“কাজলদীঘি”
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৪ নং কিস্তি
—————————
ছগনলাল চা নিয়ে এলো। আমি ওর হাত থেকে চায়ের কাপ নিলাম।
ছোটোবাবু এখন কি খাবে?
আমি যা বলবো, তুমি খাওয়াবে?
হ্যাঁ।
তুমি যে মাঝে মাঝে ছাতুর ছোটোছোটো লেট্টি বানাও, আজ একটু বেশি করে বানাও। চাটনি পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খাবো।
আমাদের খাবার তুমি খেতে পারবে!
মনে মনে হাসলাম। ছগনলাল তুমি সুদূর বিহারের এক অজ গ্রাম থেকে কলকাতায় এসেছো পেটের সন্ধানে। আমিও তোমার মতো গ্রামের মানুষ। কতদিন কলকাতার রাস্তায় তোমার দেশোয়ালী ভাইয়ের কাছে ছাতুমাখা তেঁতুলের টক দিয়ে মেখে খেয়েছি তার ইয়ত্তানেই। শেষে লোটা ভরা জল খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিয়েছি। একশোগ্রাম ছাতুর দাম তখন পঞ্চাশ পয়সা ছিল।
ছগনলাল আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
তুমি তৈরি করো, আমি খাব।
উঠে গিয়ে মানিপার্টস থেকে টাকা বার করলাম।
না ছোটোবাবু টাকা লাগবেনা। বড়বাবু টাকা দিয়ে গেছেন।
তাহলে তুমি একটু বেশি করে করো। যদি কেউ আসে তাদেরও খাওয়াব।
ছগনলাল হো হো করে হেসে ফেললো।
না ছোটোবাবু, তোমার মন চাইলো তোমাকে খাওয়াব। অন্যেরা আমার বানানো লেট্টি খাবে না।
আচ্ছা তুমি করো না। আমি তো বলছি।
ছগনলাল নাচতে নাচতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি চায়ে চুমুক দিয়ে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম।
মেল বক্স খুলতেই দেখলাম তনু অনলাইনে আছে। আমি অনলাইন হতেই ও চ্যাট শুরু করেদিল। হায়।
আমার মেল পেয়েছো।
পেলাম।
কি বুঝলে?
প্রথমে বলো তুমি কেমন আছো।
আমি ভালো আছি।
পড়ে কি বুঝলে?
একেবারে না।
দেখালম তনু লিখছে। আমি অপেক্ষা করলাম।
মিত্রাদির জন্য মনটা খুব খারাপ লাগছে।
শুধু তোমার একার নয় সবার। যারা শুনছে তাদেরই খারাপ লাগছে। লিপিড ইট।
তনু লিখছে।
তোমায় খুব মিশ করছি। এখানে কাজের মধ্যে যখন থাকি তোমার কথা বিশেষ মনে পড়েনা। তবে যখন ফ্ল্যাটে চলে আসি, তখন তোমার কথা ভীষণ ভাবে মনে পড়ে।
তুমি আমার অবস্থাটা জানো তনু। তোমাকে নতুন করে কিছু বলার নেই।
হুঁ।
তনু লিখছে। আমি অপেক্ষা করলাম।
ডাক্তার ব্যানার্জী মোটেই সুবিধার লোক নয়। যেখানে উনি থাকতেন আমি সেখানে খোঁজ খবর নিয়েছিলাম। ওনার চরিত্রে নুন দেওয়ার জায়গা নেই।
তনু লিখছে।
এখানকার হাসপাতালে একজন মহিলা পেসেন্টের উনি শ্লীলতা হানি করেছিলেন। সেই নিয়ে ওনার পানিশমেন্ট হয়। তাতে উনি ছ-মাস জেল খেটেছিলেন। তারপর ওনার সব কিছু কেড়ে নিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওনার নাম শুনে আমাকে কেউ প্রথমে এনটারটেন করতে চায়নি। ভাগ্যিস আমি বিবিসির রিপ্রেজেন্টেটিভ তাই এনটারটেন করে মেটেরিয়ালস দিয়েছে।
সত্যি তনু তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এই তো হ্যাজানো শুরু করে দিলে।
এটা হ্যাজানো হলো।
নয় তো কি।
তোমায় একটা রিকোয়েস্ট করবো।
আবার!
তাহলে কি বলবো।
আদেশ করবে।
তোমাকে আদেশ করার ক্ষমতা এখনও হয়নি।
কাগজের মালিক হয়েছো, আবার কবে হবে। এবার ঝেড়ে কাশো।
আমার খুব ইচ্ছে ওখানে কাগজের একটা ব্রাঞ্চ করবো। হেল্প করবে। তাহলে প্রায় ওখানে যাওয়া হবে আর….।
কি দুষ্টু বুদ্ধি তোমার।
তারপর বলবে তনু তুমি বিবিসি ছেড়ে আবার এই হাউসে জয়েন করো। ওখানকার ব্রাঞ্চ সামলাও। দুষ্টু কোথাকার খালি মাথায় জিলিপির প্যাঁচ না।
রাগ করছো কেন। আমি কি তোমার ভালো বন্ধু নই।
হুম। বুঝেছি।
তাহলে রাজি।
রাজি কিনা বলতে পারছিনা। কি করতে হবে বলো।
ব্রাঞ্চ খুলতে গেলে জায়গা লাগবে।
লাগবে।
ভাড়া নেব না কিনবো।
ওরে বাবা। সেতো অনেক টাকার দরকার।
দেবো।
তোমার এতো টাকা কোথায়।
এই তো বললে কাগজের মালিক।
হো হো হো।
ঠিক আছে। আর।
কিছু স্টাফ লাগবে।
বুঝেছি আমাকে সব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে, তাই তো?
এই তো লক্ষ্মী মেয়ের মতো কথা।
আমি কি পাবো?
তুমি বুরোচিফ হবে।
এই টুকুতে আমার কিছু হবে না।
ঠিক আছে তোমার ডিমান্ড বলো।
প্রত্যেক মাসে একবার এখানে আসতে হবে। পনেরোদিন থাকতে হবে।
কথা দেবো না।
তাহলে হবে না।
তুমি আমাকে ফিরিয়ে দেবে।
উঃ এই জন্যই তো মরেছি।
হো হো হো।
কাল আমি কলকাতার বাইরে চলে যাব। যেখানে যাব সেখানে পাওয়ার নেই অতএব নেট কানেকসন দূর অস্ত। আমি ফিরে আসবো নেক্সট সোমবার তখন কথা হবে।
মিত্রাদি ওখানে।
হ্যাঁ। হাওয়া চেঞ্জে পাঠিয়েছি।
তারমানে!
ডাক্তার বললো। আজকে ডাক্তার নিজে গেছে।
কি হয়েছে মিত্রাদির! তুমি তো বলোনি!
সব কথা বলা যায়।
বলো কি হয়েছে।
নার্ভের প্রবলেম।
তারমানে!
গত ছয় সাত বছর দেহে ও মনে অনেক অত্যাচার হয়েছে। তার ফল স্বরূপ এই রোগ।
কি বলছো তুমি!
যার স্বামী এই রকম চরিত্রের হয়….।
তুমি মন খারাপ করো না। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঠিক হওয়ার সম্ভবনা নেই। ডাক্তারদাদা বলেছেন কনটিনিউ ওষুধের ওপর রাখতে হবে। এর পর মনের ওপর স্ট্রেস পরলে হয়তো সারা জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
কি সব আজে বাজে বকছো!
আমি তোমায় মিথ্যে বলবো না তনু। আমায় বিশ্বাস করতে পার। ও আজ পৃথিবীতে একা। আমি ছাড়া এই পৃথিবীতে ওর আপনজন বলতে কেউ নেই।
অনি!
হ্যাঁ তনু।
তনু কিছু লিখলো না।
শোনো তনু।
বলো।
বাইরের গেটে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলাম। মনে হয় কেউ এসেছে।
দেখি তোমায় আবার কবে ধরতে পারি।
আমি রেগুলার ইন্ডিয়ান টাইম ছটার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত থাকি।
আচ্ছা। যা বললাম মনে রেখো।
বাই।
বাই।
তাড়াতাড়ি মেল বক্স বন্ধ করে অন্য মেল চেক করতে আরম্ভ করলাম।
বেশ কয়েকজনের হই হই শব্দ কানে এলো। সবাই শিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে দেবারা। আমার ধারণা ঠিক। দেবারা হই হই করতে করতে ঘরে ঢুকলো।
কিরে শালা, ভূতের মতো এতো বড়ো বাড়িতে বসে বসে কি করছিস?
দেবার দিকে তাকালাম।
তোদের ছগনলাল ঢুকতে দিল!
মানে!
ছগনলাল সকাল থেকে আমার পার্মিশন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না।
তোর নাম বলতেই গেট খুলে দিল।
টিনা, অদিতি আমার দুপাশে উঠে এসে বসলো। মিলি আমার সামনে। ল্যাপটপটা খোলাই আছে। দেবা ইজিচেয়ারে হেলান দিল, নির্মাল্য খাটের এক পাশে এসে বসলো। সবাই আমার দিকে অনুসন্ধিতসু চোখে তাকিয়ে। যেন গিলে খাচ্ছে।
তোকে কিন্তু ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে না। দেবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
তোর চোখে নেবা (জনডিস) হয়েছে।
দেবাদার চোখে নেবা হয়েছে। আমাদের চোখে। টিনা, অদিতি, মিলি তিনজনে একসঙ্গে আমার দিকে হুমরি খেয়ে তাকাল। চোখে চোখ।
বিশ্বাস করো, আমার কিছু হয়নি।
তাহলে বললে কেন ছগনলাল গেট খুললো তোদের?
এমনি।
সামথিংস হেপেন। টিনা ফের বললো।
মিত্রাদি কোথায়? অদিতি বললো
বড়োমা কোথায়? মিলি বললো।
বাবা তোমরা একসঙ্গে প্রশ্ন করলে উত্তর দেব কি করে।
ঠিক আছে তুমি বলো। টিনা বললো।
দাঁড়াও একটু চা করি আগে।
তোমায় করতে হবে না। আমরা করবো।
না, তা হয় নাকি। তোমরা আমার গেস্ট।
তুমি এরিয়ে যাচ্ছ। মিলি বললো।
তুমি আগে বলো, তারপর চা খাব। টিনা বললো।
ছগনলালকে গেটের মুখে এসে দাঁড়াতে দেখলাম।
কি ছগনলাল।
ছোটোবাবু নিয়ে আসবো?
তোমার হয়ে গেছে?
হ্যাঁ। কয়েকটা করেছি।
তুমি একা করছো না আর কেউ তোমার সঙ্গে আছে?
আমার দেশোয়ালী ভাইরা আছে।
কজন?
দুজন।
ঠিক আছে তুমি নিয়ে এসো।
ছগনলাল চলে গেল।
কিগো অনিদা। অদিতি বললো।
একটা জিনিষ খাওয়াচ্ছি তোমাদের। খেয়ে বলতে হবে কি খেলে।
ঠিক আছে, সব হবে। আগে তুমি কি হয়েছে বলো। টিনা ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেললো।
এতো মহা মুস্কিল।
তুমি বাড়িতে একা রয়েছো। কেউ নেই! মিলি বললো।
আরে বাবা আমি কি একা থাকতে পারিনা?
দেবাশিস, নির্মাল্য এক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ও যখন বলতে চায়না তখন ওকে বিরক্ত করছো কেন। ও তো আমাদের নিজের বলে মনে করে না।
এই তো সেন্টুতে ঘা দিচ্ছিস।
আমার কথা বলার ঢঙে সবাই হো হো করে হাসলো।
আমি বললে তোরা সহ্য করতে পারবি না।
ঠিক সহ্য করতে পারবো। বলো। টিনা বললো।
তোর গলার স্বর তখন টিনার কাছে অপরিচিত লেগেছে। শুধু তোর নামটা ওর মোবাইলে সেভ করা ছিল বলে ও বুঝতে পেরেছে।
দেবাশিস আমার মুখের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে।
ছগনলাল একটা কাঁসার থালায় লেট্টি নিয়ে এলো। সঙ্গে তেঁতুল আর ধনেপাতাবাটা দিয়ে চাটনি, পেঁয়াজ, লঙ্কা। দারুন গন্ধ বেরচ্ছে।
ছগনলাল।
ছোটোবাবু।
লাগলে আর পাওয়া যাবে?
লাগলে বলবেন, আমি নিয়ে আসব।
একটু চা খাওয়াবে।
করছি ছোটোবাবু।
ছগনলাল বেরিয়ে গেল।
নে দেবা একটা খেয়ে দেখ। দারুন জিনিষ।
সবাই একটা করে তুলে নিল।
দাঁতে কামরেই অদিতি বললো। দারুন জিনিষ অনিদা। নাম কি গো।
এগুলোকে লেট্টি বলে পুরো ছাতু দিয়ে তৈরি। বিহারের লোকরা খুব ভালো বানায়।
সত্যি দারুন টেস্ট।
একটু তেতুলের চাটনি মুখে দাও আরও ভালো লাগবে।
যাই করো তোমাকে ছারছিনা, কি হয়েছে বলতে হবে। মিলি খতে খেতে বললো।
আমি খেতে খেতে কালকে থেকে যা যা হয়েছে ওদের সব বললাম। বড়োমারা এখন কোথায় আছে, কেন গেছে সব বললাম? শুধু মিত্রার পোর্সানটা এডিট করে বললাম।
আমার কথা শেষ হতে দেবাশিস উঠে দাঁড়াল। ওর হাত পা কাঁপছে।
তুই শুয়োরের বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিলি।
বোস। সব সময় রাগ করলে হয়।
মিলি, টিনা, অদিতির চোখ কপালে উঠে গেছে।
ডকুমেন্টস গুলো দেখবি।
দেখা।
আমি ল্যাপটপ খুলে ওদের দেখালাম। ওরা হুমড়ি খেয়ে পরলো ল্যাপটপের ওপর।
আমি আলমাড়ি খুলে ডাক্তারের সব দেখালাম।
টিনা আমার হাতটা চেপে ধরে বললো। তুমি এখনও কি করে ঠিক আছো অনিদা।
কি করবো, বলো টিনা।
মাথা নীচু করে ফেললাম।
কথাগুলো মনে পরলেই গলাটা ধরে আসছে। চোখদুটো জ্বালা জ্বালা করছে।
একা একা এখানে বসে সব হজম করছি। কাকে বলবো আমার কথা। দামিনীমাসি, ইসলামভাই না থাকলে কি যে হতো কিছু বলতে পারিনা।
তোর দামিনীমাসি কখন আসবে?
আসবে বলেছে। কখন আসবে বলতে পারছি না।
অদিতি দেখা করে যাবে। ভদ্রমহিলাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।
তোমরা দুজন কেন। আমরাই বা বাদ যাব কেন? টিনা বললো।
দাঁড়া মাসি চলে আসবে হয়তো।
তুই যা বললি, সত্যি অনি, আমি হলে হার্টফেল করে যেতাম। তবে তুই গান্ডুটাকে আরও কেলাতে পারতিস।
আমার মারাতে ওর লাগবে না। রতন, আবিদ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যা দিয়েছে তাতেই যথেষ্ট।
এর পর কি হবে?
জানিনা। দামিনীমাসির হাতে। আমাকে আজ থেকে এসব চিন্তা বন্ধ করতে বলেছে।
অনিদা আমার খুব ভয় করছে। টিনার গলাটা ধরে এলো।
না টিনা, ভয় করলেই ভয়। তোমার মিত্রাদির কথাটা একবার ভাবো।
সত্যি কি ব্যাডলাক। কলেজ লাইফে ওকে কত প্রাণোচ্ছল দেখেছি। তোদের দুজনকে একসঙ্গে দেখলে কি ভালোলাগতো। দেবাশিস বললো।
এখন দেখলে অবাক হয়ে যাবি। তোর সামনে হাসিখুশির অভিনয় করবে। রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে সারারাত কাঁদে। অনি তুই না থকেলে আমি স্যুইসাইড করতাম।
কি বলছিস তুই!
আমি একটুও মিথ্যে কথা বলছিনা দেবা। তোরা আমার খুব কাছের মানুষ। তোদের কাছে আমি বার বার সাহায্যের জন্য ছুটে গেছি। সেই সময় মনটা ভীষণ খারাপ লাগলো। কেমন যেন একটা শূন্যতা আমাকে ঘিরে ধরলো। বুকের মধ্যে কে যেন পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিল। ভাবলাম তোকে ফোন করি।
করতে পারতিস।
তুই যদি ব্যস্ত থাকিস।
গাণ্ডু। দেবা জিভ বার করে ফেললো।
অদিতি দেবার দিকে কট কট করে তাকিয়েছে।
টিনা ফিক করে হেসে ফেললো।
হেসোনা টিনা, মাঝে মাঝে অনির কথা শুনলে পায়ের নোখ থেক মাথার চুল পর্যন্ত খাঁড়া হয়ে যায়। মিত্রা কি তোর একার বন্ধু, আমার বন্ধু ছিল না?
আমি মাথা নীচু করে আছি।
দেবা বলে চলেছে।
তোমাদের আরও অনেক কথা বলিনি। আগের কেশটা সম্বন্ধে বললে তোমরা সত্যি সত্যি হার্টফেল করবে।
তার মানে!
মালিক হওয়ার পর থেকে অনি শান্তিতে নেই। একটার পর একটা ঝামেলা চলছে। মলের কেশটা এই কয়েকদিন আগের ঘটনা। টিনা বললো।
দু-সপ্তাহ আগে। আমি বললাম।
মিলি-অদিতি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
সত্যি অনিদা তুমি কি পাথর? অদিতি বললো।
পাথর না হলে সহ্য করবো কি করে।
সেটাও তো খয়ে যায়।
হয়তো যাচ্ছে। তোমরা দেখতে পাচ্ছ না।
ছোটোবাবু মা-জি আয়া। ছগনলাল নিচ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি তড়াক করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
দেবারা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কে!
দাঁড়া আসছি।
বারান্দায় এলাম। দেখলাম দামিনীমাসি আর কবিতা গাড়ি থেকে নামছে।
দুটো গাড়ি নিয়ে দামিনীমাসি এসেছে। আমি ছুটে নীচে নেমে এলাম।
দামিনীমাসি আমাকে দেখে বললো। কিরে মন ভালো হয়েছে।
মাথা নীচু করে রইলাম।
কারা এসেছে?
দামিনীমাসিকে বললাম।
চল চল তোর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করি।
আমি দামিনীমাসিকে নিয়ে ওপরে উঠে এলাম। ঘরে ঢুকেই দামিনীমাসির গলাটা জড়িয়ে ধরে বললাম, দেবা এখুনি তোদের গল্প বলছিলাম, আমার মা বলতে পারিস মাসি বলতে পারিস যেটা খুশি।
কবিতা আমাদের দু-জনের পাশে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে।
ওরা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দামিনীমাসির দিকে তাকিয়ে রইলো।
দামিনীমাসি সকালের সাজেই সেজে এসেছে।
কাপরটা শুধু বদলে ফেলেছে। এখনও একটা তাঁতের শাড়ি পড়েছে। সেই আটপৌড়ে ঢঙে। দামিনীমাসিকে এই মুহূর্তে দেখলে কেউ বলতে পারবে না, দামিনীমাসি ওই এলাকায় দীর্ঘ তিরিশ বছর কাটিয়েছে।
দামিনীমাসি মিটি মিটি হাসছে। অনি ওরা আমাকে ঠিক বুঝতে পারছে না।
আমি মাসির গালে গাল ঘসলাম। হাসলাম।
একটু সময় দাও।
টিনা স্থানুর মতো উঠে এসে দামিনীমাসির পায়ে হাত দিয়ে নীচু হয়ে প্রণাম করলো।
ওর দেখা দেখি সবাই একে একে এসে দামিনীমাসিকে প্রণাম করলো। দামিনীমাসি কোনও বাধা দিলো না। ওদের প্রণাম শেষ হতেই কবিতা দেবাদের সকলকে প্রণাম করতে শুরু করলো। অদিতি কবিতার হাত ধরে বললো, না।
কেন গো আমি নষ্ট মেয়ে বলে।
মুহূর্তের মধ্যে দামিনীমাসির চোখের চেহারা বদলে গেল। কবিতার দিকে তাকাতেই কবিতা মুখ নীচু করলো।
কতদিন শেখাব।
ভুল হয়ে গেছে মাসি।
আর জীবনে যেন না হয়।
হবে না মাসি।
সবাই কেমন থতমত খেয়ে গেছে। এ ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
আমি বুঝলাম পরিবেশটা একটু ভারি হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম।
একটা জিনিষ খাবে মাসি?
কিরে!
টিনা থালাতে আছে?
আছে।
অদিতি ছুটে গিয়ে নিয়ে এলো।
মাসিকে বললাম হাঁ করো।
কি বলনা।
আগে হাঁ করো।
মাসি হাঁ করলো আমি মাসির মুখে একটু ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম কামড়াও। মাসি কামড়দিল। বাকিটা আমি নিয়ে খেলাম।
বলোতো কি?
লেট্টি।
হ্যাঁ।
কে বানাল?
ছগনলাল।
অনেকদিন পর খেলাম।
টিনা একটা নিয়ে এসে কবিতার হাতে দিয়েছে।
ছোটোবাবু।
পেছন ফিরে তাকালাম।
ছগনলাল আর একটা কাঁসার থালায় আরও কয়েকটা লেট্টি নিয়ে এসেছে। মাসিকে নিয়ে এসে খাটে বসালাম। আবার হই হই করে খাওয়া শুরু হলো। খাওয়ার সাথে সাথে আমি সকলের সঙ্গে মাসির পরিচয় করিয়ে দিলাম।
ওরে বাবা এরা তো সব মস্ত বড়ো লোক রে। আমি এদের কাছে চুনোপুঁটি।
অনিদা আমাদের থেকেও বড়ো লোক। টিনা অভিযোগের সুরে বললো।
মাসি হি হি করে হেসে ফেললো।
অনিদাকে কিছু বলো।
দেখেছিস অনি।
আমি হাসছি।
কবিতা যা না মা, ছগনলালকে একটু চায়ের কথা বল। আমি বললাম।
কবিতা চলে গেল।
এই মেয়েটা কবিতা! দেবাশিস বললো।
আমি দেবাশিসের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছি।
তুই এতক্ষণ যার গল্প শোনাচ্ছিলি!
হ্যাঁ।
মাসি মুচকি মুচকি হাসছে।
ওরে ও আমাদের প্রণাম করল কিরে! ওকে বরং আমরা সকলে প্রণাম করবো।
কেন! মাসি বললো।
জানো না মাসি ওর কথা শুনতে শুনতে আমাদের কান গরম হয়েগেছিল। ওর এতো তেজ। দেখে বোঝাই যায়না।
আমরা পরিবেশের দাসত্ব করি দেবাশিস।
দেবাশিস মাসির মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
কি বললে মাসি, আর একবার বলো।
মাসি হাসতে হাসতে আবার বললো। আমরা পরিবেশের দাসত্ব করি।
দারুন কথা বললে। আমরা সব বেচুবাবু বুঝলে মাসি। সারাদিন শুধু হিসেব করি। কি দিলাম কি পেলাম। তোমার কাছে গিয়ে কয়েকদিন ক্লাস করতে হবে। কিছু ভালো ভালো কথা শেখা যাবে।
কিরে অনি তোর বন্ধুরা কি বলে।
আমি হাসছি।
আস্তে আস্তে আড্ডাটা বেশ জমে উঠলো। মাসি দেবাশিসদের তুমি সম্বোধন থেকে তুইতে নেমে এলো। দেবারাও আপনি থেকে মাসি তুমিতে চলে এলো। চা এলো। হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো সব হলো। দেবাশিস কবিতার পেছনে খানিকটা লাগলো। কবিতা হাসছে।
জানো মাসি অনি বলছিল ও কবিতার বিয়ে দিয়েছে। বিয়ে কারা দেয়?
নারে দেবাশিস ও শুধু কবিতার বিয়ে দেয়নি। কন্যাদানও করেছিল। সাক্ষী আমি।
বলো কি!
হ্যাঁ।
সত্যি ওর মানুষ জন্মটা সার্থক।
সে বলতে পারবো না। তবে ওকে প্রথম দিন দেখে আমারও খুব ভালোলেগেছিল। ওর চোখ দুটো ভীষণ লোভনীয়। কাঁচা বয়স হলে ওকে ছাড়তাম না।
বারে তুমি সব নিয়ে নিলে, আমরা কি করবো। টিনা বললো।
ও-রে দুষ্টু মেয়ে। তোর পেটে পেটে এতো।
সবাই হেসে ফেললো।
তোরা এক কাজ কর না।
বলো।
অনির মন ভালো নেই, থাকার কথাও নয়।
ঠিক বলেছো তুমি, দেবা বললো।
ওখানে আর একটা পরে আছে।
হ্যাঁ।
তারও মনের অবস্থা আমি জানি। তোরা কয়েকদিন অনির সঙ্গে ওর দেশের বাড়িতে ঘুরে আয়। ওরও মনটা ভালো লাগবে। যেটা ওখানে পরে পরে গুমড়োচ্ছে, তার মনটাও একটু হাল্কা হবে।
খারাপ বলোনি। কিরে নির্মাল্য তোর অফিসের খবর কি।
আমার কোনও অসুবিধে নেই। প্রোগ্রাম হলে এক পায়ে খাঁড়া।
টিনা। দেবাশিস তাকাল টিনার দিকে।
অনিদার দেশের বাড়ি! গল্প শুনেছি। ইনভাইট করুক আগে।
আমি হাসলাম।
ঠিক বলেছো টিনা। দেবাশিস আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
মাসি বললে যাব না, অনিদা নিজে মুখে একবার অন্ততঃ বলুক। মিলি বললো।
কতোবার খেঁচাবার পর পেট থেকে কথা বেরলো বলতো। অদিতি বললো।
তোরা অনির ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা কর। দেবাশিস বললো।
সব সময় এ্যাডভান্টেজ অনিদা তা হবেনা। টিনা বললো।
আমি হাসছি। দামিনীমাসি হাসছে।
আচ্ছা অনির হয়ে আমি তোদের নেমন্তন্ন করছি। মাসি বললো।
ঠিক আছে যাওয়া হবে।
দেবা আমার দিকে তাকিয়ে বললো। কাল কখন যাবি।
তোরা বল।
দশটার আগে হবে না। একবার অফিসে ঢুঁ মারতে হবে।
এই যা ভুলে গেছি। মাসি কবিতার দিকে তাকাল।
কবিতা মিষ্টির বাক্স?
যাঃ। কবিতা জিভ বার করেছে।
তুইও একটা গাঢ়ল। মনে করাবি তো। যা ছুটে নিয়ে আয়।
কবিতা ছুটে চলে গেল।
তাহলে কখন যাবি বল। টিনা তাকাল মিলির দিকে।
কিরে অনি বল। দেবাশিস তাকাল আমার দিকে।
তোরা কাজ সেরে চলে আয়। এগারোটা নাগাদ বেরবো।
পাক্কা। তুই কোথায় থাকবি?
বাড়িতেই থাকবো।
ওখানে বড় গাড়ি যাবে?
কি নিয়ে যাবি?
স্করপিও।নির্মাল্যেরটা।
কে ড্রইভ করবে।
ড্রাইভারের অভাব, তুই ছাড়া সকলে ড্রাইভ করতে পারে।
হইওয়েতে চালাতে হবে।
তোকে ভাবতে হবে না।
কবিতা মিষ্টি নিয়ে এলো। হই হই করে সকলে মিষ্টি খেলাম। দেবাশিস বলে বসলো।
মাসি মিষ্টিটা কোথাকার?
কেনো রে!
সাউথে এরকম মিষ্টি পাওয়া যায় না।
নকুর সন্দেশ। দেড়শো বছরের দোকান। চারপুরুষ ধরে ব্যাবসা চালাচ্ছে।
নির্মাল্য নোট করে রাখ নামটা, একদিন পেট ভরে শুধু মিষ্টি খাবো।
মাসি হাসছে।
তুমি হাসছো কেন?
তোর কথা শুনে।
অনি এবার উঠি। কাল ঠিক সাড়েদশটার মধ্যে চলে আসবো।
কবে ফিরবে জিজ্ঞাসা করেছো। অদিতি বললো।
ঠিক বলেছো। কবে রে?
রবিবার ফেরার কথা।
সোমবার অফিসে জয়েন করতে পারব?
রবিবার বিকেলের দিকে করতে পারিস।
দেখলে, দেখলে অদিতি, কিরকম ছুঁয়ে দিল।
দেবাশিস ঘুসি পাকিয়ে আমার দিকে তেরে এলো। তোকে এমন দেব না।
ওরা চলে গেল। আমি ওদের নীচ পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। নীচে নামার সময় টিনা আমার হাতটা একবার ছুঁলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। টিনার চোখ অনেক কথা বলতে চায়। চোখের ইশারায় বললাম, রাতে ফোন করো।
আমি ওপরে এলাম। মাসি খাটের এক কোনে বসে। কবিতা খাটের আর এক দিকে। ঘরে ঢুকতেই মাসি বললো।
কিরে মন ঠিক হলো।
ঠিক হতে সময় লাগবে মাসি। ওদের সামনে তোমার সঙ্গে কথাই বলা হলো না।
মাসি হাসছে।
জানো মাসি এই পাঁচজন আমার কাগজটাকে প্রথম ধাক্কায় বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
কি করে!
এ্যাড জোগাড় করে দিয়ে।
টিনা মেয়েটা, তোকে খুব ভালোবাসে।
কি করে বুঝলে?
ওর চোখমুখ বলছে।
আমি জানতাম না। মালিক হওয়ার পর দেবার কাছে যেদিন প্রথম যাই, সেদিন জানতে পারলাম।
তারমানে!
কলেজ লাইফে মিত্রা ছাড়া আমি কোনও মেয়ের সঙ্গে সেইভাবে মিশতাম না।
অদিতি, মিলি, টিনা, নির্মাল্য এরা আমাদের থেকে দু-বছরের জুনিয়ার।
একমাত্র দেবাশিস আমার সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তো।
অদিতি আমাকে প্রেমপত্র দিয়েছিল। প্রথমটায় একটু অবাক হয়েছিলাম। তারপর ওকে একদিন ডেকে বোঝালাম। তারপর দেবাশিসের পাল্লায় পরলো, বিয়ে হলো।
টিনা।
টিনার ভালবাসাটা অন্তরমুখী, আমি কোনওদিন বুঝিনি।
ভারি অদ্ভূত!
হ্যাঁ। টিনা মুখে স্বীকারও করেছে।
কবিতার দিকে চোখ পরে গেল। আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক পড়ছে না।
দেখছো কবিতা কেমন আমার কথা গিলছে।
তোমাকে আমিও ভালোবেসেছিলাম।
সেই জন্য থাপ্পর খেয়েছিলি।
আমি এখন বড়ো হয়ে গেছি, মাসির সামনে আর বলবে না।
আমি কবিতার কানটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। কবিতা উঃ করে উঠলো।
এদেরও অনেক কষ্ট বুঝলে মাসি। যখনই যে আমাকে একা পায় তখনই সে আমাকে মনের কথা খুলে বলে।
সত্যি!
হ্যাঁগো, তোমায় একদিন বলবো। আমার অনেক জ্বালা, বুঝলে।
দেখছি তাই।
মাসি ওদিককার খবর বলো।
কবিতা নিচে গিয়ে অনির খাবার রেডি কর, ওকে খাইয়ে যাব।
কবিতা উঠে দাঁড়াল।
গ্যাস ঠিক মতো জ্বালাতে পারবি।
পারবো।
কবিতা বেরিয়ে গেল।
আমাকে ওই লোকটাকে দেখা।
যে সিডিটা পাঠালে ওটা দেখবে।
না। নিজের ছেলের বউ-এর ওই অবস্থা দেখতে পারবোনা।
আমি স্টিল ছবিগুলো আলমাড়ী থেকে বার করলাম। মাসির হাতে খামটা দিলাম।
তুই ওদের এইসব বলেছিস নাকি।
না। শুধু ডাক্তারের ব্যাপারটা বলেছি।
ডাক্তারের ব্যাপার ওরা জানে।
কিছু কিছু জানে। ডাক্তারের ভাগ্না সুনিত, ওই তো বাজারে প্রথম চাউর করেছিল। আমাদের অফিসের কয়েকজন গাঢ়ল আছে। কাকে কি বলবো বলো।
মেয়েটার কথা ভাবলে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
তুমি বিশ্বাস করো মাসি, শুধু মিত্রার দিকে তাকিয়ে আমি এই কাজ করছি।
পাগল। আমাকে তুই নতুন করে বলবি, আমি সব জানি।
মাসি খাম থেকে ছবি বার করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ মুখের চেহারা কেমন বদলে যাচ্ছে।
কিগো তুমি ভদ্রলোককে চেনো মনে হচ্ছে?
হ্যাঁ। মাসির গলার স্বর বদলে গেল।
কোথায় দেখলে!
তোকে জানতে হবে না।
আমাকে খুঁজে বার করতেই হবে।
পারবি না।
তুমি চাইলে পারবো না। ইসলামভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছো।
তোর কথা ঠিক।
কি ঠিক।
ও কাজ শুরু করে দিয়েছে।
মাসির দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
তুমি বললেনা চিনলে কি করে?
পরে বলবো।
কাজ শেষ হবার পর।
মাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠিক আছে তোমাকে বিরক্ত করবো না।
এবার খেতে চল। তোকে খাইয়ে আমি ফিরবো।
চলো।
আমি ল্যাপটপ বন্ধ করে মাসির সঙ্গে নিচে নেমে এলাম। কবিতা টিভি চালিয়ে দেখছে।
কিরে খাবার সব গরম করেছিস?
হ্যাঁ।
নিয়ে আয়।
কবিতা একসঙ্গে তিনজনের জন্য।
জানি। নাহলে তুমি যে খাবে না মাসি আগে বলেছে।
কি এনেছো। মাসির দিকে তকিয়ে বললাম।
দেখনা কি এনেছি।
ডাক্তার ঠিক আছে।
তোকে বলেছি না, তুই তোর কাজ কর। তোকে এসব ব্যাপার নিয়ে আজ থেকে ভাবতে হবে না।
আমি না ভাবলে তুমি ভাববে। এই তো?
হ্যাঁ। তোর পথের কাঁটাগুলো সব সরিয়ে দেব। একটাও রাখবো না।
আমি এইভাবে চাই না।
তুই যেভাবে চাইবি সেভাবে হবে।
তাহলে ঠিক আছে।
মাসি তড়কা তন্দুরি রুটি আর চিকেন নিয়ে এসেছে।
তিনটে প্লেটে কবিতা নিয়ে এলো।
খাওয়া শুরু করলাম। আমি মাঝখানে কবিতা, মাসি আমার দু-পাশে।
তোরা কবে ফিরছিস?
রবিবার।
কখন আসবি?
বিকেলের দিকে।
মিত্রার শরীর এখন কেমন?
খুব একটা ভালো নয়। ডাক্তারদাদা তোমায় সকালে কিছু বলেনি?
একটু একটু বলেছে।
এখন কনটিনুয়াস ট্রিটমেন্টে থাকতে হবে। মনের ওপর কোনও স্ট্রেস দেওয়া চলবে না।
কি ভাবছিস?
ওর জীবনে একটাই পথের কাঁটা আছে।
কোনটা।
টোডি।
তোকে বলেছি না ওটাকে নিয়ে ভাববি না।
আমি কি ভাবছি। তুমি জিজ্ঞাসা করলে তাই বললাম।
মেয়েটাক খুব দেখতে ইচ্ছে করে।
দেখাবো। একটু সময় দাও।
ভজু দিদিমনি বলতে পাগল।
হ্যাঁ। আমি না থাকলে ভজুর সঙ্গে খুনসুটি করে। অনেকটা বাচ্চা মেয়ের মতো হয়ে গেছে। আগের থেকে জেদ বেরে গেছে।
হবে। কম ঝক্কি যায়নি শরীরের ওপর দিয়ে।
সাগির, অবতারের খবর কি?
তোমায় মাসি বলেছে না ওইসব নিয়ে ভাববে না। কবিতা ধমকে উঠলো।
তুই ধমকাচ্ছিস কেন।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
তোমায় একটা কথা বলবো মাসি।
বল।
রাগ করবে না।
না।
আমি তোমার ওখানে একটা এনজিও ফর্ম করবো। ওই পাড়ার মেয়েদের নিয়ে। ওরা জীবনে কিছু পায়নি। অন্ততঃ পক্ষে ছেলেমেয়েগুলো হাতের কাজ শিখে কিছু করে-কম্মে খেতে পারবে।
কারা থাকবে?
তুমি, ইসলামভাই, অদিতি, টিনা, মিলি, মিত্রা। বেশির ভাগ মেয়েরা থাকবে।
পারবি?
আমার ইচ্ছে আছে। ইসলামভাইকে একটা আওয়াজ দিয়েছিলাম। তারপর জানিনা।
কি বলেছে?
হেসেছে। বলেছে তুই ভীষণ ঝানু।
আমিও তাই বলছি।
কেন?
আমাদের ভালো করতে চাইছিস।
অন্যায় করছি।
না। সমাজ সেটা মেনে নেবে না।
আমি কিন্তু কখনও কারুর স্বাধীনতায় হাত দেব না। আমি তিনটে বিষয় নিয়ে কাজ করবো।
বল।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সচেতনতা।
সেটা কি রকম।
যারা নেক্সট জেনারেশনে প্রফেশনে আসতে চাইবে না তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করবো। তোমার সময়কার কজন তোমার মতো হতে পেরেছে। তাদের জন্য কিছু করবো।
এতে ব্যবসার খতি হবে না?
না।
তোমাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার জন্য ফ্রি ক্লিনিক তৈরি করবো।
কারা যাবে। তারা গিয়ে আবার এই রকম ডাক্তার হবে নাতো?
সামন্ত ডাক্তারকে বলবো ভেবেছি। তুমি তো ডাক্তারদাদাকে দেখলে।
ভদ্রলোক ভীষণ ভালো।
মিত্রার নার্সিংহোমগুলোর দায়িত্ব ডাক্তারদাদার হাতে দেব ভাবছি। মিত্রা আর বড়োমাকে দিয়ে বলাবো।
খুব ভালো হবে।
একটা স্কুল তৈরি করবো ওখানে।
টাকা পাবি কোথায়?
ভূতে দেবে।
আবার ফাজলাম করে।
দেবারা জোগাড় করতে পারবে।
ওখানে যে বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করছিস।
তোমাদের এখানে যারা আর কাজ করতে পারবে না, তাদের ওখানে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগাব।
ইসলামের কি করবি?
ইসলামভাই থাকবে। বলেছি, রতনকে আস্তে আস্তে সব বুঝিয়ে দিতে।
মাসি আমার দিকে তাকিয়ে।
ইসলামভাই অনেকের টার্গেট হয়ে গেছে।
হ্যাঁ। ঠিক খবর পেয়েছিস।
আমার ওই জায়গাটা এমন, তুমি ঢুকতে পারবে কিন্তু কাজ করে বেরিয়ে আসতে পারবে না।
আমাকে একবার নিয়ে যাবি।
কালকে চলো।
এদিকের কাজ কে করবে।
ঠিক আছে। আমি পনেরদিন পর আবার যাব, তখন চলো।
যাবো। কেউ যদি কিছু মনে করে।
আমার তো পরিবার নেই, কে কি মনে করবে।
তোর বন্ধুরা।
তুমি নিজে চোখে দেখলে বলতে পারবে তারা কেমন।
ঠিক আছে।
এই রবিবারের পরের রবিবার এই বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে আছে।
তোর বিয়ে উপলক্ষে?
তুমি যা বলবে। তবে অনিমেষদা নেমন্তন্ন খাবে বলেছে।
বাবা! এর মধ্যে আমি নেই।
ওই বিষয়টা আমার ওপর ছেড়ে দাও।
আমাকে বললি কেন তাহলে।
বাড়ি-ঘরগুলো রং করবো এই চার পাঁচদিন খালি ফেলে রাখবো কেন। তোমার অনেক পরিচিত লোক আছে তাদের দিয়ে কাজটা শুরু করে দাও।
মাসি আমার বড়কে বলবো। কবিতা বললো।
ও কি এই কাজ করে! আমি বললাম।
তাহলে কি করে। তুমি জানো না।
তোর বিয়ের সময় ও তো লেদে কাজ করতো। আমি বললাম।
সে সব গেছে। এখন কিসব কন্টাকটরি করে।
আমি চুপ করে রইলাম।
ও মাসি কথা বলছো না কেন? কবিতা মাসির দিকে চাইলো।
ও পারবে?
তুমি বললে পারবে।
কালকে একবার ডাকিস।
আচ্ছা।
অনেক রাত হলো, এবার ওঠো। তোমাদের এতটা পথ যেতে হবে।
শোন দুটো ছেলে আজ থাকবে। কালকে থেকে কাজ শুরু হলে আর চিন্তা নেই।
তাহলে ওদের শোবার ব্যবস্থা করতে হবে।
লাগবে না।
কেন!
তুই দেখেছিস, ওরা সকালে ছিল।
আমরা খেলাম ওরা খাবে কি?
ওদের খাবার গাড়িতে আছে। তোকে চিন্তা করতে হবে না।
ঠিক আছে।
আমি কাল তোর বেরোবার আগে আসবো।
এসো।
আমরা তিনজনেই উঠে পরলাম। কবিতা সব গুছিয়ে নিল।
মাসি কবিতা চলে গেল। একটা গাড়ি রেখে গেল। দুটো ছেলে রয়েছে। তার মধ্যে একটাকে আমি চিনি। সকাল বেলা একবার রতন ওকে নেপলা বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল। আমি ওদের বললাম ভেতরে শোবে চল।
না অনিদা আমরা গাড়িতেই থাকবো।
কেন!
রতনদার হুকুম।
রতনকে আমি বলে দেব, তোমরা ভেতরে চলো।
না অনিদা।
আমি কথা বারালাম না।
ছগনলালকে বললাম। তুমি শুয়ে পড়ো। নিচের সব তালা লাগিয়ে দাও।
আচ্ছা ছোটোবাবু।
আমি ওপরে চলে এলাম। দরজা জানলা বন্ধ করে দিলাম। একটু একটু ঠাণ্ডা আছে। বাথরুমে গেলাম। মুখ হাত পায়ে ভালো করে জল দিয়ে এসে বিছানায় বসলাম। একটা সিগারেট ধরালাম।
মাসি মনে হয় আমাকে আর কিছুই বলবে না। এবার থেকে যা কাজ করার ওরাই করবে।
আমার সব সোর্স এরা। মাসি মনে হয় এই বিষয়ে আমার সব সোর্সকে অফ করে দেবে। আজকে মাসির সঙ্গে কথোপকথনে তাইই বুঝলাম। একটাই কথা বারবার উচ্চারণ করেছে, তোকে ভাবতে হবে না। তুই তোর কাজ কর।
না আর ভাবতে ভাল লাগছে না। সকাল থেকে নানা ঝামেলা গেল।
কাগজপত্র ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে আলমাড়িতে তুলে রাখলাম। দাদারা কখন পৌঁছলো জানতে পারলাম না। ওরাও আমাকে কেউ ফোন করেনি। হয়তো বিরক্ত করতে চায়নি।
কালকের কাজটা ঠিক ঠাক ভাবে হয়ে গেলে বাঁচি। ওইদিকের বিষয় নিয়ে এবার ভাবতে হবে। মিত্রা কি করছে? ভাবতেই মনটা কেমন উসখুশ করে উঠলো। একবার ভাবলাম ফোন করি। তারপর ভাবলাম না থাক ও নিজে ফোন করবে বলেছে।
ফোনটা কাছে টেনে নিলাম। দেখলাম মিস কল।
অপারেট করতে দেখলাম টিনার নম্বর। তারমানে টিনা ফোন করেছিল! কল রেজিস্টারে গিয়ে দেখলাম টিনা আধঘণ্টা আগে ফোন করেছিল। আমি তখন নীচে ছিলাম।
টিনাকে ডায়াল করলাম।
হ্যালো। টিনার গলা। একটু ভারি ভারি।
ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি?
নাগো অনিদা। ঘুম আসছে না।
শরীর খারাপ?
না।
তাহলে?
জানিনা।
মন খারাপ?
তোমার বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর থেকে কেমন যেন লাগছে।
অনিদার জন্য ভেবো না।
বার বার তোমার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
আমি ঠিক আছি।
একটু আগে মিলির সঙ্গে কথা হচ্ছিল।
কি বলছে মিলি?
ওরও আমার মতো দশা।
তোমরা আমাকে নিয়ে এতো ভেবো না।
ভাবতে চাইনা। তিনমাস আগে কি তোমাকে নিয়ে ভাবতাম?
তাহলে!
কি করে বোঝাবো তোমাকে। কই তিন মাস আগে তোমার কথা এমন ভাবে মনে আসতো না। তোমার মুখটা চোখের সামনে ভেসে আসতো না। এখন চোখ বন্ধ করলেই তোমার মুখটা ভেসে আসে।
তোমরা আমাকে ভীষণ ভালোবাস তাই।
টিনার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়লো। আমি শুনতে পেলাম।
মিত্রাদি ফোন করেছিল?
না।
তুমি করোনি?
না।
কেন!
সবাইকে জানিয়ে লাভ।
সত্যি তুমি না।
হ্যাঁগো টিনা নিজের টেনশন নিজের কাছে রাখা ভালো।
মাসি।
মাসি এই একটু আগে গেলো।
এতোরাতে!
হ্যাঁ। আমাকে খাইয়ে-দাইয়ে গেল।
সত্যি তোমার মুখ থেকে ভদ্রমহিলার গল্প শুনেছিলাম। আজ দেখলাম। স্বপ্নের দেখা আর বাস্তবের দেখার সঙ্গে আকাশ পাতাল ফারাক।
তোমার সঙ্গে সবাই কি একমত?
ওরাও বললো।
হাসলাম।
জানো অনিদা, ওনার একটা কথা আমার ভীষণ ভালো লাগলো। যদিও দেবাশিসদা কথাটা ওনাকে রিপিট করতে বললো।
কোনটা বলো?
ওই যে, কবিতা যখন বললো, নষ্ট মেয়ে।
হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে পড়েছে।
তখন বুঝলাম ভদ্রমহিলার গভীরতা কতটা।
মাসি বিশেষ পড়াশুনো করেনি।
তাই!
হ্যাঁ। ষোলো বছর বয়সে পেটের জ্বালায় ওই পাড়ায় আসে। এখন মাসি পঞ্চাশের কাছাকাছি।
দেখে বোঝা যায়না।
ছোটোবেলা থেকে শরীরটার যত্ন নিতে শিখেছে। না হলে খরিদ্দার আসবে না।
কি অদ্ভূত লাইফ।
তুমি শুনেছো। চোখে দেখ নি। না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না।
আমাকে একবার তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে।
তোমাদের নিয়ে একটা কাজ করার ইচ্ছে আছে। তখন নিয়ে যাব।
আমি সব সময় রাজি।
দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। খুব সেন্সেটিভ জায়গা।
কথা দিচ্ছি, পারবো।
তার আগে ওদের সম্বন্ধে একটু জানতে হবে।
কতটুকু জানতে পেরেছি বলো। কাগজে কলমে পড়ে যা জেনেছি। তুমি ওখানে আঠারো মাস কাটিয়েছ। এখনও রেগুলার তোমার সঙ্গে ওদের যোগাযোগ।
বলতে পারো ওই পাড়াটা আমার ঘরবাড়ি। কত লাইফ আছে ওখানে, না গেলে বুঝতে পারবে না।
আচ্ছা অনিদা তোমার অস্বস্তি হয়না।
তুমি যখন নতুন কাজে জয়েন করেছিলে, তোমার কোনও অস্বস্তি ছিল?
একটু একটু ছিল।
তারপর তুমি আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিলে।
হ্যাঁ।
তুমি এখন তোমার অফিসের একটা অঙ্গ।
হ্যাঁ।
ধরেনাও ওরা যা করছে ওটাও ওদের একটা অফিস। আমি সেখানে গেছিলাম। প্রথমে ওই অফিসে ঢুকতে একটু অস্বস্তি হয়েছিল। তারপর মানিয়ে নিলাম। আমি এখন ওই অফিসের একটা অঙ্গ।
দারুন বললে তো।
এটা ফ্যাক্ট। একে তুমি অমান্য করবে কি করে। তুমি যেমন জীবিকার জন্য কাজ করো, ওরাও তেমন জীবিকার তাগিদে দেহ বেচে। তুমি যেমন তোমার পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মার। ওরাও ওদের পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মারে।
দারুন এক্সাইটিং!
সেক্সটা ওদের কাছে কোনও ব্যাপার নয়।
তারমানে!
এদের মধ্যে কিছু শিক্ষিত মেয়ে আছে, তারা তো পরিষ্কার বলে, দে আর ইউজিং মাই বডি লাইক আ টয়লেট, অর্থটা এইরকম, আমাদের শরীরটা সুলভ শৌচালয়ের মতো লোক আসে পয়সা দিয়ে ব্যবহার করে চলে যায়।
দারুণ বললে কথাটা।
জানো টিনা আমি অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। বলতে পাড়ো এটা আমার একেবারে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
কি?
ওখানে যে মেয়েগুলো থাকে ওদের দেহটা সর্বধর্ম সমন্বয়ে তৈরি।
বুঝতে পারলাম না। আবার বলো।
হাসলাম।
ধরো তোমার কাছে যারা কাজের জন্য আসে তাদের তুমি কখনো জিজ্ঞাসা করো তারা কোন ধর্মের কোন জাতের।
কখনই করি না।
সেখানে তোমার উদ্দেশ্য থাকে, সে তোমার ক্লায়েন্ট, তাকে ঠিক ভাবে এন্টারটেন করা।
একবারে ঠিক।
ওদের কাছেও যে পুরুষেরা আসে তাদের নাগর বলে।
কি বললে।
নাগর। আর যাদের বাঁধা ধরা পুরুষ থাকে তারা বাবু।
ভেরি ইনটারেস্টিং।
ওদের নাগরের কোনও ধর্ম নেই। নাগরকে সেটিসফায়েড করা ওদের উদ্দেশ্য। ওরা সেটিসফায়েড করে। তার বিনিময়ে পয়সা পায়।
হাউ স্ট্রেঞ্জ! আচ্ছা ওদের তৃপ্তি-অতৃপ্তি বলে কিছু নেই।
তুমি আমাকে বলেছিলে টিনা, অনিদা তোমাকে এই কাজটা পেতে গেলে এটা দিতে হবে। গিভ এন্ড টেক পলিসি। সেখানে তৃপ্তি-অতৃপ্তি বলে কিছু আছে। ওটা ফেক।
ঠিক।
জানো টিনা, এমনও বহুদিন গেছে। নাগরের অত্যাচারের তাড়নায় মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মাসি আমাকে মাঝরাতে এসে ডেকে নিয়ে গেছে। সারারাত ধরে তার ক্ষতের সেবা শুশ্রুষা করেছি। কখনও মনের মধ্যে কোনও সেক্স জাগেনি।
কি বলছো তুমি!
এক বর্ণও তোমায় বানিয়ে বানিয়ে বা বাড়িয়ে বলছি না। বিশ্বাস করো।
টিনা চুপচাপ।
এই মেয়েগুলো আমাকে ভাইফোঁটা দিত। রাখি পরাত।
সত্যি অনিদা, তুমি অনেক ভাগ্যবান।
সেটা বলতে পারবো না। তবে ওদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলাম।
সেই জন্য মাসি তোমায় এতো ভালোবাসে।
তারও অনেক কারণ আছে।
বলো।
না এখন থাক। বলতে গেলে ভোর হয়ে যাবে।
হোক না।
না।
আচ্ছা বাবুদের ব্যাপারটা বলো।
বাবুদের বাঁধা মেয়েছেলে থাকে। তারা অন্য কোনও মেয়ের ঘরে যায় না। মেয়েটিকে তারা মাসোহারা পয়সা দেয়। মেয়েটিও বাবুর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় রেখে দেয়।
বাকি সময়।
অন্য নাগরকে সময় দিয়ে পয়সা ইনকাম করে। ওটা উপরি বলতে পারো।
কি বলছো তুমি!
ঠিক বলছি, এবার ঘুমোও। কাল অনেকটা জার্নি করতে হবে।
তোমার সঙ্গে কথা বললে কতকিছু জানা যায়। বিশ্বাস করো তোমার মতো করে এতদিন এদের বিষয় নিয়ে ভাবিনি।
খালি চোখে ওদের আমরা সেক্সওয়ার্কার বলি, গণিকা বলি, বেশ্যা বলি। একটু ভেবে দেখো। যারা বিবাহিত জীবন যাপন করছে। স্বামী-স্ত্রীর লাইফ লিড করছে, সেই সব মেয়েরা কি সেক্সওয়ার্কার নয়।
কি পাগলের মতো বলছো তুমি?
আমি তোমাকে ভাবতে বলেছি।
পাগলামো করো না।
তোমায় একটা গল্প বলে শেষ করছি।
বলো।
আমাদের একজন মনিষী ছিলেন। নামটা তোমায় বলছি না। নামটা তুমি খুঁজে বার করে আমায় বলবে। শুধু একাট ক্লু দিলাম তোমায়।
বলো।
ব্রিটিশ আমলের ঘটনা।
সে তো একশো বছর আগের ঘটনা।
হাঁ। তিনি যখন আইএএস পরীক্ষায় পাশ করলেন, তখন চাকরির জন্য তার ইন্টারভিউ-এর ডাক এলো।
হুঁ।
তিনি ইন্টারভিউ দিতে গেলেন।
হুঁ।
ঘরে ঢুকে চেয়ার বসার আগেই লালা মুখো সাহেব গম্ভীর হয়ে প্রথমেই তাকে বললেন, ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট।
কি বললে?
ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট।
যাঃ।
আমি যা বলছি ঠিক বলছি। তা সেই মনিষী প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেন। তারপর ভাবলেন ইন্টারভিউ বোর্ড। সাহেব আমাকে এই ধরণের প্রশ্ন করতেই পারেন। রাগ করলে চলবে না।
কি উত্তর দিলেন সেই মনিষী।
কি উত্তর দিতে পারেন বলে তোমার মনে হয়।
মাথায় আসছে না। আমি হলে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসতাম। আমার চাকরির দরকার নেই।
তারমানে তুমি হেরে গেলে।
তা কেন?
তা নয়। তারমানে তোমার কাজের জগতে তুমি কোনও টাফ কন্ডিশনে পড়লে, মাথা নীচু করে কোম্পানীর বদনাম করে দেবে।
উরি বাবা!
ঠিক বলেছি কিনা বলো?
হ্যাঁ, মনে হচ্ছে তুমি ঠিক বলছো।
এই প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে তোমার টেম্পারমেন্ট বিচার করা হচ্ছে।
বাবাঃ, কি কঠিন সিচুয়েশন।
হাসলাম। তিনি কি বলেছিলেন জান।
বলো শুনি।
ইয়েস, মাই ফাদার ইজ এ লিগাল কাস্টোমার।
স্ট্রেইঞ্জ! কি নাইস অ্যানসার।
হ্যাঁ। তারপর সেই লালমুখো সাহেব মনিষীকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। চাকরি তিনি পেয়েছিলেন। তবে করেননি। সারাজীবন ধরে দেশোদ্ধার করেছিলেন।
কে বলো না।
নাম বলবো না। তোমায় সেকেন্ড ক্লুটা দিলাম।
বলো।
তাঁর মৃত্যুর দিন আমরা এখনও কনফার্ম জানিনা।
উঃ তুমি ভীষণ সাসপেন্সে রাখো।
রাখি। কাল দেখা হচ্ছে।
ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো।
এবার নিশ্চই তোমার ঘুম আসবে।
আসবে।
ফোনটা কেটে দিলাম। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম। একটা বাজে। মিত্রা ফোন করবে বলেছে। এখনও করল না। ওখানে কি কোনও সমস্য হলো?
বিছানা থেক উঠে এসে টেবিলের ওপরে রাখা জলের বোতল থেকে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। বাথরুমে গেলাম। বিছানায় এসে চাদর মুড়ি দিয়ে বসলাম। একবার ভাবলাম ল্যাপটপটা খুলি। তারপর ভাবলাম না থাক। সন্দীপকে একবার ফোন করি। ব্যাটা সকাল থেকে একা লড়ছে। কি হাল একবার জিজ্ঞাসা করি।
ফোন করতেই ওপার থেকে ভেসে এলো।
গান্ডু কানা রাতে ফোন করার সময় হলো?
তোর বউ তোকে বানান করে গালি দিতে বলেছে।
সন্দীপ হো হো করে হেসে উঠলো।
খবর কি বল?
জীবনে প্রথম একা হাতে কাগজ বার করলাম।
সেটিসফায়েড?
অবশ্যই।
হাসলাম।
প্রথম কনসিভ করলাম এবং ডেলিভারি করলাম। কি আনন্দ হচ্ছে জানিস না।
তোকে আলাদা করে বলতে হবে না। তোর কথা শুনেই বুঝতে পারছি।
শোন আমার তিনটে নার্সিংহোম ক্লিয়ার হয়ে গেছে।
কি বুঝলি?
কম বেশি সবেতেই ঘোটালা আছে।
বাকি গুলো এখুনি করতে হবে না। নিউজটা আগামী সপ্তাহে মারবো। ফিরে এলে ছেলে দুটোকে বলিস আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
বাঁচালি।
কেন!
আজকেই হিমশিম খাচ্ছিলাম। ওরা আসতে কাজ তুলতে পারলাম। কিছু হারামী এখনও আছে।
মার্ক করে রাখ।
সব কটাকে দুর কর। আমি আরও কয়েকটাকে বেছে রেখেছি। ভালো কাজ করছে।
দু-একটা কচি রাখিস।
কেন মালকিনকে নিয়ে সখ মিটছে না। আরও কচি লাগবে।
আরে কলির কেষ্ট বলে কথা।
হারামী।
হাসলাম।
দাঁড়া ম্যাডাম আসুক।
চাকরি চলে যাবে।
এখন আর যাবে না।
হো হো হো।
লাস্ট আপডেট কি?
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/FiLP5wl
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment