কাজলদিঘী (৩৯ নং কিস্তি)

“কাজলদীঘি”

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

৩৯ নং কিস্তি
—————————

এইখানে মাসীমাকে….।

মাথা দোলালাম।

নির্মাল্য হাঁটু মুরে বসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলো। দেবাশিস স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমার পাশে এসে দাঁড়াল। পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে চোখ মুছলাম।

মনখারাপ করিস না।

তুমি এখানে একা একা আসো? নির্মাল্য বললো।

হ্যাঁ। গলাটা ভাড়ি ভাড়ি।

তোমার সঙ্গে কেউ আসে না?

না।

তোমার বন্ধুরা?

ওরা ভয় পায়।

রাতের বেলাও একা আসো!

হ্যাঁ।

ওই দিকটা কি আছে অনিদা।

জঙ্গল হয়ে আছে। সাপ, শেয়ালের বাসা।

এখানে কেউ আসে না?

আসে। কেউ মারা গেলে গাঁয়ের লোকেরা দাহ করার জন্য দলবেঁধে আসে।

জায়গাটা কি নিরিবিলি।

বিকেল বেলা এলে আরও ভালো লাগে। ঠিক সন্ধ্যের সময়টা যখন পাখিরা বাসায় ফেরে চারিদিকে কিচির মিচির শব্দ তখন আরও ভালো লাগে।

আমাকে একবার নিয়ে আসবে?

আসবি!

তুমি নিয়ে এলে, আসবো।

এইগুলো একটু তোর কোঁচরে নিয়েনে নির্মাল্য। দেবাশিস বললো।

নির্মাল্য পাঞ্জাবীর কোঁচরটা খুললো। দেবাশিস সমস্ত কলাই শাক ঢেলে দিয়ে, জুতো খুলে পুকুর ঘাটে নামলো। হাতপায়ে জল দিয়ে মুখটা ধুলো। তারপর বটগাছের তলায় এসে প্রণাম করলো।

তোরা একটু এখানে দাঁড়া আমি আসছি।

যা।

আমি সামনের ঝোপের আড়ালে চলে গেলাম। ওখানে দইআঁতি পাতার গাছ আছে। অনেকটা দইআঁতি পাতা তুললাম। মোবাইলে সমানে ম্যাসেজ এসে যাচ্ছে। খুলে দেখতে আর ভালো লাগছে না। ওদের কাছে এসে দেবাশিসের কোঁচরে সমস্ত দই আঁতি পাতা দিয়ে দিলাম। খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে বাড়ির পেছন পাশ দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। দেবাশিসকে বললাম তুই, নির্মাল্য ওই বাড়িতে যা।

তুই যাবি না?

না।

কেন শুধু শুধু মন খারাপ করছিস?

আমি হন হন করে খিড়কি দরজা দিয়ে ওপরে চলে এলাম। ঢোকার সময় একটা হই হই আওয়াজ কানে এলো। বুঝলাম নির্মাল্য আর দেবাশিসকে দেখে ওরা হই হই করে উঠলো। আমার কিছু ভালো লাগছে না।

হঠাৎ আজ কেন মার কাছে গিয়ে কেঁদে ফেললাম। আমি যখনই সময় পাই ওখানে যাই। কখনও সবাই জেনে যায় আমি গেছি। কখনও জানতে পারে না।

নিজের ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। বুকের ভেতরটা ভীষণ ষন্ত্রণা করছে। আলমাড়িটা খুললাম। মায়ের বাক্সটা বার করলাম। ছবিটা হাতে নিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললাম। কতোক্ষণ ওইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেছি জানিনা।

বুবুন।

মিত্রার ডাকে ফিরে তাকালাম।

আমার একেবারে পেছনে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। মিত্রাও কাঁদছে। কখন এসে দাঁড়িয়েছে জানি না।

আজও আমাকে মার কাছে নিয়ে গেলি না। মাথাটা নীচু করলো।

আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলাম। চোখের জল বাঁধ মানছে না।

কাঁদিস না। তোকে মন খারাপ করতে দেখলে কারুর মন ভাল থাকে না। ও বাড়িতে সবাই বসে আছে।

তুই যা। আমি একটু একা থাকি। ঠিক হয়ে যাবে।

মিত্রা আমার মুখের দিকে ভাসা ভাসা চোখে তাকাল। কেন গেলি?

দেবারা যেতে চাইল।

মিত্রা আমার চোখে আঙুল ছোঁয়াল। তুই কাঁদলে আমার মন ভাল থাকে?

ঠিক আছে আর হবে না।

ও বাড়িতে চল।

আমি একটু বসি। তুই একটু চা খাওয়াবি।

ওদের ডাকি।

নিয়ে আয়।

তুই একটু মুখে চোখে জল দিয়ে নে। চোখ দুটো কেমন ফুলিয়ে ফেলেছিস।

মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।

পায়ের ব্যাথা কমেছে।

হ্যাঁ। ডাক্তারদাদা কি বলেছে জানিস—

কি—

তুই ডাক্তারদাদার ভাত মেরে দিবি।

হাসলাম।

মায়ের ফটোটা তুলে রাখ।

আমি মিত্রার কথা মতো ফটোটা ঠিক জায়গায় রেখে আলমাড়িটা বন্ধ করলাম।

আমি চা নিয়ে আসি।

আয়।

মিত্রা বেরিয়ে গেল। আমি মুখটা ভাল করে জল দিয়ে ধুলাম। ঘরে এসে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছলাম। সিঁড়িতে ধুপ ধাপ আওয়াজ পেলাম। কেউ দৌড়ে আসছে। তাকাবার আগেই চিকনা ঘরে এসে জড়িয়ে ধরলো।

আমি ওর দিকে তাকালাম।

দেখলাম বাসু, অনাদি, পলা, সঞ্জীব দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। ওদের মুখটা ভারি। আমার মুখের দিকে তাকিয়েই মাথাটা নীচু করে নিল।

তুই মন খারাপ করলে আমরা কোথায় যাব। তোকে নিয়ে যে আমাদের অনেক স্বপ্ন।

আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছি। ওদের মুখ বলে দিচ্ছে ওরা কষ্ট পাচ্ছে।

আয় ভেতরে আয়, ওখানে দাঁড়িয়ে রইলি কেন।

চিকনা আমাকে ছেড়ে দিল। আমি খাটের ওপর বসলাম। ওরা যে যার মতো করে বসলো। আমার একপাশে বাসু একপাশে অনাদি।

আমি মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো এক ঝলকে দেখে নিলাম। বুঝলাম অর্ক ঠিক ঠিক ভাবে কাজ এগোচ্ছে।

ওদের দিকে তাকালাম। সবাই চুপ চাপ বসে আছে।

চিকনা একটা সিগারেট খাওয়াবি।

বাসু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করলো।

আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি হাসলাম।

এই হচ্ছে রিয়েল অনি। আর একবার হাস।

তুই সিগারেটের প্যাকেট পকেটে রাখছিস।

তোর মতো, ইচ্ছে হলে খাই, না হলে খাই না।

আমি একটা বার করে অনাদির হাতে দিলাম।

বাসু তুই একটা বার করে নে, আমি, সঞ্জু, পলা কাউন্টার করে নেব। চিকনা বললো।

আমি অনির কাউন্টার নেব। আগে বলে দিচ্ছি একেবারে ঝামেলা করবি না। সঞ্জু চেঁচিয়ে উঠল।

ঝামেলা করতাম কিন্তু এখন করবো না। ডিউ স্লিপ রইলো।

কখন বেরিয়েছিলি? অনাদি বললো।

সকালবেলা।

না। আরও আগে।

হাসলাম।

আজও অপকর্ম করেছিস?

কে বললো।

ম্যাডামদের পেটে কিছু থাকে।

হই হই করে সকলে ঘরে এসে ঢুকে পরলো। ঘর ভরে গেল। মিলি এসে আমার পায়ের কাছে বসলো।

টিনা একটু ধরতো। মিত্রা বললো।

টিনা চায়ের ট্রেটা ধরে মিট সেফের ওপর রাখলো।

মন ভালো হয়েছে। মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

আমি মিলির মুখটা ধরে গালটা টিপে দিলাম। মন খারাপ হয়নি, হঠাৎ লোডশেডিং হয়েছিল।

তাহলে, কি বলেছিলাম। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো।

কি বলেছিলি! সঞ্জু খেঁকিয়ে উঠলো।

কাল রাতে তোর জেনারেটর ফেল করেছিল।

সঞ্জু নিমেষের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে জলন্ত সিগারেটটা চিকনার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো, দেবো মুখ পুরিয়ে। দেখতে পাবি।

ম্যাডাম আপনি সাক্ষী রইলেন। দুই নম্বর হলো। মনে রাখিস।

আবার কথা। সঞ্জু খিঁচিয়ে উঠলো।

মিলি একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে।

মিত্রা মিটসেফের কাছ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, মিলি ভয় পাস না। মানিকজোড় সারাদিন এরকম খেয়ো-খেয়ি করে। আবার একজন আর একজনকে দেখতে না পেলে বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়।

চিকনা, মিলির দিকে তাকিয়ে বললো। ম্যাডাম মিছে কথা বললো।

মিলি, চিকনার কথা বলার ভঙ্গিতে হাসছে।

ম্যাডাম একটু গরম জল দেন মুখটা ধুই। চিকনা চেঁচালো।

শুধু বুবুনের জন্য।

তাই দেন আমি কাউন্টার মারবো।

আমিও আছি। সঞ্জু বললো।

সিগারেটে তুই ফার্স্ট আমি সেকেন্ড। চায়ে তুই সেকেন্ড আমি ফার্স্ট।

অনাদি তুই সাক্ষী রইলি আমি যেন পাই। সঞ্জু বললো।

আমি নেই এর মধ্যে। অনাদি বললো।

অনিদা কি খাবে। তোমাদের যদি দিয়ে দেয়। মিলি বললো।

খালি কাপটা দিলেই যথেষ্ট, ধুয়ে ভাগ করে নেব।

মিলি আর থাকতে পারলো না। হাসতে হাসতে আমার কোলে মাথা রাখল।

কিছু বুঝলি মিলি। মিত্রা বললো।

ওরা সবাই হাসছে।

আমার ফোনটা ঢং ঢং করে বেজে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকাল।

মিলি, বুবুনের ফোনটা নিয়ে আয়।

মিত্রার কথায় দেবাশিস ফিক করে হাসলো।

তুই হাসলি কেন?

প্রাইভেট ম্যাসেজ দেখছিস কিনা।

তোর কি।

মিলি ফোনটা মিত্রার হাতে দিল। মিত্রা একবার দেখে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

টিনা তোরা একটু চায়ের কাপগুলো সবাইকে এগিয়ে দে। আমি এখুনি আসছি।

মিত্রা মোবাইলটা হাতে নিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেল।

মিলি আমার পায়ের কাছ থেকে উঠে মিটসেফের কাছে চলে গেল।

টিনা, মিলি, অদিতি সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল।

তুমি কিছু খাবে না অনিদা? টিনা বললো।

ভালো লাগছে না।

আমরা তোমার তুলে আনা শাক ভাজা দিয়ে পান্তা খেলাম। দারুন।

তুই কলাই শাক কার ক্ষেত থেক তুললি? অনাদি বললো।

কেন শ্মশানে যেতে গিয়ে ডান দিকের ক্ষেতটা।

খেয়েছে। চিকনা বললো।

কেন!

হায়রে। কাঞ্চন মাসির খেত। জানতে পারলে বুড়ি মরা বাপকে জ্যান্ত করে দেয়। তবে তুই তুলেছিস জানলে। মাটিতে মুখ ঘোষে রক্ত বার করে দেবে।

তার মানে! দেবাশিসের চোখ বড় বড়।

বুঝলেন না?

টিনা আমাকে চায়ের কাপ দিতে এসে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েছে। চিকনার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।

না।

অনিকে মাসি খুব ভালোবাসে। না জেনে গালাগাল করবে, সাপ সাপান্তর করবে। যেই জানবে অনি তুলেছে। অমনি যেই মুখ দিয়ে গালাগাল দিয়েছে সেই মুখটা মাটিতে ঘসবে। সে এক ব্যাপার, ঘটনা ঘটলে জানতে পারবেন।

ও স্যাট। টিনার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো।

হ্যাট না ম্যাডাম হক কথার এক কথা।

ম্যাডাম ইংরাজী বলেছে। বাসু বললো।

ক্ষমাদেন ম্যাডাম ইংরাজী বুঝি নাই ভুল ভাল বলে ফেলেছি।

মিলি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি চায়ের কাপটা চিকনার দিকে এগিয়ে দিলাম।

মনে রাখিস, আমি এখানে বসে আছি। সঞ্জু বললো।

বিকেলেরটা নিস।

দেবাশিস চিকনার কীর্তি দেখে হাসছে।

কি পলাবাবু চুপচাপ যে। আমি বললাম।

তোকে নেমন্তন্ন করতে এসেছি।

আমাকে! কেন?

কাল কালীপূজো, যাত্রা হবে। একবার আসবি।

কখন?

সন্ধ্যে বেলা।

টিনা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশারায় বলছে যাব, তুমি হ্যাঁ বলে দাও। মিলিও একই কথা বলছে।

বাসু ওদের ইশারায় কথাবলা দেখে ফিক করে হেসে ফেললো।

কিরে পলা তুই ম্যাডামদের নেমন্তন্ন করলিনা। চিকনা বললো।

অনি গেলে ওনারাও যাবেন। লজ্জা লজ্জা মুখ করে পলা বললো।

সেগগগগগগগ।

সঞ্জু, চিকনার মুখটা চেপে ধরলো চিকনা গোঁ গোঁ করছে।

এই জন্য বলে চাষা। সঞ্জু চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

চিকনা আমার দিকে মুখ করে হাসছে। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে এসে আমার পা ধরে ফেললো।

এই কান মুলছি পায়ে হাত দিয়ে বলছি আর হবে না।

নীপাকে ডাকবো। অনাদি বললো।

ডাকিসনা, ঝেঁটিয়ে বিষ ঝেরে দেবে।

দেবা হাসছে।

খুব জোর আড্ডা মারছিস। ইসলামভাই ভেতরে এলো।

এসো গুরুদেব তুমি আমার পাশে। চিকনা উঠে দাঁড়াল। ইসলামভাই এসে সোফায় বসলো। মিত্রা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।

বুবুন, ইসলামভাই চুরি করে দেখে ফেলেছে।

আমি ইসলামভাইয়ের দিকে তাকালাম।

দেখে কি করবো বল, এটা আমার হাতের বাইরে। তোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবো না।

আমি তাকিয়ে আছি।

তাকাস না। সত্যি বলছি। কালকে থেকে দামিনী অনেক জ্বালিয়েছে। কোনও কথার উত্তর দিতে পারিনি। আজকে কিছুটা অন্ততঃ বলতে পারবো।

ঘরের সবাই হাঁ করে আমার আর ইসলামভাইয়ের কথা শুনছে।

সন্দীপ ফোন করেছিল। তোর কথা মতো কাজ হয়ে গেছে। মিত্রা বললো।

তুই এক ঢিলে সব পাখি মারবি! ইসলামভাই বললো।

এক ঢিলে একটাই মারবো। বাকি সব প্রাণের ভয়ে উড়ে পালিয়ে যাবে। ওই তল্লাটে আর বাসা বাঁধবে না।

দারুণ বললি কথাটা। অদিতি স্টক করো। কলকাতায় গিয়ে ছাড়তে হবে। দেবাশিস বললো।

দেবাদা, অনির কথা লেখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। চিকনা বলে উঠলো।

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

মামনি আমি একটু পাবো না।

ফ্লাক্সে আছে। টিনা একটু ঢেলে দে। মিত্রা বললো।

এইবার ভাইদা আর অনি। আমরা কেউ খাবো না। চিকনা বললো।

কাউন্টারও পাবি না। সঞ্জু বললো।

বড়দের কথার মাঝখানে ফুট কাটিস কেন।

সঞ্জু সজোরে একটা ঘুসি মরলো চিকনার পিঠে। ভাইদাগো মরে গেলাম।

দুজনে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেল।

আরে আরে করছো কি। ইসলামভাই বলে উঠলো।

মনে রাখিস এ অপমান আমি সইব না। রাতে যদি জেনারেটর বিগড়য় তুলে নিয়ে গিয়ে পচা পুকুরের জলে ফেলবো।

সঞ্জু আবার কিল তুলেছিল, ইসলামভাই ধরে নিল।

মিত্রা টপকে টপকে চলে এসে আমার আর দেবার মাঝখানে বসে পরলো। আমার হাতে মোবাইলটা ধরিয়ে দিল।

গুরু আমার একটা আর্জি রাখবে। চিকনা আস্তে করে বললো।

আমি চিকনার দিকে তাকালাম।

নির্মাল্যদার নামটা একটু ছোটো করে দেবে।

কেন।

দাঁত খুলে যাচ্ছে।

দেবা খিক খিক করে হাসছে।

নির্মাল্য দেবার দিকে তাকল।

তাকাচ্ছিস কিরে চোখ গেলে দেব। মিলি বললো।

অনিদা তুমি মার্ক করো ব্যাপারটা। নির্মাল্য বললো।

নিমু বলবি।

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই, চিকনা আমার পায়ে আঙুল ঠেকিয়ে জিভে আঙুল ঠেকাল।

এটা কিহলো? দেবাশিস বললো।

ধুলো খেলাম।

কেন?

ইনেসটানট।

সবাই হাসছে।

টিনা চায়ের কাপ নিয়ে এগিয়ে এলো। ইসলামভাই এক কাপ, আমি এক কাপ টিনার হাত থেকে নিলাম।

ম্যাডাম তলানি কিছু আছে।

চিকনার কথায় টিনা একবার তাকাল।

তুই ওর কথা বুঝতে পারলি না? ইসলামভাই বললো।

না।

এবারের কাউন্টার সঞ্জু নেবে চিকনা কি পাবে?

ও হরি। টিনা হি হি করে হাসছে।

সেদিনকার কথাটা বলবো বুবুনকে। মিত্রা বললো।

আমি তাহলে আত্মহত্যা করবো।

মিত্রা হাসি হাসি চোখে চিকনার দিকে তাকিয়ে।

তুই কি পাতা তুলে এনেছিস? ইসলামভাই বললো।

কেন!

ও বাড়িতে বড়দি আর ডাক্তারবাবু ফাটা ফাটি শুরু করে দিয়েছে।

সঠিক নাম বলতে পারবো না। ছোটোবেলা থেকে শুনেছি দইআঁতি পাতা।

ভাজা খায়, না রস করে খায়।

রস করে চিনি মিশিয়ে একটা বাটিতে রেখে দিলে দই-এর মতো বসে যাবে। তারপর দই যেমন করে খায় সেই ভাবে খাও।

ডাক্তারবাবু বলে ভাজা খাব। নীপা বলে রস করে খেতে হয়। বড়দি বলে অনি আসুক এ বাড়িতে, তারপর হাত দিবি।

আমি হাসছি।

কই গো অনিবাবু মন ভালো হলো?

ডাক্তারদাদা ঘরে পা রাখলো।

আরি বাবা এতো মহাআড্ডা। বসার জায়গা নেই।

আসুন না ভেতরে, ঠিক জায়গা হয়ে যাবে। ইসলামভাই বললো।

আমি একা নয়।

আ মরণ গোঁতা মার কেন। বড়োমার গলা।

আমি উঠে দাঁড়ালাম। অনাদি, বাসুর দিকে ইশারা করলো চল এখন কেটে পড়ি। ওরা শুর শুর করে সবাই বেরিয়ে গেল।

তোমরা কোথায় যাচ্ছ? ডাক্তারদাদা বললো।

কাজগুলো একটু সেরে ফেলি।

অনিবাবু তুমি কিন্তু একটা অন্যায় কাজ করেছো। আমার খেঁজুর রস খেয়ে নিয়েছ।

আমি মাথা নীচু করলাম।

অনিদা একা নয়। মিলি, টিনা একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো।

দেখছো বান্ধবী পথও আটকাবে, আবার চোখও রাঙাবে।

ও কোনও অন্যায় করেনা। বড়োমা বললো।

তুমি পারবেনা ডাক্তার।

কথা বলতে বলতে দাদা ঘরে ঢুকলো। পেছন পেছন বড়োমা, ছোটোমা, নিরঞ্জনদা, মল্লিকদা।

বড়োমা, ছোটোমা আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। আমি এগিয়ে গেলাম। একসঙ্গে দু-জনকে জড়িয়ে ধরালাম।

ছোটো তুই এবার রাগ করতে পারবি?

ছোটো আমার থুতনিটা ধরে একটু নাড়িয়ে দিয়া মাথা দোলালো।

আমি দুজনকে ধরে নিয়ে এসে খাটে বসালাম। দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদা সোফায়, নিরঞ্জনদা চেয়ারে। ওরা কেউ খাটে বসলো কেউ চেয়ারে।

তুই যে সকাল বেলা ওদেরকে নিয়ে ওখানে গেলি, জানিস জায়গাটা ভালো নয়। বড়োমা বললো।

এ গল্প তোমাকে কে বললো?

তোর কাকা।

কাকাকে জিজ্ঞাসা করোনি কেন জায়গাটা খারাপ।

তা কি করে বলবো!

কাকা বলেছে জায়গাটা খারাপ। আমি বলছি জায়গাটা ভালো। প্রমাণ করতে পারবে ভালো কোনটা খারাপ কোনটা?

এই তুই আবার তর্ক শুরু করলি।

কেন ওতো ঠিক কথা বলেছে। তুমি যুক্তি দিয়ে উত্তর দাও। দাদা বললো।

আবার সাউকিরি করে।

এডিটর তুমি পারবে না। কেন মিছি মিছি মুখ লাগাও।

ডাক্তারদাদা আমার দিকে তাকাল।

অনি পারবে। বল বাবা বল একটু শুনি। সকাল থেকে অনেক গালমন্দ খেয়েছি।

ওই গাছটা চিকনাদের। বড়োমা বললো।

ওটা ইজমালি গাছ।

সেটা আবার কি!

সর্বসাধারণের।

সে কি করে হয়!

খাস জমির ওপর গাছ। তাই সকলের।

খাস জমিটা আবার কি!

খাস মানে খাস। কারুর নামে জমিটা রেকর্ড করা নেই।

নিরঞ্জনদা হাসছে।

তুই হাসছিস কেনরে—বড়োমা নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে খেঁকিয়ে উঠলো।

অনি গ্রামের ভাষা ব্যাবহার করছে।

তুই জানতিস। বড়োমা আমার দিকে তাকাল।

হ্যাঁ। না জানার কি আছে। সকলে জানে।

চিকনা যে বললো?

ও না জেনে বলেছে।

ওখানে প্রচুর বিষধর সাপ আছে।

সে থাকতে পারে। আমাদের এই পুকুরেই আছে।

আমি তাহলে আর পুকুরে নামছি না। মিলি বললো।

কেন!

যদি কামরায়।

ওদেরও ভয় আছে। ওরা ভয় পেলে কামরায়। তুমি ভয় না দেখালেই হলো।

মিত্রাকে জোঁকে ধরলো। বড়োমা বললো।

ওর জন্য।

আমার জন্য না, দিলো আমার পিঠে গুঁতো।

দেখলে দেখলে। বড়োমার দিকে তাকিয়ে বললাম। তুই ওখানে কি করতে গেছিলি?

আমি বড়োমাকে বলেছি। তোর মতো চেপে যাইনি।

বুড়ো বয়সে প্রজাপতি….।

সবাই আবার হো হো করে হেসে উঠলো।

হ্যাঁরে অনি আজ কাগজটা দেখেছিস। দাদা বললো।

না।

তোর কাগজের প্রতি কোনও টান নেই।

কাল রাতে দেখেছি।

তার মানে!

সন্দীপের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। জেনে নিলাম।

কি এডিটর উত্তর পেলে। তোমার থেকে অনেক এ্যাডভান্স।

মোবাইলটা আবার ম্যাসেজের সিগন্যাল দিল। মিত্রা ছোঁ-মেরে মোবাইলটা নিয়ে নিল। ইসলামভাই ছোটোমাকে সরিয়ে খাটে উঠে মিত্রার পাশে বসলো।

সবাই ওদের দিকে তাকাল।

দেবাশিস হাসছে।

ডাক্তারদাদা একটা কথা বলবো।

বল।

যদি কিছু চাই, দেবে?

আমার দেবার কিছু নেই। শুধু ওই বাড়িটা আমার নামে পড়ে আছে।

আমি যা চাইবো চেষ্টা করলে দিতে পারবে।

বল একটু শুনি।

মিত্রার নার্সিংহোমগুলোর একটু দায়িত্ব নিতে হবে।

ডাক্তারদাদা আমার চোখে চোখ রাখলো। সবাই আমার কথা শুনে নড়ে চড়ে বসলো। ইসলামভাই, মিত্রা আমার মোবাইলের ম্যাসেজ গোগ্রাসে গিলছে। ছোটোমা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

তোর চালটা কি দুর্দান্ত হয়েছেরে অনি।

ইসলামভাই আমার পিঠে চাপর মারলো।

আমি ফিরে তাকাতেই ইসলামভাই সরি বলে চুপ করে গেল।

ও আবার কি চাল দিয়েছেরে মুন্না? ছোটোমা, ইসলামভাইকে জিজ্ঞাসা করলো।

সবার দৃষ্টি এখন ইসলামভাইয়ের দিকে। মিত্রা মাথা নীচু করে।

মল্লিকদার চোখ ছোটো ছোটো। নিরঞ্জনদা হাঁ করে আছে।

না কিছুনা। ইসলামভাই বললো।

তোরা দুজনে অনির মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ি করলি যে? ছোটোমা বললো।

ইসলামভাই, মিত্রা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

আরে বাবা কিছু হয়নি। শুধু তোমাদের সন্দেহ।

তাহলে ওরকম আহ্লাদে নেচে উঠলি।

ঠিক, ঠিক বলেছে ছোটো। দাদা বললো।

দাদা আমার দিকে তাকিয়ে। কিরে আবার ওখানে গণ্ডগোল পাকিয়েছিস?

আমি কেন পাকাতে যাব!

সামন্ত ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম। ডাক্তারদাদা আমার প্রশ্নের উত্তরটা।

ছোটো এখন থাম, ওটা পড়ে দেখছি। বড়োমা বললো।

তুই না ভেবে আমাকে বলছিস না এটা আমি ভাল করে জানি। তুই কি ভেবেছিস বল।

এই তোমার প্রশ্নের উত্তর। বড়োমা বললো।

বান্ধবী তোমরা ওকে কতটুকু চেন আমি জানি না। তবে এই ক-দিনে আমি ওকে হারে হারে চিনেছি।

ও ছোটো সামন্ত কি বলেরে!

ছোটোমা মাথা নীচু করে মুখ টিপে হাসছে।

তুই আমাকে নিয়ে একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান করেছিস। তোর এই বন্ধুদের তুই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিস। তারও একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান আছে। তুই এমনি এমনি ওদের শুধু ঘুরতে নিয়ে আসিসনি। তুই বড়ো সাংঘাতিক। রথ দেখা কলা বেচা দু-টোই সারবি।

আমি মাথা নীচু করে রইলাম। মনে মনে বললাম, ডাক্তারের পাকা মাথা। মুখ তুললাম, ডাক্তারের দিকে তাকালাম।

তুই আমার দিকে যতই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাক, তোর মাথাটা একলক্ষ মাইল গতিতে দৌড়চ্ছে। তোর চোখ বলছে। আমি ডাক্তার। চল্লিশ বছরে অন্ততঃ লক্ষ রুগীর চোখ দেখেছি। আমাকে ফাঁকি দিতে পারবি না।

আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।

তুই আগে তোর রোগটা বল, আমি তারপর ওষুধ দেব।

বুঝতে পারছি সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম, শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি হচ্ছে, আমরা সবাই নীরব দর্শক। মজা দেখি।

তুমি ডাক্তার আমার চোখ দেখে তুমি যখন এতটাই বলে ফেললে, তাহলে রোগটা কি নিজে বিচার করে ওষুধ দাও।

জানিস অনি, আমরা যখন ডাক্তরি পড়ি তখন আমাদের ফার্স্ট ইয়ারে সাইকলজি পড়তে হয়। সাইকলজি না পড়লে রুগীর মনস্তত্ব জানা যায় না। আমি ওই পেপারটাতে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছিলাম।

আমি এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি।

আমি তোকে গল্প বলছি এরই মধ্যে তুই তোর ঘুটি সাজিয়ে ফেল। এই ক্ষমতাটা তোর আছে।

আমি ডাক্তারদার চোখ থেকে চোখ সরাইনি।

তারপর বুঝলি যখন প্র্যাকটিশ করতে শুরু করলাম। তখন ওই সাইকলজি পড়াটা কতটা উপকারে এলো বুঝতে পারলাম। এখনও আমি সময় সুযোগ পেলে সাইকলজিটা পড়ি।

তাহলে তুমি ফ্রয়েড পড়েছো?

হুঁ। তুই আরও বেশি চালাক। সময় নিস। বড়ো মাছকে খেলিয়ে তোলার ফন্দি এঁটেছিস। ইদিপাস কমপ্লেক্স?

হাসলাম। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি?

যদি বলি পড়িনি।

তাহলে ফাইল ক্লোজ।

ফাইল তুই ওপেন করেছিস। ক্লোজ করার দায়িত্ব আমার।

আমি ডাক্তারদাদার চেখের দিকে তাকিয়ে। সকলে আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে।

যদি বলি পড়েছি।

তাহলে প্রিকনসাস মাইন্ড সম্বন্ধে তোমাকে দু-চারটে প্রশ্ন করবো।

বুঝেছি। তুই আমাকে নিয়ে ভালো হোমওয়ার্ক করেছিস।

তোমাকে কতটুকু দেখেছি।

আজকে নিয়ে চারদিন।

তুমিও আমাকে চারদিন দেখেছো।

তাহলে উত্তরটা হচ্ছে আমি তোর সম্বন্ধে এতটা জানলাম, তুই কি কিছুই জানিস না।

হাসলাম।

বড়োমা একবার আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। একবার ডাক্তারদার মুখের দিকে তাকায়।

কি বান্ধবী তোমার সব মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।

তোমাদের কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।

জীবনে অনেক মানুষ নিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করেছি। তোমার অনি আমার দেখা সেরা ছেলে।

মিলির দিকে তাকিয়ে। মামনি, নীপা মাকে একটু গরম জল দিতে বলনা।

ডাক্তারদা মিলিকে বলে আমার দিকে তাকাল।

এটা তোর কথা। কেমন সঠিক জায়গায় পুট করলাম বল।

আমি মুচকি মুচকি হাসছি।

মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রেখে ডাক্তারদার কথা এক মনে শুনছে।

তুমি দাঁড়াও মিলিদি আমি চায়ের কথা বলে এখুনি আসছি। ফাঁকটুকু তোমার কাছ থেকে শুনবো।

নির্মাল্য বেড়িয়ে গেল।

তাহলে অনিবাবু ফ্রয়েড, প্রি-কনসাস মাইন্ড। তাহলে তুমি আমার তৃতীয় চক্ষুর হদিস পেয়ে গেছ?

সবার মুখে বিস্ময়। মল্লিকদা একটু নড়ে চড়ে বসলো।

তুই এই বয়সে ফ্রয়েড গুলে খেয়েছিস, তন্ত্র নিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করছিস, অবশ্য তোর বড়োমার মুখ থেকে শুনলাম। তুই অনেকদিন বাঁচবি। বাকি কি রাখলি?

শুনেছি ফ্রয়েড তার ঔরসজাত সন্তানের সঙ্গে বিয়ে করেছিল, কেন? সেটা জানা বাকি রয়েছে।

তারমানে! দাদা বলে উঠলো।

কি এডিটর কিছুই পড়াশুন করো না। কি করে এতোবড়ো কাগজের এডিটর হলে ভগবান জানে।

ইসলামভাই আমার ঘাড়ের কাছে উঠে এলো। আমাকে গিলে খাবে।

জানিস অনি অনেকদিন পর কথাবলার মতো একটা যোগ্য মানুষের সন্ধান পেলাম। কথা বলতে না পেড়ে বোবা হয়ে গেছিলাম। লোকে আমাকে বলে আঁতেল, ইনট্রোভাট। আমার নাকি নাক উঁচু। সত্যি তো, ডাক্তার আবার নাক উঁচু কিসের। একটা কথা কি জানিস, মনের আদান প্রদান ঠিক মতো না হলে কথা বলে আনন্দ নেই। কথা বলে যদি আনন্দ না পাই তাহলে কথা বলবো কেন। কার সঙ্গে কথা বলবো। টাইম পাস। আমার ধাতে যে শয় না। তার থেকে বই-এর পাতায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকে ঢের ভালো।

শেষের কয়কটা কথা বলতে গিয়ে ডাক্তারদাদার গলাটা বুঁজে এলো।

সামন্ত ডাক্তার চশমাটা খুলে চোখদুটো মুছলো।

তুই উত্তর পেয়েছিস?

এখনও চেষ্টা করছি।

উত্তর তুই পেয়েছিস আমাকে বলছিস না।

তোমার উত্তরের সঙ্গে আমারটা মেলে কিনা দেখছি।

সামন্ত ডাক্তার এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

এক্সপেরিমেন্ট! তবে তিনি ফ্রয়েড বলে কথা।

তার বাইরেও কিছু আছে।

তোর থার্ডসেন্সটা ভীষণ প্রখর। তাই তুই এতো তাড়াতাড়ি ডিসিশন নিতে পারিস। সাধারণ লোকে বলে ম্যাজিক। বিজ্ঞানের ভাষায় প্র্যাকটিশ। এ্যাম আই রাইট।

হুঁ।

কলকাতায় এবং এখানে এসে মামনির কাছে তোর কিছু কিছু গপ্প শুনছিলাম। আর মনে মনে জাজ করছিলাম। তুই আমাকে এরকম একটা প্রস্তাব আজ না হোক কাল দিবি।

কি করে বুঝলে?

এই মুহূর্তে তোর কাছে সেকেন্ড কোনও অপশন নেই। থাকলে তুই আমাকে বাজাতিস, সরাসরি অফার করতিস না।

আমি মাথা নীচু করে নিলাম।

সেদিন তুই ওর ষোলটা নার্সিংহোমের মধ্যে সাতটা রেস্ট্রি করিয়েছিস। বাকি নটা এখনো ওর নামে আছে। সেগুলোও তুই রাখবি না। ধ্বংস করে দিবি। বিনিময়ে কিছু টাকা খিঁচে নিলি। তাও চেকে। সাদা টাকা। তুই যে কি ভীষণ বিপদজনক এরা কেউ জানে না। তুই এই খেলাটা কোথায় গিয়ে শেষ করতে চাস, এরা কেউ ধরতেই পারছে না। এরইমধ্যে তার কাজ তুই শুরু করে দিয়েছিস। এরা এখনও কেউ ঘুনাক্ষরেও জানে না। ধরতেও পারছে না।

আমি সামন্তদার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম।

সকলে চুপচাপ। নিস্তব্ধ ঘর। পিন পরলে আওয়াজ হবে।

আমি সেদিন তোকে বলেছিলাম আমি ওর রেজিস্ট্রেশন ক্যানসেল করে দেব। চেষ্টা করলে পারতাম। যখনি শুনলাম তুই থেকে যাচ্ছিস আমাদের সঙ্গে আসছিস না, তখনই বুঝলাম তুই আমাকে এর মধ্যে জড়াতে চাস না। তুই অন্যভাবে আমার সাহায্য চাস।

আমার চোখের পলক পড়ছে না।

তুই এও প্ল্যান করে রেখেছিলি। এমন একটা পরিবেশে তুই এই কথাটা তুলবি, সেখানে আমি তোকে না বলতে পারবো না।

আমি এবার মাথাটা নীচু করলাম।

লজ্জা পাস না, তোকে নিয়ে এদের অনেক কিউরিসিটি। আমি জানি তুই থাকতে এদের শরীরে একটা আঁচড়ও কেউ লাগাতে পারবে না। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মতো তোরও কথা বলার লোক নেই।

আমি মাথা তুললাম না।

আর আমি যে তোর প্রতি দুর্বল, এটাও তুই ধরে ফেলেছিস।

আমি এবার মাথা তুললাম।

কি করে?

আমার কলকাতা শহরে একটু আধটু প্রসার প্রতিপত্তি আছে। লোকে বলে বড়ো ডাক্তার। তোর সঙ্গে আমার সেই ভাবে কোনও সম্বন্ধ নেই। এডিটারের একটা কথায় আমি গাড়িতে উঠে বসলাম! বুঝলি অনি, সেদিন আমি গাড়িতে উঠে বসার আগে তোর চোখ দেখেছিলাম। তোর চোখ সেদিন বলছিল ডাক্তার তুমি বহুত ধড়িবাজ, তুমি আমার শেকড়টা দেখতে যাচ্ছ, যাও। আমি তোমাকে ওখানে বধ করবো।

কিরে ঠিক বলছি?

আমি মুচকি মুচকি হাসছি।

প্রি-কনসাস, ফ্রয়েড, উপকাহিনী, মূল কাহিনী আমি বলছি। তা বলে তুই ফ্রয়েড পরিসনি একথা বলছিনা। গুলে খেয়েছিস।

তুই ঠিক খবর নিয়ে নিয়েছিস আমি মামনির গ্রুপের তিনটে নার্সিংহোমের সঙ্গে এ্যাটাচ। তাই নিজের মেয়েকে বিয়ে করতে অসুবিধে কোথায়!

কিরে দুষ্টু তোর পেটে পেটে এত বুদ্ধি। ছোটোমা কানটা মূলে দিল।

ছোটো ব্যাথা লাগবে। বড়োমা পিঠে হাত রেখেছে।

তোমার জন্য ও লায় পাচ্ছে। ব্যাথা ওর লাগেনি, তোমার লেগেছে।

ওই হলো।

সামন্তদা বলে তোকে ধরতে পেরেছে আমরা সাতজন্মেও তোকে ধরতে পারতাম না। ছোটমা বললো।

ছোটো জানো, কাল খেতে বসার পর থেকে আমি লক্ষ্য করছি, ও এখানে ফিজিক্যালি প্রেজেন্ট, মেন্টালি নয়। তোমরা ধরতে পেরেছো?

একদম না।

আজ সকালে এদেরকে নিয়ে ও ঘুরতে গেছে। তার মধ্যেই ও ওর কাজ সেরে নিয়েছে। এরা কেউ ধরতে পারেনি।

ও তো আমাদের সাথেই সব সময় ছিল। দেবাশিস বললো।

একবারও ওকে একলা রেখে তোরা একটু দূরে যাস নি।

হ্যাঁ। ওই একবার আমরা সকলে ওকে ছেড়ে দূরে গেছিলাম।

ওইটুকু সময়ে ও ওর ঘুঁটি সাজিয়ে নিয়েছে।

দেবাশিস আমার দিকে তাকিয়ে!

আমি তোর প্রস্তাব গ্রহণ করবো তার আগে তোকে একটা জিনিষ এদের সবার সামনে বলতে বলবো, পারবি?

না। মঙ্গলবার জানতে পারবে। দাদা আঁচ পাবে কাল বিকেল থেকে।

দেখছো, ছেলে কতটা এক্সপার্ট দিনক্ষণ সময় বলে দিচ্ছে।

তুই যে এখুনি বললি কিছু হয়নি! দাদা বললো।

কিছু হয়নি তো। যাও অনেক বেলা হয়েছে। স্নান করে খেয়ে নাও।

তুই নিরঞ্জনকে বেঁধেছিস, তুই ইসলামকে বেঁধেছিস, তুই দামিনীকে বেঁধেছিস আমি জানি তুই থাকতে এদের শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। সব তাস তোর হাতে। নেক্সট কে?

নিরঞ্জনদা এতক্ষণ চুপচাপ বসেছিল। এবার উঠে এলো। আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমার কাঁধটা ধরে ঝাঁকিয়ে বললো। অনিমেষদা তোকে ও ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কি কথা বললো একটু বল। আমি ভেতর ভেতর ভীষণ অশান্তিতে ভুগছি।

কিগো তোমরা এখন চা খাবে! স্নান করবে না? বেলা গড়িয়ে গেল। নীপা ঘরে ঢুকলো।

থাম মুখপুরি। ছোটোমা বলে উঠলো।

অনি, ডাক্তার সব সত্যি কথা বলছে! আমার গা ছুঁয়ে বল। বড়োমা বললো।

আবার শপথ করাচ্ছ। সেদিনকার কথাটা ভুলে গেছ।

আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না। কিন্তু ডাক্তার কি বলছে সব গুলিয়ে যাচ্ছে।

দাঁড়াও আগে চা খাই।

বান্ধবী ওর পেট থেকে বার করতে পারবে না। তোমাকে পড়াশুনো করতে হবে।

এই বুড়ী বয়সে সেটা হয়।

তাহলে চুপচাপ থাক।

মিলি চায়ের কাপ নিয়ে এলো। হাতে নিলাম।

বড়োমা, নিরঞ্জনদার দিকে তাকাল।

তুই দাঁড়িয়ে রইলি কেন। নিজের জায়গায় গিয়ে বোস।

নিরঞ্জনদা চলে গেল।

কিরে তোর কি এখনও ঘোর কাটেনি। ঘারটা ব্যাথা হয়ে গেল। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।

হোক। তোকে ছুঁয়ে থাকলে যদি কিছু শিখি।

পারবি না মামনি, তুই ওর মতো জীবন কাটাসনি। ডাক্তারদাদা চায়ে চুমুক দিয়ে বললো।

অনেক শিখেছিস আর শিখতে হবে না। খিদে পাচ্ছে না। আমি বললাম।

পাচ্ছে তো, উঠতে ইচ্ছে করছে না।

আচ্ছা ডাক্তার তোমরা দুজনে কথা দিয়ে এমন সব ছবি আঁকলে আসল প্রশ্নের উত্তরটা পেলাম না। দাদা বললো।

তোমায় পেতে হবে না যে প্রশ্ন করেছে সে ঠিক উত্তর পেয়ে গেছে। ডাক্তারদাদা বললো।

বুঝলি অনি ফ্রয়েডের প্রি-কনসাস নিয়ে আমার কিছু কিছু জায়গায় খটকা আছে।

আমার একেবারে নেই। আমি বললাম।

তোর সঙ্গে বসবো।

তোমাদের আলোচনায় আমরা থাকবো না? টিনা বলে উঠলো।

নিরস সাবজেক্ট। ডাক্তারদাদা বললো।

নিরস কইগো বেশতো শুনতে ভালোলাগছিল। বড়োমা বললো।

চলো এবার উঠি অনেক বেলা হলো।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

আমি তাহলে রেজুলেশন তৈরি করতে বলে দিচ্ছি। ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে বললাম।

সেটা কি তুই বাকি রেখেছিস?

হেসে ফেললাম।

হাসিসনা। সবকিছু হাসি দিয়ে ঢাকা যায়। তুই যেমন একা একা কাঁদিস, আমরাও কাঁদি। একটু বলতে অসুবিধে কোথায়?

মাথা নীচু করে থাকলাম।

বড়রা সবাই বাথরুমে স্নান করলো। আমরা সবাই পুকুরে নামলাম। জল তোলপাড় করে স্নানপর্ব চললো। দেবাশিস সাঁতার জানেনা। ও পুকুর পাড়ে বসেই স্নান করলো। চিকনা জলে ডুবে পুকুরের গভীরে ডুব দিয়ে মাটি তুলে আনার খেলা দেখাল।

টিনা, মিলি, অদিতি, নীপা একসঙ্গে পাশা পাশি সাঁতার কাটছে। সবাই বেশ মজা করছে। আমি এমনিই সাঁতার কাটছিলাম। বাসু, অনাদির সঙ্গে কথা বলছিলাম।

চিকনা চেঁচিয়ে বললো, অনি তুই পারবি? তোর এখন আর দম নেই।

আমি হাসলাম।

যদি পারি কি দিবি?

তোকে যেখান থেকে বলবো সেখান থেকে ডুবে মাটি তুলে আনতে হবে।

ঠিক আছে, চেষ্টা করবো। তার আগে বল কি দিবি?

তোকে পাটালি খাওয়াবো।

ও তো তুই রেগুলার খাওয়াস।

আজ তুই আমাদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছিস।

নাম লেখা আছে তোদের গাছ।

আমাদের জমির গাছ।

হারুজানার কালা ইজমালি।

কখনই না। আমরা মেপে দেখেছি ওটা আমাদের জায়গা।

কাকাকে দলিলটা নিয়ে আসতে বল।

অনাদি দেখছিস। চুরি করবে আবার….।

ঝপ করে জলে ডুব মারলাম। ডুব সাঁতারে চিকনার কাছে পৌঁছে, ওর গামছা খুলে নিয়ে চলে এলাম।

জলে ভেসে উঠতেই চিকনার সে কি তর্জন গর্জন।

নীপা হাততালি মারছে। অনিদার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ। বুঝতে পেরেছিলে অনিদা এই কু-কীর্তি করবে।

প্রথমে মিলিরা বুঝতে পারেনি। বোঝার পর ওদের হাসি ধরেনা।

দেবাশিস ওপর থেকে চেঁচাচ্ছে। কি চিকনাবাবু চ্যালেঞ্জ করবে নাকি অনির সঙ্গে।

আর জীবনে করবো না। তুই গামছাটা দে।

অনাদি জিজ্ঞাসা কর ওই গাছটা ওদের কিনা। আমার নামে সকালে বড়োমাকে রিপোর্ট করেছে।

আমি গ্রামসভা ডাকব।

ডাক। আমি উঠলাম।

তোর পায়ে ধরি। তুই গামছাটা দে।

সবাই হো হো করে হাসছে।

আমি বড়োমাকে ডাকবো।

ডাক।

চিকনা কিছুতেই কাছে আসতে পারছেনা। এক গলা জালে দাঁড়িয়ে। সাঁতারও কাটতে পারছেনা।

মিলি ওর কাছে যাওতো।

মিলি যেই সাঁতার দিল। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো

আমি কিন্তু ডুবে মরে যাব।

তুই মরে দেখা তুই মরেছিস।

দেনা ভাই, দাদা আমার।

উঃ কি রসের কথা শোন।

বড়োমাগো। আমাকে অনি মেরে ফেললো। পুকুরে দাঁড়িয়েই চেঁচিয়ে উঠলো।

সাঁতার কাট দারুন লাগবে।

চিকনার তারস্বর চিৎকারে সবাই ঘাটের ধরে চলে এসেছে। আমি মাঝ পুকুরে জলে ভেসে রয়েছি। চিকনা একগলা জলে দাঁড়িয়ে। আমার পাশে মিত্রা, অদিতি, টিনা, নীপা, মিলি। সবাই হাসছে।

কিরে তোরা জল থেকে ওঠ এবার। বড়োমা ওপর থেকে চেঁচাল।

আমি চেঁচিয়ে বললাম আগে চিকনাকে উঠতে বলো, তারপর আমরা উঠবো। ও আমাদের উঠতে দিচ্ছেনা।

নীপারা জোরে জোরে হাসছে।

দেবাশিস, বাসু, অনাদি জল থেকে হাসতে হাসতে উঠে গেল। সবাই হাঁসছে।

চিকনা বাবা উঠে আয়না। ওরা কি তোর সঙ্গে পারে।

চিকনা কোনও কথা বলতে পারছেনা। গুম হয়ে আছে। রাগে গড় গড় করছে।

বাসু বড়োমার কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো। বড়োমা প্রথমে আমার দিকে তাকাল চোখে হাসি মুখ গম্ভীর। ছোটোমা একটা মাটির ঢেলা তুলে আমাকে ছুড়লো আমি জলে ডুব মারলাম।

কথাটা সকলে জেনে ফেললো, সবাই হাসছে। ইসলামভাই হাসতে হাসতে বসে পরলো।

কি হলো চিকনা গুরু বিট্রে করলো?

চিকনা কোনও কথা বলতে পারছে না।

কিরে আমি তোদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছি। আমি চেঁচিয়ে বললাম।

না।

ওটা কাদের গাছ।

ইজমালি।

বড়োমা শুনলে চিকনা কি বললো।

বড়োমা হাসছে। তোর মাথায় এরকম বদ বুদ্ধি আসে কি করে বল।

দেবাশিস চেঁচিয়ে উঠলো, চিকনা চ্যালেঞ্জ করছিল অনির সঙ্গে। দেখছো আমরা যারা ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। তারা এখন কোথায় আছি। চিকনারও হাল সেইরকম হবে। একটু অপেক্ষা করো।

ও তোদের মতো হোক।

চিকনা আমি ডুবে মাটি তুলছি।

না তোকে ডুবতে হবেনা। তুই আমাকে গামছাটা ছুঁড়ে দে।

একটু অপেক্ষা কর।

আমি ডুব মেরে চিকনার কাছে গিয়ে ওর পায়ে হাত দিয়ে গামছাটা দিলাম। বুঝতে পারলাম চিকনা আমার হাত ধরতে গেল, পারলনা ছিটকে বেরিয়ে এলাম। ও ডুব মারল। বেশ কিছুক্ষণ জলে দুজনে দাপাদাপি করলাম। চরম দাপাদাপিতে দুজনেই হাঁপিয়ে গেছি। জড়াজড়ি করে দুজনেই পারে উঠে এলাম।

চিকনা হাসছে। আমিও হাসছি।

তোর এখনও এতো দম।

মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো কিরে ওপারে যাবিনা?

আজ থাক বেলা হয়েগেছে।

ছোটোমা দাঁত খিঁচিয়ে উঠলো, শখ দেখ মেয়ের।

আবার আমি আর চিকনা জলে ঝাঁপ মারলাম। ওদের সবাইকে নিয়ে ওপার থেকে ঘুরে এলাম। খুব এনজয় করলো ওরা। টিনা বললো, মিত্রাদি জলটা কি ভারি গো।

নির্মাল্য হাঁপাতে হাঁপাতে বললো এটা কি তোমার সুইমিং পুলের জল।

আমরা পারে উঠে এলাম গা মুছে টাওয়েলটা মিত্রার দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে এলাম। চিকনা আমার পেছন পেছন।

দেখলাম সঞ্জু এসে পথ আগলে দাঁড়িয়েছে।

কিরে!

তুই আর কিছুক্ষণ দাঁর করিয়ে রাখতে পারলিনা। আমি এসে জল খাওয়াতাম। চিকনার গামছা ধরলো।

চিকনা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। বড়োমা।

বড়োমা ভেতর বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, কি হলোরে চিকনা।

দেখোনা সঞ্জুটা।

সঞ্জু।

নাগো বড়োমা, মিথ্যে কথা বলছে।

সঞ্জু চোখ পাকিয়ে আস্তে করে দাঁত কিড়মিড় করে বললো, দাঁড়া খাওয়া শেষ হোক, তোকে বমি করাব।

আমি পেছনের দরজা দিয়ে ওপরের ঘরে চলে এলাম। চিকনা নিচের বারান্দায় ওর নিজের জায়গা থেকে জামা কাপর বার করলো।

নিচে চেঁচামেচির শব্দ। বুঝলাম হুড়মুর করে সবাই চলে এলো।

ঘরে ঢুকেই মিত্রা বললো।

কিরে তুই রেডি।

তাহলে কি, তোর জন্য অপেক্ষা করবো।

মিত্রা দরজা বন্ধ করলো।

আমি আলমাড়ির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি।

সর না, কি মেয়েদের মতো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচরাস।

আমি আয়না দিয়ে দেখতে পাচ্ছি মিত্রা ভিঁজে কাপর জামা চেয়ারের ওপর রেখে আমার টাওয়েলটা দিয়ে গা মুছছে।

আবার আমাকে ঠেলা মারল।

ঘুরে দাঁড়ালাম। মিত্রা সোজা হয়ে বুকের ওপর ক্রশ করে হাতটা রেখেছে।

প্লিজ আর করবো না, এইবারটা ছেড়ে দে।

ওপরটা তো ঢেকেছিস। নিচেরটা।

চেঁচাব বলে দিচ্ছি।

চেঁচা। গলা ফাটিয়ে ফেল।

নিচে অদিতিরা আছে। কি ভাববে বল।

মনে থাকে যেন।

আমি দরজার দিকে এগোলাম।

চলে যাবি।

হ্যাঁ।

একটু দাঁড়া, একসঙ্গে যাব।

খিদে লেগেছে। পেটে আগুন জ্বলছে।

তাড়াতাড়ি করে নিচ্ছি।

আমি এসে খাটে বসলাম।

মোবাইলটা খাটের ওপর পরেছিল আমি টেনে নিলাম। ম্যাসেজ গুলো দেখলাম। অর্ক ঠিক ঠিক এগোচ্ছে। ছোট্ট একটা ম্যাসেজ করলাম।

শুধু কাজ করিস না, খাওয়া-দাওয়া ঠিক ঠাক করিস।

সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এলো।

করছি বস, আর একটু পর।

ঠিক আছে। আমি তোর ম্যাসেজ ফলো আপ করছি।

রিপ্লাই এলো থ্যাঙ্ক ইউ, বাই।

কিরে এত ঘন ঘন ঢং ঢং করছে।

অর্কর সঙ্গে একটু হ্যাজালাম।

তুই খুব ভাল ফলো আপ করিস।

সেই জন্য টিঁকে আছি।

দামিনীমাসিকে ফোন করলাম।

রিং বাজতেই ভয়েজ অন করলাম।

কিরে মাসিকে মনে পরলো।

কেন ভুলে গেছিলাম নাকি?

মাসি হাসলো।

এখনও খেতে বসিসনি কেন?

মিত্রা ঘরে আটকে রেখেছে।

মিথ্যে কথা বলবিনা। নাগো মাসি।

কিরে, মিত্রা ঘরে আছে নাকি?

হ্যাঁ। কাপর পরছে।

তুই কি করছিস?

মিত্রার দিকে পেছন ফিরে তোমার সঙ্গে কথা বলছি।

মাসি হাসছে।

ডাক্তারকে পটিয়ে নিলি?

খবর চলে গেছে।

হ্যাঁ।

সাগরেদ ভালোই রেখেছ।

আবার মাসি হাসলো।

শোনো তোমায় একটা কথা বলি।

বল।

কাল তোমায় রাজনাথের ছেলেপুলে ডিস্টার্ব করতে পারে—

গতকাল থেকে করছে।

কয়েকদিন একটু চুপ থাকবে, মাথা গরম করবে না।

চুপ করেই আছি।

ডাক্তারের খোঁজ খবর নিয়েছো।

না।

মিথ্যে কথা বলছো।

সত্যি বিশ্বাস কর।

এবার তোমার লোকজন কাজ করছে না। আমার পকেটের লোক কাজ শুরু করেছে।

সেটাও জানি।

তাহলে বলে ফেলো।

তুই জেনে নে।

ঠিক আছে মনে থাকে যেন কথাটা, আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমিও ঠিক এই কথা বলবো।

তুই কি আমায় বলিস?

সব বলেছি।

কাজ হয়ে যাবার পর।

বুঝেছি।

কি বুঝেছিস?

তোমাকে বুঝতে হবে না।

কবে আসবি?

রবিবার দুপুরের দিকে।

ও বাড়ি কিন্তু কমপ্লিট হবে না।

মিত্রা আমার দিকে তাকাল। চোখ বড়োবড়ো।

তাহলে মিত্রার বাড়িতে থাকবো।

সেই ভালো। আমাকে আরও দিন তিনেক সময় দিস—

এই রবিবারের পরের রবিবার কাজ।

মনে আছে।

তুমি খেয়েছো?

খেতে বসেছি।

আমার আগে খেতে বসে গেছো?

কি করে জানবো তুই এখনও খাসনি।

মাসি তুমি কি দিয়ে খাচ্ছ গো। মিত্রা আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো।

ভাত, আলুভাতে, ডালভাতে, পটলসেদ্ধ, কাঁচকলা সেদ্ধ।

কেন!

আজ বৃহস্পতিবার। আমার নিরামিষ।

জানো বুবুন আজ সকালে কলাই শাক, দই আঁতিপাতা তুলে এনেছে।

আসার সময় আমার জন্য একটু শাকপাতা নিয়ে আসিস।

আমি তো চিনি না। বুবুনকে বলো।

তুই বলে দে।

আচ্ছা। তুমি খেয়ে নাও।

যা তোরাও খেতে বসগে যা।

আচ্ছা।

লাইনটা কেটেই মিত্রা আমার হাতে ফোনটা দিল।

তোর হয়েছে?

চল।

খাট থেকে উঠে দুজনে বেরিয়ে এলাম। এ বাড়িতে এসে দেখলাম সকলের জায়গা হয়েছে। যে যার সঠিক জায়গায় বসলাম।

তোরা দুজনে আজ কোনও ঝামেলা করবিনা। বড়োমা চোখ পাকিয়ে বললো।

তারমানে! তুমি কি বলতে চাও আমি ঝামেলা করি—

তুই না, মিত্রা।

ও তুমি বলবেই—

আমি হাসছি।

করলেও বলবে, না করলেও বলবে। তাইনা ছোটোমা—মিত্রা ক্যাজুয়েলি বললো।

ছোটোমা ফিক করে হাসলো।

তুই এত কথা বলিস বলেই ও তোর পেছনে এতো লাগে।

আর কথাই বলবো না।

কাকীমা একে একে সকলকে খাবারের থালা এগিয়ে দিল। খাবার পড়তেই মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো— সুরোমাসি বুবুন স্পেশাল।

আজ করিনি।

কেন।

অনি মানা করেছে।

আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে মিত্রা বললো।

কিরে।

ঝামেলা করিস না, যা দিয়েছে খেয়ে নে।

তুই বারন করেছিস কেন?

কখন করলাম। এ বাড়িতে আমি সকাল থেকে এসেছি?

ঠিক।

মিত্রা চুপ করে গেল। খাওয়া শুরু করলো।

খাওয়া চলছে। চারিদিক নিস্তব্ধ।

দুবার জোরে জোর নিঃশ্বাস নিয়ে, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।

কিরে সর্দি হয়েছে?

না এখুনি হবে।

আমি হাসলাম।

সবাই চুপচাপ।

ছোটোমা বড়োমা মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

কিরে মিত্রা হাসলি কেন? ছোটোমা বললো।

একটু অপেক্ষা করো, দেখতে পাবে।

ছোটোমা আমার দিকে তাকাল।

সুরোমাসি। আমি চেঁচালাম।

কিরে।

তেল লঙ্কা একটু বেশি করে দেবে। যাতে ভাগ দিতে না হয়।

হ্যাঁ। তেল লঙ্কা বেশি করে….।

মিত্রা দিল আমার পিঠে গুম করে।

বড়োমাগো।

একিরে!

সকাল থেকে আমি এ বাড়িতে এসেছি। মিত্রা ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বললো—

তা বলে তুই!

থামো তুমি। সুরোমাসির সঙ্গে ওর ট্যালিপ্যাথি আছে?

বড়োমা হাসবে না কাঁদবে। ওরাও সকলে হাসছে।

সুরোমাসি বাটিটা আমার পাতে বসাবে। কি গন্ধ ছেড়েছে বুঝতে পারছো। রসিয়ে মাখা হচ্ছে।

মামনি তুই আর আমি এখানে খানেবালা, আর কেউ খেতে জানেনা বল—ডাক্তারদাদা ও প্রান্ত থেকে বলে উঠলো।

তোমাকেও দেবনা। এতোক্ষণ তুমি আমাকে সাপোর্ট করোনি।

তুমি আগুনে আর ঘি ঢেলো না। দাদা বললো।

সুরো। ডাক্তারদাদা চেঁচাল।

আমি সবার জন্য মেখেছি দাদা।

তাহলে দরকার নেই, কি বলো এডিটর।

তোমাকে দিলে তো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।

তুই আমারটাও নিয়ে নে। আমি বড়োমা ছোটোমারটা মারি।

বড়োমা তোর, ছোটোমা আমার। মাথায় রাখবি।

একিগো এডিটর! ভাগাভাগি আছে নাকি?

আরও অনেক কিছু আছে, দেখতে পাবে।

সুরোমাসি আমাদের দুজনের সামনে বাটি বসিয়ে দিয়ে গেল।

মিত্রা বাটির দিকে একবার তাকাল, তারপর আমার দিকে। ছোটোমা মুখ টিপে হাসছে।

কিরে কোনটা ভালো?

বুবুনেরটা।

তাহলে বাটি দুটো আদলবদল করে নে।

না। দেখি সুরোমাসি সকলকে দেয় কিনা, তারপর বুবুনেরটা সবাই ভাগ করে নেব।

তোরটা?

ওটা আমি একা খাব।

কি স্বার্থপর তুই।

খাওয়ার সময়। আবার চেঁচাল, সুরোমাসি।

আর নেইরে মা।

এই যে বললে সবার জন্য।

সুরোমাসি হাসছে।

এটা হচ্ছে ঘরের ছেলের জন্য বুঝলি। দিলো আমার কোমরে চিমটি।

বড়োমার মুখের দিকে তাকাল। আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি।

তুই খা বাপু, বক বক করিস না। বড়োমা বললো।

দেখেছো, কেন প্রথমেই বলেছিলাম বুবুন স্পেশাল।

বড়োমা মিত্রার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকাল।

আমি আমার বাটিতে হাত চাপা দিলাম।

দে দে, হাতচাপা দিয়ে লাভ নেই, সকলকে দিতে হবে। বুঝুক সকলে কেন গুম করে বসিয়েছিলাম। মিত্রা ঝোগরুটে, না।

আমি হাসছি। মিত্রা আমার বাটি নিয়ে সকলের পাতে একটু একটু করে ভাগ করে দিল। সবার হলো না। নিজের বাটি থেকে আবার দিল।

মিত্রাদি তুমি আর একটা গুম করে দিলে, আরও কিছুটা বেরতে পারে। মিলি ওই মাথা থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।

বড়োমাকে বল। বড়োমার ভালো ছেলে বলে কথা।

মামনি আর একটু হবে। ইসলামভাই বললো।

আর নেই, এটুকু আমার আর বুবুনের।

সবাই জোড়ে জোড়ে হাসছে।

দেখেছো এডিটর সকলকে দেওয়া হয়ে গেছে। যেটুকু আছে দু-জনের। একজনকে না দিয়ে আর একজন খায় না। তাহলে কি প্রমাণ হলো?

খাওনা, খালি বক বক। বড়োমা চেঁচালো।

মিত্রার দিকে তাকিয়ে।

তোর থেকে একটু দে।

অ্যাঁ-এ কত খায়।

আচ্ছা আমরা তিনদিন এই জিনিষটা পেলাম না কেন। মিত্রা ঠিক আদায় করলো। নাহলে তো এর স্বাদই পেতাম না। দাদা বললো।

আ মরন চোব্বচোষ্য খাচ্ছ, তবু নোলা কমে না।

সবাই হাসছে।

খুব এনজয় করে খাওয়া শেষ হলো।

ঠিক হলো একটু বেলা পরলেই সবাই মিলে বুড়ো শিবের থানে যাওয়া হবে। সেই মতো বাসু চিকনাকে রিক্সার কথা বলা হলো। কঞ্চন, লতাকেও যেন খবর দেওয়া হয়। ওরাও আমাদের সঙ্গে যাবে। বড়োমা পই পই করে বলে দিলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/KxD6k5s
via BanglaChoti

Comments