কাজলদিঘী (৪৪ নং কিস্তি)

“কাজলদীঘি”

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

৪৪ নং কিস্তি
—————————

হ্যাঁরে কি হয়েছে! সবাই এরকম এ্যাবনর্মাল বিহেভ করছে কেন!

টিনা, মিলি, অদিতি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।

তুই ঠিক আছিস!

কেন মিলিকে চুমু খেয়ে প্রমাণ করবো, ঠিক আছি কিনা।

তুই সত্যি বলছিস!

তোদের মাথা খারপ হয়েছে।

নাগো অনিদা এতক্ষণ তোমার কোনও সেন্স ছিল না। টিনা বললো।

কি পাগলের মতো বকছো!

দাঁড়াও আমি বাথরুম থেকে আসি। মিত্রা আমার পাজামা পাঞ্জাবী নিয়ে আয়।

মিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমি ছোটোমার বাথরুমে ঢুকলাম। ভাল করে হাত মুখ ধুলাম। ছোটোমার পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলাম।

কিরে। কত দেরি?

দাঁড়া খুলছি।

দরজা খুলে ওর হাত থেকে পাজামা পাঞ্জাবী নিলাম। টিনারা ছোটোমার খাটে বসে আছে। মিত্রাকে ফিস ফিস করে বললাম, ভেতরে আসবি। ও ফ্যাকাশে হাসি হাসলো।

আমি চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলাম। এইবারে ফিট লাগছে। মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

ফোনটা ওর হাতে থেকে নিয়ে অর্ককে একটা ফোন করলাম।

কোথায় আছিস?

কেন দাদা। তুমি ঠিক….।

ত ত করছিস কেন!

না মানে….।

আমার কাজ কতদূর?

হয়ে গেছে।

তার মানে!

চ্যাপ্টার ক্লোজ।

তুই কোথায়?

নিচের ঘরে।

নিচের ঘরে!

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

ও বুঝতে পেরে গেছে আমার চোখ মুখ বদলে গেছে।

আমি আর ওদের দিকে তাকালাম না। হন হন করে ছোটোমার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নিজের ঘরের দিকেও গেলাম না। সোজা তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম।

সিঁড়ির মুখ থেকেই দেখলাম দাদা, মল্লিকদা, ইসলামভাই, ডাক্তারদাদা, অনিমেষদা, বিধানদা ও ঘরের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।

মিত্রা আমার পেছন পেছন, বুবুন বুবুন বলে ছুটতে ছুটতে নিচে নেমে এলো। একটা হুলুস্থূলুস কাণ্ড বেধে গেল সারা বাড়িতে।

আমি সবাইকে পাশ কাটিয়ে বসার ঘরে ঢুকলাম। দ্বীপায়ন, অর্ক, সায়ন্তন, সন্দীপ খাওয়ার টেবিলের চেয়ারে বসেছিল। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াল।

কিরে তোরা এখানে!

আমি ডেকে পাঠিয়েছি। অনিমেষদা বললো।

আমার ল্যাপটপ এখানে কেন?

আমি নিয়ে আসতে বলেছি। অনিমেষদা ফের রিপিড করলো।

কেন, আমি কি তোমাকে বলতাম না। মাথা নিচু করে বললাম।

কেন আমি বিধানবাবু এখানে এসেছি, তুই কিছু বুঝতে পারছিস না?

বুঝতে পারছি।

তাহলে?

আমি তোমার কাছে যেতাম।

আমি এসেছি। খুব অন্যায় করেছি?

এভাবে তোমায় এই বাড়িতে আনতে চাইনি। আমার একটা ছোট্ট ভুলে এই ঘটনা ঘটলো। কথাদিলাম আর কোনওদিন এই ভুল করবো না।

তুই ওই ভুলটা না করলে আমি আর বিধানবাবু যে অনেক কিছু জানতে পারতাম না। সেখানে হয়তো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে যেত।

তারমানে তুমি সব জেনে ফেলেছো!

সব নয়, কিছুটা।

ইসলামভাই।

বল।

আবিদ ফিরে এসেছে?

হ্যাঁ।

কোথায়?

বাগানে।

তোকে ভাবতে হবে না। আমি তোর হয়ে সব ব্যবস্থা করেছি।

না তুমি করবে না। তোমার মতো পবিত্র লোকের কাজ এটা নয়।

অনিমেষদা আমার সামনে এসে দাঁড়াল।

আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। আমার দুই কাঁধে হাত রাখল।

আমার দিকে তাকা। আমাকে দাদা বলিস।

মাথা দোলালাম।

পিতার মতো শ্রদ্ধা করিস।

মাথা নিচু করে রইলাম।

কাল যেমন সমস্ত শোনার পর তোর মাথার ঠিক ছিল না, আজ সকালে তোর ঘরে ঢুকে আমারও মাথা কাজ করেনি। তোর বোন কাল রাত থেকে এক গ্লাস জলও খায়নি। তার দাদার এই অবস্থার জন্য সে আমাকে দায়ী করেছে। তোর বৌদির এইরকম মুখের ভাষা আমি আজও পর্যন্ত জীবনে শুনিনি। এবার বল আমার কি করার থাকতে পারে। আমার জায়গায় তুই থাকলে কি করতিস।

তুমি যা করেছ, আমিও তাই করতাম।

তাহলে আমরা পাঁচজন আজ তোর সঙ্গে একটু বসবো। ওরা সকলে সিপাই, তুই সেনাপতি। এরা তোর কাজের কোনও হদিস দিতে পারছে না।

ডাক্তারদাদা?

ডাক্তারবাবু আজ জীবনে প্রথম ভয় পেয়েছে।

কেন, আমি কি করলাম!

কি করিস নি?

আমি অনিমেষদার দিকে তাকালাম।

তুমি সব দেখেছো।

ওই যে তোকে বললাম, যতটুকু হাতের কাছে ছিল।

বিধানদাও দেখেছেন?

হ্যাঁরে অনি দেখেছি। না দেখলে, তোর ওপর একটা ভুল ধারণা হতো।

ইস। মিত্রা তুই আমার যোগ্য তৈরি হতে পারবি না।

না হলে মঙ্গল। অন্ততঃ সংসারটা ভাল করে করতে পারবে।

হাসলাম।

তুই তোর এই হাসি দিয়ে সকলকে ঘায়েল করলি।

তোমরা চা খাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

বৌদির দিকে তাকালাম।

সুরকে একটু আমার ঘরে পাঠাও। মিত্রা তুইও আয়।

তুই মাথা থেকে সব ব্যাপারগুলো মুছে ফেল। অনিমেষদা চেঁচিয়ে বললো।

আমি বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। দাদার ঘরে কারা যেন বসে আছে। বাগানে ভর্তি লোক। নিচের বারান্দার এক কোনে রতন, নেপলাকে দেখলাম। মুখটা শুকনো।

আবিদকে দেখতে পেলাম না। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওপরে চলে এলাম। আমার ঘরে কেউ নেই। পরিষ্কার হয়ে গেছে। খাটে একটা নতুন চাদর পাতা হয়েছে। ভজুরামকে আশে পাশে দেখতে পেলাম না।

আমি সোজা জানলার পাশে এসে দাঁড়ালাম।

আমগাছটায় নতুন বোল এসেছে। একটা মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ম ম করছে। আম গাছের ঠিক নীচে পেয়ারা গাছটা। না এখন সেই টিয়া দুটো নেই। অনেক পেয়ারা হয়েছে। কয়েকটা একেবারে হলুদ হয়ে গেছে। আম গাছের একটা ডালে চোখ পরে গেল। একটা কাক তার বাসায় চুপ্টি করে বসে আছে। বুঝতে পারলাম এটা মা কাক। সবে মাত্র ডিম দিয়েছে। তা দিচ্ছে। একবার আমার দিকে জুল জুল করে তাকাল। বাবা কাকটা মুখে করে খাবার নিয়ে এসে মা কাকটাকে খাইয়ে দিল।

মিত্রা এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

আমি ওর হাতটা চেপে ধরে বললাম, দেখ মিত্রা ওই ডালটার দিকে তাকিয়ে দেখ। মা কাকটা কি শান্তিতে চোখ বুজিয়ে ডিমে তা দিচ্ছে। ওদের পৃথিবীতে কোনও হিংসা নেই। কোনও হানা-হানি নেই। ওরা যে অশিক্ষিত। ওদের চাহিদা ভীষণ সীমিত।

আবার কাঁদে। তুই কেঁদে পৃথিবী জয় করতে পারবি না।

আমি সুরো অনিদা।

এমা, এই দেখ আবার ভুল করে ফেললাম।

সুরোর হাতের অর্গল খুলে, ওর মুখো মুখি দাঁড়ালাম।

তুমি মিত্রাদিকে এইসব দেখাও?

আমি ওর ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়ালাম। চোখের পাতায় শিশিরের ছোঁয়া।

মিত্রাদি নয় বৌদি।

সুরো কান্না ভেঁজা চোখে হেসে ফেলল। মিত্রা দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে। আমি সুরোকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।

কিরে আমার বিয়েতে সাজবি তো?

তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?

না এখনো হয়নি। তোর জন্য শুধু বিয়ে করবো। আয় মিত্রা, কাছে আয়।

মিত্রা এগিয়ে এলো।

দেখ তোর বৌদিকে পছন্দ কিনা।

দারুণ দেখতে।

মিত্রা হাসছে।

দুর চোখদুটো দেখেছিস কেমন লক্ষ্মীট্যারা, ঠোঁটটা দেখ ছেলেদের মতো মোটা মোটা।

একবারে বাজে কথা বলবে না। আমার বৌদি।

সুরো মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো।

সেই কলেজ লাইফে পটকে দিয়েছিলাম, বুঝলি।

সুরো খিল খিল করে হেসে উঠলো।

তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি নাগো অনিদা।

ঠিক বলেছিস।

তুমি মাকে এসে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প বলতে।

তোর মনে আছে।

তুমি বৌদিকে সেই ডানকুনির গল্পটা বলেছো।

উরি তত্তড়ি, তোর সব মনে আছে!

সব।

কোনটারে বুবুন? সেই শীতলা থানের ব্যাপারটা।

মিত্রার দিকে তাকিয়ে মাথা দোলালাম।

ফেরার সময় জলে ফেলে দিলি সব।

হ্যাঁ।

তখন তুই সুরোকে পড়াতিস!

কিরে বল তোর বৌদিকে।

তুমি বৌদিকে তুই তুই করছো কেন। তুমি বলতে পারছো না।

জব্বর প্রশ্ন। আরে এসো এসো ভেতরে এসো।

টিনা, মিলি, দেবা, নির্মাল্য, অদিতি, নীপা, গেটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

দেবা আমাকে একটু বাঁচাতে পারবি?

তোকে! না।

তুই শুনলিই না আমার কথাটা।

বল শুনি।

সুরোকে চিনিস।

আজ দেখলাম। শুনলাম ও অনিমেষদার মেয়ে।

সুরো জানিষ, তোর বৌদি আমি আর দেবাশিসদা এক ইয়ারের ছাত্র। আর এরা আমাদের থেকে দু-বছরের জুনিয়ার। সাবই কিন্তু আমাদের কলেজের ছাত্র-ছাত্রী।

তাই!

সুরো ঝপাঝপ সবাইকে প্রণাম করলো। ওরা কেউ নিতে চাইল কেউ চাইল না।

আর ওটা হচ্ছে নীপা। এই বছর পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে।

ওর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। কি ভালো ছাত্রী। তুমি ফেল করেছে বলছো কেন।

সবাই হাসছে।

জানিস দেবা সুরোর এবার ফাইন্যাল ইয়ার। আমার সাবজেক্ট। আমাদের কলেজ থেকেই পড়ছে। কিরে আর একটা ব্যাপার বলবো নাকি।

না একবারে বলবে না।

আমাদের মতো কেস। মিলি বললো।

সামান্য।

সুরো ছুটে এসে আমার মুখ চেপে ধরলো।

একবারে বলবে না। খুব খারাপ হয়ে যাবে।

ঠিক আছে বলবো না।

বুঝলি দেবা সুরো একটা খুব কঠিন প্রশ্ন করেছে। তুই উত্তরটা বলে দে।

মিত্রা হেসে উঠলো।

সুরো আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো। আমি তোমাকে করেছি, তুমি বলবে, দেবাদা বলবে কেন।

ওতো আমাদের সঙ্গেই একসঙ্গে পড়াশুনো করেছে, ওর একটু হেল্প নিই।

না।

বলনা সুরো কি বলেছে একটু শুনি। দেবাশিস বললো।

মিত্রাকে কেন আমি তুই বলি, তুমি বলি না।

জব্বর প্রশ্ন। এর উত্তর আমি দিতে পারবো না। দেবাশিস, মিলিদের দিকে তাকাল।

তোমরা দিতে পারবে?

ঠিক বলেছে সুরঞ্জনা। টিনা বললো।

দেখেছো দেখেছো আমার কথাটা সবাই মেনে নিল। সুরো বললো।

ঠিক আছে আগে বিয়ে করতে দে। আমি তো এখনও বিয়েই করিনি।

আবার সকলে হেসে উঠলো।

ছোটোমা চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। টিনা ছুটে চলে গেল। ছোটোমার হাত থেকে ট্রে-টা নিল। মিলি, নীপা এগিয়ে গেল।

ছোটোমা মিটি মিটি হাসছে।

ছোটোমা ছোটোমা বলে সুরো গিয়ে ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলো।

ছোটোমা তুমি বলো, কেন অনিদা বৌদিকে তুই বলবে।

ছোটোমা একবার আমার দিকে তাকায়, একবার মিত্রার দিকে তাকায়, মিটি মিটি হাসে।

তুমি হাসলে যে।

তোর অনিদাটা পাগল। দেখলি না সকাল থেকে সবাইকে কেমন নাচাল।

তুমিও অনিদাকে পাগল বলো!

কেন আর কেউ বলে নাকি?

বাবা বলে, মা বলে। কই আমি বলি না!

তুইও বলবি দুদিন পর।

সুরো ছোটোমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

যেদিন ওর পাগলাম চলে যাবে, সেদিন থেকে তুমি বলবে তোর বৌদিকে।

সুরোর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে, ও ছোটোমার কথাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।

কি বিশ্বাস হচ্ছে না?

সুরো মাথা দোলালো। না।

ঠিক আছে তোকে পরে বলবো।

সবাই হাসছে।

ছোটোমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, হিমাংশু এসেছে। সঙ্গে আরও পাঁচজন।

কারা!

সবাই নাকি ডাক্তার। তুই মেডিকেল কলেজে আড্ডা মারতে যাস!

ও।

দেড়মাস আগে দেখা করতে গেছিলি তারপর আর যাসনি। সেখানকার সব বন্ধু। আর কোথায় কোথায় যেতিস বল তো?

কেন?

একটু বলিস। একটা নামের লিস্টি বানাব।

সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

ওরা কোথায়?

সামন্তদার সঙ্গে কথা বলছে। তোর গুণকীর্তন করছে। তার মধ্যে একটাকে ওঝা সেজে ঝেঁটা মেড়ে ভূত তাড়িয়েছিলি। সে নাকি এখন নামকরা চাইল্ড স্পেশালিস্ট।

সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

কিরে অনি! ছোটোমা কি বলে! দেবা বললো।

দূর ভুলভাল বকছে।

ছোটোমা এগিয়ে এলো। দেবো কান মূলে?

এ-মা তুমি এখনও অনিদার কান ধরো। সুরো বলে উঠলো।

কান না ধরলে তোর বৌদিকে তুই বলবে, তুমি বলবে না।

তাহলে ঠিক আছে।

সবাই হাসছে।

এই দেখ কারা এসেছে। হিমাংশু গেটের মুখে।

ওরা সকলে ঘরে ঢুকলো। একে একে সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

কিরে অনি, আমার ভূত তারালি, তোকে কি করে ভূতে ধরলো! নিশ্চই সরষেতে ভেজাল ছিল। নীরব বলে উঠলো।

নীরব অনেকটা মেয়েদের মতো টেনেটেনে কথা বলে। ও এমন ভাবে কথা বললো, সবাই হসে উঠলো। ঘরটা গম গম করে উঠলো।

ছোটোমা মুখে কাপর চাপা দিয়েছে।

বিয়ে করলি, খবর পর্যন্ত দিলি না। কনিষ্ক বলে উঠলো।

তোকে কে বললো, আমি বিয়ে করেছি?

নীরু তুই ড্রেসটা চেঞ্জকর। ছোটোমা একটা মুড়ো ঝেঁটা জোগাড় করে দিন তো। নীরু ওর ভূতটা ছাড়াক। সাত্যকি বলে উঠলো।

সাত্যকি তুই অনিকে ধর, আমি (অনিকেত) বটা (বটুকেশর) ওর ঠ্যাংটা ধরছি কনিষ্ক পাজামা পাঞ্জাবীটা খুলুক। নীরু কাজ শুরু করুক।

আবার সবাই হাসছে।

তোরা আমার প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন মেরে দিবি।

গ্যামাকসিন অনেক উঁচু দরের মাল, আমরা ডিডিটি নিয়ে এসেছি। তোকে মুখ ধোয়াব।

হাসি কারুর ঠোঁট থেকে মিলিয়ে যাচ্ছে না।

তোর বৌ কোথায়? কনিষ্ক বললো।

এই ঘরে আছে, খুঁজে নে।

যা হালা। এতগুলো মাইয়ার মধ্যে খুজুম ক্যামনে। নীরব বলে উঠলো।

তুই নাকি চাইল্ড স্পেশালিস্ট।

লোকে বলে। তবে সার্টিফিকেটটা জাল কিনা তোর যখন হবে, তখন জানতে পারবি।

আমি ক্যারি করবো নাকি!

দেখলি দেখলি বটা। স্বভাবটা এখনও যায়নি।

তুই একটা মাঝে বৌ বসিয়ে দিতে পারতিস। অনিকেত বললো।

ছোটোমা ঠিক জমছে না। এক কাজ করুণ, একটু চায়ের ব্যবস্থা করুণ। কনিষ্ক বলে উঠলো।

ছোটোমা মুখে কাপর চাপা দিয়ে চলে গেল।

ছোটোমা সবে মাত্র গেটের বাইরে পা দিয়েছে। কনিষ্ক জাপ্টে ধরলো। কাজ শুরু কর।

ওরা ছুটে এলো।

করছিস কি। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলো আছে।

সব চৌবাচ্চা।

ঘরে হাসি আর থামছে না।

বল বৌ কোনটা।

এই বটা, সব ফর্সা। নীরব সুর করে বলে উঠলো।

তোকে আর বড়ে গোলাম আলি হতে হবে না। বটা খিঁচিয়ে উঠলো।

সবাই হাসছে টিনা, মিলি, নীপা, সুরো পেটে হাত দিয়েছে।

বল না অনি। নীরু বললো।

ওই জন্য তোকে ঝেঁটা পেটা করেছিল। অনি কি তোর বৌ। বটা বললো।

হাসি আর থামছে না। মিত্রাদি তুমি নিজে পরিচয় করে নাও, অনিদার আর দরকার পরবে না। আমরা আর পারছি না। মিলি বলে উঠলো।

কিরে বটা, সেই মিত্রা! সাত্যকি বড় বড় চোখ করে বললো।

কোনটা বল তো!

ওই যে বীণা সিনেমা। ছোঁবো কি ছোঁবো না, পরেছি যাতনা….।

আমরা মালটা দেখিনি এখনও।

দেখবি কি করে বনেদী না। সোফার গাড়ির দরজা খুললো। উনি নামলেন। সোফার গাড়ির দরজা বন্ধ করলো। উনি চলে গেলেন। কণিষ্ক ক্যারিকেচার করে দেখাল।

সবাই হাসছে।

তুই ঠিক দেখাতে পারলি না। মৈনাক ব্যাপারটা ফ্যানটাসটিক দেখাত। বটা বললো।

দেবা আমার দিকে তাকালো। কে মৈনাক? আমাদের কলেজের মৈনাক!

আমি মাথা দোলালাম।

মৈনাক আর একটা জিনিষ ভাল দেখাতে পারতো। হিমাংশু বলে উঠলো।

অনির ডায়লগ। তাই তো? বটা বললো।

আমি মিত্রার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।

কণিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো, তুই আর একটু দেরি করলে কানকি মারতাম।

আমি কনিষ্ককে একটা লাথি মারলাম। হারামী।

বটা চেঁচিয়ে উঠলো, সাত্যকি অনি শুরু করে দিয়েছে। আমরা ফিনিশ করবো।

গুরু মালটা ভাল ফাঁসিয়েছো। অনিকেত বললো।

মিত্রা বেশ এনজয় করছে ওদের কথাবার্তা। ওর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে তার অভিব্যক্তি। আমি একে একে সকলের সঙ্গে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। কখন যে বাসু, অনাদি, চিকনা এসে ঘরে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি। ওদের সঙ্গেও আলাপ করিয়ে দিলাম।

আচ্ছা নীরু আমরা অনির বউকে কি বলবো। বৌদি না ম্যাডাম না নাম ধরে ডাকবো। কনিষ্ক বললো।

আমি বৌদি বলবো। নীরু বললো।

বৌদি বাজি করতে ভালো লাগবে না। বটা ঝেড়ে একটা লাথি মারলো নীরুর পাছায়।

জানেন ম্যাডাম অনির গল্প নিয়ে এখনও আমরা সারারাত কাটিয়ে দিই। বলতে পারেন অনি স্পেশাল নাইট। অনিকেত বললো।

একটা গল্প বলুন শুনি। মিত্রা বললো।

বলুন বললে হবে না। বলো বলতে হবে। তবে না একটু একটু দুর্বলতা আসবে। কনিষ্ক বললো।

বটা কনিষ্ককে একটা ঝেড়ে লাথি মারতো। আমি বললাম।

কি সব অসভ্য অসভ্য কথা বলছে। নীরু বলে উঠলো।

তোকে….। অনিকেত চেঁচিয়ে উঠলো।

ঘরের কেউ গম্ভীর নেই।

বলতে পারি ম্যাডাম। আপনারা সবাই খাটে বসুন। আমি দেখাচ্ছি। বটা বললো।

সবাই হুরুম দুরুম করে খাটে উঠে বসলো। কেউ পাশে সরে দাঁড়াল। আমি মিত্রা দাঁড়িয়ে টেবিলের কাছে। বটা সোজা চলে গেল দরজার কাছে।

ধরে নিন আমি অনি। চুলটা উস্ক খুস্কো। আপনারা যেমন সবাই খাটে বসে আছেন। তখন আমরাও হস্টেলের খাটে বসে গল্প করছি। অনি ঢুকলো। চোখমুখটা খুব শুকনো শুকনো।

কিরে! কি হয়েছে?

বলছি বলছি। জলের বোতলটা আগে দে।

জলের বোতল এগিয়ে দিলাম। ঢক ঢক করে জল খেলো।

কিরে বলবি তো কি হয়েছে?

বহুত জোর কেলানির হাত থেকে বেঁচে গেছি বুঝলি। এখনও পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছি।

কেনরে!

নীরু চা খাওয়া।

নীরু চা নিয়ে এলো। অনি চিরটাকাল নীরুকে অত্যাচার করেছে। নীরু যদি ওর বৌ হতো তাহলে খরপোষ আদায় করে ছারতো।

সবাই হাসছে।

চা খেয়ে দিয়ে বলে। শিয়ালদায় কোন মেয়ে ট্রেনে বসেছিল বাজি করে একটা মোগলাই পরোটার জন্য তাকে চুমু খেয়েছে। সেদিন আমরা সবাই অনির ঠোঁটে দশবার করে চুমু খেয়ে, সেই মেয়েটাকে চুমু খাওয়ার স্বাদ মিটিয়েছিলাম।

সবাই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে।

সেদিন কিভাবে অনিকে চুমু খেয়েছিলাম তোমাকে দেখাবো। বটা এগিয়ে এলো।

মিত্রা হাসতে হাসতে আমার কাঁধে মাথা রেখেছে। মাথা দুলিয়ে বলছে না না।

মিলি হাসতে হাসতে চোখে জল বার করে দিয়েছে।

সেই মেয়েটাকে দেখবে। মিত্রা বললো।

ধারে কাছে কোথাও আছে!

হ্যাঁ।

খাইছে, কনিষ্ক চল ফুটি।

নীরু এগিয়ে এলো।

ম্যাডাম প্লিজ একটু দেখাও। দু-চোখ ভরে তাকে একটু দেখি। শয়নে স্বপনে তাকে কতবার দেখেছি বলতে পারবো না। আরও কি কি হয়েছে বলা যাবে না। কিন্তু এই চর্ম চক্ষু দিয়ে তাকে এখনও দেখা হয়নি।

ওই যে। মিত্রা মিলিকে ইশারায় দেখাল।

কেন তোমার সঙ্গে আমার পাঁচ বছর আগে দেখা হলো না। তাহলে তোমাকেই বিয়ে করতাম।

বটা এমন ভাবে নীরুর ঘারটা চেপে ধরলো নীরু খেঁকিয়ে উঠে বললো। অসভ্য কোথাকার।

আবার হাসি।

ছোটোমা চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। নীপা, সুরো এগিয়ে গেলো।

কিরে তোদের হাসি এখনও থামল না। ওপরে হাসি, নীচে হাসি কতো হাসবো বলতো।

সব অনি? বটা বললো।

আর কে হবে বলো।

ছোটোমা আমার দিকে তাকাল। চোখে পরিতৃপ্তির ছোঁয়া।

চা খেয়ে সব রেডি হয়ে নাও। খাবার রেডি।

আমরা চলে যাব ছোটোমা। হাসপাতালে রাউণ্ড আছে। কনিষ্ক বললো।

খেয়ে যাবে।

দেরি হয়ে যাবে।

বড়োমাকে বলে যেও।

এইতো, একেবারে বাঘের মুখে ঠেলে দিলে। ঠিক আছে মনে থাকবে।

ছোটোমা বেরিয়ে গেল।

চা খাওয়া হলো, গল্প হলো। হাসা হাসি হলো।

হিমাংশুর মুখ থেকে তোর সব ব্যাপার শুনলাম। তবে পুরো না একটু একটু। বলতে পারিস পটেটো চিপস। কনিষ্ক বললো।

হাসলাম।

তোরা খবর পেলি কি করে, আমাকে ভূতে ধরেছে?

সকালে নিউজ দেখে মাথা খারাপ। তারপর দেখলাম তুই নিউজটা করেছিস। ভাবলাম তোর কিছু হয়েছে কিনা। তোর ফোন নম্বর আমাদের কাছে নেই।

নীরুকে ফোন করতেই বললো। হিমাংশুকে ফোন কর ও ডিটেলস দিয়ে দেবে।

হিমাংশুকে ফোন করতেই সব ছোটো হয়ে গেল। আউটডোর সেরেই বেরিয়ে এলাম। জুনিয়ারগুলোকে বলে এলাম, তোরা একটু সামলা। বিকেলে আসছি।

তোরা কি এখন মেডিকেল থেকে আসছিস?

আবার কোথা থেকে আসবো!

আমি যেতাম তোদের কাছে।

স্যারের মুখ থেকে কিছুটা শুনলাম। এবার তোর এখানে ঘনো ঘনো আসতে হবে।

আমাকে পাবি না। মিত্রাকে পাবি। অসুবিধে হবে না।

তাহলেই হবে। নীরু বললো।

কেন বৌ দেয় না। দেবনা দেবনা বলে। বটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

দেখলি কনিষ্ক, বটা কিরকম অসভ্য অসভ্য মানে করলো।

সবাই হাসছে।

মিত্রাকে বললাম যা তোরা রেডি হয়ে নে। আমরা একটু বসে কথা বলি।

ওরা উঠতে চাইছিল না। তবু উঠতে হলো। সবাই বেরিয়ে গেল।

সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিস, না এখনো সতী আছিস।

খাই মাঝে মাঝে।

খাবি?

দে।

বটা তোরটা খালি কর।

বটা প্যাকেটটা বার করতে নিমেষে খালি হয়ে গেল।

তোর কি হয়েছিল বলতো? কনিষ্ক বললো।

জানিনা।

স্যারের মুখ থেকে শুনলাম।

কি শুনলি বল। তারপর বলতে পারবো।

আমরা যখন টেনে পরি তখন ওর একবার এরকম হয়েছিল। আমাদের ওখানকার গুণীনকাকা দেখে বললো ওকে পীরবাবা ভর করেছে। চিকনা বলে উঠলো।

কিরে! এইসব কি শুনছি? তুই কি শেষে সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে মাদুলির ব্যবসা শুরু করবি? না পীরসাহেব হয়ে যাবি—

কি জানি।

তোর ওই বন্ধু কি যেন নাম।

চিকনা। চিকনা বললো।

হ্যাঁ হ্যাঁ। আপনি ঠিক বলেছেন। বটা বললো।

আপনি না তুমি।

সরি। বটা হেসে ফেললো।

তুই নাকি সেনশ্লেষ ছিলিস ঘণ্টা পাঁচেক। কনিষ্ক বললো।

মাঝে মাঝে তোর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। বটা বললো।

কিন্তু পালস বিট ঠিক ছিল। বডি টেম্পারেচার ঠিক ছিল। প্রেসার একটু আপ ডাউন করছিল। স্যার খুব ঘাবড়ে গেছিলেন। কনিষ্ক বললো।

আমি বলতে পারবো না কি হয়েছিল। ভোররাতে শুয়েছি। মাথাটা প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছিল। মিত্রাকে বললাম, মাথাটা একটু টিপে দিবি। ও পাশে বসে মাথায় হাত দিল। তারপর আর কিছু জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখছি এই অবস্থা।

স্যার বললো, তুই নাকি যোগাভ্যাস করিস।

তা করি। তোদের ডাক্তারিশাস্ত্রে কি বলে এই ব্যাপারটাকে।

পাতি ফিটের ব্যামো। কোনও ওষুধ নেই। যারা দেয় তারা ঢপ দেয়।

কি হয় এতে?

তুই যে কোন সময় টেঁসে যেতে পারিস। আজও যেতে পারতিস। তাই সকলে ভয় পেয়েছিল। তোর সেন্স ফিরে আসতে কেউ ঠিক মতো বিশ্বাস করতে পারেনি।

তাহলে উপায়?

কয়েকদিন পড়াশুনো করি। রবিবার বলবো।

আমি হাসলাম।

চল দেরি করবো না।

চিকনা ওদের একটু নিচে নিয়ে যা। আমি স্নান সেরে যাচ্ছি।

ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমি টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। বেশ সময় লাগলো। মিত্রা এসে দু-বার বাথরুমের দরজা ঘট ঘট করে গেছে।

আমি স্নান সেরে বেরলাম।

দেখলাম ঘরের দরজা বন্ধ করে মিত্রা খাটে বসে আছে। আমায় দেখে উঠে দাঁড়াল।

চোখে মুখে হাসির ছটা।

আমি বেরতেই এগিয়ে এলো।

কিরে ঘরের দরজা বন্ধ!

কাল থেকে অনেক জালিয়েছিস। এবার আমি একটু জালাই।

একবারে ঝামেলা করবি না।

ঝামেলা। আমি খালি তোর প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন দিই।

দিস তো।

সকাল বেলা এক ঘর লোকের সামনে আমার প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন মেরেছিস।

ওই সিচুয়েসনেও সকলে হেসেছে। আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে থেকেছে।

একবারে টাওয়েল ধরবি না।

টাওয়েল ধরবি না।

মিত্রা ঝোগরুটে মেয়ের মতো চোখমুখ পাকিয়ে আমার দিকে তেরে এলো।

মিত্রা শু-শুরি লাগছে। তোর শু-শুরি লাগাচ্ছি।

আমি চেঁচাবো।

চেঁচানা চেঁচা। দেখি তোর কতো গলার জোর।

আমি টাওয়েল চেপে ধরেছি।

নিচে এক ব্যাচ খেতে বসেছে। কেউ ওপরে আসবে না।

কামড়ে দেবো।

কামড়া দেখি কতো তোর দাঁতের জোড়। সকাল বেলা অনেক গায়ের জোড় দেখিয়েছিস। অনাদিরা পর্যন্ত হিমসিম খেয়ে গেছে।

সত্যি বলনা কি হয়েছিল। তোর মতো।

আগে গালে দে।

দিলে বলবি।

যতটা দিবি ততটা বলবো।

তাহলে থাক রাতে শুনবো।

তোকে আর এক ঘণ্টা পর থেকে পাবো না।

কেন!

অনিমেষদারা এখানে মিটিং করবে।

কিসের মিটিং! তখন অবশ্য বললো আমার সঙ্গে বসবে।

সকাল বেলা অনিমেষদর রূপ দেখিসনি। আমি ওনাকে কোনওদিন চাক্ষুষ দেখিনি। দাদা, নিরঞ্জনদা, মল্লিকদা দেখেছেন। সকালে হুটার বাজিয়ে লালবাতির যে গাড়িটা প্রথম এ বাড়িতে ঢুকলো সেটা অনিমেষদার।

বাড়িতে ঢুকেই সোজা এই ঘরে। নিরঞ্জনদা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। তারপর তোকে দেখার পর কিছুক্ষণ মাথা ধরে বসে থাকলেন। ডাক্তারদাদার সঙ্গে নিরঞ্জনদা আলাপ করালেন। বুঝলাম সবাই সবাইকে চেনেন। বড়োমা ছোটোমার সঙ্গে আলাপ করলেন।

বৌদি তোকে দেখেই কেঁদেকেটে একসা। সুরোর অবস্থাও তাই। অনিমেষদা নিজেই বললেন, আমি একটু দাদা, মল্লিকের সাথে কথা বলবো।

নিচে গিয়ে দাদার কাছ থেকে সব শুনলেন। মুখটা থম থমে। তারপর সবাইকে একে একে এখানে ডেকে পাঠালেন। তুই যদি তখন অনিমেষদাকে দেখতিস। একদিকে তুই শুয়ে কনটিনিউ ভুল বকে যাচ্ছিস। নিচে অনিমেষদা পুলিশের ওপর সে কি হম্বি তম্বি।

পুলিশ এসেছিল!

না সব ফোনে ফোনে।

আর একবার করে মাঝে মাঝে তোকে এসে দেখে যাচ্ছে। আর ডাক্তারদাদাকে বলছে। সামন্তবাবু ঠিক আছে। আপনি কনফিডেন্ট। আবার গট গট করে বেরিয়ে যায়।

তোর টিমের পুরো ব্যাচ এলো। আমাকে নিচে ডাকলো। সে কি জেরা রে।

অনিমেষদা, অর্ক আর সায়ন্তনের পেট থেকে একটা কথা বার করতে পারলো না। রতন, নেপলা, আবিদ চুপ। দ্বীপায়ন শুধু তোর ল্যাপটপের স্ক্যান ইমেজগুলো দেখিয়েছে।

আমার ঠিক কি হয়েছিল বলতো!

ডাক্তারি পরিভাষায় কি বলে বলতে পারবো না। ডাক্তারদাদ বললো লস অফ মেমারি। অত্যাধিক স্টেইন পরলে কখনও কখনও এরকম হতে পারে।

দাদা কোথায়?

দাদা অফিসে গেছে। একটু বাদেই ফিরে আসবে। তোর হয়ে মল্লিকদা লিখছে। বাই নেম।

মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

আমি ওর মুখটা তুলে ধরলাম। ওর আয়তো চোখ দুটি থিরি থিরি কাঁপছে।

তুই এতো সেজেছিস কেন।

বড়োমা বললো। লোকজন আসবে, একটু ভদ্র হয়ে থাক।

হাসলাম। ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। জড়িয়ে ধরলাম।

তুই দুর্বল হোসনি। তাহলে আমি হেরে যাব।

নিজের কষ্টটা চেপে রেখে তুই সকলকে কষ্ট দিস।

চুপটি করে কিছুক্ষণ দুজনে দাঁড়ালাম।

চল, এখন থাক। নিচে যাই। নীরুরা খেতে বসেছে।

তোকে ওরা ভীষণ ভালোবাসে। তুই যাস না কেন ওদের কাছে?

ভাইজ্যাক যাবার আগ একবার গেছিলাম। তারপর মনে হয় গেছিলাম, দেখা পাইনি। ম্যাসেজ রেখে এসেছিলাম।

তারপর?

সময় পেলাম কোথায়।

মিত্রা আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।

বেশ কিছুক্ষণ দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।

ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।

আবার পাগলাম করে।

এই পাজামা পাঞ্জাবীটা পর।

কেন!

বড়োমার হুকুম।

বাধ্য ছেলের মতো নতুন একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরে নিচে এলাম।

টেবিলে আমার ডাক্তারবন্ধুরা আর হিমাংশু। নিচে আর সবাই। আমি নীরুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।

বড্ড ভাল খাইতাছি বুঝলি অনি। ডাক্তারগো ভীষণ লোভী হয়।

আমি একটা মুরগীর ঠ্যাং নীরুর পাত থেকে তুলে নিলাম।

নীরু সটাং উঠে দাঁড়াল।

কি হলো!

কখন থেকে বটার লগে সামলায়ে রাখছি তুই কিনা ঝপ….।

অনেক টেনেছিস। এবার ওঠ।

এ-কিরে, সবে মধ্য গগনে, তুই উঠ কইলেই উঠুম।

বটা ঝেরে একখানা পেছনে দে-তো। কিছুটা নিচে নেমে যাক। কনিষ্ক বললো।

ছোটোমা হাসতে হাসতে বললো। কিরে মিত্রা এ তো সেই নাচের মতো কথা।

সেটা কি ছোটোমা! নিশ্চই অনি স্পেশাল?

আবার হাসি।

সোনামনা এরকম করতে নাই। খাওনের সময় ঝামেলা করতে নাই। লক্ষ্মীমনি রাগ করবা এখন।

তোর বাঙাল ভাষা বার করছি, দেবনা টিপে রগ ফেটে যাবে। বটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

আমি বটার দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই ও মুখ নিচু করে খিকখিক করে হেসে উঠলো।

তুই পুরোটা খাসনি। হাফ খেয়ে আমাকে দে। অনেকক্ষণ সামলে রেখেছি। ঠ্যাংটা দেখেছি, আর ফ্রায়েড রাইস টানছি। বিশ্বাস কর। নীরু বললো।

আমি একটু খেয়ে নীরুর পাতে রাখতেই, বটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিল।

বড়োমা গ্যাটিস দেন।

সে আবার কি রে! বড়োমা চোখ বড়ো বড়ো করলো।

সবাই হাসছে।

সাবস্টিটিউট একখানা দাও। আমি নিয়ে নিলাম না। বটা বললো।

তারমানে! বড়োমা অবাক হয়ে তাকিয়ে নীরুর দিকে।

সব নিয়ে নিল, খেলাম কই?

বড়োমা। দিলে কিন্তু সকলকে দিতে হবে। অনিকেত চেঁচিয়ে উঠলো।

বড়োমা হাসতে হাসতে বললো, তাই দিচ্ছি।

আর কারুর কপালে জুটবে না। তুমি অনিকে জিজ্ঞাসা করতে পারো। কনিষ্ক বললো।

তা হোক তোরা খেলেই আমাদের খাওয়া হবে।

দামিনীমাসি রান্নাঘর থেকে নিয়ে এসে সকলকে দিল।

কনিষ্ক অনি এরকম মাঞ্জা দিয়েছে কেন? বটা বললো।

তোর হিংসে হচ্ছে। নীরু চেঁচাল।

বটা একবার তাকাল নীরুরু দিকে। মুচকি মুচকি হাসলো।

অনিকে লেটেস্ট নিউজটা বলি।

কেন। শান্তিতে খাচ্ছি, সহ্য হচ্ছে না।

কিরে বটা?

তোকে বলবো। তুইই একমাত্র পারবি সলভ করতে।

কনিষ্ক খিক খিক করে হাসছে।

আবার বোকার মতো হাসে। নীরু গম্ভীর হয়ে বললো।

নারে অনি কিছু না। বিয়ে করেছি, তাই বলছে।

তুই বিয়ে করেছিস!

বয়স হয়েছে, বিয়ে করবো না!

কোনটারে বটা?

সেইটা। ঠমক ঠমক পায়েল বাজে….।

বটা এমন ভাবে শরীর দুলিয়ে সুর করে বললো, সবাই হাসছে।

আমি নীরুর গালটা টিপে বলে উঠলাম সোনামনা সোনামনা।

একিরে তুই ওর গালে হাত দিলি! অনিকেত বললো।

কেন কি হয়েছে!

ওর বউ কি বলেছে জিজ্ঞাসা কর।

সেটাও গুরুজনদের সামনে বলতে হবে। নীরু খিঁচিয়ে উঠলো।

বড়োমা তুমি আমার পাশে দাঁড়াও, নাহলে এরা আমাকে খেতে দেবে না।

ও অনি ওরকম করিস না বাবা।

কথাটা মনে রাখিস নীরু। এই সপ্তাহের মধ্যেই তোকে নাগা সন্ন্যাসী বানাব। ছবিটা তুলে বটার হাত দিয়ে তোর বউয়ের কাছে পাঠিয়ে দেব।

এই তো। তুই ওদের কথায় বার খেয়ে গেলি।

বউকে কবে নিয়ে আসছিস।

আজ বললে আজ, কাল বললে কাল।

রাউন্ডের কি হবে।

বটা প্রক্সি মারবে।

নেমন্তন্ন কিরসনি কেন?

হিমাংশু সাক্ষী। জিজ্ঞাসা কর। তখন তোকে কুত্তার মতো খুঁজেছি। পাইনি।

ঠিক আছে আমি পর্শুদিন ঠেকায় যাচ্ছি। থাকবি।

খাওয়া শেষ হতে ওরা সবাই উঠলো। আমি মিত্রা ওদের এগিয়ে দিয়ে এলাম।

সব শুনেছি, রবিবার কিন্তু পুরো গ্যাং আসবো মাথায় রাখিস। কনিষ্ক বললো।

হাসলাম।

ওরা চলে গেল। বাগান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমি মিত্রা ভেতরে এলাম।

তোকে দেখে আমার ভীষণ গর্ব হচ্ছে।

কেন?

সকাল থেকে কতো লোক এসেছে জানিস?

কি করে জানবো।

কে বলবে। কার মনের অবস্থা ভালো আছে বল।

এখনও সকলের মনের অবস্থা খারাপ!

আস্তে আস্তে সকলে ধাতস্থ হচ্ছে।

বহুত খিদে লেগেছে। চল আগে খেয়ে নিই। তারপর তোর সঙ্গে বসবো।

রাতের আগে সময় পাবি না।

কেন!

বিকেল থেকে টানা মিটিং।

তখনও তুই এই কথা বললি। কিসের মিটিং? কার সঙ্গে মিটিং? আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।

ঠিক আছে, আগে খেয়েনে, তারপর বলছি।

তুই ভেতরে যা, আমি একটু রতনদের সঙ্গে কথা বলে আসি।

বেচারাদের সকাল থেকে অবস্থা খারাপ।

কেন!

ইসলামভাই, দামিনীমাসির কাছে কনটিনিউ ঝাড় খাচ্ছে।

কেন বলবি তো!

কি ভুল করেছে।

আমি চুপচাপ।

জানিস বুবুন।

কি?

সকাল থেকে ইসলামভাই, দাদা, মল্লিকদা, নিরঞ্জনদা তোর ঘরে ঢোকেনি।

কিসের জন্য?

তোর ওই মুখ ওরা কেউ দেখতে চায়নি।

নিরঞ্জনদা কখন এসেছে?

অনাদিদের সঙ্গে।

ও।

মিত্রা এগিয়ে গেল। আমি রতনদের কাছে এলাম। মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়াল।

কিরে কথা বলবি না?

তবু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

কি হয়েছে বলবি তো?

রতন হাতের চেটো দিয়ে চোখ মুছলো। আমি রতনকে জড়িয়ে ধরলাম।

তোমার কিছু হলে আজ স্যুইসাইড করতাম।

কেন আমার কি হয়েছিল?

তোমার শরীর খারাপ হয়েছিল।

কই, এই দেখ আমি ঠিক আছি।

ডাক্তারদাদা যে বললো, তুমি নাও বাঁচতে পার।

ভুল বলেছে। আমি কি তাহলে ভূত।

কতো লোক তোমাকে দেখেতে এসেছিল। সবাই মন খারাপ করে চলে গেল।

কাঁদিস না। রতন কাঁদলে আমার মন খারাপ লাগবে।

কাঁদতে কি চাই, তুমি কাঁদালে। রতন আমকে জড়িয়ে ধরলো।

কই আমি কাঁদালাম।

তোমার শরীর খারাপ হলো কেন?

ঠিক বলেছিস। আবিদ কোথায়?

বাগানের ওপাশে বসে আছে।

কেন!

সবাই তোমার জন্য মন খারাপ করছে।

চল দেখি।

রতন, নেপলা আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাগানের পেছনে এলো। দেখলাম আবিদ কালিঝুলি মেখে আমগাছের তলায় বসে আছে।

কিরে আবিদ এখানে বসে?

আবিদ উঠে দাঁড়াল।

আমি তোমার কাজ শেষ করতে পারিনি।

ঠিক আছে। তুই এইভাবে এখানে বসে আছিস কেন?

ভালো লাগছে না।

ওঠ, যা স্নান সেরে নে। খিদে লেগেছে, খেতে বসবো।

তুমি খেয়ে নাও। ভালো লাগছে না।

পাগলামো করিস না। যা বাগানের বাথরুমে স্নান করেনে।

আবিদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

রতন বাথরুমে সাবান তেল আছে?

আছে।

যা চলে যা। দেরি করিস না।

রতন।

রতন আমার দিকে তাকাল।

ওর জামাকাপর বাথরুমে রেখে আয়।

আমি সোজা চলে এলাম। সুরো গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।

মা কোথায়-রে দেখতে পাচ্ছি না।

কখন চলে গেছে।

কেন।

কলেজে যাবে। ফেরার পথে আসবে।

আমাকে বলে গেল না।

তখন তুমি ব্যাস্ত ছিলে।

খেয়েছিস?

সবাই একসঙ্গে বসবো। দেখো না বড়োমা আমাকে কিছু করতে দিচ্ছে না।

খুব অন্যায়। বৌদিকে বল।

বৌদি রান্না ঘরে কি করছে।

দেখ গিয়ে গিলছে।

খালি বাজে কথা।

আচ্ছা আমার কথাটা মিলিয়ে দেখ একবার। দুজনে কথা বলতে বলতে ঘরে এলাম।

বড়োমা।

কিরে।

তোমরা সুরোকে কাজ করতে দিচ্ছনা কেন। অন্ততঃ পক্ষে জলটা দিতে দাও।

সবাই হাসছে।

যা তোকে জল দিতে দেবে।

সুরো বড়োমার কাছে চলেগেল।

আমি দাদার ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম ডাক্তারদাদা, ইসলামভাই, নিরঞ্জনদা দাদার খাটে। দেবাশিস, নির্মাল্য শোফায় বসে গল্প করছে। আমি ডাক্তারদাদার পাশে গিয়ে বসলাম।

বলুন স্যার, এখন ফিট।

আমি ডাক্তারদাদার চোখের দিকে তাকালাম।

তাকিয়ে কিছু লাভ নেই।

আমি হাসলাম।

শরীরটা অবশ্যই খারাপ হয়েছিল। কালকে কয়েকটা এমারজেন্সি পেসেন্ট আছে। একটু দেখতে বেরবো। তারপর এসে আটচল্লিশ ঘণ্টা পড়াশুন।

কেন! আমার কি রোগ হয়েছে যে তোমাকে নতুন করে পড়াশুন করতে হবে।

এখন বলবো না, আটচল্লিশ ঘণ্টা পরে বলবো।

যাই হোক শুক্রবার যত কাজ থাকুক এখানে এসে হাজির হবে।

কেনরে সেদিন আবার কি আছে?

আমার ব্যক্তিগত কাজ আছে।

নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।

তুমি কখন এলে?

আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ। কালকে একটা ফোন করতে পারিসনি।

কালকে তুমি কি জানতে এখানে আসতে হবে?

এই আবার উল্টপুরান শুরু করলি।

সকাল থেকে তোমায় দেখতে পেলাম না।

দেখার মতো অবস্থায় তুই ছিলি।

তা ঠিক। ভয়ংকর একটা রোগের স্বীকার হয়েছিলাম। ডাক্তারদাদা তুমি কি বুঝলে? আমার কি ফিটের ব্যামো আছে?

অন্য কেউ হলে বলতাম হ্যাঁ। কিন্তু তোর তখনকার শারীরিক কণ্ডিশন বলছে তোর ওই রোগ নেই।

তাহলে ভূতে ধরেছিল।

ডাক্তারদাদা হাসলো, বেশ বলেছিস। যেমন আমরা ঠিক মতো ডাইগনসিস করতে না পারলেই বলি ভাইরাস।

খাওয়া দাওয়া হবে? সকাল থেকে তো অনেক খেল দাখালি। ছোটোমা গম্ভীর হয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল।

দাদা, মল্লিকদা এসেছে?

বাইরেটা একটু উঁকি মার।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

ঘর থেকে বেরতেই দাদা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। মল্লিকদাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম। লক্ষ্য করলাম বড়োমা, দামিনীমাসি রান্নাঘর থেকে আমাকে লক্ষ্য করছে।

আমার সঙ্গে দেখা না করে চলে গেলে?

দাদা মাথা নিচু করলো।

তুমি দেখ আমার কিছু হয়নি। তোমরা বৃথা ভয় পেয়েছো।

দাদা তবু মুখ তুললো না।

কিগো কথা বলবে না?

দাদা মুখ তুললো। উঠে দাঁড়াল। আমার গায়ে মাথায় হাত বোলাল।

তুই ভালো থাকলেই ভালো। তুই খারাপ থাকলে, আমরা ভালো থাকি না। কথা বলতে বলতে দাদার গলাটা বুঁজে এলো।

হাত বাড়িয়ে আমাকে বুকে টেনে নিল। আমিও দাদাকে জড়িয়ে ধরেছি। মল্লিকদা উঠে দাঁড়িয়ে আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

নাও রেডি হয়ে নাও। এক সঙ্গে খেতে বসবো। ছোটোমা কাছে এসে দাঁড়াল।

আমি দাদাকে জড়িয়ে ধরে আছি। দাদার বুকের তীব্র লাবডুব শব্দের অনুভূতি পাচ্ছি। বুঝতে পারছি, চোখ দিয়ে জল না বেরলেও বুকটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। দাদা আমাকে ছারলো।

তুমি ভেটকি মাছের মতো দাঁড়িয়ে রইলে কেন। লেখাটা প্রেসে পাঠিয়েছ। কাল ডেড লাইন।

মল্লিকদা হাসতে গিয়েও হাসতে পারলো না।

বড়োমা, দামিনীমাসি, ছোটোমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের সবাই নীরব দর্শক।

ওরা একবার বিকেলে আসবে বলেছে তোর সঙ্গে দেখা করতে। দাদা বললো।

কারা?

সার্কুলেশন আর প্রেসের ছেলেগুলো।

কেন?

কালকে এক লাখের জায়গায় তিন লাখ কাগজ ছেপেছে। তাতেও সামাল দিতে পারেনি।

তুমি কি বলেছো?

তোর সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে পারব না।

ফোন করলে, আসতে বলো।

অনিমেষ পাঁচটায় আসবে বলেছে।

ঠিক আছে। চলো খেয়ে নিই।

দাদারা বাথরুমে গেল।

নিচে টেবিল সরিয়ে ঢালাও আসন করা হলো। আমরা সবাই এক সঙ্গে খেতে বসলাম। আজ আমি বড়োমা, ছোটোমার মাঝখানে। বড়োমার পাশে মিত্রা তারপর সবাই লাইন দিয়ে বসেছে। এদিকে ছোটোমার পাশে দামিনীমাসি, কবিতা। আমাদের একেবারে অপরজিটে ভজু, রতন, আবিদ, নেপলা।

দুটো নতুন মেয়েকে দেখলাম চিনতে পারলাম না। প্রথমে বড়োমা, দামিনীমাসি, ছোটোমা সবাইকে দিয়ে দিয়েছে। এবার যদি লাগে ওরা দেবে।

আমরা খাওয়া শুরু করলাম। মিত্রা আমার থালার দিকে একবার তাকিয়ে নিল।

আমি মিচকেপোড়া শয়তানের মতো দুষ্টুমি হাসি হাসলাম।

বেশি খাস না, শরীর খারাপ করবে।

আমি চুপ করে থাকলাম।

খাওয়া চলছে।

দেবাশিস বলে উঠলো।

অনি তোকে একটা রিকোয়েস্ট করবো।

বল।

বড়োমা, ছোটোমা তবু একটু শুনেছে। আমরা তখন ওপরে ছিলাম।

ছোটোমা জোরে হেসে উঠলো। দেখাদেখি বড়োমা, দামিনীমাসি হাসছে।

সবাই গম্ভীর।

তোমরা হাসছ যে। দাদা খেতে খেত মুখ তুলে বললো।

একটা দুর্দান্ত গল্প আছে বুঝেছ এডিটর। অনিবাবুর জীবনটা গল্পে গল্পে গল্পময়।

বাবা তুমি যে সাহিত্যিক হয়ে যাচ্ছ হে ডাক্তার।

সে যা বলো, এই বয়সেও দেখ কাল সারারাত জাগলাম। এখনও জেগে আছি। গল্পের দৌলতে।

কিরে দেবা? দাদা বললো।

অনি বল না তোর ওঝা হওয়ার ঘটনাটা।

ওঝা! অনি! দাদার চোখে মুখে বিষ্ময়।

আপনি অনিকে জিজ্ঞাসা করুণ।

শোনো এডিটর বয়সকালে তুমিও এসব করেছো। তুমি কম। ও চূড়ান্ত।

কিরে অনি তুই ওঝা হলি কবে? দাদা আমার মুখের দিকে তাকাল।

ওর সঙ্গে যে মেডিকেলের ডাক্তারদের বন্ধুত্ব আছে তুমি জানতে? বড়োমা বললো।

না।

কোনওদিন আগে শুনেছো?

না।

আজ ওরা সবাই এসেছিল অনিকে দেখতে। ওরা সব সামন্তর ছাত্র। সামন্তকে এই বাড়িতে দেখে ওরা অবাক।

কিগো ডাক্তার গুল মারছো না।

দাদার কথায় সবাই হাসে।

শুনি তোর ওঝার কীর্তি। বল।

বুবুন দাদা বলেছে, বল। মিত্রা বললো।

তোর পাতের ঠ্যাংটা দে।

এই নে।

ছোটোমা হাসলো।

এইবার বল।

আজ এতো ভালো মেয়ে হলি কি করে! একবার চাইতেই দিয়ে দিলি। ছোটোমা বললো।

মিত্রা মুচকি হাসলো।

ওঝার বিদ্যেটা শিখতে হবে না।

বল না। বড়োমা বললো।

আমি খেয়ে যাচ্ছি। কিরে বলবি তো। বড়োমা খোঁচা মারলো।

তুমি শুনেছো?

কি একটা কথা বলতে গিয়ে বটা, নীরুকে বলে ফেললো। চল নীরু অনি তোর ভূত ছাড়িয়েছিল, তুই এবার অনির ভূতটা ছাড়া।

আমি হাসলাম।

নীরুর মতো সব কলেজে একটা করে পাবে। আমাদের কলেজে যেমন দেবা ছিল।

ফালতু কথা বলবি না। দেবা চেঁচিয়ে উঠলো।

তাহলে তোর পেছনে বুদ্ধি আছে বুঝিয়ে ছিলাম কি করে।

নীপা, সুরো দুজনেই জোড়ে হেসে উঠলো।

এখনও কলেজ ক্যান্টিনের ফটকেদা তোমার কথা বলে। সুরো বললো।

ফটকেদা এখনও আছে! দেবাশিস বললো।

বুবুন কম অত্যাচার করেছে ফটকেদার ওপর। কি খেপাতো, উড়ে বলে। সেই ফটকেদা অসুস্থ হলো। ও নিয়ে গিয়ে মেডিকেলে ভর্তি করলো। ফটকেদার জন্য তিনরাত মেডিকেলে জাগলো। রক্ত জোগাড় করে ফটকেদাকে বাঁচাল। মিত্রা বললো।

তোর মনে আছে? দেবাশিস বললো।

বাঃ মনে থাকবে না।

তখন বটারা কিন্তু ফটকেদার জন্য দারুণ সার্ভিস দিয়েছিল। না হলে ফটকেদাকে বাঁচাতে পারতাম না। মৈনাক আমি ফটকেদাকে মেডিকেলে নিয়ে গেছিলাম। বটা, মৈনাকের বন্ধু এক পাড়ায় থাকে। সেই থেকে ওদের সঙ্গে আলাপ, শুরু যাতায়াত। তখন অঢেল সময়, আড্ডামারার জায়গা বলতে ওদের হোস্টেল। বন্ধুত্বটা আরও গাঢ় হলো যখন একসঙ্গে দল বেঁধে আমরা পড়াতে যেতাম।

পড়াতে যেতিস! মিত্রা বললো।

হ্যাঁ।

কই আগে বলিসনি!

শিয়ালদহ স্টেশনের গায়ে একটা পথ শিশুদের স্কুল আছে চোদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু কিশোরদের ওখানে পড়ান হয়। আমরা সপ্তাহে তিনদিন ফ্রি সার্ভিস দিতাম। সেখানে পড়াতে যেতাম। ওখানকার ফসল সাগির, অবতার, ছট্টু।

ইসলামভাই আমার দিকে তাকাল।

তাকিয়ে লাভ নেই। অবতারকে জিজ্ঞাসা কোরো। তবে কি জানো, আমরা থাকতাম ঘণ্টা দুয়েক। তাতে সংশোধন হয় না, একটু ঘসা মাজা হয়, এই যা। তবু মন্দের ভালো।

একদিন ফটকেদার সঙ্গে ক্যান্টিনে বিশাল ঝামেলা করছি।

কেনরে! বড়োমা বললো।

ঘুগনি পাঁউরুটি চেয়েছি, বলেছে নেই। ব্যাশ, আমার জন্য তোমাকে বানিয়ে দিতে হবে। ফটকেদা দবে না।

সেই সময় মৈনাক এলো।

চল তোকে বাইরে খাওয়াচ্ছি।

মৈনাক হার কিপ্পন। হাত দিয়ে পয়সা গলে না। ও বলে কিনা খাওয়াবে।

কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

খাওয়াব বললাম তো। মৈনাক রিপিট করলো।

বেরিয়ে এলাম। বসন্ত কেবিন। একটা করে মোগলাই পরটা পেঁদালাম।

মৈনাকের কাছে মোগলাই! দেবাশিস বললো।

হাসলাম।

খেতে খেত মৈনাক বললো। তোকে একজনের ভূত ছাড়াতে হবে।

ভূত, বলিস কি!

হ্যাঁ।

গাঁজা-টাজা খাস নি তো?

সজ্ঞানে বলছি।

দেবা কেশ?

দেবাশিস হাসছে।

হাসিস না তখন তুই বিখ্যাত। মৈনাককে বললাম, কার রে?

তোকে জানতে হবেনা। কনিষ্ক বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।

এককথায় রাজি হয়ে গেলাম। বললাম, ড্রেস মেটিরিয়াল।

সব জোগাড় হয়ে যাবে। তুই শুধু বাসনপত্রের ফর্দ দে।

মৈনাককে লিখে দিলাম। কনিষ্ককে বলিস, একখানা মড়ার মাথার খুলি কিছু হাড়গোড় ল্যাবরেটরি থেকে এনে রাখতে।

তুই তখন মেডিকেলে যেতিস! ডাক্তারদাদা বললো।

রেগুলার।

আমাকে দেখিস নি?

তোমাকে তখন চিনতাম না। এই বাড়িতে এসে মিত্রার শরীর খারাপের দিন দেখলাম। তাও দেবাশিস বললো, তুমি অনেক বড়ো ডাক্তার।

ডাক্তারদাদা হাসছে।

জানো তোমাদের কলেজে স্টুডেন্টদের জন্য যে অপারেশনের ফিল্মগুলো দেখানো হয় সেগুলো দেখার লোভ ছিল বেশি। ওই কারনে আরও যেতাম।

তুই দেখেছিস!

রেগুলার দেখতাম। আজ হার্ট অপারেসন, কাল কিডনি। কতো বলবো তোমায়।

তুই তো ডাক্তাররে।

একবার তোমাদের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকেছিলাম বটাদের সঙ্গে ডাক্তার সেজে। আর.এল. দাস তখন সার্জারীর হেডডিপ।

তুই রতনলালকে চিন্তিস।

ওদের সঙ্গেই স্যারের বাড়িতে কয়েকবার গেছি।

তবে হাসপাতালের সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে মর্গ। আমার দারুণ লাগতো।

এমাগো তুই কিরে। মিত্রা বললো।

পরে বলবো ঘটনাটা।

সেদিনটা অমাবস্যা তায় আবার মঙ্গলবার। ঠিক ছটার সময় পৌঁছে গেলাম কনিষ্কদের হস্টেলে। বটা, অনিকেত ছিল। দেখলাম ওরা গুছিয়ে সব এ্যারেঞ্জ করেছে। বললাম কেশটা কি বল।

ওরা বললো।

তোর দেবাশিসের থেকে একেবারে রদ্দি। নব্বইভাগ মেয়ে। কমপ্লিট ছেলে বানাতে হবে।

এবার হাসা হাসি শুরু হয়েছে।

হয়ে যাবে। পারিশ্রমিক।

মাংস, ভাত।  সাত্যকি রান্না করছে, ওই হস্টেলে।

আমরা এই কজন না আরও আছে।

আমরা দশজন।

স্পনসর।

ক্লায়েন্ট নিজে।

বাবাঃ, ভাল মুরগী ফিট করেছিস, চা খাওয়া।

বড়োমা হেসে মিত্রার গায়ে ঢলে পড়লো। নীরুর পয়সায় নীরুর ভূত ছাড়াবি?

তাহলে কি!

এই তোমরা হাসতে আরম্ভ করলে। তাহলে কিন্তু গল্প হবে না।

হাসবো না কি কাঁদবো। ছোটোমা বললো।

ওদিকে অনাদিরা, রতনরা হেসে গড়াগড়ি।

কনিষ্ক বললো, নাগা হবি, না কৌপিন পরবি।

ক্লায়েন্টের মটিভ বুঝে ডিসিশন নেব। তুই আমাকে সিঁদুরটা আর মড়ার মাথার খুলিটা দে।

কি করবি!

দেখনা কি করি।

তুই কি সিঁদুর লাগাবি?

তাহলে কি?

কালকে ডা. দাস দেখতে পেলে আমাকে মড়ার মাথার খুলি বানিয়ে দেবে।

তাহলে হবে না। আমি চললাম।

তুই সিঁদুর তোলার একটা ব্যবস্থা করিস।

হয়ে যাবে।

আমি তখন ভিভিআইপি। যা হুকুম করছি সঙ্গে সঙ্গে তা চলে আসছে।

কাজ শুরু করলাম। ওরা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মড়ার মাথাকে সিঁদুর মাখিয়ে লালে লাল করে দিলাম। খুলিটা ভয়ংকর একটা রূপ নিল। নতুন নারকেল ঝাঁটা তাতে সিঁদুর লাগিয়ে সব রেডি করলাম। এবার নিরুর হস্টেলে গিয়ে পৌঁছলম রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। তার আগে অবশ্য বটাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।

গিয়েই প্রথমে বললাম, আগে আমাকে বাথরুমে ঢোকা।

কেন!

ড্রেস করতে হবে।

বাথরুমে ঢুকলাম। ওরা লালা চেলি কিনে এনেছে দশ মিটার। সেটাকে টুকরো করে কৌপিন করলাম বাকিটা লুঙ্গির মতো পরে ফেললাম। আর কিছুটা গায়ে জড়ালাম। কপালে লাল সিঁদুরের টিপ, মাথার চুলে ফ্রেঞ্চচক লাগিয়ে ফুলিয়ে দিলাম। চোখে একটু লেবুর রস দিয়ে লাল করে নিলাম। হাতে ত্রিশুল কমন্ডুল। কিছু বাদ নেই বুঝলে। ও হ্যাঁ ওরা নকল দাড়ি পটচুল পর্যন্ত জোগাড় করেছিল।

ওদের বললাম কেউ হাসবি না। তাহলে সব কেলো হয়ে যাবে।

কনিষ্ক বললো, গুরু দারুণ মানিয়েছে। পুরো ফু বাবা।

তোরা কি নাম বলেছিস?

বটা জানে।

ওই নামে ডাকিস। খেঁড়োর মতো যেন অনি বলে চেঁচিয়ে উঠিস না।

সে আর বলতে। আজকে সাক্সেস ফুল হলে কাল থেকে ইনকামের ধান্দা করতে হবে। তবে গুরু একটা কথা।

বল।

যা করো ক্ষতি নেই। রক্তারক্তি করো না।

তুই একটু থাম, আর পারছি না, পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। মিত্রা বললো।

টিনা, মিলি, সুরো, নীপা, অদিতি পেটে হাত দিয়ে বসে আছে।

তাহলে থাক আবার পরে হবে।

না না মাঝ পথে ছাড়লে চলে, এখনও সাসপেন্সেই ঢোকা হয়নি। ডাক্তারদাদা বললো।

আমি ঘরে এলাম। দেখলাম নীরু গোবেচারা হয়ে বসে আছে। ছাগলকে বলি দেবার আগে যেমন পূজো করা হয় নীরুর অবস্থা ঠিক তেমনি। পরিষ্কার ধোপদূরস্ত পাজামা পাঞ্জাবী পরেছে।

ঘরে ঢুকেই আমার ফার্স্ট ডায়লগ, ইশান কোনের জানলাটা বন্ধ করো। নৈরিত কোণের জানলাটা খুলে দাও। আজ সেই প্রেতাত্মা ওই জানলা দিয়েই ছুটে পালাবে।

নীরুর দিকে তাকালাম।

হ্যাঁরে ব্যাটা উপোস করে আছিস?

হ্যাঁ বাবা।

বলে কি, বাবা! মনে মনে বললাম।

আমি এবার ঝুলি থেকে সব মাল পত্র বার করলাম। ওদের বললাম যা বলেছিলাম সব এনেছিস।

হ্যাঁ গুরুদেব।

বার কর।

চোখ বন্ধ করে সত্যজিত রায়ের বিরিঞ্চিবাবার কথা স্মরণ করে নিলাম একবার।

তারপর গোছগাছ করে পূজো শুরু করলাম। গায়ত্রীটা পর্যন্ত করলাম। তারপরই হোম জাগ শুরু করে দিলাম। ঘি দিয়ে বেল পাতা পোরান হলো। মাঝে মাঝে নীরুর দিকে লক্ষ করছি ভয়ে একেবারে সিঁটিয়ে আছে। কিরকম যেন বিড় বিড় করছে। ওরা সবাই গম্ভীর।

জল খেলাম ঢক ঢক করে। ওরা হো হো করে হাসছে।

তুই একটু থেমে বল। বড়োমা বললো।

মাঝে ইন্টারাপ্ট করলেই বন্ধ করে দেব।

শুধু বক বক, শুধু বক বক। দাদা বিরক্ত হয়ে বললো।

মরন, কতো ইন্টারেস্ট দেখ।

বুঝলে বড়োমা, গুণীণকাকার কাছ থেকে অনেক কষ্টে তিনটে মন্ত্র শিখেছিলাম। বলতে পারো সাতমোন তেল পুরিয়ে রাধা নাচার মতো আরকি।

গুণীণ কাকার নাম স্মরণ করে তিনটে মন্ত্র ঝেড়ে দিলাম।

ওমা দেখি নীরু আমার পা ধরে হাঁউ মাউ করে কাঁদে। আর বলে আমি ওকে ছেড়ে কিছুতেই যাব না। আমি ওকে ভালোবাসি।

কেলো করেছে। তখন আমার ভয় ভয় করছে। তাহলে কি সত্যি নীরুকে ভূতে ধরেছে? সব্বনাশ। দেখি অতীন, নীতিন, বলাই ঘর থেকে ভেগে পরলো।

আমার টেনসন বারলো। মৈনাক থম মেরে বসে আছে। মনে হচ্ছে যেন ওকেই ভূতে ধরেছে।

টেনসন ভয়ে আমার গলার স্বর সপ্তমে চড়ে গেলো। চেঁচিয়ে উঠলাম। জয় তারা। তুই যাবি না আমি তোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবো।

বাবা আপনি ঝেঁটার বারি মারুণ ও কষ্ট পাচ্ছে। কনিষ্ক বললো।

দাঁড়াও বৎস ও ওকে ভালোবাসে আগের জন্মের সাথী এতো তাড়াতাড়ি যেতে পারে।

নীরু তখন উল্টো-পাল্টা বকে যাচ্ছে। আমার পা কিছুতেই ছাড়ে না। যত বলি পা ছাড়, কিছুতেই ছাড়ে না। মাথা গরম হয়ে গেল। নিজের প্রাণ বাঁচাতে দিলাম বেধড়ক ঝাঁটার বাড়ি। নীরু কিছুক্ষণ তারস্বরে চেল্লালো।

তারপর আমার পা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে কিনা বাবা আমার শরীর একেবারে ভালো হয়ে গেছে, কি শান্তি। আমাকে তুমি মন্ত্র দাও। তুমি আমার গুরু।

নীরু বলে কি! তখন আমার কাপর খুলে যাবার জোগাড়। ভাগ্যিস কৌপিনটা ভালো করে গিঁট দেওয়া ছিল।

শেষমেষ কনিষ্ক, বটা ওকে অনেক করে বোঝাল।

ঝেঁটার বাড়ি খেয়ে তখন ওর মধ্যে কি চনমনে ভাব।

তাহলে আমাকে বলো আমি কি নিয়ে পড়াশুনো করবো। বাড়ি থেকে সার্জারি নিয়ে পড়তে বলছে আমার ভালো লাগছে না।

আমি গম্ভীর। ওর মুখের দিকে লক্ষ্য করছি।

ঠিক। কেন বল।

কিছুতেই বলতে পারে না।

কি বলবো। আমি পাতি বাংলার ছাত্র ওকে তখন সার্জারি নিয়ে কেন পড়াশুন করবে না বোঝাতে হবে। বোঝ একবার ছেলের আব্দার।

আবার চোখ বন্ধ করে ধ্যানস্থ হলাম। মাঝে মাঝে চোখ মেরে ওকে দেখি ব্যাটা কি করছে, দেখি মাথা নিচু করে বসে আছে।

কনিষ্ককে ইশারা করে বললাম কিছু বল। হেল্প কর।

ঠোঁট বেঁকায়।

শেষে অনিবাবার খেল শুরু করলাম।

বৎস।

বাবা।

ধরতুই সার্জারী নিয়ে পাশ করলি।

না বাবা আমি সার্জারী পড়বো না।

আমি তোকে ধরতে বলেছি।

ধরলাম। বলেই আমার হাতটা খামচে ধরলো।

সকাল বেলা তোর কাছে একটা পেসেন্ট এলো। তুই তখন ঘুমচ্ছিস। তোকে ঘুম থেকে তুলে জাগালো। তারপর লুঙ্গি তুলে তোকে বললো, আমার পেছনে খুর মেরেছে একটু শেলাই করে দিন। তুই কি করবি?

নীরু হাঁউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। বাবা এই কারণে আমি সার্জারি নিয়ে পরবো না। সকাল বেলা ওই নোংরা জায়গা দর্শন।

কনিষ্করা হাঁসবে না কাঁদবে কিছু বুঝতে পারছে না।

আমি আবার ধ্যানস্থ হলাম।

চোখ খুলে বললাম, শোন মা আমাকে বললো, তুই পেড্রিয়াটিক্স নিয়ে পড়। সাইন করতে পারবি।

নীরু আমার পা জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। বাবা আপনি আমার মনের কথা বলেছেন। আপনার মাকে আমায় দেখান।

মনে হচ্ছিল ওই সময় ওকে লাথি মেরে পুঁতে দিই। তখন আমার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। ও আমাকে মাকে দেখাতে বলছে।

সবাই হাসতে হাসতে খাওয়া ভুলে গেছে। কখন যে সুরো, নীপা, মিলি, টিনা, অদিতি আমার পাতের কাছে এসে বসেছে খেয়াল নেই।

তবে হ্যাঁ। নীরু সে রাতে আমাকে একশো এক টাকা দক্ষিণা দিয়ে পেন্নাম করলো। কাজ শেষ করে যখন উঠলাম রাত তিনটে বাজে। নীরুকে ঘুম পারানো হলো। মাংস ভাত খাওয়া হলো। আরো কতো কি বলেছিলাম সে রাতে খেয়াল নেই।

তারপর ছ-মাস মেডিকেল কলেজ মুখো হইনি। মার খাওয়ার ভয়ে।

কেন?

কেন আবার জিজ্ঞাসা করছো!

বড়োমা হাসছে।

দেখো নীরু এখন চাইল্ড স্পেশালিস্ট।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/VscguIw
via BanglaChoti

Comments