“কাজলদীঘি”
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৩২ নং কিস্তি
—————————
সকালবেলা আসার সময় ধূলাগড়ের ওখানে ইসলামভাইয়ের লোককে ফলো করতে দেখলাম। নিরঞ্জনদা টের পেয়েছিলে?
নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।
একবারে না!
তখনই বুঝলাম স্কিম একটা হয়েছে। মিঃ ব্যানার্জী হন্যে হয়ে আমাকে খুঁজছে। তুমি, মল্লিকদা সেটা আমায় বলেছো। আমাকে কলকাতায় আসলেই কিছু একটা করতে চাইবে। এটা আরও সহজ আমার অফিস থেকে খবর পাওয়া। আমার অফিসের এখনও অনেকে মিঃ ব্যানার্জীকে মালিক বলে মানে। তাদের পেছনে মিঃ ব্যানার্জী দেদার পয়সাও ঢালে।
তুই কি এসব ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখিস! দাদা বললো।
আমার জায়গায় তুমি থাকলে তুমিও জানতে পারতে।
দাদা থম মেরে বসে গেল।
আমি অফিসে ঢুকে নিরঞ্জনদাকে তোমার ঘরে রেখে প্রথমে সনাতনবাবুর ঘরে গেছিলাম। সেখান থেকেই খবর লিক হয়েছে। কারণ সনাতনবাবু ছাড়া আর কেউ তখনও পর্যন্ত জানে না আমি অফিসে এসেছি।
রিসেপসনিস্ট দিদিমনি সনাতনবাবুকে আমার আসার কথা প্রথমে বলে। তাছাড়া গলিতে ঢোকার মুখে রাস্তার অপজিটে রতনকে দেখেছি। রতন আমাকে দেখেনি। তখনই সব বুঝে গেলাম। সনাতনবাবুর ঘরে যাওয়াটা আমার টোপ। সনাতনবাবু গিললো।
তারপর মিঃ ব্যানার্জীর ফোন এলো।
আমার ধারণাটা কতটা ঠিক সেটা কি করে বুঝবো?
কল লিস্ট চাইলাম। দেখলে মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটের কল লিস্ট চেয়েছিলাম।
সনাতনবাবু ওখানে বসে, উনি কিন্তু ব্যাপারটা ধরতে পারেননি। তখন তোমায় সেই জন্য বললাম দাঁড়াও অনেক কাজ, তাড়াতাড়ি গিলে নিই। তুমি রাগ করলে।
আমার জায়গায় তুই থাকলে তুইও রাগ করতিস। দাদা বললো।
হাসলাম।
তারপরের ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পেলে। তবে রতন খুব ভালো কাজ করেছে। ইসলামভাইও ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিল। চলো এবার খেয়ে নিই। আমি ওভেনে খাবার গরম করতে বসাচ্ছি। তোমরা ঝপ ঝপ রেডি হয়ে নাও।
ঠিক আছে।
খেতে বসে খুব একটা কথা হলো না। অনিমেষদার বাড়ির ঘটনা নিয়ে কথা হলো। দাদা জানত না অনিমেষদার সঙ্গে আমার এরকম ফ্যামিলি রিলেশন আছে। অনিমেষদার বাড়ির আড্ডাটা আজ দাদার মনে ভীষণ দাগ কেটেছে।
কথায় কথায় দাদা এও বললো তোর জন্য নিরঞ্জনের ব্যাপারটা দেখবে বলেছে। কেননা তুই কোনওদিন বাজে কাজ করবি না। তুই যাইই করিস একটা পরিকল্পনা মাফিক করিস। নিরঞ্জনকে খুব বকাবকি করেছে।
আপনি অনির পরিচিত হয়ে এই সব কাজ করেছেন কেন? তারপর আমার কাছ থেকে যখন সব শুনলো, রাগটা একটু পরলো। এও বললো আপনি না হয়ে অন্য কেউ হলে অনি আমাকে রিকোয়েস্ট করতো না।
আমার কাজের ব্যাপার নিয়েও অনিমেষদা বলেছে। ও কাজের মানুষ। ওকে আটকে রাখবেন না। ওর যখনই অসুবিধে হয়, আমার কাছে আসে। দুজনের মধ্যে যুক্তি তক্ক চলে। ওর বৌদি, ছাত্রী দু-জনে সেই যুক্তি তক্কে অংশগ্রহণ করে তবে ও ডিসিশন নেয়। আমার সঙ্গে আলোচনা না করে ও কোনও কাজ করে না। আমি অন্ততঃ ওর ব্যাপারটা সব জানি। ওকে ওর মতো চলতে দিন।
নিরঞ্জনদাকে একপ্রকার হুকুম দিয়েছেন, আমাকে সবরকম ভাবে সাহায্য করার জন্য।
আমি ওদের তিনজনের মুখ থেকে সব শুনলাম। হুঁ হাঁ করে উত্তর দিলাম।
খাওয়া শেষ হতে আমি সব গুছিয়ে রেখে ওপরে চলে এলাম। মল্লিকদার ঘর থেকে কাগজ ভর্তি স্যুটকেশ নিয়ে আমার ঘরে এলাম। খাটে সব ছড়িয়ে বসলাম। মল্লিকদা ওপরে উঠে এসে আমার ঘরে এলো।
কিরে ঘুমবি না?
কাজ শেষ করে নিই।
বুঝেছি। আজ সারা রাত।
না। দেখি কি বস্তু আছে। আবিদ পুরো আলমাড়ি পরিষ্কার করে নিয়ে চলে এসেছে।
সাহায্য করবো?
না। নিরঞ্জনদা কোথায় শুলো?
দাদার কাছে। বেচারার সারাটা দিন আজ খুব খারাপ গেল।
নিরঞ্জনদার গাড়ি?
এমএলএ হোস্টেলে।
যাও শুয়ে পরো।
তুই বললে, তোর সঙ্গে লেগে পরতাম।
না।
যাই তাহলে?
যাও।
মল্লিকদা চলে গেল। আমি দরজা বন্ধ করলাম।
মোবাইলটা বার করলাম। দেখলাম পৌনে বারোটা। তনু চিঠিতে লিখেছে আমার মেল বক্সে সব ডকুমেন্ট ইমেজ বানিয়ে এ্যাটাচ করে দিয়েছে। টেবিলের ওপর থেকে ল্যপটপটা নিয়ে এলাম। মানি পার্টস থেক চিপটা বার করলাম। সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে খাটে বাবু হয়ে বসলাম।
একটা সিগারেট ধরালাম।
ল্যাপটপটা চালিয়ে প্রথমে নেট কানেকসন করলাম। আমার মেলবক্স খুললাম। তনুর মেলগুলো ওপেন করলাম। সত্যি তনু খেটেছে। সমস্ত ডকুমেন্ট স্ক্যান করে ইমেজ ফরমেটে পাঠিয়েছে। প্রায় তিরিশ খানা ইমেজ। কি নেই। মিঃ ব্যানার্জীর ফেলকরা সার্টিফিকেট থেকে সব কিছু। উনি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গেছিলেন সেই ইউনিভার্সিটির সমস্ত ডকুমেন্টস গুছিয়ে পাঠিয়েছে। এমনকি সেই ভদ্রমহিলা এবং ছেলেটির ছবি পর্যন্ত। এও লিখেছে ওই ভদ্রমহিলার বোনকে নিয়ে এখন মিঃ ব্যানার্জী গোয়াতে থাকেন।
এখান থেকে ট্যুরিস্টরা গোয়াতে যায়। ওনার পরিচিত হোটেলে ওঠে। গোয়ায় মিঃ ব্যানার্জীর নার্সিংহোমটা ড্রাগ বিক্রির আখরা এবং ব্লু-ফ্লিমের স্যুটিং হয়। বিশেষ করে দেশি মেয়েদের সঙ্গে বিদেশিদের। টোটাল ব্যাপারটা কনট্রোল করেন মিঃ ব্যানার্জী এবং ওই ভদ্রমহিলা। ভদ্রমহিলার নাম লিন্ডা।
আমি তনুকে থ্যাঙ্কস জানিয়ে একটা মেল করে দিলাম।
বললাম পরে তোমাকে সব বিস্তারিত জানাব।
এবার বাক্সের কাগজ নিয়ে বসলাম। এক একটা খামে সব গোছান আছে। হিমাংশু একটাও খোলে নি। সব ইনট্যাক্ট আছে। হিমাংশু ওর প্রয়োজনীয় কাগজ বার করে নিয়েছে।
আমি ঘেঁটে ঘেঁটে সব দেখলাম। এ যেন হিডিন ট্রেজার!
নিজের মতো করে প্রয়োজনীয় কাগজ গোছালাম। প্রত্যেকটার নাম আলাদা আলাদা করে দিলাম। আমার বোঝার মতো করে। মিত্রার সই করা ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প পেপার পেলাম প্রায় সত্তরটা। সব হাজার টাকা।
একটা খামে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেসনের সার্টিফিকেট পেলাম। মিত্রা ছাড়া আরোও চারজনের।
মিত্রার ডিভোর্সের সার্টিফিকেট পেলাম না।
মনে মনে বললাম শুয়োরের বাচ্চা পাঁচটা বিয়ে করেছে। তার মধ্যে বোম্বাই, গোয়া, ভাইজ্যাক, চেন্নাইয়ের চারটে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার সার্টিফিকেট পেলাম।
যত বাক্স ঘাঁটছি তত অবাক হচ্ছি। আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবলাম এই রকম একটা ছেলেকে মিত্রার মা তার জামাই হিসাবে বেছে নিলেন কেন? শুধু কি লোভ না অন্য কিছু?
আমার এই একটা দোষ। সব কিছুতেই পেছনের ইতিহাস খুঁজতে বসি। সত্যি তো বর্তমানে যা ঘটছে তাই নিয়ে চললে কি হয়? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। মাঝে মাঝে নিজেই হেসে ফেলি।
ফোনটা বেজে উঠলো। ঘড়ির দিকে তাকালাম। আড়াইটে বাজে। মিত্রার ফোন। হ্যালো বলতেই মিত্রার গলা ভেসে এলো, কিরে তুই ঘুমোস নি?
সময় পাই নি।
তার মানে!
কাজ করছি। তুই ঘুমোসনি কেন?
ঘুম আসছে না।
কোথায় শুয়েছিস?
তোর ঘরে।
আর কে আছে?
নীপা, আমি।
তুই কোথায়?
বারান্দায়। নীপা ঘুমচ্ছে।
ঠিক দেখেছিস, না মটকা মেরে পরে আছে।
ঘুমচ্ছে। তুই কি করছিস?
তোর বরের বাক্স ঘাঁটছি।
ঘুমিয়ে পর, ওটা একটা বাস্টার্ড।
কাজটা গোছাই, তারপর সব হিসাব করবো। তোর ভয় করছে না?
একদম না। ঝিঁ ঝি পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছিস?
পাচ্ছি।
চাঁদের আলোটা দারুন লাগছে।
তুই দেখ। তোর চোখ দিয়ে আমি দেখি।
পারবি না। তোর দেখা আমার দেখার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। তোর কথা বার বার মনে পড়ছে।
আমারও।
তোকে একদিন দেখিনি। মনে হচ্ছে তোকে কতদিন দেখিনি।
হাসলাম।
আমার জন্য তোর কতো কষ্ট।
কষ্ট ঠিক নয়। ভেতরটা যন্ত্রণা করছে। আবার কি ভাবছি জানিস?
কি?
তুই না থাকলে জীবনের এই দিকটা দেখা হতো না।
চুপচাপ। ফোঁস ফোঁসানি আওয়াজ ভেসে এলো।
কিরে কাঁদছিস কেন?
তুই এসব ছেড়ে দে। যা হয় হোক।
এসব তোর ইমোসনের কথা।
শুয়োরটাকে তুই ছেরে দিলি কেন?
ছারলাম কোথায়। রেখে দিয়েছি। যতদিন না আমার কাজ গোছান হচ্ছে ততদিন বাঁচিয়ে রাখবো।
আজকেই মেরে দিতে পারতিস।
মহাভরত দেখেছিস। কৃষ্ণ শিশুপাল ছাড়া কাউকে বধ করেনি। সবাইকে কথার মার প্যাঁচে খতম করে দিয়েছে। নিজে হাতে কিছুই করেনি। শুধু ভয় দেখিয়েছে। রাজনীতির বেড়াজালে সবাইকে বন্দী করেছে। বড়ো বড়ো রথী মহারথীদের দিয়ে নিজের কাজ গুছিয়ে নিয়েছে।
তোর কথা আমি বুঝি না।
বুঝতে হবে না। তুই তোর মতো থাক।
তোর ওপর বড়োমা রেগে গেছিল।
কেন!
তুই মিউ মিউ করছিলি। তারপর আবিদ আর রতন যখন ধরে আচ্ছা করে দিল তখন বড়োমা বলে উঠলো শরীর জোরাল। ছোটোমা কি বললো জানিস।
কি।
মুন্না ওটা যেন আর বেঁচে না থাকে।
হাসলাম।
তুই বিশ্বাস করবি না। চিকনাদের চেহারা দেখলে তুই ভয় পেয়ে যেতিস। ওরা যেন এখুনি পেলে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতো।
তুই তখন কি করছিলি?
ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল। ছ-বছর ধরে একটা বিভীষিকাময় জীবন কাটিয়েছি। দম বন্ধ হয়ে এসেছিল।
তোর ডিভোর্সের সার্টিফিকেটটা কোথায়?
আমার কাছে।
তুই সঙ্গে ছিলি, না ডাক্তার তোকে এনে দিয়েছিল।
আমি নিজে কোর্টে দাঁড়িয়ে সাইন করে নিয়েছি। কেনো-রে?
তোর বিয়ের সার্টিফিকেটটা পেলাম।
এখনও রেখে দিয়েছে! তুই ওকে মেরে ফেল।
একটা মানুষকে মেরে কি হবে বল। বরং তাকে জীবনমৃত করে রাখাই ভালো।
তোর দামিনীমাসির গলা আজ শুনলাম।
কোথায় শুনলি!
ইসলামভাইকে ফোন করেছিল।
ইসলামভাইকে ফোন করলো তুই শুনলি কি করে।
আমার সিম খুলে ইসলামভাইয়ের সিম ঢোকান ছিল। আমার ফোনটা ইসলামভাইয়ের কাছে। ইসলামভাইয়ের ফোনটা আমার কাছে। সঞ্জীবকে আজ ইসলামভাই টাকা দিয়েছে। একটা ফোন আনার জন্য।
এই জন্য তুই দামিনীমাসির গলা শুনেছিস।
কি বাজখাঁই গলা রে। ইসলামভাই ভয়ে কাঁপছিল। শুরু করলো যা দিয়ে না, কানে তুলো গুঁজতে হয়।
কেনো-রে?
তোকে মারবে বলেছে।
তারপর।
ইসলামভাইতো হাঁ হুঁ করে যাচ্ছে। ওই কবিতা মেয়েটা কি ডেঞ্জার রে!
পেটের তাগিদে বুঝলি। আমার তখন কোনও ক্ষমতা ছিল না।
তোর কি ভ্যারাইটি কালেকশন।
হাসলাম।
ইসলামভাই বার বার বলছিল, অনি সত্যি ভগবান। আমি এদের একসময় আমার এ্যান্টি মনে করতাম। এখন দেখছি এরা আমাকে বাঁচায়।
ঠিক কথা বলেছে ইসলামভাই।
দামিনীমাসি ইসলামভাইকে চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিয়েছে। বলেছে অনির শরীরে হাত পরলে ইসলামভাইকে পর্যন্ত কুত্তার মতো মেরে দেবে।
দামিনীমাসির সে ক্ষমতা আছে।
ইসলামভাইও তাই বলছিল। দামিনী কথায় কথায় শুধু তোর নাম বলছে। বলে কি ও আমার পেটের ছেলের থেকেও বেশি।
হ্যাঁ। আমরা এদের কত নামে ডাকি বলতো। দিনেরবেলা এদের দেহপসারিনী বলি। আর রাতে এদের দেহ পাওয়ার জন্য বলি ঘরের বউ। প্রেমিকা।
পরে ভজুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো। কি গালাগালটাই না ভজুকে দিল। কেন তুই অনিকে ছেড়ে গেছিস।
বড়োমা কি বলে?
বড়োমা এইসব দেখেশুনে থ। বলে কিনা আর কোনওদিন ভজুকে নিয়ে আসবে না।
কাল দামিনীমাসির কাছে আমি যাব।
আমাকে একবার নিয়ে যাবি? বুড়ীর কথা শুনে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
তোকে নিয়ে গেলে আমাকে গালাগাল করবে।
কেন!
তোকে বলে বোঝাতে পারব না।
ইসলামভাইকে বলেছে অনিকে একবারে ফোন করবি না। ওকে ওর মতো কাজ করতে দে। আমরা আমাদের মতো কাজ করবো। আবতার আর সাগিরকে মনে হয় দামিনীর কাছে নিয়ে গিয়ে রেখেছে।
তোরা টপ টু বটম সব শুনেছিস!
শুনবো কিরে রেকর্ডিং হয়েছে। একদিকে ফোন চার্জ হচ্ছে একদিকে রেকর্ডিং হচ্ছে।
ওখানে চার্জ কি করে হলো!
সঞ্জীব সব ব্যবস্থা করেছে। ইসলামভাইয়ের পরিচয় আজ ওরা জানতে পেরেছে। ওদের সে কি আনন্দ, চোখ মুখ দেখলে বুঝতে পারতিস।
ছোটোমা, বড়োমা ঠিক আছে।
বড়োমা প্রথমে ভড়কে গেছিল। দাদাকে ফোন করে দেড়েমুশে গালাগাল দিল। বলে কি কাগজের অফিসে বসে সব মসকরা করছো। ছেলেটা সব বাঘ ভাল্লুকের সঙ্গে একা একা যুদ্ধ করছে।
নিরঞ্জনদার খবর শুনে কি বললো?
মরুক ওটা, যেমন যোচ্চরি করেছে তেমন ফল ভুগুক। অনিকে এবার আমি না বলে দেব।
এ যাত্রায় মনে হয় বেঁচে যাবে।
দাদা তাই বললো। নিরঞ্জনদা একবারও বড়োমার সঙ্গে কথা বলেনি।
কালকের নিরঞ্জনদার সঙ্গে আজকের নিরঞ্জনদার আকাশ পাতাল তফাৎ।
কাল আমি ওই জন্য বলেছিলাম, আমি বুবুনকে কিছু বলতে পারবো না।
ভালো করেছিলি। বড়োমার একটু বোঝার দরকার ছিল।
তোর সঙ্গে আনিমেষদার এতটা গভীর রিলেশন আগে বলিসনি তো?
এটা কি বলার মতো কথা।
ইসলামভাই ঠিক এই কথা বললো। মামনি তুই ওকে জিজ্ঞাসা করিস, তোকে এই কথা বলবে।
হাসলাম।
হাসিসনা। আমি এখনও তোর সব কথা শোনার যোগ্যতা অর্জন করিনি, তাই না?
মন খারাপ করছিস।
একবারে না। কলেজ লাইফের পর তোকে দেখছি। তুই নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছিস। আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমাকে ছেড়ে যাস না। তাহলে মিত্রা মরে যাবে।
তুই মালকিন বলে কথা।
ঠাট্টা করছিস।
তোর সঙ্গে ঠাট্টা করবো। তুই কারুর মামনি, কারুর ম্যাডাম, কারুর দিদি।
সব তোর জন্য।
আমি ফাউ।
পীরবাবার থানে যা ঘটালি, ওটাও ফাউ?
না। ওই একটা জায়গায় আমি ঠিক আছি।
আমার উত্তর পাওয়া হয়ে গেছে।
হাসলাম। এবার ঘুমিয়ে পর।
ভালো লাগছে না।
তোর সঙ্গে বক বক করতে গেলে আমার কাজ শেষ হবে না।
কাল আসবি?
পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক করে দেবে। তবে মল্লিকদা, দাদা, নিরঞ্জনদা যাবে। পর্শুদিন রেজিস্ট্রি আছে।
পূব আকাশটায় আলো দেখা যাচ্ছে।
দীঘা আড়ি চলে যা।
তুই না থাকলে মজা হয় না। কালকে তোর স্কুলে গেছিলাম। ওরা মজা করলো। আমি পারলাম না।
তুই যে তখন গাইড।
না রে তোর কথাবলা আর আমার কথাবলার মধ্যে পার্থক্য আছে।
কি করে বুঝলি?
বড়োমা বলছিল মিত্রা তুই ঠিক বলতে পারছিস না। অনির সঙ্গে একবার আসতে হবে।
ঠিক আছে। এবার ঘুমো।
তুই সারারাত জাগবি। আমি ঘুমবো। কেমন করে হয়।
তাহলে জেগে জেগে তুই বক বক কর আমি কাজ করি।
আজ সকালে গরমভাতে সরষের তেল মেখে খেয়েছি। তোর মতো চিংড়ি মাছের মোলা দিয়ে।
আমার জন্য রেখেছিস?
তোর নাম মনে করে খেলাম।
ব্যাস আমার খাওয়া হয়ে গেল।
মিত্রা হি হি করে হেসে ফেললো।
তখন আমি সনাতনবাবুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি।
দাদা বললো। বড়োমা তখন খুব কাঁদছিল।
তোদের কান্না ছাড়া কি কিছু নেই?
তুই বুঝবি না। তুই তোর মতো কাজ করিস, আমারা টেনসনে মরি।
আমি কি টেনসনটা ক্রিয়েট করি?
না।
তবে?
ক্রিয়েট আপনা থেকেই হয়, তুই সমাধান করিস।
তাহলে অবুঝপনা করিস কেন?
তোকে বোঝাতে পারব না।
আমি রাখছি।
আর একটু, আর একটু। তুই এরকম করিস কেন।
তোদের নিয়ে মহা মুস্কিলে পরেছি।
আমরাও তোকে নিয়ে মুস্কিলে পরেছি।
তাই!
হ্যাঁ।
কিরকম?
তুই যাবার সময় বলে গেছিলি, ওখানে গিয়ে এই সব কীর্তি করবি।
জানলি কি করে?
তোর স্কুলে গিয়ে ইসলামভাই খালি উসখুস করছে। নীচু গলায় ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে। বার বার তোর নাম করছে। চিকনা ব্যাপারটা প্রথম বুঝতে পারে।
চিকনা শেয়ানা ছেলে।
আমাকে এসে ফিস ফিস করে বললো। মুন্নাভাই কার সঙ্গে কথা বলছে। বার বার বলছে অনি যেন বুঝতে না পারে। আমি চেপে ধরলাম। হেঁপি মেরে উড়িয়ে দেয়।
হা হা হা।
হাসিস না, শোন না—
বল।
ছোটোমা বললো। কিছুতেই বলে না। বড়োমা যেই বললো তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে তোর আহ্লার নামে দিব্যি করে বল। তখন আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঝেড়ে কাশলো।
তারপর।
সেটা আবার সেই বকুল গাছের জঙ্গলের মধ্যে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে পাঁচু শুনে অনাদিকে রিলে করেছে। তখন থেকে ওরা সব এই বাড়িতে এঁটুলে পোকার মতো লেগে রয়েছে।
ওরা এখন কোথায়?
দুজন ও বাড়িতে দুজন এই বাড়িতে নিচে শুয়ে আছে।
এ বাড়িতে কে আছে।
চিকনা আছে আর একটা ছেলে। চিনি না।
ও বাড়িতে?
পাঁচু, পচা।
তোর সব কথা চিকনা শুনছে।
যাঃ।
তুই জানিসনা ওরা কুকুরের মতো চোখ বন্ধ করে পরে থাকে। ঘুমোয় না।
বাজে বকিস না।
কাল মিলিয়ে নিস আমার কথা।
ঠিক আছে। তোর কেমন স্পেকুলেশন দেখব।
মিলিয়ে নিস। ভজুরামের খবর কি?
মায়ের কাছে গালাগাল খেয়ে বলে কি এখুনি অনিদার কাছে যাব।
ইসলামভাই আমাকে নিয়ে চলো। তার কি রাগ।
ভজুরামের রাগ। হো হো হো।
হাসিসনা, শোন না।
বল।
কেউ ওকে বাগে আনতে পারে না। শেষে আমি গিয়ে বলি ভজু তুমি যাবে বললেই যাওয়া যায়। বলে কিনা অনিদার যদি কিছু হয় মা মেরে ফেলবে। আমি তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠাণ্ডা করি। মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানিস?
কি।
পরের জন্মে আমি অনি হয়ে জন্মাব তুই মিত্রা হয়ে জন্মাবি। তুই আমাকে বুবুন বলবি আমি তোকে মিত্রা বলবো।
কালকে থেকে তাই কর।
ধ্যাত, হয় নাকি।
এবার ছার।
পূব আকাশটা কমলা রংয়ের হয়ে গেছে।
সূর্য উঠবে।
তুই আজ রাতে আসবি তাই তো।
দেখি।
দেখি না। আসবি।
ঠিক আছে।
মিত্রা ফোনটা রাখলো।
আমি একবার জানলার দিকে তাকালাম। সত্যি সত্যি বাইরেটা আলো ফুটে উঠেছে।
কোথা থেকে ভোর হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি করে বাক্স থেকে বাকি কাগজ বার করে গোছালাম। আলাদা আলাদা খামে ভরে রাখলাম। সন্দীপকে একটা ফোন করলাম। ফোনটা প্রথমে বেজে গেল। ধরলো না। বুঝলাম ব্যাটা এখনও ঘুম থেকে ওঠে নি।
বাথরুমে গেলাম। মুখে চোখে ভালো করে জল দিলাম। আবার এসে বসলাম। সন্দীপকে আবার ফোন করলাম। এবার ধরলো।
কিরে ঘুমচ্ছিস?
তাহলে কি করবো।
বউ পাশে?
হ্যাঁ।
মজমা নিচ্ছিস?
শালা।
সকাল বেলা নাম সংকীর্তন শোনালি।
বল কি হয়েছে?
একবার আসতে পারবি?
আবার কি হলো! সন্দীপের গলার স্বর বদলে গেল।
ফোনে বলা যাবে না।
কাল দাদা তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। তুই এলি না। আবার ঘোটালা?
আয় বলবো।
কখন বল?
এখুনি চলে আয়। সঙ্গে তোর টিম।
কি হয়েছে বল!
আরে বাবা কিছু একটা হয়েছে তাই ফোন করে তোকে এই সাত সকালে বিরক্ত করছি।
একথা বলছিস কেন?
শোন আর একটা কাজ করবি।
বল।
অফিস থেকে একটা স্ক্যানার আর প্রিন্টার তুলে আনতে পারবি?
তুই ঝেড়ে কাশ। টেনশনে রাখছিস কেন?
আয় বলছি।
ঠিক আছে যাচ্ছি।
ফোনটা রাখলাম।
আমার প্রোয়জনীয় কাগজগুলো আলাদা করে রেখে স্যুটকেশ গোছাতে আরম্ভ করলাম। দরজায় ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ ভেসে এলো। তাড়াতাড়ি করে খাটের জিনিষপত্র একটু গুছিয়ে নিলাম। উঠে গিয়ে দরজা খুললাম। দেখলাম নিরঞ্জনদা, দাদা দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলে আমি খাটে এসে বসে পরলাম। ওরা ভেতরে এলো।
কাল সারারাত নিশ্চই ঘুমোসনি? দাদা বললো।
বসো, এখন কথা বলো না।
সারারাত তাহলে কি করলি?
ঘাস কাটছিলাম।
নিরঞ্জনদা ফিক করে হেসে ফেললো।
কি পেলিরে?
অনেক কিছু, অপেক্ষা করো।
নিরঞ্জন দেখ তো মল্লিকের চা কতো দূর হলো।
এসে পরবে দাঁড়াও না।
এই খামগুলো কিরে?
সব আলাদা আলাদা এক একটা আর্টিক্যাল।
এও কি মল কেশ?
আরও একটু উচ্চ স্তরের।
মল্লিকদা চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকলো। নিরঞ্জনদা উঠে গেল।
মল্লিক আগে অনিকে চা দে। দাদা বললো।
কেন!
অনেকগুলো আর্টিক্যাল লিখেছে সারারাত ধরে।
তোমাকে বললো, তুমিও বিশ্বাস করলে।
ও মিছে কথা বলে না।
সত্যি কথাও বা কবে বলেছে।
আমি গম্ভীর হয়ে কাজ করে চলেছি। মল্লিকদা চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। চায়ের কাপে একটা চুমুক মেরে বিছানার ওপর রাখলাম।
বড়োমা ফোন করেছিল?
তোর বড়োমা কোনওদিন আমাকে ফোন করে। আমি করলাম।
কি বললো?
তোর পাগলামোর কথা বললো। আর গাল দিল।
তুমি কি বললে?
এ আমার কম্ম নয় তুমি পারলে ওকে বুঝিও।
ব্যাশ কথা শেষ?
ওই হলো আর কি।
মরন বলেনি?
দু-চারবার বলেছে।
কাজ করতে করতেই ফিক করে হাসলাম। নিরঞ্জনদা, মল্লিকদাও হাসছে।
আজ একটু দেরি করে অফিসে যাবে।
কেন!
অনেকগুলো সই করতে হবে তোমাদের তিনজনকে।
আবার কি করবি?
সম্পত্তিগুলো গিলতে হবে না।
কার!
ডাক্তারের।
ওটা ডাক্তার না পাষন্ড।
ওনার নামে যা বলবে তাই ম্যাচ করে যাবে। নিরঞ্জনদা বললো।
দেখে বোঝা যায় না। মল্লিকদা বললো।
আমায় দেখে বোঝা যায়, আমি এত শয়তান।
দাঁড়া তোর বড়োমাকে ফোন করছি। দাদা বললো।
কি হবে।
দেখতে পাবি।
অনেক হয়েছে আর ফোন করতে হবে না। মল্লিকদা বললো।
তুই কিছু খোলসা করে বলিস না। দাদা বললো।
শুনে কি করবে সমাধান করতে পারবে?
তা পারবো না, শুনতে ইচ্ছে করে।
মল্লিকদা।
বল।
আমি এখন নিচে যেতে পারবো না। নীচটা তুমি একটু ম্যানেজ করো।
সে তোকে ভাবতে হবে না। কাজের মাসীকে পটিয়ে নিয়েছি।
এই তো কাজের কাজ করেছো।
কাল সারারাত এই কাজ করলি?
তুমিও সারারাত গল্প করলে।
তোকে আবার কে বললো!
খবর পেলাম।
খালি ঢিল ছোঁড়া। লেগে গেলে অনির থার্ড সেন্স বলছে তাই না?
তাহলে ফোন করে খবর নিই।
আর উপকার করতে হবেনা।
থার্ড সেন্স।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
হাসছো কেন?
তোর কথা শুনে।
কাল কেমন ঝাড় খেলে। বড়োমাকে পর্যন্ত একটা ফোন করলে না।
তোকে কে বললো!
আবার কে, মিত্রা। মল্লিকদা বললো।
আমি কিন্তু একবারও বলিনি আমার সঙ্গে কথা হয়নি।
তুই বক বক না করে বল না কি পেলি। দাদা বললো।
শুনবে।
দাদা হাসছে।
মল্লিকদা দাদার পালস বিটটা একবার দেখো।
থাম তুই। দাদা বললো।
খুব ফুর্তিতে আছিস মনে হচ্ছে। মল্লিকদা বললো।
তা একটু আছি।
দাদার ফোন বেজে উঠলো।
নাও বড়োমা।
যততো সব।
হ্যালো।
আমার দিকে তাকিয়ে, কিরে তোর ফোন বন্ধ?
চার্জ শেষ হয়ে গেছে।
চার্জে বসাসনি?
বসাবো।
তোর চার্জার কোথায়? মল্লিকদা বললো।
টেবিলে আছে।
ধর তোর বড়োমা। দাদা ফোনটা এগিয়ে দিল।
তুমি কথা বলো।
আমার সঙ্গে বললে তো।
দাদার হাত থেকে ফোনটা নিলাম।
কি হয়েছে বলো।
কাল সারারাত ঘুমোস নি কেন?
এ খবরটা কে দিল?
তুই খবর রাখতে পারিস আমি পারিনা?
তোমার দম নেই। তোমাকে একজন লাগান ভাগান করেছে।
কে বল।
চিকনা।
উরি বাবা, তুই জানলি কি করে?
ওই যে বললাম।
কখন সই করাবি?
সব চলে এলে হবে।
ইসলামভাই আশেপাশে আছে?
হ্যাঁ। তোর ফোন বন্ধ।
চার্জ নেই।
ধর।
বল অনি।
আমি কি বলবো তুমি লেটেস্ট নিউজ দাও।
দামিনী বুড়ী আমার কথা শুনলো না।
কেন মেরে দিয়েছে!
দেয়নি আবার দিয়েছে বলতে পারিস।
সে আবার কি কথা।
বুঝে নে।
কবিতা কোথায়?
সেও দামিনীর সঙ্গে।
তুমি আর কি করবে।
ঠিক।
বেঁচে আছে না মরে গেছে?
রতনের কথা অনুযায়ী আশি ভাগ মৃত।
রতন কি করছিল?
দামিনীর কাছে ওরা শিশু।
বুঝলাম।
আছে কোথায়?
দামিনীর ছাদে।
দেখি এদিককার কাজ সেরে একবার যাব।
যা। তোর কথা দামিনী শুনবে।
ডাক্তার?
কাল শরীর খারাপ হয়েছিল। রতন ডাক্তার এনে দেখিয়েছে।
কি হয়েছিল?
প্রেসার হাই।
টেঁসে গেলে গন্ডগোল।
টাঁসবে না।
ছোটো ফিট আছে?
হ্যাঁ।
খেজুর রস খেলে?
খেলাম।
আজ দাদাদের বিকেলের দিকে পাঠাব। আমি যদি আজ যাই ভালো, না হলে কাল সকালে।
আজ চলে আয়।
না হবে না। দাদারা যাবে, আমার যাওয়া হবে না।
কেন?
আরও কিছু কাজ আছে।
পারলে আয়।
দেখছি।
আমার একটা টেনশন গেল।
হ্যাঁ।
ঠিক আছে। বড়দি খোঁচা মারছে।
দাও।
দাদার সঙ্গে কথা বলবে।
তোকে বলেছি?
ভাবলাম সেই জন্য তাড়াহুড়ো করছো।
কি করবি বলনা।
এই তো ঘ্যানর ঘ্যনর শুরু করলে।
বলনা।
সম্পত্তির মালিক হবো। আমার প্রচুর টাকার দরকার।
বুঝেছি তুই বলবিনা। দে তোর দাদাকে দে।
হ্যালো….না আমি পারবো না….ও মল্লিককে বলেছে মল্লিক ম্যানেজ করেছে ….নিরঞ্জনের আবার কি হবে….দোষ করলে শাস্তি পেতে হবে….ঠিক আছে।
দাদা মোবাইলটা পকেটে রাখলো।
মল্লিকদা এবার তোমরটা বাজবে।
কি করে বুঝলি!
কথা বলে শান্তি হলো না।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
হ্যাঁরে সুরঞ্জনাকে তুই পড়াস? দাদা বললো।
না।
ওই যে বললো তোর নোট।
আমার কলেজের নোটগুলো দিয়েছি।
তোর সঙ্গে আলাপ হলো কি করে?
বুঝেছি তোমার খচ খচানিটা মনের মধ্যে রয়েগেছে।
মল্লিকদা আর এক রাউন্ড হবে।
কিরে তোরা এত সকালে! মল্লিকদা বলে উঠলো।
দেখলাম সন্দীপ, দ্বীপায়ন আর সেই ছেলদুটো ঘরে ঢুকলো।
তুমি কিছু জানো না! সন্দীপ, মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে আছে।
না।
ও সকালে ফোন করে ঘুম থেকে তুললো। বললো চলে আয়।
কিরে, কখন ফোন করলি!
আমি বাক্স গোছাচ্ছি। সন্দীপ আমার পাশে এসে বসলো। কাজ করতে করতেই দ্বীপয়নকে বললাম। দ্বীপায়ন টেবিলটা একটু ঠিক করে আমার ল্যাপটপের সঙ্গে স্ক্যানার আর প্রিন্টারটা রেডি করো। ছেলে দুটোর দিকে তাকালাম।
কিরে তোরা ভালো আছিস?
হ্যাঁ অনিদা।
বোস। মল্লিকদা এইবার একটু ব্যবস্থা করো।
তুই আগে বল।
বলবো কেন, চোখের সামনে দেখতে পাবে। চা টা নিয়ে এসো তারপর কাজ আরম্ভ করবো।
দাদা গুম হয়ে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলাম। তোমরা পাঁচজনে এই পাঁচটা আর্টিক্যাল লিখবে।
তারমানে!
ডকুমেন্ট দিচ্ছি। লিখে নেবে।
ও হবেনা। তুই লিখে দিবি।
কেন?
আমরা এসবের কি জানি। কালকে দুম করে বললি। ডাক্তার তোমার সার্টিফিকেটটা ভুয়ো।
যা সত্যি তাই বললাম।
ডাক্তার এতদিন প্র্যাক্টিস করলো, এতো নামডাক, কেউ জানতে পারলো না, তুই সব পটাপট জেনে ফেললি। তুই কি অন্তর্যামী?
ডাক্তার আমার কথার উত্তরে কি বললো?
সে তো শুনলাম।
তোমার বিশ্বাস হয় না?
অবিশ্বাসও হয় না।
ঘরের সবাই হো হো করে হাসছে।
খাট থেকে চিপটা তুলে সন্দীপকে বললাম, দ্বীপায়নকে এটা দে নেটটা কানেকশন করুক।
সন্দীপ উঠে চলে গেল।
আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, অনির সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে কোনওদিন জিততে পেরেছো?
হেরেছি কবে?
তারমানে!
তোকে দিয়ে লিখিয়েছি। কাগজের মান বারিয়েছি।
এ লেখা আমি লিখতে পারবো না। হ্যাঁরে দ্বীপায়ন এটা কি কালার প্রিন্টার?
হ্যাঁ আনিদা।
তোদের বুদ্ধি আছে।
দ্বীপায়ন হাসলো।
ছেলেদুটো আমার পেছনে খাটে বসেছে।
অনিদা নেট কানেকসন করে ফেলেছি।
দাঁড়াও যাচ্ছি।
আমি উঠে গেলাম নিজের মেল বক্স খুলে কালকের পাঠানো তনুর মেলটা থেকে সমস্ত ডাউনলোড করলাম। ডেক্সটপে রেখে দ্বীপায়নকে বললাম ফটোসপে খুলে সব দেখেনাও। তারপর সব প্রিন্ট করো তিন কপি করে।
সন্দীপের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে।
তনু তোকে এইসব পাঠিয়েছে?
হ্যাঁ।
কিরে সন্দীপ?
দেখবেন আসুন দাদা।
দাদা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিল। সন্দীপের কথায় তড়াক করে উঠে বসলো। ভালো করে ডকুমেন্টগুলো দেখে নিয়ে স্বগোতক্তির সুরে বললো। কেন যে মেয়েটা চলে গেল।
না গেলে আমি এইসব মালপত্র পেতাম কি করে?
তুই তো বলবি। কাগজের কতো ক্ষতি হয়েছে জানিস।
তোমরা তাড়িয়েছ?
আমি তাড়াই নি।
ওই হলো আর কি। ঘরের বেড়াল পরের ঘরে খেতে যাবে কেন?
থাম, বক বক করিস না। সন্দীপ লেখাটার মধ্যে তানুর নাম সৌজন্যে ঢুকিয়ে দিবি।
কেন মেয়েটকে জেল খাটাবার ইচ্ছে হয়েছে? ও কি তোমায় বলেছে দাদা এতো খাটা খাটনি করলাম আমার নামটা একটু কার্টসিতে ঢুকিয়ে দেবেন?
দাদা চুপ করে গেল।
মল্লিকদা চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকলো। ছেলেদুটো এগিয়ে গেল।
অনি কি বলছেরে সন্দীপ?
দেখবে এসো, কি মাল অনি জোগাড় করেছে, এ তো মলের বাবা।
মল্লিকদা ছুটে দ্বীপায়নের কাছে চলে গেল।
তাড়াতাড়ি করো দ্বীপায়ন। এখুনি সব এসে পড়বে, এখনও অনেক স্ক্যান বাকি আছে।
খামগুলো দেখা? দাদা বললো।
সহ্য করতে পারবে না।
দেখানা।
আমি টেবিল থেকে আবার খাটে ফিরে এলাম।
দাদার কাকুতি মিনতির ঢঙে নিরঞ্জনদা হাসছে। ওই দুটো ছেলে জানলার দিকে মুখ ফিরিয়ে মুখে হাত চাপা দিয়েছে।
আমি একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বললাম ডাক্তার পাঁচটা বিয়ে করেছে। এই খামে তার ডকুমেন্টস আছে।
দাদা শুনে থ। বলিসকিরে পাঁচটা বিয়ে!
মিথ্যে কথা বলছি না। খামটা খোলো। দেখতে পাবে।
মল্লিকদা, দ্বীপায়নের কাছ থেক ছুটে চলে এলো দাদার কাছে।
দাঁড়া কচুরি আনাই।
এই তো ভদ্রলোকের মতো কথা। আমি বললাম।
আমি কি এতদিন অভদ্র ছিলাম?
আমি তোমায় অভদ্র বলিনি।
দাঁড়া তোর ছোটোমাকে রিপোর্ট করছি।
পারবে না। বলেছি না তোমরা পাঁচজন আমি একা। গোল করবোই।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো।
একটা ছেলেকে ডেকে বললো, যা তো কচুরী নিয়ে আয়।
বেশি করে নিয়ে আসিস। খিদে লেগেছে। আমি বললাম।
দাদা আমার দিকে তাকাল।
কি বজ্জাত দেখেছিস। দাদা সার্টিফিকেট দেখতে দেখতে স্বগতোক্তির সুরে বললে।
তুমি দেখো। মল্লিকদা বললো।
পকেট থেকে তনুর চিঠিটা বার করলাম।
ওটা আবার কি!
হাতে দিয়ে বললাম। আন্ডারলাইন জায়গাগুলো শুধু পড়বে এদিক ওদিক ওল্টাবে না।
দাদা হাতে নিয়ে চশমাটা একবার ঠিক করলো।
মল্লিকদা পেছন থেকে চিঠির ওপর হুমরি খেয়ে পড়েছে।
আমি তাকিয়ে আছি দাদার দিকে। নিরঞ্জনদা ঘুরে দাদার পেছনে দাঁড়াল। সন্দীপও এসে দাঁড়াল। সবাই চিঠির ওপর চোখ রেখেছে। প্রিন্টারের আওয়াজ হচ্ছে।
তাকিয়ে দেখলাম প্রিন্ট বেরচ্ছে।
দাদার চোখের ভাষা বদলে যাচ্ছে। মল্লিকদার দাঁত কড়কড় করছে। দাদা চিঠি থেকে চোখ তুললো। আমার দিকে তাকাল।
মনে হচ্ছে, হাতের সামনে পেলে এখুনি গলা টিপে মেরে দিতাম। মল্লিকদা বললো।
ওই জন্য কাল মার খেয়েছে। দাদা বললো।
মল্লিকদা দাদার দিকে তাকিয়ে আছে।
বুঝলি মল্লিক এর বেঁচে থাকা উচিত নয়। সমাজের কলঙ্ক।
মেয়েটার কথা একবার ভেবে দেখো। মল্লিকদা বললো।
তুই আমার ওখানে নিয়ে চল। খালের জলে ফেলে মাছের খাবার করে দেবো। নিরঞ্জনদা বললো।
সে ব্যবস্থা করার সুযোগ তুমি পাবে না।
তোর বড়োমা কাল বলছিল। তোর দামিনী এটাকে বাঁচিয়ে রাখবে না। দাদা বললো।
ডাক্তারকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, অনেক কাজ বুঝলে।
তোর কথা আমি বুঝি না।
ধীরে ধীরে বুঝবে। এইবার এই চিঠির প্রমাণ দেখবে।
না আর দেখবো না। গা ঘিন ঘিন করছে।
দেখো উনি কিন্তু সমাজের উচ্চ বর্গের মানুষ।
তোর বড়োমা হলে বলতো, ঝাঁটা মারো অমন উচ্চ বর্গকে।
তুই এখনও চুপচাপ আছিস কি করে? মল্লিকদা দাঁত কড়কড় করতে করতে বললো।
ডাক্তারকে শিখন্ডি করে আরও চারটে পাখিকে মারতে হবে।
চারটে পাখি আবার কোথায় পেলি!
আছে আছে, সব জানতে পারবে। তবে কথা দিচ্ছি অনি নিজে কাউকে মারবে না।
ওরা কেউ জানে?
কেউ জানেনা। খবর লিক হলে বুঝতে পারছো এই ঘরের সব কটাকে ধরবো। দেখি কে কতদিন পেটে খবরটা ধরে রাখতে পারো।
তোকে কথা দিচ্ছি আমার পেট থেকে বেরবে না। দাদা বললো।
মল্লিকদা।
আমিও বলবো না।
নিরঞ্জনদা আমার বলার আগেই বললো।
তোকে কথাদিলাম। মরার আগের দিন পর্যন্ত মুখ থেকে রা করবোনা।
মনে থাকে যেন।
এবার তোমাদের আমাকে হেল্প করতে হবে।
বল কি করবো।
কলকাতা বাদে ডাক্তারের মোট ছটা নার্সিংহোম আছে আমাদের স্টেটে।
কলকাতাটা এরা দুজন কভার করবে। বাকি ছ-টা বিশ্বস্ত লোক খুঁজে বার করো। যারা কভার করবে।
কচুরীর ঠোঙা আর তরকারির বড়ো ভাঁড় নিয়ে ছেলেদুটো ঢুকলো।
দাঁড়া এখন কিছু বলিস না। আমি ঝট করে নিচ থেকে প্লেট নিয়ে আসি।
মল্লিকদা আমরা যাবো তোমার সঙ্গে। ছেলেদুটো বললো।
আয়।
ওরা বেরিয়ে গেল।
অনিদা প্রিন্টগুলো দেখবে।
দে।
দ্বীপায়ন প্রিন্ট নিয়ে এলো। দাদা, সন্দীপ, নিরঞ্জনদা হাতে তুলে নিয়ে দেখতে আরম্ভ করলো। দাদা দেখতে দেখতে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
ওর আর কি বাকি আছে বল।
হিসেব করো।
বুঝেছিস নিরঞ্জন, আমরা এই মালিকের আণ্ডারে মাস ছয়েক আগেও কাজ করেছি।
এ যদি এই বিষ হয় সুনিতদা আর অতীশবাবু কতো বড়ো বিষ ছিল একবার ভেবে দেখো?
সুনিতদা আর বলিসনা, সুনিত বল।
এটা তোমার রাগের কথা।
রাগ বলিস আর যাই বলিস।
কম জ্বালিয়েছে আমাদের। গোটা নিউজরুমটাকে ছাড়খাড় করে দিয়ে গেছে। সন্দীপ বললো।
শুরু করে দিয়েছিস। মল্লিকদা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে বললো।
নাগো, তুমি এসো তারপর শুরু করছি আবার।
সন্দীপ একটু হাত লাগা।
সন্দীপ উঠে গিয়ে হাত লাগাল। আর একটা ছেলে প্লেট সাজাল।
দাদা। মল্লিকদা বললো।
কি হলো!
ছগনলালাকে চায়ের কথা বলে এলাম।
বেশ করেছিস।
সবার প্লেট গোছান হয়ে গেল। কচুরীতে একটা কামড় দিয়ে কথা বলতে গেলাম।
দাঁড়া তোকে একটু ইন্টারাপ্ট করছি। মল্লিকদা বললো।
বলো।
কাউকে দরকার নেই তোর এই চেলা দুটোই সব করে ফেলতে পারবে।
স্টেইন পড়ে যাবে।
তোমাকে ভাবতে হবে না অনিদা। তোমার কতদিনের মধ্যে চাই আগে বলো।
বাহাত্তর ঘণ্টা সময় তোদের দেব।
হয়ে যাবে।
তুই ডিস্ট্রিক্টগুলো বল। নিরঞ্জনদা বললো।
আমি পর পর নাম বললাম।
তোকে ভাবতে হবে না।
আমি অবাক চোখে নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।
তাকাস না আমারও কিছু ক্ষমতা আছে।
বলো।
ডিস্ট্রিকগুলোর সভাধিপতিদের সঙ্গে আমার ভালো রিলেশন আছে।
তাতে নিউজের সুবিধে হবে না। বরং কেঁচে যাবে।
কেন!
তুমি কি ভাবছো ডাক্তার কাঁচা খেলোয়াড়।
টাকা খাওয়ার কথা বলছিস?
আলবাৎ।
দাঁড়া একটু ভাবতে দে।
তুমি ভাব।
দেখ সর্বসাকুল্যে চারটে তোরা হাতের কাছে পেয়ে যাবি। কলকাতা থেক পঞ্চাশ কিমির মধ্যে। বাকি তিনটে দূরে। দেখ কি করে কি করা যায়।
ঠিক আছে আমি স্কিম করে নিচ্ছি। মল্লিকদা বললো।
ছগনলাল ঘরে ঢুকলো। নীচের গেটে কালকের বাবু এসেছে।
মল্লিকদা বারান্দায় বেরিয়ে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে বললো। হিমাংশু।
কচুরী আছে?
অনেক।
ছগনলাল যাওয়ার সময় বললো, চা এখানে নিয়ে আসবো।
হ্যাঁ, এখানে নিয়ে আয়। দাদা বললো।
আমরা কচুরীতে মনোনিবেশ করলাম। দাদার ফোনটা আবার বেজে উঠলো। চোখে মুখে বিরক্তি।
দাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোর বড়োমা। কি বলি বলতো।
কথা বলো। কি বলতে চায় শোনো।
হ্যালো।
….কি করবো কচুরীটা মুখে দিয়েছিলাম। না গিলে কথা বলি কি করে….হ্যাঁ, অনি খাচ্ছে।….তুমি তাড়াতাড়ি কথা শেষ করো।….হ্যাঁ ঘোড়ায় জিন দিয়ে আছি।….যা চোলে আমি আবার কি করলাম….পারবো না তুমি মল্লিককে বলো….ধর মল্লিক।
দাদা ফোনটা মল্লিকদার হাতে দিয়ে দিল। মল্লিকদা হাঁটি হাঁটি পায়ে বারান্দার দিকে চলে গেল।
হিমাংশু ঘরে ঢুকলো। হাঁসতে হাঁসতে আমাকে বললো।
কাল সারারাত ঘুমোসনি?
হাসলাম।
আমারও ঘুম হয়নি। রেবা যখন রাগারাগি শুরু করলো। তখন ওকে গল্পটা বললাম।
হাসতে হাসতে বললাম, রেবা কি বলে?
আর কি, অনিদার দম আছে।
কচুরী খাবে হিমাংশু। দাদা বললো।
হলে খারাপ হয় না। সকালে এককাপ চা খেয়ে চলে এলাম।
ওরে সন্দীপ, হিমাংশুকে দে। দাদা বললো।
মল্লিকদা দেখি তখনও বারান্দায় দাঁড়িয় নীচু স্বরে কথা বলেই চলেছে। বুঝলাম ছোটোমার সঙ্গে কথা বলছে।
ড্রাফ্ট করেছিস না ফাইন্যাল করে নিয়ে এসেছিস।
তুই পাগল হয়েছিস, ড্রাফ্ট বানিয়ে নিয়ে এসেছি। তোর সঙ্গে বসে ফাইন্যাল করবো।
ভালো করেছিস।
খেয়েনে। তারপর কথা বলছি।
সত্যি হিমাংশুর খিদে পেয়েছিল একসঙ্গে দুটো করে কচুরি মুখে দিয়ে তাড়াতাড়ি প্লেট খালি করে দিল।
মল্লিকদা ঘরে এলো। হাসি হাসি মুখ।
কি, রিলে করলে?
পাগল হয়েছিস। ডজ করে বেরিয়ে গেলাম। শুধু বললাম সব পজিটিভ। চিন্তার কোনও কারন নেই।
মাথায় রাখবে। খবর আমার কাছে ঠিক চলে আসবে।
মল্লিকদা হাসছে।
যে যার মতো ঘুঁটি সাজাচ্ছে। সন্দীপ ছেলে দুটোকে নিয়ে আলাদা করে কথা বলছে। দ্বীপায়ন ল্যাপটপে বসে কাজ করে চলেছে। নিরঞ্জনদা চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
বল তুই কি গল্প লিখেছিস। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
দুটো গল্প আছে নার্সিংহোমের ব্যাপারে। এক তুই সবকটা নার্সিংহোমের শেয়ার লিখিয়ে নিতে পারিস। না হলে শুধ আমাদের স্টেটের গুলো লিখিয়ে নিতে পারিস।
কেন বলছিস বল?
কালকে যা কাগজ পত্র ঘাঁটলাম তাতে বাইরের গুলোয় হাত দিলে বহুত ঝামেলায় পরবি।
আমি মাথা দোলাচ্ছি।
কিরে তোর মনের কথা বলতে পেড়েছি?
হুঁ। তোর বুদ্ধি খুলেছে।
তোর সঙ্গে থেকে থেকে।
তাই কর। ডাক্তারের পাঁচটা বিয়ে। যে কটার সঙ্গে বিয়ে করেছে সে কটার সঙ্গে পার্টনার শিপে নার্সিংহোম বানিয়েছে। এই কাজ উদ্ধার করতে গেলে সারা জীবন লেগে যাবে। তার থেকে বরং কিছু টাকা খিঁচে নেব এই তালে।
সেই ভালো।
বাড়ি গুলোর ব্যাপারে?
ওর বাড়িটা গন্ডগোলে। ওটা নিস না। বরং মিত্রা যে বাড়িতে আছে সেটা লিখিয়ে নে?
বাড়িটাতো ওরই ছিল!
না।
তারমানে!
ওর মায়ের নামে ছিল।
বুঝলাম না!
ওটা একচুয়েলি ওর বাবার নামে ছিল। বাবা, মা আর স্ত্রীর নামে করে দিয়েছিলেন। মিত্রার মা আবার ওনার অংশটা ডাক্তারের নামে করে দিয়েছিলেন। ডাক্তার আবার মিত্রার অংশ মিত্রাকে দিয়ে ব্ল্যাঙ্ক স্টাম্পপেপারে লিখিয়ে নিয়েছিল। তুই বরং ডাক্তারের পোর্সানটা মিত্রার নামে লিখিয়ে নে।
ঠিক আছে। নেক্সট।
তোর শেয়ার ট্রন্সফারের সময় মিত্রাকে দিয়ে যেটা সাইন করিয়েছিল সেটা রেস্ট্রি হয়নি। ওটা তোর নামে ডাইরেক্ট করে দিচ্ছি।
সব ঘাঁত ঘুঁত বেঁধে কর। পরে যেন ফেঁসে না যাই। আর একটা কাজ কর।
বল।
মিত্রার নামে ওর টোটাল প্রপার্টির একটা পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি তৈরি কর। পরে বাকিটা আমি বুঝে নেব। ডাক্তারের বাক্সে যে পুরনো স্টাম্প পেপার আছ মিত্রার সাইন করা, সেগুলো কাজে লাগা।
এটা মাথায় আসেনি। ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস।
নে কাজ শুরু করে দে। ওদিকে রতনরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমার ফোন বন্ধ। হেড অফিসে বার বার ফোন করছে। আমি বুঝতে পারছি। অফিস থেকে প্রিন্টার নিয়ে চলে এসেছি। তুই ঝট পট কাজ শেষ কর।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, তুমি সব একবার ভালো করে পড়ে নাও। আমি বাথরুমে ঢুকি।
যা।
আমি বাথরুমে চলে গেলাম। সারতে সারতে আধঘণ্টা গেল। বাইরে ওরা কথা বলছে। ছেঁড়া ছেঁড়া কথা আমার কানে আসছে। সব কথার মধ্যেই আমি আছি। হিমাংশু বেশ রসিয়ে রসিয়ে কালকের ঘটনা সবাইকে বলছে।
মাঝে মাঝে দাদা রেগে উঠে বলছে, আরও ঘা দুচার দিতে পারতো। তবে কবিতা মেয়েটা বেশ স্টেট ফরোয়ার্ড। আমাকে বলে কিনা তুমি এর বেশি আর জানতে চেওনা।
স্নান করি আর নিজের মনে নিজে হাসি।
আজ আমার পাশে কতো লোক। যাকে বলছি, সেইই আমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। একদিন কলকাতার রাস্তার কলের জল পেট ভরে খেয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দিয়েছি। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে মনে হয়, না না এই জীবনে এই সব ঘটনা ঘটেনি। ওই ঘটনাগুলো আমার গতো জন্মের।
কাল সারারাত ঘুমোইনি শরীরে জল পড়তে কেমন শির শির করে উঠলো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যা করছি সব ঠিক করছি? কোনও অন্যায় করছি না?
তারপর যখনই মিত্রার কথাটা মনে পড়ে যায়। ভেতরের সব রাগটা কেমন বাইরে বেরিয়ে আসে। আমি যা করছি সব ঠিক করছি। কোনও অন্যায় কাজ করছিনা। এক কথায়, আমি নিজের জন্য কিছু করছি না। আজ কেউ প্রশ্ন করলে কালকেই সব লিখে দিয়ে চলে যাব।
বাথরুম থেকে বেরলাম। দাদা ইজি চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে হিমাংশুর লেখা ড্রাফ্ট পড়ছে। দ্বীপায়নকে জিজ্ঞাসা করলাম দেখ আমার মোবাইলটা চার্জ হয়ে গেছে কিনা। ও হাতে নিয়ে বললো হয়ে গেছে।
আমি ছোটোমার ঘরে গিয়ে জামা প্যান্ট পরে এলাম। মল্লিকদা হট ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিল।
কিরে হিমাংশু রেডি?
হ্যাঁ দাদাকে দিয়েছি, দাদা একবার পড়ে নিচ্ছে।
আমি তাহলে ফোন করি?
কর।
আমি রতনকে ফোন করলাম।
কিগো তেমার ফোন সকাল থেকে অফ কেন!
আর বলিসনা, চার্জে বসিয়েছিলাম। তুই কোথায়?
হোটেলে।
ডাক্তারকে নিয়ে চলে আয়।
ঠিক আছে।
শোন সঙ্গে একটা গাড়ি এক্সট্রা নিয়ে আসিস।
আচ্ছা। তোমাকে ভাবতে হবে না।
চলে আয়।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম। ম্যাডামকে একবার নক করে দে।
নক করার দরকার নেই। প্রত্যুষ এখুনি চলে আসবে।
ও ম্যাডামকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে?
হ্যাঁ।
দাদাকে বললাম তুমি রেডি হয়ে নাও।
দাঁড়া আগে সই সাবুদ করি, তারপর একবারে স্নান সারবো।
আমি ডাক্তারের স্যুটকেশ বার করলাম। চেক বইগুলো বার করলাম। দেখলাম প্রত্যেকটা চেক বইয়ে একজনের সই করা আছে। বুঝলাম সেই সব ভদ্রমহিলার। শুধু ডাক্তারের সই করলেই হয়ে যাবে। মনে মনে বললাম শালা কতবরো ধুরন্ধর। এইরকম মানুষও পৃথিবীতে থাকে। ঘাঁটতে গেলে দেখবো, ওই মেয়েগুলোর অবস্থাও মিত্রার মতো।
অনিদা।
দ্বীপায়নের দিকে তাকালাম। চোখ চলেগেল ল্যাপটপের দিকে।
ডাক্তার ব্লু ফ্লিমের স্যুটিং করছে তার ছবি দ্বীপায়ন স্ক্যান করছে। আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। এগুলো পরে করলে হবে?
আমি বললাম, না। একটু আড়াল করে কর। পারলে মল্লিকদার ঘরে চলে যা।
দ্বীপায়ন হাসলো।
আমি ওই ঘরে চলে যাই।
যা।
দ্বীপায়ন সব গুছিয়ে ও ঘরে চলে গেল।
হিমাংশু আমার কাছে এসে বললো। তুই একবার দেখে নে।
আমি এখন দেখতে পারবো না, তোরা দেখ। পারলে মল্লিকদা, নিরঞ্জনদা আছে।
আমি বারান্দায় সন্দীপের কাছে গেলাম।
কিরে বুদ্ধি খেলালি?
হয়ে গেছে।
কি হয়ে গেছে?
ওরা আজ কলকাতারটা আর কলকাতার কাছের নার্সিংহোমগুলো মেরে দিচ্ছে।
ঠিক আছে।
বাকিগুলো?
কাল দুজনে একসঙ্গে বেরিয়ে যাবে। প্রথমে শিলিগুড়ি সারবে তারপর রায়গঞ্জ হয়ে মালদহে ঢুকবে।
দাদারা আজ থেকে থাকবে না।
তুই থাকবি তো?
হ্যাঁ।
তাহলে ঠিক আছে।
টেনসন ফ্রি।
সন্দীপ হাসছে।
ঘরে ঢুকে হিমাংশুকে বললাম তোকে কালকে যে জমিটার দলিল দিলাম ওটা করেছিস?
হ্যাঁ ওটা হয়ে গেছে। ব্যাগে আছে।
এখানে তিনজনে আছে। সই করিয়ে নে। বাকিটা নিরঞ্জনদাকে বুঝিয়ে দে। কালকে নিরঞ্জনদা সব ব্যবস্থা করবে।
হিমাংশু দাদাদের দিয়ে সব সই করিয়ে নিল।
কিরে তুই করবি না? দাদা আমার দিকে তাকাল।
ওটা আমার নয় তোমাদের। আমারটা আমি করে দিয়ে চলে এসেছি।
একিরে তারপর আমাদের বাঁশ দিবি!
তোমাকে দেব না।
যাক তোর মুখ থেক এই কথাটা শুনে প্রাণ জোড়াল। কি বলো হিমাংশু।
হিমাংশু হাসছে।
নিরঞ্জনদা টাকা বড়োমার কাছ থেকে নিয়ে নেবে। কোনও ধার-বাকি রাখবে না। কাল থেকেই ওখানে ডেভালপের কাজ শুরু করে দেবে। ওখানকার ব্যাঙ্কে একটা এ্যাকাউন্ট করবে। সইয়ের অথরিটি তুমি দাদা, ইসলামভাই। যে কোনও দুজন হলেই চলবে। হিমাংশু রেজুলেশনগুলো কোথায়?
সব ফাইলে আছে।
দাদা তুমি একবার ওটা পড়ে নাও। কো-অপারেটিভ ফর্ম করার ব্যাপারে যা করার নিরঞ্জনদা করবে।
ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। নিরঞ্জনদা বললো।
দে বসে বসে তাই করি, ডাক্তার কখন আসবে রে?
এবার চলে আসবে।
ছোটোমার ঘরে গেলাম। দ্বীপায়ন তেড়ে স্ক্যান করে চলেছে। আমায় দেখে হেসে ফললো।
কি দ্বীপায়নবাবু স্যার, হাসছো কেন?
তোমার কালেকশন দেখে।
আমার কালেকসন! ঠিক বলেছো। জানো দ্বীপায়ন এই ভদ্রলোকের মালিকানায় আমরা কাজ করেছি। এটা বিশ্বাস করো?
আজ এই মূহূর্তে এইসব দেখার পর বিশ্বাস করতে অসুবিধে হচ্ছে।
ভদ্রলোককে দেখে বোঝা যায় তার ভেতরটা এতো কালো।
একবারেই না।
আমিও প্রথম দিন বুঝতে পারিনি। মিত্রা যেদিন আমায় ক্যালকাটা ক্লাবে প্রথম আলাপ করিয়ে দেয় তখন ওনাকে অনেক ব্রাইট মনে হয়েছিল। ভেবেছিলাম এতোবড়ো ডাক্তার ওনার সান্নিধ্যে এলাম এটাই সৌভাগ্যের ব্যাপার।
সত্যি অনিদা যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/nGmWagS
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment