কাজলদিঘী (একাদশ কিস্তি)

কাজলদিঘী

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

একাদশ কিস্তি
—————————

অনাদি ধরেই বললো কি হয়েছে বল।
-তুই কোথায়।
-কাজ গোছাচ্ছি।
-মানে।
-মেলার চারিদিকে নজরদারি বারালাম।
-ঠিক আছে, চিকনা কোথায়।
-ও মেলার বাইরে আছে।
-আচ্ছা। শোন তুই একবার, মিত্রার কাছে যা, ওখানে দিবাকর আছে।
ওর পেছনে পাশে, চার পাঁচজন আছে।
-তুই গিয়ে মিত্রার সঙ্গে বোস ওর সঙ্গে খেজুরে গল্প কর, আমার সম্বন্ধে যা তা বল, কালকের শ্মশানের গল্প কর, আমি দিবাকরকে এই মাত্র শ্মশানের গল্প দিয়েছি। ওর মুখটা লক্ষ্য রাখবি তাহলে সব ধরতে পারবি, ও একঘন্টার মধ্যে মেলা থেকে বেরিয়ে যাবে বলছে, ওকে যে ভাবেই হোক তুলে আনবি আমার কাছে। মিত্রা যেন একটুও বুঝতে না পারে।
-ঠিক আছে। তুই পাঁপড় ভাজা জিলিপি খাবি।
-খাব। মিত্রার জন্য নিয়ে যা। চিকনা কোথায় এখন।
-বললাম তো মেলার বাইরেটা সামলাচ্ছে।
-ওর ফোন বন্ধ, মনে হয় ব্যাটারি নেই।
-ঠিক আছে দেখছি।
বাসু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তোকে কত চিন্তা করতে হয়। এখন মনে হচ্ছে তোর প্রেম করা উচিত, বিয়ে করা উচিত নয়।
হেসে ফেললাম, কেনো।
-বিয়ে করলে বউকে সময় দিবি কখন।
-তোর বউ মেলায় এসেছে।
-এসেছে।
-দেখালি নাতো।
-সময় পেলাম কোথায়। যা ঝড় চলছে।
-মিত্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে পারতিস এক ফাঁকে।
-গেছিলাম তখন। আলাপ করিয়ে দিয়েছি।
-ভাল করেছিস।
ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রার ফোন।
-এখনো এলি না।
-আসছি। এতটা পথ হেঁটে যেতে হবে তো।
-অনাদি পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে এসেছে।
-খা।
-তুই না এলে খাব না।
-পাগলামো করিস না, ওরা মন খারাপ করবে।
-কালকে তোর শ্মশানে যাবার গল্প শুনছি।
হাসলাম।
-আচ্ছা এই মেলা ছেড়ে তোর শ্মশানে যেতে ভালো লাগলো।
-মা বাবার কথা ভেবে মনটা খুব খারাপ লাগলো, তাই চলে এলাম।
-সরি আমি না জেনে তোকে হার্ট করলাম। তুই আয়।

ফোনটা কেটে দিলাম। কিছু ভাল লাগছে না। চল স্কুল ঘরের বারান্দায় গিয়ে বসি। আমি, বাসু স্কুল ঘরের বারান্দায় বসলাম, চিকনার ফোন সরি গুরু, আমি ব্যবস্থা করেছি, তবে মনে হয় কাজ হবে না, নীপাদের নাচ শেষ হলো, ম্যাডাম গ্রীনরুমে যাচ্ছে, দিবাকর হেসে হেসে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলছে, শুয়োরের বাচ্চা আবার হাত মেলাচ্ছে, অনাদি ওর কাঁধে হাত রেখেছে, ঠিক আছে বস আর মিনিট দশেক, রাখি।
বাসু আমার দিকে তাকলো।
-কিরে আমি কি বাইরে গিয়ে বসবো।
-বোস। আমি এখানে আছি জানাবি না, তুই অনাদি আগে ফেস কর, তারপর ওকে এখানে নিয়ে আয়। আমি মোবাইল অফ করছি।
-আচ্ছা।
-সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে যা।
বাসু সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। মাথা গরম করলে চলবে না, যা হবার তা হয়ে গিয়েছে, এখন কাজ উদ্ধার করতে হবে। হঠাত চেঁচামিচির শব্দ, বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম, এই জ্যোৎস্না রাতেও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, দিবাকরের কলার ধরে হির হির করে টেনে আনছে ওরা, হয়তো দুচার ঘা দিয়েও দিয়েছে, দিবাকারের সঙ্গে জোর ধস্তা ধস্তি চলছে, চিকনার গলা শুনতে পেলাম, বেশি বাড়াবাড়ি করবি না, আমার পরিচয় তোকে নতুন করে দেবার নেই, কেটে টুকরো টুকরো করে মালঞ্চের জলে ভাসিয়ে দেবো। মাছের খাবার হয়ে যাবি।
আমার বুকটা দুরু দুরু করে উঠলো। এ কি বলছে চিকনা।
অনাদি ঠান্ডা মাথায় খালি বলছে, তোকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে চল, সব বুঝতে পারবি।

কাছাকাছি এসে অনাদি বাসুকে জিজ্ঞাসা করলো, অনি কোথায়। আমি দেখতে পাচ্ছি বাসু অনাদিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে সব বলছে, অনাদি ঘাড় নাড়ছে। অনাদি একবার স্কুল বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো। তারপর ঘাড় নাড়লো।
টেস্ট রিলিফের বাঁধের ওপর ওরা বসেছে, প্রায় আধঘন্টা ধরে কি কথা হলো বুঝতে পারলাম না, কোন চেঁচামেচি নেই, দিবাকর অস্বীকার করছে মনে হয়। বাসু এগিয়ে আসছে স্কুল বাড়ির দিকে, বুঝতে পারলাম, আমার সঙ্গে কথা বলবে, বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাসু আমায় বললো, বল তুই কি করবো।
-ও সব অস্বীকার করছে।
-হ্যাঁ।
-এক কাজ কর, ওর মোবাইলটা রেখে দে, আর আজ ওকে বাড়ি যেতে দিবি না। ওকে এখানে কোথাও নজর বন্দি করে রাখ, কাল ৯ টায় আমার ঘরে নিয়ে আয়, তারপর দেখি কি করা যায়।
-আচ্ছা।
আমার কথা মতো কাজ হলো। এক চোট চেঁচামেচি হলো। তারপর কয়েকজন দিবাকরকে নিয়ে চলে গেলো। আমি তাদের চিনতে পারলাম না, চেহারা দেখে খুব ভাল লোক মনে হচ্ছে না।
অনাদি এলো।
-তুই সত্যি মহান।
-কেনো।
-এই মোবাইলটা নিয়ে কি করবো।
-আছে অনেক কাজ আছে। সঞ্জয় কোথায়।
বাসুর ফোন বেজে উঠলো। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে বললো নীপা।
-কথা বল।
-কি হয়েছে নীপা।
-চিকনাদাকে ফোন করলাম, ধরে ছেড়ে দিল, ওখানে কিসের চেঁচামিচি হচ্ছে বাসুদা।
চিকনা মোবাইল বার করে দেখে কল হয়ে পরে আছে। এক হাত জিভ বার করে ফোন টা কাটলো।
-কই কিছু হয় নি তো।
-হয়েছে, তুমি মিথ্যে বলছো।
-সত্যি নীপা তুমি বিশ্বাস করো।
-অনিদা কোথায়। ওর মোবাইল স্যুইচ অফ কেনো।
-তা তো বলতে পারবো না, ও তো তোমাদের কাছে গেলো।
-না। অনিদার কিছু হয়েছে। চিকনাদা কাকে মারছিলো।
-চিকনা কাউকে মারে নিতো।
-না। তুমি সত্যি কথা বলো। আমি প্রচন্ড চেঁচামিচির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি এখানে তোমাদের কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। তোমরা কোথায়।
-তুমি বিশ্বাস করো।
-দেখো মিত্রাদি মন খারাপ করছে, আমার খুব খারাপ লাগছে।
-তুমি পাঁচ মিনিট সময় দাও আমরা যাচ্ছি।
-আচ্ছা, ঠিক পাঁচ মিনিট।
চিকনার দিকে ফিরে বললো, গান্ডু মোবাইলটা বন্ধ করতে পারিস না।
-সত্যি বলছি তখন উদোম কেলাচ্ছিলাম দিবাকে, অনেক দিন হাতের সুখ করি নি, খানকির ছেলের ওপর অনেক রাগ জমে ছিল, বিশ্বাস কর খেয়াল ছিল না, শুয়োরের বাচ্চার কি গরম, থানা দেখাচ্ছিল।
আমি চিকনার কথায় কান দিলাম না সঞ্জুকে বললাম, তুই আমার একটা উপকার কর, ওর মোবাইল থেকে, যা রেকর্ডিং আছে আমার মোবাইলে কপি কর।
-দাঁড়া কপি কর বললেই হবে, মালটা আগে দেখি।
অনাদি আমার দিকে তাকলো, বুঝলো দিবাকরের সেট নিয়ে আমি কি করবো, সেটটা ওর হাতে দিল।
-আরে শালা এই সেট পেল কোথা থেকে রে, এ তো ই সিরিজের মাল। ওর তো এলজির মাল ছিল। আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো, তুই জানলি কি করে ওর সেট থেকে কপি করা যাবে।
-কাল সব বলবো।
-তুই কপি করে নিয়ে আয়। অনাদি, বাসু , আমি এগিয়ে যাচ্ছি তোরা পেছনে আয়।
-আচ্ছা।
বাসুর দিকে তাকিয়ে বললাম, নীপাকে একবার ফোন কর, ওরা কোথায় আছে।
বাসু ফোন করলো বললো স্টেজের সামনে আছে।
আমরা তিনজনে এলাম, মিত্রা নীপা ছাড়াও, আরো দুচারজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমায় দেখে মিত্রা মুখটা ঘুরিয়ে নিলো, নীপা গম্ভীর কথা বলছে না।
আমি কাছে গিয়ে মিত্রার কাঁধে হাত রাখলাম, রাগ করিস না, তুইতো……
-একবারে কথা বলবিনা, মাথাটা নীচু করে নিল। তুই তোর মতো এনজয় করলি আমি আমার মতো এনজয় করলাম, দুজনে একসঙ্গে এনজয় করতে পারলাম না। ওর চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো।
আমি ওর থুতনিটা ধরে তুললাম, এইতো আমি চলে এসেছি, চল ঘুরবো। মিত্রা মাথা তুললো, ওর ভাসা ভাসা চোখের ভাষা বদলে গেলো, তোর কি হয়েছে, মুখটা এরকম কেনো।
-কোথায়।
-না তোর কিছু একটা হয়েছে।
-তুই বিশ্বাস কর।
-না তোর মুখ বলছে কিছু একটা হয়েছে।
নীপা আমার দিকে তাকালো। তারপর চিকনার দিকে। চিকনা দা।
চিকনা ত ত করছে, বিশ্বাস কর কিছু হয় নি।
-অনাদি দা।
অনাদি মুখ ঘুরিয়ে নিল।
-ওখানে ভাকু নিয়ে একটা……
ভাকু মানে, মিত্রা নীপার দিকে তাকালো।
নীপা মিত্রার কানে কানে কি বললো, মিত্রা মুচকি হাসলো।
-এখানে এসেও তোর গন্ডগোল করার ইচ্ছে জাগলো।
-না মানে…..আমরা তিনজনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি, চিকনার মালটা খেয়ে গেছে। যাক এই যাত্রায় রক্ষা পেয়ে গেলাম, সবাই ঘন্টাখানেক মেলায় মজা করে ঘুরলাম, ছোলার পাটালি, পাঁপড়, ছোলাসেদ্ধ, জিলিপি, কখনো নীপা ব্যাগ থেকে টাকা বার করে দাম মিটিয়েছে, কখনো মিত্রা দিয়েছে, আমার পারতপক্ষে কোনো খরচ হোলো না। চিকনা নীপার পেছনে সব সময় টিক টিক করে গেলো, মাঝে মাঝে সঞ্জয় আর চিকনার দ্বৈরথ হলো। মাঝে তো চিকনা খিস্তিই দিয়ে দিল সঞ্জয়কে মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো, তারপর মিত্রার অনুরোধে, চিকনা আর সঞ্জয় নীপা আর মিত্রাকে ভাকু কি জিনিষ দেখাতে নিয়ে গেলো, জুয়ার বোর্ড দেখিয়ে নিয়ে এলো।
বাড়ি ফিরলাম রাত প্রায় এগারোটার সময়, অনাদিকে বললাম, কাল সকাল সাড়ে নটায়, আসামিকে হাজির করিস, হ্যারে ওরা আবার ছেলেটাকে মারধোর করবে নাতো।
-আরে না না, ওর বাড়িতেই নিয়ে গেছে, কাল নিয়ে আসবে। তোকে ও নিয়ে ভাবতে হবে না। মাঝখান দিয়ে কালকের পার্টিটা নষ্ট হয়ে গেলো।
-কিচ্ছু নষ্ট হয় নি। কালকেই হবে। এবার পাওয়ার গেম খলবো। কালকে দেখতে পাবি।
সঞ্জুর দিকে তাকিয়ে বললাম, সব কপি করেছিস ঠিক ঠিক করে।
-হ্যাঁ।
-গুরু একটা ভুল কপি হয়ে গেছে।
-কি বল।
-শেলির সঙ্গে দিবাকরের একটা সেক্স সিন লোড হয়ে গেছে, কিছুতেই ডিলিট করতে পারলাম না।
অনাদি হেসে বললো, শালা এতোক্ষণ বলিসনি কেনো।
-বলার সময় দিলি কোথায়।
অনাদি মোবাইলটা তোর কাছে রেখে দে, অবশ্যই খোলা রাখবি, সব ফোন রিসিভ করবি, কোনো কথা বলবি না। এই ফোনের রেকর্ডিং থেকে আরো মশলা পাবো, আর কাল অতি অবশ্যই মোবাইলটা নিয়ে আসবি। অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ওরা চলে গেলো।

নীপা আজ আমাদের ঘর ছেড়ে দিয়েছে, নীপা বলেছে, ও বাড়িতে শোবে। ঘরটা টিপ টপ করে গোছানো, একটা নতুন চাদর পাতা হয়েছে, নীপা ও বাড়ি থেকে মিত্রাকেএ বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেলো, যাওয়ার সময় চোখ মেরে আস্তে করে বলে গেলো, আমারটা ডিউ স্লিপ রইলো।
-অনিদা নিচটা বন্ধ করে দিয়ে যাও।
আমি নিচে গিয়ে খিল দিলাম, সঙ্গে নীপার মাইটাও একটু টিপে, ম্যক্সির ওপর দিয়ে ওর পুশিতে হাত দিলাম।
-এই কি হচ্ছে কি, যাও না ওপরে তো তোমার জন্য আছে।
নীপাকে একটা চুমু খেলাম।
-মিত্রাদি বুঝতে পারবে।
-পারুক।
-যাঃ আজকে মিত্রাদিকে কাল আমাকে, পালা করে।
-না একসঙ্গে।
-সখ দেখো।
নীপা ছাড়তে চাইছিলো না আমি বললাম ফাঁক খোঁজো।
নীপা চলে গেলো।
আমি ওপরে এলাম, মিত্রা চুল আঁচড়াচ্ছে, আমি খাটের ওপরে বসে লক্ষ্য করছি, সেই থেক মিত্রা গরম খেয়ে রয়েছে। মুখে হাসিখুশি থাকার একটা অভিনয় করে যাচ্ছে।
-কিরে এবার নাইট গাউন পরবো, না কাপড় পরেই থাকবো।
আমি কোন কথা বললাম না।
-চুপ করে আছিস কেনো।
-কি বলবো বল।
-এখানে তুই যা বলবি তাই হবে।
আমি উঠে গেলাম, জানি মান ভাঙাতে আমাকেই হবে, কাছে গিয়ে পেছন থেকে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলাম। মিত্রার হাত থমকে গেলো, আমার মুখের দিকে কট কট করে ঘার ঘুরিয়ে তাকালো, আমার গায়ে হাত দিবি না।
ওকে আরো শক্ত করে কাছে টেনে নিলাম, কানের কাছে ঠোঁট রাখলাম, এতো রাগ করলে চলে। কতো লোক আমাদের দিকে জুল জুল করে চেয়ে আছে দেখেছিস।
-বুঝতে আর কার বাকি আছে শুনি।
-কেনো। কারা কারা বুঝতে পেরেছে।
-সবাই। এমনকি আজ তোর ওই বন্ধুটা কি যেন নাম, দিবাকর না কি, সেও কথা প্রসঙ্গে তোর সঙ্গে আমার একটা এ্যাফেয়ার আছে সেটা বলে দিলো।
আমার চোয়াল শক্ত হলো, চোখের ভাষা বদলে গেলো, মিত্রা বুঝতে পেরেছে, হাত দুটো আস্তে আস্তে ঢিলে হয়ে ওর শরীর থেকে খসে পরলো।
-কি রে বুবুন।
-না কিছু না।
মিত্রা ঘুরে দাঁড়ালো।
-কি হয়েছে বল, তুই ওর নামটা শুনে ওই রকম করলি কেনো।
-বললামতো কিছু নয়।
মিত্রা আমার গলা জড়িয়ে ধরলো, তোর কিছু একটা হয়েছে, সেই কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার পর থেকেই তোর কোনো পাত্তা নেই, তোর মধ্যে যে একটা দিলখোলা মানুষ সব সময় লুকিয়ে থাকে তাকে আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমাকে নিয়ে কোন ব্যাপার।
-না।
-তাহলে।
-পরে বলছি।
বিছানায় ফিরে গেলাম, একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিল, মিটসেফের কাছে এলাম, সিগারেটের প্যাকেটে হাত দিতেই, মিত্রা হাতটা চেপে ধরলো, চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো এখন খাবি না। প্যাকেটটা রেখে চলে এলাম। বিছানায় এসে জানলার পাল্লাটা পুরো হাট করে খুলে দিলাম, আজকে চাঁদের আলোর ঝাঁঝ অনেক বেশি, নিওন আলোকেও হার মানায়, গাছের উঁচু ডালের পাতাগুলোও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, চারিদিকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার তারস্বর ডাক এক স্বপ্নিল পরিবেশ তৈরি করেছে।
-বুবুন।
ফিরে তাকালাম।
মিত্রা ব্রা আর শায়া পরে আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে।
-একটু কাছে আয়।
বিছানা ছেড়ে উঠে ওর কাছে গেলাম।
-হুকটা খুলে দে তো।
আমি নীচু হয়ে ওর ব্রার হুকটা খুলে দিলাম, বুক থেকে ব্রাটা খসে পরলো, ও ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর নরম বুক আমার বুকে, বুকের মতো গলা উঁচু করে আমার ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে এলো, আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, খোলা চুলে একটা ক্লিপ লাগিয়েছে, হাল্কা একটা পারফিউমের গন্ধ ওর শরীর থেকে ছড়িয়ে পরছে, চোখ আবেশে বন্ধ। আমার জিভ ওর ঠোঁটের মধ্যে দিয়ে মুখে চলে গেছে, জিভে জিভে রস্বাসাদন চলছে, আমি ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি। আজ ঠিক মন চাইছে না। তবু মিত্রাকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না, ও বলাকার মতো নীল আকাশে ডানা মেলতে চায়। দেখতে গেলে জীবনে ও কিছু পায় নি। আবার সব পেয়েছে। ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরিয়ে আমার দিকে তাকালো, ওর শরীরটা ইষদ উষ্ণ, চোখ দুটো সামান্য ঘোলাটে, আমার বুকে ও ঠোঁট ছোঁয়ালো, ইশারায় বললো, চল বিছানায় যাই।

আমি ওর কথা মতো বিছানায় এলাম, ও আমাকে বিছানায় ঠেলে ফেলে দিয়ে বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
আমি বিছানা ছেড়ে উঠে গেলাম মিটসেফের দিকে, ফোনটা তুলে নিলাম। সন্দীপ।
-বল।
-সব এই মুহূর্তে ঠিক ঠাক আছে। রাত দশটা পর্যন্ত সনাতন বাবুর ঘরে কেচাল হয়েছে, তারপর ওরা হালে পানি না পেয়ে দান ছেড়ে দিয়েছে। শুনলাম, ম্যাডাম নাকি সনাতন বাবুকে যে পাওয়ার দিয়েছেন সেটা সনাতন বাবু শো করাতেই ওরা চুপ চাপ হয়ে গেছে।
-সব ঠিক ঠাক ছেড়েছিস তো।
-হ্যাঁ। আজকে মনে হচ্ছে টাইমলি বেরোবে।
-কাল এগারোটার পর একবার আসবি। লাস্ট আপডেট নেবো।
-ঠিক আছে। গুড নাইট।
-গুড নাইট।

ফোনটা রাখলাম। মিত্রা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। ও বুঝতে পেরেছে কোনখান থেকে ফোন এসেছে। আফটার অল বিজনেসটা বোঝে। ডান হাতটা মাথায় দিয়ে পাশ ফিরে রয়েছে, মাইদুটো সামান্য ঝুলে পরেছে, আমি কাছে গিয়ে মাইদুটোয় হাত দিলাম। ও একটু সরে গেলো, আমি ওর পাশে শুলাম, ও আমার বুকে উঠে এলো।
-ফোনটা অফিস থেকে এসেছিলো!
মিথ্যে কথা বলতে পারতাম। বললাম না। ঘাড় দুলিয়ে বললাম হ্যাঁ।
-কে।
-আমার একজন ইনফর্মার।
-সামথিংস রং মনে হচ্ছে। তুই খুব অফ মুডে আছিস।
ওকে কাছে টেনে নিলাম। কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম, সব বলবো তোকে, এখন একটু করে নিই।
-না। তুই কষ্ট পাবি আরি আমি আনন্দ করবো তা হয় না। সেই আনন্দটা পরিপূর্ণ নয়।
-ঠিক আছে সব বলার পরে করবি, আমাকে ফিরিয়ে দিবি না।
ও আমাকে চুমু খেয়ে বললো, তোকে কি কোনো দিন ফিরিয়ে দিয়েছি, সব কষ্টের মধ্যেও তুই যখনি ডেকেছিস, আমি চলে এসেছি।

উঠে গিয়ে মোবাইলটা নিয়ে এলাম।
ওকে পঙ্খানুপুঙ্খরূপে সব বললাম, মোবাইল থেকে রেকর্ডিংগুলো সব শোনালাম, এমনকি দিবাকরের মোবাইলে যে রেকর্ডিং কপি করেছিলাম, তাও শোনালাম। ও শুনে রুদ্রমূর্তি ধরলো, চেঁচা মেচি শুরু করে দিলো। এখুনি আমি কলকাতায় যাবো। রবীনকে ফোন কর। এতোবড়ো সাহস স্কাউন্ড্রেল গুলোর, ওরা সাপের পাঁচ পা দেখেছে, এক একটাকে লাথি মেরে দূর করে দেবো। ওরা ভাবে কি, মিত্রা বাঁজা মেয়ে। এই নিশুতি রাতে ওর গলা গাঁ গাঁ করে উঠলো, কাকারা জেগে উঠলে একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে, আমি ওর মুখ চেপে ধরলাম। ওকে থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তুই ছাড় বুবুন, সব কটাকে দূর করবো। বাধ্য হয়ে বিছানায় জোড় করে শুইয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম, রাগে ও ফুলে ফুলে উঠছে। তারপর ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো। আমার বুকে মুখ লুকিয়ে ফুলে ফুলে কেঁদে উঠছে। ওর ফোঁপানি কিছুতেই থামাতে পারছি না। আমার জন্য তোকে কত অপমান সইতে হলো। তোর এই ছোট্ট বুকে কথো ব্যাথা তুই গোপন করে আজ সন্ধ্যায় আমাকে আনন্দে ভাসিয়ে দিলি, নিজে এক কোনে পরে থাকলি কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিলি না। কেনো তুই এরকম করলি বল। আমি কি তোর কেউ নয়। আমাকে তুই কেনো জানালি না।

মিত্রা কেঁদে চলেছে চোখ বুঁজিয়ে, আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, ওর উলঙ্গ শরীরটা আজ কোন নেশা জাগাচ্ছে না। পূব আকাশে ভোরের আলোর ক্ষীণ পরশ লেগেছে।
-মিত্রা।
-উঁ।
-চ দীঘা আড়ি থেকে ঘুরে আসি।
ও আমার মুখের দিকে তাকালো। চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল, চোখের কোল দুটো কেঁদে কেঁদে ফুলিয়ে ফেলেছে।
-ওঠ, ঝপ করে কাপড় পরে নে, ঘুরে আসি, দেখবি মনটা ভালো লাগবে। খোলা আকাশের নীচে বসে অনেক কিছু সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মিত্রা উঠে পরলো। কাপড় পরে নিলো। দুজনে বাড়ির দরজা ভেজিয়ে বেরিয়ে এলাম।
-তোর মোবাইলটা নিয়েছিস।
-হ্যাঁ।
-চল।
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে, হাঁটছে, খামার পেরিয়ে। বড়মতলার কাছে এসে দাঁড়ালাম, এখনো আকাশে জ্যোৎস্না আছে, কিন্তু সূর্যের আলোও ফুটে উঠছে, আমার কাছে সব চেনা দৃশ্য, মিত্রার কাছে নয়। ও যেন সব গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে, অনাদির বাড়ি ছাড়িয়ে যখন ফাঁকা মাঠটায় এসে পরলাম, তখন পূব দিক লাল হয়েছে।
-ইস ক্যামেরাটা আনলে ভাল হোতো।
-মোবাইলে তোল।
-দাঁড়া। বলে ও পূব দিকে মোবাইলের ক্যামেরাটা ঘুরিয়ে ঠিক করলো, সবুজ ধান খেতে শিশিরের পরশ, কেউ কেউ এরি মধ্যে মাঠে নেমে পরেছে। ও প্রায় পাঁচ সাত মিনিট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছবি তুললো।
-অনি এদিকে আয়।
আমি কাছে গেলাম, তুই এটা ধর, আমি ধরলাম, ও ছুটে ধান ক্ষেতে নেমে পরলো, আমি বললাম বেশি দূর যাস নি, সবে ধানগাছগুলোর বুকে দুধ এসেছে নষ্ট হয়ে যাবে, ও বেশি দূর গেলো না, মনের খেয়ালে নানা পোজ দিলো আমি ধরে আছি। কাছে এসে আমার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে আমার গালে গাল ঘসে ক্যামেরা তাক করলো। একবার চকাত করে চুমুও খেলো। মোবাইল অফ করলো।

আবার হাঁটা, ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে শরু আইল পথে, আমরা এসে পৌঁছলাম, মিত্রা দুচারবার হোঁচোট খেলো, আমাকে জাপ্টে ধরলো, কখনো খুনসুটি করলো। আমি আমার সেই চেনা জায়গায় এলাম।
-ওআও। মিত্রার মুখ দিয়ে এক অদ্ভূত শব্দ বেরিয়ে এলো।
-কি হলো।
এতো সুন্দর জায়গা আমি আগে কখনো দেখি নি। বিশ্বাস কর বুবুন। একবার ছুটে দীঘির পারে চলে গেলো তারপর ছুটে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে আদর করে নাচতে আরম্ভ করলো, যেন ময়ূরী আকাশে কালো মেঘ দেখে পেখম তুলে নাচতে শুরু করেছে।
-তুই সে দিন এখানে বসে ছিলি।
-হ্যাঁ।
-তোর টেস্ট আছে।
-বলছিস।
-তুই পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছিস।
-দাঁড়া রেকর্ড করি।
আবার মোবাইল চালু, মিত্রা আস্তে আস্তে দূরে চলে যাচ্ছে, আমি নিম গাছের একটা ডাল ছিঁড়ে দুটো দাঁতন বানালাম। হঠাত অনি অনি চিতকারে ফিরে তাকালাম, মিত্রা রুদ্ধশ্বাসে দৌড়চ্ছে আমি দৌড়ে ওর কাছে গেলাম, ও আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে জড়িয়ে ধরলো, কামার শালের হাপরের মতো ওর বুক ওঠা নামা করছে, আমার বুকে মুখ লুকিয়েছে, হাত দিয়ে খালি ওই দিকটা দেখাল, দেখলাম কয়েকটা শেয়াল লেজ নাড়তে নাড়তে চলে গেলো।
মিত্রা তখনও আমাকে ছাড়ে নি। ওর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরা হাতের বাঁধন কেমন আল্গা হয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে।

মিত্রা….মিত্রা। ওর গালে আস্তে করে থপ্পর মারলাম। তবু ওর চোখ বন্ধ।

আমি পাঁজা কোলা করে তুলে এনে ওকে ঘাসের বিছানায় শুইয়ে দিলাম। তখনো ওর বুক ওঠানামা করছে। আমি ওর বুকে কান পাতলাম, লাবডুব শব্দের তীব্রতা একটু কমে এসেছে।

আমি দীঘিতে ফুটে ওঠা পদ্মপাতা ছিঁড়ে জল নিয়ে এলাম, ওর চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলাম, জলের স্পর্শে ও চোখ মেলা তাকালো, মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেলো, আস্তে আস্তে কানে কানে বললো, তোকে কেমন ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম বলতো, খুব আদর খেতে ইচ্ছে করছিলো। হাসলাম। ওগুলো শেয়াল। ও আবার চোখ বন্ধ করলো।
-কিরে দাঁত মাজবি না, আমি দাঁতন বানিয়ে রেখেছি।
ও চোখ খুললো, উঠতে ইচ্ছে করছে না। তুই আমাকে জড়িয়ে ধরে থাক।
-শিশিরের জলে কাপড় ভিঁজে গেলো যে।
-যাক এরকম ভেঁজা কজনের ভাগ্যে ঘটে।
-দাঁত মেজে চল একজনের বাড়িতে গিয়ে একটা সারপ্রাইজ দিই। যাবি।
-কার বাড়িতে।
-সে বলবো না। গেলে দেখতে পাবি।
-শেই শয়তানটার বাড়িতে।
-উঃ ওই নামটা করে এই মুহূর্তটা নষ্ট করিস না।
-ঠিক আছে। সরি।
দাঁতন নিয়ে দুজনে দাঁত মাজলাম। দীঘির টল টলে কাঁচের মতো স্বচ্ছ জলে মুখ ধুলাম, মিত্রার আঁচলে মুখ মুছলাম।
-কটা বাজে বলতো। মিত্রা জিজ্ঞাসা করলো।
-আমি মোবাইলের ঘরিটা দেখে বললাম, ছটা দশ।
-মাত্র।
-আমরা তো এখানে অনেকক্ষণ এসেছি।
-হুঁ।
-কখন বেরিয়েছি বাড়ি থেকে।
-চারটে হবে।
-আজ দুজনে সারারাত ঘুমোলাম না। কি করবি কিছু ভাবলি।
-সব ভেবে রেখেছি। ঘরে চল সব জানতে পারবি।
-ঠিক আছে চল।

অনাদির বাড়ির কাছে এলাম। সেই এক দৃশ্য আনাদির বাচ্চাগুলো খামারে ধুলো মেখে খেলা করছে, কিন্তু আজকেও ও দুটোকে দেখতে ভালো লাগছে, মিত্রা আমার হাত দুটো চেপে ধরে বললো, দেখ বাচ্চা দুটো কি কিউট।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
আজ অনাদিকে ডাকতে হলো না। কাঞ্চন বেরিয়ে এসে এক মাথা ঘোমটা দিয়ে আমাকে আর মিত্রাকে একটা ঢিপ করে প্রণাম করলো। ভেতরে চলো ওকে ডেকে দিচ্ছি, এই তো ভোরে ঘুমলো কোথায় কি ঝামেলা হয়েছে।
মিত্রা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। ওর চোখের ভাষা বুঝতে পারলাম। কাঞ্চন, অনাদির স্ত্রী।
ও কাঞ্চনকে জড়িয়ে ধরলো।
-ওই দুটো অনাদির বাচ্চা।
এইবার ওকে ধরে রাখা মুস্কিল হলো ও ছুটে গিয়ে বাচ্চা দুটোকে কোলে তুলে চটকাতে লাগলো। বাচ্চা দুটো প্রথমে একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে, তারপর ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো।
মিত্রা ওদের ছেড়ে দিলো। ভেতর থেকে কাকার গলা পেলাম, কে গো বৌমা।
-অনিদা।
কাকা চেঁচামিচি শুরু করে দিলেন। আমি খামর থেকেই চেঁচিয়ে উঠলাম, তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না।
-ভেতরে আয়।
-যাচ্ছি।
কাকা পায়ে পায়ে খামারে বেরিয়ে এলো। এই মেয়েটা কে, চিনতে পারলাম না।
-এ হচ্ছে সেই।
কাকা এগিয়ে এসে মিত্রার গালে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
-বেশ মিষ্টি রে অনি।
-তোমার পছন্দ।
-খুব ভালো।
মিত্রা এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। আমায় ইশারায় জিজ্ঞাসা করলেন নমস্কার করবো, আমি বললাম না।
কাঞ্চনের দিকে তাকিয়ে বললাম একটু চা বসাও, আর কত্তাকে ডাকো।
কাঞ্চন ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে অনাদি বেরিয়ে এলো চোখ মুছতে মুছতে।
-কিরে, নিশ্চই ম্যাডামকে তোর পাগলামোর সঙ্গী করেছিলি।
মিত্রা হাসছে।
মাথা নীচু করে ওদের বাড়ির বারান্দায় এলাম।
মিত্রা দড়ির দোলনা দেখে অবাক। আমাকে বললো, একবার বসিয়ে দে একটু দুলি।
-আচ্ছা চল। ওকে বসিয়ে দিলাম, ও বাচ্চা মেয়ের মতো দুলছে, না দেখা জিনিষগুলো প্রাণ ভরে লুটে নিতে চাইছে।
বাইকের আওয়াজ পেলাম, বাইরে তাকালাম, চিকনা আর বাসু। আমি পায়ে পায়ে খামারে বেরিয়ে এলাম।
-কি রে এতো সকালে।
চিকনা খিস্তি দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু মিত্রার দিকে চোখ পরতে থেমে গেলো। সারারাত নিজেও ঘুমোবি না, কাউকে ঘুমোতেও দিবি না।
ওর দিকে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম।
-সকাল বেলা শ্মশানের হাওয়াও পর্যন্ত খাওয়ালি।
মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছি। বাসু হাসছে। অনাদি বেরিয়ে এলো। ওদের দুজনকে দেখে একটু অবাক হলো।
-কিরে।
-কি আবার, সারা মহল্লা খুঁজে শেষে এখানে এসে পেলাম। তাও মেডামের শাড়িটা দীঘা আড়ি থেকে চোখে পরলো বলে। শালা সকালের শ্মশানটাও দেখা হয়ে গেলো ওর জন্য।
-শ্মশানে গেছিলি কেনো? আবার কে মারা গেলো?
-কেউ মরে নি নিজেই মরে গেছিলাম, সঙ্গে বাসুকেও প্রায় মেরে দিয়েছিলাম।
-কেনো।
-অনিকে জিজ্ঞাসা কর।
অনাদি আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি মাথা নীচু করে আছি।
বাসু অনাদিকে বললো, কাল সারারাত ওর দুজনে ঘুমোয় নি, মিত্রা ভীষণ চেঁচামিচি করেছে, নীপাও ঘুমোয়নি। ওদের সব কথা শুনেছে, ও ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে, ওরা বেরিয়ে আসতে, নীপা চিকনাকে ফোন করেছিলো, ভীষণ কান্নাকাটি করেছে, বাধ্য হয়ে চিকনা ওই রাতে আমার কাছে আসে, আমি প্রথমে গাড়িটা লক্ষ্য করি না গাড়িটা ঠিক আছে, তখনি বুঝলাম, ওরা চলে যায় নি, এখানেই কোথাও আছে, প্রথমে দুজনে মিলে হারুর কালায় যাই ওখান থেকে, শ্মশানে, তারপর দীঘা আড়ি, ওখানে এসে মিত্রার শাড়িটা লক্ষ্য করে চিকনা, আমায় দেখায় আমি বলি হ্যাঁ, ওখান থেকে তোর বাড়িতে এলাম।

মিত্রা দোলায় দুলছে, বাচ্চাদুটোর সঙ্গে মনে হয় ভাব জমিয়ে নিয়েছে, দুটোই দেখছি ওর কোলে।
-চল ভেতরে চল।
-দাঁড়া নীপাকে একবার ফোন করি। যে মেয়েকে কোন দিন কাঁদতে দেখি নি, তাকে কাল কাঁদতে শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। চিকনা বললো।
-মিত্রাকে কিছু বলিস না, ও খুব আপসেট আছে।
-তোকে আর জ্ঞান দিতে হবে না, ওগুলো বুঝতে ঘটে বুদ্ধি লাগে না।
হেসে ফেললাম।
-হাসিস না।
চিকনা নীপাকে ফোন করে সব জানালো।
আমরা অনাদির বাড়ির দাওয়ায় বসলাম।
চা এলো সঙ্গে মুড়ি নারিকেল। মিত্রা দোলনা ছেড়ে আমাদের পাশে এসে বসলো। চিকনা একবার তাকালো মিত্রার দিকে।
-কাল খুব ভালো ঘুম হয়েছে মনে হচ্ছে, চোখের কোল দুটো ফোলা ফোলা।
মিত্রা মাথা নীচু করলো। আপনাদের খুব কষ্ট দিলাম।
-আপনি নয়, তোমাদের খুব কষ্ট দিলাম। চিকনা বললো।
মিত্রা হেসে ফেললো, ফ্যাকাসে হাসি।
-হাসলেন বটে কিন্তু কালকে পুকুর ঘাটে যখন পরে যাচ্ছিলেন, তারপর অনির দিকে তাকিয়ে যে হাসিটা ঝেড়েছিলেন সেরকম নয়। চিকনা এমন ভাবে কথা বললো মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
-এইবার মিললো।
-আমরা মরে যাই নি ম্যাডাম। অনি যেমন আপনার, আমাদেরও।
-জানি। আমি কালকের সব ঘটনা শুনলাম ওর মুখ থেকে।
-আমাদের খপ্পরে পরা খুব সহজ, বেরোনো খুব কঠিন, আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না। অনাদির দিকে ঘুরে তাকিয়ে, হ্যাঁরে মুড়ি কি বাড়ন্ত।
অনাদি এমন ভাবে তাকালো চিকনা হেসে ফেললো।
-খিদে লেগেছে।
-খা না, টিনটা বসিয়ে দেবো।
-ম্যাডাম লজ্জা পাবে। গাঁয়ের ছেলে খাওয়া তো দেখে নি, বিড়াল ডিঙোতে পারবে না।
মিত্রা হাসলো।
-ওদিকের খবর।
-রাতে সঞ্জয়ের জিম্মায় চলে গেছে। সব ঠিক আছে। ম্যাডাম যখন বলবে হাজির করে দেবো।
-সঞ্জয়ের জিম্মায় মানে। অনাদি বললো।
-কাল রাতে কিছু একটা হয়েছিল, সঞ্জু আমায় ফোন করলো, আমি বললাম, চেলাকাঠ দিয়ে পিঠ গরম করে দে, তারপর তোর ওখানে নিয়ে গিয়ে রাখ।
-এখন কোথায়।
-সঞ্জয়ের বাড়িতে।
-ঠিক আছে।
-তোরা কি চিন্তা করলি। অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
-আমি ভেবেছি, মিত্রাকে একনো ইনজেক্ট করি নি, বাড়িতে গিয়ে বোঝাবো। হ্যারে মোবাইলটায় ফোন এসে ছিলো।
-বহু। এই তো ভোর বেলা পর্যন্ত। কানের কাছে খালি টেঁ টেঁ।
-নিয়ে আয়।
-ওইটা দেখেছিস। চিকনা বললো।
-হারামী। কথাটা বলেই অনাদি জিভ কাটলো। মিত্রা মাথা নীচু করে হাসছে।
-হট কেক। চিকনা বললো।

অনাদি ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ফোনটা নিয়ে এলো। আমার হাতে ফোনটা দিলো। মিত্রা বাসুকে কি যেনো ইশারা করলো, বাসু উঠে পরলো, মিত্রাও উঠে পরলো, ওরা একটু দূরে চলে গেলো। আমি ফোনটা অন করে কল লিস্ট দেখলাম, চম্পকদা, সুনীতদা, অতীশবাবুর ফোন। এই তিনটে নাম দেখলাম সেভ করা আছে, বাকিগুলো বুঝতে পারলাম না, অনাদিকে বললাম, একটু কাগজ কলম নিয়ে আয়। অনাদি নিয়ে এলো আমি নাম্বারগুলো নোট করলাম। আনাদিকে বললাম ওকে সাড়ে নটায় নিয়ে আয়। আমি দশটায় মিটিং কল করছি অফিসে।
-কোন অফিসে।
-কলকাতায় আমার অফিসে।
-যাবি কি করে।
-যাব না এখান থেকেই টেলি কনফারেন্সে করবো। ইচ্ছে ছিল সকলের সামনে ওর মুখোশ খুলবো, তা হবে না।
-সে তোকে চিন্তা করতে হবে না, আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। ওকে এবার গ্রাম ছাড়া করবো। অনাদি বললো।
আমি ওকে না বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু বললাম না। মিত্রা ওখানে কি করছে বলতো বাসুর সঙ্গে।
-তোর কি। চিকনা বললো।
-কি করছে জানিস।
-কি।
-নিশ্চই কোনো খেলনার দোকান খুঁজছে এই সাতসকালে। অথবা ক্যাটবেরি কিংবা চকলেট।
-মনগড়া কথা বলিস না।
-তুই ওদের কথা শুনে এসে আমায় বল।
-যদি না হয় কি দিবি।
-তোকে অনেক কিছু দেবো, ধরে রাখতে পারলে জীবনে আর কিছু করতে হবে না।
চিকনার চোখ চক চক করে উঠলো, ঠিক।
-হ্যাঁ।
চিকনা উঠে গেলো, আমি অনাদিকে কাল রাতের সমস্ত ঘটনা সংক্ষেপে বললাম, অনাদির চোখ ভীষণ কঠিন হয়ে গেলো, তোর ধৈর্য আছে অনি, তোর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শালাকে এমন শাস্তি দেবোনা, এবার তুই দেখবি।
-না অনাদি, ছোট থেকে আমরা একসঙ্গে বড় হয়ে উঠেছি, আমরা একে অপরের বন্ধু, ওকে শোধরাবার ব্যবস্থা করতে হবে, চেষ্টা করে দেখি না।
-তুই মহান হতে চাইছিস।
-না। জীবনে কিছু পায় নি, আমার থেকে তুই এটা ভাল জানিস, তোর বাড়িতে এসে পান্তা খেয়ে অনেক দিন দুজনে মিলে এক সঙ্গে স্কুলে গেছি, কেনো, কাকার পয়সা ছিল না, না আমার বাবার কিছু কম ছিলো, আজ আমার কাছে সবাই ভালো, আরে দিবাকরতো পরের ছেলে, কাকাকে আমি তো কোন দিন পর ভাবি নি। থাক, চলে আয় ঠিক ওই সময়, আমি ওর সঙ্গে আগে একটু কথা বলে নেবো। অনাদি মাথা নীচু করে আছে।
-আমায় ক্ষমা করিস, আমি না জেনে তোকে…..
-ছার ও সব কথা, একটা সিগারেট দে।
অনাদি উঠতে যাচ্ছিলো, চিকনা এলো। গুরু তুমি অন্তর্যামী।
-সিগারেটের প্যাকেটটা আগে বার কর। অনাদি বললো।
-দিলি তো মাঝখানে টুকে।
-প্যাকেটটা আগে বার কর অনি চাইছে।
-ও অনি, আগে বললি না কেনো।
চিকনা সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলো। একটা সিগারেট নিয়ে ধরালাম, বল।
-তোমার কথাই ঠিক। তুমি কি করে জানলে একটু শেখাও।
-মানুষকে ভাল বাসতে হবে, নিঃস্বার্থ ভাবে।
-বিদ্যেটা শিখতে হবে।
-বাসু কি বলছে, বেলায় ব্যবস্থা করে দেবে, ম্যাডাম বলছে এখুনি, এই নিয়ে ক্যাচাল।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, ওকে ডাকলাম, মিত্রা কাছে এলো, বাসু যা বলছে, ঠিক বলছে, চল অনেক কাজ। ও যখন সাড়ে নটার সময় আসবে, তখন নিয়ে আসবে।
-ঠিক।
-আমিতো বলছি।
বাসু হাসছে।
আমরা ফিরে এলাম, আমাদের দূর থেকে আসতে দেখে, নীপা এগিয়ে এলো, খামারে এসে দাঁড়িয়েছে, চোখের কোলে কে যেন কালি লেপ্টে দিয়েছে, কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মেয়েটার বয়স যেন দশ বছর বেরে গেছে। ছুটে এসে মিত্রার বুকে মুখ গুঁজে ফুলে ফুলে কেঁদে উঠলো। আমি পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে আছি। মোবাইলের ঘড়িটা দেখলাম, সকাল ৭.৩০ বাজে। নীপা কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে, বুঝতে পেরেছে কিন্তু কি ঘটেছে বুঝে উঠতে পারছে না। মিত্রা নীপার মুখটা তুলে বললো, আমার একটুতে মাথা গরম হয়ে যায়, তোর অনিদার মাথাটা বরফের মতো ঠান্ডা, তাই ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছি, তোর কোন চিন্ত নেই, দেখিস আর কয়েক ঘন্টার মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। মিত্রা নীপার চোখ মুছিয়ে দিলো, এখন আর ও বাড়িতে যাবো না, কাকারা কিছু জানে নাতো, নীপা মাথা দুলিয়ে বললো না। ভালো, তুই একটু চা নিয়ে আয়।
-আর কিছু খাবে না।
-কি করেছিস।
-আলু ভেজেছি, একটু মুড়ির সঙ্গে মেখে দেবো।
-যা তাই নিয়ে আয়।

ওপরে এলাম। মিত্রাকে আমার প্ল্যানের সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম, ওর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে, তুই কি বলছিস।
-আমি যা বলছি তাই কর।
নীপা ফোন তুলে নিলো, ভয়েস অন করে রেকর্ডিং চালু করে দিলাম।
সনাতন বাবু হ্যালো করে উঠলেন।
-অফিসের কি খবর।
-ম্যাডাম আমাকে রেহাই দিন, আমি আর পারছি না, এরা কিছুই মানছে না।
-ঠিক আছে। আমি টেলি কনফারেন্সে আজ এগারোটার সময় মিটিং করবো, ওদের সবাইকে সাড়ে দশটার মধ্যে অফিসে হাজির হতে বলুন, সবাইকে আমার ঘরে বসাবেন, আর শুনুন সব রেকর্ডিং করবেন।
-ঠিক আছে ম্যাডাম।
-আমি ঠিক এগারোটার সময় ফোন করবো। আপনার মোবাইলে।
-আচ্ছা ম্যাডাম।

নীপা মুড়ি চা নিয়ে এলো, আমার দিকে কিছুতেই তাকাচ্ছে না, আমি খাটে পা ঝুলিয়ে হাতের ওপর হেলান দিয়ে একটু পেছনে হেলে বসে আছি। মিত্রা আমার পাশে খাটের ওপর, নীপা মুড়ির বাটিটা খাটের ওপর রেখে আমার পায়ের কাছে বসে, আমার কোলে মাথা রেখে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো, প্রথমটায় ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পরে ছিলাম, আমায় ক্ষমা করো অনিদা।
আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম, কেনো।
-আমি তোমাকে না জানিয়ে চিকনাদাকে ফোন করেছিলাম, তুমি বিশ্বাস করো আমার মাথাটা তখন কোনো কাজ করছিল না।
-দূর এ সব নিয়ে এতো কেউ ভাবে।
-না গো মিত্রাদি ওই রকম রেগে যেতে পারে, আমি ভাবতেই পারি নি।
-রাগটাও তো মানুষের একটা ধর্ম।
-কই তুমি তে কোনো দিন রেগে যাও নি।
-আমি তো বোকা। বোকারা কখনো রাগতে পারে।
এমনভাবে কথাটা বলে ফেললাম, এই সিচুয়েশনেও নীপা কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেললো, মিত্রা হো হো করে হেসে বিছানায় গড়িয়ে পরলো।
-তুই হাসছিস না কাঁদছিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-কেনো হাসছি।
-আমি ভাবলাম তুইও কাঁদছিস।
নীপা উঠে গিয়ে মিত্রার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো।
-হ্যাঁরে তোর বাথরুম পায় নি।
-পেয়েছে, তুই মুখ পাত।
-উঃ মিত্রাদি তুমি না।
-তোর অনিদা যেরকম, সেরকম উত্তর না দিলে বিপদ আছে।
-না কালকের পর তোকে……
-বুবুন খারাপ হযে যাবে।
-নীপা চোখ পিট পিট করছে, তার মানে।
-কি বলবো।
-প্লিজ অনি।
-ঠিক আছে।
-তাহলে ওটা করবি।
-হ্যাঁ। না না……..
-ওরা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো।

ওরা সবাই ঠিক সময়ে এসেছে, দিবাকরও এসেছে, আমার মুখে কোনো বিকার নেই। আমার এই ঘরে এখন লোক দাঁড়াবার জায়গা নেই, আরো দু’চারজন নতুন মুখ এসেছে, আমি তাদের চিনতে পারলাম না। বুঝলাম অনাদির চাল। অনাদি কারুর সঙ্গেই আলাপ করিয়ে দিলো না। দিবাকর এসেই কাঁদুনি গাইতে আরম্ভ করেছে, আমি ওকে ভাল মুখে সব কথা স্বীকার করে নিতে বললাম, ও কিছুতেই স্বীকার করবে না, বার বার একি কথা অনাদি ওকে প্ল্যান করে ফাঁসিয়েছে। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম ,মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।

দিবাকরের ফোনটা বেজে উঠলো, আমি চিকনার হাত থেকে সেটটা নিলাম, ভয়েস অন করে দিবাকরের হাতে দিয়ে বললাম, তোর হবু বস ফোন করেছে, রেসপন্স কর। নাহলে চিকনার কালকের কথাটা মনে রাখিস, একেবারে বেগড় বাই করবি না, খুব সাধারণ ভাবে, যে ভাবে গত চারদিন কথা বলেছিস সেই ভাবে বলবি। চিকনা রেকর্ডিংটা টিপে দে।
চিকনা রেকর্ডিংটা অন করে দিলো।
-হ্যালো হ্যালো।
-বলুন। গলাটা গম্ভীর, আমি দিবাকরের দিকে তাকালাম, হাতের ইশারা করলাম।
-আরে তুমি কোথায়, কালকে থেকে কতবার তোমায় ফোন করেছি, কি বলবো। লেটেস্ট খবর কি বলো।
-খুব একটা ভালো নয়।
আমি দিবাকরের দিকে কটকট করে তাকালাম।
-কেনো।
-ওরা কাল রাতে এখান থেকে চলে গেছে। কোনো ট্রেস করতে পারছি না।
-ইস তারমানে দীঘা ফিগা পালিয়ে গেছে বলো।
-হবে হয়তো।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো, আমি ওর মুখ টিপে ধরলাম।
-শোনো তুমি আজ কোলকাতায় আসছো তো।
-না। এখানে একটা কাজ পরে গেছে।
-এ মা, এই কিছুক্ষণ আগে ম্যাডামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আমি সব বললাম, উনি তো ভয়ে কাবু, আরে কিছু হোক ছাই না হোক সম্মানের একটা ব্যাপার আছে তো, ওই রকম একটা ফালতু ছেলের সঙ্গে ঢলানি। এই ফাঁকে আমি আমার কাজ গুছিয়ে নিলাম, বাধ্য হয়ে উনি সব মেনে নিলেন। আমি অনির জায়গায় তোমায় বসাবো, তুমি যে কি উপকার করলে। আরে হুঁ হাঁ করছো না কেনো।
দিবাকর আমার দিকে তাকালো, আমি ইশারা করলাম, কথা তাড়াতাড়ি শেষ করতে।
-আপনার কথা শুনছি। ঠিক আছে কিছুক্ষণ পর আপনাকে ফোন করছি।
-এনি নিউজ।
-রাখছি।
সঞ্জয় ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কেটে দিয়ে রেকর্ডিংটা সেভ করলো।
মিত্রা মুখ নীচু করে বসে আছে।
-এবার বল দিবাকর। তোর কিছু বলার আছে, দিবাকর হাঁউ মাউ করে কেঁদে উঠলো।
চিকনা ওকে প্রায় মেরেই দিচ্ছিলো, সঞ্জয় ধরে ফেললো।
-বল, তোর যদি কিছু বলার থাকে।
দিবাকর ছুটে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরলো, আমায় বাঁচা অনি, এরা পার্টির সব ওপর তলার লোক, আমায় আস্ত রাখবে না।
আমি ওদের দিকে তাকালাম। ঘরের সব হো হো করে হাঁসছে। অনাদি একে একে সবার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলো।
ওদের লোকাল কমিটির ভদ্রলোক বললেন, আপনার কথা অনেক শুনেছি, আজ চাক্ষুষ দেখলাম। সত্যি আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়। অনাদির কাছে আপনার সমস্ত ঘটনা শুনেছি। আমাদের সৌভাগ্য আপনি ম্যাডাম একসঙ্গে আমাদের এই অজগ্রামে পায়ের ধুলো দিয়েছেন।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, যেখানে আপনি দাঁড়িয়েছেন, ওইখানে আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম।
ভদ্রলোক অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন, কোথায় দাঁড়াবেন ঠিক করতে পারছে না।
-কটা বাজে।
-এগারোটা পাঁচ।
দিবাকরের দিকে তাকালাম, তুই চুপচাপ থাকবি না মুখ-হাত-পা বেঁধে ওখানে ফেলে রাখবো।
দিবাকর কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো, আমি তোর পায়ের কাছে বসবো।
নীপা আমার পাশে এসে বসলো, ও এই অনিদাকে দেখে নি। মুখ চোখ শুকিয়ে কাঠ। ও ঠিক ঠাহর করতে পারছে না, ব্যাপারটা কি ঘটছে।
মিত্রা এবার তোর খেলা শুরু কর।
ঘরে পিন পরলে আওয়াজ হবে না। সবাইকে বললাম চুপ চাপ থাকবেন। কোন কথা বলবেন না। মিত্রা যা যা বলেছি খুব ঠান্ডা মাথায়, কখনই উত্তেজিত হবি না। মনে রাখবি এ্যাডমিনিস্ট্রেসনের কাছে মা-বাবা-ভাই-বোন-আত্মীয় স্বজন বলে কিছু নেই, ব্যাপারটা এইরকম আই এম করাপ্ট বাট গুড এ্যাডমিনিস্ট্রেটর।
মিত্রার চোখে মুখের চেহারা বদলে গেলো। এটা সবাই লক্ষ্য করলো।
-দিবাকর কোনো আওয়াজ করবি না, যদি বাঁচতে চাস। তোর মোবাইলটা কোথায়?
চিকনা এগিয়ে দিলো। দিবাকরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ইশারায় কাজ করবি।
-তুই যা বলবি তাই করবো।
-ঠিক আছে।

মিত্রা ডায়াল করতেই ও প্রান্ত থেকে সনাতন বাবুর গলা ভেসে এলো।
-হ্যাঁ ম্যাডাম সবাই চলে এসেছেন।
-সবার নাম নোট করেছেন।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-সুনীত বাবু, কাগজের খবর কি।
-সব ঠিক আছে।
-আমার কাছে সে রকম কোনো খবর নেই, বরং কাগজের বাইরের খবর নিয়ে আপনারা বেশ মাতামাতি করেছেন।
-না ম্যাডাম।
-সময় মতো কাগজ বেরোচ্ছে।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-কিন্তু আমার কাছে খবর আছে, গত কাল ছাড়া প্রতিদিন কাগজ সেকেন্ড ট্রেন ধরেছে।
-কে বলেছে ম্যাডাম আপনি একবার তার নাম বলুন।
-সনাতন বাবু।
-হ্যাঁ ম্যাডাম, সুনীত বাবু যা বলছেন তা ঠিক নয় । গতকাল একমাত্র ঠিক টাইমে কাগজ গেছে। আর যায় নি।
-আপনি কি করছিলেন।
-এ্যাকচুয়েলি ম্যাডাম…….
-আপনাকে কাজের জন্য পয়সা দেওয়া হয়।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-আপনাকে যে পাওয়ার দিয়ে এসে ছিলাম তা ইউটিলাইজ করেছেন।
-এরা ঠিক……
-সুনীত বাবু।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-কজনকে চাকরির লোভ দেখিয়েছেন।
-একজনকেও না।
আমি দিবাকরের ফোন থেকে রিং করলাম। সুনীতদার ফোন বেজে উঠেছে।
-ম্যাডাম আমার একটা ফোন এসেছে।
-এই নাম্বার থেকে।
-চুপচাপ।
-কি সুনীতবাবু চুপচাপ কেনো, নম্বরটা ঠিক বললাম। কথা বলছেন না কেনো।
-হ্যাঁ, ম্যাডাম।
-আপনার মামা ব্যাপারগুলো জানেন।
-না।
-ওকে ফোন করুন, আর বলুন আমাকে এখুনি ফোন করতে। আর শুনুন আপনি আমার টেলি কনফারেন্স শেষ হলে অফিস থেকে বেরিয়ে যাবেন, শুক্রবার আমার ঘরে মিটিং, আপনি উপস্থিত থাকবেন, সেদিন যা বলার বলবো। এদের সামনে আর বললাম না।
-ম্যাডাম, আমার কিছু কথা বলার ছিলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/TXuAyOa
via BanglaChoti

Comments