কাজলদীঘি
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
চতুর্বিংশ কিস্তি
—————————-
কি।
একটা চুমু দিলি না?
হেসে ফেললাম। ওর কপালে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালাম, আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁটের লিপস্টিক লেগে গেল, ও কোমর থেকে রুমালটা বার করে আমার ঠোঁটটা মুছিয়ে দিল।
ঘরের বড়লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে ছোটো লাইটটা জেলে দুজনে বেরিয়ে এলাম। একসঙ্গে নামলাম। একসঙ্গে বাইরের দরজায় শেকল তুলে বেরিয়ে এলাম।
খামারে দুটো ট্রলি দাঁড়িয়ে। বিজয়, বিজন দাঁড়িয়ে আছে। ওরাই ট্রলি চালাবে। আমি এবাড়িতে এসে সকলকে প্রনাম করলাম।
বড়োমা বললো, এতো প্রণামের ঘটা কিসের?
বারে, নতুন জামা কাপর পরালে, একটু কোমরটা ধাপিয়ে নিলাম।
আমার দেখা দেখি মিত্রাও সকলকে প্রণাম করলো।
অনিদা আজ কিন্তু বহুত মাঞ্জা দিয়েছো। নীপা বললো।
তুমি বা কম কিসে। ডাকবো চিকনাকে।
আওয়াজ খেয়ে গেছি। এখন আর গায়ে মাখি না। আর কিছু বলবে।
উঃ মুখে যেন খই ফুটছে।
বেরিয়ে এলাম। খামারে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গেলাম।
সঞ্জু কোথায়রে? সকালবেলা এলাম একবারও দেখা পেলাম না।
ঠিক সময় দেখা পাবি। ও নিয়ে ভাবিস না। তোর লাইট পাঁচমিনিটের মধ্যে জ্বলে যাবে।
চিকনা বললো।
বাবাঃ বাসু, অনাদিকে দেখে খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
একটা ভালো খবর আছে তাই। বাসু মুচকি হেসে বললো।
চিকনা তুই বেশ চকচকে ব্যাপার কি?
রাতে জোর খাওয়া আছে। আমাকে পাবিনা। তোর সঙ্গে এখন যাচ্ছি। তারপর ওড়াং।
কোথায়?
সঞ্জুর বিয়ে।
এ্যাঁ।
হ্যাঁ।
খবরটা বেমালুম আমাকে চেপে গেছিস!
চুপকে চুপকে হচ্ছে, আমরা তিনচারজন ছাড়া কেউ জানে না। তাই চেপে গেছি।
কিরে বাসু?
বাসু হাসছে।
সঞ্জুর বিয়ে তোর কি। নে ট্রলিতে ওঠ। অনাদি বললো।
শোন, স্যার কিন্তু মনে মনে ভীষণ কষ্ট পাবে।
পাবে না। ম্যানেজ হয়ে গেছে।
ব্যাপারটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে। একটা চক্রান্ত চলছে কোথাও মনে হচ্ছে।
বড়োমারা ঘরের বাইরে পা দিয়েছে।
সন্ধ্যা হতে এখনও আধাঘণ্টা বাকি। বলা যেতে পারে গোধূলি। আমরা সবাই ট্রলিতে বসলাম।
বড়োমা, ছোটোমা, ইসলামভাই, ভজু একটা ট্রলিতে। আমি, নীপা, মিত্রা একটা ট্রলিতে। ওরা বাইক নিয়ে আগে এগিয়ে গেলো।
আমরা বড়মতলার পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছি মিত্রা চেঁচিয়ে বড়োমাকে বললো, বড়োমা ওই দেখো বুবুনের পেয়ারা গাছ।
বড়োমা গাছটার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আমরা কামার ঘরের পাশ দিয়ে বড় বিলে এসে উঠলাম। বিলের ওপর দিয়ে যখন যাচ্ছি বড়োমাকে বললাম, জানো সকালে এলে এই গ্রামের সব গরুগুলোকে তুমি এই বিলে দেখতে পাবে। বলতে পারো এটা গোচারণ ভূমি।
বিলের বুক চিরে আড়াআড়ি ডাইনে বাঁয়ে নদী বয়ে গেছে। এরই একটা অংশ আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এখানে একেবারে শুকনো।
বিজয় নদীর কাছে এসে বললো।
মা এইবার একটু নামতে হবে। আমি নদীটা পার করে নিই।
বিজয়, আবার কি জল পেরতে হবে? বড়োমার গলা পেলাম।
না না মা, এখানে একবারে শুকনো।
আমি নেমে এলাম।
বড়োমা আমার দিকে তাকাল। চোখে মিটি মিটি হাসি।
সকালে এই পথে এলিনা কেন?
এই পথে এলে এক ঘণ্টা বেশি লাগতো। এতোটা হাঁটতে পারতে না। এখান থেকে মোরাম রাস্তাটা দেখতে পাচ্ছ।
বড়োমা ওর কথা একবারে বিশ্বাস করো না। খালি তাপ্পি। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি হাসলাম। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে শুকনো নদী পার হলাম। সামান্য এক চিলতে জল। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
অনি, অনাদিরা গেলো কোথায়? ইসলামভাই বললো।
ওরা বাইকে যাচ্ছে।
এই পথে এলো না কেন।
ভেতর দিয়ে একটা সর্টকাট রাস্তা আছে।
বিজয়রা ট্রলি পার করে নিয়েছে। আমরা একে একে ট্রলিতে উঠে বসলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর বিজয়কে বললাম, একটু দাঁড়া বিজয়। বিজয় ট্রলি দাঁড় করালো। আমি ট্রলি থেকে নামলাম। বড়োমার ট্রলির দিকে এগিয়ে গেলাম। নীপা, মিত্রাকে কিছু বললো। দুজনেই আমার কাছে চলে এলো।
কি হলো?
আসার পথে এই বোনটা তোমায় দেখিয়েছিলাম, মনে পরে।
শ্মশান!
হ্যাঁ।
তখন কতো দূরে মনে হচ্ছিল।
মোরামরাস্তা এখনও অনেক দূর।
কোথায়?
ওই দেখা যায়। দেখো তিনটে বাইক দাঁড়িয়ে আছে, দেখতে পাচ্ছ।
হ্যাঁ।
এই শরু আইল পথ গিয়ে শ্মশানে মিশেছে। ফেরার পথে যাবে নাকি?
যাব। বড়োমা কড়োজরে কপালে হাত রেখে প্রণাম করল।
বড়োমার দেখা দেখি ছোটোমা, মিত্রা, নীপা এমনকি ইসলামভাইও প্রণাম করল।
আমরা সবাই আবার ট্রলিতে উঠলাম।
মোরাম রাস্তা পেরিয়ে, পীরসাহেবের থানে যখন পৌঁছলাম, চারিদিকে আলো নিভে গেছে। ট্রলি থেকে নেমে সঞ্জুকে দেখতে পেলাম। এগিয়ে এলো।
কিরে তুই এখানে!
একগাল হাসি।
সকাল থেকে তোর কোনও পাত্তা নেই, ব্যাপার কি?
চিকনার দিকে তাকাল। চিকনা ফিক ফিক করে হাসছে।
চিকনা তোকে কিছু বলে নি?
বলেছে। যা বলেছে তাতে তোর এখানে থাকার কথা নয়। বুঝেছি নিউজটা তোর কাছে আসতে গিয়ে মাঝে ব্রেক করে আর এক জায়গায় চলে গেছে।
বড়োমা তোকে ডাকছে। অনাদি এসে বললো।
আমি বড়োমাদের দিকে তাকালাম, পাঁচজনে কিছু শলাপরামর্শ করছে। দূরে একটা বাইক তীর বেগে ছুটে আসছে, তার আলোটা একবার রাস্তার ওপর আছাড় খাচ্ছে আর একবার দূরে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে।
আমি পায়ে পায়ে বড়োমার দিকে এগিয়ে গেলাম। চারদিকে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে। তার রূপলি আলোর ছটা চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে। আমি বড়োমার কাছে এলাম।
বড়োমার চোখের ভাষা আমি এই মুহূর্তে পড়তে পারছি না। এ চোখের রং সম্পূর্ণ আলাদা। হাসি-আনন্দ-কান্না সব যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে এক নতুন রং নিয়েছে।
যাবি না?
বড়োমার কথায় আমি সম্মহিতের মতো বললাম, চলো।
আমি আগে আমার একপাশে বড়োমা একপাশে মিত্রা পছনে ইসলামভাই, নীপা, ছোটোমা, ভজু। তার পেছনে অনাদিরা। আমরা সেই বড়ো অশ্বত্থ গাছটার তলায় এলাম। পুকুরের জল শুকিয়ে অনেকটা নিচে নেমে গেছে। মাঝে সামান্য রয়েছে।
জানো বড়োমা এই পুকুরের জল আমি কোনওদিন শুকতে দেখিনি। অনাদিদের জিজ্ঞাসা করো। গ্রীষ্মের সময় এ তল্লাটের সব পুকুরের জল শুকিয়ে পুকুর ফেটে চৌচির হয়ে যায়। কিন্তু এই পুকুরের জল তুমি এখন যেমন দেখছো তেমনি থাকবে। বর্ষাকালে অবশ্য ভরে যায়।
দিদিগো, আমি এসেগেছি।
চমকে পেছন ফিরে তাকালাম।
নিরঞ্জনদার গলা!
যা ভেবেছি ঠিক তাই। হ্যাঁ নিরঞ্জনদা। সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
আমরা এখানে জানলো কি করে!
বড়োমার দিকে তাকালাম।
বাড়িতে গেছিল হয় তো, ওরা বলেছে।
পেছনে পচাকে দেখতে পেলাম।
কিরে পেচো! সকাল থেকে পাত্তা নেই, নিরঞ্জনদাকে কোথা থেকে ধরে আনলি?
কেন চক থেকে। আমি চকে বসেছিলাম।
তারমানে!
আমার ওখানে ডিউটি ছিল। অনাদি তোকে কিছু বলে নি?
আমি ঠিক সময় এসে গেছি দিদি। অন্যায় নিও না। পার্টিকরা কি যে ঝকমাড়ি ব্যাপার।
মিত্রা আমার একটা হাত ধরে আছে। ওর হাতটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা। বড়োমা আমার আর একটা হাত ধরে আছে। আলো আঁধারি পরিবেশটা কেমন যেন মনে হচ্ছে।
আমি ধীরে ধীরে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। কেমন যেন একটা ঘোড়ের মধ্যে আছি মনে হচ্ছে। কেউ যেন আমাকে ধীরে ধীরে সম্মোহন করছে। আমি সম্মোহিত হয়ে যাচ্ছি। সবার কথাই কানে আসছে। কিন্তু মাথায় ঢুকছে না।
মুন্নাভাই এই ঘাসের ওপরে সকলে বসো।
ওরা আমার কথা মতো সকলে বসে পরলো। আমিও বসলাম। চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে। কি অপূর্ব লাগছে পূর্ণিমার গোল চাঁদকে। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আকাশের আলো মাটি স্পর্শ করেছে। চারিদিক জোনাকির মতো ঝিক মিক করছে।
জানো, একদিন এই গাছটার তলায় আমার বাবা একজন ফর্সা মতো লোককে দেখতে পেয়েছিলেন, তার সাদা ধবধবে দাড়ি। পরনে সাদা আলখোল্লা। এই গাছের তলায় বসে বসে তিনি দাড়িতে হাত বোলাচ্ছেন।
এই গ্রামের মানুষের মুখে মুখে যেটা বহু দিন ধরে প্রচলিত হয়ে চলে আসছে, আমি অনেক খুজেছি। বহুবার দেখার চেষ্টা করেছি। তার দেখা পাইনি। একদিন হয়তো আমার মুখের কথায় আরো একজন অনি এসে তাঁকে খোঁজার চেষ্টা করবে। পাবে কিনা বলতে পারব না। শুনেছি পুন্যবান মানুষেরা তার দেখা পান।
তবে গাছটার ডাল পালা কেউ কাটে না। ঝড়ে ভেঙে পরতে দেখেছি। শুনেছি, চোখে দেখিনি এর ডালে কুরোঠের কোপ মারলে তার নাকি মৃত্যু হয়েছে। যখন আমি স্কুলে পড়তাম তখন স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রায় এখানে আসতাম। কেন আসতাম বলতে পারব না। বলতে পার ভালো লাগতো।
এখনও গ্রামে পা রাখলে একবার অন্ততঃ আসি।
চারিদিকটা একবার তাকিয়ে দেখো, তিন কিলোমিটার ব্যাসার্দ্ধের মধ্যে এই স্কুলটা ছাড়া কোনও জনমানব নেই। মানুষ বলতে স্কুলের লাগোয়া ঘরে দুজন থাকে। আমি অমাবস্যার রাতে একা একা এখানে আসি। ভীষণ ভালো লাগে। তোমাকে বোঝাতে পারবো না। পুকুরের ওই পাড়টায় বসে থাকি ঘণ্টা খানেক। তারপর চলে যাই।
এখানে এলে আমি নিজের মধ্যে নিজে থাকি না। আমার বিপদে আপদে এই গাছটা আমাকে ভীষণ সাহায্য করে। তোমরা বিশ্বাস করতে পারো, আবার নাও করতে পারো। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার যা কিছু চাওয়া পাওয়া এই গাছের কাছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমার দেখা দেখি সবাই উঠে দাঁড়াল।
ইসলামভাই আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার হাতটা ধরে বললো, আজ আমি এখানে তোর জন্য নমাজ পড়বো। তারপর তোর কাছ থেকে কিছু চাইবো, তুই দিবি?
আমার ক্ষমতা সীমিত, আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যদি কিছু চাও, অবশ্যই দেব।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। আমি কেমন যেন একটা ঘোড়ের মধ্যে আছি। সব শুনছি, সব বুঝছি, কিন্তু কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না।
সঞ্জু ফুল নিয়ে এসেছিস বাবা। বড়োমা বললো।
হ্যাঁ বড়োমা।
আমার হাতটা ধরে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। ও আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ওরা সবাই জুতো খুলে পুকুর ঘাটে নেমে গেল। যে যার মতো করে হাত-পা ধুলো, মুখে-হাতে জল দিলো। গাছের তলায় এসে সবাই একসঙ্গে বসলো।
ইসলামভাই তার মতো নমাজ পড়তে শুরু করলো।
আমি, মিত্রা দুজনে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ।
চল আমরা পুকুর ঘাটে যাই।
মিত্রার আমার দিকে তাকাল।
জুতো খুলে দুজনে পুকুর ঘাটে নামলাম। ভালো করে হাতে-মুখে জল দিলাম।
ভয় করছে?
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ইশারায় কথা বললো, না।
আমরা উঠে এলাম। দেখলাম ওরা দাঁড়িয়ে আছে।
বড়োমা এগিয়ে এলো। গাছের তলায় ফুলের পাহার। ওরা যে যার নিজের মতো করে অঞ্জলি দিয়েছে। আমার বিশ্বাসে ওরাও সামিল হয়েছে। বড়োমা আঁচলের গিঁট খুললো। একটা মলিন সোনার চেন গিঁটের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলো। চিনতে পারলাম এটা মায়ের গলার চেন।
একদিন নিভৃতে একাকি ঘরে মিত্রার গলায় পরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। সেদিন মিত্রা আমার হাত থেকে ওটা পরতে চায়নি। বলেছিল ওটা রেখে দে আমি সময় হলে তোর কাছ থেকে পরবো। আমায় কথা দে এই হার তুই কাউকে দিবি না। এটা আমার অধিকার। আমি কথা দিয়েছিলাম।
আমি বড়োমার মুখের দিকে তাকালাম। বড়োমার চোখ দুটো ছলছলে করছে। চোখে কিসের আর্তি। ইসলামভাই আমার কাছে এগিয়ে এলো, আমার হাতটা ধরলো। নিরঞ্জনদা এগিয়ে এলো। ছোটোমা তার পাশে। একদৃষ্টে আমার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। লক্ষ্য করলাম সবার চোখের মধ্যেই একটা তীব্র চাওয়া। আমি কিছুতেই এদের ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। আমি কোনও কথা বললাম না, কেমন যেন হয়ে গেলাম। আমি বড়োমার হাত থেকে হারটা নিয়ে মিত্রার গলায় পরিয়ে দিলাম।
আমি কেমন যেন ঘোরের মধ্যে আছি। মিত্রার হাত ধরে সেই অশ্বত্থ তলায় নিয়ে গিয়ে একসঙ্গে প্রণাম করলাম। গাছের গোড়ায় রাখা ফুলের থেকে একমুঠো ফুল নিয়ে মিত্রার হাতে দিলাম। তারপর মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। কেন জানি না।
বড়োমা এগিয়ে এলো। আমি মিত্রাকে ছেড়ে বড়োমার বুকে মুখ লোকালাম। ছোটোমা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ইসলামভাই, নিরঞ্জনদা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা ছজন আমাদের থেকে হাত পঞ্চাশেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
মুখ তোল অনি। কাঁদিস না। আমি তোর মুখ দেখিনি তোর বুকটা দেখেছিলাম। আমি যে তোর মা। আমার আগে তোর ছোটোমা তোর বুকটা দেখেছিল।
আমার কান্না থামছে না। মার কথা বার বার মনে পড়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করেও তাকে দেখতে পাচ্ছি না।
অনি জানিস বিয়েটা একটা উপলক্ষ মাত্র। ভালোবাসার বন্ধন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বন্ধন। যে কথা তোকে এতদিন বলিনি, সেই কথা তোকে আজ বলি।
আমি বড়োমার কাঁধে মুখ গুঁজে না না বলছি।
তোকে শুনতে হবে অনি। বড়োমা তোর কাছে কনফেস করবে বলেছিল।
তোর দাদার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নি। কিন্তু ভালোবাসার অধিকারে তার সঙ্গে এক ছাদের তলায় পঁচিশটা বছর কাটিয়ে দিলাম। আজও আমাদের ভালোবাসায় চির ধরেনি।
আমি বড়োমার কাঁধে মুখ গুঁজে আছি। চোখদুটো জ্বালা জ্বালা করছে। বুঝতে পারছি জল বেরিয়ে আসছে। বুকের ভেতরটা যন্ত্রণা করছে।
আমার বাবা বসিরহাটের বিশাল প্রতিপত্তিশালী মানুষ, এককালের ওই তল্লাটের বিশাল জমিদার। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলকাতায় এক আত্মীয় বাড়িতে এলাম কলেজে পড়ার জন্য। ভর্তি হলাম বিদ্যাসাগর কলেজে। কলকাতায় তখন উত্তাল পরিস্থিতি। ষাটের দশক। তখন এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। তোর দাদা আমি দু-জনে এক কলেজে পড়তাম।
তোর দাদা আমার থেকে একবছরের সিনিয়ার, চুটিয়ে পার্টি করে, কলেজের জিএস। নিরঞ্জন আমার থেকে একবছরের জুনিয়র, তোর দাদার থেকে দু-বছরের। ও তোর দাদার সাগরেদ। বিয়ের রাতে তোর দাদা নিরঞ্জনকে পাঠিয়েছিল। হাতে লেখা একটা চিরকুট দিয়ে, বিয়ে হওয়ার পর বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম, বাথরুম যাওয়ার নাম করে। তারপর তোর দাদার হাত ধরে কলকাতায়।
কলকাতায় এসে নিরঞ্জনের মেসে ছিলাম একমাস। তখন থেকে ও আমার ভাই। আমি ওর দিদি। অনেক ঝড় ভাইবোনে কাটিয়েছি। তোর দাদা তার আঁচও পায়নি। পেতে দিইনি। তাহলে তোর দাদাকে আজ হয়তো পেতিস না।
অনেক বার তোকে বলতে চেয়েছি পারিনি। মনে মনে ঠিক করেছিলাম, তোর বিশ্বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে তোকে সব কথা বলবো। নিরঞ্জনকে তাই আজ ডেকে নিয়েছি। তোর দাদার খুব আসার ইচ্ছে ছিল। পারেনি। তাই নিরঞ্জনকে সাক্ষী মানলাম।
সেদিন সেই রাতে কলকাতায় আসতে আসতে তোর দাদার কাছ থেকে দুটো কথা আদায় করেছিলাম। যে আমায় সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দিয়েছে, সে কোনও অন্যায় করেনি। তার জন্য এই সিঁদুরটা থাক। তোমার জন্য আমার ভালোবাসা রইলো।
আর একটা কথা তোর দাদার কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছিলাম। আমাকে কোনও দিন মা হতে অনুরোধ করবে না। তখন বয়েসটা কম ছিল।
একটা আবেগের তারনায় বলে ফেলেছিলাম। তারপর যখন চাইলাম, তোর দাদা আর আমায় দিল না। আজ বুঝতে পারি কতো বড় ভুল করেছিলাম।
আমি বড়োমার কাঁধ থেকে মুখ তুললাম।
বড়োমার দু-চোখের কোল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গরিয়ে পরছে।
আমার হাত দুটো ধরে বড়োমা বললো বুড়ীমাসির কাছে আমি সব খোঁজ খবর নিয়ে মিত্রাকে আজ তোর হাতে সঁপে দিলাম। ওরও একটা জীবন আছে। ও একটা মেয়ে আমি তোকে আমার মতো প্রতিজ্ঞা করতে বারন করবো।মিত্রা তোকে ভালোবাসে। তুই মিত্রাকে ভালোবাসিস। তোদের ভালোবাসর ফল আমাদের দিস। আমরা দুটোতে মানুষ করবো।
তোরা দু-টোতে যেমন আছিস তেমন থাকিস। মিত্রার কাছ থেকে তোর বড়োমার আগে ছোটোমা সব জেনেছে। মিত্রা কোনও কথা অস্বীকার করেনি। আমি তোর দাদার মতামত নিয়েছি। সে আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। মিত্রার বাবা চেয়েছিল তোকে, তার মা চায়নি, আজ মিত্রা তোকে চাইছে।
তোর বড়োমা ডাকাবুকো। সহজ সরল বড়োমার পেছনে একজন বিদ্রোহিনী লুকিয়ে আছে। তোর দাদাকে নিয়ে আমারও অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পায়নি। একদিন হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমি তোর মধ্যে তোর দাদাকে খুঁজে পাচ্ছি। বরং একটু বেশি। আমি তোর দাদাকে একবারে তোর মতো দেখতে চেয়েছিলাম। পারিনি। তোর ছোটোমারও একই অবস্থা, আমার মতো। তবে….।
আমি বড়োমার মুখ চেপে ধরলাম, ঘার দুলিয়ে না না করছি। বড়োমাকে ছেড়ে ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলাম। ছোটোমা কিছু বলতে গেল, আমি ছোটোমারও মুখ চেপে ধরলাম, মিত্রা পাসে এসে দাঁড়াল।
বুবুন তুই কাঁদিস না।
মিত্রার গলাটা ভাড়ি ভাড়ি।
তোকে আমি কখনও কাঁদতে দেখিনি। এর থেকেও তুই অনেক বড় বড় ব্যাপার সামলেছিস। আমি কেঁদেছি, তুই শক্ত থেকেছিস। তুই আমার কথাটা একবার ভাব। আমারও তোর কাছে কিছু চাওয়ার আছে। আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরে আছি। মিত্রাও ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি সামনে মিত্রা পেছনে।
ছোটোমাও কাঁদছে।
শেষ পর্যন্ত ছোটোমা বলে উঠলো, তোদের দু-জনের চাপে আমি দমবন্ধ হয়ে মরে যাব।
বড়োমা আবার বলতে শুরু করলো, ছোটোর কথা একবার ভাব। কত কষ্ট বুকে নিয়ে বসে আছে। তুই ভাবছিস নিরঞ্জন কিছু জানে না। নিরঞ্জন সব জানে।
মুন্নার ব্যাপারটাও। তোর ছোটোমা গাড়িতে আসতে আসতে সব কনফেস করেছে নিরঞ্জনের কাছে। তোর দাদা নিরঞ্জনকে সব বলেছে। ওরে নিরঞ্জন যে আমাদের ঘরের লোক।
নিরঞ্জনদা আমার কাছে এগিয়ে এলো, গলাটা ভাড়ি।
নারে অনি, তুই ঠিক করেছিস। তোর ডিসিশন পারফেক্ট ডিসিশন।
আমার দুটো কাঁধে হাত দিয়ে ঝাঁকুনি দিল।
তোর জায়গায় আমি থাকলেও এই ব্যাপারটা ঘটাতাম। আমি তোকে ঠিকমত চিনি না তুই আমাকে ঠিক মতো চিনিস না। কেন তুই ওপেন করবি নিজেকে। আগে দুজনের বোঝা-পড়ার পালা শেষ হোক। তাই না।
আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম। তুই সত্যি আমাদের গর্ব, দাদাকে জিজ্ঞাসা করিস। নার্সিংহোমে তোকে দেখেই আমি দাদাকে বলেছিলাম, রাইজিং সান খুব সাবধানে অপারেট করো, নাহলে ওর আগুনে পুরে ছাই হয়ে যাবে। দাদা মাঝে মাঝে আমার কথা শোনে, এই কথাটা রেখেছিল।
ছোটো ওটা দে, এই ফাঁকে পরিয়ে দিক।
ছোটোমা নীপাকে ডাকল। নীপা ছুটে কাছে চলে এলো।
নীপা ব্যাগ থেকে একটা অর্নামেন্টের বাক্স বার করে নিরঞ্জনদার হাতে দিল।
নিরঞ্জনদা বললো, দে মিত্রাকে পরিয়ে দে।
আমি মিত্রাকে পরিয়ে দিলাম। মিত্রা নিরঞ্জনদাকে প্রণাম করলো।
বুঝলি অনি আমি এখনও কুমার থেকে গেলাম, তোর বড়োমা, ছোটোমাকে বলে বলে আমার মুখটা একেবারে হেজে গেছে। দেখ তো মিত্রার মতো একটা মেয়ে খুঁজে পাস কিনা। তাহলে এই বুড়ো বয়সে একবার বিয়ের পিঁড়িতে বসি।
মরন, রস দেখ না। বড়োমা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
সবাই হেসে উঠলো। আমিও না হেসে পারলাম না।
ইসলামভাই এসে বললো, মনে কিছু করিসনা অনি। এখানে এসে সব জানলাম। এই প্ল্যানটা বহু দিন থেকে চলছে। এরা সবাই জানে। তোর বন্ধুরা আজ জেনেছে। বড়দি ওদের সব বলেছে।
ওরা বড়দির কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। এমনকি বাজারে গিয়ে আমি ওদের সঙ্গে কত গল্প করলাম। তাও জানতে পারিনি। ওরা ঠিক তোর মতো তৈরি হয়েছে।
বাসুর দোকানে যখন জামাকাপর কিনতে গেলাম। ও শুধু জিজ্ঞাসা করেছিল কার জন্য। আমি ওকে বলেছিলাম। বাকিটা ও গুছিয়ে দিয়েছে। আমরা আসার আগে এখানে সঞ্জু সব পৌঁছে দিয়েছে। তোর চোখে মুখে সন্দেহের ছাপ দেখেছি। কিন্তু তুই যে বুঝতে পারিসনি, তা জানি। তোকে এই মুহূর্তে আমার দেবার মতো কিছু নেই। তুই এখানে অনেক বড়ো কাজ করার জন্য এসেছিস। সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। এটা রাখ, কাজে লাগবে।
ইসলামভাই পকেট থেকে একটা হাজার টাকার বান্ডিল বার করলো। আমি হাতে নিলাম। তারপর ইসলামভাইকে বললাম এটা তোমার কাছে রাখো। প্রয়োজনে চেয়ে নেব।
ভুলে যাবি না?
হেসে ফেললাম।
ইসলামভাই-এর বুকে মুখ গুঁজলাম।
মিত্রা ইসলামভাইকে এই ফাঁকে প্রণাম করলো।
ইসলামভাই আমাকে ছেড়ে মিত্রাকে কাছে টেনে নিল। দুই কাঁধে হাত দিয়ে ঝাঁকুনি দিল।
ইসলামভাই তোর প্রণাম নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি। তোর প্রতি অনেক অন্যায় অবিচার হয়েছে। ইসলামভাই এবার সেই অন্যায়ের প্রতিশোধ নেবে। তোকে কথা দিচ্ছি তোর চোখের জল বৃথা যায়নি। যাবে না। ইসলামভাই মিত্রার কপালে চুমু খেল।
ওরা সবাই কিছুনা কিছু নিয়ে এসেছে।
নীপাও নিয়ে এসেছিল।
সবাই একে একে মিত্রার হাতে তুলে দিল। অনাদি আমার কাছে এগিয়ে এলো। ওর পেছন পেছন বাসু, সঞ্জু, চিকনা, পচা। তোর কাছ থেকে আজ একটা জিনিস শিখলাম। কাউকে বিশ্বাস করবি না। বিশ্বাস করার যোগ্যতা অর্জন করলে তারপর বিশ্বাস কর।
চোখটা আজ খুলে গেল। তোকে কথা দিলাম, তুই আমাদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছিস তা যত কষ্টই হোক সফল করবো। এটা তুই রাখ, এটাই তোর সেরা অস্ত্র। এটা দিয়ে তুই একাট লোককে বাঁচাতে পারিস, আবার একটা লোককে নির্দিধায় খুন করে দিতে পারিস।
অনাদি আমার হাতে একটা পার্কার পেন তুলে দিল। আমি হেসেফেললাম।
শেষে ভজুরাম দুটো অশ্বত্থ পাতা তুলে এনে আমার হাতে একটা আর মিত্রার হাতে একটা দিয়ে বললো, অনিদা তুমি যে বলেছিলে কোনওদিন বিয়ে করবে না, তাহলে এটা কি হলো।
আমি হাসলাম, বিয়ে করলাম কোথায়, তোর দিদিমনির সঙ্গে একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করলাম।
বিয়ে না?
না।
তাই সিঁদুর পরালে না?
আমি ভজুর কাঁধে হাত দিয়ে মাথা দোলালাম।
ভজু হাঁটতে হাঁটতে আপন মনে পুকুরের ওপারে ট্রলির দিকে চলে গেল।
আকাশের দিকে তাকালাম, অশ্বত্থ গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে গাছের তলায় পরেছে। চারিদিকে আলোয় আলো, কি ঘটলো ব্যাপারটা? সত্যি কি এটা বিয়ে না ভালোবাসার মিলন।
পৃথিবীতে কোনটা সত্য? বিয়ে না ভালোবাসা। বিয়ের মৃত্যু হয়। ভালোবাসার কোনও মৃত্যু নেই। নেই তার কোনও কেমেস্ট্রি। কোনও বৈজ্ঞানিক আজ পর্যন্ত এর ব্যাখ্যা সঠিক ভাবে দিতে পারেনি।
বড়োমা এটা কি করতে চাইলো? বেঁচে থাকা? আশা? হোপ?
মিত্রার ফোনটা বেজে উঠলো।
মিত্রা নম্বরটা দেখে বড়োমার হাতে এগিয়ে দিল। দাদার গলা। ভয়েজ অন করা আছে।
হ্যালো।
কাজ শেষ হলো।
হ্যাঁ।
কোনও ঝামেলা করেনি?
না।
ওটা নিয়ে আমার একটু টেনসন ছিল। বড্ড মুডি।
ও সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
দাও দাও।
বড়োমা, আমার হাতে ফোনটা দিল।
তোর কাজ ঠিক ঠিক করে দিয়েছি।
চুপ করে থাকলাম।
কালকের কাগজটা দেখিস। সব এডিসনেই ফার্স্ট পেজটা চেঞ্জ করলাম না, ভেতরের পেজ গুলো এ্যাডিসন অনুযায়ী অল্টারেশন করলাম। তারপর বল।
তুমি বলবে, আজ আমি শুনবো।
কেনরে আমি কি করলাম, আমি বলবো তুই শুনবি! এতকাল তুই বললি, আমি শুনলাম। আজ আবার কি হলো?
কাল এই জন্যে জ্যোতিষির কাছে গেছিলে?
দাদা হেসে ফেললো।
আমি কিছু করিনি, তোর বড়োমা আর মল্লিক। ছোটো মিডিয়েটর।
বড়োমা আর মল্লিকদাকে প্ল্যানটা কে দিয়েছিল?
সেটা তুই বলতে পারিস, জানিস নিরঞ্জনকে তোর ব্যাপারটা যখন খোলাখুলি বলি ও আমাকে সাবধান করলো। বললো তুই নাকি রাইজিং সান, আমি পুরে যেতে পারি। শেষে ডক্তার যখন বললো বুঝলে এডিটর খাঁটি ইস্পাত খুব সাবধান, হাত কেটে যেতে পারে। তখনই তোর বড়োমাকে বলে ব্যাপারটা ঠিক করলাম।
তুমি আমার কথা এতটা ভাবো? গলাটা ভাড়ি হয়ে এলো।
দূর পাগল মনখারাপ করিস না, মানুষের বুক আর মুখ এক নয়, তুই আমার মুখ দেখেছিস, বুকটা দেখার চেষ্টা করিসনি। দে দে তোর বড়োমাকে দে।
আমি বড়োমার হাতে ফোনটা তুলে দিলাম।
আমারটা ওকে দিয়েছ।
বাড়িতে গিয়ে দেব।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। এইবারে মরন বললে না?
যাঃ।
একবার মরন বলো। তোমার মুখে মরন কথাটা শুনতে দারুন লাগে।
ধ্যুস।
প্লিজ প্লিজ।
মরন।
থ্যাঙ্ক ইউ।
বড়োমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পরলো।
আমি বড়োমার আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিলাম।
বড়োমা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিত্রার ফোনটা আবার বেজে উঠলো।
বড়োমা বললো, তোর সাথে কথা বলতে চায়, আমায় ফোনটা দিল।
দেখলাম মল্লিকদা। রিসিভ করলাম।
কি গুরু পাটালি, জিলিপি একলাই খাবে।
কোথায় খেলাম?
তারমানে!
সঙ্গে সঙ্গে অনাদি চেঁচিয়ে উঠলো সত্যিতো, পচা নিয়ে আয় নিয়ে আয়। বিজয়ের ব্যাগে আছে। ওদেরও ডেকে আনিস।
কিরে চেঁচামিচি কিসের?
এখন সবার মনে পড়েছে।
সত্যি তোর ছোটোমাটা একটা ঘটত্কচ।
কেন?
পই পই করে বললাম, ওটা অনির ফাবারিট জিনিস।
আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম। ছোটোমা মুচকি মুচকি হাসছে।
কিরকম খেললাম বল।
আমি একটা গোল খেলে, দুটো দিই।
সে হবে না, এখন আমরা দলে ভারি, পাঁচজন। তুই একা। আবার আজকে থেকে দু-জনকে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখবো। লড়তে পারবি না। বড়ে দিয়ে তোকে কিস্তি মাত করে দেব।
বুঝেছি।
আমার জন্য একটু পাটালি আর জিলিপি নিয়ে আসিস।
হবে না।
কেন।
যার জন্য স্কীম করেছো, সে সব খেয়ে নেবে।
নাগো মল্লিকদা, মিথ্যে কথা বলছে। মিত্রা বললো।
কিরে ভয়েজ অন নাকি!
হ্যাঁ। এটাও তোমার স্কিম।
যাঃ কি যে বলিস। আছে নাকি ধারে কাছে।
থাকবে না মানে, ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
ছোটোমা চোখের ইশারায় না বলছে, আমি ভয়েজ অফ করে ছোটোমার হাতে দিলাম। ছোটোমা মল্লিকদার সাথে কথা বলতে শুরু করে দিল।
ওরা জিলিপি, পাটালি নিয়ে এসেছে, বার করার আগেই মিত্রা গিয়ে খাবলা মারলো। একটা নিয়ে এসে বড়োমাকে হাঁ করতে বলে মুখে পুরে দিল। আর একটা নিয়ে ছোটোমার মুখে তারপর নিরঞ্জনদার মুখে তারপর ইসলামভাই-এর মুখে গুঁজে দিয়ে আবার ছুটে চলে গেল খাবলা মারতে, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, চলে আয়, না হলে এখুনি শেষ হয়ে যাবে।
হাসলাম।
তুই এনে দে। বড়োমা বললো।
বয়ে গেছে। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
সে কিরে!
তুমি রাখো তো, আগে নিজে প্রাণ ভরে খাই, তারপর। ও অনেক খেয়েছে, না খেলেও চলবে। বাসু, বুবুনের ভাগটা আমায় দিয়ে দাও।
বাসু হাসছে।
একটা পাটালির টুকরো আর জিলিপি দিল। মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এল।
তেলভাত খেয়েছিস দুপুরে। বেশি খাস না বদ হজম হবে।
বড়োমা আর হাসি চাপতে পারলো না।
মল্লিকদা নিশ্চই কিছু বলেছে, তাই ছোটোমা বললো।
আবার কে মিত্রা। সেই কাল রাত থেকে শুরু করেছে।
বাসু সবাইকে হাতে হাতে এসে দিয়ে গেল।
নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই হাসছে।
ওদিকে সঞ্জু আর চিকনার মধ্যে প্রায় হাতাহাতি হওয়ার জোগাড়, পচা সামলাচ্ছে।
মিত্রা ওদের দিকে এগিয়ে গেল, পচা চেঁচিয়ে উঠলো।
ম্যাডাম আপনি আসবেন না যতক্ষণ থাকবে চলবে, শেষ হলে থেমে যাবে।
আর নেই?
পচা চোখ বড়ো বড়ো করে বলে উঠলো, আরও লাগবে!
থাকলে ভালো হতো।
ক্ষমা দেন। কাল সকালে এনে দেব।
পচার কথায় আমরা হাসাহাসি করছি। নীপা, মিত্রাকে সাহায্য করছে কারাকারির জন্য।
বাসু, ছোটোমার হাতে দিল। ভজু এসব দেখে একবার নাচে একবার হাসে। আমার কাছে এসে বলে গেল। অনিদা জিলিপির থেকে পাটালিটা দারুন। আমি ভজুর মাথায় একটা চাঁটি মারলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলো। শেষে মিত্রা, নীপা দুজনে মিলে পাতা চেটে তার রস খেল। তারপর নেমে গেলে পুকুরে হাত ধুতে। আমরা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম। ওরা সবাই গিয়ে ট্রলিতে বসলো।
আমি মিত্রার কানে কানে বললাম, এখানে দাঁড়িয়ে কিছু চেয়ে নে, পেয়ে যাবি। ও আমার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে উত্তর দিল, আমি নিচু হয়ে গাছের গোড়া থেকে একটু মাটির গুঁড়ো তুলে ওর কপালে টিপ পরিয়ে দিলাম।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/p92rLR6
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment