❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৩ নং কিস্তি
—————————
বলো কোনখান থেকে শুরু করবো। জ্যেঠিমনি থেকে না প্রবীরদা থেকে, না সেদিন রাতে মিত্রার বাড়িতে সারারাত জেগে কি করছিলাম সেখান থেকে।
বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। গালটা টোবলা হয়ে গেছে। নড়া-চাড়া করছে না। ছোটোমা আমার কথা বলার ভঙ্গিমায় থ হয়ে গেছে।
কি ভাবছো—
হাসলাম। অনি তোমাদের মনের কথা পটাপট বলে দিচ্ছে বলে? না অনি যাদু জানে?
দুজনেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে।
বুঝলে বড়োমা, অনি থট রিডিং করতে পারে।
আমি নির্বিকার ভাবে কথা বলে চলেছি আর খেয়ে যাচ্ছি।
সেদিন রাত জেগে দিদির (জ্যেঠিমনির) কথা উদ্ধার করলি, না আরও কিছু আছে। ছোটোমা বললো।
আরো আছে। সেগুলো এখন বলা যাবে না।
বড়োমা আর একটা কচুরি আলুরদম সহযোগে মুখে তুললো।
আচ্ছা বড়োমা জ্যেঠিমনিকে দেখে তোমার কেমন মনে হলো। আমি যদিও জ্যেঠিমনিকে আট/নয় বছর পর দেখলাম।
তুই দিদিকে আগে দেখেছিস? ছোটোমা বললো।
যখন মিত্রাদের বাড়ি যেতাম, সেই কলেজ লাইফে।
কই আগে বলিসনি! বড়োমা বললো।
তুমি কখনও বলেছো তুমি ড. রায়ের ছাত্রী।
বড়োমা হাসতে হাসতে কান ধরার জন্য হাত তুললো।
আমি মাথা সরিয়ে ছোটোমার দিকে হেলে পরলাম। বড়োমার পাত থেকে একটা কচুরী তুলে নিলাম। ছোটোমা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।
সেই ভাবে প্রয়োজন হয়নি। তবে সেই রাতে মিত্রার মুখ থেকে কিছু কথা জানার পর মনে হলো ওই দিনটা জ্যেঠিমনির উপস্থিত থাকা খুব প্রয়োজন। তাই নিয়ে এলাম।
ভদ্রমহিলাকে আগে কোথায় যেন দেখেছি। বড়োমা বললো।
আমি অর্থপূর্ণ হাসি হাসলাম।
হাসিসনা বল। ছোটোমা বললো।
তুমি তোমার ব্রেনটা সার্চ করো, দেখবে পেয়ে যাবে।
বয়স হয়ে গেছে, স্মরণশক্তিতে ছাতা পড়েছে।
আমি হাসছি।
আচ্ছা বড়োমা মিত্রা তোমার বিয়ের বেণারসী পরে বিয়ে করতে বসলো। কেন বসলো?
তা বলতে পারবো না। তবে ও এমন ভাবে জেদ ধরলো। না বলতে পারলাম না।
তোমার মনে প্রশ্ন আসেনি, কেন মিত্রা জেদ ধরলো, তোমার বিয়ের বেনারসী পরে তোমার ছেলেকে বিয়ে করবে?
ওর তো অনেক খেয়াল, ভাবলাম এটাও ওর একটা খেয়াল।
আমি বড়োমার দিকে তাকালাম, কিছু লোকাবার চেষ্টা করছে কিনা।
আচ্ছা বড়োমা, তুমি আমাকে তোমার সব কথা বলেছো, আমি যদি তোমাকে আরও কিছু কথা বলি তুমি মনে কিছু করবে না। কোনও দুঃখ পাবে না।
কেন তুই এ কথা বলছিস! ছোটোমা বললো।
দাঁড়া ছোটো, ওকে বলতে দে।
ছোটোমা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
জানো বড়োমা মাঝে মাঝে নিজের ওপর ভীষণ আক্ষেপ হয়। মনেহয় পৃথিবীতে আমি জন্মেছি সবার জট ছাড়াতে। ছাড়িয়েও যাচ্ছি। শেষে নিজের জট ছাড়াব। তখন তোমাদের কাছ থেকে কিছু দিনের জন্য ছুটি নেব।
কেন এ কথা বলছিস!
হঠাৎ মনে হলো, তাই বললাম।
ছোটোমার ফোনটা বেজে উঠলো। আমার দিকে তাকাল।
মিত্রা।
কথা বলো।
তুই বল। সকাল থেকে তিনবার ফোন হয়ে গেছে।
তুমি কথা বলো, তারপর বলছি।
বল।….হ্যাঁ বাবু উঠেছেন….
ছোটোমা আমার হাতে ফোনটা বাড়িয়ে দিল। আমি কানে দিলাম।
শয়তান নিশ্চই তোমাদের সঙ্গে আলুরদম, কচুরি খাচ্ছে। আমাদের বাড়ি থেকে বার করে….।
কেন তোরা খেয়ে যাসনি?
কাল রাত থেকে সকলকে কাজ দিয়ে দিয়েছিস, খাবার সময় পেলাম কোথায়।
হরিদার ছেলেকে বল আনন্দ থেকে বিড়িয়ানি এনে দেবে।
তাহলে তুই আয়—
আমি একটা জরুরি মিটিং করছি বড়োমার সঙ্গে।
ওই ব্যাপারে—
হ্যাঁ।
তাহলে পরে ফোন করবো।….ছাড়িসনা….ধর ধর মিলি একটু কথা বলবে।
দে।
অনিদা।
বলো।
তোমার জন্য এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
আমার জন্য কেন। তুমি চেয়েছিলে।
তুমি না থাকলে আরও কতদিন ঝুলতাম জানি না।
শুষ্ঠভাবে কাজ হয়েছে।
হবে না মানে। ইসলামভাই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করিয়েছে।
ইসলামভাই গেছিল!
কেন বড়োমা কিছু বলেনি!
আমি কি সবাইকে সব কথা বলি।
মিলি হাসছে।
ঠিক আছে, দেখি যদি পারি যাচ্ছি।
আচ্ছা।
ছোটোমার হাতে মোবাইলটা দিলাম। বড়োমার দিকে তাকালাম।
কিগো ইসলামভাই গেছে তুমি বলো নি—
ওই তো উত্তরটা বলে দিলি।
মনে থাকে যেন।
ছোটোমা কাঁধে হাত দিল।
সব সময় কান ধরলে চলে এখন অনি বিয়ে করেছে।
ছোটোমা হেসে ফেললো।
তারপর বল—
আমি বড়োমার দিকে তাকালাম।
হ্যাঁ। সত্যি তোমার মনে কোনও প্রশ্ন আসেনি?
এসেছে উত্তর পাই নি—
আচ্ছা বড়োমা এখন যদি তোমাকে আমি কিছু কথা বলি তুমি একটুও দুঃখ পাবে না।
কেনো তুই বার বার এক কথা বলছিস। ছোটোমা বললো।
নিজের মধ্যে একটা সংকোচ বোধ কাজ করছে। কিন্তু তোমাকে ব্যাপারটা বলা দরকার।
বল।
তাহলে তোমাদের দুজনকে একটা কথা দিতে হবে।
বল। কি কথা।
আমি তোমরা দুজন মিত্রা ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কেউ জানবে না।
তোর দাদা, মল্লিক!
না। শুধু আমরা চারজন।
বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকাল।
কি কথা দিচ্ছ।
দিলাম।
আমি খুব ধীর স্থিরভাবে একে একে সেই রাতের সমস্ত কথা বললাম। প্রায় এক ঘণ্টা লাগল বলতে। এর মধ্যে বড়োমা কোনও কথা বলেনি। কখনও গম্ভীর হয়েছে। কখনও অবাক বিস্ময়ে আমাকে দেখেছে। ছোটোমা নির্বাক শ্রোতা। খাওয়া শেষ, চা খাওয়া হয়ে গেছে এক রাউন্ড। তবু আমি ছোটোমাকে বললাম আর একবার চা নিয়ে এসো, তারপর আর একটা ধাপ তোমাদের বলবো। তারপর তোমরা আমাকে প্রশ্ন করবে। আমি তার উত্তর দেব।
ছোটোমা উঠে চলে গেল, রান্নাঘর থেকে চায়ের ফ্লাক্সটা নিয়ে এলো। চা ঢাললো।
এবার আমি সেদিন সকাল থেকে মিত্রার বাড়িতে গিয়ে প্রথম থেকে যা যা ঘটনা ঘটেছিল সব বললাম, এমন কি জ্যেঠিমনির সঙ্গে কি কথা হয়েছে, আমি জ্যেঠিমনিকে কি কথা বলেছি সব। শুনতে শুনতে ছোটোমার চোখ বড়োমার চোখ ছল ছল করে উঠলো।
কাঁদলে কিন্তু অনি নিজেকে আর ওপেন করবে না। চুপ করে যাবে। অনি নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করবে। আর তোমাদের কিছু বলবে না।
বড়োমা কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছলো। ধরাগলায় বললো।
আমাকে একবার নিয়ে চল।
তুমি দুর্বল হয়ে পড়ছো।
দোষটা আমার।
না দোষটা তোমার নয়, তোমার পরিবারের। মিত্রা একদিন তোমার বসিরহাটের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছে।
মিত্রা আমার বাড়িতে গেছিল!
হ্যাঁ। কোনও একটা কারণে তোমার বসিরহাটের বাড়িতে যেতে সে বাধ্য হয়েছিল।
বড়োমা মাথানীচু করে রইলো।
সেই জন্য ও আমার পরনের বেনারসীটা পরে বিয়ে করতে বসেছিল, আমার সিঁদুর কৌটো থেকে সিঁদুর নিয়ে বিয়ের আসরে সিঁথিতে দিয়েছিল!
হ্যাঁ।
বড়োমা চোখ মুছছে।
তুমি এরকম করলে আমি কিন্তু উঠে চলে যাব।
যাস না। তুই এখন আমার বল ভরসা।
শুধু তোমার না দিদি আমাদের সকলের। ছোটোমা বললো।
জ্যেঠিমনি মিত্রাকে গর্ভে ধারণ করেছে, কিন্তু মিত্রা জানে তুমিই একমাত্র তার বাবার বিয়ে করা বৌ।
ও কোনও অন্যায় করে নি। আমি ওর জায়গায় থাকলে এরকম করতাম।
আমি বড়োমার গলা জড়িয়ে ধরলাম। বড়োমা আমার কাঁধে মাথা রেখেছে, বুঝতে পারছি চোখের জলে আমার কাঁধ ভিঁজে যাচ্ছে।
তুমি কাঁদলে কথা বলি কি করে।
কতো কষ্ট বুকে নিয়ে মেয়েটা বেঁচে আছে বল।
সে তুমি কি করবে, এটা ওর ভাগ্যের লিখন।
ছোটো ওকে ডেকে নে।
এখন থাক, ও লজ্জা পাবে। আমি ওকে বলেছিলাম, তুই নিজের মুখে বড়োমাকে বল। ও বলেছে আমি কোনওদিন বড়োমাকে মুখ ফুটে এসব কথা বলতে পারবো না।
বড়োমা কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছে চলেছে।
তাহলে তোমরা কান্নাকাটি কর আমি চললুম।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। বড়োমা আমার হাতদুটো চেপে ধরলো।
আমায় কিন্তু তোমরা দুজনে কথা দিয়েছ, দাদা, মল্লিকদা কোনওদিন জানতে পারবে না।
ছোটোমা মাথা দোলাচ্ছে।
মিত্রাকে একবার ডাক। বড়োমা বললো।
কেন!
ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমি বড়োমার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বড়োমা মাথা নীচু করে নিল।
ঠিক আছে ডাকো, কান্নাকাটি করতে পারবে না।
আচ্ছা।
ছোটোমা নীচুস্বরে মিত্রার সঙ্গে কথা বললো। আভাসে ইঙ্গিতে বুঝলাম, ও চলে আসছে। আমি আছি কিনা সেটাও ও জিজ্ঞাসা করছে, বড়োমা মনখারাপ করছে কিনা সেটাও ও জিজ্ঞাসা করছে। ছোটোমা হ্যাঁ হুঁ করে উত্তর দিয়ে চলেছে।
সেদিন ও যে ওর বাবার ফটোটা দেখাল সেটা তো ও নয়।
তোমাকে অরিজিন্যাল ফটো দেখায়নি। যদি তুমি ধরে ফেল। ও তোমাকে ওর দাদুর ছোট বেলাকার একটা ফটো দেখিয়েছিল।
বড়োমা মাথা নীচু করে আছে। ছোটোমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
তুই কখনও ওকে দেখেছিস?
সামনা সামনি দু-বার কথা হয়েছে। সেই কলেজ লাইফে। তারপর আর যাই নি।
তুই দামানিদের বাড়ি কখনও গেছিস।
সেই সৌভাগ্য আমার হয় নি।
আমি একবার তোর দাদার সঙ্গে গেছিলাম।
মিত্রার মার সঙ্গে তোমার আলাপ হয়নি।
উনি তখন অসুস্থ ছিলেন। তোর দাদাকে খুব ভালোবাসতেন। তাই বড়োমুখ করে বলেছিলেন, একবার বৌমাকে নিয়ে আসিস দেখবো।
তার মানে উনি ব্যাপারটা জানতেন।
বলতে পারবো না।
আচ্ছা দাদা কোনওদিন জানতেন না?
তোর দাদার সঙ্গে মিত্রার বাবার সম্পর্ক ভালো ছিলো না। তোর দাদা সব সময় দামানির কথা মতো চলতো।
কেন, তখন তো মিত্রার বাবা কাগজের সর্বে সর্বা।
ঠিক, তবুও দামানিদের প্রতিপত্তি তখন কমে যায় নি।
তারপর—
তারপর তোর দাদার ওপর একটা প্রেসার ক্রিয়েট করা হলো। তখন তুই সবেমাত্র কাগজে আসা যাওয়া শুরু করেছিস। তোর চাকরিটা দামানির জন্য হয়েছে। তোর দাদা দামানিকে বলে তোর চাকরির ব্যবস্থা করেছিল।
ডাক্তার কবে থেকে কাগজের দায়িত্ব নিল?
যখন মিত্রার বাবা আসা বন্ধ করলো।
তখন দাদা তোমাকে এসে কিছু বলতো না?
একদিন রাতে ফিরে বললো। বুঝলে মিনু আজ থেকে কাগজে নতুন মালিক আসা শুরু করলেন। আমি বললাম, কি রকম। তা বললো, দামানির জামাই অসুস্থ, তাই সে তার জামাইকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমি বললাম কেন দামানির মেয়ে গেল কোথায়। তা বললো, ওর কথা ছাড়ো, খালি ক্লাব, পার্টি করে বেরাচ্ছে।
তখন দামানি বেঁচে?
উনি বেঁচে ছিলেন।
তুমি মিত্রাকে কবে প্রথম দেখেছো?
আমাদের বাড়িতে যেদিন প্রথম এলো।
মিত্রা তোমাকে এখানে আসার আগে দেখেছে?
কবে!
তুমি একদিন আমাদের কাগজের কোনও একটা ফাংশনে গেছিলে, সেদিন।
বড়োমা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
তারপরে ও দাদার প্রতি রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য এসব করেছিল। তখন ও ভেসে বেড়াচ্ছে। জীবনটাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বাবা মারা গেছে। মাকে স্লো-পয়জেন করে ডাক্তার মেরে দিয়েছে। মিত্রা তখন ডাক্তারের হাতের পুতুল। কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছে তোমাকে, দাদাকে সঙ্গে মল্লিকদা। সুনীতদা এই সুযোগটা নিয়েছে। বলতে পার ঠিক সেই সময় আমার আবির্ভাব।
তুই আর বলিস না।
বড়োমা আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ছোটোমা চোখ মুছছে।
তুমি কাঁদছো কেন। তুমি চেষ্টা করলে এখন কিছু করতে পারবে?
দুজনেই নিস্তব্ধে চোখের জল মোছে।
বাইরের বাগানে গাড়ি এসে দাঁড়াবার শব্দ হলো। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বড়োমা আমার হাতটা ধরে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিল। দুজনে আমার দুহাত ধরে আছে। যেন কতো অপরাধী। আমি গেটের দিকে তাকিয়ে আছি। মিত্রা এসে গেটের কাছে দাঁড়াল। চোখ দুটো ছল ছলে। মাথা নীচু করে ধীর পায়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। বড়োমা এগিয়ে গিয়ে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। তিনজনেই কাঁদে। আমি নির্বাক দর্শকের মতো বসে আছি। নিস্তব্ধ ঘর।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম দাদা ফোন করেছে।
কি হয়েছে।
তুই কোথায়?
বাড়িতে।
মিত্রা বেরিয়ে গেল। বললো শরীরটা খারাপ লাগছে।
হ্যাঁ বাড়িতে পৌঁছেছে।
তুই ওকে এতো প্রেসার দিচ্ছিস কেন।
কোথায় দিলাম?
সকাল থেকে সব কাজ দিয়েছিস।
ঠিক আছে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি দেখছি।
তোর বড়োমাকে দে, ওর ফোন বন্ধ।
বড়োমা বাথরুমে।
ছোটোকে দে।
ছোটোমা বাগানে।
তুই কোথায়?
আমি কচুরি সহযোগে কষা আলুর দম খাচ্ছি।
ঠিক আছে পরে ফোন করবো।
সেই ভালো।
আমি ছোটোমার ফোনটা কাছে টেনে নিলাম। স্যুইচ অফ করলাম। তিনজনেই আমার দিকে তাকিয়ে। চোখ লাল, মুখে হাসি।
কি এবার সব ঠিক আছে, না কান্না পর্ব আর কিছুক্ষণ কনটিনিউ করবে।
তিনজনে তখনও আমার দিকে তাকিয়ে।
তোমাদের মেয়ে দাদাকে বলে এসেছে তার শরীরটা খারাপ লাগছে। আমি নাকি খুব প্রসার ক্রিয়েট করেছি ওর ওপর।
করেছিস তো, না বলতে পারবি। ছোটোমা বললো।
ঠিক কথা।
আমি ফোনটা তুলে নিয়ে ইসিকে ফোন করলাম।
বল।
কি করছিস?
সংসারের কাজ করছি।
কি ধরনের কাজ?
দু-দিনের জামাকাপর কাচলাম, শুকোলাম এবার ভাঁজ করছি। বাকিগুলো ইস্ত্রি করতে পাঠাব।
তিনজনেই আমার দিকে তাকিয়ে। বোঝার চেষ্টা করছে কার সঙ্গে কথা বলছি।
শোন রান্নাবান্না কিছু করেছিস?
কেন তুই খাবি?
ভাবছিলাম দুপুরের খাওয়াটা শ্বশুর বাড়িতেই করবো।
মিত্রা হেসে ফেললো।
সত্যি আসবি!
আমি না গেলেও আমার রিপ্রেজেনন্টিভ, বড়োমা, ছোটোমা যাবে।
সত্যি!
আমি কি মিথ্যে বলছি।
কই ছুটকি কিছু বললো না।
তোর সঙ্গে কখন কথা হয়েছে?
ধর ঘণ্টা দুয়েক আগে।
আমি বাড়িতে। তোর ছুটকিও আমার সামনে দাঁড়িয়ে। কিরে পিকু ঝামেলা করছে।
শুধু পিকু, মা সামনে দাঁড়িয়ে।
জ্যেঠিমনিকে দে।
ধর।
বল।
কিগো তোমার বাড়িতে গেলে দুটো খেতে দেবে, না সেদিনের মতো….।
আমি সব শুনতে পাচ্ছি। ইসির গলা পেলাম।
তুই কি ভয়েজ অন করে রেখেছিস।
বিদ্যেটা তোর কাছ থেকে শেখা।
দক্ষিণা কি দিবি?
তুই আয় তারপর দিচ্ছি।
পিঠে না পেটে?
দু-জায়গাতেই।
কিগো জ্যেঠিমনি তুমি কিছু বলছো না যে।
কখন আসবি?
ঘণ্টা খানেকের মধ্যে। তবে আমি রাতে যাব।
এই যে বললি এসে খাবি।
কয়েকটা কাজ আছে বুঝলে।
তোর সব সময় কাজ।
আমি ভয়েজ অন করলাম।
তুমি নিজের চোখে দেখে গেলে।
আজ কাজ করতে হবে না।
তোমার ছুটকি অফিস থেকে দূর করে দেবে।
করলেই হলো।
সে তুমি বুঝবে না জ্যেঠিমনি, কতো জ্বালা।
কখন আসবি?
বলেও মুস্কিলে পড়লাম।
চলনা ওরকম করিস কেন। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
শুনলে তোমার ছুটকির গলা।
শুনলাম। সকালে কথা বলেছি।
আমার নামে কি নালিশ করলো?
নালিশ করে নি।
সেকিগো আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে!
জ্যেঠিমনি হেসে ফেললো।
নাও ছুটকি চাইছে কি কথা বলে দেখ।
আমি মিত্রার হাতে ফোনটা দিয়ে ঘরের বাইরে চলে এলাম। আসার সময় বড়োমার মুখের দিকে একবার তাকালাম। থমথমে কিন্তু মেঘ কেটে গেছে। ছোটোমার হাসি হাসি মুখটা বেশ ভালো লাগলো। আমি বাগানে এলাম, দেখলাম ভজুরাম একেবারে কোনের দিকে ঝাঁট দিয়ে দিয়ে পাতা গুলো একজায়গায় জড়ো করছে।
কিরে কাজ শেষ হয়নি?
কতোদিন ঝাঁট দিই নি বলো।
কখন শেষ করবি কাজ?
দেরি আছে।
সেকিরে যা এবার স্নান সেরে নে। বড়োমার সঙ্গে একটু ঘুরে আয়।
কোথায়?
যা না দেখতে পাবি।
তুমি যাবে না?
আমি পরে যাব।
ভজুরাম ঝাঁটা ফেলে দিয়ে একদৌড়ে ভেতরে চলে গেল। আমি পায়ে পায়ে ভেতরে এলাম। দেখলাম তিনজনে সোফায় বসে। আমাকে দেখে মিটি মিটি হাসলো।
কি মেঘ কেটেছে?
বড়োমা মাথা নীচু করে নিল।
আমি ছেলেটা মোটেই সুবিধার নয় বুঝলে বড়োমা।
বড়োমা মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল।
ছোটোমা একটু চা খাওয়াও। দেরি করো না বেরিয়ে পরো।
তুই যাবি না?
যাবো। প্রথমে একটু অফিসে যাবো। তারপর।
মিত্রার হাত থেকে ফোনটা নিলাম। দেবাশিসকে একটা ফোন করলাম।
কোথায়রে।
আগে বল তুই কোথায়?
বাড়িতে।
কখন উঠলি?
অনেকক্ষণ।
তুই তো একফোনে কাজ সেরে দিলি।
হাসলাম। তোকে যে কাজ দিয়েছিলাম, কতোদূর এগোলি।
সিক্সটি পার্সেন হয়েছে। আমি এখন তোর অফিসে।
নির্মাল্য।
অফিসেই আছে।
অপেক্ষাকর আমি যাচ্ছি।
হ্যাঁরে মিত্রার কি হয়েছে?
কেন!
দাদা বললো শরীর খারাপ।
ওই আরকি।
ঠিক আছে, তুই আয়।
আচ্ছা।
মিত্রা হাসছে। বড়োমার দিকে তাকালাম।
কিগো দ-এর মতো বসে রইলে কেন জামাকাপড় পরো।
তুই চল।
এই তো….।
ছোটোমা চা নিয়ে এলো সবার জন্য।
চ-না এরকম করিস কেন। মিত্রা বললো।
আমি বড়োমার দিকে তাকালাম।
ঠিক আছে যেতে পারি বেশিক্ষণ থাকব না। দিয়েই চলে আসব।
আজকের দিনটা। আজকের কাজগুলো কালকে করিস। একদিনে কিছু যায় আসবে না। বড়োমা বললো।
মনে থাকে যেন।
খুব মনে থাকবে। ছোটোমা বললো।
বড়োমার মুখে হাসি ফুটল।
নাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
তুই দেবাকে একটা ফোন করে দে। আমি যাব না। দাদাকে বলে দে, শরীর ঠিক আছে, নিজের বাড়িতে যাওয়ার জন্য শরীরটা খারাপ হয়েছিল।
ছোটোমা হেসে উঠলো।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নিজের ঘরে এলাম। দেখলাম ভজুরাম ছোটোমার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে একটা ছোট আয়না নিয়ে নিজের টেরি বাগাচ্ছে। একটা প্যান্ট শার্ট পরেছে।
কিরে চুলে অতো টেরি বাগালে সব উঠে যাবে।
ভজুরাম থতমতো খেয়ে গেছে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
ভালো জায়গায় যাব।
কোথায় যাবি!
দিদিমনি বলেছে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে।
বেশ করেছে।
আমি নিজের ঘরে এসে ঢুকলাম। আলমাড়ি খুলে চিরাচরিত পোষাক বার করলাম। বাথরুমে গেলাম। মুখে চোখে জল দিলাম। তারপর বেরিয়ে এলাম। দেখলাম মিত্রা খাটে বসে পা দোলাচ্ছে।
কিরে তুই এই পরে যাবি।
ঝামেলা করবি না। তুই বলেছিলি তিনদিন তোর কথা শুনে চলতে, শুনেছি। এবার আমার মতো চলতে দে।
তা বলে নতুন জামাই!
রাখ তোর নতুন জামাই।
তোর এটা পরা হবে না।
তাহলে যাব না।
আমার একটা প্রসটিজ আছে।
জ্যেঠিমনির কাছে!
যার কাছেই হোক।
ঠিক আছে ওটা সঙ্গে করে নিয়ে নে। যেটা দিবি সেটা পরে যাব। তারপর ওটা পরে বেরিয়ে আসবো।
মিত্রা হেসে উঠলো।
কি হলোরে মিত্রা—
ছোটোমা গেটের সামনে এসে দাঁড়াল কাপড় পরা হয়ে গেছে।
তুমি ভেতরে এসে দেখ। কি জামা কাপড় বার করেছে।
নিশ্চই ওর মনের মতো সেই শত ছিদ্র….।
হ্যাঁ।
বলে কিনা তোদের মনের মতো জামাকাপড় পরে যাব ও বাড়িতে গিয়ে তোদেরটা ছেড়ে রেখে এটা পড়ে বেরিয়ে আসবো।
আগে যেতে দে তারপর দেখছি।
ঝামেলা করলে অনর্থ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
দেখি না তুই কিরকম অনর্থ করিস।
তাহলে যাব না।
উঁউউ বললেই হলো। প্রথম শ্বশুর বাড়ি যাবে….।
আমার শ্বশুর বাড়ি যাবার উদ্বোধন হয়ে গেছে।
বক বক করিস না। যা বলি শোন। দিদি দু-বার ফোন করে ফেলেছে। বেরিয়েছি কিনা।
ঠিক আছে তোমরা নিচে যাও আমি যাচ্ছি।
মিত্রার দিকে তাকালাম। দাদাকে ফোন করেছিস?
করেছি। বড়োমা কথা বলেছে।
যা এবার নিচে গিয়ে গাড়িতে বোস, যাচ্ছি।
ওরা নিচে চলে গেল। আমি নতুন জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি পরলাম খারপ লাগছে না। ভালই লাগছে। বেরিয়ে এলাম। দেখলাম নিচে কয়েকটা বোঁচকা বুঁচকি গাড়ির পেছনে রবীন তুলছে। বড়োমার পাসে মিত্রা দাঁড়িয়ে। কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে। আমি সামনে গেলাম।
বুঝলি ভিআইপি বাবু সবে নিচে নামলেন। ধর কথা বল।
কে।
দিদিভাই।
বল।
তুই সত্যি মেয়ের বেহদ্দ।
তাহলে আমাকে প্রমাণ দিতে হয়।
দে।
একবার চান্স দে।
একটা থাপ্পর এমন দেব না।
তোর বোন একবার মেরেছিল, গালটায় খুঁজলে এখনও তোর বোনের আঙুলের ছাপ পাবি। বড়োমা ছোটোমাকে সারাজীবনের জন্য দুটো কান ইজারা দিয়ে দিয়েছি। সবাই মিলে তোরা যদি মারধোর করিস, আমি যাই কোথায় বলতো।
মিত্রা হেসে উঠলো।
এখন রাখ, বস্তাগুলো তার বাড়িতে ফেলতে পারলে শান্তি।
কি বললি, বস্তা! মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
ওকে বলতে দেনা সঙ্গে যেতে হচ্ছে না। মেজাজ এখন মনুমেন্ট। ছোটোমা বললো।
মাথার ঘায়ে উকুন পাগল।
কি বললি? ছোটোমা, মিত্রা ফোনে ইসি তিনজনেই চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়োমা মুচকি মুচকি হাসছে।
কিছু না।
আমি মিত্রার হাতে ফেনটা দিলাম। নিজের ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম প্রবীরদা। প্রবীরদা এই সময় ফোন করছে? কেন!
ফোনটা ধরে কানে তুললাম।
বলো প্রবীরদা।
তুই কোথায়?
সবাইকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি।
কতো নম্বর।
ঠিক কথা বলেছো। কি বলি তোমাকে। মিত্রাদের পুরনো বাড়িতে।
ঠিক আছে আয়। এলে আমাকে একবার ফোন করিস।
কেন!
ওই ব্যাপারটা আজই মেটাব।
তুমি চলে এসো। একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করা যাবে।
তুই পৌঁছে আমাকে একবার ফোন করিস। আমি এখন দামিনীমাসির ওখানে আছি।
কেন, কোনও সমস্যা?
মিত্রা, বড়োমা, ছোটোমার চোখের ভ্রু সরু হয়ে গেল। মুখ থমথমে।
আর বলিস না, মাঝে মাঝে মনে হয় তুই যদি আমার থেকে সিনিয়ার হতিস তোকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতাম।
গ্যাস খাওয়াচ্ছ।
প্রবীরদার অট্ট হাসিতে আমার মোবাইলের স্পিকার প্রায় ফেটে যায়। কান থেকে সরিয়ে নিলাম।
ঠিক আছে তুই এসে আমাকে একটা রিং করিস।
আচ্ছা।
ফোনটা পকেটে রাখলাম।
প্রবীর ফোন করেছিল? বড়োমা গম্ভীরভাবে বললো।
হ্যাঁ।
কেন?
বললো ও বাড়িতে গিয়ে একবার ফোন করতে, আসবে।
আবার কি হলো?
কি হয়েছে কি করে বলবো! গিয়ে শুনি আগে।
বড়োমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম আমার উত্তরটা মন পসন্দ হলো না।
ভজুরাম গাড়ির পেছনে উঠে বসেছে, মাঝে বড়োমা ছোটোমা মিত্রা, আমি সামনে। রবীনকে বললাম, কোথায় যেতে হবে জানিস।
হ্যাঁ।
যাওয়ার সময় শ্যামপুকুরের চিত্তরঞ্জনে একটু দাঁড়াস।
কেন, নকুর দোকানে যাবে না?
আবার এতটা ঘুরবি।
রবীন চুপ করে রইলো।
ঠিক আছে চল, নকুর দোকান হয়েই যাই।
সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউ ধরে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স হয়ে বৌবাজার ছাড়িয়ে কলেজস্ট্রীটে ঢুকতেই মিত্রা, বড়োমা, ছোটোমাকে আমাদের কীর্তি কলাপ বলা শুরু করলো। কোথায় কোথায় ঘুরতাম কি করতাম। এসব।
তুই কাকে বাঝাচ্ছিস?
বোঝাচ্ছি না বড়োমাকে বলছি।
বড়োমা বিদ্যাসাগরে পড়তো, এটা মাথায় রাখিস।
মিত্রা জিভ বার করলো।
সত্যিতো তুই ঠিক বলেছিস।
দিলি তাল কেটে। বড়োমা খেঁকিয়ে উঠলো।
আমি পেছন ফিরে তাকালাম।
কেন তুমি দাদা আসো নি?
তোদের মতো নাকি। ছোটোমা চিল্লিয়ে উঠলো।
তা ঠিক। তখন তোমরা আবার কমিউনিস্ট পার্টি করতে।
বড়োমা মুখটিপে হাসছে।
ঠনঠনিয়ার কাছে আসতে বড়োমা বললো রবীন গাড়ি থামা। রবীন গাড়ি থামাল। বড়োমা, ছোটোমা, মিত্রা নামলো। বুঝলাম এবার পূজো দেওয়া হবে। হলোও তাই। তারপর বীনা সিনেমা দেখান হলো। মিত্রা আবার কলকল করতে শুরু করেছে। গাড়ি চলতে শুরু করলো। বড়োমা আবার বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে এসে ঠোক্কর খেল।
এইজন্য বলেছিলাম তোমরা যাও, আমি পড়ে যাচ্ছি।
রবীন থামাতে হবে না, চল বাবা ও ঘোড়ায় জিন দিয়ে এসেছে।
ওমনি গোঁসা হয়ে গেল।
তুই এখন ভিআইপি মানুষ বলে কথা, তোর কতো কাজ।
রবীন গাড়ি থামা আমি নেমে যাই, তুই এদের নিয়ে যা।
নাম দেখি তোর কতো বড়ো সাহস।
উরি বাবা, তোমার তো দেখি রাগও আছে।
আমার বলার ভঙ্গিমায় মিত্রা, ছোটোমা হাসছে। আমি পেছন ফিরে তাকালাম। বড়োমার চোখ হাসছে মুখ গম্ভীর।
জলের বোতলটা দাও একটু মুখে দিই। পেঁড়া খাওয়াবার পর জলের বোতলটা দিতে হয় জান না।
তুই চেয়েছিস।
চাইতে হবে কেন—ভিআইপি মানুষের সঙ্গে যাচ্ছ, তাদের হাবভাবে কিছু বোঝ না।
এবার আর বড়োমাকে রোখা গেল না। কানে হাত পড়লো। রক্ষে যা নকুর দোকানের সামনে এসে রবীন গাড়ি থামাল, বেশিক্ষণ কানে হাত রাখা হলো না।
আমি মিষ্টি কিনলাম।
আমাদের খাওয়া। সেই সাত সকালে কয়েকটা কচুরী মেরেছি। মিত্রা বললো।
তার মানে! গিয়ে এখুনি ভাত খাবি।
খাওয়া না।
বড়োমার মুখের দিকে তাকালাম।
ও যখন বলছে, কেন না।
ভালোই আছ।
আবার ওদের জন্য মিষ্টি কিনলাম।
বুঝলি অনি চিত্তরঞ্জনে আর দাঁড়াতে হবে না। এখান থেকে একটু দই নিয়ে নে। ছোটোমা বললো।
কে খাবে?
তোকে খেতে হবে না।
হাসলাম।
আবার পাশের দোকান থেকে দই কিনলাম।
মিত্রার ফোন বেজে উঠলো।
আর দশ মিনিট, এখন বিডনস্ট্রীটে আছি।
কে-রে—
দিদিভাই।
ওর এতো তারা কিসের—
শুনতে পাচ্ছিস বাবুর কথা।…. মেজাজ ঠিক নেই….গিয়ে বলছি।
মিত্রার বাড়ির গলিতে যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় একটা বেজে গেছে। রবীনকে বললাম, কিরে গাড়ি ভেতরে যাবে।
যাবে। তবে রাস্তা জ্যাম হয়ে যাবে।
তাহলে এখানে দাঁড় করা। হেঁটে চলে যাব।
না চলো, তোমাদের ভেতরে রেখে আসি।
কেন ঝামেলা করবি। এখানে থাক। একটু হাঁটলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।
তুমি তাহলে বড়োমাদের নিয়ে যাও। আমি এগুলো নিয়ে যাচ্ছি।
তাই কর।
আমি বড়োমাকে গাড়ি থেকে ধরে নামালাম। মিত্রা আমার হাত শক্ত করে ধরেছে।
তোর আবার কি হলো?
কতদিন পর আসছি বল।
এটা তোর বাড়ি না অন্য কারুর।
ছ-বছর, সময়টা খুব একটা কম নয়।
গলি পেড়িয়ে মিত্রার বাড়ির দোরগোড়ায় এলাম। বড়োমা চারদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে।
বুঝলি ছোটো, বাগবাজারটা এখনও সেরকমই রয়েগেছে।
বুঝলাম। আমি টিপ্পনি কাটলাম।
কি বুঝলি?
সব কি আর ইনস্ট্যান্ট বলা যায়। রয়ে সয়ে বলতে হয়।
বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। গম্ভীর মুখে হাসির বিদ্যুৎ রেখা।
আমি দরজায় কড়া নারলাম। দরজা খুললো। আজ পিকু নয় ইশি সামনে দাঁড়িয়ে। বড়োমাকে জড়িয়ে ধরলো। দেখলাম ভেতর থেকে জ্যেঠিমনি বেরিয়ে এসেছে। বড়োমাকে হাত ধরে ভেতরে নিয়েগেল। আমি বড়োমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
একদিন এই ভদ্রমহিলার হাত ধরেই এই বাড়িতে বড়োমার প্রবেশাধিকার হবার কথা ছিল। তা হয় নি। হলে হয়তো ইতিহাসটা অন্য ভাবে লেখা হতো। তখন অনির ইতিহাসটাও হয়তো অন্য রকমের হয়ে যেত। আজ এতদিন পর সেই জ্যেঠিমনিই বড়োমাকে হাত ধরে এই বাড়ির চৌকাঠ পার করলো।
জানিনা দুজন দুজনকে কতটা চিনেছে। তবে আমার কথায় কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। ওরা ভেতরে গেল। ছোটোমা, বড়োমার পেছনে। তারও ইতিহাস বড়োমার থেকে নেহাত কম নয়। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে।
দেখ দেখ দিদিভাই বুবুনের চোখ দুটো দেখ। ও নিশ্চই এ জগতে নেই।
মিত্রার কথায় সম্বিত ফিরলো। ইসি হাসছে।
বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ধরতে পেরেছে আমার মনের কথা। হাসলো। ছোটোমা হেসে মুখ লোকাল।
কি হলো আয়?
ভাবছি।
কি ভাবছিস?
কপালে কতটা দুর্গতি লেখা আছে।
ইসি আমার হাতটা চেপে ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে এলো। ভজুরামও হাজির, দু-হাতে দুটো মিষ্টির হাঁড়ি, রবীনের হাতে আরও দুটো।
কিরে গাড়িতে আর কিছু আছে।
আছে। বড়োমার ব্যাগ।
ইসি এগুলো রাখার ব্যবস্থা কর।
বসার ঘরে রাখুক।
আমি রবীনের দিকে তাকালাম।
ওই ঘরের টেবিলে রাখ।
ভজুরাম, রবীনকে দেখিয়ে দিলাম।
ওরা ভেতরে ঢুকে টেবিলের ওপর রেখে এলো।
ভজুরাম মিষ্টির প্যাকেটটা টেবিলে রেখেই পটা পট সবাইকে প্রণাম করে নিল।
বাবাঃ ভজুরাম কতো স্মার্ট দেখেছিস। ইসি বললো।
একবার চুলের টেরিটা দেখ।
ভজু ফিক করে হেসে রবীনের সঙ্গে বেরিয়ে গেল।
ইসি, পিকু কোথায়?
তোর বরুণদার সঙ্গে গেছে।
কোথায়?
গোলবাড়িরতে।
কেন ঝামেলা করতে গেলি।
থাম তুই।
বড়োমা, এবার আমি কেটে পরি।
তারমানে!
বড়োমা আমার দিকে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে।
ইসি বড়োমার ওই অবস্থা দেখে শরীর কাঁপিয়ে হাসছে।
দেখ না, সারা রাস্তা বড়োমার সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে এসেছে। মিত্রা বললো।
কেন?
ও আসবে না বড়োমা নিয়ে আসবে।
জ্যেঠিমনি কাছে এগিয়ে এলো। আমার হাতটা ধরলো।
চল ওপরে চল।
তুমি এদের নিয়ে যাও। আমি পড়ে যাচ্ছি।
কেন।
একটু দরকার আছে।
এখানেও কাজ বগলে করে নিয়ে এসেছে। কাজের মানুষ বলে কথা। ছোটোমা বললো।
কেউ আসবে?
হ্যাঁ।
কে?
প্রবীর। বেরবার সময় ফোন করলো। তুই পৌঁছে ফোন করিস। ছোটোমা বললো।
প্রবীরবাবু তোকে ফোন করেছিল! ইসি বললো।
কেন!
সকাল থেকে কতোজন যে এলো তোকে কি বলবো।
কিসের জন্য!
সকলে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তোর বরুনদা শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললো। ঠিক আছে আমরা অন্যায় করে ফেলেছি অনিকে বলে। এক কথা, তাদের ভুল হয়ে গেছে। ম্যাডাম আপনি বলুন কবে স্টার্ট করবেন আমরা সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
সেই ব্যাপার। বড়োমা, ইসির দিকে তাকিয়ে বললো।
হ্যাঁ। ইসি বললো।
অনি প্রবীরকে ফোন কর। বড়োমা বললো।
তাই তুই তখন খাবার কথা বলছিলি। মিত্রা বললো।
হ্যাঁ। আমি বললাম।
প্রবীরকে আসতে বল। বড়োমা বললো।
সেকেন্ড টাইম ভজু রবীন এলো ব্যাগ নিয়ে সঙ্গে পিকু, বরুণদা। আমায় দেখে হাত বারিয়ে দিল। আমি হাতে হাত রাখলাম।
আজ কেউ ঝামেলা করে নি? বরুনদা হাসতে হাসতে বললো।
করেনি, তবে করবে, তার ষড়যন্ত্র চলছে।
এই একবারে বাজে বকবি না। ইসি ঝগরুটে মেয়ের মতো তেড়ে এলো।
জ্যেঠিমনি খেতে কি এখন দেবে না দেরি হবে।
মাংসটা আসুক। বরুণদা বললো।
ইসি তাহলে চা দে। রবীন গাড়ি সাইড করে রেখেছিস?
হ্যাঁ দাদা।
আঙ্কেল আজ নেমন্তন্ন খেতে যাবে।
আমি পিকুর দিক তাকালাম। লম্বাদের ভিড়ে ছোট্ট মানুষটা হারিয়ে গেছে। ওর গালটা একটু টিপে দিলাম।
এখানে নেমন্তন্ন খাব।
এই নাও।
পিকু পকেট থেকে একটা ক্যাডবেরি লজেন বার করে আমার হাতে দিল।
দেখেছো ছেলের কাণ্ড। কি বদমাশ, আমরা চাইলে একটাও দেয় না। আর অনিকে….। ইসি বললো।
আমি হাসছি।
নিচের ঘরে এসে বসলাম। বরুণদা সঙ্গে এলো। ওরা সবাই ওপরে চলে গেল। আমি প্রবীরদাকে ফোন করলাম।
চলে এসেছিস—
হ্যাঁ।
আমি তোর সামনা সামনি আছি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।
চিনতে পারবে?
চিনে নেব।
এসো, জ্যেঠিমনিকে চায়ের কথা বললাম। দেরি করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।
যাচ্ছি।
বরুণদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
আপানকে সেদিন থেকে একেবারে সময় দিতে পারিনি। যা ঝামেলা চলছে।
তুমি তো আবার ঝামেলা ছাড়া চলতে পারো না।
না ঠিক তা নয়। ওই আর কি, জড়িয়ে পরি।
এই মওকায় তোমার ফ্লেভারটা আমরাও বেশ উপোভোগ করছি।
কিরকম!
পর্শুদিন তোমার অফিসে গেলাম। চম্পকবাবুর সঙ্গে দেখা হলো। ব্যাশ আগে যে টুকু সম্মান পেতাম, তার থেকে এখন তিনগুণ বেড়ে গেছে। আর একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, তোমাকে অফিসে সবাই বেশ ভয় পায়।
আপনার কি মনে হয়?
খুব সাধারণ। আচ্ছা অনি তখন থেকে তুমি আপনি আপনি করে যাচ্ছ কেন।
খুব শিগগির শুধরে নেব।
আমি এমনভাবে কথাটা বললাম বরুণদা জোড়ে হেসে উঠলো।
চাকরিটা ছেড়ে দাও।
বরুণদা হাসতে হাসতে হঠাৎ থেমে গেল, চোখে মুখে বিষ্ময়। আমি এই মুহূর্তে এরকম একটা কথা বলতে পারি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি।
কেন!
আমাদের অফিসে জয়েন করো।
বেশ তো আছি।
বলতে পার তোমার শালির স্বার্থে।
শালির কাজে লাগবে, তোমার কাজে লাগবে না?
আমি কর্মচারী, তোমার শালি মালিক।
এখনও নিজেকে তাই মনে করো?
মনেকরি বলে ঠিক আছি, না হলে বিগড়ে যেতাম।
ইসি চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
কিরে জমিয়ে আড্ডা মারতে শুরু করেছিস, আমি মিস করছি।
তুমি কাল রাতে যে কথাটা বলছিলে, অনি এখন সেই কথাটাই বললো।
সত্যি!
হ্যাঁ।
ওটা আমার কথা নয় মায়ের কথা।
তাই!
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। বুঝলাম আমাকে নিয়ে এই বাড়িতে কাল রাতে জোড় আলোচনা হয়েছে। দুজনেরই চোখে নতুন দিশা। পরিতৃপ্ততা।
মা কাল রাতে বলছিল, দেখিস অনি বরুণকে কাজটা ছেড়ে দিতে বলবে। মা আর একটা কথাও বলেছে। সেটা এখন বলবো না। যদি কখনও মেলে তবে বলবো।
মা কি করে বললো।
ওর সামনে ওর গুণকীর্তন করা যাবে না।
বাইরে দরজার কড়াটা জোরে নড়ে উঠলো।
দেখ প্রবীরদা এলো।
ইসি এগিয়ে গেলো।
আমি ঘর থেকেই দেখলাম প্রবীরদা, ইসলামভাই, গেটের মুখে দাঁড়িয়ে।
অনি কইরে?
ইসি হো হো করে হাসছে। ভেতরে।
আপনারা যান আমি ফোন করলে একবার আসবেন, আজই ব্যাপারটা মিটিয়ে যাব।
প্রবীরদা কাদের যেন বললো।
দুজনে ভেতরে এলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ইসলামভাই-এর অতবড়ো বুকে আমি হারিয়ে গেলাম।
তুমি কোথা থেকে?
তুই অবাক হয়ে গেছিস?
ঠিক অবাক হই নি। আবার হয়েছি বলতে পার। প্রবীরদা বসো।
চায়ের কাপ নাও, ইসি আবার নিয়ে আসছে।
এইটা মিত্রাদের বাড়ি। প্রবীরদা চারিদিকে চোখ বোলাতে বোলাতে বললো।
আদি বাড়ি। ধরো একশো বছর হতে চলেছে।
ইসি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ইসলামভাই, প্রবীরদা চেয়ারে বসলো।
যাই বল একশো বছরের মাল এখনও দাঁড়িয়ে আছে।
হাসলাম।
হাসলি কেন?
পরে বলবো।
প্রবীরদা খুব সাবধান। ইসলামভাই বললো।
সাবধান মানে, একবার পা পিছলে গেছে আর….।
দাদাভাই, তুমি কোথা থেকে এলে। মিত্রা ঘরে ঢুকলো।
তুই অবাক হয়ে গেছিস?
হবো না। তখন তো বললে না এপাশে আসবে।
তোরা এখানে আসবি ঠিক ছিল।
আমাকে একবারে বলবে না। আমি অফিসে গেলাম। তারপর ছোটোমার ফোন, চলে আয়। চলে এলাম।
তোকে ছাড়ার পর প্রবীরদা ফোন করলো। আমিও চলে এলাম। ওতো সব কাজ সেগরিগেশন করে রেখেছে। ডাক্তারদাদা ওখানে আছে। এখনও খবর পায়নি।
বড়োমা, ছোটোমা, জ্যেঠিমনি ঘরে ঢুকলো। প্রবীরদা, ইসলামভাই দুজনেই উঠে গিয়ে তিনজনকে প্রণাম করলো।
এটা কিসের। বড়োমা ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললো।
এটা অনির কাছ থেকে শেখা। দিদি তোমার মতো আমিও ওকে ওর দেশের বাড়িতে এই প্রশ্নটা করেছিলাম। বললো, ইসলামভাই তোমার এই পৃথিবীতে দেওয়ার মতো কিছু নেই। একটা মানুষের কাছে তুমি যদি একটু মাথানত করো ক্ষতি কি। দেখবে এর বিনিময়ে তুমি তার কাছ থেকে অনেক বেশি আদায় করে নিতে পারবে। যা তুমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে না। তারপর থেকে এটা অভ্যেস করে ফেলেছি।
সবাই চুপ করে গেল। ইসলামভাই জ্যেঠিমনির দিকে তাকাল।
দিদি আমি তথাকথিত বিধর্মী কিন্তু কিভাবে ধর্মের বাঁধনকে ভেঙে মানুষ হতে হয় ওকে দেখে শিখেছি। বলতে পার এখনও প্রতিটা দিন যখনই সময় পাই ওর কাছ থেকে শিখি। ও সব মানুষকে এতো তাড়াতাড়ি আপন করে নিতে পারে, নিজে না দেখলে বুঝতে পারবে না।
সবাই ইসলামভাই-এর কথায় থ।
ওর বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে একটু আলাদা করে কথা বলবে। দেখবে ওদের মধ্যেও এই ব্যাপারটা নেই। প্রথম প্রথম ওকে দেখে মনে হতো ওর এটা একটা ভড়ং। তারপর যাচাই করে দেখলাম। অনেক ভাবে বাজালাম। তারপর একের পর এক উদাহরণ চোখের সামনে পর পর হাজির করে দিল। এখন দেখি আমার যারা খাশ লোক ছিল, আমাকে এখন তারা যতটা পাত্তা দেয় তার থেকে বেশি পাত্তা দেয় ওকে। মেনে নিলাম। আমরা জাতে খান বংশ। খানরা সব কিছু খুব তাড়াতাড়ি মনে নেয় না। আমাকে ও মানতে, মেনে নিতে বাধ্য করিয়েছে।
ইসলামভাই-এর কথায় পরিবেশটা বেশ থমথমে হয়ে গেল। নিস্তব্ধ ঘর।
আমি বড়োমার দিকে তাকালাম।
বক্তৃত্বা শুনলে হবে। চা ঠান্ডা হয়ে গেল। পেটে ছুঁচো ডন বটকি মারছে। ডাক্তারদাদা ওখানে শুকনো মুখে বসে আছে। কিছু একটা ব্যবস্থা করো।
আমি কেন করবো। তুই কর তুই কেজ মানুষ বলে কথা।
বড়োমার কথায় থমথমে পরিবেশ কিছুটা হাল্কা হলো।
মাথায় রাখবে। এরপর যখন বলবে অনি বল, উত্তর পাবে।
এই আবার শুরু করলি। মিত্রা বললো।
কেনরে আবার কি হলো? ইসলামভাই বললো।
সেই বেরবার সময় থেকে বড়োমার সঙ্গে চলছে। দু-বার রবীনকে বলেছে গাড়ি থামা, নেমে যাই।
ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসছে।
তুই আজকাল দিদিকেও চমকাচ্ছিস।
মাঝে মাঝেই ঝামেলা করছে। ফোনটা করো ডাক্তারদাকে। বড়োমার দিকে তাকালাম।
ইসলামভাই কাছাকাছি কেউ আছে। ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
আবিদকে বলে দিচ্ছি।
আর একজন?
সেও আছে। ওখানে মিটিং করছে। প্রবীরদা বললো।
তোমরা কোথায় ছিলে?
এখানে আর একটা ঝামেলা পাকিয়ে রেখেছিস। তার সমাধান করছিলাম। ইসলামভাই বললো।
কিগো প্রবীরদা কিছু হলো?
না হওয়ার কি আছে। ওই যে তোকে তখন বললাম, তুই আমার থেকে সিনিয়ার হলে তোকে প্রণাম করতাম।
মনে হচ্ছে আজ আমার শরীর খারাপ করবে।
ইসলামভাই আমার পেটে খোঁচা মারলো।
দেখলে প্রবীরদা, বুঝতে পারলে ও কি কথা বলতে চাইছে। ইসলামভাই বললো।
বোঝার আর কি বাকি রেখেছে।
ওরা সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। বরুণদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
মিত্রা ডাক্তারকে একটা ফোন কর। বড়োমা বললো।
মিত্রা ডায়াল করলো। রিং-এর আওয়াজ শুনতে পেলাম। বুঝতে পারলাম, ভয়েজ অন করে রেখেছে।
কিরে মামনি।
তুমি কোথায়?
আর বলিসনা ছেলেটা এই বুড়ো বয়সে আমাকে জোয়ান মরদ বানিয়ে দিয়েছে।
তোমার কথা শুনতে পাচ্ছে।
তাই, ওকে দে-তো একবার, ওর মাথাটা ফাটাই।
কেন!
যা সব ফিরিস্তি দিয়ে রেখেছে, সম্ভব।
বড়োমা তোমার কথা শুনছে, তুমি বুবুনের মাথা ফাটালে, তোমার মাথা আস্ত থাকবে?
ওরে বাবা তারমানে বিরাট একটা ষড়যন্ত্র চলছে মনে হয়।
আর বক বক করতে হবে না। খিদে লাগেনি। বড়োমা খেঁকিয়ে উঠলো।
আরি বাবা বড় বান্ধবী যে। খিদে লাগলে দেবে কে। দামিনীও টুক করে কোথায় কেটে পড়লো, ইসলামও সেই যে গেল আর এলো না। আর একটা কে পার্টির নেতা আছে কি যেন নাম।
প্রবীর।
হ্যাঁ। ওদের দ্বারা কিছু হবেনা বুঝলে। শুধু বড়ো বড়ো লেকচার।
প্রবীরদা হেসে ফেললো।
কে হাসে বান্ধবী?
প্রবীর।
ও কি ওখানে?
হ্যাঁ। তুমি চলে এসো।
কোথায়?
ইসলামভাই ফোনের কাছে এগিয়ে গেলো।
দাদা আমি আবিদকে বলে দিচ্ছি নিয়ে আসছে।
তোমরা সব কোথায় আছো বলো তো?
মামনির পুরনো বাড়িতে।
বাগবাজার।
হ্যাঁ।
বাবা, কুটুমবাড়িতে গেলে কিছু নিয়ে যেতে হয়।
মস্করা রাখো, চলে এসো।
বড়োমার কথায় সবাই হেসে উঠলো।
মিত্রা ফোনটা বন্ধ করে, আমার দিকে তাকিয়ে। চোখদুটো চক চক করছে।
কিরে ইসি চা তো গঙ্গাজল একটু করে খাওয়া। আমি বললাম।
ভাত খাবি না?
সবাই আসুক।
তোমরা ওপরে চলো। জ্যেঠিমনি, প্রবীরদার দিকে তাকাল।
একটু পরে দিদি, অনির সঙ্গে একটু কথা সেরে নিই।
জ্যেঠিমনি হাসল। ইসি ওদের মিষ্টি এনে দে।
ছোটোমা হেসে ফেললো।
দিদি তুমি হাসলে। ইসলামভাই বললো।
জিজ্ঞেস কর বাঁদরটাকে।
মনে থাকে যেন। মাত্র কয়েকটা কচুরি। আমি বললাম।
সবাই হাসছে।
ওরা সবাই ওপরে চলে গেল।
আমি, প্রবীরদা, ইসলামভাই বসলাম।
কিরে হঠাৎ এখানে? ইসলামভাই বললো।
এমনি, জ্যেঠিমনি বলেছিল একবার আসার জন্য তাই।
তুই এতো তাড়াতাড়ি এখানে আসার পাত্র নোস, নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে।
কিছুই হয়নি।
তুই এমনি এমনি চলে এলি।
মহা মুস্কিল।
ঠিক আছে বলতে হবে না।
তার মানে এখানে অনি এসেছে নিশ্চই কিছু একটা ঘটেছে। প্রবীরদা বললো।
তোমাকে ভেবে নিতে হবে। ও কোনও কাজ ছাড়া একপাও কোথাও নরবে না। কারুর কাছে যাবেও না। এটা ওর স্বভাব।
সাংঘাতিক!
নাগো, ইসলামভাই বাড়িয়ে বলছে। আমি শ্বশুর বাড়িতে আসব না?
সে তুই আসতেই পারিস। আজকেই আসবি….? ইসলামভাই বললো।
ইসি চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
খুব জোর গল্প হচ্ছে।
আর বলিসনা, ও যা তেঁয়েটে। প্রবীরদা বললো।
দু-দিন দেখেই বুঝেছি।
তোকে নিয়ে একটু বসবো। কাজটা মিটিয়ে ফেলতে হবে। প্রবীরদা বললো।
সকাল থেকে অনেক লোক এসেছে।
আসবে। কি করি বলতো। আমাদের পার্টির নীচের তলায় যে এতটা পানা পড়ে গেছে আগে বুঝিনি। অনি চোখ খুলে দিল। রিকভার করতে না পারলে সামনে ভারি বিপদ। যেখানে যাচ্ছি পদে পদে বাধা পাচ্ছি।
ইসি মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ওই দেখ কারা নামছে।
মুখ বারিয়ে দেখলাম, দামিনীমাসি, ডাক্তারদাদা, নীরু নামল। আবিদ ড্রাইভারের সিটে বসে। ইসি ছুটে বেরিয়ে গেল।
ওরে বাবা তোদের বাড়ি তো জব্বর জায়গায়।
ডাক্তারদাদার কথায় ইসি হাসছে।
সামনেই আমার বন্ধুর বাড়ি।
কার কথা বলছো?
ডা. আর.এন চ্যাটার্জী।
নামটা শুনেই প্রবীরদা তরাক করে উঠে দাঁড়াল।
দাঁড়া ওর সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি। আজ একবার দেখা করবো।
তোমার আবার কি হলো! প্রবীদার দিকে তাকালাম।
আরে ওই বাড়িটা নিয়েই তো সমস্যা।
তারমানে!
ইসি স্কুলের জন্য যে বাড়িটা ভাড়া নিয়েছে। সেটা ওই বাড়ির গ্রাউন্ড ফ্লোর।
তাই!
যাক, সমস্যার সমাধান হলো, ডাক্তারবাবুকে বলতে হবে ব্যাপারটা।
সমস্যাটা কি?
ডাক্তারকে পাড়ার লোক বিগড়েছে, ডাক্তার এখন কিছুতেই স্কুল করতে দেবে না।
তাহলে ভাড়া দিয়েছিল কেন?
তখন দিয়েছিল। তারপর যা হয়। ডাক্তারের কান ভাঙচি দিয়েছে। পার্টির মাতব্বররা গিয়ে ক্ষমতা দেখিয়েছে। ব্যাশ ডাক্তার বিগড়ে গেছে।
ও তুমি বোঝ। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে এলাম।
এই দেখ দামিনী। তোমার সুপুত্তুরকে দেখ। আমাদের চড়কি নাচন নাচাচ্ছে, আর বাবু শ্বশুর বাড়িতে হাওয়া খেতে এসেছে।
দামিনীমাসি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। আটপৌরে করে একটা দামী তাঁতের শাড়ি পরে এসেছে। তুঁতে কালারের পাড়, খোলটাও হাল্কা তুঁতে কালারের ওপর সাদা। কাছে এগিয়ে এলো।
কখন এলি?
ঘণ্টা খানেক হবে। তুমি কোথায় গেছিলে?
কোথাও যাই নি।
তাহলে ডাক্তারদাদা যে তখন বললো।
কাছেই ছিলাম। তুই বুঝতে পারিস নি।
হাসলাম।
নিচে ডাক্তারদাদার গলা পেয়ে জ্যেঠিমনি নেমে এসেছে। পেছন পেছন ছোটোমা, মিত্রা।
নীরু আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে।
নীরু।
স্যার।
মিষ্টির হাঁড়ি বার কর।
এসব আবার আনতে গেলেন কেন। জ্যেঠিমনি বললো।
সেকিগো মেয়ের বাপের বাড়িতে এলাম, খালি হাতে আসা যায়। আমার পছন্দের মিষ্টি এনেছি।
ডাক্তারদাদা ভেতরে এলো।
হ্যাঁরে অনি, তা হঠাৎ আজ এ বাড়িতে ঢুঁ মারলি?
ইসলামভাই হেসে ফেললো।
হাসলে কেন ইসলাম?
আমাদেরও একই প্রশ্ন।
ডাক্তারদাদা আমার কাঁধে হাত রাখলো।
বড়ো সরেস ছেলে বুঝেছো।
সে আর বুঝতে বাকি আছে।
বড় বান্ধবীকে দেখছি না।
ওপরে আছে।
খাওয়ার তোড়জোড় করছে?
জ্যেঠিমনি হাসলো।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/x6IvjYr
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment