কাজলদিঘী (দ্বাবিংশ কিস্তি)

কাজলদিঘী
BY- “জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

দ্বাবিংশ কিস্তি
—————————

-তোকে আর কোনওদিন কিছু বলবো না।

-আচ্ছা আর বলবো না। স্লিপ অফ টাং।

-জিভ কেটে বাদ দিয়ে দে।

-বোবা হয়ে যাব।

-ওটাই ভালো তোর পক্ষে। নাহলে কেউ কিল মারবে আর গল গল করে বলে দিবি।

-আর বলবো না। মিত্রা মাথা নিচু করলো।

-যা বলছিলাম। আইনটা পড়ছি তোমাদের তিনজনকে সেফ্টি রাখার জন্য। ওটা সংবিধান স্বীকৃত। রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত মানতে বাধ্য।

-কিরকম? বড়োমা বললো।

মিত্রা মুখ তুলে তাকাল।”

-একটা উদাহরণ দিচ্ছি তোমায়, বুঝে নিতে হবে তোমাদের আমার নেক্সট পদক্ষেপ। ইসলাম ভাই তুমিও শোনো মন দিয়ে, অনেক ছুটেছো সারা জীবন, বয়স হয়েছে, ক্লান্তি আসবে, এখন তোমার থিতু হওয়ার সময়।
-বল।
বড়োমার মুখের দিকে তাকালাম।
-ধরো ভজু তোমার বাড়িতে এখন সারাক্ষণ আছে, মানে ২৪ ঘন্টা, তোমার দেখভাল করে ও। তোমার দায় অদায়ে ও তোমার নিত্যসঙ্গী, আর আমি আদার ব্যাপারী, তোমার কাছে যাই, কিছুক্ষণ সময় কাটাই, তোমায় বড়মা বড়মা বলি, তুমি আমায় খেতে পরতে দাও, বেশ এই পযর্ন্ত তারপর চলে যাই। তোমাকে আমি খুন করবো, আমার একটা শাস্তি হবে, আবার ভজু তোমায় খুন করবে তার একটা শাস্তি হবে। বল কি শাস্তি হতে পারে আমার আর ভজুর।
-মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন।
আমি মুচকি হাসলাম।

-হাসছিস কেন! বড়োমা বললো।

-ইসলাম ভাই তুমি।
-দিদি যা বলল তাই।
-মিত্রা তুই।
-বলতে পারবো না।
-ছোটোমা।
-তোর কথা এতো গভীর আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
-আমার যাবজ্জীবন হবে, ভজুর মৃত্যুদন্ড।
-কেনো! তিনজনেই বলে উঠলো।
-দুজনে একই কাজ করেছে শাস্তি আলাদা আলাদা কেনো। বড়োমা বললো।
-হ্যাঁ।
-এটাই আইন, তারও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আছে।
-কি রকম।
-ভজু তোমার কাছে থাকে, মানে দাদা তোমায় ভজুর কাছে রেখে নিশ্চিন্ত। তার জিনিস ভজুর কাছে ঠিকঠাক গচ্ছিত আছে, এই বিশ্বাসটুকু সে অর্জন করতে পেরেছে বলেই, দাদা ভজুকে তোমার কাছে রেখেছে। এখানে ভজুর খুনটা দেখা হবে, রক্ষক যখন ভক্ষক তার পানিশমেন্ট মৃত্যুদন্ড, আর আমার সঙ্গে তোমার রিলেসন আছে ঠিক কিন্তু আমি ততটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নই ভজুর মতো, আমি লোভের মারে তোমাকে খুন করেছি, তাই তার পানিশমেন্ট যাবজ্জীবন।
ইসলাম ভাই চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
-অনি এতদিন তোকে আমি আন্ডার এস্টিমেট করেছিলাম, ভাবতাম তুই পড়ালেখা করা ছেলে, আমাদের লাইনের ঘাঁত ঘুঁত তুই বুঝিস না, তুই সাংবাদিক আমার কাছে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসিস, এখন দেখছি তুই তো আগুন, তোর আগুনে পুরে মরতেও ভালো লাগছে।
-মুন্না ওকে ছাড় তোর দশাসই চেহারার মধ্যে ওর রোগা পেঁটকা শরীর ঢাকা পরে গেছে, ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে। ছোটোমা বললেন।
মিত্রা হাসছে।

ছোটোমা যা বললো, সত্যি তাই, ইসলাম ভাই আমাকে আবেগের বশে এমন জাপ্টে ধরেছিল আমার প্রায় দম বন্ধ হয়ে যাবার দশা।
আমি কিছুক্ষণ খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করলাম। সবাই চুপচাপ।
-তার ওপর কি জানো বড়মা মিত্রা আমাকে ফোঁকটসে একটা সিলমোহর উপহার দিয়েছে।
-কি?
– মালিক।
-শয়তান। দেখছো বড়মা, এই সিরিয়াস কথার মধ্যেও ও কিরকম আমায় টিজ করছে।
-উঃ তুই কি ওকে খোঁচা না দিয়ে থাকতে পারিস না।
-আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মিত্র, আবার বড় শত্রুও।
-বলবি না। জানো বড়মা কলেজ লাইফে নোট লিখে দিয়ে আমার কাছ থেকে দুটাকা করে গেঁড়াতো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। ছোটোমা বিষম খেলো।
-সেখান থেকেই তুই শুরু করেছিস, আরো বলবো তোর গুণকীর্তন, নুন দেওয়ার তো জায়গা রাখিস নি, এখনোতো সব বলিনি, আমি তোর শত্রু হবো নাতো কে হবে।
ইসলাম ভাই না পারছে হাঁসতে, না পারছে কিছু বলতে, ছোটমার বিষম থামলো, জলের গ্লাসে মুখ দিলো।
-বাবাঃ তোর কি রাগের শরীর।
-আবার খোঁচা দিচ্ছিস। একটু আগে কি বলছিলি। ছোটমা বললো।
-আচ্ছা খা মন দিয়ে খা। আইসক্রিম বলি।
-বল প্লীজ বল। এরপর আইসক্রিমটা খেলে বেশ ভালো জমবে।
-ঠিক আছে আগে যেগুলো সাজিয়ে রেখেছিস খেয়েনে তারপর বলছি।

ছোটোমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

আমার বলার ধরনে ইসলাম ভাই এবার হেঁসে ফেললো। ইসলাম ভাই-এর হাঁসির চোটে ছোটো কেবিনটা গম গম করে উঠলো। বড়মাও হাঁসছে, ছোটো মাও হাসছে।
-শয়তান, দাঁড়কাক, মেনিবিড়াল।
-সেটা কি রে। ছোটমা বললো।
-এই নামেই তো ওকে কলেজে সবাই ডাকতো।
-আইসক্রীম বন্ধ।
-না না এরকম করিস না, আর বোলবো না।
সবাই হাসছে।
কেবিনের দরজা ঠেলে নিরঞ্জনবাবু ঢুকলেন,
বড়োমার দিকে তাকিয়ে বললেন—
বাবাঃ এতো দেখছি জোর মজলিশ বসিয়েছো।
বড়মা বললেন থাম কথা বলিস না, এখানে এসে বসে পর।
নিরঞ্জন বাবু সোজা এসে আমাদের পাশে বসলেন।
-কি করে জানলি আমরা এখানে।
-বাইরে একখানা জব্বর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছো, গায়ে লেখা প্রেস।
বড়োমা হাসলো।
-তারপর এদের জিজ্ঞাসা করলাম। বলে দিলো।
একটা ছেলে এসে বললো, স্যার আপনার জন্য কিছু পাঠাই।
-না কিছু লাগবে না।
-কেনো।
-পান্তা খেয়ে বেরিয়েছি।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
-হাসছিস কেনো রে মিত্রা।
-দেখলেনা কিরকম কম কম খেলো, আমাকে বললো তুই খা না খা, বাড়িতে গিয়ে পান্তা গিলবে, তুই কি ভাবছিস একা খাবি, আমিও খাবো।
-কচুপোরা।
-দেখিস তোকেও খেতে দেবো না। চিংড়িমাছের টক দিয়ে ওঃ বড়মা কি বলবো তোমায়। জিভ দিয়ে টকাস করে আওয়াজ করলো মিত্রা।
মিত্রার রকম সকম দেখে সবাই হেসে খিল খিল।
-এই চলছে তখন থেকে। বুঝলি নিরঞ্জন তাই এতো হাসি।
-সত্যি দিদি তুমি তোমার ছেলে মেয়ে দুটিকে ভালো পেয়েছো।
-কি দাদা নতুন অতিথিকে ঠাহর করতে পারছো না। তাই না।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে হসলো।
-সত্যি অনি তোর চোখ।
-আমার ফ্রেন্ড ফিলোজফার গাইড, মুন্না ভাই। থাকেন বোম্বাই, তিনটে জাহাজ আছে। মিডিল ইস্ট থেকে তেল আনে খালি। তেল বেচে এরকম দশাসই চেহারা বানিয়েছে।
ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
-মুন্নাভাই ইনি হচ্ছেন নিরঞ্জনবাবু, এই জেলার সভাধিপতি, বলতে পারো মুখ্যমন্ত্রী।
-যাঃ কি বলিস তুই।
-কি খাবে বলো, ঠান্ডা না গরম।
-আমি আনাচ্ছি।
-ও সব ব্যাপার অন্য জায়গায়, তুমি এখন আমাদের গেস্ট, আমরা যা বোলবো তাই।
-তোরা কি খাবি।
-মিত্রা বাদে সবাই গরম। তাই তো।
-আমি ঠান্ডা গরম দুটোই খাবো।
বড়মা হাসতে হাসতে বললো, সত্যি মিত্রা তুই পারিস।
-খরচ ওর, খাবোনা কেনো, ও যে কি হার কিপ্টা জানো না, হাত দিয়ে জল গলে না।
আবার সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
মিত্রা দুটোই খেলো, তবে গরম খেয়ে ঠান্ডাটা হাতে নিয়ে নিলো, আমরা কফি খেয়ে সবাই বেরিয়ে এলাম। বড়মাকে বললাম, তুমি মিত্রা ছোটোমা নিরঞ্জনদার গাড়িতে ওঠো দেখছি টাটাসুমো নিয়ে এসেছে। আমরা এই গাড়িতে উঠি। কি নিরঞ্জনদা অসুবিধে আছে নাকি।
-একেবারে না, অনেক দিন গল্প করা হয় নি দিদির সঙ্গে, গল্প করা যাবে।
-আর একটা ফাউ দিলাম, মালকিন।
-বড়মা তুমি কিছু বলবে না, আগে ওর কান ধরো।
-আচ্ছা আচ্ছা ধরবো।
আমি পয়সা মেটাতে গেলাম। কাউন্টার থেকে কিছুতেই পয়সা নিলো না।

নিরঞ্জনদাকে এসে বললাম, এটা কিরকম হলো।

-আমি না এলে হয়তো নিত। আমি এসে পড়েছি। কি করবো বল।

আমি আর কথা বারালাম না। 

আমরা আমাদের মতো নিজেদের গাড়িতে উঠলাম। বড়মারা নিরঞ্জনদার গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়ি চলতে শুরু করলো।

আমরা নিরঞ্জনদার গাড়ির পেছন পেছন। আমি ইসলাম ভাই মাঝের সিটে, ভজু সামনের সিটে। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকালেন
-তুই সত্যি অনি অনেক ম্যাচুয়র হয়ে গেছিস এই কদিনে।
-কেনো।
-দিদি একবার নামটা বললো, আর তুই সেটা দিয়ে কি খেলা খেলে দিলি।
-এছাড়া উপায় কি বলো।
-দাঁড়াও অনেকক্ষণ ফোন করা হয় নি একবার ডায়াল করে নিই সব কটাকে।
প্রথমে অনাদিকে ফোন করলাম।
-কিরে তোরা এখন কোথায়।?
-কেনো?
-আমরা চকে এসে সব বসে আছি!
-তার মানে!
-ওপরতলা থেকে খবর এসেছে, নিরঞ্জনদা তোদের সঙ্গে আসছে, তুই সত্যি অনি খেল দেখাচ্ছিস।
-কাজের কথায় আয়।
-বল।
-বাড়িতে যা যা বলেছিলাম সব রেডি।
-একেবারে, বরং একটু বেশিই আছে।
-বাঃ একটা কাজ করতে হবে।
-বল।
-আমার সঙ্গে দুজন গেস্ট আছে। বাড়তি বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে।
-তোকে চিন্তা করতে হবে না। দুজন কেনো, দু হাজার জন যদি আসে তোকে চিন্তা করতে হবে না। তুই এতো করছিস আমার জন্য, আমি এটুকু করতে পারবো না।
-পোস্ট মর্টেমের খবর কি।
-এখনো সরকারি ভাবে পাই নি, বেসরকারী ভাবে, শেলি প্রেগনেন্ট ছিলো।
-হু
-সেটাতো তোকে সকাল বেলা বললাম। বিষ খেয়েছে, তবে গলায় হাতের চিহ্নও আছে, তার মানে বোঝায় গলা টিপে খুন।
-আর কিছু।
-না মাথা থেকে সব ঝেরে ফেলে দিয়েছি।
-ওকে এ্যারেস্ট করেছে কিনা কিছু জানিস।
-না। নিরঞ্জনদা বলেছে এর মধ্যে একেবারে মাথা গলাবি না, বাকিটা আমি বুঝে নেবো।
-ঠিক আছে আমরা ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে যাবো।
-আয়।
ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলাম ভাই হাসছে।
সামনের গাড়িটা থামলো। পেছন পেছন রবিন গাড়ি দাঁড় করালো। আমি নামলাম, মিত্রা মুখ বাড়িয়ে বললো দাদা তোকে চাইছে।
আমি নেমে গিয়ে বড়োমার ফোনটা হেতে নিলাম।
-বলো।
-লাস্ট আপডেট কিছু দিলি নাতো।
-কেনো, মুখার্জীর সঙ্গে কথা বলো নি।
-বলেছিলাম, সকালে যা বলেছিলো তাই বলেছে।
-পোস্টমর্টেম রিপোর্ট।
-এসপি বললো এখনো হাতে আসে নি, ওরা তো জানেইনা ছেলেটা এ্যারেস্ট হয়েছে।
-তাই।
-কি করবি এদের নিয়ে।
-নিরঞ্জনদা গাড়িতে বসে আছে, জিজ্ঞাসা করো নি কেনো।
-ও তোদের সঙ্গে যাচ্ছে!
-হ্যাঁ।
-তোর বড়মা যে ভাবে মুখ ঝামটা দিলো।
-কথা বলে নাও।
-দে।
নিরঞ্জনদার হাতে দিলাম ফোনটা।
-কথা বলো।
-আমি কি বলবো…..বাবা এত ঘটনা ঘটে গেছে…….সময় পেলাম কোথায় দিদি যা তাড়া লাগালো…..ঠিক আছে আমি বলে দিয়ে দিচ্ছি।
তোমায় একটা ফ্যাক্স করে দেবে।

আমায় আবার ফোনটা দিল।

বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এখনো কথা শেষ হয় নি। দিস তো আমায় ফোনটা।
-হ্যাঁ বলো।
-তোর বড়মা রাগ করছে না।
-সে তো সব সময় করে।
মিত্রা বুঝতে পেরেছে হাসছে।
-তাহলে তুই যে ভাবে বলেছিলি সেই ভাবেই দাঁড় করাই।
-তুমি যা ভালো বোঝো। ছেলেদুটো কেমন লিখেছে।
-দারুন, তোর চোখ আছে।
-ঠিক আছে আমি মিঃ মুখার্জীর সঙ্গে কথা বলে তোমায় জানাচ্ছি, হ্যাঁগো অফিসের পরিস্থিতি।
-পুরো ঠান্ডা।
-যাক এটা গুড নিউজ।
-সবাই যে যার ঘর গোছাতে ব্যস্ত। চম্পকের মুখ একেবারে শুকিয়ে গেছে।
-এই প্রেসারটা কনটিনিউ করতে বলবে সনাতন বাবুকে। এখন থেকে তুমি আমার ফোনে ফোন কোরো বড়মাকে আর বিরক্ত করতে হবে না, আমি ফোন অন করে রাখছি। বড়মা কথা বলবে।
-একটু ঘুরতে…… সহ্য হচ্ছে না……কেনো ছেলেটা সকাল থেকে সব তো গুছিয়ে দিয়ে এলো……কি খেলে…….
আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।
বড়মা ফোনটা কেটে আমার দিকে এমনভাবে তাকালো, চোখের ভাষা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। মনের ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখতে হয়।

-তুই হাসলি কেন?

সবাই আমার দিকে তাকাল। আমার চোখেই উত্তর লেখা আছে।

-দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।

আমি হাসতে হাসতে গাড়িতে এসে বসলাম। রবিন গাড়ি স্টার্ট দিলো। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকালো।
-কি হলো। ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো।
-তোকে দেখছি।
-আমি অত্যন্ত নগন্য মানুষ তোমার কাছে।
-আর বলিস না।
-কেনো।
-এখুনি ফোন এসেছিলো, তোর কথা ঠিক।
-কি বলছে
-আমাকে একটু দরকার ছিলো এই বললো। হাসলাম
-দাঁড়াও মিঃ মুখার্জীকে একবার ফোন করি।
-কর। কি বলে শোন।
-তোমাকেও শোনাচ্ছি।
ফোনটা তুলে ডায়াল করলাম। হ্যালো বলার আগেই মিঃ মুখার্জী বলে উঠলেন।
-আরে অনিবাবু বলুন।
-খাওয়া দাওয়া করে হাত ধোয়া হোলো।
-সে তো অনেকক্ষণ।
-লাস্ট আপডেট দিলেন না।
-কেনো দাদাকে দিয়ে দিয়েছি।
-ভেন্টিলেশন কখন খুলছেন।
-এটা আবার আপনাকে কে বললো।
-খবর পেলাম।
-আচ্ছা, ওই ঘরে কেউ যেতে পারবে না, আমি সেই ব্যবস্থা করে এসেছি।
আমি হাসছি।
-আপনার লোক ঢুকলো কি করে?
-আমি কিন্তু কালকে ছবিটা ছাপবো।
-না না এসব করতে যাবেন না, তাহলে আমার কাজ আটকে যাবে।
হাসলাম। আর বলুন।
-আপনি যা যা নথি পত্র দিয়েছিলেন, সেই সব জায়গায় হানা দিয়েছি। কাজ হয়েছে।
-তাহলে ঘটনাটা ঘটলো কি করে।
-আর বলবেন না। বললো বাথরুমে যাবো। কারুর বাথরুমে যে ওয়েপনস থাকে এটা প্রথম জানলাম। তাও দরজা বন্ধ করতে দিই নি, কিছুটা খুলে রেখেছিলাম।
-ঢোকার আগে সার্চ করেননি?

-তা আর বলতে।

-কোথায় লেগেছে।
-কানের নিচে, তাই টেঁকাতে পারলাম।
-কি মনে হচ্ছে।
-ওই যে আপনি বলে দিলেন, কাজ ফুরোলেই খুলে দেবো।
-এইবার আমার একটা উপকার করতে হবে।
-বলুন।
-আমার কিছু টাকার প্রয়োজন।
-কতো।
-এখন নয়, মাসখানেক পর।
-কেনো।
-আমি যেখানে আঠারো মাস কাটিয়েছিলাম, সেখানে কিছু কাজ করতে চাই। বলতে পারেন একটা এনজিও। আমার এক দাদা করতে চাইছেন, ওই সব অর্গানাইজ করছে।
-সত্যি অনিবাবু আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করি।
-কেনো।
-তার টাকার অভাব, সেতো আপনার সঙ্গেই আছে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আমি হাত দেবো না। আর টাকার কথা বলছেন, এই কাজে টাকা দেওয়ার লোকের অভাব হবে না।
-কি করে বুঝলেন।
-আপনি দুটো বাড়ির এ্যাড্রেস দিয়ে দেখতে বলেছিলেন, আমি অত্যাধিক ইনিসিয়েটিভ নিয়ে আপনার বাড়ির ওপরও লক্ষ্য রেখেছিলাম।
-গুড। কালকে নিউজে আপনার নামটা ঢুকিয়ে দিই। আর একটা ছোট্ট ইন্টারভিউ।
-করতে পারেন।
-তাহলে কাউকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-দিন, আপনার দেশের বাড়িতে আমাকে ইনভাইট করলেন না।
-এপ্রিলে।
-কেনো।
-সেই সময় আর একটা বড় কাজ করবো তখন।
-ঠিক আছে, অপেক্ষায় রইলাম।
ফোনটা কেটে দিয়ে, ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলাম ভাই মুচকি মুচকি হাসছে।
-আমাকে নিয়ে কি করবি বলছিলি।
-তাড়াহুড়ো করছো কেনো, দেখো না কি করি।
-না মনে হচ্ছে তোর কথাই ঠিক, আমাকে এবার থিতু হতে হবে, অনেক দৌড়েছি।
-দাঁড়াও দাদাকে লাস্ট আপডেটটা জানিয়ে দিই। ফোন করে দাদাকে লাস্ট আপডেট দিলাম।
চকে এসে গাড়িটা দাঁড়ালো।
আমি গাড়ি থেকে নেমে নিরঞ্জনদার গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম,  নিরঞ্জনদা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে।
বড়মা বললেন
-ও অনি আমি আর এ গাড়িতে বসবো না, সরকারের যেমন অবস্থা, নিরঞ্জনের গাড়ির অবস্থাও ঠিক তাই।
আমি দরজা খুলে বড়মাকে ধরে ধরে নামালাম, বড়োমা একবার চারদিকটা দেখে নিল।
-এটা চক।
-সে তো বুঝলাম, ওওরে বাবারে, আমার কোমর ভেঙে ফেললে রে।
আমি বড়োমার হাতটা ধরলাম।
– দিয়েছি নিরঞ্জনকে আচ্ছা করে, ও নাকি এখানের মুখ্যমন্ত্রী, মরণদশা।
অনাদি এগিয়ে এসেছে, বাসু এসেছে, চিকনাকেও দেখতে পেলাম। ওরা বড়োমার কথা শুনে হাসছে। এছাড়াও আরও অনেকে এসেছে, চিনতে পারছি না, হয়তো এলাকার ছেলেপুলে, নিরঞ্জনদা এসেছে বলে। নিরঞ্জনদা কাছে এসে বললো
-তুমি দেখবে যাওয়ার সময় রাস্তা একেবারে ঝক ঝকে। নিরঞ্জনদা কাছে এসে বললো।
-অনি ঠিক কথা বলে, তোদের দুরমুশ করা উচিত। চোরের দল সব।
বড়মার কথায় সকলে হেসে কুটি কুটি খাচ্ছে।
-চা খাবে তো। আমি বললাম।
-হ্যাঁ খাবো, ও ভজু, দে তো বাবা পা টা টেনে।
ভজু যাই বড়মা বলে পায়ের কাছে বসে পরলো।
আমি বড়মাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। মিত্রা কাছে এগিয়ে এসে বললো, কিরে রসগোল্লা খাওয়াবি না। বড়মা শুনতে পেয়েছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, বড়মা হেসে ফেললেন, সত্যি মিত্রা তুই পারিসও বটে।
-তোমার খিদে পায় নি,
বড়োমা হাসছে।
-কিরকম নাচানাচি করতে করতে এলাম বলোতো, সব হজম হয়ে গেছে।
-আচ্ছা তোর মুখ রাখতে একটা খাবো।
-দেখলি। অনাদিকে বল।
-বলতে হবে না, একটু অপেক্ষা কর চলে আসবে।
অনাদিকে বললাম পরিদার দোকানে বসার জায়গা হবে।
-হবে মানে তুই কি বলতে চাস।
-কিগো বাঁশের বেঞ্চে বসবে। বড়োমার দিকে তাকালাম।
-চল একটু বসে নিই। আর আসবো কিনা কে জানে।
-আসবেনা মানে, তোমাকে আমরা সবাই ধরে নিয়ে আসবো। অনাদি বললো।
-আচ্ছা, ও ছোটো কোথায় গেলি রে।
ছোটোমা কাছে এলেন, আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললেন, বাথরুম। আমি মাথা চুলকালাম। মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
ছোটোমাও হাসছে।
অনাদিকে ইশারায় কাছে ডাকলাম।
বড়মাকে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম বাথরুমে যাবে নাকি।
বড়মা মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-ঠিক আছে দাঁড়াও ব্যবস্থা করে আসি।
অনাদি চকের ওপরের যে বাড়িটা তাতেই ব্যবস্থা করে আসলো, মিত্রাকে বললাম বড়মাকে ধরে নিয়ে যা। ওরা তিনজনে গেলো। অনাদি পেছন পেছন, নিরঞ্জনদা দেখলাম, কাদের সঙ্গে কথা বলছে, দেখে মনে হচ্ছে হোমরা চোমরা ব্যক্তি। আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, চোখের অভিব্যক্তি বলছে, এই সেই অনি ব্যানার্জী,  এখানে থাকে আর আমরা জানি না।
এতোক্ষণ ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকাই নি। ও গাড়ি থেকে নেমে চারিদিক দেখছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে জায়গাটা ওর পছন্দ। কয়েকটা বাচ্চা ওর পেছন পেছন ঘুরছে, ওর অদ্ভূত পোষাক দেখে ওরা অবাক।
চিকনাকে বললাম, সবাইকে চা দিতে বল।
-সবাইকে।
-হ্যাঁ। যারা এখানে আছে।
-পার্টির লোককে তুই খাওয়াতে যাবি কেনো।
-চুপ কর ছাগল।
-ঠিক আছে।
চিকনা আমার কথা মতো পরিদার দোকানে চলে গেলো। সবাইকে চা দিচ্ছে।
বাসুকে বললাম, গ্রামের অবস্থা।
-সকালে গরম ছিলো, তারপর তোর ফোন আসার পর থেকে একেবারে ঠান্ডা,
হাসলাম।
কালকে যে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে, বুঝতেই পারবি না। তার ওপর সভাধিপতি তোর সঙ্গে অনাদি বড়মার হাত ধরে নিয়ে আসছে। পেছনে বড়মা ছোটোমা। কাছে আসতে আমি বললাম, শান্তি।
-সত্যিরে অনি কি শান্তি, তোকে ভয়ে বলতে পারছিলাম না, যদি গালাগালি করিস।
-তোমায় কি সেরকম কখনো করেছি।
-না মিত্রার মুখ থেকে শোনা আগের বারের অভিজ্ঞতাটা মনে পরে গেলো কিনা, তাই।
-তোমার আগে ছোটোমা হিন্টস দিয়েছিলো।
-মেয়েদের অনেক সমস্যা বুঝলি।
-বুঝলাম।
-বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। নিরঞ্জন গেলো কোথায় রে।
-ওইতো কথা বলছে।
-নিশ্চই সাকরেদরা এসে জুটেছে।
হাসলাম।
পরিদার দোকানে নিয়ে এসে বসালাম। পরিদা একটা ঠক করে বড়মাকে প্রণাম করলো, বুঝলাম খবর আগে পৌঁছে গেছে। ছোটমাকে প্রণাম করতে যাচ্ছিল, ছোটমা হাত ধরে ফেললেন।
-মা ঠাকরান, এরা তখন ছোটো ছোটো আমার দোকানে আসতো।
-হ্যাঁ তোমার গল্প শুনেছি ভাই অনির মুখ থেকে। বড়োমা বললো।
-অনি আমাদের গর্ব। ও বকনা মায়েদের প্লেটগুলো এগিয়ে দে।
একটা বাচ্চা মেয়ে এগিয়ে এলো। বড়মা আমার দিকে তাকালো, হেসে ফেললাম
-নামের অর্থ খুঁজতে চাইছো।
-হ্যাঁ।
আস্তে করে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম, গ্রামে গরুর যদি মেয়ে বাছুর হয় তাহলে তাকে বকনা বাছুর বলে, কেউ হয়তো আদর করে ওকে ওই নাম দিয়েছে।
বড়মার মাথায় হাত।
পরিদা সকলকে চারটে করে রসগোল্লা দিয়েছে।
বড়মাকেও দিয়েছে। নিরঞ্জনদা এলো তার সাকরেদদের নিয়ে, একে একে পরিচয় করিয়ে দিলো সবার সঙ্গে, যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই, কেউ লোকাল কমিটির, কেউ জেলা কমিটির, কেউ জোনাল কমিটির হোমরা চোমরা লোক। সবাই বড়মাকে প্রণাম করলো, পরিদা ওদেরও মিষ্টি দিলো, বড়মা চারটেই খেলো।  আমি আস্তে করে বললাম
-আমি আস্তে করে বললাম, কি গো চারটেই সাঁটিয়ে দিলে।
-সত্যিরে অনি খিদে পেয়েছিলো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, তুই হেরে যাবি, এখানে জিততে পারবি না।
-ও তো ঠিক বলেছে৷ ছোটোমা মিত্রাকে সাপোর্ট করলো। আমি চুপ।
-বড়মা। মিত্রা বললো।
-বল।
-মিষ্টির পর একটু নোনতা খেলে ভালো হয় না তাহলে চাটা বেশ জমবে।
-খাসা বলেছিস, ও পরি তোমার ওগুলো কি ভাজছো গো।
-বেগুনি, আলুর চপ।
-একটা করে দাও দিখিনি। খেয়ে দেখি।
-অম্বল হবে। আমি বললাম।

-হোক তবু খাবো।

আমি বড়মার দিকে তাকালাম, মিত্রা আমাকে একটা কনুইয়ের গুঁতো মারলো, ছোটোমা হাসছে, ইসলাম ভাই আজ খালি মজা লুটে যাচ্ছে। না হ্যাঁ কিছুই বলছে না, গা ভাসিয়ে দিয়েছে।
চা এলো, এক কাপে কারুর পোষালো না, দুকাপ করে খেলো, সবাই ভীড় করে আছে আমাদের ঘিরে। নিরঞ্জনদা বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
বড়মাকে বললাম, পায়ের ধুলো আমার জন্য একটু রেখো।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম, বাসুকে বললাম, অনাদি কোথায়।
-নিরঞ্জনদা কোথায় পাঠালো।
-ও। চিকনা।
-ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। বললাম ওখানটা গোছা গিয়ে।
-ভাল করেছিস।
-গাড়ি রাখবি কোথায়।
-ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
-চল এবার বেরোব।
নিরঞ্জনদার কাছে গিয়ে বললাম, কিগো রেডি।
-অনি আমার একটা উপকার করবি।
-বলো।
-দিদিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তুই নিয়ে যা। তোকে তো নতুন করে কিছু বলতে হবে না। সবই বুঝিস। এই দিকে যখন এসেছি, কয়েকটা কাজ সেরে যাই।
-আমার কোনো আপত্তি নেই। গালাগাল কে খাবে তুমি না আমি।
-কিছুক্ষণের জন্য তুই খা, তারপর আমি গিয়ে খাবো।
নিরঞ্জনদাকে ঘিরে থাকা সকলে মুচকি হাসছে, আমিও হাসলাম।
বড়মাকে গিয়ে সব ব্যাপারটা বললাম।
-ডাক ওকে।
-উঃ তুমি ……
-ঠিক আছে চল।
আমরা সবাই গাড়িতে উঠলাম। নিরঞ্জনদা কাছে এলো।
-তুই কখন যাবি। বড়োমা বললো।
-চারটের মধ্যে।
-খেয়ে নেবো না তোর জন্য বসে থাকবো।
-একবারে আমার জন্য বসে থাকবে না।
-মনে থাকে যেনো।
-আচ্ছা।
আমরা বেরিয়ে এলাম। যেভাবে কলকাতা থেকে এসেছিলাম, সেই ভাবে। খালি আমার পাশে এসে মিত্রা বসলো।

-তুই এখানে কেন?

-বড়োমা বলেছে।

-তাহলে আমি বড়োমার পাশে চলে যাই।

-না যাবি না।

বড়োমা ছোটোমা মুখ টিপে হাসছে।

আমি বড়মাকে রিলে করতে করতে চলেছি, ইসলাম ভাই চারদিক গোগ্রাসে গিলতে গিলতে চলেছে। যতদূর চোখ যায় খালি সোনালী ধানে মাঠ ভরে গেছে, ধানকাটার মরসুম এসে পরলো বলে। বড়মা জানলা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে না আমি একে একে সব বলতে বলতে যাচ্ছি।
রবিনকে বললাম ওই বিলের মাঝা মাঝি যে কালভার্টটা আছে ওখানে একটু গাড়িটা থামাবি। রবিন মাথা দোলাল।
আমাদের গাড়ির সামনে কেউ নেই, পেছনে আনাদি আর বাসুর বাইক আসছে। রবিন ঠিক জায়গায় এসে গাড়ি থামালো। আমি নেমে দাঁড়ালাম, পেছন পেছন সবাই নামলো, বড়মাকে দরজা খুলে নামালাম, ছোটো মাও নামলো।
-এবার চারিদিক ঘুরে একবার দেখো।
সবাই কোথাও সবুজ, কোথাও সোনালী মাঠের এদিক ওদিক চোখ মেলে দিয়েছে।
বড়মার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। সত্যি অনি প্রকৃতি যেনো নিজে হাতে সব সাজিয়ে দিয়েছে, -ওই যে দূরে একটা টালির বাড়ি দেখতে পাচ্ছ। আমি আংগুল তুললাম।
-হ্যাঁ।
-ওটা আমার স্কুল। তার আগে একটা ঝাঁকরা অশ্বত্থ গাছ দেখতে পাচ্ছ।
-হ্যাঁ।
-ওটা পীরবাবার থান।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, ছোটমা একটা হাত ধরেছেন।
-আমাকে আজ ওখানে নিয়ে যাবি।
-যাবে।
-যাবো। এখন গিয়ে আবার অতটা আসতে পারবে।
-পারবো।
-অনি তুই না করিস না আজই যাবো, জুম্মাবার। ইসলাম ভাই বললো।
-এবার এদিকে তাকাও।
বড়মারা সবাই পেছন ফিরে তাকালো, ওই যে গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা একটু উঁচু জায়গা দেখছো।
-হ্যাঁ।
-ওটা শ্মশান।
-ওটাতো একটা বন দেখতে পাচ্ছি।
-ওই হলো আর কি।
-বড়মা, অনির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। আমরা দিনের বেলা একলা যেতে ভয় পাই ও রাতের অন্ধকারে যায়। অনাদি বললো।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গালে হাত বোলাচ্ছেন।
-হ্যাঁরে তোর কোনো ভয় লাগে না। ছোটমা বললেন।
-না। বরং তুমি যদি আমার সঙ্গে যাও তুমিও ওর প্রেমে পরে যাবে।
-যাবো তোর সঙ্গে। নিয়ে যাবি?
-নিয়ে যাবো।
মিত্রা আমাকে একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছে কোনো কথা মুখে নেই।
-চলো এবার যাওয়া যাক।
-চল।
-একটা কথা বলি।
-বল।
-তোমরা যদি বাজার দিয়ে ঘুরে যাও তাহলে ৪৫ মিনিট বেশি লাগবে, আর এখান থেকে একটু গিয়ে যদি ভেতর দিয়ে হেঁটে যাই তাহলে ১০ মিনিট লাগবে।
-যেটা কম সময় লাগবে সেটাতেই চল।
-একটা ছোটো নদী পেরোতে হবে, এই সময় হাঁটু জল থাকে।
-একটা ছোটো নদী পেরতে হবে, এই সময় হাঁটু জল থাকে।
-আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। মিত্রা ছড়ার মতো মুখস্থ বলে গেল।
-ছাগল।
-কেন?
-এটা পৌষ।
-কারুর পৌষমাস কারুর সব্বনাশ।
-কার।
-তোর। আবার কার।
বড়মা বললো, মিত্রা থাম।
-সব সময় তুমি আমাকে থামতে বলো, ওকে বলতে পারো না, কবিতাটা কি আমি লিখেছি।
-আচ্ছা আচ্ছা ঘাট হয়েছে।
ইসলাম ভাই হা হা হা করে হেসে উঠলো, ওর হাসির শব্দে চারিদিক অনুরণনের সৃষ্টি হলো। সবাই গাড়িতে উঠে বসলো
-ঠিক আছে রবিন চল ওই বাঁকের মুখে নামিয়ে দিস। তারপর তোরা গাড়ি রেখে আসিস।
আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এলাম। সবাই নামলাম। অনাদি, বাসুকে বললাম, জিনিষপত্রগুলো ঠিকঠাক নিয়ে আসিস।
রবিন গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। এবার আমরা ছজন। বড়মা খুব আস্তে আস্তে হাঁটছে, মাটির রাস্তা তাও আবার এবরো খেবরো চলতে অসুবিধে হচ্ছে, আমি বড়মাকে ধরে আছি।
-তুই ছাড় আমি একলা যেতে পারবো।
-না তোমার অভ্যাস নেই হোঁচট খেয়ে পরে যেতে পারো।
ইসলাম ভাই বললো, জানিষ অনি তোর গ্রামটা দেখে, আমার গ্রামের কথা মনে পরে যাচ্ছে। ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, না রে মন।
-হ্যাঁরে মুন্না। মনে হচ্ছে ফিরে যাই আমাদের পাবনার সেই নতুনহাট গ্রামে।
আমি ছোটো মার দিকে তাকালাম, চোখদুটো ঝাপসা।
মিত্রা কাপড় তুলে হাঁটছে। হাঁটুর ওপর কাপর উঠে গেছে।

ছোটোমা একবার ওর দিকে তাকায় একবার বড়োমার মুখের দিকে তাকায়।

মিত্রার কোনও হুঁস নেই। তর তর করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

-তুই ও ভাবে হাঁটছিস কেন? ছোটোমা বললো।

-একবার শিক্ষা হয়েছে, আবার।
-কি। ছোটোমা ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো।
-ওই চোর কাঁটা।
সবাই ওর দিকে তাকালো, বড়মা হেসে বললো ও মিত্রা একটু নামা।
-তুমি থামোতো, কেউ দেখবে না।
-আরে মুন্না আছে।
-থাকুক মুন্না ভাই এমবিবিএস।
সবাই হাসছে।
আমরা বাঁশ বাগানের ভেতরে এসে পরলাম। থমথমে পরিবেশ। হাওয়ায় বাঁশের গায়ে ঘষা লেগে কেঁচর কেঁচর আওয়াজ হচ্ছে। আমি বললাম এখানে একটু দাঁড়াও,
বড়োমার চোখে বিষ্ময়। কেনো?
কান খাঁড়া করে রাখো শুনতে পাবে কত রকমের আওয়াজ। ওরা সবাই দাঁড়ালো।
ঝির ঝির বাতাসে বাঁশ গাছ দুলছে। ক্যাঁচর ক্যাঁচর আওয়াজ হচ্ছে। নিবিড় বাঁশঝাড়ের তলাটা আলো আঁধারি। চারদিক নিস্তব্ধ। একটা গা ছমছমে পরিবেশ।
-তুই এখানে রাতের অন্ধকারে একা একা ঘুরিস। বড়মা বললো।
-হ্যাঁ।
-তোর ভয় করে না।
-ভয় করলেই ভয়, না করলে নয়।
-তোদের এখানে বাঘ ভাল্লুক নেই।
-না, শেয়াল আছে।
-কোথায়।
-আশেপাশে কোথাও আছে, ভাগ্য ভালো থাকলে দেখতেও পারো।
-তুই থাম বাপু চল তাড়াতাড়ি।
-বুবুন এগুলো কিরে?

-কি?

-এই যে নীল নীল ফুলের গাছ।

-ওগুলো কলাই শাক। কলকাতায় আমরা এরই ডাল খাই। কড়াইশুঁটি কিনে খাই।

-বড়োমা মনেরেখ খেতে হবে।

-তোর খালি খাওয়া।

-আর ভালো রাস্তা ছিল না, তুই এই রাস্তায় নিয়ে এলি।

-তুই এলি কেন? তোকে আসতে বলেছিলাম।

মিত্রা চুপ করে গেল।

আমরা গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে খেতের ধারের শুরু আইল পথে নদীর ধারে এসে পরলাম। জল কমে যেতে নদীর খাঁড়িটা অনেকটা নীচু হয়ে গেছে। ঢালটা একটু বেশি।
আমরা সকলে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে।

-এসো আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে নামো।

আমি বড়োমাকে ধরলাম, ইসলামভাই ছোটোমাকে ধরেছে, ভজু মিত্রাকে ধরতে গেল।

-তুই থাম ও যেমন এই পথ দিয়ে নিয়ে এসেছে, ও ধরে নামাবে।

আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, মোটা মাথা।

-দেখছো বড়োমা, তুমি ওদের গ্রামে এসেছো বলে ও যা বলবে তাতেই তুমি সায় দিচ্ছ।

-তুই ভজুর হাতটা ধরে নাম না।

-ভজু নিজেকেই সামলাতে পারে না আবার আমাকে সামলাবে।

বড়োমা হাসছে।

-ভজুর কিত্তিটা একবার দেখ।

-পেছন ফিরে দেখলাম ভজু বসে বসে নামছে।

-কিরে?

-না অনিদা হরকে যাব। বলতে বলতেই ভজু হরকাল।

-দুম ফটাস। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।

ভজু সোজা গড়িয়ে একবারে নিচে।

-দেখলে। মিত্রা ওপর থেকে চেঁচাচ্ছে।

আমরা নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে হাসছি।

-তোমরা দাঁড়াও ওটাকে নামিয়ে নিয়ে আসি।

আমি আবার ওপরে উঠে এলাম। জুতো খোল।

-কেন।

-তোর এই হিল তলা জুতো হরকাবে। দেখছিস কতো নুরি পরে আছে।

-এতো হাঁড়ি ভাঙা।

-তোকে বলেছে।

-বল এরও একটা গল্প আছে।

-আছে। এগুলোকে খলম কুচি বলে।

আমি ওর হাতটা ধরে আস্তে আস্তে নিচে নামিয়ে আনলাম।

-বাবাঃ কি ঢালু দেখেছো বড়োমা, ওপরটা আর দেখা যাচ্ছে না।

বড়োমা মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে। এইটুকু রোদেই মিত্রার চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।

-তোর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।

মিত্রা বড়োমার মুখের দিকে তাকাল।

-না।

জানো বড়োমা, বর্ষাকালে এর যা স্রোত, দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়।

-ভরা বর্ষায় তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো, সেখানে দু মানুষ জল থাকে।
-কি বলিস রে।
-হ্যাঁ গো। তখন এই নদীর রূপ বদলে যায় সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। বাঁধ ছাপিয়ে জল গ্রামে ঢুকে পরে, যে রাস্তা দিয়ে তুমি এতোক্ষণ গাড়ি চেপে এলে, ওই রাস্তার ওপর এক মানুষ জল। আমরা সেই সময় কতো মাছ ধরতাম, তেলের জন্য খাওয়া হতো না।
-তার মানে।
-এতো মাছ হয়ে যায়, মাছ ভাজার তেল থাকে না।
বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে!

-বিশ্বাস হচ্ছে না?

বড়োমা মাথা দোলাল। না।

-বর্ষায় নৌক নিয়ে কে চকে যাবে বলো। যে যার ঘর সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। ফলে যারা তেল বিক্রী করে তারা যদি না আনে আমরা পাব কি করে?

বড়োমা যতো আমার কথা শোনে ততো চোখমুখের চেহারা বদলে যায়।

-চলো।

-এই টুকু পার হতে হবে। তার জন্য তুই যা গল্প ফাঁদলি ওখানে। মিত্রা কটকট করে উঠলো।

-ঠিক আছে, তুই আগে চলে যা। আমরা দাঁড়িয়ে আছি।
বড়মা মুচকি মুচকি হাসছে। যা।
মিত্রা দাঁড়িয়ে রইলো।
-কিরে যা।
-তুই চল।
-দাঁড়া আমি আগে নেমে দেখে আসি, কতটা জল।
-তার মানে।
-পথটা ঠিক করে আসি, একটু এদিক ওদিক হলে একেবারে কাতলা মাছ ধরবি।
-তুই জেনেও আমাকে আগে পাঠাচ্ছিলি।
-আমি। দেখলে বড়মা, ঝপ পাল্টি।
ইসলাম ভাই হাসছে। ভজু বললো আমি পরে গেলে স্নান করে নেবো।
আমি এগিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে দেখে নিলাম, আমার হাঁটু জলই আছে। প্রথমে আমি বড়মাকে ধরে ধরে নদী পার করে ওপারে রেখে এলাম, জলে নামার পরেই বড়মা আমাকে শক্ত করে ধরেছিল, এমন আবস্থা আমিই নিজেই নড়তে চড়তে পারছিলাম না।
ভজুকে বললাম আমি যেমন ভাবে পার হলাম সেই ভাবে পার হয়ে ওপারে চলে যা।
ভজু মহা উতসাহে নাচতে নাচতে গেলো, সত্যি সত্যি কাদায় হরকে জলে আছাড় খেলো।
বড়োমা চেঁচিয়ে উঠলো ওই দেখ-দেখ-দেখ। ভজু পরলো।

তাকিয়ে দেখি ভজু জলের মধ্যে বসে খাবি খাচ্ছে। মিত্রা চেঁচামিচি জুড়ে দিয়েছে। ভজুর জামা প্যান্ট সব ভিজে একসা। আমি তাড়াতাড়ি করে গিয়ে ভজুকে তুলে ওপারে রেখে আসলাম। ইসলাম ভাইকে বললাম যাও।
-তুই চল।
হাসলাম।

-কেন যেতে পারবে না।

-অভ্যেস নেই। কতদিন গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছি।

আমি ইসলাম ভাইকে ধরে ওপারে নিয়ে গেলাম, অসুবিধে হলো না, ইসলাম ভাই যেতে যেতে বললো খুব কাদা রে।
আমি বললাম কাদা না, এই যে গাছের পাতা পরেছে, পচে গেছে। সেই জন্য এত হড়কা।
এবার ছোটোমার পালা, ছোটোমা আমার হাত ধরে জলে নেমেই আবার ডাঙায় উঠে গেলো।
-কি হলো।
-দাঁড়া কাপরটা একটু তুলে নিই।
বড়মা হাসছে, ওপার থেকে বললো আমিই সবচেয়ে ভালো এসেছি।
-ছোটোমা তুমি বরং দাঁড়াও আমি আগে পার হয়ে যাই।
-কেনো।
-যদি শেয়াল আসে।
-ঠিক বলেছিস, এতোক্ষণ মনে ছিলো না।
-মুন্নাভাই-এর উচিত ছিলো সবার শেষ যাওয়া।
-চল দুজনে যাই।
-তাই চলো।
আমি ওদের রকমসকম দেখে হাসি। দুজনে মিনিট কয়েক দাঁড়িয়ে কাপর টাপর গুঁজে প্রিপারেসন নিল। আমি পায়ের জুতোগুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে ওপারে ফেলে দিলাম।

-ওটা কি করছিস, মিত্রা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো।

-কেনো হাতে নিয়ে পেরবি, সামলাতে পারবি।

মিত্রা হাসছে।

-আমি যেখানে যেখানে পা ফেলবো সেখানে সেখানে পা ফেলবি, না হলে ভজুর দশা হবে।
-তুইতো আগেই ভয় পাইয়ে দিচ্ছিস।
-বেরো তোকে যেতে হবে না।চেঁচিয়ে উঠলাম।
-ওরকম করছিস কেনো।
ওপারে বসে বড়মা ইসলাম ভাই ভজু হেসে কুটি কুটি হচ্ছে।
আমি দুজনকে নিয়ে জলে নামলাম, দুজনে আমার দুহাতে। আমি আস্তে আস্তে এগোচ্ছি ওরাও এগোচ্ছে।
-বুবুন।

-বল।

-পায়ে কি লাগছে।

-চোখ বন্ধ করে থাক।

-হর হর করছে।

আমি জানি অনিদা এই কীর্তি করবে, তারস্বর চিৎকারে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পরেছিলাম।
-যখনই গারিটা হুশ করে বেরিয়ে গেলো তখনি বুঝেছি, অনাদিরা চেঁচিয়ে বললো বলে,
-ওগো তোমরা আছাড় খাবে, খুব হরকা এই জায়গাটা, নীপা ধুপ ধাপ করে নদীর ভেতরে নেমে আসছে।
-এই গেলো গেলো গেলো। বড়োমা চেঁচিয়ে উঠলো।
-কি হলো রে। ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলো।
-কাপড়টা কোমর থেকে খুলে গেলো। মিত্রা বললো।
আমি ছোটোমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে মিত্রা আমার হাত ছেড়ে কাপড় ঠিক করতে গেলো, পা হড়কালো, আমি কোনো প্রকারে ধরে ফেললাম।
-শয়তান, আর জায়গা পেলিনা নিয়ে আসার। দাঁতে দাঁত চিপল।
আমি হাঁসছি।
-গাঢ়ল, হাঁসছিস আবার। এখুনি আছাড় খাচ্ছিলাম।
বড়মা হেসে খুন। ও ছোটো তুই চলে আয়, ওরা থাকুক।
ছোটোমা কোনো কথা বলছে না, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ওটা কি পোকা রে।
-মাছ খেকো মাকড়সা।
-উরি বাবারে। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরলো।
-ওরে মিত্রা অনিকে ছার আমি আছাড় খাবো। ছোটোমা চেঁচাল।
-পোকাটা কই।
-তোকে দেখতে হবে না। কাপড় গোঁজা হলো।
-হলো কই তুমি কি পোকার কথা বললে।
-আর তোকে গুঁজতে হবে না
নীপা জলে নেমে এসেছে। মিত্রা একটা হাতে আমাকে ধরেছে, আর একটা হাতে নীপাকে ধরেছে।
-ওর বুদ্ধি শুনতে গেছো কেনো।
-আমি শুনেছি, বড়মা বড়মা এই পাশ দিয়ে গেলে দশ মিনিট লাগবে। মিত্রা ভেংচি কাটলো।
আমি হাঁসবো না কাঁদবো। গম্ভীর হয়েও থাকতে পারছি না। মিত্রার মুখের দিকে কটকট করে তাকালাম।

-একবারে তাকাবি না। শয়তান।

কোনো প্রকারে জল থেকে ওদের টেনে তুললাম।
উঠেই মিত্রার প্রথম ডায়লগ, বড়মা দারুন এক্সপিরিয়েন্স তুমি না থাকলে এই ভাবে যে বৈতরণী পার হওয়া যায়, জানাই যেতো না।
-সেকিরে, এই তো তুই অনির শাপ শাপান্তর করছিলি।
-তাই নাকি, কই নাতো। বুবুন ভালো ছেলে। আমার গালে দুবার খামচি মারলো। সোনামনা সোনামনা।
ছোটোমা হাসছে, বড়মা হাসছে।

আবার নদী গর্ভ থেকে বাঁধে উঠলাম। সরু রাস্তা এঁকে বেঁকে চলে গেছে আমার বাড়ির দিকে।

পায়ে পায়ে সকলে চলে এলাম। সুরমাসি, কাকিমা বাঁশবাগানে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের দেখে এগিয়ে এলো। সবার চোখে একই বিষ্ময়।

ইসলামভাই, ভজু। ভজু তবু চলেবেল, কিন্তু ইসলামভাই।

বড়োমাকে সবাই প্রণাম করলো।

থাক থাক ভাই, তোমাদের বাড়িতে তাহলে আসা হলো।

বড়োমা আমার দিকে দেখছে।

বুবুন আমি কিন্তু ফার্স্ট ফিতে কাটব।

কিসের?

ওই যে দেখতে পাচ্ছিস।

মিত্রা বাথরুমের দিকে আঙুল তুলে দেখাল।

হুঁ ওটা তোর ফিতে কাটার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

বুঝলি কি করে? মিত্রা বললো।

তুমি জানলে কি করে? নীপা বললো।

নীপার দিকে তাকালাম।

অনাদিদা বলেছে, ওরা এসে আগে ব্যবহার করবে তারপর তোরা। নীপা বকবক করছে।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। দেখছিস এখানে তোর পপুলারিটির থেকে আমার পপুলারিটি একটু হলেও বেশি। তোর পালের হাওয়া এবার আমি কেরে নেব।

আবার শুরু করলি। বড়োমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।

মিত্রা হাসছে।

বাড়ির ভেতর এলাম। বড়োমা সব অবাক হয়ে দেখছে, ছোটোমাও তাই, ইসলামভাই-এর চোখের পাতা পড়ছে না।

তোমরা এবাড়িতে বসো, আমরা ওই বাড়িতে যাই। নীপা ওরা ব্যাগ নিয়ে এসেছে?

বাইরের বারান্দায় রেখেছি কোনটা কোন বাড়িতে যাবে বলো, পৌঁছে দিচ্ছি।

আমি ইসলামভাইকে বললাম, চলো আমার সুইট হোমে।

নীপার দিকে তাকালাম।

বুঝেছি। চা। যাও পৌঁছে যাবে। চায়ের সঙ্গে আর কিছু।

হাসলাম।

আমি ইসলামভাই চলে এলাম। নিচু বাড়ি ইসলামভাই-এর মাথা ঠেকে যাচ্ছে। সবসময় ঘার হেঁট করে রয়েছে।

জানিস অনি তোর এই মাটির বাড়ি আর খড়ের চাল দেখে আমাদের গ্রামের বাড়ির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

তোমাদের গ্রামের বাড়িও কি এই রকম?

না। তোদের মতো এতো নিচু নয়, মাটির দেওয়াল, খোলার চাল। আমাদের ধানের ব্যবসা ছিল।

ইসলামভাই কথা বলতে বলতে থেমে গেল।

এখন থাক। পরে তোকে সব বলবো।

ইসলামভাই-এর বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এল।

এখন এই পোষাকটা আমায় খুলে ফলতে হবে।

হাসলাম। কেন?

সবাই যে ভাবে আমাকে দেখছে। আমি যেন যাত্রা দলের সং।

এরা এই পোষাকে এখানে আগে কাউকে দেখেনি, তাই।

সিঁড়িদিয়ে ওপরে উঠে এলাম।

তোর বাড়িটা কিন্তু বেশ দারুন। এইটা তোর ঘর।

হ্যাঁ। নিচে আরও দুটো ঘর আছে। ব্যবহার হয় না। থাকি কোথায় বলো।

তুই কি একেবারেই আসিস না?

না।

কেন!

সে অনেক কথা। ধীরে ধীরে সব জানতে পারবে। তবে অভিমান একটা বরো কারন। এই অভিমানটা বড়োমা, অমিতাভদা ভেঙে দিয়েছে।

বড়দি তোর জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে আছে।

অনেকটা নয়। পুরোটা। জ্ঞান হওয়া অবস্থায় জীবনে প্রথম মা বলে ডেকেছি। এরপর ছোটোমা তারপর মিত্রা।

আমি।

তুমি এবার জুড়ে বসবে।

এতদিন।

তোমাকে আমার কাজের মানুষ বলে মনে করতাম। তোমার সঙ্গে আমার একটা ভালো সম্পর্ক আছে। কিন্তু এখন সেটা দেখছি ধীরে ধীরে বন্ধনের পর্যায় পৌঁছে যাচ্ছে।

ইসলামভাই আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।

কি দেখছো?

তোকে। তোর সত্যি কথা বলার হিম্মত দেখে।

নীপা ব্যাগ নিয়ে ঢুকলো।

তুমি আমায় পরিচয় করিয়ে দিলে না?

সত্যি। ভুল হয়ে গেছে। আমার ফ্রেন্ড-ফিলোজফার-গাইড। আমার দাদা মুন্নাভাই। খালি এটুকু জানো। এরবেশি নয়। আমরা একসময় একসঙ্গে কাটিয়েছি। আমার জীবনের একটা অংশ জুড়ে আছে মুন্নাভাই।

নীপা প্রণাম করতে গেল। ইসলামভাই ওর হাতটা চেপে ধরলো। না আমি বিধর্মী।

তুমি একথা বলছো কেন দাদা! অনিদা কোনওদিন এসব মানে না। অনিদার কাছে পৃথিবীর সবাই মানুষ। তার কোনও জাত নেই, ধর্ম নেই।

ইসলামভাই নীপার মুখটা পদ্মফুলের মতো তুলে ধরেছে। ওর ওই রকম বড় বড় থাবার মতো হাতে নীপার মুখটা অত্যন্ত ছোটো লাগছে। নীপা যেন ইসলামভাই-এর কাছে লিলিপুটের দেশে গ্যালিভার।

তুমি অনিদার কথা বিশ্বাস করো?

হ্যাঁ।

যাও আমি তোমার প্রণাম নিলাম। ইসলামভাই নীপার কপালে চুমু খেল।

ব্যাগগুলো দেখিয়ে বললো, কোনটা তোমার?

যাও আমি ঠিক করে নিচ্ছি।

তুমি বলো না, আমি গুছিয়ে দিই যাই।

থাক পরে গোছাবে।

ঠিক আছে আমি চা নিয়ে আসি।

এসো।

নীপা চলেগেল।

মেয়টা খুব মিষ্টিরে, ভীষণ ইনোসেন্ট, কে রে?

সুরমাসির মেয়ে, ওর অবস্থাও খানিকটা আমার মতো।

জানিস অনি ভালো খারাপটা তৈরি হয় আমাদের মতো ঘরের থেকে। বিচারও হয় আমাদের মতো ঘরে। ওপরে যা আর একবারে নিচে যা। সেখানে ভালো মন্দের বিচার করতে পারবি না। সেখানে সব ভালো। নয় সব মন্দ।

ইসলামভাই নিজের ট্রাভেলার ব্যাগটা খুলে একটা শেরওয়ানী বার করলো।

এখানে লুঙ্গি এলাও না, তাই না?

তুমি পরতে পারো।

আমার জন্য নিয়ম ভাঙবি কেন?

হাসলাম।

আমি বাইরে যাই তুমি চেঞ্জ করে নাও।

ঠিক আছে।

আমি বাইরের বারান্দায় এলাম।

দেখলাম তিনজনে খামারে দাঁড়িয়ে এই বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে। পাশে মনাকাকা-কাকিমা। আমায় বারান্দায় দেখতে পেয়ে মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো, নিচে আয়।

আমি হাত নেড়ে ওপরে ডাকলাম।

বড়োমা দেখলাম গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে।

ইসলামভাই ভেতর থেকে বললো, অনি আমি রেডি।

আমি ভেতরে এসে মুখ বারিয়ে বললাম, বড়োমা-ছোটোমা আসছে। একটু আসছি দাঁড়াও।

নিচে নেমে এলাম।

পায়ে পায়ে এগিয়ে এলাম।

তুই তো খুব ধনী লোক।

আমি বড়োমার চোখে চোখ রাখলাম। অর্থের ভেতরে অর্থের খোঁজ করার সন্ধানে।

তাকিয়ে লাভ নেই। যা বলছি ঠিক বলছি।

এবার বল বড়োমাকে, কে মালকিন? মিত্রা চোখ নাচিয়ে বললো।

আমি মাথা নিচু করলাম।

বড়োমা চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছে। বলতে গেলে জরিপ করে নিচ্ছে।

আমি বড়োমাকে ধরে ধরে ওপরে নিয়ে এলাম। পেছনে সবাই।

আমার ঘরটা দেখে বললো।

তোর ঘরটা বেশ। এই জানলাটার সামনে বুঝি তুই বসে থাকিস।

মিত্রা বুঝি তোমাকে ডিটেলসে বলেছে।

তোর থেকে গল্পটা ও ভালো বলে। তুই জল মেশাস, ও জল মেশায় না।

তুমি যে কখন কার, বোঝা মুস্কিল।

বল বল, কি রকম দিলাম।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

বড়োমা তুমি খাটে বসো। মিত্রা বললো।

ইসলামভাই সোফায় বসেছে। আমি সোফায় বসলাম। বড়োমা, ছোটোমা, মিত্রা খাটে।

মিত্রা খাটে উঠেই ঠ্যাং ছড়িয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পরলো।

কিরে শুয়ে পরলি কেন! ছোটোমা বললো।

কতটা হাঁটাল বলো।

কই! এই তো এই টুকু।

তোমার কাছে এই টুকু আমার কাছে অনেক।

নীপা চা নিয়ে ঢুকলো, মিটসেফের ওপর ট্রেটা রেখে সকলকে এগিয়ে দিলো।

মিত্রা তড়াক করে উঠে বসলো।

নীপা পাঁপর ভাজা গুলো নিয়ে আয়।

কেন! তোমার জন্য আছে, দিচ্ছি।

ওকে দিস না, সকাল থেকে কিছু খায় নি, শরীর খারাপ, খালি পেটে পাঁপর খেলে গ্যাস হবে।

মিত্রা এমন ভাবে কথা বললো, বড়োমা হেসে ফললো।

ছোটোমা ওর দিকে তাকিয়ে বললো। তোর কি হয়েছে বলতো!

মিত্রা ততক্ষণে পাঁপড় খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।

চা খাব না বুঝলি নীপা, তাহলে ভাত খেতে পারবো না।

নীপা বড়োমার দিকে তাকাল।

তুই ছাড়তো ওর কথা, ওখানে রাখ ঠিক খেয়ে নেবে।

নীপা, অনাদিরা গেল কোথায়? আমি বললাম।

বললো বাজারে যাচ্ছে এখুনি এসে পরবে, ওরা সেই কাল রাত থেকে যা বেরিয়েছিল, কি অবস্থা এখানে! তারপর তুমি ফোন করলে, একটু থামল।

খুব খারাপ লাগছে শেলিদির জন্য। নীপা মাথা নিচু করলো। গলাটা ভারি হয়ে এলো।

মন খারাপ করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। বড়োমা বললো।

নাগো বড়োমা, ওকে আর দেখতে পাবো না। পর্শুদিন রিয়েরশালে ওর সঙ্গে বসে কত কথা হলো। বললো দিবাকরদার চাকরি হয়ে গেলেই এখান থেকে টাউনে চলে যাবে। অনিদা কি বলেছিল অনাদিদার মারফত, দিবাকরদা রাজি হয়নি।

সবাই আমার দিকে তাকাল। এ যেন নতুন সূত্র খুঁজে পেল সবাই। আমি নির্বাক।

তুমি এখন যাও। বড়োমাদের স্নানের ব্যবস্থা করো। তারপর আমি মুন্নাভাই যাব।

নীপা ধীর পায়ে চলে গেল।

বড়োমা আমার দিকে তাকাল, ইসলামভাই চায়ে চুমুক দিল।

তাকাচ্ছ কেন। কোনও গন্ধ খুঁজে পাচ্ছ।

তুই সব সত্যি কথা বলিসনি।

সব সত্যি কথা বলা যায়।

কেন?

বললে তুমি সহ্য করতে পারবে।

আর বাকি কি রেখেছিস?

শুনতে চাও।

অবশ্যই।

দিবাকর শেলি ছাড়াও আরো তিন চারজন মেয়ের সঙ্গে লট ঘট করেছে। এমন কি নীপাকে পর্যন্ত গায়ে হাত দিয়েছে। যেহেতু মনকাকা মাস্টার। নীপা তার শালির মেয়ে। অনাদি আমার বন্ধু। তাই কিছু হয়নি। তাছাড়া দেবা শেলির সঙ্গে রেগুলার শারীরিক ভাবে মেলামেশা করতো। সেই দৃশ্য মোবাইলে রেকর্ড করেছে। সেই দেখিয়ে, তাকে প্রভোক করতো রেগুলার শারীরিক ভাবে মেলামেশার জন্য।

ফলে যা হবার তাই হয়েছে। শেলি মা হতে চলেছিল।

এখানে জায়গার অভাব নেই। দিবাকর আমাদের এখানে এক কম্পাউন্ডার আছে আমরা তাকে কানা সামন্ত বলি। দিবাকর তার কাছে বার বার গেছে। বাচ্চাটা নষ্ট করার জন্য। শেলি রাজি হয়নি। তাহলে আত্মহত্যা না খুন। এবার তোমরা বলো।

বড়োমার গালে কে যেন সপাটে একটা থাপ্পর মারলো। বড়োমা ছোটোমার চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

তুমি প্রমাণ চাও আমি দিয়ে দেবো। আমার মোবাইলে রাখা আছে।

বড়োমা মাথা নিচু করলো।

এবার বলো অনি মিথ্যে কোথায়। এই ঘটনা ঘটার পর আমি নিজে অনাদির হাত দিয়ে বলে পাঠিয়েছিলাম, দিবাকরকে বল আমি এই জেলার ওকে ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্স বানিয়ে দিচ্ছি। সাতহাজার টাকা মাইনে দেব। অন্যান্য খরচ আলাদা পাবে। মাস গেলে হাজার বার টাকা পাবে। মিত্রাকে আমি রিকোয়েস্ট করবো। কিন্তু শর্ত একটা শেলিকে আগে বিয়ে করতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে। যেদিন ও বিয়ে করবে আমি সেদিন ওকে এ্যাপয়মেন্ট লেটার দেব। এ্যাডভান্স টাকা দেব। ও মানেনি।

সুনিত ওকে চিফ-রিপোর্টার বানাবার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। ও সেই স্বপ্নে মশগুল ছিল। এমনকি ওরা এখনও একটা কাগজ বার করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমার অফিসের মেন ইনফর্মার ছিল অতীশবাবু। আর এখানকার সমস্ত নিউজ সরবরাহ করতো দিবাকর।

আরও অনেক আছে, আমার বলতে ভালো লাগছে না।

আমি দু-হাতে মুখ চাপা দিয়ে বসলাম। ইসলামভাই আমার পিঠে হাত রাখল। বড়োমা খাট থেকে উঠে এসে আমার পায়ের কাছে বসে আমাকে বললো, অনি মুখ তোল।

আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কিন্তু পারছি না। বুকের ভেতরটা কেমন করছে। আমি মুখ তুললাম না। ছোটোমা এলো, অনি মুখ তোল বাবা। ওরকম করে না। তুই এরকম করলে আমরা দুর্বল হয়ে পরবো। আমি মুখ থেকে হাত সরিয়ে বড়োমার গলা জড়িয়ে ধরলাম। মুখটা বড়োমার কাঁধে চেপে ধরে বললাম।

জনো বড়োমা আমি বলতে চাই, শোনার লোকের বড়ো অভাব। কে বুঝবে আমার কথা। দিবাকরের সঙ্গে এক সঙ্গে এক ক্লাসে ছোটো থেকে পড়েছি। খেলা করেছি। ওকে শাস্তি দিতে আমারও খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি অপারগ। আমার একটা ছোট্ট ভুলে একটা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান চলে যেতে পারে। আমি তা হতে দিতে পারি না।

তুই শান্ত হ। আমি বলছি, তুই ভুল করিসনি।

তোমাদের বলিনি। বলো তুমি, এই কথা তোমাদের বলা যায়। তোমরা আমার মা। নিজের মাকে কোনওদিন মা বলে ডাকতে পারিনি।

বড়োমা ছোটোমা কোনও কথা বলছে না। নিস্তব্ধ ঘর।

আমি মুখ তুললাম, সোজা হয়ে বসলাম। মিত্রা খাটের ওপর মাথা নিচু করে বসে আছে। বড়োমা আমার পাশে সোফায় উঠে বসলো। ইসলামভাই বড়োমাকে জায়গা করে দিল। বড়োমা আমার বুকটায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আমার সব কাজের সাক্ষী হিসাবে আমি অন্ততঃ একজনকে রেখে যাচ্ছি। দেখছি সেও সব বোঝে না। মাঝে মাঝে ইসলামভাই-এর কাছে ছুটে যাই। ইসলামভাইকে দোষ দিই না, সব জানে না। বলিও না। ইসলামভাই-এর নিজের সাম্রাজ্য আছে।

আমি কথা দিচ্ছি অনি আমি তোকে এবার থেকে সাহায্য করবো। ইসলামভাই এবার থেকে নিজেকে বদলে ফেলবে। তুই আমাকে মাস দুয়েক সময় দে।

মুন্না সত্যি দেখ না, একরতি ছেলেটা এই সব বাঘ ভাল্লুকের সাথে কত লড়বে বলতো। ছোটোমা বললো।

আমি কথা দিচ্ছি দিদি, আমি আজ থেকে অনির পাশে আছি। আমি অনিকে একটা দিকে সাপোর্ট দিতাম। এবার থেকে আমি ওর অনেক খোঁজ খবর রাখবো। দুনিয়াটা যে ঠিক নয়।

মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।

ওইটুকু মেয়েটার কম সর্বনাশ ওরা করেছে।

আমি জেনে শুনে চুপ করে থেকেছি। কিছু করতে পারিনি, যখন জানতে পারলাম ও অনির খুব কাছের, তখন সব শেষ।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/ungS8cA
via BanglaChoti

Comments