কাজলদিঘী (৮৮ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

৮৮ নং কিস্তি
—————————

সরকার যদি পড়ে যায়, তোমরা সরকার গড়তে পারবে বছর খানেকের জন্য।

অনিমেষদা কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। আমার কথাটা মুখ থেকে বেরন মাত্র সবার খাওয়া থেমেগেছে। সবার চোখ আমার মুখের দিকে।

অনিমেষদা প্লেটটা সেন্টার টেবিলে রেখে আমাকে জরিয়ে ধরলো। এঁঠো মুখেই কপালে চুমু খেলো। দাদা, ডাক্তারদাদা সবাই হই হই করে উঠলো।

এই অনিমেষ করছো কি তুমি। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো।

হঠাৎ এরকম একটা পরিবেশ তৈরি হতে পারে কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি।

বড়োমা, ছোটোমা, বৌদি, জ্যেঠিমনি, দামিনীমাসি সবাই ওদের চেঁচামিচিতে ঘর থেকে ছুটে বাইরে চলে এসেছে। মিত্রারা পর্যন্ত দাদার ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে এসেছে। ইকবালভাই, ইসলামভাই দাঁড়িয়ে পরে দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরেছে। অনেকটা ঈদের কোলাকুলির ঢঙে।

অনিমেষদা তখনও আমার গালে গাল রেখে জড়িয়ে ধরে রয়েছে।

বড়োমা তারস্বরে চেঁচিয়ে চলেছে, বুড়োগুলোর রস দেখেছিস। কেমন নাচানাচি করছে।

সুতপা সত্যি তোমাদের ভাগ্যকে আমি কুর্নিশ করি, অনির কাছ থেকে তোমরা মায়ের সম্মান পাচ্ছ। সত্যি এ ছেলেকে যিনি গর্ভে ধরেছিলেন তিন কতবড়ো মহিয়সী।

অনিমেষ এরা সবাই আবেগে ভাসে, তুমি তো এতটা আবেগে ভাসো না!

বড়োমা, অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে। চোখে বিষ্ময়।

তোমার চোখ ছল ছল করছে ব্যাপারটা কি?

দিদি অনির কাছ থেকে আমার জীবনের সেরা পাওয়াটা আজ পেলাম।

তুমি ওকে ছারো। বৌদি পেছন থেকে এসে অনিমেষদার হাত ধরলো।

ওকে ছারতে ইচ্ছে করছে না সুতপা। ওকে ধরে আমরা বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।

অনিমেষদা, দাদাদের দিকে তাকাল।

বিধানবাবু, দাদা, ডাক্তারবাবু কালকে আমাদের আলোচনটা তাহলে স্বার্থক বলুন।

দাদা উঠে এসে আমার জটায় একটু হাত বুলিয়ে আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পরলো। আমি অনিমেষদার স্নেহের বন্ধন থেকে মুক্ত হলাম।

ওর ইনটেলেক্টের কথা একবার ভাবুন। কতটা গভীরে গিয়ে ও চিন্তা করে। কি ভাবে ও আস্তে আস্তে এগচ্ছে। কতো বিশাল বড়ো জালটা ও ফেলেছে। একটুও ফাঁক ফোকর নেই। প্রত্যেকটা পিন পয়েন্টে মার্কিং করেছে।

ওর লেখাটা না পড়লে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। ডাক্তারদাদা বললো।

আমি বলেছি না ও পাইথন, প্রথমে হাঁ করে। তারপর নিঃশ্বাসে সকলকে টেনে এনে মুখের মধ্যে পুরে নেয়। ও বিষধর নয় কিন্তু বিপদজনক। ইসলামভাই চেঁচিয়ে উঠল।

কি হয়েছে বলবে তো? বড়োমা অধীর কন্ঠে বলে উঠলো।

বসো এখানে। আগে নিজেরা হজম করি, তারপর তোমাকে বলবো। দাদা বলে উঠলো।

ইসলামভাই, বড়োমাকে বসার জায়গা করে দিল।

ছোটো আগে চা দাও। বিধানদা বললো।

সবাই এই মুহূর্তে বেশ চনমনে।

মিত্রা, ইসি, তনু, মিলিরা গোল করে ঘিরে আছে। আমার মুখের দিকে সকলের দৃষ্টি।

কি এমন ঘটলো!

অনিমেষদা মিত্রার দিকে তাকাল।

তুই কালকে আমাকে একটা বড়ো শিক্ষা দিয়েছিস।

বলো শুনি। মিত্রা বললো।

তুই কালকে বলছিলি না। ওর ঝোলার কথা। সত্যি ওর ঝোলাতে সব বিষধর সাপ আছে। ও ছাড়া ওগুলোকে কোনও সাপুরের ক্ষমতা নেই খেলাতে পারে।

আমার পারিশ্রমিক।

মিত্রা হাসতে হাসতে হাত পাতল।

আর কেউ দিক আর না দিক আমি তোকে দেব। কালকের ওই কথাটা আমাকে নতুন করে ভাববার শক্তি জুগিয়েছে।

ডিউ স্লিপ?

সবাই হেসে উঠলো।

মিত্রার ফোনটা বেজে উঠলো।

কেরে! অনিমেষদা বললো।

চিকনা।

দেখ ও আবার কি বলে। কালকে থেকে একটার পর একটা অঘটন ঘটে যাচ্ছে।

শুনবে।

শোনা।

মিত্রা মোবাইলে আঙুল টিপে ভয়েজ অন করলো।

সারাটা ঘর নিস্তব্ধ।

হ্যালো।

গুরুমা।

হ্যাঁ বলো।

গুরুমা।

চিকনার গলায় উৎকণ্ঠা।

হ্যাঁ বলো।

তাইরে নারে না….।

আবার কি হলো?

আগে বলো গুরু কোথায়?

ও ঘরে।

গুরু এলে আজ দণ্ডি খাটবো।

কেন!

ভাইদাদা আছে।

আছে। তোমার কথা শুনছে।

ভাইদাদা।

বলো। ইসলামভাই কথা বললো।

সুবীর ফোন করেছিল।

কি হয়েছে?

চিকনা হো হো করে হেসে ফেললো।

ছুচ্চা অনাদির লোক জন সব সকাল থেকে ভিড় করেছে।

কোথায়?

কো-অপারেটিভের সামনে।

কেন?

টাকা জমা দেওয়ার জন্য।

তাই!

সুবীরের হাওলা খারাপ। ওকে সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে।

তারপর।

চেক ক্যাশ মিলে এখন প্রায় কুড়িলাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখনও বাইরে প্রায় শ-তিনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে। আরও আসছে। সাত বছরের টাকা একদিনে।

সামলাতে পারছে!

আমার লোকগুলোকে পাঠিয়ে দিয়েছি। সুবীর থানায় ফোন করেছিল। পুলিশ গিয়ে ভিড় সামলাচ্ছে। ওকে বলেছি ধীরে সুস্থে কর। তারাহুড়ো একেবারে করবি না। টাকা পয়সা দেখে জমা নিবি। বেচারা আজ আর খেতে পাবে না।

রাস্তার অবস্থা।

কোনও ঝামেলা নাই। নার্সিংহোমের সামনে এ্যাডিশনাল এসপির গাড়ি দাঁড়িয়ে।

অনাদি।

শুনলাম জেলাপরিষদের অফিসে বসে আছে।

তোমরা ঠিক ঠাক ভাবে যাও।

আর আধাঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব।

তোমরা এখন কোথায়?

চক ছেড়ে এলাম।

পৌঁছে একবার ফোন করবে।

আচ্ছা।

লাইনটা কেটে দিল।

অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। হাসছে না তবু হাসছে।

অনিমেষদার ওইরকম মুখভঙ্গী দেখে মিত্রারা জোড়ে হেসে উঠলো।

মিত্রাও আমার মুখের দিকে এমনভাবে তাকাল না হেসে পারলাম না।

এবার বল। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে।

যা বলার বলা হয়ে গেছে। আর কিছু বলতে পারবো না।

একদিনে এতো!

কেন? ওকে তো বলেই দিয়েছি, আমার জিনিষ বুঝে পেলে কোনও গণ্ডগোল নেই।

তাই বলে….!

আমি উঠলাম, তোমরা এবার রেডি হও, না হলে ওখানে পৌঁছতে দেরি হবে।

বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

ছোটো চা। বিধানদা বললো।

জল বসিয়ে এসেছি, কথা শুনছিলাম।

ছোটো চিনি দিয়ে দিয়েছিস। রান্নাঘরের গেট থেকে বৌদি জিজ্ঞাসা করলো।

আমি যাচ্ছি।

ছোটোমা রান্নাঘরের দিকে গেল।

আমি উঠতে যেতেই অনিমেষদা হাতটা ধরলো।

আসছি।

আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। নীরুর ব্যাপারটা এখনও বোধগম্য হয়নি। কনিষ্ক-বটা দাঁড়িয়ে রইলো। নীরু পেছন পেছন এলো। মিত্রা আসার পথে আমার পেটে একটা খোঁচা মারলো। বারান্দায় আসতেই রতনরা বাগানে ছিল এগিয়ে এলো।

তুমি ব্যস্ত?

কেন?

একটু কথা ছিল।

আয়।

এ ঘরে এসে নীরুর কাছে একটা সিগারেট চাইলাম।

নেপলা দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে ওখানেই দাঁড়াল।

ওরা সোফায় বসলো, আমি খাটে। নীরু আমার পাশে। সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলো।

আমি একটা নিয়ে ধরালাম।

কি হয়েছে বল। রতনের দিকে তাকালম।

কালকের সব কথা শুনেছ?

হ্যাঁ।

আনোয়ারের ছেলেরা চাঁদকে ডিস্টার্ব করছে।

চাঁদ চুপচাপ বসে আছে কেন!

তুমি না বললে ও কিছু করবে না।

ওটা কার প্রজেক্ট।

সাগিরের।

টাকা পয়সা নিয়ে কোনও ঝামেলা।

ওদের খাঁই প্রচুর।

কি বলতে চাইছে।

আরও টাকা চাই।

কার চেইন।

অনাদিদার।

যদি এক চায় তিন দিয়ে দে আমি পাঁচ ফেরত নিয়ে নেব।

রতন হসে ফেললো।

হাসলি যে।

তোমার কথা বোঝা মুস্কিল।

চাঁদকে ফোনে ধরে আমায় দে।

দরজায় ঠক ঠক শব্দ হলো। রতন একবার তাকাল দরজার দিকে। নেপলা দরজা খুললো।

আমি দরজার দিকে তাকালাম ইসলামভাই, ইকবালভাই। ইসলামভাই-এর হাতে চায়ের ট্রে। নেপলা তাড়াহুড়ো করে ট্রে টা ধরলো।

তুমি আনতে গেলে?

কেউ এলো না। তাই।

রতন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

ওকে ফোনটা করে আমায় দে।

ইসলামভাই, রতনের দিকে তাকিয়ে।

ঠিক আছে তোরা ওখানে বোস আমি খাটে বসছি।

নেপলা সকলকে চায়ের পট থেকে চা ঢেলে দিল।

দুজনে খাটে বসলো।

ধর অনিদা কথা বলবে।

রতন ফোনটা আমার হাতে দিল।

বল।….শুনলাম। কতো চাইছে?…..ওকে পনেরো দে….হাসছিস যে….আমি ফেরত নিয়ে নেব, তোর কোনও চিন্তা নেই। রতনের সঙ্গে কথা বল।

রতনের হাতে ফোনটা দিলাম। রতন হাসতে হাসতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেল।

ইসলামভাই, ইকবালভাই হাসছে।

সাগরেদ ভালো তৈরি করেছিস। ইসলামভাই বললো।

সব তোমার হাতে তৈরি।

জিজ্ঞাসা কর, আমাকে পাত্তা দেয় কিনা।

তুমি এখনও কোনও কথা বললে ওরা না বলে?

সেটা কোনওদিন বলেনি।

তাহলে।

বলো ইকবাল, এরপর তুমি কি বলবে। ইসলামভাই, ইকবালভাইকে বললো।

শুনলে তো অনিমেষবাবুকে কি বলে এলো। কেন জিজ্ঞাসা কোরছো।

হ্যাঁরে আমাকে শেখাবি না।

ওখানে চলো শেখাব।

তুই আজকাল এমন কথা বলছিস তারপর আর কোনও কথা বলা যাচ্ছে না।

তোমার কাছ থেকে শেখা, গুরুমারা বিদ্যে।

ইসলামভাই আমার গলাটা জড়িয়ে ধরলো।

তোর দাম নেই, তোর মাথাটার দাম।

অবতার মালগুলো শিপমেন্ট করেছিস।

প্যাকিং চলছে। পর্শু সিপমেন্ট হবে। রেক পাওয়া যাচ্ছে না। দেবাদা তাই বললো।

অবিদের দিকে তাকালাম।

তাকিয়ে লাভ নেই, আমি কি করবো।

ব্যাঙ্কের এল সি।

ওগুলো দেবাদা রেডি করে দিয়েছে।

ওখানে খবর পাঠিয়েছিস। অবতারের দিকে তাকালাম।

রতনদা মেল করে দিয়েছে।

আসার সময় দেখে এসেছিলাম মাস খানেকের স্টক আছে।

মাঝে এক লট গেছে। সাগির বললো।

তাহলে ঠিক আছে।

নোট পেয়েছিস না অবতার আটকে রেখেছে। আবিদের দিকে তাকালাম।

একটা বাকি আছে।

তোদের সঙ্গে এবার বসতে হবে, আমার কমিসনগুলো এবার নিতে হবে।

আজ বললে আজই তোমায় সব লিখে দিচ্ছি, কমিসন কেন নেবে। অবতার বললো।

ইসলামভাই, ইকবালভাই দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো।

দেখো না, কার জিনিষ কে কমিসন চাইছে।

রতন হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।

কি হলো?

কি হবে, ও হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

টেনশন মুক্ত।

হ্যাঁ।

এবার বেরতে হবে। দেখ কার কি অবস্থা।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

ইসলামভাই।

বল।

কো-অপারেটিভের আপডেটটা আমাকে আজই দেবে।

শুনলি তো।

শুধু অনাদির পার্টটুকু।

সুবীরের সঙ্গে কথা বল, ছেলেটা খুব কাজের ছেলে।

গিয়ে দেখবো তোমরা এমন ভয়টয় পাইয়ে দিয়েছো আমার ধারে কাছে ঘেঁসছে না।

না না তোর বনের জামাই বলে কথা।

হ্যাঁ এটা একটা রিজিন। কাল বলছিলে।

এরি মধ্যে ভুলে গেলি!

ভুলি নি। সংসারটা এতো বড়ো হয়ে গেছে লোকেট করা মুস্কিল হয়ে পড়ছে।

ইসলামভাই আবার হেসে উঠলো।

সবাই এঘরে এলাম। আসার পথে বারান্দায় দেখলাম অনেক বোঁচকা বুঁচকি। বাগানে বাচ্চাগুলো খেয়াল খুশি মতো দৌড়দৌড়ি করছে। বিতানরা এসে গেছে। বড়োমা তার ভাই আর ভাইয়ের বৌকে নিয়ে ব্যস্ত।

আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো। মামা, মামী দুজনেরই মন খারাপ হয়ে গেল।

কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো।

বাবা মারা যাবার মুহূর্ত পর্যন্ত তোকে খুঁজেছে। বাবার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তুই মরিসনি।

আমি কি বলবো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।

বিতানকে দেখলাম টিয়া টিয়া বলে চেঁচাচ্ছে। ওর ডাক শুনে বুঝলাম টিয়া ওর বৌ। বিতান কাছে এসে মাথা ঝুঁকে প্রণাম করতে চাইলো। ওর হাতটা চেপে ধরলাম।

আজ থাক। পরে করিস।

বিতান আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

কাল এলি, দেখা করলি না।

তোমার সঙ্গে দেখা করতে গেলে এবার চারদিন আগে থেকে বুকিং করতে হবে।

ভুঁড়িটা হেবি বাগিয়েছিস।

ওর পেটে একটা খোঁচা মারলাম।

সানা কই।

দিল্লীতে।

কেন?

ওখানে ওর শ্বশুর বাড়ি।

তাই! যাক এবার দিল্লী গেলে খাওয়া থাকার অসুবিধে হবে না।

তুমি কোনওদিন যাবে?

কেন যাব না—ফোঁকটেসে থাকা খাওয়ার সু-বন্দবস্ত থাকলে কে যাবে না?

অনিসার সঙ্গে একটা সুন্দর দেখতে মেয়ে, আমার সামনে এসে দাঁড়াল। কোলে বছর দেড়েকের একটা বাচ্চা। বিতান ছেলেটাকে কোলে নিল। মেয়েটা নীচু হয়ে প্রণাম করতে চাইলো। হাতটা ধেরে ফেললাম।

কেন!

ডিউ স্লিপ, পরে করবে। বিতান বললো।

আমার দিকে তাকাল। আমার বৌ টিয়া।

বিতানের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

অনিদা ব্যাপক খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।

আমি কি করলাম!

তোমার ওই বিটকেল হাসিটা সব বলে দিচ্ছে।

টিয়া পাখির ঠোঁটটি লাল, ঠাকুর দাদার তোবড়া গাল।

বিতানের বৌয়ের গালটা একটু ধরে নেড়ে দিলাম, আর বিতানের কোলে বিতানের ছেলেটার গালটা ধরে টিপে দিলাম।

বাবা কি বললে? অনিসার মাথায় আলতো করে একটা চাঁটি মারলাম।

আবার বলো।

হাসলাম।

বলো না প্লিজ। তুমি বৌদির ঠোঁটের লিপস্টিকটা দারুণ এক্সপ্রেসন করলে।

আবার রিপিড করলাম।

তোরা এগুলো পড়িসনি। আমরা ছোটোবেলায় যখন পাঠশালায় পড়তাম তখন হাসিখুশি পড়তাম সেখানে অ আ ক খ শিখতাম এই ভাবে।

তুমি এখনও মনে রেখেছ?

মরার আগের দিন পর্যন্ত মনে থাকবে।

আমি তোমার পাঠশালায় গেছি। বকুলের বিচি দিয়ে বাঁশি বাজিয়েছি।

আমি অনিসার দিকে তাকালাম।

বুঝলি মা, বাবার ছেলেবেলাটা এখনকার থেকে অনেক বেশি ভালো ছিল।

অনিসা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।

টিয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

তুমি কি পিওর হাউস ওয়াইফ।

বিতান হাসছে।

হাসছিস কেন?

আমাদের অফিসে এ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে আছে।

পটকে দিয়েছিস।

আর বলো কেন।      

চাকরি যাওয়ার ভয় নেই।

ওমনি ছুঁয়ে দিলে।

টিয়ার দিকে তাকালাম। মুখ টিপে হাসছে।

কটা। বিতানের দিকে তাকালাম।

তুমি সত্যি মাইরি একবারে….।

অনিসা মুখ টিপে হাসছে।

ভাইঝি দাঁড়িয়ে আছে বলে কিছু বললাম না।

টিয়া মাথা নীচু করে হাসছে।

যাও রেডি হয়ে নাও।

দাদার ঘরে চোখ চলে গেল। দেখলাম তনু, মিত্রা, ইসি সবার পোশাক পরিবর্তন হয়ে গেছে। সবাই শালোয়াড় পরেছে।

বড়োমা এগিয়ে এলো।

কিগো কখন বেরবে। অনেক বেলা হয়ে গেল। পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে যাবে।

এখন তোর বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি চলে যায়। তিনঘণ্টা সময় লাগে।

তাই!

তুই কিছু খা।

কি খাবো?

ছোটো, দামিনী দুজনে মিলে পরটা আলুভাজা করেছে।

দুটো দিতে পার তার বেশি খাব না।

আমি তোর খাবার সঙ্গে নিয়ে নিচ্ছি।

সে নাও, রাস্তায় জেদা জেদি করতে পারবে না।

বড়োমা রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।

চারদিকে চেনা মানুষের ভিড়। কল কল করছে সবাই। আমি সোফায় গিয়ে বসলাম।

দাদা, মল্লিকদা দুজনেই ধুতি-পাঞ্জাবী পরেছে। মল্লিকদাকে কোনওদিন ধুতি-পাঞ্জাবী পরতে দেখিনি। বরাবর প্যান্ট-সার্ট পরতে দেখেছি। চোখা চুখি হতেই হেসে ফেললাম।

হাসবি না তোর ছোটোমার জেদ। ম্যানেজ করতে পারি?

সামনের সোফায় বসলো।

বড়োমা প্লেটে করে আলুর পরটা, আলুভাজা আর একটু আচার নিয়ে এলো।

আমার হাতে প্লেটটা দেবার সঙ্গে সঙ্গে মিত্রারা এসে হাজির হয়ে গেল।

চারিদিকে কিলবিল করছে সব।

একিরে! তোরা সকাল থেকে খাচ্ছিস….।

মিত্রা বড়োমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

দুটো পরটা সেটাও তোরা ছেলেটাকে খেতে দিবি না!

বড়োমা দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠলো।

আমাদের জন্য কচুরী, ওর জন্য আলুর পরটা। তনু বললো।

বড়োমা আর গম্ভীর থাকতে পারলো না। হেসে ফেললো।

তোরা যে ওখানে গিয়ে খাবি।

তখন সব হজম হয়ে যাবে।

তুইও এদের সঙ্গে তালে তাল দিবি। বড়োমা মিত্রার দিকে তাকাল।

এতদিন দিইনি ও ছিল না বলে।

ওরে তোরা এদিকে আয় আমি দিচ্ছি।

দামিনীমাসি রান্নাঘরের সামনে থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।

হাসাহাসি লেগেই রয়েছে।

ভিড়টা এবার রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।

তনুও এদের সঙ্গে একেবারে মিশে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে না কালকে সদ্য এ বাড়িতে পা দিয়েছে। আমি মল্লিকদার সঙ্গে কথা বলতে বলতে খাচ্ছি।

হঠাৎ বাইরে চেঁচামিচি। দরজার দিকে তাকালাম। দেখলাম প্রবীরদা, প্রবীরদার স্ত্রী, ছেলে, অনুপদা, রূপায়ণদা।

তুই সত্যি একপিস ছেলে, না বাজালেও বাজিস। প্রবীরদা বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো।

আলুর পরটা চিবচ্ছি।

সে তো দেখতেই পাচ্ছি।

তিনজনে এসে সামনে বসলো, বৌদি আর প্রবীরদার ছেলে ভিড়ে মিশে গেল।

আজকের পিকনিকটা মনে হচ্ছে খুব জোরদার হবে। কি বলো অনুপদা।

অনুপদা ফিক ফিক করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

প্রবীর তোমারা দুটো করে কচুরী খাও। বৌদি কাছে এসে বললো।

অনিমেষদা তাড়া লাগাল, বললো দেরি হয়ে গেছে।

সে তো হয়েছে। দুটো করে কচুরী খেতে আর কতোটা সময় নষ্ট হবে।

ঝট পট দিয়ে দিন।

বৌদি মিষ্টি আছে। অনুপদা বললো।

কোথায়?

গাড়িতে।

ওটা ওখানে থাক আর নামাতে হবে না।

তোমরা যাবে নাকি? প্রবীরদার দিকে তাকালাম।

তোর সন্দেহ আছে?

না, কালকে কিছু বললে না।

তুই সব বলিস যে তোকে বলতে হবে।

হ বুদ্দি পালিতি।

প্রবীরদা আমার দিকে হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে।

রূপায়ণদা।

বল।

ব্যাপারটা মনে হচ্ছে বেশ গুরুতর।

তুই আমার থেকে ভালো জানিস।

বাবাঃ তুমি এমন ভাবে তাকিয়ে আছ যেন ভষ্ম হয়ে যাব। প্রবীরদার দিকে তাকালাম।

ভষ্ম হলেও আমাদের উপকার, এই ধরা ভূমিতে তোর দেহাবশেষ ছড়িয়ে দেব। তোর মতো হাজার হাজার ছেলের জন্ম হবে।

এইখানেই কবি কেশে দিয়েছিল।

অনুপদা, রূপায়ণদা, মল্লিকদা হো হো করে হেসে উঠলো।

আবার সবাই এদিকে তাকিয়েছে।

প্রবীর এরপর তোর আর কোশ্চেন থাকতে পারে না। অনুপদা বললো।

কোথায় নিয়ে গিয়ে আছাড়টা মারল দেখলি। প্রবীরদা অনুপদার দিকে তাকাল।

তোর মাথায় এরকম বিটকেল বুদ্ধি আসে কি করে বলতো। প্রবীরদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

আমি হাসছি।

বৌদি কচুরীর প্লেট নিয়ে এল।

কি হলো আবার?

প্রবীরকে অনি আছাড় মারল, একেবারে কুপোকাত। অনুপদা হাসতে হাসতে বললো।

প্রবীর, অনি কিন্তু সকালে তোমার দাদাকে একটা বোমা মেরেছে। তোমরা এতো তাড়াহুড়ো করছো কেন বলো। একটু অপেক্ষা করো না।

আমি কি বললাম, আর অনি কি বললো, বৌদিকে বলতো অনুপ। প্রবীরদা বললো।

অনুপদা রিপিট করলো। সবাই হাসছে। বৌদি হাসতে হাসতে আমার কাঁধে হাতে রেখে ঝুঁকে পরে জড়িয়ে ধরেছে।

সকাল থেকে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। কবি কাশে এই প্রথম শুনলাম।

বৌদি তুমি ইনার মিনিংটা একবার ধরার চেষ্টা করো। প্রবীরদা বললো।

তুমি থাম প্রবীর, আর বলো না।

বৌদির চোখে জল চলে এসেছে।

তনু হাসতে হাসতে বললো, তোমার মাথাটা একবার ভেঙে দেখতে ইচ্ছে করছে।

আমি খুব গম্ভীর ভাবে বললাম, তনু এতো হেসো না। দাঁতে ঘামাচি পরে যাবে।

দেখলে দেখলে আবার কি বললো। প্রবীরদা চেঁচালো।

আবার একচোট হাসি। দাঁতে ঘামাচি।

মিলি হেসে অদিতির গায়ে ঢলে পরেছে।

মিলির দিকে তাকালাম।

প্লিজ অনিদা আর নয়, বুঝেছি এবার আমি তোমার টার্গেট। অনিসারা আছে কি ভাববে।

প্রবীরদা মুখ নীচু করে হাসছে, কচুরী খেয়ে যাচ্ছে।

কথাটা ফিস ফাস করতে করতে রাষ্ট্র হয়ে গেল।

না আর দেরি নয়, অনেক বেলা হলো। আমি উঠে দাঁড়ালাম।

দাঁড়া খেতে দে। প্রবীরদা বললো।

মাত্র চারটে কচুরি মারছ, এমনভাবে বললে, যেন আমিনাতে বসে মুরগীর ঠ্যাং চিবচ্ছ।

তুই থামবি। প্রবীরদা চেঁচিয়ে উঠলো।

তুমি থামালেই, থেমে যাব।

অনুপদা, রূপায়ণদার খাওয়া হয়ে গেছে। প্রবীরদা লাস্ট কচুরীটা মুখে ঢোকাল।

ছোটোমা হাসতে হাসতে এলো। প্রবীর চা খাবে।

প্রবীরদা আমার দিকে তাকাল।

হ্যাঁ বলো।

কিছু বলবি না।

অনুপদা হাসছে।

মাথা দোলালাম, না।

ছোটোমা হেসেই চলেছে।

প্রবীর তুমি সত্যি….।

না বৌদি সাবধানে পা ফেলতে হবে। ওকে বিশ্বাস নেই।

প্রবীরদার ছেলে হাসতে হাসতে এলো।

বাবা অনিকাকা তোমায়….।

থাম বাবা, এই প্রথম তুই অনিকাকাকে দেখছিস, একটু সঙ্গত কর বুঝতে পারবি।

চা এলো। খাওয়া হলো। প্রবীরদাদের সৌজন্যে আমি একটু পেলাম।

তারপর বেরবার তোরজোড় শুরু হলো। যে যার মতো গাড়ি দখল করে নিয়েছে। প্রায় দশটা গাড়ি। বড়োমা আমাকে জোড় করে বড়োমার গাড়িতে তুলতে চাইল। আমি অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রতনের গাড়িতে উঠলাম সেখানে আমি, রতন, আবিদ, নেপলা, সাগির, আর অবতার থাকলাম।

রতন ড্রাইভিং সিটে বসলো।

আমি মাঝখানে একা। আবিদ সামনে আর পেছনে সাগির, নেপলা, অবতার।

রতন হাসছে।

হাসছিস কেন। আমি বললাম।

তোমার ধান্দা বুঝেছি।

লম্বাকরে লাইন দিয়ে গাড়ি চলছে। বেশ লাগছে। যেন কোনও মন্ত্রীর কনভয় চলেছে।

পার্কসার্কাস ক্রস করতেই আমি বললাম, রতন বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছিস।

আমি জানতাম তুমি একবার না একবার জিজ্ঞাসা করবে।

বল না?

কবিতা, ভিকি থাকবে।

ভিকিটাকে দেখলাম না।

এসেছিল। তোমাকে একবার দূর থেকে দেখে কবিতার সঙ্গে দেখা করে চলে গেল।

এই সেদিন কবিতার বিয়ে হলো। ভিকি জন্মালো। ওর অন্নপ্রাসন খেতে গেলাম। ব্যাটা দাদা বনে গেল!

আবিদ হো হো করে হেসে উঠলো।

হ্যাঁরে ওর গালটা একবার ডাক্তারদাদাকে দেখিয়েছিস।

প্লাস্টিক সার্জারি করবে বলেছে।

করিয়ে নে।

ভিকি রাজি হচ্ছে না।

কেন।

ও নাকি এতে এ্যাডভান্টেজ পায়।

ছাগল। ফিরে আসি।

রবীন্দ্রসদন ক্রস করে গেল।

রতন কাঁচ তুলে দিয়ে এসিটা চালা।

তুমি শোবে, এই তো?

তুই তো সব জানিস।

আমি গায়ের কাপরটা মাথায় কানে ভালো করে মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম।

নেপলা হাসছে।

হাসিসনা দু-রাত জাগা, তুই হলে ব্যাটা পটকে যেতিস।

ওদের সঙ্গে এ কথা সে কথা বলতে বলতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। বড়োমার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙলো। চোখ চাইতেই ঠাটা পোড়া রোদ্দুর চোখে লাগলো।

চোখ বন্ধ করে নিলাম। তারপর আস্তে আস্তে চোখ চাইলাম।

সবাই গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে।

ওকে মেরে তোল না। দাদুর গায়ে হাত বুলিয়ে কিছু হবে না। মিত্রার গলা পেলাম।

উঃ মা তুমি না। মেয়ের গলা।

তোর বাবা কুম্ভকর্ণ।

আমি উঠে বসলাম, চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না। তবু বড়োমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।

মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

তুই এই জন্য রতনের গাড়িতে উঠেছিলি, আগে বললেই পারতিস।

বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

এসে গেছি?

ধাবাতে। মিত্রা বললো।

আমি তো ভাবলাম বাড়ি পৌঁছেগেছি।

তুই নাম আগে, নিরঞ্জনদা মাথা খারপ করে দিচ্ছে। মিত্রার দিকে তাকালাম।

তনুকে দেখতে পেলাম না। সুন্দর, শুভ, অনন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।

গাড়ি থেকে নামলাম।

পাঁচ মক্কেল, দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা, নিরঞ্জনদা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমি বড়োমাকে সঙ্গে নিয়ে নিরঞ্জনদার কাছে গেলাম।

নিরঞ্জন।

হ্যাঁ দিদি। ঘুরে তাকাল। আমাকে দেখে চোখ দুটো ছোটো ছোটো হয়ে গেছে।

কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো।

একি চেহারা করেছিস তুই!

কেন তোমার থেকে বয়স বেশি লাগছে।

একমুখ দাড়ি অমন সুন্দর চুলে জটা হয়েগেছে। নিরঞ্জনদার চোখদুটো ছল ছল করে উঠলো।

এই দেখ…।

তোকে এইভাবে দেখবো আসা করিনি।

ঠিক আছে আর তো কয়েকঘণ্টা দেখবে সব পরিষ্কার করে ফেলবো।

নিরঞ্জনদা হাতের তালু দিয়ে চোখ মুছলো।

ও ডাক্তার ছেলেমেয়েগুলো গেল কোথায়? বড়োমা বললো।

আছে, কাছে পিঠে কোথাও, দেখ।

সবাই আস্তে আস্তে ভেতরে এলাম। আগের থেকে অনেক বদলে গেছে। সামনের দিকে কয়েকটা খাটিয়া আছে ঠিক কিন্তু এখন এটাকে আর পাঞ্জাবী ধাবা বলা যাবে না। একটা মোটেল তৈরি হয়ে গেছে। তার ডেকরেশনও তেমনি।

নিরঞ্জনদাকে এখনও সকলে চেনে দেখছি। সকলেই স্যার স্যার করে কথা বলছে।

আমরা পেছন দিকে একটা বড়ো রুমে এসে বসলাম। অনেকটা হলঘরের মতো। আগে এই রুমটা ছিল না। সত্যি আমি কিছুই চিনতে পারছি না।

মনে হয় ইসলামভাই সমস্ত ব্যাপার অপারেট করছে।

আমাকে দেখেই নীরু চেঁচিয়ে উঠলো, তুই শুধু আজ গন্ধ শুঁকে যা।

গন্ধ শোঁকার কেশটা বলবো।

নীরু গম্ভীর হয়ে গেল। এই তো আবার শুরু করলি।

কনিষ্ক হাসছে।

তোর এখনও মনে আছে।

শ্রীপর্ণা আমার দিকে তাকিয়ে ইসারা করছে, বলো বলো।

নীরু বুঝতে পেরেছে, খুব গম্ভীর গলায় বললো।

শ্রীপর্ণা।

শ্রীপর্ণা হাসতে হাসতে নীরুর দিকে তাকাল।

পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য নহিলে ঝামেলা বাড়ে, এ কথাটা তোমাকে কতোবার বোঝাব।

ব্যাশ, পরতে পরতে হাসির ঢেউ কনিষ্কের টিপ্পনি, নীরুকে চাটা শুরু হয়েগেল, ঘরটা গম গম করে উঠল।

আমি আউট। ওখানে তখন জোর তরজা চলছে।

দাদারা ঘরের একটা কোনার টেবিলে বসলো।

দামিনীমাসি একটা বড়ো টিফিন কৌট সঙ্গে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল।

এটা কি মাসি?

তোর খাবার।

সত্যি বয়ে এনেছ!

আমরা খাবো, তুই কি খাবি। তুই তো বাইরের কিছু খাবি না।

আরে বাবা তাহলে এতদিন কি না খেয়ে থেকেছি।

সে তো আমরা চোখে দেখতে যাইনি।

তোমরা মানুষকে পাগল করে দেবার পক্ষে যথেষ্ট।

দামিনীমাসি এক কোনায় চারজনের বসার একটা টেবিল জোগাড় করলো। আমি,  দামিনী মাসি, বড়োমা, জ্যেঠিমনি।

এই ঘরটাতে আমরাই আছি বাইরের কাউকে দেখছি না।

ওদিকে ক্ষণে ক্ষণে হাসির ফুলঝুড়ি চলছে। খাবার এসে গেছে। জোড় কদমে খাওয়া চলছে। তনু মনে হয় মাঝে মাঝে গল্প বলছে। নেপলা, সাগির তাল ঠুকছে।

মিত্রা, তনু খেতে খেতে একবার এসে ঘুরে গেছে।

আজকের দিনটা তোকে ছেড়ে দিলাম।

জ্যেঠিমনি হাসছে। আমিও হাসছি।

একটা নিয়ে যা।

না তোর ভাগে কম পড়ে যাবে।

বড়োমা একবার মিত্রার মুখের দিকে তাকাল।

তাকিও না। কথাগুলো মনে রাখবে।

দুজনের কেউ আর দাঁড়াল না সোজা ওদের টেবিলের দিকে চলেগেল।

আমরা চারজন আবার খাবারে মনোনিবেশ করলাম।

তুই ওখানে থাকতিস কোথায়? বড়োমা বললো।

ওখানে দুটো ফ্ল্যাট কিনেছি। একটা সাগিরের নামে একটা অবতারের নামে।

বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

সাগির, আমি, নেপলা একটা ফ্ল্যাটে থাকি, আর অবতার, লক্ষ্মীকে নিয়ে আর একটা ফ্ল্যাটে থাকে।

পাশাপাশি?

হ্যাঁ। একটা ফ্লোরের এপাশ ওপাশ।

সাগির, নেপলা বিয়ে করেছে?

নেপলা বিয়ে করবে না বলে দিয়েছে। সাগির ভাল মেয়ে পেলে বিয়ে করবে। সে আর ওর কপালে জুটছে না। জুটবে কিনা তাও জানি না।

তুই থাকতিস কি করে?

আমার একটা আলাদা ঘর ছিল। ওই ঘরে ওরা কেউ ঢুকতো না। এ্যাটাচ বাথ। ওদের জন্য একজন রান্না করে দিয়ে যেত। আমি থাকলে রান্না করে নিতাম।

তুই রান্না করতিস!

হ্যাঁ।

কি করতিস?

প্রেসারে আলুভাতে ভাত করে নিতাম। কখনও ডাল-চাল-তেল-নুন, দু-একটা কাঁচা সবজি একসঙ্গে দিয়ে প্রেসারে বসিয়ে দিতাম, তিন-ফুঁ বাজলেই নামিয়ে নিয়ে পাতে ঢেলে দিতাম। একটু ঘি দিয়ে খেয়ে নিতাম।

এটা কি করতিস?

খিচুড়ি।

বড়োমা হাসছে।

সেদিন আবার সাগির, নেপলা ভাগ নিত।

দামিনীমাসি একটু আলুভাজা আমার পাতে দিল।

বেশির ভাগ সময়ই আমি এদিক-সেদিক ঘুরতাম। আমার সমস্ত কিছু আলাদা ছিল।

কোথায় কোথায় ঘুরতিস?

লন্ডন, দুবাই, দিল্লী, কলকাতা। তবে কলকাতায় কম এসেছি। বেশিরভাগ সময় দিল্লী থেকে কাজ সেরে ফিরে গেছি।

এই পোষাকে? জ্যেঠিমনি বললো।

হ্যাঁ।

তোর কোনও লজ্জা সরম নেই। বড়োমা বললো।

সবাই সাধুবাবা বলতো। অনেক এ্যাডভান্টেজ বুঝলে।

দিল্লীতে কোথায় থাকতিস?

অনুপের বাড়িতে।

তোর এ্যাকসিডেন্টটা কিভাবে হলো?  দামিনীমাসি বললো।

হেসে ফেললাম। ওই পার্টটা তোমাদের বলা যাবে না।

কেন?

অনেক জটিল।

মাসি হাসছে।

তবে ওই ঘটনা ঘটার পর আমায় নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাঙ্গালোর। তারপর দিল্লীতে যাই।

তার মানে তুই সব জানতিস! বড়োমা বললো।

জানতাম। কিন্তু তখন আমার কিছু করার ছিল না। কষ্ট পেতাম, সহ্য করতাম।

তবে ছেলেমেয়ের জন্মের দিন মিত্রাকে একটা ম্যাসেজ করেছিলাম। পরেরগুলো তোমরা জান।

জ্যেঠিমনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

ওদিকে হাসাহাসি যখন তীব্র আকার ধারণ করছে তখন দামিনীমাসি ওদিকে তাকাল। নেপলা দাঁড়িয়ে পরে ক্যারিকেচার করে দেখাচ্ছে। সবাই হেসে গড়াগড়ি। সুন্দরও তার অভিজ্ঞতার দু-একটা ছাড়ছে।

তোর ছেলেমেয়ে হওয়ার সময় তুই জানলি কি করে। বড়োমা বললো।

মালতীদের পাড়ার তিন-চারজন নার্সিংহোমের তলায় এসে দু-দিন ছিল।

আমি যে শুনেছিলাম ওরা রাজস্থানী।

ওরা ওইভাবে সেজেগুজে বসেছিল।

ওরা তোকে খবর পাঠাল।

না।

তাহলে।

মিত্রার ঘরে যে মেয়েটা ময়লা পরিষ্কার করতো সে মালতীদের অঞ্চলের লোক। সেইই প্রথম খবরটা দেয়। তারপর মনা ম্যাসেজ করলো। আরও দু-একজন ছিল।

মনা তোর নম্বর জানত!

কলকাতায় তিনজন জানত, টনা, মনা আর চিকনা।

দেখেছ দামিনী, ও দুটোর কেউ আমাদের কিছু বলেছে। কতবার বাড়িতে এসেছে বলো।

বড়োমা, দামিনীমাসির দিকে তাকাল।

আমাকে একটা ফোন করিসনি কেন?

ছাড়ো ওসব কথা। আমি তো এসেগেছি।

আমরা যে আঠারো বছর ধরে কষ্ট পেয়েছি।

ঠিক আছে আর কষ্ট দেব না।

দামিনীমাসি, জ্যেঠিমনি হাসছে।

ইসলামভাই সামনে এসে দাঁড়াল।

দিদি মিষ্টি দিতে বলি।

আমি আর খাব না। একটু চা খাব। জ্যেঠিমনি বললো।

তাহলে থাক। দিদি তুমি নেবে। ইসলামভাই, বড়োমার দিকে তাকালো।

বড়োমা মাথা দোলাচ্ছে। না।

মাসি তুমি?

না।

বরং চা নিয়ে এসো। বড়োমা, ইসলামভাই-এর দিকে তাকাল।

আমি কফির কথা বলেছি।

তাই দাও। জ্যেঠিমনি বললো।

ইসলামভাই আমার দিকে তাকাল।

কিছু বলবে?

বাইরে এসপি এসেছে। তোর সঙ্গে দেখা করতে চায়।

কেন? বড়োমা বললো।

তোমাকে নিয়ে তো মহামুস্কিল।

দামিনীমাসি, জ্যেঠিমনি হাসছে।

অনিমেষদারা কোথায় গেল? আমি বললাম।

ওনার সঙ্গে কথা বলছে।

কি বুঝছো।

খুব হাসাহাসি করছে।

নিরঞ্জনদা।

একটু অবাক হয়ে যাচ্ছে। ওইই তো নিরঞ্জনদাকে সবচেয়ে বড়ো বাঁশটা দিয়েছে।

একটা ছেলে বড়ো বড়ো গ্লাসে কফি নিয়ে এলো। টেবিলে রেখে চলে গেল।

চিকনা ফোন করেছিল?

হ্যাঁ ভালোভাবে পৌঁছে গেছে। ও ব্যাঙ্কে আছে। আসতে পারবে কিনা বলতে পারছে না।

সঞ্জু, বাসুরাও হেল্প করছে।

এখান থেকে আমাদের যেতে আর কতক্ষণ লাগবে।

না দাঁড়ালে ঘণ্টা দেড়েক। ঠোক্কর খেলে ডবল।

তারমানে দুপুর গড়িয়ে যাবে।

তা হবে।

মিত্রাকে একবার ডাকো।

ইসলামভাই ওইদিকে তাকিয়ে মিত্রাকে ইসারায় ডাকলো। সঙ্গে সঙ্গে মিত্রা, তনু দুজনে উঠে এসে সামনে দাঁড়াল।

কি বলছিস?

তুমি উঠে এলে কি করতে? তনুর দিকে তাকালাম।

এক জায়গায় পৃথক ফল ভালো নয়।

তুই এই নার্সিংহোমে কতদিন আসিসনি?

মিত্রা একবার আমার দিকে স্থির চোখে তাকাল। বছর সাতেক হবে।

ডাক্তারদাদা?

মাসে একবার আসতো। তবে যাঁর দায়িত্বে এই নার্সিংহোম তিনি সপ্তাহে একদিন করে গিয়ে রিপোর্ট করে আসতেন।

লিখিতো না মৌখিক?

একটা করে স্টেটমেন্ট জমা দিয়ে আসতেন।

তুই ডাক্তারদাদা রেমুনারেশন কতদিন নিসনি?

যেদিন থেকে গণ্ডগোল শুরু হয়েছে।

নার্সিংহোমের এগেনস্টে কোন কেশ-কামারি চলছে?

সাতটা।

সব ক্রিয়েটেড?

হ্যাঁ।

যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি নতুন না পুরনো?

তুই চিনবি না।

যাওয়ার পথে তুই, আমি, ডাক্তারদাদা একবার নামব।

ঠিক আছে।

মিত্রা নিজের জায়গায় চলে গেল।

চা খেয়ে আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম।

বড়োমারা আমার পাশে। আমাকে দেখে এসপি এগিয়ে এলেন।

আরে মশাই আপনি কি ঘুমোন না।

হাতটা বাড়িয়ে দিল।

আমিও হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।

হাসলাম।

আমার ওপর দায়িত্ব আছে আপনাকে পৌঁছে দেওয়ার।

কেন! রাস্তায় কি কেউ মারধোর করবে নাকি?

না স্যার।

তাহলে!

অনাদিবাবুর হুকুম।

বাবুটি কোথায়?

জেলাপরিষদ আফিসে একটা মিটিং করছেন।

দেখলাম চেনার থেকে অচেনা লোকের ভিড় বেশি। মনে হয় ফিস ফাস হয়ে গেছে।

তা বেশ।

দেবাদের দেখলাম কোল্ডড্রিঙ্কসের ক্রেট তোলাচ্ছে।

অনিমেষদার দিকে তাকালাম।

তুই কি আমাদের গাড়িতে উঠবি?

না। বড়োমার গাড়িতে। ওখান থেকে বেরবার সময় কথা দিয়েছিলাম।

এখন শরীর ফিট।

কেন স্যারের শরীর খারাপ নাকি? এসপি বলে উঠলেন।

না কাল রাতে ঘুমোয়নি। কলকাতা থেকে তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এলো।

এসপি আমার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলো। এই হাসির মধ্যে অনেক অর্থ লুকিয়ে রয়েছে। অনিমেষদাদের চোখ এড়াল না।

যাওয়ার পথে একবার নার্সিংহোমে নামবো। এসপির দিকে তাকালাম।

অনেকদিন দেখিনি।

অবশ্যই। কেন যাবেন না।

মারধোর খাওয়ার ভয় নেই?

এসপি হাসলেন।

আমি বড়োমার গাড়িতে উঠলাম একবারে প্রথম সিটে। আমার পাশে ছোটোমা বসলো। মাঝখানে জ্যেঠিমনি, বড়োমা, বৌদি। পেছনে দামিনীমাসি।

সারাটা রাস্তা ছোটোমা আর বৌদির টিপ্পনি শুনতে শুনতে নার্সিংহোমের সামনে এসে দাঁড়ালাম।

তিনটে গাড়ি থেকে তিনজন নামলাম। আমি, ডাক্তারদাদা, মিত্রা। এসপি সাহেব এগিয়ে এসেছেন। দূরে দূরে ছোটো ছোটো জটলা। অপজিটের সেই চায়ের দোকানটা দেখলাম আরও বড়ো হয়েছে। অনেক বেশি গোছান। বেশ ঝক ঝকে। একবার চারদিক চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম।

গেটের মুখে আসতেই একজন স্যুটটাইপরা ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন, আসুন স্যার, আসুন ম্যাডাম। আমি থমকে দাঁড়িয়ে চারদিক একবার চেয়ে দেখলাম। অন্ততঃ পক্ষে একশো জোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যাঁ আমার লোক ঠিক ঠাক কাজ করছে।

বুকের ওপর হাত তুললাম, আমি অনিন্দ ব্যানার্জী, লোকে আমাকে অনি ব্যানার্জী নামে ডাকে।

আপনার নাম শুনেছি স্যার।

ভেতরে এলাম।

আমার চোখ যে চারদিকে বনবন করে ঘুরছে সেটা এসপির চোখ এড়াল না। আগের থেকে তুলনামূলক ভাবে নার্সিংহোমটা অনেক বেশি আধুনিক হয়েছে। মিত্রার ঘরে এসে বসলাম। মিত্রা, ডাক্তারদাদা একপাশে নিজের চেয়ারে। আমার পাশে এসপি।

ভদ্রলোক আমাদের পেছন পেছন এই ঘরে ঢুকেছেন।

স্যার কফি বলি।

কিরে অনি খাবি নাকি? ডাক্তারদাদা আমার দিকে তাকাল।

এখন ভালোলাগছে না। আপনারা খেলে আনতে পারেন।

ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকালাম।

আপনি বসুন, একটু কথা বলবো।

এসপি উঠে দাঁড়ালেন।

আমি আসি স্যার।

না না আপনি বসুন।

এইবার ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম।

আপনি এই নার্সিংহোমটা দেখাশুনো করেন?

হ্যাঁ।

আপনার নাম?

ওরে ও আমার ছাত্র। কৌস্তভ। খুব ভালোছেলে। বড়ো ডাক্তার। ডাক্তারদাদা বললেন।

আমি ডাক্তারদাদার কথাটা কানে না তুলেই কথা বলে যেতে লাগলাম।

আপনি কতোদিন এই নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত?

দশ বছর।

এখানকার স্টাফেরা ঠিক ঠাক তাদের পারিশ্রমিক পাচ্ছেন?

এগুলো স্যার নার্সিংহোমের ভেতরের ব্যাপার আপনাকে বলা যাবে না।

বুঝলাম অনেক বেশি ধূর্ত। প্রথম চোটেই বেড়াল মারতে চায়।

আমি এবার ব্যাগের চেনটা খুললাম। মিত্রা ডাক্তারদাদা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। এসপিও আমার দিকে তাকিয়ে। প্রথমে চশমাটা বার করে চোখে লাগালাম। একটা কাগজের রোল বার করলাম। গাডার খুলে একটা চিঠি ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম। আর একটা মিত্রার হাতে আর একটা ডাক্তারদাদার হাতে আর একটা এসপির হাতে। আর একটা আমি নিয়ে বসে রইলাম।

দয়াকরে আপনারা চারজন একটু চোখ বুলিয়ে নিন। বোল্ড অক্ষরের লাইনগুলোয় চোখ বোলালেই বুঝতে পারবেন।

নিস্তব্ধ ঘর।

প্রথমে কৌস্তভবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন স্যার বলে।

বসুন বসুন। উঠে দাঁড়াবার প্রয়োজন নেই।

মিত্রা ডাক্তারদাদা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ম্যাডাম আপনি প্রথমে এই কাগজে একটু সই করে দেবেন।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে। চোখে মুখের বিস্ময় ভাবটা নিবিড়ভাবে জরিপ করার মতো।

আপনার একটা স্ট্যাম্প মেরে দেবেন।

মিত্রা আমার হাত থেকে কাগজটা নিল।

কৌস্তভবাবু, তারপর আপনি সই করে দেবেন, ডাক্তারবাবু তারপর আপনি। এসপি সাহেব আপনিও একটু সই করে স্টাম্প মেরে দিন।

আমার স্ট্যাম্পটা গাড়িতে আছে।

দয়া করে যদি একটু কষ্ট করে নিয়ে আসেন।

আনছি স্যার।

কৌস্তভবাবু মাথা নীচু করে খস খস করে একটা সই করে দিলেন।

সইয়ের নিচে আপনার স্ট্যাম্পটা একটু মেরে দেবেন। রিপিড করলাম। ম্যাডাম আর ডাক্তারবাবুর স্ট্যাম্পটাও একটু লাগিয়ে দেবেন।

ভদ্রলোক আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।

পর পর তিনজনে সই করলো। কৌস্তভবাবু স্ট্যাম্প লাগালেন।

এসপি সাহেব ঘরে ঢুকলেন সাইন করলেন স্ট্যাম্পও লাগালেন।

আমি কৌস্তভবাবুর দিকে তাকালাম।

অনি ব্যানার্জী মারা যাবার আগে একটা উইল করে গেছিলেন, সেখানে অনি ব্যানার্জীর নামে যে কটি নার্সিংহোম ছিল তার সত্ত্ব অনিন্দ ব্যানার্জীর নামে দিয়ে যান। আপনাদের এই নার্সিংহোমের সমস্ত শেয়ার তিনি হস্তান্তরিত করে যান। আমি অনিন্দ ব্যানার্জী বিদেশে থাকি। সুপ্রীমকোর্ট থেকে তার প্রবেড নিই। আমি সংক্ষেপে বললাম, ডিটেলসে তাই লেখা আছে ওখানে।

হ্যাঁ স্যার।

মালিকানার সর্ত হিসাবে আপনাকে কয়েকটা জিনিষ চাইব, দয়া করে আপনাকে একটু সাহায্য করতে হবে। সেটাও ওখানে উল্লেখ করা আছে।

হ্যাঁ স্যার।

যেহেতু আপনি দায়িত্বে আছেন তাই আপনাকে আমি গত আঠার বছরের এ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টটা আমাকে দিতে অনুরোধ করছি।

ওটা অডিট ফার্মে আছে।

খুব ভালো।

ভদ্রলোক কেমন ভাবে যেন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

আপনার কম্পিউটার মেসিনে আজকের এই মুহূর্তের ক্যাশ ব্যালেন্স, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, আউটস্ট্যান্ডিং কি আছে তার একটা স্টেটমেন্ট আমাকে দিন।

সেটা অডিটরের সঙ্গে কথা না বলে দিতে পারবো না।

আপনাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে। এসপি সাহেব আপনি একবার লোকাল থানার ওসিকে ডাকতে পারবেন আমি একটা এফআইআর করতে চাই।

এখানে মালিক এবং চেয়ারম্যান বসে আছেন আপনি তাদের বলুন।

আমি আমার ব্যক্তিগত স্বার্থটা বুঝি। বাকিটা বুঝি না। আপনি দায়িত্বে আছেন আপনাকে চেয়েছি। আপনি আপনার মালিক চেয়ারম্যানকে বলতে পারেন। তাছাড়া অন্য একজন মালিক এবং চেয়ারম্যানের কাছে কি চাইব না চাইব সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনাকে সাজেসন দিতে বলিনি। আপনি খাতায় কলমে এই নার্সিংহোমের দায়িত্বে আছেন। আপনার কাছ থেকে আমি ব্যাপারটা বুঝে নেব।

আমাকে পাঁচমিনিট সময় দিন।

আমি কিন্তু এখানে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবো না কৌস্তভবাবু।

কৌস্তভবাবু বেরিয়ে গেলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই একজন ওয়ার্ডবয় কফির ট্রে নিয়ে ঢুকলো।

স্যার অনিন্দ ব্যানার্জী কে?

আমি ভাই। কেন?

এক ভদ্রলোক কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছেন আপনাকে খুঁজছেন।

এসপি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখে হাসি।

আমি ঘরের বাইরে এলাম। দেখলাম সেই কাউন্টারে বছর তেইশ চব্বিশের একটা ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এলাকারই ছেলে মনে হচ্ছে। কাছে গেলাম।

আপনি অনিন্দ ব্যানার্জী?

হ্যাঁ।

এর আগে তিনবার এসেছিলাম।

কেন ভাই?

ছেলেটি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

আপনি জানলেন কি করে আমি আজ এখানে আসব?

আমাদের কাছে খবর থাকে।

বলুন।

এই খামটা স্বরূপদা পাঠালেন।

ও। স্বরূপ কাছাকাছি কোথাও আছে?

খামটা হাতে নিলাম। ভালো করে মুখটা একবার দেখে নিলাম।

না।

ঠিক আছে। আমি কথা বলে নেব।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/nKwcZvm
via BanglaChoti

Comments