়া। সুরমাসিকে ডাকলাম।
সুরমাসি বললো, আছে, নিয়ে আসছি।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে বললো, অতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছিলি কেনো।
-তোকে আবার কে বললো।
-চিকনা।
-ও, হ্যাঁ নীপা বলছিলো, চিকনা আমায় খোঁজ করতে এসেছিলো। কেনো বলতো।
-একটা চিঠি লিখে দিতে হবে।
-কিসের জন্য।
-কোথায় একটা ইন্টারভিউ দিতে যাবে।
-তার মানে বায়োডাটা।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ মনে পরেছে।
-ওর কি চাকরির খুব দরকার।
মাঠে খেটে আর কত দিন চালাবে বলতো। অতগুলো পেট। কতই বা ধান হয়।
-হুঁ। ঠিক আছে। তোর কাছে গেছিলো নাকি।
-হ্যাঁ। আমি বললাম অনাদির কাছ থেকে লিখে নে। দিল গালাগালি, তোকে আমাকে দুজনকে। তোকে একটু কম আমাকে বেশি।
হাসলাম।
বাসু বললো, চল এবার বেরোনো যাক।
আমি বললাম হ্যাঁ চল।
-নীপাকে দেখছি না।
-বাবাঃ সে তো আজ পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষ।
বাসু হাসলো। আমি ভেতরের ঘরে গিয়ে কাকাকে বলে বেরিয়ে এলাম।

মোরাম রাস্তায় উঠতেই পচার সঙ্গে দেখা। মাঠে কাজ করছে। দেখা হতে, মাঠ থেকে উঠে এলো, বললো, আর ঘন্টাখানেক কাজ করে চলে যাবে। আমায় জিজ্ঞাসা করলো, নার্সিংহোমে যাচ্ছি কিনা। আমি বললাম হ্যাঁ।
বেরিয়ে এলাম, আসার সময় বাসুকে সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।
-সর্বনাশ, তুই ম্যাডামকে কোথায় রাখবি।
-কেনো, আমার ঘরে।
-ওরে, থাকবে তো, না পালিয়ে যাবে।
-আমি দশ বছর ধরে ওর সঙ্গে মিশছি, মনে হয় না ওর কোন অসুবিধে হবে। তোকে একটা কাজ করতে হবে।
-কি।
-গাড়িটা রাখার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
-সেতো বাজারেই রাখা যাবে আমার দোকানের সামনে।
-বাজার পর্যন্ত রাস্তা হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ।
-তাহলে তো কোনো চিন্তা নেই। তুই কি যেখানে থাকতিস সেখানেই আছিস।
-হ্যাঁ, তবে বাজারের শেষ প্রান্তে একটা ঘর করেছি। বাড়িতে সমস্যা, তাই বউ ছেলে নিয়ে এখানে চলে এসেছি।
-বাবা-মা।
-বাড়িতেই আছেন। প্রত্যেক দিন সকাল বিকেল যাই।
-বাড়িতে বাবা-মা ছাড়া কে আছেন।
-মেজ ভাই, ছোট ভাই, আর ওদের বউ, মেজ ভায়ের বউটা সুবিধার নয়।
-কি করে।
-জমি জমা সব ভাগ হয়ে গেছে, চাষ করছে আর খাচ্ছে।
-তোর কি খালি দোকান।
-হ্যাঁ। শ্বশুরের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ছিলাম, আর জমি বেচেছি। তাই দিয়ে দোকান। কিছুটা জমি চিকনা চাষ করে।
-ব্যবসা কেমন চলছে।
-চলে যায় আর কি। এখানকার পরিস্থিতি তো জানিস। সব ধারে বিজনেস, মাসে মাসে টাকা।
-আমার ব্যালেন্সটা তোর বলার কথা ছিলো।
-তোর কাছ থেকে আর কিছু পাবো না।
-সে কি করে হয়। কাকার পাওনা, আমার পাওনা।
-সব মিলিয়ে…… আর দু একশো টাকা হয়তো পাবো।
-সেটাও তো টাকা নাকি টাকা নয়।
-তুই এতো হিসেব করিস না।
-ঠিক আছে।
ফোনটা বেজে উঠলো।
বাসু বাইক থামালো, পকেট থেকে বার করে দেখলাম, মিত্রার ফোন।
-কোথায় এখন।
-আমি পৌঁছে গেছি।
-এতো তাড়াতাড়ি।
-তুই আয় বলবো। তুই কোথায়।
-আমার যেতে আরো মিনিট পনেরো লাগবে।
-ঠিক আছে।
-কি ম্যাডাম পৌঁছে গেছেন। বাসু বললো।
-আর বলিস না, আমার অনেক জ্বালা, সংসার নেই তবু ভরা সংসার।
-সত্যি তুই ছিলি, না হলে স্যারের যে কি হতো।
-দুর ওই সব নিয়ে ভাবি না।
-নারে অনি, ললিতাকে তোর কথা বলতেই, ও বিস্ময়ে আমার দিকে তাকায়।
-তোর বউকে এর মধ্যে একদিন দেখতে যাব।
-কবে যাবি।
-কথা দেবো না। হুট করে চলে যাবো।
-তুই বাইক চালাতে জানিস না।
-না।
-সাইকেল চালাতে পারিস তো।
-পারতাম তো, এখন পারবো না। অভ্যাস নেই।
-দাঁড়া তোকে বাইকটা শিখিয়ে দেবো।
-না, তার আর দরকার পরবে না।
-কেনো।
-কলকাতায় অফিসের গাড়ি চড়ি , কোথাও গেলে প্লেন, কিংবা ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস। বাইক চালাবো কখন।
-তাও ঠিক।
কথা বলতে বলতে নার্সিং হোম পৌঁছে গেলাম।

নার্সিং হোমের দোরগোড়ায় মিত্রার গাড়িটা রাখা আছে। বাসু বাইকটা একটু সাইড করে রাখলো। আমরা দুজনে ভেতরে এলাম, সেই রিসেপশনিস্ট ভদ্রমহিলা ছিলেন, আমাদের দেখে বললেন, দাঁড়ান ম্যাডামকে ডেকে দিই।
-আমার চশমা।
-ওটাতো রেডি আছে, ম্যাডাম বলেছেন, আপনি এলেই খবর দিতে।
মেয়েটি ভেতরে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে বললো, আপনাকে একবার ভেতরে ডাকছেন।
আমি ভেতরে গেলাম, বাসুও আমার সঙ্গে এলো। বুঝলাম এটা মালিকের বসার ঘর। আরও দু’তিনজন বসে আছেন, আমি কাউকে চিনতে পারলাম না, তবে ডঃ বাসুকে চিনতে পারলাম। আমাকে দেখে মুচকি হেসে মিত্রা বললো, বোস।
-আমরা বাইরে আছি। মনে হচ্ছে মিটিং চলছে।
-উঃ তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না। মিটিং নয় একটু কথা বলছি।
-ঠিক আছে তুই বল না, আমাকে নিয়ে এনাদেরও কিছু সমস্যা থাকতে পারে।
-তোর সঙ্গে আলাপ করাবার জন্য এদের ডেকেছি।
বাধ্য হয়ে বসলাম।

মিত্রা একে একে সবার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলো। বুঝলাম এরা সবাই ডাক্তার। এও জানাতে ভুললো না আমি কোম্পানীর ওয়ান অফ দেম মালিক। বাসু আমার দিকে একবার তাকাল, বিস্ময় ওর চোখে ঝরে পরছে, সত্যিতো আমি এই কথাটা ওদের গোপন করেছি। বাসুই প্রথম জানলো। বাসুর চোখে যেমন বিস্ময়, ঠিক তেমনি যারা এখানে বসে আছেন তাদের চোখেও বিস্ময়, ওরা যেন ভুত দেখছে, এরা নিশ্চই ভেবেছিলো, আমি এদের খুব পরিচিত তাই সব ফ্রি করে দিয়েছে। ডাক্তাররা সবাই এবার আমাকে চেপে ধরলেন, আমি খালি একটা কথাই বললাম, মিত্রা আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাই এই কথা বলছে। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো, বুবুন তুই এতবড় মিথ্যে কথাটা বলতে পারলি। আমি ওকে ফোন করবো।
-না এই উপকার তোকে করতে হবে না। ফেরার দিন সময় নিয়ে আসবো জমিয়ে গল্প করা যাবে।
-একটু কফি খা।
-এখানে এসে, এই ঘরে বসে কফি খেতে ভালো লাগবে না। তার থেকে বরং বাইরে কোথাও খেয়ে নেবো।

আসর ভাঙলো, আমি সবার আগে বেরোলাম, কাউন্টারে এসে চশমাটা চাইতেই মেয়েটি দিয়ে দিলো, আমি ডঃ বাসুর চেম্বারে একবার গেলাম, উনি বসেছিলেন, আমি দরজাটা ফাঁক করে বললাম, আসতে পারি। দেখলাম ডঃ বাসু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, এ কি বলছেন স্যার, ভাবটা এরকম পারলে আমার চেয়ারে আপনি বসুন। আমি চশমার ব্যাপারে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনি সব বলে দিলেন, বললেন কোন অসুবিধে হবে না, দিন সাতেক রেসট্রিকশন-এ থাকতে বলুন, আর ওষুধগুলো পনেরো দিন কনটিনিউ চলবে। পনেরো দিন পর একবার দেখাতে হবে।
-ঠিক আছে।

উনি একবার দেঁতো হাসি হাসলেন। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি, মিত্রা কাউন্টারের কাছে দাঁড়িয়ে। আমি বললাম চল।
-দাঁড়া রবিন একটু বাইরে গেছে।
-ইসমাইল আসে নি।
-ওর বাচ্চাটার একটু শরীর খারাপ। রবিন এই এলাকার ছেলে, বললো সব চিনি।
কিছুক্ষণ পর রবিন এলো, ধোপদুরস্ত পোষাক, অফিসের ড্রেস কোড, মাথায় টুপি কোমরে বেল্ট আমায় দেখে হেসে ফেললো, স্যার।
-ও তুমি।
-হ্যাঁ স্যার।
-তুই চিনিস।
-চিনবো মানে, ওকে সারাজীবন মনে রাখবো।
-কেনো।
-তোর বাড়িতে প্রথম দিন ওই ঢুকতে দেয় নি।
রবীন মাথা চুলকোচ্ছে।
-না স্যার মানে তখন ……
-চিনতে না। এখন চিনে ফেলেছো।
-হ্যাঁ স্যার।
বাসু আমার কীর্তিকলাপ দেখে হাসছে, মিত্রা হাসতে গিয়েও গম্ভীর হতে চাইছে, ওর মুখটা অদ্ভূত লাগছে।
-চল তাহলে।
-তুই ওকে বলে দে।
-গাড়িতে উঠি আগে।
আমরা বেরিয়ে এলাম, দু’চারজন ডাক্তার পেছন পেছন এসেছিলো গাড়ির কাছ পর্যন্ত, আফটার অল মালকিন বলে কথা।
মিত্রাকে বললাম, তুই তো গাড়ি চালাতে পারিস, এইটুকু রাস্তা তুই চালিয়ে নিয়ে চল।
মিত্রা আমার দিকে একবার কট কট করে তাকালো।
-পেছন দিকে বসার জায়গা রেখেছিস।
মিত্রা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।
-রবীন বাসুর বাইকে বসুক আমি সামনের সিটে বসি, তুই ড্রাইভ কর।
মিত্রার চোখে দুষ্টুমির হাসি খেলে গেলো। বাসু আমার দিকে একবার চাইল।
-আগে গাড়িটা ঠিক ঠাক রাখতে হবে, তারপর সব, বুঝলি বাসু। আর একটা কথা আনাড়ি ড্রাইভার, একটু আসতে চালাস।
বাসু হাসলো।
মিত্রা গাড়ি স্টার্ট দিলো। বাসু সামনে সামনে যাচ্ছে আমরা পেছনে।
মিত্রা আজ একটা ঢাকাই জামদানী পরেছে, লাইট তুঁতে কালারের, তার সঙ্গে ম্যাচিং করে তুঁতে কালারের ব্লাউজ ওকে দারুণ লাগছে, অনেক দিন পর ওকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখলাম, মিত্রার চোখ সামনের দিকে, সব জানলার কাঁচ বন্ধ, ভেতরটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা।
-এসিটা চালাবো।
-চালা।
মিত্রা সুইচ অন করলো।
-ট্যাঙ্কি ভরে এনেছিস তো।
-কেনো।
-এখানে ২৫ কিমির আগে কোন পেট্রোল পাম্প পাবি না।
-সে কি রে।
-গ্রাম দেখার শখ এবার মিটে যাবে, আর আসতে চাইবি না।
-তোকে বলেছে। রবীন আছে, ঠিক ব্যবস্থা করবে।
-পেছনে এত কি নিয়ে এসেছিস।
-একটা আমার জামা কাপড়ের ব্যাগ, আর একটায় ক্যামেরা, আর তোর বাজি।
-এতো কি বাজি নিয়ে এসেছিস, বাজার শুদ্ধু তুলে এনেছিস নাকি।
-আমি জানি না যা, ইসমাইলকে বললাম, ওর কোন পরিচিত দোকান থেকে নিয়ে এসেছে।
-কত টাকার নিয়ে এসেছিস।
-পয়সাই দিই নি।
-তার মানে।
ইসমাইল বললো, ম্যাডাম ফিরে এসে দেবেন। ওরা এখন দোকান বন্ধ করছে।

আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। গাড়িটা যে চলছে বুঝতেই পারছিনা, কোন জার্কিং নেই, খুব স্মুথ চলছে, মিত্রার হাতটাও ভালো। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। বাইরে রোদ ঝলমল করছে, কটা বাজে, রোদ দেখে মনে হচ্ছে দুটো কিংবা আড়াইটে।
-কিরে বললি নাতো আমায় কেমন লাগছে।
মিত্রার দিকে তাকালাম, ফিচলেমি করার খুব ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু ও গাড়ি চালাচ্ছে, ওর তলপেটের অনেকটা অংশ নিরাভরণ আমার চোখ ওদিকে চলে গেলো, সুপার্ব, কামরে খেতে ইচ্ছে করছে।
-ধ্যাত।
মিত্রা ব্রেক কষলো। যেখানে ব্রেক কষলো গাড়ি সেখানেই থামলো। আমার কপাল সামনের বনেটে ধাক্কা খেলো। মাথায় হাত দিয়ে মুখ তুললাম, দেখলাম বাসু বাইক থামিয়ে নেমে আসছে, রবীন ওর পেছন পেছন। মিত্রা আমার হাত চেপে ধরেছে। কানে এলো।
-কি হলো।
-আরে ওই ছাগলের বাচ্চাটা।
-ম্যাডাম খুব সাবধানে, এখানে গাড়ি চাপা দিলে কেস খাবেন না, তবে ছাগল চাপা দিলে আপনার জরিমানা হবে। তোর আবার কি হলো।
-আর বলিস না প্রাণ হাতে নিয়ে এই সিটে বসেছি।
আমি এমনভাবে বললাম, সবাই হেসে ফেললো, চালা, পরেছি যবনের হাতে খানা খেতে হবে সাথে।
-কি বললি।
-না কিছু নয়।
-খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
ওরা বাইক স্টার্ট দিলো। মিত্রা গাড়ি চালাচ্ছে।
-খুব লেগেছে।
-একটুও না, বনেটটা আমার কপালে চুমু দিলো।
-ঠিক আছে চল গিয়ে বরফ লাগিয়ে দেবো।
-বরফ! কোথায় পাবি।
-কেনো, ফ্রিজ নেই।
-ফ্রিজ, এমনভাবে বললাম মিত্রা হেসে ফললো।
-সত্যি বল না।
-এখানে ফ্রিজ বলতে পানা পুকুরের পঁচা পাঁক।
-তুই সত্যি…..
-নিজের চোখে দেখবি চল না। অনি সত্যি না মিথ্যে।
-কি করবো বল ছাগলের বাচ্চাটা লাফাতে লাফাতে…..
-দেখ এখনো আমি বিয়ে করি নি, বাবা হই নি…..
-বিয়ে করার অত শখ কিসের, পরের বউকে নিয়ে রয়েছো, তাতেও শখ মিটছে না।
-যতই হোক পরের বউতো।
-মিত্রার গলাটা গম্ভীর হয়ে গেলো, নিজের বউ করে নে।
চুপ চাপ থাকলাম, মিত্রার চোখ সামনের দিকে, চোখে জল টল টল করছে। আমি ওর সিটে হাত রাখলাম,
-এরকম করলে এনজয়টাই নষ্ট হয়ে যাবে।
মিত্রার হাত স্টিয়ারিংয়ে একবার ডান দিক একবার বাঁদিক করছে।
-তুই ওরকম বললি কেনো।
-আচ্ছা বাবা আর বলবো না।
চকে এসে বাসু দাঁড়ালো, আমরাও দাঁড়ালাম। চা খাওয়া হলো, মিত্রা তাকিয়ে তাকিয়ে চারিদিক দেখছে, বিস্ময়ে ওর চোখ বিচ্ছুরিত, বাঁশের তৈরি বেঞ্চে বসে চা খেলাম, মিত্রা এক চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকালো, সত্যি অনি তোর কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। আমি ওর দিকে চেয়ে হাসলাম, রবীন একটু দূরে দূরে, বাসু বললো, ম্যাডাম এবার রবিন চালাক, আর মিনিট পনেরোর পথ। মিত্রা বললো কেনো আমি পারবো না। পারবেন, তবে রবিন চালাক। তাই হোক। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই কোথায় বসবি।
-আমি বাসুর পেছনে বসছি।
ওর মন পসন্দ হলো না। মুখ দেখেই বুঝতে পারছি, কিন্তু মুখে কিছু বললো না। রবিন স্টিয়ারিংয়ে বসলো। আমরা আধাঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম। বাসু মনে হয় ফোন করে সব ঠিক করে রেখেছিলো। গাড়ি থামতেই সবাই ঘিরে ধরলো। আমি বললাম বাসু ব্যাগগুলো পৌঁছোবার ব্যবস্থা করতে হবে।
-ও তোকে ভাবতে হবে না। বরং চল তোদের পৌঁছে দিয়ে আসি।
-তোর বাইকে তিনজন। মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা ঘার নাড়ছে। যাবে না। রবিন বললো ম্যাডাম আমাকে যদি ছুটি দেন কালকেই চলে আসবো, মিত্রা বললো, ছুটি মানে, তুমি কোথায় যাবে, রবীন বললো, পাশের গ্রামেই আমার আত্মীয়ের বাড়ি, তাছাড়া এখান থেকে গাড়ি আর কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না, আপনাকে পায়ে হেঁটেই….
আমি হাসলাম, ঠিক আছে যাও, কালকে সকালে চলে আসবে কিন্তু। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
-এখান থেকে মিনিট কুড়ি হাঁটতে হবে।
-তাই চল।
রাসপূর্নিমার মেলা বলে আজ এই জায়গাটা ফাঁকা ফাঁকা। না হলে এতোক্ষণ ভীড় হয়ে যেতো।
আমরা হাঁটতে আরম্ভ করলাম, সত্যি মিনিট কুড়ি লাগলো। বাসু তার আগেই বাড়িতে সব পৌঁছে দিয়েছে, কাকা ওকে জিজ্ঞাসা করেছে, এত ব্যাগ বাগিচা কার, বাসু কোন জবাব দেয় নি, চলে এসেছে, রাস্তায় আমার সাথে দেখা হতে খালি বললো, সারা পারা মনে হয় রাষ্ট্র হয়ে গেছে। তোর সারপ্রাইজ রসাতালে যাবে।
-তুই তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আয়।
-ঠিক আছে।

দুজনে মিলে খামারে এসে দাঁড়াতেই কাকা, কাকীমা, সুরমাসি ছুটে এলেন। সবাই অবাক মিত্রাকে দেখে, মিত্রা সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। কাকা চেঁচামিচি আরম্ভ করে দিয়েছে, আমি বললাম, তুমি থামো, ওর জন্য তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না, কাকীমা ছুটে গিয়ে সরবত নিয়ে এলেন, এক হুলুস্থূল ব্যাপার। মিত্রা আরাম করে বেঞ্চিতে বসেছে, পায়ে ধুলো জড়িয়ে আছে। আমি বললাম, দেরি করিস না, বেলা গড়িয়ে গেছে, হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিই, মেলায় যেতে হবে তো। মিত্রা চোখের ইশারায় বাথরুমের খোঁজ করছে, বাধ্য হয়ে বললাম, চল আমার ঘরে।

আমি ওর ক্যামেরার ব্যাগ আর জামা কাপড়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে, ও বাড়িতে গেলাম, মিত্রা আমার পেছন পেছন। আমি ওপরের ঘরে এলাম, লাইট জালালাম, মিত্রা ঘরে ঢুকেই, বললো আগে বাথরুম কোথায় বল।
-বাথরুম!
-ন্যাকা আমার তলপেট ফেটে যাচ্ছে।
-এই গ্রামের গোটাটাই বাথরুম। তুই যেখানে খুশি বসে ব্যবহার করতে পারিস।
-সত্যি বল না, অনি।
-সত্যি বলছি।
-আমি কষ্ট পাচ্ছি, তুই মজা করছিস।
-আচ্ছা আয়, আমার সঙ্গে, নিচে নেমে এসে পেছনের খিড়কি দিয়ে পুকুর ধারে এলাম, এখানে কর।
-ধ্যাত।
-তোকে তো কালকে বলেছিলাম।
-তুই মিথ্যে বলেছিলি। ওদিক দিয়ে যদি কেউ দেখে ফেলে, ওদিকটা জনমানব শূন্য, পুকুরের ধারেই খাল, যার পাশ দিয়ে বাঁধে বাঁধে এতোক্ষণ এলি।
-আচ্ছা তুই ভেতরে যা।
-কেনো।
-যা না।
মিত্রা আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো, খিড়কি দরজা ভেজিয়ে দিল। আমি ওপরে চলে এলাম, ব্যাগ গুলো ঠিক ঠাক ভাবে গুছিয়ে রাখলাম।
-অনি ।
-কি হলো।
-কোথায় তুই।
-এই তো ওপরে।
-তুই শিগগির নীচে আয়।
দৌড়ে নীচে এলাম, মিত্রা খিড়কি দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে কাঠ।
-কি হয়েছে।
ওই দেখ। আঙুল দিয়ে নিচটা দেখাল, দেখলাম একটা গিরগিটি ওর দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছে। আমি হেট করতেই গিরগিটিটা দৌড় লাগালো, মিত্রা পরি কি মরি করে আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পরলো। থর থর কাঁপছে। আমি হাসছি।
-তুই হাসছিস।
-কি করবো কাঁদবো।
-ধ্যাত।
-সিনেমায় গ্রাম দেখো, এবার অরিজিন্যাল গ্রাম দেখো।
-অনি ও অনি। কাকীমার গলা।
-চল কাকীমা ডাকছেন। হ্যাঁ যাই কাকীমা।
-সাবানটা নিয়ে নে, হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিই।
-কি খাওয়াবি।
-পান্তা আর চিংড়িমাছের টক। খাবি তো।
-হ্যাঁ। কোন দিন খাই নি তো।
-খাস নি। খাবি।
-কেমন খেতে।
-খেলেই জানতে পারবি।
ওপরে এলাম, ও ব্যাগ খুলে, ওর লিকুইড সোপ বার করলো। কাপড় খুলবো না।
-এখন নয় খাওয়া দাওয়ার পর।
-প্যান্টিটা ভিজে গেছে।
-উঃ, তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না।
-তুই আসতে বললি কেনো।
-আমি বললাম কোথায়, তুই তো নাচলি।
-খুলে ফেলি।
-খোল।
-তুই ওদিকে তাকা।
-কেনো, দেখে ফেলবো।
-উঃ, তাকা না।
-আমি পেছন ফিরলাম, মিত্রা কাপড় তুলে প্যান্টি খুললো, রাখবো কোথায়?
-ওই তো আলনাটায়।
-কেউ দেখে ফেলে যদি।
-দেখলে কি হবে।
-তুই না কিছু বুঝিস না।
-বোঝার দরকার নেই। চল।
মিত্রা কাপড়টা একবার ঠিক ঠাক করে নিলো। ওকে নিয়ে এ বাড়িতে এলাম, কারা যেনো এসেছে, আমাদের দেখলো, কাকা চেয়ারে বসে আছেন, আমরা ভেতর বাইর (বাড়ির ভেতরের উঠান) দিয়ে পুকুর ঘাটে এলাম, সুরমাসি, কাকীমা পেছন পেছন এলেন।
-পুকুরে নামবি, না জল তুলে এনে দেবো।
-পুকুরে নামবো।
সুরমাসি বললেন, ওকে বালতি করে জল তুলে এনে দে অনি, হরকা আছে কোথায় পরে যাবে। লাগবে এখন।
-লাগুক।
-তুই রাগ করছিস কেনো।
সুরমাসি হাসছেন।
-শখ হয়েছে যখন, নামুক। কিরে নামবি।
-হ্যাঁ, তুই হাতটা ধর।
-ওই নিচের ধাপিটায় উবু হয়ে বসতে পারবি তো।
-পারবো।
-দেখ ওইটুকু জায়গা, খুব স্লিপারি।
-আমি সাঁতার জানি।
আমি মিত্রার হাত ধোরলাম, মিত্রা আস্তে আস্তে নামছে।
-জুতোটা খুলিস নি।
-কেনো।
-ওটা কি জলে ভেঁজাবি।
-খুলে আসি তাহলে।
-যা।
-তুই আয়।
-আমি কি তোর সঙ্গে ওপর নিচ করবো।
-আচ্ছা বাবা আমি যাচ্ছি।

ওপরে উঠতে গিয়ে মিত্রা পা হরকালো, কাকীমা ওপর থেকে ধর ধর ধর করে চেঁচিয়ে উঠলেন, আমি কোন প্রকারে ওকে জাপ্টে ধরে টাল খেয়ে পুকুরে পরলাম, আমার হাঁটু পর্যন্ত জলে ভিজলো। ও চোখে হাত ঢেকে আছে। নীপা ওপর থেকে তার স্বরে চেঁচাচ্ছে, বুদ্ধি দেখো, নিজে পুকুরে ঠিক মতো নামতে পারে না, মিত্রা দিকে সঙ্গে করে নেমেছে। সম্বিত ফিরতে পুকুর পারে তাকিয়ে দেখলাম, অনাদি, বাসু, চিকনা, পচা, পাঁচু, সঞ্জয়। নিপা ঘাটে নেমে এসেছে। ওরা সবাই হো হো করে হাসছে, নীপা প্রথমে একচোট আমায় নিলো, তারপর মিত্রাকে আমার কাছ থেক ছিনিয়ে নিয়ে বললো, সত্যি অনিদা তোমার কোন বুদ্ধি নেই। মিত্রাদিকে নিয়ে কখনো এই পিছল ঘাটে নামে। আমি চুপচাপ। মিত্রার দিকে তাকালাম, ও চোখ মেরে হাসছে। মাথা নীচু করে, মুখ-হাত-পা ধুয়ে ঘাট থেকে উঠে এলাম।

অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কখন এলি।
অনাদি হাসছে।
চিকনা বললো, তোর সারপ্রাইজটা জব্বর দিয়েছিস, বলে চোখ মারলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/QrMYcuq
via BanglaChoti

Comments