কাজলদিঘী (একবিংশ কিস্তি)

কাজলদিঘী

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

একবিংশ কিস্তি
—————————

-আপনি অনেক দিন আমায় কোন কেস দেন নি। দিলেন দিলেন, এতো শর্ট টাইমে।
-হ্যাঁ। কেসটা আপনি ট্যাকেল করতে পারবেন। আর ঠিক মতো করতে পারলে আপনার ডবল প্রমোশন হয়ে যেতে পারে।
-আপনি যখন বলছেন আমি রিস্ক নেবো।
-তাহলে আপনারা ঘুঁটিগুলো একটু নাড়াচাড়া করে নিন,

-সে নিচ্ছি।
-এখুনি একবার এখানে চলে আসুন, বাড়ির ঠিকানা লিখে নিন।
-বলুন।
বললাম।
-আপনি আগে এখানে থাকতেন না!

-আপাতত আছি।

-একবারে আমার নাকের ডগায়!

-একলা আসবেন। কেউ যেনো সঙ্গে না আসে।
-সে আর বলতে। আমি আধাঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছি। দুদশ মিনিট এদিক ওদিক হলে ক্ষমা ঘেন্না করে নেবেন। ফোনটা কেটে দিলাম।
-এটা কে রে, চিন্তে পারলাম না। দাদা বললেন।
-ইনি সিবিআই-এর ইষ্টার্ন জোনের চিফ।
-ছোটো চা নিয়ে এসো, আমি আর পারছি না। দাদা বললেন।
-বাথরুম কাছে আছে চলে যাও, তোমারতো টেনশন হলে পায়খানা পায়। বড়মা বললেন।
বড়মার কথায় সবাই আবার হাসলো। মল্লিকদা কোনো কথা বলছেন না, গাঁট হয়ে বসে আছে, ছোটোমা এতক্ষণে আমার কোল থেকে মাথা তুলে উঠলেন। নিচে গেলেন চা আনতে। দাদা সত্যি সত্যি বাথরুমে গেলো।
মিত্রা ঠায় কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে।

আমি আবার ইসলাম ভাইকে ফোন করলাম।
-হ্যাঁ বল, অনি।
-খোঁজ পেলে।
-না।
-তোমায় মল ফোন করেছিলো।
-হ্যাঁ, বললো তাড়াতাড়ি ডিসিসান দিতে।
-কি বললে।
-অনেক টাকার অফার দিচ্ছে।
-কি করবে।
-ভাবছি।
-আমি ঘুঁটি সাজিয়ে নিয়েছি। কাজ শুরু করে দিয়েছি। কোনটা চাও টাকা, না জীবন।
-তুই আমাকে মেরে দিবি!
-অনি কোনোদিন কাউকে মারে না তুমি জানো। আর ইসলাম ভাইকে সে কোনোদিন মারবে না, বরং ইসলাম ভাই সে ভুল করতে পারে।
-ইস অনি আজ শুক্রবার, আমাদের জুম্মাবার, তুই একথা বলতে পারলি।
-তুমি জানো ভালো করে, অনি যেখানে হাত দেবে, তার শেষ দেখে ছাড়বে। এর প্রমাণ মেরিনা বহিনের সময় তুমি পেয়েছো।
-ওই একটা ব্যাপারে আমি সারাজীবন তোর কাছে ঋণী থাকবো।
ইসলামভাইয়ের গলাটা ভারি ভারি শোনাল।
-বলো কি করতে চাও।
-তুই বল আমায় কি করতে হবে।
-তুমি মলকে ফোন করে বলে দাও, বিকেল পযর্ন্ত ওর কাছে রাখতে, আমি সাসপেক্ট করছি, এই মুহূর্তে অতীশবাবু, দিবাকর সুনীতদার বাড়িতে আছে।
-তুই সত্যি গুরুদেবে, খবরটা তুই পেলি কোথায়।
-আমার পীরসাহেব এখন মাথার ওপর বসে আছে, ও আমাকে বলে দিলো, এও বললো, আমি এই মুহূর্তে কোনো অন্যায় কাজ করবো না।
-তুই বল আমায় কি করতে হবে, আমি তোর গোলাম।
-আমার বাড়ি চলে এসো।
-কোথায়, তোর ফ্ল্যাটে?
-না। দাদার বাড়িতে। আর শোনো ট্যাক্সি নিয়ে আসবে। দূরে ছেড়ে দেবে, রিক্সা করে আসবে, মেসিন সঙ্গে রাখবে।
-আমাকে নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমি ঠিক পৌঁছে যাবো।
দাদা বাথরুম থেকে কখন এসে ইজি চেয়ারে বসেছে খেয়াল করিনি।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, এবার তোমায় একটা সাহায্য করতে হবে।
-বল কি করতে হবে।
ছোটমা চা নিয়ে এলো, মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোর হাতের ঠান্ডা ভাবটা এবার গরম হয়েছে, টেনসন অনেকটা হজম করেছিস, ওঠনা ছোটমার সঙ্গে একটু কাজ করনা, নির্জীবের মতো ঠায় বসে আছিস কেনো। আমি কি মরে যাচ্ছি, এমন ভাবে বসে আছিস।
মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, নড়ে চরে বসলো।
বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম, কতোক্ষণ দাঁড়াবে, একটু বোসো, এবার বুঝতে পারছো আমি কি করতে যাচ্ছি।
-একটু একটু বুঝছি।
-বোসো, সব বোঝাবো।
-তোর কি এগুলো মুখস্ত ছিলো।
-কি।
-তুই পড়া মুখস্তর মতো কাজ করছিস।
হেসে ফেললাম।
-জানো বড়মা ঘা খেতে খেতে নিজে ঘেয়োকুত্তা হয়ে গেছি, ওই যে ভজুকে দেখতে পাচ্ছ, ও আমার এরকম অনেক কাজের সাক্ষী। দেখো ওর কোনও মুভমেন্ট নেই।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি যা যা বলছি তুমি এতোক্ষণ শুনলে, তুমি খালি ফোন করে এই ঘটনাটা জানতে চাইবে।
-কাকে?
-ভবানী ভবনে ফোন করো, জানতে চাও আমাদের ওই থানার কথা বলে এই রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা, ঘটলে ওরা কি সাসপেক্ট করছে। তোমার পরিচয় দিয়ে ফোন করবে।
-তাহলে তোদের ওখানকার এসপিকে ফোন করি।
-এই তো তোমার মাথা কাজ করতে শুরু করেছে। বাকিটা তোমায় বলতে হবে না। তারপর তোমার জেলা সভাধিপতিকে বলে দাও, অনাদির গায়ে যেনো হাত না পরে। অমল দায়টা ওর ঘাড়ে চাপিয়ে ওর রাজনৈতিক কেরিয়ার বুমেরাং করতে চাইছে। নিরঞ্জনবাবু তোমার কাছের লোক।
-ওটা ও পারবে না, আমি ফোন করবো, ওকে এসপিকে ফোন করতে বল। বড়মা বললেন।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম, একটু অবাক হলাম। আমার চোখের কথা বড়মা পরে ফেললো।
-ভাবছিস বড়মার সঙ্গে নিরঞ্জনের পরিচয় কি করে হলো।
হাসলাম।
– তুই আমার কাছে কনফেস করেছিস, আমিও তোর কাছে কনফেস করবো। ঠিক সময়ে।
ছোটমা চা নিয়ে এলো। মিত্রা সকলকে এগিয়ে দিলো। ভজু ছোটমার পেছনে। ট্রে ধরে দাঁড়িয়ে।
অমিতাভদা এসপিকে ফোন করলেন। উনি খবরের সত্যতা স্বীকার করলেন। বললেন, সাসাপেক্ট করছি মার্ডার, ছেলেটা বেপাত্তা, ওর বাবা-মাকে থানায় নিয়ে এসেছে।
-আচ্ছা।
-এখন খবর করবেন না, আপনি দুপুরের দিকে ফোন করুন, আমি ডিটেলস দেবো।
-কেনো, কোনো পলিটিক্যাল ইস্যু আছে নাকি।
-সে রকম একটা গন্ধ পাচ্ছি। ছেলেটি ওখানকার পঞ্চায়েতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ওকে ইনটরোগেট করেছি। দিবাকর ছেলেটা নাকি আপনার অফিস নিয়েও কি গন্ডগোল করেছে শুনছি।
-হ্যাঁ সেই জন্যই তো আপনার কাছে বিষয়টা জানতে চাইছি, আমার অফিসের কেউ জড়িত কিনা।
-কি করে বলি বলুনতো দাদা, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায় কিছুই বলতে পারছি না।
-ঠিক আছে।
-আপনার কাছে কোনো খবর থাকলে যদি একটু হেল্প করেন।
-দুপুরে কথা হবে।

-অরিজিন্যাল ব্যাপারটা বুঝলে। আমি দাদাকে বললাম
-বুঝলাম, তোর দূরদৃষ্টি অনেক বেশি।
-দাও দেখি নিরঞ্জনকে ধরে মুখপোড়ার পার্টি করা বের করছি।
-থামো থামো তাড়াহুড়ে করছো কেনো। অনি কি বলে শোনো।
-থামো, নাক টিপলে দুধ বেড়োয় ও কি বলবে আমাকে।
আমি মুখ টিপে হেসে ফেললাম, এই স্পিরিটটা আমার দরকার।
দাদা ফোনটা ডায়াল করে দিলেন।
-কেরে নিরঞ্জন।
-হ্যাঁ দিদি আমি, তুমি এত সকালে।
-মুখপোড়া কোনো খবর রাখিস, আমি এখানে বসে তোদের সব খবর রাখি।
-বাবাঃ তুমি তো এই সাত সকালে খুব ফায়ার মনে হচ্ছে, দাদার সঙ্গে কিছু……
-মরণ তোর দাদার সঙ্গে হতে যাবে কেনো।
-তাহলে।
-তোর ওপর রাগ হচ্ছে।
-আমার ওপর বলো কি হুকুম আছে।
-তোর ওখানে কে একটা খুন হয়েছে।
-আমাদের এখানে, না।
-অনিদের গ্রামে।
-হ্যাঁ। সেরকম একটা খবর পেলাম। বাবাঃ তুমি তো সাংবাদিক হয়ে গেছ।
-আমি আজ ওখানে যাবো বলে ঠিক করেছিলাম, যেতে পারছি না। অনাদি না কে তোর অনিদের গ্রামের পঞ্চায়েত তাক নাকি ফাঁসানো হচ্ছে, তোর অমল না কে সে এটা করছে।
-না না তুমি ভুল শুনেছো।
-তোর কাছ থেকে আমি খবর নেবো, আমি তিরিশ বছর সাংবাদিকের ঘর করছি।
-জানিতো, তুমি এসো, আমি এসকর্টের ব্যবস্থা করছি।
-তার আর দরকার পরবে না, শোন অনাদির যদি কিছু হয়, অনিকে বলবো তোকে আচ্ছা করে দিতে, মনে রাখিস।
-না না তোমার পায়ে পরি অনিকে বলোনা, ও আগুন, ওর বায়োডাটা আমার কাছে আছে, ও ভিজে বেড়াল, ওতো আমার বাবা গো, আমার গদি খেয়ে নেবে, তুমি চাও তোমার ভাইয়ের গদি চলে যাক।
-তাহলে কি করবি।
-তোমায় কথা দিচ্ছি অনাদির গায়ে কেউ হাত দিতে পারবে না।
-মনে থাকে যেনো। আর কাল আমার কাছে এসে দেখা করবি।
-ঠিক আছে। আমি কথা দিলাম।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
-কিরে তোর মতো কথা বলতে পারলাম।
আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ রাখলাম। বাইরে গাড়ির আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম সন্দীপ এলো। ভজুর দিকে তাকাতে ভজু বেরিয়ে গেল ওদের সঙ্গে করে ওপরে নিয়ে এলো। ওদের মুখ থম থমে, ফুল টেনসনে আছে। ছোটমা ভজু বেরিয়ে গেলো।
মিত্রাকে বললাম ফোনটা দে।
-তোর, না আমার।
-আমার।
-ওটাতো তোর হাতে।
-সরি।
মিত্রা মুচকি হাসল।
-দ্বীপায়ন।
-হ্যাঁ দাদা।
-আমার ফোন থেকে কয়েকটা জিনিস সন্দীপের ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে নাও। আগে তারপর সব বলছি।
আমি ওকে ফাইলগুলো দেখিয়ে দিলাম। দ্বীপায়ন ল্যাপটপটা টেবিলে রেখে কাজ শুরু করলো।
ভজু মিঃ মুখার্জীকে নিয়ে এলেন। সবার সঙ্গে ওনাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
উনি বললেন আমার কি সৌভাগ্য, আজ কার মুখ দেখে সকালে উঠেছিলাম এরকম বিগ বিগ লোকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সৌভাগ্য হলো। ম্যাডামের নাম আমি অনেক শুনেছি, চাক্ষুষ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আজ আপনার কৃপায় সেই সৌভাগ্য হলো।

হাসলাম।

উনি দাদা, বড়োমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। মল্লিকদার সঙ্গে করমর্দন করলেন।

চা এলো।
সন্দীপকে বললাম আমার খাম দে। সন্দীপ ব্যাগ থেকে সব বার করলো।
এক নম্বর খামটা মিঃ মুখার্জীর হাতে দিয়ে বললাম, চা খেতে খেতে লেখাটা আপনি পরুন, সব ডাটা পাবেন। আপনি বুঝে যাবেন আপনার কাজ কি, আর এর সঙ্গে একটা ফাউ দেবো।
মিঃ মুখার্জী চা খেতে খেতে পড়া শেষ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
-কালকের কাগজে এটা বেরোলে ঝড় বয়ে যাবে সরকারে।
-আপনার।
-এ কাজ আমি করতে পারলে, সত্যি বলছি অনিবাবু আমার ডবল প্রমোশন বাগিয়ে ছাড়বো। এতো বড় কেস আপনি হাতে রেখে দিয়েছেন এতদিন।
-আর একটা কথা শুনুন। আমার অফিসের একটা স্টাফের এ্যাড্রেস আপনাকে দিচ্ছি, যেটা ফাউ বললাম। সেইটাও এই মওকায় ঢু মেরে দিন। সেখানে একজন খুনিকে আপনি পেয়ে যাবেন।
-বলছেন কি।
-আমি তার ছবি আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।   সন্দীপের দিকে তাকিয়ে বললাম, সন্দীপ হয়ে গেছে।
দ্বীপায়ন আমার দিকে তাকিয়ে বললো। অনিদা একটু এদিকে এসো।
আমি কাছে গেলাম, মিত্রা বুঝে গেছে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
আমি গেলাম দ্বীপায়ন আমায় ইশারায় বললো, এটা।
আমি বললাম, এটাই জীবন্ত দলিলরে পাগল।  গুছিয়ে রাখবি। কারুর কাছে নেই।

দ্বীপায়ণ আমার দিকে তাকাল। চোখে বিষ্ময়!

ওই প্রিয়েডে জোর করে ওর মোবাইল থেকে সব কিছু কপি করার সময় চলে এসেছে।

দ্বীপায়ন হাসছে।

-এই মেয়েটা কাল মারা গেছে, পুলিশ বলছে সুইসাইড আমি প্রমাণ করে দেবো সুইসাইড নয় মার্ডার। আমার ইচ্ছে ছিলো আজ যাবো না, কিন্তু কথা দিয়েছি বড়মাদের যাবো, তাই আমাকে যেতে হবে।
-তুই থাকলে ভালো হতো। সন্দীপ বললো।
-মিত্রা একটা কাপর সিঁদুর কৌটো আর চুড়ি নিয়ে আয়।
মিত্রা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
সন্দীপ আমার হাত দুটো ধরে ফেলেছে।
-সরি সরি আর হবে না। আমি করে ফেলতে পারবো।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
-মেনা বোতল এনে দেবো।
-দাদা আছে। সন্দীপ দাঁত চিবচ্ছে।
-থাকুক।
-মিঃ মুখার্জীকে কাছে ডেকে নিলাম। এই সেই ছেলে (দিবাকর) আর এই সেই ব্যাক্তি (সুনীত)। এর সঙ্গে আপনি একেও পাবেন (অতীশ)। খালি অপারেশন হয়ে গেলে আমাকে একবার জানাবেন। আর একটা কথা, জীবনে কোনোদিন এরা যেনো ভেতর থেকে বাইরে বেরোতে না পারে। সেইভাবে কেস ফাইল করবেন।
-আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আপনাকে কথা দিলাম।
-দেরি করবেন না আপনার কাজে লেগে পরুন।
মিঃ মুখার্জী সকলের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করে চলে গেলেন। আমি একবারে সিঁড়ির মুখ পর্যন্ত ওনাকে এগিয়ে দিলাম। বারান্দা দিয়ে আসার সময় দেখলাম মিঃ মুখার্জীর গাড়ি গেটের বাইরে চলে গেল।
আমি সন্দীপের কাছে গেলাম, ছবিগুলো সাজিয়ে দিলাম। মনে পড়ে গেলো মিত্রা ফাংশনের ছবি তুলেছিলো। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, তুই সেই ফাংশনের ছবি তুলেছিলি না।
-হ্যাঁ।
-তোর মনে পরে তুই দেবা আর শেলির ছবি তুলেছিলি কিনা।
-না মনে পরছে না। সেটাতো ওই অবস্থায় আছে এখনো দেখা হয় নি।
-কোথায় তোর ক্যামেরা।
-নিচে ব্যাগের মধ্যে।
-নিয়ে আয়।
এতোক্ষণে খেয়াল পরলো সেই ছেলে দুটোর দিকে। ওরা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, আমি দেখে হেসে ফেললাম। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভজুকে বলোনা কচুরী জিলিপি আনতে।
-তোর খিদে পায়। ছোটমা বললো।
-এখন পাচ্ছে।
-যাচ্ছি।
আমি এগিয়ে গেলাম, সেই রাতের পর তোমাদের সঙ্গে দেখা হলো।
-দাদাকে তোমার কথা প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করি।
-দাদা বলেছেন। তোমাদের কেনো ডেকেছি বলতো।
-তুমি বলো, যা বলবে তাই করবো।
-খুব রিস্কের কাজ।
-পারবো। দুজনেরি চোখেমুখে কনফিডেন্টের ছায়া।
-পারবে।
-তুমি বলনা অনিদা।
-ঠিক আছে বলছি।

দাদার দিকে তাকালাম, দাদা একমনে লেখাটা পড়ছে, বিরক্ত করলাম না। মিত্রা ক্যামেরা নিয়ে এলো, আমি সন্দীপকে বললাম, দেখ সেদিন এখানে ফাংসনের কিছু ছবি তোলা আছে, তার মধ্যে এদের দুজনের ছবি পাস কিনা।

ওরা দেখতে আরম্ভ করলো, সত্যি সত্যি পেয়ে গেলো, এমনকি দেবা শেলীর জয়েন্ট ছবিও পেয়ে গেলো। সন্দীপের মুখটা চক চক করে উঠলো। কালকে আমাদের ফ্রন্ট পেজটা এক্সক্লুসিভ হবে।

দাদা আমার লেখা থেকে মুখ তুললেন। বড়মা চায়ের ট্রে হাতে ঢুকলেন। মিত্রা দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলো।

-ভজু কোথায়।

-নিচে।

-দেখেছো ছেলের কান্ড, একেবারে এ্যাটমবোম।

-ছোটো ছোটো ছেলেগুলো আছে, নাহলে তোমার থোতা মুখ ভোঁতা করে দিতাম। বড়মা বললেন।

ঘর শুদ্ধ সবাই হেসে ফেললো।

-তোমার পড়া হয়েছে।

-হ্যাঁ।

-কোমন বুঝছো।

-না তোর প্ল্যান ঠিক আছে। কিন্তু ডকুমেন্টস, ডকুমেন্টস ছাড়া এ লেখা ছাপবো না।

-দিচ্ছি। বড়মা।

বড়মা আমার দিকে তাকালেন।

-তুমি একটু রান্নাঘরে যাও।

-কেনো।

-তোমার রান্নাঘরের ওপরে যে দেয়াল আলমাড়িটা আছে, পাল্লাটা খুলবে, ডান দিকে হাত দেবে দেখবে দুটো ক্যালেন্ডার আছে, ব্রাউন কাগজে মোড়া।

-আমি ওপরে উঠবো কেমন করে।

-ভজুকে বলো পেরে দেবে।

-তোর ডকুমেন্টস রান্নাঘরে। দাদা বললেন।

-হ্যাঁ, তাহলে কোথায় রাখবো। তোমার আলমাড়িতে।

বড়মা একবার তাকালেন দাদার দিকে। চোখের চাহুনিতেই সব বুঝিয়ে দিলেন। দাদা হাসতে হাসতে চায়ে চুমুক দিলো, বড়মা বেড়িয়ে গেল।
মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে বললাম, নিস্তব্ধে সব দেখলে এতোক্ষণ বসে বসে কাজটা ঠিকঠাক ভাবে কো-অর্ডিনেট করে বার করবে।

-আমাদের ফটোগ্রাফার পাঠাবি না। মল্লিকদা বললেন।

-এই দুটোর যে কোন একজন ফটো তুলবে। তাও ক্যামেরায় না, মোবাইলে। ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে পারবি না তোরা।

ওরা মাথা দোলালো। পারবে।

সন্দীপকে বললাম, তোদের হয়েছে, দেরি করছিস কেনো, আমার হাতে সময় নেই। এবার একটা ছোট্ট মিটিং করতে হবে।
-হ্যাঁ আমরা রেডি।
ভজু কচুরির ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
-কিরে তুই, বড়মা ছোটমা কোথায়।
-নিচে, তোমায় একবার ডাকছে, ভজুর চোখ ভারি ভারি। কেমন যেন ছল ছল করছে।
মিত্রাকেও দেখতে পেলাম না। ভজুর চোখ ছল ছলে।  সেই যে ক্যামেরাটা রেখে নিচে চলে গেল। আর ওপরে আসে নি। কেমন খটকা লাগলো। বুঝলাম নিচে কিছু একটা হয়েছে।
তোরা কাজ কর আমি একটু আসছি, বলে নিচে চলে এলাম।
হন হন করে শিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম।

বড়োমার ঘরে ঢুকতে গিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম তার জন্য আমি কখনই প্রস্তুত ছিলাম না, আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি এরকম দৃশ্য দেখবো আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
অমি অনেকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, খাবার টেবিলের সামনে ইসলাম ভাই ছোটমাকে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কাঁদছে, ছোটমাও কাঁদছেন ইসলাম ভাইকে জড়িয়ে ধরে, বড়মা ছোটমার মাথায় হাত বোলাচ্ছেন, বড়মার চোখদুটো জবা ফুলের মতো লাল,
আমি ব্যাপারটা ঠিক হজম করতে পারছি না, আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আমি কেমন যেন হেয়ে গেছি। স্থানুর মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।

আমাকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে  মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো, ভজু আমার পেছনে, মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটা নিস্তব্ধে ঘটে যাচ্ছে, কেউ জানে না। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ, স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছি।
মিত্রা আমার হাতটা ধরে কাঁধে মাথা রাখলো, মিত্রাও কাঁদছে। ভজুর দিকে ফিরে তাকালাম, ভজুও চোখ মুছছে।
ইসলাম ভাইকে আমি কোনোদিন কাঁদতে দেখি নি, মেরিনাদি মারা যাওয়ার পর যখন ফিরে এসেছি, আমাকে দেখে চোখ দুটো ছল ছল করেছে, কিন্তু সেইভাবে কাঁদেনি।  অনেক কাছ থেকে ওকে দেখেছি, হয়তো ওর টিমের অনেকের ওকে ওইভাবে দেখার সৌভাগ্য হয় নি, এতো ঝড় ঝাপটা ওর ওপর দিয়ে গেছে, তবু ওর চোখে কোনো দিন জল দেখি নি, মেরিনা বিবির মৃত্যুর সময়ও নয়, মেরিনা বিবির কবরে মাটি দেওয়ার পর, আমার হাত ধরে খালি বলেছিলো, এটা তুই নিউজ করিস না, সব গজব হয়ে যাবে, আমি জানি কে মেরেছে, আমি আগে তাকে দেখি তারপর তুই নিউজ করিস, আমি কথা রেখেছিলাম,
তবে কারুর কারুর স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আইনের বাঁধনে যখন ইসলামভাইকে জড়ানোর চেষ্টা হলো।

আমি কলম ধরতে বাধ্য হয়েছিলাম।
ইসলাম ভাইকে নিয়ে আমি কাগজে ধারাবাহিক লিখে বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম, কোর্টে সাক্ষীও দিয়েছিলাম, আমার উত্তরণ ইসলাম ভাই-এর হাত ধরে,

সেই সময় মেরিনা বিবি ফাঁক পেলেই আমার কাছে প্রায়ই আসতো, অনেক কথা বলতো, একদিন কথায় কথায় ইসলাম ভাই-এর সম্বন্ধে অনেক কথা বলেছিলো, ইসলাম ভাইও আমাকে নিজের সম্বন্ধে অনেক গল্প করেছে, ও পাক্কা পাঠান বংশের ছেলে, আমাকে একদিন গল্প করেছিলো খান সৈয়দ মোগল পাঠান এই চার ভাই-এর গল্প। দারুন বলেছিলো, তখনই বুঝেছিলাম ইসলাম ভাই-এর পেছনেও একটা কিছু আছে, কিন্তু উপযাচক হয়ে কখনো জানতে চাইনি। বার বার আমায় বলতো, “অনি আমি যখন থাকবো না, আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখিস।”
বড়মা এগিয়ে এলেন, চোখ দুটো ভিঁজে কাদা হয়েগেছে। ধরা গলায় বললেন, আয় ভেতরে আয়, তুই তো নিজেই পীরসাহেব, এটা জানিস না।
আমার সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। আমার অঙ্ক কিছুতেই মেলাতে পারছি না। কাছে এসে দেখলাম ছোটমা ইসলাম ভাই দুজনের চোখ বন্ধ। চোখের কোল বয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে।মুখটা দুমড়ে মুচড়ে একাকার।
-ছোটো, চোখ খোল অনি এসেছে। বড়মা বললেন।
ছোটোমা মাথা দোলাচ্ছে।
-দেখ ও তোকে মা বলে ডাকে। তোর থেকে অনেক ছোট, কিন্তু ওর বুকটা ছোট নয় ও সব শোনার পর তোকে মেনে নেবে।
-না না দিদি ও আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না। ছোটোমা কান্নায় ভেঙে পরলো।
-কি বলছিস তুই, তুই ওর ছোটোমা।
-না না ও আমার সব শুনলে আজ থেকে আমাকে আর ছোটোমা বলে ডাকবে না।
-আমি বলছি, তুই শোন।
-না দিদি না।
আমার মাথাটা কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে, কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা আমি ওখানে আর দাঁড়ালাম না, বড়মাকে বললাম, দাঁড়াও আমি একটু আসছি ওপর থেকে,
আমি ছুটে ওপরে চলে এলাম। দেখলাম দাদা, সন্দীপ, মল্লিকদা কথা বলছে। একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বুঝলাম ওপরে সবাই ঠিক আছে, নিচের গন্ধ ওপরে আসে নি। সন্দীপকে বললাম, কিরে তোদের হলো।
-হ্যাঁ। সব ঠিকঠাক করে নিয়েছি।
দাদাকে বললাম, তুমি এবার বলো স্টোরিটা কি ভাবে সাজাবে।
দাদা দাদার মতো বলে গেলেন, মল্লিকদা মল্লিকদার মতামত দিলেন, সন্দীপকে বললাম তোর কিছু বলার আছে। সন্দীপ চুপচাপ থাকলো। আমি টেবিলের ওপর থেকে কাগজ পেন বার করলাম, ড্রইং করে বুঝিয়ে দিলাম, কোথায় ছবি ইনসার্ট হবে, কোথায় দিবাকরের লেখাটা যাবে, কিভাবে দিবাকরের সঙ্গে মলের লেখাটা টুইস্ট করা হবে। কালকের প্রথম পেজটা সম্বন্ধে আমি কি ছবি দেখতে চাইছি সেটা ওদের ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম।
ভজু সনাতনবাবুকে নিয়ে এলো আমার ঘরে।
-এতো দেরি।
-ছোটোবাবু আমার একটা ছোটো সংসার আছে।
-বসুন।
ছেলেদুটোর দিকে তাকিয়ে বললাম, সকালে যিনি এসেছিলেন, তিনি এই দুটো ঠিকানায় যাবেন, তোমরা দুজনে দুটো বাড়ি ফলোআপ করবে, নিউজ আমার সলিড চাই, ডিটেলসে, তোমরাই লিখবে, কালকে ফার্স্ট পেজে বাইনেমে তোমাদের নিউজ যাবে এটা মনে রাখবে। দ্বীপায়নের দিকে তাকিয়ে বললাম, বাড়ি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে এখুনি অফিসে যাও। আজকের ফার্স্টপেজের দায়িত্ব তোমার, তোমায় যদি আর্টডিরেক্টর কিছু বলেন, আমায় ফোন করতে বলবে। দাদা মল্লিকদা টোটাল ব্যাপারটা কোঅর্ডিনেট করবে।

তোমরা এখুনি বেরিয়ে যাও কাজ শুরু করো। আমি মানি পার্টস থেকে সন্দীপের হাতে পাঁচটা এক হাজার টাকার নোট দিয়ে বললাম, এটা রাখ, বাকিটা অফিস থেকে বিল করে নিয়ে নিবি। ছেলে দুটোকে ডাকলাম, এই শোনো আজ সারাদিন অফিসের গাড়ি ব্যাবহার করবে না, সন্দীপ তুইও না, শেষ কথা আমার কাজ চাই এটা মাথায় রাখবি। কেউ আমায় ফোন করবি না, আমি তোদের ফোন করবো।
ছেলে দুটোর দিকে তাকালাম।
তোমাদের কোনো প্রবলেম হলে সন্দীপকে ফোন করবে দাদা কিংবা মল্লিকদার ফোনে রিং করবে না।
-আচ্ছা। ওরা বেরিয়ে গেলো।
আমি সনাতন বাবুর দিকে তাকালাম,সমস্ত ঘটনা বললাম,  তিনটে শোকজের নোটিস লিখে ফেলুন, একটা সুনীতদার নামে একটা কিংশুকের নামে আর একটা অতীশবাবুর নামে। অফিসে গিয়ে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিন, কি লিখতে হবে বলে দিতে হবে।
-না।
-ডকুমেন্টস আমি দেবো।
-অফিস থেকে কখন ম্যাসেঞ্জার যাবে দাদাকে বলে দেবো। দাদা আপনাকে বলে দেবেন। ওরকম ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো।
-না মানে আমি কিছু বুঝলাম না।
– অফিসে দাদার সঙ্গে কথা বলবেন, দাদা বুঝিয়ে দেবে। বেশি বুঝতে যাবেন না, বিপদে পরে যাবেন, এখন যা বলে যাচ্ছি অন্ধের মতো ফলোআপ করুন।
-ঠিক আছে ঠিক আছে।
-এবার আপনি আসুন, অফিসে গিয়ে আগে কাজগুলো সেরে ফেলুন।
সনাতনবাবু চলে গেলেন।
-দাদাকে বললাম দেখো, আমার ফোন বন্ধ থাকবে, তুমি আমাকে পাবে না, মিত্রাকেও পাবে না, বড়মার ফোনে ফোন করবে, আমি পরশুদিন ফিরে আসবো। তোমার ওপর একটু চাপ আসতে পারে।
-সে তোকে বলতে হবে না, আমি ঠিক সামলে দেবো।
-মল্লিকদা তুমি কিন্তু দাদার পাশে পাশে থাকবে। একটু কিছু বেচাল হলেই আমাকে জানাবে। আর বেশিরভাগ সময় আমার ঘারে বন্ধুক রাখবে।
-ঠিক আছে।
-তোমরা নিচে যাও, সকাল থেকে তোমাদের অনেক টেনসন দিলাম।
-নারে অনি তুই যে খেলা খেললি, এটা একটা মানুষকে খুন করার থেকেও বেশি।
আমি মল্লিকদার মুখের দিকে তাকালাম।

-এটা বিশ্বাস করো?

-নিশ্চই।

দাদারা নিচে চলে গেলেন, আমি দরজা বন্ধ করলাম, একটা সিগারেট ধরালাম, অনাদিকে ফোন করলাম।
-গুরু সত্যি তুই বড় খেলোয়াড়।
-কেনো।
-যে পুলিশ তোর সঙ্গে কথা বলার আগে আমাকে চমকাচ্ছিল, এখন সে দেখি আমায় ভরপুর তেল দিচ্ছে।
-কেনো।
-জানিনা।
-অমল কি করছে।
-কাল থেকে মাতব্বরি করছিলো, এখন হাওয়া। তোরা কখন রওনা হচ্ছিস?
-সকাল থেকে অনেক টেনসন গেলো, এবার রওনা হবো।
-তোর আবার কিসের টেনসন?
-আছে।
-তুই ছোটো কাজ করে পথ দেখালি, আমি একটা বড় কাজ সেরে ফেললাম।
-নে বাসুর সঙ্গে কথা বল।
-বল বাসু।
-কখন বেরোচ্ছিস?
-এই বেরোবো এবার।
-চিকনাকে খবর দিয়েছিস?
-হ্যাঁ।
-হ্যাঁরে দেবার বাবা-মা দুজনকে নাকি এ্যারেস্ট করেছে!
-হ্যাঁ।
-দেবার খবর কিছু পেয়েছিস?
-না।
-তুই ওখান থেকে একটু দূরে সরে যা।
-দাঁড়া। একটু চুপ থেকে বাসু বললো, অনি।

-বল।

-তুই ফোনটা কাট আমি আমার ফোন থেকে তোকে ডায়াল করছি।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণ পর বাসু ডায়াল করলো।
-হ্যাঁ, বল।
-শুনছি তো অনেক কথা, ও নাকি কলকাতায় কোথায় লুকিয়ে আছে।
-শেলি কি প্রেগনেন্ট ছিলো?
-পুলিশ জানে না, আমরা জানতাম।
-কি করে।
-সামন্ত ডাক্তারের কাছে মাঝে গেছিল দেবা, খালাস করার জন্য।
-তাই।
-হ্যাঁ।
-শেলি রাজি হয় নি। কয়েকদিন ধরেই গন্ডগোল চলছে, অনাদি সমাধান করতে চেয়েছিলো, দেবাকে অমল ব্যাক করলো।
আমি হাসলাম।
-তাই।
দরজাটা খট খট করে উঠলো।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি গিয়ে শুনবো।
দরজাটা খুললাম, সামনে দাঁড়িয়ে ইসলাম ভাই, ছোটমা। পেছনে মিত্রা, বড়মা তার পেছনে দাঁড়িয়ে ভজু। অমিতাভদা মল্লিকদাকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম তারা ব্যাপারটা জেনেছে।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
-তুই আমাকে ক্ষমা কর অনি।
-কেনো।
-তুই সব জেনেও এতদিন বলিস নি।
-আমি কি জানি যা তোমাকে বলিনি বলবে তো আগে।
-আমার সম্বন্ধে।
-তোমার সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না।
-আমায় ভজু এখুনি বললো। তুই বল ভজু সব মিথ্যে বলেছে।
-ভজু তোমায় মিথ্যে বলে নি, আবার সম্পূর্ণ সত্যিও বলেনি।
-ও যা বললো।
-ও যতটুকু লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছিলো সেইটুকু বলেছে।
-তাহলে তুই এতদিন আমাকে বলিসনি কেনো। আমায় বিশ্বাস করিস না।
-তুমিই তো একদিন বলেছিলে ইসলাম ভাই, ‘অনি বড় হতে গেলে তোর দুটো হাতকেও তুই বিশ্বাস করবি না।’ আমি কি অন্যায় করেছি বলো।
-আমি তোর সঙ্গে পারবো না।
-তুমি তো কোনোদিন হারতে জানো না। তুমিই তো বলেছিলে, পাঠানরা জঙ্গের ময়দানে হয় জেতে না হলে প্রাণ দেয়। তাহলে এই কথা বলছো কেনো।
-তোর মনে আছে।
-হ্যাঁ।
-তুই বললে আমি তোর পায়ে আমার মাথাটা ফেলে দিতে পারি।
কোনও কথার উত্তর দিলাম না। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
-বড়মার তোমাকে দেখার ভীষণ সখ ছিলো। এইভাবে তোমাকে দেখাতে চাই নি, ঘটনাটা ঘটে গেলো, কি করবো বলো।
-তুই আমার বোনকে আর মা বলে ডাকবি না।
-এ কথাও বা তোমাকে কে বললো।
-বোন বলেছে।
-দেখো ইসলাম ভাই, ছোটোমা যেদিন আমাকে জোর করে বলেছিলো, তুই আমার সম্বন্ধে জানতে চাইবি না, জানতে চাইলে আমার থেকে কেউ বেশি কষ্ট পাবে না। সেদিন থেকে আমি ওই চ্যাপ্টারটা ক্লোজ করে দিয়েছি। যেহেতু আমার ছোটো মা। মাকে কোনোদিন আমি কষ্ট দিতে পারবো না।
ছোটোমা আমাকে জাপ্টে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আমি কিছুক্ষণ নিশ্চলের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।
-ছোটো মা আমার এখানের কাজ শেষ, এবার বেরোতে হবে।
-না আমি যাবো না।
-যেতে তোমাকে হবে ছোটোমা।
আমার গলার কাঠিন্যে কেউ যেন ওদের গালে একটা কষে থাপ্পর কষালো। আমার দিকে সবাই অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-আমার আরো কিছু কাজ বাকি আছে, তোমাকে তার সাক্ষী থাকতে হবে। তোমরা চেয়েছিলে অনি তোমাদের বলে সব কাজ করুক, তোমাদেরও কিছু বলার থাকতে পারে।
-তোর কাছ থেকে আমি কোনোদিন আর কিছু জানতে চাইবো না।
-কেনো জানতে চাইবে না,
ছোটোমা চুপ করে রইলো।
-তাহলে তুমি আমাকে তোমার ছেলে হিসাবে স্বীকার করছো না।
ছোটোমা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঝর ঝর করে কাঁদছে।
-যাও তোমরা নিচে যাও আমি ইসলাম ভাই-এর সঙ্গে কিছু কথা বলে নিচে যাচ্ছি, দশ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে যাবো। দেরি হয়ে গেছে। কচুরি, জিলিপি তরকারি নিয়ে নেবে, গাড়িতে বসে খাবো।
ওরা নিচে চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ করলাম।

ইসলাম ভাই আমার পা জড়িয়ে ধরলো
-এটা কি করছো! আমি ইসলামভাই-এর হাতদুটো ধরে ফেললাম।

-আমি বে-জাত তুই আমার থেকে ছোটো কিন্তু তোর মন অনেক বড়ো।

আমি চুপ করে রইলাম।

-জানিস অনি তোর জন্য আমার বোনকে আমি ৩০ বছর পর ফিরে পেলাম। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।
আমি ইসলাম ভাইকে হাত ধরে তুললাম, ইসলাম ভাই আমার থেকেও এক হাত লম্বা।
-বল তুই আমায় কি করতে হবে।
-আমার কাজ শেষ তোমার কাজ শুরু করতে হবে।
-আমি দাদার মুখ থেকে নিচে সব শুনলাম, আমার জন্য কিছু বাকি রাখিসনি তুই।
-আছে। তোমাকে তিনটে অপশন দিচ্ছি তুমি বেছে নাও।
-বল।
-এক তুমি কলকাতা ছেড়ে এখুনি চলে যাও, দুই তুমি আমার সঙ্গে এখুনি চলো, তিন তুমি দামিনী মাসির কাছে গিয়ে থাকো।
-কেনো বল।
-মল তোমাকে ছাড়বে না। ও রাজস্থানী। একটা মরণ কামড় দেবে, সেটা যে কোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে, আমার মন বলছে আজকের মধ্যে।
মনে হচ্ছে আজকে প্রথম ইসলাম ভাই-এর পা দুটো একটু কেঁপে উঠছে।
-ও তোমার এ্যান্টি অবতারকে ফিট করতে পারে।
-তোর কথা মানছি। অবতার এ কাজ করতে ভয় পাবে।
-তুমি ভাবছো কি করে। আমি যদি বড়ে দিয়ে রাজা খেতে পারি ও পারবেনা কেনো, সকাল থেকে তুমি কোনো রেসপন্স করো নি। যদিও খেলা শুরু হয়ে গেছে।
-এ খেলার পরও তুই বলছিস ও করবে।
-শেষ ঝুঁকিটা ও নেবে। আমাকে আরও সাতদিন তোমায় সময় দিতে হবে।
-তুই বল কি করবো।
-আমার কাছে থাকাটা তোমার সবচেয়ে বেশি সেফটি।
-তুই কি তোর সঙ্গে আমায় যেতে বলছিস।
-হ্যাঁ।
-একটা মেশিন ছাড়া, আমি কিছু নিয়ে আসি নি।
-আমি তোমাকে এই মুহূর্তে ছাড়তে চাইছি না।
-আমাকে পনেরো মিনিট সময় দে।
-ঠিক আছে। বাড়ির বাইরে যাবে না। এখানে পৌঁছে দিতে বলো। যে ভাবে তুমি এসেছো সেই ভাবে।
-ভজুকে নিয়ে চল।
-তাই হবে। তোমার রাজত্ব কে সামলাবে।
-রতনকে বলেছি।
-তোমার ফোন।
-এটা আমার পার্সোনাল ফোন। কাজেরটা রতনের কাছে আছে।
-দেরি করবো না, বেরিয়ে পরতে হবে।
-ঠিক আছে। তুই যা বললি তাই হবে।

নিচে চলে এলাম।
দাদাকে সব বললাম, দাদা বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না, তুই যা। মল্লিকদা আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে না। অপরাধী অপরাধী মুখ করে বসে আছে। আমি কাছে গেলাম।
-ভেটকি মাছের মতো বসে আছো কেনো।
আমার দিকে তাকিয়ে মরা হাসি হাসলো।
-তুমি কি ছোটো মাকে ছাড়তে চাইছো না।
-না না তুই নিয়ে যা। সারা জীবন অনেক কষ্ট পেয়েছে, ওকে আমি কিছু দিতে পারি নি।
-তুমি দিতে না পারো তার ছেলে তো দিয়েছে, তুমি তাতে খুশী নও।
মল্লিকদা সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলেন।
-জানিস অনি আজ সকাল থেকে তোর লড়াইটা আমাকে অনেকটা বেঁচে থাকার ইন্সপিরেশন দিয়েছে। কালকে এক জায়গায় গেছিলাম, তুইতো গেলি না।
-আবার বক বক করে, পেটে কিছু কথা থাকে না। বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো।
মিত্রা হাসলো। ছোটোমা গম্ভীর।
-আমি জানি।
-তুই জানিস।
-তোমাদেরটা না, আর একজনেরটা। সে তোমাদেরটা বলেনি, বলেছে যার যারটা সে বলবে।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকালো।
-না গো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে, বানিয়ে বানিয়ে বলছে।
-ঠিক আছে আর দেরি করা যাবে না, পৌনে নটা বাজলো।
রবীন সব গোছগাছ করে নিয়েছে। ঝাক্কাস একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে। স্করপিও। ইসলাম ভাই তার কাজ এরই মধ্যে সেরে ফেলেছে, সবাই উঠে বসলাম। দাদাকে প্রণাম করে আমি সামনের সিটে বড়মারা মাঝের সিটে, বড়োমা মাঝখানে ছোটোমা, মিত্রা দুই জানলার ধারে।  পেছনে ইসলাম ভাই, ভজু। মিত্রা ঠিক আমার পেছনে।

সবাই চুপচাপ। আমি রাস্তার দু-পাশ ভালোকরে দেখতে দেখতে চললাম। কারুর মুখে কোনও কথা নেই। যে যার জানলার দিকে মুখ করে বসে আছে। সেকেন্ড হুগলি ব্রিজ দিয়ে গাড়ি কোনা বাইপাস হয়ে বম্বে রোডে এসে পড়লো।

সবাই চুপচাপ, ভেতরে হাল্কা এসি চলছে, বম্বে রোডে এসে আমি বললাম, বড় মা।
-বল।
-আমার কচুরী।
-মিত্রাকে জিজ্ঞাসা কর।
-রাক্ষুসী সব খেয়ে নিয়েছিস?
-যাঃ ও কথা বলতে হয়। ছোটো মা বললো।
ভিউইং গ্লাস দিয়ে দেখতে পাচ্ছি, ইসলাম ভাই মুখে ওর্না চাপা দিয়েছে।
-তুই আজ নির্ঘাত পায়খানা করবি। কাল থেকে খেয়ে যাচ্ছিস। চারটে কচুরী তাও লোভ সামলাতে পারলি না।
-চারটে না দশটা।
-এ্যাঁ বলিস কি। আমি পিছন ফিরলাম। তোর একটুও লজ্জা করে না।
-তুই সকাল থেকে খুন-জখম, মল নিয়ে পরে রইলি ভাবলাম ধাবায় বসে বেশ জমপেশ করে খাবো, তা না বড়মা কচুরী জিলিপি আনো তো। খিদে পেয়েছে খেয়ে নিয়েছি।
-তোর একটুও মনে হলো না, বুবুন খায় নি ওর জন্য এ্যাটলিস্ট দুটো রাখি।
-খাওয়ার সময় মনে ছিলো না। খাওয়া শেষ হতে মনে পরলো, তুই খাস নি।
এবার কেউ আর চুপ থাকতে পারলো না, হো হো করে হেসে ফেললো।
-শুধু আমায় বলছিস কেন? আমি একা খেয়েছি নাকি, তুই ছাড়া সবাই খেয়েছে।
-তোর মতো।
-না সবাই একটা একটা খেলো। ভজুকে বল না কিপ্টার মতো নিয়ে এসেছিলো কেনো।
-নাগো অনিদা বড়মা ৫০টা আনতে বলেছিলো আমি এনেছি।
-৫০টার মধ্যে তুই ১০ পিস। মানে ২০ পাসের্ন্ট। খেমা দে। সত্যি তোর পেট।
-কয়েকদিন হলো বুঝলি খিদেটা বেড়ে গেছে।
-বুঝেছি।
-আর বক বক করতে হবে না, তুই এই বিস্কুটের প্যাকেটটা নে। বড়মা বললো।
-বড়মা পুরোটা।
ভিউইং গ্লাস দিয়ে দেখলাম বড়োমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

-বুবুন তুই কি ভালো ছেলেরে, তুইতো সবাইকে দিয়ে খাস তাই না, তুই একলা খেতে পারিস না। দে আমাকে, সবাইকে ভাগ করে দিচ্ছি।
সবাই মুচকি মুচকি হাসছে।
-বড়মা।
-বল।
-একটা কাজ করবে।
-বল। কি কাজ?
-নিরঞ্জনবাবুকে একটা ফোন করো, বলো আমাদের সঙ্গে যেন আজকে যায়। তোমার ফোন থেকে করো।
-আচ্ছা।

-আর বিস্কুটের প্যাকেট আর আছে।
-পেছনে দিতে বলছিস তো।
-হ্যাঁ।
-দিয়েছি। মিত্রাকেও দিয়েছি একটা প্যাকেট। ছোটো নিরঞ্জনকে ফোনটা ধরে দেতো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, ও চোখ বন্ধ করে দুষ্টুমির ইশারা করলো।
আমি হাসলাম।
-তুই কিন্তু আমার সামনে বসে আছিস দেবো চুলের মুঠি ধরে।
-দাঁড়া বাপু তোরা।
-কেরে নিরঞ্জন। শোন আমি এখন…..কোথায় রে অনি…..তুই আমাদের সঙ্গে আজ যাবি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আয়…..শোন যা বলছি কর……ঠিক আছে…..মেরুন কালারের গাড়ি……দাঁড়া বাপু দিচ্ছি…… বলে দিচ্ছে।
ছোটোমা রবীনকে ফোনটা দিল রবীন গাড়ির নম্বরটা বলে দিলো।
-কটা বাজে বলতো। আমি বললাম।
-দেখ সামনের দিকে ঘড়ি আছে, তুই কানা।
সত্যি ঘড়ি আছে, দেখলাম, ১০টা বাজে।
ইসলাম ভাই-এর ফোনটা বেজে উঠলো।
আমি তাকালাম।
-আসসালামু আলাইকুম……..এ্যাঁ কি বলছিস…….তুই ওখানে সেঁটে যা…….আমাকে টাইম টু টাইম খবর দিবি……
-রবিন সাইড কর গাড়ি। রবিন একটু এগিয়ে গিয়ে গাড়ি সাইড করলো।
আমি গাড়ি থেকে নামলাম, মিত্রাকে বললাম, তুই ফ্রন্ট সিটে যা। আমি পেছনে গিয়ে বসলাম। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকালো।
-তোর কথাই ঠিক হলো। সাতদিন টাইম চেয়েছিলি। হলো না।
-কি হলো না?
-নিজে সুইসাইড করেছে। তোর ছেলেপুলেরা পাক্কা কাজ করছে। সত্যি অনি মাথা থেকে একটা বোঝা নামিয়ে দিলি তুই।
ইসলাম ভাই আমার হাতটা ধরলো, ছোটোমা পেছন দিকে তাকালো, হাসলো কিন্তু প্রাণ নেই। খুব আস্তে কথা হচ্ছে, বড়মা পযর্ন্ত শোনা যাবে। বড়মার ফোনটা বেজে উঠলো। বড়োমা নম্বরটা দেখে বললো।
-দেখতো ছোটো কি বলে, মরন ফোন করার আর সময় পেলে না।
-আঃ বড়মা গাল দিও না আমি দাদাকে বলেছি তোমার ফোনে ফোন করতে।
-সেটা আগে বলবি তো।
আমি বড়োমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ধরলাম।
-হ্যাঁ, বলো।
-শোন তোর সেই মিঃ মুখার্জী ফোন করেছিলো।
-কি বললো।
-কাজ হয়ে গেছে।
-দু বাড়িতেই।
-হ্যাঁ। ওদের এ্যারেস্ট করেছে।
-আর।
-একটা বাজে ব্যাপার হয়ে গেলো।
-কি।

-মল নাকি সুইসাইড করেছে।
-এটা তোমায় কে বললো, মিঃ মুখার্জী না অন্য কেউ।
-আমাদের ওই বাচ্চা ছেলেটা, যাকে তুই কভার করতে পাঠালি।
-মনে হচ্ছে ঠিক খবর পায় নি, আমি তোমায় একটু পরে ফোন করবো।
-লেখাটার এ্যাঙ্গেল তাহলে বদলাতে হবে।
-একটু দাঁড়াও পরে বলছি।
-ঠিক আছে, আমি তোর বড়মার ফোনেই তাহলে ফোন করবো।
-ঠিক আছে, মল্লিকদা ঠিক আছে।
-খবর শুনে খুব খুশি।
-আমাকে ফোন করে একটা থ্যাঙ্কস দিতে বলো।
-নে কথা বল।
-কি সাহেব কেমন বুঝছো।
-আমি আবার সাহেব হলাম কবে থেকে!

আমি হাসছি।

-একখানা গেরো উদ্ধার হলো।
-হ্যাঁ। আর একটা গেরো আছে। সেটা বলে আসি নি, তোমার তখন মন ভালো ছিল না।
-হ্যাঁরে, সকাল থেকে কি সব ঘটে গেলো।
-তুমি বলো, আমি যা করেছি ভুল করেছি।
-একেবারে নয়, আমি তোকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করি। কি বলছিলি বল।
-এটা তোমায় দায়িত্বে দিচ্ছি, তুমি পালন করবে, দাদা পারবে না।
-বল।
একবারে গলার স্বর নামিয়ে নিলাম।
-আজ অনেকে দাদার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। আগে তোমার সঙ্গে তারা কথা বলবে,
-তারপর দাদার কাছে পাঠাব।
-তারপর বুঝলে দাদার কাছে পাঠাবে। নিচে বলে দাও, আজ তোমরা ব্যস্ত। সন্দীপকেও এ কথা বলে দাও। আর একটা কথা।
-বল।
-মিঃ ব্যানার্জী আজ দাদার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।
মিত্রা ছোটোমা বড়মা পেছন ফিরে তাকালো। ওরা গোগ্রাসে আমার কথা গিলছে।
-কেনো!
-ও একটা মিউচুয়ালের অফার নিয়ে আসবে।
-কি বলছিস তুই।
-হ্যাঁ। পরের কোপটা ওর ওপর পরবে, ও সেটা জানে, বহুত শেয়ানা লোক, গন্ধ পেয়ে যাবে। কি বলে শুনে যাও। তোমার কাছে অতটা জোরাজুরি করতে পারবে না, দাদার পায়ে হাতে ধরে ফেলবে, উনি সব পারেন।
-কি বলবো।
-দিন পনেরো সময় নেবে, অনির সঙ্গে আগে কথা বলি তারপর, কাটিয়ে দাও। নাও ছোটর সঙ্গে কথা বলে মন ভালো করো।
ছোটকে ফোনটা দিলাম। ছোট বাঁকা ভ্রু করে আমার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ ফোনে কথা হলো হাসাহাসি হলো। কথা শেষ হতে বড়মাকে ফোনটা দিলো।
-হ্যাঁরে অনি, ডাক্তার এর মধ্যে এলো কি করে। বড়মা বললো।
-ছিলোই তো।
-এটা তো তুই আগে বলিসনি।
-দিদিগো ও একটা জিনিস, পাইথন আগে শিকারটা ধরে শিকারের মুখটা মুখে পুরে নেয় তারপর কিছুটা দম নিয়ে ধীরে ধীরে গিলে খায়। আমি ওই সময় ওকে খুব ভালো জাজ করেছিলাম। ইসলাম ভাই বললো।
-ঠিক বলেছো ভাই। হ্যাঁরে তোর এই মিশনে আর কটা আছে।
-জানিনা।
-ন্যাকামো করিসনা। তুই সব জানিস।
-বিশ্বাস করো।
-দিদি তুমি ওর পেট থেকে বার করতে পারবে না, দেখলে না আজ থেকে আট বছর আগের কথা আমি আজ জানলাম।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন, তুই এখানে এসে বোস।
-কেনো।
-বোসনা, দরকার আছে।
আমি পেছনের সিট থেকে টপকে মাঝের সিটে গিয়ে দুজনের মাঝখানে বসলাম। মিত্রা একবার পেছন ফিরে তাকালো। আমি হাসলাম।
-রবিন সামনে ধাবা পরবে জানিস তো।
-হ্যাঁ।
-ক্ষিদে লাগেছে দাঁড় করাস।
-তুই কি ভালো রে।
-খারাপ কোনদিন ছিলাম।
আমার দিকে তাকালো, কি খাওয়াবি।
-আমার পকেটে পয়সা নেই, তোর কাজ করলাম, খাওয়াবি তুই।
-হুঁ। মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
বড়মার দিকে হেলে পরলাম।
-বল তোমার প্রশ্নটা কি।
-ডাক্তার এর মধ্যে ভিড়লো কি করে।
-ডাক্তার তো ভিড়েই ছিলো, মিত্রা সব বলেছে নাকি তোমায়, আমাকেও বলে নি, উদ্ধার করতে হচ্ছে। এরা সব লতায় পাতায় জড়িয়ে রয়েছে। আগাছাও কিছু আছে।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, চোখে চোখ মনিদুটো স্থির। সকাল থেকে বড়মাকে অনেক বেশি বোঝদার মনে হচ্ছে, ঝটপট সব ধরে ফেলছে। আগে কখনো বড়মার পারফরমেন্স এরকম দেখি নি।
-তুই ঠিক বলছিস।
-তোমাকে অন্ততঃ ভুল বলবো না।
-কি করবি।
-সেটা তোমায় বলবো না কাজ শেষ হলে জানতে পারবে।
-ঠিক আছে। বলতে হবে না।
বড়মা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরলাম
-তুমি রাগ কোরো না, এখনো সময় হয় নি, সময় হলেই তোমাকে জানাবো।
-দাদা ধাবায় ঢুকবো তো।
-ঢোকাবে মানে! ওকে জিজ্ঞাসা করতে হবে নাকি? মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-আমরা এসে গেছি। আমি বললাম।
-হ্যাঁ।
-তাহলে ঢোকা।
রবীন গাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে একটা সাইডে গাড়িটা রাখলো।
আমরা সবাই একে একে নামলাম।

বড়মা আমাকে ধরে বললো দাঁড়া পা টা বড্ডো ধরে গেছে। ভজু বড় মার পায়ের কাছে বসে পরলো, একটু ঝাড়াঝাড়ি করে টিপে দিলো, বড়মা আমার কাঁধে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে ভেতরে এলো, আমরা সবাই একটা কেবিনে বসলাম, ভজু বললো, অনিদা আমি খাটে, ভজুর সাথে সাথে রবিনও বললো।
আমরা সবাই বসলাম। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো, বুবুন আলুপরোটা, চিকেন ফ্রাই, মটর পণির।
ইসলাম ভাই ছোটমার দিকে তাকালো, ইশারায় কি কথা হলো। ইসলাম ভাই বুঝেছে আমার চোখ এড়ায় নি।
-বড়মা তোমারটা বলো।
-কিরে ছোটো সবার জন্যই এক থাকুক।
ছোটো মা মাথা দোলালো। আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম।
-আমার কোনো ফ্যাসিনেসন নেই ছোটো ম্যাডাম যা বললো তাই বলে দে।
ছেলেটাকে ডেকে বলে দিলাম একটু তাড়াতাড়ি করিস ভাই।
-আচ্ছা।
ফোনটা অন করলাম, পর পর অনেকগুলো মিস কল দেখলাম। দেখলাম মিঃ ব্যানার্জীও তার মধ্যে আছে, মিঃ ব্যানার্জীও এর মধ্যে চারবার ফোন করেছে।
আমার পাশে বড়মা বসে আছে, কনুইয়ের গোঁতা মারলাম, বড়োমা আমার দিকে তাকাল।
মিঃ ব্যানার্জীর নম্বরটা দেখালাম, বড়মার চোখে বিস্ময়, সব নিস্তব্ধে হয়ে গেলো। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুচকি হাসলো।
আমি সন্দীপকে ফোন করলাম।
-লেটেস্ট নিউজ বল।
-সব কাজ সেরে সবে মাত্র অফিসে ঢুকলাম।
-দাদা কোথায়।
-দাদা দাদার ঘরে, মল্লিকদা মল্লিকদার টেবিলে।
-তুই কোথায়।
-প্রচুর খিদে পেয়েছিলো, ক্যান্টিনে এসেছি।
-ছেলেগুলো।
-পাশেই আছে।
-ঠিকঠাক কাজ করেছে।
-তোর চোখ আছে অনি।
আমি ভয়েজ অন করলাম রেকর্ডিং চালু করলাম।
-ছোটো করে ডিটেলস দে।
-তোর কথা মতো সব কাজ হলো। একটা খারাপ খবর আছে।
-বল।
-শালা মরেও মরেনি, মরলে ভালো হতো।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে গোগ্রাসে গিলছে।
-ছোটো না বড়।
-বড়।
-কেনো
-চেষ্টা করেছিলো, মুখার্জী চালু, হাত ধরে ফেলেছে, উডল্যান্ডে নিয়ে গেছে। মাছি গলতে পারবে না।
-বেঁচে আছে।
-লাস্ট আপডেট মুখার্জী বলছে বাঁচালাম বটে, ডাক্তার কোনো গ্যারেন্টি দিচ্ছে না।
-কোমা না অজ্ঞান।
-সেটা মুখার্জী বলে নি, তুই ফোন করে জেনে নে, তোকেই একমাত্র বলবে।
-ঠিক আছে, লেখাটা গোছা আমি ফোন করবো।
ফোনটা কেটে দিলাম, খাবার এলো, ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম, ইসলাম ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। খাওয়া শুরু করলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-সব খেতে পারবি তো।
-আমি আমার মতো খাবো, তুই খা না।
-তোর তো অনেক খিদে আমার থেকেও।
-তোর খাওয়া আমার খাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। দেখছো বড়মা, তুমি কিছু বলো।
-আচ্ছা আচ্ছা তুই খা।
-বড়মা আমার দিকে তাকালো, এবার কি করবি।
চোখে চোখ রেখে বললাম, গলাটা আস্তে।
-কিচ্ছু না, আমাকে কিছু করতে হবে না, মুখার্জী তার প্রয়োজন মতো ওকে রাখবে।
-তোর কি মনে হচ্ছে।
-ভেন্টিলেসনে রেখেছে।
-তুই বুঝলি কি করে।
-সন্দীপকে বলে নি আমি জানি। এখানে বসেই বলছি, মুখার্জীর ফাইল তৈরি হয়ে গেলেই, ভেন্টিলেসন খুলে দেবে। দেখলে না সন্দীপ কি বললো, মাছি গলতে পারবে না। ম্যাক্সিমাম সাত দিন।
বড়োমা আমার দিকে তাকিয়ে।
এমনকি বড়মা তোমায় একটা কথা বলে রাখছি এ্যাডভান্স, তুমি মিলিয়ে নিও,এ্যাকচুয়েলি ওদের সঙ্গে চলাফেরা করে যেটুকু বুঝেছি।

বড়োমার চোখের পাতা পড়ছে না।

ইসলাম ভাই যে আমার সঙ্গে আছে এটাও মুখার্জীর কাছে খবর আছে।
-সে কি রে।
-তুমি বলবে, তা সত্বেও তুই ইসলাম ভাইকে নিয়ে এলি কেনো।
-কলকাতায় থাকলে ও এই মুহূর্তে সেফটি নয়, জিজ্ঞাসা কর ইসলাম ভাইকে আমি বলেছি কিনা।
বড়মা ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালো, ইসলাম ভাই মাথা নীচু করে বসে আছে।
-ইসলাম ভাই-এর নেটওয়ার্ক থেকে ওদের নেটওয়ার্ক আরো বেশি স্ট্রং। আমি দুটো নেটওয়ার্ক দেখেছি, তাই আমার নেটওয়ার্ক আরো বেশি স্ট্রং হওয়া উচিত।
বড়মা আমার কথা শুনে থ।
-তুমি বলছো আমি কি করে অবলিলায় তোমায় গল্পের মতো এসব বলছি।
-হ্যাঁ।
-আমি দাবা খেলি, দাবার বোর্ডে ৬৪ ঘর। আমি একটা চাল দিয়ে ৫০টা পরের চাল মনে রাখতে পারি, আমার অপনেন্ট কি চাল দিলে আমি কি চাল দেবো, মানে ১০০ চাল আমায় মনে রাখতে হয়, ইসলাম ভাই ৩২টা পারে মুখার্জী ৪০টার বেশি পারে না। তাই এদের থেকে আমি এগিয়ে।

কিন্তু এইটা ভেবো না, আমি মিঃ মুখার্জী বা ইসলাম ভাইকে ছোটো করছি। আজকের চালটা আমি ঘোড়ার চাল দিয়েছি, একটা ঘোড়া একটা ঘরে বসে আটটা ঘর বল্ক করে রাখে। আমি আমার দুটো ঘোড়া দিয়েই ১৬ ঘর বেঁধে রেখেছি, এরপর গজ, নৌকা তো আছেই ওগুলো হাতের পাঁচ। আমি আজ তাই করেছি।
-একি বলছিস অনি, বড়োমার চোখ গোল্লা গোল্লা।
-আমি কখনও এরকম করে ভাবি নি? ইসলামভাই বললো।

-আমি জানি। জানি বলেই তোমার সামনে বড়মা ছোট মাকে বলছি। ছোট মা তোমার নাম শুনেছে, দেখেনি, তুমি যে ছোটোমার ভাই সেটাও আজ কাছে এলো। আমি আট বছর আগে মেরিনাদির মুখ থেকে কি জেনেছি সেটা ভুলে যাও। পাস্ট ইজ পাস্ট।
বড়মা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, মিত্রার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ছোটমার চোখ স্থির। মিত্রা একটু দূরে বসেছিল প্লেটটা নিয়ে বড়োমার পেশে চলে এলো।

-বেশ তো ছিলি এখানে এলি কেন?

-তোর কি।

-থাক শুনুক। ওর বোঝার দরকার আছে। বড়োমা বললো।

-মল তার স্টেটমেন্টে ইসলাম ভাই-এর নাম জড়াবে। অবশ্য যদি জ্ঞান থাকে, তাই ওকে খোঁজাখুঁজি হবে, আমার সঙ্গে থাকলে ওকে ধরা অতো সহজ হবে না। ইসলাম ভাইকে আমার কাছে রেখে মিঃ মুখার্জীকে একটা বার্তাই পৌঁছে দেওয়া, ইসলাম ভাই এখন আমার পকেটে আছে, আমার পকেটে তুমি হাত দিও না, বেশি নড়াচড়া করলে তোমারও বিপদ আছে, তোমাকে যেমন সোহাগ করছি, শাসনও করতে জানি।
বড়মা আমার মাথায় হাত রাখলেন।
-ভাবছ নাক টিপলে দুধ পরে একটা বাচ্চা ছেলে এরকম পাকা পাকা কথা বলছে কি করে।
কি জানো বড়মা দারিদ্রতা, অভাবের কোনো জাত নেই ধর্ম নেই, আমার একটা পিরিয়ড এরকম কেটেছে, তখন আমি দারিদ্রতার আগুনে পুরে অভাবের কাঠ কয়লা তৈরি হয়ে গেছিলাম, কিন্তু দেখো আমার সব ছিলো, কোনো অভিভাবক ছিল না।নিজেই নিজের অভিভাবাক ছিলাম।  সেই অভিজ্ঞতাগুলো এখন কাজে লাগাচ্ছি।
এরপর তুমি বলবে, ওরা কি তোর কোনো ড্র ব্যাক জানে না, জানে একটাই ড্রব্যাক, আমার এই পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই, বছর খানেক পরে ওরা জানবে আমার কিছু রিলেসন তৈরি হয়েছে, এবার তাদের ওরা ডিস্টার্ব করবে, আমাকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করবে, যেমন তুমি ছোটো মা মিত্রা এখন এই মুহূর্তে আমার কাছের লোক, তোমাদের ওপর ওদের নজর পরেছে।
-তুই মাথায় রাখিস অনি তোর কথা যদি সত্যি হয় তাহলে ইসলাম ভাই-এর থেকে হিংস্র আর কেউ হবে না।
-এটা তোমার রাগের কথা ইসলাম ভাই।
-কেনো বলছিস।
-ওরা গেজ করছে তারপর একটু নারা চারা দেবে। তুমি বলোতো ইসলাম ভাই তুমি যার সঙ্গে টক্কর নিতে যাবে তার ক্ষমতা কতটা, তুমি মেপে নেবে না।
-অবশ্যই।
-তুমি মলের সঙ্গে টক্কর নিতে পারো নি, কমপ্রোমাইজ করেছো, এতে তোমার কিন্তু ক্ষতি হয়েছে, হয়নি।
-হ্যাঁ তা হয়েছে।
-আমি কমপ্রোমাইজ করিনি,  সরাসরি হিট করেছি। কেন? অফিসের মিটিং-এর দিন ও আমাকে ভালো করে মেপেছে। ওর মতো মাল আমাকে অতো সহজে নিজের শেয়ার সই করে দেবে এটা নট আ জোক। এরপর আমি ওকে দুটো বার্তা পাঠিয়েছি। তাতে বুঝিয়ে দিয়েছি তুমি বেশি বারাবারি করলে তোমার আয়ু ওখানেই শেষ। ও কিন্তু আমার পরীক্ষা নিয়েছে। আমি সেই পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি।
-তোমার কাছে কতদিন আমি গেছি।
-সাতদিন।
-এরপরও তোমার মনে হয় নি, আমি একটা আঘাত করতে পারি মলকে, এবং মল সেটা মেনে নিতে বাধ্য।
-শেষদিন সেটা বুঝেছিলাম।
-কেনো তুমি প্রথম দিন বুঝতে পারোনি।
-সেদিন তোকে এতোটা সিরিয়াস দেখি নি।
-দেখো ইসলাম ভাই আজ বলছি, আমি প্রথম দিনও সিরিয়াস ছিলাম, শেষ দিনও সিরিয়াস থেকেছি। শেষ দিন হয়তো আমার উগ্রতা আমার চোখে মুখে ফুটে বেরোচ্ছিল তাই তুমি ধরতে পেরেছিলে তাই না।
-হ্যাঁ।
-তোমার এ ভুল হলো কেন! হওয়ার কথা নয়। সেই সময় অনি তোমার কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে যায়নি। এটা একটা সিরিয়াস ব্যাপার।

-আমি ঠিক ততটা গুরুত্ব দিইনি?

-এইটা তোমার মাইনাস পয়েন্ট।

সবাই চুপ। মিত্রার দিকে তাকালাম।

-আর কিছু নিবি?

-তোর চিকেন ফ্রাইটা তুলে দে।

আমি প্লেটটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম।

মিত্রা হাসছে। খেতে খেতেই বললাম।

-আমি এখন আইনের জটিল ব্যাপারগুলো নিয়ে একটু পড়াশুনো করছি,
তুই আর কতো পড়বি, তন্ত্র পরবি, আইন পরবি। মিত্রা ফুট কাটলো।

-ছাগল। চিকেনটা দিলাম ভালো করে খা।

-দেখছো বড়োমা?

-তুই তন্ত্র পড়িস? বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/qDwx0QB
via BanglaChoti

Comments