❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩৫ নং কিস্তি
—————————
চিকনা। অনি উঠেছে?
নীচে মীরচাচার গলা শুনতে পেলাম।
বাসুর দিকে তাকালাম।
তুমি ওপরে যাও অনিদা উঠেছে। নিচে নীপার গলা পেলাম।
সুরো ফ্লাক্সে চা আছে। আমি বললাম।
আছে।
সকলে আমার কথায় হেসে উঠলো।
মীরচাচা দরজায় মুখে দাঁড়িয়ে একবার মুখটা দেখিয়েই বললো, দাঁড়া বলে আসি।
আবার কি বলতে যাচ্ছ।
বাচ্চাগুলোর জন্য কিছু ফল-পাকড় গাছ থেকে পারলাম। সঙ্গে নিয়ে এয়েছি।
এ সব ঝামেলা করতে গেলে কেন।
আরে কিনতে হয় নি, গাছ থেকে পেড়েছি।
মীরচাচা বারান্দায় বেরিয়ে গেল।
মিলি আমার দিকে তাকাল।
বলো গাড়িতে তুলে দিতে।
গাড়ি মনে হয় খালি নেই। আমি বললাম।
তার মানে!
চাবি কার কাছে।
ব্যাঙ্কে রেখে এসেছি। কনিষ্ক বললো।
তাহলে আমি যা বলছি তাই হয়েছে।
চিকনা হাসছে।
কিরে যা বললাম ঠিক।
তুই এতো জানিস কি করে বল?
মীরচাচার এ্যাপিয়ারেন্স।
মীরচাচা ঘরে ঢুকলো।
মিলি সুরো দুটো চেয়ার ছেড়ে খাটে এসে বসলো।
ডাক্তারবাবুরা এসে পরলো, তাই একটু বাড়ি যেতে পারলাম।
চিকনা একবার তাকালো মীরচাচার দিকে।
থাম তোরা, ওর এসব জানা দরকার। যা দেখছু সব কিছু ওর জন্য, ও জানবে না তো কে জানবে।
আমি হাসলাম।
বাজারে ওদের গাড়ি কোথায় রেখেছো? মীরচাচার দিকে তাকালাম।
বাসুর দোকানের কাছে।
কে নিয়ে গেল?
সঞ্জু।
তোমার ফল-পাকড় গাড়ির পেছনে তুলে দাও। কলকাতা গিয়ে খাবে।
তোকে ভাবতে হবে নি বস্তায় বাঁইধে তুলে দিছি।
কনিষ্ক, নীরু দুজনেই জোরে হেসে উঠলো।
হাসলেন কেন ডাক্তারবাবু, অন্যায় করছি?
না তুমি যে এসব করেছো, একটু আগেই অনি বলছিল। বাকিটা যেটুকু বেঁচেছে ব্যাগে করে নিয়ে এসেছো।
গরিব গুর্বো মানুষ, ওতো আমাদের পথ দেখায়, তাই আগে থেকে জানতে পারে।
চা খাবে? আমি বললাম।
খাবো।
মিলি এগিয়ে গেল।
কাল কাজ সারলে?
সারবো না মানে—সব একবারে মিটি দিছি। শুধু কাগজে লেখা লিখি বাকি আছে।
একবারে নিরামিষ ভাবে মিটিয়ে দিলে?
মীরচাচা হেসে ফেললো।
তোর শরীল খারাপ হছে শুনে ছুড়কিটা মাথা ঠিক রাখতে পারলনি। সবাই সারারাত এউখানে ছিল।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে শুধু হেসেই যাচ্ছে।
মিলি মীরচাচার হাতে চায়ের কাপ দিল। মুচকি মুচকি হাসছে।
শুনলাম তুমি নাকি দুধের ডিলার হয়েছো?
এই যাঃ ভুলিইছি।
আবার কি ভুললে!
মিট সেফের ওপর চায়ের কাপটা রেখে পকেট থেক মোবাইল বার করলো।
দাঁড়া তোর চাচীকে একটা ফোন করি দিই।
কেন?
একটু দুধ লিয়ে যা।
তুমি কি খেপেছো।
ঘরের দুধ। কিনে দিতে গেলে গায়ে লাগতো।
থাক। পরে এসে নিয়ে যাব।
দেখ না এমন ভাবে দেব একটুও নষ্ট হবেনি।
আমার কথা কানেই তুললো না মীরচাচা, চাচীকে যা বলার তা বলে দিল।
চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চিকনার দিকে তাকাল।
তোরা তখন থেকে শুধু হাইসা মরছু কেন বল?
লেখা-পড়া শিখছি অনির কাছ থেকে। বাসু বললো।
খালি ফাইজলামো।
সত্যি বিশ্বাস করো। এতক্ষণ অনেক কিছু ওর জানা ছিল না। এখন সব জেনে ফেলেছে।
বললাম কই, যে জেনেছে।
যতটুকু বলেছো তাইই যথেষ্ট। বাকিটা এর ওর পেটে কিল মেরে বার করে নেবে।
মীরচাচার মুখে নির্মল হাসি ছড়িয়ে পরলো।
স্যারের শ্রাদ্ধের পরদিন আমাদের মেলা। তুই থাকিস।
আবার কিসের মেলা? আমি বললাম।
মহরম উপলক্ষে।
নীপা একটা বড় বাটি বেশ কয়েকটা প্লেট নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
তুমি পাকা পেঁপে, লেবু, সপেদা, আঁখ কি করতে নিয়ে এসেছো?
বাচ্চাগুলোর জন্য।
খেয়ে সব উল্টে পরে যাবে।
নীপা মিলির দিকে তাকাল।
তোমরা একটু ভাগ করো আমি আসছি। দু-রকমের আছে। একটা একটা করে দাও।
মাম্পিরা জানলায় দাঁড়িয়েছিল পেছন ফিরে সোজা খাট থেকে নেমে গেল।
মিলি, মেয়ে যাচ্ছে। কনিষ্ক বললো।
মা কি-গো? মাম্পি বললো।
কিছু না, খাটে গিয়ে আঙ্কেলেরে পাশে বস।
দু-জনে আমার কাছে এলো।
আঙ্কেল অমলেট?
তুই খাবি?
মাথা দোলাল।
ঘাড় মটকাব দাঁড়া, সকাল থেকে সমানে মুখ চালাচ্ছিস। মিলি খিঁচিয়ে উঠলো।
কাকে বলছো কোনটা কমতি আছে বলো। সুরো বললো।
হিস হিস, মাম্পি চেঁচিয়ে উঠে দৌড় লাগাল।
সুরো দেখ দেখ কোথায় আবার করে। মিলি বলে উঠলো।
যেখানে করে করুক না, মাটির দাওয়া শুকি যাবে। মীরচাচা বললো।
সুরো বেরিয়ে গেল।
দেখি মিকিও গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে গেল।
মিলি প্লেটে করে পিঠে নিয়ে এলো। গ্রামের ভাষায় বলে সরুচাকলি। সত্যি ডিমের অমলেটের মতো দেখতে। ভেতরে নারকেলের পুর। আর খেঁজুর রসের পাতলা গুড়।
আঃ যেন অমৃত। নীরু মুখে পুরে দিয়েছে।
অনেকদিন পর খাচ্ছি বুঝলি অনি। তাও আবার গেল বছর গাঙ্গুরাম থেকে কিনে খেতে হয়েছিল। প্রত্যেক বছরই তাই করি। তবে এইরকম স্বাদ নয়।
আর একটা দিই নীরুদা। সুরো বললো।
জিজ্ঞাসা করতে হয় নাকি।
একটু পরে ভাত খাবে।
মিকি, মাম্পি হেলতে দুলতে আমার কাছে চলে এলো।
অমলেট দাও।
দুই ঠ্যাঙের মাঝখানে দু-জনে ঢুকে পরেছে।
একটুখানি, বেশি না—
মাথা দোলাচ্ছে।
চামচে দিয়ে কেটে কেটে মুখে দিলাম। একটু গুড় লাগিয়ে দিলাম দুজনের জিভে।
মিষ্টি।
হ্যাঁ, মিষ্টি অমলেট?
দুজনে খাটে উঠে জানলায় চলে গেল।
নীরু কটা হলো। আমি বললাম।
বেশি না, চারটে।
ভগবান তোর শরীর খারাপ করেনা না কেন?
সময়মতো ওষুধটা খাই।
সবাই জোড়ে হেসে উঠলো।
আমি নীরুর দিকে তাকিয়ে।
যা দেওয়ার সাধু ভাষায় দে, চলিত ভাষায় দিবি না। সবাই আছে।
প্লেটটা সুরোর দিকে এগিয়ে দিলাম।
নীপা আর একটা থার্মোকলের প্লেটে সাজিয়ে মীরচাচার জন্য নিয়ে এলো।
এই জন্য তুই তখন গেলি।
সবাই খাবে তুমি খাবে না, এটা হয় নাকি।
চিকনা চল একটু বেরোব।
বেরোতে হবে না। যা কথা বলার ঘরে বসে বল। উত্তর পেয়ে যাবি।
নীপা আমার দিকে তাকাল। চোখে হাসি।
নীচে একটা বাইকের শব্দ হলো। দুবার হর্ণ বাজলো। নীপা বেরিয়ে গেল।
তখনও বাইকের ভট ভট আওয়াজ হয়েই চলেছে। এবার থামলো। বুঝলাম ওপর থেকে নীপা সিগন্যাল পাঠাল।
নীপা ঘরে এলো। কিছুক্ষণ পর সুবীর, সঞ্জু ঢুকলো।
নীপা এবার ওষুধটা এনে দাও। নীরু বললো।
দিচ্ছি।
নীপা মিটসেফের ওপর থেকে ওষুধ নিয়ে এলো। সুবীর একটা খাম আমার হাতে দিল।
গতকাল পর্যন্ত দিয়েছি।
তুমি চলে এলে? নীপা বললো।
দুর ভালো লাগে নাকি, যেই শুনলাম অনিদা চলে যাবে রায়কে বললাম তুমি সামলাও, আমি তিনটে নাগাদ আসছি।
ওরা সোফায় বসলো।
সঞ্জুর চোখমুখ আজ যথেষ্ট পরিষ্কার।
সুরো বাচ্চাগুলোকে রেডি করে তোরাও রেডি হয়ে নে। না হলে বেলা হয়ে যাবে।
তোমার কথা আমরা কেউ শুনবো না। তোমার চিন্তা নেই।
যা বাবা আমি তাই বললাম নাকি?
তাই তো বললে।
আমি হাসছি।
তোমাকে চিনতে বাকি আছে নাকি।
শুধু একমাত্র অংশুকে চিনতে পারলি না। বেচারা।
ঘাড়টা মুটকে দেব। সুরো চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
নীপা হাতে ওষুধ দিল, জল দিয়ে গিললাম।
একটু চা খাওয়াও। আমার জন্য নয় তোমার বরের জন্য।
দিতে পারছিস না। সুরো চেঁচিয়ে উঠলো।
সুবীর হাসছে।
সুবীর কালকে তোমাদের খুব জ্বালাতন করলাম, তাই না?
একদম নয়।
কেন?
খোকনদা যখন ভালোকরে দেখে বললো, প্রেসারটা একটু হাই আছে, উনি ঘুমচ্ছেন যখন ডিস্টার্ব করবেন না। দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে। ওনার রেস্টের দরকার। তখন টেনশন মুক্ত হলাম।
এইবার ষোলকলা পূর্ণ হলো। চিকনা হাসতে হাসতে বলে উঠলো।
সুবীর চিকনার দিকে অবাক হয়ে তাকাল।
বুঝলে না?
সুবীর মাথা দোলাল।
না, তোমার কথা ঠিক ধরতে পারলাম না।
অনি প্রথমে বাসুর উনুনে সিক গুঁজলো। একটু খোঁচাল। আঁচ উঠলো না। তারপর মীরচাচা। তাও আঁচটা ঠিক মতো উঠছিল না। এবার তোমার উনুনে গোঁতা মারতেই আঁচটা গনগন করে উঠে গেল।
তুমি এতক্ষণ বসে বসে সেই হিসাব করছিলে? নীপা বললো।
দেখেছিস আমি কনিষ্কদা একটাও কথা বলেছি। জিজ্ঞাসা কর কনিষ্কদাকে অঙ্কটা আগে আমি বলেছি কিনা। বাসু সির হয়েগেছিল। মীরচাচা, সুবীর সির হওয়ার আগেই বর্শিতে মাছ গেঁথে তুলে নিল।
নীপা, মিলি, সুরো তিনজনেই চিকনার মুখের দিকে তাকিয়ে।
ও অনেকক্ষণ থেকে ছুঁক ছুঁক করছে। ওর টার্গেট ছিল কাল রাতে আমরা কোনও ডাক্তার ডেকে এনেছি কিনা? সে কনিষ্কদাদের সঙ্গে কথা বলেছিল কিনা? তার কথার ওপর ভিত্তি করে কনিষ্কদারা সকালে এসেছে কিনা?
উত্তর ও পেয়ে গেছে। বাকিটা ও এক্স ধরে মিলিয়ে দেবে। দেখিস না কথায় কথায় বলে বীজগণিতটা আমি খুব ভাল জানি। এক্স ধরো, আর অঙ্ক মেলাও।
সুবীর মাথায় হাত দিয়ে বসেছে।
দেখো, সঞ্জুকে ও জিজ্ঞাসা করতে পারতো। আমি কিংবা তুমি হলে, সঞ্জুকেই জিজ্ঞাসা করতাম। ও সুবীরকে বাজালো। সুবীর এখনও ওর মুখ দেখে বুঝতে শেখেনি। গড়গড় করে বলে দিল।
সুবীর হাসছে, মাথা দোলাচ্ছে।
তোমাকে তখন ফোন করলাম, তুমি তো বলতে পারতে।
সুবীর নীপার দিকে তাকাল।
তুমি যে এতটা গবেটচন্দ্র তা জনবো কি করে। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার হয়েছো, এটা বোঝ না।
মাম্পি দেখি জানলা থেকে এসে কোমর থেকে প্যান্ট টেনে নামিয়ে দিচ্ছে।
কি হলো রে! মিলি চোখ মুখ পাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
পটি পটি।
ছুটে এসে মিলি কোলে তুলে বাইরে বেরিয়ে গেল।
নীপারা হাসতে হাসতে সকলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
কনিষ্ককে বললাম, একটা সিগারেট দে।
চা খেয়ে খাবি। এখুনি ওষুধ খেলি।
মীরচাচা।
বল।
পীরসাহেবের জমির কি হলো।
কেন, ঘিরে লিছি। বাগান করছি। ফুলের গাছ লাগাইছি, ফলের চারা পুঁতছি। একটা মাজার করবো ঠিক করছি, চিকনা বলছে, আর কিচ্ছুটি করবে না। যেমন আছে তেমন থাক।
দেখলাম। কেউ বাধা দেয়নি?
কে দেবে। হাত-পা ভেঙে নুলো করি দিবো।
আমার কাকার দান করা জমি।
সব দখলে লিয়ে লিছি। তান্যে ভাগে চাষ করেঠে। যা ধান উঠতিছে চিকনার হামারে দিছি। টাকা লিয়ে ব্যাঙ্কে রাইখে দিছি। একটা কমিটি গড়ছি। তাতে তুই আছু। সবাই মাইনে লিছে।
চিকনাকে রাখো নি।
চিকনা মনকার ঘরের ছেলে ও সবেতেই আছে।
আমি ঘরের নয়—
এই দেখো, আবার ভুল ধরে।
আচ্ছা আচ্ছা।
চিকনার দিকে তাকালাম।
আমার বাসন্তীমার জমি।
কিছুট উদ্ধার করেছি। আরও বাকি আছে।
কেন!
মণ্ডলের জামাই আবার কাকে বেচে দিয়েছে। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। ব্যাটা নিজেই বকলমে জমি কিনেছে কিনা কে জানে। আমরা নোটিস দিয়েছি। পাঁয়তাল্লিশ দিন টাইম চেয়েছে বিএলআরও, না পাওয়া গেলে রেকর্ড কারেকশন করে দেবে।
করবে না ঝুলিয়ে রাখবে?
করে না দিয়ে যাবে কোথায়।
বাসন্তীর ফাণ্ডে কতো জমেছে।
সুবীর বলতে পারবে। ওকে দায়িত্ব দিয়েছি।
আমি জানি না। খাতা দেখে বলতে হবে। সুবীর কথাটা বলে নিজেই হেসে ফেললো।
সবাই হাসছে।
সুবীর আর রিক্স নিতে চাইছে না। সপাটে হেলমেটে লেগেছে। নীরু বললো।
সঞ্জু তুই এখন রিল্যাক্সতো।
সঞ্জু হাসলো।
কাল মিনু কাজ করবে, তুই চলে যাবি শুনে মন খারাপ করলো। তারপর সব শুনে বললো, অনিদা বরং এখন যাক, বাবার কাজের দিন আসুক।
ওকে বলিস আমি আসবো।
ঋজু সকালে দোকানে এসেছিল। চিঠি ছাপতে দেবে।
দিয়ে দে। ওর বউ?
সঙ্গে এসেছিল।
কেশটা কবে উইথড্র করবে?
করে নেবে বলেছে।
তাহলে তোর আর চিন্তা নেই।
এবার কিছু বলো। সুবীর চিকনার দিকে তাকালো।
ওই যে বললাম এক্স ধরে মেলানো হয়ে গেছে। বইয়ের পেছনে উত্তর দেখলো মিলেছে কিনা।
তোমরা বহুত বড়ো খেলোয়াড়।
বাসু হেসে গড়িয়ে পরে।
তোমার ব্যাঙ্কের লকারে মণ্ডলের জমির কাগজপত্র আছে? সুবীরের দিকে তাকালাম।
হ্যাঁ।
আমাকে একটু জেরক্স করে দাও।
আজ নিয়ে যাবেন!
হ্যাঁ।
ওটা অন্য কাউকে দিয়ে হবে না। আমাকে নিজে হাতে করতে হবে।
নীপা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
উঃ ও বাড়িটা দু-জনে মিলে একবারে তেড়ে ফেললো।
খুব দুষ্টুমি করছে। আমি বললাম।
শুধু বলে পুকুরে নামবে। শেষে তুয়া একজন একজন করে পুকুরে একটু নামাতে তবে শান্তি।
তোমার পালং তলায় তখন একটু নচা নাচি করেছে।
হ্যাঁ, তাই দেখছিলাম। আমি তো ভাবলাম গরু উঠেছিল।
হাসলাম।
তুমি ওদের নিয়ে ওই বনের মধ্যে কি করতে গেছিলে?
কে বললো!
মাম্পি। হাততালি মারতে গাছ নাচছে। কি খুশি দুটোতে। তোমার ওই গাছ কোথায় আছে বলো। নাম শুনেছি এখনও চিনে উঠতে পারলাম না।
বনচাঁড়াল, চিকনা বললো।
আমি মাথা দোলালাম।
সেটা আবার কি রে?
কনিষ্ক বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল।
নাচনি গাছ। বাসু বললো।
তার মানে! নীরু বললো।
হাততালি মারলে নাচে। চিকনা বললো।
যাঃ যত্তো সব উদ্ভট কথাবার্তা। কনিষ্ক বললো।
ওকে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে আন। আমি বললাম।
আমি দেখবো, চলো চিকনা দেখি হাততালি দিলে কেমন নাচে। নীরু বললো।
চিকনা আমার দিকে তাকাল।
কোথায় দেখলি?
খালের ধারে বনের মধ্যে। মাম্পিকে, মিকিকে নিয়ে যা স্পট দেখিয়ে দেবে।
সত্যি গল্প দিচ্ছিস না—কনিষ্ক বললো।
নারে তোর মেয়েকে জিজ্ঞাসা কর।
কনিষ্ক, নীরু দুজনেই উঠে দাঁড়াল। চিকনা ওদের সঙ্গে বেরিয়ে গেল।
মীরচাচা বাজারে এখন কটা দোকান।
সর্বমোট বাইশটা। এখন তুই সব পাবি। ওষুধ দোকান, মনিহারির দোকান, ভুসিমালের দোকান, পশ্চিম সাইয়ের একটা ছেল আবার কমপ্যুটারের দোকান খুলছে।
তাহলে দারুণ ব্যাপার।
আগে যেমন দরকারে চকে ছুটতে হতো, এখন আর তোকে চকে যেতে হবে না। আমাদের এখান থেকে এখন পাইকাররাও মাল করে নিয়ে যায়। সঞ্জু বললো।
তাই!
হ্যাঁ।
হাট বসে, না বন্ধ করে দিয়েছ।
যেমন সপ্তাহে একদিন বসে আসছিল তেমনি বসে। বসু বললো।
মণ্ডলের সিনেমাহল?
যেমন বন্ধ ছিল তেমন আছে।
ওটার একটা গতি কর।
চিকনা বলেছিল গ্রামের অনেক মনুষের ফলন রাখার জায়গা হয় না। ওইটা যদি একটু সারিয়ে টারিয়ে কাজে লাগানো যায়।
আমি কাগজগুলো সুবীরের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছি। স্যারের কাজের দিন আসি তখন তোদের বলবো। নির্মাল্যরা কি প্রতিদিন মালপত্র নিয়ে যায়?
হ্যাঁ। টাইম দেওয়া আছে। হাটে একটা সমবায়িকার ঘর করেছি। সব ওখানে জমা হয়। ওখান থেকে নিয়ে চলে যায়।
ওটা সামলায় কে?
সবার কাছ থিকা পাঁচটাকা করে লেওয়া হয় প্রতিদিন। যা ওঠে ওই দিয়ে ওদের মাইনে দেওয়া হয় লাইটের বিল দেওয়া হয়, স্টেশনারি কেনা হয়। পাঁচটা ছেলে কাজ পেল।
বাঃ ভাল স্কিম বানিয়েছ। ওখানে পার্টির গন্ধ নেই?
ছোটোখাট জায়গায় ওটা করি না। পড়াশুনার রেজাল্ট দেখা হয়। এখানকার ভাল ভাল মাস্টার ইন্টারভিউ নেয়, তাঁরা যাঁদের বেছে দেন আমরা কাজে নিই।
এইটা মেইনটেন করো, যারা অন্য ভাবধারার মানুষ তাদেরও স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ দিও।
সুবীর তুমি কিছু চিন্তাভাবনা করেছো?
করেছি, তবে এখন আর কিছু করবো না। যেটা করে ফেলেছি সেটা নিয়েই হিমসিম খাচ্ছি। ব্যাঙ্কে চার-পাঁচজন নতুন ছেলেমেয়ে নিতে হবে। না হলে সামলাতে পারবো না।
তারজন্য কাগজপত্র তৈরি করেছো?
হিমাংশুদাকে বলেছি। বলেছে ওইটার অথরিটি ইসলামভাই। দাদাভাই না আসা পর্যন্ত চালাতে হবে। তারপর যা ডিসিশন হবে সেই মতো কাজ চলবে।
তোমরা কি কাগজে বিজ্ঞাপন দাও?
না। আমাদের এলাকার শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের আগে সুযোগ দিই। তাদের মধ্যে থেকে শ্যুটেবল ছেলে-মেয়ে না পেলে তখন বাইরে থেকে নিই।
এখন যারা আছে?
তারা সবাই ব্যাঙ্ক থেকে এগারো কিলোমিটারের মধ্যে থাকে।
এই পলিসিটা কার?
তুমি কিছু জানো না যেন।
সত্যি বলছি যখন ব্যাঙ্কটা তৈরি করার মনস্থির করেছিলাম তখন এত ভাবিনি। তখন চশমখোর মহাজনদের হাত থেকে গ্রামের মানুষদের বাঁচাবার চিন্তা নিয়ে কাজটা করার চেষ্টা করেছিলাম। তরপর কি ঘটেছে তুমি সব শুনে থাকবে।
এখন সেই পরিস্থিতি নেই। এখন ব্যাঙ্কের হাতে সব সময় এক কোটি টাকার মতো থাকে।
সাধারণ মানুষকে নিয়ে চলার চেষ্টা করো দেখবে কোনও বাধাই তোমার কাছে বাধা হয়ে থাকবে না। সব মিটে যাবে। তাই বলে সবাই ভালমানুষ হবে তাও না। একটু বদখদ মানুষ থাকবেই।
চেষ্টা করি। সব সময় হয়ে ওঠে না।
বোর্ডে এখন কারা আছে।
যারা ছিল তারাই আছেন। নতুন বলতে দাদা আর বড়োমার জায়গায় অনন্য, অনিসা এসেছে।
কন্ট্রোলিং পাওয়ার?
দাদাভাই। ওটা তুমি যা বলেগেছিলে সেটাই মেইনটেইন হচ্ছে।
এক্সিকিউটিভ বডিতে নতুন মুখ কেউ এসেছে?
রেজলিউশন করে অনাদিদার জায়গায় শুধু মীরচাচা এসেছে, এছাড়া বাসুদা, চিকনাদা, সঞ্জুদা, নীপা।
ভোটাভুটি হয়?
হয়। আমি তখন প্রিসাইডিং অফিসার।
হার জিত হয়?
হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভোটাভুটি হয় না। একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিই। প্রত্যেকের দায়িত্ব ভাগ করা আছে। সেইভাবে কাজ করি।
হই হই করতে করতে কনিষ্ক, নীরু, চিকনা ঘরে ঢুকলো। পেছন পেছন নীপারাও।
নতুন জিনিষ দেখলাম। কনিষ্ক বললো।
কেন জানতিস না? আমি বললাম।
বোটানি আমার সাবজেক্ট নয়।
হাসলাম।
নীরু ব্যাটা বিশ্বাস করছিল না। ওকে আমার হয়ে একটা গাঁট্টা মেরে দে।
ওটা বটার দায়িত্ব, বটাকে ফোন করলাম। বললো, আমার ওপর ছেড়ে দে।
এরই মধ্যে বটাকেও ফোন করা হয়ে গেল!
তোর খবরটা আপডেট করলাম। বললো কলকাতায় ঢুকলেই ফোন করবি। রাতে যাব।
পুচকে দুটো গেল কোথায়?
গাঙ্গুলী বাড়ির হাঁস নেমেছে পুকুরে, দেখছে আর খাচ্ছে। নীপা বললো।
গাছ চিনলে।
চিনলাম।
হাততালি মারলে।
নীপা হেসে ফেললো।
একটা সময় ছিল কাকার মারের হাত থেকে বাঁচার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা এইগাছের সঙ্গে খেলেছি। মাঝে মাঝে চিকনাও আমার পার্টনার হতো। দুজনেই অভাগা ছিলাম।
এখন থাক। তোর কথা বলা শেষ। চিকনা বললো।
তুই কোথাও যাবি? চিকনার দিকে তাকালাম।
মিনিট দশেকের জন্য একটু বেরোব।
আমায় যেতে হবে?
বাসু যাচ্ছে। চলে আসবো।
যা।
আমার ফোনটা কোথায় বলতো?
মিটসেফের ওপর।
ওটা বন্ধ নাকি?
হ্যাঁ।
কেন!
ঘন ঘন ফোন আসছিল তাই।
দে একবার, অর্ককে ফোন করতে হবে। কালকে বললাম, রেজাল্ট কি জানতে হবে।
এখনই জানতে হবে, ওখানে গিয়ে জানলে চলতো না।
হাসলাম।
না না ধর বাবা, তুই ফোন করে নে।
চিকনা উঠে দাঁড়ালো। মিটসেফের ওপর থেকে ফোনটা তুলে আমার দিকে এগিয়ে দিল।
তোকে অর্ক লাস্ট আপডেট দেয় নি?
দিয়েছে।
কি বলেছে?
চোখমুখ ঠিক কর আগে। এমন কিছু নয়।
তাহলে এতক্ষণ চেপে আছিস কেন?
যা হয় তাই হয়েছে।
কি হয়েছে সেটাই জানতে চাইছি?
অনাদি একটু ধমকা ধমকি দিয়েছে।
অর্ক তার কোনও রিটার্ন দেয় নি।
তোর থেকে বেশি দিয়েছে।
নীপা কাগজটা একটু নিয়ে এসো একবার দেখি কি লিখেছে। কোনও ফাঁক ফোঁকর রেখেছে কিনা।
একবারে রাখে নি।
অনাদি তোকে ফোন করে নি?
করেছিল।
কি বলছে!
এটা তোর উচিত হলো কিনা জানতে চেয়েছে।
তুই কি বলেছিস?
এটা অনির ব্যাপার, অনির কাছ থেকে জেনে নে।
কালকে রাতে ছুড়কি জামাইকে বাঁচিয়ে রেখেছে না মেরে দিয়েছে?
এ কি কথা বলছিস! ওরা এখনও ওই বাড়িতেই আছে।
শ্যাম তোকে ফোন করেছিল?
করেছিল।
কি বললো?
তুই কেমন আছিস তা জানলো।
জামাইকে তুলে এনে বাজারের কোথাও রাখ। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত কোথাও যেন না যায়। তাহলে ওর বেঁচে থাকার দায়িত্ব নিতে পারবো না। কেউ কিছু ডিসিশান নেবার আগে আমাকে অতি অবশ্যই ফোন করবি। না হলে আমার সঙ্গে ডাইরেক্ট কথা বলতে বলবি।
ঘরের সবাই এতক্ষণ থম মেরে আমার সঙ্গে চিকনার কথোপকথন শুনে গেল কেউ মুখে রাটি পর্যন্ত করলো না।
সঞ্জু।
বল।
মিনুকে বলে দে ওরা যেন এখুনি বাড়ি থেকে বাজারে চলে আসে।
ওখানে লোক আছে।
ওরা সব ভুসিমাল। পারলে এখন এসে ব্যাঙ্কে থাকুক, পরে ব্যবস্থা করিস।
চিকনা ছুড়কিকে ফোন লাগা। আমার সঙ্গে এসে যেন এখন দেখা করে।
চিকনা আমার দিকে তাকালো। বুঝে গেছে অনির রূপ বদলে গেছে।
মোবাইলটা অন করে বটম টিপলাম।
নীরু আমার পাশে এসে বসলো।
কিছুক্ষণ ডায়াল হওয়ার পরই অর্কর গলা।
আরে গুরুদেব এখন ফিট।
একটু আমাদের শোনা। নীরুর করুণ আর্তি।
ওর দিকে তাকালাম।
তোর যদি ইচ্ছে হয়।
ভয়েজ অন করলাম।
আমি আনফিট ছিলাম কখন?
কনিষ্কদা বললো, তোমার কাছে সকালে যাচ্ছে।
এসেছে।
এখন তুমি ফিট?
পাগল। বলছি না আমি আনফিট ছিলাম না। খবর কি বল?
সকাল বেলা গরম গরম বাক্যালাপ হলো।
কার সঙ্গে?
অনাদিদা নিজে ফোন করেছিল।
কি বলছে?
সব গটআপ খেলছি।
কি আওয়াজ পাচ্ছিস?
তুমি সকাল থেকে নিউজ চ্যানেলগুলো দেখনি!
না।
খোরাক বুঝলে খোরাক। আমি যে কতো ফোন পাচ্ছি কি বলবো তোমায়। মোবাইলে নাম ভেসে উঠলে ধরছি, নাহলে কেটে দিচ্ছি।
এখন কোথায়?
অফিসে।
এতো তারাতারি!
কাগজ ছাপতে হচ্ছে।
তার মানে!
হকাররা ভিড় করে আছে গেটের সামনে। খুব খাচ্ছে। মুচমুচে জিনিস কেউ ছারে।
বিক্রী হবে?
বলো কি। এ্যাডভান্স টাকা দিয়ে সব দাঁড়িয়ে রয়েছে।
অনাদি তোকে আর কি বললো?
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে উড়িয়ে দেবে। আমিও বললাম, ক্ষমতায় থাকতে একগাছি লোমেও হাত দিতে পারলে না। কাল সবেমাত্র বেরিয়েছো, এখনও ঘা শুকোয় নি। আগে নিজের পেছন সামলাও তারপর ভেবে দেখবে। তাপরও দেখি বহুত বড় বড় করে যাচ্ছে। দিলাম ঝাড়, অনিদাকে ফোন করছি। বম্বের টিমটাকে একটু খবরদিতে বলে দিচ্ছি। বলে কি আর্ক আমি তোর পায়ে ধরছি। আমার সব গেছে, অন্ততঃ পক্ষে যাতে বেঁচে থাকি তার একটা ব্যবস্থা কর।
আলতাফ ফোন করেছিল?
তুমি জানলে কি করে!
তুই এতো টেনশন ফ্রি লাইফ লিড করছিস।
হা হা হা।
কি বললো?
প্রথমে তোমার খোঁজ নিলো। সব বললাম। বলে এখুনি লোক পাঠাচ্ছি। তারপর যেই শুনলো কনিষ্কদা গেছে। তখন বললো, তাহলে দাদাকে নিয়ে ভাববো না। ঠিক লোক পৌঁছে গেছে। তুই রাস্তায় একলা ঘোরাঘুরি কর, বাকিটা আমি বুঝে নিচ্ছি। তারপর মিনিট পনেরোর মধ্যে তিন চারটে ফোন এলো, খোঁজ খবর নিলো। শেষেরটা সে কি বদখদ গলাগো। বলে নীচে আছি তুই একবার তোর থোবরটা দেখিয়ে যা। কি জামা পরে আছিস বল। তোকে ছবি করে নিই। তারপর আর তোকে ডিস্টার্ব করবো না। তুই তোর কাজ করবি, আমরা আমাদের কাজ করবো।
কোনও নামটাম বলে নি।
না।
কি করলি?
নীচে গেলাম। কাউকেই দেখতে পেলাম না। ফোনে একবার রিং বাজলো, ধরলাম। বললো তুই এবার কলকাতার বুকে স্বাধীন ভাবে ঘোর, তোর দায়িত্ব আমাদের। অনাদির ব্যাপারটা আমরা বুঝে নিচ্ছি। মাথায় রাখবি, ভয় পাবি না। তাহলে অনিদার অপমান হবে।
ওপরে চলে এলাম, বিন্দাস আছি।
এখনও বাইরে যাস নি?
না।
বৌকে কিছু বলিস নি?
খেপেছো। তুমি যতক্ষণ আছো কোনও শালাকে ভয় পাই না।
আজকে কি নামাবি?
কালকে মালটা কমপ্লিট করিনি। বাকিটা আজ দেব।
দিয়ে দে। আমি সন্ধ্যের মধ্যে ঢুকবো।
তবু একটা টাইম দাও।
সাতটার মধ্যে অবশ্যই পৌঁছে যাব।
আবিদদা ফোন করেছিল।
কি বললো।
কোনও অসুবিধে আছে কিনা।
কিছু বলেছিস?
না। অনুপদা, রূপায়ণদা বহুত খুশ। সকালে ফোন করে বলে ব্যাটা তুই যে এই কেলরকীর্তি করলি অনির পার্মিশন নিয়েছিস। আমি হাসি। তারপর তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলো, বললাম। শুনে অবাক। বলে, বলিস কি! আমাকে কেউ একবারটি জানায় নি। তারপর মনে হয় মাসিকে ফোন করে সমস্ত আপডেট নিয়েছে।
ঠিক আছে।
ফোনটা বন্ধ করলাম।
আমাদের কথ বলার ফাঁকেই সুরো, মিলি ঢুকেছে, মাম্পি, মিকিকে দেখতে পেলাম না।
কনিষ্ক আমার দিকে তাকাল। চোখে বিষ্ময়।
এ কী সেই….।
হ্যাঁ, তোর মুখের মধ্যে রিভালবারের নল ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
এ্যাঁ। সুরো আঁতকে উঠলো।
তুই জানলি কি করে?
আমার ব্যাপারে কোনও ভুল কাজ করে ফেললে, ওরা আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়।
তোমাকে মারতে গেছিল! কনিষ্করদিকে তাকিয়ে নীপার চোখ বড়ো বড়ো।
নীরু কিরকম থম মেরে গেছে।
কবে এই ঘটনা ঘটেছে! এতো কথা বলিস এটা বলিসনি! নীরুর গলাটা কেঁপে উঠলো।
কনিষ্ক হাসছে।
তুমি হাসছো! মিলি বললো।
হাসবো না তো কি কাঁদবো।
মিলির চোখ ছল ছল করে উঠলো। সুরোর দিকে তাকিয়ে বললো, আমি জানি, ও বলেছে, মিত্রাদিকেও বলেছি সমস্ত ঘটনা।
আমার কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিল। কনিষ্ক বললো।
আমার দিকে তাকাল।
সত্যি অনি ছেলেগুলোর দম আছে।
কি করবে। ভদ্রবেশি শয়তানরা ওদের এরকম ভাবে রেখেছে। আমি বললাম।
তোর আমাকে বলা উচিত ছিল। নীরু মিউ মিউ করে বললো।
তখন ওর ফার্স্ট স্টেজ। সেই একুশ দিনের প্রিয়েড চলছে।
কতোবার চেষ্টা করি এদের একবার চোখের দেখা দেখবো, দেখতে পাই না। নীরু বললো।
তুইও দেখেছিস, বুঝতে পারিস নি।
ভ্যাট।
হ্যাঁ রে।
নার্সিংহোমে চারদিন ওর ঘরের সামনের ফ্লোরটা পরিষ্কার করেছে। কড়া নজর রেখেছে ওর ঘরের দিকে। আমরা ওর জন্য কি সিকুরিটি রেখেছি, বরং ওরা ওদের জিনিসকে সন্তর্পণে গুছিয়ে রেখেছে। আমাদের থেকেও অনিকে ওদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কোনও মূল্যেই ওরা অনিকে হারাতে চায় নি।
সেদিন ওদের চোখে আমি সেই করুণ আর্তি দেখেছিলাম।
কনিষ্ক একটু দম নিল।
এমনকী সেরকম যদি বুঝতো তাহলে আমাকেও ছেড়ে কথা বলতো না। অনিকে ওরা তুলে নিয়ে চলে যেত।
কি বলছিস! নীরুর চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসছে।
একটুও মিথ্যে কথা বলছি না।
মিলি আমার পাশে এসে বসলো।
মীরচাচা ড্যাব ড্যাব করে কনিষ্কর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বাসু, চিকনার চোখ ডগডগে লাল।
যেদিন ও প্রথম চোখ খুললো। একটু ভেবে দেখ আমরা সেদিন একটু রিলিফ পেয়েছিলাম। স্যারও সেদিন একুশদিন পর প্রথম বাড়ি গেল।
হ্যাঁ।
সেদিন সকালে তুই আমি ছিলাম।
ঠিক বলেছিস মনে পড়ে যাচ্ছে।
আমরা কিন্তু রাত আড়াইটে পর্যন্ত ওর ঘরেই ছিলাম।
নীরু মাথা দোলায়। হ্যাঁ মনে পড়ছে।
তুই নীচে এসে বললি কনিষ্ক শরীরটা মনে হচ্ছে গণ্ডগোল করছে, আমি একটু ঘুমোই, তুই অনির চেকআপটা করে আয়।
নীরু আস্তে করে মাথা দুলিয়ে চোখে কথা বললো।
আমি ওপরে যেতেই নার্সের করিডর থেকে ওর রুমের নার্সটা বললো, এখন ওকে আছে স্যার।
আমি মাথাটা দুলিয়ে চলে গেলাম।
দেখি একজন স্যুইপার ওর গেটের মুখে দাঁড়িয়ে। চোখমুখটা দেখে ভালো ঠেকলো না। ওর ঘরে ঢোকার সময় দেখলাম আমাকে ভালো করে একবার দেখে নিল। কিছু বললো না।
ভেতরে ঢুকে আমি অবাক। একটা স্যুইপার অনির একবারে মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলছে, অনিদা প্লিজ একবার চোখ খোলো, শুধু নামটা একবার বলে দাও, তারপর আবার তুমি চোখ বন্ধ করো। তোমাকে আর বিরক্ত করব না। বাকি সব আমরা বুঝে নেবো। প্লিজ অনিদা।
ব্যাপারটা দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। আমি তোদের বলছি বটে দেখ আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আমি রে রে করে চেঁচিয়ে উঠে তেরে গেলাম।
সঙ্গে সঙ্গে কোমর থেকে রিভালবার বার করে তেরে এলো। গলাটা টিপে ধের দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে মুখের মধ্যে রিভালবারের নল ঢুকিয়ে দিল।
আমি ভাবলাম শেষ। সে কি চোখ মুখ।
কনিষ্ক নিঃশ্বাস নিল।
যেন পাগল হয়ে গেছে। চোখদুটো জবা ফুলের মতো লাল ছল ছল করছে।
একদম চেঁচাবি না। শেষ করে দেব। যা বলছি তার উত্তর দে।
তখন আমার দম বন্ধ হয়ে গেছে।
তুই কে?
হাতটা একটু ঢিলে করলো। গলা থেকে হাত সরালো না। মুখের মধ্যে তখনো রিভালবারের নলটা ঢোকানো। একটু নোনতা নোনতা স্বাদ। অতি কষ্টে বললাম।
আমি অনির বন্ধু।
নাম কি?
কনিষ্ক।
এখানে কি করতে এসেছিস?
আমি ডাক্তার, ওকে চেকআপ করতে এসেছি।
অনিদা কথা বলছে না কেন। তোরা কি চিকিৎসা করছিস—গর্জে উঠলো।
মুখ থেকে অশ্রাব্য ভাষা বেরিয়ে আসছে।
কি উত্তর দেব।
তারপর একবার অনির দিকে তাকাল। কেমন যেন একটা ভাব ভঙ্গি করলো। ব্যাপারটা এরকম দূর শালা একে মেরে কি হবে। লোকটাই কথা বলছে না। গলা থেকে হাতটা সরিয়ে নিল।
আমার মুখের দিকে কট কট করে তাকিয়ে। আমি তখন গলায় হাত বুলোচ্ছি।
অনিদা আর কোনওদিন কথা বলবে না?
বলবে। সময় লাগবে।
কারা এরকম করেছে নাম বলতে পারবি—একবারে ঠাণ্ডা গলা।
চুপ করে থাকলাম।
নাম জানিস। আবার ধমকে উঠলো।
চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
গায়ের কি রং। কি চোখ মুখ। চাপ দাড়ি। চোখদুটো সবজে সবজে। দেখলে কেউ বলবে না এরা এ্যান্টিসোস্যাল। তারপর নিজের মনেই বললো।
তুই জানবি কি করে, তুই তো ডাক্তার। শুয়োরের বাচ্চাটাকে যদি পাই একটা দানাও শরীরে বাইরে যাবে না। দাঁতে দাঁত চিপে চেঁচিয়ে উঠলো।
আমার দিকে তাকালো। চোখ দুটে যেন মনে হচ্ছে এক একটা গনগনে আগুনের কয়লার টুকরো।
তুই অনিদার বন্ধু দেবাকে চিনিস?
মাথা দোলালাম, চিনি না।
তাহলে কি করতে অনিদার বন্ধু হয়েছিস। আবার ধমকালো। দিলো কাঁচা কাঁচি খিস্তি।
কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। সরাটা চোখে মুখে অস্থিরতার চিহ্ন স্পষ্ট।
আমার দিকে তাকাল। একটা কাজ করতে পারবি।
আমি তখন ফ্যাল ফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে। মুখ থেকে কোনও কথা বের হচ্ছে না। হাতে তখনও রিভালবারটা ধরা। চক চক করছে বাঁটটা। দেশী মাল যে নয় তা দেখেই বুঝছি। ছোট্ট।
কম্বলটা তুলে অনিদার পা থেকে একটু ধুলো আমার কপালে লাগিয়ে দে।
প্রথমটা বুঝতে পারি নি, কি বলে ছেলেটা!
বুঝতে পারলি না?
আমি ছেলেটাকে শুধু দেখে যাচ্ছি।
কি হলো শুনতে পাচ্ছিস না। আবার ধমকাল।
তোতলে উঠলাম। আপনি নিন।
শুয়োরের বাচ্চাগুলোকে খতম না করে অনিদাকে ছোঁব না। তাহলে অনিদার ক্ষতি হবে।
ওর কথা শুনে আমি কেমন থ হয়ে গেলাম।
বিশ্বাস কর ছেলেটা আমাকে বাধ্য করালো কাজটা করাতে।
তারপর অনির পায়ের কাছে বসে নামাজ পড়লো।
উঠে দরজার কাছে গেল।
একবার অনির দিকে তাকাল।
অনিদা তোমাকে কথা দিয়ে গেলাম, নয় এসপার নয় ওসপার, জানিনা তোমার সঙ্গে আর এ জীবনে কোনওদিন দেখা হবে কিনা।
বেরিয়ে গেল।
নিস্তব্ধ ঘর।
আমি দাঁড়িয়ে আছি। ওইটুকু হেঁটে গিয়ে চেয়ারটায় বসবো। পায়ের সেই জোড়টুকু যেন হারিয়ে ফেলেছি। সারাটা শরীর কেমন যেন কাঁপছে।
আমি কিছুক্ষণ অনির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। গলাটা শুকিয়ে গেছে। দেয়াল ধরে ওর মাথার শিয়রে গেলাম। টেবিলের ওপর থেকে জলের জাগটা নিয়ে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। চেয়ারে থম মেরে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। আমি তখন পুরোপুরি বিধ্বস্ত।
বিশ্বাস কর ওই মুহূর্তে আমার কাছে যেন সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। হাত-পা সব ছেড়ে দিয়েছে।
ওকে চেকআপ করবো কি তখন নিজের চেকআপ যদি কেউ করে তাহলে ভালো হয়। তবু ওকে আস্তে আস্তে চেকআপ করলাম। সব কিছু হয়ে যাবার পর বটাকে ফোন করলাম।
ও এসেই বললো, তোকে এরকম ঝোড়ো কাকের মতো দেখাচ্ছে! কি হয়েছে?
কি বলবো ওকে, ডাঁহা মিথ্যে কথা বললাম।
রাতে ঘুম হয় নি তাই।
যা আমি আছি সামলে দিচ্ছি। একটু ঘুমিয়ে নে।
ফ্লোরে আসতেই নার্স মেয়েটি আমার হাতে একটা খাম দিল। খুলে দেখলাম আলতাফের চিঠি। কি হাতের লেখা। ঝরঝরে ইংরাজীতে। আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।
ওরা ভুল করেছে, আপনাকে চিনতে পারে নি। ওদের হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। প্লিজ অনিদাকে এই ঘটনার কথা কোনও দিন বলবেন না। এখন ওদের মাথার ঠিক নেই।
ঠিক মনে পড়ছে না। সেইদিন কিংবা তার দু-একদিনের মধ্যে সৎপাল রানা গুলি খেলো।
পরের দিন গুলি খেয়েছিল, ম্যাডাম শরীর খারাপ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। নীরু মিউ মিউ করে বললো।
তারমানে ছেলেটা আলতাফ নয়—চিকনা বললো।
কি জানি। অনি বলতে পারবে।
নীচে গিয়ে দেখলাম তুই অঘোরে ঘুমোচ্ছিস। তখন শরীর আর টানছে না, কোনওপ্রকারে তোর পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পরেছি। কনিষ্ক নীরুর দিকে তাকালো।
মিলির বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
ওটা কে ছিল অনি? বাসু বললো।
অর্জুন।
অর্জুন! যে ওপেন ডে লাইটে সবার সামনে এয়ারপোর্টে দুটোকে মারলো।
হ্যাঁ।
সৎপালকেও অর্জুন মেরেছে? নীরু বললো।
মাথা দোলালাম।
ছেলেটা এখনও বেঁচে আছে?
দুবাইতে আছে।
গেলো কি করে?
চিকনা হাসছে।
গেটে যেটা ছিল?
ওটা ঝিনুক। নার্সদের করিডরেও একজন ছিল। ওটা অভিমন্যু।
আলতাফ।
নিচে রিসেপসনে বসেছিল।
অনাদির ঝামেলার সময় অর্জুন কলকাতায় ছিল না? বাসু বললো।
ছিল। অনাদি আমাকে মারার জন্য যাদের বম্বে থেকে হায়ার করে নিয়ে এসেছিল, তাদেরই এয়ারপোর্টে সাঁটিয়ে দিয়ে চলে গেল। কাগজে তাদের ছবি দেখেছিস। ভাগ্য ভাল অনাদি ধারে কাছে ছিল না। তাহলে ওকেও মেরে দিত।
আলতাফ এদের কন্ট্রোল করে?
না।
তাহলে!
ভিকু আর আপ্পে বলে দুজন আছে। আলতাফ এদের ওপরে।
সেদিন ভিকু, আপ্পে ছিল না?
ছিল। গেটের বাইরে, এ্যাম্বুলেন্সে বসে ছিল।
পুরো টিম!
শুধু টিমের মাথাগুলো এসেছিল। ওরা আমার ওই সময়কার ভিডিও মোবাইলে তুলে রেখেছে।
স্ট্রইঞ্জ।
নীরুর দিকে তাকালাম।
আলতাফকে কে কন্ট্রোল করে?
হাসলাম।
বল না, একটু শুনি। নীরু মুখটা কাঁচুমাচু করে আমার দিকে তাকাল।
আফতাবভাই।
তেল কোম্পানির মালিক!
আমি হাসছি। এবার অঙ্কটা পরিষ্কার হলো। কনিষ্ক বললো।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/9RzGVTl
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment