“কাজলদীঘি”
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৫ নং কিস্তি
—————————
দাদারা একটা নাগাদ বেরিয়ে গেল। আমি বাড়িতে একা। তারপর মাসি এলো সন্ধ্যার সময়। সাড়ে এগারোটা নাগাদ গেল।
সত্যি তোর দামিনীমাসি একটা ক্যারেকটার।
বউকে গল্প করেছিস?
করিনি। বলেছি বাড়িতে গিয়ে বলবো।
কাগজ বেরিয়ে গেছে?
ক্যালকাটা এডিসন প্রিন্ট হচ্ছে।
দেখেছিস?
হ্যাঁ।
প্রেসরুমের কি অবস্থা?
অতীশবাবু ছাড়া দিব্যি চলছে।
সনাতনবাবু?
শালা সকালে এসে দেখি মিলিটারি মেজাজে চারিদিকে ঘুরছে।
বলেছিস?
দাদা ফোন করে বলে দিয়েছে।
এইবার ঝটপট তৈরি হয়ে যা।
হ্যাঁ। এই কয়দিনে অনেক অভিজ্ঞতা হবে।
দাঁড়া দাঁড়া একটা ফোন ঢুকছে। তোকে পড়ে ফোন করছি।
ঠিক আছে।
ফোনটা ধরার আগেই মিস কল হয়ে গেল। দেখলাম মিত্রার নম্বর।
আমি ফোন করতে গেলাম। তারপর ভাবলাম না। ওর ফোনে যদি রিং বাজে সবাই জেনে ফেলবে। তার থেকে বরং মিত্রাই ফোন করুক।
বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর আবার রিং বেজে উঠলো।
কিরে! কখন থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে রয়েছি।
বসে থাক। আমি এখন বাথরুমে।
তার মানে! রাত দেড়টা বাজে।
এই তো খেয়ে উঠলাম।
এতো রাতে!
আর বলিসনা। দাদারা রাত নটার সময় এলো।
রাত নটা!
তাহলে বলছি কি।
এত রাত কেন?
রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিল।
তারপর?
নিরঞ্জনদা ফোন করে আর একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে।
সেরেছে। বড়োমা?
দেড়েমুসে গালাগাল নিরঞ্জনদাকে।
হো হো হো।
হাসিস না। আমি ওবাড়িতে গিয়ে ফান করছি।
ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
বাধ্য হয়ে ল্যাপটপটা খুললাম। নেট চালালাম।
বেশ কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরলাম। নিজের মেল বক্স আবার চেক করলাম। না তনু কিছু লেখেনি। কোন মেলও পাঠায়নি। ও অফলাইনে আছে। চ্যাটে গিয়ে ক্লিক করে দু-কথা লিখে দিলাম।
অফলাইন ম্যাসেজ শো করাল।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা।
বল।
আজ সারাদিনটা বেশ ভালো কাটলো বুঝলি বুবুন। সব ভালো যার শেষ ভালো। মধুরেণ সমাপয়েত।
দাঁড়া দাঁড়া….।
দাঁড়াব কেন! সবে এসে একটু টান টান হয়ে লাট খেলাম।
সবই তো বলে ফেললি। তারওপর বেশ কড়া কড়া বাংলা বলছিস!
ভাব এবং ভাষা দুটোই গল গল করে বেরচ্ছে।
হুঁ।
তোর দিনটা একটু খারাপ কাটল। তা যাক। ভালো কাজ করতে গেলে ওরকম একটু আধটু খারাপ যেতেই পারে।
বুঝতে পারলাম মিত্রা আজ ফুল ফর্মে ব্যাট করছে। ও আজ অনেক হাল্কা। ফুর ফুরে। ওর ঘাড় থেকে সব বোঝা নেমে গেছে। ও খুশিতে থাকুক। অনেক কষ্ট পেয়েছে।
কিরে চুপ করে রইলি কেন। হুঁ হাঁ করছিস না। আবার কি ফন্দি আঁটছিস?
কই? তুই বলছিস আমি শুনছি।
হুঁ হাঁ করবি তো।
বল।
আজ থেকে যা বলবো সব শুনবি।
হাসলাম।
হাসছিস কেন?
কি করবো!
মাথায় রাখবি আমি এই কাগজের মালকিন।
জানি ম্যাডাম।
হ্যাঁ। এবার থেকে মিত্রা মিত্রা করবিনা। ম্যাডাম বলবি।
ঠিক আছে ম্যাডাম।
এই তো ভালো ছেলের মতো কথা। মিত্রা চুমু খাওয়ার ঢঙে বললো।
জানিস বুবুন আজ এই বাড়িতে আমরা চারজন।
কেন!
ও বাড়িতে জায়গা নেই।
সব ঘর বুকড?
হ্যাঁ।
তাহলে?
তোর বাড়ির নিচের ঘরগুলো আজ পরিষ্কার করা হলো। একেবারে চক চকে। সঞ্জু লাইট লাগিয়ে দিল। ইসলামভাই ভজু নিচের একটা ঘরে। চিকনা নিচের বারান্দায়। আমি নীপা তোর ঘরে।
তুই ফোন করছিস চিকনা আবার রেকর্ড করছে।
উঁ উঁ উঁ।
উঁ উঁ করছিস কেন?
সব হাত করে নিয়েছি।
তারমানে!
ওপরে ওঠার সময়ে গম্ভীর হয়ে বলেছি। চিকনা আজ তোমার গুরুর সঙ্গে রাতে কথা হবে।
বলে কিনা ওপর তলায় একেবারে রিপোর্ট যাবে না। গেলে মিথ্যে যাবে। এই কান মুলছি নাক মুলছি।
হো হো হো। নীপা।
নীপা এখন আমার নেওটা। যা বলবো তাই শুনবে।
কেন?
হুঁ হুঁ। আমি এখন অনি ব্যানার্জীর রোল প্লে করছি।
বাবাঃ।
তোকে না জানিয়ে আজ একটা অন্যায় কাজ করে ফেলেছি।
কি?
বল আগে রাগ করবি না।
না শুনলে বলবো কি করে।
আজকে স্নানসেরে মায়ের সিঁদুর কৌটো থেকে সিঁদুর নিয়ে পরেছি। ঠাকুর ঘরে পূজো দিয়েছি।
হঠাৎ?
বড়োমার কথায় সিঁদুর পরা বন্ধ করেছিলাম। আজ বড়োমা পরতে বললো।
কেন?
বললো আপদটা গেছে। এবার তুই সিঁদুর পরতে পারিস।
বেশ ভালো।
তুই একটুও দুঃখ পেলি না।
একবারে না।
কাল দেবাদের নিয়ে কখন আসছিস?
তুই খবর পেলি কি করে!
আমারও সোর্স আছে।
ঘেঁচু আছে। ইসলামভাই, দামিনীমাসিকে ফোন করেছিল। জানতে পেরেছিস।
দামিনীমাসির সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম।
টোডির বিষয় নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলো?
হ্যাঁ।
কি বললি?
যা যা জানি তাই বললাম।
মাসি কি বললো?
তুই একবারে চিন্তা করবিনা।
তুই কি বললি?
সেই সময় মনটা খুব খারাপ লাগছিল। তারপর আবার ঠিক করে ফেললাম। তুই আছিস। আমার আর কিছু হবে না।
ডাক্তারদাদা।
দারুন মজা হয়েছে।
কি রকম!
ডাক্তারদাদা যে আসছে দাদা বলেনি। আমরা জানতাম তিনজন। তারপর ট্রলি আসতে দেখি চারজন। আমি প্রথম দেখি। আমি আর ইসলামভাই খামারে দাঁড়িয়েছিলাম। বড়োমাকে দৌড়ে এসে বলি।
হো হো হো।
বড়োমার সে কি লম্ফ-ঝম্প।
কার ওপর!
দাদার ওপর।
কেন!
আগে থেকে বলেনি বলে। বলে কিনা মরন বুড়ো বয়সে ঢং কতো দেখো।
ডাক্তারদাদা কি বললো?
এডিটর আমার বান্ধবীকে বিষয়টা তোমার আগে থেকে জানানো উচিত ছিল।
আমরা ডাক্তারদার কথায় হাসতে হাসতে মাটির সঙ্গে মিশে যাই আরকি।
আমাকে দেখে বলে মামনি তোমার শরীর কেমন আছে। দেখি তো মুখখানা। তারপর আমার থুতনিটা নেড়ে দিয়ে বললো। হ্যাঁ এখন অনেক সুস্থ। বুঝলি কালকে এখানে লাইন পড়বে।
কেন!
অনাদি, বাসু, চিকনা ওদের সবার বাবা মাকে নিয়ে ডাক্তারদাদাকে দেখাতে আসবে।
খেয়েছে।
ডাক্তারদাদা বলেছে আমি সব পেসেন্ট দেখব, তবে আমার মজুরি চাই। মজুরি শুনে সবার কি হাসি।
কেন!
ডাক্তারদাদা ফিস না বলে মজুরি বলেছে।
ওরা জিজ্ঞাসা করেছিল?
হ্যাঁ। ডাক্তারদাদা মাছ, খেজুর রস, নানারকম শাক আরও কতো কি বললো এইগুলো খাওয়াতে হবে।
ওরা কি বললো?
সব একপায়ে রাজি।
কি খেলি?
তুই তো বেশ লেট্টি খেলি, মুরগির ঠ্যাং চিবোলি। আমার কথা মনে পড়ে।
একদম নয়।
তা থাকবে কেন। রাক্ষস।
তুই খাওয়ার সময় আমার কথা মনে করেছিস?
তোর কথা সব সময় হয়। আমি না বললেও হয়, বললেও হয়।
ডাক্তারদাদা নিচে বসে খেল?
হ্যাঁ। বলে কিনা অনেকদিন পর একটু আরাম করে খেলাম।
কেন!
বলে কলাপাতায় খাওয়া ভুলেই গেছিলাম। অনিবাবুর জন্য অনেক দিন পড় খেলাম।
পান্তা?
কাল খাবে বলেছে। ডাক্তার ভীষণ পেটুক।
তোর মতো।
এক থাপ্পর। শয়তান, আমি পেটুক, না?
তাহলে কি। শুধু খাই খাই?
ডাক্তারদাদা আজ চিংড়ি মাছের টকটা দু-বার চেয়েছে। কাকা তোর গুণকীর্তন করলো।
সেই মাছ ধরা কেশ?
নতুন দুটো সংযোজন করেছে।
কি বলতো?
বলবো না তুই আয় তারপর বলবো।
এরা যাচ্ছে শোবে কোথায় বলতো?
ওদের শোবার ব্যবস্থা সব রেডি।
কোথায়রে!
কাল আবার ইসলামভাই ও বাড়িতে সিফ্ট, আমরা সব এই বাড়িতে।
এই যে বললি ওই বাড়িতে জায়গা নেই। তাই সব এই বাড়িতে।
ওই বাড়ির ওপরের বারান্দাটা পরিষ্কার নেই। কাল সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাহলেই সমস্যা মিটে যাবে। আবার সব ওই বাড়িতে।
কাল কখন বেরবি রেস্ট্রি অফিসে?
যেতে হবে না।
মানে!
নিরঞ্জনদার ফর্মা দেখিসনি।
আবার হো হো করে হাসলাম।
ফোনে ফোনে সব বলে দিল। কাল পুলিশের গাড়ি করে রেস্ট্রি অফিস থেকে লোক আসবে। ব্যাঙ্কের লোকও ওই গাড়িতে আসবে। সব এই বাড়িতে হবে।
জব্বর ব্যবস্থা। দেবারা যাবে বড়োমারা জানে?
কেউ জানে না।
তাহলে!
আজ আমি সারাদিন ইসলামভাইয়ের পেছন পেছন ঘুরেছি।
হাসলাম।
ইসলামভাইকে সকাল বেলায় বলেছি আজ তোমায় ছাড়ছি না।
ইসলামভাই কিছু বলে নি?
বলেছে। আমি বললাম এতদিন তোমাদের ব্যাপার ছিল, আজ আমার ব্যাপার, আমাকে সব শুনতে হবে।
শুনে কি বললো?
মুচকি মুচকি হাসলো। বাজার থেকে ফিরে এসে দেখি ইসলামভাই নেই।
তারপর।
ফোন করলাম। বললো, মামনি পেছন দিকের বাঁশ ঝাড়ে চলে আয়, আমি বসে আছি।
আমি গেলাম। রতন প্রথমে খবর দিল। মাসি তোর কাছে যাবে।
রতন আর কি বললো?
তুই জানিস না!
মাসি বলার পর থেকে খোঁজ খবর আর নিই নি। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছিল।
দাদাও তাই বললো। তুই খুব কেঁদেছিস। সেই শুনে বড়োমাও কেঁদে ফেললো। তারপর দামিনীমাসির এ্যাপিয়ারেন্স। দাদা তো কোনওদিন দেখেনি। প্রথমে বুঝতে পারেনি। কথাবার্তায় আঁচ করেছে। তারপর তোর নাম ধরে ডেকে যখন কেঁদে ফেলেছে। তখন দাদা শিয়োর হয়েছে এইটা দামিনীমাসি।
তুই তো এখনও দেখিসনি?
দেখালি কোথায়?
এবার দেখবি।
জানিস বুবুন, গতকাল দামিনীমাসির একটা রূপ দেখেছিলাম। আজ আর একটা রূপ দেখলাম।
দেখলি কই, গলার আওয়াজ শুনলি।
ওই হলো।
আজ দামিনীমাসি স্নেহময়ী মা।
হাঁ। আমাকে কত বোঝাল জানিস। আমি হাঁ হুঁ করলাম। তারপর ইসলামভাইয়ের কাছ থেকে দামিনীমাসির গল্প শুনলাম।
কি বুঝলি?
আমাদেরই মতো সাধারণ মানুষ।
গুড। তোর এই ফিলিংসটা আমার ভীষণ ভালোলাগলো। মনের কোনে কখনও কোনও নোংরা চিন্তাভাবনার প্রশ্রয় দিবি না।
তোর কাছ থেকে এটা শিখেছি। তুই কি সুন্দর অবলীলায় এদের সঙ্গে মিশে গেছিস।
বড়োমা, ছোটোমা কিছু ভাবেনি?
একেবারে না। খাওয়ার সময় শুধু তোর কথা আর দামিনীমাসির কথা। তাও দাদা কিছু বলেনি। সব ডাক্তারদাদা বলেছে। জানিস ডাক্তারদাদাকে যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
যাদের ভেতরে সত্যি কিছু আছে তাদের তুই ওপর ওপর বিচার করতে পারবি না।
আজ হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।
তোর বরের খবর কিছু বার করতে পারলি।
মেরে আধমরা করে দিয়েছে।
তোর খারাপ লাগছে না।
যার বউকে টাকার লোভে অন্যের বিছানায় তুলে দিয়ে ক্যামেরাতে ছবি তুলে রাখে, তার খারাপ লাগেনা, বরং সে শান্তি পায়।
মিত্রা এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। আমি শুনতে পেলাম। আমি চুপচাপ। মিত্রাও চুপচাপ। ও কোনও কথা বলছে না।
কিরে। আমি বললাম।
দুর, তোর সঙ্গে আর কথা বলতে ভালো লাগছে না।
আবার কাঁদে।
কেন তুই জিজ্ঞাসা করলি। সকাল থেকে কতো ভালো ছিলাম।
ঠিক আছে আমার অন্যায় হয়েছে। আর কখনও জিজ্ঞাসা করবো না।
সিডি আর ছবি তোর কাছে?
হ্যাঁ।
সিডিটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দে। ছবিগুলো পুড়িয়ে ফেল। ওগুলো দেখে তোর মন খারাপ হয়নি?
হয়েছে। মন খারাপের থেকেও বেশি রাগ হয়েছিল। তাই ভদ্রলোকের গায়ে হাত তুলেছিলাম।
ও কবে ভদ্রলোক ছিল। এটা আমার জীবনের একটা ক্ষতো।
বুঝি। আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
কি করবি?
ও যাতে আত্মহত্যা করে তার ব্যবস্থা করবো।
পারবি?
তোকে কথা দিলাম।
দাদা বলছিল তনু তোকে মেল করে সব জানিয়েছে।
হ্যাঁ।
সেই তনু যে লন্ডনে আছে?
হ্যাঁ। ও এখন বিবিসিতে রয়েছে।
তোকে খুব ভালোবাসে না?
হাঁ।
আমাকে ছেড়ে যাস না।
আবার পাগলাম করে।
বলনা।
কালকে যাব না।
আচ্ছা আচ্ছা, আর বলবো না।
এবার ঘুমিয়ে পর।
আর একটু কথা বলি।
না। কাল সকালে অনেক কাজ আছে।
তোর কোনও কাজ নেই।
আছে।
কি কাজ আছে?
বাড়ি ঘরদোর রং করার ব্যবস্থা করেছি। বুঝিয়ে দিতে হবে।
কেন রে!
বিয়ে করবো।
কাকে?
জানতে হবে না।
আমি তাহলে কি করবো?
তুইও থাকবি।
আমি কোথায় থাকব?
দুজনে দুপাশে শুবি।
পিট্টি বুঝেছিস। পেটের মধ্যে এমন গুঁতো মারবো না।
তাহলে জিজ্ঞাসা করলি কেন?
বেশ করেছি। বলেছি না আমি মালকিন।
মালকিনের কাছে বিয়ের ব্যাপার বলা যায়। নেমন্তন্নের কার্ড দেওয়া যায়।
তুই কাল আয়, তোর ফড়ফড়ানি বার করছি।
এবার ঘুমো।
ঘুম আসে না যে।
চেষ্টা কর। ওষুধ খেয়েছিস?
এই যা, ভুলে গেছি। সকালেও খাওয়া হয়নি।
কেমন মেয়ে তুই দেখ। তুই নিজে মরবি, আমাকেও মারবি।
সরি সরি এখুনি খেয়ে নিচ্ছি।
যা শুয়ে পর আর বক বক করতে হবে না।
তুই রাগ করছিস কেন?
চুমা দেব।
দিবি! দে-না।
রাখছি।
আর একটু।
একবারে না। আমার ঘুম পাচ্ছে।
আচ্ছা রাখ।
গুড নাইট।
শুভ রাত্রি।
সকাল বেলা চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম। দামিনীমাসি মাথার শিয়রে বসে আছে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার পায়ের কাছে কবিতা। আমার গায়ে চাদর ঢাকা। কাল আমি চাদর গায়ে দিয়ে শুইনি, বেশ মনে আছে। আমি জিভ বার করে তড়িঘড়ি উঠে বসলাম।
ফিক করে হেসে বললাম, কখন এসেছো?
আধঘণ্টা।
ডাকনি কেন।
কাল অতরাত পর্যন্ত গল্প করেছিস।
মাথা নীচু করলাম। তুমি জানলে কি করে?
আমি জানবো না তো কে জানবে।
আমি মাসির কাঁধে হেলান দিলাম।
সব কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে ঘুমচ্ছিস।
কে আসবে?
কেউ আসতে পারতো।
ছগনলাল ঢুকতে দিত না।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি বক বক করছিলি।
কবিতার দিকে তাকালাম। ফিক ফিক করে হাসছে।
তুই কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মিত্রার সঙ্গে ঝগড়া করিস?
ধ্যুস।
ধ্যুস কিরে। নিজের কানে শুনলাম।
তুমি শুনেছো, আমি শুনিনি।
কবিতার দিকে তাকিয়ে বললাম।
বসে আছিস কেন, যা একটু চা কর।
আমি বিছানা থেক নেমে টেবিলের কাছে গেলাম। ব্রাসে মাজন লাগাতে লাগাতে মাসির দিকে তাকিয়ে বললাম। কটা বাজে।
দশটা।
বলো কি! এখুনি ওরা এসে পড়বে।
টিনা ফোন করেছিল।
তুমি কথা বলেছো?
বললাম। বাবু এখনও ঘুমচ্ছে। শুনে টিনা বললো, ঠেলে তুলে দাও।
হাসলাম। দাঁড়াও ঝট করে মুখটা ধুয়ে আসি।
বাথরুমে গিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে বেরলাম।
স্নান করবি না?
ওখানে গিয়ে করবো।
কেন!
এখানে করলেও ওখানে গিয়ে করতে হবে।
কবিতা ঘরে ঢুকলো। ট্রেতে কচুরী মিষ্টি।
কিরে!
মাসিকে বলো। আমাকে বকবে না।
তুই নিয়ে এলি, মাসিকে বলবো কেন?
মাসি নিয়ে এসেছে। আর একপেটি ভর্তি করে মিষ্টি নিয়ে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে যাবে।
কিগো মাসি!
আমার তো কিছু দিতে ইচ্ছে করে।
বুঝেছি।
তুই খাবি না?
খাবো। কবিতা শুধু কি আমার জন্য?
না।
বাকি নিয়ে আয়।
তুমি খাও, তারপর খাব।
তা হবে না।
যা কবিতা যা। গোঁয়াড় গোবিন্দকে নিয়ে পারবো না। আমাদের আছে কিনা দেখে তবে উনি খাবেন।
কবিতা কোমর দুলিয়ে চলে গেল।
তাহলে মিত্রার সঙ্গে কথা হলো।
মাসির দিকে তাকালাম।
তুই কি করে জানলি?
তুমি যেমন ভাবে জানো, আমিও ঠিক তেমন ভাবে জানি।
মাসি হি হি করে হেসে ফেললো।
তুমি তো দেখনি। গলা শুনে কেমন মনে হচ্ছে?
আমার থেকে তুই ভাল জানবি।
তোমার চোখ আর আমার চোখের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
মাসি আমার দিকে তাকাল।
ভুল বললাম।
মাসি মাথা দোলাচ্ছে। মুখ তুললো।
দু-চোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে করছে।
রবিবার চলে আসবো। ভজুবাবু।
বললো তো ভালো আছি। ডাক্তার ওকে গিয়েই দেখেছে।
আমার সঙ্গে ভজুবাবুর কথা হয়নি।
হ্যাঁরে, ভালো হবে।
ডাক্তার বলেছে সত্তরভাগ ভালো হবে। বাকিটা হবে না।
যতটা হয় ততটা মঙ্গল।
আমরা চেষ্টা করতে পারি বুঝলে মাসি।
তবু তোর কাছে এসে পড়েছিল বলে চিকিৎসাটা হচ্ছে।
এইভাবে বলছো কেন?
মাসি আমার দিকে তাকল। চোখের কোল দুটো চিক চিক করছে।
আবার মন খারাপ করে।
কালকে থেকে অনেক ভাবলাম তোদের দুটোকে নিয়ে।
ভেবে কি পেলে?
আর একটু আগে জানতে পারলে ভালো হতো।
সব কিছু কি আর মনের মতো হয় মাসি।
কবিতা ঘরে ঢুকলো।
প্লেট নামিয়ে রাখলো।
কিগো তুমি আবার কাঁদছো?
আমি কবিতার দিকে তাকালাম।
কাল সারারাত ঘুমোয়নি। শুধু কেঁদেছে। সকালে দুজনে বাগবাজারের গঙ্গায় গিয়ে স্নান করে সোজা তোমার কাছে চলে এসেছি। আসার সময় শ্যামপুকুরের চিত্তরঞ্জন থেকে মাসি মিষ্টি কিনেছে।
মাসি মাথা নীচু করে বসে আছে। আমি উঠে গিয়ে মাসির মুখটা তুলে ধরলাম। চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে।
আমাকে জাপ্ট ধরে মাসি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কবিতা মাথা নীচু করে বসে আছে। ওরও চোখে জল টল টল করছে। আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
মাসি এই ভাবে কাঁদতে পারে আগে কখনও দেখিনি। খুব খারাপ লাগছে। অনেকক্ষণ কারুর মুখে কোনও কথা নেই।
কবিতা আমার দিকে তাকাল। ইশারায় ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। কবিতা মাথা দোলাচ্ছে। বলবে না। ইশারায় বললো, তুমি জিজ্ঞাসা করো।
কিগো বলবে না। মাসির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললাম।
তুই আমাকে ভুলে যাবি না।
আমার দিকে তাকাও।
মাসি চোখ বন্ধ করে আছে।
চোখ খোলো।
মাসি আস্তে আস্তে চোখ খুললো। জলে ভরা চোখ দুটোয় মিনতি। করুণ আর্তি।
কেন বললে এ কথা?
তুই এখন কতো বড়ো হয়েগেছিস।
তাতে কি হয়েছে!
তোর কতো প্রতিপত্তি।
মাকে কেউ ভুলতে পারে।
মাসি আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
তুমি কাঁদলে আমার খারাপ লাগে।
আমি যে তোর মা হতে পারিনি।
কে বলেছে বলো।
না অনি না। তুই আমাকে দুর্বল করে দিস না। তুই বড়ো মায়াবী।
তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারবে?
মাসি মাথা দোলাচ্ছে। পারবে না।
কেঁদো না। তোমরা এরকম করলে আমি কাজ করবো কি করে। তুমি চাওনা আমার পাশে থাকতে।
চাই।
তাহলে। এরকম দুর্বল হলে চলে। তোমার এখনও কতো কাজ।
আর পারছিনা অনি। আমাকে একটা সুস্থ জীবন দে।
একটু অপেক্ষা করো। আমি সব ব্যবস্থা করেছি।
মাসি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
কেঁদো না। দেখো তোমাকে দেখে ওই মেয়েটাও কাঁদছে।
মাসি আমাকে ছেড়ে কাপরের খোঁট দিয়ে চোখ মুছলো। নাও মিষ্টি খেয়ে জল খাও।
আমি মাসিকে নিজে হাতে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলাম। মাসির কান্না থামে না। সবাই একসঙ্গে খেলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর মাসি একটু ঠাণ্ডা হলো।
কালকে মিত্রা তোমায় কি বললো?
আমি ওকে বোঝালাম, বেচারা কাঁদছিল। মেয়েদের মন তোকে কি করে বোঝাই।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা, ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করলাম।
হ্যালো।
কিরে। কখন উঠলি?
সাড়ে পাঁচটা।
এক থাপ্পর। একবারে মিথ্যে কথা বলবি না।
তুই কবে থেকে সত্যবাদি যুধিষ্ঠির হলি?
আমি খবর নিয়েছি। তুই ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিস।
বুঝেছি। নে কথা বল।
কে-রে।
কথা বল।
বল মামনি।
ও-মা, তুমি ওখানে!
হ্যাঁ।
গঙ্গায় স্নান করেছো?
করেছি।
আমার মিষ্টি কিনেছো?
হ্যাঁ।
বুঝেছি তোর জন্য মাসি মিষ্টি কিনে এনেছে। আমি বললাম।
বেশ করেছি, তুই কিছু করতে পারবি।
দাঁড়া একবার যাই।
মাসি হাসছে।
জানো মাসি কাজ শেষ। আমি আজ মুক্ত বিহঙ্গ।
ভাল ভাবে মিটেছে?
ফার্স্টক্লাস। নাও ভজুবাবু কথা বলবে।
মা।
বল।
পান্তা খেলাম।
ভালো করেছিস।
তুমি ভালো আছো?
হ্যাঁ। কবে আসবি।
অনিদা আসুক চলে যাব।
আচ্ছা।
শোন পরে কথা বলবো। এখন জিলিপি এলো। খাওয়া হবে। মিত্রা বললো।
ইসলামভাই কোথায়? আমি বললাম।
ওখানে কাগজপত্র বুঝছে।
ঠিক আছে।
মিত্রা ফোনটা রেখে দিল।
মাসি জোড়হাত করে কপালে ঠেকালো।
ওটা আবার কি হলো?
ভালোয় ভালোয় হয়ে গেল।
না হবার কি আছে। আমি মন থেকে চেয়েছি।
রতন হন্ত দন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো।
কিরে কি হয়েছে! মাসি বললো।
তুমি এখানে। ফোন বন্ধ করে রেখেছো কেন?
মাসি হাসছে।
অনিদার মতো শুরু করেছো?
মাসি হেসে গড়িয়ে পরে।
সকাল থেকে তোমায় খুঁজতে খুঁজতে কুত্তা বনে গেছি।
কেন বলবি তো?
রতন বারান্দায় চলে গেল। চেঁচিয়ে কাকে বললো, নিয়ে আয়।
আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছি। ওদের চোখে কোনও বিকার দেখতে পেলাম না।
একটা ছেলে একটা ভিআইপি স্যুটকেশ নিয়ে এলো।
এটা কিরে! আমি বললাম।
নিয়ে যাবে, বসের হুকুম।
তারমানে! তোরা কি আমাকে মারার ধান্দা করেছিস?
আমরা থাকতে কেউ তোমার শরীরের একটা লোম ছুঁতে পারবে না। সব শুনেছি। তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো। বসকে নতুন জীবন দিচ্ছ। তার মানে আমাদেরও দিচ্ছ।
আমি মাসির দিকে তাকালাম।
মাসি মাথা নীচু করে হাসছে। রতনের দিকে তাকালাম।
তোমার ওখানে যে কাজ করছো তার জন্য লাগবে। রতন বললো।
মাসি এগুলো তোমার কাছে রাখো। আমি বললাম।
ইসলাম কাল আমায় বলেছে। তুই নিয়ে যা। তোর এখন অনেক কাজ।
কবিতা কচুরী আছে? আমি বললাম।
কয়েকটা আছে।
যা রতনের জন্য নিয়ে আয়।
কবিতা বেরিয়ে গেল।
রতন।
বলো।
শেষ খবর আমাকে দিলি না।
তোমাকে মাসি কিছু বলেনি?
না।
তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি চাইলেও জানতে পারবে না। সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি।
সেটা জানতাম।
ব্যাশ তাহলে জানতে চাইছ কেন। আমাদের কাজ আমাদের করতে দাও। তোমার কাজ তুমি করো।
তোদের নিয়ে আমারও চিন্তা হয়।
হোক। তবু জানতে চাইবে না।
কিগো মাসি?
মাসির দিকে তাকালাম। মাসি মাথা নীচু করে আছে। আস্তে করে বললো।
রতন তোর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
মাসি তোমার রংয়ের লোক রেডি করে দিয়েছি। নীচে সব চলে এসেছে। বুঝিয়ে দাও।
দাঁড়া অফিসে একটা ফোন করি, টাকা আনাই।
এই লোকটা মহা ঝামেলা করে। রতন চেঁচিয়ে উঠলো।
মাসি হাসছে।
তোরা কি ভেবেছিস বলতো?
বসকে গিয়ে বলবে। আমাদের কিছু বলবে না।
আমার রংয়ের দরকার নেই।
তুমি বললে হবে না, ওখান থেকে হুকুম এলে বন্ধ হবে।
কবিতা চা আর রতনের জন্য কচুরী নিয়ে এলো। রতন কবিতার হাত থেকে প্লেটটা ছিনিয়ে নিয়ে দুবারে সব কচুরী খেয়ে ঢক ঢক করে একগ্লাস জল খেলো।
বুঝলে মাসি সকাল থেকে কুত্তার মতো ঘুরেছি জোগাড় করার জন্য। কেউ দেয় না। তারপর পেলাম।
কে দিল?
বেনিয়া বেটা।
বাইরে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম দেবারা চলে এসেছে। বারান্দায় গিয়ে উঁকি মারলাম। দেবা নিচ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, কিরে রেডি?
আমি ইশারায় ওপরে আসতে বললাম। ঘরে ঢুকলাম।
কে-রে, ওরা এলো? মাসি বললো।
হ্যাঁ।
প্যান্ট গেঞ্জিটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। টাওয়েলটা নিয়ে ভালোকরে গা-হাত-পা মুছে ড্রেস করে বেড়িয়ে এলাম। দেখলাম ওরা জমপেশ করে গল্প করছে। প্রত্যেকেই আজ বেশ দারুণ দারুণ শালোয়াড় কামিজ পরেছে। সাজেনি কিন্তু সেজেছে। ভীষণ মার্জিত লাগছে ওদেরকে। কবিতা এক রাউন্ড চা এনে দিয়েছে।
কখন উঠলি?
দশটা।
তাও ঠেলা খেয়ে উঠেছে। টিনা বললো।
রতনের সঙ্গে পরিচয় হলো?
তোকে আর দয়া করে পরিচয় করাতে হবে না।
হাসলাম।
বেরোবি তো?
হ্যাঁ। তোদের গাড়িতে জায়গা আছে?
কিসের জন্য বল?
দুটো জিনিষ উঠবে।
মিলি হাসলো।
হাসলে কেন? মিলির দিকে তাকালাম।
তোমার কথা শুনে।
দেখছো মাসি বিনয়ের অবতার। টিনা বললো।
কবিতা ওদের একটু মিষ্টি এনে দে।
কবিতা মাসির মুখের দিকে তাকাল।
বাক্স থেকে খুলে দেব?
দে।
কবিতা বেরিয়ে গেল।
কিসের মিষ্টি মাসি। দেবা বললো।
মেয়ের জন্য পাঠাচ্ছে। আবদার করে সকালে ফোন করে বলেছে।
মাসি তোমার মেয়ের কাছে ওটা পৌঁছবে না।
না বাবা সময় থাকলে তোদের জন্যও নিয়ে আসতাম।
কেনো নিয়ে আসোনি? প্রথমবার ছেড়ে দিলাম, পরের বার হলে গন্ডগোল হয়ে যাবে। মিলি ফরফর করে উঠলো।
আচ্ছা আর ভুল হবে না।
নির্মাল্য মিটি মিটি হাসছে।
মাসি নির্মাল্যের দিকে তাকিয়ে বললো। তোদের মধ্যে ও খুব শান্ত।
টিনা চেঁচিয়ে উঠলো। মিচকে পোড়া শয়তান, তুমি জানো না। অনিদা আছে বলে।
কেন অনিকে ভয় পায়?
ভয় পায় না। অনিদা মাঝে মাঝে টুক টুক করে এমন দেয় ওর প্রেসটিজ….।
শুধু আমার, তোমাদের নেই। নির্মাল্য চেঁচিয়ে উঠলো।
মাসি হাসছে।
কবিতা মিষ্টি আনলো। নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ, রসোগোল্লা।
দেবা মুখে তুলেই বললো, ও মাসি তুমি এসব কোথা থেকে পাও বলো তো। কাল একরকম খাওয়ালে, আজ একরকম খাচ্ছি। টেস্টই আলাদা।
তোদের একদিন পেট ভরে খাওয়াব।
দাঁড়াও অনির ওখান থেকে ঘুরে আসি। তারপর তোমায় পাকরাও করবো।
অনিদা ওগুলো তুলে দিই।
রতন পেছনের দরজাটা খোলা আছে। ঢুকিয়ে দাও। দেবাশিস বললো।
আমি যাবো। নির্মাল্য বললো।
না দাদা তোমরা খাও আমি তুলে দিচ্ছি।
রতন বেরিয়ে গেল।
কবিতা জলের গ্লাস নিয়ে এলো।
খাওয়া পর্ব শেষ, আমি মাসিকে প্রণাম করলাম। ওরাও সকলে আমার দেখা দেখি মাসিকে প্রণাম করলো। মাসির চোখ দুটো ছল ছলে হয়ে গেল।
সবাই মিলে একসঙ্গে নিচে নামলাম। ছগনলালকে সব বুঝিয়ে বললাম। এও বললাম মাসি রতন যা বলে শুনবে। বেরিয়ে এলাম।
সাবধানে যাস।
মাসির দিকে তাকালাম। কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছছে।
দেবাশিস আজ ড্রাইভ করছে। সামনের সিটে নির্মাল্য। আমরা চারজন মাঝের সিটে। আমি একদিকের জানলার ধারে, অদিতি আর একদিকের জানলার ধারে। মাঝে টিনা মিলি। টিনা আমার গা ঘেঁষে বসেছে। দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেড়িয়ে কোনা বাইপাসে উঠতে দেবাশিস প্রথম কথা বললো।
অনি অনেকদিন পর লং ড্রাইভে বেরিয়েছি।
কেন!
সময় কোথায় বল। আমার সময় হলে অদিতির হয়না, অদিতির হলে আমার হয়না।
আজকে হলো কি করে?
এটা একটা দামি কথা বলেছিস। কেন জানিনা কালকে টিনার মুখ থেকে সব শোনার পর মনটা কেমন হয়ে গেল। এসপার নয় ওসপার। চলো বেড়িয়ে পরি। বেড়িয়ে পরলাম।
এই মেন্টালিটি রাখলে তুই কোনওদিন হারবি না।
দারুন বললি কথাটা।
একটু ভেবে দেখ। তুই যখন কলেজে অদিতিকে প্রথম ভালোবাসতে চাইলি তখন তোর মধ্যে এই রোলটা প্লে করেছিল।
একদম ঠিক।
আমি ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেবাশিসের চোখ লক্ষ্য করছি। ওর উত্তেজিত চোখ দুটো সামনের রাস্তার ওপর।
বিশ্বাস কর। তোর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সব কেমন যেন ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে।
কেন!
তোকে বলতে দ্বিধা নেই। অদিতির সঙ্গে আমার একটা মেন্টাল ব্লক তৈরি হয়েছিল।
দূরত্বও বেড়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকদিন অদিতির সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিলাম। দুজনে আলাদা শুতাম। বলতে পারিস সেপারেসনের চিন্তাভাবনাও করে ফেলেছিলাম। তারপর তোর আর মিত্রার কথা ভাবলাম। বিশেষ করে তোর কথা। পথ পেয়ে গেলাম। অদিতি তোর পাশে। জিজ্ঞাসা কর আমি একবর্ণও মিথ্যে বলছি না। আমি মিলির কাছে কনফেস করেছি। টিনার কাছে কনফেস করেছি। সত্যি কথা বলতে কি নির্মাল্য আমাদের থেকে তিন বছরের জুনিয়র। ওর কাছে গিয়েও কনফেস করেছি।
এতে তুই উপকার পেয়েছিস?
অফকোর্স।
কেন?
সেইটা সার্চ করে দেখিনি।
জানিস দেবা আমরা প্রত্যেকে আশ্রয় চাই। মা তার সন্তানের কাছে আশ্রয় চায়। একটা শিশু তার মার কোলে আশ্রয় চায়। প্রমিক, প্রেমিকার কাছে আশ্রয় চায়। এরকম উদাহরণ দিতে গেলে তোকে অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারি। তুই অদিতিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস। অদিতি তোকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। এটা সত্য। মিথ্যে নয়। কিন্তু ভালোবাসার পরিণতি কি? শরীর না মন। এটা কখনও ভেবে দেখেছিস?
আদিতি জানলা থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকাল। কালো কাঁচে ঢাকা চশমায় ওর চোখ ভালো করে দেখতে পাচ্ছিনা। তবে এটা ঠিক ও আমার এই কথায় দারুণ সক্ড। টিনা আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। মিলি আমার কথা শুনে হাঁ করে রয়েছে।
সত্যি বলছি অনি, কখনও ভাবিনি।
ভেবে দেখিস উত্তর পাবি।
তুই বল।
না। এটা সম্পূর্ণ তোর ব্যক্তিগত। তুই যে উত্তরটা পাবি সেটা তোর ভালোবাসার জনের সঙ্গে শেয়ার করিস, দেখবি মিলে যাবে।
আমি অদিতিকে বলেছি, অনি, মিত্রার সম্পর্কটা দেখো কত জটিল। তবু অনি সব হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে। কেন? শুধু অর্থের জন্য। তাই যদি হয় মিত্রাকে বাঁচানর জন্য ও আমাদের কাছে এ্যাডের জন্য ছুটে এসেছে কেন। সেকেন্ডলি মিত্রার শরীর খারাপ। সেই দিন আমি বড় ধাক্কাটা পেলাম তোর কাছ থেকে। যে মিত্রাকে তুই এত ভালোবাসিস তার কাছ থেকে অতবড়ো আঘাত পেয়েও তুই বুক দিয়ে তাকে আগলে রেখেছিস। সেই দিন তোর বাড়ি থেকে ফিরে এসে আমি অদিতি সারারাত ঘুমোতে পারিনি, তোর কথা ভেবে। বলতে পারিস সেদিন দুজনে, দুজনের কাছে প্রথম কনফেস করলাম।
কালকেরটা বলো। অদিতি বললো।
সত্যি দামিনীমাসি। হ্যাটস অফ।
দেবাশিসদা ওই ভদ্রমহিলাকে দেখলে কখনও মনে হয় উনি ওই এলাকায় বসবাস করেন? টিনা বললো।
কি বলছো টিনা—কাল রাতে বাড়ি ফিরে অদিতির সামনে আমার কয়েকজন পরিচিত, তথাকথিত আন্ডারওয়ার্ল্ডের ছেলেকে ফোন করেছিলাম।
তারা আমার হাতে পায়ে ধরে দামিনীমাসির সঙ্গে পরিচয় করার জন্য। অদিতিকে জিজ্ঞাসা করো, আমি ভয়েজ অন করে ওকে শুনিয়েছি। জানিস অনি তোর জন্য এটাও আমাদের বড়ো প্রাপ্তি।
কেন?
নাহলে একটা ভুলকে চিরদিন সত্য বলে মেনে নিতাম।
এরকম কতো ভুলকে আমরা প্রত্যেকদিন প্রতিটি মুহূর্তে সত্য বলে মেনে নিচ্ছি তার খবর রাখিস?
তোকে অনেকদিন পর এত কাছে পেয়েছি। তোর পাশে থেকে এই বোধগুলো তৈরি করার চেষ্টা করবো।
খুব শক্ত। পারবি?
পারতেই হবে।
অদিতি দেবাশিসের দিকে তাকিয়ে। টিনা, মিলি আমার মুখের দিকে।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম, দামিনীমাসি আমার মাথায় শিয়রে বসে, আমার মাথায় হাত বোলাচ্ছে। কবিতা পায়ের কাছে স্থানুর মতো বসে, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
তোকে ডাকে নি?
না।
স্ট্রেইঞ্জ!
তারপর সমস্ত ঘটনা একটুও এডিট না করে ওদের বললাম।
টিনা রুমাল দিয়ে চোখ মুছলো। মিলির চোখ দুটো কেমন ভারি ভারি। অদিতি চোখ থেকে স্নানগ্লাসটা খুলে ব্যাগে রাখলো।
সবাই নিস্তব্ধ। ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেখলাম দেবাশিসের চোখে পলক পড়ছে না। স্থির চোখ দুটো রাস্তার ওপর স্থির হয়ে আছে। গাড়ির সব কটা কাঁচ তোলা। হাল্কা এসি চলছে। কারুর মুখে কোনও কথা নেই।
দেবা।
বল।
সামনে ব্রিজটা পেরিয়ে ডানদিকে একটা ধাবা পড়বে। গাড়িটা ধাবায় ঢোকাস। খিদে লেগেছে।
এটা কোলাঘাট ব্রিজ?
হ্যাঁ।
আচ্ছা।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা ধাবায় চলে এলাম। সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামলাম। আমায় দেখেই ধাবার ম্যানেজার চিনতে পারলো। নিজের সিট থেকে নেমে এসে বললো।
স্যার ওপরের কেবিনে চলুন। নিচেরটায় লোক আছে।
দেবা আমার দিকে একবার তাকাল। ওর চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আমরা সবাই ওপরের কেবিনে এলাম। ম্যানেজার আমাদের সঙ্গে এলেন।
কালকে নিরঞ্জনদা বলে গেছিলেন, আপনি আজ আসবেন।
ওরা কাল কখন এসেছিলেন?
পাঁচটা নাগাদ।
কেন!
গাড়ি খারাপ হয়ে গেল। তারপর একটা গাড়িতে করে এখানে আসেন। শেষে আমার গাড়ি করে পাঠালাম।
আমাদের একটু খাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
কেবিনে ঢুকলাম। দেবাশিস চারিদিক দেখছে।
কিরে কি খাবি? আমি বললাম।
তুমি বলে দাও। অদিতি বললো।
আমি আলুপরটা, চিকেন ফ্রাই, মটরপণির আর মিক্সড তড়কা বললাম।
ম্যানেজার চলে গেল।
জানিস অনি অনেকদিন আগে আমি, অদিতি দীঘায় এসেছিলাম। তখন এই ধাবাটা দেখিনি।
দেখেছিস ঢুকিসনি। তোরা থার্মল পাওয়ারের গেটের সামনে যে ধাবাটা আছে সেখানে ঢুকেছিলি।
ঠিক ধরেছিস।
এইরকম একটা জায়গায় তাজবেঙ্গলের মতো ডেকরেশন ভাবাই যায় না।
তোর ভালো লাগছে?
ভালো লাগছে মানে। এই টুরটা অনেকদিন মনে রাখবো।
কি টিনা ম্যাডাম মুখটা শুকনো শুকনো। এখনও সকটা কাটলো না?
টিনা মুখ নীচু করে আছে।
জীবনটা ধরতে শেখো। দেখবে কোনও দুঃখই দুঃখ নয়।
চেষ্টা করি। তোমার মতো করে পারি না।
আমি একদিনে পারিনি। তোমার মতো একদিন আমিও কাঁদতাম, এখন কাঁদিনা।
মিলির দিকে তাকালাম।
কি মিলি ম্যাডাম দুঃখ দুঃখ করে থাকলে চলবে।
তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করছি। বোঝার চেষ্টা করছি।
নাও বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসো।
মাঝে মাঝে একটা ব্যাপার মনে ভীষণ স্ট্রাইক করে। তুমি বাইরে থেকে যতটা আধুনিক তার থেকেও অনেক বেশি আধুনিক তোমার ভেতরটা। মিলি বললো।
ঠিক বলেছো মিলি প্রথম দিন অনিকে নিয়ে আমরা যখন তাজবেঙ্গলে ঢুকেছিলাম। সেদিন ফিরে ওর সম্বন্ধে আমরা কি আলোচনা করেছিলাম তোমার মনে আছে? দেবাশিস বললো।
হ্যাঁ।
আজকের অনির সঙ্গে সেদিনকার অনির কিছু মিল পাচ্ছ?
একবারে না।
এই দুমাসে ওর পরিবর্তন হয়নি—ওর এই পরিবর্তনটা ভেতর ভেতর ছিল। ও প্রকাশ করেনি। সময় এবং সুযোগের অপেক্ষা করেছে।
আমার দিকে তাকিয়ে। শেষ কথাটা তোর ধার করা। বাজারে চালু করে দিয়েছি। পাবলিক খাচ্ছেও ভালো।
তোমার কিরকম ঘ্যামাটা বেরেছে সেটা বলো। অদিতি বললো।
আমি হো হো করে হাসলাম।
হাসিস না। জিজ্ঞাসা কর নির্মাল্যকে। নির্মাল্যকে পাশে বসিয়ে অনেক ক্লায়েন্টকে তোর কথা দিয়ে পটিয়েছি। শুধু আমি নয় মিলি, অদিতি, টিনা কেউ বাদ নেই।
সবাই একসঙ্গে হাসলাম।
খাবার এলো। দেবাশিস বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, গন্ধে বুঝিয়ে দিচ্ছে খাবারটা দারুণ।
আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম। ভাই তোমার ম্যানেজার সাহেবকে একটু ডেকে দেবে।
পাঠাচ্ছি স্যার।
ছেলেটি বেরিয়ে গেল।
সবাই খাওয়া শুরু করলাম।
আচ্ছা অনি এখানে আসার পর থেকেই দেখছি সবাই তোকে স্যার স্যার করছে ব্যাপারটা কি বলতো?
আমায় না।
তাহলে!
নিরঞ্জনদার জন্য।
সেটা কে!
এই জেলার সভাধিপতি। বলতে পারিস মুখ্যমন্ত্রী।
দাঁড়া দাঁড়া বিষম লেগে যাবে।
টিনা হাসছে।
তুমি জিজ্ঞাসা করতে গেলে কেন? টিনা বললো।
আচ্ছা টিনা তোমার ইনটারেস্ট নেই?
আছে। জিজ্ঞাসা করিনি। যদি ঝোলা থেকে সাপ ব্যাঙ বেরিয়ে পরে। সামলাতে পারবো না।
সত্যি সত্যি হাসতে গিয়ে নির্মাল্য বিষম খেল।
আমি উঠে গিয়ে ওর মাথা চাপড়াই পিঠ ডলে দিই। ওরা হাসছে।
ওরে নির্মাল্য তুই কি ভাগ্যবান, তোকে অনিদা পিঠ ডলে দিল। মিলি বললো।
নির্মাল্য হাসতে হাসতে বললো। তুমি বিষম খাও দেখবে অনিদা ডলে দেবে।
আবার হাসি।
নিরঞ্জনদা কে বল না? কি করে পটালি—দেবাশিস বললো।
বিশ্বাস কর আমি পটাই নি। নিরঞ্জনদা বড়োমার ভাই।
যাঃ। খালি ঢপ।
অনিদা গুল মারছে দেবাশিসদা। মিলি বললো।
দেখছিস সবাই কি বলছে।
তাহলে সত্যি ঘটনা বলতে হয়।
আবার গল্প! মিলি বললো।
তাহলে থাক।
আচ্ছা, বলো বলো। মিলি তুই মাঝখান দিয়ে টুকবি না। টিনা বললো।
ম্যানেজার ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন।
দাদা আমার একটা উপকার করতে হবে।
বলুন স্যার।
আমরা যা খাচ্ছি। সেই মতো দশটা প্লেট রেডি করে দিতে হবে পার্সেল হবে। শুধু আলু পরটা একটু বেশি করে দিয়ে দেবেন। আর এক ক্রেট কোলড্রিংকস। মিশিয়ে দেবেন। সব দুলিটারের বোতল।
ঠিক আছে স্যার। আর?
বিলটা করে আনুন।
তুই দিবি না আমি দেবো। দেবাশিস চেঁচিয়ে উঠলো।
তুই জিজ্ঞাসাকর চাইলেও দিতে পারবি না।
স্যার আপনাদের কারুর কাছ থেকেই বিল নিতে পারবো না। নিরঞ্জনদার হুকুম।
দেবাশিস আলুর পরটা মুখে ঢুকিয়ে হাঁ করে আছে।
আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করছি।
না স্যার, আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
ভদ্রলোকের সে কি কাকুতি মিনতি। বাধ্য হয়ে বললাম ঠিক আছে আপনি যান। আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করবো না। ভদ্রলোক আমার মুখ থেকে এই কথাটা আদায় করে বললেন, সব প্যাকিং করে রাখছি। আপনি নিচে এলে গাড়িতে তুলে দেব।
আচ্ছা।
স্যার চা না কফি?
দেবাশিসের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে—
কফি।
আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম। ও যা বললো তাই পাঠিয়ে দিন।
আচ্ছা স্যার।
ভদ্রলোক বেরিয়ে যেতেই অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো, সব ফোঁকটসে।
থাম তুই, শুনতে পাবে। মিলি বললো।
অনিদা সত্যি তুমি গুরু। দেবাশিসদা প্রতিদিন তাজবেঙ্গলে লাঞ্চ করতে ঢোকে একদিনও ফোঁকটসে খেতে পায়না। আর তুমি….। মিলি বললো।
দাঁড়াও এবার নিরঞ্জনদার কেশটা শুনতেই হবে। বল বল দেরি করিসনা, খাওয়া শেষ হয়ে এলো। দেবাশিস বললো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
ওঃ স্যাট। দেবাশিস বলে উঠলো।
আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বার করলাম।
দেখলাম মিত্রা। দেবাশিসের দিকে তাকিয়ে বললাম, মিত্রার ফোন।
দে দে আমাকে দে।
আমি ভয়েজ অন করে দেবাশিসের হাতে দিলাম।
কিরে ধাবায় বসে মুরগীর ঠ্যাং চিবচ্ছিস?
বেশ করছি। তোর কি—
দাঁড়া আয় মজা দেখাচ্ছি।
বলতো আমি কে?
দেবা ছাগল।
সবাই হেসে উঠলাম।
তুই এখনও আমাকে এই ভাবে বলবি।
আমার জন্য নিয়ে আসিস।
তোর জন্য পার্সেল হচ্ছে।
এই তো ভালো ছেলের মতো কথা। বুবুন কইরে।
আমার অপরজিটে বসে ঠ্যাং চিবচ্ছে।
মিত্রা মুখ দিয়ে জিভে জল পড়ার আওয়াজ করলো।
কি হলোরে।
জিভ দিয়ে জল পড়ে গেল।
লোভ দিস না। পেট খারাপ করবে।
কোল ড্রিংকস নিয়ে আসবি।
আনবো।
বুবুনকে দে।
তোর কথা শুনতে পাচ্ছে।
বল।
কখন আসবি?
আরও ঘণ্টা দুয়েক লাগবে।
কাউকে পাঠাবো?
রবীনকে একবার পাঠা।
কেন!
এতক্ষণ দেবা গাড়ি চালালো এবার পালা করে নির্মাল্য, অদিতি, মিলি, টিনা, চালাবে। কিন্তু ওইটুকু রাস্তার জন্য রবীন।
ঠিক আছে পাঠাচ্ছি।
তোরা যখন আসবি তখন আমরা হাটে থাকবো।
সব কাজ ঠিক ঠাক মিটলো।
হ্যাঁ। তোর জিলিপি আমি খেয়ে নিয়েছি।
বেশ করেছিস।
রাগ করলি।
একটুও না।
বিকেলে তোকে হাট থেকে কিনে খাওয়াব।
আচ্ছা।
তাড়াতাড়ি আয়না।
যাচ্ছি।
আচ্ছা।
আমি ফোন বন্ধ করে পকেটে রাখলাম।
অনি ওর প্রবলেমগুলো এখনও ঠিক হয়নি!
সবাই দেবাশিসের মুখের দিকে তাকাল। বুঝলাম দেবাশিস ওদের কিছু বলেনি। ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, উত্তরের অপেক্ষায়। কি বলবো এদের সামনে। মিথ্যে বললেও আজ নয় কাল ওরা জানতে পারবে।
না। সেরে উঠতে সময় লাগবে।
ডাক্তারদাদা।
ওখানেই আছে।
তোর বাড়িতে!
হ্যাঁ।
সত্যি ট্রিপটা দারুণ হবে।
কিগো দেবাদা মিত্রাদির কি হয়েছে? টিনা বললো।
ওর কথা শুনে কিছু বুঝলে না?
না।
পরে বলবো।
দেবা এমন করে বললো। সবাই চুপ করে গেল।
আমি নিস্তব্ধে খেয়ে যাচ্ছি।
নিরঞ্জনদার ব্যাপারটা শেষ কর। দেবাশিস আমার দিকে তাকাল।
হাসলাম। এখনো দু-আড়াই-ঘণ্টা যেতে হবে।
ঠিক আছে তুই বল।
মলের কেশটা যেদিন ঘটালাম।
হ্যাঁ। ওটা কাগজে সিরিয়াল করলি। দারুন লিখেছিলি।
এরপর কত জল যে গঙ্গা দিয়ে সমুদ্রে চলেগেল তার ইয়ত্তানেই। এখনও তার রেশ কাটেনি।
দামিনীমাসি তার জন্য—!
এই তো তোর মাথা কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
তোর পাশে আছি না।
হাসলাম।
সেদিন সকাল থেকে যা যা ঘটেছিল সব বললাম। আমার কথা শুনে ওদের চোখ চড়কগাছ।
কি বলছিস তুই!
হ্যাঁ। ঠিক বলছি।
কোথাকার জল কোথায় এসে গড়িয়েছে। তুই চম্পকটাকে দূর কর।
ঠিক সময়ে করবো। তোদের নিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় পাবো। বসে আলোচনা করবো। আশা রাখি তোরা আমাকে হেল্প করবি।
করবো মানে! তোর এখনও বিশ্বাস নেই আমাদের ওপর?
তোরা প্রত্যেকে প্রফেশনাল। আমি জীবিকাকে আগে প্রধান্য দিই।
গুলি মার। যা কামিয়েছি, এখন কিছু না করলেও সারাজীবন নুন-ভাত জুটবে।
এটা তোর ইমোশনের কথা।
সময় আসুক, প্রমাণ করে দেব।
টিনা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিলি ন্যাপকিনে হাতটা মুছে নির্মাল্যকে বললো— তুই এদিকে আয় আমি এতক্ষণ শুনলাম, এবার অনিদার সঙ্গে একটু ঝগড়া করি।
দেবা হাতাহাতি হলে বাঁচাস।
ওরা হো হো করে হেসে ফেললো।
এবার আমার পাশে এসে বসতে পারো মিলি।
তুমি প্রথমেই পেরেক ঠুকে দিলে।
তুমি অনির সঙ্গে পারবে, কেন ঠোকা ঠুকি কোরছো। দেবাশিস বললো।
দাঁড়াও ওখানে গিয়ে আগে দল ভাড়ি করি, তারপর।
আবার হাসি।
কফি এলো।
খেয়দেয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম।
নিচে আসতেই ম্যানেজার ভদ্রলোক সব প্যাকিং করে গাড়ির পেছনে তুলে দিলেন।
নষ্ট হয়ে যাবে না তো?
স্যার আমি এমন ভাবে প্যাক করে দিয়েছি রাত দশটা পর্যন্ত গরম থাকবে।
আমি ম্যানেজার ভদ্রলোকের সঙ্গে হাত মেলালাম। রবিবার ফিরছি।
আচ্ছা স্যার। আমাকে যদি ঘণ্টা খানেক আগে ফোন করে দেন।
আপনার কোনও ভিজিটিং কার্ড।
উনি ছুটে গিয়ে কার্ড নিয়ে এলেন। আমরাও সবাই ওনাকে কার্ড দিলাম।
স্যার আপনাদের কাছ থেকে কোনওদিন পয়সা নেওয়া যাবেনা।
কেন!
আমার দোকানটা ওনার কোম্পানী সাজিয়ে দিয়েছে। দেবাশিসের দিকে তাকিয়ে বললো।
আমি দেবাশিসের দিকে তাকালাম।
দেবাশিস হাসছে। তোর কাছ থেকে শিখছি।
ম্যানেজার ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললো।
আপনার এই স্পটে যদি আরও বিজ্ঞাপন করা যায় আপনার আপত্তি আছে।
একেবারে না স্যার।
সব কটা কার্ড ভালো করে দেখুন।
আমার দেখা হয়ে গেছে স্যার।
আসার দিন জমিয়ে গল্প হবে।
আচ্ছা স্যার।
নির্মাল্য এইবার ড্রাইভিং সিটে বসলো। আমি বললাম—এবার আমি সামনের সিটে বসি, দেবা তুই পেছনে বোস।
কেন!
এইবার তোদের পথ দেখাতে দেখাতে নিয়ে যেতে হবে।
দারুণ হবে। তুমি পেছনে এসো। অদিতি বললো।
দেবা পেছনে এসে অদিতির পাশে বসলো। গাড়ি চলছে। টুক টাক কথা চলছে। কলেজ লাইফের কিছু কথা। ওরা গান করলো। আমি শুনলাম।
অনি।
কি।
তোর কলেজে লাস্ট ফেস্টের কথা মনে আছে?
আছে।
অনেকদিন তোদের ডুয়েটে শ্রুতি নাটক শুনিনি।
মনে করাস না, বিপদ আছে।
সত্যি তো দেবাদা এই ব্যাপারটা একেবারে মনে ছিল না। টিনা বললো।
মিলি তুমি ওদের ডুয়েট কোনওদিন দেখেছো?
একবার।
ওরা দু-জনে কতো প্রাইজ নিয়ে এসেছে কলেজের জন্য জানো—
কলেজ লেভেল কমপিটিসনে? টিনা বললো।
ইয়েস।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/QCYtI5S
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment