কাজলদিঘী (৬৮ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

৬৮ নং কিস্তি
—————————

এ সপ্তাহে এক লাখ টাকা প্রফিট করেছি।

কোথা থেকে!

মিলে চার গাড়ি সাপ্লাই দিলাম।

তাহলে সব ধান শেষ করে দিলি?

ও বাড়িটা খালি করেছি। এবারেই তো ধানের টান ধরা শুরু হয়েছে। মৌসুমি মাসি বললো কিছু চাল করে দে আমার ছেলেগুলো হাটে গিয়ে বেচে আসবে।

কুঁড়ো গুলো কি করছিস?

এখানে গরুর অভাব। দিয়ে শেষ করতে পারছি না।

জেনারেটর নিয়ে এসেছিস?

সঞ্জুরটা দিয়ে গেছে।

তারমানে ভাড়া দিতে হচ্ছে?

কি করবো। কাল দিয়েছি খিস্তি। বলেছে আগামী সপ্তাহে এনে দেব।

ওদিককার খবর?

অনাদি আজও গেছিল। আসতে আসতে এগোচ্ছে।

ব্যাঙ্কের খবর?

জানিনা। তবে প্রতিদিন বেশ লোক আসছে।

তুই যাস না!

প্রতিদিন রাতে যাই।

আর সবাই ঠিক আছে?

তোর জন্য গ্রামের ছেলেগুলো দুটো করেকম্মে খাচ্ছে। কেউ বসে নেই।

দেখি আগামী সপ্তাহে যাব।

প্রবীরদা এর মধ্যে একদিন এসে হারিকেন ট্যুর দিয়ে গেছে।

প্রবীরদা গেছিল!

পুকুরে স্নান করে কাকীমার কাছে দুটি গরম ভাত খেয়ে গেছে। আমাদের বুক এখন ছাপান্ন ইঞ্চি।

বেশি ফোলাস না। ফেটে যাবে।

চিকনা হাসছে।

নিরঞ্জনদা।

তোর জায়গা নিয়ে ব্যস্ত। শুনেছি মাটি কাটা শুরু হয়েছে।

তুই দেখতে যাস নি?

সঞ্জু একদিন গেছিল। দেখে এসেছে। দেবাদা, নির্মাল্য প্রায়ই আসছে।

তোক যা দিয়িত্ব দিয়েছি পালন করবি। তোর টিমটার সঙ্গে আমাকে একবার বসতে হবে।

তুই আয় বসিয়ে দেব। ওরাও বলছিল।

কি?

তোর সঙ্গে ওরা বসবে।

ঠিক আছে আমি আগামী সপ্তাহে যাব। তুই কোন বাড়িতে?

তোর বাড়ির নিচের তলায়।

নীপা?

ও বাড়িতে। তোর ঘরটা ছাড়া সব জায়গায় ধানের বস্তা রেখেছি।

লোকজন রেখেছিস?

ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। শোন পুকুরটা সংস্কার করেছি। মাছ ছেড়েছি।

ভালো করেছিস। কাকা, কাকী কেমন আছে?

আগের থেকে এখন ভালো।

ডাক্তারদাদার ওষুধগুলো খাওয়াচ্ছিস।

আমাকে কিছু বলতে হয় না। তারা নিজেরা নিজেরা খায়।

খুড়তোত ভইবোনগুলো এখন ঝামেলা করছে?

এরপর আর কেউ ঝামেলা করে। বুঝলি অনি সবাই আমাকে বলতো অকর্মণ্যের ঢেঁকি। এখন সেই অকর্মণ্যের ঢেঁকিকে সবাই তেল দেয়। বেশ ভালোলাগে। মাঝে মাঝে ভাবি তুই না থাকলে আমি হয়তো মরে হেজে পচে যেতাম।

আবার ফ্যাচ ফ্যাচ করে।

নারে সত্যি বলছি।

ভানুর খবর কি?

আনাদি ভানুকে লোন দিয়েছে একটা ট্রেকার কেনার জন্য। আমাদের গ্রামে প্রথম গাড়ি ঢুকবে। আগামী সপ্তাহে ভানু, অনাদি, বাসু গিয়ে নিয়ে আসবে।

তুই যাবি না?

এদিকে খুব চাপ বেড়ে গেছে। অনাদি বলেছিল। আমি বলেছি তোরা যা।

ভানু মন খারাপ করেছে?

একটু করেছে।

তুই বরং যা। নীপাকে একটু দায়িত্ব দিয়ে যা।

তুই বলছিস—

ভেবে দেখ।

তাহলে যাব।

গাড়ি কে চালাবে, ভানু নিজে?

সে ওর ব্যাপার। অনাদি বলেছে প্রথম দু-মাস টাকা নেবে না। তিন মাসের মাথা থেকে টাকা শোধ দিতে হবে। ভানু রাজি হয়েছে।

বর্ষাকালে।

গ্রামে ঢুকবে না। তবে চক পর্যন্ত যাওয়া আসা করবে।

পারমিট।

এখানে কোনও গাড়ির পারমিট নেই। তারওপর সবাই এখন নিরঞ্জনদার নাম করে চমকায়।

এটা খারাপ।

তুই এসে বলবি।

ঠিক আছে এখন ঘুমো।

কেন!

কেন মানে, কতো রাত হলো খেয়াল আছে।

তোর সঙ্গে কতদিন পরে কথা বললাম। অনেকবার ইচ্ছে করছিল তোকে ফোন করি। তুই বারন করেছিস। তাই ফোন করিনি।

আগামী সপ্তাহে যাব।

আসার আগে একবার ফোন করিস।

আচ্ছা।

আমি ফোনটা পকেটে রেখে ঘুরে দাঁড়ালাম। মিত্রা একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এই অন্ধকারেও লক্ষ্য করলাম ওর চোখ দুটো চকচক করছে। দরজার দিকে তাকালাম। দেখলাম বন্ধ। তারমানে মিত্রা নিস্তব্ধে কাজ করেছে। আমি একটুও টের পাইনি। আমাকে জড়য়ি ধরলো পাঞ্জাবীটা সরিয়ে বুকে ঠোঁট রাখল। আমার ঠোঁটের কাছে ঠোঁটটা তুলে ধরলো। আমি ঠোঁট ছোঁয়ালাম। মিত্রার চোখে মুখে হাঁসির ছটা ছড়িয়ে পরলো।

কথাবলা হলো।

কার সঙ্গে কথা বললাম বলতো?

চিকনার সঙ্গে।

কি করে বুঝলি?

ও যেভাবে জোড়ে জোড়ে কথা বলছিল স্পিকার অন না থাকলেও শুনতে পেয়েছি।

হাসলাম।

ও এখন তোর ট্রাম্পকার্ড। সকালে একবার ফোন করে, বিকেলে একবার ফোন করে। আমাকে গুরুমা বলে।

সেই জন্য সন্তানের পেটে একটু আধটু খোঁচা মারিস।

মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বুকে মুখ ঘোষছে।

আনাদি এসেছিল আমাকে বলিসনি তো।

তোক সব কথা বলতে গেলে সাতদিন আমাকে চব্বিশ ঘণ্টা করে দিতে হবে।

ওখানকার সবাই জেনে গেছে।

কাকীমা পূজোদিয়ে প্রসাদ পাঠিয়েছিল।

কে এসেছিল!

কেউ আসে নি। দেবার হাত দিয়ে পাঠিয়েছিল।

দেবা!

দেবারা এখন রেগুলার যায়। তোকে তো চিকনা বললো। নিরঞ্জনদা কাজ শুরু করে দিয়েছে।

প্রবীরদা গেছিল।

তোকে হিন্টস দিয়েছি।

ওখানে গেছিল তার হিন্টস দিসনি।

এ বাড়িতে যখন ঘনো ঘনো আসছে। তারমানে নিশ্চই ওবাড়িতেও গেছিল। প্রবীরদা খুব ইমপ্রেসড ওদের কাজকর্ম দেখে।

টাকা পাচ্ছে কোথায়?

আমি দিয়েছি।

ভালো করেছিস। হিমাংশু জানে।

হিমাংশুর সঙ্গে আলোচনা করেই দিয়েছি। হিমাংশু ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে লোনের ব্যাপারে কথা বলেছে।

ব্যাঙ্ক ম্যানেজার কি বলেছে?

ওরা এক পায়ে খাঁড়া। অনিমেষদা বলেছে স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে লোনের ব্যবস্থা করে দেবে।

বাবাঃ তুই তো পাকা ব্যবসায়ী হয়ে গেছিস!

অনি ব্যানার্জীর বৌ না।

আমি মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।

তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো আমাকে লুকবি না। মিত্রা আমার চোখ চোখ রাখলো।

কি বল।

আমাকে তোর বিশ্বাস হয়।

তোকে ছাড়া কাকে বিশ্বাস করবো বল। আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি শুধু তোর জন্য। তুই আমাকে কাছে টেনে না নিলে আমি হয়তো যেমন চলছিলাম সেইভাবেই কোনও প্রকারে চালিয়ে দিতাম।

আবার তুই একথা বলছিস—

যা সত্যি তাই বললাম।

সাগির, অবতারকে কোথায় রেখেছিস?

কেন!

তুই যেদিন গেছিস সেদিন থেকে সাগির, অবতারের টিকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইসলামভাই, দামিনীমাসি, আবিদ আর নেপলাকে খুব ঝেড়েছে। তবু মুখ থেকে কোনও কথা বার করতে পারেনি। তারপরে ইসলামভাই আবিদকে বলেছে তোরা কি ছেলেটাকে মারার ব্যবস্থা করছিস।

তখন নেপলা রেগে বলে ফেলেছে। বস তুমি যদি কোনওদিন ভুল করে অনিদার গায়ে হাত তোলার কথা ভাবো, আমি যদি তা জানতে পারি, তোমায় ফিনিস করে দেব।

সে কিরে!

তোকে বলছি কি তাহলে।

এই ঘরে একদিন এসে দামিনীমাসি, ছোটোমাকে, আমাকে সব বলেছে। ইসলামভাই নেপলার কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে, কিছুই ভেবে পায় না। আবিদ থাপ্পর মারতে গেছিল। ইসলামভাই বারন করেছে। বলেছে আমি তোদের কাছে অনিকে রেখে মরেও শান্তি পাব।

মাসি বললো, জানিস মামনি তখন আমি বুঝলাম সাগির, অবতার অনির কাজ করছে। আবিদ, নেপলা সব জানে। মুখে রাটি পর্যন্ত করে না। এমনকি রতন পর্যন্ত কিছু জানে না।

আবার রতন নাকি কিছু কাজ করছে, সেটা আবিদ, নেপলা জানে না। অনি কিরকম ছাতার কল করেছে দেখ।

তারপর আর কি, আমি পরে ইসলামভাইকে ফোন করলাম। ইসলামভাইয়ের সে কি হাসি। বলে মামনি ও আমার বাপ, যাদের ওপর আমি কোনওদিন আস্থা রাখতে পারিনি। ও তাদেরকে নিয়ে দিব্যি কাজ করছে। ওর আর একটা ট্রাম্পকার্ড আছে বুঝলি, চিকনা। আমাকে বলেছিল ওকে ভরসা করতে পারো। ও মা, সেতো দেখি আমার আগে যায়। গ্রামের রাজনীতি অনাদি যতটা বোঝে, তার থেকে চিকনা আরও ভালো বোঝে।

ব্যাশ তোর ঘুঁটিগুলো ধরে ফেললাম। কাউকে অবশ্য বলিনি।

আমি মিত্রার চোখে চোখ রেখেছি। ও কল কল করে যাচ্ছে।

সেদিন রাতে সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছি, ডাক্তারদাও ছিল। খেতে খেতে আমাকে বললো মামনি তুই লিণ্ডা বলে কাউকে চিনিস।

আমি প্রথমে ডাক্তারদাকে সোজাসুজি না বলে দিই। ডাক্তারদাদা কেমনভাবে যেন আমার দিকে তাকালো। তোর মুখ থেকে নামটা আমি একবার শুনেছি।

তারপর—

ডাক্তারদা সবার সামনেই বললো, জানিস আজ মেয়েটা এসে আমার পায়ে ধরে কি কান্না। আপনি আমাকে বাঁচান।

আমরা সবাই অবাক হয়ে ডাক্তারদার দিকে তাকিয়ে। ডাক্তারদা গম্ভীর হয়ে বললো, অনি গোয়া গেছে। মেয়েটাকে দিয়ে নার্সিংহোমটা বেচিয়ে দিয়েছে। বলেছে টাকা পয়সা নিয়ে ইন্ডিয়া থেকে ভেগে পরো, না হলে তোমার খেল খতম। কে মারান নে কে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছিল।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে। চোখে হাসি।

কিরে কিছু বল।

কি বলবো, তুই তো বলছিস।

সত্যি তুই গোয়ার নার্সিংহোমটা বেচিয়ে দিয়েছিস।

হ্যাঁ। বকলমে মারান কিনেছে।

সেই ভাইজ্যাকের দাদা!

হ্যাঁ।

তোর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে!

হ্যাঁ।

আমার মাঝে মাঝে ভীষণ ভয় করে বুবুন।

কেন!

এদের সঙ্গে তুই ওঠা বসা করিস।

সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে চলে। আমিও নিজেরটা আখেরে গোছাই। স্বার্থে আঘাত লাগলে বিপদ। স্বার্থে আঘাত না লাগলে বিপদ নেই।

শয়তানটা এখনও বেঁচে আছে—

বলতে পারবো না।

তারমানে তুই সাগির, অবতারকে ওর পেছনে লাগিয়েছিস।

হ্যাঁ।

আমার ভীষণ ভয় করছে বুবুন এর একটা উল্টো রি-অ্যাকসন আছে।

খামকা ঝামেলা করছিস। তোকে বলেছি না আমার কাজে মাথা গলাবি না।

তুই বিশ্বাস কর।

আহত সিংহকে বাঁচিয়ে রাখা ঠিক নয়। বাঁচিয়ে রাখলে বিপদ। মেরেদিলে বিপদ নেই।

তার মানে তুই মেরে দিয়েছিস!

এখনও খবর পাইনি।

তুই সত্যি করে বল না।

বিশ্বাস কর।

তাহলে তুই যে খেতে বসে বললি, হয়ে গেছে….নিজের কাজে চলে যা।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

তোর চোখ বলছে তুই ধরা পড়ে গেছিস।

আমি চুপ করে রইলাম।

বলনা এরকম করছিস কেন—

পিকনিক গার্ডেনের রেল লাইনে স্যুইসাইড করেছে।

মিত্রা কিছুক্ষণ আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো। তারপর পাগলের মতো আমার মাথাটা চেপে ধরে আমার ঠোঁটে মুখে চোখে বুকে চুমু খেতে লাগলো।

আমি নিস্তব্ধে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে।

মিত্রা পাগলের মতো কল কল করে হেসে উঠলো।

সত্যি স্যুইসাইড করেছে!

আমি স্থির চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

জানিস বুবুন, আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন। তুই বিশ্বাস কর। আমি মনে মনে প্রতিটা মুহূর্তে ওর মৃত্যু কামনা করেছি। নিজে হাতে মারতে পারলে, অনেক বেশি শান্তি পেতাম। আমার হয়ে তুই কাজটা করলি। শয়তানটা আমার মাকে শ্লো-পয়জন করে মেরেছে। চোখের সামনে দেখেছি, কিছু বলতে পারিনি। আমার শরীরটাকে বাজারের বেশ্যার থেকেও ঘৃন্য করে দিয়েছে।

আমি এই আধো অন্ধকারে মিত্রার চোখে জিঘাংসার চিহ্ন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।

মিত্রা আমাকে প্রাণপনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।

আঃ কি শান্তি।

তারপরই মিত্রা বুকে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

আমি স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছি। আলো আঁধারি ঘরে মায়ার খেলা। পাঁচিলের ওপার থেকে রাস্তার নিওন আলো ঘরে এসে লুটপুটি খাচ্ছে। মিত্রা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে। কান্না থেমেছে। কিন্তু মুখ তুলছে না।

কিরে অনেক রাত হয়েছে। জেগে থাকলে শরীর খারাপ করবে। এবার শুবি চল।

মিত্রা আমার দিকে তাকাল। চোখের পাতা ভেঁজা দুর্বাঘাসের মতো নেতান। আমি ঠোঁট ছোঁয়ালাম। মিত্রা চোখ বন্ধ করলো।

আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় এলাম।

কাপর ছারবি না।

ছেড়েছি।

তোর সেই বালিসের ওয়াড়গুলো কোথায়?

সেটা কি!

যেটা পরে রাতে আমার পাশে শুস।

দিলো আমার কোমরে রাম চিমটি।

আমি উহ আহ করে হেসে উঠলাম।

অতো সুন্দর নাইটগাউনটা বালিশের ওয়াড়।

আচ্ছা আর বলবো না এবার ছাড়।

মনে থাকে যেন।

খুব মনে থাকবে।

আমি মিত্রার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের শরীরটাকে বিছানায় ছুঁড়ে দিলাম। মিত্রা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে হাসছে।

তোর আঙুল তো নয় যেন শাঁড়াসি।

তোকে এইটা দিয়ে জব্দ করবো। সুরো শিখিয়ে দিয়ে গেছে।

বুঝেছি তোর গুরু এখন সুরো হয়েছে। ওর কাছ থেকে জব্দ করার টিপ্স নিচ্ছিস।

মিত্রা বিছানায় উঠে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো।

এরকম করিসনা, কোথায় লেগে টেগে যাবে। তখন হিতে বিপরীত।

তুই আমার কথা ভাবিস।

ভাবি বলেই না থাকার প্ল্যান করেছি।

কেন!

থাকলেই তুই গণ্ডগোল করবি। আমি না থাকলে আর গণ্ডগোল করতে পারবি না।

তবেরে শয়তান।

দেখছিস কে শুরু করছে।

বেশ করেছি, তুই কিছু করতে পারবি।

ছোটোমার কান জানিস, মাইক্রোস্কোপ লাগানো আছে।

থাক। এই যাঃ….।

কি হলো রে!

ওষুধ লাগানো হয়নি।

ওষুধ খেতে হয় জানতাম, লাগাতে হয় নাকি।

তুই আমার কিছু খোঁজ খবর রাখিস—

বড়োমা, ছোটোমা আছে। তারওপর জ্যেঠিমনি। আমি এখানে পাত্তাই পাব না।

ওষুধটা লাগিয়ে দিবি।

যা টর্চ আর ওষুধ নিয়ে আয়।

খুব সখ না।

যা বাবা নিজের জিনিস দেখব তাতে সখের কি আছে।

ওখানে না। পেটে লাগাতে হবে।

তাহলে তুই নিজে নিজে লাগিয়ে নে।

দেখলি দেখলি তুই কিরকম স্বার্থপর দেখ।

আচ্ছা নিয়ে আয় লাগিয়ে দিচ্ছি।

মিত্রা উঠে গিয়ে আলমাড়ি খুলে একটা ক্রিমের কৌটো নিয়ে এলো।

এটা কি রে!

এটা একটা ক্রিম, পেটের চামড়াটা যাতে ফেটে না যায় তার জন্য ডাক্তারদাদা নিয়ে এসেছে।

আমি না থাকলে কে লাগাত?

তুই ছিলি না। আমি বড়োমার কাছে শুতাম, দাদা তোর ঘরে এসে শুত। বড়োমা লাগিয়ে দিত।

তাহলে তোর আদরের কোনও খামতি নেই।

বড়োমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরতাম।

ভালোই আছিস।

মিত্রা আমার বুকে মাথা রাখল।

মন্দ থাকব কেন। তুই আমাকে ঘর দিয়েছিস। বড়োমাকে দিয়েছিস, ছোটোমাকে দিয়েছিস, আমার জীবন থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া গর্ভধারিণী মাকে ফিরিয়ে দিয়েছিস। দিদিভাই, জ্যেঠিমনি প্রতিদিন নিয়ম করে তিনবার ফোন করে আমার খোঁজ খবর নেয়। সবাই ঠিক আছে বুঝলি বুবুন, শুধু তুই না থকলে মনটা খচ খচ করে। কাউকে বলতে পারি না।

আমি মিত্রার মুখটা বুক থেকে তুলে ধরলাম। বুবুন সব সময় তোর পাশে আছে। ফিজিক্যালি নয় মেন্টালি। এটা তুই বিশ্বাস করিস।

মিত্রা মাথা ঝাঁকাল।

তুই তোর বুবুনকে অনেকগুলো কাজের দায়িত্ব দিয়েছিস।

জানি।

তাহলে।

তবু মন মানে না।

মনটাকে গঙ্গাজলে ধুয়ে নে।

মিত্রা কোনও কথা না বলে বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে রইলো।

ওঠ, ওটা লাগিয়ে দিই। তারপর একটু ঘুমো। আবার কিছু বাদাবি, দোষ আমার ঘাড়ে পড়বে।

দেখছিস দেখছিস তুই কেমন করিস। একটু শুয়ে আছি। তাতেও তোর সহ্য হচ্ছে না।

আমি হেসে ওর বুকে হাত রাখলাম। ও হাতটা সরিয়ে দিল।

বুঝলাম মাথাটা গরম হয়েছে। আমার কথাটা ঠিক ঠাক মনে ধরেনি। চুপ চাপ শুয়ে রইলাম কোনও কথা বললাম না। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। ঘুমতেও পারছি না। যদি খেপে যায়। কতোক্ষণ শুয়ে শুয়ে চলন্ত পাখার ব্লেড গুণলাম ঠিক নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। তিনটে বাজে। আসতে করে মিত্রার পিঠে হাত রাখলাম। কোনও সাড়া শব্দ নেই।

মাথার বালিসটা একটু উঁচু করে ওর মুখ দেখার চেষ্টা করলাম, দেখলাম চোখ বন্ধ করে আছে। আমার মাথার বালিসটা টেনে নিয়ে পাশে রাখলাম। বুকের থেকে ওর মাথাটা আসতে করে তুলে নিয়ে বালিশে রাখলাম। অঘোরে ঘুমচ্ছে। পা-দুটো সোজা করে কোমড় থেকে কাপরটাকে আলগা করে দিলাম। কোনও সাড়া শব্দ নেই।

নাভির ঠিক নিচের থেকে তলপেটটা সামান্য উঁচু হয়ে আছে। নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে। সারাটা শরীরে মা মা গন্ধ। আমি একবার কানপেতে শেনার চেষ্টা করলাম। গঁ গঁ একটা আওয়াজ হচ্ছে। শায়ার দড়িটা ঢিলে করে দিয়ে পেটের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত ক্রিমটা ভাল করে লাগিয়ে দিলাম। কৌটটা আলমাড়িতে তুলে রাখলাম।

ওর ঘুমন্ত শরীরটা আজ একটুও নেশা ধরাচ্ছে না। কেমন যেন একটা ভালোলাগা আবেশ আমার সারাটা শরীরে রিনি ঝিনি করে বাজছে।

আসতে করে ওর পাশে এসে শুলাম। অনেকক্ষণ ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার ভালোবাসা গ্রহণ করে মিত্রা নারী জীবনের পরিপূর্ণতা পেতে চলেছে।

ভাবতেই মনটা কেমন উসখুশ করে উঠলো। ভীষণ আদর করতে ইচ্ছে করলো ওকে। কিন্তু ওকে ছুঁতে পারলাম না। কিছুতেই মন থেকে সায় দিল না। ঘুম আসছে না। বিছানা থেকে উঠে এসে মিটসেফের ওপর থেকে জলের বোতলটা নিয়ে কিছুটা জল খেলাম।

সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে জানলার ধারে গেলাম। সিগারেটটা ধরাতে গিয়ে আর ধরালাম না। সিগারেটের ধোঁয়ায় যদি ওর ক্ষতি হয়।

দরজাটা আসতে করে খুলে বাইরের বারান্দায় এলাম। সিগারেট ধরালাম। দু-একটা পাখি কিচির মিচির করে উঠলো। নিস্তব্ধ রাতে তাদের ডাকটা যেন আরও তীব্র হয়ে কানে এসে লাগলো। কেউ আবার ডানা ঝাপটাচ্ছে। গাছের পাতা মৃদু হাওয়ায় দুলছে। বাইরের গেট বন্ধ। উঁচু পাঁচিলের বাইরের রাস্তাটা শুনশান। জুঁই ফুলের গাছটা একমাথা পাকা চুল নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

অনি জীবনে কখনও তুই এরকম ফ্যাসাদে পরিসনি, তাই না।

হেসে ফেললাম।

সত্যি মানুষের জীবন রহস্যটা কতো গভীর, কেউ অনুভব করতে চাইলে তার গভীরতা বুঝতে পারবে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের জীবনটা গড্ডালিকা প্রবাহের মতো।

তুই কি আর দশটা মানুষের থেকে আলাদা।

বলতে পারবো না। তবে পরের কষ্টটা নিজের মতো করে বোঝার চেষ্টা করি।

কখনও ভেবে দেখেছিস এই মেয়েটা কতোটা তোকে ভালোবাসে।

জানি বলেই ওর জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারি।

ভালোবাসলে শুধু মাত্র এইটুকুই করতে হয়। আর কিছু করতে নেই।

কে বললো আমি করছি না। আমি যা করছি সব ওর জন্য।

এর বাইরেও মিত্রার কিছু চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে। এটা তুই কখনও ভেবেছিস।

সেই ভাবে ভাবিনি।

কেন!

যেটা নিয়ে ও একটু আগে আমার ওপর অভিমান করলো।

কেন করলো, কখনও ভেবে দেখেছিস।

দেখেছি। দেখেছি বলেই, ওকে নিশ্চিন্তে ঘুম পাড়িয়ে, আমি বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছি। ঘুম আসছে না।

বুবুন।

জড়ানো কন্ঠস্বরে নিজের নামটা শুনে ছুটে বিছানার কাছে গেলাম।

মিত্রা অঘোরে ঘুমচ্ছে।

আমি কি তাহলে ভুল শুনলাম?

মুখটা ওর মুখের কাছে নিয়ে গেলাম। কপালে হাত রাখলাম।

মিত্রার বুক চিড়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো। কাপড় এলোমেলো হয়ে গেছে। ভাবলাম একবার ঠিক করে দিই। তারপর ভাবলাম থাক কে আর দেখবে আমি ছাড়া।

আবার একটু ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। কিছুতেই ঘুম আসছে না। মাঝে মাঝে আমার এরকম হয়। দামিনীমাসির ওখানে কত রাত এরকম অনিদ্রায় কেটে গেছে। নানা চিন্তা মাথা ফুঁরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। একটা সিগারেট ধরালাম। বেশ কয়েকটা ম্যাসেজ করলাম।

কালকের প্রোগ্রামটা সকলকে জানিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।

অনি তুই এবার একটু ঘুমো।

দূর ঘুম আসলে তো।

পায়ে পায়ে ঘরে এসে মিত্রার পায়ের তলায় শুলাম।

মিত্রা পাশ ফিরলো। হাতটা নাড়াচাড়া করলো কাউকে যেন খুঁজতে চাইছে। আমি উঠে বসে পাশ বালিশটা ওর হাতের নাগালে এগিয়ে দিলাম ও জাপ্টে ধরলো। ঘুমের ঘোরে ও জানল ওর বুবুনকে ও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। মিত্রা নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে। ওর কোনও চিন্তা নেই। জানে বুবুন আছে। কিন্তু বুবুনের কে আছে?

মাথার মধ্যে অজস্র চিন্তা কিলবিল করছে। চোখ দুটো কেমন জ্বালা জ্বালা করছে। ঘন ঘন হাই উঠছে। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে পরলাম।

এক ধাক্কায় ঘুমটা ভেঙে চূড়মার হয়ে গেলো। চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না। ঘুমে জড়িয়ে আসছে। চোখ খুলতে গেলেই জ্বালা জ্বালা করছে।

শয়তান সারারাত জেগে এখন পড়ে পড়ে ঘুম হচ্ছে। ওঠ সবাই নিচে তোর জন্য বসে আছে।

মিত্রা আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসেছে। চোখ মেলে তাকালাম।

মিত্রার চোখে মুখে হাসির ছটা। সিঁথিতে লালা ডগডগে সিঁদুরের প্রলেপ।

দেখেই মনে হচ্ছে স্নান সারা হয়ে গেছে। আমি ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম।

কাঁচা ঘুমটা ভাঙালি।

তোর হচ্ছে দাঁড়া।

কেন আবার কি করলাম!

কি করিসনি—

উঠে বসলাম।

ভাগ্যিস ছোটোমা উঠেছিল প্রথমে। না হলে একটা কেলোর কীর্তি হতো।

সক্কাল সক্কাল মেজাজটা বিগড়ে দিলি।

আমি দিলাম!

তাহলে কে—

তোকে কাল সারারাত কে জাগতে বলেছিল?

তুই তো জাগিয়ে রাখলি—

বিছানা থেকে উঠে টেবিলের কাছে গেলাম।

কালরাতে দরজা বন্ধ করেছিলি?

একহাত জিভ বার করে ফেললাম।

মিত্রা হেসে ফেললো।

তোকে শেখাতে শেখাতে বুড়ী হয়ে যাব।

কেন তুই নেংটো হয়ে শুয়েছিলি।

তুই কাপরটা ঠিকমতো পরিয়েছিলি।

আমি খুললাম কখন!

নেকু কিছু জানেনা যেন। চল না নিচে বড়োমা, ছোটোমা দুজনে পিট্টি দেবে।

আজ থেকে বড়োমার কাছে শুবি।

বাথরুমে ঢুকলাম।

সত্যিতো ঘরে ঢোকার পর আমি কি দরজা বন্ধ করিনি! মনে হয় করেছিলাম। দূর এতো সব মনে থাকে কখনও। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাথরুমের কাজ শেষ করলাম। বেরিয়ে এলাম।

মিত্রা আলনা থেকে আমার পাজামা পাঞ্জাবী বার করে বিছানার ওপর রেখেছে। এরই মধ্যে বিছানাটা গোছানও হয়ে গেছে। একটা সুন্দর চাদর পেতেছে বিছানাতে।

তুই সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছিস মনে হচ্ছে?

হ্যাঁ।

কটা বাজে বলতো?

পৌনে নটা।

কাম সারসে। টেবিলের ওপর থেকে আমার ফোনটা এনে দে।

কেন দাদুকে ফোন করবি?

ওর দিকে তাকালাম। জানলো কি করে!

আজ তোর দাদু, দিদাকে আবিষ্কার করলাম।

অ্যাঁ!

অ্যাঁ না হ্যাঁ।

খেয়েছে।

মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।

অনেকক্ষণ গল্প করলাম।

কার সঙ্গে গল্প করলি। প্রথমে মামীমা, তারপর মামা। তারপর দাদু, দিদা।

সব চটকে দিয়েছিস।

একটুও চটকাই নি। তাড়াতাড়ি মিটিং সার। বেরবো।

বড়োমা, ছোটোমাকে কিছু বলেছিস?

না বলিনি। গোপন আছে, গোপন থাক।

এই তো তোর বুদ্ধি হয়েছে। চিনলি কি করে?

প্রথমে তোকে খুঁজছিল। বললাম তুই ঘুমোচ্ছিস। তারপর বললো তুমি কে মিত্রা। আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর সব জেনে নিলাম। আমার নামে অনেক রিপোর্ট করেছিস। সব এক তরফা হয়ে গেছে, মনে রাখিস।

আমি হাসলাম।

কালকে দরজাটা খুলে রেখেছিলি কেন?

ভুলে গেছি।

সিগারেটটা ঘরে খেতে কি অসুবিধা ছিল?

আমার না তোর যদি অসুবিধা হয়।

ঢং।

চুপ করে থাকলাম। আলমাড়ির আয়নায় চুলটা আঁচড়ালাম।

তুই সায়ার দড়িটাও লাগিয়ে দিতে পারিস নি?

দূর ছাই মনে থাকলে তো।

তোকে খুলতে কে বলেছিল?

ঘুমিয়ে পরলি কেন—

তোকে আমি ক্রিম লাগাতে বলেছিলাম?

না আমার সখ হয়েছিল।

তোকে আমি বলেছিলাম, আমার পায়ের কাছে শুয়ে থাক?

এতো বড়ো বিছানায় জায়গা রেখেছিলি। হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকলে আমি শোব কোথায়। এবার থেকে নিচে মাদুর পেতে শোব।

তোকে শায়াব। ছোটোমা না এলে কি লজ্জায় পরে যেতাম।

এ বাড়িতে যখন আছিস তখন তুই মালকিন নোস এ বাড়ির বৌ। তাছাড়া তুই অনির বৌ, অনির মতো একটু আধটু বেসামাল না হলে চলে কি করে।

তোকে জ্ঞান দেওয়াব। কি লজ্জা করছিল।

এই প্রথম জীবনে লজ্জাপেলি, লজ্জাটা উপভোগ কর।

মিত্রা এসে কোমরটা চিমটে ধরলো।

এই দেখো কথায় কথায় চিমটি কাটলে চলে। আমার সব রোগ তোর শরীরে ঢুকে যাবে।

ঢুকুক।

মিত্রা হাত সরিয়ে নিল। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

আবার কি হলো!

কাল তুই ওরকম করলি কেন। সেই জন্য রাগ হয়ে গেল।

কি করলাম, কেনই বা তোর রাগ হলো বুঝলাম না।

তোর বুকে একটু মাথা দিয়ে শুয়েছি তাতে কি ক্ষতি হয়েছে।

কোনও ক্ষতি হয়নি। এই সময় একটু নিয়ম কানুন মানতে হয় শুনেছি।

আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছি।

সে তো অনেক পরে।

আর কোনওদিন হবে না।

এবার নিচে চল।

দাদুর কাছে কখন যাবি?

দেখি নিচের কাজ শেষ করি আগে।

ওই পথে লোকনাথ বাবার মন্দির পরে একবার নিয়ে যাবি?

বলে রেখেছি।

সত্যি!

হ্যাঁ।

চল তাহলে কাজগুলো তাড়াতাড়ি সেরে নে।

কারা কারা এসেছে?

সব ডাক্তারদাদার বন্ধু। সব এক একজন দিকপাল। কথায় কথায় বললো, তারা আমাদের নার্সিংহোমে কোনও না কোনও কাজে একসময় এসেছে। ভাল ব্যাব্যহার পায়নি বলে নিজেরাই যে যার সরে গেছে।

মিত্রার দিকে তাকালাম।

ও আর একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।

কি!

ইসলামভাই ফোন করেছিল।

কি জন্য।

খবর পৌঁছে গেছে। একটু পরে আসবে।

আর কে জানে?

সবাই জানে। বড়োমা শুনে বললো আপদ গেছে।

তুই কাউকে কিছু বলিস নি তো?

না।

ইসলামভাই কাকে ফোন করেছিল?

ছোটোমাকে। তারপর দাদার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে।

ডাক্তারদাদা কি বললো?

সবাই শুনে বললো পাপিষ্ঠদের এইরকম অবস্থাই হয়।

চল।

দুজনে কথা বলতে বলতে নিচে নামলাম। বাগানে, গেটের বাইরে বেশ কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। ঘর ভর্তি ডাক্তারদার বন্ধু বান্ধব। গুনে দেখলাম দশজন। ডাক্তারদাদা, রথীন ডাক্তার, আর.এল. দাস ছাড়া কাউকে চিনতে পারলাম না। সবাই মেজাজে আড্ডা মারছে। দাদা, মল্লিকদাও রয়েছে।

আমি ঘরে ঢুকতেই ডাক্তারদা চেঁচিয়ে উঠলো, আসুন স্যার আসুন।

মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।

তুই ওই ভাবে হাসিস না।

মালকিনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে এবার মালিকের সঙ্গে পরিচয় পর্ব সারতে হবে।

আমি রেডিমেড কোমড় ধাপিয়ে সকলকে প্রণাম করতে শুরু করলাম। প্রণাম শেষ।

বুঝলে শান্তনু এই হচ্ছে অনি। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো।

এই ছোঁড়া এই সব কর্মের মালিক! না বাপু ভেবে দেখতে হবে কাজ করবো কিনা।

সবাই হেসে উঠলো। রথীন ডাক্তার হাত তালি দিয়ে উঠলো।

তুমি আবার হাতে তালি মারছো কেনো!

সেদিনকার কথাটা একবার মনে করো। আমি শুধু বক বক করি তাই না—

তোমার একটু স্বভাব আছে।

মেনে নিলাম আমার ওরকম স্বভাব আছে। শান্তানু যেটা বললো সেটা মিথ্যে।

যাই বলো সামন্ত ওকে দু-একবার দেখেছি। সেই দেখা আর এই দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য চোখে পড়ছে। ডা. দাস বললেন।

তুমি ওকে আগে দেখেছো!

রথীন ডাক্তার ডা. দাসের দিকে তাকিয়ে বললেন।

তুই কনিষ্কদের কাছে যেতিস না?

হ্যাঁ, স্যার।

শেয়ালদার নায়ক তুই ছিলি?

মিত্রা জোড়ে হেসে উঠলো। ছোটোমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।

তুমি ওর কীর্তি কিছু জান? ডাক্তার দাস ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে বললেন।

কিছু কিছু জানি। তবে তুমি যেটা বলছো সেটা জানি না।

ওর অনেক গুণ বুঝলে সামন্ত। কনিষ্কদের কাছ থেকে কিছু কিছু উদ্ধার করেছি। তবে হাতের নাগালে কোনওদিন পাইনি।

এইবার হাতের নাগালে পেয়ে গেলে।

দাদা এবার কচুরি আনি।  ছোটোমা হাসতে হাসতে বললো।

নিয়ে এসো। ডাক্তারদাদা বললো।

তুমি কি সকাল বেলা শুধু কচুরি খাওয়াবে। রথীন ডাক্তার চেঁচিয়ে উঠলো।

দেখো না কি আনে, তোমার পছন্দ হবে।

ওর খাই ঢুকলে বাইটা এখনও গেল না তাই নারে সামন্ত। বাজখাঁই গলায় আর এক ডাক্তার বলে উঠলো।

সবাই হাসাহাসি করছে।

তুই বোস কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবি। ওরা আবার যে যার কাজে যাবে।

হিমাংশু হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।

এসো এসো হিমাংশু।

ডাক্তাদাদা হিমাংশুকে দেখে বলে উঠলো।

আমি একটু অবাক হয়ে হিমাংশুর দিকে তাকালাম।

ডাক্তারদাদা হিমাংশুর সঙ্গে সকলের পরিচয় করিয়ে দিল।

আমার মতো হিমাংশুও সকলকে প্রণাম করলো।

ডিড তৈরি করেছো? ডাক্তারদাদা বললো।

হ্যাঁ।

যে ভাবে বলেছিলাম সেই ভাবেই তৈরি করেছো?

হ্যাঁ।

অনিকে এর মধ্যে রাখনি তো?

না।

বেশ করেছো। আগে খেয়ে নাও। খেতে খেতে এদের বুঝিয়ে দাও। তারপর সই সাবুদ হবে।

হিমাংশু একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লো।

ছোটোমা ট্রেতে করে খাবার প্লেট এনে সেন্টার টেবিলে রাখলো।

আরও আছে চাইলে পাবেন কোনও অসুবিধে নেই।

রথীনডাক্তার বলে উঠলো সে আর বলতে।

ওরা সবাই হাসাহাসি করছে।

আমার মাথায় ব্যাপারগুলো ঠিক ঢুকছে না। এটুকু বুঝলাম ডাক্তারদাদা নিজের মতো করে সব সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে। মিত্রার চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারছি, ও সব জানে। ছোটোমার পেছন পেছন একবার রান্নাঘরে যাচ্ছে আর আসছে।

হিমাংশু আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

খেতে খেতে ডাক্তারদা বললো, তোকে সব কথা বলা হয়নি। আমি সংক্ষেপে বলছি শুনে নে।

আমি ডাক্তারদার দিকে তাকালাম।

নার্সিংহোমগুলো সব আলাদা আলাদা বডি ছিল। আমি সবকটাকে একজায়গায় নিয়ে এলাম। একছাতার তলায়। প্রাইভেট ট্রাস্ট চ্যারিটেবেল ফর্মেশন। তাতে কাজ করার অনেক সুবিধা আছে।

হেসে ফেললাম।

ধরে ফেলেছিস।

আমি মাথা নীচু করলাম।

মাথা উঁচু করে বল, আমি তোর মতো বুদ্ধি লাগাতে পেরেছি কিনা।

আমি হাসছি।

সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

ও ধরে ফেললো! রথীন ডাক্তার বললো। আর.এল.দাস মুচকি মুচকি হাসছে।

মাথাটা বড্ড বেশি পরিষ্কার বুঝলে রতনলাল।

ওকে দেখে কিন্তু সেরকমই মনে হয়।

শোন তোকে ছাড়া আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওরা সবাই আমার মতে সায় দিয়েছে।

আমি ডাক্তারদাদার দিকে তাকালাম।

যাই করো কেউ যেন অসন্তুষ্ট না হয়।

কেউ অসন্তুষ্ট হবে না। আমাদের এই বয়সে পাওয়ার কিছু নেই।

বাবাঃ ওর তো দেখি টনটনে জ্ঞান। ডা. দাস বললেন।

ডাক্তারদাদা হাসছে।

শুধু এর মধ্যে অনিমেষকে রেখেছি। তোর আপত্তি আছে?

আমার কোনও কিছুতে আপত্তি নেই।

অনিমেষকে ফোন করেছি এখুনি এসে পড়বে।

আমি ডাক্তারদার দিকে তাকালাম।

তুই এই পনেরো দিনে তোর কাজ করেছিস। আমি আমার কাজ করেছি। অনিমেষ সব জানে।

আমি একপলক ডাক্তারদার দিকে তাকালাম।

এরাও কম বেশি সকলে সব জানে। রতনলাল তোর কীর্তি কলাপের কথা বলছিল। তোর এরকম ভুরি ভুরি কীর্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

কথা বলতে বলতেই অনিমেষদা, অনুপদা, প্রবীরদা ঘরে এসে ঢুকলো। পেছনে দামিনীমাসি, ইসলামভাই।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

সামন্তদা একটু দেরি হয়ে গেল। ক্ষমা করবেন।

অনিমেষদা হাসতে হাসতে হাতজোড় করে সবার সামনে এসে দাঁড়াল। সকলে এগিয়ে এসে অনিমেষদার সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করলো।

আমার দিকে তাকিয়ে।

কখন ঘুম থেকে উঠলি?

চুপ করে মাথা নীচু করে রইলাম।

বড়োমার দিকে তাকিয়ে।

দিদি আজ ওর একটু কানটা ধরি।

আজ থাক, সবাই আছে। পাশ থেকে মিত্রা বলে উঠলো।

ঘর ভর্তি সবাই হেসে উঠলো।

ইসলামভাই, দামিনীমাসি আমাকে হাসতে হাসতে এক দৃষ্টে দেখে যাচ্ছে। প্রবীরদা, অনুপদাও ঠিক একই ভাবে দেখছে।

ভজুরাম পটাপট এঘর থেকে ওঘর থেকে চেয়ার নিয়ে এসে জড়ো করে দিয়েছে।

সামন্তদা তাহলে দিদি ছাড়াও ওর আর একজন সাপোর্টার আছে।

কিছুক্ষণের জন্য। মিত্রা বললো।

আবার সবাই হেসে উঠলো।

দাদা কচুরী নিয়ে আসি। ছোটোমা বললো।

ছোটোমা অনিমেষদার সামনে এসে দাঁড়াল

নিয়ে এসো।

ডাক্তারদাদা কারুর সঙ্গেই অনিমেষদার পরিচয় করিয়ে দিলো না। বুঝলাম এদের সঙ্গে এরকম সিটিং এর আগে দু-চারবার হয়ে গেছে। সবাই সবার পরিচিত।

ওকে বলেছেন? অনিমেষদা চেয়ারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো।

সংক্ষেপে।

কি বললেন স্যার।

স্যারের কোনও কিছুতেই আপত্তি নেই। শুধু বললেন কেউ যেন অসন্তুষ্ট না হয়।

এদিকে টনটনে জ্ঞান আছে।

আবার সকলে হেসে উঠলো।

যাই বলুন অনিমেষবাবু পুঁচকে ছেলের কাণ্ড কারখানা কিন্তু তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার মতো। ডা. দাস বলে উঠলেন।

এগুলো ওর অনেক দিনের স্বপ্ন। সুতপাকে ও প্রায়ই বলতো পয়সা যদি ওর হাতে কোনও দিন আসে, তাহলে ও জগৎতটাকে একবার দেখে নেবে।

আমার দিকে তাকিয়ে।

কিরে ঠিক বললাম?

ও এখন ভিজে বেড়াল, ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। ছোটোমা ট্রতে করে খাবার নিয়ে এসেছে।

দাও আর কয়েকখানা কচুরী দাও। ডাক্তারদাদা বললো।

আমাদেরও দিও। রথীন ডাক্তার বলে উঠলো।

হাসাহাসি খাওয়া দাওয়া গল্প। বেশ চলছে। তার মধ্যে অনিমেষদা, হিমাংশুর সঙ্গে কথা বলে নিল।

দাদা আর দেরি করে লাভ নেই। শুভস্য শীঘ্রম। অনিমেষদা বললো।

হিমাংশু দুটোই এনেছো? অনিমেষদা হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে।

হ্যাঁ।

বার করো তোমাকে আবার কোর্টে যেতে হবে।

হিমাংশু হাসছে। আমার দিকে তাকাল।

ওর দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। অনিমেষদা বললো।

ওকে দিয়েই প্রথমে সই করাও। ডাক্তারদাদা বললো।

আমি কেন সই করবো! তোমরা এর মধ্যে থাকবে। তোমরা সই করো।

বক বক করবি না। যা বলছি কর। অনিমেষদা ধমক দিল।

ছোটোমা হেসে ফেললো।

তোমরা সবাই মিলে ওরকম করলে বেচারা যায় কোথায় বলো। বড়োমা বলে উঠলো।

অনিমেষ আর একজন সাপোর্টার। দাদা ফুট কাটল।

বড়োমা একবার দাদার দিকে কট কট করে তাকাল।

সবচেয়ে বড়ো সাপোর্টার।

সকলে হাসছে।

হিমাংশু আমাকে যেখানে যেখানে দেখাল সই করে দিলাম। দু-খানা ডিড বানান হয়েছে। একটা এনজিওর আর একটা নার্সিংহোমের। সই করতে করতে যেটুকু চোখে পড়লো তাতে বুঝলাম, মিত্রা সবেতেই চেয়ারম্যান পদে রয়েছে। দেখলাম প্রবীরদা, অনুপদাও সই করলো।

তুমি এসেছিলে, না হলে এই নিয়ে একটা ঝামেলা করতো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

তোরা সবাই মিলে ওকে ধরে মারতে পারিস না। অনিমেষদা হাসতে হাসতে বললো।

বড়োমাকে বলো। আদরের ছেলে বলে কথা।

অনিমেষদা জোরে হেসে উঠলো।

বড়োমা বাঁকা চোখে একবার মিত্রার দিকে তাকাল।

আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না, হয়েছে তো। মিত্রা গিয়ে বড়োমাকে জড়িয়ে ধরলো।

চা পর্ব শেষ হোল। হাসাহাসি টুকরো টুকরো কথা। আমাকে নিয়ে অনিমেষদা খুব রসিকতা করলো। বুঝলাম বেশ ভালো মুডে আছে। তারপর ডাক্তারদা তার বন্ধুদের সবাইকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলো।

ঘরে এসে অনিমেষদা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে।

দাদা একটা সিগারেট দিন।

দাদা অনিমেষদার দিকে প্যাকেটটা এগিয়ে দিল।

ছোটো—

বলুন দাদা।

একটু লিকার চা খাওয়াতে পার।

এই তো খেলেন।

দাও একটু, সকাল থেকে অনেক যুদ্ধ করলাম।

কেন দাদা!

আজ অনির অমর কীর্তি শোনো নি!

অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

কোনটা বলো! ডাক্তারদাদা অনিমেষদার দিকে তাকাল।

ডাক্তার ব্যানার্জী কাল রাতে স্যুইসাইড করেছেন।

সারা ঘড় নিস্তব্ধ হয়ে গেল।

বান্ধবী সকাল বেলা বললো। ভেরি স্যাড নিউজ। ভদ্রলোক এরকম করবে ভাবিনি।

ডাক্তারদাদা স্বগতোক্তির সুরে বললো।

আপনার মনে কোনও প্রশ্ন আসেনি। হঠাৎ কেন ভদ্রলোক স্যুইসাইড করতে গেলেন।

সে ভাবে ভাবিনি।

একটু ভাবুন উত্তর পেয়ে যাবেন।

তোমাকে সেদিনের ঘটনা বলিনি, না।

কি বলুন তো!

এই দেখো এর মধ্যে তোমার সঙ্গে তিন চারবার দেখা হোলো। বলা উচিত ছিল।

অনিমেষদা ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

অনি এর মধ্যে গোয়া গেছিল।

শুধু গোয়া নয়। আরও অনেক জায়গায় গেছিলো।

তুমি খবর পেলে কি করে!

ও তো আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

আমি গোয়ার ব্যাপারটা জেনেছি। তাও একজন মেমসাহেব বেশ কয়েকদিন আগে আমাকে এসে বললো আপনি আমাকে বাঁচান। ভাবলাম কোনও রোগটোগ হয়েছে হয়তো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝলাম, ও অনির ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারপর জানলাম, ব্যানার্জীর যে নার্সিংহোমটা গোয়াতে আছে সেটার ও মালিক। ডাক সাইটে ব্যানার্জীর স্ত্রী। অনি নাকি ওকে বলেছে তুমি নার্সিংহোম বেচে দিয়ে ইন্ডিয়া ছেড়ে চলে যাও। সে নার্সিংহোম বেচে কলকাতায় এসে এখান থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের প্লেনে লন্ডন চলে যাচ্ছে।

কথা শুনতে শুনতে অনিমেষদার চোখ দুটো ছোটো হয়ে গেল। প্রবীরদা, অনুপদার চোখ ঠেলে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।

আমি বললাম তাহলে তোমাকে বাঁচাব কি করে!

বললো ওর আরও সম্পত্তি আছে। অনি সব জানে। সেগুলো ও বেচতে পারেনি, সময় লাগবে। ও আবার ফিরে আসছে। তখন যদি কোনও বিপত্তি ঘটে। তবে ও এখানকার সমস্ত খোঁজ খবর রেখেছে। সব জানে। খুব বুদ্ধিমতী মহিলা। তারপর চলে গেল।

প্রবীরদা ফিক করে হেসে ফেললো।

হেসো না প্রবীর। ও কতোটা কুল তুমি বুঝতে পারছো। তুমি নিজে হলে এইভাবে থাকতে পারতে? কতো নিস্তব্ধে কাজ করেছে বলো। কেউ ওর শরীরে একটা আঁচড় কাটতে পারবে?

আমি ওর বাড়িতে গিয়ে ওর কাকা, কাকীমাকে বলে এসেছি। প্রবীরদা বললো।

ইসলামভাই মুখে ওর্না চাপা দিয়ে হাসছে।

তুমি কি করে এতদিন তোমার দল চালাতে ইসলাম।

অনিমেষদা, ইসলামভাই-এর দিকে তাকাল।

আমি অনেকদিন আগে হার স্বীকার করে নিয়েছি দাদা। ওর মাথায় সব ইনস্ট্যান্ট বুদ্ধি আসে। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী ও বুদ্ধি এ্যাপ্লাই করে। মুহূর্তের মধ্যে প্ল্যান চেঞ্জ করে নেয়। দেখে মনে হবে ওর যেন সব মুখস্থ।

ঘটনাটা কি বলো অনিমেষ। সত্যি কি ডাক্তার স্যুইসাইড করেনি! দাদা বললো।

আইনের খাতায় এটা ছাড়া প্রমাণ করার কোনও রাস্তা নেই। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে উনি প্রচুর পরিমানে ড্রিঙ্ক করেছিলেন। লাইন পার হতে গিয়ে বেসামাল হয়ে লাইনে কাটা পরেছেন। তা ছাড়া….

অনিমেষদা মিত্রার দিকে তাকাল, যা দাদার ঘরে গিয়ে বোস।

মিত্রা চলে গেল।

অনিমেষদা মিত্রার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর দাদার দিকে তাকিয়ে বললো।

রিপোর্টে, উনি যে কিছুক্ষণ আগে মহিলা সঙ্গ করেছিলেন তারও প্রমাণ মিলেছে।

কোন জায়গায়!

এর আগের বার যে জায়গা থেকে অনি ওই ছেলেটাকে তুলে নিয়ে গেছিল।

স্ট্রেঞ্জ!

আমরা ভেতরের ব্যাপারটা সব জানি বলে বলতে পারছি এটা প্রি-প্ল্যান্ড, না হলে কারুর বোঝার ক্ষমতা নেই।

কারা করেছে?

ওর নতুন রিক্রুটের কিছু ছেলে। তাদেরকে ইসলাম পর্যন্ত চেনে না। তারা সব ভাইজ্যাকের ছেলে। ব্যানার্জী চিনতো তাদের।

ওরা এখানে এসে থাকলো কোথায়, করলো কি করে!

বড়োমা আমার পেশে এসে দাঁড়াল কাঁধে হাত রাখলো।

কিরে তোর কাছে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পৌঁছেছে! অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।

আমি মাথা নীচু করে চুপ করে রইলাম।

আমি শুনলাম ডোমটা তিনকপি জেরক্স করেছে। সেগুলো গেল কোথায়?

জানিনা।

যথা সময়ে পৌঁছে যাবে তাই না?

আমি কোনও উত্তর দিলাম না।

তোর বৌদিকে তোর গুণের কথা সব বলে এসেছি। খবরটা আমি কাল রাতেই পেয়েছি।

সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

রাজনাথের কোনও ক্ষতি যেন না হয়।

দপ করে মাথাটা কেমন গরম হয়ে গেল।

ওকে কলকাতা ছেড়ে ওর দেশে চলে যেতে বলো। গলাটা সবার কাছেই কর্কশ শোনাল।

তাহলে তোর আরও সুবিধা।

অনুপদা হেসে ফেললো।

হেসো না অনুপ ওর চোখমুখ দেখে বুঝতে পারছো।

আমার দিকে তাকিয়ে।

ওর কিছু হলে আমি সামলাতে পারবো না।

তোমাকে সামলাতে হবে না।

তার মানে!

ওর ঘুঁটি সাজানো হয়ে গেছে। ইসলামভাই বললো।

আমি কিছু করিনি।

তাহলে কি করেছিস সেটা বল?

ও প্রবীরদা আর তোমাকে টার্গেট করেছে। কাল রাতে প্রবীরদার বাড়ির আশে পাশে ওর লোক ঘুরে এসেছে।

তুই কি দিবা স্বপ্ন দেখছিস!

যা সত্যি তাই বললাম।

কোথায় আছে তুই জানিস?

জানি।

প্রবীর একবার ফোন করো।

কাল থেকে ওর ফোন ওর কাছে নেই। ওকে ফোন করে পাবে না। আমার কথা বিশ্বাস না হয় ফোন করে দেখতে পারো।

সেই জন্য তুই মিত্রাকে ঘুম পাড়িয়ে সারারাত জেগেছিস? ছোটোমা ফড় ফড় করে উঠলো।

কালকে তুই খেতে বসে কাকে বললি, হয়েগেছে….ঠিক আছে চলে যা। দাদা বললো।

কটায় বলুন তো দাদা! অনুপদা বললো।

ধরো পৌনে বারোটা নাগাদ। তারপর ও না খেয়ে উঠে চলে গেল।

প্রবীর ওর ফোন থেকে নম্বরটা দেখো তো।

সেকিগো তোমরা জানো না—বড়োমা বলে উঠলো।

আবার কি হলো! অনিমেষদা বললো।

ও একটা নতুন ফোন নিয়েছে। সেটা আবার পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছে। আমরা কেউ জানি না। ও ছাড়া কেউ খুলতেও পারবে না।

অনিমেষদা আমার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে।

মিত্রা।

মিত্রা বড়োমার ঘর থেকে বলে উঠলো, যাচ্ছি।

কালকে এগারোটা পঁয়ত্রিশ চল্লিশ নাগাদ ঘটনাটা ঘটেছে। লাস্ট ট্রেন ছিলো শিয়ালদা থেকে।

মিত্রা কাছে এসে দাঁড়াল

তোর কাছে ওর নতুন ফোন নম্বরটা আছে।

আমাকে দিলে তো।

তোকে দেয় নি!

বলেছে তোদের জন্য একটা নম্বর আছে। ওটায় করবি, ওটা আমার কাজের ফোন।

ওদের হাতেও একটা করে নতুন ফোন দেখলাম। ইসলামভাই অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে বললো।

সেই জন্য প্রবীর তোমরা কেউ ট্রেস করতে পারোনি।

জানেন সামন্তদা আমি খবর পাই বারটা নাগাদ। ওখানকার থানা আমাকে খবর দেয়। তারপর অনুপকে ফোন করি। অনুপ সব ব্যবস্থা করে। প্রত্যক্ষ দর্শীদের কথায় ডাক্তার পরি কি মরি করে দৌড়ে লাইন পার হচ্ছিল। রান ওভার হয়। কেন ডাক্তার দৌড়চ্ছিল আপনি বুঝে নিন।

ঘরের সবাই চুপ চাপ, নিস্তব্ধ ঘর।

আমার ফোনটা বেজে উঠলো। সবাই উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি ফোনটা বার করে দেখলাম, তারপর মিত্রার হাতে দিয়ে বললাম, কথা বল। বলবি একটু পড়ে বেরবো।

মিত্রা আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।

আমি এবার বেরবো। তোমাদের আর কি জানার আছে।

কোথায় যাবি?

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/oUBDE4M
via BanglaChoti

Comments