❝কাজলদীঘি❞
জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩ নং কিস্তি
—————————
দেখলাম কনিষ্ক।
ফনটা ধরতেই তেড়ে খিস্তি। তারপর বললো তোর মিত্রার বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। মৈনাক হারামী এমনভাবে বললো, কিছুই বুঝতে পারলাম না। ওদের আবার ঠিক মতো ডিরেকসন দিলাম।
কে-রে?
ডাক্তাররা আসছে।
এর মধ্যে আবার ওরা!
কেন তোর ভালো লাগছে না।
আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। তোর বন্ধু নয়তো, এক এক জন এক এক পদ।
ম্যাডাম আপনি বলুন এদের ডাক্তার বলে মনে হয়। মনে হয়না এরা ছ্যাবলা। চিকনা বললো।
তবু ওরা ডাক্তার, ডাক্তারদাদা বলছিল ওদের বেশ নাম ডাক আছে।
আমার দিকে তাকাল, ভেতরে চল বৌদি হলুদ মাখাবে বলছে।
হলুদ আবার কেন?
তুমি জান না। চিকনা এমন ভাবে মুখ ভ্যাংচালো মিত্রা হাসতে হাসতে আমাকে ধরে ফেলল।
চিকনারটা কিন্তু শোনা হয়নি।
মৈনাকদারটা শোনার পরও আমারটা শুনতে হবে।
মিত্রা হাসছে।
সবাই ভেতরে এলাম। ছোটোমা এগিয়ে এলো। আমার সামনে এসে দাঁড়াল চোখে মুখে হাসির ছটা।
তোর বন্ধুগুলো কি সব তোর মতো?
কেন?
তোর গ্রামের বন্ধু আর শহরের বন্ধুর মধ্যে কোনও পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি না।
ডাক্তাররা আসছে।
ওদের কে বললো!
মৈনাক। বুঝতে পারছো এবার।
সব তো লণ্ড ভণ্ড করে দেবে।
অনির বিয়ে বলে কথা। এই জন্য অনি চুপি চুপি সারতে চেয়েছিল।
ছোটোমা আমার মাথাটা টেনে নিয়ে কপালে চুমু খেলো।
বাইরে গাড়ির তারস্বর হর্ণ বেজে উঠলো।
এইরে ওরা এলো। যাই দিদিকে গিয়ে বলি। ছোটোমা ভেতরে গেল।
আমি বেরিয়ে এলাম।
সেদিন ছিলো ছয়জন আজকে আরও চারজন জুটেছে। সবাই হই হই করতে করতে ভেতরে এলো। বাকি চারজনের সঙ্গে ওরাই সবার পরিচয় করিয়ে দিল।
কনিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো। বড়োমা।
ষাঁড়ের মতো চেঁচাছিস কেনো।
দাদা, মল্লিকদা, স্যারকে দেখতে পাচ্ছি না।
একটু বাইরে গেছে, এখুনি এসে পরবে।
ম্যাডাম এটা কি হলো। কথাছিল রবিবার। কনিষ্ক আবার চেঁচিয়ে উঠলো। নীরু।
বল না, ওরকম করিস কেন। নীরু মেয়েদের মতো কথা বলতে শুরু করেছে।
তোর সঙ্গে আগে অনির বিয়েটা সেরে নে, তারপর ম্যাডামের সঙ্গে হবে।
সেটা আবার কিরে! বড়োমা বললো।
তুমি বুঝবে না। দেখনা কি হয়। দুজনের এনগেজমেন্ট আজ থেকে আট বছর আগে হয়েছে।
মিত্রা আমার পাশে, সবাই চারিদিকে ভিড় করে আছে। ওরা আমাকে মিত্রাকে ঘিরে ধরে আছে। সবাই হাসা হাসি করছে।
নীরু এগিয়ে এলো। বলোনা তুমি আমাকে কবে বিয়ে করবে? কবে ঘরে তুলবে?
চিরিদিক একবার দেখে নিলাম আমাকে কে কে লক্ষ্য করছে। খুব গম্ভীর হয়ে দিলাম নীরুর তলাটা টিপে। একমাত্রা মিত্রা ছাড়া কেউ বুঝতে পারল না।
মিত্রা মুখে হাত দিয়েছে।
নীরু অক করে উঠে ছিটকে দূরে সরে গেল।
বটা চেঁচিয়ে উঠলো।
কিরে নীরু পেনিসিলিন না ট্যারামাইসিন?
কনিষ্ক বড়ো বড়ো চোখ করে বললো, এরই মধ্যে অনি হাত….।
তবে। হাতকি সাফাই বলে কথা। বটা বলে উঠলো।
আমি গম্ভীর হয়ে হাসছি। নীরু গিয়ে সোফায় বসে পরেছে।
বাপ আমায় একটা সম্পত্তি দিয়েছে করে কম্মে খাওয়ার জন্য, তাও যদি হরণ হয়ে যায়, থাকব কি নিয়ে।
ঘর ভর্তি সবাই হেসে উঠলো।
এরপর হলুদ মাখা মাখি হলো। কেউ বাদ গেল না। এমনকি ইসলামভাইকে পর্যন্ত হলুদ মাখান হলো। তার মধ্যেই কনিষ্ক গিয়ে বড়োমার সঙ্গে কি কথা বললো। বড়োমা শুধু হেসে বললো।
তোরা দেখিস বাবা। তোদের বন্ধু।
কাল মিত্রা ঠিক কথা বলেছিল, তোকে নিয়ে পুতুল খেলব। তুই না করবি না।
আমি সত্যি আজ গোবর গণেশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এমনকি ভজুরাম, সে পর্যন্ত আমার মুখে হলুদ মাখিয়ে চলে গেল। কি আনন্দ তার। এতগুলো লোকের আতিথেয়তার কোনও খামতি ওরা রাখেনি।
যে যার ইচ্ছে মতো ছবি তুলছে। হই-হট্টগোল হাসাহাসি। একমাত্র দাদা, ডাক্তারদাদা, মল্লিকদা এখনও ফিরল না । মনে হয় অফিসের দিকে একবার গেছে।
হলুদ মাখামাখি শেষ হতেই কনিষ্করা আমাকে এসে ঘিরে ধরলো। ম্যাডাম অনিকে একটু ছাড়তে হবে। মিটিং আছে ওর সঙ্গে।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল, ওকে ইশারায় বোঝাবার চেষ্টা করলাম, না বল। ও তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। ব্যাপারটা এরকম ডাকছে যখন যা না।
অনি, ম্যাডাম না বললেও তোকে তুলে নিয়ে যাব এটা মাথায় রাখিস। বটা বললো।
বুঝলাম বেগতিক।
বড়োমা, ছোটোমা, বৌদি হাসে।
বটা চেঁচিয়ে উঠলো, বড়োমা কোন ঘরে।
তোরা কি এখনই করবি ওই সব।
হ্যাঁ।
তাহলে ওই ঘরে যা। স্নানটা সেরে নিলে হতো না।
আমি ওদের কথা শুনে আঁচ করার চেষ্টা করছি কি করতে চায়।
ওটা পরাস না চুলকুনি হবে। বড়োমার চোখে মুখে কাকুতি মিনতি।
ওষুধ দিয়ে দেব তোমায় ভাবতে হবে না। কনিষ্ক বললো।
এ ওর মুখের দিকে তাকায়।
নীরু মালগুলো নিয়ে আয়।
নীরু লাফাতে লাফাতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। ওরা আমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে ঘরে চলে গেলো।
হই হই রই রই। হাসা হাসি।
ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো।
শালা তুই সবাইকে ভুগিয়েছিস এবার তোকে একটু ভোগাই। কনিষ্ক বললো।
বলবি তো কি। কি করতে চাস তোরা। আমি বললাম।
পাজামা পাঞ্জাবী খোল।
নেংটো হয়ে নৃত্য করবো।
দরজা ধাক্কা দেবার শব্দ। বটা দরজা খুললো। নীরু ভতরে এলো।
সোহাগী তুমি আজ আমায় একটু ঝেঁটার বাড়ি মারো।
গাণ্ডু।
দেখলাম বটা প্লাসটিকের প্যাকেট থেকে সেই ওঝার জামা কাপর কৌপিন উইগ দাড়ি গোঁফ বার করেছে। কমণ্ডুল লাঠি। এমনকি সিঁদুর পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
ওরে শালা এগুলো কোথা থেকে নিয়ে এলি?
কনিষ্ক সিগারেট বার করে দিল।
নে দুটান মেরে নে।
ধরালাম।
কিরকম দিলাম বল। অনিকেত বললো।
দারুণ। শালা নীরুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এই হারামী নীরু। আমি চেঁচালাম।
বলনা।
একটু নারকেল তেল আর একটা ছেঁড়া কাপরের টুকরো বড়োমার কাছ থেকে নিয়ে আয়।
কেন!
হলুদ মুছতে হবে না।
নীরু দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
একটু ফাঁক হতেই দেখলাম সবাই উৎসুক চোখে ঘরের দরজার দিকে চেয়ে বসে আছে।
হ্যাঁরে কনিষ্ক।
বল।
বড়োমা বলছিল পরলে চুলকোবে সেটা কি রে ?
সব দিকে কান আছে।
আমি হাসছি।
অনেক কষ্টে নীরুর রুম থেকে তোর কৌপিনটা খুঁজে বার করেছি, বাকি সব কিনে এনেছি।
আবার নীরুর ঘাড় ভেঙেছিস!
তাহলে কি, শালা পেটে হাত বুলিয়ে বহুত কামাচ্ছে।
খোল খোল দেরি করিস না। অনিকেত বললো।
দাঁড়া না মুখটা মুছি আগে।
দরজায় ধাক্কা দেওয়ার শব্দ। বটা গিয়ে খুললো। দেখলাম মৈনাক, দেবা, নীরুর সঙ্গে ঘরের ভেতর এলো।
তোরা এলি কি করতে?
সেদিন গল্প বলেছিস, আজ দেখি ভাল করে।
বটা এটা কি হলো। মৈনাক বললো।
কেন তোর আবার কিসের চুলকুনি।
অনি হারামী সেই কেশ পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে। কচি কচি মেয়েগুলো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
প্যান্টের চেন খুলে রাখবে ধরলেই দোষ। অনিকেত বললো।
তোরা ওর একটা কিছু বার কর।
ও এখন কাপর ছাড়ছে, পারলে একটু হাত বুলিয়ে দে, দেবা মোবাইলে ছবি তুলে রাখছে।
বোকা…।
পুরো দেনা। আজ কেনো আধা আধা বাপের কথায় সুতো বাঁধা।
আমি হাসছি।
হাসিস না তোর মালটা অনেক দিন পর ঝারলাম।
ওরা পুরোটা জানে।
মৈনাক শালা জানে, দেখছিস না মুখ ফোলাল।
কিরে অনি কলসি থেকে জল গড়িয়েছিস। কনিষ্ক বললো।
চেঁখে দেখেছি।
নোনতা না মিষ্টি।
দুটোর মাঝামাঝি।
শালা, দুদিন পর তো আমি দেখবই। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
তার আগে তোর বউটাকে নিয়ে একরাত দীঘায় কাটিয়ে আসব।
দেখলি দেখলি বটা অনি কি কথার কি মানে করলো।
কেন তুমি বাচ্চা দেখতে গিয়ে হাত ছোঁয়াবে ও করলেই দোষ।
তাহলে আমরা সবাইকে করি।
সবাইকে করো না ওর বউকে করবে।
নীরু চুপ করে গেল।
আমি পাজামা পাঞ্জাবী খুলে সেই রক্তবর্ণ চেলি পরলাম। মাথায় উইগ দাড়ি গোঁফ। মাথায় লাল টিপ লম্বা করে। বরং সেদিনের থেকে একটু সময় নিয়ে ভালো করে সাজলাম।
ওরা ভেতরেই হই হই করে উঠলো। দরজায় দুচারবার ধাক্কার আওয়াজ পেলাম।
গুরু সেদিনের মতো একটু করবে। নীরুকে ফিট করছি, বাইরে গিয়ে। বটা বললো।
ঝাঁটা লাগবে।
তুই শালা আমাকে আজও ঝেঁটা মারবি। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
ঠিক আছে, তাহলে হবে না।
অভিনয় করতে গেলে কয়েকটা ঝাঁটার বাড়ি খেতেই হবে। কনিষ্ক বললো।
ক্যানসেল।
বটা আমি কিছু জানিনা। কনিষ্ক বললো।
তুই আজকে কনিষ্কের ভূত ছাড়া। নীরু বললো।
সেকিরে, আমাকে কি ভূতে ধরেছে।
তাহলে মৈনাকের।
আমাকে ক্ষমা দে। সকাল থেকে অনি আমার প্রেসটিজ পিসে মেরে দিয়েছে।
ঠিক আছে তোদের মন রাখতে আমিই বলির পাঁঠা হই। নীরু বললো।
নীরু দরজা খুলতেই দেখলাম মিত্রারা সবাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। আমাকে এক ঝলক দেখে ওদের সে কি হাঁসি। সবাই গড়াগড়ি খায়। শুধু কানে এলো, বড়োমাগো তোমার ছেলেকে দেখবে এসো।
দরজা বন্ধ।
আমি রেডি হলাম।
তোকে কিন্তু দারুণ মানিয়েছে অনি। দেবাশিস বললো।
তুই শালা সব মোবাইলে তুলেছিস?
হ্যাঁ।
অদিতিকে দেখিয়ে খুশবু নিবি।
মিত্রাকেও দেখাব।
হারামী।
দরজা খোলা হলো। আমি বেরলাম। গম্ভীর মুখশ্রী। আমাকে দেখে সকলে এতো জোরে হেসে উঠলো। নীরু ব্যাটা পর্যন্ত উঠে দাঁড়াল। আমার ভূত পালিয়ে গেছে অনি তোকে আর ভূত ছাড়াতে হবে না। ওরা যে যার ইচ্ছে মতো ছবি তুলছে। দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা হাসতে হাসতে সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে।
বটা এগিয়ে গিয়ে বড়োমাকে ধরে নিয়ে এলো আমার সামনে। দেখো তোমার ছেলেকে চিনতে পারো। তবু মেকআপটা সেদিনের মতো হয়নি।
বড়োমা আমার মুখে হাত দিয়েছে।
কনিষ্ক বলে উঠলো হাত দিও না খুলে যাবে।
সে এক হই হই ব্যাপার।
চিকনা এসে শাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলো। বড়োমা এতো গুণীনকাকার বাবাগো।
আবার হাসির রোল।
ছোটোমা এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। মিত্রা এসে আমার দাড়িতে একবার হাত বোলাল। যে যার ইচ্ছে মতো ছবি তুলছে, হাসছে। সুরো এগিয়ে এসে আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো, সত্যি অনিদা তো।
নীরু বড়োমাকে জড়িয়ে ধরে বললো দেখছো এই বেশে সেদিন আমাকে ঝেঁটার বাড়ি মেরেছিল। যতো নষ্টের গোড়া ওই কনিষ্ক। ফিটিং করেছিল কে, না মৈনাক, তুমি বলো।
বড়োমা হাসছে।
এবার খুলে ফেলি কুট কুট করছে। আমি বললাম।
তোরা ওকে ওইটা পরিয়েছিস! বড়োমা বললো
পরাব না মানে। কনিষ্ক বললো।
বড়োমা আমার কাপরে হাত দিল।
এই দ্যাখো, দাঁড়াও সবাই আছে। আমি বললাম।
আবার হো হো করে হাসি।
খোল তুই আগে। ছোটোমা এগিয়ে এলো।
ঘরে যাই।
এখানে খোল।
ভারি মজা না। একবারে ভ্যার ভ্যার করবে না। পগল পেয়েছো।
তোরা এরকম করলে, পাগল হতে কে বাকি থাকবে।
দামিনীমাসি কাছে এসে মুখে কাপর চাপা দিয়েছে। ভাল করে আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
নীরু কাছে এলো, অনি সেই ডায়লগটা একবার দে কানে এখনও বাজে।
ফিস ফিস করে বললাম হারামী।
বড়োমা দেখছো, অনি গালাগালি দিচ্ছে।
ওরা যে যার ওদের মতো হাসছে।
ইসলামভাই এগিয়ে এলো। মোবাইলটা মিত্রার হাতে দিয়ে বললো, মামনি আমার সঙ্গে সাধুবাবার একটা ছবি তুলে দে।
সবাই ছবি তুললো আমি বড়োমা, ছোটোমা, দামিনীমাসি, বৌদি একটা ছবি তুললাম। মিত্রার সঙ্গে আলাদাকরে ছবি তোলা হলো, বিভিন্ন পোজে। দাদার সঙ্গে ছবি তুললাম। ওরা যে যার ইচ্ছে মতো ভিডিও স্টিল করছে। আমার মোবাইলটা নিয়ে এসে মিত্রা ইচ্ছে মতো ছবি তুললো। শেষে আমি উইগ খুলে বাথরুমে ঢুকলাম।
ভালো করে স্নান করলাম। মিত্রা এসে পাজামা পাঞ্জাবী দিয়ে গেল। স্নান সেরে বেরলাম।
মিত্রা দেখলাম আমার আগে রেডি হয়ে গেছে। এগিয়ে এসে আমাকে চিরুনিটা দিল। আমি চুলটা আঁচড়ালাম। খাওয়ার জায়গা করা হচ্ছে। কর্নারের টেবিলে ভিড়, সবাই চেঁচা-মিচি করছে। হাসছে।
ওখানে কি হচ্ছে রে?
সবার তোলা ছবি টিনা ল্যাপটপে লোড করছে।
কোন ছবি?
গায়ে হলুদ তোর ওঝা সাজা।
অনিদা। মিলি এদিকে ফিরে ডাকলো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
চোখে মুখে খুশির ছোঁয়া।
দেখবে না।
তোমরা দেখো, পরে দেখছি।
মিত্রা হাসছে।
রীতি অনুযায়ী বাড়ির সকল গুরুজনকে আমি মিত্রা পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
ডাক্তারদাদা মাথায় হাত দিয়ে বললেন, যাই বল অনি তোর গল্পের সঙ্গে চরিত্রটা বেশ মানানসই।
মল্লিকদার হাসি আর থামান যায় না।
আমি মল্লিকদার দিকে তাকালাম।
তাকাসনি। একটা আর্টিকেল নামাচ্ছি জমপেশ করে। সাধুবাবার কাহিনী। টিনাকে বলেছি ছবিগুলো বেছে রাখ কাজে লাগাব।
ছোটোমা এলো। পেছনে বৌদি। দুজনের হাতে মিষ্টির প্লেট, জলের গ্লাস।
কি হয়েছে গো। ছোটোমা, মল্লিকদার দিকে তাকাল।
অনিকে বললাম ওই কথাটা।
ছোটোমা টেবিলে মিষ্টির প্লেটটা রেখে হাসতে আরম্ভ করলো।
কিরে ছোটো! বৌদি বললো।
ও অনিকে নিয়ে লিখবে, সাধুবাবার কাহিনী।
সত্যি দেখ, এখন ওকে দেখ, তখন কিরকম সেজেছিল। আমি সুরোর মুখ থেকে শুনেছিলাম, বিশ্বাস করিনি, আজ তো দেখছি সত্যি ও এসব করেছিল।
মৈনাকের কথা তখন শুনলে না।
মিত্রা হেসে ফেললো। ছোটোমা, বৌদি দুজনেই হাসে।
দাদা বললো ছোট এই ব্যাপারটা আবার কি?
আপনাকে শুনতে হবে না।
আচ্ছা থাক।
সব কিছুতে তোমার ইন্টারেস্ট কেন এডিটর। ডাক্তারদাদা বললো।
দাদা হাসছে।
খাবার জায়গা করেছি, চলুন বসে পরবেন।
ওরা বসুক আগে।
সবাই একসঙ্গে। এরপর অনেক কাজ।
ওরা সবাই বেরিয়ে গেল। ছোটোমা বেরবার আগে বললো।
দিদি তুমি ওদের দুটোকে মিষ্টিটা খাইয়ে এসো।
আমি বৌদির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।
তুই এতো করার সময় পেতিস কি করে বলতো?
আমি না কনিষ্ক।
কনিষ্ককে জিজ্ঞাসা করলে বলে এসবের হোতা অনি। তোকে জিজ্ঞাসা করলে বলিস কনিষ্ক।
নে খেয়েনে দুটোতে।
একটা খাব বৌদি। বাকিটা মিত্রা খাক।
আমি কি রাক্ষস নাকি। তুই খা।
তুই তো খেতে ভালোবাসিস।
এই শুরু করলি।
কিরে দুটো মিষ্টি খেতে বেলা বইয়ে দিলি যে। ছোটোমা আবার ঘরে ঢুকলো।
নে নে, খেয়ে নে।
আমি একটা খাব।
আমিও।
তোরা কি যুক্তি করে চলছিস—
হাসলাম। ওরা খেতে বসেছে?
দেখ না গিয়ে একবার, নীরুটাকে নিয়ে কি করছে, ও বেচারা প্লেট হাতে নিয়ে দিদির পেছন পেছন ঘুরছে।
দাঁড়াও আমি যাই। না হলে ওরা থামবে না।
মিষ্টিটা খেয়ে নে।
আমি একটা নিয়ে মুখে দিলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, তুই খেয়ে আয়।
আমি আসতেই নীরু বলে উঠলো, অনি তুই বল, আমাকে এরা একটু শান্তিতে খেতে দেবে না?
অনি একবারে এদিকে মাথা গলাবি না। আজ তোর বিয়ে। বটা চেঁচিয়ে উঠলো।
ওকে খেতে দে।
ওকি শুঁকছে। দুবার নেওয়া হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা কর মাসিকে। কনিষ্ক বললো।
দামিনীমাসি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আচ্ছা তুই মিলিদের কাছে বসবি চল। আমি বললাম।
ওকিরে! ওরতো আছে তার ওপর উপরি। কনিষ্ক বলে উঠলো।
যতই হোক ঝাঁটা পেটার গুণ বুঝলি কনিষ্ক। বটা বললো।
মিলিরা মুখ নীচু করে হাসছে।
অনি একটা বোম ঝারবো। নীরু বললো।
দাঁড়া খেয়ে উঠি তোর বোম ফাটাব। কনিষ্ক বললো।
দেখলি অনি দেখলি, এবার তুই সামলাবি।
মিত্রা ঘর থেকে বেড়িয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়াল
কেন তুই বলতে পারছিস না। তোদের আমার কাছে আসতেই হবে।
বটা হয়তো আসবে, কনিষ্ক আসবে না। নীরু বললো।
কেন।
তোকে পরে বলবো।
পরে বলাবোরে ছাগল। এখন মাংস চিবচ্ছি একটু পর তোর হারগুলো খাব।
নীরু, কনিষ্কর দিকে তাকাল ইশারায় বললো, কলা।
বড়োমা তুমি এখান থেকে যাও তো। কনিষ্ক চেঁচাল।
কেন বড়োমা থাকলে তোর অসুবিধা আছে। নীরু বললো।
আছে। তোকে ধুতে পারছি না।
কাচলি কোথায় যে ধুবি।
সবাই হাসে।
নীরু তুই বরং বাড়ি চলে যা। আমি বললাম।
কখনই না। বাড়িতে বলে এসেছি রাতে খাব না। চেম্বার বন্ধ করেছি।
বটা দেখতো পকেটটা। কনিষ্ক বললো।
কেন।
চেম্বার বন্ধ করেছে আজ, তারমানে আজকের কামাই গতকাল করে নিয়েছে। কনিষ্ক বললো।
সকালে অনির ড্রেস কিনতে ফুটে গেছে।
অনির জন্য কি কিনেছিস! বড়োমা ফুট কাটল।
ওই যে লাল কাপড়, দাড়ি। দেখলে না।
বড়োমা না হেসে থাকতে পারলো না।
কনিষ্ক একবার কট কট করে তাকাল নীরুর দিকে।
আমি হাসছি।
ম্যাডাম, অনি বিয়ে করছে, হনিমুন স্পট বেছেছেন। কনিষ্ক বললো।
তোমাদের বন্ধু জানে।
কিরে অনি, ভালোপাহাড়?
আমি হাসছি।
সেটা আবার কোথায়! মিত্রা বললো।
কেন আপনাকে বলেনি!
না।
ওটা একটা পাগল বুঝেছেন ম্যাডাম। তবে ওর পাগলামির সামিল আমরাও।
সবাই কনিষ্কর দিকে তাকাল।
এতে একটা উপকার হয়েছে। টাকা পয়সা কিছু জোটেনি। প্রচুর মানুষ দেখেছি, আর প্রণভারা ভালোবাসা কাকে বলে তা অনুভব করেছি।
কনিষ্ক ক্যাজুয়েলি কথাটা বললো, কিন্তু কথাটার মধ্যে এতটাই সংবেদনশীল মনের পরিচয় দিল, সারা ঘর নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
চুপচাপ সবাই খেয়ে যাচ্ছে।
তুই এর মধ্যে কি ওখানে যাবি। বটা আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।
দেখি।
গত সপ্তাহে অনিকেত গেছিল। শ্যামের কাছে ওষুধ পত্র দিয়ে এসেছে। নীরু তুই কবে যাবি?
মঙ্গলবার যাওয়ার কথা।
ম্যাডাম, আমাদের একটু সন্দেহের চোখে দেখছেন, তাই না? বটা বললো।
ব্যাপারটা ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না। অনিকেত বললো।
কনিষ্কের কথায় মিত্রা ফ্যাল ফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে।
কনিষ্ক হাসলো। অনির গল্প বলতে গেলে মাস পাঁচেক টানা বলতে হবে। তবে যদি শেষ হয়।
একটু থেমে।
মাসি।
দামিনীমাসি সারা দিল।
কিগো থামলে কেন। গোটা চারেক ঠ্যাং নিয়ে এসো।
আবার সবাই নিজের জায়গায় ফিরে এলো।
এই ফাঁকে নীরুর খাওয়াটা শান্তিতে হলো। ওরা খেয়ে দেয়ে উঠলো। হাতমুখ ধোয়ার পর কনিষ্ক মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, ম্যাডাম একটু মাঠের দিকে গিয়ে বসলে হতো না। মিত্রা আমার দিকে তাকাল। আমি ইশারায় বললাম, যা।
আরে ওর পার্মিশন নিতে হবে না। আপনি চলে আসুন। কনিষ্ক বললো।
তুই আপনি বলছিস কেন। মৈনাক বললো।
মাঠে চল, আর ইসলামদার কাছ থেকে একটু পোড়া তেল নিয়ে আয়।
সবাই কনিষ্কের কথায় হাসে।
দেখলি অনি কনিষ্কের কথার ছিরি দেখলি। মৈনাক বললো।
মাঠে চলে যা।
ওরা সব দঙ্গল বেঁধে মাঠে গেল। আমি কিছুক্ষণের জন্য ওদের সঙ্গে গেলাম। তারপর বাড়ির ভেতরে চলে এলাম। ওখানে জোর আড্ডা চলছে। আমি এসে দাদাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম।
দাদারা কেউ খেল না। বললো রাত্রিবেলা একবারে খাবে। আগে কাজ মিটুক। এমনকি ইসলামভাই পর্যন্ত খেল না। একফাঁকে একবার ইসলামভাইকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কিগো রতনরা কই?
সন্ধ্যার সময় আসবে।
তুমি একটা কাজ করতে পারবে?
বল।
একটু অবতার, সাগির আর লক্ষ্মীকে আনতে পারবে?
ইসলামভাই আমার দিকে তাকাল। চোখে জিজ্ঞাসা।
নিয়ে এসো না, আমি বলছি, কিছু হবে না।
দামিনীকে একবার বলি।
বলতে হবে না। কিছু বললে আমার ঘারে দোষ চাপাবে।
ঠিক আছে আমি রতনকে বলে দিচ্ছি।
বলে দাও। আর নেপলারা?
ওরা সকলে আসবে।
ঠিক আছে। আমি আবার এসে দাদাদের কাছে বসলাম।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যে হয়ে এলো। আমি বড়োমাদের কাছে বসে গল্প করছি। ওরা বাগান থেকে উঠে এসে ওপরে মিত্রার ঘরে সবাই গল্প করছিল। হঠাৎ চিকনা চোখ মুখ লালকরে আমার কাছে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরলো, হাউ হাউ করে কান্না। ওর সেই কান্না থামান যায় না।
দেখলাম কনিষ্ক, অনাদি, বাসু, মিলি সবাই নিচে নেমে এসেছে।
এই দেখো পাগলাম করে—কি হয়েছে বলবি তো! কে তোকে বকেছে? বাধ্য হয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে সমানে কেঁদে চলেছে।
কিরে বাসু তোরা কিছু বলেছিস চিকনাকে?
সকলে অবাক।
না।
তাহলে!
কনিষ্কদা তোর সম্বন্ধে গল্প করছিল ও উঠে চলে এলো। তখনই ওর চোখমুখের অবস্থা দেখে বুঝেছি ও তোর কাছে আসছে। অনাদি বললো।
দূর পাগল, কনিষ্ক সব বাজে কথা বলছে আমার সম্বন্ধে, সব বানিয়ে বানিয়ে বলছে, একটাও সত্যি কথা নয়। আমি তোকে সঠিকটা বলবো।
তবু ওর কান্না থামে না।
আমি ওকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম, ওর কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে খেলাম, বোঝালাম।
তারপর ওর কান্না থামে।
বাগান থেকে পায়ে পায়ে ভেতরে এলাম। দেখলাম কনিষ্কর পায়ের কাছে সাগির, অবতার বসে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে বাড়ির সকলে। আমি কাছে গেলাম।
কি হলো কনিষ্ক?
আর বলিস না। পায়ে ধরে কেঁদে গড়িয়ে পড়ছে।
কিরে অবতার আবার কি হলো?
দুজনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
যা আজ কোনও কথা নয়। অনিদার বিয়ে খেতে চেয়েছিলি—তাই তো? কনিষ্ক বললো।
দুজনে মাথা দোলায়।
যা ভেতরে যা, অনেক কাজ। হাতে হাতে সবাই কাজ কর। আমি বললাম।
ওটা ঠাণ্ডা হয়েছে। চিকনাকে দেখিয়ে কনিষ্ক বললো।
হ্যাঁ।
পুরো কাদামাটিরে অনি—
হাসলাম।
মিত্রা আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে।
সবাই ভেতরে এলাম।
এবার লোকজন আসতে শুরু করেছে। মনে হলো সত্যি সত্যি বিয়ে বাড়ি।
ব্রাহ্মণকে দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। রক্তবর্ণ পোষাক, দেখে মনে হচ্ছে তান্ত্রিক হবে। মিত্রার কালেকশন। অনিমেষদা, বিধানদা, অনুপদা, রূপায়ণদা ঠিক সময়ে এলো। নিরঞ্জনদা নিয়ে এসেছে। হিমাংশু ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। বিয়ের আয়োজনের কোনও খামতি নেই দেখলাম। সব মিত্রা, ছোটোমা, বড়োমার ইচ্ছে অনুসারে হচ্ছে।
সন্দীপ, অর্ক, অরিত্র, সায়ন্তন এসেছে। যে যার মতো মজা লুটে নিচ্ছে।
আমার ডাক পড়লো, বৌদি ছোটোমা মনের মতো করে সাজাল। বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসলাম। মিত্রাকে বড়োমা নিয়ে এলো। ঘণ্টা চারেক সময় লাগল। বুঝলাম না কি মতে বিয়ে হলো। যা বললো তাই করে গেলাম। কিছু বাদ থাকলো না।
মিত্রা একটা বেণারসী পরেছে কিন্তু দেখে মনে হলো খুব জমকালো নয়। বাসন্তী রং। বেশ সুন্দর। কেমন যেন পুরনো পুরনো। ডাক্তারদাদা কন্যা সম্প্রদান করলেন। হই হই করে বিয়ে হয়ে গেল। সবাই খুব খুশি। প্রচুর ফটো তোলা হচ্ছে বুঝতে পারলাম।
কার হাতে ক্যামেরা নেই। কনিষ্করা ইয়ার্কি ফাজলামর চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে গেল। যে যেমন ভাবে পারে আনন্দ করছে। আমি শুধু একটা কথাই মনে মনে বললাম, মিত্রা বলেছে, আজকের দিনটা তুই আমাকে দিবি, আমি যেমন ভাবে তোকে দেখতে চাইবো, তুই দেখাবি।
আমি অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করলাম। সই সাবুদ হলো। আমার পক্ষে দাদা, মল্লিকদা, অনিমেষদা মিত্রার পক্ষে বড়োমা, ছোটোমা, বৌদি।
সব কাজ শেষ হতে হতে বেশ রাত হলো। একসঙ্গে বসে খাওয়া হলো। আমার ডাক্তার বন্ধুরা সবাই চলে গেল, যাবার আগে বড়োমাকে বলে গেল, রবিবার সকাল থেকে এসে জ্বালাবে।
দাদা, বড়োমা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা, ইসলামভাই, নীপা, আরও সবাই ও বাড়িতে চলে গেল। কিছু এ বাড়িতে রয়ে গেল। কাল যাবে আমার সঙ্গে। দামিনীমাসি ফিরে গেল। কাল সকালে আসবে।
রাত একটার সময় আমি মিত্রা শুতে এলাম বড়, বৌ-এর পোষাকে। ছোটোমা, বৌদি মিত্রার ঘরে দুজনকে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করলো। আমি ঘরের চারিদকটা চেয়ে চেয়ে দেখছি। গত দশমাস আগে এই ঘরটাই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। সব ঘটনা হুড়মুড় করে আমার সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়ে পরেছে। মিত্রা আমার একেবারে কাছে। মুখের দিকে তাকিয়ে। ওর ভাসা ভাসা চোখ দুটো আনন্দে আত্মহারা। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আবার কি হলো! মন খারাপ করিস না।
না বুবুন আজ আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন।
কেন এতদিন কি নিরানন্দে ছিলি?
না।
তাহলে?
এতদিন আমার কোনও অভিভাবক ছিল না। আজ আমি একজন অভিভাবক পেলাম।
বলতে যাচ্ছিলাম, ডাক্তার…। মুখে এসেও বলতে পারলাম না।
এই দেখো বোকা বোকা কথা বলে।
মিত্রা আমার বুকে মুখ লুকিয়েছে।
আমি ওর মুখটা বুক থেকে তুললাম, প্রস্ফুটিত পদ্ম। দীঘির বুকে জল টল টল করছে। হাওয়ার দোলায় ফুলের পাঁপড়ি থিরি থিরি কেঁপে কেঁপে উঠছে। কেন জানিনা আজ মিত্রাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। হয়তে নববধূর বেশে ওকে আগে কখনও দেখিনি বলে।
তোকে এতো সুন্দর করে কে সাজিয়েছে?
মিলি, অদিতি, টিনা।
দারুণ মিষ্টি সাজিয়েছে তোকে। এই দেখো আবার চোখে জল আসে।
আজ আমাকে একটু কাঁদতে দে।
কেন?
তোকে সম্পূর্ণ দিতে পারলাম না। কিছুটা দিলাম।
তুই সম্পূর্ণ নোস, একথা কে বললো?
আমার বিবেক।
ভুল কথা। সময় বলে একজন ব্যক্তি আছে জানিস। সে ম্যনিপুলেট করে তোকে আমার কাছ থেকে কিছুটা সময় দূরে সরিয়ে রেখেছিল। মনের দিক থেকে আমরা এক ছিলাম।
সেটা তুই মন থেকে মনে নিয়েছিস, আমার মনের মধ্যে সেই খচখচানি এখনও রয়েগেছে।
কেন আমি তোকে কিছু মনে করিয়ে দিয়েছি।
না।
তাহলে এরকম ভাবিস না। তুই কষ্ট পেলে, আমিও যে কষ্ট পাই।
জানিস বুবুন। আজ আমি যা চেয়েছিলাম তাই পেয়েছি।
তাই? আমি কিন্তু আজ একটুও দুষ্টুমি করিনি।
মিত্রা আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেলো।
আমি তোর মতো এখন সাধনা করি।
কি রকম?
তুই বলিস না যে মাটির ওপর দাঁড়িয়ে সাধনা করবে সেই মাটি পর্যন্ত জানতে পারবে না তুমি কিসের সাধনা করছো।
তাই!
মিত্রা চোখ বন্ধ করে মিষ্টি করে মাথা দোলাল।
আমিও সকলকে এই জ্ঞানটা দিই।
হাসলাম।
দেখলাম আমিও সফল।
তাহলে আমি ভুল নয় এটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি বল।
নিশ্চই।
তোকে আমি আজ কয়েকটা কথা বলবো কয়েকটা জিনিষ দেখাব। তুই আমাকে ভুল বুঝবি না।
কেন একথা বলছিস?
হয় তো তুই ভাবতে পারিস মিত্রা নিজেরটা গুছিয়ে নিয়ে এইগুলো দেখাচ্ছে। আগে দেখালে হয় তো এই কাজটা করতাম না।
কেন?
তোকে হারাবর ভয়ে এইগুলো এতদিন গোপন করেছি, বলতে পারিস এই দিক থেকে আমি ভীষণ স্বার্থপর।
তুই স্বর্থপর হলে, আমি তোর পাশে থাকতাম না।
ঠিক বলছিস?
হ্যাঁ।
তোকে দেখালে তুই তোর মিত্রাকে ভুল বুঝবি না?
একটুও না।
আমাকে ছেড়ে চলে যাবি না?
একবারে না।
তোকে দাখাব। তুই জ্যোতিষদাদাকে দেখলি।
কোথায়! কখন এসেছিল?
বাবাঃ চারঘণ্টা ধরে মন দিয়ে তার মন্ত্র উচ্চারণ করে আমাকে অতো যত্নো করে গ্রহণ করলি, আর বলছিস চিনতে পারলাম না।
ওইটা তোর জ্যোতিষদাদা!
হ্যাঁ।
তুই ছাড়া আমরা সবাই এখন ওনার নেওটা।
দেখে মনে হলো ভদ্রলোকের একটু আধটু পড়াশুন আছে।
একটু আধটু নয় অগাধ। যাওয়ার সময় কি বললো জানিস—
কি!
আজকের দিন না হলে উনি তোর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেন।
কেন বার খাওয়াচ্ছিস, আমি কি অবতার না সুপার ম্যান?
তা জানি না। তবে উনি বললেন, ও পৃথিবীতে এসেছে মানুষের উপকার করতে। কিন্তু নিজে বড়ো দুঃখী। শাস্ত্রকে যদি মানি, তন্ত্রসাধনাকে যদি বিশ্বাস করি, তাহলে তুই ঈশ্বরের অংশ বিশেষ। তোর বংশের কেউ না কেউ একদিন সন্ন্যাসী ছিলেন। কিংবা খুব গুণী মানুষ ছিলেন। তুই অনেক উচ্চ বংশের সন্তান। তোদের বংশের মূল জিনটা তুই বহন করছিস।
আমার বংশই নেই, তায় আবার সন্ন্যাস। সাতপুরুষের কাউকে চিনি না। এমনকি নিজের রক্তের সম্পর্কের কাউকে আজও পর্যন্ত চোখে দেখিনি।
তুই কাল মায়ের ফটোটা নিয়ে কাঁদছিলি। বার বার জানতে চেয়েছিস তোর শেকড়।
তুই জানলি কি করে?
আমি যে তোর অস্ফুট চাওয়াগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছি।
তুই শুনেছিস!
মিত্রা আমার চোখে চোখ রাখলো। আমি তোর শেকড়ের সন্ধান দেব।
তুই! কোথা থেকে পেলি?
চুরি করেছি।
কোথা থেকে?
মায়ের আলমাড়ি থেকে।
তাই!
হ্যাঁ।
কি করে বুঝলি?
তোর পথে হেঁটে। প্রথমে ভীষণ ভয় করছিল। তারপর হাঁটতে শুরু করলাম। কি মজা। নেশা ধরে যায়।
আমি মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।
তোর সঙ্গে কতো কথা আছে। তোকে না বলতে পেরে আমার পেট ফুলে যাচ্ছে।
কেন আমি তোর কাছেই আছি।
দুদিন ট্রাই করলাম, তুই ঘুমিয়ে পরলি। ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল তোকে জাগাতে।
ডাকতে পারতিস।
মন থেকে সায় দেয়নি, বিশ্বাস কর।
দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে খাটে এসে বসলাম।
জানিস মিত্রা আজ বার বার এই ঘরটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
কেন!
তুই আমাকে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠালি। তারপর রাতে এই ঘরে ওই সোফাটায় দুজনে বসলাম। আমার কাঁধে মাথা রাখলি। ওই দিন সকাল পর্যন্ত আমার জীবনটা একটা খাদে বইছিল। আট আটটা বছর ধরে সযত্নে তাকে লালন পালন করেছি। এক লহোমায় তুই সব ওলটপালট করে দিলি।
তুই আমাকে তোর সব কথা এখনও বলিসনি।
কে বললো তোকে।
কনিষ্ক আজ মাঠে বসে কিছু কথা বললো।
আমি বালিশটা টেনে নিয়ে বিছানায় শুলাম। মিত্রা আমার বুকের ওপর উঠে এলো।
কনিষ্ক আর নীরু কিছুটা আমাকে চিনেছে। তবু আমি ওদের সময় দিতে পারি না। আমার দেখান পথে ওরা এখনও হাঁটে। বাকি সব ধ্বজা ধরা।
কনিষ্কর কথা শুনে আজ চিকনা কেঁদে ফেললো।
সত্যিতো মনে পড়ে গেছে, চিকনা তখন ওরকম ভেউ ভেউ করে কাঁদল কেন বলতো।
তুই বল কি কথা শুনলে চিকনা কাঁদতে পারে। আর কেউ ওর মতো কাঁদল না। মন খারাপ হয়েছিল সকলের।
কি করে বলবো।
তুই তোর জীবনের একটা রাত জেলে কাটিয়েছিস।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, বোঝার চেষ্টা করলাম, কনিষ্ক কতটা ওদের বলেছে।
কিরে তাকিয়ে আছিস কেন। সাজিয়ে নিচ্ছিস কি ভাবে গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলবি।
হাসলাম। ছিলাম।
কই আগে বলিসনি?
বলে কি করবো। তোর মনের মধ্যে করুণার উদ্রেক জাগাব। বলবো আমার এইসব কথা শুনে মিত্রা তুই আমাকে আরও গভীরভাবে ভালোবাস।
আমি সে কথা তোর মুখ থেকে শুনতে চাইনি।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে এরকম ঘটনা ঘটে, শুধু স্ফেয়ারটা আলাদা।
কনিষ্কর কথা শুনে বড়োমা, ছোটোমা, দামিনীমাসি, ইসলামভাই পর্যন্ত চোখের জল ফেলেছে।
কনিষ্ক ভুল করেছে।
কনিষ্ক ভুল করেনি, কনিষ্ক ঠিক কথা বলেছে। মৈনাক যদি ওকে না খোঁচাত তাহলে তোর এই কথা আমরা কোনওদিন জানতে পারতাম না। তুই নিজের মুখে কোনওদিন কোনও কথা বলিস না।
তোরা সবাই আমাকে দেবতা বানিয়ে দিচ্ছিস। কিন্তু আমি যে সাধারণ মানুষ। খুব বেশি হলে বলতে পারিস তোদের থেকে আমার জীবনের গতিপথ একটু আলাদা।
কনিষ্কর কথা শুনে আমারও কান্না পেয়েছিল। কিন্তু কাঁদিনি। মনটাকে শক্ত করেছি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি, তোর এতো কষ্টের স্বপ্নগুলো সার্থক করবো।
হয় তো কিছুটা হবে, সব হবে না।
তখন মৈনাক হাসতে হাসতে কনিষ্ককে বললো, কনিষ্ক অনি সবার কিছুনা কিছুনা বার করে প্রেসটিজ গ্যামাকসিন করে দিচ্ছে। তুই ওকে আমাদের থেকেও বেশি চিনিস। ওর একটা কিছু বল, একটু মজা করি।
কনিষ্ক বললো বললে সহ্য করতে পারবি।
আমিও তালে তাল দিলাম। বিশ্বাস কর পরে এরকম ঘটতে পারে বিশ্বাস করিনি।
সেদিন তুই কনিষ্ক দুজনে শেয়ালদায় পথ শিশুদের স্কুলে পড়াতে গেছিলি।
মাথা দোলালাম। হ্যাঁ।
বেরনর সময় কনিষ্ক তোকে খেতে বলেছিল।
হ্যাঁ।
তুই খাসনি। বলেছিলি পেট ভর্তি আছে। তারপর বলেছিলি। আমি একটু ব্যারাকপুর যাব।
মিত্রার চোখে চোখ রাখলাম।
কনিষ্ককে তুই এড়িয়ে গেছিলি। কনিষ্ক তোর সেই অবস্থা বুঝতে পেরে তোকে ফলো করেছিল।
তুই জানিস?
না।
তারপর স্টেশনের কলে পেট ভর্তি করে জল খেয়ে ট্রেনে বসেছিলি।
হ্যাঁ।
তুই জানিস সে রাতে কনিষ্কও কিছু খায়নি।
পরে জেনেছি। যখন হস্টেলে গেলাম।
তারপর কি হলো বল।
কেন কনিষ্ক বলেনি।
কনিষ্ক ওই সময় থাকবে কি করে তোর সঙ্গে। ও চলে এসেছিল।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। সত্যি কথা বলবো না মিথ্যে কথা বলবো।
একবারে বানিয়ে বানিয়ে বলবি না। আমি সব জেনেছি। আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই। ঘটনাটা সত্যি না মিথ্যে।
কি হবে শুনে। বুবুনের প্রতি তোর করুণা একটু বেরে যাবে।
তবু তুই নিজেকে ভাঙবি না।
অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল জেলখানায় যারা থাকে তাদের নিয়ে একটা লেখা লিখব। বানিয়ে বানিয়ে লিখতে পারি না। যদি একবার জেল খানায় ঢোকার চান্স পাই। যদি একটু থাকার সুযোগ হয়, তাহলে ওই জীবনটা দেখতে পাব। বেশ ভালো করে লিখতে পারবো। রাত এগারটা চল্লিশের ব্যারাকপুর লোকালে উঠে বসলাম। উইদাউট টিকিট। ব্যারাকপুর এলাম। যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। ট্রেনেই পরে থাকলাম। তারপর একটু বেশি রাতে স্টেশনে নেমে ঘোরাঘুরি করছিলাম। আমাকে সন্দেহভাজন বলে জিআরপি ধরলো।
যাক বাঁচা গেল আমার মনস্কামনা পূর্ণ হলো। ফার্স্ট ট্রেনে আমাকে শিয়ালদহ জিআরপিতে ট্রান্সফার করা হলো। সেই সময় মনে হয় বটা আমাকে দেখেছিল। ও নাইট করে বাড়ি ফিরছিল। ওইই সবাইকে খবরটা দেয়। তারপর ওরা আমাকে ছাড়াল। আমার লেখাটা আর হলো না।
তুই মিথ্যে কথা বললি।
বিশ্বাস কর।
বিশ্বাস করছি না। সার্জারীর হেড ডা. আর.এল দাস স্টেশন ম্যানেজারকে ফোন করেছিল। তিনি সব কথা বলেন ওনাকে। তারপর তোকে ওরা ছাড়ে।
হবে হয়তো।
তারপর বল।
তারপর আর কি, কিছু না।
তুই এখনও মিত্রাকে সব কথা মন খুলে বলতে সংকোচ বোধ করছিস!
বিশ্বাস কর তখন কি বলেছিলাম মনে নেই।
আমাকে তোর এই কথাটা বিশ্বাস করতে হবে! তুই নীরুকে বলিসনি, কেন তোরা আমাকে ছাড়ালি। অন্ততঃ পক্ষে পনেরোটা দিন থাকা খাওয়ার কোনও অভাব হতো না। পনেরো দিনের মধ্যে জেলে একটু বদমাইশি করতাম তাহলে ওটা এক্সটেনসন হয়ে মাস দেড়েক হয়ে যেত।
আমি মিত্রার চোখে চোখ রেখে চুপ করে গেলাম।
তোর তখন কলকাতায় থাকার জায়গা ছিল না। হোস্টেলে পয়সা দিতে পারিসনি বলে তোর জিনিষপত্র আটকে রেখে তোকে বের করে দিয়েছিল।
দামিনীমাসি বললো। মনে পড়ছে না। তবে আমি প্রথমবার ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম দিন পনেরো পর দেখা করো দেখি তোমায় থাকার জায়গা দিতে পারি কিনা। তাই তুই এই পথ বেছে নিয়েছিলি!
আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে, ওর চোখ ছল ছল।
বল এই কথা শুনে যদি চিকনা কেঁদে ফেলে সে কি খুব অন্যায় করেছে। না সে তোকে অন্ধের মতো ভালোবাসে, এটা তার অমার্জনীয় অপরাধ।
মিত্রার গলাটা ধরে এলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার শুরু করলো।
তুই ভাবলেশহীন মুখ করে তাকিয়ে থাকিস না। একটু কথা বল। আমার কি একটুও শুনতে ইচ্ছে করে না। কেন আমি তোর বন্ধুদের মুখে তোর কথা শুনবো।
একটু থেমে চোখটা নতুন বেনরসীর খুঁট দিয়ে মুছে….
তুই ভালপাহাড়ে যাস। সাঁওতালদের সঙ্গে থাকিস। ওদের ওখানে স্কুল করেছিস। কনিষ্কদের নিয়ে গিয়ে ওখানে ওদের চিকিৎসা করাস। বিনা পয়সায় ওষুধ নিয়ে যাস। সব ওদের পাওয়া স্যামপেল কপি। বাকি কিনে নিয়ে যাস। কই আমাকে একবারও বলিসনি। শুধু বুবুন ফুরুত ফুরুত করে কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
কোথায় যায় কেউ জানে না। তুই এখন কম যাস। তবু মাসে একবার তোর যাওয়া চাই। ওরা এখন পালা করে কেউ না কেউ প্রতি সপ্তাহে যায়। ওদের মধ্যে তুই ইনজেক্ট করে দিয়েছিস। কনিষ্ক বলেছে সেরকম মেয়ে না পেলে জীবনে কোনওদিন বিয়ে করবে না। বটা কনিষ্কের পথের পথিক। বাকিগুলো প্রেম করে। মোবাইলটা হয়ে তোর কাজের অনেক অসুবিধে হয়েছে তাই না?
মিত্রা এক নিঃশ্বাসে কথা বলে গেল। মনে হয় একটু হাঁফিয়ে গেছে।
ওর বুকের ওঠা নামা লক্ষ্য করলাম।
আমি চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
তোর ওখানের মৌসুমি মাসির বাড়ি ভালোপাহাড়ে। অনাদির কাছ থেকে জানলাম সেই সাঁওতাল ভদ্রমহিলা তোর বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে থাকে। কই আমি দু-বার গেলাম আমাকে মৌসুমি মাসির সঙ্গে আলাপ করালি না।
দুবারই মৌসুমি মাসি ছিল না।
মিথ্যে কথা বলছিস।
বিশ্বাস কর। তুই চিকনাকে জিজ্ঞাসা কর।
তোর গুণীনকাকা যে অশ্বিনীজ্যেঠু এটা তুই কখনও বলেছিস। কিন্তু সেই ভদ্রলোক কতবার এসেছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কই একবারও ঘুণাক্ষরে বলিসনি।
আমি চুপ।
তুই অশ্বিনীজ্যেঠুকে বারন করে দিয়েছিলি।
না। গুণীনকাকা তোকে দেখতে চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম পরিচয় দিতে পারবে না।
এটা বারন করা হলো না?
মিত্রার অবস্থা দেখে আমি হাসব না কাঁদব ঠিক করে উঠতে পারছি না। কি পাগলী মেয়েরে বাবা।
কাকাকেও তুই বারন করে দিয়েছিলি। কিসের ভয় তোর। তোর বিদ্যে আমরা শিখে নেব। কাকা আসুক রবিবার, আমি এবার বুঝে নেব।
হেসে ফেললাম। তুই বৃথা উত্তেজিত হচ্ছিস।
কষ্টটা আমার শরীরের বসন, বুঝলি মিত্রা ছেঁড়া জামাকপরে আমি বেশ কমফর্ট বোধ করি। মনে হয় অনি এবার সত্যি অনি। ভেক না ধরলে ভিক্ষা পাওয়া যায় না। তাই না।
মিত্রা এমন ভাবে ভেংচি কেটে কেটে বললো আমি হেসেফেললাম। বাধ্য হয়ে মিত্রাকে কাছে টেনে নিয়ে মুখটা আমার বুকে চেপে ধরলাম।
ছাড় ছাড়।
আজ আটমাস ধরে তোর কথা চোখ-কান বুঁজে শুনেগেছি। কোনও কথার উত্তর দিইনি। আমাকে কিছু বলতে দে। আমারও বলার থাকতে পারে।
আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় একপাক ঘুরে গেলাম। মিত্রা এখন আমার বুকের নীচে। আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। প্রথমে ও কিছুতেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে দেবে না। দুবার কামরেও দিল। আমি তবু ওর ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরালাম না। বেশ কিছুক্ষণ পর ও সারাদিল। ওর হাত কথা বলতে শুরু করলো। বুঝলাম মাথার আগুন, বুকের জ্বালা এবার কিছুটা কমেছে। আমি ঠোঁট থেকে ঠোঁট তুললাম। মিত্রা হাসলো।
এবার শান্তি।
আমি হাসছি।
মিত্রা ঠাণ্ডা হলো তাই তো।
তবু আমি হাসছি।
হাসি দিয়ে তুই বিশ্বজয় করতে পারবি না। তুই আমাকে যে জীবন দিয়েছিস, তিলে তিলে আমার শরীরের সুধা পান করে সে বেড়ে উঠছে। মনে রাখবি, তোমাকে বধিবে যে গকুলে বাড়িছে সে।
সত্যি!
আমি আবার ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম।
কই এখবরটা আমাকে দিসনি।
তুই সব কথা বলিস। কেন তোকে বলতে যাব।
বাবাঃ, গালটা কিরকম মেনি বিড়ালের মতো ফুলে গেছে, আর কে জানে?
ছোটোমা।
কি করে?
তুই সেদিনকে বললি না, তোর পেটটা কেমন শক্ত শক্ত লাগছে।
হ্যাঁ।
আমার কেমন সন্দেহ হলো। ছেলেদের চোখ। তার ওপর তোর চোখ।
ছোটোমাকে চুপি চুপি বললাম। একটা কি বেরিয়েছে এখন। সকালের ইউরিন একফোঁটা ওখানে দিলেই নেগেটিভ না পজিটিভ বোঝা যায়। দেখলাম পজিটিভ।
কই আমাকে বলিসনি এতো সব।
তুই তোর বউ-এর খোঁজ রাখিস। তুই নিজের তালে থাকিস। শুধু মিত্রা টাকার কথায় ‘কেন’ বললে অভিমান হয়, টাকার জোগাড় করতে ছুটিস। আমি তোর আপন নয়, শত্রু।
এই আবার সেন্টিমেন্টের শুরশুরি দিচ্ছিস। বড়োমা জানে।
ছোটোমা হয়তো বলেছে।
ডাক্তারদাদা।
ছোটোমা বলেছে কাজটা মিটুক তারপর বলবে।
জিজ্ঞাসা করেনি, কবে হলো।
বলেছি। পীরবাবার ওখানে যেদিন গেছিলাম মনে হয় সেইদিন।
কী বললো ছোটোমা।
মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করলো।
আমি আবার মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। কতোক্ষণ ছিলাম জানি না। আজ কিন্তু মিত্রার সঙ্গে একটুও সেক্স করতে ইচ্ছে করছে না। বার বার ওকে আদর করতে ইচ্ছে করছে। ঠোঁট তুললাম। মিত্রা আমার মুখের দিকে হাঁসি হাঁসি মুখ করে তাকিয়ে।
বুবুন।
বল।
তোর ভালো লাগছে।
মাথা দোলালাম।
আমাদের ভালোবাসার নতুন প্রাণ।
আমি মিত্রার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। দুজনের মুখেই কোনও কথা সড়ছে না। যা কিছু কথা চোখে চোখে। আমি মিত্রার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কপালের চন্দন এখনও ঘেঁটে যায়নি। যেন আরও উজ্জ্বল লাগছে। ডাগর চোখ দুটো এক দৃষ্টে আমাকে গিলে খাচ্ছে।
কি দেখাবি বললি। দেখালি না।
আজ থাক।
না। এই আনন্দের দিন আমি নিজের শেকড়টা জানতে চাই। অন্ততঃ পক্ষে আগামী ভবিষ্যতকে বলতে পারবো, তোমাদের মা এই দিনে আমাকে আমার শেকড়টা খুঁজে বার করতে সাহায্য করেছিল।
সত্যি তুই দেখবি?
হ্যাঁ।
একটুও দুঃখ পাবি না।
এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর অনেক দুঃখ পেয়েছি। দুঃখকে আর ভয় পাই না।
তুই ভাগ্য বিশ্বাস করিস?
আমি মনে করি মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিজে রচনা করে। বলতে পারিস, ম্যান ইজ মেকার অফ হিজ ওউন ফেট।
সব কিছু শোনার পর, সব কিছু দেখার পর, তুই যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাস।
যেতেই পারি না।
ঠিক বলছিস।
বলছি তো। যদিও বা যাই তা ক্ষণিকের, মনে রাখবি আমি কোনও কাজ শেষ করতে গেছি।
যদি তোর সেই কাজ শেষ না হয়, তুই যদি আর না ফিরিস।
কেন তোর জ্যোতিষদাদা এটাও বলে দিয়েছে?
জ্যোতিষদা তোর সব কথা মিলিয়ে দিয়েছে।
যতো সব গাঁজাখুরি।
আমি তোর বিশ্বাসে কোনও দিন আঘাত করিনি।
আমি তোর বিশ্বাসে আঘাত করছি না, তবে তার একটা রিজিন থাকবে।
রিজিন তৈরি হতে কতক্ষণ।
আচ্ছা আমি….না থাক আজকে বলবো না।
বল না বল। আমি তোর কাছ থেকে শক্ত হওয়ার মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছি। আজকের পর থেকে দেখবি আমার চোখে তুই জল পাবি না।
পাগলাম করিস না। আমি তোকে কাঁদতে বারণ করিনি। ফরনাথিং কাঁদতে বারণ করেছি।
তুই তোর মতো করে বলবি।
ঠিক আছে আর বলবো না। এবার দেখা।
এখনও বলছি দেখার পর মন খারাপ করতে পারবি না।
একটুও মন খারাপ করবো না।
দুজনে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। মিত্রা ফ্রিজ থেকে জলের বোতল বার করলো। দুজনে খেলাম। ওর ড্রেসিন টেবিলের ড্রয়ারের চোরাকুঠরি থেকে আলমাড়ির চাবি বার করলো।
কিরে তুই চাবি এখানে রাখিস?
কেউ জানতেও পারবে না। এমন একটা খোপ। বাবা বানিয়েছিল।
মিত্রা আলমাড়ি খুললো।
বুবুন তোকে একটু ধরতে হবে।
কি ধরবো।
এই যে থাকটা দেখছিস এটাকে তুলে ধরতে হবে এর ভেতরে ফাইলটা আছে সেটা বার করবো।
তুই একা হলে কি করতিস?
জামা কাপর সব টেনে নামাতাম, তারপর বার করতাম।
এটা কি ঢাকনার মতো?
হ্যাঁ সবকটা তাকই সেরকম তারপর ডবল লক।
আমি ঢাকনাটা তুলে ধরলাম। বেদম ভারি। মিত্রা লক খুলে ভেতর থেকে ফাইল বার করলো।
জানিস বুবুন বাবা মৃত্যুর আগে অসুস্থ অবস্থায় একটা চিরকুটে লিখে এই ফাইলটার হদিস দিয়েছিল। খুঁজে পাওয়ার পর আমাকে একা ঘরে পেয়ে বলেছিল। ওই ফাইলটায় আমার সব আছে। আর ব্যাঙ্কের লকারের চাবির হদিস দিয়েছিল। ব্যাঙ্কের লকারটা এই ছয়বছরে দেখা হয়ে ওঠেনি।
ব্যাঙ্কে গেছিলি?
গেছিলাম।
লকার দেখিস নি?
না।
কেন?
যদি শয়তানটা হদিস পেয়ে যায়।
ইস। আবার ওই নামটা করলি।
এখন আমার কোনও ভয় নেই। তুই আছিস। আমার গার্জেন।
আমি মিত্রার নাকটা চেপে ধরে নারিয়ে দিলাম। দুজনে পাশাপাশি বসে।
জানিস বুবুন আজ আমার প্রথম বিয়ে হলো।
আমি মিত্রার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। কেন!
আগে তো কখনো বিয়ে হয়নি। কেউ সিঁদুরও পরিয়ে দেয়নি। ভয় দেখিয়ে বিয়ে হয়। খুব সাধ ছিল কনে সেজে, সেজেগুজে বিয়ে করবো। তুই সেই সাধটা পূরণ করলি।
আমি তোকে পীরবাবার থানের মাটি তোর কপালে লাগিয়ে দিয়েছিলাম।
জানিস বুবুন, আমি ভীষণ লোভী, ওইটুকু পাওয়াতে আমার কিছু হয়নি। তাই আরও চেয়েছিলাম। যেভাবে একটা মেয়ে একটা পুরুষের হাতে ধরা দিতে চায় ঠিক সেই ভাবে।
আগে যদি জানতাম।
আমি ভেবেছিলাম তুই আমার এতো সব খোঁজ নিয়েছিস, এটাও জানতিস।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/nBL8OXy
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment