কাজলদিঘী (দশম কিস্তি)

কাজলদিঘী

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

দশম কিস্তি
—————————

ঘাটের দিকে তাকালাম, নীপা মিত্রাকে নিয়ে শেষ ধাপিতে দাঁড়িয়ে। আমি বাড়ির ভেতরে এলাম, আমার পেছন পেছন ওরাও চলে এলো।
বাইরের বারান্দায় এসে সবাই বসলাম, অনাদি বললো, তোর পেটে পেটে এতো কিছু ছিলো আগে জানাস নি কেনো।
-জানালে মজাটাই নষ্ট হয়ে যেতো।
-তা যা বলেছিস। তুই ম্যাডামকে পুকুরে নামাতে গছি, কাকীমা বারণ কোরলো, আমি বারণ কোরলাম, বললাম বালতি করে জল তুলে দিচ্ছি, না আমি নামবো, নাম। মাঝখান থেকে…….
চিকনা চোখ মেরে হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোরা সবাই চলে এলি ওখানটা সামলাচ্ছে কে।
-লোক আছে।
-তোরা খবর পেলি কি করে বলতো।
-চিকনা প্রথমে খবর পেয়েছে।
-চিকনা।
-হ্যাঁ।
-বাসুর দোকানের ছেলেটা ফোন করেছিলো, চিকনাকে।
-তোরা।
-চিকনা নীপাকে নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে বাইক নিয়ে বেরোল দেখে, বাসুকে ফোন করলাম, কি হয়েছে রে। ও সব বললো। সবাই চলে এলাম।
-গান্ডু। বাসুর দিকে তাকিয়ে বললাম। বাসু হাসছে।
-চিকনা আমার পা ধরে ফেললো, গুরু আর একবার বলো।
-কি।
-ওই যে যেটা বললে।
-কি বলবি তো।
-ওই যে বাসুকে বললে না।
-ধ্যাত।
-আর একটাতো এখনো বলি নি। বাসু বললো।
-বাসুর দিকে কট কট করে তাকালাম। বাসু হাসছে।
অনাদি বললো, কি রে বাসু।
-ওটা এখন বলা যাবে না।
-বলতেই হবে।
-না।
চিকনা বাসুকে দুহাতে জাপ্টে ধরলো, পাঁচু পচা ওর প্যান্টের বোতাম খুলতে আরম্ভ করছে, সঞ্জয় বাসুকে কাতাকুতু দিচ্ছে, বাসু মাটিতে পরে গিয়ে ছট ফট করছে, ওর প্রাণ যায়, বুঝলাম বাসু আটকে রাখতে পারবে না, সে এক হুলুস্থূলুস কান্ড। বাধ্য হয়ে বাসু অনাদিকে কানে কানে বলে দিলো। অনি ওই কোম্পানীর একজন মালিক। অনাদি ছুটে এসে, আমাকে কোলে তুলে নাচতে শুরু করেছে, ওদের পাগল প্রায় অবস্থা দেখে, কাকা ওদিক থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন, ওরে তোরা করছিসটা কি বলতো, তোদের বয়স দিনে দিনে বারছে না কমছে। অনাদি আমাকে মাটিতে নামিয়ে রেখে, কাকার কাছে ছুটে গেলো, কানে কানে কাকাকে বলতেই, কাকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, আবার বসে পরলেন। নীপা ভেতর থেকে ছুটে এসেছে, কি হয়েছে গো চিকনা দা। মিত্রাও নীপার পেছন পেছন এসেছে, তার পেছনে কাকীমা, সুরমাসি। চিকনা নীপার কানে কানে বললো খবরটা। নীপা ছুটে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো। কানে কানে বললো তোলা থাকলো। আমি হাসলাম, তারপর ছুটে গিয়ে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু খেতে আরম্ভ করলো। কাকা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ওরে ও হচ্ছে নীলকন্ঠ।

আমি কাকার কাছে গিয়ে প্রণাম করলাম, তোমার অপারেশনের দিন হয়েছে।
-আমি জানি রে জানি। নাহলে তুই ওই সময় আমাকে ছেরে যেতিস না।
মিত্রা এবার ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে, ওর চোখে খুশির হাওয়া। ও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো, কাকাকে প্রণাম করলো। কাকা আমাদের দুজনকে বুকে জরিয়ে ধরলেন।
কাকীমা, সুরমাসি ব্যাপারটা ধরতে পারেন নি। তবে কিছু একটা ঘটেছে, সেটা জানতে পারলেন।
অনাদি মিত্রার কাছে গিয়ে বললো, এর জন্য আমরা কালকে একটা পার্টি দেবো।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
পান্তা খাওয়া নিয়ে নীপার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বাক বিতন্ডার পর মিত্রা হাসতে হাসতে বললো, নীপা আমি অনিকে বলেছিলাম, ওটা খাবো। নীপা মিত্রার কথা শুনে ব্যাপারটায় ইতি টানলো, তবু বলতে ছাড়লো না, তুমি আমাদের বাড়িতে প্রথম এলে, তোমায় গরম ভাত না খাইয়ে পান্তা খাওয়াবো। মিত্রা হাসলো, আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি। এখন তো থাকবো কয়েক দিন।
-তাই।
-হ্যাঁ। এসেছি ওর ইচ্ছেয়, যাবো আমার ইচ্ছেয়।
পান্তা খেতে বসলাম। মিত্রা বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেলো, তারপর সুরমাসির দিকে তাকিয়ে বললো, আর নেই। সুরমাসি লজ্জা পেয়ে গেলো, অভ্যাস নেই মা, বেশি খেলে শরীর খারাপ করবে। মিত্রা হেসে ফেললো।
খাওয়া শেষে আমি উঠে বাইরের বারান্দায় চলে এলাম, অনাদিরা বসে চা খাচ্ছে, কোন ফাঁকে মিত্রা চা করে দিয়ে গেছে, বারান্দার ঘরিতে দেখলাম, চারটে দশ। আনাদির পাশে বসে বললাম, মিত্রা এক পেটি বাজি নিয়ে এসেছে। তুই সব ষড়যন্ত্র করেই ব্যাপারটা ঘটিয়েছিস।

বিশ্বাস কর, কাল শ্মশানে বসে মিত্রার সঙ্গে কথা হলো, ও আসতে চাইলো, বললাম আমি তো চশমা আনতে যাবোই তুই চলে আয়। বাজির ব্যাপারটা আমি আনতে বলেছি। কেনো? ছোট বেলায় এই মেলাতেই বাজি ফাটানোর জন্য কত কথা শুনেছি, তাই মিত্রাকে আনতে বলেছিলাম, এখানকার জন্য কিছু রেখে দে, বাকিটা মেলায় নিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে ফাটা।

সকলে চুপ করে গেলো।

অনাদি চুপ করে আছে। না জেনে তোকে হার্ট করে ফেলেছি।

-দূর পাগল। আমি এক সহজে হার্ট হই না। তবে বাঁচতে পারতাম না।

-ঠিক আছে ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই হবে। চিকনা।

চিকনা কাছে এলো। অনাদি ওকে সব বুঝিয়ে দিলো।

-হ্যাঁরে যেতে হবে তো।

-মিত্রা, নীপা গেলো কোথায়।

-ও বাড়িতে। পচা বললো।

-কোনদিক দিয়ে গেলো।

-পেছন দিক দিয়ে।

-হ্যাঁরে নীপা নাচছে না কি করছে যেন।

চিকনা বললো হ্যাঁ।

-কটায় আরম্ভ।

-বাঙালীর কথা ৬টা বলেছে, সাতটায় শুরু হবে।

-শেষ হবে কখন।

-রাত একটা ধরে রাখ।

-শোব কখন।

-শুতেই হবে তোকে।

আমি চিকনার কথা শুনে হেসে ফেললাম। নীপা বারান্দা থেকে আমার নাম ধরে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। আমি পচার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখতো, কেনো চেঁচাচ্ছে। পচা গুম হয়ে ফিরে এলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, কি হলো। তোর জন্য ঝার খেলুম।

-আচ্ছা তোরা কিছু বলতে পারিস না।

-আমরা।

-কেনো।

চিকনা হাসছে।

-হাসছিস কেনো।

-এখানে যে কটাকে দেখছিস, সেগুলো ছাড়া, সবাই কম বেশি ওর কাছে ঝাড় খায়, দিবাকরকে তো একদিন থাপ্পরই কষিয়েছিলো।

-কেনো।

-সে অনেক ব্যাপার।

-অনাদি গ্রামসভা ডেকে মিটমাট করে। নাহলে তো দিবাকরকে ও গ্রামছাড়া করে দিতো।

-আনাদি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললো, এখনি এই সব কথা আলোচনা করতে হবে। থাক না।
-থাম তো তোরা। বাসু খিঁচিয়ে উঠলো।
-আচ্ছা দাঁড়া আমি ঘুরে আসছি।

আমি ওপরে গেলাম। নীপা, মিত্রা দুজনে শাড়ি পরেছে, এত সুন্দর লাগছে, চোখ ফেরাতে পারছি না। আমাকে দেখেই নীপা বললো, এই প্যান্ট জামাটা পরে ফেলো। আমি একটু আসছি। নীপা বেরিয়ে গেলো। আমি আজ কোন কথা বললাম না। মিত্রার দিকে তাকালাম, দারুন মাঞ্জা দিয়েছিস, আজ রাতে তোকে চটকাবো।
এখন চটকাস না, প্লিজ সাজগোজটা নষ্ট হয়ে যাবে।
-দে কোনটা পরতে হবে।
-খাটের ওপর আছে।
-হঠাৎ হৈ হৈ শব্দ।
-কি হলো বলতো।
-ও তুই বুঝবি না।
আমি কোন কথা না বলে প্যান্টটা খুললাম, মিত্রা এগিয়ে এলো,
-একদম হাত দিবি না, নীপা এখুনি চলে আসবে,
-আসুক আমার জিনিসে আমি হাত দেবো।
খাটে বসে, জিনসের প্যান্টটা পরলাম, সেদিন মিত্রা যেটা কিনেছিলো, গেঞ্জিটাও লাগালাম। খারাপ লাগছে না, আসতে পারি। নীপার গলা।
-আসুন।
ঢুকেই ফস করে আমার গায়ে কি ছিটিয়ে দিলো।
-ইস এটাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিস। কে দেখবে বলতো।
-দেখার অনেক লোক আছে। চলোনা মেলায়। নীপা বললো।
-তাড়াতাড়ি করো। ওরা বেচারা আমাদের জন্য বসে আছে। মেলায় ওদের অনেক কাজ।
-তুই যা পাঁচ মিনিটের মধ্যে যাচ্ছি। মিত্রা ভুরুতে শেষ টান দিচ্ছে।
আমি নিচে চলে এলাম, চারিদিকে সেন্টের গন্ধ ম ম করছে। ওই জন্য তোরা তখন চেঁচাচ্ছিলি।
-তুই জানিস অনি, মেয়েটা আজ আমাদের মারবে। একটু ভালো করে কান পাত, শুনতে পারবি, নাম ধরে ধরে কেমন ডাকছে।
-কে আছে ওখানে।
-তুই চিনতে পারবি না, শান্তনু বলে একটা ছেলে আছে।
-রথ কখন বেরোবে।
-এই সাতটা নাগাদ।
-অনেক দিন রথের দড়িতে হাত দিই নি, চিকনা ঠাকুরকে একটু মিষ্টি কিনে দিস।
-কেনো তুই যাবি না।
-আমি হেসে ফেললাম।
-মিত্রা, নীপা নীচে নেমে এলো। ওদের চোখের পাতা আর নড়ছে না। সবাই অবাক হয়ে ওদের দেখছে। চিকনা আমার হাত ধরে দাঁতে দাঁত চিপে বললো, অনি, আমি ম্যাডামের বডিগার্ড হবো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি কোথায় থাকবো।
নীপা দেখে ফেলেছে।
-চিকনাদা কি বলছে গো অনিদা।
-তোমরা দারুন মাঞ্জা দিয়েছো তাই।
নীপা একবার কট কট করে চিকনার দিকে তাকালো। চিকনা ইশারা করে দেখালো, মেলায় গিয়ে গলাটা কাট। নীপা হেসে ফললো।
মিত্রা আমার পাসে এসে বসল। ঠিক আছে তো।
আমি হাসলাম।
-চল। আমরা তো রেডি। আমার ব্যাগ দুটো নিয়ে যেতে হবে।
-কিসের ব্যাগ।
-ক্যামেরা আর, সাজগোজের।
-কেনো।
-আমি সিডি বানাবো।
-ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে।
-কেনো কারেন্ট নেই।
-মেলায় হ্যাচাক পাবি। কারেন্ট পাবি না।
-ও অনি থাক না। অনাদি বললো।
-দেখেছো অনাদি ও আমাকে কেমন করে।
-ঠিক আছে চলুন ম্যাডাম আপনার কোন অসুবিধে হবে না, সব ব্যবস্থা করে দেবো।
-চিকনা, মিত্রা আর নীপাকে নিয়ে তুই যা।
-আমি! চিকনা বললো।
-হ্যাঁ।
-না।
-তুই যা। আমি বরং ব্যাগ বই।
-ওরা আবার গেলো কোথায়।
-ভেতরে গেলো।
-সত্যি অনি তোর ধৈর্য্য আছে। বাসু বললো।
-আরো নিদর্শন পাবি, চল একবার মেলায়, দেখতে পাবি।
-অনিদা কি বলছে গো আনাদি দা। নীপা বললো।
-কিচ্ছু না।
আমি মিত্রাকে বললাম, তুই অনাদির বাইকের পেছনে নীপাকে সঙ্গে করে চলে যা।
মিত্রা কিছুতেই বাইকে উঠবে না।
অগত্যা অনাদিকে বললাম, তোরা এগিয়ে যা।
-হ্যাঁরে ট্রলি পাঠাবো।
-যাবে।
-আমার বাড়ির সামনে থেকে যাবে।
-দূর না থাক, তোরা যা, আমি হেঁটে যাচ্ছি।
অগত্যা ওরা বেরিয়ে গেলো।
আমি বাসু আর মিত্রা হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
বাসুর বাইক পাঁচু চালিয়ে নিয়ে গেছে।

সন্ধ্যে হয় নি, তবে বেশি দেরি নেই, ঘরির দিকে তাকালাম, পাঁচটা পাঁচ। প্রায় আধ ঘন্টার পথ। তার মানে মেলায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। মিত্রাকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি, এইটা বড়মতলা, ওই যে সেই পেয়ারা গাছ। ওটা তাঁতী পারা, ওটা চন্দ্রের পারা, ওই দিকটা হাঁড়ি পারা, ওই যে দূরে বনটা দেখছিস, ওইটা দীঘা আড়ি। মিত্রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো।
-কাল আমায় নিয়ে আসবি।
-আসবো।
-তোর মুখ থেকে গল্প শুনেছি এতদিন, এবার চাক্ষুষ দেখবো। হ্যাঁরে কতোক্ষণ লাগবে যেতে।
বাসুর দিকে তাকালাম, হ্যাঁরে বাসু, এভাবে হাঁটলে কতোক্ষণ লাগবে।
-আধঘন্টা।
-আমি বললে বিশ্বাস করতিস না।
-তুই সব সময় হেঁয়ালি করিস তাই বিশ্বাস করতাম না।
বাসু হাসলো।
-হ্যাঁগো বাসু, জানোনা তোমার বন্ধুটিকে। আমি দশ বছর ওর সঙ্গে মিশছি আমি জানি।
দীঘা আড়ির কাছে আসতে একটা হৈ হল্লা শুনতে পেলাম, মিত্রাকে বললাম, ওই দূরে আলোর রোশনাই দেখতে পাচ্ছিস।
-হ্যাঁ।
-ওইটা মেলা।
-এতোটা যেতে হবে এখনো।
-হ্যাঁ।
-মেলায় গিয়ে একটা ঠান্ডা খাওয়াস।
-ঠান্ডা!
-বল সেটাও পাওয়া যাবে না। কঁত কঁত করে খালি জল গিলতে হবে।
-ঠিক আছে আপনি চলুন ব্যবস্থা করে দেবো। বাসু বললো।
-দেখ, তোর মতো ঢেপসা নয়।
বাসু হাসলো।
আমি ওর হাতটা একটু চিপে দিলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো।
মেলার কাছাকাছি এসে, সন্ধ্যে হয়ে গেলো। আমি টর্চ জাললাম, মিত্রা আমার হাত শক্ত করে ধরলো।
-উঃ।
-কি হলো।
-পায়ে কি জড়িয়ে গেছে।
মিত্রা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে, আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমি ওর পায়ে টর্চের আলো ফেললাম, দেখি একটা খড়ের টুকরো, নীচু হয়ে জুতোর ফাঁক দিয়ে খড়ের টুকরো বার করলাম। বাসু হাসছে। তোকে নিয়ে আমার বড় জ্বালা।
-কি করবো, আমি ইচ্ছে করে জড়িয়েছি।
ঠিক আছে চল। মিত্রা আমার বাম হাতটা চেপে ধরে আছে, ওর সুডৌল বুকের স্পর্শ পাচ্ছি। আস্তে করে বললাম, সামনে বাসু আছে।
-থাক।
-কি ভাবছে।
-ভাবুক। এরকম অন্ধকার রাস্তায় এলি কেনো।
-তোর জন্য লাইট পাবো কোথায়।
-অনাদিকে বল, ও তো পঞ্চায়েত।
শেষের কথাটা বাসুর কানে গেলো। বাসু ঘুরে একবার হাসলো। ম্যাডাম দেখছেন তো আমরা কি ভাবে বেঁচে আছি।
-এই অন্ধকারে অনি কালকে একা শ্মশানে ছিলো।
-ওরে বাবা।
-কি হলো।
বাসু আবার থমকে দাঁড়ালো।
দেখ পায়ে কি ঢুকেছে।
আমি আবার ওর পায়ের কাছে বসলাম, চোরকাঁটা। শাড়ির পাড়টা চোর কাঁটায় ভরে গেছে। ওকে কিছু বললাম না, চল এসে গেছি, মেলায় গিয়ে ব্যবস্থা করছি।
-কি বলবি তো।
-উঃ পা ঝারিস না। এগুলো বার করতে সময় লাগবে।
-বলনা কি আছে।
-চোর কাঁটা।
বাসু ফিক করে হাসলো। এই অন্ধকারেও মিত্রার মুখটা দেখতে পেলাম, পাকা আপেলের মতো রং।
মেলার মুখে ওরা সবাই দাঁড়িয়েছিলো। আমরা যেতেই চিকনা বললো, নীপার হুকুম, ম্যাডামকে গ্রিনরুমে নিয়ে যেতে হবে।
আমি বললাম, তুই নিয়ে চলে যা।
-তুইও চল। মিত্রা বললো।
-আমি ওই মহিলা মহলে গিয়ে কি করবো। তুই সেলিব্রেটি, দেখনা ওখানে গিয়ে মালুম পাবি।
মিত্রা এমনভাবে আমার দিকে তাকালো, বাসু চিকনা পর্যন্ত হেসে ফেললো।
-ঠিক আছে চল, হ্যাঁরে চিকনা আর কে কে আছে।
-ওই সব মিউজিশিয়ান মেক-আপ ম্যান এই সব।
-মিত্রার ক্যামেরার ব্যাগ কোথায়।
-ওখানে, নীপার জিম্মায়।
-কয়েকটা পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে আয় না।
-চল সব ব্যবস্থা আছে।
-তুই কি রাক্ষস। মিত্রা বললো।
-কেনো।
-এই তো এক পেট ভাত গিলে এলি।
-ভাত নয় পান্তা। এতোটা যে হাঁটালি।
-আমি হাঁটালাম কোথায়, তুইতো হাঁটালি।
-তুই চিকনার বাইকের পেছনে বসলেই হাঁটতে হতো না। তার ওপর উপরি বোনাস, দুবার পা ধরালি।
-অনি খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি, তুই যা নয় তাই বলছিস।
আমাদের দুজনের কথা-বার্তায় চিকনা বাসু হাঁসতে হাঁসতে প্রায় মাটিতে গড়িয়ে পরে।

স্টেজের পাশে, গ্রিনরুম, চিকনা পর্দা সরিয়ে নীপা বলে চেঁচাতেই নীপা ছুটে এলো। মিত্রাকে হিড় হিড় করে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলো। আরে থাম থাম, শাড়িতে পা জড়িয়ে উল্টে পরে যাবো, কে কার কথা শোনে, নীপা আজ হাতের চাঁদ পেয়েছে। আমি আমের আঁটি, আমে দুধে মিশে গেছে। আঁটি গড়াগড়ি খাচ্ছে। কি আর করবো, পকেট থেকে সিগারেট প্যাকেট বার করে চিকনাকে একটা দিলাম, বাসুকে একটা দিলাম, নিজে একটা ধরালাম। একটা ছেলে একটা স্প্রাইটের বোতল নিয়ে এসে হাজির, বাসুর দিকে তাকালাম, এটা কি।
-ম্যাডামের জন্য।
-তোর কি মাথা খারাপ।
-কেন।
-ও কি একা খাবে নাকি।
-তাহলে ।
-এখুনি হুকুম করবে। আর নেই, ওদের জন্য নিয়ে আয়।
-তাহলে।
-আগে স্টক দেখ কত আছে। তারপর পাঠাবি।
-ম্যাডাম বললো ঠান্ডা খাবে।
-এমনি সাদা জল নিয়ে আয়।
-তুই শালা একদম……. বাসু বললো।
চিকনা খিল খিল করে হেসে ফেললো। বেশ জমেছে মাইরি।
বাসু অগত্যা ছেলেটিকে বললো, কটা বোতল আছে।
-বড় বোতল গোটা কুড়ি হবে।
-ঠান্ডা হবে তো।
-বরফ দেওয়া আছে।
-ছোট বোতল কি আছে রে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
-থামস আপ, স্প্রাইট, পেপসি……
-একটা স্প্রাইটের ছোট বোতল নিয়ে আয়।
ছেলেটি চলে গেলো।

এখান থেকেই বুঝতে পারছি মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত। সত্যি কথা বলতে গেলে আজ ও-ই এই মেলার সেলিব্রিটি। অনেক বড় বড় আর্টিস্ট আমাদের কাগজে স্থান পাওয়ার জন্য সম্পাদককে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যায়। আর আজ ও যেচে এই অজ পাড়াগাঁয়ের একটা মেলায় এসেছে। একটা ফোন করলেই কালকের কাগজের ফ্রন্ট পেজে একটা কলম লেখা হয়ে যাবে। কিন্ত কেউ জানেই না ও এখন এখানে। আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম, ও বেশ সামলাচ্ছে, কেউ হাত মেলাচ্ছে ওর সঙ্গে, কেউ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছে, কেউ জড়িয়ে ধরছে। নীপা খুশিতে ডগমগ, ওর মাইলেজ আজ অনেক বেড়ে গেছে।

-বাসু দা নিয়ে এসেছি। দেখলাম আর একটা ছেলে।
-তুই।
-ও গিয়ে বললো, অনেক লাগবে তাই।
-ভাল করেছিস।
-যা, ওই ভদ্রমহিলাকে গিয়ে দিয়ে আয়। বাসু দেখিয়ে দিল।
ছেলেটি ভীড় ঠেলে ওর কাছে পৌঁছতেই মিত্রা গেটের দিকে তাকালো। বুঝলাম ও কিছু বলছে ওদের, তারপর এগিয়ে এলো।
-বাসু ঠেলাটা বোঝ এবার।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
মিত্রা এদিকেই এগিয়ে আসছে, আমি মিটি মিটি হাসছি। কেছে এসেই, ওর প্রথম কথা, তোর মতো বেআক্কেলে ছেলে আর দেখি নি।
-কেনো, আমি কি দোষ করলাম।
-আমি কি একা একা খাবো।
-এখানে তোর জন্য অনেক কষ্টে একটা বোতল জোগাড় করা হয়েছে।
-সবার জন্য পারলে আন নাহলে আমার চাই না।
-কি বাসু বাবু, পালস বিটটা দেখেছো।
মিত্রা আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে।
-ঠিক আছে তুই খা, ওদের জন্য আনছে।
-না সবার জন্য আনুক তারপর খাবো।
-তাহলে আমি খাই, বলে ছেলেটির হাত থেকে বোতলটা নিলাম, মিত্রা ছোঁ মেরে আমার কাছ থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিল, তুইও খাবি না। এটা চিকনাকে দে।
-চিকনা তুই খা। তোর ভাগ্য ভালো। আমার কোমরে চিমটি পরলো, আমি উ করে উঠলাম।
ছেলেটিকে বললাম, কটা বোতল আছে রে।
-গোটা পঞ্চাশ হবে।
-সবগুলো নিয়ে আয়। ঠান্ডা তো।
-হ্যাঁ, বরফের পেটিতে আছে।
-যা বাবা, বাঁচা।
-চিকনা, বোতলটা শেষ করে আমাদের টিমটাকে একটু খবর দে।
চিকনা হাসছে।
-তারপর ম্যাডাম, বলুন কেমন বুঝছেন।
-জানিস বুবুন সত্যি এখানে না এলে খুব মিস করতাম।
-একটা ছোট্ট থ্যাঙ্কস যদি এ পোড়া কপালে পরতো।
-দেবো এক থাপ্পর। দেখছো বাসু তোমার বন্ধুকে, খালি টিজ করবে।
-এটা টিজ হলো।
-তাহলে কি হলো, প্রেম হলো।
চিকনা হাসতে গিয়ে বিষম খেলো, মিত্রা ওর দিকে এগিয়ে গেলো, বাসু হাসছে, চিকনা মিত্রাকে খক খক করে কাশতে কাশতে কাছে আসতে বাধা দিচ্ছে, ইশারায় বলছে কিছু হয় নি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো, ব্যাপারটা এরকম, তোর জন্য দেখ কি হচ্ছে।
চিকনার বিষম থামলো। ছেলেটি একটা আইসক্রিমের গাড়ি নিয়ে এসে হাজির।
-এটা কি রে।
-এর মধ্যেই তো আছে।
-ভাল করেছিস। আমি খাবো না, চিকনা আমার জন্য পাঁপড় আর জিলিপির ব্যবস্থা কর।
-আমিও খাবো। মিত্রা বললো।
-এটাও কি সবার জন্য।
-হলে ভালো হয়।
-ঠিক আছে আগে জল খা।
-ওদের ডাকি।
-ডাক।
মিত্রা নীপা বলে ডাকতেই নীপা ছুটে এলো।
মিত্রা বললো, ওদের ডাক, কোল্ড ড্রিংকস খাবে।
নীপা আমার দিকে তাকালো, সেতো অনেক লোক।
-তোরা যারা পার্টিসিপ্যান্ট তাদের ডাক।
-সেওতো তিরিশ জনের ওপর।
-তোমায় পাকামো করতে হবে না, মিত্রাদি স্পনসর করছেন, পারলে মেলার সবাইকে খাওয়াতে পারেন।
-অনিদা খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
-তুই ওর কথায় কান দিস না, ও ওই রকম।
নীপা ছুটে ভেতরে চলে গেলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করতেই দেখি সন্দীপের ফোন। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি আসছি দাঁড়া। ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম। বাসুও আমার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো। তুই রাখ আমি তোকে রিংব্যাক করছি।

মেলা থেকে একটু দূরে চলে এলাম, একটা কলরোল কানে ভেসে আসছে, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, চারিদিকে আলোর চাদর বিছিয়ে রেখেছে, কে বলে অন্ধকার, খেতের আল ধরে সোজা চলে এলাম টেস্ট রিলিফের ছোট বাঁধে, বাসু আছে, জায়গাটা মেলা থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরে, এখানে মেলার আওয়াজ ম্রিয়মান, বাসুকে বললাম, দেখতো আমার ফোনে রেকর্ডিংটা কোথায় আছে, বাসু বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে, বললো দে দেখিয়ে দিচ্ছি। আমি ভয়েস মুড আর রেকর্ডিং মুড দেখে নিলাম। সন্দীপকে ফোন করলাম।
-হ্যাঁ বল ।
-তুই এখন কোথায়।
-আমার বাড়িতে।
-মেলায় ঘুরে মজমা নিচ্ছ।
-তুই জানলি কি করে।
-এখানে ব্রডকাস্টিং হচ্ছে।
-তাই নাকি।
-তাহলে বলছি কি করে তোকে। ম্যাডাম তোর সঙ্গে আছে। তুই একটা প্লেবয় ওদের ফ্যামিলির দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছিস।

-ওদের ফ্যামিলিতে প্রবলেম আছে এ খবর জানাজানি হলো কি করে।
-সুনীতদা রটাচ্ছে।
-বাঃ, ইনফর্মারটা বেশ গুছিয়ে খবর পাঠাচ্ছে বল।
-হ্যাঁ। করিতকর্মা ছেলে, ওকে নাকি চিফ রিফোর্টার বানাবে সুনীতদা।
-তাই।
-অফিসের খবর বল।
-আজ সনাতন বাবুর ঘরে তুমুল হট্টগোল হয়েছে।
-কারা করেছে।
-চম্পকদা লিড করেছে, সুনীতদা আর ওর চেলুয়াগুলো ছিল।
-পুরোনো কারা কারা আছে।
-এখন বোঝা মুশকিল। সমুদ্রের ঢেউ-এর মতো সকলে সুনীতদার শিবিরে ভীড়ে গেছে।
-তাই।
-হ্যাঁ। তুই গেলি গেলি ম্যাডামকে সঙ্গে নিলি কেনো।
-কি হয়েছে বলবি তো।
-ম্যাডামের সঙ্গে তোকে জড়িয়ে হুইসপারিং ক্যাম্প চলছে, তোকে ফোটাবার ধান্দা। তুই হচ্ছিস চম্পকদা আর সুনীতদার পথের কাঁটা।
-হ্যাঁ সেতো সেই দিন থেকে যেদিন মিত্রার ডাকা মিটিংয়ে ওদের ঝেরেছিলাম।
-ম্যাডামের সঙ্গে তোর সম্পর্ক কিরে অনি।
-তোর জেনে লাভ।
-বলনা। জানতে ইচ্ছে করছে, আমার চাকরি যায় যায়, কালকে আমাকে শোকজের নোটিস ধরাবে শুনতে পাচ্ছি।
-কেনো।
-এখনো জানি না। তবে পর্শুদিনের এডিটোরিয়াল পেজে একটা ভুল খবর ছাপা হয়েছিল।
-ওই পেজের দায়িত্বে কে আছে।
-অশোক।
-তাহলে তোকে কেনো শোকজ করবে।
-নিউজটা আমি করেছিলাম।
-ভুল নিউজ করলি কি করে। কপি কোথায়।
-খুঁজে পাচ্ছি না। নিউজটা ভুল নয়, অনেক পুরোনো।
-ছাপা হলো কি করে।
-সেটাইতো আমি বুঝতে পারছি না।
-ইনফর্মার ছেলেটি কে, নাম জানতে পেরেছিস।
-আমাদের পরিচিত কেউ নয়।
-থাকে কোথায়।
-তোদের গ্রামেই থাকে মনে হচ্ছে।
-নাম বল।
-তুই আমাদের প্রেসে অতীশবাবুকে চিনিস।
-না। কোনদিন প্রেসে আমাকে যেতে দেখেছিস।
-ঠিক। অতীশবাবু ছেলেটির পিসেমশাই।
-ও।
-কি বলেছে।
-সব কি জানতে পারছি। তবে তোরা ওখানে আছিস, ঘোরা ঘুরি করছিস সেই নিয়ে একটা কেচ্ছা।
-ম্যাডামের ক্ষতি হচ্ছে এতে। আমি বললাম।
-ছাড়তো ওরা বড়লোক, তোর মতো দুচারটে ছেলেকে ওরা কেপ্ট হিসাবে রাখে, তারপর প্রয়োজন ফুরালে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, কোটি কোটি টাকার মালিক ওরা।
-ঠিক বলেছিস। আমি এতটা বুঝি নি। ম্যাডাম আস্তে চাইলো তাই নিয়ে এলাম।
-বোকাচোদা।
-সত্যি আমি বোকাচোদা।
-গান্ডু।
আমার ভীষণ ভয় করছে রে সন্দীপ চাকরি গেলে খাবো কি।
-দাঁড়া তুই ধরে রাখ। আমার একটা ফোন এসেছে, কিছু নতুন নিউজ পাবো।
-ঠিক আছে।

আমি ধরে রইলাম, বাসু আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ও কিছুই বুঝতে পারছে না, তবে সামথিংস রং এটা বুঝে নিতে ওর অসুবিধে হচ্ছে না। যতই হোক ও একজন ব্যবসায়ী। থট রিডিংটা ও জানে।
-হ্যাঁ। শোন।
-বল।
ছেলেটার নাম দিবাকর মন্ডল। ও অতীশবাবুর শালার ছেলে, পড়াশুনায় বেশ ভালো, রেজাল্টও ভাল। বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি থেকে বাংলায় এমএ করেছে।
-তোর ইনফর্মার কে।
-সুনীতদার ঘরেই কাজ করে।
-ঠিক ঠিক দিচ্ছে তো না এডিটোরিয়াল পেজের মতো হবে।
-তুই এ ভাবে বলিস না, তোর কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি।
-বল।
-সুনীতদা ওর বায়োডাটা নিয়ে আজ সনাতন বাবুর সঙ্গে ঝামেলা করেছে, ওকে আজই এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে হবে।
-সনাতন বাবু কি বলছে।
-ম্যাডাম এলে সব হবে, বলে এড়িয়ে গেছেন।
-কাগজ বেরোচ্ছে।
-গত সাতদিনে এক লাখ সার্কুলেশন পরেছে।
-কেনো।
-ডিউটাইমে বেরোয় নি।
-সনাতন বাবু কি করছে।
-সনাতনবাবুকে মানলে তো।
-ও।
-আর দুজন নতুন এসেছে কিংশুক আর অরিন্দম বলে। যেহেতু ম্যাডামের এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ওদের কাছে আছে, তাই কেউ কিছু বলে ওঠার সাহস পাচ্ছে না, তবে ওরা এক সাইড হয়ে গেছে।
-পার্টিগত দিক থেকে কোনো ফর্মেসন।
-হ্যাঁ একটা হয়েছে। তবে এখনো প্রকাশ্যে নয়।
-তোকে যেখানে যেতে বলেছিলাম, গেছিলি।
-গেছিলাম, কিছু কাজ হয়েছে। সেই জন্য তো এখনো পার্টি ইনভলভ হয় নি ফর্মেসনও হয় নি। তুই এলে তোর সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা ঠিক হবে।
-তুই আজকের লেটেস্ট নিউজ আমায় দে যত রাতেই হোক। তোর আজ কি ডিউটি।
-নাইট।
-গুড। তুই এখন কোথায়।
-ময়দানে প্রেস ক্লাবের লনে।
-প্রেস ক্লাবে ব্যাপারটা চাউর হয়েছে নাকি।
-আমার হাউসের বোকাচোদা গুলো আছে না। কম পয়সায় মাল খেয়ে বাওল করেছে।
-ঠিক আছে। ছেলেটার নাম কি বললি, দিবাকর মন্ডল।
-হ্যাঁ তুই মালটাকে খুঁজে বার কর। শুয়োরের বাচ্চা এক নম্বরের খানকির ছেলে।
-খিস্তি করিস না।
-খিস্তি করছি সাধে, একটা ছেলের জন্য হাউসটার আজ সর্ব্বনাশ হতে বসেছে।
-ঠিক আছে ঠিক আছে। রাখি, রাত একটার পর তোকে ফোন করবো।
-না। আজ কাগজ ছাড়তে ছাড়তে দেরি হবে।
-ট্রেন ধরাবি কি করে।
-এই কদিন ফার্স্ট ট্রেন ধরছে না।
-ঠিক আছে।
রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। বাঁধের ওপর ঘাসের ওপর বসে পরলাম। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। বাসুর দিকে তাকালাম।
-অনাদিকে খবর দেবো।
ওর দিকে হাত দেখিয়ে বললাম না।
ও আমার পাশে বসে আমার কাঁধে হাত রাখলো।
-অফিসে কোনো গন্ডগোল।
মাথা নারলাম।
-দিবাকরের ব্যাপারে কি বলছিলো।
আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না। আমায় একটু একা থাকতে দে। তুই চলে যা। মিত্রা খুঁজলে বলবি, আমি একটু ঘুরতে গেছি। আমি এখানেই থাকবো, না হলে ওই স্কুল ঘরে।
আচ্ছা।

বাসু হন হন করে চলে গেলো। আমি পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম। অনেকক্ষণ ভাবলাম, একবার উঠে গিয়ে সামনের একটা চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে চলে এলাম, পাশ থেকে দুচারজন হেঁটে চলে গেলো। এটুকু আমার দৃঢ় বিশ্বাস খাতা কলমে পাওয়ার আমার হাতে, কোম্পানীর সম্বন্ধে আমারও কিছু বলার থাকতে পারে, হিমাংশুকে একটা ফোন করবো, না থাক। আমারও পছন্দ অপছন্দ বলে কিছু থাকতে পারে, এই কদিনে যা ঘটলো তাহলে কি সব মিথ্যে, মিঃ ব্যানার্জী, অমিতাভদার বাড়িতে আমার ঘরে দাঁড়িয়ে যা যা বলেছেন, তা অভিনয়, মিত্রা আমার শরীরে শরীর মিশিয়ে মিঃ ব্যানার্জীকে বাস্টার্ড বললো, সেটাও অভিনয়, না আমি মনে হচ্ছে মনে মনে দুর্বল হয়ে পরছি, এ সব ফালতু চিন্তা করছি, মিত্রা জোর করে আমায় কোম্পানীর শেয়ার কিনিয়েছে, সত্যি যদি তাই হতো তাহলে আমার পেছনে মিত্রা ১৫০ কোটি টাকা খরচ করতো না, তাও আবার সাদা কালো মিশিয়ে। আমি চেষ্টা করলেও সারা জীবনে এত টাকা ইনকাম করতে পারবো না। একটা গুড নিউজ আমার মালিকানার খবর এখনও ওরা জানতে পারে নি। আমি যদি কোন ড্রস্টিক স্টেপ নিই মিত্রা নিশ্চই বাধা দেবে না। তবু মন মানছে না, সন্দীপ ঠিক কথা বলেছে, ওদের পয়সা আছে, প্রয়োজন ফুরালে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, তবু জীবনে অনেক মানুষ দেখেছি, আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।

কাঁসর ঘন্টা বেজে উঠলো, রথ বের হচ্ছে, খুব ইচ্ছে করছিলো, কিন্তু ভালো লাগলো না, বাজি ফাটছে, মিত্রার আনা বাজি পোরানো হচ্ছে, সত্যি ছোট সময়ে এই বাজি ফাটাবার জন্য কতো আগ্রহ ছিলো, উনা মাস্টার এই মেলার প্রেসিডেন্ট ছিলো, কাকা সেক্রেটারি, একটা বাজি চেয়েছিলাম বলে একটা থাপ্পর জুটেছিল, তারপর থেকে আর কোনদিন বাজি ফাটাবার নাম মুখে আনিনি, লোকে ফাটিয়েছে, আমি দেখেছি, অনাদিরা বাজি ফাটাবার কথা বললে বলেছি আমার ভয় করে।

দিবাকর মন্ডল আর আমার বন্ধু দিবাকর মন্ডল কি এক ব্যক্তি, এটা আমাকে জানতে হবে, কাকে দিয়ে খবরটা নেবো, তিনটে ছায়া মূর্তি আমার পাশে এসে দাঁড়ালো, চমকে তাকালাম, অনাদি, বাসু, চিকনা। ওরা আমার পাশে এসে বসলো। ভাবলাম ওদের কিছু বুঝতে দেবো না। ক্যাজুয়েল থাকার চেষ্টা করলাম। ওদের দেখে হাসলাম।
-কিরে তোরা এই সময়। ফাংশন আরম্ভ হয়েছে।
কোন কথার উত্তর নেই। চোখগুলো সব চিতা বাঘের মতো জ্বলছে। আমি এই চাঁদনী রাতেও ওদের পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
-কিরে কথা বলছিস না কেনো। মিত্রা কোথায়?
-পায়ের তলাটা দেখেছিস। অনাদি বললো।
আমি দেঁতো হাসি হেসে অনাদির দিকে তাকালাম, বিকেলের দেখা অনাদি আর এখনকার অনাদির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য, নিচের দিকটা একবার দেখে নিয়ে অনাদির চোখে চোখ রাখলাম, গনগনে আগুনের কয়লার টুকরো।
-কেনো।
-এই টুকু সময় কটা সিগারেট খেয়েছিস।
-হ্যাঁ শেষ হয়ে গেছে। চিকনা একটা সিগারেট দিবি।
-তুইতো এতো সিগারেট খাস না।
-হ্যাঁ খাই না, আজ খেতে ভালো লাগছে।
চিকনা প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো। একটা সিগারেট বার করে নিলাম, তারপর আবার প্যাকেটটা ফেরত দিলাম। চিকনা বললো, তোর কাছে রাখ। আমি পাশে রাখলাম।
ফোনটা বেজে উঠলো, সন্দীপ।

হ্যাঁ আমি তোকে পরে ফোন করছি। আমার কথা বলা শেষ হলো না, অনাদি ফোনটা ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে নিয়ে নিলো, কানে তুলে বললো, আপনি কে বলছেন, এরই মধ্যে ও ভয়েস মুড অন করে দিয়েছে, রেকর্ডিং বটম টিপে দিয়েছে,
-আমি অনির বন্ধু সন্দীপ বলছি।
-এখুনি অনির গলা পেলাম, আপনি কে।
-আমি অনাদি, অনির বন্ধু।
-অনি নেই।
-ধরুন।
অনাদি ইশারায় কথা বলতে বললো।
-হ্যাঁ বল।
-শোন পাক্কা খবর, দিবাকর মন্ডল তোর বন্ধু। তোর সঙ্গে ও একসঙ্গে পড়েছে, এমনকি তোর ডিটেলস পর্যন্ত এখানে দিয়ে দিয়েছে, আর কি বলবো তোকে, কথাটা বলতে তোকে খুব খারাপ লাগছে, সুনীতদার মন পেতে বলেছে, তোর বাপ মার ঠিক নেই। এখন এখানে লাইভ রেকর্ডিং চলছে, ছেলেটি মনে হয় ম্যাডামের খুব কাছাকাছি আছে। এমন কি ম্যাডামের গলাও শুনতে পাচ্ছে এরা।
-কোথায় চলছে রেকর্ডিং।
-সুনীতদার ঘরে।
-আর কে আছে।
-যারা থাকার তারাই আছে। তুই এর একটা বিহিত কর অনি।
-আমি অফিসে ঢুকছি। দেখি লাস্ট আপডেট কি হয়।
-ঠিক আছে, তুই ফোন কর, আমার ফোন অন থাকবে। লাইনটা কেটে গেলো।

অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে, চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো, অনাদি তুই একবার পারমিশন দে, আমি ওকে কাল সকালের মধ্যে গাইপ করে দেবো।
-ঘাউরামি করিস না। আমি বললাম।
বাসু চুপচাপ, শুধু বললো, ওকে হাতে মেরে কিছু হবে না, ভাতে মারতে হবে।
-ঠিক বলেছিস।
-ও এখন কোথায় রে চিকনা।
-উঃ তোরা থাম না। আমি বললাম।
-থামার সময় এখন নেই অনি। মালটা আমি বুঝতে পেরেছি।
-কিছুই বুঝিস নি।
-তুই বোঝা।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলাম, চোখ দুটো কেমন জ্বালা জ্বালা করছে, জীবনে বাবা মাকে ঠিক মনে পরে না, কিন্তু জ্ঞনতঃ কোনদিন বাবা মাকে আমি অশ্রদ্ধা করি নি, কিন্তু আজ প্রথম বাবা মার সম্বন্ধে কোন খারাপ কথা শুনলাম, বুকের ভেতরটা ভীষণ যন্ত্রনা করছে, মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসবে। তিনজোড়া চোখ আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে, ওদের বুঝতে দেওয়া যাবে না, তাহলে একটা বিচ্ছিরি কান্ড ঘটে যাবে। আমি মাথা নীচু করে বসে আছি।
-অনি শরীর খারাপ লাগছে। বাসু আমার পিঠে হাত দিলো।
আমি বাসুর মুখের দিকে তাকালাম, হয়তো চোখটা ছল ছল করে উঠেছিলো।
অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। চিকনার দিকে তাকিয়ে বললো, আজ রাতেই কাজ হাসিল কর।
কথা বলতে গিয়ে আমার গলা ধরে এসেছে, আমি অনাদির হাত চেপে ধরে বুকে জড়িয়ে ধরলাম, না এরকম করিস না। প্লিজ।
-তোকে যে অপমান করে সে আমাদেরও অপমান করেছে।
-ঠিক আছে। তার জন্য…….
-তুই জানিস না এই গ্রামটাকে ও জ্বালিয়ে দিচ্ছে, খালি বন্ধু বলে ও পার পেয়ে যাচ্ছে।
-দূর বোকা, হিংসার রাজনীতি করতে নেই। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর, সব ঠিক হয়ে যাবে।
অনাদি একটু ঠান্ডা হলো।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটু চা খাওয়াবি।
চিকনা ছুটে চলে গেলো।
অনাদি আমার হাত চেপে ধরলো, অনি তুই বল, তুই একা চাপ নিস না, আমি জানি তোর সমস্যা তুই একলাই সলভ করবি, আমরা যদি তোকে কিছুটা হেল্প করতে পারি, যেহেতু ব্যাপরটা আমাদের এখানকার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, তুই এখান থেকে ১০ বছর ডিটাচ, এখানের আমূল পরিবর্তন হয়েছে, তুই দিন চারেকে তার কিছুই জানতে পারবি না, ওপর ওপর সবাই ভালো, ভেতর থেকে ছুঁরি চালাবর লোক প্রচুর, তুই অনেক কষ্ট করে এখানে এসে দাঁড়িয়েছিস, আমরা তোকে হারাতে চাই না।
-মিত্রা কোথায়।
-ও সামনে বসে ফাংশন দেখছে।
-ছবিটবি তুলছে না।
-সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। উনি আমাদের গেস্ট, তুই আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখ, ওনার কোন অসুবিধে হবে না।
-দিবাকর কোথায়।
-ওর ব্যবস্থা করছি।
-এখন নয়।
-ঠিক আছে তুই বল।
চিকনা চা নিয়ে চলে এলো।
আমি ওদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কথা বললাম। ওদের গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে গেলো। অফিসিয়াল ব্যাপারটা এত জটিল ওরা কিছুতেই ধরতে পারছে না। আমি চিকনাকে বললাম, মেলার মজাটা আজ করতেই পারলাম না। তুই এক কাজ করবি।
-বল।
-এমন কোন বিশ্বস্ত লোক আছে, যে দিবাকরকে ফলো করবে।
-এই কাজ, তোকে চিন্তা করতে হবে না। তোকে আধঘন্টার মধ্যে ডিটেলস দিয়ে দিচ্ছি।
-না, ওকে মনি টরিং কর, যেন কিছু বুঝতে না পারে, ফাংসন কখন শেষ হবে।
-১২টা বাজবে।
-মিত্রার আশে পাশে কারা আছে আমাকে একটু জানা, দিবাকরেরও কিছু লোকজন এখানে আছে, ওরা আমাকে খুঁজে বেরাচ্ছে নিশ্চই।
-ঠিক আছে তোরা এখানে বোস। আমি যাচ্ছি। চিকনা চলে গেলো।
-খুব সাবধান।
-তোকে ভাবতে হবে না।
-শোন মিত্রা যদি খোঁজ করে, বলবি আমার সঙ্গে তোর দেখা হয় নি।
-আচ্ছা।
-অনাদি ভীষণ খিদে পেয়েছে।
-কি খাবি বল।
-একটু ছোলা সেদ্ধ আর মুড়ি।
-পাটালি। অনাদি হেসে বললো।
-এখন ভালো লাগছে না।
-বুঁচিকে ফোন করে দিচ্ছি দাঁড়া।
-কে বুঁচি।
-তুই চিনবি না পার্টি করতে গিয়ে অনেক কিছু রাখতে হয় শিখতে হয়।
-থাম দাঁড়া। তুই একটা কাজ করতে পারবি।
-বল ।
-তুই নিজে যা। ওদের নাচ কি শুরু হয়েছে।
-হ্যাঁ প্রায় একঘন্টা হয়ে গেছে।
-তার মানে এবার শেষের পথে।
-হ্যাঁ।
-মিত্রা নিশ্চই মেলা ঘুরতে বেরোতে চাইবে। তুই নীপা ওদের বন্ধুদের সঙ্গে ভিরিয়ে দে।
-সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। বাসু বললো।
-ঠিক আছে, শেষ হলে আমায় ফোন কর। আমি যাবো। আমার আর কিছু ভালো লাগছে না।
-বুঁচিকে দিয়ে মুড়ি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি, বাসু তুই কিন্তু অনিকে ছেড়ে যাস না।
-আচ্ছা।
বাসুর ফোনটা বেজে উঠলো।
-চিকনা ফোন করেছে, তুই কথা বলবি।
-দে।
-হ্যাঁ।
-হ্যালো।
-বাসু।
-না আমি অনি বলছি।
-শোন সব ব্যবস্থা পাকা, শুয়োরের বাচ্চা মিত্রার সঙ্গে বসে জমিয়ে গল্প করছে।
-ঠিক আছে, তুই ডিস্টার্ব করিস না, ওদের গল্প করতে দে। পরলে শোনার চেষ্টা কর। আমার ফোনে রিং কর আমি রেকর্ডিং করবো। মাথায় রাখবি এই কাজ যে করে সে খুব সেয়ানা ছেলে।
-আচ্ছা।
বাসু আমার দিকে তাকালো, তোর মাথায় কতো চাপ, তুই চলিস কি করে।
-চলতে হয় বাসু। না হলে চলবে কি করে।
-আমার তোর মাথাটা মাঝে মাঝে দেখতে ইচ্ছে করে। আমরা হলে এতোক্ষণ তো কোন অঘটন ঘটিয়ে দিতাম।
-এই যে তুই কিছুক্ষণ আগে বললি হাতে নয় ভাতে মারবো।
বাসু মাথা নীচু করে হাসলো।
অনাদির ছেলেটা মুড়ি চা দিয়ে গেলো, দুজনে বসে বসে খেলাম, ভেতরে ভেতরে তোলপাড় চলছে, আমার মিত্রাকে নিয়ে কেচ্ছা, অন্য হাউস রসালো গল্প করবে, একদিন হয়তো উপন্যাসেও স্থান পাবো। ভাবতেই গা টা শিউরে উঠছে।
চিকনার ফোন।
বাসুকে দিলাম, ও ভয়েস মুডে দিয়ে রেকর্ডিং করছে।
-আপনার সঙ্গে অনির অনেক মিল আছে। মিত্রার গলা।
-না না কি বলছেন, অনি আপনার হাউসের একজন স্টার রিপোর্টার, ওর সঙ্গে আমার তুলনা।
-আচ্ছা অনি কি আপনার সঙ্গে থাকে না অন্য কোথাও থাকে।
-আমার সঙ্গে থাকবে কেনো, ওর নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে।
-আমি তো শুনলাম কলকাতায় ওর থাকার জায়গা নেই বলে আপনার বাড়িতে থাকে।
-আপনি ভুল শুনেছেন।
-সত্যি আপনাদের নিগূঢ় বন্ধুত্ব দেখলে হিংসে হয়।
-সত্যি কলেজ লাইফেও আমাদের অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধব আমাদের দেখে হিংসে করতো।
-এখানকার সবাই কানাঘুষো করে আপনার সঙ্গে ওর একটা এ্যাফেয়ার আছে।
-কারা বলে।
-অনির বন্ধুরা।
-আপনি বলছেন, না আর কেউ বলছে।
-কেনো । অনাদি, বাসু কতজনের নাম করবো।
-হতেই পারে না।
-আমি সেদিন ওর কাকার অপারেশনের দিন যেতে পারলাম না, খুব খারাপ লাগছে।
-হ্যাঁ সেদিনতো আপনাকে দেখতে পাই নি।
-অনি আসে নি।
-এসেছে। কোথায় ঘুরে বেরাচ্ছে। ও তো একটা ভবঘুরে।
-পোষ মানাবার চেষ্টা করুন।
-করছি তো পাচ্ছি কোথায়।
-সত্যি ওর কোন রেসপনসিবিলিটি নেই। আপনার মতো একজন সেলিব্রিটি কে নিয়ে এরকম ছেলে খেলা করার।
-কোথায় ও ছেলে খেলা করলো, আমিই তো এখানে আসতে চেয়েছিলাম, ও না করেছিলো, তবু এলাম, সত্যি না এলে আমার অনেক কিছু অদেখা থেকে যেতো।
ফোনটা কেটে গেলো।

বাসু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
আমার ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রার ফোন।
-হ্যালো।
-কি রে তুই কোথায়।
-আমি শ্মশানে।
-শ্মশানে মানে!
-শ্মশানে।
-আবার ওখানে গেছিস।
-হ্যাঁ। জায়গাটা আমায় খুব টানে রে। তুই যেনো কাউকে বলিস না।
-কি বলছিস তুই, এখুনি আসবি।
-কেনো।
-আমাকে একা একা ফেলে যেতে তোর লজ্জা করছে না।
-কই তোকে একা ফেলে এলাম, নীপা আছে, ওর বন্ধুরা আছে, অনাদি, বাসু, চিকনা আর কতজনকে তোর চাই।
-তোর গলাটা ভারি ভারি লাগছে কেন রে।
-ফাঁকে মাঠে বসে আছি কিনা, একটু ঠান্ডা লেগেছে বোধ হয়।
-তুই এখুনি আয়।
-ফাংশন শেষ।
-আর একটু বাকি আছে।
-ঠিক আছে আমি অনাদিকে বলে দিচ্ছি, তোকে সঙ্গ দেবে গিয়ে।
-তোর এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হলো।
-কার সঙ্গে।
-দিবাকর। দিবাকর মন্ডল।
-কোথায় আলাপ হলো।
-এই তো আমার সামনে বসে আছে।
-তাই।
-দে ওকে।
-দিচ্ছি।
-হ্যালো।
-বল।
-তুই এখন কোথায়।
-পুরীকুন্ডী শ্মশানে।
-মিথ্যে কথা বলছিস।
-তুই চলে আয়।
-কোথায়।
-আমি যেখানকার কথা বললাম।
-না আমার এতো শখ নেই।
-তাহলে আর সত্য মিথ্যার যাচাই করে লাভ।
-আমি তোর মতো পাগল নই।
-তুই পাগল নয়, সেয়ানা।
-কেনো একথা বলছিস।
-তুই সেদিন বললি তোর কাজ আছে তাই নার্সিং হোমে যেতে পারবি না।
-সত্যি তুই বিশ্বাস কর অনি একটা কাজ পরে গেছিলো।
-ইন্টারভিউ কেমন হলো।
-তোকে কে বললো।
-সাংবাদিকের কাজ খবর সংগ্রহ করা। আমি নিশ্চয়ই মিথ্যে বলি নি।
-না। এটা তুই সত্যি কথা বলেছিস।
-কোন কাগজে ইন্টারভিউ দিলি।
-এটাও কি জেনে ফেলেছিস।
-না। জানতে পারি নি। দেখ সত্যি কথা বললাম।
-মেলায় কখন আসছিস। তোর মিত্রা দেবিতো তোকে দেখার জন্য পাগল।
-ওটা বড়লোকেদের খেয়াল।
-কি বলছিস।
-কেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
-একেবারে না।
-তুই তো পাশে বসে আছিস, জিজ্ঞাসা কর।
-এতটা ধৃষ্টতা দেখাতে পারবো না।
-আমাদের কাগজে কার কাছে ইন্টারভিউ দিয়ে এলি।
-কি পাগলের মতো বকছিস।
-আরে আমি তো বদ্ধ পাগল।
-সেটাই মনে হচ্ছে।
-কেনো এটাও কি মিথ্যে বললাম।
-পুরোটা।
-মিত্রাকে ধর একটা হিল্লে হয়ে যাবে।
-বলেছি।
-বাঃ এই তো করিতকর্মা ছেলে। মেলায় থাক, আমি যাচ্ছি।
-কতোক্ষণের মধ্যে আসবি।
-এখান থেকে যেতে ঘন্টাখানেক তো লাগবে।
-নারে আমি তাড়াতাড়ি ফিরে যাব। কাল সকালে একবার কলকাতা যেতে হবে।
হাসতে হাসতে বললাম, জয়েনিং।
-বোকা বোকা কথা বলিস না।
ফোনটা কেটে দিলাম। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে আছে, রেকর্ডিংটা সেভ করেই অনাদিকে ফোন করলাম।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/svGc3BH
via BanglaChoti

Comments