“কাজলদীঘি”
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৪১ নং কিস্তি
—————————
সকলে হই হই করতে করতে বাড়ি পৌঁছলাম রাত সাড়ে আটটা। খেয়ে দেয়ে শুতে শুতে সেই রাত বারটা।
সকালে দেবার ডাকে ঘুম ভাঙলো। দেখলাম মিত্রা আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। গায়ে চাদর চাপা দেওয়া। ওকে খোঁচা মারলাম। জড়িয়ে জড়িয়ে বললো।
দেবা ছাগলটা কি বলতো।
হাসলাম।
ওঠ।
তুই আগে উঠে দেখ কি বলে।
মিত্রা আপদমস্তক ঢেকে শুয়ে রইলো। অগত্যা আমি এসে দরজাটা খুললাম। দেবাশিস একটা পাজামা-পাঞ্জাবী পরেছে। একেবারে ধোপদুরস্ত হয়ে এসেছে।
কিরে যাবি না?
কোথায়!
তোর স্কুলে।
তোরা যাবি?
আমরা সবাই রেডি।
আমাকে একটু সময় দে।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
দরজাটা ভেজাতেই মিত্রা তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। মুচকি মুচকি হাসছে।
নে আর দেরি করে লাভ কি।
মিত্রা গায়ের চাদরটা কোনও প্রকারে ছুঁড়ে দিয়ে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো।
ওর ভাষা ভাষা চোখ দুটোয় না বলা অনেক কথা।
মুখ-হাত-পায়ে জল দিয়ে সবাই বেরিয়ে এলাম।
আজ আমরা গাঙ্গুলী ঘড়ের পুকুর পাড়ের রাস্তা ধরলাম। মিত্রা আজ সবার আগে, আমাদের পথপ্রদর্শক, ঝর্ণার ধারার মতো খুশিতে কল কল করছে, সকলকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে চলেছে। হঠাৎ চলতে চলতে থেমে গেল।
বুবুন।
উঁ।
তুই পেঁপে পাতা ছিঁড়লি না?
ওখানে কিন্তু ফাঁকা মাঠ, কোনও ঝোপঝাড় নেই, দেখেছিস তো।
চেপে রাখবো। কি বল মিলি।
মিলি চুপ করে রইলো।
হ্যাঁ মিত্রাদি। টিনা বললো।
কিরে দেবা।
অনি আগে ব্যবস্থা করুক তারপর দেখা যাবে।
অনিদা তুমি পেঁপে পাতাটা আগে জোগাড় করো। মিলি বললো।
চলো ভূততলায় যাই।
আবার ভূত। মিলি, টিনা, অদিতি তিনজনেই বলে উঠলো।
কিছু হবে না। দেখবি জায়গাটা দারুণ সুন্দর। মিত্রা বললো।
পায়ে পায়ে ভূততলায় চলে এলাম। মিত্রা ওদের ভূততলার ইতিহাস বললো। টিনাদের চোখমুখ চক চক করছে। আমরা ভূততলা পেরিয়ে নদীর ধারে চলে এলাম। আস্তে আস্তে মিত্রা সব গল্প ওদের শোনাচ্ছে। সেই খেঁজুর গাছ। দেখলাম কলসি ঝুলে রয়েছে।
যা নিয়ে আয়। মিত্রা আমাকে ঠেলা দিল।
আবার বলছি, ভেবে দেখ।
ভেবে দেখার সময় নেই তুই যা।
মিলি, টিনা, অদিতি চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে।
যাও না অনিদা, দেরি করোনা প্লিজ, কেউ যদি চলে আসে খাওয়া হবে না। মিলি বললো।
আমি হাসলাম।
বাঁধ থেকে নেমে সোজা নদীর ধার। গাছে ওঠার মুখে একবার ওদের দিকে ফিরে তাকালাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। চাপা কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। নদীর বুকের হিমেল হাওয়া তির তির করে বইছে। চাদরটা কোমড়ে বেঁধে তর তর করে খেঁজুর গাছে উঠে রস পেড়ে নিয়ে এলাম।
আমার অবস্থা দেখে ওরা হেসে কুটি কুটি।
গোল হয়ে বসে রস খাওয়া হলো। আমি আবার ছুটে গিয়ে গাছে উঠে রসের হাঁড়ি রেখে এলাম। হাসাহাসি বন্ধ নেই।
মিত্রা দেখালো রস খাওয়ার পর আমি কিভাবে ওকে নাচতে বলেছিলাম, তারপর কিভাবে ও নেচে ছিল।
তুমি কিছু বোঝ নি? টিনা বললো।
তখন নতুন, বুঝলি টিনা। ও যা বলছে তাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি। ও যে অতো বড়ো বাঁদর তা তো জানতাম না।
তুমি আর নেচো না। মিলি বললো।
আমি হাসছি।
আচ্ছা অনি তোর কি তখন একটুও দয়ামায়া হয়নি। দেবা বললো।
দয়ামায়া। বারবার বলেছি ওখানে গেলে তোর অসুবিধে হতে পারে। না আমি যাব। তো চল। ঠেলা বোঝ।
শয়তান। মিত্রা আমার কোমরে খোঁচা মারলো।
চল, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে শশধর কাকা চলে আসবে।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে পদ্মপুকুরে এলাম।
টিনা বললো, অনিদা তুমি এখানে চুপটি করে বসে থাকবে। কোথাও যাবে না। আমাদের কথা একবারে ভাববে না। আমরা আমাদের কাজ সেরে আসছি।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
তোমায় কিন্তু আজ কেউ ডিস্টার্ব করিনি। মিলি বললো।
এতো সুন্দর সকালে প্রাতঃকৃত্য। তাও আবার প্রকৃতির কোলে। নির্মাল্য বললো।
তোকে কাব্যি করতে হবে না। যাবি। দেবা বললো।
যাব না মানে! রস কি তুমি একা খেয়েছো?
দেবা প্যাকেটটা দে।
দেবা প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিল।
তুই নিলি না।
নিয়েছি।
ওরা চলে গেল। আজ ওদের পথ প্রদর্শক মিত্রা। আমি পদ্মপুকুরের ধারে বসলাম। সবেমাত্র ভোরের আলোয় চারদিক জেগে উঠছে। চারিদিকে পাখির কুজন। দু-একটা বক দীঘির জলে ডানা মেলে উড়ে এসে বসলো। মনটা বড্ডো আনমোনা হয়ে গেল।
কাল থেকে অর্কর ম্যাসেজ আর পড়িনি। মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো পর পর পড়তে আরম্ভ করলাম। এক জায়গায় এসে থমকে গেলাম।
একবার, দুবার, তিনবার ম্যাসেজটা পড়ে আমার চোয়ালদুটো শক্ত হয়ে গেল। শুয়োরের বাচ্চা এতদূর এগিয়ে গেছে। আজ তুই খামটা পেলেই তোর দৌড় থেমে যাবে। তখন তুই নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দৌড়ি শুরু করবি। তোর মতো অনেক শুয়োরের বাচ্চাকে আমি সোজা করে দিয়েছি।
অর্ককে একটা ফোন লাগালাম। দেখলাম ফোন বাজছে।
কিগো অনিদা এতো সকালে।
তোর ম্যাসেজগুলো পড়লাম।
ঠিক আছে?
হ্যাঁ।
তুই ঠেকাগুলো দেখেছিস।
বলতে পারো আশেপাশে ঘুরেছি। আজ আটটায় ডেকে পাঠিয়েছে। দুটো চামকি জোগাড় করেছি। নিয়ে যাব।
কোথা থেকে জোগাড় করলি।
বসিরহাটের মাল। ওরা লাইনের।
পাখি পড়ার মতো পড়িয়ে নিস।
ও নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, বাঁকা আঙুলে তুলব তোমার মতো। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।
আচ্ছা। রবিবার তোর সঙ্গে দেখা হবে।
ঠিক আছে।
সিগারেট ধরালাম। দু-চারটে টান মারতেই ওরা সবাই এলো। দেখলাম নির্মাল্যের হাতে নিমডাল। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
কি অনিদা তোমার মতো পেরেছি?
হাসলাম।
কিরে বুবুন তোর হাসিটা কেমন ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে। মিত্রার স্থির চোখ আমার মুখে।
তোর কি ঠিক মতো ক্লিয়ার হয়নি?
আমার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিস।
একবারে না। আমি খুব স্বাভাবিক।
যাওয়ার সময় তোর চোখটা এরকম ছিলনা।
বাবাঃ সাইকলোজিস্ট। চল বেলা হয়ে যাচ্ছে। নেক্সট কোনটা?
তোর স্কুল। মিত্রা আমার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
নির্মাল্য একটা ডাল ভেঙে দে।
নির্মাল্য সবাইকে দিল।
আমরা আবার সেই পথে চলেছি। মিত্রা লিড করছে। আমি সবার পেছনে। আমার মনটা এখানে নেই। তবু বুঝতে দেওয়া চলবে না। মিত্রা এখন বেশ পাকা পোক্ত হয়ে উঠছে। ওকে ফাঁকি দিতে হবে। ওরা প্রাণভরে সমস্ত আনন্দ উপভোগ করছে। হাঁসি মস্করা করছে। আমি মাঝে মাঝে যোগ দিচ্ছি। একসময় আমরা পৌঁছে গেলাম আমার স্কুলে।
স্কুলের টিউবওয়েলে সকলে মুখ ধুলাম। মিত্রা ওদের নিয়ে স্কুলের ভেতর ঢুকলো। সবাইকে গল্প বলছে। আজ কিন্তু মিত্রা আমার মতো করেই বলছে। ওর ইমোশানগুলো বেশ সুন্দর। তারপর বকুল গাছের তলায় এলো। মিত্রা ওদের দেখাল কি ভাবে বাঁশি তৈরি করতে হয়। সবাই মিলে লেগে পড়লো বাঁশি তৈরি করতে।
বুবুন আজ কিন্তু আমি সেফটিপিন নিয়ে এসেছি।
কোথা থেকে পেলি!
কাল রাতে বড়োমার হাত থেকে খুলে নিয়েছি।
বড়োমা বুঝতে পারেনি!
না।
ওরা এক একজনে তিনটে চারটে করে বাঁশি তৈরি করলো।
এক সঙ্গে সকলে বকুল বাঁশি বাজাচ্ছে।
হাসছে দৌড়ো দৌড়ি করছে, এর সঙ্গে ও খুনসুটি করছে। মনের বন্ধ দুয়ার হাঠ করে খুলে মুঠো মুঠো আনান্দে পরিপূর্ণ করে তুলছে নিজের মনকে।
আমি বললাম, চল একটু স্কুলের বারান্দায় বসি।
কেনরে? দেবাশিস বললো।
তুই কালকে বলছিলি না তোদের কি দায়িত্ব দেব।
টিনা আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকাল।
তুমি সত্যি আমাদের দায়িত্ব দেবে!
কেন তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছেনা?
চলো।
মাটির ওপর বসতে অসুবিধে হবে না?
কেন তুমি আমাদের ক্লাস ওয়ানে বসাবে।
বসতে চাইলে বসাব। তোমাদের অনিদা ওখান থেকেই তার জীবন শুরু করেছিল।
মিলি এসে হাতটা ধরলো। তাই চলো, আমরা রাজি।
আমরা সবাই গাছের তলায় এসে গোল হয়ে বসলাম।
মিত্রা, টিনা আমার দু-পাশে। টিনার পাশে মিলি তারপাশে অদিতি, দেবাশিস, নীপা, নির্মাল্য।
ওরা সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখে মুখে সামান্য উত্তেজনা।
টিনা।
বলো।
তোমায় যদি চাকরি ছাড়তে বলি তুমি ছেড়ে দেবে?
একমাস সময় দিতে হবে।
চাকরি ছেড়ে দিলে খাবে কি?
তুমি চাকরি দেবে।
মিলি?
টিনা চাকরি ছেড়ে দিতে পারলে, আমিও দেব।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
কিরে ওদের চাকরি দিবি?
আমি কেন দেব! তুই দিবি। আমাকে সই করতে বলবি, সই করে দেব।
দেবা শুনলি তোর বান্ধবীর কথা।
দেবা হাসছে।
অদিতি বললো। তুমি আমাকে কিছু বললে না?
তোমার কাছে একটু পরে আসছি।
ভুলে যেওনা যেন।
আমার এ্যাডের কি হবে?
ওটা নিয়ে তোমাকে ভবতে হবেনা। টিনা বললো।
দেবা আমার প্ল্যানটা বলছি ভালো করে শোন। তোমরাও, পারলে আমার সঙ্গে একটু আধটু ঝগড়া করবে।
তোমার সঙ্গে! টিনা বললো।
হ্যাঁ। আমি ভগবান নই, ভুল করতে পারি।
বলো।
আমি দামিনীমাসির ওখানে একটা এনজিও ফর্ম করবো, কেন কি বৃতান্ত তোমাদের পরে বলবো। তবে এনজিও-র মূল কাজ হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সচেতনতা।
মাসি, ইসলামভাই ছাড়া তোমরা থাকবে। নিজেদের কাজ করার পর সময় থাকলে ওখানে সময় দিতে হবে। হিমাংশু ফর্মেশনটা তৈরি করছে। তার আগে আমি অদিতি, মিলি আর টিনাকে আমাদের অফিসের এক একটা ব্রাঞ্চের মাথায় বসাবো। আমাদের অফিসের তিনটে ব্রাঞ্চ খুব প্রবলেম করছে।
আমার কথা শেষ হবার আগেই তিনজনে হই হই করে উঠে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে শুরু করলো।
সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত।
ওরে তোরা ছাড়, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মিত্রা বললো।
তারপর আমাকে নিচু হয়ে প্রণাম করলো।
আমার কি হবে। নির্মাল্য বড়ো বড়ো চোখ করে বললো।
তোর কপালে কাঁচকলা। মিলি বললো।
অনিদা হবে না। আমার একটা ব্যবস্থা করো।
আমি কথা শেষ করিনি।
দেবা হাসছে।
টিনা তোর ল্যাপটপটা থেকে আজই রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দেব। তাহলে আজ থেকে একমাস কাউন্ট হবে। মিলি বললো।
এবার আমাদেরটা বল। দেবাশিস বললো।
আমি এখানে ছশো একর জমি নিচ্ছি। হয়তো ওটা বাড়তেও পারে। আমি একটা কৃষি খামার তৈরি করবো। পাশাপাশি কান্ট্রিক্লাব। আরও বাই প্রোডাক্ট বেরবে।
দারুণ আইডিয়া।
তুই, নির্মাল্য সমস্ত ব্যাপারটার দায়িত্ব নিতে পারবি?
কি বলছিস তুই!
ঠিক বলছি। এর মার্কেটিং থেকে আরম্ভ করে সমস্ত কিছু। একটা প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি কর। ভাব কি করতে চাস। আমার আর হিমাংশুর হেল্প পাবি। আমি মনে মনে একটা ছবি এঁকে রেখেছি। মিত্রা সমস্ত প্রজেক্ট দেখে কমেন্ট পাস করবে। তার আগে ওকে জানাতে পারবি না তোরা কি করতে চাস।
আমার ভয় করছে।
কেন?
তিন/চারশো কোটি টাকার প্রজেক্ট! আমি হ্যান্ডেল করবো!
পারবি বলেই বলছি। নাহলে পাতি চাকরির অফার দিতাম।
দেবাশিস মাথা নিচু করলো।
কেন দেবাদা তুমি ভয় পাচ্ছো। অনিদা আছে। মাথায় রাখবে তোমার সব কাজেই তুমি অনিদার হেল্প পাবে। টিনা বললো।
সেটা ঠিক। আমি এ ধরণের কাজ আগে কোনওদিন করিনি।
অদিতিকে প্রেম করার আগে কি ভাবে মেয়ে পটাতে হয় জানতিস? কি ভাবে চুমু খেতে হয় জানতিস?
অদিতি, মিলি মাথা নিচু করে ফিক করে হেসে উঠলো।
এই তোর মটকা গরম হয়ে গেল।
ছাগলের মতো কথা বলবি না। পৃথিবীতে জন্মেই কেউ হাঁটতে শেখে না।
কবে শুরু করবি।
মাস ছয়েকের মধ্যে। এই কদিন যেখানে আছিস সেখানে থাকবি। মাঝে মাঝে এসে ডেভালপমেন্টের কাজ দেখবি। টোটাল প্ল্যান প্রোগ্রাম তৈরি করবি। নিজের টিম তৈরি করবি। আর মন যদি না চায় চাকরি ছেরে দিবি।
আমাকে একটু মেন্টালি প্রিপারেশন নিতে দে।
অনিদা, দেবাদা মেন্টাল প্রিপারেশন নিক আমাকে আমার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবে। আমি দৌড়তে শুরু করে দেব। নির্মাল্য বললো।
সত্যি, মিত্রাদি তোমার নামটা কেন ছাগল দিয়েছিলো এখন বুঝছি। অদিতি কপট রাগ করে বললো।
মিত্রা দেবার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
দেখছিস অনি সকলে চাটতে শুরু করে দিল।
তুই ভাব। আমার কোনও আপত্তি নেই। পারলে আমাকে একবার জানাস।
এই তো, খোঁচা মারলি।
আমাদের দায়িত্বগুলো একবার বলো। টিনা বললো।
তোমাদের এই মুহূর্তে কোনও পার্টিকুলার দায়িত্ব দেব না।
কিন্তু আমার অফিসের লোকদের বুঝিয়ে দেব তোমাদের আয়ু শেষ হয়ে এসেছে।
কি রকম! টিনা বললো।
ধরো আমাদের অফিসে এই মুহূর্তে এ্যাডম্যানেজার চম্পকদা। আমি তোমাকে এ্যাডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বানিয়ে দিলাম। তারমানে সমস্ত ক্ষমতাটা চম্পকদার হাত থেকে খাতায় কলমে তোমার কাছে চলে এলো। কিন্তু চম্পকদা তার জায়গায় বহাল তবিয়েতেই থাকবে। ঠিক তেমনি মিলি, অদিতিরাও একই পোস্ট হোল্ড করবে।
কি অদিতি তুমি কি তোমার বড়ের মতো ঢোক গিলবে?
ওর সঙ্গে আমাকে গোলাবে না। ও ওর মতো, আমি আমার মতো। কাজের জায়গায় আমি যা ডিসিসন নেব সেটাই ফাইন্যাল।
গুড। এই স্পীড না থাকলে কিছু করতে পারবে না।
সবচেয়ে বড়ো কথা তোমাকে সব সময় পাশে পাবো। এর থেকে আর বেশি কি চাই। অদিতি বললো।
ঠিক বলেছিস। আমাদের বসগুলো হারামী নম্বর ওয়ান। মিলি বললো।
এই। মিত্রা ধমক দিল।
সরি সরি মিত্রাদি। অন্যায় হয়ে গেছে। মিলি জড়িয়ে ধরলো মিত্রাকে।
সত্যি বলছি তুমি টিনাকে জিজ্ঞাসা করো। আমি, অদিতি, টিনা কি ভাবে কাজ করি সেটা আমরাই জানি।
ঠিক আছে। এবার তোদের বস যদি ওরকম করে। মিত্রা বললো।
তুমি আছো। সোজা চলে যাব তোমার কাছে।
সবাই হো হো করে হাসছে।
কবে থেকে যাব। টিনা বললো।
তোমাদের অফিসের কাজগুলো আগে গোছাও।
অফিসের কাজ গোছানর কিছু নেই।
তারমানে! তুমি ছাড়তে চাইলে ছেড়ে দেবে।
আমার জায়গায় আর একজন চলে আসবে।
আমাকে সাতদিন সময় দাও। এরমধ্যে অফিসে না পারো, বাড়িতে আসবে। মিত্রাদি তোমাদের অফিসের গল্প শোনাবে। আমাকে হয়তো নাও পেতে পারো। আগে গল্প শুনে নাও, কোথায় কোথায় সমস্যা তৈরি হয়ে আছে। তাহলে তোমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে। সেই ফাঁকে আমি তোমাদের তিনটে ঘর রেডি করি।
কিরে মিলি তাহলে আমাদের কাগজে কাজ করার স্বপ্নটা স্বার্থক হচ্ছে। অদিতি বললো।
সত্যি ভাবলেই কেমন গা ছম ছম করছে।
কেন!
তুমি যেদিন প্রথম তাজে এসে আমাদের সঙ্গে মিট করেছিলে। টিনাকে আমরা সকলে মিলে রিকোয়েস্ট করেছিলাম। তুই অনিদাকে আমাদের মনের ইচ্ছেটা বল। তোর কথা অনিদা ফেলতে পারবে না। অদিতি বললো।
টিনা আমাকে বলেনি।
তুমি সেই সুযোগ আমাকে দাওনি। টিনা বললো।
তুমি মাঠে খেলতে নামলে গোল করার সুযোগ তোমায় কেউ দেবে? পোজিশন মতো ঠিক ঠাক দাঁড়িয়ে তোমাকে সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে।
তুমি যদি কিছু মনে করতে। দেখো মেয়েটা কিরকম হ্যাংলা।
আমাকে মিত্রা মালিক বানিয়ে দেবার পর আমি যে তোমাদের কাছে ছুটে গেছিলাম। সেটা কি হ্যাংলামো ছিল।
আমি তোমার মতো কোনওদিন হতে পারব না।
তুমি আমাকে সবার সামনে চুমু খেতে পারবে?
টিনা মাথা দোলালো। পারবে না।
আমি মিলিকে চুমু খেয়েছিলাম কি করে।
অনিদা প্লিজ। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো।
তোমাকে তোমার ভেতর থেকে সেই আর্চটা বের করে আনতে হবে।
টিনা মাথা তুললো। আমি পারবো। করে দেখাব। তোমায় কথা দিচ্ছি।
এই তো, তোমার চোখ এই সময় ঠিক কথা বলছে।
টিনা মাথা দোলাচ্ছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম সন্দীপের ফোন। ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করলাম।
বল।
কোথায়?
গাছ তালায় বসে প্রেম করছি।
ম্যাডাম তোর সঙ্গে।
না।
কার সঙ্গে করছিস।
এখানে এসে একটা মেয়েকে পটালাম। সবে ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছি।
মিত্রা আমাকে চিমটি কাটছে। সবাই মুখে চাপা দিয়ে খিক খিক করছে।
গাণ্ডু।
ইস।
কিরে।
তোর বউ কি বলেছে?
বানান করে গালাগাল দিতে বলেছে।
ওরা আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না। সবাই জোড়ে হো হো করে হেসে উঠলো।
কিরে ওখানে কারা আছে!
সবাই তোর কথা শুনছে। এমনকি তোর মালকিন।
যাঃ।
জিভ বার করেছিস।
তোর কবে বুদ্ধি হবে বল।
বল কি বলছিস?
না, আমি এখন রাখছি। পরে কথা বলবো। ম্যাডাম কি ভাবলো বল।
আমি বানান করে বলি।
সন্দীপ হেসে ফেললো।
বল।
হ্যাঁরে নীপা ভট্টাচার্য তোর আত্মীয়া না?
কেন, ওখান থেকে ইঁট পেতেছিস।
অনিদা। নীপা চেঁচিয়ে উঠলো।
তুই সবাইকে আমার কথা শোনাচ্ছিস।
হ্যাঁ।
আমি কেটে দিচ্ছি।
তাতে তোর কাজ হবে? বল।
নীপার একটা ছবি লাগবে।
কেন। ওর ঘটকালি করবি।
শোন না।
বল।
ওদের রেজাল্ট আগামীকাল। তোর চেলুয়া একটু আগে ফোন করেছিল।
নীপার মুখটা কেমন বদলে গেল। মুখে ভয় ভয়।
কোথা থেকে!
কোথা থেকে জানি না। দুটোই আজ তিনদিন বেপাত্তা।
হাসলাম।
হাসিসনা। গাছে উঠিয়ে মই কেরে নিয়েছিস।
কি হয়েছে?
নীপা ওই ডিস্ট্রিক্টে মেয়েদের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে।
হোল ওয়েস্ট বেঙ্গলে এক থেকে কুড়ির মধ্যে ওর পজিশন সিক্সটিনথ।
নীপার চোখ বড়ো বড়ো, মিত্রা, অদিতি, টিনা, মিলি ওর কাছে উঠে গেছে। নির্মাল্য মিটি মিটি হাসছে।
সকাল বেলা গাঁজা খেয়েছিস।
তুই অরিত্রর সঙ্গে কথা বলে নে?
অরিত্র ব্যস্ত আছে।
তাহলে ছবি কোথায় পাব?
দ্বীপায়নের কাছে আছে। দেখ নীপার সঙ্গে মিত্রার অনেক ছবি আছে। না হলে তোর ই-মেল আইডি ম্যাসেজ করে দে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
লেখাটা লিখে দে।
নিউজ করবে অরিত্র, লিখব আমি।
অরিত্রকে পাব কোথায়। সব ফোনে ফোনে বলে খালাস। তাহলে নীপার একটা ইন্টারভিউ-এর ব্যবস্থা কর।
নীপা সামনে বসে আছে।
তুই ওর সামনে….!
শুধু নীপা নয়। সঙ্গে আরও চার সখী আছে। তার মধ্যে তোর ম্যাডামও।
আমি রাখছি তোকে পরে ফোন করবো।
এই নিয়ে তিনবার বললি।
তাহলে কি বলবো বল।
তুই এক কাজ কর, ম্যাসেজ কর। পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ফোনটা বন্ধ করতে না করতেই নীপা উঠে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
এ মা এই সময় কেউ কাঁদে নাকি।
তুমি আমার জীবনটাকে বদলে দিলে।
আমি কোথায় বদলালাম। আমি উপলক্ষ মাত্র, পরীক্ষাটা তুমি দিয়েছ।
ওরা সকলে মিলে নীপাকে বোঝাল।
মিত্রা, বড়োমাকে ফোন করে খবরটা দিল।
তোরা কোথায়?
আমরা এখন বুবুনের স্কুলে।
সবাই আছিস?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে আমি এদের পাঠাচ্ছি।
আমরা নিজেরা বসে কথা বলছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম চিকনা, অনাদি, বাসু, ইসলামভাই, সঞ্জু এসে হাজির। হাতে মিষ্টির হাঁড়ি।
ইসলামভাই গাড়ি থেকে নেমেই নীপাকে কোলে তুলে নিলো। নীপার ছোট্ট শরীরটা শূন্যে ভাসছে।
নীপা চেঁচিয়ে উঠলো পড়ে যাব দাদাভাই।
স্কুল চত্বরের ওই ছোট্ট আঙিনায় হই হই কাণ্ড। সবাই রসগোল্লা খেলাম।
ইসলামভাই চেঁচিয়ে উঠলো, চিকনা।
বলো ভাইদা।
হাটে যা মিষ্টি আছে বেশি বেশি করে নিয়ে আয়। চলো এখানে আর দাঁড়াব না।
ইসলামভাইয়ের পেছনে নীপা, মিত্রা বসলো। আমরা সবাই ভাগা ভাগি করে সবার পেছনে বসে চলে এলাম।
খামারে উঠতে না উঠতেই কাকীমা, সুরোমাসি ছুটে এলো।
ঘরে মহা উৎসব। সবাই উৎসবের অংশীদার।
দাদা সন্দীপকে ফোন করে কনফার্ম হলো।
নীপার পাশের খবরে চারদিকে উৎসবের রোশনাই।
হিমাংশু ঠিক সময়ে এলো। চিকনা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। আমি বারান্দার বেঞ্চিতে বসেছিলাম। উঠে গেলাম। ওর সঙ্গে যে ছেলেটি এসেছে তাকে দেখতে বেশ ভালো। অনেকটা সিনেমা আর্টিস্টের মতো। কাছে যেতেই হিমাংশু পরিচয় করিয়ে দিলো। অতীন্দ্র সরকার।
আমি আপনার নাম বহুবার হিমাংশুদার মুখ থেকে শুনেছি। আমাকে সবাই কিন্তু পিকলু বলে ডাকে।
বাঃ তোমার নিকনেমটা বেশ মিষ্টি।
পিকলু মাথা নিচু করে মিটি মিটি হাসছে।
দাদা, তুমি নয় তুই।
হাসলাম।
আসতে কোন অসুবিধে হয়নি। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
একেবারে না। পিকলু গাড়ি ড্রাইভ করলো। খারাপ চালায় নি।
চল আমার স্যুইট হোমে।
আর সব কোথায়?
আজ নীপার রেজাল্ট বেরিয়েছে। ডিস্ট্রিক্টে ফার্স্ট। এমনিতে সিক্সটিনথ পজিসন। তাই সবাই ওই বাড়িতে হই হই করছে।
বাঃ দারুণ রেজাল্ট।
তোর সেই সব নামী দামী বন্ধুরা।
সব আসবে একটু সবুর কর।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, চিকনা একটু চা বলে আয়।
এটাই চিকনা!
হ্যাঁ।
এতোটা রাস্তা ও পথ দেখিয়ে নিয়ে এলো। নামটাই জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আমি কি বেয়েকুফ দেখ। তোর সেই রাইস মিলের মালিক?
মালিক মানে! তুই কি বলতে চাস।
হিমাংশু হাসছে। স্যার।
ঠিক বলেছিস।
চিকনা লজ্জায় মাটিতে মিশে যায়।
তোকে রেবা একা ছাড়লো?
আসার সময় বললো এবার একলা যাচ্ছ যাও। মাথায় রাখবে পরের বারে আমি সঙ্গে যাব, অনিদাকে বলে দিও।
সঙ্গে আনতে পারতিস—
অনেক হেপা বুঝলি—
আয়।
আমি আমার বাড়ির বারান্দায় উঠলাম। হিমাংশু চারিদিকে অবাক হয়ে দেখছে।
পুরোটা মাটি!
হ্যাঁ। কলকাতায় লোহা সিমেন্ট বালি স্টোনচিপ দিয়ে ছাদ ঢালাই হয়। আমরা এখানে বাঁশের ওপর মাটি ফেলে ঢালাই করি।
ভেঙে পড়ে যায় না!
বাবা বাড়িটা বানিয়েছিলেন। ধরে নে আমার বয়স—
পিকলুর চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসবে।
দারুণ লাগছে হিমাংশুদা। কবে সেই ছোটো বেলায় ভূগোলে পড়েছিলাম। গ্রামের লোকেরা মাটির বাড়িতে থাকে। আজ চাক্ষুষ দেখছি।
পিকলু তুমি চ্যার্টার পাশ করে গেছো?
হ্যাঁ দাদা।
এ বছর কস্টিংটা ফাইন্যাল দিলো। হিমাংশু বললো।
হিমাংশুকে ছেড়ে কবে পালাবে?
হিমাংশুদাকে ছেড়ে যাবো না। হিমাংশুদার কাছে আর্টিকেল ছিলাম। এখন হিমাংশুদার সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করবো।
আমি ওদের সঙ্গে নিয়ে মাটির শিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম। ওদের চোখের খিদে আর মিটছে না। নিজের ঘরের দরজা খুলে ভেতরে এলাম।
বুঝলি হিমাংশু এটা আমার ঘর।
হিমাংশু আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
অনির সঙ্গে অনির বাড়ি ঘর দোর কিছু মেলাতে পারছিস না?
সেটা তো আছেই, তার সঙ্গে ভাবছি, আমিও গ্রামের ছেলে। উড়িষ্যাতে আমাদেরও গ্রামের বাড়ি আছে। চাকরি করার দৌলতে বাবা শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। পরে অবশ্য নিজে ভুবনেশ্বরে বাড়ি করেন। আমার দেখা গ্রামের সঙ্গে তোর গ্রামটা ঠিক মিলছে না। আমাদের গ্রামটা অনেক বেশি আধুনিক।
আমি হাসলাম।
নিচে অতো বস্তা কিসের?
ধানের। এখন ধান ওঠার মরশুম তাই ধান কেনা চলছে।
তুই কাজ শুরু করে দিয়েছিস!
অনেকদিন। চিকনা আর নীপা দেখে।
তুই বেশ অঙ্ক কষে চলছিস।
তা বলতে পারিস। তোর এখন অনেক কাজ। দফায় দফায় মিটিং—
তুই যে এমনি এমনি ঘুরতে ডাকিসনি তা জানি।
বোস। সোফাটা দেখিয়ে দিলাম।
তোর এখানে কারেন্ট আছে।
আছে। সেটা অর্ধেক সময় থাকে না। তবে জেনারেটর আছে। তোর অসুবিধে হবে না।
আমার প্রিন্টার, মেশিন সব গাড়িতে।
ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
চিকনা তাই বললো। এমনকি গাড়ির চাবিটাও নিয়ে নিল।
ওখানেই কো-অপারেটিভের জমিটা নিয়েছি। কাজ শুরু হয়ে গেছে।
কিরে এতো আওয়াজ কিসের! ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি।
ভূমিকম্প নয়, দঙ্গল বেঁধে সব আসছে।
কথা শেষ হলোনা, সবাই চলে এলো। ঘর ভড়ে গেল।
যে যার মতো বসে পরলো।
এর মধ্যে কাকে কাকে চিনতে পারছিস? হিমাংশুর দিকে তাকালাম।
ম্যাডাম ছাড়া কাউকে চিনতে পারছি না। বসুন ম্যাডাম।
কখন এলেন?
এই তো সবে মাত্র এসে বসেছি। ও কাজের ফর্দ হাতে ধরাচ্ছে।
এরই মধ্যে?
আর বলবেন না। আমাকে পিষে মেরে দেবে।
তুই সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
তুই আলাপ করিয়ে দে।
তুই সবাইকে গল্পে চিনিস। দেখিস নি।
তোর সেই কলেজের ব্যাচ।
হ্যাঁ।
অনিদা এটা কিরকম হলো?
মিলির দিকে তাকালাম।
তুমি প্রমিস করেছিলে কাউকে বলবেনা। মিলি চোখ পাকিয়ে বললো।
আচ্ছা ফুচকা খেতে কে না ভালোবাসে, বলো।
তাবলে তুমি….।
অনেকদিন আগে বলেছি। বিশ্বাস করো। হিমাংশুকে তোমরা জিজ্ঞাসা করতে পার।
মনে হয় যেদিন আপনাদের সঙ্গে ও তাজে মিট করেছিল। হিমাংশু বললো।
তুমি হিমাংশুদাকে সব বলো।
ও আমার আইনের ডাক্তার। ওকে না বললে চলে।
আমি একে একে সবার সঙ্গে হিমাংশুর পরিচয় করিয়ে দিলাম শেষে পিকলুর সঙ্গে। পিকলু প্রথমে একটু থতমতো খেয়ে গেছে। এতো বড়ো বড়ো সব বিগ পার্সোনালিটি। এখানে সব কেমন ভাবে আছে। উঠে এসে সকলের সঙ্গে হ্যান্ডসেক করলো।
নিচ থেকে অনাদি চেঁচিয়ে উঠলো, অনি অনি বলে।
মিত্রাকে বললাম, দেখ তো কি বলে—
মিত্রা বেরিয়ে গেল।
ম্যাডাম, হিমাংশুদার জিনিষপত্র কোথায় রাখবো?
আমি ঘর থেকেই চেঁচিয়ে বললাম, এখানে নিয়ে আসতে বল।
মিত্রা শুধু বললো, শুনতে পেয়েছো।
কোনও প্রতিউত্তর পেলাম না।
কিছুক্ষণ পর বাসু, অনাদি এলো।
চিকনা কইরে?
ওবাড়িতে বড়োমার কাজ করছে।
আমি হিমাংশুর সঙ্গে বাসু, অনাদির পরিচয় করিয়ে দিলাম। বুঝলি হিমাংশু, অনাদি এই গ্রামের মুখ্যমন্ত্রী। আর বাসু উপ-মুখ্যমন্ত্রী।
সবাই হো হো করে হাসছে।
এই চাটতে শুরু করলি। অনাদি বললো।
বারে তোর পোর্ট ফলিওটা বলবো না।
তা বলে মুখ্যমন্ত্রী।
বাসু, অনাদি হিমাংশুর সঙ্গে হাতে হাত রাখলো। পিকলু নিজে পরিচয় করে নিল।
বুঝলি হিমাংশু এরা কিন্তু এক একজন কো-অপারিটেভের মাথা।
তুই বেশ বড়ো জাল ফেলেছিস।
জাল তো ফেলেছি, মাছ উঠবে কিনা বলতে পারছি না।
উঠবে। আমি আস্তে আস্তে যেটুকু লক্ষ করলাম হিসাব করে একটু খেলতে হবে। তোর স্বপ্নের জায়গা বলে কথা।
তা বলতে পারিস।
নীপা চা নিয়ে এলো।
হিমাংশুকে দেখিয়ে বললাম, এই সেই মেয়ে যে এই বছর পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে।
নীপা কাঁই কাঁই করে উঠলো।
কেন তুই তোর অনিদার কথায় খেপে যাস, ও কোনওদিন সোজা কথা সোজা করে বলে। মিত্রা বললো।
নীপা সবার ছোটো, লাইনদিয়ে সকলকে প্রণাম করলো।
মিলি ওর কোমরটা একটু তেল মালিশ করে দাও।
দেখছো মিত্রাদি দেখছো। নীপা আবার ফরফর করে উঠলো।
চা খেয়ে স্নান করে নে। খাওয়া দাওয়ার পর দুপুর থেকে ফেজে ফেজে বসবো। রবিবার সকালে বেরিয়ে যাব মাথায় রাখিস।
চা খেতে খেতে টুক টাক গল্প খুনসুঁটি। হাঁসা হাঁসি। এরই মধ্যে দেখলাম মিলির সঙ্গে পিকলুর চোখে চোখে কথা হচ্ছে। মাঝে মাঝে ইংরাজীতে ঝড় উঠছে। আমিও যোগ দিচ্ছি। বাসু-অনাদির চোখ ছানাবড়া।
অনাদিকে বললাম হিমাংশুর ঘর।
আর নেই। এবার তুই ব্যবস্থা কর।
সবাই হাসছে।
ভালো করেছিস। আজ আমি তিন বউকে নিয়ে শোব।
তার মানে। মিত্রা বড়ো বড়ো চোখ করলো।
তোর আপত্তি আছে?
অবশ্যই।
তাহলে আমরা তিনজনে একঘরে শুই তোরা তিনজনে এক ঘরে শো।
সেটা হতে পারে।
সমস্য মিটে গেল।
মিলির দিকে তাকিয়ে বললাম। তোমরা দুজনে ওপরে চলে এসো। আমি হিমাংশুর ঘরে ঢুকে পরবো।
না না তুই বরং ওপরে থাক। হিমাংশু পিকলু নিচে।
সেই তিন বউ।
তা হোক তবু তুই থাকবি আমাদের সঙ্গে।
মিলি, টিনা মুচকি মুচকি হাসছে।
হিমাংশুও হো হো করে হাসছে।
তুই হাসলি।
ম্যাডামের কথা শুনে। ম্যাডাম তোকে চোখের আড়াল করতে চাইছে না।
আসর ভাঙলো।
দুটো দিন খুব চাপের মধ্যে কাটলো। শুধু মিটিং আর আলোচনা। একবার দাদাদের সঙ্গে তো আর একবার নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই, বাসু, অনাদিদের সঙ্গে। কখনও ডাক্তারদার সঙ্গে নার্সিংহোম নিয়ে। মাঝে একবার জায়গাটা সবাই মিলে হই হই করে দেখে এসেছি।
পারদপক্ষে মিত্রাকে কোনও আলাদা করে সময় দিতে পারিনি। শুধু মিত্রা বললে ভুল হবে ওদের কাউকেই সময় দিতে পারিনি। ওরা ওদের মতো ঘুরেছে। প্ল্যান, প্রোগ্রাম করতে করতেই সময় চলে গেছে। আমার কাজ কর্ম দেখে পিকলুর চোখ কপালে উঠে গেছে। হিমাংশু ওকে বার বার বোঝাবার চেষ্টা করেছে, তুমি খুব ভাল করে বুঝে নাও। আমি এখানে খুব বেশি আসা যাওয়া করতে পারবো না। তোমাকে আসতে হবে, সব কিছু একাহাতে সামলাতে হবে।
এনজিওর ব্যাপারটা নিয়েও হিমাংশুর সঙ্গে বসেছি। হিমাংশু মাঝে আমাকে বলেছে তুই এতগুলো মাথায় রেখে চলবি কি করে? আমি হাসতে হাসতে বলেছি, আমি এক সঙ্গে ছটা জমজ বাচ্চার বাপ হবো। ওরা হেসেছে আমার কথা শুনে।
কো-অপারেটিভ নিয়ে আমার সঙ্গে সকলের একটু মত পার্থক্য হয়েছিল। কেউই আমার কথা মানতে চায়নি। হিমাংশু পর্যন্ত দাদাদের ফরে কথা বলেছিল। কিন্তু ডাক্তারদাদার মধ্যস্থতায় সেটা মিটে যায়।
ডাক্তারদাদা দেখলাম এই ব্যাপারে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিল।
এককথায় পোরখাওয়া মানুষ। জীবনে অনেক ঝড় সামলেছে। কো-অপারেটিভের ব্যাপারে নিরঞ্জনদা, অনাদি, বাসু পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। ইসলামভাই তার পাওয়ার মল্লিকদাকে দিল। ফলে দাদা, মল্লিকদা, নিরঞ্জনদা টাকা পয়সার ব্যাপারে সইয়ের অথরিটি। ইসলামভাই সমস্ত ব্যাপারটা দেখাশুনা করবে।
আমি ওভার অল দেখাশুনা করবো। আমাদের ইনটারেস্টের বহর দেখে মিলিরা সবাই ফিক্সড করতে চাইল। হিমাংশু ওদের বললো আগামী সপ্তাহে কাগজপত্র রেডি করে দিই, তারপর ফিক্সড করবেন।
তবে ছোটো ছোটো লোন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। এই দায়িত্ব অনাদি আর বাসুর ওপর বর্তালো। লোক যা যা লাগবে অনাদি, বাসু নেবে, নিরঞ্জনদা কো-অর্ডিনেট করবে। আমি শুধু একটা কথাই নিরঞ্জনদাকে বললাম, পারলে খুব তাড়াতাড়ি দলমত নির্বিশেষ ফ্লারিশ করতে আরম্ভ করো। মাথায় রাখবে রিকভার যেন হয়। আমার উদ্দেশ্যটা কি তোমাকে আলাদা করতে বলতে হবে না।
নিরঞ্জনদা হাসলো।
বড়োমা খিঁচিয়ে উঠলো। দাঁত বার করে হাসিস না, এসে হিসেব নেব মাথায় রাখিস।
এর মধ্যেই একটা বিষয় লক্ষ করলাম সময় পেলেই মিলি, পিকলু আলাদাভাবে ঘুরছে, দু-জনে দু-জনকে সময় দিচ্ছে। মিত্রাকে বললাম ব্যাপারটা একটু দেখ। লাভ এজ ফার্স্ট সাইট কিনা।
এখানে যাত্রার গল্পটা লিখতে হবে।
একদিন রাতে যাত্রা দেখতে গেলাম। দারুণ এনজয় হলো। আমার স্কুলের বান্ধবী সৌমির সঙ্গে দেখা হলো। ও এখনো বিয়ে করেনি। মিত্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। ও এখন আমাদের স্কুলের সাময়িক শিক্ষক। অনেক দায়িত্ব। বিয়ে করবেনা। বিধবামাকে কে দেখবে। বললাম পরের বার এসে তোর সঙ্গে দেখা করবো। ওর মোবাইল নম্বর নিলাম।
খাওয়া দাওয়া, হৈ হুল্লোড়, আর কাজ। দুটো দিন কোথাদিয়ে যে কেটে গেল, বুঝতে পারলাম না। মনে হলো এইতো সকাল হলো। এরি মধ্যে রাত্রি হয়ে গেল!
ফাঁকে ফাঁকে অর্ককে ফলোআপ করেছি। বিষয়টা জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। হিমাংশুকে বলেছি আগামী শুক্রবার মিত্রাকে রেস্ট্রি করবো, গিয়েই সব ব্যবস্থা করবি।
ওখানকার কাজ চুকিয়ে আমরা সবাই কলকাতা ফিরে এলাম। আসার সময় নীপাকে সঙ্গে করে নিয়ে এলাম। মিত্রার নার্সিংহোমে একবার ঢুকলাম। মিত্রা সকলের সঙ্গে ডাক্তারদাদার আলাপ করিয়ে দিল। কেউ কেউ ডাক্তারদাদাকে নামে জানতো কিন্তু পরিচয় ছিল না। কেউ আবার ডাক্তারদাদার ডাইরেক্ট ছাত্র।
হিমাংশু সকলকে নতুন মালিকানার মটিভেশন বুঝিয়ে দিল। ছোট্ট মিটিং। ডাক্তারদাদা সমস্ত খোঁজখবর নিয়ে নিলেন। এই নার্সিংহোমের দায়িত্ব যাঁর ওপর আছে তাকে একবার কলকাতায় ডেকে পাঠালেন।
ফেরার সময় খুব আনন্দ হলো। দেবাদের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। নিরঞ্জনদা ধাবা থেকে বিদায় নিল। আমরা কলকাতার পথে।
আমি বড়োমা, ছোটোমা, মিত্রা, ইসলামভাই, ভজু একটা গাড়িতে। দেবারা দেবাদের গাড়িতে। দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা একটা গাড়িতে। হিমাংশুরা ওদের গাড়িতে।
দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরোবার সময় দামিনীমাসিকে ফোন করলাম।
বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকাল।
কিরে এখন কোথায়?
হরিশ মুখার্জীতে ঢুকছি।
আয় সব রেডি করে রেখেছি।
ঠিক আছে।
বড়োমা, ছোটোমা আগে কোনওদিন দামিনীমাসিকে দেখেনি। আমার মুখ থেকে দাদার মুখ থেকে মাসির সম্বন্ধে যা শুনেছে। ইসলামভাইয়ের সঙ্গে দামিনীমাসি যখন কথা বলেছে, তখন দামিনীমাসির গলা শুনেছে।
বড়োমা একটা কথাও বললো না।
আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির গেটে হাজির হলাম। ভজুরাম নেমেই গেটের সামনে ডাকতে শুরু করে দিল, ছগনদাদা গেট খোলো।
ছগনলাল গেট খুললো।
ভজুরাম সবার প্রথমে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে গেল।
আমরা ভেতরে এলাম। সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামলো।
দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা বাড়ির হাল দেখে একটু অবাক। একবার আমার মুখের দিকে তাকায়। একবার বাড়িটার দিকে তাকায়। বাড়ির একপাশটা চটা ওঠা একপাশটা একটু রং হয়েছে।
দামিনীমাসি এগিয়ে এসেছে।
আমি হাসলাম।
আজও দামিনীমাসির পরনে লালাপাড় শাড়ি। সৌম্য শান্ত মুখমণ্ডল। আজ মাসিকে যেন গতো দু-দিনে যেমন দেখেছি তার থেকেও আরও বেশি সুন্দর লাগছে।
ভজু গিয়ে দামিনীমাসিকে প্রণাম করেই জড়িয়ে ধরলো।
চলো বড়োমা, ছোটোমাকে দেখবে চলো।
দামিনীমাসির চোখ জলে ভড়ে উঠলো।
ইসলামভাই চেঁচিয়ে উঠলো, এই তো আবার শুরু করে দিলে।
দামিনীমাসি এসে বড়োমা, ডাক্তারদাদা, দাদাকে প্রণাম করলো।
থাক থাক ভাই। বড়োমা, দামিনীমাসির হাত দুটো ধরে ফেললো।
বাবাঃ তোমার গলা সেদিন শুনছিলাম। ভয়ে একেবারে কাঠ। কই আজ দেখে তেমন মনে হচ্ছে না। তাই নারে মুন্না?
বড়োমার কথা শুনে মাসি হাসছে।
যারা কাজ করছে দেখলাম তারা কমবেশি ইসলামভাইকে চেনে। এসে এসে তারা ইসলামভাইকে সেলাম আলেকম সালাম করে যাচ্ছে।
দাদা আমার দিকে তাকিয় বললো, তুই এসব কি শুরু করেছিস?
তারপর ইসলামভাইয়ের দিকে তাকিয়ে, কই, তুমি তো বলোনি আমাকে!
এটা অনি স্পেশাল। কেন কি বৃত্তান্ত অনি উত্তর দেবে। ইসলামভাই বললো।
চলো চলো ভেতরে চলো। আমি বললাম।
আমি তিনটে ঘর রেডি করতে পেরেছি অনি। দামিনীমাসি বললো।
যথেষ্ট। এই নাও তোমার মিত্রা।
দামিনীমাসি এগিয়ে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিত্রা প্রণাম করতে যাচ্ছিল দামিনীমাসি ওর হাতটা ধরলো। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিল। না মা তোর প্রণাম আমি নিতে পারবো না।
কেন!
তুই অনির বৌ। আমার বুকে থাকবি।
আমরা সবাই এসে বসার ঘরে বসলাম।
কবিতা সরবতের গ্লাস ট্রেতে করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।
বড়োমা।
বড়োমা আমার দিকে তাকাল।
কবিতা।
এটা কবিতা! সেদিন ওর ওইরকম গলারস্বর!
কবিতা সেন্টার টেবিলে সরবতের ট্রে নামিয়ে সকলকে প্রণাম করলো।
মাসি আমার ঘর রেডি। মিত্রা জিজ্ঞাসা করলো।
ওপরে তোর আর ছোটোর ঘর রেডি করেছি। নীচে এই ঘরটা রান্নাঘর আর দাদার ঘর।
খাবার কি আছে মাসি। বেরবো। আমি বললাম।
তুই কোথায় বেরবি! বড়োমা আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল।
আমাকে এখন দু-তিন দিন পাবে না।
তারমানে! প্রত্যেকদিন বাড়ি ফিরবি। ছোটোমা বললো।
তোমার মেনুটা বলো। মাসির দিকে তাকালাম।
খাবার সময় দেখবি।
আমায় খেতে দাও কেটে পরি।
তোর কোথাও যওয়া হবে না। ছোটোমা বললো।
প্রচুর কাজ, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।
আমরাও একবার অফিসে যাব, কি বল মল্লিক। দাদা বললো।
আমাকেও বেরতে হবে। ইসলামভাই বললো।
তোরা সকলেই বেরিয়ে যা না। ছোটোমা চেঁচিয়ে উঠলো।
তোমরা বসো আমি আসছি।
তুই আগে যাবি না। আমি যাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
তুই ছোটোর ঘরে যা।
তুই যা।
ডাক্তারদাদা সোফার একধারে বসে আমার মুখের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি অপেক্ষা না করে বেরিয়ে এলাম। নিজের ঘরে ঢুকে আমার চোখের পলক পরছে না। মাসি দারুণ সুন্দর রং করেছে আমার ঘরটা। হাল্কা কচি কলাপাতা রং। বাথরুমে সাদা টাইলস বসিয়েছে। একবারে ধব ধবে সাদা। আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে ঘরটার। কিন্তু টেবিলটা যেমন অগোছালো ঠিক তেমনি আছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম টিনা ফোন করেছে।
হ্যালো।
বলো টিনা।
বাড়ি পৌঁছলাম।
ওরা?
সবাই পৌঁছেগেছে, নির্মাল্য আমাকে শেষে নামাল।
নির্মাল্য চলে গেছে?
না আমার ঘরে বসে।
আমার অজ গ্রামটা তোমাদের কেমন লাগলো?
তুমি এলে তোমাকে বলবো।
ঠিক আছে দেখি সময় করতে পারি কিনা।
তারমানে!
কলকাতায় আসা মানে আবার মূল শ্রোতে মিশে যাওয়া, কোথায় টেনে নিয়ে যায় দেখি।
টিনা খিল খিল করে উঠল।
রাখি।
আচ্ছা।
আলনা থেকে টাওয়েলটা কাঁধে নিলাম। গেঞ্জি প্যান্ট খুলে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ভাল করে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলাম। আলমাড়িটা খুলে একটা প্যান্ট গেঞ্জি বার করে নিলাম। দেখলাম যেখানে যা রেখে গেছিলাম সব ঠিক আছে। সব কিছু ঠিক ঠাক পরে নিচে নেমে এলাম।
দেখলাম খাবার সাজান হয়ে গেছে টেবিলে। আমার আগেই মিত্রা রেডি হয়ে গেছে।
তুই একটা মেয়ে।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
ঠিক আছে, ঠিক আছে পরে বলিস। সবার সামনে বলতে হবে না।
নীপা হাসছে। বড়োমা, ছোটোমা রান্নাঘরে।
ভজু।
যাই অনিদা।
ভজু এলো।
কিগো।
শাকের আঁটি গুলো নামিয়েছিস?
হ্যাঁ।
দামিনীমাসির দিকে তাকালাম।
আমি দেখেছি।
পছন্দ।
দামিনীমাসি হাসছে।
কিগো ছোটোমা চারটে জায়গা!
তোরা চারজন খেয়ে আগে বেরো, তারপর আমরা সবাই খাব।
মিত্রা।
আমি সব টেস্ট করে নিয়েছি।
বড়োমা?
বল।
রাতে কি এ বাড়িতে না ও বাড়িতে।
এখনও কিছু ঠিক করিনি।
আমি কিন্তু নাও ফিরতে পারি।
কেন? ছোটোমা বললো।
দরকার আছে।
তুই ফিরে আসবি।
কথা দেব না।
একিরে, মিত্রা একা থাকবে।
নীপা আছে।
তুই কি সেই জন্য নীপাকে নিয়ে এসেছিস?
হ্যাঁ গো ডাক্তারদাদা কোথায় খাবে?
আগে আমার কথার উত্তর দে।
দেওয়া হয়ে গেছে।
তুই ফিরে আসবি।
ঠিক আছে।
ডাক্তার স্নান করে আসছে। বড়োমা বললো।
আমরা চারজন খেতে বসেছি। টেবিলের একদিকে আমি, ইসলামভাই আর একদিকে মল্লিকদা, দাদা। দামিনীমাসি ফ্রায়েড রাইস আর চিকেন করেছে। ঘপা ঘপ খেতে শুরু করলাম, খেতে ঠিক ইচ্ছে করছে না। মিত্রা দুটো চিকেন তুলে নিল। আমি কিছু বললাম না। ওরা সবাই লক্ষ্য করেছে। ছোটোমা একবার মুখ টিপে হাসলো।
তোমার সঙ্গে নেক্সট কবে দেখা হচ্ছে। ইসলামভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম।
তুই যখন চাইবি।
বুঝেছি।
এরই মধ্যে বুঝে গেলি!
হ্যাঁ।
তোমরা অফিসে যাচ্ছো? দাদাকে বললাম।
হ্যাঁ।
আমি খুব তাড়াতাড়ি খাচ্ছি।
তুই যে আজকের কাগজে লেখাটা ছাপলি….?
ওটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
তাড়াহুড়োর চোটে পুরোটা খেতে পারছি না। মিত্রার দিকে তাকালাম। খেয়ে নিবি?
তোর ওঠার অপেক্ষায়।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
কিরে তুই কিছুই খেলি না! বড়োমা কাছে এসে দাঁড়ালো।
অনেক খেয়েছি, আর ভালো লাগছে না। রাতে কোথায় থাকছো, এ বাড়িতে না ও বাড়িতে আমাকে একবার জানিয়ো।
তোর কি খুব তাড়া? ইসলামভাই বললো।
খুব। পেছনে লোক লাগিয়ো না। প্রইভেট বাসে করে ঘুরবো। ধরে ফেলবো।
দামিনীমাসি, ইসলামভাই হো হো করে হাসছে।
মিত্রা একবার ইসলামভাইয়ের দিকে তাকাল।
তুই একটা মালিক। দামিনীমাসি বললো।
সেই জন্য প্রাইভেট বাস।
দাঁড়ালাম না। মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলাম। মিত্রা গেট পর্যন্ত এলো। ঘ্যানর ঘ্যানর। রাতে ফিরে আয়। যত রাত হোক।
দেখি।
বেরিয়ে এলাম।
প্রথমেই অর্ককে একটা ফোন লাগালাম।
হ্যাঁ দাদা। গলাটা খুব নিচু স্বরে।
কোথায়?
তোমায় পরে রিং ব্যাক করছি।
ঠিক আছে।
সন্দীপকে ফোন লাগালাম।
ফিরে এসেছিস?
হ্যাঁ।
অফিসে আসবি?
জরুরী কিছু আছে?
আছে।
বল।
রাজনাথের সিএ এবং পিএ তোকে তিন চারবার খুঁজে গেছে।
তুই বলিসনি ফোনে কথা বলে নিন।
বলেছি।
কি বলছে?
তোর সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলতে চায়।
কি বলেছিস?
মঙ্গলবারের আগে হবে না।
দেখে কি মনে হচ্ছে?
খুব টেনসনে ভুগছে।
কবে থেকে আসছে?
আজই প্রথম এলো। সকাল থেকে চার বার আসা হয়ে গেল। শেষে আমার সঙ্গে দেখা করে কথা বললো।
আর কোনও ফোন ফান?
আপাতত ঠিক আছে।
মিঃ ব্যানার্জী।
কোনও সারাশব্দ নেই।
মঙ্গলবার মালটা বেরবে মাথায় রাখিস।
ঠিক আছে। তুই আসছিস তো?
দেখি। দাদারা যাচ্ছে।
আচ্ছা।
বাসে উঠলাম, সোজা পিলখানায় এসে নামলাম। অর্কর কথা মতো সেই চায়ের দোকানটা প্রথমেই খুঁজে বার করলাম। তারপর ওমপ্রকাশকে একটা ফোন লাগালাম।
তুই কোথায়?
দাদা আমি একটা কাজে বেরিয়ে এসেছি।
কেন?
তোমার কাছে একজনকে পাঠাচ্ছি, ও তোমাকে আকিবের ঠেকে নিয়ে যাবে।
আমি আকিবকে চিনি।
খুব ভাল করে চেনো। অবতারের সঙ্গে পার্টারশিপে ওই তল্লাটের গ্যাংটা চালায়।
ডানহাতের আঙুল কাটা?
হ্যাঁ হ্যাঁ।
ওর নাম তো ছোট্টু।
নাম বদলে নিয়েছে।
আমি চায়ের দোকানে বসে আছি।
ঠিক আছে, আমি ওকে পাঠাচ্ছি। তুমি পাঁচমিনিট বসো।
এই সব কাজে এইরকম চায়ের দোকানের একটা বিশেষ ভূমিকা থাকে। শুধু শুধু বসা যায় না। বাধ্য হয়ে এক ভাঁড় চা খেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। আমি এই তল্লাটের অপরিচিত মুখ। তাই অনেকেই চোরা চোখে আমাকে দেখছে।
একটা ছেলে বাইকে করে চায়ের দোকনটার সামনে এসে থামলো।
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। সেদিন ওকে রাতের বেলা বাড়িতে দেখেছি। রতন নেপলা নেপলা বলে ডাকছিলো।
তুই!
তুমি যেখানে যেতে চাও, আমি নিয়ে যাচ্ছি।
তুই জানলি কি করে?
তুমি চলো, তারপর বলছি।
চায়ের দোকানের পয়সা মিটিয়ে আমি ওর বাইকের পেছনে চেপে বসলাম। ও আমাকে গলি তস্য গলির ভেতর দিয়ে লাইনের ধারে একটা ঝুপরিতে নিয়ে এলো। আমি বাইক থেকে নামলাম।
ভেতরে এসো।
নেপলা আমার আগে, আমি নেপলার ঠিক পেছনে।
প্লাসটিকের ছেড়া পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।
দেখলাম ঝুপরি ঘরের একপাশে রতন, আবিদ বসে আছে। পাশে আকিব।
রতন আমাকে দেখে মাথা নিচু করলো। আবিদ হাসছে। আকিবের মুখ ছোটো হয়ে গেছে। আমাকে দেখা মাত্রই আবিদ বলে উঠলো—
বিশ্বাস করো অনিদা।
রতনের দিকে কট কট করে তাকালাম। আমি এখানে আসবো তোরা জানলি কি করে?
তুমি বসের সঙ্গে কথা বলো।
আমি পকেট থেকে ফোনটা বার করার আগেই বেজে উঠলো। দেখলাম ইসলামভাই।
আমি ফোনটা নিয়ে ঝুপরির বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম নেপলা দাঁড়িয়ে আছে।
নেপলা জানালো বুঝি আমি পৌঁছে গেছি।
ইসলামভাই হাসছে।
বলো।
আমি জানতাম, তুই ওখানে যাবি।
আমার মোবাইল থেকে ম্যাসেজগুলো ট্রান্সফার করে নিয়েছো।
মিথ্যে বলবো না। মামনি হেল্প করেছে।
এখন থেকে মোবাইল টেবিলের ওপর পড়ে থাকবে, সিমকার্ড আমার পকেটে থাকবে।
তুই রাগ করিস না। আমাকে মারার স্কিম করবে, আর আমি জানতে পারবোনা তা হয়।
ওমপ্রকাশ কোথায়?
আমার কাছে। তুই চলে আয়, তোর পার্টের কাজ তুই কর, আমার পার্টের কাজ আমাকে করতে দে।
চুপ করে থাকলাম।
আমি জানি তুই আমাকে বড্ড ভালোবাসিস। মামনিকে জিজ্ঞাসা কর, আমি বেরবার সময় ওকে হিন্টস দিয়ে এসেছি, তুই বেরিয়ে প্রথম কোথায় যাবি।
মাসি জানে।
বেরবার সময় বলেছি। তবে তোর ছেলেটা দারুণ ইন্টেলিজেন্ট। ও ম্যাসেজ না করলে একটা অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারতো। রতনকে একটু দে।
ধরো।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/PHhT9GS
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment