❝কাজলদীঘি❞
BY-জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৬২ নং কিস্তি
—————————
ফোনটা পকেটে রাখলাম। আসতে করে পিঠে একটা টোকা পরলো। ফিরে তাকালাম। মিত্রা পিটি পিটি হাসছে। গেটের মুখে ওরা সবাই। মিত্রা আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে। চোখের মনি দুটো খুশিতে চক চকে।
কি হলো। তোমরা ভেতরে এসো।
চিকনাকে ফোন করলি?
হ্যাঁ।
তোর কথা বলার ধরণ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম।
তোরা এলি, কনিষ্করা এলো না।
অনুপদার সঙ্গে কথা বলছে।
ও।
ও করিস না। তোর জন্য সুপার বেচারা ঝাড় খাচ্ছে।
ওরা ঠাণ্ডা ঘরের মধ্যে বসে এ্যাডমিনিস্ট্রেসন চালায়, নিচের তলায় কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই বোঝে না। তারা কি ভাবে কাজ করে সেটা জানারও সময় তাদের নেই।
তুই বুঝিস?
চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিস। মালতী বাড়ি গেছে?
হ্যাঁ। অনুপদা বলেছে কোনও সমস্যা হলে খবর দিতে।
নীরুকে দেখলি, মনার বৌ-এর জন্য ওষুধ পাঠাল, ওটা কি ওর কাজ, আমার মতো ও একটা পাগল। স্যাম্পেল কপি পাঠাল, হয়তো নিজের পয়সায় কিছু ওষুধ কিনে দিয়েছে। অন্য ডাক্তার হলে ওই স্যাম্পেল কপি বিক্রি করে ওই পয়সায় কোনও বড়ো রেস্তোরায় বসে বৌকে নিয়ে ডিনার করতো। বৌ-এর কাছে আদর্শ স্বামী সাজতো। ওই মেয়েটা যদি ঠিক মতো পথ্য না পায় তাহলে একটা রিকেট রুগীর জন্ম দেবে। হাসপাতালে যা, দেখতে পাবি একটা বেডে দুটো মা তার বাচ্চা নিয়ে শুয়ে আছে। এ মুখো ও মুখো হয়ে।
রোগ আছে। ওষুধ নেই। যদিওবা ওষুধ আছে, ওষুধের গায়ে যা পাওয়ার লেখা আছে, তা নেই। হাফ পাওয়ার আছে। দেখারও কেউ নেই। পরীক্ষা করার কথা দূর কি বাত। একটা ডাক্তার কি নিয়ে লড়বে। ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দার।
অর্ক একটা লেখা লিখেছে। উইথ ডকুমেন্টস। স্টোরিটা করতে তোর হাউসের দশহাজার টাকা খরচ করেছি। যদি না ছাপি তাহলে যে ছেলেটা কষ্ট করে স্টোরিটা করলো তার কষ্টটা মাঠে মারা যাবে। যদি ছাপি, সুপারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন বসবে। প্রশাসনে বিরাট আলোড়ন পড়ে যাবে। বল কোনটা ঠিক?
মিত্রার চোখ ছল ছল করে উঠলো। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তুই বলবি বুবুন তুই এসব ছেড়ে দে। আর ভালো লাগছে না। তোর কথা মেনে নিয়ে যদি তাই করি, তাহলে দেখবি, টোটাল ব্যবস্থাটা একদিন ভেঙে পডবে। তুই বলবি তুই কি সবার ঠেকা নিয়ে বসে আছিস। না আমি আমার কাজ করছি। তবু লেখালিখি করাতে ওরা কিছুটা ধাক্কা খায়, নরেচরে বসে সামান্য কাজ হয়। না হলে সেই গড্ডালিকা প্রবাহ।
তা বলে আমি ভগবান নই। নিজের কেউ নেই। তাই প্রচুর মানুষের সঙ্গে মিশি। বন্ধুত্ব করি। কিছু টেঁকে কিছু টেঁকে না। আমি আমার কাজ করে চলি। সেই ঘুরে ফিরে এক কথা পাগলের গোবরানন্দ।
মিত্রা চোখে জল চিক চিক অবস্থায় হেসে ফেললো।
এসো টিনা। সবসময় অনিদার কথায় মন খারাপ করবে না। অনিদা যখন কিছু সহ্য করতে পারে না, তখন মন খারাপ করে। তোমরা ঠিক থেকো।
টিনা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
কিরে দেবা দাঁড়িয়ে রইলি কেন। বোস।
তোর কথা শুনছিলাম আর ভাবছিলাম তোর কাছে না এলে নিজের কতো ক্ষতি করতাম। সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার তোকে চেনা মুস্কিল হতো। এখন বার বার মনে হচ্ছে, তোকে কিছুদিন আগে পেলে খুব ভালো হতো। এতদিন খুব মিস করেছি।
জানিস দেবা তোর মতো আমিও এই দু-দিনে অনিকে দেখে অবাক হচ্ছি। আর ছুটকিকে ভীষণ হিংসে করছি। কেন ও স্কটিশে পড়লো। ওতো প্রেসিডেন্সিতে চান্স পেয়েছিল।
ইসি কথাটা বলে হেসে ফেললো।
দেবা একটা কিনলে একটা ফাউ, কি বলিস। আজকাল এরকমই অফার চলছে।
শয়তান, মিত্রা কোমড়ে চিমটি কাটল।
ইসি তেড়ে এলো।
দেখাচ্ছি দাঁড়া।
ইসি আমি কিন্তু চোখ বন্ধ করে ভেবে নেব, তুই মিত্রা, বুঝতে পারছিস।
মিলিরা হাসে।
অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো যাক বাবা মেঘ কাটল।
টিনা, সুজিতদা কি দিয়েছে দাও।
মিত্রাদির কাছে।
কিরে আমার পার্সোনাল চিঠি তোর কাছে কেন?
তোর এখন আর কিছু পার্সোনাল নেই, সবাই দেখেছে।
তার মানে তোদের সবার দেখা হয়ে গেছে!
বাড়ি শুদ্ধ সবার। কি খাওয়াবি বল।
কি লেখা আছে দেখলামই না। খাওয়াব কি।
টিনা, মিলি, অদিতি মুচকি মুচকি হাসছে।
কি ম্যাডামরা মুচকি মুচকি হাসছেন, কিরে দেবা।
মিত্রা বলবে, আমরা দর্শক। দেবাশিস বললো।
তুই বল আগে কি খাওয়াবি। মিত্রা বললো।
আগে দেখি কি লেখা আছে তারপর খাওয়াবার প্রশ্ন।
তোকে দেখতে হবে না। ওটা আমাদের জন্য। ঠিক আছে তোকে খাওয়াতে হবে না। ভালোপাহাড়ে কবে নিয়ে যাবি?
আরি বাবা এতো কিডন্যাপ কাণ্ড।
গিভ এণ্ড টেক পলিসি।
দরকার নেই, আমি সুজিতদাকে ফোন করছি। আমি বললাম।
দেখেছিস দিদিভাই, দেখেছিস কি তেঁদড়।
নীরু হন্ত দন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো। আমার সামনে এসে বললো, ম্যাডাম একটু সরুন তো। ওকে কোলে নিই।
কেন আমি কি তোর বউ?
কনিষ্করা গেটের মুখে দাঁড়িয়ে হাসছে।
নীরুর কি হলো রে। আমায় কোলে নেবে বলছে।
সুখবর আছে। কনিষ্ক বললো।
হবে নাকি?
দেখলি বটা ইমোসানটাকে চটকে একেবারে চাটনি বানিয়ে দিল।
আমি নীরুকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। কি হয়েছে বল।
আর পরের নার্সিংহোমে কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। এবার নিজেদের নার্সিংহোম।
হাসলাম। হাসপাতাল ছাড়া চলবে না।
পাগল তুই, অনুপদা সুপারকে ধরে আচ্ছা করে কর্কে দিয়েছে।
অনুপদাকে বলতে গেলি কেন?
আমি বলবো কি ছোটোমা গ্যাস খাওয়াল, বড়োমার রাম গালাগালি। সাং সাং কাজ। স্যারকে অফার দিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য।
ডাক্তারদাদা কি বললো?
সাতটা নার্সিংহোম নিয়ে হিমসিম খাচ্ছি, তারওপর অনির এইটা। আর এ সব দায়িত্ব নিতে পারবো না।
তোরা চারজন না সবাই।
আপাতত চারজন, বাকি কনিষ্ককে দায়িত্ব দিয়েছে।
তোর বউ।
লাইনে আছে। ফোন করে বলেছি, ইঁট পাতো।
সবাই নীরুর কথা শুনে হাসছে।
শ্যাম নিচে এসেছে একটু কথা বলে নে। ওরা আবার রাতের ট্রেনে ফিরবে। কনিষ্ক বললো।
ডেকে আন।
অনিকেত বেরিয়ে গেল।
দেবা প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করলো। নিজে একটা বার করে কনিষ্কর দিকে প্যাকেটটা এগিয়ে দিল।
তুই খাবি?
না।
কবে থেকে সতী হলি।
কোনদিন ছিলাম।
কেন মুখ লাগাচ্ছ দেবাদা। মিলি বললো।
শালা সব সময় এরকম করে।
কনিষ্ক, টনা, মনাকে কাল ছেড়ে দিবি? আমি বললাম।
সাত্যকি বললো, আজই ছেড়ে দিতে। আমি বললাম আজ রাতটা রেখে দে। কাল ছেড়ে দিস।
বিল।
অনুপদা নীরুকে বলে দিয়েছে, কার নামে কি ভাবে করতে হবে।
নীচে গাড়ির শব্দ শুনলাম।
কিরে আবার কে এলো।
দেখি দাঁড়া।
বটা বারান্দায় বেরিয়ে গেল।
ওখান থেকেই বললো। অনিমেষদা, বিধানদা, রূপায়ণদা, প্রবীরদা।
দেখলি। আমি জানতাম। তুই এবার আপার লেবেলে চলে যাবি, তোকে এখন পাওয়া যাবে না। মিত্রা মুখ বেঁকিয়ে বললো।
শ্যাম, শিবু, দারু এসে ঘরে ঢুকলো। সটান এসে নীচু হয়ে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
কালো কুচ কুচে চেহারা। চক চক করছে। মাথা থেকে তেল চুঁইয়ে পড়ছে। হাতের চেটোগুলো বেদানা কালারের। গাঁট্টাগোট্টা চেহারা। এক একটা যেন বাচ্চা হাতি। প্রণাম করে উঠেই আমাকে সরাসরি প্রশ্ন।
তুই গেলি নি কেনে?
শ্যামের কথা শুনে মিত্রা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। সাঁওতালী টান বাংলার মধ্যে। তার ওপর আমাকে তুই বলছে।
হাসলাম। কেন, কনিষ্কদা যায়নি?
তুই গেলিনি।
যাব। অনেক কাজ ছিল। সেগুলো সামলালাম।
আমি ওদের এক একজনকে বুকে টেনে নিলাম।
ধারাগিড়ির সুবল কইলকাতা এসছিল, ফিরে গেয়ে বইললে কে যেন তোকে মাইরবে বইলছে, একবার দেইখে দে, হাঁসুয়া দিয়ে কাইটে দিই। শ্যামের চোখ দুটো বদলে গেল।
দূর বোকা কেউ মারবে না।
তাইলে ও মিছে কথা বইলছে বল।
না ও মিছে কথা বলেনি। ঠিক কথা বলেছে।
ঠিক আছে ও আমি পরে বুঝে লিবেক। তোকে বুঝতে হবেক লাই।
বউমনিকে দেখেছিস?
না। কনিষ্কদা ফোন কইরে বইললো।
এই যে তোদের বউমনি।
মিত্রাকে হাত ধরে সামনে আনলাম। ওরা মিত্রার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করে মিটি মিটি হাসছে। একবারে লজ্জা পেয়ে গেছে।
কিরে হাসছিস যে।
তুর বউটা সন্দর?
পছন্দ। চূড়ার থেকেও সুন্দর?
হ। চূড়া কালা, তোর বউ সাদা।
মিত্রা, ইসি হাসছে।
শিবু ব্যাগটা লিয়ে আয়।
শিবু একটা সাইড ব্যাগ নিয়ে এলো।
কি আছে এতে?
তোর জন্য লিয়ে আসছি।
দুটো বড়ো বড়ো বোতল বার করলো।
কিরে এ তো দেখছি মধু। ওটা কি? মহুয়া!
শিবু মাথা দোলাচ্ছে।
তুই বলছিলি খাবি। চূড়া বনায়ে দিছে। শ্যাম বললো।
মিত্রা আমার হাত থেকে নিয়ে নিল।
কিরে শ্যাম অনিদাকে দিলি। আমারটা কই। কনিষ্ক বললো।
তুই গেলে তুকে খাওয়াব।
আচ্ছা, এবার প্যাঁক প্যাঁক করে ইঞ্জেকসন দেব।
তুই দিবি লাই।
ওরা সবাই হাসছে।
অনিদা মহুয়া খায় না। তুদের দিয়ে দেবে।
বাবাঃ, তুই সব জানিস!
দারু একটা প্লাসটিকের প্যাকেট আমার হাতে দিল।
এটা কিরে।
হুড়ুং-এর সত্তু।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
কি ম্যাডাম ধরতে পারলেন না। নীরু বললো।
মিত্রা মাথা দোলাচ্ছে।
মুড়ির ছাতু।
ওরা সবাই হাসছে।
তুর সঙ্গে কথা আইছে। তুই ওখানে চইল।
শ্যাম বারান্দার দিকে হাত দেখাল।
ওরা সবাই তিনজনকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে। কি সহজ সরল এরা। শহুরে বাতাবরণ একটুও নেই। না আছে রাখ ঢাক, না আছে কিছু। ওরা সম্পূর্ণ ওদের মতো।
তোর বৌদিমনিরা যাবে বলছে।
কবে জিবে বল। তোকে লিয়ে যেতে হবেক লাই। আমি এসে লিজে লিয়ে যাবেক।
মিত্রা সমেত মিলিরা সবাই হই হই করে উঠলো।
তুই কি করে নিয়ে যাবি?
কেনে দোলায় করে লিয়ে যাবেক।
মৌসুমি মাসি ওখানে, না ফিরে এসেছে?
ওখানে আছে, চাঁদ উঠলে ফিরে আসবেক।
আমি ওদের নিয়ে গেটের সামনে এলাম। দেখলাম ছোটোমা, বড়োমা, জ্যেঠিমনি।
শ্যাম আমার মায়েদের সঙ্গে কথা বলেছিস।
নিচে কনিষ্কদা বলায়ে দিল।
তোমরা বসো, আসছি।
আমি ছোটোমার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ওদের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম। তারপর ফিরে এলাম।
বড়োমা ওরা চলে যাবে, ওদের কিছু খাবার দিয়ে দাও। পথে যেতে যেতে খাবে।
কবিতা গুছিয়ে রেখেছে।
তোরা কিছু নিয়ে এসেছিস।
তুই পাতায় করে দে বাঁইধে লিব।
কিগো শ্যাম তুমি অনির জন্য মহুয়া নিয়ে এসেছো কেন। ছোটোমা বললো।
আগুবার গিয়ে চূড়াকে বইললে, মহুয়া খাওয়াস, তাই চূড়া দিলে।
খেলে নেসা হয়।
টোকচা খেইলে লেসা হবেক লাই। ফলের রস। শরীল টাটালে ভালো হয়।
ছোটোমা হাসছে।
আমি ওদের নিয়ে নীচে এলাম। অনিমেষদাদের সঙ্গে দেখা করালাম। বিধানদাকে বললাম, ওরা ওদের কথা বললো। আমি শুনেছি, পরে তোমাদের সঙ্গে আলোচনা করবো। ওরা এখন চলে যাবে।
সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নীরু, কনিষ্ক, বটা, অনিকেত চলে যেতে চাইল। আমি বললাম ডাক্তারদাদার সঙ্গে একবার দেখা করে আয়।
আমি শ্যামেদের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। বারান্দায় ফিরে আসতেই দেখলাম কনিষ্করা দাঁড়িয়ে আছে।
কিরে কি বললো?
চারজনকে রাতে একবার আসতে বললো।
চলে আয়। রবীন পৌঁছে দিচ্ছে।
আমি আবার ওদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে গেটের মুখ পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ওরা চলে গেল। ফোনট পকেট থেকে বার করে একবার হিমাংশুর সঙ্গে কথা বললাম, মিলির ব্যাপর নিয়ে। ও প্রথমে অবাক হয়ে গেল।
তাই! জানতম না।
তুই কালকে একটা ব্যবস্থা কর। মিউচুয়াল ডিভোর্স। আইন বাঁচিয়ে।
এটা আমি করতে পারব না। দেখি দাঁড়া কাকে দিয়ে করান যায়।
তুই একবার রাতের বেলায় আসবি।
ফেরার পথে যাব।
কালকে লতার সঙ্গে কথাই বলা হলো না।
কেন বলিসনি সে তো আজ জানলাম দাদার মুখ থেকে।
অফিসে গেছিলি?
হ্যাঁ।
হাওয়া কি বুঝলি?
সবাই তোর ভয়ে তটস্থ।
কেন!
কার ঘাড়ে কখন খাঁড়া পরে কেউ জানে না। তবে কাজে অনেক গতি বেরেছে।
তুই আয় রাতে কথা বলবো।
আচ্ছা।
বসার ঘরে উঁকি মারলাম। দেখলাম পাঁচ মহারথী, ডাক্তারদাদা, ইসলামভাই, দামিনীমাসি বসে কথা বলছে।
তুই কি এখন বসবি। অনিমেষদা বললো।
আমাকে খুব দরকার আছে?
ইসলামভাই হেসে ফেললো। বিধানদাও হাসছে।
নীচে বসবে না ওপরে বসবে।
তোর ঘড়ে হলে ভালো হয়।
ঠিক আছে এসো।
যাচ্ছি তুই যা।
আমি ওপরে চলে এলাম। বড়োমারা নিচেই থাকল। ওপরে এসে একটা সিগারেট ধরালাম। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, ঘরের ছোটো লাইটটা জ্বালালাম, মানসিক ভাবে নিজেকে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। কিছুতেই অনেক ব্যাপার নিজের মন থেকে মনে নিতে পারছি না। তবু মেনে নিতে হচ্ছে। একেই মনে হয় বলে কমপ্রমাইজ। আমাকেও কমপ্রমাইজ করতে হবে। অনিমেষদার মুখের ওপর কথা বলতে পারি না। এদের জন্যই আজ আমি কলকাতা শহরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছি। না হলে কবে মরে হেজে যেতাম তার ঠিক ঠিকানা নেই।
সত্যি তুই একটা পাগল। তোকে নিয়ে….
ঘরে লাইট জ্বলে উঠলো।
পেছন ফিরে তাকালাম। ইসি, মিত্রা দু-বোন আমার ঘরে। একজনের হাতে চায়ের ট্রে। আর একজনের হাতে চায়ের পট।
তুই আধ ঘণ্টা সময় দে। এরপর তোকে আর পাব না। তুই ভিভিআইপি বলে কথা। ইসি বললো।
হাসলাম।
আমি ভিভিআইপি নয়, তোদের থেকেও নগন্য। তোরা আমাকে ভিভিআইপি বানিয়ে দিচ্ছিস।
আয় তিনজনে একটু চা খাই।
আমি জানলার কাছ থেকে এগিয়ে এলাম। খাটে বসলাম। ইসি চা ঢাললো।
অনিমেষদারা কোথায়?
নিচে।
কি করছে?
জোর গল্প হচ্ছে। দিদিভাই অনিমেষদাকে বললো, আপনারা একটু গল্প করুণ আমি একটু অনির সঙ্গে কথা বলে নিই।
হাসলাম।
দেখলি দিদিভাই, কিরকম হাসছে দেখ।
বল ইসি তোর কি কথা আছে?
কবে যাবি?
কোথায়?
আমাদের বাড়ি।
ইচ্ছে ছিল আজই তোদের গিয়ে রেখে আসবো। জ্যেঠিমনিকে সেরকমই কথা দিয়ে নিয়ে এসেছিলাম।
দেখ কিরকম তুই খোঁচা মেরে কথা বলছিস, তুই এখনও ওই দিনের কথা ভুলতে পারিসনি।
আচ্ছা আর বলবো না। তুই আমার একটা উপকার করবি?
বল।
আমি খাট থেকে নেমে টেবিলের কাছে গেলাম। সেদিন যে ফটোটা আমায় বরুণদা দিয়েছিল সেটা নিয়ে এলাম।
কিরে এটা নিয়ে এলি! মিত্রা বললো
ইসির দিকে তাকিয়ে বললাম এটা নিয়ে গিয়ে যেখানে ছিল সেখানে রাখবি। আমি গিয়ে দেখব।
কেন! এটা তোর বরুণদা তোকে দিয়েছে।
তুই বুঝবি না। তোকে যা বললাম তাই করিস।
মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
আমি এর থেকে একটা কপি করে নিই, তারপর দিয়ে দিস।
তাহলে দায়িত্বটা তোর ওপর থাকলো। আমি যে কোনও মুহূর্তে গেলে জ্যেঠিমনির ঘরে যেন ঠিক ওই জায়গায় ছবিটা দেখতে পাই।
আমি দায়িত্ব নিচ্ছি।
এবার বল ইসি কি বলতে চাস আমাকে।
প্রথমে বল তুই কবে যাবি।
কালও যেতে পারি, আবার ছ-মাস বাদেও যেতে পারি। তুই সব দেখছিস।
দেখছি বলেই বলছি।
তাহলে?
মা বলছিল, নতুন জামাইকে মা একবার খাওয়াবে।
সেদিন এতো খাওয়ালি….সরি ভুল হয়ে গেছে। তুই ছুটকিকে নিয়ে চলে যা। কয়েকদিন থেকে আসুক।
তুই চল, তুই না গেলে আমি যাব না। মিত্রা বললো।
বড়োমা, ছোটোমাকে নিয়ে চলে যা।
বড়োমা, ছোটোমা যাবে বলেছে, তোকেও যেতে হবে।
দেখি। আসল কথা বল। এই জন্য তুই ওপরে আমার সঙ্গে কথা বলতে আসিসনি।
বলছি, দাঁড়া না।
আমি ইসির দিকে তাকালাম।
দেখছিস কিরকম ভাবে তাকিয়ে আছে, যেন গিলে খাবে।
মিত্রা হাসছে।
তুই বাড়িতে বসে ঘর সংসার করছিস, না অন্য কিছু করছিস?
ঘর সংসার করছি। পিকু এখন একটু বড়ো হয়েছে।
বিরাট বড়ো হয়ে গেছে, তোর আর বরুণদার ভার বইতে পারবে।
দেখছিস তুই কেমন খোঁচা মারছিস।
আর মারবো না। বল।
দু-বার হলো।
হাসলাম।
আমি ওখানে একটা নার্সারী স্কুল করতে চাই, শুরুও করেছিলাম, ভীষণ বাধা পাচ্ছি।
কারা বাধা দিচ্ছে?
আমার গলার স্বরটা ওদের কাছে বেমানান লাগল।
ইসি মাথা নীচু করে নিল।
রাজনাথের লোক জোন?
ইসি মাথা দোলাল।
স্কুলটা আছে, না বন্ধ করে দিয়েছিস?
প্রায় বন্ধ।
কোথায় করেছিলি?
আমার বাড়ির থেকে কয়েকটা বাড়ির পরে, একজনের নীচের তলাটা ভাড়া নিয়ে।
ঠিক আছে, তুই যা। আমি একটু খোঁজ খবর নিয়ে নিই। তুই একবার পারলে অনিমেষদা কিংবা বিধানদার সঙ্গে কথা বলে নে।
তুই বল, আমার বলতে কেমন যেন লাগছে।
আর?
সব একদিনে বলতে পারবো না। তুই এখন ঘরের লোক, তোকে সব জানাতে হবে। না হলে বেঁচে থাকাটা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে।
অনিমেষদারা এসে ঘরে ঢুকলো।
কিরে কথা শেষ হয়েছে।
আমার ইসি আর মিত্রার মুখের দিকে তাকাল।
কিরে মুখটা কেমন থম থম করছে। আবার কি হলো! অনুপদা বললো।
ইসি তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলবে, ওর কথা আগে একটু মন দিয়ে শুনে নাও, আমি নীচ থেকে একটু আসছি।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। শিঁড়ির মুখে দামিনীমাসি, ইসলামভাই-এর সঙ্গে দেখা হলো, দুজনে ওপরে আসছে। আমায় দেখে বললো।
কোথায় যাচ্ছিস?
আসছি। ঘরে গিয়ে বসো।
অনেক রাত পর্যন্ত অনিমেষদাদের সঙ্গে কথা হলো। এর মধ্যে আমি দু-বার উঠেছি। একবার হিমাংশু যখন এসেছে তখন। আমি মিলির সঙ্গে হিমাংশুকে বসিয়ে দিয়ে চলে এসেছি, বলেছি মিত্রা, মিলির সঙ্গে যাবে। তুই থাকবি।
আর একবার ইসিরা যখন ফিরে গেল। জ্যেঠিমনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল। আমি মুখে কিছু বলিনি। মন মনে বলেছি, জ্যেঠিমনি আমি জিতেগেছি।
অনিমেষদারা ফিরে যাবার পর, দামিনীমাসি, কবিতা, ইসলামভাই ফিরে গেল। টিনা, মিলিকে যেতে দিলাম না। বললাম তোমরা আজ রাতটা থেকে যাও। কাল থেকে যে যার নিজের জায়গায় ফিরে যাবে। ওরা আমার কথা রাখল। নির্মাল্যরা যথা সময়ে ফিরে গেল। কনিষ্করা আসতে পারে নি, ডাক্তারদাদার সঙ্গে ফোন করে কথা বলে নিয়েছে।
খাওয়ার টেবিলে ডাক্তারদাদা মাতিয়ে রাখলো। মল্লিকদা, দাদা সঙ্গ দিল। বেশির ভাগ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আমি। আমি খুব একটা কথা বললাম না। চুপ চাপ খেয়ে দেয়ে ওপরে চলে এলাম। ওরা তখনও বসে আছে।
বুঝলাম ছোটোমা, বড়োমার একটু অভিমান হলো, তবু আমাকে মুখে কিছু বললো না। জামা-কাপড় ছেড়ে বিছানায় শুলাম। মিত্রা আজও একটা নতুন চাদর পেতেছে। বালিশের ওয়ারগুলোও এক। সব ম্যাচিং। সামান্য শীত শীত করছে। একটা পাতলা চাদর গায়ে টেনে নিলাম।
সারাটা দিন আজ কি ভাবে কাটল। বলতে গেলে গত পর্শু সকাল থেকে, সেই যে জ্যেঠিমনিকে আনতে গেছিলাম। তারপর থেকে নিঃশ্বাস নিতে পারলাম না। একটা ঝড় যেন আমার শরীরের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। আজও সারাটা দিন তার রেশ চলেছে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চোখটা বন্ধ হয়ে এলো।
একটা মিষ্টি আবেশ আমার সারাটা শরীরে। হঠাৎ আমার চোখের পাতা দুটো কে যেন টেনে ধরে ফাঁক করলো, তারপর জোড়ে একটা ফুঁ দিলো। আমি একটু কেঁপে উঠলাম। বুঝতে পারলাম মিত্রা। জোর করে হাতটা চেপে ধরতে গেলাম। ছিটকে বেরিয়ে গেল।
দাঁড়া, চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমনো বার করছি। সকলকে সময় দেওয়ার সময় ঘুম পায় না। শুধু আমাকে সময় দিতে গেলে চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে।
চোখ পিট পিট করে ওর দিকে তাকালাম। মিত্রা শরীর থেকে কাপরটা টেনে খুলছে আর বক বক করছে।
ঘুমলেই গায়ে জল ঢেলে দেব। আমার অনেক কথা আছে, পেট ফুলে যাচ্ছে। কালকে ভাবলাম বেশ মৌজ করে ফুলশয্যা করবো ও মা উনি কাজ বাড়িয়ে বসে আছেন।
আমি চাদরটা টেনে নিয়ে আপাদ মস্তক চাপা দিলাম।
বুবুন খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি সত্যি সত্যি গায়ে জল ঢেলে দেব।
আমি নির্বিকার।
দিলো একটানে আমার চাদর খুলে।
শয়তান কখন থেকে বলছি ঘুমবি না। পাত্তাই দিচ্ছে না।
মিত্রা ব্রা শায়া পড়ে দাঁড়িয়ে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
প্লীজ প্লীজ এখন না। আমি বাথরুম থেকে ঘুরে আসি।
আমি উঠে বসলাম।
তাহলে চাদর খুললি কেন।
তুই ঘুমবি না। সেই আমার বাড়িতে তোর সঙ্গে কথা বলেছি, তারপর থেকে তোর সঙ্গে কথা বলা হয়নি।
মাথায় রাখবি। বিছানায় আয় চটকে একবারে লেচি বানিয়ে দেব।
দিবি? দাঁড়া তাড়াতাড়ি মুখটা ধুয়ে আসি।
মিত্রা নাচতে নাচতে বাথরুমে চলে গেল। আমি আবার চাদরটা টেনে নিলাম বুঝলাম আজ আমার ঘুমের বারোটার তেরোটা। ওর বক বক শুনতে হবে। কে আমার নামে কি বলেছে, তার গুণাগুন বিচার হবে। চুপচাপ চাদর মুড়ি দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম। মিত্রা বাথরুম থেকে বেরলো।
আমি চোখ পিট পিট করে তাকালাম, বুকের সঙ্গে টাওয়েলটা বাঁধা। সারা অঙ্গে টাওয়েলটা ছাড়া আর কিছু নেই। ভাবলাম গিয়ে একটু কচলিয়ে দিই। তারপর ভাবলাম না থাক। ও পা টিপে টিপে আমার সামনে এলো মুখের কাছে মুখটা নামিয়ে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো, আমি ঘুমিয়েছি না মটকা মেরে পরে আছি।
মিত্রা ঘরের বড়ো লাইটটা নিবিয়ে দিয়ে ছোটো লাইটটা জ্বাললো, আলমাড়ী খুলে পাউডারের কৌট বার করলো। এটা ছিল কোথায়! এই কৌট আগে দেখি নি? মিত্রার শরীর থেকে টাওয়েল খসে পরলো। নিরাভরণ শরীর।
আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিঃশব্দে উঠে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। মিত্রা কল কল করে উঠলো, আমার গালে ঠোঁট ছোঁয়াল।
আমি জানতাম তুই উঠে আসবি।
কি করে।
তোর চোখ পিট পিট করছিল, ঘাপটি মেরে পরেছিলি।
ঘেঁচু।
শিওর হওয়ার জন্য বড়লাইটটা নিভিয়ে ছোটোলাইট জ্বাললাম, পেছন ফিরে শরীর থেকে টাওয়েলটা খসিয়ে দিলাম। এতেও তুই যদি উঠে না আসতিস, তাহলে বুঝতাম তুই আবার ঘুমিয়েছিস। তখন তোকে বিরক্ত করতাম।
আমি মিত্রাকে আরো জোড়ে চেপে ধরে গালে গাল ঘোসলাম।
বুবুন।
বল।
আমি সখ করে একটা নাইটি কিনেছি, ভেবেছিলাম ওটা পরে তোর সঙ্গে ফুলশয্যা করবো।
এখনও সখ আছে—
বা-রে থাকবে না কেন! আমার তো ফুলশয্যা হয়নি।
সব যদি এ জন্মে সেরে ফেলিস, পরের জন্মের জন্য কি বাকি রাখবি।
পরের জম্মে তোকে যদি না পাই।
পাবি পাবি।
বলনা পরবো?
পর।
তুই কিছু বলবি না।
কেন।
আমি জানি তুই ওটা দেখলেই খ্যাচ খ্যাচ করবি।
তাহলে পরছিস কেন?
আজকের দিনটা, আর কোনও দিন না। আমার সব সখ মেটালি এটুকু মেটা।
তাহলে আমি খ্যাচ খ্যাচ করবো।
সে তুই কর।
মিত্রা আলমাড়ি থেকে একটা প্যাকেট বার করলো। একটা সাদা রং-এর সুতোর নাইট গাউন বার করলো। আমি দেখে অবাক হয়ে গেলাম, পুরোটা কুরুশ কাঠি দিয়ে বোনা। সম্পূর্ন সুতোর তৈরি। কি সুন্দর তার বুনোট, সারাটা শরীরে একটা ময়ূরের ডিজাইন। আমি ওকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম।
কিরে তোর ভালো লাগছে?
ভীষণ সুন্দর। কোথা থেকে কিনেছিস?
এইটা একপিসই আছে। আমি একটা বুটিক থেকে অর্ডার দিয়ে বানিয়েছি।
কবে বানিয়েছিলি!
তোর বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর।
তুই জানতিস!
মনে মনে।
শুধু আমার সঙ্গে একরাত পরে শুবি বলে!
হ্যাঁ।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কি পাগল মেয়েরে বাবা।
যদি অন্য দিক থেকে ভাবি, তাহলে ও ঠিক। ওর কোনওদিন বিয়ে হয়নি। যে বিয়েটা হয়েছে, তা ধর্ষণের নামান্তর। এই বিয়েকে ও বিয়ে বলে মনে করছে, এনজয় করছে। তবু মনে মনে একটা অপরিপূর্ণতা থেকে গেল। কাল এটা ওর পরার কথা ছিল আজ পরলো।
আবার ভাবতে শুরু করলি?
না।
তাহলে।
কালকে কাজটা না করলেই পারতাম। তাহলে তোর এইটা পরতে একদিন লেট হোত না।
না-রে তুই ঠিক করেছিস—
মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো, লতানো গাছের মতো আমাকে আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। আমার বুকে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
জানিস বুবুন, আজ আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন।
কেন!
তুই আমার গর্ভধারিনী মাক আমার কাছে নিয়ে এসেছিস।
আমি তুই ছাড়া ঘটনাটা কেউ জানে না।
দিদিভাই শুনেছে ঠিক, তবে ধরতে পারেনি। তবে কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছে।
বরুণদা—
বলতে পারবো না।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি।
জানিস বুবুন, আমি জানতাম না বরুণদা আমাদের অফিসে কাজ করতে আসে। দিদিভাই-এর বিয়ের সময় আমি যাইনি। দেখিও নি। বুড়ীমাসির মুখ থেকে মাঝে মাঝে ওদের কথা শুনতাম। খারাপ লাগতো। আগ বাড়িয়ে কিছু করতে গেলে যদি অপমানিত বোধ করে।
মিত্রা আমার বুকে মাথা রাখল।
বরুণদা আজ একটা দারুণ কথা বলেছে।
কি!
জানো ছোট ম্যাডাম, এখানে না এলে মিত্রা, অনি আমার কাছে গল্পের নায়ক, নায়িকা থাকত, আজ সেই গল্পের নায়ক, নায়িকা আমার চোখের সামনে হেঁসেখেলে বেরাচ্ছে, আনন্দ ফুর্তি করছে। আমি দু-চোখ ভরে চেয়ে চেয়ে দেখছি। ভীষণ ভালো লাগছে।
কখন বললো।
সকালে অফিস থেকে বরুণদার একটা ফোন এলো। বললো, আমাদের অফিসের কম্পিউটার ডিভিসনের যিনি ম্যানেজার, কি যেন নাম?
দিগন্ত চৌধুরী।
হ্যাঁ হ্যাঁ। তিনি কল করেছেন মেসিনের কি প্রবলেম হয়েছে। তখন বরুণদাকে বড়োমা তাড়াতাড়ি খাবার ব্যবস্থা করে দিল। আমি ভাবছিলাম একবার ফোন করে বলে দিই। তারপর ভাবলাম, না এতো তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা লিক আউট করবো না। খেতে বসে বরুণদা বললো। সবাই শুনে অবাক।
আমি মিত্রাকে দেখছি। মিত্রা কল কল করছে।
দূর ছাই তোকে কিছুই দেখান হয়নি।
মিত্রা আবার আলমাড়ির পাল্লা খুললো। অর্নামেন্টের বাক্স থেকে একটা বিছে হার বার করলো। দেখেছিস এটা।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
কিরে কি ভাবছিস, এতো মোটা কেন?
আমি মাথা দোলালাম।
দাদু আমার জম্মের সময় বানিয়েছিল। জম্মের সময় আমার যতটা হাইট ছিল সেই হাইটের, আর আমার ওজনের দশভাগের একভাগ ওজনের সোনা দিয়ে।
সোনা সেটা বুঝতে পারছি।
তাহলে—
তোর ওজনের দশভাগ ব্যাপারটা ধরতে পারছি না।
এটা সাতাশ ভড়ি। দিদিভাই-এরও একটা আছে। সেটা উনত্রিশ ভড়ি। দুই বোনের জন্য দুটো বিনিয়েছিল।
এবার মাথায় ঢুকেছে।
কি বলতো।
তার মানে জম্মের সময় তোর ওজন ছিল দু-কিলো সাতশো আর ইসির দু-কিলো নশো।
হবে হয়তো।
তবে তোর দাদু হেবি মালদার লোক ছিল।
তা ছিল।
চ এবার শুয়ে পরি, অনেক গল্প শুনলাম।
তারমানে! এখনও শুরুই করলাম না।
শুরু করলি না মানে!
এতো কথা এক রাতে শেষ হবে না।
তাহলে থাক বলতে হবে না।
সেকিরে! তোকে না বললে আমার পেট ফেটে যাবে।
তাহলে যেটাকে পেটে ধরেছিস তার কি হবে।
ঠিক মনে করিয়ে দিয়েছিস।
আবার কি মনে করালাম।
আজ সকালে একটা কেলো হয়েছে।
কি!
বড়োমার ঘরে ঘুমচ্ছিলাম, হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল, গা-টা কেমন গুলিয়ে উঠলো। তখন ঘরে বড়োমা, ছোটোমা, জ্যেঠিমনি, দিদভাই। ওরা পাটি পেরে গল্প করছিল, আমি ধরফর করে উঠে বসলাম। আমার অবস্থা দেখে ছোটোমা বুঝতে পেরেছে, আমার শরীরটা গণ্ডগোল করেছে।
আমি ইশারায় বললাম, বমি পাচ্ছে। ছোটোমা ছুটে গিয়ে আমার ছেড়ে রাখা কাপরটা, মাটি থেকে তুলে আমার দিকে ছুঁড়ে দিল। ঘরের দরজা বন্ধ করলো। বমিতো আর হলো না। কিছুক্ষণ পেট ধরে ওয়াক ওয়াক করলাম। কিছুটা লালা বেরলো।
ছোটোমা ফিক করে হেসে ফেললো। আমার তখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা। চোখ জলে ভড়ে গেছে। সেই সময় বড়োমার মুখটা যদি দেখতিস, কি বলবো বুবুন, যেন সোনা গলে গলে পড়ছে। বড়োমার মুখটা দেখে আমার তখন যে কষ্টটা হচ্ছিল, সব ভুলে গেলাম। খাটে উঠে এসে আমার মাথাটা বুকে চেপে ধরলো।
কপালে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ততক্ষণে ছোটোমা জল নিয়ে চলে এসেছে। খাটে বসে বসেই, আমি মুখে চোখে জল দিলাম। তারপর ছোটোমা ডিটেলসে সব গুছিয়ে বলে দিল। সব শোনার পর, জ্যেঠিমনির আনন্দ আর ধরেনা। দিদিভাইতো বলেই ফেললো, বড়োমা নার্সিংহোম থেকে সোজা আমাদের বাড়ি, একমাস ওখানে, তারপর এই বাড়ি।
আমি একটু ঠাণ্ডা হতে, বড়োমা গিয়ে ডাক্তারদাদাকে ডেকে আনলো, সব বললো। ডাক্তারদাদার হাসি দেখলে তোর মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আসতে করে বললো, বুঝলে বান্ধবী, ছেলেটার অঙ্কের মাথা খুব ভালো।
তখন এক বাড়ি লোক, আমি ভাবলাম এই বুঝি জানাজানি হয়ে গেল।
বৌদি, সুরো ছিলো না?
তখন ওরা বেরিয়ে গেছে।
বড়োমা এবার ডাক্তারদাদাকে চেপে ধরলো, ও সামন্ত ভয়ের কিছু নেই।
আগে চা খাওয়াও তারপর বলবো।
বড়োমা খিঁচিয়ে উঠলো।
জ্যেঠিমনির তখন কি হাসি, ফুলে ফুলে উঠছে।
তুই খুব এনজয় করছিলি বল।
খুব।
তারপর ছোটোমা চা নিয়ে এলো। ডাক্তারদাদা চায়ে চুমুক দিল। বড়োমা বললো।
সামন্ত তুমি তো আমাদের থেকে অনিকে অনেক বেশি চেন।
চিনি।
তাহলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, সত্যি করে বলবে।
পারলে বলবো, তবে সব সময় যে আমি ওকে বুঝতে পারি, সে কথা হলপ করে বলতে পারবো না। সত্যি কথা বলতে কি ও নিজেই নিজেকে ঠিক মতো চেনে না। আমরা তো কোন ছাড়।
এই তুমি হেঁয়ালি শুরু করলে। শুধু অনির মতো পাশ কাটাবার ফন্দি।
আচ্ছা তুমি বলো, পাশ কাটাব না।
জ্যেঠিমনি, ডাক্তারদাদা আর বড়োমার কথা শুনে হেসে গড়িয়ে পরে।
বড়োমা তোকে জ্যেঠিমনির সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করে নি।
হাল্কা আওয়াজ দিয়েছিল।
কি।
তোর জ্যেঠিমনিকে অনি কোথা থেকে ধরে আনলো। তুই তো কোনওদিন বলিসনি।
আমি সঙ্গে সঙ্গে পাল্টি। তোমাকে বলেছি আকারে ইঙ্গিতে, তুমি ধরতে পার নি।
আমি হাসছি।
তুই বেশ পাকা খেলোয়াড় হয়েগেছিস।
তোর থেকেও?
হুঁ।
দুজনে বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম। মিত্রা আমার বুকে উঠে এলো।
আজ কিন্তু একবার, বেশিক্ষণ না। মিত্রা হাসতে হাসতে বললো।
আমার দম নেই।
আমি দম দিয়ে দেব।
আমি হাসলাম।
তারপর শোন না।
বলবি তো।
দেখছিস দেখছিস, তুই কেমন খোঁচা খুঁচি শুরু করেদিলি।
ঠিক আছে বল। হাতটা একটু রাখি?
আচ্ছা।
তারপর বড়োমা বললো, আচ্ছা ডাক্তার অনি যাকে ওরকম দেড়েমুশে গালাগাল দিল, তাকে হঠাৎ ছাড়িয়ে আনতে গেল কেন?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে।
আচ্ছা বুবুন, সত্যি করে বলতো, তুই কেন প্রবীরদাকে ছাড়িয়ে আনতে গেলি?
কেন ডাক্তারদাদা তো তার ব্যাখ্যা দিয়েছে।
দিয়েছে, বড়োমার মন পসন্দ হয় নি।
তাহলে।
সব শোনার পর বড়োমা বললো, যতই বলো ডাক্তার তোমার এই ব্যাখ্যাটা ঠিক জুৎসই হলো না। কেমন যেন ফলকা ফলকা।
আমি মিত্রার কথায় হাসছি।
বলনা, তুই ওরকম করিস কেন।
তুই তো গেছিলি আমার সঙ্গে। কিছু বুঝিস নি?
দাঁড়া এটাকে খুলি। তোর সঙ্গে বডি কন্টাক্ট হচ্ছে না।
খোলার কি আছে। সবই তো দেখতে পাচ্ছি। ভেতরে কিছু পরিস নি। ফাঁক ফোঁকর দিয়ে যতটা কন্টাক্ট হয় ভালো।
এই তুই শুরু করলি। যা আমি খুলে ফেলছি।
তাহলে আমি ঘুমিয়ে পরবো।
ঘুমো না, চোখে খোঁচা মারবো। দাঁতে দাঁত চিপে বললো।
মিত্রা নাইট গাউনের বুকের কাছের হুক গুলো খুলে ফেললো। আমি হেসে ফেললাম।
তুই জানিস না, তোর বুকে বুকটা দিয়ে শুলে কি আরাম পাই।
মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল ডাক্তারের বুকে কখনও বুক দিয়ে শুসনি। খুব জোড় সামলে নিলাম। হাসলাম। মিত্রা আমার বুকে নেমে এলো।
এবার বল।
কি?
কেন প্রবীরদাকে ছাড়িয়ে আনলি। তাও নিজের বণ্ডে।
আমার স্বার্থ আছে। তাই।
সে তো বুঝলাম, কিসের স্বার্থ, বল।
তোর কাগজটাকে আরও বড়ো করে তুলতে হবে। পয়সা থাকলেই বড়ো হওয়া যাবে না। সরকারি ক্ষমতাও তার সঙ্গে কিছুটা দরকার।
প্রবীরদার কোনও ক্ষমতা নেই!
কে বললো নেই।
তুই এমন লাগলি মন্ত্রীত্ব থেকে রিজাইন দিল।
ওটা সাময়িক।
তবে কালকের কেশটা যদি উইথড্র না করতাম তাহলে পার্টিতে একটা বড়ো-সড়ো গণ্ডগোল হতো। বিধানদা, অনিমেষদা দুজনেরি বিপদ বারতো। টালমাটাল পজিসন তৈরি হয়ে যেত।
কেন?
তোর মাথায় ঢুকবে না।
তুই ঢোকালেই ঢুকবে।
দেখ আমাদের শরীরে যেমন হাত-পা-মাথা আছে, এরা পাঁচজন পার্টির হাত-পা-মাথা। পাঁচজনে মিলে একটা শরীর। বিধানদা, প্রবীরদা অনুপদাকে তৈরি করেছেন। রূপায়ণদা অনিমেষদার হাতে তৈরি। কিন্তু প্রবীরদা খুব তাড়াতাড়ি ক্ষমতা পেয়েগেছে। ফলে কিছুটা পদস্খলন হয়েছে।
আজ রাজনাথকে (সন্তর্পণে ডাক্তারের ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলাম) ঘাঁটতে গিয়ে অনেক কিছু ভেতরের ব্যাপার সামনে চলে আসছে। হয়তো অনিমেষদা, বিধানদা জানে আবার হয়তো জানে না। ওরা ধরতে পারেনি, আমার সোর্সটা ওদের থেকে স্ট্রং। বৌদির মুখ থেকে শুনেছে। কিন্তু অতটা গেইজ করতে পারেনি। তবে এই কয়দিনে ওরা আমাকে পায়ের নোখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত মেপে নিল। আজ রাতের মিটিংয়ে একে অপরকে বুঝলাম। আমার তরফ থেকে এই বার্তাও ওদের কাছে পৌঁছে দিলাম, তোমরা আমাকে প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে আটকে রাখতে পারবে না। তবে তুই যদি আমার কাছ থেকে সরে যাস আলাদা ব্যাপার।
কেন এ কথা বলছিস?
আজ পর্যন্ত যা কিছু করতে পেরেছি, তোর জন্য, তুই আমাকে ক্ষমতটা দিয়েছিলি তাই। সত্যিকারের আমার পেছনে যদি মালিকের তকমাটা না থাকতো, তাহলে আমি কিছুই করতে পারতাম না।
আমি সেটা ফিল করি। আজ তোকে একটা কথা বলছি, আর কোনওদিন বলবো না, তুই আমাকে এভাবে আর কোনওদিন বলবি না। আমি তোকে কোনওদিন আমার জীবন থকে সরাব না। বরং তুই আমাকে সরিয়ে দিতে পারিস, তোর জীবন থেকে।
আমি মিত্রাকে কাছে টেনে নিলাম। ওর কপালে চুমু খেলাম।
রাগ করিস না, মাঝে মাঝে আমার কেমন যেন মনে হয়। নিজের প্রতি নিজে আস্থা হারিয়ে ফেলি। সব কেমন গোলমাল পাকিয়ে যায়। আমি চাই আমার ভুলগুলো তোর চোখ দিয়ে দেখব।
কাল রাতে টনা, মনাকে বৌদি নিজে হাতে খেতে দিয়েছে, বসে বসে খাইয়েছে।
ওই ছেলেগুলোর কথা একবার ভাব। মুখ দুটো চোখের সামনে ভেসে উঠলেই, শিউরে উঠছি।
তোকে ওরা অন্ধের মতো ভালোবাসে।
আমি কোনওদিন ওদের কাছে কিছু চাইনি। কিন্তু প্রবীরদা মিস ইউটিলাইজ করলো। এখানে আসার আগে যদি একবার জানতে পরতো ওরা আমার বাড়িতে আসছে। তাহলে প্রবীরদার ক্ষতি করে দিত।
কেন!
ওই যে তুই বললি ভালোবাসা।
সেই জন্য মালতীর সঙ্গে অনিমেষদা, বিধানদা আলাদা করে কথা বলেছে। সে কি জেরা রে।
তুই ছিলি না।
তখন সবে মাত্র ওই অবস্থা থেকে উঠেছি। ইচ্ছে করেনি শুনতে।
ছাগল।
তুই আমাকে ছাগল বললি?
তাহলে কি বলবো। কষ্ট হলেও শুনতে হয়। তাহলেই শিখবি। না হলে কাঁচকলা।
বুবুন তুই কিন্তু মুখে যা আসছে বলে যাচ্ছিস। আমি এখন তোর বিয়ে করা বউ।
ঘুমিয়ে পর। আমিও একটু ঘুমিয়ে বাঁচি।
দাঁড়া পেটে টান লাগছে। নীচে নেমে শুই।
কিরে কোনও সমস্যা!
এই সময় এরকম একটু হবে, ডাক্তারদাদা বলছিল। গাদাখানেক ওষুধ দিয়েছে। খেতে হবে। বড়োমা বলে দিয়েছে। এখন আর কোথাও যাওয়া হবে না। অফিসে তিনঘণ্টার বেশি থাকা যাবে না। প্রয়োজনে অফিসকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসতে।
তুই আমার বিপদ বাড়ালি।
তুই কিন্তু এখনও বললি না। কেন প্রবীরদাকে ছারিয়ে আনলি।
এতো কথা বলার পরও খোলসা করে বলতে হবে, কেন ছারালাম।
ওই জন্য ডাক্তারদাদা বললো, বুঝলে বান্ধবী ব্যাপারটা আমার কাছে এখনও ধোঁয়াসা। তবে ও এই ক্ষেত্রে সর্ট-টার্ম গেম খেললো না। লং-টার্ম গেম খেললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
কিরে তোর চোখ দুটো স্থির কেন। আবার কি প্ল্যান ভাঁজছিস।
কিছু না।
জানিস বুবুন, জ্যেঠিমনি, দিদিভাই যতো তোর কথা শুনছে, ততো অবাক হয়ে যাচ্ছে।
কেন!
সেই রাতে অতো লোক জন এসেছে, এটা ওরা ভাবতেই পারেনি। তার ওপর তোর ওই কীর্তি। জ্যেঠিমনি ভীষণ ভয় পেয়েগেছিল। প্রেসার হাই। নীরু ওষুধ দিল। তারপরই ঘুম। ব্যাশ সব ঠিক।
ইসি তখন অনিমেষদাকে বলেছে।
প্রথমে বলতে চায় নি। লজ্জা পাচ্ছিল। অনিমেষদা বললো, তুই বল না, তোর কোনও ভয় নেই। তখন ও অনিমেষদাকে সব বলেছে।
কি বললো অনিমেষদা—
প্রথমে গম্ভীর হয়ে গেল। প্রবীরদাকে বললো, এই সমস্যার সমাধান তুমি করবে। আমি অনুপকে দায়িত্ব দিতে পারতাম। কিন্তু দেব না।
প্রবীরদা শুনে কি বললো?
কালকেই ওখানে যাবে। আমাদের ওবাড়ির এ্যাড্রেস নিয়ে নিল। জানিস দিদিভাইকে ওরা খুব অপমান করেছে। তোকে দিদিভাই সব কথা বলেনি। শুনলে তুই যদি কিছু করে বসিস।
জানি।
তুই জানিস।
আমি খবর নিয়ে নিয়েছি।
কখন নিলি?
তোকে জানতে হবে না। আর কি বললো?
প্রবীরদাকে এক সপ্তাহের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে দিতে বলেছে। এও বলেছে অনি যেন এর মধ্যে ইন্টারফেয়ার না করে। সেটা তুমি দেখবে।
তাই জন্য যাওয়ার সময় প্রবীরদা বললো কাল বিকেলে একবার আসবো তুই থাকিস।
তোকে বলেছে!
হ্যাঁ।
তখন প্রবীরদার কথা শুনে মনে হচ্ছিল তোকে ভীষণ ভয় পাচ্ছে।
ছাড় ও সব কথা, বরুণদা কি বললো?
দিদিভাইকে বলেছে, তুমি এই ছেলেটাকে সকালে বাড়ি থেকে বার করে দিচ্ছিলে। আচ্ছা সত্যি করে বলো, সারাজীবন তুমি যদি চেষ্টা করতে এই সব লোকের সান্নিধ্যে আসতে পারতে?
কি বললো ইসি।
দিদভাই খুব লজ্জা পেয়ে গেছে। চোখদুটো ছল ছল করে উঠলো।
জানিস ইসিরটা বেশ টাইট।
কি টাইট।
কিছু না।
ওরে শয়তান, কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে এলি।
আমি হো হো কেরে হাসছি। মিত্রা আমার ঠোঁটে কামড় দিল। দুবার কোমড় নাচিয়ে নিল।
আমার পেট ফেটে যাবে। আমি হাসতে হাসতে বললাম।
যাক না যাক। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠলো।
আমি হাসছি।
আমি জানতাম তুই নীরুর পেট থেকে কথা বার করবি।
তবে তোর থেকে নয়।
দিলো আমার বুকে গুম গুম করে কিল।
মিত্রা আমার বুকে নেমে এলো। আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। আমি ওর কথা রাখলাম। শরীর থেকে সুতোর নাইটিটা খসিয়ে দিলাম। মিত্রা আমার আরও কাছে গভীর ভাবে এগিয়ে এলো। চোখে চোখ। ঠোঁটে ঠোঁটে কথা। দুজনে শরীরী খেলায় মেতে উঠলাম। আজ সেই ভাবে না। শুধু ছোঁয়া ছোঁয়া। কতোক্ষণ খেলা করলাম জানি না। শরীর আর টানছে না। একথা সেকথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আমি ঘরে একা শুয়ে আছি। চারিদিকের দরজা জানলা হাট করে খোলা। এমনকি বাইরের দরজাটাও খোলা। আমগাছের পাতায় বাতাসের ছোঁয়ায় শির শির করে একটা মিষ্টি আওয়াজ ঘরের চারদিকে ম ম করছে। ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলাম এখন কটা বাজে। জানলা দিয়ে সূর্যের চেহারা দেখে বুঝলাম, বেশ বেলা হয়ে গেছে। বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। কিছুক্ষণ অলস দৃষ্টি নিয়ে জানলা দিয়ে তাকিয়ে থাকলাম।
তারপর নেমে এসে ব্রাসে মাজন লাগিয়ে জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমগাছটায় ছোট ছোট আম হয়েছে। আপন মনে যে যার ঝুলে আছে। সেই কাক দুটোকে আর দেখতে পাচ্ছি না। তাদের পরিত্যক্ত বাসাটা এখনও আমগাছের একটা ডালে ঝুলে আছে। নিচের দিকে তাকালাম। পেয়ারা গাছটায় দুটো শালিক বসে ঠোঁটে ঠোঁট ঘসছে।
একটু দূরে পাঁচিলের গায়ে চোখ পরলো। অনেক গুলো বেল ফুলের গাছ, মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এ নিশ্চই ভজুরামের কাজ। ভজুরাম সারাদিন বড়োমা, ছোটোমার পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে, আর বাগান পরিচর্যা করে। বেশ আছে। গণিকা পল্লীর বয়ের থেকে ভালো আছে। জানলা থেকে সরে এসে বাথরুমে ঢুকলাম। ভালো করে ফ্রেস হয়ে বাথরুমের বাইরে এলাম। ইজি চেয়ারে বড়োমা হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। আমার দিকে তাকাল।
কখন উঠলি।
আমি মুচকি হাসলাম।
বড়োমা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
আমি মুখ মুছে টাওয়েলটা কাঁধে ফেললাম, আলনা থেকে টেনে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করলাম। বড়োমা আমার দিকে স্থির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
তুই উঠে পরেছিস! ছোটোমা বলতে বলতে ঘরের ভেতর এলো।
দিদি এখানে নিয়ে চলে আসি?
কেন, আমি নিচে যাচ্ছি।
বড়োমার দিকে তাকিয়ে।
জানি তোমাদের অনেক প্রশ্ন আছে। আজ তার সঠিক উত্তর আমায় দিতেই হবে।
বড়োমা, ছোটোমা আমার দিকে তাকিয়ে, আমাকে বোঝার চেষ্টা করছে।
কিগো তাই তো?
বড়োমা এমন ভাবে মুখ টিপে হাসলো, আমি হেসেফেললাম।
খালি ফিচলেমি। দেব না কান মূলে। ছোটোমা তেড়ে এলো।
আজ কোথাও বেরবো না বুঝলে বড়োমা। আজ শুধু তুমি আমি ছোটোমা। খাব আর গল্প করবো। কি মজা বলো।
দেখছিস ছোটো দেখছিস। ও কিরকম এখন থেকে প্ল্যান ভাঁজছে দ্যাখ।
তুমি দ্যাখো, আমি হাড়ে হাড়ে চিনেছি। খাবার নিচে খাবে, না ওপরে নিয়ে আসবো?
এই দ্যাখো, বললাম আমি নিচে যাচ্ছি। তোমরা নিচে গিয়ে টেবিলে বসো, আমি চেঞ্জ করেই চলে যাচ্ছি।
বড়োমা, ছোটোমা দুজনেই বেরিয়ে গেল। ভাবলাম চেঞ্জকরে নিচে চলে যাই, তারপর ভাবলাম না, স্নানটা একেবারে সেরে নিই। ভাবামাত্রই আর অপেক্ষা করলাম না। বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে নিলাম। তারপর নিচে এলাম। দুজনে তখনও গুছিয়ে উঠতে পারেনি। বুঝলাম আরও কিছু কাজ এর মধ্যে সেরে ফেলেছে। আমি টেবিলে এসে বসলাম।
কিগো আমি মাঝখানে দুজনে দু-পাশে, না মুখো মুখি।
মনে খুব ফূর্তি মনে হচ্ছে। ছোটোমা হাসতে হাসতে বললো।
হবে না। বাবু প্ল্যান মাফিক সব কাজ শেষ করলেন। বড়োমা প্রতি উত্তর দিল।
এই তো শুরু করলে, অনি তাহলে ভোঁ ভাঁ।
যা না দেখি, তোর কতবরো ক্ষমতা। মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেব।
বড়োমার কথায় ছোটোমা হাসছে।
আমি বড়োমাকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
পারবে অনির ঠ্যাং ভাঙতে।
বড়োমা হাসছে।
চলো খিদে লেগেছে। মিত্রারা কোথায়? অফিসে?
অফিসে কেন যাবে। তুই সবাইকে কাজ দিয়ে রেখেছিস। কাজ সারতে গেছে।
দাঁড়াও একটা ফোন করি।
তোর ফোন খোলা আছে? বাড়িতে থাকবি, তাও স্যুইচ অফ।
আমি ঘুমোচ্ছিলাম, তুমি খুলে দিতে পারতে।
শুধু মুখের ওপর কথা। ছোটোমা বলো।
ঠিক বলেছ এ ভাড়ি অন্যায়।
ফোনটা স্যুইচ অন করলাম, তবে কাউকে ফোন করলাম না। খোলার সঙ্গে সঙ্গে যা হয় কিছু মিস কল আর ম্যাসেজ লিস্ট।
ছোটোমা খাবার নিয়ে চলে এলো। আজ কিন্তু বাটি চচ্চড়ি আর লুচি নয়। দেখলাম কড়াইশুঁটির কচুরি বানান হয়েছে, তার সঙ্গে বেশ কষা কষা আলুর দম। দুজনে আমার দু-পাশে। বুঝলাম একেবারে শাঁড়াসি আক্রমণ চলবে। আমিও মনে মনে প্রস্তুত হয়ে নিলাম।
খাওয়া শুরু হলো।
দাদা, মল্লিকদা কখন বেরিয়েছে?
সব এক সঙ্গে বেরিয়েছে।
খাওয়া-দাওয়া করে বেরিয়েছে, না এসে খাবে?
টিফিন করে গেছে, বললো অফিসে খেয়ে নেবে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ, আমি মাথা নীচু করে আছি। বুঝতে পারছি, দুজনের চোখ আমার দিকে।
মাথা তুললাম।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/c9vpMsL
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment