কাজলদিঘী (৪৯ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

৪৯ নং কিস্তি
—————————

আমি সোফাতে গা এলিয়ে দিলাম। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করতেই দেখলাম ম্যাসেজ ফোল্ডারটা ব্লিঙ্ক করছে। বুঝলাম ম্যাসেজ বক্সে আর জায়গা নেই। সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু ম্যাসেজ ডিলিট করে দিলাম। ম্যাসেজ গুলো এবার খুললাম। আমার নতুন সখীরা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ম্যাসেজের ভাষায় ভালোবাসা যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে। বিশ্বস্ত সূত্রে ওরা জানতে পেরেছে, আমার মডেলিং সম্বন্ধে সম্যক কিছু পড়াশুন আছে। ওদের সাহায্য করতে হবে।

নিজে নিজেই হাসলাম।

দেবাকে একটা ফোন করলাম।

ধরেই দেড়ে মুশে আমাকে খিস্তি করলো।

শালা, সব সময় মোবাইলের স্যুইচ অফ।

তুই এখন কোথায়?

ট্রিঙ্কাসে বসে আছি।

কি করছিস?

আমি অদিতি ডিনার করছি।

এরই মধ্যে!

অদিতির শরীরটা খারাপ, তাই ভাবলাম তাড়াতাড়ি ডিনার করে বাড়ি ফিরে যাব।

কি হয়েছে অদিতির?

সকাল থেকেই বলছিল শরীরটা খারাপ।

কিরে বাধালি নাকি?

হবে হয়তো।

হাসলাম।

জিএএনডিউ।

কিরে তুইও কি আজকাল বানান করে দিচ্ছিস।

তোর কাছ থেকে শেখা বিদ্যে নষ্ট করতে পারি। তুই কোথায়?

আমরাও একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।

কোথায়?

তোদের থেকে কিছুটা দূরে।

কি অর্ডার দিলি?

পরোটা, আলুভাজা, ডিমের ওমলেট, নকুর দোকানের নলেন গুড়ের সন্দেশ।

শালা হারামী। বাড়িতে আছিস।

বিশ্বাস কর।

দাঁড়া আমি মিলিকে ফোন করছি।

কর। আচ্ছ শোন না।

বল।

কালকে তুই আর নির্মাল্য একবার দশটা নাগাদ আসিস।

কেনরে?

দরকার আছে।

ঠিক আছে।

ফোনটা স্যুইচ অফ করে পকেটে রাখলাম। রান্নাঘর থেকে মিলি বেরিয়ে এলো। নিশ্চই অদিতি ফোন করেছে।

তুই চলে গেলি কেন….কি করে জানবো অনিদা এই প্রোগ্রাম করবে…. রাগ করিসনা, প্লিজ, তোকে আর একদিন নিয়ে যাব….তুই অনিদার সঙ্গে কথা বল।

মিলি আমার হাতে ফোনটা দিল।

অদিতি খেপে গেছে, তুমি ওকে নিয়ে আসোনি।

বলো অদিতি।

এটা কি হলো?

কি করে জানবো, তোমার আজকেই শরীরটা খারাপ হবে।

তুমি আজকে গেলে কেন?

এটা একটা পয়েন্ট, সত্যিতো আজকেই বা গেলাম কেন? আগামীকাল যেতে পারতাম। কি জানি মন চাইলো, চলে গেলাম।

যাও তোমার সঙ্গে কথা বলবো না।

ঠিক আছে, কথা বলতে হবে না। তোমার শরীর কেমন আছে বলো।

ভালো।

কাজ কর্ম বুঝলে?

কিছুটা। কালকে আবার গিয়ে ফাইল ঘাঁটব।

সোমবার দিন তোমাদের সঙ্গে বসবো।

তার আগেই সব নোট ডাউন করে নেব।

আগামী সপ্তাহে আবার ওই পাড়ায় প্রোগ্রাম রেখেছি। তারপর থেক তোমরাই যাবে, আমি আর যাব না।

সত্যি!

খুব তাড়াতাড়ি কাজটা শুরু করে দেব।

তোমরা এখন অনিমেষদার বাড়ি।

হ্যাঁ।

ব্যাড লাক আমি যেতে পারলাম না।

তাতে কি হয়েছে, দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে নাকি। একদিন দেখবে এখানে আসতে আসতে বোড় হয়ে যাবে।

কোনওদিন হবো না।

নাও মিলির সঙ্গে কথা বলো।

মিলির হাতে ফোনটা দিলাম।

কিরে আমার পরোটা কোথায় গেল। আমি হলে এতক্ষণ বানিয়ে খেয়ে ফেলতাম।

থাম তুই, আর বক বক করিস না। বৌদি রান্না ঘর থেকে চেঁচালো।

ওকি এখানে এসেও রান্না করে? মিত্রা বললো।

করতো, তোর দাদার সঙ্গে আমি যখন পার্টি মিটিং-এ বাইরে যেতাম, তখন দু-ভাইবোনে রান্না করে খেত। তুই ওর হাতের রান্না খেয়েছিস?

খেয়েছি মানে, হাতটা সোঁকো, এখনও গন্ধ পাবে।

বৌদি হাসছে। নে সেঁকা হয়ে গেছে, এবার ঘি দে। কিরে টিনা, আলু ধোয়া হয়ে গেছে।

হ্যাঁ।

ওই ওভেনটায় বসিয়ে দে।

মা। ওই ঘর থেকে সুরো চেঁচিয়ে উঠলো।

এই একটা মেয়ে। মা মা করে জ্বালিয়ে মারল।

বৌদি রান্নাঘরের বাইরে এলো।

কি হয়েছে রে।

বাবার ফোন।

নিয়ে আয়।

মিলি আবার রান্নাঘরে ঢুকলো।

সুরো, নীপা দুজনেই ঘর থেক বেরিয়ে এলো। তুমি একা একা বসে আছো।

কি করবো। তুই তোর বন্ধু পেয়েছিস, জমিয়ে গল্প করছিস।

সুরো রান্নাঘরে গেল।

হ্যাঁ বলো।….আর বলতে, তোমার বৌমার সঙ্গে সাঙ্গ-পাঙ্গও নিয়ে এসেছে।….অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।….অসুবিধে হবে না চলে এসো।….আচ্ছা।

কে গো বৌদি? মিত্রার গলা।

তোর দাদা, তিনিও সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে আসছেন।

মিত্রা হাসছে।

এই মিলি আর একটু আটা মাখ। টিনা তুই বরং ভাজ আমি আলুটা কেটে দিই।

দেখো সকাল থেকে গোটা কতক লুচি আর কয়েকটা মিষ্টি ছাড়া আমার পেটে কিছু পরেনি। ওরা তবু খেয়েছে।

তুই খাস নি? মিত্রা চেঁচালো।

কোথায় খেলাম, দেখলি তো।

মিলি ওকে দুটো দিয়ে আয় আগে।

কি দিয়ে দেবো? আলু ভাজা হয়নি।

চিনি দিয়ে দে। বৌদি বললো।

যাঃ।

তুই দিয়ে আয় না, আমি বলছি। ওর ও সবের বালাই নেই। যা দিবি তাই খেয়ে নেবে।

সবাই হাসা হাসি করছে। কাজ করছে। ওই ছোট্ট রান্নাঘরে চারজন গাদা গাদি করে। বেশ লাগছিল। এরা কিন্তু এক এক জন এক এক দিকের বস। যা রোজগার করে বাড়িতে রান্না করার দরকার পরে না। কিন্তু আজ পরিবেশ পরিস্থিতি ওদের তৈরি করে দিচ্ছে। মিলির বাড়িতে গেছি। কখনও মনে হয়নি ও আলু কুচিয়ে ভেজে খাওয়াতে পারে। টিনাকে কাছ থেক দেখেছি ও চেষ্টা করলে পারে। তবে প্রায় দিনই ড্রাই ফুড খেয়ে শুয়ে পরে।

অদিতি, দেবাশিস ট্রিঙ্কাসে বসে আছে। প্রায় দিনই ওরা বাইরে ডিনার করে। জীবনটা এদের একটা স্রোতে বইছে। আবার আমার জীবনের স্রোত ভিন্নমুখী। সেখানে এদের নিয়ে আসা খুব টাফ। তবু চেষ্টা করবো। এদের কাজের ইচ্ছেটা আছে। সেটা হলেই ঠিক আছে।

মিলি দুটো পরোটা দিয়ে গেল। একটু আলুভাজা। মনে হয় আমার জন্য একমুঠো ভেজে দিল। পেটটা চোঁ চাঁ করছে। নিমেষে প্লেটটা খালি হয়ে গেল। টেবিলে রাখলাম। বেলটা বেজে উঠলো। আমি উঠলাম না। আবার বাজল, বার বার গোটা চারবার। সুরো ঘর থেকে উঠে এলো।

খুলতে পারছো না। আমাকে মুখ ঝামটানি দিল।

ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

তুমি এরই মধ্যে চলে এলে! ওমা তোমরাও এসেছো?

অনিমেষদা ভেতরে ঢুকল পেছন পেছন অনুপদা, রূপায়ণদা, বিধানদা।

অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। ওই দেখুন বিধানবাবু কেমন গুটি-সুঁটি মেরে বসে আছে। বিধানদা জুতো খুলতে খুলতে আমার দিকে তাকালেন।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

কিরে সব সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে এসেছিস শুনলাম।

সব রান্নাঘরে। পরটা ভাজা চলছে।

বৌদি একবার রান্নাঘর থেকে উঁকি মারল।

ভতরে আর বসতে হবে না। এখানে বসে পরো, খেয়ে কথা বলবে।

কিরে বৌমাকেও রান্নাঘরে পাঠিয়েছিস। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।

আমি পাঠাইনি, নিজে থেকে গেছে।

কখন এসেছিস?

আমাকে জিজ্ঞাসা করো না, বিধানদাকে জিজ্ঞাসা করো।

সবাই হেসে ফেললো।

তোরা তিনজন মিলে যা সময় নিচ্ছিস আমি এর থেকে কম সময়ে করে ফেলতাম।

ভাগ এখান থেকে শুধু ফুটানি। মিত্রা রান্নাঘর থেকে বললো।

সুরো। বৌদি রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।

ওকে ডাকছো কেন, বলো না কি করতে হবে। মিলি বললো।

তাহলে তুই যা, সুরোর ঘরের দেয়াল আলমাড়ি থেকে কাপ ডিস প্লেট বার করে আন।

কিগো মা। সুরো ঘরের বাইরে এসে বললো।

মিলিদিকে কাপ ডিসগুলো একটু বার করে দে।

কিরে তুই কার সঙ্গে বসে গল্প করছিস। অনিমেষদা বললো।

নীপার সঙ্গে।

নীপাও এসেছে?

হ্যাঁ।

ডাক ডাক ওকে।

সেই মেয়েটা! অনুপাদ বললো।

হ্যাঁ। এবছর হায়ার সেকেন্ডারীতে সিক্সটিনথ পজিসন পেয়েছে।

নীপা গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

ওদের ডিস্ট্রিক্টে ফার্স্ট। অনিমেষদা বললেন।

ওই গ্রামের স্কুল থেকে! বিধানদা বললেন।

অনি তো স্টার পেয়েছিল।

নীপা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।

দেখুন দেখি মেয়েটাকে। কেমন ছোটোখাটো।

নীপা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাঁসলো। চোখের ইশারায় বললাম সবাইকে একটা পেন্নাম ঠোকো।

নীপা সকলকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।

মিলি টিনা প্লেট নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরলো।

এই দেখুন বিধানবাবু সেদিন সকালে এই দুটোকে দেখেছিলেন?

দেখেছি, কিন্তু পরিচয় জানা হয়নি।

এই জন হচ্ছে মিলি ম্যাডাম। এয়ারটেলের ইস্টার্ন জোনের সিইও ছিলেন চাকরিটা অনির গ্রামের বাড়ি থেকে এসে রিজাইন দিয়ে অনির পেছনে ঘুরছে। আর ইনি হচ্ছেন টিনা ম্যাডাম সেম পজিসন কোম্পানী আলাদা ইনি রিলায়েন্সে ছিলেন।

ও কি রিজাইন দিয়েছে?

হ্যাঁ।

দুজনেই প্লেটটা রেখে, সবাইকে প্রণাম করলো।

আরও তিনটি আছে। সেগুলো মনে হয় আজ সটকে পরেছে।

না অদিতি এখুনি ফোন করেছিল। ও একটু অসুস্থ হয়ে পরেছে। তাই আসতে পারেনি। দেবাদা, নির্মাল্যকে অনিদা কাজ দিয়েছে। ওরা সেই কাজটা করছে। মিলি বললো।

কি বুঝছেন বিধানবাবু। নিন এবার খাওয়া শুরু করুণ।

আমি আবার খেতে আরম্ভ করে দিয়েছি।

মিত্রা।

কি বলছিস বল না। মিত্রা রান্নাঘর থেকে চেঁচালো।

তোদের আছে।

তোকে চিন্তা করতে বলেছি।

কিগো সুতপা। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।

দেখবে এসো আছে কিনা। ওই পাগলটার কথায় চেঁচাচ্ছ কেন।

আর চিনতা নেই, এবার নিশ্চিন্তে খাওয়া যেতে পারে বলো। আমি বললাম।

তোর আর লাগবে। বৌদি চেঁচাল।

না বাড়ি গিয়ে আবার খেতে হবে। ওখানে বড়োমা আছে।

ওরা সবাই প্লেট নিয়ে বাইরে চলে এলো। বৌদি এসে সোফায় আমার পাশে বসলো। ওরাও যে যার মতো বসেছে।

ময়দাটা কে মেখেছে বলো তো।

তোর জানার দরকার আছে। বৌদি মেখেছে। মিত্রা বললো।

তাহলে কিছু বলার নেই।

বল, হোটেলে কাজ করেছি, ময়দা কি ভাবে ঠাসতে হয় জানি। মিত্রা বলে উঠলো।

সবাই হেসে ফেললো।

কিরে অনি তোকে এইভাবে আওয়াজ দিলো, তুই কিনা….। অনুপদা বললো।

ছাড়ো, মালকিন বলে কথা, দুবেলা দুমুঠো অন্নের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

দেখছো বৌদি দেখছো। মিত্রা চেঁচাল।

মিষ্টিগুলো বার কর।

একিরে, খেতে দে। বৌদি বললো।

দেখছো না আমার শেষ।

তুই তো রাহুর খিদে নিয়ে ঢুকেছিস। তোর অনিমেষদাকে বলেছিস, কেন এসেছিস।

মিষ্টিটা খাওয়াও, মিষ্টি মুখ না করালে বলি কি করে।

অনিমেষদা হাসছে। কি করতে এসেছে?

আমায় ফোন করে বললো। বিয়ে করবো তোমায় বৌ দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি।

বিধানদা জোরে হেসে উঠলো।

হাসলেন যে। অনিমেষদা বললো।

তারমানে ও এখনও বিয়ে করেনি।

না। শুধু লিভ টু গেদার করেছে।

মিত্রা খিক খিক করে হাসছে।

আমি উঠি বুঝলে, মিষ্টি আর আমার কপালে নেই।

বোস বোস আর লজ্জা পেতে হবে না।

বৌদি আমার হাতটা ধরে টেনে বসিয়ে দিল।

মিলি, টিনা মুচকি মুচকি হাসছে।

মিলি, মিষ্টির প্লেট গুলো নিয়ে আয়। বৌদি বললো।

দাঁড়াও না বেশ তো হচ্ছে। চলুক না কিছুক্ষণ। মিলি বললো।

দ্যাখ দ্যাখ। বৌদি হাসতে হাসতে বললো।

দেখে কি করবো, হাতি যখন কাদায় পরে চামচিকিতে লাথি মারে।

দাও দাও ওকে মিষ্টিটা দাও। মিষ্টিটা খেয়ে ওই ঘরে গিয়ে বোস, কথা আছে। অনিমেষদা বললো।

আবার কিসের কথা, সোমবারের আগে কোনও কথা হবে না। আমি বললাম।

বিধানদা হাসছে।

মিষ্টি এলো, মিষ্টি খাওয়া শেষ হতেই আমি প্লেটটা রান্না ঘরে রেখে দাদার ঘরে গিয়ে বসলাম। একে একে ওরা সবাই এলো।

মিষ্টিটা নকুর দোকান থেকে নিয়ে এসেছিস? অনিমেষদা বললো।

হ্যাঁ।

তোর চয়েস আছে। দামিনীর ওখানে গেছিলি কেন?

নেমন্তন্ন করতে।

রথ দেখা, কলাবেচা দুইই করলি।

না, শুধু রথ দেখেছি। কলা বেচিনি।

সবাই হাসছে।

কি উত্তর দেখেছেন অনিমেষদা। অনুপদা বললো।

তুই এতো কথা শিখলি কি করে বল।

সে অনেক কথা।

সুরো, মা এ্যাসট্রেটা একটু দিয়ে যা না।

অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকাল।

তারপর বল ওখানে কাজটা কবে শুরু করছিস?

ঘর পাচ্ছি না। ডাক্তারদাদা বলেছে, মিনিমাম দোতলা একটা বাড়ি দরকার।

অনুপ একটু খোঁজ খবর নাও। যদি পাওয়া যায়।

আজই কথা বলে নিচ্ছি।

ওদিককার কি ব্যবস্থা করলি?

কোনটা বলো!

বাই ইলেকসন।

আমি অনিমেষদার দিকে তাকালাম। আমার চোখের ভাষা অনিমেষদা বুঝতে পারল।

তুই এঁদের সামনে বলতে পারিস। কোনও অসুবিধে নেই।

তুমি কথা বলোনি?

সময় পেলাম কোথায়। তবে মাঝে আমাকে একবার বলেছে, দাদা আপনি যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি মাথা পেতে তা গ্রহণ করেছি।

কাজের লোক। এটুকু বলতে পারি। ওর আসল পরিচয় তুমি পেয়েছো।

প্রথমে যখন অমিতাভদা বললেন, আমি সত্যি বিশ্বাস করতে পারিনি!

আমি অনিমেষদার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।

তারপর ছোটো যখন নিজে মুখে বললো, বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম। কি জীবন না।

বিধানদারা জানেন।

কিছু কিছু। বিধানদা বললেন।

ওই জন্য ওর নামে বিশেষ কিছু এলিগেশন পাই না।

মাস খানেক যাক, যেটুকু আছে সেটুকুও আর পাবে না।

দামিনীর সঙ্গে একবার বসতে হবে। ওই তল্লাটের সংগঠনটা ওকে দিয়ে যদি করাই, তোর কি মনে হয়?

শুক্রবার একবার সময় করে দাদার বাড়িতে এসো।

রূপায়নদের বললি না।

ওনাদের আমি বলতে পারি না, সে জোর আমার নেই।

কেন নেই অনি। রূপায়ণদা বললেন।

আমি আপনাদের একদিন দেখেছি। অনিমেষদা আমাকে দীর্ঘদিন দেখছে।

ওই একদিনেই তোকে সম্পূর্ণ দেখে ফেলেছি।

শুক্রবার কখন যাব বল। অনিমেষদা বললো।

রাতে রেষ্ট্রি করবো। তার একটু আগে যেও।

রেষ্ট্রি কেন?

বলতে পারো বাধ্য হচ্ছি রেষ্ট্রি করতে, না হলে অনেক সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

এই কথাটা তোকে বলবো ভেবেছিলাম। ওদের কি ডিভোর্স হয়ে গেছে।

হ্যাঁ। ছ-মাস আগে। তখন থেকেই তো গণ্ডগোল শুরু।

পর্দা সরিয়ে বৌদি ঢুকলো, তোমরা কি শুরু করেছো বলো। কাল অতো রাত পর্যন্ত ছেলেটাকে পিষে মারলে। একটু ঘুরতে এসেছে। তা নয়, আবার শুরু করেছ।

জানোনা বৌদি ওর নামে আজকে যা রিপোর্ট জমা পড়েছে। কামিং ইলেকসনে ওকে পার্টির ভীষণ দরকার। অনুপদা বললো।

সেই জন্য এখন থেকে শুরু করে দিয়েছ।

জিজ্ঞাসা করো ওকে কি জিজ্ঞাসা করছি। তোর বৌদিকে বলেছিস। অনিমেষদা বললো।

মিত্রাকে বলেছি বলতে, আমি তোমাকে বলবো ও বৌদিকে বলবে। তুমি আমার পার্টে বৌদি ওর পার্টে।

দেখছো, শুনছো ওর কথা।

মিত্রা বলেছে আমাকে। এবার ওকে ছাড়ো, আমরা একটু কথা বলি।

যাও যাচ্ছে।

তুই কি স্পটে গেছিলি।

না অনাদিকে যেতে বলেছি। ও আগে ভালোকরে দেখে আসুক। আমি বুধবার ওখানে যাব। ইসলামভাই, অনাদির সঙ্গে যাবে বলেছে।

করিতকর্মা ছেলে তোর অনাদি।

সেই জন্য তোমাদের লোকাল কমিটি ওকে ভালোকরে বাঁশ দিচ্ছে।

আর দেবে না। তোকে কথা দিচ্ছি।

ব্যাঙ্কটা উদ্বোধনের সময় তোমাদের একবার যেতে হবে।

কবে করবি ?

মাস তিনেক বাকি আছে। দিন পনেরোর মধ্যে কাজ শুরু করে দেব। এখন মাঠে ব্যান রোয়া শুরু হয়ে গেছে। চাষীদের হাতে টাকা তুলে দিতে হবে।

কি বুঝছেন বিধানবাবু।

শুনছি ওর কথা।

কি রকম দিচ্ছিস?

হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার লোন। হাজার টাকা নিলে প্রতিদিন দশটাকা করে শোধ করতে হবে। ছয়মাস দিতে হবে। দশটাকার আট টাকা ব্যাঙ্ক নেবে দুটাকা তার এ্যাকাউন্টে জমা পড়বে। যে পুরো দিতে পারবে এ্যাকাউন্টের টাকা তার। তা না হলে ওখান থেকে ব্যাঙ্ক তার টাকা নিয়ে বাকিটা তাকে ফেরত দিয়ে দেবে। এই রেশিয়োতে কাজ হবে।

এই প্ল্যানিংটা কার?

আমার। ডাক্তারদাদা রেক্টিফাই করে দিয়েছে।

গ্র্যাজুয়েশনে তোর ইকনমিক্স ছিল না।

হায়ার সেকেন্ডারীতে ছিল। মাইক্রো এবং ম্যাক্রো ফাইনান্স এই দুটোর ওপর হিমাংশুকে জোর দিতে বলেছি।

তোকে এবার সিএম বানাতে হবে। বিধানদা হাসতে হাসতে বললো।

আমি এবার উঠবো।

তোকে তো আসল কথাটাই বলা হলো না।

বলো।

তোকে সেদিন টাকার কথা বললাম।

চেক হলে কালকে দিতে পারবো। ক্যাশ হলে সোমবার নিতে হবে।

কি বিধানবাবু চেক হলে অসুবিধা আছে।

ওর অসুবিধা না থাকলেই হবে।

আমি কালকে হিমাংশুর সাথে একটু কথা বলে নিই। তোমাকে ফোনে জানাব।

কতো দিবি।

একের বেশি এখন দিতে পারবো না।

একটু বাড়া।

ঠিক আছে দেড় করে দিচ্ছি।

তাই দে। আমাদেরও চলতে হবে।

ওদিককার থেকে যে টাকা আসতো সেটা কি হবে?

সেটা বন্ধ হয়ে গেল।

কি করে বুঝলে, খোঁজ নাও। টাকাটা যে অন্য জায়গায় যাচ্ছে না তার কি মানে আছে?

কিরে অনুপ!

অনিমেষদা, অনুপদার দিকে তাকাল।

রূপায়ণ তুই কালকে একবার খোঁজ নে। বিধানদা বললো।

ঠিক আছে নেব।

উঠি, শুক্রবার তুমি কিন্তু যাবে সবাইকে নিয়ে। যদিও দাদা তোমাদের ফোন করবে।

আচ্ছা যা।

আমি সুরোর ঘরে এলাম। দেখলাম সবাই গোল টেবিল বৈঠক করছে। আমাকে দেখেই বৌদি হাসলো।

তোকে গেঞ্জিটা কে কিনে দিয়েছে?

বলতে পারবো না। সকলাবেলা বাথরুম থেকে বেরতে ছোটোমা বললো, এটা পরে নে, পরে ফেললাম।

মিত্রা হাসছে।

তুই আর কিচ্ছু বলিস নি!

জিজ্ঞাসা করো ছোটোমাকে। তারপর খানদশেক লুচি বাটি-চড়চড়ি দিয়ে সাঁটালাম। বললো মিত্রা বানিয়েছে। তারপর বেরিয়ে পড়লাম।

কোথায় গেলি? বৌদি বললো।

সেটা বলা যাবে না।

কাকে খুঁচিয়ে এলি।

ওই যে বললাম, বলা যাবে না।

তুই মিত্রাকে কি দিবি?

আমি জিনিষপত্র কিনতে পারি না।

সব পারিশ, ওটা পারিশ না?

তাহলে তোমায় একটা গল্প বলতে হয়।

তোর কি গল্প ছাড়া জীবনে কিছু নেই?

এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা, এখন তোমাদের বলছি বলে গল্প।

বল শুনি।

তুমি কিছু মনে করবে না?

কেন বল!

এই ধরণের কথা তোমার সামনে আগে কোনও দিন বলিনি।

আজ বল, শুনবো।

আমি ভজু তখন হোটেলে কাজ করি। প্রথম মাইনে পেয়েছি দু-জনে।

ভজুরও গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া নেই, আমারও নেই।

ওরা হাসতে শুরু করলো।

কৃষ্ণদার হোটেল থেকে বেরিয়ে ভজুকে বললাম, চল ভজু অন্ততঃ একটা করে জাঙ্গিয়া কিনে নিয়ে যাই। পরের সপ্তাহে টাকা পেলে গেঞ্জি কিনবো।

তখন তুই কি পরতিস। বৌদি বললো।

মার্কিন কাপরের কৌপিন।

ছোটোমা সেদিন ওর ঘর থেকে একটা খুঁজে বার করেছে। মিত্রা হাসতে হাসতে বললো।

ওই পাড়ায়, আমাদেরই পরিচিত দোকান। মুখ চেনা, গেলাম। গিয়ে মনের কথা বললাম। সাইজ বলতে বললো। আমি ভজুর মুখের দিকে তাকাই ভজু আমার মুখের দিকে তাকায়। বলতে পারলাম না। ভদ্রলোক মুচকি মুচকি হেসে বললো, যা বুঝেছি প্যাকেট করে দিচ্ছি, নিয়ে যা।

নাচতে নাচতে দুজনে চলে এলাম। স্নানটান সেরে নতুন জাঙ্গিয়া পরলাম একেবারে ঠিক ঠাক। কি সুন্দর দেখতে। সামনে আবার ফুল আঁকা। পরে দেখি হিসি করার জায়গা নেই।

সবাই হেসে যে যার ঘারে লুটিয়ে পরে।

মহাবিপদ, কি হবে। ভাবলাম হয়তো জায়গা করতে ভুলে গেছে। নতুন স্টাইল।

ভজুরাম মহাখুশি। আমার বেজায় অস্বস্তি হচ্ছিলো, দুর খুলে রেখে ভজুকে দিয়ে দিলাম।

আমি আবার আমার কৌপিনে ফিরে গেলাম। লাল মার্কিন শালুর কৌপিন।

এর দুচারদিন পর কোথায় গেছিলাম, রাতে ফিরে এসেছি। দেখি ভজু আমার ঘরে বসে কাঁদছে। কি ব্যাপার! শুনলাম মাসি বেধড়ক পিটেছে। মাসির কাছে গেলাম। মাসি ভজুকে মারার কারন বললো। শুনে বললাম ও চুরি করেনি, আমি কিনে এনেছি। বিস্তারিত ভাবে মাসিকে বললাম। আমার কথা শুনে মাসি হেসে লুটো পুটি খায়।

সেদিন প্রথম কোনটা মিত্রাদের আর কোনটা আমাদের চিনলাম। তবে আমি কৌপিন পরা ছারিনি। জাঙ্গিয়াও পরতাম না বড় একটা। বড়োমার কাছে যখন এলাম। একদিন মনে হয় ছোটোমা ঘরে ঢুকে দেখেছিল।

আমাকে চারটে গেঞ্জি আর জাঙ্গিয়া কিনে দিয়েছিল। তারপর থেকে ছোটোমা, বড়োমা কেনে।

তুমি মাঝে মাঝে কিনে দাও। আমার চলে যায়। বেশির ভাগ সময় তো পরিই না। আমি নিজে থেকে কোনওদিন কিনিনি।

ওরা হেসে এ ওর গায়ে ঢলে পরে। অনিমেষদা পাশের ঘর থেকে একবার উঁকি মেরে চলে গেল।

তোকে দেখে এরকম ছাগল মনে হয় না।

মাঝে মাঝে কেন জানিনা ছাগল হয়ে যাই।

মিলি, সুরো, নীপা হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।

ওঝা সেজেছিলি কবে।

নিশ্চই তোমাকে সুরো বলেছে।

তোর দাদাও শুনেছে।

খেয়েছে। তোমরা আমার আর কিছুই বাদ রাখলে না।

অনিদা, মিলিদির ব্যাপারটা বলো। সুরো বললো।

এই-ই। মিলি চিল্লিয়ে উঠলো।

তোকে নিশ্চই নীপা লাগিয়েছে।

সেটা আবার কি! বৌদি বললো।

তুমি বহুত ঝামেলা করো। মিত্রা চল বেশিক্ষণ থাকলে সব গণ্ডগোল হয়ে যাবে।

আমিও তোর রসের ব্যাপারটা বলেছি বৌদিকে।

নিজেরটা বলিস নি?

মিত্রা মাথা দোলাচ্ছে। বলে নি।

দেখ তুই কিরকম স্বার্থপর। নিজেরটা চেপে রেখে আমারটা বলেছিস।

তাহলে আমার, নীপা, টিনা, মিলি, অদিতি, দেবা, নির্মাল্য সবারটা বলতে হয়।

বলবি। পাটি পেরে শানাতে বসেছিস বৌদিকে।

কিরে মিলি, অনি কি বলে! বৌদি বললো।

তুমি অনিদার কথা বিশ্বাস কোরো না। শুধু গুল মারে। মিলি বললো।

এবার গুল। আমার গুলো ঠিক। আমি বললাম।

অনিমেষদা আবার দরজার কাছে। তোমরা কি শুরু করেছ বলো।

রাতে তোমাকে বলবো। সব তোমার অনিবাবুর কীর্তি।

অনিমেষদা কিছু বলতে গিয়ে হাঁ করে ফেললো।

বৌদি হাসছে।

ওঠ, অনেক রাত হলো। আমি বললাম।

আমি বড়োমাকে ফোন করে দিয়েছি। বৌদিও বড়োমার সঙ্গে কথা বলেছে।

তোর এতো তাড়া কিসের? বৌদি বললো।

আর একটু চা খাওয়াও।

সুরো যা, তোর অনিদার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আয়। ও ঘরে বাবাকে জিজ্ঞাসা করিস একবার। ওরা খাবে কি না?

অনিদা যেন এর মধ্যে কোনও গল্প না বলে।

ঠিক আছে বলবে না। তুই এলে আবার বলবে।

সুরো নীপা বেরিয়ে গেল।

আমরা সবাই বৌদির সঙ্গে গল্প করলাম।

বৌদি একবার আমার বাড়িতে যেতে চাইল।

বললাম নিয়ে যাব।

চা খাওয়া হলো। আমরা সবাই অনিমেষদাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। আসার সময় মিলি নিজেই বললো, আমি গাড়ি ড্রাইভ করবো মিত্রাদি। মিত্রা না করেনি। আমি মিত্রা টিনা পেছনে বসলাম। ওরা দুজনে সামনে। বাড়িতে যখন ঢুকলাম তখন পৌনে দশটা বাজে।

মিত্রা বাড়িতে ঢুকেই বড়োমা বলে চেঁচিয়ে উঠলো।

নাও সব এলেন রাজ্য জয় করে।

ছোটোমা ঘর থেকে বলতে বলতে বেরিয়ে এলো।

পেছন পেছন ভজুরাম দৌড়ে এলো।

মিত্রা, ভজুকে দেখে হেসে ফেললো।

কিরে ভজুকে দেখে পাগলির মতো হাসছিস কেন!

তোমায় বলবো ছোটোমা, আজ বুবুনের আর একটা উদ্ধার করেছি।

আমি মিত্রার দিকে কট কট করে তাকালাম। পেছনের ডিগ্গিটা খুললাম। ভজু মিষ্টির হাঁড়ি সন্দেশের প্যাকেট বার করলো।

অনিদা ওখান থেকে কিনেছ?

হ্যাঁ।

আচ্ছা তোমার কি আর দোকান চেনা নেই।

আমি ভজুর মাথার চুলটা নেড়ে দিলাম।

সবাই ভেতরে এলাম। দেখলাম ডাক্তারদাদা বসে আছে।

কখন এলে?

অনেকক্ষণ। মিত্রা।

বলো।

মিষ্টি বার করে সবাইকে দে।

কেন, কাল সকালে খেলে হতো না। বড়োমা খেঁকিয়ে উঠলো।

গরম গরম খাওয়ার মজাটাই আলাদা বুঝলে বান্ধবী।

মিত্রা যা বার করে বড়োমা, ছোটোমা, ডাক্তারদাদাকে দে। আমি বললাম।

দেখলে, এটাই হচ্ছে বড়ো মনের পরিচয়। আমি চাইলাম তোমাদের নামটাও জুড়ে দিল।

টিনা, মিত্রা, মিলি রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

থাক অনেক হয়েছে। বড়োমা কপট হাসি হেসে বললো।

আমি বড়োমাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। দেখলে, আজ কথা রাখলাম কিনা।

রাত দশটা, মাথায় রাখিস। কাল সারাদিন বাড়িতে থাকব না। সবাই বেরবো। বাড়ি পাহাড়া দিবি।

কেন?

সে জেনে তোর লাভ। তুই সব বলিস।

ছোটোমা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। বুঝতে পারছে এরপর আমার পালা।

কারুর দরকার নেই, ভজুরাম থাকলেই হলো।

ভজুও যাবে।

ঠিক আছে।

আমি ছোটোমার গলা জড়িয়ে ধরে সোফায় এসে বসলাম। বাইরের গেটে হর্ন বাজলো।

ওই আর এক দল ঢুকছেন। ছোটোমা বললো।

আমি ছোটোমার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

একবারে তাকাবি না চোখ গেলে দেব। ছোটোমা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

ছোটোমা ওঘরের চাবি কোথায়? মিলি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে বললো।

বড়দির ঘরের ড্রেসিন টেবিলে আছে।

কথা বলতে বলতে ছোটোমা উঠে রান্নাঘরের দিকে গেল।

আমি মিলির দিকে এক ঝলক তাকালাম। মিলিকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে না এই কদিন আগেও এই বাড়ির সঙ্গে ওর কোনও যোগাযোগ ছিল না।

দাদা ঘরে এসে ঢুকল। আমাকে সোফায় বসে থাকতে দেখে হেসে ফেললো।

কিরে মল্লিক, আজ কোন দিকে সূর্য উঠেছে।

মল্লিকদা হাসছে।

পূর্ব দিকে। একটু বসো টের পাবে। ডাক্তারদাদা বললো।

তুমি জানলে কি করে?

ছোটোমা জলের গ্লাস এনে দাদা, মল্লিকদার হাতে দিল। আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো।

আচ্ছা এডিটর তুমি কি এই বাড়ির গার্জেন? ডাক্তারদাদা বললো।

কেন সন্দেহ আছে। দাদা জল খেতে খেতে বললো।

কোনও খোঁজ খবর রাখো এই বাড়ির সম্বন্ধে।

কেন রাখবো না?

বলো এই বাড়ি রং হচ্ছে কেন?

ওটা বলতে পারবো না। অনি জানে।

দেখো প্রথম বলেই তুমি বোল্ড আউট।

কেন কেন শুনি।

অনিবাবু শুক্রবার বিয়ে করছেন, রবিবার বৌ ভাত।

সে তো কবে হয়ে গেছে, আবার অন্য কাউকে বিয়ে করছে নাকি?

মরণ, দেখো দিকি কাণ্ড, ন্যাকা কোথাকার। বড়োমা রান্নাঘর থেকে বলে উঠলো।

মিত্রা মিষ্টির প্লেট নিয়ে এসে টেবিলের ওপর রাখল।

কিরে মা ডাক্তার কি বলে। দাদা মিত্রার দিকে তাকাল।

বুবুন জানে।

কিগো তুমি কিছু জানো। দাদা রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে বললো।

বড়োমা ধীরে ধীরে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

দাদা মিষ্টি মুখে তুলে নিয়েছে।

আমি একবার বড়োমার দিকে তাকালাম।

রাতেই মিষ্টি গুলো সব শেষ করে দাও বুঝলে, কাল পর্যন্ত আর থাকবে না।

হ্যাঁরে, মিষ্টিগুলো কোন দোকান থেকে নিয়ে এলি। দাদা আমার দিকে তাকিয়ে।

কেন খারাপ?

এর টেস্টটাই আলাদা বুঝলি অনি। ডাক্তারদাদা বললো।

আমি মুচকি মুচকি হাসছি।

খেলে আর অন্য মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে না।

এতো খাও তবু খাই খাই গেল না। বড়োমা বললো।

মিত্রা বড়োমার কাছে এসে বললো হাঁ করো হাঁ করো।

কেন রে।

বড়োমা হাঁ করলো। মিত্রা নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ বড়োমার মুখে পুরে দিল। পর পর সবাইকে দিল। দাদা, ডাক্তারদাদা আর মল্লিকদার প্লেটে দিল। আমার দিকে তাকিয়ে বললো তুই আমার আঙুলটা চুষবি।

আমি কট কট করে ওর দিকে তাকালাম। উঠে দাঁড়ালাম। হাতের প্লেটটা রান্নাঘরে রেখে বেসিনে হাতটা ধুলাম। দরজা দিয়ে বেরতে যাব, দাদা ডেকে উঠলো।

কিরে, কোথায় যাচ্ছিস?

ওপরে।

বললি না কার সঙ্গে তোর বিয়ে।

ঘর শুদ্ধু সবাই হাসছে।

আমি আর দাঁড়ালাম না, সোজা ওপরে চলে এলাম। ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিলাম। জামাপ্যান্ট খুলে বাথরুমে ঢুকলাম। বুঝলাম কাল এরা সব মার্কেটিংয়ে বেরবে। দাদা আমার সঙ্গে এরকম ভাবে কথা বলতে পারে, আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। ভাল করে মুখ হাত-পা ধুলাম। টাওয়েল দিয়ে গা মুছলাম। বাথরুম থেকে বেরলাম।

বাথরুম থেকে বেরতেই দেখলাম, মিত্রা অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে, লক্ষ করলাম ঘরের দরজায় ছিটকিনি দেওয়া।

কিরে এ কি অবস্থা তোর!

তুই বাথরুম থেকে বেরবি, আর আমি জাপ্টে ধরবো।

সবে মাত্র গা ধুয়ে এলাম। এখন বাথরুমে ঢোক। চট পট সেরে নে।

মিত্রা চোখে দুষ্টুমি হাসি হেসে আমার কাছে এগিয়ে এলো।

ঝামেলা করবি না। আমি টাওয়েলটা চেপে ধরলাম।

টাওয়েল চেপে ধরে রক্ষা পাবি। বিয়ে করবি, বিয়ে। শখ হয়েছে।

করবো না। আমার কিছু হবে না। আমি যাকে চাইব, তাকেই পাব।

তোকে পাওয়াব।

কথা বলতে বলতে মিত্রা এগিয়ে এসে আমার টাওয়েল চেপে ধরলো।

টাওয়েল ছাড়।

মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরলো।

নিচে ওরা আছে কেউ চলে এলে গণ্ডগোল হয়ে যাবে।

কেউ আসবে না। সবাই ব্যস্ত।

লোভও হচ্ছে আবার ভাবছি, এখুনি যদি ছোটোমা এসে দরজা ধাক্কা দেয়। জায়গা করা হয়ে গেছে, কি করছিস তোরা।

তোর পেটটা শক্ত শক্ত লাগছে কেন রে।

এখনও হয়নি।

খেয়েছে। ছোটোমাকে বলেছিস।

বলিনি, তবে একটা হিন্টস দিয়েছি।

তুই কি সত্যি বাধিয়েছিস।

কি করে বলবো। এমাসে না হলে টেস্ট করাব।

ওরে আমি মুখ দেখাতে পারবো না।

হয়ে যাওয়া ভালো বুঝেছিস।

মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি। ও আমাকে জাপ্টে ধরে আছে।

তুই তো একেবারে তৈরি।

গাড়িতে তোর পাশে যখন বসেছিলাম তখন থেকে।

তাই ওইভাবে খোঁচাচ্ছিলি।

তুই তো গবেট গবিন্দ। খালি এনকাউন্টারটা ভাল করে করতে পারিস।

তোর ওখানে।

করনা দেখি, কেমন পারিস।

দেখ আমি কিন্তু আগের থেকে পাকা খেলোয়াড়।

ছাই।

তোকে কতোদিন টাচ করিনি বলতো।

মিত্রা চোখ দিয়ে হাসছে। ছোটোমা চলে এলে পুরো কেলো।

হাসলাম।

কিছুক্ষণ দু-জনে দু-জনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মিত্রার চোখে পরিতৃপ্তির ছাপ।

দারুন লাগল বুঝেছিস।

নিচটা একবার তাকা।

কেন।

কাজ বারিয়েছিস।

মিত্রা হেসে ফেললো।

আমি মুছে দেব।

এবার ছাড়।

বল এখুনি ছোটোমা চলে আসবে।

হাসলাম।

দুজনের ছন্দে ফিরে আসতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো। জামাকাপর পরে নিচে নেমে এলাম। খাওয়ার জায়গা হয়ে গেছে। সবাই গোল হয়ে বসে কথা বলছে।

ছোটোমা একবার আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

এতক্ষণ কি শলা পরামর্শ হচ্ছিলো শুনি।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

আমি গম্ভীর। সোজা টেবিলে এসে বসে পরলাম।

আজ ছজনের সিটে তিনটে চেয়ার নতুন সংযোজন হয়েছে দেখলাম। একপাশে চারটে অপরপাশে তিনটে দুপাশে দুটো। আমি যে দিকে তিনটে চেয়ার পাতা হয়েছে সেদিকে গিয়ে বসলাম। দাদারা সোফায় বসে আছে।

নীপা জলের গ্লাস নিয়ে এসে টেবিলে রাখলো। ওর দিকে তাকালাম। মুখ টিপে হাসল। বুঝলাম দুজনের এ্যাবসেন্সে নিচে খুব জোর আলোচনা হয়েছে। নীপা বড়োমার ঘরে গিয়ে ঢুকল।

ছোটোমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

কিরে তুই ওখানে বসলি কেন?

তাহলে কোথায় বসবো!

এদিকে বোস।

কেন?

যা বলছি কর।

চুপচাপ উঠে এই দিকে চলে এলাম। একবারে ধারে বসলাম।

ছোটোমা টেবিলে প্লেট রেখে রান্নাঘরের দিকে গেল। একবার নীপা বলে চেঁচিয়ে উঠল।

নীপা বড়োমার ঘর থেকেই চেঁচাল।

যাই ছোটোমা।

মিলি, টিনা ডাক্তারদাদার কথা খুব মন দিয়ে শুনছে। বড়োমা রান্নাঘরের মুখে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।

এখুনি খাওয়ার জন্য তর সইছিল না এখনও বসে বসে গুলতানি চলছে। ডাক্তারদাদা, মিলি, টিনা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।

মিত্রা রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বড়োমার সঙ্গে ফিস ফিস করে কথা বলছে। সবাই এসে খাবার টেবিলে বসলো। আমি ধারের চেয়ারে। নীপা, ভজু দুজনে খাবার দিচ্ছে। বুঝলাম ওদের খাওয়া হয়ে গেছে।

খাওয়া শুরু হলো।

আমি, মিত্রা দুজনে দুধারে মাঝে বড়োমা, ছোটোমা। ছোটোমা মিত্রার দিকে বড়োমা আমার দিকে। সবাই মিলে খাওয়া শুরু করে দিল। কিছুক্ষণ পর দাদা বললো।

কিরে অনি শুক্রবার আর রবিবার কি প্রোগ্রাম আছে?

কিছুই না, ঘরের সবাই মিলে একটু খাওয়া দাওয়া করবো।

ব্যাশ। আর কিছু হবে না।

তুমি একটু অনিমেষদাদের ফোন করবে। অফিসে তুমি যাদের মনে করবে বলার দরকার আছে তাদের বলে দেবে। মিত্রা যদি মনে করে ওর কাউকে বলার দরকার আছে বলবে। ছোটোমা, বড়োমা, ডাক্তারদাদাকে আমি বলবো।

বড়োমা কানটা ধরলো।

যা বাবা! আমি আবার কি করলাম।

সব সুতপাকে বলে এসেছিস, সেটা বল।

তাহেল আর কি, সব জেনে ফেলেছো।

দামিনী কাল সকালে আসবে। থাকবি, তারপর তোর হচ্ছে।

তুমি বললে বাড়ি পাহাড়া দিতে। আমি সারাদিন থাকবো।

পেটে পেটে কতো বুদ্ধি দেখেছ। ছোটোমা বললো।

ছোটোমা পেট নয়, দেবাদার কথাটা মনে করো। টিনা বলে উঠলো।

মিলি হাসতে গিয়ে খক খক করে কেশে উঠলো।

কি হলো মিলি, এক ঝটকায় বিষম। ডাক্তারদাদা বললো।

আমি হাসছি।

শুক্রবার কখন বিয়ে করবি। বড়োমা বললো।

ছটা নাগাদ হিমাংশু আসবে। তোমরা থাকবে সই সাবুদ হয়ে যাবে, বিয়ে হয়ে গেল। কাগজটা মিত্রার গলায় ঝুলিয়ে দেব, তারপর আমার কাজ শেষ।

তারমানে! দাদা আমার দিকে তাকাল।

তারমানে আবার কি। তারপর খাওয়া দাওয়া।

এই যে বললি তোর কাজ শেষ।

আপাতত। তারপর আমাকে কয়েকদিনের জন্য পাবে না।

কোথায় যাবি! বড়োমা আমার দিকে তাকিয়ে।

দেখি কোথায় যাওয়া যায়।

এবার তুই দাঁড়ে বসেছিস। কিছু করলে তোর ঠ্যাং ভেঙে দেব।

অনি শেকল কেটে ফুরুৎ।

ধরো ধরো আবার কানটা ধরো। ছোটোমা বললো।

দাদা হাসছে।

মল্লিক কয়েকটা আর্টিকেল এই মওকায় লিখিয়ে নে। দাদা বললো।

ডাক্তারদাদা গম্ভীর ছিল জোড়ে হেসে উঠলো।

আমি নিস্তব্ধে খেয়ে যাচ্ছি।

তুমি ওরকম বে-আক্কেলের মতো হাসছো কেন? বড়োমা খ্যাঁক করে উঠলো।

এডিটরের কথা শুনলে না।

ও তো চিরটাকাল এরকম।

ছোটোমা, মল্লিকদা মুখ নীচু করে হেসেই চলেছে।

বুঝলে ডাক্তার….। দাদা বললো।

তুমি থামো। বড়ো বান্ধবীর মেজাজ এখন সপ্তমে।

কেন, চিমটি না কাটলে চলছে না।

কেউ গম্ভীর নেই। কিছুক্ষণ পর আমি বললাম।

মিলি।

বলো।

তুমি মীনাক্ষ্মী চ্যাটার্জীকে চেন?

না।

টিনা, তুমি।

কে বলো?

তথ্য জনসংযোগের ডিরেক্টর।

দাদা, ডাক্তারদাদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখে জিজ্ঞাসা।

একবার দেখেছি। আমাদের বসের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। কি একটা ব্যাপারে।

আলাপ আছে?

সেই ভাবে না।

কাল তোমরা কখন অফিসে যাবে?

যেমন আজ বেরিয়েছিলাম।

কাল ওরা কেউ অফিসে যাবে না। বড়োমা বললো।

তাহলে আমাকে বেরতে হবে।

ডাক্তারদাদা হাসছে।

তুমি হাসলে কেন?

বান্ধবী তুমি শিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক ভুলে গেছ।

বড়োমা ডাক্তারদার দিকে তাকিয়ে!

বুঝলে না অনির কথা।

বড়োমা আমার দিকে একবার তাকায়, একবার ডাক্তারদার দিকে তাকায়।

ওরে শয়তান, তোকে থাকতে বলেছি বলে….।

আমি খেয়ে যাচ্ছি।

তুমি বলো না অনিদা, আমরা ঠিক ম্যানেজ করে নেব। মিলি বললো।

অদিতি কখন আসবে?

সকালে এখানে চলে আসবে, তারপর একসঙ্গে বেরবো।

তাহলে এক কাজ করো।

বলো।

অফিসে গিয়ে তোমরা তিনজনে একটা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরো। বারটার পর ওনার কাছে যাবার কথা। একটু আগে গেলেও অসুবিধা নেই। সকালে তোমাদের সঙ্গে একটু বসবো। দুটোর পর থেকে বড়োমা ছোটোমাকে সময় দাও সারারাত। কি পারবে?

পারবো।

মিত্রা।

বল।

তোকে একটা কাজ দিয়েছিলাম দেশের বাড়িতে থাকতে, তোর মনে আছে।

কি বলতো।

মনে কর।

মনে পড়ছে না।

তোর বাড়ির আলমাড়িতে কিছু কাগজ পত্র আছে….।

সরি সরি কাল সকালেই গিয়ে আমি নিয়ে আসব। তোর ঘুম থেকে ওঠার আগেই।

যা আছে সব।

ঠিক আছে।

মিলি তোমরা তিনজনে গিয়ে মীনাক্ষ্মী ম্যাডামের সঙ্গে একটু খেজুরে আলাপ করবে। উনি একটা চিঠি তোমাদের দেবেন। নিয়ে আসবে। পারলে ওখানে বসে ভালো করে চিঠিটা পড়ে নেবে। যদি কোনও সমস্যা থেকে থাকে আলোচনা করে মিটিয়ে নেবে।

কিগো অনিদা?  টিনা বললো।

গেলেই দেখতে পাবে।

মিলি হাসছে।

তুই ঘরে চল তোকে আর একটা কথা বলবো। এটা একবারে তোর পার্শোনাল। কাজটা কালই করবি। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।

তুই এতো সব কাজ দিলি আমরা কখন বেরবো। বড়োমা বললো।

যা কাজ দিলাম এক ঘণ্টার কাজ। তুমি এবার প্রোগ্রাম করে নাও। নাহলে আমাকে বেরতে হবে।

না তোকে বেরতে হবে না।

ঠিক আছে।

উঠে পরলাম। তোমরা খাও আমি একটু ওপরে কাজ সারি।

বড়োমা আমার দিকে একবার তাকাল।

তুই আমার ওপর রেগে গেলি।

একবারে না।

ডাক্তারদাদা হাসছে।

বড়োমা ডাক্তারদাদার দিকে একবার তাকাল। আমি ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলাম।

সকালবেলা যখন ঘুম ভাঙল, দেখলাম আমি বিছানায় একা। চোখ রগড়ালাম, আমি কি স্বপ্ন দেখছি? না, আমি স্বপ্ন দেখছি না। বিছানাতেই শুয়ে আছি। বেশ মনে আছে কাল অনেক রাতে মিত্রা ওপরে এসেছে। প্রায় দেড়টা, পৌনে দুটো হবে। সেই সময় আমার ঘুমটা একটু ভেঙেছিল।

মিত্রা হেসে বলেছিল—আজ ছেড়ে দিলাম, মনে রাখিস এটা আমি সুদে আসলে তুলবো। চাপাচুপি দিয়ে পাশ ফিরে শুয়েছিলাম। তারপর দুজনে দুজনকে জাপ্টে ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম। বুঝতে পারছি শরীরটা খুব একটা ভালো নেই।

ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে নটা বাজে। উঠে বসলাম।

নীচ থেকে কোনও সাড়া শব্দ আসছে না! তাহলে কি নীচে কেউ নেই?

কোথাও গেলে আমাকে নিশ্চই বলে যেত। গেল কোথায় সকলে!

ব্রাসে পেস্টটা লাগিয়ে বাথরুমে গেলাম। দাঁতটা ব্রাশ করতে করতে বারান্দায় এলাম। বাড়ি রং করা শেষের পর্যায়ে। বাড়িটাকে এখন দারুন দেখতে লাগছে।

এখন মনে হচ্ছে এটা একজন এডিটরের বাড়ি। এ পাড়ায় এই বাড়িটাই সবচেয়ে ম্যাড়মেরে ছিল। এখন অনেক বেশি চকচকে। ছগনলাল বারান্দায় আমাকে দেখতে পেয়ে গেট থেকে এগিয়ে এলো।

ছোটোবাবু মা বাহার গিয়া। আভি চলে আসবে। তুমকো বাহার জানে কে লিয়ে মানা কিয়া। আমি চা দেবে।

সবাই বেরিয়েছে!

হ্যাঁ। ওই বাবুরাও এসেছিল।

কারা?

ওই যে তোমার বন্ধু, ফর্সা মতো।

বুঝলাম দেবাশিস।

কখন বেরিয়েছে?

সকাল বেলা করিব পাঁচটা হবে।

ঠিক আছে, তুমি তোমার কাজ করো, আমি চা করে নেব।

চা নাস্তা করা আছে। আমাকে দিতে বলেছে।

আমি নিচে যাচ্ছি।

আমি এসে বাথরুমে ঢুকলাম। দেখলাম বিছানার এক সাইডে আমার পাজামা পাঞ্জাবী বার করে রেখে যাওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে নতুন। আমি স্নান সেরে পাজামা পাঞ্জাবী লাগালাম। মোবাইলটা টেবিল থেকে নিয়ে দেখলাম অনেক মিশ কল।

দেখলাম সবাই একবার করে কল করেছে।

দাদা, ডাক্তারদাদা, মল্লিকদার মোবাইল নম্বরও রয়েছে। ম্যাসেজ বক্সটা ব্লিঙ্ক করছে। বুঝলাম ম্যাসেজ বক্স ফুল। খুললাম দেখলাম রিমঝিম ম্যাসেজ করেছে। ওর বন্ধুরাও। একটাই কথা তোমাকে সত্যি ফোনে পাওয়া যায় না। আমাকে আজ একটু সময় দেবে। সবারই এক কথা।

মনে মনে হাসলাম। ম্যাসেজ রিপ্লাই করলাম, যদি সময় পাই জানাব।

নিচে এসে ফ্লাক্স থেকে চা ঢাললাম। চায়ের কাপটা নিয়ে গেটের কাছে গিয়ে বাড়িটা একবার ভালো করে দেখলাম। বাগানটা অনেক পরিষ্কর হয়েছে। একজায়গায় সব শুকনো পাতা ডাঁই করা হয়েছে। গাছগুলোর নিচের দিকটা সাদা রং করা হয়েছে। বুঝলাম উই ধরেছিল।

চা খেতে খেতে বাগানের চারদিক ঘুরলাম। দাদা যাঁর কাছ থেকে বাড়িটা কিনেছিলেন তিনি বেশ রসিক মানুষ ছিলেন। প্রায় পঁচিশ কাঠা জমির মাঝখানটুকু বাড়ি করেছেন। পেছনে প্রায় পনেরো কাঠা জমি বাগান, সামনে প্রায় পাঁচ কাঠা জমি বাগান।

একপাশ দিয়ে ইঁটের বাঁধানো রাস্তা সামনে থেকে বাড়ির গা দিয়ে একেবারে পেছনে চলে গেছে। পেছনে একটা টিনের সেড আছে গাড়ি রাখার জায়গা। এছাড়াও গোটা পনেরো গাড়ি অনায়াসে এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এখন এই জমির ভ্যালুয়েসন কম করেও আট দশ কোটি টাকা।

আমি আমগাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঝাঁকরা গাছটার কিছুটা ডাল ছাঁটা হয়েছে। এ বছর অনেক মুকুল ধরেছে। আমি রাতের বেলায় এই মুকুলের গন্ধ পাই।

পেয়ারা গাছটার কয়েকটা ডালে নতুন পাতা হয়েছে। বাগানটা দেখলে মনেহচ্ছে ভজুবাবু যত্ন করে। আমি পায়ে পায়ে একেবারে দেয়ালের ধারে এলাম। ভজুবাবু কিছু কিছু চারা গাছ পুঁতেছে। মনে হচ্ছে ডালিয়া। অনেকক্ষণ বাগানের এদিক সেদিক ঘোরা ঘুরি করলাম।

ওপরে চলে এলাম। ঘড়ির দিকে তাকালম, সাড়ে দশটা। দেবাশিসকে আসতে বলেছিলাম। ব্যাটা সকালে বেরিয়ে গেছে ওদের সঙ্গে। ল্যাপটপটা নিয়ে বসলাম। অনেকদিন মেল চেক করা হয়নি। মেল বক্স খুলতেই অবাক হলাম। তনুর প্রচুর মেল। এমনকি রিমঝিম, পিঙ্কি, চুর্ণী, তিয়াও মেল করেছে।

প্রথমে তনুর মেল গুলো চেক করলাম। আরও মেটিরিয়ালস পাঠিয়েছে। বলেছে ঘর ও দেখেছে। আমাকে একবার যেতে হবে, না হলে কিছু করা যাবে না। এখন ও কোলকাতায় আসতে পারবে না। প্রচুর কাজের চাপ। সঙ্গে সঙ্গে ওকে রিপ্লাই করলাম। হাতের কাজ সেরেই তোমার কাছে যাচ্ছি। তুমি অবশ্যই একবার কলকাতায় আসবে।

রিমঝিমদের মেলগুলো খুললাম। খুলেই আমার মাথা ঘুরে গেলো। বিবসনা সব ছবি। মডেল হিসাবে স্যুট করেছে। কিছু ভালো ছবিও পাঠিয়েছে। নিচে লেখা আছে লাভ রিমঝিম, পিঙ্কি লিখেছে স্যুইট হার্ট অনিদাকে। চুর্ণী লিখেছে আমাকে এক মিনিট সময় দাও। তিয়া লিখেছে, বসে আছি পথো চেয়ে।

আমি ছবিগুলো ভালো করে দেখলাম। শরিরী আবেদন মাথা ঘুরিয়ে দেবে।

অন্যান্য মেল গুলো একবার চেক করে নিলাম। ল্যাপটপ পাওয়ার অফ করে হিমাংশুকে একটা ফোন করলাম।

ফোনটা ধরেই হিমাংশু হাসছে।

হাসছিস কেন?

বাড়িতে একা রেখে দিয়ে সকলে কেটে পরেছে।

তুই কি করে জানলি?

কেন তুই কি একা সাংবাদিক?

আমি হাসলাম। কে বললো তোকে?

সকালে তোকে একবার ফোন করেছিলাম। দেখলাম রিং বেজে যাচ্ছে। কেউ ধরলো না। তারপর ম্যাডামকে ফোন করলাম। বললো, তোকে ঘুম পাড়িয়ে চলে এসেছে।

কি করবো বল। মাঝে মাঝে ঢেঁকিও গিলতে হয়।

অফিসে যাবি না?

আজ মনে হয় হবে না। কিছু নিজের কাজ আছে। সারতে হবে।

এবার বল।

আমার কাজ গুছিয়েছিস?

হ্যাঁ।

কাল কখন আসছিস?

ছটা নাগাদ।

রেবাকে নিয়ে আসবি।

বলেছি। তোকে আর আলাদা করে নেমন্তন্ন করতে হবে না। দাদাও ফোন করেছিলেন। তুই কি বলতো?

কি করবো বল। আমার গার্জন বলতে এখন দাদা ছাড়া কেউ নেই।

তা বলে দাদাকে দিয়ে আমাকে ফোন করাতে হবে।

বিশ্বাস কর আমি বলিনি। বলেছি তুমি যাকে যাকে মনে করবে বলবে।

আমার খুব খারাপ লাগছিল।

শোন একটা কথা আছে।

বল।

কাল অনিমেষদার বাড়িতে গেছিলাম।

কেনরে!

বৌদিকে নেমন্তন্ন করতে। আর মিত্রাকে দেখাতে।

কেন সেদিন বৌদির দেখে আশ মেটেনি?

শোন না।

বল।

অনিমেষদা টাকা চেয়েছে। দেড় মতো দেব বলেছি। ওদের চেক নিতে অসুবিধে নেই কি করবো।

পুরটাই ট্যাক্সের আওতায় চলে আসবে। তুই বরং ক্যাশ দে।

আমি মিত্রাকে অফিসে পাঠাচ্ছি। ওর হাত দিয়েই নিয়ে আসব। প্রয়োজন পরলে তুই একবার সনাতনবাবুর সঙ্গে কথা বলে নিবি।

ঠিক আছে।

ফোনটা কেটেই অনাদিকে ফোন করলাম। বাইরে গাড়ির হর্ন বেজে উঠলো।

বুঝলাম সবাই এসে পরলো।

কিরে কোথায় তুই? অনাদি বললো।

নিজের ঘরে বসে আছি।

ঘরে বসে আছিস মানে, শরীর খারাপ নাকি!

কাজ করছি।

ম্যাডাম, ছোটোমা, বড়োমা?

সকালে বেরিয়েছিল এই ফিরছে।

গাড়ির হর্ণের আওয়াজ পেলাম।

এখনও ওপরে আসেনি।

বল।

রবিবারের প্রোগ্রাম কি করেছিস?

আমরা চারজন যাব।

কে কে আসবি?

আমি, চিকনা, বাসু, সঞ্জীব।

এক কাজ কর।

বল।

গোরাকে একটু বল দুটো গাড়ির ব্যবস্থা করতে। সবাই চলে আয় কাঞ্চন কে নিবি, লতাকে নিবি, উনা মাস্টারকে বলবি আসার জন্য সঙ্গে মিনতিকে নিয়ে নিবি। স্যারকে বলবি আমি বলেছি। আর শোন সেদিন অনিমেষদারা সবাই আসবে।

সেদিন সকালে চলে এলাম। তোর সঙ্গে দেখা হলো না। কি হলো শেষ পর্যন্ত শোনা হলো না।

পরে শুনিস।

কিরে কিরকম দিলাম বল। মিত্রা গেটের সামনে।

খেয়েছে, ম্যাডাম নিশ্চই তোর ঘরে পৌঁছে গেছে?

হ্যাঁ।

ওমা তুই কার সঙ্গে একা একা প্রেম করছিস। মিত্রা হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/rN84iUK
via BanglaChoti

Comments