❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৭ নং কিস্তি
—————————
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকালাম। মুখটা চক চক করছে।
এই দেখুন এতক্ষণ আপানাদের বসতেই বলা হয়নি। বৌমাকে দেখতে চাইছেন, তাই তো?
ভদ্রমহিলা মাথা নীচু করে হাসলেন।
ওই যে চেয়ারে বসে আছে।
মিত্রা প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেছিল। তারপরে উঠে এলো। নমস্কার করতে গেলো, ভদ্রমহিলা ওর হাত দুটো ধরে ফেললো, দুজনের কেউ ওর প্রণাম নিল না।
তুমি কতো বড়ো বংশের মেয়ে।
ভদ্রমহিলা মিত্রাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
আপনারা একটু বসুন আমি আসছি। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। দাদা আমার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো।
কিরে খামটা আমাকে দে।
পরে দিচ্ছি।
নিউজরুমে এসে ঢুকলাম।
অর্ককে খামটা দিয়ে বললাম দেখতো লেখাটা কেমন। খুব খারাপ হলে নিজে লিখে দিবি।
দাঁড়ালাম না। সোজা এসে আর্ট ডিপার্টমেন্টে ঢুকলাম। আর্ট ডিরেক্টর মুন্সীবাবু বসে বসে কথা বলছিলেন। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। কাছে এগিয়ে এলেন। আমি জানি ভদ্রলোক বহুত ধুরন্ধর। আগে নাম ধরে ডাকতেন এখন স্যার বলেন।
স্যার দ্বীপায়ন একটু ওপরে গেছে।
এলে নিউজ রুমে পাঠান।
দাঁড়ালাম না, নিচে চলে এলাম। সনাতনবাবুর ঘরে ঢুকলাম।
আরে ছোটোবাবু তুমি, ডাকলেই চলে যেতাম।
একটা ছোট কাজ করতে হবে।
বলো।
একটা দুহাজার টাকার চেক লিখুন।
সুমন্তর নাম ঠিকানা দিলাম।
রাইটার্স রেমুনারেসনের ভাউচার করে মিত্রার ঘরে একটু যান। দেখবেন একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা আছে। ওদের দিয়ে ভাউচার সই করাবেন। আমি পরে যাচ্ছি।
আচ্ছা।
সনাতনবাবুর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নিচে নিউজরুমে ঢুকতে দেখলাম দ্বীপায়ন আমার টেবিলে বসে আছে। আমাকে দেখে একগাল হাসল।
আমার জন্য তোমাকে ওপরে যেতে হবে, আসা করিনি।
না-রে চলে গেলাম।
কেন বলো।
তোর কাছে আমার আর তোর ম্যাডামের বিয়ের দিনের কোনও ছবি আছে।
অনেক।
তোর পছন্দ মতো একটু বড়ো করে ছটা ছবি এখুনি প্রিন্ট করে আনতে পারবি।
এই কাজের জন্য তুমি ওপরে ছুটে গেছিলে।
হাসলাম।
কাউকে দেবে?
মাথা দোলালাম।
অর্ক কাছে এসে দাঁড়াল
লেখাটা কার বলো তো?
কেন!
ডিটো তোমাকে নকল করেছে। কি ধার গো লেখার! বোঝাই যাচ্ছে না তুমি লিখেছ, না সুমন্ত বিষই লিখেছে।
ছাপা যাবে?
মল্লিকদা নিয়ে দাদার কাছে চলে গেছে। ছেলেটা কি করে?
এ বছর বাংলা অনার্স নিয়ে পার্টওয়ান দিয়েছে। দু-নম্বরের জন্য ফার্স্টক্লাস পায়নি।
ব্যাডলাক।
পার্ট টুতে হয়ে যাবে।
আমাদের কাগজে নিয়ে এসো।
অনেক দূরে থাকে। তাছাড়া ওর জার্নি করা বারণ।
তুমি কি এই ছেলেটিকে ছবি পাঠাবে! দ্বীপায়ণ বললো।
মাথা দোলালাম।
আমি এখুনি নিয়ে আসছি।
ওর বাবা, মা ম্যাডামের ঘরে আছে। নিয়ে যা।
দ্বীপায়ণ হন হন করে চলে গেল।
দাদা তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো। অর্ক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
বল।
এর নিশ্চই একটা পাস্ট হিস্ট্রি আছে। না হলে তোমার মনে এইভাবে দাগ কাটতে পারে না।
আছে। এখন জিজ্ঞাসা করিস না।
গলাটা ধরে এলো।
কিগো তুমি মন খারাপ করছো কেন!
না এমনি।
তুমি আমাকে এ্যাড্রেস দাও, আমি যাব।
অনেক দূরে থাকে।
যেখানেই থাকুক আমি যাব।
নবদ্বীপের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে।
আমি যাব। আমি ওর সঙ্গে দেখা করবো। যে তোমার মনে এতটা রেখাপাত করে, সে সাধারণ ছেলে নয়।
ম্যাডামের ঘরে যা। ওর বাবা, মার সঙ্গে কথা বলে আয়।
অর্ক বেড়িয়ে গেল। আমি পেছন থেকে ডাকলাম। কাছে এলো।
একটা মিথ্যে কথা বলতে পারবি।
অর্ক আমার দিকে হাঁ করে তাকাল।
বলো।
মিলিকে বলবি একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে। ওদের একটু হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আসবে। আমি বটাদার ওখানে আছি। বলবি একটা জরুরি কাজে বেড়িয়ে গেছি। দাদা পরে ফোন করবে।
আচ্ছা।
অর্ক বেরিয়ে গেল। আমি ওপরে বটাদার কাছে এলাম। বটাদা আমার মুখের দিকে তাকাল।
চা খাবে।
দাও।
আমি নিচে যাব।
গিয়ে বলো না যেন আমি এখানে আছি।
বটাদা আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকাল।
আমি আমার নিজের জায়গায় চলে এলাম। ছাদের এককোনে। এখানে বটাদার সব উপকরণ ডাঁই করে রাখা রয়েছে। একসময় এখানে কয়লা ভাঙতো এখন গ্যাস হয়েছে। বটাদার ছেলেটা চা দিয়ে গেল।
এই শোন।
কি বলো।
একটা সিগারেট নিয়ে আয়তো।
তুমি সিগারেট খাবে!
নিয়ে আয়, একটা খাই।
নানা চিন্তা মাথার মধ্যে ভিড় করে আসছে। চা খাওয়া শেষ হলো। ছেলেটা একটা সিগারেট দিয়ে গেল। ধরালাম।
বেশ মনে পড়ে, সেদিন অফিস থেকে আর ফ্ল্যাটে গেলাম না। সোজা কনিষ্কদের হস্টেল।
বছর চারেক আগের কথা সবে মাত্র চাকরিটা পেয়েছি।
গিয়ে দেখলাম কেউ নেই।
বুঝলাম রাউন্ডে গেছে। ফিরতে ফিরতে ওদের রাত হলো। সকলে একসঙ্গে ফিরলো। প্রথমে একটু হই হই হলো। তারপর কনিষ্ক বললো, অনি মনটা আজ ভালো নেই বুঝলি।
কেন!
কয়েকদিন আগে একটা ইয়ং ছেলে ভর্তি হয়েছে। হার্ট ব্লক।
তাতে মন খারাপ কেন।
সরকারি হাসপাতালে এই অপারেসন হবে না। যদিও বা করা যায় তার যা হ্যাপা মাথা খারাপ হয়ে যাবে।
কেন এ কথা বলছিস?
অনেক টাকার দরকার।
তাহল ছেলেটা মরে যাবে?
চষ্টা করছি। আমাদের যারা ওষুধ সাপ্লাই করে তাদের বলেছি।
কোথায় থাকে?
নবদ্বীপের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে।
কি করে?
ওদের নিজস্ব তাঁত আছে। বাপ, বেটা দুজনে তাঁত চালায়।
ছেলেটা পড়াশুনো করে?
এবছর মাধ্যমিক দিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে।
রেজাল্ট।
স্টার পাওয়া ছেলে। আলাপ হতে বললো। ডাক্তারি পড়বে।
সব গরিবগুলোর দেখবি উচ্চাশা। আর বড়োলোকগুলো দেখ, পয়সা উড়িয়ে যাচ্ছে।
ফালতু কথা রাখ, দেখ কোনও ভাবে উপকার করতে পারি কিনা।
কি করবো বল। আমার তো মাথার ওপর ধারের বোঝা। এ মাসের মাইনেটা পুরো দিতে পারি।
তারপর খাবি কি?
কর্পোরেশনের জল।
ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস। নীরু তুই কি বলিস?
আমরাও সকলে মিলে এটা করতে পারি।
তাহলে ষাটভাগ সল্ভ। বাকি চল্লিশভাগ মেকআপ করে দেব।
এবার ব্লাড ডোনার।
কেন রক্ত নেই ব্লাড ব্যাঙ্কে।
অপারেশনের সময় ডাইরেক্ট ট্রান্সফিউসন করতে হবে। যাকে বলে ফ্রেস ব্লাড।
ব্যাটা রাজা লোক রে, সব কিছু সঙ্গে করে নিয়ে এসে ভর্তি হয়েছে। গ্রুপ কি?
ও পজেটিভ।
তোদের কারুর ওই গ্রুপ নেই।
না।
ওরে ওরা কি একেবারেই অভাগা।
তুই দেখলে বুঝতে পারবি। ছেলেটাকে দেখে কেমন মায়া পড়ে গেছে। ওকে ফুটিয়ে দিয়েছিল। বটা দেখে ফেলেছিল তাই ভর্তি করেছে।
যদি শালা কোনওদিন বড়োলোক হই, তাহলে একটা কাজ অবশ্যই করবো, এদের জন্য বিনে পয়সায় চকিৎসার ব্যবস্থা করবো।
তুই কোনও দিন বড়োলোক হবি না। আর চিকিৎসাও করতে পারবি না।
কেন তোরা তো ডাক্তার। আমি যদি কিছু করি হেল্প করবি না।
কেন, এখন করছি না?
আমি কি সেই কথা বলেছি।
তাহলে কপচাচ্ছিস কেন?
আমি এখনও আমার ব্লাডগ্রুপ কোনওদিন চেক করিনি। আমারটা চেক করে দেখতে পারিস। যদি মিলে যায়, পাশে শুয়ে পড়তে পারি।
পরদিন আমার ব্লাডগ্রুপ চেক হলো। কাকতালীয় ভাবে সুমন্তর সঙ্গে মিলেও গেল। ভাগ্য আছে ছেলেটার। অপারেশনের দিন ঠিক হলো। অপারেশন হলো। দুজনে পাশা পাশি শুলাম। জীবনে প্রথম লাইভ অপারেসন দেখলাম। আমার থেকে একটু বেশি ব্লাড টান হয়ে গেছিল। আমিও পাঁচদিন হাসপাতালে থাকলাম। আমাকেও একবোতল ব্লাড দিতে হলো।
সুমন্ত সুস্থ হলো। কিন্তু হার্টের অবস্থা খুব একটা উন্নতি হলো তা বলতে পারবো না। বাঁচলো এই যা। কনিষ্কদের ডাক্তারী শাস্ত্র বলে পাঁচ বছরও বাঁচতে পারে, আবার পনেরো বছর বাঁচতে পারে। নো গ্যারেন্টি।
শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ওকে ওর বাড়িতে রেখে এসেছিলাম। তারপর একবার গেছিলাম। নিজের চোখে ওদের দারিদ্রতা দেখেছিলাম। আমাকে যেন ওরা ভগবানের মতো পূজো করতে লাগলো। বুঝলাম পাকে পাকে জড়িয়ে পরছি। সুমন্ত একবার চিঠি লিখলো দাদা তুমি যদি সাহায্য না করো আমার পড়াশুনো বন্ধ হয়ে যাবে। সেই থেকে ওকে টাকা পাঠান শুরু, আজও চলছে।
অনিদা এবার চলো। সকাল থেকে কিছু খাওনি। ম্যাডাম তোমার জন্য বসে আছে।
অর্ক পাশে দাঁড়িয়ে। চোখটা ছল ছল করছে। গেঞ্জির হাতা দিয়ে চোখটা মুছলাম।
বটাদার ছেলের কাছ থেকে একটা সিগারেট নিয়ে আয়।
আমি মুখটা ধুয়ে নিলাম। অর্ক চা নিয়ে এসেছে। আমার আর ওর জন্য।
ওরা চলে গেছে?
হ্যাঁ।
কিছু বলছিল?
ভদ্রমহিলা যাওয়ার সময় ভীষণ কাঁদছিলেন।
কেন!
ম্যাডাম ওনার ছেলের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। উনি সব বললেন।
কিছুক্ষণ গুম হয়ে থাকলাম।
ছবি আর চেকটা দিয়েছিস।
ম্যাডাম দিয়েছেন। তারপর ম্যাডাম নিজে সুমন্তর সঙ্গে কথা বললেন। ছেলেটা কাঁদছিল।
আমি চুপ করে রইলাম।
আচ্ছা অনিদা ও কি আর বাঁচবে না?
এ ভাবে বেশিদিন বাঁচা যায় না।
ও সেটা জানে।
জানে। তবে ঠিক বোঝে না। মনের জোরটা অসীম।
ওর বাবা, মা। জানে আবার জানে না।
আমি আগামী সপ্তাহে একবার যাব। তুমি অনুমতি দাও।
যাস। ওর শরীরের ব্যাপার নিয়ে বেশি আলোচনা করিস না।
কথা দিচ্ছি। জানি ওটা ওর সবচেয়ে সেন্সেটিভ জায়গা।
আর্টিক্যালটা কেমন লিখেছে রে।
দাদা কালকেই ছেপে দেবে। ওকে একটা চিঠিও লিখে দিয়েছে।
তাহলে ছেলেটা আরও কয়েকদিন বেশি বাঁচবে।
একথা বলছো কেন?
সারাদিন বাবার সঙ্গে তাঁত বোনে। সপ্তাহে কুড়ি পঁচিশটা কাপর না বুনলে পেট চলবে কি করে। তাছাড়া নিজেদের কিছু জমি জমা আছে। সেগুলো দেখতে হয়। বলতে পারিস দাদার চিঠিটা ওর বেঁচে থাকার অক্সিজেন।
ওর ভাই বোন নেই।
না। বাব, মার একমাত্র সন্তান।
সনাতনবাবু সব শোনার পর ঘর থেকে মনখারাপ করে বেরিয়ে গেলেন। কারুর সঙ্গে কথা বললেন না। দ্বীপায়নদা ঘরের বাইরে এসে কেঁদে ফেলল।
জানিস অর্ক এরকম অসংখ্য সুমন্ত আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কজনের আমরা উপকার করতে পারি বল।
তবু তুমি কনিষ্কদা সবাই একটা মিসন নিয়ে চলছো। আমাকে একটা সুযোগ দাও না।
চলে আয়, আমি কি বারন করেছি।
আমি তোমায় কথা দিচ্ছি। আমার আন্তরিকতার শেষ বিন্দু দিয়ে আমি লড়ে যাব।
চল নিচে চল।
পায়ে পায়ে নিচে নেমে এলাম। নামতে নামতে নিজেক বোঝালাম। এবার সব ভুলে যা অনি। সামনে অনেক কাজ, এতো ইমোসোন্যাল হলে জগত সংসারটা চলবে না। তোকে তোর কাজ করে যেতে হবে। সেখানে দুর্বলতার কোনও স্থান নেই। দুর্বলতা দেখিয়েছিস কি মরেছিস।
অর্ক নিউজরুমে গেল। আমি মিত্রার ঘরে ঢুকলাম। ওরা নিজেদের মধ্যে চাপা স্বরে কথা বলছিল। আমায় দেখে থেমে গেল। মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম।
তুই তো ভগবান রে। তোর আর কতো কীর্তি আছে, একটু বলবি।
মিত্রার কথা শুনে মুচকি হাসলাম।
তোমার পাঞ্জাবীটা দারুণ সুন্দর। আমি একবার পরে নিয়েছি। মিলি বললো।
ভালো করেছো।
কি খাবি বল?
তোরা যা খাবি।
হরিদার ছেলেকে বাইরে দেখলি।
চোখে পরলো না।
কিরে মিলি।
ছাড়ো, অনিদাকে বলতে গেলে কেন। এখুনি বলবে আমি তোদের মতো কর্পোরেট নই।
টিনা আওয়াজ করে হেসে উঠলো।
দাও তোমাদের ফাইলগুলো, কাজগুলো শেষ করি। মিলি তোমার চিঠিটা রেডি হয়ে গেছে।
মিত্রাদি সাইন করে দিয়েছে। আমি সনাতনবাবুর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।
আজ কোনও প্রোগ্রাম আছে নাকি।
ছিলো ক্যানসেল করে দিয়েছি।
ব্যাচারা শুধু শুধু কষ্ট পাবে, আমাকে দোষারোপ করবে।
করুক।
দেখলাম মিত্রার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যাচ্ছে।
কিরে মিলি! তুই বলছিস ও বুঝছে ও বলছে তুই বুঝছিস ব্যাপারটা কি?
আছে আছে, ইন্টুমিন্টু চলছে। টিনা বললো।
কেন আমি একা, তোর স্বার্থ নেই। মিলি ঝামটে উঠলো।
অদিতি হো হো করে হাসছে। টিনার মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো।
ব্যাপার কি রে অদিতি। মিত্রা চোখ পাকিয়ে বললো।
তোমাকে অনিদা বলবে।
ও জানে!
জানে কিনা বলতে পারবো না। না জানলে বলছে কি করে।
কিরে বুবুন?
মিত্রার দিকে তাকালাম।
অদিতি কি বলছে?
আমি কি করে বলবো!
তাহলে!
ওদের জিজ্ঞাসা কর।
সময় হলে বলবো, এতো ঝামেলা করছো কেন। মিলি বললো।
মিত্রা বেল বাজাল।
হরিদার ছেলে মুখ বারাল। হিমাংশু হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।
আরি বাবা সব এক ঘরে। খুব জোর মিটিং চলছে নাকি।
তুমি কি খাবে হিমাংশু?
এখনও খাওয়া হয় নি!
তোমার বন্ধুকে বলো।
না ম্যাডাম এই সময় অনিয়ম করা উচিত নয়।
আমি কনটিনিউ মুখ চালিয়ে যাচ্ছি।
মিলি ফিক করে হেসে ফেললো।
তুই হাসছিস কেনরে?
যা বাবা, হাসি পেল তাই হাসছি।
দাঁড়া তোর হচ্ছে।
মিলি আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে।
হিমাংশু পাশে এসে বসলো।
মিত্রা খাবার আনতে দিল।
বল।
আমি হিমাংশুর দিকে তাকালাম।
কাজতো আমার বাড়িয়ে দিয়েছিস।
কেন!
ব্যাঙ্কের নাইনটি পার্সেন্ট মেরে দিয়েছিস।
হ্যাঁ। বড়ো হ্যেডেক ছিল। এবার মান্থলিতে চলে যা।
সেতো গেলাম, আমার কিছু লোন লাগবে।
মিত্রার এ্যাকাউন্ট থেকে দেখিয়ে দে।
তোর এ্যাকাউন্ট থেকে কিছু দেখাই।
আমার শূন্য।
মিত্রার থেকে তোর বেশি আছে।
তাহলে নিয়ে নে। এইট্টি-জি, টুয়েলভ-এএ করে ফেলেছিস।
হ্যাঁ।
এরপর ৩৫(১)(২)টা বানিয়ে নে।
তারপর?
কিছু ডোনেট করে দে। আবার ফিরিয়ে দেব।
তুই এই জন্য এনজিও বানিয়েছিস।
রথ দেখা হবে কলা বেচা হবে। নিজের পয়সায় কেউ দেশোদ্ধার করে নাকি।
হিমাংশু মুচকি মুচকি হাসছে। ওরা হাঁ করে আমার কথা শুনছে।
তুই তো আমার ভাত মারবি।
তাহলে চার্টারটা পাশ করতে হবে।
পরীক্ষায় বসে যা।
হাসলাম।
ওই ঘটনার পর কি কি উদ্ধার হয়েছে, কি উদ্ধার হয়নি তার একটা লিস্ট দে। আবার খোঁচা খুঁচি করি।
এক কাজ কর।
বল।
এই ভাবে না করে মান্থলি সিস্টেমে চলে যা।
কিরকম?
মাইনে থেকে কেটে নে।
অনেক আগে ব্যাপারটা ভেবেছি। তবে আমার পিএফের দিকে নজর বেশি। তাছাড়া ভালো জায়গায় ফ্ল্যাটটা বাগিয়েছে লিখিয়ে নেব ভাবছি।
তারপর নিজের ফ্ল্যাটে নিজে ভাড়া দিয়ে থাক।
মাথা দোলালাম।
হিমাংশু হাসছে।
খাবার এলো।
হিমাংশুর ফাইলপত্র বার করলো। খেতে খেতে হিমাংশুর সঙ্গে বসে এ্যাকাউন্টটা একটা জায়গায় নিয়ে এসে দাঁড় করালাম। মিত্রা পাশে বসে সব লক্ষ করলো।
কি ম্যাডাম কিছু বুঝছেন।
মাইনেটা বাড়িয়ে দিতে হবে।
এখনও আগের মাইনেতে কাজ করছে!
খোঁজ খবর নিইনি। সনাতনবাবুকে একবার জিজ্ঞাসা করতে হবে।
আপনার মেশিনটা একটু দেখি।
মিলি কি বোর্ডটা এগিয়ে দিল।
হিমাংশু লগ করে ভেতরে ঢুকে আমার নাম সার্চ করে এ্যাকাউন্টটা বার করলো।
ওরে তোর তো প্রচুর টাকা পরে রয়েছে।
কতো টাকা আছে রে।
দশলাখ পঁয়ত্রিশ হাজার ছয়শো সাতচ্চলিশ টাকা পঁয়ত্রিশ পয়সা।
চোর কোম্পানী। কালই রিজাইন দেব। বসে বসে আমার টাকার ইন্টারেস্ট খেয়ে যাচ্ছে।
পারবি।
হিমাংশু এমনভাবে বলে উঠলো, ওরা হেসে ফেললো।
হিমাংশু আমি এখানে বসে এগুলো ট্র্যাক করতে পারব। মিত্রা বললো।
আপনি একটা মাস্টার পাসওয়ার্ড বানিয়ে নিন।
দাঁড়াও আজই বরুণদাকে বলছি।
এই একটা কাজের লোক পেয়েছিস। যে ভাবে চাইছি সেই ভাবে পাচ্ছি। তোর ওই দিগন্তবাবুটা একেবারে মাল।
বরুণদার পরিচয় জেনেছিস?
দাদার মুখ থেকে শুনলাম। উনিও আমার কাছে নিজেকে খুললেন না। আমিও কিছু বললাম না।
ব্যবহার কর, আমার আর একটা ওয়েপনস।
সেটা বুঝেছি।
চা খাবি?
এটা কেমন কথা বললি?
সরি জিজ্ঞাসা করাটা অন্যায় হয়ে গেছে।
মিলি একটু বটাদাকে ফোন করো না।
হিমাংশুদা আমাদের ব্যাপারটা একটু দেখুন। টিনা বললো।
কোনটা বলো।
আমাদের রিটার্ণ।
লাস্ট ইয়ারেরটা নিয়ে এসো। করে দেব।
আমারটা কিন্তু অনেক হচপচ হয়ে আছে। মিলি বললো।
সব ঠিক হয়ে যাবে। কাগজ-পত্রগুলো সব যত্ন করে রেখেছো?
সব আছে।
তাহলে অসুবিধে হবে না।
কবে নিয়ে আসবো?
এ মাসের শেষের দিকে।
আচ্ছা।
বটাদা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
সবাইকে চা দিল। আমার দিকে তাকাল।
তুমি একটু বাইরে এসো।
আমি বটাদার দিকে তাকালাম। উঠে বাইরে এলাম। বটাদা একবার এদি ওদিক দেখে নিয়ে কিংশুক বাবুর ঘরের চেহারার বর্ণনা দিল।
আমি ভেতরে এলাম।
কিরে বটাদা কি নিউজ দিয়ে গেল।
মিত্রা হাসতে হাসতে বললো।
ও আপনাকে বলবে?
সে জানি বলবে না। যখন এ্যাকসন নেবে, তখন বুঝতে পারব।
এবার উঠি। ম্যাডামরা সবাইকে বললাম।
হিমাংশু চলে গেল।
ওদের সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ কাজ করলাম। ফইলগুলো প্রায় শেষ করে দিলাম। মাথাটা ধরে গেছে। মিত্রাকে বললাম আমি একটু নিউজরুমে যাচ্ছি।
মিত্রার ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা নিউজ রুমে এলাম।
অর্কদের সঙ্গে বসলাম। ওদের কিছুক্ষণ সময় দিলাম। সন্দীপ এলো। নিজের টেবিলের চিঠিগুলো সব পরিষ্কার করলাম। এই করতে করতেই সময় চলে গেল।
মাঝে মিত্রা একবার ফোন করে বললো, কিরে আমি চলে যাব। ওকে বললাম তুই চলে যা, আমি দাদাদের সঙ্গে ফিরব।
সত্যি সত্যি ফিরতে রাত হলো। আমি, দাদা, মল্লিকদা একসঙ্গে ফিরলাম।
আসার সময় গাড়িতে দাদার সঙ্গে টুকরো টুকরো কথা হলো। দাদার কথায় বুঝলাম অফিসের অবস্থা এখন যথেষ্ট স্থিতিশীল। যে ঝড়টা এসেছিল, সেই ঝড়টা থেমে গেছে। মিত্রাও দু-একটা বেশ ভালো স্টেপ নিয়েছে। এতে দাদা খুশী। যারা পুরনো স্টাফ ছিল তারা আবার ফিরে আসছে। আসতে আসতে অফিসটা আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসছে। তার মানে আমি আমার বাকি কাজ টুকুতে হাত দিতেই পারি।
আমি মনে মনে এটাই চাইছিলাম একটা রিদিম। রিদিমটা ঠিক থাকলে সব ঠিক। কেউ সচর আচর বেগরবাই করতে পারবে না।
আমার কাজে একমাত্র বাধা দিতে পারে বড়োমা, ছোটোমা, মিত্রা। এদের কাউকে জানান হবে না।
টিনা, মিলিদের ব্যাপারেও দাদার একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়েছে। ওরা কাজের মেয়ে। যখনই কোনও অসুবিধে হয় দাদার কাছে ছুটে আসে। দাদার হেল্প নেয়। টিনার ব্যাপারে চম্পকদা মাঝে মাঝেই দাদার কাছে এসে অভিযোগ জানায়। ও নাকি সব ব্যাপারেই ভীষণ আপার হ্যান্ড নিয়ে নিচ্ছে।
এ্যাড ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন বলেছে এভাবে চললে তারা রিজাইন দিতে বাধ্য হবে।
টিনার উত্তর, আজই রিজাইন দিক। এরকম প্যাকেজে আমাদের কাজের লোক পেতে অসুবিধে হবে না। মোদ্দা কথা টিনা চম্পকদাকে প্রায় হ্যান্ডিক্রাফ্ট বানিয়ে দিয়েছে।
মিলির ডিপার্টমেন্টটা ওর এতদিনের চেনা জগতের বাইরে, তাই প্রথম প্রথম ভীষণ অসুবিধে হচ্ছিল। এখন আসতে আসতে গুছিয়ে নিচ্ছে।
দাদার কথায় এটুকু বুঝলাম এদের তিনজনের কাজে দাদা খুশী। তাছাড়া মিত্রা যে বরুণদাকে নিয়ে এসেছে। তাতেও দাদা খুশী।
মাঝে একবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল। তুই হঠাৎ পনেরদিন কোথায় উধাও হয়ে গেলি। আমি দিল্লীর ব্যাপারটা দিয়ে ধামা চাপা দিলাম।
দাদা আরও অনেক প্রশ্ন করতে চেয়েছিল। বাড়িতে এসে ঢুকে পরলাম। কোনও প্রকারে রক্ষা পেয়ে গেলাম।
নিচের ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম বড়োমা, ছোটোমা, মিত্রা সোফায় হেলান দিয়ে বসে আরাম করে টিভি দেখছে আর গল্প করছে। আমায় দেখে বড়োমা উঠে এলো। ভালো করে মুখটা দেখে গালে হাত বোলাল। আমি প্রণাম করলাম।
দেখছিস মিত্রা। এতক্ষণ বসে বসে কি কথা বলছিল। ছোটোমা বললো।
ছাড়ো তো তুমি।
বড়োমা একবার ছোটোমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল।
আমি ছোটোমার কাছে গেলাম। নিয়ম মাফিক একটা পেন্নাম ঠুকে দিলাম।
সাত খুন মাপ।
সব ঠিক আছে।
আর ন্যাকামো করতে হবে না। তুই না থাকলে কি সব বেঠিক থাকবে ভেবেছিস।
মুচকি হাসলাম।
শোন কাল সকালে কোনও প্রোগ্রাম রাখবি না। সামন্তদা বলেগেছে কাল সকালে তোর আর মিত্রার সঙ্গে বসবে, কারা যেন আসবে।
হবে না।
সামন্তদা রাতে খেতে আসছে। জানিয়ে দিবি।
ও ছোটো, ও ঠিক থাকবে দেখিস। মুখে ওরকম বলছে।
তুমি তোমার ছেলেকে সামলাবে।
ঠিক আছে ডাক্তার আসুক।
মিত্রা একটা ট্রেতে করে তিন গ্লাস সরবৎ নিয়ে এলো।
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
হাসলি কেন?
বুঝলি না। তুই জল নিয়ে এলি। করিতকর্মা হয়ে উঠেছিস। ছোটোমা সমানে মুখ ছুটিয়ে চলেছে।
কেন তোকে ও বাড়িতে দিইনি।
আমি ঢক ঢক করে গ্লাসটা শেষ করে টেবিলে রাখলাম।
চা খাবি। ছোটোমা তরতরিয়ে উঠলো।
মুচকি হাসলাম।
হাসছিস কেনো?
হাসতেও মানা।
ছোটো আজ বাবুর নতুন ঘটনা শুনেছ।
মল্লিকদার কথায় ছোটোমা মুখ টিপে হাসল।
এটা আজকের এপিসোড।
আমার দিকে তাকিয়ে।
পনেরদিনের এপিসোড জানতে পেরেছ।
তুমি জেনেছ?
ছোটোমা ফিক করে হেসে রান্নাঘরে চলে গেল। আমি সোফায় বসলাম। বড়োমা এসে বসলো।
কোনও কথা জিজ্ঞাসা করবে না।
কেনোরে! কোথায় গেলি কি করলি একটু ভালো মন্দের খবর নেব না।
সব বলা যাবে না।
তোর নতুন ফোন নম্বরটা দে।
ওটা শুধু মাত্র কাজের জন্য।
আমরা কি অকাজের লোক।
তোমাদের জন্য আর একটা নম্বর আছে।
ওটাও দে।
পকেট থেকে ফোনটা বার করে দিলাম।
এটা নিয়ে করবো কি। তুই নাকি কি সব পাসওয়ার্ড-ফাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছিস।
মিত্রা বড়োমার ঘর থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলো।
কথা বলবি।….হ্যাঁ বলো….এই মিনিট দশেক হলো এসেছে।…. জ্যেঠিমনি….
মিত্রা ফোনটা নিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলো।
নে জ্যেঠিমনি তোর সঙ্গে কথা বলবে।
আমি ওর দিকে বড়ো বড়ো চেখ করে তাকালাম।
চোখ গেলে দেব।
তুই টুকটুক করে লাগিয়েছিস।
একটুও না। তোর কীর্তি বরুণদা গিয়ে বলেছে।
ফোনটা হাতে নিলাম।
বলো।
কেমন আছিস?
ভালো।
হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেলি?
কলকাতাতেই ছিলাম।
সে তো বড়োর কাছ থেকে শুনলাম।
তাহলে সব জেনে গেছো।
এখন বিয়ে করেছিস। তোর নিজের একটা সংসার আছে। হুটহাট চলে গেলে চলবে কি করে।
ঠিক কথা। কিন্তু আমার যে এখনও অনেক কাজ বাকি।
সে জানি। এখন তো অনেকটা স্থিতাশীল। আর গণ্ডগোল করিস না।
কোথায় গণ্ডগোল করলাম!
এই কদিন তো তোকে দেখলাম।
না না ওরা তোমায় ভুল ইনফর্মেসন দিয়েছে।
তোর সম্বন্ধে ছুটকিও ভুল বলবে।
তোমার ছুটকি চায় আমি সব সময় ওর সামনে পুতুলের মতো বসে থাকি।
একটু আধটু বসবি।
সম্ভব নয়। ও এখনও সেফটি নয়। তোমরা চাওনা ও সেফটি থাকুক।
চাই। তবু তোকে নিয়েও তো আমাদের চিন্তা হয়।
আমাকে নিয়ে ভেব না। আমি ঠিক থাকবো।
তুই মুখে বলছিস। মন মানে না।
তোমাদের সবার মুখে এক কথা হলে চলে কি করে। কালই আমি মিত্রাকে ডিভোর্স করে দিচ্ছি।
জ্যেঠিমনির সঙ্গে ঘরের সকলে হেসে উঠলো।
পারবি।
খুব পারবো।
করে দেখা।
তারমানে তুমি বলতে চাইছো, অনি মরিয়া গিয়ে প্রমাণ করিল সে মরে নাই।
আবার ঘরের সকলে হেসে উঠলো।
কার সঙ্গে বক বক করছে ও।
ছোটোমা চায়ের ট্রে নিয়ে এসে হাজির হলো।
জ্যেঠিমনি। মিত্রা বললো।
ওকে বলে কিছু হবে না দিদি। আপনাকে সেদিন কি বলেছিলাম মনে আছে।
কে-রে ছোটো?
হ্যাঁ। কথা বলো।
আমি ছোটোমার হাতে ফোনটা দিলাম।
কল্কে পেলিনা নিশ্চই। চেপে ধরেছে। ওমনি ছোটোমা ধরো।
হাসলাম।
ছোটোমা জ্যেঠিমনির সঙ্গে কথা বলতে বলতে রান্নাঘরে চলে গেল।
আমি চায়ে চুমুক দিলাম। বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে আছে। দাদা, মল্লিকদা আমাদের দুজনকে দেখে আর হাসে।
তুমি কি পারবে ওর পেট থেকে বার করতে। দাদা বললো।
ওকে পেটে ধরিনি। পারবো কি করে।
সেন্টু দিয়ে লাভ নেই। তোমরা আমার পাকা ঘুঁটি সব কেঁচিয়ে দিয়েছ।
তোর পাকা ঘুঁটি কোথায় কেঁচালাম রে। বড়োমা বললো।
যাও না বিধানদাকে ফোন করো, সব বলে দেবে।
লাড্ডু খেয়েছিস?
ওই তো সামনে জল জ্যান্ত বসে আছে। এরপরও খেতে বলো।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
আমি লাড্ডু।
মিত্রা তেড়ে এলো।
তারমানে সবাইকে লাড্ডু খাওয়াবি আর নিজের কাজ উদ্ধার করবি। বড়োমা বললো।
যা ভাবো।
উঠে দাঁড়ালাম।
আর একটু বোস না।
জামা প্যান্টটা ছাড়ি। সেই সাত সকালে পরেছি।
আচ্ছা যা। খেতে বসে বলবি?
পেছন ফিরে একবার হাসলাম।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম মিত্রা হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। এইরকম অবস্থায় ওকে আগে কখনও দেখিনি। এখন বেশ বোঝা যাচ্ছে। ও মা হতে চলেছে। ওর সারাটা শরীরে একটা মা মা গন্ধ। আমার দিকে একবার মুখ ফিরিয়ে দেখল। আমি ওকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছি।
অমন করে কি দেখছিস।
তোকে।
দেখলাম বিছানার এক কোনে আমার পাজামা পাঞ্জাবী গুছিয়ে রাখা।
শুয়ে আছিস।
শরীরটা ভালো লাগছে না।
কেন!
কাছে গেলাম। ওর কপালে হাত দিলাম। না ঠিক আছে।
কি রকম শরীর খারাপ?
ডাক্তারদাদা বললো এই সময় নাকি এরকম সমস্যা হয়। গাদা গাদা ওষুধ দিয়েছে। খাবার চার্ট করে দিয়েছে।
ফিক করে একবার হাসলাম।
হাসলি যে।
রাতে টর্চ জ্বালিয়ে একবার দেখব।
তোকে দেখাব দাঁড়া।
আবার বাঁদরের মতো দাঁত মুখ খেঁচায়।
উঠে বসবো?
আরাম করে একটু শুয়ে আছিস, আবার ঝামেলা করবি কেন।
মিত্রা কটকট করে আমার দিকে তাকাল। আমি হাসলাম। পাজামা পাঞ্জাবী গলালাম। চুল আঁচড়ালাম। আড় চোখে দেখলাম মিত্রা আমাকে মেপে চলেছে।
গোয়া গেছিলি কেন?
ওর দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলাম।
ঢিল ছুঁড়ে লাভ নেই। শুকনো পুকুর।
তাহলে আমার কাছে খবরটা ভুল এসেছে বল।
যে দিয়েছে তাকে জিজ্ঞাসা কর। আমাকে জিজ্ঞাসা করে লাভ কি।
মিত্রা খাট থেকে নেমে এলো। তাহলে কোথায় গেছিলি বল।
আমি হাসলাম। ঝামেলা করিস না।
মিত্রা জড়িয়ে ধরলো। বল না। এরকম করিস কেন। আমি কি তোর শত্রু।
তুই আমার মিত্র, এটা কে বলেছে?
দাঁড়া নিচে চল বড়োমাকে বলছি।
তোর পেটটা বেশ বড়ো বড়ো লাগছে।
কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিস।
নারে সত্যি। এখন মনে হচ্ছে তুই মা হতে চলেছিস।
তুই।
তোর কথায় আমি জীবন দাতা। ভাবতেই ভীষণ ভালো লাগছে।
বড়োমা বলেছে এই সপ্তাহটা অফিসে যাবি, তারপর থেকে অফিসে যাওয়া বন্ধ।
অফিস এখানে তুলে আন।
শয়তানটা ছাড়া পেয়েছে না?
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ও জানল কি করে? ওরতো জানার কথা নয়!
তোকে কে বললো?
প্রবীরদা এখন কমবেশি রেগুলার আসে। সেদিন বড়োমাকে বলেছে। মিত্রা আমার ভাতৃবধূ ওর কেউ ক্ষতি করতে চাইলে, অনির আগে আমার হাত পড়ে যাবে।
যাক। নিশ্চিন্ত হলাম। তোকে নিয়ে চিন্তা করার একটা লোক বারলো।
প্রবীরদার স্ত্রী ছেলে একদিন এসেছিল। অনেকক্ষণ ছিল। কথায় কথায় বার বার তোর কথা বলছিল। তুই প্রবীরদার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিস।
আমি না। তুই। চিঠিটা দেখেছিলি।
হ্যাঁ।
যত্ন করে রেখেছিস তো।
তোর ফাইলে আছে।
আমাদের ভালবাসার সাক্ষীকে বড়ো হলে তার বাবার কীর্তি কলাপ দেখাস।
কেন তুই কোথায় যাবি?
আমি কয়েকদিনের জন্য বাইরে যাব।
এই অবস্থায়, আমাকে ফেলে রেখে!
একবার বলেছি না, তোকে তৈরি হতে হবে। আমার ওপর নির্ভরশীলতা তোকে ছাড়তে হবে।
তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না বুবুন।
পাগলামো করিস না। আমি কি মরে গেছি।
তুই কোথাও যাস না। তুই আমার সবচেয়ে বড়ো বল ভরসা।
সব ঠিক হয়ে যাবে। চল ওরা নীচে অপেক্ষা করছে।
মিত্রা কোনও কথা বললো না। আমার সঙ্গে নিচে চলে এলো।
টেবিলে দেখলাম সব রেডি করা হয়ে গেছে। শুধু বসার অপেক্ষা। দাদা মল্লিকদাকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম দাদার ঘরে দুজনে আছে।
কিরে, বাবু মুখ খুললেন? ছোটোমা ছেঁচকিয়ে উঠলো।
মিত্রা কোনও কথা বললো না গম্ভীর হয়ে রইলো।
কিরে চুপ করে রইলি কেন। তোকে কিছু বলেছে বুঝি।
না।
তাহলে মুখটা ওরকম কেন?
কিছু না।
দেখলাম দাদার ঘর থেকে ডাক্তারদাদা, মল্লিকদা, দাদা বেরিয়ে এলো।
বান্ধবী এবার দাও। অনি চলে এসেছে।
বড়োমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে একবার আমার দিকে তাকাল। একবার মিত্রার দিকে। কোনও কথা বললো না।
বসো তোমরা, দিয়ে দিচ্ছি।
আমি চেয়ারে গিয়ে বসলাম। মিত্রা আমার পাশে বসলো। দু-পাশের দুটো চেয়ার ফাঁকা। অপজিটের চেয়ারে ডাক্তারদাদারা বসলো।
কাল তোর কি প্রোগ্রাম আছে। ডাক্তারদাদা বললো।
সকালে একটু বেরোব।
কখন ফিরবি।
বলতে পারবো না।
তুই একা।
না। বড়োমা, ছোটোমা, মিত্রাকে সঙ্গে নেব।
বুঝেছি।
কি বুঝেছো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে।
তারমানে কালকে আর একটা কাজ সারবি।
কি করে বুঝলে?
তুই তো প্রথমে গানটা লিখিস, তারপর সুর দিস।
এখুনি বড়োমা বলবে তোমরা আমাদের সামনে এইভাবে কথা বলবে না। আমরা যখন তোমাদের কথা বুঝি না, তখন আমাদের সামনে বলবে না।
বড়োমা আমার কানে হাত দিল। আমি মাথা সরিয়ে নিলাম।
আমি এখন বিবাহিত। সংসারী মানুষ।
ডাক্তারদাদা হেসেফেললো।
মিত্রাও হাসছে।
সেই জন্য দুটো ফোন পকেটে রেখেছিস। ছোটোমা ফুট কাটল।
দুজনে দু-পাশে বসলো। খাওয়া শুরু হলো।
কাল সকালে আমি কয়েকজনকে ডেকে পাঠিয়েছি। ডাক্তারদাদা বললো।
ছোটোমা বলছিল।
আমাকে ঘণ্টা খানেক সময় দে।
কিসের জন্য বলো?
তোকে মিত্রা কোনও কথা বলেনি!
সময় পায়নি।
মিত্রা খাওয়া থামালো।
দেখছো বড়োমা।
থাক, ওকে বলতে দে। আমরা এবার ওর সঙ্গে ধর্মঘট করবো।
পারবে তুমি?
খুব পারবো। দাঁড়ানা দেখবি।
ছোটোমা, মল্লিকদা ফিক করে হাসল।
মরণ। হাসছিস কেনরে মল্লিক।
এবার আমি হেসেফেললাম।
ছোটো আমাকে দুটি ভাত দাও খুব খিদে লেগেছে। ডাক্তারদাদা বললো।
ছোটোমা ডাক্তারদার পাতে ভাত দিল।
দাদা একটা মাছ দিই।
দাও।
বেশি খেও না বয়স হচ্ছে। দাদা বললো।
অনি আমার বয়েসটা দশ বছর কমিয়ে দিয়েছে বুঝলে এডিটর।
সারাদিন চড়কি মেরে ঘুরছো। এবার একটা কিছু না বাদিয়ে ছাড়বে না দেখছি।
নাগো এডিটর এ কাজে যে কি মজা, এতদিন টের পাইনি। এখন বেশ লাগছে। বিশেষ করে যাদের সম্বন্ধে কোনওদিন ধারণা ছিল না। তাদের মধ্যে সত্যিকারের মানুষ খুঁজে পাচ্ছি। আমার এই কাজে কোনও ক্লান্তি আসছে না বুঝলে।
বাবা তুমি যে অনির ভক্ত হয়ে গেলে।
যা বলো। ও তোমাদের বলা হয়নি। গতো পর্শুদিন কনিষ্ক হঠাৎ টনা, মনাদের ওখানে নিয়ে গেল।
আমাদের নিয়ে গেলে না কেন। বড়োমা খ্যাঁক করে উঠলো।
দূর ছাই যাওয়ার ঠিক ছিল নাকি। কনিষ্ক, নীরুকে ডাকতে এলো। ওখানে ওষুধ দিতে যাবে। আর কাদের কাদের যেন দেখতে হবে। তা আমি, দামিনী পেছন ধরলাম। ওই জন্য সেদিন আসতে অতো রাত হলো। সত্যি, কলকাতার উপকন্ঠে এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে আগে কখনও ভেবে দেখিনি।
তুমি ভীষণ স্বার্থপর। মিত্রা বললো।
বিশ্বাস কর। ঠিক আছে তোদের নিয়ে যাব।
কি করলে ওখানে গিয়ে।
বাঁশের বেঞ্চে বসে রইলাম সারাক্ষণ। দামিনী তবু এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখল। ওরা পেঁয়াজকুচি, সরষের তেল দিয়ে মুড়ি মেখে দিল। আর ভেঁড়ি থেকে চিংড়ি মাছ ধরে ভেজে দিল। তার সঙ্গে র চা। সত্যি যেন অমৃত।
তুমি খেলে! মিত্রা বললো।
বললাম তো তোকে নিয়ে যাব।
বড়োমার দিকে তাকাল।
বুঝলে বান্ধবী মানুষ দেখলাম। কি অমায়িক। এখনও ওদের মধ্যে সরলতা আছে। সেটা দেখে আরও ভালো লাগলো।
ডাক্তারদাদা দাদার দিকে তাকাল।
বুঝলে এডিটর অনিকে ওরা সত্যি ভীষণ ভালোবাসে।
নিস্তব্ধ খাবার টেবিল। যে যার নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। ডাক্তারদা স্বগোতোক্তির সুরে বললো।
নার্সিংহোমগুলোর ব্যাপারে কিছু সমস্য তৈরি হয়েছে বুঝলি অনি।
আমি ডাক্তারদার মুখের দিকে তাকালাম।
ওটা কোনও সমস্যা নয়। হিমাংশুকে আমি বলে দিয়েছি। তুমি, মিত্রা যেভাবে পরিচালনা করবে সেই ভাবে চলবে। কেউ বাড়াবাড়ি করলে তাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন লোক নিয়ে নেবে।
তাছাড়াও কিছু উটকো সমস্যা তৈরি হয়েছে।
সে সমস্যগুলো আমি মিটিয়ে দিয়েছি। পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমি থাকি না কেন, আমার শকুনের চোখ। এটা তোমার থেকে ভালো কেউ বুঝবে না।
এই যে তুই বললি, তুই কিছুই জানিস না।
নার্সিংহোম নিয়ে সমস্যা হয়েছে তুমি বলোনি।
দাদা, মল্লিকদা খাওয়া থামিয়ে আমার মুখের দিকে তাকাল।
কিরে মিত্রা তোকে তখন ফোন করে আমি কি বললাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল।
তুই গোয়া গেছিলি কেন? ডাক্তারদা আমার মুখের দিকে তাকাল।
লিণ্ডা তোমার সঙ্গে এসে দেখা করেছিল!
মিত্রা সজোরে আমার কোমরে চিমটি কাটল। আমি উঃ করে উঠলাম।
এই যে তুই বললি আমি গোয়া যাইনি। তোকে যে খবর দিয়েছে ভুল খবর দিয়েছে। মিত্রা ভেংচি কাটার ভঙ্গি করে বললো।
মিত্রা ওরকম করিসনা মা। বেচারা সারাদিনের পর খেতে বসেছে। বড়োমা করুণ সুরে বললো।
ছোটোমা হাসছে।
এই যে তুমি বললে ওর সঙ্গে ধর্মঘট করবে।
করবো তো, তেকে কথা দিচ্ছি।
তাহলে বুঝতে পারছ ও কোথায় গেছিল। খালি আমাকে দোষ দাও।
বুঝতে পারছি।
যাওয়ার সময় কি বলে গেল। আমি দেশের বাড়িতে যাচ্ছি। ইসলামভাই-এর সঙ্গে দরকার আছে। ওখান থেকে ও দিল্লী, গোয়া চলে গেল? আর ইসলামভাই বললো, এসেছিল কাজ সেরে চলে গেছে। বললো কলকাতা যাচ্ছে।
ও কোনও দিন সত্যি কথা বলে।
মিত্রা আমার দিকে হাসি হাসি চোখে তাকাল।
ব্যানার্জী একটু গোলমাল পাকিয়েছে।
আর কোনওদিন পাকাবে না।
তুই কি ভগবান?
না মানুষ। এবার বলো কারা আসবে।
ডাক্তারদা আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। দাদা হেসে ফেললো।
রথীনকে সেদিন বলেছিলাম। ও রাজি হয়েছে। একবার তোর সঙ্গে কথা বলতে চায়। আরও দু-তিনজনকে আমি বলেছি। সবাই আমার ক্লাসমেট।
ওরা মিত্রার ব্যাপারটা জানে?
কম বেশি সকলেই জানে। কেউ মুখে প্রকাশ করে না।
আমাকে উহ্য রাখবে।
সে বললে চলবে কি করে। আমার জায়গায় তুই থাকলে তোর উৎসাহ হতো না।
ঠিক। মাথাগুলোকে সব বদলে দাও। তুমি তোমার মতো সাজিয়ে নাও।
সে কাজটুকু করে ফেলেছি।
কোনটার হাল সবচেয়ে খারাপ দেখলে।
তুই কি এ্যাকাউন্টস দেখেছিস?
হিমাংশু দেখেছে ওর কাছ থেকে শুনেছি।
তাহলে আমার থেকে তুই ভালো জানবি।
ওখান থেকে এই মুহূর্তে টাকা নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। বরং আধুনিক মেশিনপত্র যদি কিছু আনার থাকে তার ব্যবস্থা করো।
করেছি।
তোমার কি আর টাকা লাগবে?
কিছু লাগবে।
তাহলে হিমাংশুকে বলবে, কাগজের এ্যাকাউন্ট থেকে নিয়ে নেবে।
সেটা হিমাংশু বলেছে।
তাহলে কোনও সমস্যা নেই।
আছে।
কি আছে।
মিত্রার শরীরের অবস্থা আমার থেকে তুই ভালো জানিস।
আমার কাছে এই ব্যাপারটা অপ্রত্যাশিত ছিল। খাওয়ার টেবিলে যে এই ভাবে কথাটা ডাক্তারদাদার মুখ থেকে বেরতে পারে আমি ভাবতে পারিনি। এখন বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা প্রি-প্ল্যান্ড। ডাক্তারদাদার মুখ থেকেই মিত্রা গোয়ার ব্যাপারটা জেনেছে।
তারমানে লিণ্ডা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছে। তাই ডাক্তারদাদার কাছে এসে স্যারেন্ডার করেছে। আমি সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। সকলের চোখে খুশির ছোঁয়া।
ওর শরীর ঠিক আছে।
তুই গা-জোয়াড়ি করছিস।
আমাকে কি করতে হবে বলো।
তোর এখন দূরে কোথাও যাওয়া চলবে না।
আমি আগামী মাসে লন্ডন যাব।
যাওয়া হবে না। তুই ওটা পিছিয়ে দে।
দেরি হয়ে যাবে।
ওর ব্যাপারটা আমাদের থেকে তুই বেশি জানিস। কোনও সমস্যা হলে তুই যে ভাবে ট্যাকেল করতে পারবি, আমরা সেই ভাবে পারবো না। এটা তোকে বুঝতে হবে।
ঠিক আছে আর কি আছে বলো।
সুমন্তকে আমি রথীনকে দিয়ে একবার দেখাব। কনিষ্ককে বলেছি ওকে একবার কলকাতায় আনার ব্যবস্থা করতে।
আমি ডাক্তারদার দিকে তাকালাম। তারপর মিত্রার দিকে।
খুব সুন্দর ব্রিফ করেছিস দেখছি। কই কাজের বেলায় তো এত সুন্দর ব্রিফ করতে পারিস না।
আমি বলিনি বড়োমা বলেছে।
বড়োমা জানল কি করে?
আমি বলেছি। দাদা বললো।
উরি বাবা, বেশ স্ট্রং এ্যালায়েন্স তৈরি করে ফেলেছ দেখছি।
মল্লিকদা হেসে ফেললো।
ছোটোমা, মিত্রাকে ডিঙিয়ে আমার পিঠে হাত রাখল।
রাগ করছিস কেন। তুই তো ভালোছেলে। আমরা কেউ ধর্মঘট করবো না।
ফোনটা বেজে উঠলো পকেট থেকে বার করলাম।
দেখছো কোন ফোনটা বাজছে দেখো। মিত্রা বড়োমার দিকে তাকিয়ে গজ গজ করে উঠলো।
বল।….হয়ে গেছে!….ঠিক আছে নিজেদের জায়গায় চলে যা।
ফোনটা স্যুইচ অফ করে পকেটে রাখলাম। মিত্রার দিকে তাকালাম।
তুই মাছগুলো খেয়ে নে। ভালো লাগছে না।
উঠে দাঁড়ালাম।
সবাই আমার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকাল। মিত্রার চোরা চাহুনি যেন আমায় গিলে খাচ্ছে।
বোস আরও অনেক কথা আছে। ডাক্তারদা ধমক মারলো।
সব কথা এখন বলে ফেললে কাল সকালে কি বলবে।
ডাক্তারদা আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো।
আমি বেসিনের সামনে চলে এলাম। মুখটা ধুয়ে সোজা ওপরে চলে এলাম।
লাইট জ্বাললাম না, পাখার স্যুইচটা দিলাম। জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম। সেই এক চিত্র তবু কেমন যেন নতুনত্ব আছে। টেবিলের ওপর পড়ে থাকা সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরাতে গেলাম। কি মনে হলো, সিগারেটটা প্যাকেটের মধ্যে রেখে আবার ফিরে এলাম।
চিকনাকে ফোনে ধরলাম। বেশ কিছুক্ষণ বেজে যাবার পর ধরলো।
কিরে ঘুমিয়ে পরেছিস?
হ্যাঁ। তুই কবে ফিরলি?
আজ সকালে।
ওদিককার কাজ সারলি?
হ্যাঁ।
কাকার শরীর কেমন আছে?
ভালো। আজ নিয়ে গেছিলাম। থরো চেক আপ করেছে।
কি বললো?
হার্টটা একটু সমস্যা করছে। ওষুধ দিয়েছে। খাওয়ার রেস্ট্রিকসন করেছে। কে শুনবে বল।
নীপার খবর।
ম্যাডাম কতো করে বললো, শেষ পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছে।
হস্টেলে থাকছে।
না ডেলি যাতায়াত করছে।
এতটা পথ কি ভাবে যাওয়া আসা করছে।
ইসলামভাই-এর গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। না হলে আমারটা।
কেউ প্যাঁক পুঁক দিচ্ছে না।
কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে বল। সবাই জানে ও অনি ব্যানার্জীর আত্মীয়। তাছাড়া ম্যাডাম এখন জিনসের প্যান্ট, পাঞ্জাবী, সালোয়াড় কামিজ, ছাড়া কিছুই পরছেন না। রোয়াবই আলাদা। হ্যাঁরে ম্যাডামের শরীর কেমন।
কেন খারাপ হয়েছিল নাকি?
নেকু তুই জানিস না। আয় একবার এখানে অনাদি কেলাবে বলেছে।
কেন!
এতো বড়ো একটা সুখবর তুই চেপে গেছিস।
দু-দিন পর জানতেই পারতিস।
ভাগ্যিস সেদিন অনাদি গেছিল। দেখেই বুঝতে পেরেছে। তারপর বড়োমাকে জিজ্ঞাসা করতে বড়োমা বলেছে। সেই শুনে কাকী আবার এখানে ঠাকুরকে পায়েস করে দিল।
তোরা তো অনেক কিছু করে ফেলেছিস।
চিকনা হো হো করে হাসছে।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/rHbGyVE
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment