❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৭০ নং কিস্তি
—————————
ইদানীং মায়ের ব্যবহারটা অনিসার ঠিক ভালো লাগে না। দিন দিন মা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। কখনও ভীষণ খিটখিট করে, কখনও কেমন যেন চুপচপ হয়ে যায়।
কারণে অকারণে মায়ের প্রতি অনিসার ভীষণ অভিমান হয়।
একটা সময় ছিল মা তার শরীরের সমস্ত সত্তা দিয়ে ওদের দুই ভাইবোনকে আগলে রাখতো। কিছু হলে মায়ের মুখচোখ কেমন শুকিয়ে আমসি হয়ে যেত। সর্বক্ষণ একটা চাপা টেনশন। নীরুমামা, কনিষ্কমামা, বটামামা চব্বিশঘণ্টা কাউকে না কাউকে বাড়িতে হাজির থাকতে হতো। সে এক হুলুস্থূলুস কাণ্ড। তার ওপর ডাক্তারদাদু।
কিন্তু আজকাল মাকে দেখলে অনিসার কেমন যেন একটা মনে হয়। কিছুতেই মনের অনুসন্ধিৎসাগুলো মাকে মন খুলে বলতে পারে না। মাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে না, কেন তুমি দিন দিন এরকম হয়ে যাচ্ছ। তুমি তো এরকম ছিলে না? একটা অজানা ভয়, সঙ্কোচ অনিসার মনটাকে আবেগে আপ্লুত করে রাখে। যদি মা কিছু মনে করে?
কিন্তু ও এখন যথেষ্ট বড়ো হয়েছে। দু-দিন পরে ও এ্যাডাল্ট হবে। অষ্টাদশী তরুণী। দিদানকে মাঝে মাঝে মনের অনুসন্ধিতসাগুলো নিয়ে বিরক্ত করে। দিদানেরও এক কথা, সময় হোক সব জানতে পারবি।
অনিসার আগে এরকম মনে হতো না! সেই টেন পাশ করার পর থেকেই ওর মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি মারতে শুরু করেছে। হাজার চেষ্টা করেও কিছুতেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। অনেক অনেক প্রশ্ন ওর মনটাকে তোলপাড় করে।
দিদান বলেছে অনি ব্যানার্জী ওর বাবা। ও ছোটো থেকেই এই কথাটা শুনে আসছে।
স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল আন্টিকে একবার অনিসা ওর বাবার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিল, তাতে প্রিন্সিপ্যাল আন্টি বলেছিলেন, হু ইজ অনি ব্যানার্জী? জার্নালিস্ট, সোশ্যাল ওয়ার্কার?
প্রিন্সিপ্যাল আন্টির কথা শোনার পর অনিসার মনটা খারাপ হয়ে গেছিল।
আন্টিকে বলেছিল, জানো আমি এখনও বাবাকে দেখিনি।
আন্টি বলেছিলেন, কিছু ভেবো না মাই ডটার, গডের কোনওদিন মৃত্যু হয় না।
সেদিন অনিসা কথাটার অর্থ ধরতে পারেনি। আমার বাবা গড হতে যাবে কেন? গডরা মন্দিরে থাকে। তাদের পূজো করা হয়। কই আমার বাবাকে কেউ পূজো করে না।
পরে ও হিডমিস্ট্রেস আন্টির কাছে জানতে পেরেছিল প্রিন্সিপাল আন্টিকে ওর বাবা সাহায্য করেছিল। সেদিন ওর বাবা যদি প্রিন্সিপাল আন্টির পাশে না দাঁড়াতেন তাহলে প্রন্সিপাল আন্টির একটা বড়ো বিপদ হতে পারতো। সেই থেকে প্রন্সিপাল আন্টি বাবাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করেন। মাকে মাঝে মাঝেই ফোন করেন।
সত্যি, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আজও ওর বাবার দেখা পেল না। বাবাকে ও ছবিতে দেখেছে। আর লোকের মুখে বাবার গল্প শুনেছে। যাকেই বাবার কথা জিজ্ঞাসা করেছে তারাই বলেছে, তোর বাবা! ওঃ একটা ডেঞ্জারাস পার্সেন। সবাই কেমন যেন বাবার কথা শুনলে এড়িয়ে এড়িয়ে গেছে।
বাবার কিছু কিছু কথা ইসলামদাদাই, রতন আঙ্কেল বলেছে।
তবু কেমন যেন অদ্ভূত লাগে। মাকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, মা বাবা কবে ফিরবে? মায়ের চোখের পাতা ভাড়ি হয়ে উঠেছিল। তারপর থেকে অনিসা মাকে আর বিরক্ত করে না।
উচ্চ মাধ্যমিকের ফইন্যাল পরীক্ষার তিন মাস আগে থেকে অনিসা রাতজেগে পড়তে শুরু করে। শুতে শুতে প্রায় মাঝরাত হয়ে যায়। আগে মা অনিসার সঙ্গে একসঙ্গে শুতো এখন আর মা অনিসার সঙ্গে শোয় না। নীচের ঘরে শোয়।
বাবার আলমাড়িটা পর্যন্ত মা নিচের ঘরে নিয়ে চলে এসেছে। বাবার ঘরটা এখন সম্পূর্ণ ওর দখলে। ওর নিজের ঘর। ছোটোদিদানের ঘরটা দাদা দখল করেছে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অনিসা লক্ষ্য করেছে সপ্তাহের একটা বিশেষ দিন একটা বিশেষ সময়ে মা অনেক রাতে বাগানের একটা কোনে চলে যায়। পায়চারি করে বাগানের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত। মোবাইলে নীচু স্বরে কার সঙ্গে কথা বলে। তখন চারদিক শুনশান।
সেদিনটা আকাশে মেঘলা করেছে। ঘনো ঘনো বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
অনিসা জানলার কাছে এসে জানলার পাল্লাদুটো বন্ধ করতে গেল। হঠাৎ নিচে আমগাছের তলায় চোখ পড়তেই দেখল মা বাগানে পায়চারি করছে। বিদ্যুতের আলোয় মায়ের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিল।
এতো রাতে মা নিচে আমগাছের তলায়!
ও একটু নিজেকে আড়াল করে স্পষ্ট দেখতে পেল মা ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে।
এতো রাতে মা কার সঙ্গে কথা বলছে!
সেদিনটা ও অনেক ভেবেছে কিন্তু কোনও উত্তর পায়নি। কাকে ও মনের কথা জিজ্ঞাসা করবে? দাদা? দাদাকে এই ব্যাপারে ও ঠিক বিশ্বাস করতে পারে না। দাদাটা কেমন যেন।
একদিন ও এইরকম একটা মুহূর্তে নিজের ঘর থেকে সাহস করে নিচে নেমে এসেছিল। অন্ধকারে পা টিপে টিপে মায়ের ঘরে ঢুকেছিল দেখেছিল বাবার আলমাড়িটা হাট করে খোলা। ঘর ঘুট ঘুটে অন্ধকার। মা বাগানে আম গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ফোনে কার সঙ্গে হেঁসে হেঁসে নীচু স্বরে কথা বলছে।
রাস্তার নিওন লাইটের ছেঁড়া ছেঁড়া আলোর স্পর্শ মায়ের চোখে মুখে ছড়িয়ে পরেছে। উজ্জ্বল মুখটা খুশিতে ভরপুর। চোখে মুখে উচ্ছ্বলতা। ঝর্ণার জলধারার মতো মা কল কল শব্দে কথা বলে চলেছে।
অনিসা অনেকক্ষণ ধরে লুকিয়ে শোনার চেষ্টা করেছে। পরিষ্কার শুনতে পায়নি। তবে ওর কথা দাদার কথা, ছোটোদিদান, বড়োদিদান, দাদাই, দুদুন, সবার কথা মা বলছে। এমন কি অফিসের কথাও মা বলছে।
কে কেমন আছে। অফিসের অবস্থা এখন কিরকম। কোথায় সমস্য হচ্ছে। সব।
কথা বলা শেষ হলে মা ফোনটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চোখের জল মুছেছে।
তারপর ধীর পায়ে আমগাছের তলা থেকে ঘরে এসেছে। অনিসা ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে শিঁড়ির ধারে লুকিয়ে থেকেছে।
মা ঘরে ঢুকলে আস্তে আস্তে ভেজানে ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখেছে। মা ফোনটা আলমাড়িতে তুলে রেখে একটা খাতা বার করে টেবিলে গিয়ে বসেছে। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কি যেন লিখলো। তারপর খাতাটা তুলে রেখে আলমাড়িতে চাবিটা দিল।
বাবার টেবিলের ড্রয়ারের এক কোনে চাবিটা লুকিয়ে রাখলো। বাবার সেই বড়ো সন্ন্যাসী সাজা ফটোটার কাছে গিয়ে প্রণাম করলো। টেবিলের ওপর রাখা ফোনটা নিয়ে মাথার শিয়রে রাখলো। তারপর শুয়ে পরলো।
তাহলে কি মায়ের দুটো ফোন? এই ফোনটা মা শুধু সপ্তাহে একদিন রাতে কথা বলার জন্য ব্যবহার করে!
ছোটো থেকেই নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি অনিসার প্রবল আকর্ষণ।
মা বাধা দিয়েছে। বকেছে। তবু ও লুকিয়ে লুকিয়ে সেই বিষয়টা জানার চেষ্টা করেছে, দেখেছে। নিজের মনের অন্তর্নিহিত ক্ষুধা মিটিয়েছে। কেউ টেরটি পায়নি।
মনে মন ঠিক করলো এখন এই নিয়ে একটুও ভাববে না। আগে পরীক্ষাটা ভালো করে দেবে। ভালো রেজাল্ট করে সকলের মুখ বন্ধ করে দেবে। তারপর নিজের কাজ গোছাবে। ওকে জানতেই হবে মা কার সঙ্গে কথা বলে।
ও বেশ লক্ষ্য করেছে এই দিনটার পরের কয়েকটা দিন মা বেশ ফুর ফুরে থাকে।
ওই দিন কয়টা মা রাগ করতে জানে না। মার কাছে যা চাওয়া যায় তাই পাওয়া যায়। মা একবারও জিজ্ঞাসা করে না, কি জন্য তুমি এটা চাইছো, কি প্রয়োজন।
মাঝে মাঝে বাড়িতে জোড় আড্ডা বসে, সেখানে বেশির ভাগ সময়টা বাবার কথা বলেই হাসাহাসি হয়। বাবা আমাদের কাছে নেই তবু বাবা যেন সবখানেতেই আছে।
সেদিন সুরঞ্জনা মনি কথায় কথায় বলছিল, জানিস অনিসা অনিদা যদি থাকত না এ সময় দেখতিস। মাথা তো নয়….। তারপরই সুরঞ্জনা মনি কথাটা আর বললো না।
এইরকম ছেঁড়া ছেঁড়া কথা প্রায়ই অনিসা শোনে। মাথাটা মাঝে মাঝে ঝিম ঝিম করে। আর মনের মধ্যে জেদ চেপে বসে। যে ভাবেই হোক এই ব্যাপারগুলো সব জানতে হবে। এখনও সময় আছে। নিজেক অনেক ধীর স্থির থাকতে হবে।
মার মুখ থেকে শুনেছে। বাবা কোনওদিন কাউকে দোষারপ করতো না। নিজের কাজ নিজে চুপ চাপ করে যেত। বাবার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। বাবা কাউকে কোনওদিন তা জানতে দেয়নি। এমনকি মা পর্যন্ত বাবার মনের কথা জানতে পারে নি। কাজের শেষে সকলে জানতে পারত বাবা এই কাজটা করলো।
এই রকম সাত পাঁচ চিন্তা অনিসার মাথায় ঘুর পাক খায়। মাস তিনেক ও দাঁতে দাঁত চেপে থাকল। দাদাকে একবার বলেছিলো ব্যাপারটা। দাদা বললো, ও সব জানে। ও নিজেও এই সব ব্যাপর ওয়াচ করেছে।
ধোঁয়াশাটা নিজেদের খুঁজে বার করতে হবে। যে কোনও মূল্যে বাবাকে চাই। সে জীবিত হোক আর মৃত। কিন্তু মাঝে মাঝে একটা প্রশ্ন প্রায়শই ওর মনে দানা বাঁধে। বাবা যদি বেঁচেই থাকবে তবে কেন ফিরে আসছে না।
দিন পনেরো হলো পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ বাড়ি সম্পূর্ণ ফাঁকা।
মা দাদাকে নিয়ে অফিসে গেছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই মা দাদাকে অফিসে নিয়ে যাচ্ছে। আজ দাদা যেতে চায়নি। মা জোড় করে নিয়ে গেছে। অফিসের কাজ বোঝাচ্ছে। ওকেও যেতে বলেছিল ও যায় নি।
দাদাইরা দামিনীদিদার ওখানে গেছে। কি কাজ আছে। দিদাইরা জ্যেঠিদিদার বাড়িতে গেছে। অনিসা এই সুযোগটা কোনওমতে হাত ছাড়া করতে চাইলো না। দিদান বলেছিল ওকে সঙ্গে যেতে, ও যেতে চায়নি।
সবাই বেড়িয়ে যাওয়ার পর। অনিসা, পিকুকে ফোন করলো।
হ্যালো।
পিকুদা।
বল।
তুই কোথায়?
অফিসে। মনির ঘরে।
কে রে? মায়ের গলা স্পষ্ট শুনতে পেল অনিসা। পিকুদা বললো, অনিসা ফোন করেছে।
ধর মনি তোর সঙ্গে কথা বলবে।
হ্যালো। মায়ের গলা।
বলো।
একা থাকতে ভালো লাগছে না? রবীনকে পাঠাব।
না না এমনি পিকুদাকে একটু ফোন করলাম। কোথায় আছে তাই।
তুই কি করছিস?
নেটে বসেছি।
নেটে বসে কি করছিস?
তোমাকে সব কথা বলা যায়।
তা ঠিক, বড়ো হয়ে গেছিস।
দাদাকে দাও।
নিউজরুমে গেছে।
অর্ক মামাকে দাও।
সবাই কি তোর জন্য এখানে বসে থাকবে। কাজ নেই। তুই চলে আয়। সবার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।
ঠিক আছে, ছাড়ছি।
রবীনকে পাঠাবো।
দরকার পরলে ফোন করবো।
অনিসা ফোনটা কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়াল। এই সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবে না। নিচে নেমে এলো। বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে।
যে কাজ ও করতে যাচ্ছে যদি ধরা পড়ে যায় তাহলে সব পণ্ড। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে নিজে বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ করলো।
কাজটা করা ঠিক হবে? নিজেই ডিসিসন নিলো। একটা সত্যিকে ও জানার চেষ্টা করছে। তাতে অন্যায় কোথায়। মা কেন গোপন করছে সব কিছু।
বারান্দায় দাঁড়িয়েই গেটের দিকে একবার তাকাল। ছগনদাদু গেটে হেলান দিয়ে ঝিমচ্ছে। ভজুমামা কোথায়?
এদিক ওদিক তাকিয়ে বারান্দা থেকে বাগানে নেমে এলো। দেখল ভজুমামা বাগানের এক কোনে বসে গাছের চাড়া লাগাচ্ছে। সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলো না অনিসা। পায়ে পায়ে মায়ের ঘরে চলে এলো।
দরজাটা ভেজিয়ে দিল। বাবার ছবিটা টেবিলে দাঁড় করান। মা বলেছিল, বিয়ের দিন নীরু মামারা এই ছবিটা তুলেছিল। বাবার ওই গল্পটা মনে পড়তেই অনিসা হেসে ফেললো। ছবিটার সামনে এসে দাঁড়ালো। বাবা যেন ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
কিরে কি ভাবছিস—ভয় করছে?
চমকে উঠলো অনিসা।
কে, কে কথা বললো!
আবার বাবার ফটোটার দিকে তাকাল।
না। কেউ না। তাহলে!
থমকে দাঁড়িয়ে গেলি কেন?
তোমাকে দেখছি।
কেন!
এতদিন তোমাকে দেখেছি। আর আজকে তোমাকে দেখছি….কি বলবো তোমাকে, তোমার মতো ভালো বাংলা লিখতে পারিনা। বলতেও পারি না।
চুটিয়ে বই পড়। দেখবি আপসেই ভালো বাংলা বলতে পারছিস। তুই যা বলতে চাইছিস সেটা হলো ফারাক, তফাৎ, কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছিস না।
তুমি একেবারে আমার মনের কথাটা বলে দিয়েছ।
দেখলি আমি কিরকম তোর মনের কথাটা জেনে ফেললাম।
কি করে জানলে?
নিজে নিজেকে প্রশ্ন করবি, আর নিজে নিজে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবি।
করি তো, উত্তর পাই না।
জাস্ট প্র্যাক্টিস, দেখবি কারুর হেল্প দরকার লাগবে না।
সত্যি!
হ্যাঁ সত্যি।
বলো আমি এখন কি করতে এসেছি?
আলমাড়িটার ভেতর কি আছে তাই দেখবি তাই তো?
কি করে বুঝলে!
বুঝলাম।
আচ্ছা তুমি মাকে ভালোবাসো।
খুউউউউউউব।
তাহলে ফিরে আসছোনা কেন?
খুব দামী প্রশ্ন করেছিস। একটু সময় লাগবে উত্তর দিতে।
আর একটা প্রশ্ন করব?
বল।
তোমার একটুও ইচ্ছে করে না আমাকে, দাদাকে দেখতে।
আমি সপ্তাহে একদিন তোদের একবার করে দেখি।
কি করে!
সে বলবো না।
ওমা তুমি কার সঙ্গে বক বক করছো।
অনিসা পেছেন ফিরে তাকাল।
ভজুমামা ঘরের ভেতর এলো।
অনিসা একদৃষ্টে ভজুর দিকে তাকিয়ে, গায়ের লোমগুলো কেমন খাঁড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে তুমি অনিদার ফটোর সঙ্গে কথা বলছিলে। আমি সারা বাড়ি খুঁজে পেলাম না। শেষে এই ঘরের ভেতর থেকে শব্দ আসছে দেখে ভেতরে এলাম।
অনিসা ভজুর চোখ থেকে চোখ সরাল না।
তুমি অমনভাবে তাকিয়ে আছ কেন। কথা বলবে না?
বাবার সঙ্গে তুমি কতদিন থেকেছ?
ও মা, তোমাকে দেখে আমার ভয় লাগে কেন! তোমার চোখগুলো ওরকম ঘোলাটে কেন!
যা বলছি তার উত্তর দাও।
আগাগোড়া তোমার বাপের সঙ্গে আছি।
এ বাড়িতে কবে এসেছ?
তোমার জম্মের আগে।
আমি যে এ ঘরে ঢুকেছি কেউ যেন জানতে না পারে।
ভজু হাঁ করে তাকিয়ে থাকল অনিসার দিকে।
মনে রাখবে জানতে পারলে বাবাকে বলে দেব।
তোমার সঙ্গে অনিদা কথা বলছিল!
হ্যাঁ।
আমার সঙ্গে একটু কথা বলিয়ে দাও। কতোদিন গলার স্বর শুনিনি।
আমি যা বলবো তাই করবে।
তুমি যা বলবে তাই করবো।
ঠিক আছে নেক্সট যেদিন কথা বলবো সেদিন বলিয়ে দেব।
কথা বলাবে তো?
আমার কথা শুনলে।
শুনবো।
যাও দরজাটা ভেজিয়ে বাইরে গিয়ে বসো।
ভজু বেরিয়ে গেল।
অনিসার বুকের ভেতর ধুক-ধুকুনিটা অনেকটা কমে গেছে। একটু আগে বুকের ভেতর যেরকম উথাল পাতাল করছিল এখন সেটা অনেক কম। নেই বললেই চলে।
আবার বাবার ফটোটার দিকে ঘুরে তাকাল। পায়ে হাত দিয়ে মনে মনে বললো, আমাকে ক্ষমা করো বাবা। আমাকে জানতেই হবে।
টেবিলের ড্রয়ারটা খুললো। ডাঁই করা সব কাগজের টুকরো। কোথাও চাবিটা দেখতে পেল না। একটা পুরনো মানিপার্স। ড্রয়ারের কোনের দিকে পরে আছে। পার্সটা হাতে নিয়ে একবার উল্টে পাল্টে দেখলো। বহুযুগ আগেকার পার্স।
কিন্তু চাবিটা গেল কোথায়। মাকে এখানেই রাখতে দেখেছি।
তাহলে কি মা জায়গা বদলেছে?
মানিপার্সটা খুলতেই বাবা-মার একটা ছবি চোখে পড়লো। মনে হচ্ছে সেই সময়কার তোলা। একবার বাবার ফটোটার দিকে তাকাল। একবার মানিপার্সের ছবিটার দিকে। নিজে নিজেই হেসে ফেললো। মায়ের পাশে বাবাকে কেমন কেমন যেন লাগছে। পার্সের বাঁ পাশের খাপ খুলতেই অনিসার চোখ চক চক করে উঠলো। একটা মর্চে পরা চাবি।
তাহলে কি এইটা?
অনিসা চাবিটা হাতে নিলো। গা-হাত-পা কেমন ভারিভারি লাগছে। শরীরের সমস্ত শক্তি নিমেষে কেমন যেন উধাও হয়ে গেল। মনে হচ্ছে টেবিলের কাছ থেকে ওই আলমাড়িটা মাত্র কয়েক হাত, এই টুকু ও যেতে পারছে না।
কেন এরকম হচ্ছে?
মার মুখ থেকে শুনেছে বাবা রাতের বেলা শ্মশানে গিয়ে বসে থাকতো। বাবার নাকি সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। চিকনাদার সঙ্গে একবার গিয়ে ওখানটা ঘুরে এসেছে। তাহলে আজ এরকম হচ্ছে কেন।
দূর যত্তো সব।
অনিসা পায়ে পায়ে আলমাড়িটার দিকে এগিয়ে এলো।
চাবিটা ঢুকিয়ে ঘোরাতেই আলমাড়িটা খুললো।
আলমাড়িটা খোলার আগে মনে মনে অনেক কল্পনা করেছিল। কিন্তু কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল খুঁজে পেল না।
ইস কি অগোছাল। মা একটু পরিষ্কারও করতে পারে না।
ওপরের তাকে বাবার প্যান্ট গেঞ্জি, পাজামা পাঞ্জাবী, কেমনভাবে যেন রাখা। এর থেকে আমার আলমাড়িটা অনেক পরিষ্কার। তার পরেরটায় মার কাপর শালোয়াড়।
মা এই জামা কাপর এখন আর পরে না! মাকে কোনওদিন এগুলো পরতে দেখেনি।
কেনো? তাহলে কি মা….।
পরের তাকে শুধু কাগজ পত্র আর ফাইল। ডানদিকে চারটে এক্সাসাইজ খাতা। মনে হয় আট নম্বর হবে। অনিসা হাত বাড়িয়ে একটা খাতা বার করে আনলো। হ্যাঁ মায়ের হাতের লেখা। ওপরে তারিখ দেওয়া।
বুবুন আমি আর পারছি না।
দু-চারলাইন পড়ার পর ওর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। না সময় নষ্ট করা যাবে না।
খাতাগুলো এখান থেকে নিয়ে গেলে মা বুঝে যাবে। জেরক্স করলে কেমন হয়?
তাহলে এখন জেরক্স করাবার জন্য বেরতে হবে।
না বেরনো যাবে না।
ভজুমামা বুঝে যাবে। মাকে বলে দিতে পারে। তার থেকে স্ক্যান করে নেওয়াই ভালো। তাহলে ওর ল্যপটপেই থাকবে। রাতে সময় নিয়ে পড়তে পারবে।
অনিসা স্ক্যান করার সিদ্ধান্ত নিল। নিচ থেকে একটা খাতা বার করে আনল।
কেউ চলে আসার আগে স্ক্যানটা শেষ করে ফেলতে হবে। রাতে সময় নিয়ে পড়তে হবে। খাতাটাকে নিজের পেটের মধ্যে গুঁজে, আলমাড়িটা বন্ধ করে চাবিটা ঠিক জায়গায় রাখলো। মা যাতে বুঝতে না পারে।
ঘরের বাইরে এলো। ভজুমামা বাগানে গাছের ডাল ছাঁটছে।
অনিসা ওপরে উঠে এলো। নিজের ঘরে এসে আগে ল্যাপটপটা অন করলো। মোবাইলটা হাতে তুলে নিল। তিনটে মিস কল! খেয়েছে। মা ফোন করেছিল।
সঙ্গে সঙ্গে রিং ব্যাক করলো।
হ্যালো।
কোথায় ছিলি?
বাগানে।
কি করছিলি?
ভজুমামার সঙ্গে কথা বলছিলাম।
নেট থেকে কখন উঠলি?
তোমার সঙ্গে কথা বলার পরই উঠে পরেছি।
একা একা থাকতে ভালো লাগছে না?
তোমাকে তাই বললাম।
চলে আয়।
না এখন অনেক কাজ।
কি কাজ করছিস?
আচ্ছা আমি কি এখনও ছোটো আছি।
মিত্রা হো হো করে হেসে উঠলো।
অমনি হেসে দিলে।
নে মিলি মাসি কথা বলবে।
দাও।
অনিসা মনে মনে বিরক্ত হচ্ছে।
একে হাতে সময় নেই। খাতাটা স্ক্যান করে সঠিক জায়গায় রেখে আসতে হবে না হলে ধরা পড়ে যাবে।
কিরে কি করছিস?
কাজ করছি।
পরীক্ষা শেষ, আবার কিসের কাজ?
শেষ তো কি হয়েছে। আমার নিজের কাজ থেকতে পারে না।
বাবা তুই তো গিন্নীদের মতো কথা বলছিস।
এখন রাখি, তোমার সঙ্গে বিকেলে কথা বলবো।
খুব তাড়া।
খুউউউউব। রাখছি।
আচ্ছা।
অনিসা সময় নষ্ট করলো না। স্ক্যানারটা রেডি করে পটাপট স্ক্যান করতে শুরু করলো। প্রায় একশো পাতা স্ক্যান করতে বিকেল গড়িয়ে গেল। স্ক্যান শেষ হয়ে যাবার পর, খুব সন্তর্পনে খাতাটা সঠিক জায়গায় রেখে এলো। একবার ভাবল আর একটা খাতা নিয়ে গিয়ে স্ক্যান করে ফেলি। তারপর ভাবল না, ব্যাপারটা রিক্স হয়ে যাচ্ছে। আজ থাক, আবার আগামীকাল দুপুরে।
অনিসা আজ খুব জোর মার হাত থেকে বেঁচে গেছে। বলতে গেলে বাবাই বাঁচিয়েছে।
সাতদিন লাগলো খাতাগুলো সব স্ক্যান করতে। সময় করে করতেই পারে না। একটু করে আবার রেখে যায়। এই কদিন ও একা শুতে পারেনি।
ছোটোদিদাই-এর শরীরটা খারাপ ছিল, তাই ছোটোদিদাই-এর কাছে শুতে হয়েছিল।
এই ক-দিন সবাই বাড়িতেই ছিল, ফাঁক মতো খাতা ওপরে নিয়ে গিয়ে স্ক্যান করতে হতো। যাতে কেউ জানতে না পারে।
আজ সবে মাত্র শেষ খাতাটা স্ক্যান শেষ করলো। মায়ের ঘরে ঢোকার আগে বড়দিদাই জিজ্ঞাসা করেছিল, ওই ঘরে কি করতে যাচ্ছিস।
অনিসা চোখ পাকিয়ে শুধু তাকিয়ে ছিল।
আলমাড়িতে ঠিক জায়গায় খাতাটা তুলে রেখে, চাবিটা যথাস্থানে রেখে, বাবার ফটোটার সামনে এসে দাঁড়াল। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। ঘরের ছোটো লাইটটা জ্বলছিল। খেয়াল নেই। বাবার সঙ্গে ও কথা বলছিল। মা কখন এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে জানে না। ও আপন মনে বাবার সঙ্গে কথা বলছিলো।
হঠাৎ মায়ের গলা।
কিরে তুই কার সঙ্গে কথা বলছিস!
অনিসা মার দিকে ঘুরে তাকাল।
মা ওর দিকে তাকিয়ে কি বুঝলো কে জানে, দৌড়ে গিয়ে ঘরের বড়ো লাইটটা জ্বালিয়ে দিল। তারপর কাছে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
তোর চোখ মুখের অবস্থা এই রকম কেন? কি হয়েছে তোর!
অনিসা মার দিকে তাকিয়ে রইলো।
মিত্রার চেঁচামিচিতে ছোটোমা, বড়োমা এসে ঘরের সামনে দাঁড়াল।
কি হয়েছে!
দেখো দেখো ওর চোখ মুখের অবস্থা দেখো। বুবুনের ফটোটার সামনে দাঁড়িয়ে একা একা কথা বলছিলো।
কার সঙ্গে কথা বলছিলি মা। এই তুই ওপর থেকে নামলি। বড়োমা বললো।
বাবার সঙ্গে।
অনিসার গলাটা একটু অন্যরকম শোনাল।
মিত্রা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।
তুমি কাঁদছো কেনো? দেখ আমার কিছু হয়নি। বাবা আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলো, তাই কথা বললাম।
দেখছো ছোটোমা দেখ একেবারে বুবুনের মতো কথা।
আমিও অনিদার সঙ্গে কথা বলেছি।
সবাই পেছন দিকে তাকিয়ে দেখল, ভজু গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।
তুই এই জন্য একা একা বাড়িতে থাকিস।
মিত্রা মেয়ের মুখের দিকে তাকাল।
তুমি কেঁদো না। কাঁদলে কোনওদিন কিছু পাওয়া যায় না। ভেতর থেকে আর্চ থাকা দরকার। তবেই তুমি পাবে।
তুই এসব কথা কোথা থেকে শিখলি!
বাবা বলেছে।
ছোটোমা তুমি জ্যোতিষদাদাকে ফোন করো।
কি করবে তোমার জ্যোতিষদাদা। আমাকে তো নিয়ে গেছিলে। সব ফালতু।
মিত্রা মেয়ের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। এ কথার কি উত্তর দেবে। মেয়ের কথা শুনে মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে।
ঠিক আছে। তুই ও ঘরে চল। মিত্রা তুই জামা কাপড় ছেড়ে নে। ছোটোমা বললো।
বড়োমা অনিসার হাত ধরে ঘরের বাইরে চলে এলো। মিত্রা মেয়ের চলার পথের দিকে একবার উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো। এতদিন ও লক্ষ্য করে নি। আজ ও লক্ষ্য করলো একেবারে বাবার মতো চলন।
কিন্তু অনন্য। ওকে কখনও এইভাবে কথা বলতে শুনিনি, বরং অনেক বেশি চুপচাপ। দশটা কথা বললে একটা উত্তর দেয়।
আজ অফিস থেকে বেরবার সময় বললো, তুমি চলে যাও, আমি রাতে ফিরবো।
মিত্রা কেন কি বৃতান্ত জিজ্ঞাসা করেনি। শুধু আসার সময় সন্দীপকে ফোন করে বলে এসেছিল, অনন্য রইলো তুমি দেখবে।
দরজাটা বন্ধ করে মিত্রা টেবিলে রাখা পেল্লাই ফটোটার সামনে এসে দাঁড়াল।
কিরে কি ভাবছিস?
কোনও উত্তর নেই।
মনে পড়েছে, তোকে একদিন বলেছিলাম। তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বারিছে সে। আমার কথাটা শুনে খুব হেসেছিলি। আজ নিজের চোখের সামনে দেখলি।
মিত্রা মাথাটা নীচু করে নিল।
বেশ কিছুক্ষণ ফটোটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
আর কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে বলতে পারিস?
মিত্রা কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছলো।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো, তারপর বাথরুমে চলে গেল।
খাওয়ার সময় মিত্রা একবার মেয়েকে বলেছিল, কিরে আজ রাতে আমার সঙ্গে শুবি।
অনিসা সরাসরি মায়ের মুখের ওপর না বলে দিয়েছে।
খাওয়ার শেষে অনিসা নিজের ঘরে চলে এলো। আলোটা জ্বালতে ভালো লাগলো না। পাখাটা ছেড়ে দিলো। আজ হঠাৎ করে গরমটা কেমন যেন অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
অনিসা বাগানের দিকের জানলাটা খুলে দিল।
অন্ধকার ঘরটায় রাস্তার নিওন আলো ঠিকরে এসে পরলো। আমগাছের তলাটা ঘনো অন্ধকার। অনিসা জানলার সামনে এসে দাঁড়ালো।
আমগাছের পাতায় হাওয়ার স্পর্শে একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে।
এই শব্দটাকে কি করে ব্যাখ্যা করবে।
দূর ছাই, ভালো করে বাংলাটা লিখতে পারি না। বলতেও পারি না। বাবা বলেছে প্রচুর বই পড় দেখবি ঠিক হয়ে যাবে।
বাবা বলার পর থেকে অনিসা পড়ছে। হচ্ছে কই।
আগেও অনিসা বহুবার এই জানলার ধারে এসে দাঁড়িয়েছে। কই এমন অদ্ভূত একটা ভালোলাগা ওকে গ্রাস করেনি। আজ তাহলে কেন এমন ভালো লাগছে।
মার মুখ থেকে ও বহুবার শুনেছে। বাবা সময় পেলে এই জানলাটার সামনে এসে দাঁড়াত। ওই আমগাছটার সঙ্গে কথা বলতো। আরও কতো কি।
অনিসা মাকে ঠাট্টা করে বলেছে। বাবা একটা পাগল ছিল, তাই ওইরকম পাগলাম করতো। মা অনিসার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল কোনও কথা বলেনি।
আজ তাহলে অনিসার এরকম মনে হচ্ছে কেন?
তাহলে কি বাবার মতো পাগলামি ওর মধ্যেও চেপে বসছে?
কই ওর নিজেকে পাগল বলে মন হচ্ছে না।
জ্ঞানতঃ সব কিছু বুঝতে পারছে। ভাবতে পারছে।
না আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। খাতাটা পড়ে ফেলতে হবে।
জানলার থেকে সরে এলো।
ল্যাপটপটা টেবিলে রাখলো ছোটো টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে নিল। নিজের ভেতরটা কেমন কেমন যেন লাগছে। একটা নিষিদ্ধ জগতে প্রবেশ করতে চলেছে। মায়ের গোপন কথা।
দূর ছাই যত্তোসব বাজে বাজে চিন্তা।
অনিসা ল্যাপটপের ফোল্ডারটা ওপেন করে ইমেজ ফাইলটা খুলে ফেললো।
বুবুন আমি আর পারছি না।
গত সাত মাস ধরে তোর কথা শুধু ভেবেছি। কিছুতেই মিলিয়ে উঠতে পারছি না। সব কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। চারদিকটা কেমন শূন্য শূন্য।
একবার ভাবি সত্যি সত্যি তুই মরে গেছিস। তারপর ভাবি এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।
ও তোকে একটা আনন্দ সংবাদ দিই। আমি কাঁদতে ভুলে গেছি। আমার চোখ দিয়ে এখন আর একটুতে জল পড়ে না।
কিরে একটু হাঁস। হাঁসবি না। ওমনি গম্ভীর হয়ে গেলি।
তুই ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার কে আছে বল।
কাকে আমি আমার মনের কথা বলবো। সেই তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেলি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, তুই মরে গেছিস। তুই বিশ্বাস কর। আমি এখনও সিঁদুর পরি।
একথা আমি লিখতে পারছি না। চোখে জল ভরে আসছে। তুই আমাকে অথৈ জলে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলি। এতো বড়ো সাম্রাজ্য, আমি সামলাই কি করে বল।
তোর সঙ্গে কতো কথা বলার ছিল, তুই কিছুই শুনলি না।
তোর একটুও জানতে ইচ্ছে করে না?
সেদিন তুই চলে আসার পর দাদুর বাড়িতে কতো হই হুল্লোড় করলাম। রাতে সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম। সব খানেতেই তুই।
বরুণদা একে একে সমস্ত ঘটনা বললো।
তখন জানতে পারলাম। তুই পনেরদিন ধরে কোথায় ছিলি, কি করছিলি। বিশ্বাস কর, জানার পর তোর ওপর যা রাগ-অভিমান ছিল সব গলে জল হয়ে গেল। তবে বরুণদার কথা শুনে মনে হলো, বরুণদাও সব জানে না। বরুণদা, বরুণদার পার্ট টুকু জানে।
দাদু, দিদার সঙ্গে দাদা কতক্ষণ কথা বললো। সব মান অভিমানের পালা শেষ হলো। দাদা কথা দিলো এখানে আসবে। দাদাকে তোর কথা জিজ্ঞাসা করলাম। বললো এখনও এসে পৌঁছয় নি। ভাবলাম কোথাও কাজ সেরে ফিরছিস। তোর মতি গতি বোঝা মুস্কিল। তুই তো আর আমাদের মতো সাধারণ ব্যক্তি নোস ভিআইপি।
সেদিনের সেই ঘটনাটা (মনে পড়ে তোর, আমাকে নিয়ে তোর শ্বশুর বাড়িতে যেদিন প্রথম গেলি) বড়োমা বেশ রসিয়ে রসিয়ে বললো। দাদু, দিদার সে কি হাসি। বুড়ো তো একবার হাসতে হাসতে বিষমই খেল। আমি তোর কৌপিন থেকে প্যান্টি কেনার ইতিহাস বললাম। মামীমা চেঁচিয়ে উঠলো, থাম মিত্রা থাম। আর হাসতে পারি না।
রাতে তোকে অনেক বার ফোন করলাম, দেখলাম তোর ফোন স্যুইচ অফ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল।
রাতে দিদিভাই, আমি, সানা একসঙ্গে শুলাম। পিকুও আমাদের সঙ্গে শুলো। সারারাত পিকু আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকল। সে এক আলাদা অনুভূতি, তোকে কি করে বোঝাই।
মনে মনে ভাবলাম আমিও মা হতে চলেছি। আমার সন্তানও আমাকে এই ভাবে জড়িয়ে ধরে সারারাত শুয়ে থাকবে। তুই যেমন রাত জেগে পাহাড়া দিস, তেমনি পাহাড়া দিবি।
ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।
সকালে ছোটোমার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
ছোটোমার মুখটা কেমন ফ্যাকাশে, চোখের পাতা ভেঁজা ভাঁজা। মনটা কেমন কু গাইল। ধর ফর করে উঠে বসলাম। ভাবলাম দাদুর হয়তো কিছু হয়েছে। তারপর শুনলাম তোর এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। মাথাটা কেমন চক্কর কাটলো। চোখেমুখে কেমন যেন অন্ধকার দেখলাম। বিছানাতেই পড়ে গেলাম। তারপর আর জানি না।
তিন দিন পর জ্ঞান ফিরলো। চোখ মেলে তাকাতেই দেখি ডাক্তারদাদা আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বসে আছে। মুখটায় কেউ যেন একপোঁচ কালি লেপে দিয়েছে। চোখ দুটো ছলছলে। একবারে কোটরে ঢুকে গেছে। তখন আমার মাথার ভেতরটা কেমন খালি খালি। ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।
বুঝলাম আমি নার্সিংহোমে শুয়ে আছি। ডাক্তারদাদা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
আস্তে করে বললো, একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর।
আমি ঘরের চারিদিকটা চেয়ে চেয়ে দেখলাম। কতো যন্ত্রপাতি। আমার সারাটা শরীর কেমন যন্ত্রণা করে উঠলো। ডাক্তরাদাদার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো। ডাক্তারদাদা চোখ মুছিয়ে দিল। যেন মনে হলো বাবা আমার চোখ মুছিয়ে দিচ্ছেন। আবার তোর কথা মনে পড়ে গেলো।
ডাক্তারদাদাকে অস্ফুটট স্বরে জিজ্ঞাসা করলাম, বুবুন।
বললো, ভালো আছে।
ওকে ডাকো।
বললো ও একটা নার্সিংহোমে ভর্তি আছে।
মনে মনে আশ্বস্ত হলাম যাক তুই বেঁচে আছিস। মনে একটু জোর পেলাম।
ডাক্তারদাদাকে বললাম আমি ভালো হয়ে গেছি। তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।
ডাক্তারদাদা বললো, আর একটু সুস্থ হয়ে ওঠ, তারপর নিয়ে যাব।
ডাক্তারদাদা আমাকে ইঞ্জেকসন দিল, তারপর আর জানি না।
প্রায় দিনকুড়ি বাদে বাড়িতে এলাম। এর মধ্যে কতো লোক আমাকে দেখতে এসেছে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। তোর বন্ধুরা ছাড়াও আরও কতো লোক। তাদের সকলকে চিনিও না। তোর কথা জিজ্ঞাসা করলে বলে ভালো আছে।
বাড়িতে যেদিন এলাম, ঘরে লোকে লোকারণ্য। আমি তখন সুস্থ।
আমাকে অনিমেষদা, বৌদি, প্রবীরদা, অনুপদা, বিধানদা, রূপায়ণদা বড়োমার ঘরে নিয়ে গেল। নানা কথাবার্তার ফাঁকে শুধু বোঝাতে লাগলো মিত্রা তোকে এবার শক্ত হতে হবে। তুই মা হতে চলেছিস। তোর এখন অনেক কাজ। আমরা তোর পাশে আছি। তোর কোনও চিন্তা নেই।
তখনই বুঝে গেলাম, আমার কপালে কিছু একটা অঘটন ঘটে গেছে।
তারপর সব জানলাম। কিছুটা গুম হয়ে থাকলাম। বিশ্বাস কর, এক ফোঁটা কাঁদিনি।
জানিস বুবুন, আজ আমার সাধ। তুই জানিস সাধ কাকে বলে? আবার বোকার মতো হাসে। তুই তো একটা গাধা। না হলে আমার সঙ্গে এরকম সর্টিয়ালি করতে পারতিস? তোকে বলেই বা লাভ কি।
জ্যেঠিমনি কাল রাতে চলে এসেছে। ছোটোমা, বড়োমা, জ্যেঠিমনি তিনজনে মিলে সব গোছগাছ করছে। বৌদি একবার রাতে এসে ফিরে গেছিল, আজ সকাল থেকে এসে হাজির। সুরো আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, বৌদি তোমার পেটটা এতো বড়ো কেন।
সঙ্গে সঙ্গে বড়োমা বলে উঠলো, বলতে নেই।
আমার সে কি হাসি।
পূর্ণিমার রাতে পীরবাবার থান থেকে ফিরে এসে তুই আমাকে যে জীবনটা দান করেছিলি। তাকে তিলে তিলে আমার শরীরে আশ্রয় দিয়ে রস, রক্ত, জলে বড়ো করে তুলেছি। আমার শরীরে তোর বীজ বাসা বেঁধেছে। এখন সে ফলে পরিণত। কি ভালো লাগছে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।
আমাকে দেখতে নাকি আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে, সন্তান জন্ম দেবার আগে মেয়েরা যদি সুন্দর হয় তাহলে নাকি মেয়ে হয়। আর দেখতে যদি খারাপ হয় তাহলে ছেলে হয়। তা এ নিয়ে অনেক জল্পনা, কল্পনা বুঝলি, তুই থাকলে বেশ ভালো হতো। তুই তো পেকোমাস্টার, এই বিষয়েও তোর অগাধ জ্ঞান থাকতে পারে, একটু শুনতাম। এখন তার কোনও উপায় নেই। এখন সবাই বলে আমি শুনি। সে যাক…।
আজ তোর সন্তানের বয়স সাত মাস হয়ে গেল।
আমি এখন স্বাভাবিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আগের থেকে অনেকটা হয়েওছি।
জেনেছি এ্যাক্সিডেন্টে তুই মারা গেছিস। কিন্তু আমি মন থেকে বিশ্বাস করতে পারছি না। তুই এই ভাবে মরে যেতে পারিস না। তোর মতো ছেলে এইভাবে মরতে পারে না।
বার বার তোর বলা কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। মিত্রা তোকে কিছুদিন একা থাকতে হবে। আমি তোর পাশে ফিজিক্যালি থাকতে পারবো না। তবে মেন্টালি থাকবো। এই কি তোর মেন্টালি থাকার নমুনা?
ইসলামভাই এই কয়মাসে আমার সঙ্গে মাত্র সাতবার দেখা করেছে কিনা সন্দেহ। ছোটোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, বলেছে ইসলামভাই বাইরে গেছে। কাজ আছে। রতন, আবিদ কারুর দেখা পাই না। দামিনীমাসি এলেও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না। বুঝতে পারছি তোর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ওরা কেউ মেনে নিতে পারেনি, পারছে না।
আজকে সবাই এসেছে। তোর বাড়ি থেকে কাকীমা, নীপা, সুরোমাসি এসেছে। চিকনা আসেনি। ওর নাকি অনেক কাজ। সবাই হই হুল্লোড় করছে কিন্তু কোথায় যেন তাল কেটে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু কেউ প্রকাশ করতে চাইছে না। কনিষ্করা এলো অনেক দেরিতে। আমার সঙ্গে একটু ইয়ার্কি ফাজলাম মারলো। নীরু দিদিভাইয়ের পেছনে একটু লাগলো। যে পিকু আঙ্কেল আঙ্কেল করে পাগল সে কেমন যেন চুপচাপ।
সারা দিনটা আমাকে নিয়ে টানাটানি চললো, এই অনুষ্ঠান সেই অনুষ্ঠান।
বিকেলের দিকে কনিষ্ককে একটু একা পেলাম।
আমি জানতাম তোর জন্য আর কেউ কিছু করুক আর না করুক কনিষ্ক ব্যক্তিগত ভাবে অনেক দূর পর্যন্ত দৌড়বে। ও ছারনেবালা পার্টি নয়। ও শেষ দেখে ছারবে। আমার মতো কনিষ্কও বিশ্বাস করে না, তুই মরে গেছিস। মনে মনে এটুকু বিশ্বাস করেছিলাম ওর কাছে তোর শেষ ঘটনার সঠিক খবর টুকু পাওয়া যাবে।
মনে হলো এই দিনটার অপেক্ষাতেই আমি বসেছিলাম।
ওকে আমার ঘরে নিয়ে এলাম, সঙ্গে নীরু, বটা। মিলি, টিনা আসতে চেয়েছিল, আমি নিজেই ওদের আসতে বারন করলাম।
কনিষ্ক হয়তো আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছিল। ঘরে ঢুকেই বললো।
ম্যাডাম তুমি কিন্তু অনির কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারবে না।
আমি খুব ধীর স্থির ভাবে ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, আমি শুনতে চাই কনিষ্ক।
না। আমি বলতে পারবো না।
তুমি বলো। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমার কিছু হবে না।
কনিষ্ক আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মাথা নীচু করে নিল। ওর চোখটা ছল ছল করে উঠলো। সারা মুখমণ্ডলে সে কি অব্যক্ত বেদনা। ঘরে সবার মুখটা কেমন থমথমে। তখনই বুঝে গেলাম রহস্যের উন্মোচন আমি কিছুটা হলেও করতে পেরেছি।
জানিস বুবুন, মনে মনে এত আনন্দ হচ্ছিল, তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।
নীরু কনিষ্ককে বললো, না তোকে বলতে হবে না।
আমরা যদি ওই দৃশ্য সহ্য করতে না পারি। ম্যাডাম সহ্য করবে কি করে। বটা বললো।
আমি নীরুকে বললাম, আমি সহ্য করতে পারবো। বুবুন আমাকে এই কয়মাসে সেই সহ্য শক্তি দিয়েছে। তোমরা আমাকে বিশ্বাস করতে পারো, নির্ভয়ে বলো।
বটা বললো, দেখ কনিষ্ক ম্যাডামের এটা জানা উচিত, তাহলে ম্যাডামও নিজের মতো করে বিশ্বাস করতে শিখবে, চলতে ফিরতে পারবে। আমরা যেমন পারছি।
কনিষ্ক কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলো, তারপর বলতে শুরু করলো।
রাত তখন দেড়টা বুঝলে ম্যাডাম, স্যারের ফোন পেলাম। স্যারের গলায় উৎকণ্ঠা।
তুই কোথায় আছিস?
আমার আজ নাইট স্যার।
একবার আসতে পারবি?
কোথায়!
বারাসাত।
এতো রাতে!
অনির এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। জায়গাটা বললেন।
একটু থেমে বললেন, এক কাজ কর অনির বাড়িতে আয়।
মাথাট কেমন ঝট করে ঘুরে গেল।
আমি এখুনি যাচ্ছি স্যার।
ফোনটা রেখেই, সঙ্গে সঙ্গে নীরু, বটাকে ফোনে ধরলাম।
সব বলার পর বললাম, আমি এখন তোদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। তোরা অনির বাড়িতে চলে আয়। আমি আর একজনকে দায়িত্ব দিয়ে চলে এলাম।
এই বাড়িতে এসে দেখলাম, কে নেই—সবাই চলে এসেছে। অনিমেষদার মুখটা পাংশু। দাদাকে স্যার প্যাথিডিন ইঞ্জেকসন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছে। মল্লিকদা অঝোড়ে কেঁদে চলেছে। স্যারের মুখ থেকে সব শুনলাম।
তাপসকে কারা যেন বারাসাত হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তাপসের ইঞ্জুরি সেরকম নয়। হাতে এবং মাথায় লেগেছে। ওকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
আমি বললাম অনির খবর কি?
স্যার বললো, অনিকে পাওয়া যাচ্ছে না।
তারমানে!
সেটাই তো ভাবছি।
এদিকে তাপস যা বলেছে, তা হলো। চোখে আলো পড়তে ও গাড়িটাকে আস্তে করে দেয়। অনিও নাকি ওকে বলে, তাপস গাড়িটাকে বাঁ সাইড চেপে দাঁড় করা। তারপর অপজিট সাইড দিয়ে আসা গাড়িটা ইচ্ছে করে ধাক্কা মারে। তারপর ও কয়েক মিনিটের মতো অচৈতন্য হয়ে যায়। চোখে কিছু দেখতে পায়নি।
জ্ঞান আসতে দেখে। ওর গাড়ি থেকে অনিকে কারা যেন টেনে-হেঁচড়ে বার করে অপজিটে দাঁড়িয়ে থাকা একটা টাটা স্যুমোতে তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। গাড়ির নম্বরটাও ও বলেছে। কিন্তু সেই গাড়িটা কলকাতার নয় ইউপির।
সেই রাতে অনিমেষদা প্রশাসনিক ভাবে যা করার করেছিলেন। কিন্তু সেই গাড়ির নম্বর প্লেট মেলে নি। যে টা মিলেছিল সেটা ওখানকার একজন ডাক্তারের গাড়ি।
প্রাথমিক ভাবে এইটুকুই করা গিয়েছিল। এর বেশি কিছু করা যায়নি।
পরদিন তোমাকে নিয়ে যমে-মানুষে টানাটানি। আমাদের কনসেন্ট তখন অনি নয় তুমি। তোমাকে কোনও প্রকারে বসিরহাট থেকে তুলে নিয়ে এসে নার্সিংহোমে ঢুকিয়ে স্যারের হাতে সঁপে দিয়ে অনির খোঁজ করতে শুরু করলাম।
ইসলামভাই-এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। অনিমেষদা তার প্রশাসনিক ক্ষমতা কতটা উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন তখন দেখেছিলাম। বিশ্বাস করবে না ম্যাডাম একটা মাছি গলতে পারবে না। বেঙ্গলের চারদিক শিল করে দেওয়া হলো।
ইসলামভাই দু-দিনের মাথায় খবর জোগাড় করলো সাগির, অবতার, নেপলাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ওদের ফোনও স্যুইচ অফ।
ইদানিং সাগির, অবতার, নেপলাকে নিয়ে অনি বেশি ঘুরতো। তাহলে কি ওরাই অনির কোনও ক্ষতি করলো। ইসলামভাই তখন পাগলের মতো চারদিকে খোঁজ লাগাচ্ছে। কোথাও কোনও ট্রেস করতে পারছে না।
এমনকি আবিদ, রতন, দামিনীমাসি যার যেদিকে যতটা এক্সট্রিম ক্ষমতা আছে।
তৃতীয় দিন সকালের দিকে অনিমেষদা পার্টি অফিসে ডেকে পাঠালেন। গেলাম। বললো, এখুনি চল, একবার কল্যানী যাব।
কেন!
ওখানকার থানা ইনফর্ম করেছে। একটা বডি পাওয়া গেছে। প্যান্টের পকেট থেকে যে মানি পার্স পাওয়া গেছে তা থেকে অনির প্রেস কার্ড মিলেছে।
বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠলো।
অনিমেষদা মাথা ধরে বসে আছেন। চোখেমুখে কে যেন একপোঁচ কালি লেপে দিয়েছে।
বিধানদার মুখ থেকে কোনও কথা সরছে না।
রাজনাথকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে, কোথাও রাজনাথের কোনও হদিস নেই।
প্রবীরদার অবস্থা পাগলের মতো।
সবাই স্নান-খাওয়া সব ভুলে গেছি।
থানা থেকে বডি তুলে আনা হয়েছে। ভয় বলে কি জিনিষ জানতাম না। জীবনে প্রথম সেদিন ভয় পেয়েছিলাম।
বডিটা দেখে, নীরু, বটা হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। কি বলবো তোমায় ম্যাডাম, মাথা কোনও কাজ করছে না। আমরা কয়েকজন ছাড়া কেউ জানে না খবরটা। বুকের ভেতরটা দুরু দুরু করে উঠলো। মুখ চেনা যাচ্ছে না। থেতলে গেছে।
সেই ডোরাকাট লালা হলুদ গেঞ্জি জিনসের প্যান্ট পরা।
অনিমেষদা খুব আস্তে করে বললেন, কিরে চিনতে পারছিস?
কি বলবো তোমায় ম্যাডাম, মুখ থেকে কোনও কথা বেরচ্ছে না। তবু বললাম।
পোশাক পরিচ্ছদ দেখে মনে হচ্ছে অনি।
অনিমেষদা তখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন রাজনাথই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। এর মধ্যে ইনভলভ অবতার, সাগির, নেপলাও।
পোস্টমর্টেম হলো। সাধারণভাবে পোস্টমর্টেমে যা যা স্পেসিমেন নেওয়া হয় তা নেওয়া হলো। অনিমেষদার অনুরোধে বেশি কাটা ছেঁড়া করা হলো না। পোস্টমর্টেম টেবিলে আমি ছিলাম। আমার মনের অবস্থা তখন তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। চোখে জল এসেছিল কিনা এখন ঠিক মনে করতে পারছি না। যার সঙ্গে বসে দিনের পর দিন কথা বলেছি, হাসি ঠাট্টা করেছি। এক বিছানায় শুয়ে রাতের পর রাত কাটিয়েছি। তার মৃত শরীরে আমি ছুঁড়ি চালান দেখছি।
যিনি পোস্টমর্টেম করছিলেন সেই স্যার আমাদের পরিচিত। স্যারকে শুধু বললাম, স্যার আমি একটু ডিএনএ টেস্ট করবো। আর ওর বডিটা আমি থরো চেকআপ করবো।
স্যার আমার মুখের দিকে তাকাল!
তুই ভেবে বলছিস?
হ্যাঁ স্যার—
এটা তুই করতে পারিস না—
আমি নিজে ল্যাবে দাঁড়িয়ে থেকে করাব। সব আমার দায়িত্বে। এটা কেউ জানবে না।
তোর শেষ অস্ত্র—
হ্যাঁ স্যার, ওর শরীরের সমস্ত রেকর্ড আমার কাছে প্রিজার্ভ করা আছে।
আর একটা জিনিষ একটু আমাকে বলুন এই বডির হার্টটা কোন দিকে?
কেন বলতো!
একটু দরকার আছে।
বামদিকে?
ঠিক বলছেন স্যার!
হ্যাঁ। অবিশ্বাস করার কোনও কারন নেই। এটাই স্বাভাবিক।
বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। সারাটা শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ। তখনই আমার স্থির বিশ্বাস হলো, এই বডিটা অনির নয়। অনি মরেনি। আমার যে তখন কি আনন্দ হচ্ছিল তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। কাউকে ওই মুহূর্তে এই কথা বলা যাবে না।
এমনকি এতদিন নীরুরাও জানতো না। আজ বলে ফেললাম।
কনিষ্ক ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো। নীরু, বটাও কাঁদছে।
কি খারাপ লাগছিল, তোকে কি বলবো।
তারপর আমার হাতটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, বিশ্বাস করো ম্যাডাম ওটা অনির বডি নয়। ও মরেনি। ও বেঁচে আছে। কোথায় আছে জানি না। তবে ও বেঁচে আছে।
অনি কখনও এইভাবে মরতে পারে না।
তুই বিশ্বাস কর বুবুন কথাটা শোনার পর আমার এতো আনন্দ হচ্ছিল, তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। ওরা কাঁদছে আমি যেন ভেতরে ভেতরে হাসছি।
আমরা চারজনে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলাম। কেউ কারুর মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ওরা কান্না থামাল। বিশ্বাস করবি, ওরা কেঁদেছে, আমি একটুও চোখের জল ফেলিনি। বরং মনে মনে ভীষণ আনন্দ পেয়েছি।
নীরুকে বললাম একটু চা আনো, আর কেউ যেন এই সময় আমাদের বিরক্ত না করে।
বলার সঙ্গে সঙ্গে নীরু উঠে চলে গেল।
সত্যি তোর বন্ধুরা। তুই ভাগ্য করে কিছু বন্ধু পেয়েছিলি বটে। কতটা তোকে ভালোবাসলে এইরকম স্যাকরিফাইস করতে পারে সেদিন জানলাম।
বটা সেদিন একটাও কথা বলেনি। চুপচাপ শুনে গেছে। আর অঝোরে কেঁদেছে।
কনিষ্ক কান্না থামার পর বললো।
জানো ম্যাডাম আমাদের ডাক্তারি শাস্ত্রে অনি বিরল প্রজাতির মানুষ। ও হচ্ছে আমাদের ডাক্তারী শাস্ত্র মতে সাইটাস ইনভার্স উইথ ডেক্সকার্ডিয়া প্রজাতির মানুষ। লাখে একটা, দূর আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ওর মতো দুটো মানুষ আছে কিনা সন্দেহ।
সুমন্তর জন্য ও যেদিন রক্ত দেওয়ার মনস্থির করলো। তারপর ওর থরো টেস্ট করলাম। আমি নিজে হাতে সেদিন ওর সব কিছু টেস্ট করেছিলাম। সেদিনই প্রথম জানতে পারলাম। সবার হার্ট বাঁদিকে থাকে ওরটা আছে ডানদিকে। ওর শরীরের টোটাল সিস্টেমটা তাই আলাদা। বইতে পড়েছি চোখের দেখা কোনওদিন দেখিনি। নিজের ইন্টারেস্টে ওর শরীরে প্রত্যেকটা অংশ এক্সরে থেকে শুরু করে স্ক্যান, এমআরআই সব করলাম। এমনকি ডিএনএ-টেস্ট পর্যন্ত করালাম। সেইদিন থেকে ও আমার পড়াশুনোর বিষয় হয়ে গেল।
ওকে একদিন কথায় কথায় বলেছিলাম। বললো, ব্যাপারটা ও জানে।
তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না। দেখলাম দুটো জিনিষ ওর সঙ্গে মেলেনি। এক ওই বডিটার সঙ্গে ওর হার্টের পজিসন, আর ডিএনএ।
রিপোর্টগুলো পাওয়ার পর আমি তখন মনে মনে ভাবতে শুরু করে দিয়েছি ও মরেনি।
এদিকে সেদিন পোস্টমর্টেমের পর বডি হ্যাণ্ড ওভার হয়ে গেছে। অনিমেষদা কাঁদতে কাঁদতে নিজে হাতে সই করে বডি নিলেন। কেউ গেল না। বড়োমা সব শোনার পর বার বার ফিট হয়ে যাচ্ছে। তুমি হাসপাতালে। সে কি অবস্থা। সে দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। কার দিকে তখন খেয়াল রাখবো। কাকে সময় দেব।
একমাত্র তোমাদের কাগজে ছোটো করে রিপোর্ট করা হলো, আর সব কাগজ বড়ো বড়ো করে রিপোর্ট করলো। কাগজ পড়ে বাড়িতে সকলে হাজির সে এক হুলুস্থূলুস কাণ্ড।
ওই রকম জাঁদরেল ইসলামভাই, সে পর্যন্ত ভেঙে পরেছে।
রতন, আবিদের কথা ছেড়ে দাও। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
অনিমেষদা ওখান থেকেই ফোন করলেন সবাইকে, যে ভাবেই হোক যে কোনও মূল্যে খুনীকে ধরে দিতে হবে।
সেই কটা দিন কি ভাবে যে কেটেছে বলে বোঝাতে পারবো না। কার কথা বলবো।
দাদা শুধু বললো, অনির শ্রাদ্ধ করা যাবে না।
এই সময় আমার আর একটা সন্দেহ হয়েছিল জানো—আজ তোমাকে বলছি, এখনও ব্যাপারটা কাউকে বলিনি। যে চিকনা অনির বিয়ের দিন আমার মুখে অনির কথা শুনে ভ্যাঁ-ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলেছিল, সেই চিকনা সেদিন কাঁদল বটে, কিন্তু সেই কান্নার মধ্যে কোনও প্রাণ ছিল না। বেশিরভাগ সময় ও দূরে দূরে ছিল। এমন কি আমরা সকলে শ্মশানে গেছি ও যায়নি। এমন কি বডিটা পর্যন্ত ছোঁয়নি।
শ্মশান থেকে ফিরে আসার পর উনামাস্টার, দাদা আর অনির কাকা বললো শ্রাদ্ধ করা যাবে না। তাহলে মিত্রার মনের ওপর আরও চাপ বাড়তে পারে এতে হিতে বিপরীত। যেমন চলছে তেমন চলতে দাও।
সবাই মাস্টারমশাই, কাকা, দাদার কথা মেনে নিল।
আমি কবে আরও শিয়োর হলাম ম্যাডাম জানো….।
তুই বিশ্বাস কর বুবুন, তখন যে আমার কি আনন্দ হচ্ছে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। অতি উৎসাহে বলে বসলাম, কবে?
গত মাসে….তারিখটা ঠিক মনে পড়ছে না, হঠাৎ আবিদ হাসপাতালে এসে হাজির।
আমি দেখে অবাক, কিরে এখানে! কি চাই? মুখ চোখটা ঠিক ভালো ঠেকলো না।
তোমার সঙ্গে একটু দরকার আছে।
ওকে নিয়ে ক্যান্টিনে এসে বসলাম।
চা খেতে খেতে চাপা স্বরে বললো। তোমাকে একটা কথা জানাতে এলাম।
কি?
রাজনাথ স্যুইসাইড করেছে, একেবারে ডা. ব্যানার্জীর মতো।
আমি আবিদের কথা শুনে ঝট করে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।
কি বলছিস তুই!
ঠিক বলছি। বসো।
তুই কি করে জানলি!
আমি মজফরপুরে লোক পাঠিয়েছিলাম। আমার কাছে খবর ছিল অনিদার ঘটনার পর রাজনাথ পালিয়েছে। তারপর পাত্তা নিতে শুরু করলাম। জানলাম ও মজফরপুর থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে একটা গ্রামের বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছে। লোক পাঠালাম।
আজ সকালে খবর এসেছে। মজফরপুর স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে লাইনের ওপর ওর বডি পাওয়া গেছে।
আবিদ আমাকে ওর মোবাইলে পাঠান ম্যাসেজটা দেখাল। অবিশ্বাস করি কি করে।
এরপরও তুমি বিশ্বাস করো কনিষ্কদা, অনিদা মরে গেছে? আলবাৎ অনিদা মরেনি।
আমি আবিদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
ওর চোখে মুখের কাঠিন্য দেখে আমার বুকটাই ধকধক করে উঠলো।
তাহলে সাগির, অবতার, নেপলা?
অনিদার সঙ্গেই আছে।
তুই গেইজ করছিস?
আবিদ কোনওদিন গেইজ করে না। আমি ভালোপাহাড়ে লোক পাঠিয়েছিলাম, ওখানে শ্যাম, শিবু নেই। দারু সমস্ত কন্ট্রোল করছে। তুমি কতদিন ওখানে যাওনি?
মাস খানেকের ওপর।
তোমাকে কথা দিলাম কনিষ্কদা, ইসলামভাই অনিদাকে খুঁজে বার করতে পারবে না। যতদিন পর্যন্ত অনিদার মকসদ পূর্ণ না হয়।
আমি আবিদের কথা শুনে থ।
অনিদার মকসদ পূর্ণ হলেই অনিদা নিজে ফিরে আসবে। এসব যা দেখছো, শুনছো সব গট আপ।
তুই কি আমাকে বাজাতে এসেছিস!
না।
তাহলে?
আমি শেষের কয়েকদিন অনিদার সঙ্গে ঘুরেছি। আমি জানি, ইসলামভাই-এর থেকেও অনিদার হাতটা অনেক বেশি লম্বা। ইসলামভাই-এর মতো দশটা মাথা এক করলে অনিদার মাথা হবে।
তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না কনিষ্কদা। আমরা যে এখানে বসে আছি। এই খবরটাও হয়তো অনিদার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
কি পাগলের মতো বকছিস! এখানে সবাইকে আমি চিনি।
এটাই অনিদার প্লাস পয়েন্ট, তুমি যাকে সন্দেহ করবে না, সেই-ই অনিদার ঘুঁটি।
তুই আমার মাথাটা খারাপ করে দিবি।
আমি ঠিক বলছি কনিষ্কদা। অনিদা আমাদের সকলকে বুকে করে আগলে রাখছে। রাজনাথ দিদির কতবড়ো ক্ষতি করেছে তুমি জানো না। ইসলামভাই কিছু জানে, সব কথা জানলে ইসলামভাই নিজেই রাজনাথকে সরিয়ে দিত। শুধু বিধানদার জন্য রাজনাথ এতদিন বেঁচে যাচ্ছিল।
শেষের পনেরোদিন দাদা যা ছক করেছিল তার একটা আমি একটু আভাসে ইঙ্গিতে জানতে পেরেছিলাম। তাতে বুঝেছিলাম অনিদা খুব তাড়াতাড়ি দেশ ছেড়ে হাওয়া হয়ে যাবে। তুমি কি ভাবছো আমি বসে ছিলাম। না। আমার স্বল্প ক্ষমতায় পাত্তা লাগিয়েছিলাম। ধরা খেয়ে গেছি। বকুনি খেয়েছি। তারপর আমাকে ফোন করে বললো, যা দায়িত্ব দিলাম অন্ধের মতো পালন কর। তোর ভাবনা আমি ভাববো।
তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে! আমাকে আগে বলিসনি কেন?
কনিষ্কদা, সেদিন অনিদার চেহারা তুমি দেখনি।
আমি, রতনদা, নেপলা দেখেছিলাম। কথার যদি অবাধ্য হতাম, সেদিনই ছট্টুর মতো হাওলা করে ছেড়ে দিত। আজও অনিদার কথার অবাধ্য হইনি। যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে, মাথা পেতে পালন করে যাচ্ছি। আমারও তো কথা বলার একটা লোক দরকার কনিষ্কদা, কাকে বলি বলো মনের কথা।
কেন ইসলামভাই?
অনিদা ইসলামভাইকে আর এই জগতে রাখতে চায় না। আমাদেরও। বলেছে অপেক্ষা কর। সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। আবিদের চোখ ছলছল করে উঠলো।
তুমি দাদার বুজুম ফ্রেণ্ড। অনিদা চলে যাবার পর তোমাকে দাদার আসনে বসিয়েছি। তাই জানাতে এসেছি। এটা অনিদা করিয়েছে। অনিদা এখনও বেঁচে আছে কনিষ্কদা।
আবিদ আমার দুটো হাত শক্ত করে চেপে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো।
আমি আবিদের কথা শুনে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলাম।
কান্না থামিয়ে বললো, আজ যাই কনিষ্কদা। পরে একসময় তোমার কাছে আসবো। আবিদ চোখ মুছতে মুছতে চলেগেল।
মাথা কোনও কাজ করছে না। কেমন যেন ভঁ ভঁ করতে শুরু করলো। এ কি শুনিয়ে গেল আবিদ। যদি ঘটনাগুলো সত্যি হয় কার কাছে ক্লারিফাই করবো। নিজের কাছে নিজে? পর পর কয়েক কাপ চা খেয়ে নিলাম। সিগারেট খেলাম। গা-টা কেমন গুলিয়ে উঠলো। অনেকক্ষণ বসে থেকে ওয়ার্ডে ফিরে এলাম।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/w5bmSQE
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment