❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৭ নং কিস্তি
—————————
খেয়ে দেয়ে যখন শুতে এলাম, দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম।
দুটো কুড়ি বাজে।
মাথার ভেতরটা একেবারে শূন্য। শিমুল তুলর মতো হাল্কা। মিত্রা এক ফাঁকে এসে চাদরটা চেঞ্জ করে দিয়ে গেছে। ঘরের বড়ো লাইটটা নিবিয়ে ছোট লাইটটা জ্বালালাম।
ঘরটা এখন আধো অন্ধকার। দরজাটা ভেজিয়ে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম। আঃ কি আরাম। সারাদিন যা গেলো আর ভাবতে ভালো লাগছে না।
শুধু মনে হচ্ছে মিত্রা কখন আসবে। ওকে জাপ্টে ধরে শুয়ে ওর শরীরের ওমে একটু স্নান করবো। ওকে আজকে চটকা চটকি করে একেবারে আটার লেচি বানিয়ে দেব। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না।
বড়োমার মিহি সুরে ঘুম ভাঙলো। আধো চোখে একবার তাকালাম। বড়োমার স্নেহের হাত আমার কপালে। চারিদিকে আলো থই থই করছে। আমার গায়ে একটা ধবধবে সাদা শাল চাপা দেওয়া।
কিরে উঠবি না। অনেক বেলা হলো।
তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলাম।
থাক থাক হুড়ো হুড়ি করে উঠে বসার দরকার নেই।
তুমি! মিত্রা কোথায়?
সবাই অফিসে চলে গেছে।
কটা বাজে?
এগারোটা বেজে গেছে।
খেয়েছে। আগে ডাকনি কেন?
অঘোরে ঘুমোচ্ছিলি। দু-দিন যা গেল তোর শরীরের ওপর দিয়ে, মায়া হচ্ছিলো ডাকতে।
হাই তুলতে তুলতে বললাম। ছোটোমা কোথায়?
হ্যাঁ বাবু উঠে বসেছেন। ছোটোমা ফোনে কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো।
নে তোর সোহাগী ফোন করেছে।
সেটা আবার কে!
কথা বল, বুঝতে পারবি।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে হ্যালো বললাম।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
ও তুই। তোর নাম কবে থেকে সোহাগী হলো?
ছোটোমা কাল রাত থেকে নতুন নামে ডাকতে শুরু করেছে।
বেশ বেশ। তাহলে আমি কি?
ছোটোমাকে জিজ্ঞাসা কর।
অফিসে কখন গেলি?
দু-ঘণ্টা হয়ে গেছে।
বাজে কথা।
ছোটোমাকে জিজ্ঞাসা কর।
আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম। ছোটোমা হাসছে।
তুই কখন আসছিস?
ঠিক নেই।
তোর সঙ্গে কথাই বলা হলো না?
সারা জীবনেও শেষ হবে না।
ছোটোমা হাসছে।
তুমি হাসলে কেন?
তোর কথা শুনে।
শুনছিস ছোটোমার কথা?
ঠিক বলেছে।
মন দিয়ে অফিস কর। আমি আর একটু ঘুমোই।
কখন আসছিস বল না—
টিনারা গেছে?
আমার ঘরেই বসে আছে। তোর গলা শুনতে পাচ্ছে।
ভালো। দেখি সময় পেলে যাব। না হলে যাব না।
এবার কাকে এনকাউন্টার করবি?
এবার টার্গেট তুই।
মিত্রা হাসছে।
আমি ফোনটা ছোটোমার হাতে চালান করে দিয়ে বাথরুমে গেলাম।
যেতে যেতে শুনতে পেলাম, উনি এখন বাথরুমে ঢুকছেন। ভিআইপি বলে কথা। সব বড় বড় ব্যাপার। আমরা সব চুনপুঁটি বুঝলি।
আমি বাথরুমে ঢোকার আগে ছোটোমা, বড়োমার মুখটা লক্ষ্য করলাম। পরিতৃপ্ত মুখ। কোনও টেনসনের লেশ মাত্র নেই।
বাথরুম থেকে একেবারে স্নান সেরে বেরলাম। দেখলাম বিছানার ওপর আমার প্যান্ট গেঞ্জি ড্রয়ার রাখা। বুঝলাম আজ এইটা পরে বেরতে হবে। দেখেই মনে হচ্ছে একেবারে আনকোরা। আগে এই প্যান্ট গেঞ্জি পরিনি। দারুন দেখতে গেঞ্জিটা। ফুলহাতা। জিন্সটাও দুর্দান্ত। কালকে বিধানদার কথাটা মনে পড়ে গেল।
তুই এখনও একটা গাড়ি কিনতে পারিসনি। নিজে নিজেই হেসে ফেললাম।
যাক তাহলে হয়েছে। ছোটোমা গেটের সামনে।
আমি হাসলাম।
সত্যি তুই মেয়েছেলে। তাড়াতাড়ি নিচে আয়, তোর জন্য বসে আছি।
আমি প্যান্ট জামা পরে নিচে এলাম। মিস্ত্রীরা রং করছে। বাড়ি ফাঁকা, কেউ নেই।
বসার ঘরে ঢুকে খাবার টেবিলে বসলাম।
বড়োমা, বাড়ি একেবারে শুনশান!
তোর মতো নাকি। সবারই কম বেশি কাজ আছে। আবার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভুলভাল বকবি। মনে রাখিস কাজের হিসাব নেব। ছোটোমা বললো।
চুপ করে গেলাম। নিজে নিজে ভাবলাম। তাহলে কালকে কি আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বহুত ভুলভাল বকেছি। হবে হয়তো।
আজ কি তোমরা দু-জন?
কেন, তুই আছিস।
আমি এখুনি বেরিয়ে যাব।
কোথায় রাজকার্য আছে শুনি। বড়োমা খিঁচিয়ে উঠলো।
আছে আছে, সব বলা যায়।
ছোটোমা লুচি বাটি চচ্চড়ি নিয়ে এলো। তিনটে প্লেট। বুঝলাম আমার দু-পাশে দু-জন বসবে। কপালে আজ শনি লেখা আছে।
কিগ বড়োমা আজ নতুন মেনু?
তোমার সোহাগী নিজে হাতে করেছেন। সকলে খেয়েছে। আমরা তিনজন এখন বাকি রয়েছি।
যাক সোহাগীর তাহলে সংসারে মতি গতি হয়েছে বলো।
বড়োমা এসে একপাশে বসলো।
কেন তোর মতি গতি নেই। বড়োমা বললো।
শোন বসার আগে বলে দিচ্ছি, উঠবো উঠবো করবি না।
ছোটোমা কথাটা বলে আমার আর এক পাশে বসলো।
ছোটো ফোনগুলো বন্ধ করে দে।
ছোটোমা মোবাইল দুটো নিয়ে টপাটপ স্যুইচ অফ করলো।
কিগো তোমরা দুজনে পেটাপিটি করবে নাকি!
দাদা যখন পিটেছে, আমরা পিটলে দোষ হবে না। ছোটোমা বললো।
আগে পেটে দিই, তারপর পিঠে দিও।
ছোটোমা কথা বলতে বলতেই প্লেট সাজিয়ে দিল।
নে শুরু কর।
খাওয়া শুরু করলাম। তিনজনে খাচ্ছি।
এ বাড়ি রং করার বুদ্ধিটা তোকে কে দিল? বড়োমা মুখ খুললো।
অনেকদিন ম্যারমেরে হয়ে পড়ে আছে তাই ভাবলাম।
এখন কেন? ছোটোমা ওপাশ থেকে চেপে ধরলো।
এতো শাঁড়াসি আক্রমণ শুরু করলে। মনে হচ্ছে সবে মাত্র ছোটোগল্প হচ্ছে। তারপরে উপন্যাসে ঢুকবে।
দেখছো দিদি দেখছো। কেমন তেঁয়েটে। বদমাশ।
বড়োমা তুমি ছোটোমাকে সামলাও। আমি কিন্তু উঠে পালাব।
তোর রং করার উদ্দেশ্যটা বল আগে।
কোনও উদ্দেশ্য নেই।
শুক্রবার রবিবার কি প্রোগ্রাম ঠিক করেছিস। বড়োমা হাসতে হাসতে বললো।
তোমরা সবাই বেশ জম্পেশ জিনিষ দেখছি!
তোর পাল্লায় পড়ে হয়ে যাচ্ছি। এরকম ছিলাম না। এখন দেখছি তোর সঙ্গে থাকতে গেলে হতে হবে। না হলে বাঁচবো না।
বল বল, দিদির কথার উত্তর দে। ছোটোমা বললো।
এই উত্তরটা পেয়ে গেলেই ছুটি।
এতো সহজে তোকে ছাড়বো ভেবেছিস। আজ তোকে একা পেয়েছি।
বড়োমা, ছোটোমা গণ্ডগোল পাকাচ্ছে।
আচ্ছা আগে তুই প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা দে।
মিত্রার সঙ্গে রেস্ট্রি করবো। রবিবার কয়েকজনকে ডেকে খাওয়াবার ইচ্ছে আছে।
আগে বলিসনি কেন?
ঠিক সময়ে বলতাম।
কদিন বাকি আছে?
এখনও চারদিন বাকি আছে।
দাদাকে বলেছিস? ছোটোমা বললো।
বলিনি, আজ বলতাম।
তোর এই প্ল্যানটা কতদিন আগে থেকে ঠিক করেছিস?
যেদিন এখান থেকে দেশের বাড়ি গেলাম সেদিন।
দেখছো দিদি দেখছো! তোমায় কালকেই বলেছিলাম, সেরকম একটা খবর হাওয়ায় ভাসতে শুনলাম। কজন জানে তোর মনের কথা?
কেউ জানে না। দামিনীমাসি, ইসলামভাই গেইজ করতে পারে। আমি এখনও কাউকে কিছু বলিনি।
তুই সব একা একা করবি, আমরা একটু আনন্দ করবো না? বড়োমা বললো।
এই তো তুমি আবার শুরু করে দিলে।
তুই করলে দোষ নেই, দিদি করলেই দোষ। ছোটোমা গজ গজ করে উঠলো।
দাও লুচি দাও। সব হজম হয়ে গেল।
ছোটোমা গোটা ছয়েক লুচি আমার পাতে দিল। খানিকটা বাটি চচ্চড়ি।
তোমাদের আছে?
তোকে জানতে হবে না। নিজের খেঁটনটা ঠিক মতো দাও।
আমি হাসছি।
কালকে যে তুই এসব করলি। তোর কোনও ক্ষতি হবে না। বড়োমা বললো।
এইসব কথা রবিবার পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করবে না। সব রবিবারের পর।
তোর কাকাকে আসতে বলবি না?
আমি কাউকে বলতে চাই না। গোটা পঞ্চাশেক লোকজন আসবে। তোমাদের নতুন করে বলার কিছু নেই। রেস্ট্রি করছি বাধ্য হয়ে।
একটু থামলাম।
মিত্রার সেফটির জন্য।
কেন! ছোটোমা জিজ্ঞাসা করলো।
কয়েকদিন পর আইনের প্রচুর জটিলতা আসবে, তার থেকে বাঁচার জন্য।
আবার ঝামেলা! বড়োমা বললো।
ঝামেলা ছাড়া পৃথিবী অচল। তুমি যেমন সংসার করছো। তোমাকেও কিছু কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়। ঠিক তেমনি আমাকেও সংসারের মতো ঝামেলা নিয়ে চলতে হবে। না হলে বাঁচবো না।
সে কিরে!
হ্যাঁগো ছোটোমা।
আমি না চাইলেও ঝামেলা হবে। প্রত্যেকে তার স্বার্থ দেখবে। আমি তার স্বার্থে বাধা দেব। ঝামেলা এখানে শুরু হয়ে গেল। না হলে বোঝনা ডাক্তারকে এতো শিক্ষা দিলাম, তাও সে রাজনাথকে দিয়ে বাইরে থেকে লোক আনিয়ে, আমাদের মারতে চাইল। কতো বড়ো সাহস বলো।
আমি অবাক হচ্ছি তুই জানতে পারলি কি করে। বড়োমা বললো।
একটা ছোট্ট ব্যাপারে সন্দেহ হলো। অনিমেষদার একটা কথা। ব্যাশ ঘুঁটিগুলো একটু নাড়াচাড়া করতে শুরু করলাম। সব পরিষ্কার হয়ে গেল। দেখলে না প্রবীরদার অবস্থা। এতো ঘটনার পরও সে রাজনাথকে বাঁচাতে চায়। কেন?
তুই বল।
টাকা টাকা। কোটি কোটি টাকা। দামিনীমাসির তল্লাট আর টাউনশিপ। তবে প্রবীরদা একলা খায় না। পার্টিফাণ্ডে দেয়, লোক লস্কর আছে। বাড়িটা দেখলে তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। একবার মন্ত্রী হতে পারলে সরাজীবন গুছিয়ে নেবে।
বিধানদা তোকে কালকে কি বললো?
এটা তোমায় বলা যাবে না ছোটোমা। বলতে পারো ভেরি কনফিডেনসিয়াল।
ঠিক আছে জানতে চাইবো না।
তুই যে অনিমেষের বাড়িতে যাস, সেটা আগে কখনও বলেছিস? বড়োমা বললো।
এটা একটা বলার বিষয়, তুমি বলো। বড়োমার দিকে তাকালাম।
ওরে বাবারে অনেক বেলা হয়ে গেল। আর নয় আমাকে এবার বেরতে হবে।
আর একটু। বড়োমা মুখটা কাঁচুমাচু করে বললো।
রাতে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
ঠিক বলছিস?
বোললাম তো কোনও কাজে ফেঁসে না গলে অবশ্যই আসবো।
খাওয়া শেষ করে বেসিনে মুখটা ধুলাম। তারপর দুজনকে একটা পেন্নাম ঠুকলাম।
কিরে এটা আবার কেন?
মনে হচ্ছে নতুন জামাকাপর পরেছি। তাই।
বড়োমা থুতনিটা ধরে চুমু খেলো। ছোটোমা কপালে।
গেটের বাইরে এসে মোবাইলটা চালু করলাম। অনেক ম্যাসেজ অনেক মিস কল। লাস্ট মিসকলটা দেখলাম ঝিমলির। বেচারা। কি খেয়াল হতে ভাবলাম ওর বাড়িতেই চলে যাই।
কাছাকাছি থাকে। একবার ভাবলাম ফোন করি। তারপর ভাবলাম না ফোন করে লাভ নেই। একটা সারপ্রাইজ দিই ওকে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম লেক গার্ডেন্স। মোবাইলের নোট বুক থেকে এ্যাড্রেসটা দেখে নিলাম। খুঁজে বার করে যখন ওর বাড়ির সামনে এলাম, দেখে অবাক হয়ে গেলাম। খুব নামী দামী লোকেদের ফ্ল্যাট বাড়ি।
গেটে একজন সিকিউরিটি গার্ড বসে আছে। তাকে বললাম। তিনি একটি খাতা বার করে আমার সামনে দিলেন তাতে নাম ঠিকানা লিখতেই ছেলেটি আমাকে ভালো করে দেখতে লাগলো।
স্যার আপনি কি সেই অনি ব্যানার্জী?
সেই মানে!
কাগজে লেখেন। সাংবাদিক।
না।
সরি স্যার।
কোন তলায় ভাই?
স্যার লিফ্টে উঠে সাত নম্বর বোতামটা টিপবেন। লিফ্ট থেকে বেরিয়ে বাঁদিকের ফ্ল্যাটটা।
ছেলেটির কথামতো সোজা ভেতরে চলে এসে লিফ্টের সামনে দাঁড়ালাম। বোতামে হাত দিতেই লিফ্টের দরজা খুলেগেল, ভেতরে ঢুকলাম। সিকুরিটি ছেলেটার কথা মতো সাত নম্বর বোতাম টিপলাম। ছেলেটি ঠিক ঠিক বলেছে। নেমপ্লেটে চারজনের নাম। ঝিমলির নামটাও আছে।
বেলে হাত রাখলাম। তিতির পাখীর মতো বেলটা তি তি তি করে বজে উঠলো।
দরজা খুললো। একজন তরুণী আমার সামনে।
প্রথম ঝটকাতেই দেখে মনে হবে তরুণী বিদেশী। হাইট আমার থেকে সামান্য কম। প্রায় পাঁচফুট আট কিংবা নয় ইঞ্চি। পরনে একটা টাইট গেঞ্জি শর্ট সাইজ জিনসের প্যান্ট। চুলগুলো লাল। দেখলে মনে হয় রং করা। কিন্তু ভালো করে দেখলে মনে হবে চুলগুলো কটাকটা। সেক্স যেন শরীর থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে। ভলাপচুয়াস সেক্সি গার্ল বলতে যা বোঝায় ঠিক তা নয়। সেক্স এ্যাপিলিং দুর্দান্ত। ফিগারটা দেখে মনে হচ্ছে তরুণী মডেলিং করেন। তরুণীর মুখের সঙ্গে ঝিমলির মুখের আদলের সামান্য মিল আছে। তরুণী ভীষণ সপ্রতিভ। আমি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলাম না, মাথা নীচু করলাম।
বেশ বুঝতে পারছি, আমার এই হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকা সদ্য যৌবন প্রাপ্তা তরুণী বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে।
কাকে চান!
কোকিলের মতো কুহু স্বরে তরুণী আমাকে প্রশ্ন করলো।
আমি তরুণীর মুখের দিকে সরাসরি তাকালাম। ঠোঁটের কোনায় সামান্য তির্যক হাঁসি। ব্যাপারটা এরকম, কি আমার রূপ যৌবন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা শেষ হয়েছে?
আমি অনি, অনি ব্যানার্জী, ঝিমলি আছে?
মুহূর্তের মধ্যে তরুণীর মুখের রং বদলে গেল।
চোখে মুখে একরাশ বিষ্ময়। আমি বোকা বোকা চোখে তরুণীর দিকে তাকিয়ে। তরুণী আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে আমাকে জাপ্টে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে উম উম করে গোটা পাঁচেক চুমু খেয়ে নিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাটা ঘটে গেল।
আমি ভীষণ অপ্রস্তুত। আরও বেশি সেকি হয়ে পড়লাম।
এবার তরুণী অত্যাধিক উচ্ছ্বল।
তুমি অনিদা! আগে বলবে তো। আমি রিমঝিম। এই পিঙ্কি, চুর্ণী, তিয়া দেখবি আয়, কে এসেছে। এসো এসো ভেতরে এসো।
রিমঝিম আমার হাতটা ধরেছে।
রিমিঝিমের চেঁচামিচিতে অপরজিটের ফ্ল্যাটের দরজা খুলে গেল। একজন মাঝ বয়সী ভদ্রলোক গেটের মুখে দাঁড়িয়ে, নাইট গাউন পরা।
মনোময় কাকু দেখবে এসো কে এসেছে। চিনতে পারো?
মুহূর্তের মধ্যে এই রকম একটা পরিস্থিতি হতে পারে আমি ভাবতেই পারিনি। তার জন্য আমি প্রস্তুতও ছিলাম না।
ঘরের ভেতর থেকে তিনজন তরুণী বেড়িয়ে এলো। কাকে ছেড়ে কাকে দেখব। সবাই ঝিমলির দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ সংস্করণ।
মনোময় কাকু নামে সেই ব্যক্তিও পায়ে পায়ে এগিয়ে এলেন।
গম্ভীর কন্ঠে বললেন, কে রে রিমঝিম?
দূর, তোমরা যে কি করে কর্পোরেট হাউসের কর্ণধার হয়েছো বুঝিনা বাপু। খবর টবর কিছু রাখো? কালকের কাগজটা কি ভালো করে দেখনি?
মনোময় কাকু আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে।
অনি ব্যানার্জী!
ইয়েস, দিস গাই ইজ অনি ব্যানার্জী। আমাদের অনিদা।
ধ্যুস এইটুকু একটা পুঁচকে ছেলে।
হ্যাঁ কাকু হ্যাঁ। পুঁচকে ছেলে। এখন খবরের কাগজে একটা নামই লোকে খোঁজে, অনি ব্যানার্জী। আমাদের মতো মেয়েদের কাছে নামটা হার্টথ্রব। দিদিভাই যেদিন প্রথম এসে বলেছিল। আমরা পাত্তাই দিইনি।
ভদ্রলোক এগিয়ে এসে ডান হাতটা এগিয়ে দিলেন। আমি হাতে হাত রাখলাম।
ভাই, রিমঝিম যা বললো তা সত্যি!
বলতে পারবো না। বাবা-মা এই নামটা রেখেছিলেন।
ভদ্রলোক হেসে ফেললেন।
তুমি ভাই বেশ মিষ্টি করে কথা বলতে পারো।
হাসলাম।
এসো এসো ভেতরে এসো। কাকু তুমি পরে এসো।
আচ্ছা।
তিনটি মেয়েই আমাকে চোখ দিয়ে ধর্ষণ করে চলেছে।
আমার ভেতরে চরম অস্বস্তি চোরা স্রোতের মতো খেলা করে চলেছে।
আমি ভেতরে এলাম। দু-হাজার স্কয়ার-ফিটের বিশাল ফ্ল্যাট। আমার পা ডেবে গেল। পুরু কার্পেটে মোরা সমস্ত ফ্ল্যাটটা। আমার স্থান হলো ড্রইংরুমে। বিশাল ড্রইংরুম ঝকঝকে তকতকে। একবারে গুছিয়ে সাজান। অধুনিকতার স্পর্শ প্রতিটি ইঞ্চিতে। এখনও রিমঝিমের তিন বন্ধু আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
তুমি কোথায়?
রিমঝিম ভেতরের ঘর থেকে কানে মোবাইল লাগিয়ে কলকল করতে করতে বেরিয়ে এলো।
অনিদা এসেছে।….বিশ্বাস হচ্ছে না….কথা বলবে….ধরো।
রিমঝিম আমার হাতে মোবাইলটা দিল।
আমি হ্যালো বলতেই ঝিমলি বলে উঠলো।
সত্যি তুমি এসেছো!
কেন বিশ্বাস হচ্ছেনা—
এটা কি সারপ্রাইজ?
হঠাৎ কি মনে হলো চলে এলাম।
একটু বসো, আমি এক্ষুনি আসছি।
আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। অফিসে যেতে হবে।
প্লিজ।
দেরি কোরো না।
ফোনটা রিমঝিমের হাতে দিলাম।
তোরা কি রে, অনিদার সঙ্গে আলাপ করতে পারিসনি।
আমি রিমঝিমকে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম। এরা কতো আধুনিক। আমাদের এখনও আপনি থেকে তুমিতে যেতে বছর খানেক সময় লাগে। আর এরা! প্রথম থেকেই তুমি।
আমার এতে কোনও আপত্তি নেই। তবু নিজেকে একই আসনে বসাতে পারছি না। এখন ইন্টারনেটের যুগ। প্রথমে কিছুক্ষণ চ্যাটে কথা হবে। তারপর কথা বলতে বলতে সেক্স এসে যাবে। তারপর বলবে আর সময় নেই, ওয়েব ক্যাম ফিট করে তুমি তোমার শরীরটা দেখাও।
দিদিভাই ঠিক কথা বলে। তুমি থেকে থেকেই কোথায় যেন হারিয়ে যাও।
রিমঝিমের কথায় হাসলাম।
তুমি বসবে না, কতক্ষোণ দাঁড়িয়ে থাকবে।
আমি চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছি। মাঝে মাঝে তিনজনের চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি এখনও বিস্ময়ের ঘোর ওদের কাটেনি।
এটা পিঙ্কি। এ হচ্ছে চূর্ণি। আর ইনি হচ্ছেন না থাক তোমায় পরে বলবো তিয়া।
তিয়া মেয়েটি রিমঝিমের গালটা টিপে বললো যাঃ।
সবাই আমার সঙ্গে হাতে হাত রাখলো। কেউ বুকের ওপর হাত রাখলো না। আমি বসলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা কে কি করো। একে একে সবাই উত্তর দিল। এবছরে উচ্চমাধ্যমিক দেবে। সবাই মহাদেবী বিড়লা গার্লস কলেজের ছাত্রী। অবাক হলাম কেউ সাইন্স নিয়ে পড়ছে না। সবাই কমার্সের স্টুডেন্ট, ভবিষ্যতে এমবিএ পড়ার ইচ্ছে।
এখন পাশাপাশি মডেলিংটা শিখছে।
আমার চিন্তা ভাবনা যে ঠিক, আবার নিজেকে নিজে ধন্যবাদ জানালাম।
বেল বেজে উঠলো। রিমঝিম গিয়ে দরজা খুললো। ঝিমলি ঘরের মধ্যে পা রাখলো। হাতের প্যাকেট দেখেই বোঝা যাচ্ছে মার্কেটিং-এ গেছিল। আমাকে দেখেই মিষ্টি করে হাসলো। আজ ঝিমলির পরণে একটা কালো ঘাঘড়া ওপরে হলুদ রং-এর টপ। দারুণ লাগছে ওকে দেখতে। সমস্ত শরীর থেকে সৌন্দর্য চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে। কোনওপ্রকারে সেন্টার টেবিলে জিনিষগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো, আমার দু-গালে নিজের গাল ঘোষল।
তাহলে তুমি আমাদের বাড়িতে এলে?
স্বশরীরে।
তোমার সঙ্গে কথায় পারবো না।
কিরে অনিদাকে জল টল দিয়েছিস? ঝিমলি তাকাল রিমঝিমের দিকে।
তুমি না এলে দিই কি করে।
খালি কলকল করছিস অনিদার সঙ্গে।
সবে শুরু করেছিলাম, তুমি এসে হাজির।
এরা আমাকে কি প্যাক দিতো জান। আমি নাকি সব বানিয়ে বানিয়ে বলি। শোনো, মাকে ফোন করেছিলাম, এখুনি আসছে, তোমার এখন যাওয়া হবে না।
মাকে ফোন করতে গেলে কেন! আবার একদিন আসতাম।
তুমি এসেছো। তা সত্ত্বেও মাকে জানাইনি। পরে জানতে পারলে পিট্টি দিত।
কেন আমাকে ফোন করলেই আবার চলে আসতাম।
তোমাকে ফোন করে পাওয়া যায়?
আমি হাসছি।
আচ্ছা পর্শুদিন কি হয়েছিলো বলো?
কেন!
তোমার ম্যাসেজ পেয়ে আমার আত্মারাম খাঁচা।
আমি ঝিমলির দিকে অবাক চোখে তাকালাম।
কিচ্ছু মনে পড়ছে না তাই না?
তারপর ফোন করি, স্যুইচ অফ। সকালে ফোন করলাম, মিত্রাদি ধরলো। বললো তুমি অসুস্থ। তারপর মিনিমাম দশবার ফোন করেছি। মা ফোন করে অমিতাভ আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বললেন। তোমার কি হয়েছিলো বলো?
কিছুই না।
সকালে কাগজ দেখে চোখ ছানাবড়া। সত্যি তুমি ওখানে গেছিলে!
পাগল কেউ যায় নাকি…
তাহলে!
বানিয়ে বানিয়ে লিখেদিলাম।
একমাত্র তুমিই বানিয়ে বানিয়ে লিখলে আর কোনও কাগজের সাংবাদিক লিখতে পারলো না। আর কোনও কাগজে নিউজটা বেরলোও না।
হাসলাম।
ভাইজ্যাকে তোমায় কাছ থেকে দেখেছি। তুমি বানিয়ে লেখার পার্টি নও।
রিমঝিমরা আমাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। আমি মুচকি মুচকি হাসছি।
আচ্ছা অনিদা কোনও কাগজ নিউজটা পেল না, তুমি পেলে কি করে? রিমঝিম বললো।
হাসছি। পেলাম।
বুঝেছি। তুমি মচকাবে ভাঙবেনা। ঝিমলি বললো।
আমি হাসছি।
দেখছিস রিমি দেখছিস, কিরকম দুষ্টুমি হাসি। যে কথা বলবি শুধু হেসে যাবে।
আমি ঝিমলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ওর মুখে পরিতৃপ্তির ছাপ।
তোদের বলেছিলাম। এখন দেখ আমি সত্যি না মিথ্যে।
এই টিনএজার মেয়েগুলোর সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছে?
আলাপ হয়নি, শুধু নাম জেনেছি।
দেখেছিস দেখ কিরকম ট্যারা ট্যারা উত্তর। সোজা উত্তর তোরা জীবনেও পাবি না।
সত্যি দিদিভাই! মনোময়কাকু জিজ্ঞাসা করলো আপনি অনি ব্যানার্জী? অনিদা উত্তর দিল, বলতে পারব না, বাবা-মা আমার এই নামটা রেখেছিলেন।
ঝিমলি খিল খিল করে হেসে উঠলো। হাসির চোটে সারাটা শরীর কাঁপছে।
কি খাবে হট না কোল্ড।
হট তো খাচ্ছিই। চারিদিকে তাকিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে মুচকি হাসলাম।
রিমঝিমরা চোখের ইশারায় বলছে দুষ্টু।
কোল্ড নিয়ে এসো।
শয়তান। ঝিমলি নাচতে নাচতে উঠে চলে গেল।
তারপর রিমঝিম ম্যাডাম, আমি আসতে তোমাদের গল্পের আসরটা মাঠে মারা গেল।
সেকিগো বরং আরও জমলো!
দুর তোমার বন্ধুরা সব বোবা, কথাই বলে না।
এটা অফেন্সিভ কথা। পিঙ্কি বলে উঠলো।
তাহলে ডিফেন্সিভ কি হবে?
আবার সবাই মিষ্টি করে হাসলো।
তিয়া ম্যাডাম?
তিয়া ডাগর চোখে আমার দিকে তাকাল। এ চোখের চাহুনিতে যে কোনও ছেলের হার্টবিট থেমে যেতে পারে।
তখন রিমঝিম একটা কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল। সেটা কি?
তিয়া হাসলো। আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।
পিঙ্কি আর চুর্নী গুড এবং বেটার তাই?
না না আমরা সবাই সমান চুর্ণী বলে উঠলো।
নিশ্চই আনিদা তোদের পেছনে লাগছে।
ঝিমলি কোল্ড ড্রিংকসের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
আমি আসতে করে বললাম পেছনে না, সামনে।
ঝিমলি দুষ্টু হাসি হাসলো।
বেলটা আবার তি তি করে ডেকে উঠলো। রিমঝিম এগিয়ে গেল। দরজা খুলতেই যে ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকলেন তিনি ঝিমলির মা না হয়ে অন্যকেউ হতেই পারেন না। তিনজনকে পাশা পাশি দাঁড় করিয়ে দিলে পিঠোপিঠি তিন বোন বলে মনে হবে।
এখন বুঝতে পারছি এই বয়সে উনি তরতর করে এতোটা ওপরে কি করে উঠেছেন। দেহের বাঁধুনিটা এখনও তিরিশ বত্রিশ বয়সের তন্বী যুবতীর মতো ধরে রেখেছেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ঝিমলি পরিচয় করাবার আগেই, আমি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
থাক থাক ঝিমলির মুখ থেকে তোমার কথা শুনে শুনে তোমাকে দেখা হয়ে গেছে।
হাসলাম।
তুমি তো পশ্চিমবাংলায় ঝড় তুলে দিয়েছ।
আপনি বাড়িয়ে বলছেন।
একটুও না।
উনি আমার পাশে এসে বসলেন। কিরে অনিকে মিষ্টি দিয়েছিস।
তুমি দাও। আমরা একটু ঠান্ডা দিয়েছি। এখনও শেষ করেনি।
আমি কিছু খাব না। বাড়ি থেকে খেয়ে বেড়িয়েছি।
কতক্ষণ আগে বেরিয়েছ? ঝিমলির মা জিজ্ঞাসা করলো।
ঘণ্টা খানেক হবে।
প্রথম দিন এলে, একটু মিষ্টি মুখ না করলে চলে।
একটা। তার বেশি নয়। আমায় এবার বেরতে হবে। একবার অফিসে যাব।
তোমার গাড়ি কোথায় রেখেছো?
গাড়ি! ঝিমলি খিল খিল করে হেসে উঠলো।
তুমি হাসালে মা। অনিদা গাড়ি চড়ে না, কলকাতায় বাস, ট্যাক্সি, অটো আছে। ঝিমলি বললো।
ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকালেন। যেন আকাশ থেকে পড়লেন। সত্যি তোমার গাড়ি নেই!
অফিসে আছে। আমার প্রয়োজনে লাগে না।
কেন!
গাড়ি করে এদিক সেদিক যেতে অসুবিধে হয়।
কি বুঝলে, মোদ্দা কথা তুমি অনিদার হদিস সহজে পাবে না। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করতে বলো, দেখো স্যুইচ অফ।
আমি হেসে ফেললাম।
তুই এতো জানলি কি করে!
বাহাত্তর ঘণ্টা কাটিয়েছি। তারমধ্যে আমি দেখেছি দশ বার ঘণ্টা। আমাকে হোটেলে রেখে দু-দিন হোটেলেই ফিরলো না। আমার কাজ কিন্তু থেমে থাকেনি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোক এসেছে, আমার খোঁজ খবর নিয়েছে। আমার এক্সাম সেন্টারে লোক পৌঁছে দিয়ে এসেছে। ঠিক সময়ে সেখান থেকে নিয়ে এসেছে। ট্রেনে উঠে বসলাম, উনি এলেন, বাই বলে আবার হাওয়া। যারা খোঁজ খবর নিতে এসেছিল তাদের জিজ্ঞাসা করি, বলে অনিবাবু কোথায় গেছেন বলতে পারছি না। প্রবলেম চাইল্ড।
ঝিমলি এমন ভাবে কথা বললো সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। এটাও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে ঝিমলি আমার প্রতি যথেষ্ট দুর্বল।
প্রবীরবাবু আজ রিজাইন করেছে, তুমি জান!
আমি ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে ভালো করে মাপার চেষ্টা করলাম।
সরকারি অফিসার। এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পার্টে আছে। বহুত পোড় খাওয়া। শরীর আছেই, পাশাপাশি মাথাটাও ভালো খেলাচ্ছেন।
কে প্রবীরবাবু!
তোমার লেখার ওপর বেইজ করে একজন সাংসদ সাসপেণ্ড হয়ে গেলেন, একজন মন্ত্রী রিজাইন দিতে বাধ্য হলেন, তুমি জান না!
আবাসন মন্ত্রী?
হ্যাঁ।
আমি টেররিস্টদের নিয়ে লিখেছি, উনি টেররিস্ট নাকি?
তুমি পারবে না মা, কেন ঘাঁটাচ্ছ। সাধে কি মিত্রাদি অনিদাকে কাগজের ওয়ান অফ দেম পার্টনার বানিয়েছে। ঝিমলি হাসতে হাসতে বললো।
আমাদের ফ্ল্যাটটা দেখিয়েছিস?
না।
ওকে দেখা, আমি একটু চা করি।
দিদিভাই আমি আমার ঘর দেখাব, তুমি ঢুকবে না। রিমঝিম বললো।
আমি হাসছি। বেশ মজা লাগছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, ঝিমলির পেছন পেছন ওর ঘরে এলাম। এই ফ্ল্যাটে সর্বমোট পাঁচটা ঘর ডাইনিং ড্রইং কিচেন বাদ দিয়ে। এমনকি গেস্টরুম পর্যন্ত আছে। ছবির মতো সাজান ফ্ল্যাট। আমি এসে ঝিমলির ঘরে ঢুকলাম। এসি রুম। একপাশে ছোট্ট একটা টেবিল। এক জনের শোবার মতো ছোট্ট একটা খাট। একটা আলমাড়ি আর বুক সেল্ফ।
ঝিমলি ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলো।
তোমায় আজকে দারুণ হ্যান্ডসাম দেখতে লাগছে।
আমি হাসছি।
হাসছো কেন।
প্রথম দর্শনে রিমঝিম কি করছে সেটা বললাম।
আঁ। সত্যি!
হ্যাঁ।
কি শয়তান দেখেছো। আমার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করেছিল। যেদিন অনিদাকে প্রথম দেখব সেদিনই আমি কিস করবো।
হাসলাম। দারুণ স্মার্ট। আমি বুঝতেই পারিনি ও এরকম করতে পারে।
ওর অনেক বয়ফ্রেন্ড আছে, কিন্তু কেউ ওকে টাচ করতে পারে না। বহুত টেঁটিয়া।
আমি হেসে ফেললাম। ওর বন্ধুগুলোও দারুণ স্মার্ট।
হবে না কেন। সবাই মডেলিং জগতে ঢোকার ছড়পত্র পেতে চলেছে। আর মডেলিং-এর মেয়েরা, তোমাকে নতুন করে কিছু বলার নেই।
হাসছি।
সব এক গোয়ালের গরু। এখুনি তোমায় পেলে কামরে খেয়ে নেবে। চোখ দেখেছো এক একটার।
চলো, আমাকে আবার বেড়তে হবে।
আমি শুক্রবার চলে যাচ্ছি।
ঠিক আছে, আমিও ভাইজ্যাক যাচ্ছি। আমার এ্যাড।
মা তোমাকে আজ নিশ্চই বলবে।
দুজনে বেরিয়ে এলাম।
কইরে রিমঝিম, আমার কাজ শেষ।
ওরা চারজন সামনের ড্রইংরুমে বসেছিল। এগিয়ে এলো। ঝিমলি কিচেনের দিকে গেল। আমি রিমঝিমের পেছন পেছন ওর ঘরে এসে ঢুকলাম। ঝিমলির ঘরের থেকেও অনেক বেশি পরিষ্কার ঘরটা। চারিদিকে রুচির ছাপ আছে। সব কিছুই একই রকম। আমি চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি ভাবলেশহীণ মুখ। দেয়ালে বেশ কিছু নামী দামী মডেলের বড়ো বড়ো ছবি। শরিরী ভাষায় নিজেদের ফুটিয়ে তুলেছে। ওরা চারজন আমাকে ঘিরে।
রিমঝিম, এগুলো এখানে কেন?
আমাদের এবছর ফাইন্যাল ইয়ার। আমাকে ওদের মতো হতে হবে। তাই টাঙিয়ে রেখেছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওদের দেখি আর নিজেক মটিভেট করি আমি ওদের থেকে বড়ো হবো।
এই পথে সঠিকভাবে বড়ো হওয়া যায়?
তারমানে!
আচ্ছা এই ফিগারটার মধ্যে দিয়ে ও কি বলতে চেয়েছে এটা জান।
ওরা চারজনে আমার দিকে তাকিয়ে, আমাকে যেন গিলে খেতে চায়।
আমি আবার ঘরের চারিদিকে চোখ বোলালাম।
তোমার ঘরটা ঝিমলির ঘরের থেকেও সুন্দর।
পিঙ্কি, তাহলে অন্তত একজন ভালো বলেছে বল।
খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠলো রিমঝিমের মুখটা।
অনিদা তোমার একটা অটোগ্রাফ দাও।
চুর্ণী একটা খাতা এগিয়ে দিল। আমি ওর গালটা ধরে একটু টিপে দিলাম।
আমি এখনও অটোগ্রাফ দেওয়ার যোগ্য হইনি। যেদিন হবো, সেদিন অবশ্যই দেব।
ওমা! তুই কি লাকি, অনিদা তোর গাল টিপলো। রিমঝিম বলে উঠলো।
আমি হাসলাম।
অনিদা তোমার ফোন নম্বরটা দাও। তিয়া বললো।
আমার কিন্তু স্যুইচ অফ থাকে।
ম্যাসেজ করবো।
তাহলে ঠিক আছে।
আমি দিলাম। সবাই পটাপট আমার নম্বরটা নিজের নিজের মোবাইলে সেভ করে নিল।
তোমায় কখন ফ্রি পাওয়া যায়।
সব সময়।
একদিন আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডা মারবে?
দেখি যদি সময় করতে পারি।
এই যে বললে সব সময় ফ্রি!
হাসলাম।
আচ্ছা তুমি চ্যাট করতে পার?
পারি।
তোমার ইমেইল আইডিটা দাও।
দিলাম।
তোমাকে আজ কিন্তু দারুণ লাগছে। গেঞ্জির কালারটা দারুণ।
আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে ওদের সঙ্গ উপভোগ করছি।
চলো এবার যাই। সবার চোখেই বিস্ময়ের কাজল।
ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
এই যে আমরা এখানে।
দেখলাম শুধু ঝিমলির মা ঝিমলি নেই, মনোময়বাবু আর একজন ভদ্রমহিলাও রয়েছেন। কাছে যেতেই মনোময়বাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার স্ত্রী মনিদীপা।
আমি বুকে হাত রেখে প্রণাম করলাম। চা খেতে খেতে টুক টাক কথা হলো। সব কথার মধ্যেই আমার লেখার ব্যাপার চলে আসছে।
মনোময়বাবুর স্ত্রী বললেন, আজ আপনারা ড. ব্যানার্জীকে নিয়ে পরেছেন দেখছি।
সত্যি কথা বলতে কি আমি সকাল থেকে কাগজটা দেখিনি।
বলো কি! তোমার কাগজ তুমি দেখ নি? মনোময় বাবুর চোখ বড়ো বড়ো।
সেই ভাবে যদি বলেন কোনওদিনই দেখা হয় না। ওই আরকি, ময়রা তার নিজের মিষ্টি চেঁখে দেখে না, কিরকম খেতে।
সবাই হাসছে।
ড. ব্যানার্জী লোকটা মোটেই সুবিধার নন। মনিদীপা বললেন।
খট করে কানে কথাটা বাজলো।
কেন এই কথা বলছেন?
রিমঝিমের মা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। চায়ে চুমুক দিলাম।
আমি ওনার সঙ্গে কাজ করেছি কয়েক বছর।
কোথায়?
ওনার নার্সিং হোমে।
আপনি ডাক্তার?
হ্যাঁ।
কোথায় আছেন?
প্রইভেট প্র্যাক্টিশ করি। এই মুহূর্তে বেলভিউয়ের সঙ্গে এ্যাটাচড।
আজকে কাগজে যা বেড়িয়েছে সব সত্যি লিখেছে, না গল্প লিখেছে?
ডকুমেন্ট প্রিন্ট করে দিয়েছে মানেই সত্যি। এবার ওনার রেজিস্ট্রেসনটা ক্যানসেল হবে।
আমি মুখ নীচু করে হাসলাম।
আজ কিন্তু বেশিক্ষণ বসা যাবে না। আমাকে উঠতে হবে। কটা বাজে ঝিমলি?
রিমঝিম বলে উঠলো, বেশি হয়নি, আড়াইটে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। আজ উঠি, আর একদিন আসব।
আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালো লাগলো। আপনাকে অনেক কাজে লাগবে। মনোময়বাবু কথাটা বলেই সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। নিজের হাতটা এগিয়ে দিলেন। আমি হাতে হাত রাখলাম।
আপনাদের মতো ব্যক্তিত্বের কাজে লাগতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবো।
হুঁ, বিনয়ের অবতার। এরপর আবার আগামী বছর সময় পাবে তাই তো। ঝিমলি ধমকের সুরে বলে উঠলো।
হয়তো আগামী কালও হতে পারে।
থাক।
তুমি এখন কোথায় যাবে? ঝিমলির মা জিজ্ঞাসা করলেন।
অফিসে যাব।
চলো তোমায় নামিয়ে দিই। আমাকে একবার অফিসে যেতে হবে।
থাক, আমি ট্যাক্সিতে চলে যেতে পারবো। বলো, বলবে তো, চুপ করে রইলে কেন। ঝিমলি বললো।
আমি হাসছি।
ওর গাড়ি নেই! মনোময়বাবু বললেন।
গাড়ি! ঝিমলি এমন ভাবে বলে উঠলো, সবাই হেসে উঠলো।
মনোকাকু এই গল্পটা তোমায় চলে যাবার পর বলবো। দেখে কি মনে হচ্ছে, নিপাট একজন ভদ্রছেলে। ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। তাই না। একবার একটু খোঁজ খবর নেবে ভালো করে, দেখবে ওর কীর্তি কলাপ, শুনলে আঁতকে উঠবে।
ঝিমলির মা উঠে দাঁড়াল। আমি পায়ে পায়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেলাম জুতোটা পায়ে গলালাম। সবার দিকে একবার তাকালাম।
সত্যি অনি তোমায় দেখে কিন্তু না সাংবাদিক, না মালিক কিছুই মনে হচ্ছে না। একজন ধোপদুরস্ত সাধারণ ছেলে। মনোময়বাবু বললেন।
আমি হাসলাম।
ঠিক আছে, আবার পরে দেখা হবে। গেট থেকে বেরিয়ে করিডোরটায় একটু দাঁড়ালাম, রিমঝিম লিফ্ট বক্সের বোতাম টিপলো। লিফ্ট এলো। আমি ঝিমলির মা ভেতরে এলাম।
বাই।
টা টা মাঝে মাঝে কিন্তু তোমায় বিরক্ত করবো আমরা। রিমঝিম চেঁচিয়ে উঠলো।
হাসলাম।
ঝিমলির মা স্বগতোক্তির সুরে বললেন, পাগলী একটা।
নিচে নেমে দেখলাম লালবাতি ওয়ালা গাড়ি দাঁড়িয়ে।
ড্রইভার নেমে এসে গাড়ির দরজা খুললো। আমি আগে উঠলাম, ঝিমলির মা পরে উঠলেন। গাড়ি চলতে শুরু করলো।
ম্যাডাম কোথায় যাবেন?
আগে ওকে নামিয়ে দিয়ে, অফিসে যাব।
আমাকে অফিসে নামাতে হবে না, আপনি এসপ্ল্যানেডে নামিয়ে দিলেই হবে।
কেন, তোমায় অফিসে নামিয়ে দিই।
না না আমি ওইটুকু হেঁটে চলে যাব।
তাহলে ঝিমলি ঠিক কথাই বলেছে।
ও আমাকে কিছুটা কাছ থেকে দেখেছে। অফিসেও এসেছে কয়েকবার। যদিও সেই সময় আমি ছিলাম না।
তোমার জন্য ও ডাক্তারী পড়বার সুযোগ পেলো।
আমার জন্য কেন? ও ভালো পরীক্ষা দিয়েছে, তাই পেয়েছে।
সোর্স ছাড়া ওখানে চান্স পাওয়া যায় না। আমি খোঁজ নিয়েছি।
ভুল ধারনা আপনার।
তুমি এর মধ্যে ভাইজ্যাক যাবে?
না। তবে কাজ পরলে যেতে হবে।
তোমাদের ওখানে ব্রাঞ্চ আছে।
হ্যাঁ।
ওর একটা থাকার ভালো ব্যবস্থা করে দাও।
ঠিক আছে আমি ফোন করে দেব। আমাকে ট্রেনের কোচ নম্বর আর সিট নম্বরটা একবার দেবেন।
কালকে তোমাকে ফোন করে বলবো।
ঠিক আছে।
তুমি কালকে একবার কাউকে আমার কাছে পাঠাতে পারবেয
কিসের ব্যাপারে বলুন!
তুমি ঝিমলিকে কিসের ব্যাপারে বলেছো।
ও হ্যাঁ, সত্যি। আপনার বাড়িতে এলাম, আপনাকেই ব্যাপারটা বলতে ভুলে গেছি।
তাতে কি হয়েছে। আমার মনে আছে। তুমি কালকে বারোটার পর কাউকে পাঠাও আমি ছ-মাসের একটা ক্যাম্পেন পাঠিয়ে দেব।
ঠিক আছে।
দেখলাম আমার জায়গা এসে গেছে। আমি নেমে পরলাম। এখান থেকে মিনিট চারেক হাঁটলেই আমার অফিসের গেট। পকেট থেকে ফোনটা বার করে অন করলাম। মিস কলের ছড়াছড়ি তেমনি ম্যাসেজ।
সিগারেটের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে ধরালাম।
ফোনটা অন করেই দামিনীমাসিকে একটা ফোন করলাম।
কিরে কোথায় ছিলি! কখন উঠলি? এখন কোথায় আছিস? কতোবার ফোন করলাম তোর ফোনের স্যুইচ অফ।
কোন প্রশ্নের উত্তর আগে দেব বলো?
মাসি হাসছে।
বড়োমার সঙ্গে কথা হয়নি?
হয়েছে।
তাহলে সব জেনে গেছ।
মাসি হাসছে।
এখন কোথায় আছো?
নিজের ঘরে বসে আছি।
কতক্ষণ থাকবে?
আজ আর বেরতে ভালো লাগছে না।
রতন কোথায়?
ওর কাজে।
তোমার কাছে যাবে?
আসতে পারে, রাতের দিকে।
তোমার বৌমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
এখানে!
তার ঘুরতে যাবার সখ হয়েছে। আমারও একটা কাজ আছে তোমার সঙ্গে।
কি হয়েছে বল?
গিয়ে বলবো।
সত্যি আসবি!
তাহলে কি মিথ্যে কথা বলছি। দেখো যেন ভড়কে না যায়। কোনওদিন এসব দেখেনি, সব গল্প উপন্যাসে পড়েছে। এবার রিয়েল লাইফ স্টোরিতে।
ঠিক আছে, তুই কিছু ভাবিস না।
ফোনটা কেটেই, বৌদিকে ফোনে ধরলাম।
সকাল থেকে কোথায় থাকিস বলতো?
ঘুমোচ্ছিলাম।
এগারোটা পর্যন্ত। তারপর।
বাবা, কেন বিধানদাকে ফোন করো, সব খবর পেয়ে যাবে।
বৌদি হেসে ফেললো।
শোনো তোমার ওখানে যাব।
কেন!
আমার বৌ দেখাতে।
ধ্যাত। বাঁদর।
হ্যাঁগো সত্যি বলছি। এই ধরো সাতটা নাগাদ। তার আগেও যেতে পারি। তোমার আপত্তি আছে?
একেবারে না। শুধু তুই সত্যি সত্যি আসবি কিনা বল।
তাহলে তোমায় ফোন করতাম না।
ঠিক আছে আয়।
দু-দশ মিনিট দেরি হলে একটু ক্ষমা ঘেন্না করে দিও।
বৌদি হাসছে।
সুরোকে একবার খবর দিয়ো। কোথাও যেন আড্ডা মারতে না যায়।
আচ্ছা।
রাখি তাহলে।
রাখ।
অফিসের একেবারে গেটের সামনে চলে এলাম। ইতি উতি সকলে দাঁড়িয়ে আছে। আমার একটাই সৌভাগ্য এখনও পর্যন্ত সকলে আমাকে চেনে না। গেটে পা রাখতেই সেই সিকুরিটির ছেলেটা মুখ টিপে হাসলো।
আজ তোমার ইভিনিং ডিউটি।
হ্যাঁ স্যার।
চেক করবে না।
ছেলেটি মাথা নীচু করে হাসছে।
আমি সোজা প্রেস রুমে চলে এলাম। আমাকে ঢুকতে দেখেই সুতনুবাবু এগিয়ে এলেন।
ছোটোবাবু এখুনি এলেন?
জাস্ট ঢুকলাম।
সকালে আপনার বাড়িতে গেছিলাম আপনি ঘুমচ্ছিলেন।
তাই! এখন কি ছাপা হচ্ছে?
রবিবারের সাপ্লিমেন্ট। এরপর বাইরের কাগজটা ছেপে দেব।
রেডি হয়ে গেছে?
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা।
হ্যালো।
শেষ পর্যন্ত এলি।
হাসলাম।
ওপরে কখন আসছিস?
যাচ্ছি।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
ছোটোবাবু আমরা হিমাংশু বাবুর সঙ্গে কথা বলেছি।
দেখলাম আরও দু-চারজন প্রেসের স্টাফ পাশে এসে দাঁড়াল।
কি বললো হিমাংশু?
আপনার একটা কনসেন্ট প্রয়োজন।
ঠিক আছে আমি হিমাংশুর সঙ্গে কথা বলে নেব।
আপনি একটু প্রেস ম্যানেজারকে বলে দেবেন, উনি ভীষণ বাড়াবাড়ি করছেন। আমরা ওনার কথা মানব না।
কেন আবার কি হলো?
উনি স্ক্র্যাপ মাল ওনার পরিচিত লোককে বিক্রি করতে চাইছেন। আমরা বলেছি আপনার অনুমতি পেলে তবেই হবে।
ঠিক আছে আমি কথা বলে নেব।
পার্চেজের ব্যাপরটাও আপনি একটু দেখুন।
সোমবার থেকে টিনা ম্যাডাম দেখবেন। উনি আজকে জয়েন করেছেন। একটু বুঝে নিতে দিন।
তাহলে দারুণ হবে। আমরা জানি ম্যাডাম আগে কোথায় ছিলেন।
ঠিক আছে। আপনারা কাজ করুণ।
ছোটোবাবু টাকাটা আমরা এখনও নিইনি। সার্কুলেসন ম্যানেজারের কাছে জমা রেখেছি।
ওটা আপনাদের ব্যাপার। আমার দেবার কর্তব্য দিয়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে এরকম টোকেন পাবেন। যদি দেখি আপনারা ঠিক আছেন। আর একটা কথা বলে রাখি আমার কাছে কোনওদিন ডিমাণ্ড করবেন না। করলে পাবেন না। আর আপনাদের প্রয়োজনীয় যা কিছু কথা দাদা, মল্লিকদাকে বলবেন।
ঠিক আছে ছোটোবাবু।
আমি আর রিসেপসন ঘুরে ভেতরে ঢুকলাম না। প্রসেরুমের ভেতর দিয়েই সোজা লিফ্টের সামনে এলাম। দেখলাম বেশ ভিড়। সোজা শিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করলাম। অনেকেই নামছে উঠছে। আমি সবাইকে চিনি এটা হলপ করে বলতে পারবো না। এরই মধ্যে কেউ গুড ইভিনিং স্যার বলছে। কেউ বলছেন স্যার এখুনি এলেন। আমি হাসি ছাড়া মুখ থেকে একটিও শব্দ উচ্চারণ করছি না।
ওপরে উঠে এলাম। দেখলাম মিত্রার ঘরের সামনে হরিদার ছেলে বসে আছে। দাদার ঘরের সামনে হরিদা। আমাকে দেখেই বললো।
এখুনি আসা হচ্ছে?
আমি মাথা দোলালাম।
সোজা নিউজরুমে চলে এলাম। দেখলাম সবাই ঘরের মধ্যে। গেটে পা রাখতেই মল্লিকদা দূর থেকে হাসতে আরম্ভ করলো। যাকে বলে একেবারে অর্থপূর্ণ হাসি। আমি এগিয়ে গিয়ে নিজের টেবিলে বসলাম।
সন্দীপ, ছোটোবাবু এলেন। মল্লিকদা বলে উঠলো।
সন্দীপ কি লিখছিল মুখ তুলে একবার দেখল, হাসল। অর্ক একটা জলের বোতল নিয়ে এলো।
কিগো তুমি হাঁপাচ্ছ?
শিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠলাম।
হেঁটে উঠলে!
কেন, আজ প্রথম নাকি।
তুমি পারো। অফিসের প্রেস্টিজে একেবারে গ্যামকসিন মেরে দিচ্ছ।
ঢক ঢক করে জল খেলাম।
কিগো অনিদা খুব মাঞ্জা দিয়েছো আজকে।
কিরে অর্ক, অরিত্র কি বলে।
সত্যি অনিদা এতক্ষণ খেয়াল করিনি।
হাসলাম।
কি লিখলি।
আজ কোনও কাজ নেই, শুধু ফলোআপ করেই কাটিয়ে দিলাম।
রেস্ট।
বড়ো বস বলেছে শুধু ফলোআপ করে যা।
অর্ক তোর ক্লিয়ার।
সনাতনবাবু ট্রান্সফার করে দিয়েছেন।
কাজ মিটিয়ে দিয়েছিস।
হ্যাঁ।
হরিদা সামনে এলো। আমার দিকে তাকাল।
দাদা ডাকছেন, এই তো।
তাড়াতাড়ি। গম্ভীর হয়ে।
আমি যাব না।
তাহলে তাই বলি গিয়ে।
যাও।
মল্লিকদা হাসছে। হাসির শব্দ এখানে বসে শুনতে পাচ্ছি।
দাদা সকাল থেকে খুব খোশ মেজাজে আছে। অর্ক বললো।
কেনরে?
সব কাজ ঠিক ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা। কেটে দিলাম।
আবার এখুনি আর একজন আসবে দেখ। এতক্ষণ কারুর প্রয়োজন পড়েনি।
অরিত্র হাসছে। তোমার মোবাইল স্যুইচ অফ ছিল।
কেনরে, ফোন করেছিলি?
বহুবার।
কেন! কোনও গড়বড় হয়েছে নাকি?
এই তো তোমার চোখের ভাষা চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।
অরিত্র হাসছে।
সায়ন্তনকে দেখতে পাচ্ছি না।
দাদা কোথায় পাঠালেন।
কিগো অনিদা, অরিত্র আমার নামে লাগিয়েছে তোমার কাছে। অর্ক বললো।
না।
তাহলে।
আমি হাসছি। অরিত্রও হাসছে।
একটা রিজাইন দিয়েছে, আর একটাকে পার্টি থেকে সাসপেন্ড করেছে। অরিত্র বললো।
মরুকগে যাক। আমাদের কি, আমাদের কাজ আমরা করেছি। নিউজ করেছিস?
সে আর বলতে।
কিরে একবার গিয়ে মুখটা দেখিয়ে আয়না দুটো ঘরে, তাহলে ল্যাটা চুকে যায়।
সন্দীপ কাছে এসে বললো।
আমার হয়ে তুই দেখিয়ে আয়।
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে।
তোর খবর বল।
মল্লিকদা একটা হাফ সাইজ যা দিয়েছিল। সন্দীপ বললো।
আমি তাকালাম।
ওরকম ড্যাব ড্যাব করে তাকাস না। এগারোটা পর্যন্ত ঠেসে ঘুমিয়েছিস।
মল্লিকদা আছে, নাহলে তোকে চুপ করিয়ে দিতাম।
দেখলে, কি কথার কি মানে করলো।
ছোটোবাবু একবার দিদিমনি ডাকছেন।
মল্লিকদা হেসে ফেললো। দেখলাম হরিদার ছেলে।
উঠে দাঁড়ালাম।
তোর চিঠি পত্রগুলো একবার দেখ। কিলো দশেক হবে। সন্দীপ বললো।
দেব দেব ঘাবড়াচ্ছিস কেন?
আরও আছে।
আরও আছে!
ওগুলো সর্টিং করে দে, আবার বার করে দেব।
সন্দীপের দিকে তাকালাম।
কালকে একটা গড়বড়ি কাজ করেছিস, মাথায় রাখিস।
ম্যাডামকে বলে দিয়েছি, ম্যাডাম সামলে নেবে বলেছে।
ম্যাডাম বাঁচাবে না।
দেখা যাবে।
মল্লিকদা, আজ কি কনটিনিউ করছো? মল্লিকদার দিকে তাকালাম।
আরও দুটো দেবো।
কিছু বুঝছো।
কি বুঝবো, অজস্র ফোন আসছে।
দাঁড়াও একটু মুখ দেখিয়ে আসি।
মল্লিকদা হাসছে।
তুই কি আর আসবি?
কেন!
তোর সেইরকম প্রোগ্রাম আছে কিনা।
এরই মধ্যে খবর হয়ে গেছে!
কি করবো বল, তুই গেটে ঢোকার পর থেকেই খবর চলে আসছে।
আরে বাবা, আমি এখনও এতোটা ভিআইপি হয়ে যাইনি।
মল্লিকদা, গল্প শুরু হলো। তারপর বেরিয়ে গিয়েই ফোন করবে অর্ক একবার এখুনি আয়তো, শোন একটা ফটোগ্রাফারকে ট্যাঁকে করে নিয়ে আসিস। দরকার আছে।
অর্ক ক্যারিকেচার করে দেখাচ্ছে সবাই হাসছে।
সত্যি তুমি পারো অনিদা। মাথায় রাখবে কালকের সব খবর পেয়ে গেছি।
নিশ্চই মল্লিকদা বমি করেছে।
তোমাকে জানতে হবে না।
দাঁড়া আসছি।
নিউজরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/aj5uZx6
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment