কাজলদিঘী (পঞ্চবিংশ কিস্তি)

কাজলদীঘি

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

পঞ্চবিংশ কিস্তি
—————————

সবাই এগিয়ে চললাম, পেছনে আজকের এই মিলনের সাক্ষী থাকল পীরবাবার থান।

রাস্তায় হই হই করতে করতে সবাই বাড়ি চলে এলাম। আজ আর শ্মশানে যাওয়া হলো না। পাশ দিয়ে আসার সময় মনে মনে একবার মাকে বললাম, তোমার বৌকে সঙ্গে নিয়ে চলেছি মা। তুমি একবার রাস্তার ধারে এসে দেখে নাও।

মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। তবু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম।

খামারে নেমে নিরঞ্জনদাকে বললাম, একবার তোমার সঙ্গে বসবো, একটু দরকার আছে।

নিরঞ্জনদা বললো, ঠিক আছে।

বাড়িতে আজ চারিদিকে লাইট জ্বলছে। সঞ্জু কথা রেখেছে। আমি ঢোকার সময় কাকাকে প্রণাম করে সব বললাম। মিত্রা পাশে দাঁড়িয়ে। কাকা হেসে ফেললো।

তোর বড়োমা যাওয়ার সময় সব বলে গেল। আমি গেলে তুই যদি বুঝতে পারিস, তাই নিয়ে গেল না। আজ ভীষণ তোর বাবা-মার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

কাকার গলাটা ধরা ধরা। কাকার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো।

যা ভেতরে যা।

আমি ভেতরে এলাম। দেখলাম রান্নার আয়োজন চলছে। খুব একটা খারাপ নয়। লতা, কাঞ্চন, পাঁচু রান্নাঘরে। কাকীমা, সুরোমাসিকে সাহায্য করছে। আমি দেখে হাসলাম। প্রিপ্ল্যান্ড সব ব্যাপার। শুধু আমি বুঝতে পারলাম না। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির হাসি হাসছে। এ হাসি যেন বিশ্ব জয়ের হাসি।

বল কিরকম দিলাম তোকে।

রাতে আমার কাছে থাকবি এটা মনে রাখিস। শুদে আসলে তুলে নেব।

মিত্রা নিঃশব্দে আমার কোমরে চিমটি কাটল।

আমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করলাম, কোনও আওয়াজ করলাম না।

মিত্রা দাঁত চিপে বললো, ছোটোমা দেখছে।

আমি ছোটোমার দিকে তাকাতেই, ছোটোমা ফিক করে হেসেফেললো।

-খিদে পাচ্ছে।
-সব্বনাশ।
মিত্রা ছুটে গিয়ে বড়মাকে হির হির করে টেনে আনলো।
-ওরে কি বলবি তো বয়স হয়েছে কোথায় পরে মরবো।
আমার কাছে নিয়ে এসে দাঁড় করালো।
-বল।
-কি বলবো।
-এই যে এখুনি বললি।
-খিদে পেয়েছে।
শুনলে তোমার ছেলের কথা। কানটা ঠিক আছে তো।
ছোটোমা এগিয়ে এলো।
-তুই ওরকম ঝগড়া করছিস কেনো।
-ছোটোমাকে একবার শুনিয়ে দে।
বড়মা হাসছে। কোনো কথা বলতে পারছে না।
-মিত্রা বললে রাক্ষুসী, অনি বললে রাক্ষস হয় না, তাই না। ওর তো কোনো দিন খিদে পায় না। হাওয়া খেয়ে থাকে।
ছোটোমা এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে, হাসতে হাসতে মাটির সঙ্গে মিশে যাবার দশা।
নীপা চারটে রসগোল্লা নিয়ে এলো প্লেটে করে।
-একবারে দিবি না। আগে আমার জন্য আন, তারপর।
-আচ্ছা আচ্ছা তোকে দিচ্ছে।
-না আগে আনুক তারপর ও খাবে।
আমার প্লেট থেকে একটা নিয়ে মুখে পুরে দিলো।
নীপা আসার আগেই তিনটে সাবার।
-কিগো অনিদা এরই মধ্যে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে। কথা বলো না রসগোল্লার রসে বিষম লেগে যাবে।
খাওয়া শেষ করে নীপার হাত থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে কোঁত কোঁত করে জল খেলো।
-ওঃ কিছুটা কমলো।
-কি কমলো। ছোটোমা বললো।
-যা খিদে পেয়েছিলো। আমি হাসতে হাসতে চলে এলাম।
আমি ওবাড়িতে গেলাম, দেখলাম বারান্দায় অনেক লোকের ভিড়, সবাই নিরঞ্জনদার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। নিরঞ্জনদা কাউকে নিরাশ করেনি সবাইকে বসতে বলে গেছে।

আমি ওপরে উঠে এলাম। লাইট জ্বালালাম। অনাদিরা কিছুক্ষণ পর এলো। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

তুই বিশ্বাস কর অনি। দুপুরের পর থেকে সব কেমন যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

কেন?

ওরা সবাই একে একে বসলো।

খাওয়ার পর বড়োমা আমাদের তিনজনকে ভেতরে ডেকে নিয়ে গেলেন। আগে তিনজনকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন, তারপর সব বললেন। বিশ্বাস কর অনি বড়োমার কথা শোনার পর, কালকে থেকে যে ক্লান্তি সারাটা শরীরে জুড়ে ছিল নিমেষে উবে গেল। এক নতুন উদ্দ্যমে কাজ শুরু করলাম। সঞ্জুকে ফোনে ডেকে নিলাম। পচাকে বললাম তুই বাজারে থাকবি, নিরঞ্জনদা এলেই সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে চলে আসবি। ওকে নিরঞ্জনদার ফোন নম্বর দিলাম। এও বললাম পারলে চকে চলে যাবি। বাসুকে বললাম, লতাকে চলে আসতে বল। আমি একফাঁকে কাঞ্চনকে বলে এলাম, তুমি ও বাড়িতে চলে আসবে। ওরা ফিরে আসার পর জানলো। আজকে আমরা সকলে বড়োমার কথা মতো ঠিক ঠিক কাজ করেছি।

হাসলাম, চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটা সিগারেট দিবি।

চিকনা ৫৫৫-এর প্যাকেট বার করলো।

আমি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি!

দাদা দিয়েছে। বললো, চিকনা রাখ কাজে লাগবে। তুই বিশ্বাস কর সঞ্জু কতবার চেয়েছে দিইনি, বলেছি অনিকে দিয়ে ফার্স্ট বউনি করবো, তারপর তুই পাবি। তুই প্যাকেটটা খোল।

তুই খোল।

দাঁড়া তার আগে তোকে একটা পেন্নাম করি।

আবার পেন্নাম কেন।

তুই আমায় নতুন জীবন দিয়েছিস। সেই উপলক্ষে তোকে পেন্নাম করা হয়নি।

চিকনা, পচা, পাঁচু তিনজনে পেন্নাম করলো।

কবে বাঁশ দিবি।

চিকনা জিভ বার করছে। কান মুলছে।

শালা তোকে যদি বাঁশ দেয় পচাপুকুরে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো। সঞ্জু বললো।

বল অনি, তুই বল, কি কথার কি মানে করলো। মাথা গরম হয়ে যাবে না। সঞ্জুর দিকে তাকিয়ে বললো, এই কথার জন্য গোটা হবে না, কাউন্টার।

চিকনা একটা আমাকে একটা বাসুকে একটা অনাদিকে দিয়ে ওদের সবাইকে একটা করে দিল, আমার দিকে লাইটার এগিয়ে দিয়ে বললো, তোর হিসাবটা কালকে বুঝিয়ে দেব।

কেমন চলছে?

টাকার টান পড়ছে।

আর অসুবিধে হবে না। আমি নিয়ে এসেছি, দিয়ে যাব। কাল থেকে তুলতে আরম্ভ কর।

সে কি বাকি রেখেছি, সঞ্জুর কাছ থেকে টেনেছি। অনাদির কাছ থেকে টেনেছি। বাসুর কাছ থেকে টেনেছি।

হিসেব করে রেখেছিস। কাকে কত দিতে হবে?

আমার এ্যাকাউন্টেট জব্বর, একটুও জল মেশাতে দেয় না।

তার মানে! তোর জল মেশাবার ইচ্ছে আছে?

হ্যাঁ। চা-পান-বিড়ির পয়সা দেবে না? তুই বল।

অনাদি, বাসু হাসছে।

শালা কতটাকা লাগেরে। সঞ্জু বললো।

সঞ্জু আজ একটা শুভ দিন, আমার কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা আছে।

এটা দিতেই হবে। এটা যদি নীপা না দেয় তাহলে অন্যায় করেছে। আমি হাসতে হাসতে বললাম।

তুই ওকে একটু বলে দে।

নীপা দেয় না?

না।

সেদিন যে ঝামেলাটা করলি। বল অনিকে। অনাদি বললো।

না-রে ঝামেলা না, ও শালা অনাদি ঢেমনাম করছে।

আবার শুরু করলি।

চিকনা কান ধরলো নাকে খত দিল, আর হবে না, বিশ্বাস কর।

সিগারেটে একটা সুখ টান দিল।

কি হয়েছে বল?

পদিবুড়ো ভিঁজে ধান নিয়ে এসেছে, আমি পাঁচ সের বাদ দিয়েছি, ও গিয়ে অনাদিকে রিপোর্ট করেছে।

কি করে বুঝলি?

অনাদিকে জিজ্ঞাসা কর, আমি ভজিয়ে দিয়েছি। খামারে শুকনো করে দেখলাম, দশসের কম। আমার পাঁচ সের লস।

অনাদি হাসছে।

পচা, পাঁচুকে মাইনে দিয়েছিস?

টাকা নেই। বলেছি অনি আসুক, পেয়ে যাবি।

কিছু ধান বিক্রী করে দিলি না কেন?

যে দামে কিনেছি তার থেকে পাঁচ-সাতটাকা বেশি পাব তাতে কি হয় বল। পচা, পাঁচু দুজনেই বারণ করলো।

ধান থেকে চাল করার ব্যাপারে কি করলি?

সঞ্জু মেশিন দেখে এসেছে। তুই বললে শুরু করবো। ধান সেদ্ধর জন্য জালন কিনতে হবে, চারপাখা উনুন বানাতে হবে। আরও পাঁচ-সাতজন লাগবে।

জোগাড় করেছিস?

সে কতক্ষণ। বললেই চলে আসবে। মৌসুমি মাসি আছে।

মৌসুমি মাসিকে বলেছিস?

বলার দরকার লাগে। শুনেই চলে এসেছে। বলেছে কাজ না দিলে খামারে পড়ে থাকবে। তোর কাছে নালিশ করবে।

মাসিকে দেশ থেকে কয়েকজনকে আনতে বল।

বলতে হবে না। সব নিজে নিজেই ঠিক করেছে।

অনাদি একটা বাজেট করে দে। তুই ধরে নিবি তোর হাতে দশলাখ টাকা থাকবে, এইটা ধরে।

এতটাকা কি হবে!

কেন?

তিন চার লাখ টাকা যথেষ্ট।

সে কি করে হয়?

এখানে অতো ধান পাবি কোথায়!

চারদিকে বলে রাখ, চকে আর ধান যাবে না, মাঝপথে এখানে সবাই দেবে, প্রয়োজনে চকের দামেই ধান কেনা হবে।

তাহলে লাগবে।

মেশিন–ফেশিন কি কিনতে হবে বললো।

সে আর কত লাগবে, সঞ্জু—অনাদি তাকাল সঞ্জুর দিকে।

লাস্ট যা কোটেশন নিয়েছিলাম হাজার চল্লিশেক বলেছিল।

খালি ধান ভাঙার মেসিন? আমি বললাম।

হ্যাঁ।

তোর কত থাকবে?

বেশি না হাজার খানেক।

শালা ঢ্যামনা আমার কাছ থেকে বিজনেস। চিকনা বললো।

কেন তুই আমার নাং।

উনামাস্টারের মেয়েকে ভাঙচি দেব।

তোর দাঁতগুলো ভেঙে দেব।

আবার কার দাঁত ভাঙবে সঞ্জুদা—নীপা চায়ের ট্রে, মিষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকলো।

চিকনার।

কেন!

তোকে বলা যাবে না।

বাবাঃ গম্ভীর হয়ে গেলে যেন, মনে থাকে যেন কথাটা, নীপা….।

চিকনা হাততালি দিয়ে উঠলো। বলবো ওকে। পয়সা উসুল হয়ে যাবে।

কিগো চিকনাদা?

পরে বলবো, আগে মিষ্টিটা দে, চায়ের কাপটা নিচে রাখ।

সঞ্জু ভ্যাটকা মুখে বসে আছে।

আমি, বাসু, অনাদি হাসছি।

তোমার কীর্তিকলাপ নিয়ে ও বাড়িতে বিরাট আড্ডা বসেছে। হ্যাঁগো অদিতি কে?

তুমি কি করে জানলে!

মিত্রাদি সবাইকে তোমার গুণকীর্তন শোনাচ্ছে, সবাই হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

তুমি চলে এলে।

এখন ইন্টারভেল, আমি গেলে আবার শুরু হবে।

তারমানে জব্বর আড্ডা বসেছে বলো।

অবশ্যই।

তোমার অনিদা খুব ভালোছেলে ছিলো তো। অনাদি টোন্ কাটলো।

আমার অনিদা কোনওদিন খারাপ ছেলে ছিল না, আজও নেই।

অনাদি একটা ছেলে জোগাড় করতো বিয়ে দিয়ে দিই। আমি বললাম।

তুই খালি একবার আমাকে মুখে বল, আধঘণ্টা সময় নেব। চিকনা বললো।

তারমানে!

নীপা চিকনার মাথায় একটা থাপ্পর মারলো, শয়তান, খালি পেটে পেটে বদ বুদ্ধি।

জল মেশাতে দিবি?

একবারে না।

তাহলে রিপোর্ট জমা দেব।

দাওনা। কে বারন করেছে।

নীপা নাচতে নাচতে চলে গেলো।

ঠিক আছে কাল একটা হিসাব করে দেব তোর। এইবার উঠে পরে লেগে পর। আমি কাগজপত্র সব তৈরি করে নিয়ে এসেছি। দেখ ও বাড়িতে কোনও কাজ কর্ম আছে নাকি।

সঞ্জুর দিকে তাকিয়ে বললাম তুই দেখ লাইটগুলো একবার ঠিকঠাক জ্বলছে নাকি, পারলে একটু হেল্প কর ওদের গিয়ে, আর বড়োমার ঘরটা একবার দেখে নিস, রাতে সমস্যা হলে, মাথা ভেঙে দেবে।

ওরা চলে গেল।

অনাদিকে বললাম, উনামাস্টার কি বলতে চায়?

উনামাস্টারের ইচ্ছে নেই, মাসিমার ইচ্ছে আছে।

সঞ্জুতো খারাপ ছেলে নয়।

শালা নেশা করে।

বেশি, না একটু আধটু।

ওই আর কি।

তুই কিছু বলিস না।

বলি।

আমি বললে কাজ হবে। তাহলে একবার স্যারের কাছে যাব।

তুই গেলে সব সমস্যা মিটে যাবে।

চল তাহলে এক ফাঁকে তুই আমি আর বাসু চলে যাই।

তুই ঘটকালি করবি!

প্রয়োজনে করবো।

বাসু হেসে ফেললো।

হাসছিস কেন!

তোর আর কি কি বাকি রয়েছে?

অনেক।

জানিস অনি আজকে খুব ভালো লাগছে। অনাদি বললো।

কেন?

প্রথম যেদিন ম্যাডামকে নার্সিংহোমে দেখেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম ম্যাডাম তোর প্রতি ভীষণ দুর্বল, আমি, বাসু কতঘণ্টা যে তোকে নিয়ে আলোচনা করেছি, বলতে পারিস প্রার্থনাও করেছি, তোর সঙ্গে ম্যাডামের মিল করিয়ে দিক, ভগবান সেই কথা শুনেছে।

আমি চুপ করে রইলাম।

ম্যাডামের শরীর খারাপের দিন আরও বেশি করে বুঝলাম, তোকে বার বার খুঁজছে, ছোটোমা বসে আছে, তবু তোকে চাই। আমি বাসু আলোচনা করতে করতে সেদিন ফিরেছিলাম। বাসু লতাকে বলেছে, আমি কাঞ্চনকে বলেছি। ওরাও মনে মনে চেয়েছিল, আজ শোনার পর ওদের কি আনন্দ, তুই না দেখলে বিশ্বাস করবি না।

তোরা একবার আমার কথাটা ভাব।

ভাবি। তোর কতো দায়িত্ব। তার ওপর আর একটা দায়িত্ব বারলো।

আমি চুপ করে রইলাম।

তোর মুন্নাভাই খুব ডেঞ্জার লোক।

কেন!

পকেটে দুলাখ টাকা নিয়ে ঘুরছে।

কি করে বুঝলি।

বাসুর দোকানে জামাকাপড় কিনলো, তারপর বাসুকে বান্ডিলটা দিয়ে বললো, তোমার যা হয়েছে, এখান থেকে বার করে নাও। বাসুর হাত কাঁপা দেখিসনি। অতোটাকা বাসু কোনওদিন দেখেছে নাকি, তাও আবার সব হাজার টাকার নোট। লোকটা কি করে?

তিনটে জাহাজ আছে, মিডিলইস্ট থেকে তেল নিয়ে আসে।

আরি ব্যাস। তোর সঙ্গে কি করে আলাপ?

কাজের মাধ্যমেই। ওকে দিয়ে এখানে কিছু ইনভেস্ট করাব।

কি করবি?

দেখি। নিরঞ্জনদার সঙ্গে আলোচনা করি।

যাক মনে হচ্ছে আমরা এবার আলোর পথ দেখবো। কি আছে বল আমাদের। বর্ষা হলে বন্যা। বর্ষা না হলে খরা। খেতের ফসল নষ্ট। সেই হাহাকার।

দেখি কি করা যায়।

শিঁড়িতে হুরুমদুরুম আওয়াজ হচ্ছে, বুঝলাম সব দঙ্গল আসছে। বলতে বলতে মিত্রা এসে ঘরে ঢুকলো।

বুঝলি বুবুন তিনটে টেস্ট করলাম, সুপার্ব আরও তিনটে বাকি আছে। হলেই বসে যাব।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

ওর পাশ দিয়ে বড়োমা, ছোটোমা ঢুকলো। পেছন পেছন ইসলামভাই, নিরঞ্জনদা।

অনাদি, বাসু উঠে দাঁড়াল।

বাঃ তোর ঘরটা বেশ ভালো। ছিম ছাম।

মিত্রা, নিরঞ্জনদার কাছে এগিয়ে গেল। এই হাতটা দেখেছো। মিত্রা নিজের হাত দেখালো।

হ্যাঁ দেখছি।

এই হাতটার জন্য, বুবুন স্বীকার করবে, জিজ্ঞাসা করো।

নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।

সত্যি মিত্রা, অনি তোর শত্রু তাই না?

মিত্রা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল। মুখটা থমথমে।

নাগো, বুবুন না থাকলে এতদিনে হয়তো মরে-হেজে কোথায় ভেসে যেতাম।

মুখটা নীচু করে ফেললো। সবাই কেমন যেন থমকে গেল। নিস্তব্ধ ঘর।

মিত্রার চোখ দুটো জলে টলটল করে উঠলো।

আমি উঠে গেলাম। বড়োমা ছোটোমা খাটে বসেছে, আমি মিত্রাকে নিয়ে বড়োমার পাশে বসালাম, আমার দিকে তাকাল, চোখটা তখনও ছলছল করছে।

অনাদি, বাসুকে ইশারা করলাম, ওরা বেরিয়ে গেল।

তুই আমাকে নিয়ে ওবাড়িতে কি ক্যারিকেচার করছিলি?

ও আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো। বিশ্বাস কর কিছু বলিনি।

আমি লুকিয়ে গিয়ে যা দেখে এলাম, সেটা ভুল? অদিতিকে এরা চিনল কি করে?

দেখছো ছোটোমা দেখছো, তোমরা শুনতে চাইলে তাই বলেছি।

এই বার তোরটা বলি এদের সামনে।

প্লীজ প্লীজ ও রকম করিস না। ওটা শুধু তোর আর আমার।

ঠিক আছে আমি ছোটোমাকে ফুস মন্ত্রণা দেব।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। ।

নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই সব লক্ষ করছিল বুঝতে পারছিলাম।

তুই বোস, সব শুনে যদি কিছু বলার থাকে বলবি।

মিত্রা ওইটা বার কর। বড়োমা বললো।

এই যা ভুলে গেছি, দাঁড়াও।

তরাক করে উঠে আলমাড়ির মাথা থেকে চাবিটা নিয়ে আলমাড়িটা খুলে ফেললো, ইসলামভাই দেখছে, একবার আমার দিকে তাকাল। একটা ফাইল বার করে বড়োমার হাতে দিল। আলমাড়িটা বন্ধ করে, আবার নিজের জায়গায় এসে বসলো।

এটা তোর মল্লিকদা আর দাদা তোকে দিয়েছে। আজকের দিনটা উপলক্ষ করে। বড়োমা আমার হাতে ফাইলটা দিল।

আমি ফাইলটা খুললাম, ১৯৬৯ সালের দুটো কাগজ। লাল হয়ে গেছে। আমি খুললাম, দাদার জীবনের প্রথম লেখা এই কাগজে, মল্লিকদারটাও তাই। হেসে ফেললাম।

হাসছিস কেন? বড়োমা বললো।

এর অর্থ কি বুঝতে পারছো?

কেমন করে বুঝবো। ওটা তোদের ব্যাপার।

জানো বড়োমা এতদিন এই দুটোর জেরক্স কপি আমার কাছে ছিল। আজ অরিজিন্যাল পেলাম। এর সঙ্গে মিত্রাকে।

ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিস্ময় ওদের চোখে মুখে। আমি আস্তে আস্তে কাগজগুলো ভাঁজ করে ফাইলের মধ্যে ঢোকালাম, ফিতেটা গিঁট দিয়ে মিত্রাকে বললাম, রাখ। পরে তোর কাছ থেকে চেয়ে নেব, আমার জীবনের অমূল্য সম্পদের মধ্যে এটা একটা মনে রাখিস।

ও হাতে করে ফাইলটা নিয়ে পাশে রাখলো।

যে জন্য তোমাদের ডেকেছি—

সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

নিরঞ্জনদা আমি এখন আর তোমার কাছে কিছু গোপন করছি না, এই ব্যাপারগুলোর ডিসিসন তুমি দেবে, এরা সবাই শ্রোতা, প্রয়োজনে বিরোধিতা করবে।

বাবা তুই যে গুরু দায়িত্ব দিলি।

এককথায় তাই বলতে পারো। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, ও বাড়িতে গিয়ে একটু চায়ের কথা বলে আয় না।

আমি একা যাব!

কেন ভয় করবে?

হেসে ফললো।

ওইখানে কি করে থাকলি?

তুই ছিলি।

ঠিক আছে তোকে ইসলামভাই ওই বাড়ির দালান পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে চলে আসবে।

তাহলে যেতে পারবো।

ইসলামভাই উঠে দাঁড়াল।

ওরা দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।

তুমি তখন কিছু মনে করো নি তো?

নারে। দিদি আমাকে সব বলেছে।

সমস্যাটা এখনও রয়েছে।

সেটা বুঝতে পারছি।

তার ওপর সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জান, আমাকে, ছোটোমাকে, বড়োমাকে কেউ কিছু বললে, ও একবারে সহ্য করতে পারছে না, উল্টে রি-এ্যাকশন আমার ওপর।

ইসলামভাই ঘরে ঢুকলো।

কি হলো?

ওকে নিয়ে চলা খুব টাফরে অনি।

কি করবো বলো, চলতে হবে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আমার সঙ্গে বড়োমা, ছোটোমা আছে।

আমার থেকেও ওর সবচেয়ে বেশি আব্দার ছোটোর কাছে। বড়োমা বললো।

সেই দিনটার পর থেকে ও কেমন যেন ছেলেমানুষ হয়ে গেছে।

সেই দিনটা তুই যদি দেখতিস মুন্না, ভয় পেয়ে যেতিস, অনির ধৈর্য দেখেছিলাম সেদিন। ছোটোমা বললো।

আমি মাথা নীচু করে আছি।

ওকে ডাক্তার দেখাচ্ছিস? নিরঞ্জনদা বললো।

তোর দাদার বন্ধু সামন্ত ডাক্তার, আমাদের পাশের বাড়িতে থাকে। বড়োমা বললো।

বাবা উনি তো এশিয়ার নামকরা ফিগার! নিরঞ্জনদা বললো।

ওই-ই তো দেখছে। অনির এখানে নিয়ে আসতে বললো। ওর শুধু এখন চেঞ্জের দরকার। মনটা একেবারে বিষিয়ে গেছে।

ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা ফোন করেছে। বুবুন টেস্ট করলাম। দারুন।

আমাদের চায়ের কথা বলেছিস?

এই যা ভুলে গেছি। দাঁড়া সুরোমাসিকে বলছি।

ফোনটা কেটে দিল। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে।

মিত্রা তরকারি টেস্ট করলো, তাই জানাল।

সবাই হাসছে।

কি বলছিলি তুই মুন্না। ছোটোমা বললো।

বলছি সেই দিনগুলো তুই দেখিসনি। ওর ওপর কি ভীষণ মেন্টাল টর্চার করেছে ওরা। মিঃ ব্যানার্জী, মল আরও অনেকে, অনি কিছুটা জানে।

ইসলামভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সম্পত্তি বুঝলি।

একটু থেমে।

ওরা মেয়েটাকে মেরেই ফেলতো। অনি যদি ঠিক সময়ে না এসে পরতো।

কি বলছো ইসলাম!

সত্যি বলছি নিরঞ্জনদা, আজ ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়। আমি যাই কলকাতায়।

ওর অনেক সম্পত্তি ওরা বেনামে ভোগ করছে।

ওর বাবা খুব ভালো লোক ছিলেন। মা ভালো নয়।

থাক ও কথা। যা বলছিলাম শোনো। আমি বললাম।

বল।

আমার কতকগুলো স্বপ্ন আছে। আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। এই মুহূর্তে তোমাদের তিনটে বিষয়ে বলছি। এক আমাদের এই তল্লাটে কোনও রাইস মিল নেই, কিছুদিন হলো আমি চিকনাকে দিয়ে একটা ছোটোখাট মিনি রাইস মিল চালু করেছি। এটাকে বড়ো করারা ইচ্ছে আছে। এতে আমি, মিত্রা, চিকনা আর নীপাকে রেখেছি।

দুই বাজারে একটা জায়গা দেখেছি।

ইসলামভাই আজ দেখে এসেছে। জায়গাটা পছন্দ হয়েছে। আমি একটা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক তৈরি করতে চাই। এতে থাকবে তুমি, মিত্রা, ছোটোমা, বড়োমা, দাদা, মল্লিকদা, ইসলামভাই।

তিন তুমি আমাকে এইখানে বাস রাস্তার ধারে ছশো একর জমি জোগাড় করে দেবে।

জলা জমি হলেও চলবে। পয়সা যা লাগবে দেওয়া যাবে। সেখানে একটা কৃষিখামার তৈরি করবো। সেখানেও তোমরা সাতজনে থাকবে।

বলো এবারে তোমাদের বক্তব্য।

তুই থাকবি না কেন? বড়োমা জিজ্ঞাসা করলো।

ভালো কথা বললে, আমি নেই কে বলেছে? খাতা কলমে নেই, কিন্তু সবেতেই থাকছি।

তোর কথা বুঝি না।

নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই হাসছে।

তুই অনেক বড় খেলা খলতে চাইছিস। ইসলামভাই বললো।

নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই-এর কথায় শায় দিল।

মিত্রা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকেই বড়োমাকে জড়িয়ে ধরলো। আজকের রাতের মেনুগুলো দুর্দান্ত বুঝলে। আমি কিন্তু তোমার পাশে, এখন থেকে বলে রেখছি।

বড়োমা ওর দিকে তাকাল, হেসে ফেললো। অনি কোথায় যাবে?

ও ছোটোমার পাশে।

ঠিক আছে তুই এখন বোশ।

নীপা চা নিয়ে এসেছে।

মিত্রা ওর কাছে গিয়ে বললো তুই ঢেলে দে, আমি দিয়ে দিচ্ছি। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোর ভাগের একটা মাছের ডিমের বড়া আসার সময় খেয়ে নিয়েছি।

হাসলাম, মাছের ডিমের বড়া দিয়ে চা বেশ ভাল জমলো।

মিত্রা বললো, বুবুন তোরা কথা বল আমি ও বাড়িতে যাই।

আমি ওর দিকে তাকালাম, যা। বেশি খাস না, শরীর খারাপ করবে।

কই খেলাম! বিকেল থেকে কিছুই খাইনি!

ঠিক আছে খা, সহ্য করতে পারলে ভাল।

ও নীপা বেরিয়ে গেল।

নিরঞ্জনদা চায়ে চুমুক দিল।

টাকা পাবি কোথায়?

ভূতে জোগাবে।

নিরঞ্জনদা হাসলো।

ওই তোর এক কথা। বড়োমা বললো।

টাকা না থাকলে কি আমি এগুলো ভাবতাম।

বেশ, তুই থাকবি না কেন?

আমি দাদাকে কলকাতায় রাখতে চাই না। দাদা মাসে সাতদিন কলকাতায় থাকবে, আর বাকি কটাদিন এখানে থাকবে। তুমি আর কিছু বলবে? দাদাকে ওখান থেকে সরাতে পারলে তোমরাও চলে আসবে।

কেন সরাতে চাইছিস?

দাদা মানসিক ভাবে ক্লান্ত, মুখে কিছু বলে না।

বড়োমা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

বলতে পারো কাজের ফাঁকে এটা বিশ্রামের জায়গা। একটু ব্রেক।

ছশো একর জায়গায় কি করবি? নিরঞ্জনদা বললো।

বলতে পারো একটা আধুনিক গ্রাম বানাব, সেখানে গোয়াল ঘরও থাকবে, পোলট্রিও থাকবে, আধুনিক রেস্তোরাঁও থাকবে। আমার ছশো একর জায়গার মধ্যে চারশো একর জল থাকবে।

আমি বুঝতে পারছি তুই কি করতে চাইছিস। কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের কনসেপ্টটা। নিরঞ্জনদা বললো।

এখানকার সুদখোরগুলোর পেটে লাথি মারবো বলতে পার।

নিরঞ্জনদা হেসে ফেললো।

গ্রামের রাজনীতি তো বুঝিস?

জনসাধারণ পাশে থাকলে কেউ টেঁ-ফুঁ করবে না।

সেটা ঠিক।

তোর ব্যাঙ্কে কে এ্যাকাউন্ট খুলবে এই গ্রামের লোক? এরা দিন আনে দিন খায়।

আমি প্রথমে লোন দেব, যাদের লোন দেব তারাই এ্যাকাউন্ট খুলবে। দেখো মান্থলি ফাইভ পার্সেন্ট সুদের থেকে কম পাবে। তাছাড়া প্রথম প্রথম ছোটোছোটো লোন দাও একহাজার থেকে পাঁচহাজার পর্যন্ত, তারপর শোধ করতে পারলে বড়ো লোন।

তোমাদের সরকার কৃষিলোন কতো দেয়? তার হেপা কতো বলো। যে ছেলেগুলো এই গ্রামে পরে পরে নষ্ট হচ্ছে তাদের কাজে লাগাতে পারবো তো।

তুই অনেক বড়ো স্কিম করেছিস।

তা বলতে পারো। আমি ইমপ্লিমেন্ট করবো। তোমরা সামলাবে।

আমি পার্টি ছেড়ে কি করে সময় দেব বল?

তুমি চাওনা এখান থেকে তোমাদের সিট বারুক?

তা চাই।

তাহলে তোমায় কাজ করতে হবে। এটা একটা হাতিয়ার হিসাবে ধরো। এখনও তিনবছর বাকি আছে। আমি তোমায় বলছি, দাঁড় করিয়ে দেব। তুমি অন্যান্য জায়গায় ব্রাঞ্চ ওপেন করো। তারপর একটা সমবায় আন্দোলন করো। কেউ দাঁত ফোটাতে পারবে না।

আমি একদিন কাগজে গল্পটা লিখে দেব। দেখবে সেন্ট্রাল থেকে তুমি অনেক সাহায্য পাবে।

নিরঞ্জনদা হাসছে। তোর মাথায় আর কি কি আছে বল?

সাতদিন পরে বলবো। কলকাতায় যাই পর্শুদিন। ওখানে আমার ছেলেপুলেগুলোর সঙ্গে একটু কথা বলি তারপর বলবো।

আমি কবে যাব? ইসলামভাই বললো।

তোমাকে যেদিন যেতে বলবো সেদিন যাবে।

ওরে আমার কিছু কাজকর্ম আছে।

মাথা অনেক খাটিয়েছো। এখান থেকে অপারেট করতে পারছ না?

করছি তো।

আরও কয়েকদিন করো। আমি গিয়ে একটু হাওয়া বুঝি।

তোর মিঃ মুখার্জী সুবিধার লোক নয়।

দেখো ইসলামভাই আমি বেড়ালকে রান্নাঘর দেখাই, আবার রান্না করা খাবারে বিষ মিশিয়ে রাখি, বেড়াল জানতেও পারে না।

অনি! ছোটোমা বললো।

আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলাম, ভাবছো অনি কি বস্তু। আমি ধর্মনীতি-রাজনীতি দুটোই করি। গীতা পড়ো সব বুঝতে পারবে।

বড়োমা আমার পিঠে হাত বোলাচ্ছে।

নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে।

কি ভাবছো?

আমি ভাবছি ঘণ্টা খানেক আগে দেখা অনি আর এই মুহূর্তে দেখা অনির মধ্যে কতো পার্থক্য।

ঠিক বলেছো নিরঞ্জনদা, তুমি ঘণ্টা খানেক আগে ভেতরের অনিকে দেখেছো, এখন তুমি বাইরের অনিকে দেখছো। আমি ভেতর আর বাইর দুটো সত্ত্বাকে কখনই এক হতে দিই না। দেবো না।

বলতে পারো এ শিক্ষাটা দাদার কাছ থেকে পাওয়া।

তুই কালকে আমার যাওয়া বন্ধ করে দিলি। ভেবেছিলাম কালকে সকালে পালাব। এখন দেখছি পালানো যাবে না।

ঝেঁটা মারি তোর মুখে, লজ্জা করে না তোর, কয়েক ঘণ্টার জন্য তোকে কে আসতে বলেছে?

বড়োমা ঝাঁজিয়ে উঠলো। সবাই হাসছে।

তুমি বুঝছো না দিদি—

ঢং রাখ, ছেলেটা কথা বলছে, তার উত্তর দে।

আমি কি উত্তর দেবো। ও সব প্ল্যান প্রোগ্রাম করে রেখেছে। আমি না বললেও ও করবে, হ্যাঁ বললেও করবে। ওর এ্যাডামেন্টটা লক্ষ্য করেছো?

আমি মুখ নীচু করে আছি। ইসলামভাই মুচকি মুচকি হাসছে।

তোর কাছে রেডি ক্যাশ আছে। নিরঞ্জনদা বললো।

কতো।

লাখ দশেক টাকা।

এখুনি হবে না, কালকের দিনটা সময় দাও পর্শুদিন অফিস থেকে নিয়ে চলে আসবো।

একটা কথা বলবো অনি। ইসলামভাই বললো।

বলো।

টাকাটা যদি আমি দিয়ে দিই।

তুমি কি এতো টাকা ক্যারি করছো নাকি।

জানিনা তবে মনে হয় রতন এর বেশিই আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

ওকে বলিনি কোথায় যাব। শুধু বললো ফোন করে দেবে, পৌঁছে দেব। তা এখানে এসে যা দেখছি রতনের সাধ্য নেই পৌঁছায়, আর এখানে খরচ করার জায়গাই বা কোথায়, জিলিপি খেতে গেলাম, পয়সা লাগলো না।

ইসলামভাই হাসছে।

তোমার পরিচয় ওরা জানে?

না এখনও গোপন আছে, তবে জানিনা কতক্ষণ গোপন থাকবে, জেনে ফেলবে হয় তো।

নীপা।

না। যদি মিত্রা বলে না থাকে।

ওটা মিত্রা করবে না। এসব দিকে ওর মাথাটা একটু বেশি কাজ করে, আরে বাবা ব্লাডটা আছে তো। তাহলে ওই সময় ও তিনশো ষাট ডিগ্রী ঘুরে যেত না। ওর জেদ প্রচন্ড, বোঝো না। এমনি ঠিক আছে, খেপে গেলে ডেঞ্জার, নীপা দেখেছে সেই বারে।

তোর জিনিষ তুই বুঝবি। ছোটোমা বললো।

সে তো বলবেই, কাজ গুছিয়ে নিলে প্ল্যান করে।

ছোটোমা হাসতে হাসতে আমার কানটা ধরে নেড়ে দিল।

আঃ লাগবেরে ছোটো।

দেখলি মুন্না, নিজে ধরলে কিছু না, আমি ধরলে লাগবে।

নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই হাসছে।

চলো খাওয়া দাওয়া করি, অনেক রাত হলো, কাল সকালে দেখা যাবে। বেশ ঠাণ্ডাঠাণ্ডা লাগছে। নিরঞ্জনদা বললো।

কি হলো বলবি তো? বড়োমা নিরঞ্জনদার দিকে তাকাল।

অনি যা বললো তাই হবে।

তোর দাদাকে ফোন করে জানা।

আরে বাবা জানাব। অনেক সময় আছে। নিরঞ্জনদা ঘড়ির দিকে তাকাল, সাড়ে দশটা বাজে!

আমি উঠে দাঁড়ালাম। ওরা সবাই উঠলো। একসঙ্গে এ বাড়িতে এলাম।

বারান্দায় অনাদিরা সবাই বসে আছে, আমাদের দেখে উঠে দাঁড়াল।

নিরঞ্জনদা বললো, অনাদি।

হ্যাঁ দাদা।

ঠিক আছে থাক, খেতে বসে বলবো।

ভেতরে এলাম, অনাদি আমার পাশে, মুখটা শুকনো করে বললো, কিরে কিছু গরবর?

আমি ইশারায় বললাম, না।

অনাদি হাসলো। যেন ধরে প্রাণ এলো।

মিত্রার গলা শুনতে পাচ্ছি, ফুল ফ্লেজে ব্যাট করছে, বড়োমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো, দারুন মজা হচ্ছে জানো।

তাই।

হ্যাঁগো, ভজু গান গাইছে। বলে কিনা বুবুন টিনের কৌটো নিয়ে তবলা বাজাতো ও গান করতো।

বড়োমা তাকাল মিত্রার দিকে, এই হাল্কা ঠাণ্ডাতেও ওর কাপালে ঘামের ছোঁয়া।

অনেক দৌড়ো দৌড়ি করেছিস, এবার একটু থাম।

আমি তো থেমেই আছি।

খাবি তো।

হ্যাঁ।

সুরোমাসি হলো গো।

হ্যাঁ দিদি হয়ে গেছে।

কাঞ্চন, লতা, ভজু একসঙ্গে বসে। ভজু উঠে এলো। বড়োমা তোমার হাঁটু মালিশ করা হলো না।

শোবার সময় একটু করে দিস।

ঠিক আছে। বসে বসে গা ব্যাথা হয়ে গেল।

বড়োমা ভজুর কথায় হাসছে।

দেখলাম ছোটোমা কোমরে কাপর জরালো, বুঝলাম এবার রান্না ঘরে ঢুকবে। দালানে টানা আসন পাতা হচ্ছে। মিত্রা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, আমার হাতটা ধরলো। আমি ওর দিকে তাকালাম, চোখে খুশির ছোঁয়া, ক্লান্তি সারা মুখ জুড়ে।

কি।

আমি যাব।

রান্নাঘরে!

হ্যাঁ।

পারবি?

পারবো।

যা।

মিত্রা কোমরে কাপরটা গুঁজে নিলো। ছুটে চলে গেলো। ছোটোমা ওকে দেখে বললো, আমি বেরে দিই তুই আর নীপা দিয়ে আয়।

মিত্রা খুব খুশি।

রাতে কলা পাতা। থালা নয়।

আমি সুরোমাসিকে বললাম কাকার খাওয়া হয়ে গেছে?

হ্যাঁ খাইয়ে শুইয়ে দিয়েছি।

বেশ করেছো।

আমি একবারে ধারে। আমার পাশে বড়োমা তার পাশে মিত্রা, ছোটোমা, নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই, নীপা এরপর সবাই লাইন দিয়ে বসেছে, অনাদিরা আমাদের ঠিক অপজিটে বসেছে। কাঞ্চন, লতা দেখলাম বসলো না। কাকীমা-সুরোমাসি, ছোটোমা, নীপা, মিত্রাকে ঠেলে রান্নাঘর থেকে বের করে দিয়েছে। ওরা এসে বসলো।

তুই এখানে কেন?

কেন? তুই তো বড়োমা, ছোটোমার মাঝখানে বসছিস।

না। তুই আমি বড়োমা, ছোটোমার মাঝখানে বসবো।

বুঝেছি, মাথায় রাখবি আমার পাতে হাত দিতে পারবি না।

এই শুরু করলি দু-জনে।

ইসলামভাই, নিরঞ্জনদা মুচকি মুচকি হাসছে।

আমি বসে পরলাম, বড়োমা আমার আসনে গেল।

খাওয়া শুরু করলাম।

নিরঞ্জনদা বললো মিত্রা তুই তো সব টেস্ট করেছিস?

মিত্রা মাথা দোলালো।

কোনটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে।

এখন বলবো না।

কেন-রে!

বুবুন নেবে না, ওর পাতেরটা খেতে হবে না।

নিরঞ্জনদা বিষম খেলো। বড়োমা হাসছে। ছোটোমা মুখে হাত চাপা দিয়েছে। আমি গম্ভীর। নীচু হয়ে খেয়ে যাচ্ছি।

কটা মাছের ডিমের বড়া খেয়েছিস। আমি বললাম।

বেশি না পাঁচটা।

সকাল থেকে পটি করেছিস?

না।

এখানে কিন্তু এ্যাটাচ বাথরুম নেই।

জানি তোকে বক বক করতে হবে না। মাঠে তো যেতে হবে না। আবার ঝক ঝকে লাইট আছে।

অনি। ছোটোমা ডাকলো।

আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম।

তুই ওর পেছনে লাগছিস কেন?

জানো ছোটোমা, বড়োমা এখন শুনতে পাবে না, যেই মিত্রা বলবে অমনি বড়োমা শুনতে পেয়ে যাবে।

বড়োমা হাসতে হাসতে বললো, তুই থাম বাপু।

লতা আমার পাশে একটা বাটি রেখে গেল। বুঝলাম চিংড়ি মাছের টক।

তোর এই বাটিটা এখানে রাখ। মিত্রা সঙ্গে সঙ্গে বললো।

কেন?

তোর স্পেশাল।

তোকে দেবে।

তোর মতো মেখে দেবে না।

সুরোমাসি মুখে কাপর চাপা দিয়ে হাসছে।

নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই মুখ তুলছে না। মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে, অনাদিরাও হাসছে।

অনাদি। নিরঞ্জনদা ডাকলো।

হ্যাঁ দাদা।

বাজারের জায়গাটা কার রে?

অনাদি নাম-ধাম-ঠিকানা বললো।

বাজারের প্রসিডেন্ট কে?

বাসু।

কোন জন?

অনাদি দেখাল, বাসু মুখ তুললো।

বাসু?

বলুন।

কাল ওকে একবার সকালে ডেকে আনিস। কথা বলবো।

ঠিক আছে।

তোরা ওর সঙ্গে কথা বলেছিস?

হ্যাঁ।

কি বুঝলি?

দিয়ে দেবে।
মিত্রা আমাকে খোঁচা মারলো। ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো কি।
আমি মাথা নীচু করলাম, এবার বড়মার দিকে ঢলে পরলো বড়মাকে জিজ্ঞাসা করলো, বড়মা ওকে কি বললো, ও আবার খেতে শুরু করে দিলো।

আমি নিরঞ্জনদাকে বললাম, সঞ্জু মেশিনের কোটেশন নিয়ে এসেছে।

কে সঞ্জু?

সঞ্জু মুখ তুলেছে, খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

তোমারও কি ওখানে দোকান আছে নাকি?

হ্যাঁ। ও সক্রেটারি। অনাদি বললো।

ওরে বাবা অনি, এতো দেখছি পঞ্চায়েত, প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি সব তোর বাড়িতে হাজির। তোর আর চিন্তা কিসের।

নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকাল। মিত্রা হে হে করে হাসছে।

তোমারটা বললে না?

আমি তো ফাউ। তাই না মিত্রা।

মিত্রা বললো, এই দেখো এটা দারুন টেস্ট, একটু খাও।

উঠে গিয়ে আমার বাটি থেকে তুলে নিয়ে নিরঞ্জনদার পাতে দিল।

নিরঞ্জনদা ওর মুখের দিকে তাকাল।

এখনও এঁঠো করিনি।

এটা সকালে খেয়ে এলাম। পান্তার সঙ্গে দারুন লাগে।

কাল সকালে খাব, কাকীমা বলেছে।

আমার বাড়িতে চল তোকে খাওয়াব।

কবে নিয়ে যাবে?

তুই বল কবে যাবি।

বড়োমাকে বলো।

ভাবছি তোর বড়োমা আমাকে হুকুম করে নিয়ে এলো, এবার তোর বড়োমাকে হুকুম করে নিয়ে যাব।

এখনই করো না।

এখন না, পরে। কয়েকটা কাজ আছে। সেরে নিই।

বুবুন যাবে না।

কেন রে!

বড় খ্যাচ খ্যাচ করে, আমি, বড়োমা, ছোটোমা।

নিরঞ্জনদা হাসছে।

তুই নিলি না। আমার দিকে তাকিয়ে মিত্রা বললো।

না। তুই খা।

বললাম বলে রাগ করলি।

না।

তাহলে আমিও খাব না।

রেখেছিস কোথায় সব তো খেয়ে নিয়েছিস।

ওই তো রয়েছে।

ওটুকু তুই খা। কাল নিজে মেখে পান্তা দিয়ে সাঁটাবো।

দেখছো বড়োমা, কিরকম করে।

ঠিক আছে দে। আমি একটু খেলাম।
-বড়মার পাত থেকে কি কি সাঁটালি। একেবারে ঠেসে নিয়ে বসেছিস।
-তুইতো ছোটোমার পাত থেকে একটা মাছ নিলি।
-তোর থেকে কম।
-বলেছে। মুখ ভ্যাংচালো।

আঙুল চাটলি না।

আচ্ছা অনি তোরও….। ছোটোমা বললো।

হাসলাম।

খাওয়া শেষ হোক চাটবো।
-এখনো শেষ হয় নি।
-বড়মার পাতে চিংড়ি মাছটা আছে, বড়মা দিক ওটা সেঁটে নিয়ে চাটবো।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, ইচ্ছে করে বললো
-অনি নে।
-না ওকে না আমাকে, কখন থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে আছি।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসছি।

তোর অনারে জব্বর খাওয়া হলো বুঝলি মিত্রা। নিরঞ্জনদা বললো।

কালকের মেনুটা আরও স্ট্রং।

কেন!

মুন্নাভাই স্পনসর করছে।

তাই নাকি?

ও বাড়িতে রান্না হবে।

এ বাড়িতে নয় কেন?

ঠাকুর আছে।

ও।

উঠি এবার।
-তোমার পেছন পেছন আমিও যাচ্ছি।
মিত্রা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
-কি হলো।
-দেখো না বুবুনটা চিংড়িমাছটা খেয়ে নিচ্ছে, হাফ দে।
নিরঞ্জনদা হাসছে। ইসলাম ভাই হাসছে।
ছোটোমার পাতে একটা আছে। আমি বললাম।
-তুই ওখান থেকে হাফ দে আমাকে আমি এখান থেকে হাফ দিচ্ছি তোকে।
তাই করলাম। বড়মা ছোটমা হাসছে।

নিরঞ্জনদা উঠলো, আমিও পেছন পেছন বেরিয়ে এলাম।

অনাদিরা সবাই চলে গেল। সঞ্জুর দুটো কাজের ছেলে রয়েছে।

আমি বললাম সব লাইট জেলে আর লাভ নেই বুঝলি, যে কটা প্রয়োজন জ্বেলে রাখ।

আমি আমার ঘরে চলে এলাম। নতুন পাজামা পাঞ্জাবী ছেড়ে আমার চিরাচরিত পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম। জানলাটার ধারে এসে বসলাম। লাইটটা ইচ্ছে করে নেভালাম না।

মনে পড়ে গেলো আজ সন্ধ্যার ঘটনা। কেমন যেন সব ওলট পালট হয়ে গেল।

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কিছু ইচ্ছে থাকে।

সেই ইচ্ছেগুলো পুরন করার জন্যই আমাদের ভাবনা চিন্তার পরিকাঠামোর রদ-বদল ঘটে নিরন্তর। আমি আমার চিন্তায় মগ্ন। বড়োমা বড়োমার মতো। ছোটোমা ছোটোমার মতো। আর মিত্রা আছে মিত্রাকে নিয়ে। ও জানে ওর বুবুন আছে।

সবচেয়ে বেশি বিপদজনক এই নির্ভরশীলতা। তাও আবার অন্ধের মতো। তারমানে আমার ভাল খারাপ সব তোমার। মাঝে মাঝে মিত্রার ওপর রাগ হয়। অভিমান হয়। আবার দুঃখও হয়। সত্যি তো ওরই বা কি করার আছে। এইরকম একটা পজিশনে ও যে পড়তে পারে, এটা ও কোনওদিন কল্পনাও করতে পারেনি। কলেজ লাইফে ওকে যতটুকু দেখেছি, তাতে এটুকু বুঝতাম, মিত্রা পয়সাওয়ালা ঘরের মেয়ে, কিন্তু ওর মধ্যে কোনও দম্ভ ছিল না, কোনওদিন দেখতেও পাইনি। তবে চলনে বলনে একটা বনেদিয়ানার ছাপ ওর মধ্যে সব সময় ছিল।

কিরে একা একা কি করছিস?

পেছন ফিরে তাকালাম। ছোটোমা কখন পাশে এসেছে বুঝতে পারিনি।

পোষাক বদলানো হয়ে গেছে? 

আমার কাছে এগিয়ে এলো, আমি সোজা হয়ে বসলাম।

ওরা শুয়ে পরেছে।

না বিছানা হচ্ছে।

মিত্রা গেল কোথায়?

বাবাঃ এরই মধ্যে চোখের আড়াল করতে চাইছিস না যে?

সেরকম কিছু না। ওষুধ গুলো খেয়েছে।

হ্যাঁ।

তুমি এই সময়?

কেন আসতে নেই বুঝি?

এসো, বসো।

আমি খাটটা দেখালাম।

না বাবা যাই অনেক কাজ, ভজু দিদির হাঁটু মালিশ করছে, কইরে আয়, আর লুকিয়ে থাকতে হবে না।

মিত্রা ঘরে এলো।

তোকে কিরকম সাসপেনসের মধ্যে রাখলাম বল। ছোটোমা বললো।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

মিত্রা বিকেলের পোষাকেই রয়েছে, এখনও চেঞ্জ করেনি।

সব কিছু করে এসেছিস তো, এখানে কিন্তু কিছু পাবি না। সেই আগের বারের মতো অবস্থা হবে।

হ্যাঁরে বাবা হ্যাঁ, ছোটোমাকে জিজ্ঞাসা কর।

আমার জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই। অসুবিধে হলে ও বাড়িতে গিয়ে বড়োমার কাছে শুয়ে পর।

উরি বাবারে, অনি তুই কি হয়েছিসরে!

কেন?

আজকের দিনে ও দিদির কাছে শোবে!
-এটাতো আমার ঘর না এটাচ বাথরুম আছে সামলে দেবো।
-এটা কার ঘর।

হেসে ফেললাম।

যাই বাবা, তোর জিনিষ তুই সামলা।

চলো তোমায় এগিয়ে দিয়ে আসি।

না। আমি যেতে পারব।

নিচের দরজাটা বন্ধ করতে হবে তো।

ছোটোমার সঙ্গে নিচে নামলাম।

সব ঠিক আছে ও বাড়িতে?

তোর ব্যবস্থা, ত্রুটি থাকতে পারে।

তখন আমার প্ল্যানগুলো সম্বন্ধে কিছু বললে না।

কি বলবো। সব ঠিক করে রেখেছিস।

তুমিও নিরঞ্জনদার মতো কথা বলছো।

ছোটোমা আমার দিকে তাকাল। দুপুরে কি স্বপ্ন দেখলি বললি না তো।

বলবো। পালিয়ে যাচ্ছি নাকি। মল্লিকদাকে সব জানিয়েছ?

শুধু মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি কিলবিল করে তাই না।

তুমি খুব ভালো ব্রিফ করো।

তোদের পাশে থেকে শিখে গেছি।

আমি নীচু হয়ে ছোটোমাকে প্রণাম করলাম। অনেক দায়িত্ব তোমরা বাড়িয়ে দিলে।

ছোটোমা আমার কপালে চুমু খেল, তুই কি নিতে চাসনি?

চাইনি বললে মিথ্যে বলা হয়, একটু সময় চেয়েছিলাম। মাটিটা এখনও সামান্য নরম আছে।

আমরা আছি, তোর ভাবনা কি। যা দরজা বন্ধ কর।

ছোটোমা চলেগেল, ও বাড়ির বারান্দায় উঠল, আমি দরজা বন্ধ করে চলে এলাম।

মিত্রা খাটের ওপর বসে বসে পা দোলাচ্ছে।

কি হলো রে জামাকাপর ছাড়।

তুই ছোটোমাকে বললি কেন?

কি বললাম।

আমি পটি করেছি কিনা।

আমি কি পটির কথা উচ্চারাণ করেছি।

ছোটোমা বোকা, না।

বাবাঃ গোসা হয়ে গেল।

আমার কোনও প্রেসটিজ নেই।

আমি এগিয়ে গিয়ে ওর দুটো গাল টেনে ধরলাম।

কি রকম দেখতে লাগছে জানিষ? হিরিম্বার মতো।

উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জাপ্টে ধরলো।

কি হলো। জামা কাপর ছাড়।

বড়োমা বারন করেছে।

কেন?

জানিনা।

তাহলে কি হবে?

তুই বল।

ছেরেনে। কে দেখতে আসবে। কাল সকালে আবার পরে নিবি।

ইসলামভাই একটা দারুন নাইটি দিয়েছে। পরবো।

পর।

দাঁড়া আলমাড়ি থেকে বার করি।

মিত্রা আলমাড়ি খুললো। হ্যাঁরে বুবুন এটা কিরে।

ইসলামভাই-এর মেশিনটা দেখাচ্ছে।

কেন তুই জানিস না ওটা কি?

তখন দেখে আমার আত্মারাম খাঁচা।

কেন?

তুই কবে এসব ব্যাবহার করতিস! তারপর ভাবলাম ইসলামভাই হয় তো তোকে রাখতে দিয়েছে।

রেখে দে।

এই দেখ ইসলামভাই-এর দেওয়া নাইটিটা।

দুটো ফিতের ওপর পুরোটা ঝুলছে। হাল্কা আকাশী কালারের। মিত্রা বুকের ওপর রেখে বললো, ভাল লাগছে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম।

একবারে হাত দিবি না।

তাহলে শুয়ে পরি।

শো-না তারপর দেখবি।

আমার ঘুম পাচ্ছে। কালকে ঘুমতে দিসনি।

আমি খাটের কাছে চলে এলাম। চিতপটাং হয়ে শুয়ে পরলাম।

মিত্রা আলমাড়ি বন্ধ করে কাপর খুলতে শুরু করলো। আমি বিছানায় হেলে পরে ওকে দেখছি। সত্যি অনেক মেয়ের শরীরের সঙ্গে শরীর মেশালাম কিন্তু মিত্রার সঙ্গে যতবার একসঙ্গে শুয়েছি ততবারই একটা আলাদা অনুভূতি অনুভব করেছি। একটা আলাদা অনুভূতি। বার বার নিজের মনকে প্রশ্ন করেছি এটা কেনো। মিত্রার মতো তাদের দিক থেকেও সমান রেসপন্স পেয়েছি, তবু মিত্রা আলাদা কেনো।

মিত্রা ব্লাউজের বোতাম খুলছে। ভীষণ ইচ্ছে করছিল ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। এতদিন ও আমার ছিল না। আজ ও আমার। সম্পূর্ণ আমার। তাহলে বাধা কোথায়? তবু উঠতে ইচ্ছে করলো না। একদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। একটা নিষ্পাপ মেয়ে কি থেকে কি হয়ে গেল।

বুবুন আটকে গেছে।

কিরে।

হুকটা শুতোর সঙ্গে প্যাঁচ খেয়ে গেছে।

টেনে ছিঁড়ে দে।

আয়না একটু খুলে দে।

আমি উঠে গেলাম। হুকটা শুতোর মধ্যে আটকে আছে। কিছুক্ষণ টানাটানি করলাম।

একটা হুক খুলতে পারিস না।

দু-দিন গাদা গাদা খেয়ে যা মুটিয়েছিস টাইট হয়ে আছে।

মিত্রা হাসছে। কালকের থেকে দারুন খাচ্ছি বুঝেছিস। আবার আগামী কাল।

আমি হুকটা খুলে ফেললাম। বুকটায় একটু  মাইটা হাতের ছোঁয়া দিলাম।

তুই হাত দিলি কেন?

বেশ করেছি। আমার জিনিষ আমি হাত দিয়েছি। তুই বারন করবার কে?

মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। খোলা বুক, ওর অন্তর্বাসের ওপর দিয়ে আমি ওর উষ্ণ বুকের স্পর্শ পেলাম।

তুই ঠিক বলছিস আমি তোর?

হ্যাঁ তোর বিশ্বাস হচ্ছে না।

কই তুই এতদিন বলিসনি?

আমি ওর চিবুকটা ধরে মুখটা তুলে ধরলাম। চোখের কোল দুটো চিক চিক করছে।

আবার কি হলো?

জানিস বুবুন আজ আমার জীবনের একটা স্মরণীয় দিন।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে। আয়ত চোখদুটো থিরি থিরি কাঁপছে।
আমারও।
এই দিনটার জন্য কতদিন অপেক্ষা করেছি।

মিত্রা চোখ নামিয়ে নিল।

বড়োমা যেদিন ডেকে বললো তখন বুকটা কেঁপে উঠেছিল, আমি শুধু বড়োমাকে বলেছিলাম, ও আমাকে মেনে নেবে!

বড়োমা শুনে কি বললো?

বড়োমা বললো, যে তোর জন্য এত করতে পারে, সে তোকে না ভালোবাসলে করে কি করে।

আমি বড়োমার কথা বিশ্বাস করতে পারিনি। তুই বিশ্বাস কর বুবুন।

মিত্রা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে রয়েছে।

সেইদিন মিটিং-এর পর তুই আমার ডাকে সাড়া দিলি না। মনটা খারাপ হয়ে গেল। অফিস থেকে বরিয়ে আসার পর তোকে পাগলের মতো ফোন করেছি। তোর ফোন স্যুইচ অফ। তুই এতো বড়ো একটা কাজ করলি। ফার্স্ট সারপ্রাইজটা তোকে দেব ভেবেছিলাম। তারপর ওই বাসস্টার্ডটা ফোন করলো।

মিত্রা চোখ মুছলো।

ভাবলাম যাই। আজই শেষ মোলাকাত ওর সঙ্গে। একটা হেস্তনেস্ত আমাকে করতে হবে।

একবার দেখা করে মনের ঝাল কিছুটা হলেও মিটিয়ে আসি।

যেতে আমাকে উল্টোপাল্টা কথা বললো। আমি তোকে নিয়ে শুই….যা নয় তাই। এতদিন সহ্য করেছিলাম, সেদিন জীবনে প্রথম, ওকে ঝেড়ে দিলাম।

তোকে আবার ফোন করলাম। স্যুইচ অফ। দিশেহারার মতো লাগল।

মল এলো। আমাকে দুজনে নিয়ে গেল পিয়ারলেস ইনে। খাওয়াল। বললো ম্যাডাম আপনি ভুল করছেন। অনি আপনাকে ইউটিলাইজ করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। দেখলেন না কি ভাবে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিল। আমি ওকে ছারব না, এটা মনে রাখবেন।

আমাকে কয়েকটা ব্ল্যাঙ্ক স্টাম্প পেপারের ওপর সই করতে বললো। আমি করিনি। সোজা বেরিয়ে এলাম। কি মনে হলো জানি না, মাথার মধ্যে খালি চক্কর কাটছে, সত্যি তুই আমাকে বিট্রে করবি।

নিজেকে ঠিক বোঝাতে পারলাম না। সোজা চলে গেলাম ক্লাবে আকণ্ঠ মদ গিললাম। ভাবলাম আর কিছু হোক ছাই না হোক কয়েকঘণ্টার জন্য রিলিফ পাওয়া যাবে। তারপর জানি না।

সকালে বুড়িমাসির কাছ থেকে সব শোনার পর, আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। বার বার একটা কথাই মনে হলো, মুরগীকে তুই দানা খাওয়াচ্ছিস জবাই করার জন্য।

আমার শেষ বিশ্বাসের আশ্রয়টুকু ভেঙে যেতে বসেছে। আমি সোজা চলে এলাম দাদার বাড়িতে। বিশ্বাস কর তোর কাছে জবাব দিহি করতে এসেছিলাম। তোকে মারতে চাইনি। মিত্রা ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো।

কাঁদিস না। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। সেদিনের ঘটনায় আমি রাগ করিনি। আমার একটুও অভিমান হয়নি।

হয়নি বলেই তুই রাতে আমাকে ওই ভাবে বুক দিয়ে আগলে রাখতে পেরেছিলি।

আমি মিত্রাকে আবেগে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলাম।

স্বগতোক্তির স্বরে মুখ দিয়ে অস্পষ্টভাবে বেরিয়ে এলো।

মিত্রা আমার মিত্রা।

আমি মিত্রাকে আরও গভীর ভাবে বুকের সঙ্গে চেপে ধরলাম।

তুই কাঁদিস না আজ। তুইই আমার সবচেয়ে বড়ো বল ভরসা। তুই দুর্বল হয়ে গেলে আমি দিশেহারা হয়ে পরবো।

আমি আর কোথাও যাব না বুবুন। তুই আমাকে দাদার বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা কর।

তোর বাড়ি?

ওই বাড়িতে বিষাক্ত নিঃশ্বাস আছে।

সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।

হবে না বুবুন। আমি জানি।

ঠিক আছে। এখন তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নে। রাত হলো।

আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিলাম।

কেঁদে কেঁদে চোখটা লাল করে ফেললি।

পেছন দিক ফিরে বললো, খুলে দে।

আমি ওর ব্রার ফিতেটা খুলে দিলাম, আবার একটু হাত দিলাম, ও হাত সরিয়ে দিল না।

তাড়াহুড়ো করিস না, আজকে অনেক প্ল্যান আছে মাথায়।

সে কিরে! কিসের প্ল্যান?

করার সময়ে দেখতে পাবি।

ঠিক আছে তুই প্ল্যান ভাঁজ, আমি একঘুম দিয়ে নিই।

মিত্রা আমার দিকে বাঁকা ভ্রু করে তাকাল।

আমি গিয়ে খটটাঙ্গে চিত হলাম।

বড়ো লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে ছোটো লাইটটা জ্বালাস।

আমি পারব না। তুই জ্বালিয়ে দিয়ে যা।

মিত্রা শায়া খুলেছে। উলঙ্গ অবাস্থায় মিটসেফের কাছে দাঁড়িয়ে নাইটিটা দেখছে।

মিত্রা।

মিত্রা ঘুরে তাকাল।

ওই দেখ।

কি!

তোর পায়ের কাছে।

এক ছুটে আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পরলো। আমি ওর উদম বুকে কান পাতলাম। ধক ধক করছে। জাপ্টে ধরে শুয়ে পরলাম।

শয়তান। খালি মাথায় কুট….।

আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম। মিত্রার নড়াচরা করার শক্তি নেই। ও কিছুক্ষণ ছটফট করে আমার বুকে মাথা রখলো।

নাইটিটা পরি।

হাসলাম।
-কি হবে পরে, সেই তো তোকে খুলতে হবে।
-তোরটা পরে আছিস কেনো, খোল।
-ওটা তোর জন্য রাখা আছে। দিলো আমার বুকে একটা দুম করে ঘুসি।
-উরি বাবারে দম বন্ধ হয়ে যাবে।
-যাক না।
-আমি মরে গেলে তোর ক্ষতি।
আমার মুখটা চেপে ধরলো। দিলাম হাতে কামড়ে।
-উ।
হাসলাম। আমার নুনু খামচে ধরলো।
-লাগছে রে লাগছে।
-বল আর কামড়াবি।
-না।
-ঠিক বলছিস।
-হ্যাঁ, তুই ছাড়।

মিত্রা আবার আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। পেটের কাছে বসে আমার পাঞ্জাবীটা তুলে মাথা থেকে টেনে বার করে দিলো, পেছন ফিরে পাজামার দরিটা খুলে আমার তলপেটের ওপর বসলো। খোল, না হলে ছিঁড়ে দেবো।

আমি পাজামাটা পা থেকে নামিয়ে দিলাম। মিত্রা আমার বুকে নেমে এলো।

আজ আমার সবচেয়ে সুখের দিন।

আগের দিনগুলো দুঃখের ছিল।

তুই জানিস না?

একটুও না।

তুই পাথর।

মানুষ কবে ছিলাম।

কেন আজ হলি। পীরবাবার থানের মাটি আমার কপালে ছুঁইয়ে দিলি।

আমি ওর দিকে তাকালাম।

এবার কিছু বল।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

আমার তখন খুব ভয় করছিল জানিস বুবুন। বারবার বাথরুম পেয়ে যাচ্ছিল।

কেন!

জানিনা। সব বোঝার পর তুই যদি রেগে যাস।

আমি মিত্রার মুখটা বুকে চেপে ধরলাম।

বিশ্বাস কর। শুধু আমি না বড়োমা, ছোটোমা, ইসলামভাই, নিরঞ্জনদা কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি।

আমি মিত্রার মুখটা বুক থেকে তুলে ধরলাম।

দাদা গতকাল রাতে বলেছিল, আমি ওকে চিনি। ও ওর ভালোবাসার মানুষকে ভীষণ ভাবে শ্রদ্ধা করতে জানে। তুমি বললে ও কোনওদিন না করবে না।

মায়ের হারটা কখন নিয়ে গেলি।

তুই ঘুমচ্ছিলি। আমি আস্তে করে ঘরে ঢুকে আলমাড়ি খুলে হারটা নিলাম। তারপর তুই কি বিড় বিড় করে বকছিস, কাছে গেলাম। দেখি তুই কাকে খুন করার কথা বলছিস।

ভাবলাম তুই বুঝেগেছিস। আমি মায়ের হার নিয়েছি। এক দৌড়ে ওবাড়ি। তারপর বড়োমা এলো। তুই কি স্বপ্ন দেখছিলি?

খুব বাজে একটা স্বপ্ন। ছোটোমাকে নিয়ে।

কি রে?

তোকে বলা যাবে না।

কেন?

আগে মিলিয়ে দেখি স্বপ্ন সত্যি হয় কিনা, তারপর।

তুই বললে আমি তোকে সাহায্য করতে পারি।
ঠিক আছে দরকার পরলে বলবো।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে।

বড়োমা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে।

জানি।

জানিস বড়োমা ভীষণ ডেঞ্জার।

আজ প্রথম জানলাম।

আগে জানতিস না!

চেষ্টা করিনি।

কেন!

ইচ্ছে হয় নি।

তোর ইচ্ছেটা বড়োমা আজ পুরন করে দিল।

কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেল।

কেন?

বড়োমার বাড়ির লোকগুলোর জন্য।

সত্যি বাড়ির লোকগুলো কেমন না।

হ্যাঁ। তোর বাড়ি বড়োমার বাড়ি সব এক। আবার তুই তাদের দিকটা যদি ভাবিস, দেখবি তারা তাদের জায়গায় ঠিক আছে। তারা তাদের মেয়েটাকে বানের জলে ভাসিয়ে দিতে পারে না।

তুই যেটা বলছিস ঠিক। কিন্তু একটা সময় তাকে দাও। সেটা না করে তোমাদের জেদটা তার ওপর চাপিয়ে দেবে কেন?

আমি মিত্রার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। আস্তে আস্তে মনে হচ্ছে ও আবার ঠিক হয়ে যাচ্ছে। সামন্ত ডাক্তার বলেছে, ওর ওপর কোনও চাপ দেওয়া যাবে না, সব সময় ওকে ফুরফুরে রাখতে হবে। মনের ওপর চাপ পরলেই সব শেষ। ব্যাপারটা অনেকটা শিশুর সঙ্গে যে ভাবে চলতে হয় সেই ভাবে চলতে হবে। আস্তে আস্তে ঠিক হবে। সময় লাগবে।

আবার তোর চোখের মনিদুটো স্থির হয়ে গেছে।

কই?

আমি দেখছি, আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে তুই কেমন চুপ হয়ে গেলি।

ঠিক আছে বল।
-আমার নুনুটা কিন্তু গরম খেয়ে যাচ্ছে।
-শয়তান।
-সত্যি তুই হাত দিয়ে দেখ।
মিত্রা হাত দিলো, আমি হাসছি।
-আমারটাও একটু একটু ঘসা খেয়ে গরম হয়ে গেছে।
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
-তোর এইটার একটা নাম দেবো ঠিক করেছি।
-তাই নাকি।
-হ্যাঁ।
-কি।
-মতি।
-সেতো মুক্তো।
-আমার কাছে তোর এটা মুক্তো।
-বাবা তুই আমার একটার নাম করণ করলে আমাকে তোর দুটোর নামকরণ করতে হয়।
-যাঃ।
-দাঁড়া একটু ভেবে নিই কি নাম রাখা যায়।
মিত্রা এই ফাঁকে দুবার ঘষাঘষি করে নিলো।
-দুষ্টুমি করছিস ভাবতে দিচ্ছিস না।
-তুই যখন করিস।
-আচ্ছা তোর নিচেরটার নাম যদি পোঁয়া দিই।
-যাঃ কি বিচ্ছিরি নামটা।
-তাহলে মুন্তি দিই।
-সেটা আবার কি রে।
-কি করে জানবো মনে হলো তাই বললাম।
-ওপরেরটা বড় মুন্তি আর নিচেরটা ছোটো মুন্তি।
-না ওপরেরটা তুই মুন্তি দিতে পারিস, মুনু থেকে মুন্তি বেশ মিষ্টি শোনাচ্ছে। কিন্তু নিচেরটার একটা নামকরণ কর।
-বিপদে ফেললি, এই সব মাল ইনস্ট্যান্ট আসে না।
-ভাবতে হবে না, পরে ভাবিস, তারপর দেখবো ভাবতে ভাবতে ভোর করে দিয়েছিস কালকের মতো, তারপর বড়মা এসে দরজা ধাক্কাবে অনি ওঠ।
হেসে ফেললাম।
-তুই ভীষণ শয়তান।
-তোর মুন্তিটা একটু মুখে দে।
-আগে তুই বল একটা কথা দিবি।
-কি।
-আগে হ্যাঁ বল।
-না জেনে তোকে হ্যাঁ বলবো কেনো।
-তারমানে তুই আমাকে বিশ্বাস করিস না।
আমি মিত্রার চোখের দিকে তাকালাম, চোখ দুটো চক চক করছে, কিছু একটা চাওয়ার প্রবল আর্তি।
-ঠিক আছে দেবো।
-তোর জীবনটা আমাকে কিছুটা দেনা, আবার তোকে ফিরিয়ে দেবো।
আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকালাম, কি বললো মিত্রা এর অর্থ ও জানে, বড়মার কথাটা মনে পরে গেলো, তোরা না পরলে আমায় দিস মানুষ করবো। মেয়েদের মাতৃত্বে পূর্ণ প্রাপ্তি।
আমি হাসতে হাসতে ওকে চুমু খেলাম।
-বইতে পারবি।
-পারবো। তুই দিয়ে দেখ।
-দেবো।
মিত্রা আমার মাথাটা জাপ্টে ধরে আমাকে চুমু খেলো।

ও আর ঠোঁট ছাড়ে না। আমি ওর পিঠ থেকে হাত সরিয়ে আরো নিচের দিকে নামলাম, ওর পাছুতে হাত দিলাম। ও ঠোঁট ছেড়ে আমার বুকে ঠোঁট রাখলো। আমি ওর পাছু থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে এসে, ওর মুন্তিতে হাত দিলাম।
আমর মুখের কাছে নিয়ে আয়। ও যেন শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছে, সেই ভাবে মুন্তিটা আমার মুখের কাছে নিয়ে এলো, আমি ওর মুন্তির নিপিলে মুখ দিয়ে চুক চুক করে চুষলাম।
-দাঁত দিস না।
আমি হাসলাম। তোরটা ভিজে গেছে।
-তোরটাও।
-কি করে বুঝলি।
-আমার তলপেটটা হর হর করছে।
-আমার মতির উল্টোদিকটা থেকে ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে পরছে।
-ধ্যাত।
-হাত দিয়ে দেখ।
মিত্রা আমার শরীর থেকে নেমে আমার দিকে পাছুটা করে আমার মতিতে হাত দিলো।
-কি রেগে গেছে রে। এরি মধ্যে গর্জন করতে শুরু করেছে।
-ওর আর দোষ কি বল। ওর বন্ধুকে তুই লোভ দেখালি তারপর দিবিনা দিবিনা করছিস ও রাগবে না।
-একটু মুখ দিই।
-আমি না বললে তুই দিবি না।
-না বললেও দেবো।
হাসলাম। আমি একটু দিই।
-বেশিক্ষণ না। হয়ে যাবে কিন্তু।
-কেনো।
-সকাল থেকেই আজ ভিঁজে ভিঁজে লাগছে।
-কেনো।
-জানিনা, যখনই তোর কথা মনে হচ্ছে তখনই ভিঁজে যাচ্ছে।
-হ্যাঁরে আমাদের কীর্তি-কলাপ ছোটোমা জানে।
-জানেনা, আন্দাজ করে।
-তুই প্রেসটিজে পুরো গ্যামাকসিন মেরে দিলি।

মিত্রা আমার মতির জামা খুলে মুখটা মুছিয়ে দিলো। তারপর মুখ দিলো।
আমিও মিত্রার মতিতে হাত রাখলাম। সত্যি ভিঁজে একেবারে স্যাঁতসেঁতে। আমি ওর দুই ঠোঁট ফাঁক করে ওর ছোট্ট বীজে জিভ দিলাম, মিত্রার কোমরটা কেঁপে উঠলো। জিভটা ওপর থেকে নিচ পযর্ন্ত দুবার ওঠা নামা করালাম, টেরিয়ে টেরিয়ে ওকে দেখছি, আমার মতি পুরোটা একবার মুখে ঢুকিয়ে নিচ্ছে আবার বার করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার বিচিটা ওর মাই যেরকম করে টিপি সেই ভাবে টিপছে।
-বুবুন তোরটা দশ আঙুল, মানে কত ইঞ্চি।
-মাপিনি কালকে ফিতে দিয়ে মেপে তোকে বলবো।
-নে আর পারছি না।
-কর।
না আজ আমি করবো না, তুই করবি, আমি খালি গ্রহণ করবো।
হাসলাম।
মিত্রা শুয়ে পরলো। আমি উঠে বসলাম। মিত্রা বালিশটা মাথায় দিয়ে একটু উঁচু করে নিলো। পা দুটো দুপাশে ছড়িয়ে দিলো।
কিরে একবারে দিয়ে দেবো, না একটু একটু করে।
মিত্রা হাসলো।
আমি ওর দুপায়ের মাঝখানে হাঁটু মুড়ে বসলাম। আমার মুন্তির জামাটা টেনে নিচে নামিয়ে দিয়ে মুন্ডিটা ওর মুন্তিতে ঘষলাম, মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
-হাসছিস কেনো।
-তোর প্রিপারেশন দেখে।
-পাটা একটু তোল।
-না এই ভাবে কর।
-লাগলে জানি না।
-ব্যাথা দিস না তাহলে ভালো লাগবে না।
আমি ওর মুন্তির গর্তে রেখে হাল্কা করে চাপ দিলাম।
-বুবুনরে তোরটা কি মোটা হয়ে গেছে।
-আমারটা মোটা হয় নি তোর গর্তটা ছোটো হয়ে গেছে।
-ছোটো হবে না কতদিন পর করছিস বলতো।
-এই তো কালকে করলাম।
আমি একটু চাপ দিলাম, বেশ কিছুটা ভেতরে গেলো, মিত্রা ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরেছে।
-সত্যি মিত্রা মনে হচ্ছে তোরটা আঠারো বছরের কচি।
-গেছে পুরোটা!
-আর একটু বাকি আছে।
দিলাম জোরে চাপ। পুরোটা চলে গেলো।
-আয় আমার বুকে আয়।

আমি আস্তে আস্তে ওর বুকে আশ্রয় নিলাম।
-লাগছে?
-একটু। এই জন্য তোকে বলি রোজ একবার করিস।
-চোখ খোল।
-দাঁড়া একটু সহ্য করে নিই তারপর।
-তাহলে বার করে নেবো।
-দাঁড়া না বিরক্ত করিস কেনো, কতদিন পরে করছিস বলতো।
আমি ওর মুন্তিতে মুখ দিলাম, বোঁটা দুটো মটরদানার মতো শক্ত হয়ে গেছে। মিত্রা চোখ খুললো, চোখে পরিতৃপ্তির হাসি।
-এবার বেশ ভালো লাগছে।
-তুই এটাই সহ্য করতে পারছিস না, জীবন নিবি কি করে।
-মেয়েরা সব পারে, যা ছেলেরাও পারে না।
আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, কোমর দোলানো শুরু করলাম, মিত্রা পাদুটো দুপাশে আরো সরিয়ে দিলো।
-কিরে লাগছে?
-না কর।
আমি আবার কোমর দোলানো শুরু করলাম। মিত্রা আমার ঘারটা দুহাতে চেপে ধরেছে, আমি করছি, সামান্য আওয়াজ আসছে।
-তোর চুলগুলো খোঁচা খোঁচা।
-হ্যাঁ, তিনদিন সেভ করিনি।
-এখানে করবি কি করে।
-তুই এনে দিবি।
-নীপার কাছ থেকে চেয়ে নিবি।
-ধ্যাত।
-ধ্যাত কেনো। ও সেভ করে না।
-চাওয়া যায়।
-দূর তুই করতো, বেশ ভালো লাগছে এবার।
আমি এবার একটু দ্রুত লয়ে শুরু করলাম, মিত্রা দেখছি আমার মতিকে ওর মতির ঠোঁট দিয়ে চেপে চেপে ধরছে, মনে হচ্ছে যেনো আরো ভেতরে টেনে নিতে চাইছে।
-কিরে তোর হবে।
-হোক না তোর কি ভেতরে ফেল, এখন কোনো ভয় নেই, হলে হবে।
-যাঃ কি বলবে সবাই।
-বলুক আমি বুঝে নেবো।
আমি বুঝতে পারছি আমার আর বিশেষ সময় নেই আমি শেষ চাপানটা চাপালাম, মিনিট খানেক হাপরের মতো করে গেলাম। তারপর মিত্রার বুকের ওপর শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে প্রাণপণে যতটা ভেতরে ঢোকানো যায় ঢুকিয়ে দিলাম, মিত্রা দেখলাম নিচটা সামান্য ওপরের দিকে তুলে ওর মুন্তির ঠোঁট দিয়ে আমার মুন্তিকে কামড়ে ধরে আরো ভেতরে ঢুকিয়ে নিতে চাইছে। আমার বুকটা হাপরের মতো ওঠা নামা করছে, মিত্রা চোখ বন্ধ করে পা দুটো ওপরের দিকে তুলে ধরলো, তারপর আস্তে আস্তে পাদুটো নামিয়ে নিয়ে আমার পাছুর ওপর রাখলো।

কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ, মিত্রার মুন্তি আমার মুন্তিকে ক্রমাগত কামড়ে কামড়ে ধরে শেষ বীজটুকু শুষে নিতে চাইছে। মিত্রার চোখ বন্ধ। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি। মিত্রা চোখ খুললো, চোখে পরিতৃপ্তির হাসি।
-কিরে?
-মনে হচ্ছে তুই আমাকে তোর জীবনটা দিলি।
-যাঃ।
-হ্যাঁরে, তুই বলেছিলি না পীরবাবার কাছে চাইতে, যা চাইবো তাই পাবো, আমি তোর জীবনটা চেয়েছিলাম।
মিত্রার চোখে চোখ রাখলাম। চোখের কোলে মুক্তদানা টল টল করছে। আমি ওর ঠেঁটে ঠোঁট রাখলাম।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/CZGfe3z
via BanglaChoti

Comments