সুন্দর শহরের ঝাপসা আলো (পর্ব-৪৬)

সুন্দর শহরের ঝাপসা আলো
লেখক – Jupiter10 & Nilr1

পর্ব-৪৬
—————————

II ১ II

“স্যার, ব্রেকফাস্ট দেব?” নীল ঊর্দি পরা রেলের প্যান্ট্রি কারের কর্মচারীর প্রশ্নে সঞ্জয় জানালা থেকে ডান দিকে মুখ ফেরায়।
প্যান্ট্রি কারের বয়টির মুখে বাধ্য হাসি।
“কি আছে ব্রেকফাস্টে?” সঞ্জয় মার ডান হাতটা নিজের বাম হাতে আবার মুঠো করে ধরে। বুড়ো আঙুল দিয়ে মার হাতের পিঠে বারবার আদর করে। সেই সামান্য আদরেই সুমিত্রার সারা শরীরে শিরিশিরে ভাল লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে যায়। সে পর্দা সরানো কাচের জানালার দিয়ে পিছন দিকে হুড়হুড় করে ছুটে যাওয়া প্রকৃতির দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে। কত্তদিন পর সে বাড়ির বাইরে! মুক্তির কী অপূর্ব স্বাদ!
“ভেজে ইডলি বড়া হবে, উপমা হবে, নন-ভেজে পাঁউরুটি বাটার টোস্ট আর ওমলেট, আলুভাজা,” বয়টি নামতা পড়ার মত সহজ অভ্যস্ততায় বলে।
“একটা ইডলি বড়া, একটা পাঁউরুটি বাটার টোস্ট দিন ভাই,” সুমিত্রা ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে।
আজ খুব ভোরে উঠে তারা ট্যাক্সি ধরে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে গেছিল। সকাল ছটা পাঁচের গণদেবতা এক্সপ্রেস ধরতে কোনও অসুবিধা হয়নি।  তবে তাদের কামরা এঞ্জিনের একেবারে প্রায় সামনের দিকে।  স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অনেকটা হাঁটতে হয়েছিল।  যদিও তাদের দুটো সুটকেসই সঞ্জয় বইছিল, তবুও সুমিত্রা বারদুয়েক জিজ্ঞেস করেছিল, “আর কতদূর আমাদের কামরা?”
বৈশাখের প্রথম দিন। গ্রীষ্মকালের শুরু যে হয়ে গেছে ভোর সাড়ে পাঁচটার দীর্ঘ হাঁটাতেই বোঝা যাচ্ছিল। যখন কামরায় উঠল তারা তখন তাদের সারা শরীরে বিনবিনে ঘাম ফুটেছে। সঞ্জয় তাদের সুটকেস দুটো নিয়ে প্রথমে তাদের কামরায় উঠে মার জন্যে দরজার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।  সুমিত্রা ডান হাত ঊঁচু করে ট্রেনের দরজার হাতল ধরে কামরায় ওঠে।  সেই খন্ড মুহূর্তে সঞ্জয়ের সমস্ত চেতনা ঘনীভূত হয় মার শরীরে। মার সাদা ব্লাউজের ডান বগলে ঘামে ভেজা ছোপ। যেন কালো অন্ধকার ফুটে উঠেছে ঘামে ভেজা ব্লাউজের বগলে।  আধো স্পষ্ট ভাবে যেন দেখা যায় মার বগলের কালো চুল! সঙ্গে সঙ্গে সঞ্জয় পুরুষাঙ্গে কাঠিন্য অনুভব করে। মাকে এমন পাগলের মতো চাওয়া তার কোনওদিন  ফুরোবে না।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় কাচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই মা ছেলের শরীরে ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপ্টা লাগে। সুমিত্রা যারপরনাই অবাক হয়ে পিছন থেকে তার বেল্ট ধরে টানে। সঞ্জয় পিছনে ফিরে দেখে মার ঘামে ভেজা তেল চকচকে মুখে অবাক হাসি। সে এই হাসির জন্যে তার সারা জীবন দিয়ে দিতে পারে।  এই হাসি দেখার জন্যেই সে এসি চেয়ার কারের টিকিট কেটেছিল দুইসপ্তাহ আগে। ছেলেবেলায় তার গরীব মা কোনওমতে আনরিজার্ভড সেকেন্ড ক্লাসের টিকিট কেটে নিয়ে গেছিল গ্রামের বাড়িতে। আজ মাত্র তিনশ টাকার বিনিময়ে সে এই অমূল্য সুখের হাসির পেয়েছে।  তার আর কিছুই চাইনা।
কামরার বাম দিকের একবারে পিছনের সিট দুটো তাদের।  ৬৯ আর ৭০ কামরায় কাচের দরজার পরেই। সিটের পিছনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা।  তাদের দিকে পিছন ফেরা আর সমস্ত সিট।  কামরাটা এখনও বেশ ফাঁকাই। কামরার যাতায়াতের পথের অপরদিকে তাদের ডানদিকের দুটো সিটে এখনও কোনও যাত্রী এসে বসেনি।
“মিতা, তোমার সুটকেসটা তুমি তোমার বড় সুটকেসটা আমাদের সিটের পিছনেই দাঁড় করিয়ে রাখতে পার,” বলতে বলতে সঞ্জয় তার ছোট সুটকেসটা তাদের মাথার উপরের র্যাকে রাখে। তার বুক কাঁপে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সবার সামনে সে মাকে আদরের নামে ডাকল। সুমিত্রাও আমূল কেঁপে ওঠে এই ডাক শুনে।
“আমি কিন্তু জানালার পাশে বসব,” সুমিত্রা আদুরে গলায় আবদার করে।
তাদের ট্রেন বর্ধমান ছাড়তেই ব্রেকফাস্ট এসে যায়। সবে সকাল আটটা।  কিছুক্ষণ পরেই বয় এসে তাদের সামনের সিটের পিছনে ভাঁজ করে রাখা ট্রে টেবিল খুলে তার উপরে খাবারের ট্রে রাখে।  সুস্বাদু খাবার। সুমিত্রা ইডলি প্লাস্টিকের ছুরি দিয়ে সাবধানে কাটে।  তারপর প্লাস্টিকের কাঁটা দিয়ে কাটা টুকরোগুলো সম্বরে ডুবিয়ে সাবধানে মুখে দেয়।  শীততাপ নিয়ন্ত্রিত তাদের কামরায় ট্রেনটার চলার তেমন শব্দ শোনা যাচ্ছে না বটে, কিন্তু বেশ দুলছে।  সুমিত্রাকে বাম হাতে ধরে রাখতে হচ্ছে খাবারের ট্রে।  সঞ্জয়ের খাবার অপেক্ষাকৃত শুকনো। মাখন লাগানো টোস্ট ওমলেট দিয়ে খেয়ে শেষ করে অনেক আগে। আর মৃদু হাসি মুখে মার খাওয়া দেখছিল।  সুমিত্রা টের পেয়ে হেসে মুখ ভ্যাংচায়, “এই পাজিটা!”
ব্রেকফাস্ট শেষ করে কামরার বাইরের কল থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসে সিটে বসে তারা কিছুক্ষণ পরেই।
সুমিত্রা কাচে ঢাকা জানালার পর্দা সামনের দিকে ঠেলে সরিয়ে দিতেই সূর্যের নরম আলো ঢোকে কাচ ভেদ করে। বাইরের দিকে চেয়ে থাকে।দূরে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ধানের ক্ষেত এবং কাঁচা পাকা বাড়ি। মাঝে মাঝে ইতিউতি ডোবা। তার মন কেমন করে। বাম গালে হাত রেখে জানালার বাইরে চেয়ে থাকে সে সম্মোহিতার মতো।  হুড় হুড় করে স্মৃতির প্লাবন আছড়ে পড়ে তার চেতনায়। চোখের সামনে যেন দেখতে পায় সে তাদের মাটির দু’তলা বাড়িটিকে। টিনের উঁচু চাল। রাস্তার বহু দূর  থেকে দেখা যায়। বাড়ির সামনে ওই যে বিশাল উঠোন এবং চারিদিক ঘেরা মাটির তৈরি উঁচু পাঁচিল । উঠোনের বাম পাশে রান্নাঘর এবং তার পাশে  গোয়াল ঘর। তার বিপরীতে চাপা কল। ঘরের সামনে একটা বড় পীতকরবী গাছ।
কে জানে সেই গাছটা এখনও আছে কি না। আর সেই ঘরটাও আগের মতো আছে কি না!
নাকি ওর ছোড়দা দীনবন্ধু সেই ঘর ভেঙ্গে নূতন ঘর বানিয়ে ফেলেছে ?
সময়ের তালে গ্রামেও নিশ্চয়ই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। হয়ত মাটির কাঁচা ঘর ভেঙে নতুন ঘর তৈরি হয়েছে। রাস্তা পাকা হয়েছে।
বাড়ির যত কাছে আসে তারা, ততই যেন তার ছোট দাদা,ছোটবৌদি চন্দনা আর আদরের ভাইপো মলয় কেমন আছে জানতে সুমিত্রার প্রাণ যেন হাঁকুপাঁকু করে।
সুমিত্রার বড়দির সঙ্গে বহু দিন যাবৎ কোন যোগাযোগ নেই। বলতে গেলে বিয়ের আগে থেকেই নেই। দিদি ওর থেকে বয়সে তেইশ বছরের বড়। মেজদি সুমিত্রা তো মারা গেছে তার জন্মেরও আগে।  আর দাদা বলতে কেবল তার ছোড়দা দীনবন্ধুই আছে । ছোড়দাও চোদ্দ বছরের বড় তার থেকে। বড়দা ও মেজদা মারা গেছে, কতদিন হয়ে গেল তা।
কেমন হতো যদি তারা সবাই এখনও বেঁচে থাকতো? এই দশ বছর পর বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারতো? উৎসবের মেলা তৈরি হতো সারা পরিবার জুড়ে।
দুর্গাপুর সবে পেরোল।  এক বৃদ্ধ দম্পতি দুর্গাপুর থেকে উঠে তাদের ডানদিকের আইলের পর সিট দুটোতে বসলেন।  সুমিত্রা তাঁদের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে আবার জানালার দিকে তাকায়।
তাদের সামনের সিটে বসেছে একটি পরিবার। তারা চারজন।  মা বাবা ও কিশোর বয়সের দুই ভাই বোন। ট্রেনের আইলের দুই দিকেই পরপর চারটে সিট অধিকার করে রয়েছে তারা। ভাই বোন দুটি পাশাপাশি বসে নিজেদের মধ্যে সারাক্ষণ হাসাহাসি করছে। কিশোরটি মাঝে মাঝেই আড়চোখে সুমিত্রাকে দেখছে।  পাশের বৃদ্ধ দম্পতিটিও মাঝে মাঝে চোখ ফেরাচ্ছেন তাদের দিকে।
দেখে সঞ্জয়ের হাসি পায়। তার মার সৌন্দর্যের চ্ছ্বটায় সকলেই ঘায়েল হয়, সে ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছে।  নিভৃত এসি কামরায় মাকে ঘন ঘন আদর করার সুযোগ থাকবে ভেবেছিল সঞ্জয়। কিন্তু এত অনুরাগীর নজর উপেক্ষা করার অভ্যাস এখনও গড়ে ওঠে নি তার। তাই দুজনে পরস্পরের হাত ধরেই বসে ছিল তারা। অনেক্ষণ।  তারা দুজনের পরস্পরের নিবিড় কামনা যেন সঞ্চারিত হয়ে চলেছিল অনুক্ষণ এই তাদের ছুঁয়ে থাকা দুই হাতের মাধ্যমে।  এই ঠান্ডা এসি রেল কামরায় মধ্যেও তাদের দুই হাতের তালুতে বিনবিন করে ফুটে উঠছিল ঘাম। একসময় সঞ্জয় দেখে যে মার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। তার দুই নাকের পাটা ফুলে উঠছে। পূর্ণ ওষ্ঠাধর যেন আরও স্ফীত ও রক্তাভ।  সে টের পায় তার পুরুষাঙ্গ জেগে উঠেছে। সুমিত্রা আর যেন অপেক্ষা করতে পারেনা।
সিউড়ি স্টেশনটা যেন বড় তাড়াতাড়ি চলে এল। তারপর ট্রেন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়।
মাকে প্রশ্ন করে, “এমন ভাবে এক মনে জানালার দিকে তাকিয়ে কি দেখছো মা?”
সঞ্জয়ের কথার কোন উত্তর না দিয়ে সুমিত্রা পুনরায় জানালার দিকে চোখ রাখে।মা’র দেখাদেখি সঞ্জয়ও সেদিকে তাকায়। বাইরে গ্রামের দৃশ্য দেখে তারও মন জুড়িয়ে যায়। সত্যিই বীরভূম জেলা পশ্চিম বাংলার অন্যতম সুন্দর জেলা। ঠিক যেন তার মায়ের মতো। মা অপরূপা সুন্দরী হলেও তার মধ্যে একটা ভিন্ন বৈশিষ্ট  আছে।এমনটা তো নয় যে তার মা’ই বিশ্বের সেরা সুন্দরী। কিন্তু তার স্বভাব আচরণ তাকে অনন্যা বানায়।ঠিক এই জেলারও সেই রকম কিছু একটা বিশেষত্ব আছে। তাই হয়তো কবি্সাহিত্যিক, গীতিকারেরা এই জেলা কেই বেছে নিয়েছেন তাদের আরাধনার ক্ষেত্র হিসাবে।
সঞ্জয় নিজের বাম হাত দিয়ে মা’র ডান হাত শক্ত করে ধরে। অনেক ক্ষণ থেকেই তার ইচ্ছা ছিল এভাবেই একে অপরের হাত ধরে বাইরের মনোরম দৃশ্য দেখে যাত্রা উপভোগ করবে।

তাদের কামরা এখন সম্পূর্ণ ফাঁকা। কয়েকজন স্থানীয় লোক ছিল যারা আগামী স্টেশনে নামবে বলে দরজার সামনে চলে গিয়েছে।
কামরায় এখন একটা নীরবতা ছড়িয়ে রয়েছে। শুধু জানালা দিয়ে সামনের বস্তু দ্রুত গতিতে পেছনে সরে যাচ্ছে এবং মাঝে মাঝে ট্রেনের চাকার সঙ্গে লাইনের ঘর্ষণের মৃদু কম্পনের শব্দ ছাড়া আর কিছুই আসছিলো না কানে।
সুমিত্রা বলে, “ঘড়িতে এখন কটা বাজে দেখনা”।
সঞ্জয় মা’র হাত ছাড়তে নারাজ। তাই ডান হাত দিয়ে প্যান্টের ডান পকেটে রাখা সামসুং মোবাইলটা বের করে স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে নেয়।
“সকাল সাড়ে নটা সোনা”, বলে সঞ্জয়।
সুমিত্রা পুনরায় জানালার দিকে চোখ রাখে। মনে মনে বিড়বিড় করে, “সকাল সাড়ে নটা। মানে এখনও প্রায় এক দেড় ঘণ্টা”।
সঞ্জয় চোখ কপালে তোলে, “মানে এক ঘন্টা ট্রেন লেট আছে বলছ?”
সুমিত্রা তার দিকে চায়, “তাই নাকি? ট্রেন লেট আছে?
“তাছাড়া আবার কি?” শিডিউল অনুযায়ী রামপুরহাট স্টেশনে পৌঁছানোর কথা তো সকাল দশটা পাঁচে!”
ট্রেন রামপুরহাট ষ্টেশনে থামলে সেখান থেকে আবার তাদের বাস ধরতে হবে। পশ্চিমে আরও কুড়ি কিলোমিটার যেতে হবে। বাংলা এবং ঝাড়খণ্ডের সীমানার কাছাকাছি সুমিত্রার বাপের বাড়ি।
মা’র সঙ্গে সঙ্গে সঞ্জয়ও জানালার দিকে চোখ রেখে সেই দশ বছর আগের কথা মনে করে। তখন সে কত ছোট ছিল। মা’র সঙ্গে এভাবেই সেবারে মামার বাড়ি এসেছিলো। এতো দূর হওয়ায় সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে ছিল। মা’র কোলে মাথা রেখে শুয়ে বারবার জিজ্ঞেস করে ছিল, “আর কতক্ষণ মা?”
সে কথা পুনরায় মনে করে সঞ্জয় মনে মনে হাসে। আজ সেও তার মায়ের মতো বহুদিন পর তার মামা-মামি এবং মামাতো দাদা কে দেখবে।

প্রায় আধ ঘর পর তারা রামপুরহাট ষ্টেশন ছেড়ে বাস ধরে। সময় তখন সকাল এগারোটা।
বাস থেকে নেমে মা আর ছেলে দুজনে গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। গ্রামের রাস্তা এখন সরু হলেও পাকা। খানাখন্দ নেই। পরিষ্কার পথ। কেবল পথের দুপাশে লাল কাঁকর ছড়ান ও ধুলোভরা।  তাদের দুটো চাকা ওয়ালা সুটকেস রাস্তায় টেনে নিয়ে যেতে কোনও অসুবিধাই হয় না। চাকাগুলি দিব্যি গড়গড়িয়ে চলছে।  সুমিত্রা তার ভিটে মাটির গন্ধ পেয়ে স্মৃতি কাতর হয়ে পড়ে। ব্যকুল হয়ে ওঠে তার মন। যেন আর তর সয় না। আপন জনকে চোখে দেখা চাই এক্ষুণি। সে একটু থামে। মুখ তুলে ডান পাশে সঞ্জয়ের মুখের দিকে চায়, “এই, এইখান থেকে আর কিন্তু নাম ধরে ডাকা না। এখন থেকে আমি কেবল সঞ্জয়ের মা,” তার বড় বড় চোখ বাঙ্ময়। তাতে প্রেম, অনুরাগ ও সাবধানতা মিলে মিলে একাকার হয়ে গেছে।
“আমি জানি সোনামিতা আমার, তুমি একদম চিন্তা করবে না। তোমার এই বরটা জানে কেমন করে তার ফ্যামিলিকে প্রোটেক্ট করতে হয়,” সঞ্জয়ের চোখে হাসি, অথচ কন্ঠস্বর দৃঢ় কর্তৃত্বময়। 

রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসার সময় সেও লক্ষ্য কর ছিল এই দশ বছরের মধ্যে গ্রামের অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে। গাছ পালার সংখ্যা কমেছে। বাড়ি ঘর বেড়েছে। আর সব যেন নতুন মুখ। তার একেবারেই অচেনা।  দিনের কাজ থামিয়ে থমকে দাড়ায় কেউ কেউ। মা ছেলেকে হাঁ করে তাকিয়ে দেখে।
“আমার সবকিছুই যেন চেনা চেনা লাগছে মা”, সঞ্জয়ের মনে উত্তেজনা।মার দিকে তাকায় সে।
কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সুমিত্রা সঞ্জয়ের সুটকেসটা টেনে নিয়ে হাঁটতে বলে, “আচ্ছা! তা কি কি তোর চেনা চেনা লাগছে শুনি?”।
সঞ্জয় হাসি মুখে মার বড় সুটকেসটা নিয়ে যেতে যেতে হাঁটা থামায় না, “এই তো সব কিছুই মা। রাস্তাঘাট, পুকুর,গাছ পালা……সব। আর ওই দ্যাখো ওই বিরাট তেঁতুল গাছটা এখনও এখানে রয়েছে।ওই দ্যাখো সেই আমের বাগান। আর ওই যে বাঁশবন। ওই যে দূরে পুরোন শিব মন্দিরটা ওটাও রয়েছে দ্যাখো”। বেশ উৎসাহের সঙ্গে সঞ্জয় আঙুল বাড়িয়ে দেখায় সুমিত্রাকে।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা আচমকা রাস্তায় আবার থমকে দাঁড়ায়।
সঞ্জয় অবাক হয়, “ এবার আবার কি হল মা?”
সুমিত্রা বলে, “এই রে! আগামীকাল জটা বাবার মন্দিরে পুজো দেবার জন্য ফলই তো কেনা হল না”।
চিন্তিত মুখে বলে সে, “ ভেবেছিলাম রামপুরহাটে নেমে ফলের বাজারটা করে নেবো। কিন্তু সেসময় মাথায় আসেনি। ফলের বাজার এখন বহুদূরে। কি করব রে?”
সঞ্জয় শব্দ করে হাসে, “ওহ, এই কথা! তুমি না!”
সে বাম হাতে মার গলায় আদর করে দেয় আর হাসে, “একদম চিন্তা করবে না তুমি! আমি আছি না? আগে মামার বাড়ি তো পৌঁছই। ছোটমামার সঙ্গে কথা বলি। ঠিক একটা কিছু উপায় হবে।” 

II ২ II

সঞ্জয়কে সঙ্গে নিয়ে সুমিত্রা ওর বাপের বাড়ির মাটির পাঁচিলের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে। এখন দুপুর সাড়ে বারোটা।  চান সেরে একটা সাদা ফতুয়া পরে দাওয়ার সিঁড়িতে বসে থেলো হুঁকোয়তামাক খাচ্ছিলো দীনবন্ধু। বাম দিকে রান্নাঘর থেকে চন্দনার গলার আওয়াজ আসছিলো।
পাঁচিলের দরজায় লাগানো লোহার শিকলের শব্দে দীনবন্ধু চোখ তোলে । আদরের বোন এবং ভাগ্নে কে একসঙ্গে চোখের সামনে দেখে হুঁকোটা দাওয়ায় রেখেই দৌড়ে এগিয়ে যায়।
“বোন!!”
বিশ্বাস হয়না দীনবন্ধুর। বোনকে সে এতো দিন পর চোখের সামনে দেখে ভীষণই হাল্কা লাগে তার। দুই হাতে সবলে জড়িয়ে ধরে তাকে।
সুমিত্রাও বহুদিন পর দাদাকে সামনে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। কাঁধে থেকে ব্যাগ নামিয়ে ফেলে দাদার বুকে মাথা রাখে। তার চোখের জল আর বাগ মানে না। অঝোর ধারায় ঝরে দীনবন্ধুর পরনের ফতুয়া ভিজে যায়।
চন্দনাও রান্নাঘর থেকে ঘোমটা টেনে বেরিয়ে আসে। তাদের দেখে অসম্ভব অবাক হয়, “সুমিত্রা! তোমার মনে আছে আমাদের?”
বৌদির মুখ থেকে এমন কথা শুনে সুমিত্রা তাকে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, “মনে থাকবে না কেন বৌঠান! সব সময় তোমাদের কথা মনে পড়তো সেখানে। আসার আগে দাদার ফোনে যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা করেছি। পারিনি জানো!” সে হাসতে হাসতে চোখের জল মোছে।
ননদকে বুকে জড়িয়ে তার কপালে চুমু খায় চন্দনা। সেও নিজের চোখের জল মুছে সুমিত্রাকে বলে, “প্রতিটা দিন তোমাদের কথা ভেবেছি জানো। এই কিছুদিন আগে তোমার দাদার ফোন জলে পড়ে খারাপ হয়ে যায়।
“ওমা, তাই নাকি? তাই ভাবি, ছোড়দার ফোন পাওয়া যায় না কেন!” সুমিত্রা ছেলের মুখের দিকে চেয়ে বলে, “তুই তো বারবার ফোন করেছিলি না?”
“হ্যাঁ, মা,” সঞ্জয় তাদের সুটকেস দুটো দাওয়ায় তুলে রাখে।
“গত বারে কলকাতা থেকে ফিরে আসার পর তোমার দাদার মুখ যা দুঃখের কথা শুনেছিলাম তাতে খুব মন খারাপ হয়ে গেছিলো…। ওকে বলেছিলাম, ওকে বারবার বলেছিলাম – তোমাদের যেন এখানে ফিরিয়ে নিয়ে আসে,” চন্দনা বলে চলে।

“সত্যি, অনেক খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম বৌঠান,” সুমিত্রা হাসে, “ভগবানের অশেষ কৃপা, এখন তিনি মুখ তুলে
চন্দনা চাপা কলের দিকে এগিয়ে যায়। কলের মুখের নীচে একটা বালতি পেতে হাতলে চাপা দেয়, “আমার  তো প্রথম থেকেই ওই পরশা কে তেমন পছন্দ ছিল না! মিনসের মুখ দেখেই আমার সন্দেহ হতো। ও আমাদের সুমিত্রাকে ভালো রাখবে না। বিয়ের আগে বলে ছিলাম। কিন্তু কেউ শুনল না। কি আর করা যায়! সবই ভাগ্যের দোষ!”

দীনবন্ধু সঞ্জয়ের দিকে এগিয়ে যায়। সেই ছোট্ট ভাগ্নে এখন এক লম্বা চওড়া ফর্সা নবযুবক। মাথায় তার থেকেও সামান্য ঊঁচু। আজ যেন তার খুশির বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।
সঞ্জয় ছোটমামার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে। বড়মামা ও মেজোমামাকে সে কোনওদিন দেখেনি। শুনেছে তার জন্মের আগেই বড়মামা অপঘাতে গত হয়েছিলেন। মেজোমামা তার জন্মের প্রায় পরপরই। মামা বলতে এই ছোটমামাকেই সে চেনে। এই অকৃত্রিম মানুষটা তার আরেকজন শুভাকাঙ্ক্ষী।  মার পরেই। সেবারে এই ছোটমামাই তার কষ্টের উপার্জন তাকে দিয়েছিলো জয়েন্টের ফর্ম ফিলাপ এবং বই কেনার জন্য। তার জীবনে আজ পর্যন্ত যা কিছু সাফল্য এই মানুষগুলোর জন্যেই।  এই সব ঋণ কোনওদিনও শোধ করার নয়।
সঞ্জয়কে নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে দীনবন্ধু। চোখ ছলছল করে তার।
“অনেক বড় হয়ে গেছে আমার ভাগ্নেটা,” খুব গর্বের সঙ্গে ঊচ্চারণ করে, সঞ্জয়ের বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটির দিকে তাকায় সে।
“চাকরি পেয়েছ? আর কি পড়াশোনা করবে বলে ছিলে যেন? করেছো?”
“হ্যাঁ”। মামার চোখের দিকে তাকায় সঞ্জয়। হাসি মুখে বলে, “চাকরি পেয়েছি মামা। আর তোমার দেওয়া টাকা দিয়েই এঞ্জিনিয়ারিং এর বই কিনে ছিলাম…”।
“ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছো? ইঞ্জিনিয়ার হয়েছো?” ভাগ্নের কথার মাঝখানে তার দুই বাহু চেপে ধরে অবাক স্বরে প্রশ্ন করে দীনবন্ধু।
“হ্যাঁ মামা”, বিনম্রভাবে উত্তর দেয় সঞ্জয়।
ভাগ্নের কথা শুনে দীনবন্ধুর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। সে সঞ্জয়ের হাত ধরে তার স্ত্রীর কাছে নিয়ে যায়।উঁচু স্বরে বলে, “দেখেছো চন্দনা! আমাদের ভাগ্নে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে এখন বড় জায়গায় চাকরি পেয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব হয়েছে আমার ভাগ্নে!”

চাপা কল থামিয়ে চন্দনা তাদের দিকে তাকায়। বালতির মধ্যে রাখা শীতল জল নিয়ে সুমিত্রা নিজের পায়ে ঢালে। সেও মুখ তুলে দাদা এবং ছেলের দিকে তাকায়। ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি তার।
চন্দনা উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলে, “হ্যাঁ…। দেখেছো! আমি আমার সেই ছোট্ট ছেলেটাকে চিনতেই পারিনি…।তাই ভাবছিলাম ছোট ঠাকুরঝির সঙ্গে এই দামাল ছেলেটা কে?”
চাপা কলের পাড় থেকে চন্দনা সরে এসে সঞ্জয়ের কাছে দাঁড়ায়। হাত উঁচু করে সঞ্জয়ের মাথায় হাত বোলায়, “কত বড় হয়ে গেছো আমার সেই ছেলেটা! তা এতো বড় যখন হয়েছো,মামীকে একবারও দেখার ইচ্ছা হয়নি তোমার? এখন তো রাস্তাঘাটও চিনতে পারবে…। চলে আসতে পারতে মামীর কাছে…”।
সঞ্জয় ঘাড় নিচু করে মামীর চরণ স্পর্শ করে, “হ্যাঁ মামী। খুব ইচ্ছা হতো তোমাদের সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু মা বলেছিল মামাকে, ছেলেকে সফল করেই মা তোমাদের চোখের সামনে দাঁড়াবে”।

চন্দনা সঞ্জয়কে আদর করে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তার, “আর কই? আমার শাড়ি কই? সেবারে আমি বলেছিলাম তুমি বড় হলে,বড় চাকরি পেলে আমার জন্য ভালো শাড়ি কিনে এনে দেবে”।
মামীর কথা শুনে সঞ্জয় হাসে, “শাড়ি এনেছি মামী।তোমার জন্য। মামার জন্য। মলয় দার জন্য…”।
চন্দনা খুশি হয়ে দু’হাত তুলে সঞ্জয়কে আশীর্বাদ করে।
সঞ্জয় জিজ্ঞেস করে, “আর মলয়দা কোথায় মামী? তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না”।

ছেলের নাম শুনেই একদম চুপ করে যায় চন্দনা। মুখ নামিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে সে। কিন্তু চাপা আবেগ উত্তেজনা ফুটে ওঠে তার সারা শরীরে।
সঞ্জয়,সুমিত্রা একে অপরের মুখ চাওয়া চায়ি করে।
সুমিত্রা আবার প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ বৌদি আমার ভাইপোটি কোথায়?”
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চন্দনা তাদের ব্যাগপত্র নিয়ে ঘরে ঢোকে, “সে অনেক কথা গো ছোট ঠাকুরঝি। তোমরা এই এলে একটু বস। বিশ্রাম কর। তারপর বলছি”।
বৌদির শুকনো গলার স্বরে সুমিত্রা তখুনি বুঝে ফেলে ব্যাপার গোলমেলে। সে তার দাদার দিকে তাকায়।  দীনবন্ধুও চোখ নামায়। গোয়াল ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।
বাড়ির পরিবেশ যেন ঝট করে চুপসে যায়।  বহুদিন পর দাদা বৌঠানকে কাছে পেয়ে খুশীতে আত্মহারা হবে ভেবে ছিল। কিন্তু তাদের চোখ মুখের মধ্যে কেমন একটা চাপা বেদনা লক্ষ্য করে সে। তাদের শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। মুখ শুকিয়ে গেছে। কথাবার্তার মধ্যে হতাশা ধরা পড়েছে। বিশেষ করে তার দাদার। দাদার তার থেকে মাত্র চোদ্দ বছরের বড়। সবে চুয়ান্ন হবে।  এই বয়েসের পুরুষের শরীরে আজকাল প্রচুর তেজ। কিন্তু দাদা কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। সেই কঠোর পরিশ্রমী মানুষটাকে কেমন দুর্বল লাগছে দেখে।

ছোড়দার কাছে কোনও সদুত্তর না পেয়ে সুমিত্রা তাই বৌদির দিকে এগিয়ে যায়, “কি হয়েছে বলনা বৌঠান?” চন্দনার কাঁধ ছুঁয়ে বলে সে।
চন্দনা কোনও কথা না বলে নত মুখে ভেতর ঘরে যায়।  সেখানের এক কোণে রাখা মাটির হাঁড়ি থেকে আঁখের গুড় বের করে একখানা কাঁসার পাত্রে রাখে।
ওদিকে দীনবন্ধু গোয়াল থেকে বেরিয়ে এসে একখানা খেজুর পাতা দিয়ে বোনা তালাই ঘরের মেঝেতে পেতে দেয়। সঞ্জয়কে সেখানে বসতে বলে। তারপর কোথা থেকে একটা ছোট্ট টেবিল ফ্যান এনে তার সামনে চালিয়ে দেয়। ফ্যানের ঝোড়ো হাওয়া সঞ্জয়ের মুখে এসে লাগে।
চন্দনা আঁখের গুড়ের সঙ্গে জল মিশিয়ে দুটো কাঁসার গ্লাসের মধ্যে ঢেলে সঞ্জয় ও সুমিত্রাকে দেয়।
গ্রামে বানানো বিশুদ্ধ আঁখের গুড়ের শরবৎ খেয়ে সঞ্জয়ের বড় তৃপ্তি হয়। কিন্তু সুমিত্রা সেই জল এখনও মুখে ঠেকায় নি। তার মন হঠাৎ কেমন বিষণ্ণ।
ঘরের মেঝেতে তালাইয়ের একপাশে সঞ্জয়, অপর পাশে সুমিত্রা এবং চন্দনা বসে আছে। দীনবন্ধু ঘরের দুয়োর আগলে বসে পড়ে। সে তার হাতের হুঁকোটার কল্কেতে আবার আগুন জ্বালিয়ে নেয়।
চন্দনা, সুমিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি জলটা খেয়ে নাও ঠাকুরঝি তারপর বলছি”।
সুমিত্রা জলের গ্লাসে চুমুক দিয়ে চন্দনার দিকে চিন্তিত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।
চন্দনা ফোঁস করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “তোমার ভাইপো বিয়ে করেছে গো!!”।
বৌদির কথা শুনে সুমিত্রার চোখে হাসির ঝলকানি, “ভাইপো বিয়ে করেছে! সেতো ভালো কথা বৌদি। সেতো খুশির খবর”।
চন্দনার গলা কান্নায় ভিজে, “সে দেখাশোনা করে বিয়ে করেনি বোন। পরের গ্রামের মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো”।
“বলো কি বৌঠান?” সুমিত্রা তত আশ্চর্য হয়না। গ্রামে এসব লেগেই থাকে।
শাড়ির আঁচল দিয়ে চন্দনা শব্দ করে নাকের শ্লেষ্মা ঝেড়ে মোছে,“হ্যাঁ গো বোন; সে এক ভীষণ কেলেঙ্কারি। গুণধর ছেলে আমার ভিন গাঁয়ের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়। আর এদিকে মেয়ের বাবা ভাইরা পুলিশে নালিশ করে। আমাদের ছেলে নাকি তাদের মেয়েকে অপহরণ করেছে! পুলিশ আসে আমাদের ঘরে …”
“তারপর?” সঞ্জয় উৎসুক।
দীনবন্ধু গুড়ুক গুড়ুক শব্দ করে হুঁকো টেনে চন্দনার উত্তর দেওয়ার আগেই বলে, “তারপর আর কি? তারপর আমাদের গ্রামের হাই ইস্কুলের হেড মাস্টারের ছেলে নির্মল চাটুজ্যে বাড়িতে ছেল। ছুটিতে। সে নাকি কলকাতায় ওকালতি করে।  সেই তো পুলিশদের সামলায়। তিনি বলেন, মেয়ের কত বয়স? বাইশ বছর? ছেলের কত বয়স? সাতাশ? তা তারা দুজনেই সাবালক। ঠিক কিনা?
“তাতো বটেই!” সঞ্জয় বলে।
সঞ্জয়ের ছোটমামা বলতে থাকে, “তবে? দুই সাবালক যুবক যুবতী  পাইলেছে তো ছেলের মা বাবাকে নিয়ে তোমাদের কি? একথাটা আমাদের নির্মল বলতেই পুলিশগুলার মুখে কথাটি নাই। ”
“তারপর পুলিশ চলে গেল?” সঞ্জয় সোৎসাহে প্রশ্ন করে।
“হাঁ বাবা,” হুঁকো থেকে মুখ তুলে দাঁত বের করে হাসে দীনবন্ধু। সুমিত্রা লক্ষ্য করে ছোড়দার দাঁত গুলো যেন ফাঁকা হয়ে গেছে। বাম দিকের মাড়ির একটা দাঁত পড়ে গেছে, অন্যটির রঙ এখন সম্পূর্ণ কালো।
চন্দনা বলে ওঠে, “রাত দিন শুধু অশান্তির মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছি। পুলিশের শাসানি তো গেল। তা থেকে রেহাই পেতেই ছেলে একদিন বউ নিয়ে এসে বলে আমার সম্পত্তির ভাগ চাই! খুব যেন জমিদারের ব্যাটা একবারে”।
“তারপর?” সুমিত্রা এতক্ষণে তার গ্লাসের সরবত চুমুক দিয়ে অর্ধেকটা খেয়ে ফেলে।
চন্দনা বলে, “তারপর আবার কি? তোমার গুণধর ভাইপোও লেগে পড়ে এক দিকে। তোমার দাদাকে মারতে যায়। ঘর থেকে বেরোতে বলে। শুধু সে আর তার নতুন বউ নিয়ে এই ঘরে থাকবে”।
“এমন কেন? তোমরা কি তাদের মেনে নাওনি? ঘরে তোল নি?”, সুমিত্রা আবার প্রশ্ন করে।
“কেন তুলবো বলো? একমাত্র সাধের ছেলে ছিল আমার। যে ছেলেকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে ঘরে বউ নিয়ে  আসবো ভেবেছিলাম সেই ছেলেই আমার মান সম্মান খেলো”। চন্দনা আক্ষেপ করে।
চন্দনা বলে চলে, “গ্রামে সালিশি সভা বসাল পঞ্চায়েত প্রধান। তার নির্দেশে ছেলের বৌমার জন্য আলাদা ঘর করে দিলাম আমরা। ওই গ্রামের পশ্চিম দিকে দেড় কাঠা জায়গা কিনে দিতে হল ঘর করার জন্য”।
“জমি কেনার টাকা ছিল? অসুবিধা হয়নি তো?” সঞ্জয় পাশ থেকে প্রশ্ন করে।
“নাগো যাদুমণি, ওই দেড় কাঠা জমি কিনতে আর ঘর বানাতে তিন কাঠা ধানী জমি বেচতে হয়েছে আমার,” দীনবন্ধুর গলায় আক্ষেপের সুর।
“হুম” । সুমিত্রা জলের গ্লাসে চুমুক দেয়, “সেকি আসে এখানে? বৌমার সঙ্গে কথা হয় তোমাদের?”
চন্দনা মুখ নামায়, “নাহ! তারপর থেকে ওদের সঙ্গে আর কোন রা কথা নেই। ওই দূর থেকেই দেখা হয়”।

সুমিত্রা এবারে চন্দনার পাশে এসে বসে।তার বাম কাঁধে হাত রাখে, “ বিয়ের কত দিন হল বৌদি?”
“এক বছর হতে চলল গো” ।
“এতো দিনে রাগ রোষ ঝেড়ে ফেলা উচিৎ বৌঠান। ছেলে বৌমাকে বুঝিয়ে ঘরে নিয়ে আসা উচিৎ ছিল তোমাদের”, সুমিত্রা পরামর্শ দেয়।
“কক্ষনও না বোন। যে ছেলে এতো কষ্ট দিয়েছে। সে ছেলেকে কখনই আপন করে নেবো না”, ক্ষুব্ধ স্বরে বলে চন্দনা”।
“বলতে নেই, কিছুটা দোষ আমাদেরও আছে…। মলয় তো অনেকবার বলেছিল তাকে বিয়ে দিতে। সে নাকি ওই মেয়ের সঙ্গে ভাব করতো। আমরাই শুনিনি”, দীনবন্ধু গলা ঝেড়ে বলে।
চন্দনা উত্তেজিত হয়ে সুমিত্রার দিকে তাকায়, “তা কেন শুনবো বলতো বোন? ভাব ভালোবাসা করে বিয়ে দিলে কি পাবো বলতো? ছেলে মানুষ করার খরচা নেই? পরের মেয়েকে ঘরে তুলবো এমনি এমনি নাকি বলো?”

“পরের মেয়ে, পরের টাকার লোভ করেই তো নিজের ক্ষতি হয়ে গেলো। বাপুতি জমি ক’টা বিনা কারণে বেচতে হল”, দীনবন্ধু দরজার পাল্লায় মাথা রেখে উপর দিকে তাকায়।

সুমিত্রা উঠে দাঁড়ায়। ছেলের হাতে থেকে জলের গ্লাস টা এবং নিজের হাতের গ্লাসটা নিয়ে চাপা কলের দিকে এগোয়, “তবে দাদা এবার তাদের মানিয়ে নিয়ে ঘরে তোলা উচিৎ। আর কতদিন মন ভার করে থাকবে?”।
বোনের কথা শুনে দীনবন্ধু হাঁফ ছেড়ে ঘরের চালের দিকে তাকায়। চন্দনাও রান্নাঘরে ঢোকে। দুপুরের রান্না একটু বেশি করে করতে হবে তাকে।
সঞ্জয় সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সুমিত্রার কাছে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় বলে, “মা…আমি মলয় দার সঙ্গে দেখা করতে চাই। নতুন বৌদিমণির সঙ্গেও আলাপ করতে চাই”।
সুমিত্রা তার দাদা বৌদির দিকে ঘাড় তুলে তাকিয়ে বলে, “তোর মামা মামী রেগে যাবে এতে?”
সঞ্জয় অধৈর্য হয়, “উফ মা! মামীর কথা শুনে আমি যা বুঝলাম তাতে টিপিক্যাল গ্রাম্য সমস্যা ছাড়া আর কিছুই নয় এটা…। একটা সামান্য জিনিসকে বিরাট করে সিন ক্রিয়েট করা হয়েছে বুঝছো না?”
“হুঁ, সবই তো বুঝছি সোনা, কিন্তু তোর মামা মামীর অনুমতি ছাড়া আমি কিছু বলতে পারছি না কিন্তু”, সুমিত্রা সঞ্জয়কে বলে।
“মামীকে বলো না!” আবদারের সুরে বলে সে।
সুমিত্রা, “হ্যাঁ যাই” বলে চন্দনার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ইতস্তত ভাব নিয়ে বলে, “বৌদি তোমার ভাগ্নে বলছিল সে তার দাদার সঙ্গে দেখা করতে চায়”।
রান্নাঘরে কাজের ফাঁকে চন্দনা সুমিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ যাক না…। যাক। মলয় ওর দাদা। ওর সঙ্গে তো কিছু হয়নি। যাক। গ্রামের মাঝ রাস্তা দিয়ে পছি দিকে গেলেই সব শেষে ওর বাড়িটা দেখতে পাওয়া যাবে”।
বৌদির কথা শুনে মুখের কাছে হাত তোলে, “আর বলছিলাম যে ছেলের জন্য আগামীকাল পুজো দেবো…”।
“হ্যাঁ ভালো কথা তো”। চন্দনা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, “কাল ভোর বেলা আমি আর তুমি মিলে পুজো দিয়ে আসবো। আমারও অনেক দিন সেখানে যাওয়া হয়নি গো…”।
“হ্যাঁ কাল ভোরে যাবো কিন্তু পুজোর জিনিসপত্র কিনতে ভুলে গেছি বৌদি। আর এখন তো ভরা দুপুর!” সুমিত্রা  চিন্তিত মুখে বলে।
চন্দনা উঠনে এসে দাঁড়ায়, “তুমি চিন্তা করোনা ছোট ঠাকুরঝি। চান করে খাওয়া দাওয়া করে একটু জিরিয়ে নাও। তারপর বিকেলে তোমার দাদাকে আমি হাটে পাঠাচ্ছি। আজ বৃহস্পতি বার সারেঙ্গা গ্রামে হাট পড়ে…”। 

বৌদির কথা শুনে সুমিত্রা উৎসাহিত হয়ে বলে, “ওমা! সারেঙ্গায় এখনও হাট পড়ে বুঝি? ভুলেই গিয়েছিলাম আজ বৃহস্পতিবার সেখানে সারাদিন হাট পড়তো। আমরা ছোট বেলায় কতবার গিয়েছি সেখানে”।
চন্দনা হাসে, “হ্যাঁ গো বোন। ওখানে এখনও হাট পড়ে। তবে আগেকার মতো আর বড় করে পড়ে না। আগে তো প্রতি সপ্তাহে মেলার মতো হাট পড়তো বলো?”।
“তাহলে দাদার সঙ্গে আমিও যাবো……”, সুমিত্রা উল্লাসে নিজের ইচ্ছাপ্রকাশ করে।
চন্দনা হাসে, “আগে তো ঘরে ঢুকে বাক্সটাক্স গুছিয়ে গাছিয়ে সুস্থির হও!”
সুমিত্রা হেসে সঞ্জয়কে ডাকে, “আয় বাবু, আমরা আগে আমার ঘরটায় সুটকেস দুটো রেখে গুছিয়ে বসি!”

II ৩ II
চাপা কলের শীতল জলে চান করে তাদের বড় আরাম হয়।  দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সুস্থির হয়ে চারজনে ভিতরের ঘরে বসে গল্প করে। গল্প করতে করতে বেলা পড়ে আসে। সূর্যের সেই প্রখর তেজ আর নেই। করবী গাছটায় বসে একটা কোকিল বারবার ডাকে। করবী গাছের ছায়া দীর্ঘ হয়ে পড়েছে গোবর দিয়ে নিকোন উঠোনে।
সুমিত্রা তার সুটকেসটার চেন খোলে। দাদাবৌদির জন্যে দোকান ঘুরে ঘুরে যা উপহার গুলো তারা কিনেছে, তা দেখানোর জন্যে তার উৎসাহের শেষ নেই।
লাল টুকটুকে শান্তিপুরী তাঁতের শাড়ি দেখে চন্দনা ভীষণ খুশি হয়। ঘর থেকেই দীনবন্ধুকে হাঁক দেয়, “ওগো দ্যাখো দ্যাখো বাপধন কি সুন্দর সুন্দর শাড়ি নিয়ে এসেছে আমার জন্য”।
দীনবন্ধু গোয়াল ঘর থেকে সাইকেল বের করে উঠনের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রেখে ঘরে প্রবেশ করে। সে মৃদু হেসে, “হুম” শব্দ করে বলে, “ হুম ভারী সুন্দর তো শাড়ি গুলো”।
চন্দনা খুশি হয়ে বলে, “হ্যাঁ দ্যাখো। সেবারে বলে ছিলাম। চাকরি পেলে আমার জন্য নূতন শাড়ি কেনা হয়। ছেলে সেটা মনে রেখেছে”। সঞ্জয়ের মাথায় হাত বোলায় সে। দীনবন্ধুর দিকে তাকায়, “একখান শাড়ি আমি রাখবো। আর একখান শাড়ি বৌমার জন্য দিয়ে পাঠাবো”।
বউয়ের কথা শুনে দীনবন্ধু কোন প্রত্ত্যুতর করে না।
সুমিত্রা সঞ্জয়কে নির্দেশ দেয়, “আর দেখা মামার জন্য কি কি কিনেছিস তুই?”

মা’র কথা শুনে সঞ্জয় মামার জন্য কেনা ধুতি পাঞ্জাবী এবং বাটা কোম্পানির কুয়ভাদিস চটি জোড়া বের করে।
সেটা দেখে দীনবন্ধু এবং চন্দনা ভারি খুশি হয়। চন্দনা বলে, “জানো বাবু তোমার মামার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল ভালো একখানা ধুতি পাঞ্জাবী কেনার। ভালো ধুতি পাঞ্জাবী কি আর এই পাড়াগাঁয়ে পাওয়া যায়!”
তার ছোটমামা দীনবন্ধু সায় দেয়, “কলকেতায় যেতে হয় এসবের জন্যি।  তা জমিজিরেত ছেড়ে কলকেতায় যাবার সময় কই?” একটু থেমে দীনবন্ধু হেসে সঞ্জয়ের দিকে তাকায়, “তোমার জন্যি এই ইচ্ছাটা আমার পুরন হল…”
চন্দনা দীনবন্ধুর দিকে তাকায়, “হ্যাঁ গো তুমি তো সেবারে বলেছিলে তোমার বাল্যবন্ধুর ছেলের বিয়েতে পরে যাবার মতো কোন ভালো পোশাক নেই। এই দ্যাখো তোমার ভাগ্নেই তোমাকে কত সুন্দর পোশাক কিনে দিলো!”
দীনবন্ধু তৎক্ষণাৎ বলে, “আমি এইটাই তো ভাবছিলাম, আমি এটা পরেই পরের মাসে দিবাকরের ছেলের বিয়েতে যাব”।

দীনবন্ধু সেই পাঞ্জাবী খানা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে। সুমিত্রা বলে, “হ্যাঁ দাদা তুমি দেখে নাও। তোমার ফিটিংস ঠিক মতো হচ্ছে কিনা”।
দীনবন্ধু মৃদু হেসে বলে, “ভাগ্নের দেওয়া কেনা বস্ত্র। কেন গায়ে হবে না?”

সঞ্জয় এরপর মলয়ের জন্য জামা প্যান্টের পিস দুটো বের করে দেখায়। চন্দনা বাধা দেয়, “ওগুলো তুমি ওর কাছেই খোলো বাবা। এখানে বাবা মা দেখেছে শুনলে আবার ক্ষেপে না যায়”।
মামীর কথা শুনে সঞ্জয় হাসে, “নতুন বিয়ে করে কি মলয়দা পাগল হয়ে গেছে নাকি?”
চন্দনা জোর গলায় বলে, “হ্যাঁ তাই। পাগল তো সে ছিলই। এখন বৌয়ের পাল্লায় পড়ে আরও কত কিছুই না সে হয়ে গেছে”।

এমন নানা কথাবর্তায় বিকেল চারটে বেজে যায়।  সঞ্জয় উঠে পড়ার উদ্যোগ করে, “ মামীমা! আমি বরং মলয়দার সঙ্গে দেখা করে আসি”।
চন্দনা বলে, “হ্যাঁ…নতুন বৌদিমণির সঙ্গে দেখা করো। সে কিছু খেতে দিলে কিন্তু না করোনা”।
সুমিত্রা চন্দনার কাছে এগিয়ে যায়, “বৌদি, নতুন বৌমার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। কিন্তু ওর জন্য কিছুই আনা হয়নি”।
চন্দনা হাসি মুখে সুমিত্রাকে আশ্বস্ত করে, “তাতে কি হয়েছে বোন? তুমি তো জানো না যে তোমার গুণধর ভাইপো বিয়ে করেছে…”।
“এই ভাবে খালি হাতে যাওয়া কি ঠিক হবে?”, চিন্তিত হয় সুমিত্রা।
চন্দনা বলে, “আহা চিন্তা করো না বোন। সে’রম হলে আমার বাপধন আমার জন্য যা উপহার এনেছে সেটাই না হয় বৌমাকে দিক”।
সুমিত্রা মাথা নেড়ে নিজের অনিচ্ছা প্রকাশ করে। এমন মুহূর্তে সঞ্জয় বলে ওঠে, “মামীর জন্য তো দু’খানা শান্তিপুরী তাঁতের শাড়ি নিয়েছি”।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা তাকে ধমক দেয়, “অ্যাই চুপ! আর এমনিতেই এখনকার মেয়েরা তাঁতের শাড়ি পরে না। তুই বরং কাল বিকালে ওদের সঙ্গে দেখা করবি। তুই আর তোর মামা বাজারে গিয়ে ভালো দোকান থেকে শাড়ি কিনে নিয়ে এসে দেখা করতে যাবি”।
চন্দনা সুমিত্রাকে বাধা দেয়, “খুব পরবে গো বোন খুব পরবে। আর সে তো আমারই বৌমা। বাইরের তো কেউ নয়। সেহেতু ওকে দেওয়া মানেই আমাকে দেওয়া”।
সুমিত্রা তার ছোড়দার দিকে চেয়ে বলে, “আমরাও বেরোই কি বল দাদা?”
দীনবন্ধু বলে, “হ্যাঁ বোন, আমি সাইকেলটাকে বের করি, তুই তৈরি হয়ে বাইরে আয়”।

সুমিত্রা আলাদা একটা হলুদ রঙের হ্যান্ডলুম শাড়ি পরে বাইরে বেরিয়ে আসে। দীনবন্ধু কাঁধে গামছা নিয়ে বোনের জন্য অপেক্ষা করে। সারেঙ্গা গ্রাম ওদের বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার আরও পশ্চিমে। এখন প্রায় সাড়ে চারটা বাজতে চলল। আর এক দুই ঘণ্টার মধ্যেই হাট উঠে যেতে পারে তাই তাড়াতাড়ি না পৌঁছালে সুমিত্রা পুজোর সামগ্রী কিনতে পারবে না।

সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দাদাকে দেখে সুমিত্রা হাঁটা দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। পাঁচিলের দরজা খুলে বাইরে বেরোতে যায়।
তখনই চন্দনা বলে, “দাদার সাইকেলে চড়ে যাও বোন। নইলে তাড়াতাড়ি যেতে পারবে না”।
বৌদির কথা শুনে সুমিত্রা ইতস্তত বোধ করে। কোন্  ছেলেবেলায় সে দাদার সঙ্গে সাইকেলে চেপে স্কুল যেতো। এখন দাদার বয়স হয়েছে সেকি পারবে সুমিত্রাকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে যেতে?
সুমিত্রা লাজুক ভঙ্গীতে বলে, “বলো কি বৌদি? দাদা কি পারবে আমাকে নিয়ে সাইকেল চালাতে?”
চন্দনা হাসে, “ঠিক পারবে গো। তোমার দাদাকে দেখেই ওইরকম মনে হয়। তাছাড়া ভালোই শক্তপোক্ত আছে মানুষটা। এখনও সারাদিন মাঠে লাঙ্গল দিয়ে বেড়ায়। খাটতেও পারে ভালোই”।
দীনবন্ধু সুমিত্রাকে আশ্বস্ত করে, “বোনকে সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না? বলিস কি বোন? তোর দাদা এতোটাও বুড়ো হয়ে যায়নি যে নিজের বোনকে চাপিয়ে না নিয়ে যেতে পারবে”। 

সুমিত্রা আর কিছু বলতে পারে না। দীনবন্ধু সাইকেলে চেপে সুমিত্রাকে সামনের রডে বসতে বলে। সুমিত্রা এগিয়ে এসে সাইকেলে বসতে যাওয়ার সময় দীনবন্ধু বোনের নরম পাছায় যেন ব্যথা না লাগে তার জন্য আগে কাঁধে থেকে গামছাটা নিয়ে রডে বেঁধে দিয়ে বলে, “এই নে এবার বস তো, দেখ তোর কোন অসুবিধা হবে না”। 

মায়ের ভীত মুখ দেখে সঞ্জয় হাসে, “দেখো মা। পড়ে যেও না যেন…”।
সুমিত্রা ছেলের দিকে তাকিয়ে ধমক দেয় হাসতে হাসতে, “অ্যাই, বাজে কথা একদম নয় বাবু!”
মা’র কথা শুনে সঞ্জয় হো হো করে হাসে। সুমিত্রা বলে, “তুই দাদার সঙ্গে দেখা করে আয়। আমি শিগগির আসছি। আর হ্যাঁ পারলে গ্রামের দোকান থেকে মিষ্টিও কিনে নিয়ে যাস”।

দীনবন্ধু আর সুমিত্রা বেরিয়ে যেতেই সঞ্জয় মলয়ের বাড়ি যাবার জন্য বের হয়। চন্দনাও সঞ্জয়ের সঙ্গে কিছু দূর অবধি যায়। তাকে সঠিক রাস্তা দেখিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।   

II ৪ II

দীনবন্ধু সুমিত্রাকে সাইকেলে চাপিয়ে গ্রামের মেঠো পথ ধরে প্যাডেল চালায়।  লাল মাটির কাঁচা রাস্তার ধারে ধারে বিস্তৃত ধানক্ষেত।  সেখান থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে।
সুমিত্রা জোরে শ্বাস টানে। তার মুখে হাসি। বুকে উথলে ওঠে খুশি, “দাদা, গোবিন্দভোগ চালের ধান! না?”
দীনবন্ধুও হাসে, “ঠিক ধরেছিস বোন। নাঃ আমার বোনটা এখনও গাঁয়ের মেয়েই রয়েছে!”
সুমিত্রা হেসে বলে, “এ গন্ধ নাড়ীতে ঢুকে রয়েছে দাদা, আমি চেষ্টা করলেও মাটি থেকে পালাবার জো নেই!”
দীনবন্ধু প্যাডেলে আরও জোরে চাপ দেয়, “ঠিক বলেছিস। এই মাটিতেই আমরা সবাই একসঙ্গে গাঁথা।”
কিছু দূর এগোতেই পড়ে একটা ছোট্ট শাল গাছের বন। খুব ঘন বন নয়। তাই বনের এপার থেকে ওপার দেখা যায়। তার মাঝখান দিয়ে নাতিপ্রশস্ত পাকা রাস্তা । এখানে কিছু দূর  পর পরই শাল, সেগুন,পলাশ, কেন্দু, মহুয়া ইত্যাদি গাছে ছোট ছোট বন দেখা যায়। এলাকায় কাউকে তেমন দেখা যায় না। দুই গ্রামের মাঝে  বসতির সংখ্যা নেই বললেই চলে। কেবল গ্রামের উত্তর দিকে পূর্বতন রাজা,জমিদার দের ভগ্ন প্রাচীন অট্টালিকাও আছে। অদূরে ঝাড়খণ্ডের সীমানা। কয়েকটি পাথুরে টিলায় পাথরের খাদানও কাটা হয়েছে। 

সুমিত্রা আবার জোরে শ্বাস টানে, “আঃ কি নির্মল বাতাস! পাঁচ ছ’ঘন্টা ট্রেনে আসার ক্লান্তি যেন নিমেষে কেটে গেল,” সে একমুখ হাসে।
দীনবন্ধুও সাইকেল চালাতে চালাতে হাসে, “তবে?” তার একটু হাঁফ ধরেছে। তাই বেশি কথা বলে না।
সুমিত্রা ঘাড় ঘুরিয়ে দাদাকে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা দাদা…।বড়দির সঙ্গে তোমার কোন যোগাযোগ আছে?”
“না রে বোন। বহুকাল আগে একবার বড়দি এসেছিলো আমাদের বাড়িতে। থেকেও ছিল বেশ কয়েকদিন। তারপর থেকে আর খোঁজ করতেও যাওয়া হয়নি আর তারাও আসে নি!”
“বড়দির বড়ছেলে শ্যামল নাম না?”
“ হ্যাঁ, তবে সেতো বিলেতে থাকে শুনেছিলাম। মেম বিয়ে করেছে। বড়দিকেও নিয়ে যাবে নাকি বলছিল!”
“আর বড়দামেজদার ছেলে মেয়েরা?”
“তারা তো বাইরেই থাকে শুনেছি। ওখানেই বিয়ে থা করে রয়ে গেছে। বড় দির বাড়ি একবার যাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু ছেলের বিয়ের এই সমস্যায় পড়ে আর যাওয়া হয়নি”, দীনবন্ধু আক্ষেপ করে।
সুমিত্রা সামনের দিকে চেয়ে স্বগতোক্তির মতো বলে, “আমাদের কেমন ভাগ্য বলো। মা,বাবা,দাদা,বোন মিলে কেমন সবাই ছিলাম একসঙ্গে।  এখন সব কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সবাই কত দূরে দূরে!”
দীনবন্ধু বলে, “হ্যাঁ বোন। অদৃষ্টের নিয়ম। মেনে নিতেই হয়। তবে তোর জন্যই আমার অনেক চিন্তা হতো জানিস বোনটি?”
“হ্যাঁ ছোড়দা, সব জানি,” অনূচ্চসুরে বলে সুমিত্রা।
“সব থেকে দূরে তোর বিয়ে হয়েছিলো। তোর কথা ভেবে আমরা অনেক কষ্ট পেতাম রে…,” কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সাইকেল চালায় দীনবন্ধু।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে তারপর, “যাক এখন ভাগ্নেকে কষ্ট করে পড়িয়েছিস।তাকে মানুষ করেছিস। সে এখন ভালো জায়গায় চাকরি করে। এটা ভেবে মনে কিছুটা  শান্তি পেয়েছি বোন!”

ছোটদাদার কথা শুনে সুমিত্রা ম্লান হেসে বলে, “হ্যাঁ সবই তোমাদের আশীর্বাদ দাদা। সেবারে তুমি যদি না যেতে তাহলে অনেকটাই আমি ভেঙ্গে পড়তাম গো”।

দেখতে দেখতে তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশের গ্রামের হাটের মধ্যে হাজির হয়। ছোট্ট জায়গার মধ্যে বেশ কিছু ছোট ছোট দোকান পেতে লোকেরা সব বসে আছেন। ভিড়ও খুব হয়েছে। ফলের দকান,সব্জির দকান,তেলে ভাজা থেকে শুরু করে জামাকাপড়েরও দোকান বসেছে এখানে।

দীনবন্ধু হাটের বাইরে একখানা বিরাট বট গাছের নীচে সাইকেল দাঁড় করিয়ে সুমিত্রাকে সঙ্গে নিয়ে হাটের মধ্যে প্রবেশ করে। বোনকে নির্দেশ দেয় তার কি কেনাকাটা আছে করে নিতে। সুমিত্রা হাট ঘুরে ঘুরে এক এক করে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কিনতে থাকে। আর দীনবন্ধু বোনের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা দেয়।
তারা দাদা বোন মিলে আগামীকাল ভোরের পুজোর সামগ্রী কিনে নেয়। সুমিত্রা দেখে এখানে ফলের দাম কলকাতা শহর থেকে অনেক সস্তা তাই বাড়ির জন্য আরও বেশি বেশি করে কিছু ফল সবজি ইত্যাদি কিনে নেয়। তাদের মধ্যে ছিল, নারকেল, পেঁপে, আপেল, নাশপাতি, কমলালেবু এবং সন্দেশ।

সাইকেলের সামনের রডে চেপে ফেরার পথে সুমিত্রা সেই ছোট্ট শাল বনটাকে ভালো করে দেখে। ছেলে বেলায় এখানে অসংখ্য বার এসেছে সে। এই বনের মধ্যেই আরও অনেক অনেক ফলেরও গাছ ছিল। যেমন কাজু বাদাম, মহুয়া, আম, জাম, পেয়ারা ইত্যাদি। সে’সময় স্কুল যাবার পথে বহুবার গাছ থেকে ফল পেড়ে খেয়েছে।
ঠিক এমন সময় দেখে কয়েকটা সার সার পেয়ারা গাছ।
তৎক্ষণাৎ সে উত্তেজিত গলায় বলে, “দাদা দাঁড়াও না একটু…”।
দীনবন্ধু সাইকেলের ব্রেক কষে থামায়। বোনকে জিজ্ঞেস করে, “কি হলো রে…? এখন এখানে তুই থামতে বললি কেন?”
সুমিত্রা পাশের দিকে আঙুল বাড়িয়ে দেখায়, “ওই দ্যাখো পেয়ারা গাছ”।
দীনবন্ধু জানে সুমিত্রার পেয়ারা কত পছন্দের। ছেলেবেলায় গাছে চড়ে পেয়ারা পাড়ত সে। বাপ মার কাছে মারও যে খেয়েছিল কতবার! সে নিজেও বোনের জন্য এখান থেকে এবং অন্যের বাড়ি থেকে ঢিল ছুড়ে আম পেয়ারা ইত্যাদি এনে দিতো। 

বনের গাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে সুমিত্রা হাসি মুখে বলে, “ভাগ্যিস! এই গাছ গুলো কেউ কেটে ফেলেনি এখনও”।
দীনবন্ধু সাইকেল দাঁড় করিয়ে বলে, “হ্যাঁ। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এই গুলোকে দেখাশোনা করে এখন। তাই কাটার সাহস নেই কারও”।
“দাদা চলোনা দুটো পেয়ারা পেড়ে আনি”, ছোটদাদার দিকে তাকিয়ে সুমিত্রা আবদার করে।
দীনবন্ধু আশ্চর্য হয়ে, “এখন? বেলা পড়তে চলল রে বোন”।
এখন প্রায় সাড়ে পাঁচটা বাজবে।অন্ধকার না নামলেও সূর্যের আলো নরম হয়ে এসেছে।
“বেশীক্ষণ লাগবে না দাদা। এখানকার পেয়ারা আমি অনেক দিন ধরে খাবো বলে ভেবে রেখেছিলাম। কলকাতায় এই জিনিস পয়সা দিয়েও পাওয়া যায় না। চলনা দাদা,” সুমিত্রার গলায় অধৈর্য অনুনয়।
বোনকে ছোট মেয়ের মতো বায়না করতে দেখে দীনবন্ধুও তাকে বাধা দিতে পারে না।
পাথুরে কাঁচা রাস্তার ধারে সাইকেল দাঁড় করে রেখে তারা দুজনে বনের মধ্যে ঢুকে পড়ে।

II ৫ II

এদিকে সঞ্জয় গ্রামের পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে। চন্দনা তার সঙ্গে কিছু দূর এসে রাস্তা দেখিয়ে চলে যায়। পশ্চিম দিকে গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে মলয় বাড়ি বানিয়ে নূতন সংসার পেতেছে। পাকা দেওয়াল দেওয়া উঁচু করে বাঁধানো টিনের চালের এক কক্ষ ওয়ালা ঘর তার সামনে উঠোন বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। মুখ্য রাস্তার ধারেই বাম দিকে বাঁশের গেট করে রাখা হয়েছে। উঠোনের মাঝখানে তুলসী মন্দির। আর তার চারপাশে কিছু টগর, নয়নতারা ফুলের গাছ। বেড়ার ধারে কয়েকটা সারিবদ্ধ পেপের গাছ। উঠোনের মধ্যে কয়েকটা দেশী মুরগি ঘোরাফেরা করছে।
সঞ্জয় গেট খুলতেই উঠোনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মলয়ের সঙ্গে চোখাচুখি হয়।মলয় তার পুরনো বন্ধু গদাইয়ের সঙ্গে কথা বলছিলো।তারা সঞ্জয়কে দেখে অবাক হয়। বহুদিন পর আপন পিসির ছেলেকে তার ঘরে আসতে দেখে মলয় ভীষণ খুশি হয়। মলয়ের চোখে আনন্দের ঝিলিক। সে দৌড়ে এগিয়ে আসে।
“ভাই সঞ্জয়! তুই এসেছিস!” মলয় সঞ্জয়ের দুই হাত ধরে।
সঞ্জয়ও হাসি মুখে বলে, “হ্যাঁ দাদা। প্রায় দশ বছর পর তোমাকে দেখছি!”
মলয় শশব্যস্ত হয়। সে ঘর থেকে একখানা মোড়া নিয়ে এসে সঞ্জয়কে উঠোনের একপাশে বসতে দেয়, “নতুন নতুন ঘর করেছি। ভাই কে কোথায় বসতে দিই, সেটাই ভেবে পাচ্ছি না” ।
দাদার ব্যস্ততা দেখে সঞ্জয় তাকে শান্ত হতে বলে, “আমি বুঝছি মলয় দা। তুমি ব্যস্ত হও না তো…। আর বৌদি কোথায়?”
সঞ্জয়ের মুখে থেকে নিজের স্ত্রীর কথা শুনে মলয় খানিক অবাক হয়। সে গদাইয়ের দিকে চেয়ে দেখে। তারপর সঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “সে বাপের বাড়ি গিয়েছে।আর আমার বিয়ে সম্বন্ধে তুই কি করে জানলি। তোর মামা মামী বলেছে নিশ্চয়ই” ।
হাসি মুখে সঞ্জয় বলে, “হুম! সেজন্যই তো নতুন বৌদিকে দেখতে এলাম। আর তার জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। বিয়েতে তো ডাকলে না আমায়…। চুপি চুপি না জানিয়েই বিয়ে টা করে নিলে” ।
সঞ্জয়ের কথা শুনে মলয় চাপা প্রতিক্রিয়া দেয়, “সবই জানিস যখন, থাক ওসব কথা। তুই বল তুই কেমন আছিস? আমার পিসিমণি কেমন আছে?”
“সবাই ভালো আছে দাদা”, বলে সঞ্জয় গদাইয়ের দিকে তাকায়। গদাই হাসি মুখ নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে তাদের কথোপকথন শুনছিল।
“এটা তোমার বাল্যবন্ধু গদাই না?” মলয়ের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে সঞ্জয়।
গদাই তার দিকে এগিয়ে এসে বলে, “হ্যাঁ তুমি ঠিক ধরেছো ভাই। আমিই সেই গদাই। ওর একমাত্র প্রানের বন্ধু” ।
সঞ্জয় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সৌজন্যতা দেখিয়ে মলয়কে জিজ্ঞেস করে, “আর বৌদি কোথায়?”
মলয় বলে, “ও নেই বাপের বাড়ি গিয়েছে। বললাম না” ।
গদাই, “তোমার দাদা বাবা হবে গো…” । বলে হো হো করে হেসে ফেলল।
মলয় সঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করে, “তুই কি করছিস বল। তোর পোশাক দেখে মনে হচ্ছে ভালো জায়গায় চাকরি করিস তুই। সেবারে তোর মামা সবাইকে বলছিল তুই ইঞ্জিনিয়ারিং না কি নিয়ে পড়াশোনা করছিস” ।
সঞ্জয় মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ দাদা। আমি একটা ভালো জায়গায় চাকরি পেয়েছি। আর এদিকে তোমার সদ্য বিয়ে হয়েছে। এই খুশীতে আমি বৌদির জন্য শাড়ি, তোমার জন্য জামা প্যান্টের পিস এবং মিষ্টি নিয়ে এসেছি” ।
মলয় বলে, “সে ভালো কথা। বৌদির শাড়ি বৌদি দেখবে। তুই তার ঘরে রেখে দিয়ে আয়। কিন্তু ভাই চাকরি পেয়েছে বলে মিষ্টি নিয়ে এসেছিস! এটা ঠিক নয়…। আমি কি বাচ্চা ছেলে নাকি?”
মলয়ের কথা শুনে ওই দিকে গদাই চাপা হাসি দেয়।
সঞ্জয় অপ্রসন্ন হয়, “কিন্তু…। কি… কি চাও বলো আমাকে? আমি তোমায় খাওয়াবো” ।
মলয় হাঁটু চাপড়ে উঠে পড়ে, “পাঁচ হাজার টাকা দে আমায়। ভাই চাকরি পেয়েছে, সেই খুশীতে আমরা দামী মদ খাবো” ।
সঞ্জয়ের কাছে মলয়ের এই আবদার অপ্রত্যাশিত ছিল। সে আশ্চর্য হয়, “দামী মদ! একি বলছো দাদা। আমিতো ওইসব মনেপ্রাণে ঘৃণা করি।আমায় ক্ষমা করে দাও…” । 

মলয় গদাইয়ের কাছে এসে দাঁড়ায়, “তাহলে ছেড়ে দে। তুই এইসব উপহারও ফেরৎ নিয়ে যা। আমার চায় না তোর দেওয়া উপহার” ।
দাদার কথায় সঞ্জয়ের রাগ হলেও সে নিজেকে সংযত রাখে। সেও মোড়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, “দাদা। এমন বলো না। আমরা এতো দিন পর একে অপরকে দেখছি। তুমি এভাবে রাগ করছো, খারাপ লাগছে আমার এতে…”।
মলয়ও অভিমানের সুরে কথা বলে, “তুই তো ভালো জায়গায় চাকরি করিস। অনেক টাকা বেতন তোর। এই দাদাকে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারবি না?”

“হ্যাঁ দিতে পারবো দাদ। কিন্তু মদ কেনার জন্য নয়” । সঞ্জয় মলয়ের পেছনে এসে দাঁড়ায়।
মলয় নিজের গোঁ ধরে থাকে, “না! খেলে আমি মদই খাবো নইলে নয়” ।

সঞ্জয় তার মামীর কথা মনে পড়ে। মামী বলছিলো মলয়দা এখন বিপথে চলে গেছে। মাতাল হয়ে যাচ্ছে দাদা।
সে মলয়কে বোঝাতে যায়, “দাদা এই সবের পরিণতি আমি জানি। দয়া করে তুমি অন্য উপায় বলো”।

মলয় মুচকি হাসে, “নাহ! জেনে রাখা এটাই তোর কাছে আমার চাওয়া। এটা যদি না পূরণ করিস তাহলে আমি আর কিছু চাইবো না”।
সঞ্জয় এখন ধর্ম সঙ্কটে পড়ে যায়। ছোট বেলায় সে তার নেশাগ্রস্থ বাবাকে দেখেছে। সে কেমন করে তার মায়ের উপর পাশবিক নির্যাতন করতো। সেই রকম অবস্থার পুনরাবৃত্তি সে কখনই চায় না।
এই মুহূর্তে সে একটা কড়া নির্ণয় নেয়।
সে বলে, “না দাদা…আমায় ক্ষমা করে দিও”।

এমন সময় মলয় ঘাড় ঘুরিয়ে সঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দেয়, “আমি এমনিই বলছিলাম রে…। ভাইয়ের মন পরীক্ষা করছিলাম। তুই না দিলেও চলবে…। এইযে এতো দিন পর এখানে এসেছিস। দাদা বৌদির জন্য উপহার নিয়ে এসেছিস এটাই অনেক রে ভাই”।
মলয়ের কথা শুনে সঞ্জয়ের হাসি ফোটে। সে মলয়কে জড়িয়ে ধরে। মলয় বলে, “নে তুই কি এনেছিস ওগুলো আমায় দে…। কাল পরশু করে হয়তো তোর বৌদিকে নিয়ে আসবো। তখন না হয় দেখা করিস” ।
সঞ্জয় বলে, “হ্যাঁ দাদা, আমি অবশ্যই দেখা করে যাবো” ।

মলয়ের হাতে উপহারের থলি ধরিয়ে দিয়ে সঞ্জয় বেরিয়ে যেতে চায়। মলয় তাকে বাধা দিয়ে, উঠোন থেকে একখানা মুরগী ধরে তাকে এনে দেয়। বলে, “এই নে। দেশী মোরগের চাষ করেছি। তুই এটা নিয়ে যা তোর মামাকে কেটে দিতে বলিস।লাল মোরগের মাংস খেতে খুব ভালো…। এটা আমি দিলাম তোকে”।

সঞ্জয় সেটা নিতে ইতস্তত বোধ করে। মলয়, মোরগটার পায়ে দড়ি বেঁধে দিয়ে একখানা ব্যাগের মধ্যে ভরে দেয়, “নে…। এবার কোন অসুবিধা হবে না। তুই সহজেই নিয়ে যেতে পারবি”।

সঞ্জয়, মলয়ের বাড়িতে থেকে বেরিয়ে পূর্বের রাস্তা ধরে মামারবাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।

সে চলে যেতেই গদাই মলয়ের কানের কাছে এসে বলে, “শহরের লোক বড়ই স্বার্থপর হয় বল?”
মলয় গদাইয়ের দিকে তাকায়, “কেন বলতো?”
গদাই বলে, “তুই দেখলি না! তুই টাকা চাইলি আর ও কেমন চালাকি করে বারণ করে দিলো। শহরের লোক কিপটেও হয় নাকি শুনেছি”।
মলয় চোখ বড় করে বলে, “টাকাতো ওকে দিতেই হবে! মদ তো ওকে খাওয়াতেই হবে”।
গদাই তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়, “কি ভাই করে? কি করে?”
মলয় ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়, “সে তুই ঠিক জানতে পারবি”।
গদাই উৎসাহের স্বরে, “তুই কিছু ভেবে রেখেছিস নাকি?”
মলয় ঘুরে দাঁড়ায়, “না এখনও ভাবিনি। তবে ভাবতে আর কতক্ষণ”।

II ৬ II

সঞ্জয় ব্যাগ হাতে নিয়ে মামাবাড়ি ফিরে আসে। সুমিত্রা, চন্দনা উঠনেই দাঁড়িয়েছিলো। তারা ওকে দেখে প্রশ্ন করে, “দেখা হলো বাবু? আর এটা কি এনেছিস তুই ব্যাগের মধ্যে?”
সঞ্জয় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, “হ্যাঁ দেখা হলো। আর এটা একটা দেশী মোরগ দিলো আমায় দাদা। মামাকে দিয়ে কেটে ঝোল করতে বলল”।
চন্দনা,সুমিত্রার দিকে তাকায়, “দেখেছো! কেমন একখানা আস্ত মুরগী হাতে ধরিয়ে দিয়েছে ছেলে টাকে…”। সে সঞ্জয়ের দিকে এগিয়ে যায়, “কই দাও তো ব্যাগ খানা বাবা আমার। তোমার মামাকে দিয়ে কাটা করায়”।
সঞ্জয় হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা মামীকে ধরিয়ে দেয়। চন্দনা সেটাকে নিয়ে দীনবন্ধুকে হাঁক দেয়।
সুমিত্রা সঞ্জয়কে ধীর গলায় প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ রে তোর দাদার কি খবর? বৌদির সঙ্গে দেখা হল?”
সঞ্জয় কলে হাত ধুতে যায়, “হ্যাঁ মা। মলয়দার সঙ্গে দেখা হলো। কিন্তু বৌদি নেই বলল, বাপের বাড়ি গিয়েছে…”।
সুমিত্রা বলে, “ওহ আচ্ছা! আর উপহার পেয়ে কি বলছিলো?”
সঞ্জয় মুখে কুলকুচি করে হাঁফ ছেড়ে বলে, “আর উপহার! পাঁচ হাজার টাকার বায়না করছিলো তোমার আদরের ভাইপো”।
সুমিত্রা ম্লান হাসে, “এতো টাকা? কেন রে?”
“ওই যে দামী মদ গিলবে বলে…। নিজেও গিলবে বন্ধুদেরও গেলাবে”। সঞ্জয় তার থেকে গামছাটা টেনে এনে মুখ মোছে।
সুমিত্রা আশ্চর্য হয়ে ভ্রূ কোঁচকায়, “দেখেছিস! ছেলেটা ভারী পাজি হয়ে গেছে তো”। সে জিজ্ঞেস করে, “দিয়ে তুই কি বললি? তুই কি এতো টাকা দিবি নাকি?”
“পাগল নাকি মা? মাথা খারাপ হয়েছে আমার। বাজে খরচের জন্য একটি টাকাও দেবো না কাউকে”।
চন্দনা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। সঞ্জয়ের দিকে তাকায়, “তোমায় গুড় মুড়ি দিই বাপধন?”
সঞ্জয়, মামীকে বলে, “হ্যাঁ দাও মামী। কিন্তু বেশি না। একদম সামান্য!,” মার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে, “তুমি খেয়েছো?”
সুমিত্রা বলে, “হ্যাঁ আমি একটু আগেই চা খেলাম। আর বাজার থেকে ফেরার পথে পেয়ারা,কিছু কাজু বাদাম নিয়ে এসেছি। মামী সেগুলো কেটে দেবে হয়তো তোর জন্য”।

সন্ধ্যা নামার পর চারিদিক অন্ধকার। পরিষ্কার আকাশে শুক্লা অষ্টমীর বড় চাঁদ।  অগুন্তি উজ্জ্বল তারা মিটমিট করছে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে পাওয়া যায়। পাঁচিলের বাইরে কিছু দূর গিয়েই বিস্তর খোলা প্রান্তর। আর সেখান থেকে মিটি মিটি করতে থাকা জোনাকি দেখে সঞ্জয় পুলকিত হয়।
উঠোনের মাঝখানে তালাই বেছানো। তার উপর মোড়া পেতে সে বসে আছে। মা’র দিকে মুখ করে। সুমিত্রা মাটির রান্নাঘরে উনুনের ধারে বসে রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই মামা মুরগী টাকে কেটে পরিষ্কার করে বোনের কাছে দিয়ে গেছে। দীনবন্ধু এখন ঘরের মধ্যে টিভি চালিয়ে এবিপি আনন্দে রাজনৈতিক খবর দেখছে। চন্দনা, সুমিত্রার পেছনে কিছু দূরে বসে একটা বিশাল পাথরের শীলের উপর গোটা মশলা নিয়ে সেগুলোকে বাটছে। খট খট আওয়াজ আসছে সেখান থেকে।
রান্নঘরের খড়ের চালের নীচের দিকে ফিলামেন্ট বাল্ব ঝোলানো। হলুদাভ রশ্মিতে চারিদিক ভরিয়ে তুলেছে। দূরে কথাও গোবিন্দ নামের গান কীর্তন হচ্ছে। তারই খোল, খঞ্জনীর শব্দ ঈষৎ শোনা যাচ্ছে।

বহুদিন পর সুমিত্রা কাঠের উনুনে রান্না করছে। সে একটা উঁচু পিঁড়ের ওপর বসে আছে। সামনে জ্বলন্ত উনুনের উপর লোহার কড়াই রেখেছে সে। চন্দনা বলে সুমিত্রা খুব ভালো রান্না করে। তাই আজ ও রান্না করুক।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সে শীল নোড়ায় বাটা মশলাটা সুমিত্রাকে দিয়ে যায়। সুমিত্রা মাংস রান্না শুরু করে। কড়াইয়ে তেল গরম হবার পর হালকা ভাপ বেরই, তখনই সে এক এক করে বাটা মশলা দিয়ে নাড়তে থাকে।
সঞ্জয় উঠোনের মধ্যে বসে এক মনে মা’কে রান্না করতে দেখে। কোলকাতা হলে হয়তো সে তাকে সাহায্য করতো কিন্তু এখানে ঠাই বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সুমিত্রার রান্না থেকে একটা সুন্দর গন্ধ চারিদিকে ছরিয়ে পড়লো। মাংসের সঙ্গে মশলা কসার গন্ধ। যা জিবে জল এনে দেয়। সঞ্জয় নাক ভরে তার গন্ধ নেয়। সে বিশ্লেষণ করে, বাটা ধনে, জিরে এবং শুকনো লঙ্কার গন্ধ।এমন গন্ধ সে বাড়ির রান্নার মধ্যে কখনও পায়নি। সে সুমিত্রাকে জিজ্ঞেস করে, “মা…। এখানে রান্নার এতো ম’ ম’ গন্ধ ছাড়ছে, কিন্তু বাড়ির রান্নার মধ্যেই এমন গন্ধ ছাড়ে না কেন?”
সুমিত্রা মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “এখানে সব টাটকা মশলা বাবু। গোটা জিরে, গোটা ধনে। আদা, লঙ্কা, রসুন সবই। কিন্তু ওখানে আমরা প্যাকেটে করা গুঁড়ো কিনে রান্না করি। অনেক সময় মিক্সার গ্রাইনডারে মশলা গুঁড়ো করলেও তার তাপে মশলার গুণ নষ্ট হয়ে যায় বুঝলি!”
সঞ্জয় আপ্লুত হয়, “আহ! গন্ধেই জিবে জল চলে এলো মা। খিদেও পেয়ে গেলো প্রচণ্ড। খুবই সুস্বাদু রান্না হচ্ছে বোঝায় যায়” । 

রান্না শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে তারা চার জনে একসঙ্গে  বসে গল্প করতে করতে মুরগির মাংস ও ভাজ মহা তৃপ্তির সঙ্গে খায়। তার অব্যবহিত পরেই তারা শুতে যাবার তোড়জোড় শুরু করে।
সুমিত্রা বলে, “ছোটবৌদি, ছোড়দা আর তুমি বড় ঘরটাতে শোও, আমি ঠাকুরঘরে আমার ঘরটাতে শুই?”
চন্দনা সায় দেয়, “ভাল বলেছ ছোট ঠাকুরঝি, তোমার ছোড়দা বলছে আমায় তুমি তো ছেলেবেলায় ওই ঠাকুরঘরেই শুতে”।
সঞ্জয় বলে, “আর আমি কোথায় শোব মা? ছোটবেলার মত তোমার সঙ্গে?”
“দূর, ওই ছোট চৌকিতে তোকে আর আঁটবে না,” সুমিত্রা হেসে বলে।
“বাপধন তুমি শোও রান্নাঘরের পাশটিতে, মলয়ের ঘরে। কেমন?” চন্দনা সঞ্জয়ের দিকে চেয়ে হেসে বলে।
“মনে পড়েছে। মলয়দার সঙ্গে ওখানে একদিন শুয়েছিলাম,” সঞ্জয় হাসে, কিন্তু মনে মনে সে সামান্য হতাশ। মার সঙ্গে শুয়ে রোজ রাতে উদ্দাম রমণ তার যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে গত দেড় মাসে। রোজ মাকে নিবিড় করে না পেলে নিজের দৃঢ় লিঙ্গ দিয়ে মার রসে ভরা যোনি মন্থন না করলে যেন ঘুমোতে ইচ্ছে করেনা।
সুমিত্রা তখুনি বলে, “চল তোর বিছানা পেতে দিই। ছোটবৌদি, তুমি ছোড়দার বিছানাটা করে দাও বরং”।
দীনবন্ধুর দুই চোখ এই রাত সাড়ে আটটাতেই ঘুমে ঢলে এসেছে। সারা দিনের পরিশ্রম গেছে অনেক।
চন্দনা বলে, “হ্যাঁ ঠাকুরঝি, তোমরা বিছানা পাততে পাততে গল্পগাছা কর মায়েপোতে মিলে। আমি এদিকটা গুছিয়ে নিই!”
সুমিত্রা ও সঞ্জয়  হাতে টর্চ নিয়ে প্রায়ান্ধকার উঠোনে নেমে আসে।  রান্নাঘর পার হয়ে তারা মলয়ের ঘরটিতে দরজা খুলে প্রবেশ করে।
সুমিত্রা মেঝেতে বিছানা পেতে দেয়। মাথায় বালিশ, গায়ে ঢাকা নেবার জন্য হাতে বোনা কাঁথা এবং একটা টেবিল ফ্যান। এখানে রাতের বেলা খুব একটা গরম থাকে না। রাত যত বাড়তে থাকে উষ্ণতা ততই কমতে থাকে। ভোর বেলায় কাঁথা জড়িয়ে শুতে হয়। সকালে সূর্য ওঠার পর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপ বাড়ে।
সঞ্জয়ের  বিছানা বানিয়ে দেওয়ার পর সুমিত্রা সেখানে কিছুক্ষণ বসে থাকে। সঞ্জয় শুয়ে থাকা অবস্থায় মার হাত জড়িয়ে ধরে থাকে।
সে বলে, “সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমি কিন্তু রাতের বেলা তোমার কাছে গিয়ে শুয়ে পড়বো” ।
সুমিত্রা চোখ বড় করে তাকে নিষেধ করে, “ঊঁহু, একদম না।  দুই ঘরের মাঝের পাতলা দেয়াল। অন্য ঘরে যদি  কিছু শব্দ শোনা যায়, তাহলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না,” একটু থেমে সে প্রসঙ্গ বদল করে, “তুই তো জানিস, আগামীকাল আমি আর তোর মামী জটাবাবার মন্দির যাবো!”
“উফ আবার সেই ভোর বেলায় ওঠা! সেই ঠাণ্ডা জলে স্নান করে পুজো দেওয়া! তুমি পারোও বটে!” সঞ্জয়ের গলায় পরিহাস।
সুমিত্রা সঞ্জয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ! তোর জন্যই তো সবকিছু। আমি সেবার জটাবাবার কাছে মানত করে ছিলাম। তোর পড়াশোনার জন্য। ভীষণ জাগ্রত ঠাকুর। জানিস…” ।
“মা, তুমি কি জানো সেবারে তুমি সেখানে চান করার সময় তোমার ওটা আমি দেখে ফেলেছিলাম?” সঞ্জয় কৌতুকে হাসে।
সুমিত্রার তার হাত দিয়ে সঞ্জয়ের মুখ চাপা দেয়, “জোরে কথা নয় বাবু” ।
“আচ্ছা বাবা, আচ্ছা! তবে তুমি আমার পাশে শোও, আমি নিচু গলায় বলব,” সঞ্জয় মার কথা শুনে গলার সুর কিছুটা খাদে নামায়।
সুমিত্রা ছেলের দরজার দিকে পিছন ফিরে কাৎ হয়ে শুয়ে ছেলের দিকে তাকায়। বাম হাতে নিজের মাথার ভর রাখে, “এবার বল। ভীষণ আস্তে বলবি কিন্তু!” তার মুখে সাবধানী সুর।
“সেবারে তোমার গুদটা একদম কামানো ছিল। চেরাটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল,”  সঞ্জয় মৃদু হেসে ফিসফিস করে স্মৃতিচারণ করে।
“উমম্ হুঁ,” সুমিত্রার চোখে লজ্জা ঘনিয়ে আসে। তারও মনে পড়ে সে কথা। সে এক বাড়িতে তখন পরিচারিকার কাজ করত।  সেই বাড়ির মেয়ে প্রিয়াঙ্কা তার যোনিমুখের যৌনকেশ মুন্ডন করে দিয়েছিল।
“অথচ গুদের মুখের ঠিক উপরে ছোট্ট এক ত্রিভুজের মত ঝাঁকড়া চুল রাখা ছিল,” সঞ্জয় বলে চলে, “যেন একটা বড় ত্রিভুজ থেকে তৈরি হয়েছে ছোট্ট আর একটা ত্রিভুজ!”
“এই না, আমার লজ্জা লাগছে কিন্তু!” সুমিত্রা ফিসফিসিয়ে বলে ডান হাত দিয়ে ছেলের কোমরে চিমটি কাটে। 

“তোমার গুদসুন্দরীর ন্যাংটো চেহারা ভালো করে দেখিনি আজও।  যা ঘন চুল তোমার ওখানে!” সঞ্জয় ফিসফিসিয়ে খুনসুটি চালিয়ে যায়।
অতি সাবধানতা সত্ত্বেও সুমিত্রা বুঝতে পারে তাদের এই কামোদ্দীপক কথোপকথনে তার যোনিতে কুলকুল করে ভরে উঠছে কামরস।  পশ্চিমের খোলা জানালা দিয়ে অষ্টমীর ফুটফুটে আলো ঝিরঝির ভরিয়ে দিয়েছে তাদের ঘর। সেই আলোতে ছেলের মায়াবী মুখ। এ মুখের অধিকারীর চেয়ে বড় কিছু চাওয়ার তার নেই।
“তাই নাকি? তা কি ইচ্ছে বাবুর?”সুমিত্রা ফিসফিস করে শুধোয়।
“আমি কিন্তু এবার গিয়ে কাঁচি দিয়ে কেটে দেব চুলগুলো।  আমার গুদুমণিকে ন্যাড়া করে দেখব!” সঞ্জয় উত্তেজনায় বোঝে তার পুরুষাঙ্গ এখন লোহার মতন কঠিন।
“তারপর?” সুমিত্রার গা কাঁপে কামোত্তেজনায়। খপখপ করে তার যোনি গহ্বর। তার ইচ্ছে হয় এখুনি ছেলেকে নগ্ন করে দিয়ে তার উপরে চড়ে বসে সে। আপন যোনিতে ঢুকিয়ে নেয় তার প্রিয়তমের সুখদন্ড।
সে দেখে ছেলের চোখমুখ কামে রক্তাভ হয়ে এসেছে।  তার ঠোঁট নড়ে ঊচ্চারণ করে, “তারপর? তোমার থাইদুটো ধরব দুহাতে। তোমার বুকের কাছে ঠেলে তুলে দেব তোমার দুই হাঁটু…”
“আর আমি কি করব?” সুমিত্রার ফিসফিসে গলার স্বরে ব্যাগ্রতা। তার তলপেটে অলোড়ন উঠেছে। তার যোনি কেবল আর রসসিক্ত নয়, সেখানে যেন বান ডেকেছে।  সে যোনি ঠেসে ধরে তোশকে। নিতম্ব আন্দোলন করে বারবার।
“তুমি তোমার দুই হাত দিয়ে তোমার হাঁটুদুটো ধরে থাকবে,” সঞ্জয় উত্তর দেয়
“আর তুমি?” এই নিবিড় মুহূর্তে সুমিত্রা যেন বিস্মৃত হয় ছেলেকে তার সবসম্য ‘তুই’ সম্বোধন করার কথা।
“আমি দুই হাতে তোমার ন্যাড়া গুদের ঠোঁট দুটো ফাঁক করে দিয়ে ভাল করে দেখব ভিতরের ভেজা নরম লাল টকটকে মাংস,” সঞ্জয় বলে চলে। তার পুরুষাঙ্গের ফাটো ফাটো অবস্থা। সেও কোমর চেপে ধরে বিছানায়। বুঝি এক্ষুনি বীর্যপাত হবে তার।
“শুধু দেখবি?” সুমিত্রা সম্বিত ফিরে পেয়ে ফিসফিস করে বলে। তার নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস আরও ঘন হয়ে আসে। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক দ্রুততালে চলে।
“মুখ ডুবিয়ে চেটে খাব তোমার গুদের রস। তোমার গুদের ভিতরে দুই আঙুল ভরে দিয়ে আরো রস বের করে আনব,” সঞ্জয় তার  বাম হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করে মার ডান হাতের কব্জি।
“চুষে খাব তোর ওই দুটো আঙুল,” জড়িতস্বরে বলে কামনায় ডুকরে ওঠে সুমিত্রা।
সঞ্জয় বুঝতে পারেনা। সে মার ডুকরে ওঠার শব্দে বিচলিত হয়।
“কি হল মা?”  সুমিত্রার পিঠে বাম হাত রেখে জিজ্ঞেস করে সে।
“কিছু না সোনা,” সুমিত্রা মাটিতে পাতা তোষকে মুখ লুকোয়।  নিজেকে সংবরণ করে সে। তার সারা দেহ কাঁপে আক্ষেপে থরথর করে।
একটু পরে মুখ তুলে সে খুব সাবধানে অনুচ্চস্বরে বলে, “বাবু অন্য কথা বল। এই সব কথায় আমাদের নিজেদের সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে!”
সঞ্জয় মার কথা বোঝে। তার পক্ষে আর একটু হলেই নিজেকে সামলানো কষ্টকর হয় উঠছিল।
ঘরে দমকা পশ্চিমা বাতাস ঢোকে।  সঞ্জয় বলে ওঠে, “কি আরাম না মা?”
“এই আমার মা, আমার গ্রাম!” সুমিত্রা হাসিমুখে তার ডান দিকে ছেলের মুখে তাকায়।
“মা, তোমার মাধ্যমিকের সার্টিফিকেটটা কোথায় রেখেছিলে মনে আছে?” সঞ্জয় এবার প্রায় স্বাভাবিক গলায় কথা বলে।
“মনে হয় আমার ঘরের ট্রাঙ্কে রেখেছিলাম। ওখানেই তো আমার পড়ার বইপত্র রাখতাম। কেন রে? কি দরকার?”
“ওটাই তোমার বার্থ সার্টিফিকেট।  এবারে আমাদের আধার কার্ডের জন্যে অ্যাপ্লাই করতে হবে। তাই তোমার বার্থ সার্টিফিকেটটাও চাই,” সঞ্জয় তার ডান হাতের উপর মুখ রাখে।
সে বলতে থাকে, “আর কিছুদিন পরে সব কিছুতেই আধার কার্ড লাগবে। আর তাছাড়া অন্য কাজেও তোমার বার্থ সার্টিফিকেটটা প্রয়োজন…”
“কি কাজে?”
সঞ্জয় গলার স্বর আবার নিচু করে, “আমি বিয়ে করব!” সে থেমে থেমে বলে।
সুমিত্রার সারা শরীর যেন বিদ্যুতপৃষ্ট হয়।  তার মুখে কথা সরে না। বুকের ভিতর হৃদপিন্ড হঠাৎ ধড়াম ধড়াম করে লাফাতে শুরু করে। উত্তজনায় মনে হয় বুকের খাঁচা থেকে এক্ষুনি এক লাফে বাইরে বেরিয়ে আসবে তার হৃদপিন্ড।  নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসে তার।
ফিসফিস করে সে জিজ্ঞেস করে, “কাকে?”
বলার সময় সঞ্জয়ের বুকেও হাতুড়ির মত জোরে হৃদস্পন্দন হয়। “কাকে আবার? আমার মিতাকে। সে ছাড়া কেউ আছে আমার?” ফিসফিস করে বলে সে। মুখ তার হাসির আলোতে উজ্জ্বল।
“কিছুতে আটকাবে না?” সুমিত্রার শরীরে রোমাঞ্চ হয়, তার শরীরে খুশির হিল্লোল। সঙ্গে সঙ্গে এক অজানা ভয়ে কাঁপে বুক। পশ্চিমের জানালা দিয়ে দেখা যায় মন্দ বাতাসে কলাপাতা কাঁপছে। তার সারা শরীর যেন তেমনই কাঁপে তিরতির করে।
“না, আমি খোঁজখবর করেছি,” সে দেখে ছেলের মুখে ফুটে উঠেছে এক অমোঘ প্রত্যয়।
“ঠিক?” তবু যেন বিশ্বাস হয়না সুমিত্রার।  মা-ছেলের বিয়ে? যদি জানাজানি হয়ে যায়? এ বিয়ে আইন অনুযায়ী কেমন করে সম্ভব? এ যেন অলীক রূপকথা শুনছে সে।
“রেজিস্ট্রি বিয়েতে কেবল পাত্র পাত্রীকে লিখে সই করতে হয়, যে তাদের মধ্যে কোনও নিষিদ্ধ সম্পর্ক নেই। তুমি করোতে পারবে না সই?” সঞ্জয় উদার হাসে।
“তা পারব। দেশের আইনে কোন অসুবিধা হবে না তো?” তবু যেন মন মানে না। এ অবিশ্বাস্য কাজ কেমন করে হবে? তার ছেলের কোনও বিপদ হবে না তো? তাহলে সে বাঁচবে কি করে? তার ছেলেই যে তার সব! ভয়ে কাঁপে বুক।
সঞ্জয় হাসে, “কিচ্ছু চিন্তা কোরনা তুমি। আমি ম্যারেজ রেজিস্টারের সঙ্গে গতকালই কথা বলেছি। কেবল আমাদের দুজনের মাধ্যমিক সার্টিফিকেট হলেই চলবে।  সার্টিফিকেট দুটো জমা দিয়ে দুসপ্তাহ ম্যারেজ

নোটিফিকেশন দিতে হয়।  তারপরেই বিয়ে রেজিস্টার করা যায়, ” বলতে থাকে সে, “আর স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে রেজিস্টারড হবে, আইন জানবে কি করে?”
“বাঁচা গেল! তাহলে তো কোন অসুবিধাই নেই, বল?” সুমিত্রার বুকের ভয় পুলকে রূপান্তরিত হয়। তার প্রিয়তম এবার তার হবে। আইনের স্বীকৃতি পাবে তাদের মিলন। তাদের সন্তানদের পিতৃমাতৃ পরিচয়ে কোন বিড়ম্বনা হবে না। এ এক বড় স্বস্তির খবর।
“কি কথা হচ্ছে মা ছেলেতে?”
তাদের ঘরের দরজায় চন্দনার মুখ ভাসে। স্বামীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সুমিত্রাকে নিয়ে যেতে এসেছে সে।
দরজায় ছোটমামিকে দেখে সঞ্জয় বিছানায় উঠে বসে, “এসো ছোটমামি। কেমন হাওয়া এই ঘরটায় না?” তার মুখে উজ্জ্বল আনন্দের হাসি।
সুমিত্রাও উঠে বসে বিছানা চন্দনার বসার জায়গা করে দেয়, “এস ছোটবৌঠান, বস। বাবু বলছিল আমার মাধ্যমিক সার্টিফিকেটটা ওর চাই। আধার কার্ড করাতে নাকি লাগবে…”
চন্দনা অবাক হয়, “সেকি তোমরা এখনও করাও নি আধার কার্ড? আমারদের তো প্রায় বছরখানেক হল করানো হয়ে গেছে। মলয়ের বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে!”
“তাই নাকি? কোথায় করালে?” সুমিত্রাও অবাক। সে জানতোই না আধার কার্ড বলে কিছু আছে।
“এই তো আমাদের পঞ্চায়েত অফিসের সব কিছুর ব্যবস্থা হয়েছিল,” চন্দনা বলে, “চলো এবার ছোট ঠাকুরঝি, বাপধনকে ঘুমোতে দাও”।
সুমিত্রাও উঠে পড়ে, “হ্যাঁ বৌঠান চলো, আমাদের ভোরে উঠবার আছে আবার। জটাবাবার থানে যেতে হবে,” সঞ্জয়ের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করে সে, “কটা বাজে রে বাবু?”
“রাত নটা দশ বেজে গেছে মা,” সঞ্জয় মোবাইল দেখে উত্তর দেয়।

II ৭ II

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রৌদ্রের প্রকোপটাও বাড়ে এখানে। চৈত্র পেরিয়ে বৈশাখ মাস ঢুকছে। আর এখন থেকেই গ্রীষ্মের উত্তাপটা জানান দিচ্ছে। পাথুরে মাটির দেশ এটা। খাদানের জন্য বিখ্যাত।  তাই যত দিন বাড়ে, উত্তাপের মাত্রা টাও বাড়তে থাকে। আবার সাঁঝ নামার সঙ্গে শীতল বাতাসের আগমন হয় পশ্চিম থেকে। বলে নাকি নেপালের হিমেল বাতাস পশ্চিমের বিহার রাজ্য হয়ে এই জেলায় প্রবেশ করে। কিন্তু দিনের বেলা পাথরের উত্তাপ বিকিরণে সেই বিশ্বাস ভঙ্গ হতেও পারে। বেলা সাড়ে নয়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বিকেল চারটে অবধি সারা গ্রাম খাঁ খাঁ করে। এই সময় যে যার সে তার কাজে মগ্ন থাকে। গ্রামের পুরুষরা যায় মাঠে এবং ভিন গ্রামে নিজের কাজে। মহিলারা যারা ঘরের কাজ করে তারা ঘরেই থাকে আর যারা বাইরে কাজ করে তারা সকালেই রোদ চড়া হবার আগেই বেরিয়ে পড়ে। কচিকাঁচারা যায় স্কুলে আর রাখালরা যায় গরুর পাল নিয়ে। এই সময় গ্রাম যেন জন শূন্য হয়ে পড়ে। মানুষের কার্যকলাপের থেকে পশু,পাখীর ডাক শুনতে পাওয়া যায় বেশি।
বেলা এখন সাড়ে দশটা। সঞ্জয় মোবাইল থেকে অফিসের হোয়াটস আপ গ্রুপ এবং মেইল থেকে নতুন মেসেজ গুলো পড়তে থাকে।
আজ তারা সবাই ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে উঠে পড়েছিল। বীরভূম কলকাতা থেকে অনেকটাই পশ্চিমে। তাই সূর্যোদয় মিনিট পনেরো পরে হলেও, এখানে প্রচুর ফাঁকা জমি থাকায় অনেক মুক্ত আকাশ। তাই সঞ্জয়ের মনে হয় সূর্য যেন একটু আগেই উঠেছে এখানে।
সুমিত্রা ও চন্দনা ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃকৃত্যাদি করেই চলে গেছিল জটাবাবার থানে।
সঞ্জয় যায় নি। সে মার ঘরে ঢুকে প্রথমেই সেই পুরোন মার বইএর ট্রাঙ্কটা চৌকির তলা থেকে টেনে বের করেছিল সে।  তালা লাগানো ছিল না। ট্রাঙ্কটা খুলে দেখে মা ঠিকই বলেছিল। মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট ও মার্কশীট যত্ন করে রাখা ছিল একেবারে মার পুরোন বইগুলোর উপর।
সার্টিফিকেটে জ্বলজ্বল করছে মার নাম –  সুমিত্রা মন্ডল। বাবার নাম – খগেন মন্ডল, জন্ম তারিখ – ১৫ই মার্চ, ১৯৭৬,  ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থিনী প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণা হন।
মা ফার্স্ট  ডিভিশনে পাশ করেছিল!
আনন্দে উত্তেজনায় সে উল্টেপাল্টে মার মার্কশীটটাও দেখে। ৯০০র মধ্যে ৫৯৭ নম্বর পেয়েছিল মা। ফার্স্ট  ডিভিশন পেয়েছিল মা! এই তো মার্কশীটের তলাতেই লেখা রয়েছে ফার্স্ট ডিভিশন শুরু হয় ৫৪০ নম্বরে। ইতিহাসে নম্বর সবচেয়ে বেশি ৮৪। মা লেটার পেয়েছিল ইতিহাসে? উরিব্বাস! দেখেছ! কোনওদিন মুখ ফুটে বলেনি! লেটার ওয়ার্ক এজুকেশনেও, ৮৩।  বোঝাই যায় মা ব্যায়াম করোতে খেলাধুলোয় পটু ছিল। ইংরেজিতে নম্বর সবচেয়ে কম। মাত্র ৪৯। বিজ্ঞান বিভাগে সব বিষয়েই ৬০ এর কাছাকাছি বা উপর। ভূগোলেও ষাট এর উপর! যদি শহরের মেয়ে হত তাহলে যে কী নম্বর পেত কেউ জানেনা। হয়ত মাধ্যমিকে প্রথম দশজনের মধ্যে থাকত!
সে উত্তেজনায় ঘর থেকে মার মার্কশীট ও মাধ্যমিক সার্টিফিকেট নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে।  তারপর আবার কি ভেবে ঘরে আবার ঢোকে। নিজের সুটকেসটা খুলে, উপরের ডালার নেটের পকেটে নথি দুটো ভরে চেন আটকে দেয় সে। তার বুকে উচ্ছ্বাসের তরঙ্গ উঠেছে।  মার এই মাধ্যমিক সার্টিফিকেটই তাদের বিয়ের চাবিকাঠি। সে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে বীরভূমের পাত্রী সুমিত্রা মন্ডল, বয়স ৪০ বছর, পিতার নাম  স্বর্গীয় খগেন মন্ডল, এর সঙ্গে কলকাতা নিবাসী পাত্র সঞ্জয় মন্ডল, বয়স ২২ বছর ৭ মাস,  পিতার নাম পরেশনাথ মন্ডল, এর শুভ বিবাহ।
সে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে আবার। সকালের অল্পস্বল্পখাবার খেয়ে ঘরের দাওয়া তার ছোটমামা দীনবন্ধু তখন হুঁকো টানছে গুড়ুক গুড়ুক শব্দ করে।  খালি গা, পরনে একটা লুঙ্গি  হাঁটুর উপরে তুলে পরা।
“ছোটমামা আমি তোমার সাইকেলটা নিয়ে গ্রামটা ঘুরে আসব? কতদিন দেখিনি!” সঞ্জয় সকালবেলায় সদ্য নিকোনো উঠোনে পা রেখে বলে।
“তা যাও বাপধন, ঘুরে ঘুরে দেখে এস আমাদের গাঁ,” তামাক টানতে টানতে বলে দীনবন্ধু।
সোঁ সোঁ করে সাইকেল চালিয়ে বেরিয়ে পড়ে সঞ্জয়। তার বুক আগামী বিবাহিত জীবনের স্বপ্নে ভরে উঠেছে। থই থই করে খুশির উচ্ছ্বাস।

প্রায় দুঘন্টা পরে যখন সে মামাবাড়ি ফিরে এল, তখন চন্দনা ও সুমিত্রা জটাবাবার থান থেকে পুজো দিয়ে ফিরে এসেছে।
সঞ্জয় মার কাছ থেকে প্রসাদ নিয়ে খায়। খেতে খেতে প্রশ্ন করে, “ছোটমামী জটাবাবার কাছে কি চাইলে?”
চন্দনা উত্তর দেয়, “চাইলাম আমাদের মলয়টাকে যেন ভাল রাখে। মলয় যেন আমাদের আবার ভালবাসে। তার বউ যেন আমাদের ভালবাসে। এই আর কি?”
“আর তুমি মা? তুমি কি চাইলে?” সঞ্জয় মার কাছে জানতে চায়। চন্দনাও সুমিত্রার কথা শোনার জন্যে উৎসুক হয়ে তার মুখের দিকে চায়।
সুমিত্রা ছেলের চোখে চোখ রেখে বলে, “আমি আমার বাবুর জন্য একটা ভাল বউ চাইলাম।  বাবু যেন তাকে সারাক্ষণ ভালবাসে, সে তো বাবুকে খুব ভালবাসবে তাই,” বলতে বলতে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে সুমিত্রা।
সঞ্জয় চাপ দেয়, “আর কিছু চাইলেনা, তুমি?”
“হ্যাঁ চাইলাম, তাদের বিয়ে যেন খুব ভালোয় ভালোয় কাটে, তারা যেন খুব সুখী হয়,” অস্ফুটে বলে সুমিত্রা। তারপর যোগ করে, “সুন্দর সুন্দর ছেলেমেয়েতে যেন তাদের ঘর ভরে যায়!”
সঞ্জয় সবার সামনে মার মুখে এ কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে চেয়ে থাকে। তার খুব ইচ্ছে করে যেন মাকে সাপটে ধরে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেয়। মার জিভ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষে খায়। তার হাত দুটো নিশপিশ পায়ের কাছ থেকে মার শাড়ি তুলে নিয়ে মার নগ্ন নরম পাছা দুহাত দিয়ে দলন করতে।  কিন্তু এসব কিছুই করে না সে। কেবল মার চোখে চোখ রেখে চেয়ে থাকে সে। তার মুখে রক্তকণিকারা ছুটোছুটি করে। 

এরপর তারা সকলে সকালের প্রাতঃরাশ সারে ফেনাভাত ও আলুসেদ্ধ দিয়ে।
তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত চন্দনা রান্নায় ব্যস্ত এবং সুমিত্রা তাকে সাহায্য করছে।
এইমাত্র কিছুক্ষণ আগে সে সঞ্জয়ের কাছে এসে বলে, “তুই তৈরি হয়ে নে বাবু। আমরা পুকুরে চান করতে যাবো” ।
সঞ্জয় জিজ্ঞেস করে, “আমরা মানে আমরা তিনজন?”
সুমিত্রা হাসে, “না। আমরা দুই জন। আমি আর তুই। তোর মামীর রান্না শেষ হয়নি এখনও” ।
মার কথা শুনে সঞ্জয় উত্তেজিত হয়, “আমি এখুনি তৈরি হয়ে নিচ্ছি মা,” এই সময়টার জন্যে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিল সে।
সুমিত্রা সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আবার রান্নাঘরে প্রবেশ করে। সঞ্জয় একখানা টি-শার্ট এবং  ফিতে দেওয়া বারমুডা প্যান্ট পরে বেরিয়ে আসে।
চন্দনা ভাতের মাড় গড়াতে গড়াতে বলে, “তোমরা মা ছেলে মিলে যাও।আমি রান্না সেরে যাচ্ছি”।
এমন মুহূর্তে দীনবন্ধু ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। পরনে পা অবধি নামানো লুঙ্গি, সাদা জামা এবং ডান কাঁধে ঝোলানো লাল গামছা।
সে চন্দনাকে জিজ্ঞেস করে, “ওরা এখন কোথায় চলল?”
চন্দনা রান্নাঘর থেকে উঁকি দিয়ে মুখ বের করে বলে, “ওরা মা ছেলে মিলে পূর্বের পুকুর টায় চান করতে চলল…,” একটু থেকে সেও দীনবন্ধুকে প্রশ্ন করে, “তুমি আবার কোথায় চললে?”
দীনবন্ধু বলে, “আমি বীজ ঘর চললাম গো। দেখি পটল এবং ঝিঙ্গের বীজ এনেছে কিনা। বীজ পেলে এই ক’দিনের মধ্যেই লাগিয়ে দিতে হবে। মাটি তৈরি করা আছে”।

এখানে কাছাকাছি দুটো পুকুর। একটা সুমিত্রার বাড়ির ঠিক পেছনে। আর অপরটা কিছুদূরে পূর্বে।
বাড়ির পেছনের পুকুরটায় মাছ চাষ করেছে বলে সেখানে স্নান করা বারণ। কিন্তু পূর্ব দিকের পুকুরটা স্নান করার জন্য। ওই পুকুরের জলও খুব পরিষ্কার। পাথুরে মাটি বলে জলের স্বচ্ছতাও কাঁচের মতো। 

বাড়ির পূর্ব দিকের পুকুর পাড়ে হেঁটে আসে তারা। সঞ্জয় পুকুরের পরিষ্কার জল দেখে অভিভূত হয়। এখানে এখন কেউ আসবে না। সুতরাং মা’র সঙ্গে মন ভরে জল কেলি করবে সে। মনে মনে ভাবে। বহু আগে মা’র সঙ্গে দিঘায় বেড়াতে গিয়েছিলো। সেখানে মা সাঁতার কেটে ছিল। কিন্তু সঞ্জয় সাঁতার জানে না। তাই এখানে সে তার মাকে বলবে সাঁতার শিখিয়ে দিতে।
সে বলে, “মা…। এই পুকুরের জলটা খুবই পরিষ্কার বলো?”
সুমিত্রা বলে, “হ্যাঁ রে। পাঁক নেই এই পুকুর টায়। জলে নামলে বুঝতে পারবি নরম বালি পায়ে ঠেকছে। আর গ্রামের এক পাশে হওয়ার কারণে খুব বেশি লোক জন আসে না এখানে স্নান করতে” ।
সঞ্জয় খুশি হয়, “তাহলে তো কোন কথায় নেই। কেউ আমাদের ডিস্টার্ব করতে আসবে না। আমরা একঘণ্টা ধরে স্নান করবো” ।
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা হাসে, “তাই? জল কিন্তু খুব ঠাণ্ডা হবে বাবু” ।
সঞ্জয় বলে, “কিছু হবে না মা। তুমি তো জানো আমার ঠাণ্ডা লাগার ধাত নেই। আর তাছাড়া তুমি আমাকে আজ সাঁতার কাটা শিখিয়ে দেবে” ।
সুমিত্রা অবাক হয়ে সঞ্জয়ের দিকে তাকায়। সঞ্জয় বলে, “এভাবে তাকানোর কি আছে? মনে পড়ে আমরা দিঘায় বেড়াতে গিয়েছিলাম আর তোমায় বলেছিলাম মামারবাড়ি গেলে তুমি আমাকে সাঁতার শিখিয়ে দেবে” ।
সুমিত্রা হেসে বলে, “সাঁতার কি একদিনে শেখা যায় বাবু” ।
সঞ্জয় বলে, “একটু বেশি সময় নিলে শেখা যায় বইকি। চেষ্টা করতে আর কি ক্ষতি?”
সুমিত্রা হাঁফ ছাড়ে, “চল দেখি” ।
পুব দিকে তাদের বাড়ির থেকে প্রায় একশ পা দূরে নির্জন পুকুরের ধারে তারা এসে পৌঁছয়। পুকুরটা খুব না হলেও বড়ই। প্রায় দেড়শ ফুট লম্বা একশ ফুট চওড়া হবে।  পুকুরের পাড় সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। তাতে সিঁড়ি দিয়ে ধাপ করা। পুকুরের  পিছনদিকে বিস্তৃত অগাধ ধান ক্ষেত। সেখানে এখন ধান কেটে নেওয়া হয়েছে। শুধু শুকনো খড়ের অবশিষ্ট টুকু পড়ে আছে। পুকুরের সিমেন্ট বাঁধান ঘাটের আশেপাশে সার দিয়ে লাগান বড় বড় নারকেল গাছ। বেশিরভাগের গাছেই প্রচুর ডাব ঝুলছে।
সুমিত্রা শাড়ি পরেই নেমে জলে নেমে পড়ে। প্রায় তখুনি গলা জলে চলে যায় সে।
সঞ্জয় টি-শার্ট খুলে খালি গায়ে নিম্নাঙ্গে কেবল বারমুডা পরে ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে জলে নামে। দুই সিঁড়ি নেমে কেবল পায়ের পাতা ভেজান গভীর জলে  দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে মাকে দেখে। “এভাবে তুমি সাঁতার কাটতে পারবে মা?” সঞ্জয় অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
সুমিত্রা বলে, “কেন পারবো না? তুই শুধু দ্যাখ” ।
সঞ্জয় হেসে মজা করে, “আগে থেকে বললে, তোমার জন্য বিকিনি অর্ডার করে দিতাম অনলাইন থেকে” ।
সুমিত্রা ছেলের কথায় পাত্তা দেয় না। সে গলা জলে গিয়ে গা ভিজিয়ে নেয়। তারপর খোঁপা আলগা করে চুলের গোছা কে স্বাধীন করে। মাথা ডুবোয় জলের তলায়। তিরিশ সেকেন্ড পর উঠে মুখ তুলে উঠে আসে। দু’হাত চুল থেকে জল নিংড়ে পুনরায় খোঁপা বেঁধে নেয় সে। তারপর অবলীলায় ভেসে ভেসে পা দাপিয়ে সাঁতার কাটে।
প্রকৃতির মাঝে সঞ্জয় মাকে দুচোখ ভরে দেখে । সম্পূর্ণ সিক্ত শরীরে সুমিত্রাকে তার মনে হয় যেন জলপরী। মাথাভরা ভেজা চুল। ভেজা সুতির আটপৌরে শাড়ি এবং সেই ভেজা শাড়ির মধ্য দিয়ে তার ভরাট বুক উপচে পড়ে। সাঁতারের সময় জলের আঘাতে তার শাড়ির আঁচল বারবার খসে পড়ে বুক থেকে। ফলে ব্লাউজের উপর থেকে তার ভারি উথলে ওঠা দুই স্তনের মাঝের গভীর খাঁজ সঞ্জয়ের  বুকে তোলে দোলা।
ছেলেকে  জলে নামতে ইতস্ততঃ করতে দেখে সুমিত্রা ঘাটের দিকে সাঁতরে ফিরে আসে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে সে।  কোমর সমান জলে দাঁড়িয়ে সুমিত্রা ডাক দেয় ছেলেকে,  “এই দিকে কি দেখছিস বাবু? নেমে আয়!”,
ভেজা শাড়ির মধ্যে তার হালকা মেদে ভরা পেট সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে এবং সুগভীর চাপা নাভি ছিদ্র যেন কুয়াশার আড়ালে গিরিবর্ত্মের মত আচ্ছন্ন। অস্পষ্ট কিন্তু মোহময়।
সঞ্জয় সম্মোহিতের মত এগিয়ে যায়। ডান হাত বাড়িয়ে মার ডান হাত ধরে।  মার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সে। জল তার কোমর সমান নয় এখানে।
“এবারে এক ধাপ নিচে নাম,” সুমিত্রা উৎসাহ দেয়।  মার পাশ থেকে সিঁড়ির একধাপ নিচে নামে সে। এবারে জল তার কোমর সমান। সুমিত্রা আরও একধাপ নেমে ছেলের পাশে দাঁড়ায় এবার। পুকুরের জল তার স্তনপিন্ডদুটিকে স্পর্শ করে। ঠান্ডা জলে তার স্তনবৃন্তদুটি শক্ত। ভেজা শাড়ির উপর দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ফুটে রয়েছে।
তারা ঘুরে পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়ায়। জলসুন্দরী মাকে দেখে তার আশ মেটে না। সাঁতার অনুশীলন ভুলে যায় সে। জলের তলা দিয়ে বাম হাত দিয়ে  সে মার কোমর জড়িয়ে ধরে।
সুমিত্রা বলে, “কি হলো বাবু সাঁতার শিখবি বললি যে?”
সঞ্জয় অস্ফুটে বলে, “এভাবে সাঁতার শেখা যায় না মা?”
সে তার ডান হাত মা’র কোমর থেকে পেটের দিকে নিয়ে যায়। নাভির চারপাশে হাত ঘোরায়। মধ্যমা আঙুল প্রবেশ করায় মার নাভিছিদ্রে ।
সুমিত্রা শশব্যস্তে বলে, “অ্যাই, দুষ্টুমি করিস না। লোকে দেখলে মস্ত কেলেঙ্কারি হবে। দেখেছিস তো মার চল্লিশ গজ দূরে আমাদের পড়শীদের বাড়ি। তাদের জানালা দিয়ে সব দেখা যায়”।
“তা ঠিক বলেছ মিত্রা, তবে কাল রাতের পর থেকে আর নিজেকে সামলাতে পারছি না। খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে আদর করি,” সঞ্জয় সংযত হয়ে দায়িত্ববান প্রেমিক হওয়ার চেষ্টা করে। সে মার দেহ থেকে হাত সরিয়ে নেয়।
সুমিত্রা হাসে।  ঘাটের নারকেল গাছের পাতাগুলোর ফাঁক দিয়ে রোদের কিরণ নরম হয়ে তার মুখের উপর পড়েছে। সেই নরম আলোতে সঞ্জয় দেখে মার পুরু ঠোঁটদুটিতে রক্তাভা। তিরতির করে কাঁপে ঠোঁটদুটো।
“আমারও ভীষণ ইচ্ছে করছে, তুমি জানো সোনা,” নিবিড় গলায় বলে সুমিত্রা। তার নাকের পাটাদুটো ফুলে ওঠে। বাম নাকে হীরের নাকছাবি দ্যুতি ছড়ায়।
“চল আয় আরও গভীর জলে যাই,” ডান দিকে ঘুরে ছেলের বুকে বাম হাত দিয়ে আস্তে ঠেলা মারে সে। সঞ্জয় সিঁড়ির দুধাপ নিচে নামতেই জল তার চিবুক ছোঁয়।
সুমিত্রা ছেলের একধাপ উপরে দাঁড়িয়ে থাকে, এখানে গলা জল তার।
“দেখ এবারে!” সুমিত্রা ছেলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জলে ডুব দেয়।  জলের উপর থেকে আর দেখা যায় না তার শরীর।
সঞ্জয় বুঝতে পারে ডুব দিয়ে মা দ্রুত হাতে তার পরনের বারমুডার দড়ি খুলে দেয়। তারপর দুই হাতে প্যান্টের ইলাস্টিক ধরে টেনে নিচে জাঙ্গিয়া শুদ্ধ তার ঊরু নামিয়ে দেয় বারমুডাটা। অনুভব করে মার নরম হাৎ মুঠো করে ধরে তার উদ্ধত পুরুষাঙ্গ। মুঠো পিছনে ঠেলে দিতে লিঙ্গচর্ম খুলে গিয়ে অনাবৃত হয় তার লিঙ্গমুণ্ড। তারপরেই মার নরম ঊষ্ণ ঠোঁটদুটো নিবিড় করে ঘিরে ধরে তার কামদন্ড। সুমিত্রা চোষে। মুখের গভীরে নিয়ে যায়। আবার চোষে। সঞ্জয় সুখে পাগলের মতো হয়ে যায়। তারপর হঠাৎ অনুভব করে সে সুখ আর নেই। মা তাকে ছেড়ে দিয়ে ডুব সাঁতার দিয়ে একটু দূরে ভুস করে ভেসে ওঠে। সাঁতার কাটতে কাটতে তার দিকে চেয়ে হাসে। চিৎকার করে বলে, “কেমন?”
সাঁতার কেটে আবার ছেলের সামনে এসে সিঁড়ির ঠিক আগের ধাপটিতে এসে দাড়ায় সুমিত্রা।  মা তার মুখোমুখি দাঁড়াতেই সঞ্জয়ও সাহস পেয়ে ডুব দেয়।  পায়ের পাতার ধার থেকে শাড়ির তলা ধরে উপরে তুলে জলের নিচে মার কোমর অবধি অনাবৃত করে দেয় সে।  মার নগ্ন নিতম্ব ও রোমশ ঊরুসন্ধিতে হাত দিয়ে বিস্মিত হয়। জল থেকে মাথা তুলে এক বুক নিঃশ্বাস নেয়।
এক মুখ হেসে বলে, “মা! তুমি ভেতরে প্যান্টি পরোনি? দারুণ!” আবার ডুব দেয় সে। মুখ নিয়ে যায় মার ঊরুসন্ধিতে।  দুই হাতে মার কেশাবৃত যোনির ঠোঁট ফাঁক করে দিয়ে জিভ দিয়ে চাটে নরম মাংসে। সুমিত্রা আবেশে ঊরুদুটি আরও ছড়িয়ে দেয়।
সঞ্জয় জল থেকে মাথা তুলে সিঁড়িতে দাঁড়াতেই চাপা স্বরে বলে, “ঘুরে দাঁড়া সোনা!”
মার কথা শুনে সঞ্জয় ধান ঘুরে জমির দিকে মুখ করে দাঁড়ায়।
“আমি ডুব সাঁতার দিয়ে আসছি। আমার পিছন দিয়ে ঢুকিয়ে দিবি এবার!” বলেই সুমিত্রা সাঁতরে গভীরে জলে চলে যায়।  তারপর জলে ডুব দেয়। আর দেখা যায় না তাকে।

হঠাৎই সঞ্জয় অনুভব করে মা ডুব সাঁতারে উপুড় হয়ে তার নগ্ন নরম ঊরুদুটি দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে তার কোমর। সিঁড়িতে গলাজলে দাঁড়িয়ে থেকে সে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে মার নরম চর্বি ঢাকা কোমর। মার নিতম্ব ঠেসে ধরে সে নিজের ঊরুমূলে। সুমিত্রা পিছনে বাম হাত নিয়ে ছেলের ঊচ্ছৃত কঠিন পুরুষাঙ্গ ধরে প্রবেশ করিয়ে নেয় নিজের যোনিবিবরে।  তারা খোলা জায়গায় প্রকৃতির মাঝে রতিক্রিয়ারত। অথচ কেউ টের পাবে না।  সুমিত্রা অনুভব করে ছেলের লিঙ্গ সম্পূর্ণ প্রবিষ্ট তার যোনি গহ্বরে। তার মনে হয় সারাজীবন যেন তার প্রাণের বাবুসোনা তার ভিতরেই থাকে এমন ভাবে। সঞ্জয় আদিম উত্তেজনায় সুমিত্রার নরম কোমর ধরে কয়েক সেকেন্ডের ভিতরেই বারবার নিজেকে প্রবেশ করিয়ে নেয় মার শরীরের মধ্যে। চঞ্চল ডান হাত দিয়ে আদর করে মার চুলে ঢাকা যোনি বেদীতে।  এমনই সময় সুমিত্রা তাদের গভীর জলের তলার রমণ স্থগিত করে সাঁতার দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে যায়।  সামনে দশ ফুট দূরে ভুস করে ভেসে উঠে মাথা তোলে সে। গভীর শ্বাস নিয়ে আবার ডুব দেয় সে। আবার একই ভাবে জলের তলায় যুক্ত হয় মা ও ছেলে।  সেকেন্ড কুড়ি পর আবার রমণ অসমাপ্ত রেখে ডুব সাঁতার দিয়ে ফুট দশেক দূরে ভেসে ওঠে সুমিত্রা।  তারপর অলস ভাবে জলের উপর দিতে সাঁতার দিয়ে ছেলের কাছে আসে সে।
খুব হাসে সুমিত্রা, “কেমন রে?”
বিস্ময়ে হতবাক সঞ্জয় দেখে উত্তেজনায়, পরিশ্রমে মা মুখ লাল টকটক করছে। নিঃশ্বাস পড়ছে ঘনঘন।
সুমিত্রা চাপা স্বরে বলে, “ওই দেখ তোর ছোটমামী আসছে,” চোখ দিয়ে ইঙ্গিত করে সে।
সঞ্জয় ঘুরে  ঘাটের দিকে তাকায়। বকুল আর আম গাছের ছায়ায় ঘেরা সরু পথ ধরে দূর থেকে দেখা যায় চন্দনার অবয়ব।
মা ও ছেলে জলের তলার সিঁড়ি দিয়ে ধাপে ধাপে উঠে  ঘাটের দিকে এগিয়ে যায়।

চন্দনা পুকুর ঘাটে এসে দাঁড়ায়। তাদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “মা ছেলে মিলে স্নান করা হচ্ছে বুঝি” ।
সুমিত্রা চাপা হাসি দিয়ে বলে, “হ্যাঁ দ্যাখো না। তোমার ভাগ্নেকে সাঁতার শেখাচ্ছি” ।
চন্দনা ঘাটের সামনে এসে দাঁড়ায়, “এতক্ষণ তো তোমার কাছে শিখল ছোট ঠাকুরঝি, এবার দেখ আমি বাপধনকে সাঁতার শিখিয়ে দিচ্ছি” ।
“এই নে। তোর মামী তোকে সাঁতার শিখিয়ে দেবে বলছে। শেখ মামীর কাছে। আমি তাড়াতাড়ি চান সেরে ঘরে গিয়ে তৈরি হই,” সুমিত্রা হেসে সঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বলে।
চন্দনা জলে নেমে তাদের কাছে আসে। সে সুমিত্রাকে হাত বাড়িয়ে দেখায়, “এই দ্যাখো তোমার জন্য লাক্স সাবান আর পণ্ডসের ফেস ওয়াস আনলাম সুমি। আর শ্যাম্পুর পাতাও এনেছি দেখে নিও” ।
সুমিত্রা ভেজা শরীর নিয়ে ঘাটের দিকে এগিয়ে আসে। সিঁড়ির ধাপে বসে ফেস ওয়াশ গালে নেয়। চন্দনা সঞ্জয়ের দিকে এগিয়ে যায়। তারা একে অপরের দিকে হাসি মুখে তাকায়।
চন্দনা হাত বাড়ায়, “তুমি আমার সঙ্গে এসো বাবা। জলের আরও একটু গভীরে যেতে হবে তবেই সাঁতার শিখতে পারবে” ।
সঞ্জয়, মামীর কথা মতো তার হাত ধরে গভীর জলের দিকে এগিয়ে যায়। এক গলা জলে দাঁড়িয়ে থাকে সে। চন্দনা বলে, “নাও এইবার আমি যেভাবে সাঁতার কাটছি। তুমি সেভাবে করার চেষ্টা কর” ।

II ৮ II

গ্রামের মাঝ পথ দিয়ে হেঁটে চলে দীনবন্ধু। দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে পড়বে সরকারী বীজ দপ্তর। যেখানে সুলভ মূল্যে উচ্চ মানের বীজ পাওয়া যায়। রাসায়নিক সারও মেলে সেখানে। সপ্তাহে তিন দিন করে সিউরি শহর থেকে বাবু আসেন। সেচ সম্বন্ধীয় নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কোন চাষে কতটা সার লাগবে। বীজ কখন পুঁততে হবে। জলের পরিমানই বা কেমন হওয়া উচিৎ সেই সমস্ত উপদেশ গুলো দিয়ে থাকেন সরকারী ওই সেচ কর্মী। আজ শুক্রবার। আজ সেই বাবুর আসার কথা। কিন্তু দূর থেকেই দেখতে পায় দীনবন্ধু। বেলা সাড়ে দশটা পেরিয়ে গেলেও দপ্তরের দরজা বন্ধ।
দুই গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে বীজের কার্যালয়। সে কাঁচা পথ ধরে সেখানে এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে দরজায় তালা লাগানো এবং তার পাশে উঁচু স্ল্যাবে বসে ঘাড় নামিয়ে মোবাইলে কি যেন দেখছিল শ্যামল মিস্ত্রি।
“ওটা শ্যামল মিস্ত্রি না?”, মনে মনে বলে হাঁক দেয় দীনবন্ধু। শ্যামল মাথা তুলে দেখে, “ওহ! দীনু দা। এসো। বসো” ।
শ্যামল স্ল্যাব থেকে সামান্য সরে দীনবন্ধুর জন্য বসার জায়গা করে দেয়।
“কি বীজ কিনতে না সার দীনু দা?” শ্যামল প্রশ্ন করে।
“বীজ কিনতে এসেছিলাম ভাই”, দীনবন্ধু বলে।
“তা কিসের বীজ দাদা? তরমুজ না শসা? আমিও এসেছিলাম বীজের খোঁজ নিতে। অফিস বন্ধ তাই বসে আছি”, বলে শ্যামল।
দীনবন্ধু বলে, “পটল, ঝিঙ্গের বীজ ভাই। গতবার তরমুজ লাগিয়ে ঠকেছি। ন্যায্য দাম পায়নি বলে গরুকে খাওয়াতে হয়েছিলো”।
চাপা হাসি দেয় শ্যামল, “এই জন্য আমি চাষবাস ছেড়ে দিয়েছি। শালা খেটে মরো কিন্তু পয়সার বেলায় নেই” ।
দীনবন্ধু চুপ করে ছিলো। শ্যামল তার দিকে তাকিয়ে বলে, “কাল তোমার বোনকে রাস্তায় আসতে দেখলাম। তোমার ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে” ।
দীনবন্ধু হেসে বলে, “হ্যাঁ গতকাল এসেছে তারা মা ছেলে মিলে” ।
“এবারে তোমার বোনকে দেখে ভালো মনে হচ্ছিলো। তোমার ভাগ্নে চাকরি করে মনে হয়” ।
দীনবন্ধু একগাল হেসে বলে, “হ্যাঁ! ইঞ্জিনিয়ার বাবু আমার ভাগ্নে। অনেক বড় জায়গায় চাকরি পেয়েছে। আমার জন্য, তোমার বৌদির জন্য দামী জামাকাপড়ও এনেছে” ।
শ্যামল একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে, “যাক! তোমার বোনের কষ্টের একটা ফল পেয়েছে।নইলে সে’বারে ওর কান্না দেখে আমারই খারাপ লাগছিলো” ।
দীনবন্ধু মুখ নামায়, “হ্যাঁ ভাই। বোনটা আমার ভালোই কষ্ট করেছে জীবনে। বলতেও ভালো লাগে। নিজের আদরের ছোট বোন বহুদূরে শহরে থেকে কষ্ট করে উপরে উঠেছে। আর ছোট থেকেই ওর মধ্যে শিক্ষার একটা নেক ছিল। দশ ক্লাস পড়ানোর পর আমাদের সেই সুযোগ টুকু হয়নি যে ওকে আরও পড়াতাম। নইলে আরও উপরে উঠতো সে” ।
শ্যামল মিস্ত্রি বিড়ি ধরায়। এক খানা বিড়ি দীনবন্ধুকে দেয় তারপর বলে, “হুম। চাটুজ্যে মাস্টারের মেয়ে নাকি তোমার বোনেরই বান্ধবী ছিল। সে মাধ্যমিক পাশ করে এখন গাঁয়ের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা…। যদি তোমার বোনও এই গ্রামে থাকতো তাহলে সেও চাকরি পেতো” ।
দীনবন্ধু বিড়ি থেকে ধোঁয়া ছেড়ে বলে, “সে চাটুজ্যে মাস্টারের মতো যদি আমাদের হাত থাকতো তাহলে হতো। আমাদের গরীবদের আবার চাকরি” ।
শ্যামল বলে, “সে ঠিকই এখন চাকরি পেতে গেলে অনেক পেছন ঘষতে হয় দিনুদা। তবে তোমার ভাগ্নে চাকরি করছে এতেই তোমার বোন জয়ী। কি বলো দিনুদা?”
দীনবন্ধু মুখ থেকে বিড়ি সরিয়ে, “হুম” বলে চুপ করে থাকে।
শ্যামল মিস্ত্রি উঠে দাঁড়ায়, “বেলা বাড়তে চলল গো দিনুদা। কিন্তু সরকারী বাবুরা আজ আসবেন না হয়তো…। গরম পড়তে চলল। চলো এই বট গাছের নীচে যাই” ।
দীনবন্ধুও উঠে পড়ে বলে, “না ভাই। আমি তাহলে চলি। ঘরে অনেক কাজ আছে” ।
শ্যামল তাকে বাধা দেয়, “একটু বস না দিনুদা” । সে প্যান্টের পকেট থেকে একখানা বিলিতি মদের বোতল বের করে আনে, “চলো। এই গরমে একটু জিড়িয়ে নিই” ।
দীনবন্ধু মাতাল না হলেও মদ যে একদমই খায়না তা নয়। কালেভদ্রে গলা ভেজায় সে। সূরার প্রতি লোভ আছে তার।
তবুও সে বাধা বিয়ে বলে, “এখন মদ খাবো না ভাই। ঘরে গেলে গন্ধ পেলেই তোমার বৌদি খেঁকিয়ে উঠবে” ।
শ্যামল জোর করে তাকে, “দু’গ্লাস নেবে। আর এটা ভোদকা। ইংলিশ দারু। এতে বাজে গন্ধ বেরোয় না গো” ।
দীনবন্ধু শ্যামলের কথা মেনে নেয়। সামনের নির্জন বট গাছের নীচে বসে তারা। প্লাস্টিকের গ্লাসে মদ ঢালে শ্যামল। সে এক ঢোকে গিলে নিয়ে দীনবন্ধুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “আসলে নিজের একটা বোন থাকা জরুরী দিনু দা।দ্যাখো তোমার জন্য কত দূর থেকে তোমাকে দেখতে আসছে। ভাই বোনের সম্পর্ক অনেক নিবিড় হয়। ভাইয়ের কপালে বোনের ফোঁটা…। কিন্তু ভাগ্যে আমাদের কোন বোন নেই। দ্যাখো আমার বাবারা পাঁচ ভাই। তাদের কোন বোন ছিলো না। ষোল জনই সব ছেলে। আমরা তিন ভাই। আর আমার দুই ছেলে” ।
দীনবন্ধু দুঃখ প্রকাশ করে, “হুম ভাই। আমারও দুই দাদা, দুই দিদির মধ্যে এক বড় দিদিই জীবিত। আর এই দিকে আমি আর ছোট বোন” ।
শ্যামল বিলাপ করে, “কিন্তু আমিও জীবনে একটা ভুল করেছি জানো” ।
দীনবন্ধু চোখ তোলে, “কি ভুল ভাই?”
শ্যামল বলে, “আমাদের পাড়াতে প্রহ্লাদ আছে না?”
দীনবন্ধু বলে, “হ্যাঁ চিনি তাকে…। কি হয়েছে?”
শ্যামলের গলা জড়িয়ে আসে, “পাঁচ বছর হল ওর বিয়ে হয়েছে। ওর বউ সঙ্গীতা। ভারী মিষ্টি মেয়ে। আমাকে দাদা দাদা বলতো” ।
দীনবন্ধু মন দিয়ে শোনে, “হুম।তারপর” । শ্যামল বলতে থাকে, “ওর প্রতি আমার খারাপ নজর ছিলো” ।
শ্যামলের কথা শুনে দীনবন্ধু অবাক হয়।
শ্যামল বলে, “হ্যাঁ দাদা। তাকে আমি বাসনার নজরে দেখতাম। কিন্তু সে মেয়ে ওই রকম ছিলই না। আমার সঙ্গে দেখা হলেই মুখে হাসি। দাদা বলে সম্মান দিয়ে কথা বলা। কিন্তু আমি যে সম্মান করার মতো মানুষই নই। আমি রাজমিস্ত্রির কনট্রাকটার। বিভিন্ন জায়গায় লোক নিয়ে যাই কাজ করাতে এবং সেখানকার রেড লাইট এরিয়াতে ঢুঁ মারি” ।
দীনবন্ধু শ্যামলের কথা শুনে থো হয়ে থাকে।
“হয়তো তুমি এখন আমাকে খারাপ ভাববে তবে আমি সত্যিই বলছি দাদা। ঘরে বউ ছেলে থাকা সত্ত্বেও আমি বহু নারীর সঙ্গ নিয়েছি। তাই হয়তো কেউ একটু ঢলে পড়লেই সুযোগ খুঁজি…। সঙ্গীতার প্রতিও আমিও সেরকম চিন্তা ভাবনা করে রেখেছিলাম। তারপর একদিন হঠাৎ আমার বউকে বলল সঙ্গীতা আমায় দাদা পাতাতে চায়। আমিতো অবাক। বউকে বললাম এ হতে পারে। এ কি করে সম্ভব। ও আমার বোন নয়। আমাকে কেন চন্দনের ফোঁটা দিয়ে ভাতৃবরণ করবে? সেটা শুনে তোমার বৌমা গেলো ক্ষেপে। সে জিজ্ঞেস করলো কেন কিসের আপত্তি আছে আমার? নিজ স্ত্রী ছাড়া সবাই বোন তোমার নজরে এইসব বলতে লাগলো। শেষমেশ আমিও রাজী হয়ে গেলাম। রেগে ছিলাম। বউ বলল অনেক সময় মানুষ কিছু পাওয়ার আশাতেও সম্পর্ক বানায়।
আমি বললাম কিসের আশায়। বউ বলল টাকা, পয়সা, উপহার, সম্মান, নিরাপত্তা, সুখ সবকিছুই হতে পারে।
সেবারে সঙ্গীতা এসেও ছিল ভাতৃবরণ করতে।আমি তাকে পাঁচশো দিয়ে মুক্ত হতে চেয়েছিলাম। তার মুখের হাসি দেখে আমার শরীরের গরম হয়ে উঠে ছিল। দেখতেও তো সুন্দরী মেয়েটা। যেমন গোলগাল মুখ। তেমনি শরীর। ভরাট বুক। ভারী পেছন। সুন্দর হাত পা। ও আমার পায়ে হাত রেখে ছিলো। তারপর থেকেই বাসনার আগুন জ্বলত। মন চাইতো ওকে প্রাণ ভরে চুদি। কিন্তু সুযোগ ছিল না। ওর বর ছেলে, শ্বশুর শাশুড়ি। এদিকে আমার বউ ছেলে। কত বাধাকে টোপকে ওর কাছে যেতে হতো।
তারপর একদিন সেই শুভ যোগ এলো আমার কাছে। আমার বউ ছেলেদের নিয়ে বাপের বাড়ি গেলো কয়েকদিনের জন্য। সঙ্গীতার বরও বেরিয়ে যেতো সকালবেলা। ফিরত রাত করে। আমি একদিন ডেকে তাকে বলি মনের কথা।বড় কষ্টে। কিছু মনে করোনা বোন যদি একবার তোমাকে আমার বিছানায় পেতাম। আমার কথা শুনে সেতো রেগে আগুন। কাঁদতে শুরু করলো বেচারি। সে বলল এমন হয় না দাদা। আমি তোমার বোন।
আমি হাসলাম। দূরদূরান্ত অবধি কোন সম্পর্ক নেই তোমার সঙ্গে। তুমি এই গাঁয়ের বউ ছাড়া আর আমার কাছে কিছুই নও। সঙ্গীতা কান চাপা দিচ্ছিল। আমারও ভয় হচ্ছিলো পাছে বরকে না নালিশ করে। কিন্তু ওর সঙ্গে আমার পুরনো সম্বন্ধ ওকে হয়তো বাধা দিচ্ছিল।
আমি বললাম যদি টাকা পয়সা লাগে তাও দিতে রাজী। শুধু একবার একদিনের ব্যপার। যা লাগে তাই দেবো। তোমার বৌদি ঘরে নেই। আমি একা। এমনিতেই তোমার আমার বাড়িতে যাতায়াত আছে।সেহেতু লোকে সন্দেহ করবে না। তোমার বর চলে যায় খাটতে। ছেলে স্কুলে। তুমি যদি আমার ঘরে এসে রাঁধ বাড় তাহলে কোন অসুবিধা হবে না।
সঙ্গীতা কোন উত্তর না করেই দৌড়ে চলে যায়।
তারপর বিকেলবেলা আমি ওর বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাই। ও আমাকে ডেকে পাঠায়। আমার প্রস্তাবে রাজী হয় সে। কিছু শর্ত দেয় সে। আমিও মেনে নিই। সে বলে আমার ঘরে করবে না। অন্য কথাও। আমি বলি পাশের গ্রামে আমি দালান বানাচ্ছি কাল দুপুরে সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে ফাঁকা করে রাখবো। আর তোমাকে আমার মোটর সাইকেলে তুলে নেবো” ।

দীনবন্ধু চিবুকে হাত রেখে ওর কথা গুলো শোনে।

শ্যামল বলে, “সেদিন দুপুর থেকে সাঁঝ অবধি সঙ্গীতার গুদ মেরেছিলাম। ধোনে নিরোধ পরে। সত্যি কথা বলতে কি ওর বালে ভরা গুদের ঝোপ। ডবগা মাই। ভারী পাছা খামচে ধরে যে মজা পেয়েছিলাম সেরকম হয়তো কারও কাছে পায়নি। ওর গায়ের উপর অনেক ক্ষণ শুয়ে ছিলাম। সন্ধ্যের পর বাড়িতে নামিয়ে ছিলাম” ।
দীনবন্ধুর অস্বস্তি লাগছিলো শুনতে। শ্যামল বলে যায়, “ওই ঘটনার পর আস্তে আস্তে বুঝতে পারি। ওটা আমার না করায় উচিৎ ছিল। সে টাকা পয়সা চেয়েছিল। কিন্তু ওটার পর আর আমার সঙ্গে কোনোদিন কথাও বলেনি আর টাকার খোঁজও করে নি। পরে ভাবি। সামান্য বেশি ইনকাম করি বলে লোকের মনকে আঘাত করবো। এটা ঠিক নয়” ।
দীনবন্ধু বলে, “ভুল করেছিলে ভাই। নিজের স্ত্রীই ভালো। যাকে তুমি ভালোবাস তার সঙ্গেই থাকা ভালো” ।
এক ঢোক মদ গলায় দিয়ে শ্যামল বলে, “হ্যাঁ দাদা।এখন ওই সব করি না। তবে এই যে এখন মোবাইলে ব্লু-ফ্লিম দেখে মনের খিদে মিটাই”। নিজের পকেট থেকে বড় পর্দার মোবাইল বের করে দীনবন্ধুকে দেখায়।
দীনবন্ধু ব্লু-ফিল্ম নামক কোন চলচিত্রের নাম শুনেছে বহু আগে। সে এটাও জানে যে সেখানে বিবস্ত্র নারী পুরুষেরা যৌন কর্ম দেখানো হয়। কিন্তু নিজের চোখে কোনোদিন দেখেনি। তাই তার কৌতূহল হলো।
সে মুখ বাড়িয়ে শ্যামলের মোবাইলের দিকে চোখ রাখে। সেখানে দেখে দুই জন পুরুষ মানুষ একজন স্ত্রীর সঙ্গে সম্ভোগ করছে। তা দেখে দীনবন্ধুর চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়। এমন চলচিত্র সে কক্ষনো দেখেনি। নিজ স্ত্রী ছাড়া নগ্ন নারী সে দেখেছে কিনা সন্দেহ। সরল মনের দিনু সেই দৃশ্য পলক থামিয়ে দেখছে। সে দেখছে কীভাবে সাদা চামড়ার বিদেশিনী নারীকে মুক্ত গগণে দুই কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, একজন যোনি মৈথুন করছে আর অপর জনের বিশালাকার লিঙ্গ লেহন করে দিচ্ছে বস্ত্রবিহীন সুন্দরী।
সারা শরীরে কাঁটা দেয় দীনবন্ধুর। সে ভাবে। এই রকম কি সম্ভব। দুই পুরুষ কি একই নারীকে রমণ করতে পারে?
“কি দেখছো? দিনুদা?” শ্যামল প্রশ্ন করে ।
দীনবন্ধু আমতা করে বলে, “কীসব দেখালে ভাই? দুই জন একসঙ্গে?”
মুচকি হেসে শ্যামল, “রাজকীয় শখ বুঝলে” ।
দীনবন্ধু কি বুঝে শ্যামলের দিকে মুখ তোলে। তারপর মুখ নামায়। মোবাইলে মৈথুন ক্রীড়া দেখে ওর শরীর এখন দগ্ধ।মনে চন্দনা দৌড়ে বেড়ায়।
এমন মুহূর্তে শ্যামল বলে তাকে, “বৌদির সঙ্গে হয়তো এখনও দিনু না?”
দীনবন্ধু লজ্জা পায়, “কি যে বলো ভাই। বয়স হয়েছে এখন। আর ওই সব…” ।
“আরে বয়স হলেই তো খিদে বাড়ে। ইংলিশ মদের মতো। এই যে দ্যাখো তুমি নেশা লাগার অপেক্ষায় আছো। কিন্তু এই মদে নেশা সঙ্গে সঙ্গে হয়না। একটু সময় নেয়” । শ্যামলের কথা শুনে দীনবন্ধু চুপ করে থাকে। সত্যিই বেশ খানিকটা সুরা তার পেটে পড়েছে। কিন্তু নেশা এখনও দেখা দেয়নি। সে বাড়ি চলে যেতে চায়।
শ্যামল তাকে ঘাড়ে চাপা দিয়ে বসিয়ে রাখে, “এই তো যাবে দাদা। আমি জানি এইসব দেখে বৌদির জন্য মন ক্ষেপে গেছে। তুমি ঘরে গিয়ে নেশার চোটে লাগাতে চাও” ।
একপ্রকার সত্যিই দীনবন্ধুর মনের কথা বলে দিলো শ্যামল। সে এখন চন্দনা কে চন্দন বনে কল্পনা করছে। ঘরে এখন কেউ নেই। বোন ভাগ্নেকে নিয়ে পুকুরে স্নান করতে গেছে। হুজুগে ভাগ্নে এই গরমে পুকুরের ঠাণ্ডা জল থেকে উঠে আসবেই না। আর বোন নিজের ছায়াকে আলাদা করে দেবে কিন্তু ছেলেকে কখনই নয়। তাই এই সুযোগ। নিজের আকস্মিক যৌন ঢেউকে সামাল দেওয়ার। আর সেটা চন্দনা ছাড়া আর কেউ পারবে না। চোখের সামনে চন্দনার যোনি ভেসে ওঠে দীনবন্ধুর সামনে। যার সুখ সে সেই যৌবন বয়স থেকে নিয়ে আসছে।
আজ মাদক নেশায় শরীরে কামের বর্ষা নেমেছে। চন্দনার সিক্ত তৃণভূমিতে নিজের হাল চালিয়ে কর্ষণ করতে চায় দীনবন্ধুর মন।
“এই নাও দিনুদা। শেষ পেগ। এটা মেরেই ঘর চলে যাও। বৌদি অপেক্ষা করবে হয়তো তোমার জন্য” ।
শ্যামলের হাত থেকে প্লাস্টিকের গ্লাসটা কেড়ে নিয়ে ঢক ঢক করে গলায় মদ ঢেলে নেয় দীনবন্ধু। তারপর রওনা দেয় ঘরের দিকে। গ্রামের মাঝ পথ দিয়ে হাটার সময় ওর মাথা বোঁবোঁ করে ঘোরে। এই বুঝি নেশার প্রকোপ শরীরের মধ্যে চাড় দিয়ে ছড়াতে লাগলো। চন্দনার ভরাট বুকে গাল ঠেকিয়ে শুতে ইচ্ছা হচ্ছিলো দীনবন্ধুর।এখন ঘরে গিয়ে আপন স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মিলনে মেতে না উঠলে মন মানবে না। তাই সে দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।

অপর দিকে পুকুরে যখন চন্দনা, ভাগ্নে সঞ্জয়কে সাঁতার শেখাতে ব্যস্ত, তাড়াতাড়ি পুকুরে ডুব দিয়ে চান করে ভেজা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে সুমিত্রা তাদের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। তা দেখে সঞ্জয় প্রশ্ন করে, “কোথায় চললে মা?”
সুমিত্রা পেছন ফিরে বলে, “তোরা সাঁতার শেখ। আমি বাড়ি যাই” ।
সঞ্জয় উঠে যেতে চায়, “দাঁড়াও মা। আমিও আসছি” । সুমিত্রা বলে, “কোন তাড়া নেই। তুই ভালোই তো সাঁতার শিখছিস। মামী আরও ভালো করে সাঁতার শিখিয়ে দেবে” ।
মা তাকে ছেড়ে একলা চলে যাক। এটা সঞ্জয়ের ইচ্ছা ছিল না। যদিও পুকুর থেকে বাড়ি একশ পাও হবে না।
তাসত্ত্বেও ভেজা কাপড় জড়িয়ে মা’কে একটা যেতে দেখে তার মন কেমন করে উঠল। ভালো দিক যে সে ছাড়া দ্বিতীয় পুরুষ আর কেউ নেই এই চত্বরে নইলে সুমিত্রার সিক্ত শরীরে লেপ্তে থাকা কাপড়ের আস্তরণ ভেদ করে তার তুলতুলে নরম নিতম্ব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো হাঁটবার সময়। সঞ্জয় কখনই চায় না তার সুন্দরী মা’র উষ্ণ শরীরের চড়াই উতরাই অন্য কেউ পর্যবেক্ষণ করুক।
সাঁতার তো ছুঁত একটা। মা’র সঙ্গে জলকেলি করায় আসল উদ্দেশ্য ছিল ওর। এদিকে মামীকেও কিছু বলতে পারেনা।
চন্দনাও দক্ষ প্রশিক্ষকের মতো সঞ্জয়ের দিকে চেয়ে থাকে। তাকে ভালো সাঁতারু হয়তো এক দিনেই বানিয়ে ফেলবে।

পাঁচিলের দরজা ভেজিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সুমিত্রা। সে ছোড়দা ও ছোটবৌদির ঘরে ঢোকে কাপড় ছাড়তে। ঘর ঢুকে লাইটের সুইচ অন করতে গিয়ে দেখে বিদ্যুৎ নেই। ঘরে আলো অন্ধকার। বাইরের আলো থেকে এসেছে বলে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। ঘুটঘুটে অন্ধকার বোধ হয়।  চোখ সওয়াতে সময় লাগবে।  মাথার কাছের দড়িতে তার শুকনো কাপড় জামা রেখে গেছিল সে। প্রথমে বুকের আঁচল ফেলে ভেজা ব্লাউজ খুলে গামছা দিয়ে গা মুছে সে শুকনো ব্রেসিয়ার ও ব্লাউজ পরে নেয়।  এবারে সে ভেজা শাড়ি ও সায়া ঝুপ করে শরীর থেকে খসিয়ে ফেলে মেঝেতে।  গামছা দিয়ে নগ্ন নিম্নাঙ্গ মোছে সে।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/RIdkMw6
via BanglaChoti

Comments