কাজলদিঘী (৮৫ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY-জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

৮৫ নং কিস্তি
—————————

তোকে আজ দেখছি না। তোর ছেলের থেকে মেয়ে আমাকে অনেক বেশি জ্বালিয়েছে। ওর মুখের কথা শুনেছি, আর আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছি।

জানিস নিসা, ও নিজের জন্য কিছু করে না। এতদিন করেও নি। সাগির আঙ্কেল, অবতার আঙ্কেল, নেপলা আঙ্কেলকে দেখেছিস, ওরা রাস্তার ছেলে। রাস্তার থেকে ওদেরক অনি কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে। হয় তো এতদিনে কোথায় হারিয়ে যেত। ওই সাগির আঙ্কেল একদিন তোর বাবাকে মারার প্ল্যান করেছিল। আমি একটুও মিথ্যে বলছি না। জিজ্ঞাসা কর সাগির আঙ্কেলকে। আজ তারা এ ওয়ান সিটিজেন। সব তোর বাবার জন্য।

অনিসা, ইকবালভাইকে জড়িয়ে ধরেছে।

বুড়োর কথাটা মাঝে মাঝে শুনবি।

মিত্রারা ঝকঝকে মুখে ঘরে ঢুকেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল। গুরু গম্ভীর পরিবেশ। ওদিকে বড়োমা, জ্যেঠিমনি চোখ মোছামুছি করছে, এদিকে ইকবালভাই, অনিসা। শুভ, পিকু, অনন্য হাঁ করে ইকবালভাই-এর কথা শুনছে।

এরপর তোর বাবাকে নিয়ে আরও অনেক নতুন নতুন ঘটনা শুনবি। কখনও বিচলিত হবি না। নিজের মনকে প্রশ্ন করবি, উত্তর পেয়ে যাবি। মাথায় রাখবি তোর বাবা একটা সেতু। এই সেতুর ওপর দিয়ে কতো ভালো, খারাপ মানুষ হেঁটে চলে যায়, সেতুর কিছু হয়? সেতু তার মতো থেকে যায়। মাঝে মাঝে তার মেইন্টেনান্সের দরকার হয়, তোদের কাছে অনুরোধ, তোরা এইটুকু করিস।

নে এবার ছাড়।

অনিসা ইকবালভাইকে ছেড়ে সামনেই মাথা নীচু করে দাঁড়াল।

পিকুবাবু।

ইকবালভাই পিকুর দিকে তাকাল।

আজ থেকে পাঁচবছর আগে তুমি আমার কাছে গেছিলে, মনে পড়ে।

আমি আর কোনওদিন তোমাকে ওইভাবে বলবো না।

পিকুর গলাটা কেমন কাঁদো কাঁদো।

তুমি তারপর থেকে আমার কাছে যাও নি। যেতে পারতে। তবে কি জান তোমার জায়গায় আমি থাকলেও ওই ব্যবহার করতাম। তাই তোমায় সেদিন কিছু বলিনি। শুধু শুনে গেছি। ভালোবাসলে শুধু হবে না, ভালোবাসার মর্যাদা দিতে হবে। এই ঘরে আমাদের মতো প্রত্যেকটা চরিত্র এক একটা গল্প, উপন্যাসের মতো। মন দিয়ে পড়ো। সব বুঝতে পারবে। আমাকে আর প্রশ্ন করতে লাগবে না।

এবার একটু হাস।

অনিসার গালটা ধরে ইকবালভাই নেরে দিল।

যা মাকে গিয়ে প্রণাম কর।

অনি এবার যাব। কাল সকাল থেকে অনেক কাজ। অনুপ বড়োমার ঘর থেকে বেরলো।

খেয়ে যা। ওরা এতো কষ্ট করে বয়ে আনলো।

পায়ে পায়ে জ্যেঠিমনির কাছে এলাম। দু-কাঁধে হাত রেখে চোখে চোখ রাখলাম।

এটা তুই কি করলি!

যাদের জিনিষ তাদের ফিরিয়ে দিলাম। আমি নিয়ে কি করবো।

জ্যেঠিমনির চোখ মুখ দুমড়ে মুচড়ে একসা। আমি জ্যেঠিমনির ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়ালাম।

না না একবারে কান্না নয়।

জ্যেঠিমনির চোখ জলে ঝাপসা।

রাজা বদলায়, রাজ্যপট বদলায় না।

বরুণদা পাশে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে।

এ ধরণের কিছু একটা ঘটবে, সেটা হয়তো আঁচ করতে পেরেছিল। এতো তাড়াতাড়ি ঘটবে সেটা আশা করতে পারেনি।

আমি বরুনদার দিকে তাকালাম।

কি ম্যান ফিউজ কেন?

না। আমার জীবনে দেখা সেরা টিপিক্যাল মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখছি। যাকে দেখে বোঝা শক্ত, আদৌ সে কি চায়।

ওদিকে হই হই করে খাওয়া শুরু হয়ে গেছে।

বৌদি কাছে এসে দাঁড়াল।

আমার বন্ধুরা কোথায়?

ঘুমিয়ে পরেছে।

এটা তোমরা অন্যায় করলে।

সকাল থেকে যা দাপাদাপি করছে আর পারে।

বেচারারা আমার সঙ্গে আম খাবে বলেছিল।

খেয়েছে।

বড়োমার দিকে তাকালাম। একটু চা খাওয়াও।

কিছু খাবি না।

এখন ভালো লাগছে না।

অনি মুরগীর ঠ্যাঙ।

নীরুর দিকে তাকালাম।

তুই আজ গন্ধ শুঁকে যা।

চিকনা কাছে এলো।

বুড়ি অনি অনি করে পাগল হয়ে যাচ্ছে। একবার দেখা করে আয়।

কোথায়—

ভজুর সঙ্গে গল্প করছে।

খেয়েছে—

মুড়ি জল খেয়েছে। রাতে আর খাবে না বলে দিয়েছে।

ঘুম পাড়িয়ে দে।

কতো ঘুমবে। এই তো অনাদি আসার আগে উঠেছে।

কিছু বলেছিস নাকি?

ভজু বলেছে। অমনি লাঠি হাতে উঠতে চায়। গালাগালির ফুলঝুড়ি ছুটছে।

কেলাঙ্কারি করেছে।

আমি গিয়ে আবার বকাবকি করতে থামে।

বাসু কই।

অনিমেষদার সঙ্গে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

নীপার মেয়েটাকে সেই যে সকালে দেখলাম তারপর ভিড়ে কোথায় মিশে গেছে আর চোখেই পরলো না।

শুভর পেছন পেছন ঘুর ঘুর করছে।

নীপার বর এসেছে।

ওকে আর সঞ্জুকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছি।

নীপাকে কেমন যেন দেখতে হয়ে গেছে।

মেয়েটার অনেক চাপ। গেলে দেখতে পাবি।

ওদিকে জোড়ে হাঁসা হাঁসি হচ্ছে।

দাঁড়া একটু আসি।

আমি এসে দাদার ঘরে ঢুকলাম। মিলির মেয়ে আর সুরোর ছেলে পাশাপাশি শুয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। বাথরুমে গেলাম। হাতমুখটা ভালো করে ধুলাম। সারাটা দিন যেন একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। গতকালও সারারাত ঘুম হয়নি। আজও মনে হচ্ছে হবে না। একটু ফাঁকা হলে লিখতে বসতে হবে।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে ওদের পাশে একটু শুয়ে পড়লাম। ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসছে। ঘুমনো যাবে না। মাথার ওপর পাখাটা বন বন করে ঘুরছে।

আবার নতুন করে তোকে শুরু করতে হবে অনি। তুই একটা ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটালি। এবার তোকে তার নার্সিং করতে হবে। পয়সা তোর মাথা ঘোরায়নি। আর যে কারুর ঘোরাবে না, তা নয়।

অনাদির মাথা ঘুরিয়েছে। দিবাকরকে তুই দ্বিতীয়বার চান্স দিয়েছিস। অনাদির সঙ্গে ভিড়ে গেছে। এটা যদিও তোর একটা চাল ছিল। তুই চিকনার কথার ওপর নির্ভর করে একটা টোপ দিয়েছিলি। তোর টোপটা ওরা ধরতে পারেনি। গিলে ফেলেছে। তাতে তোর কার্যোদ্ধার হয়েছে। কিন্তু আর এক দিক একবারে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। পারবি টেনে তুলতে?

টেনে আমাকে তুলতেই হবে। যে করেই হোক। হারার আগে কিছুতেই হারব না। প্রয়োজনে অনাদিকে সরিয়ে দেব।

না তা করতে হবে না।

আঠার বছর তুই দেখিস নি ঠিক, তবে পাই টু পাই খোঁজ খবর নিয়েছিস। ও তোকে যথেষ্ট সমীহ করে। তাছাড়া পুকুর চুরি করে বসে আছে। সে ভয়টা ওর আছে।

লোভ, বুঝলি। এই জিনিষটাকে তুই যদি করায়ত্ত করতে পারিস, তাহলে তুই জিতে গেলি। না হলে তুই আস্তে আস্তে ডুবে যাবি।

শালা চাষা থেকে এখন মন্ত্রী।

মনাকাকা প্রায়ই বলতো, আমগাছের ছাল আমড়া গাছে লাগে না। ন চাষা সজ্জনায়ঃ।

মনে মনে হেসেফললাম।

মিত্রা, তনু বেশ আছে।

একজনের অনি আছে আর একজনের বুবুন আছে। অতএব অনি, বুবুন বুঝবে, আমরা কি করবো। তবু তনু একটু আধটু বোঝে, মিত্রা একেবারে অবুঝ। লঝ্ঝড়ে।

কিরে! তুই এখানে শুয়ে শুয়ে কি করছিস? ওদিকে বড়োমা সারা বাড়ি তোলপার করে ফেললো।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে।

পাখার ব্লেড গুনছিস!

তবু ওর দিকে তাকিয়ে। চোখের পাতা পড়ছে না।

তুই জেগে আছিস না চেয়ে ঘুমচ্ছিস?

কাছে এলো।

মিত্রা।

বড়োমার ডাকে থমকে দাঁড়াল।

এই যে তোমার ঘরে, তোমার ছেলে এখানে চিৎপটাং ।

ওর চেঁচানিতে মিলির মেয়েটা জেগে উঠে বসলো। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটু হেসে আবার শুয়ে পড়লো।

বৌদি একটা প্লেটে মিষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকলো।

নে ওঠ। এটা খেয়ে নে।

এখন একেবারে খেতে ভালে লাগছে না বৌদি।

ভালো লাগবে কি করে। না খেয়ে খেয়ে পেটের নাড়িভুড়ি শুকিয়ে আমসি করে ফেলেছিস।

তবু শুয়ে রইলাম।

ওঠ।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে বসলাম।

সুরো সখ করে নিয়ে এসেছে তার দাদার জন্য। একটু খা। এতক্ষণ ফ্রিজেই পড়েছিল।

বাধ্য হয়ে প্লেটটা হাতে নিলাম। একটা মুখে দিলাম। বড়োমা গেটের কাছে এসে দাঁড়াল।

কখন থেকে তোকে খুঁজছি।

একটু শুয়ে পড়েছিলাম।

শরীরের আর দোষ কি। সব তো শুনলাম নেপলার কাছ থেকে।

খবর নেওয়া হয়েগেছে?

বড়োমার স্নেহময়ী চোখের ভাষা আমার সারাটা মুখে ছড়িয়ে পরেছে।

আচ্ছা বিতান কোথায় বলো তো?

এসেছিল, ভিড়ভাট্টা দেখে বলে গেল, অনিদার সঙ্গে এখন কথা বলা যাবে না। পরে আসবো।

আমি হাসছি।

একটু আগে তোর মামীমা ফোন করে বললো, কাল ভোর ভোর চলে আসবে। একসঙ্গে যাবে।

অনুপ ঘরে ঢুকলো, আমি এখন আসছি।

রতনকে বল পৌঁছে দেবে।

ঠিক আছে তোকে উঠতে হবে না, তুই বোস। কালকে অনিসাদের যেতে হবে না। আমি ফাইল করে দিচ্ছি। আগামী সপ্তাহে ওদের একবার কোর্টে তুলে তারপর ফাইন্যাল করে দেব।

আমি এই ফাইন্যানসিয়াল ইয়ারে ওদের ঢোকাতে চাইছি।

সেটা আলাদা করে বলে দিতে হবে?

তুই কাজের মানুষ, তোর তো সব সময় মনে থাকে না।

অনুপ হাসছে।

আমার ফাইলটা মিত্রার হাতে দিয়ে যা।

দিয়েছি। বলেছি ও যখন কনফিডেন্সিয়াল বলে চেঁচিয়ে উঠবে ওর হাতে ফাইলটা দেবে।

হিমাংশু গেটের কাছে দাঁড়িয়ে সমানে হাসছে।

তিন নতুন মালিক কি বললো?

প্রথমে ধরতে পারেনি। পরে যখন ধরতে পেরেছে চোখ গোল্লা গোল্লা।

কাল কখন যাবি? অনুপ বললো।

সকাল সকাল।

ঠিক আছে তোর সঙ্গে পর্শুদিন দেখা হবে।

হিমাংশু সকাল সকাল অনুপকে নিয়ে চলে যাস।

তোকে বার বার বলতে হবে না।

ওরা বেরিয়ে গেল।

সব মিষ্টি খেতে পারলাম না। জোর করে একটা খেলাম। প্লেটটা মিত্রার হাতে দিলাম।

মিলি, সুরো গেল কোথায়, বাচ্চা দুটো একা একা শুয়ে আছে।

তোকে ডিস্টার্ব করছে। বৌদি বললো।

দেখলাম মিত্রা আমার প্লেটের একটা মিষ্টি তুলে মুখে দিয়েছে।

বড়োমা কট কট করে তাকিয়ে।

কতদিন এভাবে খাইনি বলো।

কিগো মিত্রাদি!

সুরো, মিলি ঘরে ঢুকলো।

বাইরে চল, ওরা ঘুমচ্ছে।

ওরা বেরিয়ে গেল।

ছোটোমা চা নিয়ে এলো। হাতে নিলাম।

বৌদি আমার জটায় হাত বুলচ্ছে।

কতদিন তেল দিসনি?

কাকা যতদিন মারা গেছে।

সাবান মেখেছিস?

ন-মাসে ছ-মাসে একবার।

গায়ে গন্ধ ছাড়ত না?

দিনে পাঁচ-ছ-বার স্নান করতাম।

তনুর ওখানে খুব ঠান্ডা?

গরমজল ঠান্ডা জল মিশিয়ে নিতাম।

তোর দাড়ি ছিল না হলো কি করে?

তনু দাড়িটা বানিয়ে দিয়েছে। ছেলে, তার আবার দাড়ি থাকবে না, তা হয়। তারপর আমাকে ধরে নিয়ে গেলো। কি সব টেস্ট করলো। বললো শরীরে একটা কি হরমন কম আছে। গোটা ছয়েক ইঞ্জেকসন নিতে হলো। তারপর ভড়ভড় করে সব বেরিয়ে পরলো।

তুইও অমনি সব রাখতে আরম্ভ করে দিলি।

না বেশ কয়েকবার যত্ন করে কেটেছিলাম। তারপর চিকনা যখন মনাকাকার মৃত্যুর খবরটা দিল, তারপর থেকে আর কাটিনি। নিজের মন থেকে কে যেন বললো, অনি এটুকু তুই কর। এটাই তোর মনাকাকার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা।

ছোটোমা মাথাটা বুকে চেপে ধরলো।

আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরেছি।

দিদাই তুমি কি করছো? অনিসা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে।

তোর বাবাকে আদর করছি। কতোদিন আদর করিনি।

দিদান, দুদুন চা চাইছে।

ওর মুখে গরম জল ঢেলে দে।

বড়োমার কথায় আমি হেসে ফেললাম।

হাসিস না। এতদিন এই ব্যামোটা ছিল না। আজ থেকে আবার শুরু হয়েছে। খালি চা আর চা। সকাল থেকে যা শুরু করেছে…।

দিদি রাতে কি আমাদের জন্য ভাত বসাব।  দামিনীমাসি গেটের কাছে এসে দাঁড়াল।

আমাকে এই অবস্থায় দেখে ভেতরে এলো।

ছোটো আমি একটু ধরি।

অনিসা এতো জোরে হেসে উঠলো, সোফায় বসে থাকা সবাই এদিকে তাকাল।

ছোটোমা একদিকে দামিনীমাসি একদিকে। আমার হাতে চায়ের কাপ। তনু, মিত্রারা উঠে এসেছে। তনু সোজা ঘরে ঢুকে চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে চলে গেল। আমার হাতে শুধু প্লেটটা ধরা রইলো।

দেখ কান্ড, ছেলেটা একটুও খায়নি। বড়োমা বলে উঠলো।

যেটুকু খেয়েছে সেটুকু যথেষ্ট।

তোরা কি ওকে চা টুকু খেতে দিবি না!

ওই তো খাচ্ছে, মিত্রা, বড়োমাকে চোখের ইশারায় আমার অবস্থা দেখাল।

আমার হাতে ধরা প্লেটটা মিত্রা নিয়ে নিল। দুজনে ঢেলে খেতে শুরু করলো।

আমি আবার করে দিচ্ছি দিদি। দামিনীমাসি বললো।

দেখলে, আমি হলে দিত।

মিত্রা বড়োমাকে মুখ ঝামটানি দিল।

ওরকম বলিস না। দামিনীমসি বললো।

তোমার দাদারাও হুকুম করেছে। চা চাই। বড়োমা বললো।

বলো, ভাত কি বসাবো?

কেন?

ওরা তো সব বাইরে থেকে কিনে আনতে গেল।

অনি কি খাবে?

ওর জন্য লুচি, আলুভাজা, ছোলারডাল করছি।

তাহলে আমাদের জন্যও ওই করে ফেলো। কিগো সুতপা?

তাই করো।

একটু চা চাইলাম।

দাদা একবার ঘরে উঁকি মেরেই আমার অবস্থা দেখল।

আচ্ছা আচ্ছা, সময় হলে দিও।

হ্যাঁগো সুতপা।

বলুন দাদা।

অচিন্তবাবু এলেন না।

এসেছিলেন, এতো ভিড় দেখে নাতিকে রেখে চলে গেছেন।

দাদা চলে গেল।

অচিন্তবাবু কে?

আমি বৌদির দিকে তাকালাম।

সুরোর শ্বশুর। সে বেচারা তোকে দেখার জন্য কতো আকুলি বিকুলি করছে সকাল থেকে। তার বৌমার দাদাকে তাঁর দেখা হচ্ছে না, শুধু ফটোতে দেখেছেন।

আমাকে বললে না কেন!

তখন ওই সিপি, এসপিরা এসেছিল।

দূর সিপি। তুমি একবার বলবে তো। উনি কি ভাবছেন বলো।

কি আবার ভাববে, মন্ত্রীর থেকে তুই ব্যস্ত মানুষ।

আওয়াজ দিচ্ছ।

আওয়াজ খাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি তৈরি হয়েছিস, তাই দিচ্ছি।

দামিনী একটু বেশি করে করো, নাহলে ছেলেটা আবার খেতে পাবে না।

বড়োমা, দামিনীমাসির দিকে তাকিয়ে বললো।

সে আর বলতে।

কনিষ্করা কোথায়?

ছোটোমার দিকে তাকালাম।

বাড়ি গেছে, এবার এসে পড়বে।

সব কি রাতে থাকবে নাকি?

হ্যাঁ।

শোবে কোথায়!

তোকে জানতে হবে না।

বৌদি হাসছে।

কানটা ধরতে এলো। ছোটোমা হাতটা ধরলো। আজ থাক। চুলটা কেটে ফেললে পরিষ্কার দেখা যাবে, তখন ধোরো।

কালকে কি এক সঙ্গে যাবে নাকি সব?

তোর জেনে লাভ।

ছোটোমার দিকে তাকালাম। হাসলাম।

একবারে হাসবি না। সব বদলে ফেলেছিস, হাসিটা বদলাতে পারলি না।

হ্যাঁরে অনাদিটার কি করলি। বড়োমা বললো।

এই আবার শুরু করলে। বৌদি ধমকে উঠলো।

কেন করবো না। সাত সাতটা দিন একেবারে পিষে মারলে।

আচ্ছা পরে বললে হতো না—ছোটোমা বললো।

তোরা শুধু থাবারি দিয়ে রাখিস। বজ্জাত ছেলে। অনিমেষটার মুখের ওপরও চোট পাট।

আচ্ছা ঠিক আছে। সে তো হয়ে গেছে। বৌদি বললো।

বড়োমা চুপ করে গেল।

দামিনীমাসি আমাকে ছেড়ে ধীর পায়ে ঘরের বাইরে চলে গেল।

নারে অনি কিছু হয়নি। ওই দুটো প্রত্যেক দিন একবার করে আসতো আর মিত্রার সঙ্গে কথা বলতো। বৌদি বললো।

তোমরা কেউ থাকতে না।

সামন্তদা থাকতো। ছোটোমা বললো।

ঢুকতে দিতে কেন?

আমরা কি অতো শতো বুঝি। বলতো এটা আমাদের কাজ। তারপর অনিমেষদা কার সঙ্গে কথা বললো, শেষের তিনদিন আর আসে নি।

তিনজন আসতো না দু-জন আসতো।

দু-জন আসতো।

ওই সিপি আর এসপি।

হ্যাঁ।

বাবা।

গেটের দিকে তাকালাম। অনিসা দাঁড়িয়ে। আমার চোখে জিজ্ঞাসা।

আবার এসেছে।

কে রে?

সেই দু-জন ভদ্রলোক।

কারা?

ওই যে পুলিশ কমিশনার।

বড়ো জালাতন করছে তো।

তোমার জন্য ফুলের বুকে নিয়ে এসেছে।

ছোটোমা তাকিয়ে দেখছে আমার মুখের দিকে।

ফুলের বুকে!

হ্যাঁগো কি সুন্দর গোলাপের তোড়া গুলো। একজন সাদা গোলাপ আর একজন লাল গোলাপ।

কোথায়?

অনিমেষদাদাই-এর সঙ্গে বেশ হেসে হেসে কথা বলছে।

নছ্ছাড়ের দল সব। বড়োমা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো।

হাসলাম। উঠে দাঁড়ালাম। ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।

প্রথম ধাক্কা মিত্রার কাছে খেলাম।

কিরে ওরা আবার এসেছে?

কি করে জানবো। গিয়ে দেখি কি বলে—

দিতে পারছিস না আচ্ছা করে।

তনু হাসছে।

বারান্দায় বেরিয়ে এলাম। দেখলাম ও ঘরের সামনে ইসলামভাইরা জটলা করে দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে এগিয়ে এলো।

কিরে! আবার কি হলো?

কি করে জানবো।

তোকে তেল দিতে এসেছে।

আমার শুকনো মাথা, অনেক তেল লাগবে।

দিতে প্রস্তুত।

কি করে বুঝলে?

ইকবালভাই হেসে ফেললো।

হাসছো কেন?

ঘরে যা দেখবি। কয়েকঘণ্টার মধ্যে পুরো পাল্টি।

আমি ওদের সঙ্গেই এ ঘরে এসে ঢুকলাম।

দু-জনে অনিমেষদাদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে। আমায় দেখে উঠে দাঁড়াল। অনিসা ঠিক কথা বলেছে। সত্যি দুজনের হাতে দুটো বুকে। বেশ দাম দিয়েই কিনেছে।

আবার কি হলো স্যার, তখন কি আপনাদের সেটিসফাই করতে পারিনি?

আপনি আমাদের স্যার বলবেন না মিঃ ব্যানার্জী।

কেন?

আমার হাতে ফুলের বুকে দুটো এগিয়ে দিল দুজনে।

ধরুন।

কারণ না জানলে ধরি কি করে। প্রথম দর্শনে দিলেন না।

তখন স্যার অফিসিয়াল কাজে এসেছিলাম। এখন আপনার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে দেখা করতে এসেছি। আগামীকাল আসতাম। শুনলাম আপনি থাকছেন না, তাই।

আপনাদের মন্ত্রী এসেছিলেন।

আর বলবেন না, উনি একজন ভোগাস লোক স্যার, দল পাল্টে জোর জবরদস্তি মন্ত্রীত্ব আদায় করেছেন। ওনার এমএলএ-রাই এখন এই সারকারের প্রাণ ভ্রমরা। আর কি বলবো আপনাকে, আপনি সব জানেন।

কেন, আমি কি ভগবান?

দুজনেই হাসছেন।

এই দেখুন তখন থেকে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি আপনাদের নামটাই জানা হয়নি।

আমার নাম সুপ্রিয় ঘোষ।

আমি দিলীপ পাল।

আবার বুকের ওপর হাত তুলে হাতজোড় করলাম। মনে মনে বললাম সিপি সুপ্রিয় আর এসপি দিলীপবাবু, যতোই তেল দাও অনি অনির কাজ করে যাবে।

অনিসাকে ভেতরে ডাকলাম, যা তো মা এগুলো নিয়ে গিয়ে কোথাও রাখ।

অনিসা ভেতরে এসে ওদের হাত থেকে ফুলের বুকেগুলো নিল।

ওখানে রাখি।

টেবিলের দিকে হাত দেখাল।

না, তোদের ঘরে নিয়ে গিয়ে রাখ।

সোফায় বসলাম। ওরাও বসলেন।

বলুন আপনাদের কি সাহায্য করতে পারি।

দুজনেই হাসছে। বেশ ঝকঝকে লাগছে।

আপনি জানেন স্যার, আমরা চাকরি করি। আমাদের অনেক বাইন্ডিংস।

তার মধ্যেও চেষ্টা করলে ভালো কাজ করা যায়।

অস্বীকার করি না স্যার কিন্তু পরিবেশটা আসল।

ওটা নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়।

দুজনেই চুপ করে আছে।

এনারা থাকলে কথা বলতে কোন অসুবিধা নেই তো?

না স্যার, আমরা আপনার সঙ্গে স্রেফ আলাপ করতে এসেছি।

আলাপ তো তখন হলো।

স্যার প্লিজ, আপনি কলম ধরবেন না। সিপি বলে উঠলো।

দময়ন্তী খবর পাঠাল বুঝি।

কে দময়ন্তী? সিপি আমার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে।

অনিমেষদা, বিধানদা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে।

ভাবছে এই নামটা অনি কোথা থেকে আমদানি করলো। নতুন নতুন শুনছি।

ওরাও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

ও খবর না পাঠালে আপনারা আসতেন না।

একটু থেমে।

এতক্ষণে কাগজ হাফ ছাপা হয়ে গেছে।

না স্যার ও খবর পাঠায়নি।

খবরটা ওকে পাঠাতেই হবে, নাহলে বুঝবো আমার সিগন্যাল লাইন ফেল করে গেছে।

কথাটা একটু জোড়ে বলা হয়েগেল।

এইবার দুজনে আমার চোখে চোখ রাখলেন।

সরি।

আপনারা আপনাদের কাজ করুণ, আমাকে আমার কাজ করতে দিন। তাহলে মনে হয় একটা শুষ্ঠ সমাধান হয়ে যাবে।

দুজনেই চুপ করে আছে।

আচ্ছা সুপ্রিয়বাবু আপনার চাকরির বয়স একুশ বছর। আপনাদের প্রফেশনে এই বয়েসটা এমন কিছু বেশি নয়। তাছাড়া আপনি খুব কম বয়সে আইপিএস হয়েছেন। এতো তাড়াতাড়ি আপনি কি করে সিপি হলেন?

সুপ্রিয়বাবু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে!

আপনার থেকে অনেক সিনিয়ার অফিসার এখনও লাইন দিয়ে বসে আছেন। তাছাড়া চাকরি জীবনের একবারে প্রথম অবস্থায় আপনার কয়েকটা ব্ল্যাক স্পটও আছে। সেটা আপনার সার্ভিস রেকর্ডে পুট হয়নি মনে হয়।

বিশ্বাস করুণ স্যার, ওগুলো সব ক্রিয়েটেড।

আমার কাছে কিন্তু তার ভিডিও ফুটেজ আছে।

স্যার!

দময়ন্তী আপনাকে আর কি বললো?

আর কিছু বলেনি। লেখাটা আপনি পর্শুথেকে স্টার্ট করছেন।

কাকে নিয়ে লেখাটা লিখবো সেটা অবশ্যই আপনাকে বলেছে।

বলেছে।

আপনি যে এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন সেটাও জেনে ফেলেছেন।

পুরোটা না স্যার।

জেনে নিন।

ও সব জানেনা স্যার।

আপনার কি মনে হয়?

আপনি আঠারো বছর ধরে একটা মানুষের পেছনে ঘুরে তাকে আপনার এলাকায় নিয়ে এসে নিশ্চিহ্ন করলেন। এমন কি তার দলবল পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। আপনার গায়ে কেউ আঁচড় কাটতে পারলো না। কি কারণে? একুশ বছর চাকরি করে এটা বোঝার মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে স্যার।

হো হো করে হেসেফেললাম।

ঘরের সবাই আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে।

আমি কিন্তু সাধু সন্ত মানুষ।

জানি স্যার। আপনার পরিধি মাপার ক্ষমতা আমাদের নেই। শুধু মিঃ রাঘবন ম্যাসেজ করে একটা কথাই জানিয়েছেন, ডোন্ট ডিস্টার্ব মিঃ অনিন্দ ব্যানার্জী।

ওনাকে প্রশ্ন করেননি, কেন?

না স্যার, সে সাহস আমাদের নেই। এরপরও বলবেন আপনাকে কেউ ডিস্টার্ব করবে।

আমি ওঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।

আমি অন্ততঃ করবো না। এটুকু বলতে পারি। সিপি গলা নামিয়ে আস্তে করে বললেন।

তাহলে এতগুলো লোককে হ্যারাস করলেন কেন?

আমি করিনি স্যার, সিস্টেম আমাকে হ্যারাস করাতে বাধ্য করেছে।

আমি ‘কেনোটা’ জানতে চাইছি।

অনাদিবাবুকে জিজ্ঞাসা করুন।

কেনো?

ওনার কথা আমাদের শুনে চলতে হয়। সাংবিধানিক ভাবে উনি আমাদের ওপরে আছেন। এটা আপনার থেকে ভালো কেউ জানবে না।

অনাদির কোন কোন ব্যবসার সঙ্গে আপনি জড়িত?

ছিলাম স্যার, এখন নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।

ঠিক আছে আপনারা এখন যান। অনিমেষদার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। সেটা নিশ্চই নতুন করে বলে দেবার দরকার নেই।

না স্যার। এসপি হাতে ধরা ফাইলটা আমার হাতে দিলেন।

এটা কি?

রাতে পারলে একটু চোখ বুলিয়ে নেবেন। আপনার কাজে লাগবে।

হাতে হাত রাখলেন।

দেখলাম বৌদি চা নিয়ে এসেছে।

চেনেন এই ভদ্রমহিলাকে?

হ্যাঁ স্যার।

কে বলুন তো।

আপনি বৌদি বলেন ঠিকই, উনি আপনার মায়ের জায়গায় অধিষ্ঠান করছেন।

এই তো আপনি অনেক কিছু উদ্ধার করে ফেলেছেন দেখছি।

নিজে বাঁচার তাগিদে স্যার।

আপনারা গল্প করুণ, আমি একটু ওঘরে যাই।

ঠিক আছে স্যার।

আমি ঘরের থেকে বেরিয়ে বারান্দায় পা দিইনি। অনুপদা, প্রবীরদা এসে দুজনে দুহাত চেপে ধরলো।

তোমাদের ব্যাপার স্যাপার কি বলো তো?

ওই ঘরে চল বলছি।

আমি ওদের রকম সকম দেখে হাসছি।

ইকবালভাই, ইসলামভাই দুজনেই পেছন পেছন এলো।

একদল খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।

কিরে মুন্না তোরা ওকে ধরে বেঁধে নিয়ে আসছিস, ব্যাপারটা কি! ছোটোমা বললো।

দাঁড়াও দিদি, তোমাকে বলেছি না ও বাপের বাপ। আমি, ইকবাল ওর কাছে চুনোপুঁটি।

এরা খাচ্ছে ও ঘরে চল।

প্রবীরদা আমাকে ধরে দাদার ঘরে ঢোকাল।

প্রবীরদার ফোনটা বেজে উঠলো।

পকেট থেকে বার করলো।

অনিমেষদা ফোন করছে!

হাসলাম।

বলুন।

ওকে এখন ছেড়ে দাও। ফোনটা কেটে গেল।

প্রবীরদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

শুনেতে পেলি।

আমি হাসছি।

ও ঘর থেকে এ ঘরে আসার সময় নেই। ফোনে বলে দিচ্ছে। তোর ছকটা কি বলতো?

ওই তো বললো শুনলে।

দেখলাম মিত্রা, তনু দুজনেই দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

তুই মহা নম্বরি। সিপিটা এই কয়বছরে জ্বালিয়ে পুরিয়ে মেরেছে। একটা কথা শোনেনি। এসপিটা পর্যন্ত তোর ব্যবসার হ্যাম্পার করেছে। বলে বলে কিছু করতে পারিনি। আর তুই আসতেই ফুল নিয়ে এসে হাজির।

আমি কি করে বলবো!

দময়ন্তী কে?

আমার বৌ।

মিত্রা দারজার সামনে দাঁড়িয়ে খিল খিল করে হেসে উঠলো।

তনু, মিত্রার মুখ চেপে ধরলো।

হেসো না মিত্রাদি। তোমাকে তখন কি বললাম, একটু অপেক্ষা করো আরও বেরবে, আমি কি ছাই সব জানতাম, তোমায় বলবো। তুমি শুধু শুধু আমার ওপর রাগ করতে। সাগিররা পর্যন্ত সব জানে না।

সেটা এখন বুঝতে পারছি। ইসলামভাই বলে উঠলো।

মারো, মারো ধরে ওকে। মিত্রা দাঁত মুখ খেঁচালো।

মিত্রা কাকে মারবেরে তনু। বড়োমা গেটের মুখে।

তোমার গুণধর ছেলেকে। মিত্রা বললো।

আচ্ছা করে দিয়েছিস পুলিশ দুটোকে।

বড়োমা ভেতরে এলো।

নো আদরটাদর, এখন জানতেই হবে। প্রবীরদা বলে উঠলো।

কি জানবি! বড়োমা বললো।

সিপি, এসপি কি করে নি বলো এই কয়দিন—

সে তো ওকে বললাম।

এখন কি তেল দিচ্ছে, আর ও তেল খেয়েই যাচ্ছে।

বড়োমা আমার দিকে তাকিয়ে।

ওর কোন কেশটার ভিডিও ফুটেজ তোর কাছে আছে। প্রবীরদা বললো।

আরে গল্প দিলাম।

তুই গল্প দিলি, আর ও অমনি ঠুসে গেল।

আমি হাসছি।

ফাইলটা দেখা।

আমি নিজে আগে দেখি।

বৌদি এসে ঘরে দাঁড়াল।

আচ্ছা ও কি পালিয়ে যাচ্ছে প্রবীর।

বিশ্বাস নেই। কতোবার ঘোল খাইয়েছে বলুন। ওরা গেছে?

হ্যাঁ, তোমার দাদা আবার গেট পর্যন্ত গেল।

বৌদি আমার দিকে তাকিয়ে।

কিরে, কি হয়েছে?

কিছু না।

তাহলে তোকে ওরা ঘিরে ধরেছে।

জিজ্ঞাসা করো।

ইকবালভাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। হাসছে। বৌদি একবার আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকায় একবার অনুপদা, প্রবীরদার মুখের দিকে তাকায়।

ওরকমভাবে তাকিয়ে আছো কেন। ইকবালভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম।

তোকে দেখছি।

তোমাকেও বহুত জ্বালিয়েছে।

মওকা পেলে আমিও দেখবো।

সে সুযোগ আর পাবে না।

তাহলে বুঝব তুই দিবি না।

বাবাঃ সব যে এ ঘরে ভিড় করেছো দেখছি। সুতপা আমরা এই ঘরে অনিকে নিয়ে খেতে বসবো।

অনিমেষদা, বিধানদা, ডাক্তারদাদা সোজা ঘরের ভেতর চলে এলো।

তোমাদের খাবার ওর খাবার আলাদা।

ও যা খাবে আমরাও তাই খাবো।

অনি নিচে বসে খাবে।

তাই খাব।

সূর্য্যি কোন দিকে উঠছে গো, তোমার নাকি হাঁটুতে ব্যাথা। বড়োমা বললো।

তা হোক দিদি। প্রয়োজনে রাতে নাও ফিরতে পারি।

সে ফিরো না।

এবার বিধানদা জোরে হেসে উঠলো।

খাটের দিকে তাকালাম, দেখলাম দুটোর কেউই নেই। তারমানে ওদের মায়েরা এ ঘর থেকে দুটোকেই নিয়ে গেছে।

ও তো লুচি খাবে।

বৌদি, অনিমেষদার দিকে তাকাল।

তাই খাবো।

আগে বলোনি কেন।

মহা মুস্কিল, জানলে তো বলবো।

বৌদি মিত্রার দিকে তাকাল, মিত্রা দেখতো, দামিনীদি একা পেরে উঠবে না।

আমরা করছি, তোমরা সবাই একসঙ্গে বসে পরো। মিত্রা বললো।

আচ্ছা বাইরে টেবিলটা সরিয়ে জায়গা করি। আগে যেমন বসা হতো। বৌদি বললো।

সেই ভালো আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ইসলামভাই বেরিয়ে গেল।

ইকবাল।

অনিমেষদা, ইকবালভাই-এর দিকে তাকাল।

কিছু বুঝলে।

একটু একটু।

তারমানে তোমার কাছেও খবরটা ঠিক ছিল না।

এখন তাই মনে হচ্ছে।

কি রকম টুক টুক করে পুকুরে ঢিল ছুঁড়ছিল দেখলে। আমি ওর কথা বলার ধরণ মন দিয়ে ফলো করছিলাম। পুরোটা বলছে না একটু একটু করে বুড়ি ছুঁয়ে যাচ্ছে।

আমার দিকে তাকিয়ে।

দময়ন্তী কে রে?

এবার বল। চুপ করে আছিস কেন? আমাকে তখন খুব বললি।

প্রবীরদা আমারদিকে তাকিয়ে হাঁকড়ে উঠলো।

তোমাকে বলেছে বুঝি, থাক পরে তোমার কাছ থেকে জেনে নেব।

আমি হাসছি।

ডাক্তারবাবু আপনি কিছু ধরতে পারছেন।

একটু আগে বারাসাত থেকে ফোন করেছিল। যারা স্ট্রাইক করবে বলছিল পর্শুদিন থেকে, তারা সবাই এসে স্যারেন্ডার করেছে। ওরা স্ট্রাইক উইথড্র করছে।  

কিরে ওখানে কখন খোঁচা দিলি।

চশমার ফাঁক দিয়ে অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।

বিশ্বাস করো আমি এসবের কিছুই জানি না। তোমরা আমাকে….।

এমনি এমনি স্ট্রাইক উইথড্র করলো। তাও আমাদের পার্টি নয়। আমি বলে দিয়েছি আর উইথড্র করে নিয়েছে।

হ্যাঁ বল….অনিকে দেবো….এতো রাতে!….হ্যাঁ কাল যাবে অনি….

বড়োমার কানে ফোনটা ধরা রয়েছে কথা বলে যাচ্ছে। ঘরে ঢুকলো।

ধর নিরঞ্জন কথা বলবে।

কি হয়েছে! অনিমেষদা বিষ্ময়ে বড়োমার দিকে তাকিয়ে।

কিছু হয় নি অনাদি গেছে।

অনাদি ওখানে গেছে!

এখান থেকে গেছে।

দাও। আমি বললাম।

ফোনটা হাতে নিলাম।

বলো।

তুই অনাদিকে কি বলেছিস?

কই কিছু বলিনি!

এখানে এসে আমার হাতে পায়ে ধরছে, ওকে বাঁচাতে হবে।

কি ভাবে বাঁচাবে?

তুই নাকি সব জানিস।

আর কে গেছিল?

ওর সঙ্গে আরও দুই মন্ত্রী এসেছিল।

ঠিক আছে তোমার শরীর খারাপ, এখন ঘুমিয়ে পরো। কাল সকালে গাড়ি পাঠাব।

কি হয়েছে বল না।

বললাম তো, তোমার সঙ্গে কাল কথা বলবো। নাও বড়োমার সঙ্গে কথা বলো।

ফোনটা বড়োমার হাতে দিলাম। বড়োমা ফিসফিস করে একটু কথা বলে কেটে দিল।

অনাদির কিছু মাল আমাদের দে। প্রবীরদা বললো।

কি দেবো?

তোর কাছে যা আছে।

তোমাদের দিয়ে লাভ নেই, তার চেয়ে বরং কাগজে লিখলে দুটো পয়সা আসবে। কি বলো দাদা।

দাদার দিকে তাকালাম।

কালকে দুটো ইনস্টলমেন্ট দিবি বলেছিস।

মরণ, খালি কাগজ কাগজ করে মোলো। বড়োমা খিঁচিয়ে উঠলো।

অনিমেষদা হাসছে।

দেখলে, দেখলে অনুপ কি ভাবে ট্র্যাকটা চেঞ্জ করে বেরিয়ে গেল। একটা চান্স দেবে। কাজ করে বেরিয়ে যাবে। তুই তো দারুণ স্ট্রাইকার!

কিগো সবাই লুচি খাবে বললে, অতগুলো খাবার যে পরে রইলো।

দামিনীমাসি গেটের কাছে দাঁড়িয়ে অভিযোগের সুরে বললো।

ঠিক আছে তোমরা একদিকে বসবে আমরা আর একদিকে বসবো।

প্রবীরদা কথাটা বলে, আমার দিকে তাকাল।

তাহলে তোর অসুবিধে নেই?

আমার কোনওটাতেই অসুবিধে নেই।

কি হয়েছে দিদি?  দামিনীমাসি বৌদির দিকে তাকিয়ে বললো।

খেতে বসে শুনতে পাবে।

বৌদি কথাটা  দামিনীমাসিকে বলেই আমার দিকে তাকাল।

তুই ভীষণ তেঁয়েটে।

যা বাবা, আমি কি করলাম!

চলুন দাদা সব গুছিয়ে দিয়েছি। ইসলামভাই গেটের মুখে।

ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ওপাশের সোফাতে রতনরা সব ঘেঁষা ঘেঁষি করে বসে আছে।

খাওয়া হয়ে গেছে?

অনেকদিন পর বেশ মজাকরে খাওয়া হলো বুঝলে অনিদা। রতন বললো।

কেন!

তুমি ছিলে না খাওয়াটা ঠিক আগের মতো জমতো না।

বুঝেছি।

রতন হাসছে।

কাল সকালে যাবার ব্যবস্থা করেছিস?

দাদাভাই সব ব্যবস্থা করেছে।

লম্বা করে আসন পাতা হয়েছে।

বড়দি, আজ তো মিত্রা নেই। তারমানে তুমি ছোটোদি, বৌদিও নেই।

প্রবীরদার কথায় বড়োমা গলা চড়িয়ে উঠলো, কেন?

না আমি সিস্টেমটা জানতে চাইলাম।

জেনে লাভ নেই, নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পরো।

আমি হাসছি। প্রবীরদার দিকে তাকালাম।

খুব সেন্সেটিভ জায়গায় হাত পড়ে গেছে।

তা বলতে। ইসলামভাই বললো।

আমি হাসছি।

সবাই বসলাম। আমার একপাশে ছোটোমা আর একপাশে বড়োমা। বড়োমার পাশে জ্যেঠিমনি, দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা, দামিনীমাসি। আর একপাশে ছোটোমার পাশে বৌদি, অনিমেষদা, বিধানদারা।

পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়েছে তনু, মিত্রা। মিলি, টিনা, ইসি রান্নাঘরে।

অনন্যরা ওপাশে চেয়ারে বসে আছে।

মিত্রা আমার পাতে গোটা পনেরো লুচি একসঙ্গে দিয়ে দিল।

ও ছোটো দেখ দেখ মেয়ের কান্ড। দূর এদের দ্বারা হয়। দামিনীকে ওইজন্য বললাম।

বড়োমা ঘ্যান ঘ্যান করে উঠলো।

দামিনীমাসি হাসছে মিত্রার দিকে তাকিয়ে।

ওকি এতো খেতে পারে।

আমরা আছি কি করতে।

বড়োমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে হেসেফেললো। আর কথা বলতে পারলো না।

সব কিছুই আজ আমার পাতে বেশি বেশি।

ছোটো। অনিমেষদা বলে উঠলো।

হ্যাঁ দাদা।

দামিনী সকলকে ধোঁকা দিল।

আমি আস্তে করে ছোটোমার দিকে হেলে পরলাম। ছোটোমাও হেলে পরলো।

ফিতে কাটা হলো।

কিরে ছোটো কি বলছেরে অনি। বৌদি খ্যারখ্যার করে উঠলো।

বলি।

ছোটোমা আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে।

তাহলে আর টিপস পাবে না।

খেতে খেতেই অনিমেষদা ডাকলো।

অনি।

বুঝেছি তোমার পেট ফুলে যাচ্ছে।

এমনভাবে কথাটা বলা হয়ে গেল, অনিমেষদা পর্যন্ত হেসে ফেললো।

শুধু আমার একার নয়, এখন যারা খেতে বসেছে সবার। সকাল থেকে লক্ষ্য করে যাচ্ছি, কিছু বলিনি।

কি জানতে চাও বলো?

রাঘবনের সঙ্গে তোর পরিচয় হলো কি করে?

তুমি ভদ্রলোককে চেনো?

কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রদপ্তরের সচিব, তাকে না চিনলে হবে কি করে।

তাহলে সব জেনে ফেলেছ।

তোর সঙ্গে আলাপের সূত্রটা জানতে চাইছি।

সব বলা যাবে না।

ঠিক আছে। সিপি, এসপি তোকে এতো তেল দিচ্ছে কেন?

কি করে বলবো, হয়তো কোনও গণ্ডগোল করেছে।

সেতো আমি বুঝতে পারছি। গণ্ডগোলটা কি?

যা হয় আর কি।

অনাদি কো-অপারিটিভ থেকে যে টাকা সরিয়েছে তার ভাগ কি ওরা পেয়েছে?

তাই! অনাদি কো-অপারিটভ থেকে টাকা সরিয়েছে?

কেন তুই জানিস না—

না—

অনাদি যে আমাদের পার্টি থেকে বেরিয়ে গিয়ে একটা নতুন পার্টি তৈরি করেছে সেটা তুই জানিস? তাতে আমাদের কয়েকজন ইলেকটেড এমএলএ ছিল। পরে অবশ্য তারা বাই ইলেকসনে আবার জিতেছে।

বুঝলাম অনিমেষদা ব্যাক গিয়ারে গিয়ে খেলা শুরু করেছে। আগে নিজের কলটা ওপেন করি, তাহলে অনি কল ওপেন করবে, তখন বুঝতে হবে ওর হাতে কি কি তাস আছে। মনে মনে ভবলাম, ফলস কল মারি। তারপর ভাবলাম না লো কল করি।

এই রকম একটা খবর কানে এসেছিল মনে হচ্ছে।

চিকনা বলেছে, না অন্যকেউ।

চিকনা একবার ঘ্যানর ঘ্যানর করছিল তখন ওকে বলেছিলাম, যাদের জিনিষ তাদের বুঝে নিতে দে, তোর এতো মাথা ব্যাথা কিসের।

তুই আর ওর মধ্যে মাথা গলাস না। অনিমেষদা বললো।

হ্যাঁ।

তুই নিরঞ্জনকে ফোন করে ওর বোনের জামাই-এর কথা জিজ্ঞাসা করলি কেন?

অনিমেষদার দিকে তাকালাম।

ওই ভদ্রলোক কেমন আছে কি বৃতান্ত, তোর জিজ্ঞাসা করার দরকার কি, তাও আবার ঠিক ওই সময় যখন ওনারা চারজনে এসেছেন।

বুঝলাম দরজায় কড়ানারা শুরু হয়ে গেছে। বড়োমা, ছোটোমা, বৌদি, দামিনীমাসি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ওপাশে ইকবালভাইরা সোজা হয়ে বসে আছে। আমি চুপ করে আছি।

ওই ব্যাপারটা তুই আমি ছাড়া কেউ জানে না, এমনকি আমার পার্টির অনেক নেতাই জানে না। উনিশ বছর আগের ঘটনা, হঠাৎ তোর ওই সময় মনে পড়ে গেল।

বুঝলাম এই সময় বে-ফাঁস কিছু কথা বলা যাবে না।

অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে হেসেফেললাম।

তুই যখন নিরঞ্জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিস, তখন আমি তোকে লক্ষ্য করেছি। এমনকি সচিবকেও। তারপরই ভদ্রলোক উত্তেজিত হয়ে পরলেন।

আমি অনিমেষদার মুখের দিকে তাকিয়ে।

অনাদি তোকে এমন কি বললো তুই এতো উত্তেজিত হয়ে পরলি। তোর স্কুলের বন্ধু, দুজনের এতো মধুর সম্পর্ক, তোর জন্য ও রাজনীতিতে আজ এই জায়গায়। আমিও তোর বন্ধু বলে যথেষ্ট সাহায্য করেছি।

আমি চুপ।

বুঝলে অনিমেষ বোবার শত্রু নেই। দাদা বলে উঠলো।

উনিশ বছর আগের ঘটনা, চোখের সামনে থেকে ফিকে হয়েগেছিল।

অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে।

দাঁড়ান দাঁড়ান।

প্রবীরদা চেঁচিয়ে উঠলো।

অনিমেষদা হাত দেখিয়ে থামতে বললো।

তাছাড়া এই সব অফিসারদের নিয়ে এখন আমি কাজ করি না।

লুচি মুখে দিল। খেতে খেতে বললো।

বার দুয়েক ভদ্রলোককে দেখেছি। তোর মতো মাথাটাকে রিকল করলাম বুঝলি, হ্যাঁ মিলে যাচ্ছে, দেখলাম সচিব ভদ্রলোকই সেই লোক। আমি কি ভুল বললাম?

মাথা নীচু করে আছি।

নিরঞ্জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তুই কি বার্তা ওর কাছে পৌঁছে দিলি। অনি বেঁচে আছে, না তোমায় আমি চিনতে পেরেছি?

আমি চুপচাপ মাথা নীচু করে বসে খেয়ে যাচ্ছি।

ছোটোমা কনুইয়ের গুঁতো মারল।

দাদা যা বলছে তার উত্তর দে, আঠারো বছর বোবা বানিয়ে রেখেছিলি সকলকে।

ছোটো ও উত্তর দেবে না, আমি জেনে নিচ্ছি মাত্র।

অনিমেষদা বেশ গম্ভীর।

সারাটা ঘর নিস্তব্ধ। সবাই চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।

মাঝরাতে এয়াপোর্টে নামলি। ট্যাক্সিওয়ালা এসবির লোক। তুই এতদিন কলকাতায় ছিলি না। বুঝলি কি করে?

আবার চুপ চাপ।

মিত্রা আমাকে একটু ধোঁকার ডালনা দে।

অনিমেষদা এমনভাবে কথাটা বললো, ইকবালভাই জোড়ে হেসে উঠলো।

হেসো না ইকবাল, ধোঁকা খাও আর চোখে সর্ষে ফুল দেখ।

মিত্রা রান্নাঘরে গেল।

হ্যাঁগো ইকবাল, সকাল থেকে শুধু ধোঁকাই খেয়ে যাচ্ছি। তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি, আর মনে মনে হিসেব মিলিয়ে চলেছি।

মিত্রা অনিমেষদার পাতে ধোঁকার ডালনা দিল।

ব্যাশ ব্যাশ আর না। চাইলাম বলে তুই একেবারে উজার করে দিলি।

মিত্রা এদিকে একটু নিয়ে আয়।

ডাক্তারদাদা, বিধানদা দুজনেই বললো।

দাদা ও কখন এই বাড়িতে ঢুকেছে?

অনিমেষদা দাদার দিকে তাকাল।

পাঁচটা সোয়া পাঁচটা।

আমিই তো সাড়েপাঁচটা নাগাদ এলাম।

ডাক্তারদাদা বললো।

অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

আজ কতগুলো কেশ পুটআপ করলি।

একটাও না।

শুধু ছেলেমেয়ে আর পিকুকে দিয়ে সই করালি। ওটাতো প্রবীরের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি।

প্রবীরদার দিকে তাকালাম।

হাসছে।

দময়ন্তীর কেশটা জিজ্ঞাসা করুন। অনুপদা বললো।

এইবার বড়োমা আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল।

মিত্রারা রান্নাঘরের কাছে দাঁড়িয়ে হাসছে।

ওটা আবার কে? দাদা বললো।

বুঝলে অনিমেষ মেন অপারেটর দময়ন্তী নয়। ওর পেছনে আরও তিনটে লাইন আছে। সিপি বললো না দময়ন্তী সব জানে না। দময়ন্তীকে শুধু জানাবার কাজে লাগান আছে। হয় তো দেখো ওটাও ওর টোপ।

এই তো বিধানবাবু আপনি ধরে ফেলেছেন। আমি সিওর দময়ন্তী ওকে নামে চেনে, ওকে এখনও চোখে দেখেনি।

সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাহলে এতো বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করতো না। তখন বললো না, যদি এটা হয় তাহলে বুঝবো আমার সিগন্যাল ঠিক কাজ করেনি।

অনিমেষদা আমার দিকে একবার তাকাল, আবার বিধানদার দিকে।

আপনি ভালো কথাটা গিট্টু দিয়ে রেখেছেন!

সিপি, এসপি খুব ফাঁসান ফেঁসে আছে বুঝলে। ওপরের চাপ, অনাদির চাপ, আবার অনির চাপ। অনাদিকে এই মুহূর্তে ওরা খুব বেশি গুরুত্ব দেবে না। তবে রাঘবন আর অনিকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে অনিকে।

এই রাতের সিটিং-এ সেটা বুঝতে পারলাম।

আগের কনভার্সেশনটা তুমি শোন নি?

শুনেছি।

ওখানেও দেখবে ও কথার মধ্যে দিয়ে ওদের বোঝাতে চেয়েছে, তোমাদের বায়োডাটা আমার কাছে ফাইল বন্দি হয়ে আছে। যথাসময়ে আমি ওপেন করবো।

একটুক্ষণ চুপ।

আচ্ছা অনিমেষ আর একটা কথা একটু ভাবো।

কি বলুন?

আমরা জানতাম নীতিন বাজোরিয় নামে অনাবাসী একজন ভারতীয় ওখানে স্টিল ফ্যাক্টারি তৈরি করতে আসছে।

হ্যাঁ।

তিনি অনেক টাকা ওখানে লগ্নি করবেন। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বিরোধী দল হিসাবে আমাদের সেই কথাই জানান হয়েছে এ্যাসেম্বলীতে।

হ্যাঁ।

এই ব্যবসায়ীকে নিয়ে আসছে অনাদি। তারমানে অনাদি মিডিয়েটর।

হ্যাঁ।

অনাদির সঙ্গে এই ব্যবসায়ীর যোগাযোগ কে করিয়ে দিয়েছে? সেই লোকটাকে খুঁজে বার করো। সেই ব্যক্তি হচ্ছে অনির টোপ। আর তিনি আমাদের কারুর পরিচিত নন।

ওরা কথা বলে যাচ্ছে নিজেদের মতো, আমি খেয়ে যাচ্ছি। নির্বাক শ্রোতা। মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকাচ্ছি। ওরা খুব মনোযোগ সহকারে আলোচনা শুনছে।  দামিনীমাসি একবার নীচু হয়ে খায়, আবার সোজা হয়ে বসে, আমার মুখ দেখার চেষ্টা করে।

মিঃ বাজোরিয়া যে নীল টোডি এটা সিপির কথায় পরিষ্কার হয়েগেছে। আর এই ব্যক্তির পেছনে অনি আঠারো বছর ধরে ঘুরছে, এটাও পরিষ্কার হয়েছে।

বাবাঃ এতো ঘোর প্যাঁচ। বড়োমা বলে উঠলো।

চুপ করে খাও তো, বোঝে না কিছু, শুধু বক বক। দাদা খিঁচিয়ে উঠলো।

মুখ ঝামটাচ্ছ কেন। তোমার ঘটে কিছু ঢুকছে।

আমি তোমার মতো ফুট কাটছি না, চুপ করে শুনছি।

লেগে গেছে বড়োমা আর দাদার সঙ্গে।

ছেলেমেয়ে দুজনেই হেসে গড়িয়ে পরে। দিদান, দুদুনকে এইভাবে ঝগড়া করতে ওরা মনে হয় জ্ঞানতঃ কখনও দেখেনি।

যত্তো সব অনাছিষ্টি। বলো দেখি বিধানবাবু, একটু মন দিয়ে শুনি।

বিধানদা, অনিমেষদা দুজনেই বড়োমার কথায় হাসে।

কি বলছিলাম অনিমেষ।

টোডি।

হ্যাঁ। এবার পেছনে ফিরে যাও, দেখ এই টোডি আবার সেই টোডি কিনা।

আমার ধরণা সেই টোডি।

তা যদি হবে, তা হলে রাঘবন ওকে ব্যাক করতে বাধ্য। কারণ সরকারের চোখে সে দেশদ্রোহী। সিপিটা বলে ফেলল, না হলে আমাদের ধরার ক্ষমতা ছিল না। অনিমেষদা বললো।

সিপিটা কেন বলে ফেললো?

অনির মন বোঝার চেষ্টা করলো। ওর পরের স্টেপ কি। ও তো বলে দিল আমি এখন উঠি।

জায়গাটা মনে হয় আর একটু সূক্ষ্ম।

আমার পেট ভরে গেছে, আমি আর খাব না। আমি বললাম।

সত্যি!

মিত্রা আমার দিকে তাকাল। হাসছে।

দ্বিতীয়বার বলতে হলো না সামনে এসে বসে পড়লো, পাতাটা নিজের দিকে টেনে নিল।

সুরো, ইসি, তনু, মিলি, টিনা পর্যন্ত বাদ গেল না।

তোরা খাসনি? বড়োমা ওদের দিকে তাকাল।

একবারও না বলেছি—

মিত্রা লুচিটা মুখে পুরে এমন ভাবে বললো। বড়োমা পর্যন্ত হেসে ফেলল।

ওতো মাত্র গোটা পাঁচেক খেল।

ওই-ই যথেষ্ট। বেশি খেলে মোটা হয়ে যাবে।

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।

অনিদা মিষ্টিটা পুরো খেও না। একটু রেখো। ওগুলো আমরা পাইনি।

সুরো খেতে খেতেই বললো।

তোরা তো….! বড়োমা আর বলতে পারলো না।

মেয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো, মা আমাকে একটা দাও।

দিদানকে বল। এখুনি আমাকে মুখ ঝামটানি দিচ্ছিল।

সুরো একটা লুচি আর আলুরদম-এর একটা আলু অনিসার হাতে দিল।

চলে যাস না, ইকবালভাই-এর কাজু বরফিতে এখনও হাত পরেনি।

আমার দিকে তাকিয়ে।

একটু ভেঙে মুখে ফেলে প্লেটটা এদিকে দাও।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/4QrKgbA
via BanglaChoti

Comments