কাজলদিঘী (১৩৮ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

১৩৮ নং কিস্তি
—————————

অনিকেত একটু নীচে ফোন মার কফি পাঠাক। ওর খাবারটাও আনতে বল। বটা বললো।

তোমরা এতো রাতে এসেছো, মাম্পিদের কোথায় রেখে এলে?

জ্যেঠিমনি, সুরোমাসি আছে। মিলি মাথা নিচু করলো।

আমাকে মোবাইলটা দিয়ে তোমরা সবাই বাড়ি চলে যাও।

তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।

সুরো।

সুরো আমার দিকে তাকাল।

কাকে কাকে খবর দিয়েছিস?

সুরো মাথা নিচু করে নিল।

মাসি, ইসলামভাই কোথায়?

বাড়িতে।

মাথা ঠিক হয়েছে?

মাসি মাথা দোলাল। হ্যাঁ না কিছুই বুঝলাম না।

তুই মাথা খারাপ করার মতো খবর দিবি তাতে কার মাথার ঠিক থাকে। কনিষ্ক বললো।

আমি কনিষ্কর দিকে তাকালাম।

খাবারের ট্রলি নিয়ে একটা কেবিনবয় ঘরে ঢুকলো।

ওখানে রেখে চলে যাও। কনিষ্ক বললো।

ছেলেটি ট্রে-টা রেখে বেরিয়ে গেল।

মিলি, টিনা, অদিতি উঠে এলো।

আমি দিই। নীপা বললো।

তুই বোস।

সুরো নিজের ফোনটা ব্যাগ থেকে বার করে তাকাল।

বুঝলাম ভাইব্রেসন মুডে ছিল।

ওকে আগে খাবারটা দাও। কনিষ্ক মিলির দিকে তাকাল।

বলো।….সুরো কথা বলছে।….অ্যাঁ….হ্যাঁ বসে আছে….তুমি কনিষ্কদার সাথে কথা বলো।

সুরো ফোনটা এগিয়ে দিল কনিষ্কর দিকে।

কে?

বাবা।

হ্যালো, হ্যাঁ দাদা বলুন।….হ্যাঁ ঠিক আছে….আপনাকে তো তখন বললাম….স্যারের এগুলো মুখস্ত, তাছাড়া স্যারের অভিজ্ঞতা আর আমাদের অভিজ্ঞতা….কাল ছেড়ে দেব….ধরুণ।

ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিল।

বলো।

এখন কেমন আছিস?

তারমানে! খারাপ কখন ছিলাম?

তাহলে কি মুখ দেখতে তোকে ওখানে নিয়ে গেছে।

এরা বে-ফালতু এখানে নিয়ে এসেছে। দুদিন ঘুম পারিয়ে রাখলো।

বেশি বকিস না।

আমার কাজের সব্বনাশ করে ছেড়ে দিল।

কেন ওরকম করিস বল। তোর জন্য সবাই কেন উদ্বেগে থাকবে?

আমি কাউকে উদ্বেগে রাখি নি?

তাহলে কি করছিস?

তোমরা সবাই একটুতে বাড়াবাড়ি করো।

অনিমেষদার গলায় স্পষ্টত উৎকন্ঠার সুর।

নে দিদির সঙ্গে কথা বল।

আবার ঝামেলা শুরু করে দিলে।

কনিষ্করা মুখ টিপে হাসছে।

হ্যালো।

বলো।

কেমন আছিস?

খারাপ থাকত যাব কেন, বলো কি বলতে চাইছো।

তোর নাকি শরীর খারপ হয়েছে?

এই দ্যাখো, কাঁদলে কথা বলবে কি করে। এই জন্য ওখান থেকে আসতে চাইনি।

বড়োমা কাঁদতে কাঁদতে কি বললো বুঝতে পারলাম না।

আরে বাবা কনিষ্করা একটু পাকা ছেলে হয়ে গেছে। ওরা ভেবে ফেলেছে ওরা ডাক্তারদাদা হয়ে গেছে। তুমি বিশ্বাস করো, আমার কিচ্ছু হয়নি। খিদে লেগেছিল। মাসিকে বললাম খেতে দাও। মাসি রান্নাঘর থেকে খাবার আনতে গেল, খিদের চোটে ঘুম পেয়ে গেল, ঘুমিয়ে পরলাম। ওরা ভয় পেয়ে এখানে নিয়ে এসেছে। আমি ঠিক আছি, কিচ্ছু হয়নি। বিশ্বাস করো।

মাসি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে, মুখে কাপর চাপা দিয়ে হাসছে।

ছোটো বললো ইসলামের সঙ্গে তোর গণ্ডগোল হয়েছে।

হ্যাঁ হাতাহাতি হয়েছে। ইসলামভাই আমাকে এ্যায়সা ঠ্যাঙান ঠ্যেঙিয়েছে, ঠ্যাং-হাত ভেঙে গেছে। তোমাকে এসব ফালতু খবর কে দেয় বলো?

ইসলাম যে বললো ও দোষ করেছে।

ঘেঁচু করেছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে ইসলামভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো।

মিছে কথা বলছিস।

ঠিক আছে, কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসবে, সামনা সামনি ভজিয়ে দেব, তাহলে হবে?

স্যুপের বাটি থেকে চামচে করে স্যুপ তুলে মুখে দিলাম।

কি যে তোমরা রান্না করো বুঝিনা—

কেন—

স্যুপটা দারুণ বানিয়েছে। তোমরা কেউ এরকম বানাতে পারবে না। ভাবছি এই রাঁধুনীটাকে বাড়িতে নিয়ে যাব, খালি স্যুপ খাওয়ার জন্য।

কনিষ্করা আমার কথা শুনে হাসে।

কনিষ্ক আস্তে করে বললো, সত্যি বাবা কতো পট্টিদিতে পারিস।

নিয়ে যাস। তুই দামিনীকে দে।

আর কারুর কথা বলার নেই?

তোর সঙ্গে সবাই ধর্মঘট করেছে।

বাঁচা গেছে।

মাসির হাতে ফোনটা দিলাম। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

যাও যাও, বাইরে গিয়ে কথা বলো। আমার সঙ্গে কথা বলে খুশী হয় নি।

মাসি হাসছে।

তাকিয়ে দেখি মিলি, অদিতি, নীপা ঘর থেকে হাওয়া।

আমি গো-গ্রাসে গিলছি। সত্যি খুব খিদে পেয়েছে।

ওরা কফি খাচ্ছে।

এই সবের জন্য তুই দায়ী। কনিষ্কর দিকে তাকালাম।

একথা বলছিস কেন? নীরু বললো।

কনিষ্ক হাসছে। উসমানটা কে?

সেটা আবার কে!

আকাশ থেকে পরলি?

যাকে চিনি না জানি না। ফট করে একটা নাম বলে দিলি, আমাকে তোর কথা মতো বলতে হবে আমি তাকে চিনি।

তোর নতুন ফোনের নম্বর সে পেল কি করে?

ফালতু কথা রাখ।

তুই পর্শু সকালের দিকে তাকে ফোন করিস নি?

বুঝলাম ধরা পরে গেছি। সত্যি ফোনটা বন্ধ করা হয় নি। স্যুপের বাটিতে চুমুক মারলাম।

শোন, শুকনো পুকুরে ঢিল ছুঁড়িস না। কিছু পাবি না।

তোর তো অনেক গর্ত তার কটাই বা আমরা জানি। মাঝে মাঝে একটু আধটু জেনে ফেলি।

তুই কি আমাকে বাজাচ্ছিস?

তোকে বাজাবো কেন। কনিষ্ক তোর কাছে শিশু।

ন্যুডুলসটা বেশ ভালো বানিয়েছে। স্যুপটা খেয়েই পেট ভরে গেল। এতটা খাই কি করে বল।

নীরু, বটা, অনিকেত হাসছে।

ওরা সবাই ভেতরে ঢুকলো।

আমি চামচে দিয়ে ন্যুডুলস তুলে মুখে দিলাম।

বুঝলাম এরই মধ্যে ইসারা হয়ে গেছে।

হ্যাঁরে ইসলামভাইয়ের খুন ব্যাপারটা কিরে? কনিষ্ক বললো।

কিসের খুন!

যেটা নিয়ে এত বিপত্তি।

খুন মানে জানিস না?

জানি।

কি বল?

রক্ত।

সহজ কথাটা বুঝতে এতো দেরি হয় কেন? তোদের কে ডাক্তারি সার্টিফিকেটটা দিল সেটা ভাবছি। তার সঙ্গে একবার দেখা করার দরকার।

ইসলামভাইয়ের খুন তোর কাছে কেন?

কবে হয়তো শরীর খারাপ হয়েছিল রক্তটক্ত দিয়েছিল। সব ভুলভাল বুঝলি।

সেই জন্য তুই যথা সময়ে তাকে ফিরিয়ে দিবি।

এই তো তোর বুদ্ধি খুলেছে।

আমি মিকি, আর মিলি হচ্ছে মাম্পি, তাই কিনা বল?

আমি কনিষ্কর দিকে তাকালাম। ব্যাটা সবার সামনে বেশ ভালো জাল ফেলেছে।

টিনারা মুখ টিপে হাসছে।

ওষুধ টোষুধ কিছু নেই? তোদের আবার নিয়ম টিয়ম না মানলে ঘন ঘন শরীর খারাপ হবে। আবার নার্সিংহোমে নিয়ে এসে ঢুকিয়ে দিবি।

কেন ওরকম করছো। পেট থেকে বার করতে পারবে না। সুরো বললো।

ইসলামভাইয়ের মুখ থেকে কিছু বার করতে পেরেছ। উল্টে না খেয়ে দেয়ে শরীর খারাপ করে বসে আছে। মিলি বললো।

ইসলামভাইয়ের শরীর খারাপ! ফোনটা দাও।

তোমাকে আর কথা বলতে হবে না। এখুনি কথা বলেছি।

তোমাদের বলায় কিছু হবে না।

দেনা, ও কথা বললে যদি মনটা ভালো হয়। মাসি বললো।

তোমাকে গ্যারেন্টি দিচ্ছি মাসি।

হান্ড্রেড পার্সেন। তুমি বাড়িতে গিয়ে দেখবে। নীরু বলে উঠলো।

ফ্যাচকাস না। দেব কাঁটাচামচ পেটে ঢুকিয়ে।

এ্যাটেমপ্ট টু মার্ডার কেসে ফাঁসিয়ে দেব।

সুবীররা আমাদের কথাবার্তা বেশ এনজয় করছে।

মিলি ফোনটা আমার হাতে দিল।

আমি ইসলামভাইকে ডায়াল করলাম। রিং বাজলো।

হ্যালো।

তুই কেমন আছিস! ইসলামভাইয়ের গলায় উৎকন্ঠা।

কনিষ্ক ইসারা করে বলেছে আমাদের শোনা। ভয়েজ অন করলাম।

ভালো আছি। এখন স্যুপ সহযোগে ন্যুডুলস পেঁদাচ্ছি। তুমি কি করছো?

বসে বসে টিভি দেখছি।

তুমি নাকি কেঁদে কেঁদে শরীর খারাপ করে ফেলেছো?

কে বললো?

কার কথা বলি বলো। এখানে যারা আছে সবাই বলছে।

ওরা সব বাজে বকছে।

মন ঠিক আছে?

আমার জন্য তোকে নার্সিংহোমে যেতে হলো। কান্না কান্না গলা।

এই দেখ আবার গণ্ডগোল শুরু করে দিয়েছ। তাহলে জিনিষ পাবে না।

ঠিক আছে কাঁদবো না।

কনিষ্করা আমার দিকে বিষ্ময় চোখে তাকিয়ে।

এতদিন অপেক্ষা করলে আর দিন সাতেক অপেক্ষা করতে পারছো না?

তুই বলেছিস।

তাহলে শুধু শুধু না খেয়ে দেয়ে শরীরটা গণ্ডগোল করছো কেন?

সেদিন কি যে হলো।

হলো বলে পাবে। না হলে পেতে?

তা ঠিক।

তোমার যা শক্তি। ভাবছিলাম তোমার চাপে হয়তো মরেই যাব।

যাঃ, আর কোনওদিন হবে না। তোকে কথা দিচ্ছি।

কার কার কাছে ঝাড় খেলে।

সবাই বকাবকি করলো।

তুমি এখনও সেরকমই রয়ে গেলে। পাঠান বলে কথা।

ইসলামভাই হাসলো। পাঠানরা সত্যি একটু মাথা মোটা হয়।

একচ্যুয়েলি তা নয়। ইন্ডিয়াতে এসে তোমরা মাথা মোটা হয়ে গেছে।

তোকে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। জানি আমার থেকে তুই বেশি পড়াশুনা করেছিস।

পাশে কি ইকবালভাই আছে?

হ্যাঁ।

দিব্যি আমার কথা শোনাচ্ছ?

না। তুই বিশ্বাস কর।

এবার একটা সত্যি কথা বলবে?

বল।

তোমার সোর্সটা কে?

বলা যাবে না।

তুমি না বললেও আমি জানি।

তোর মুখ থেকে শুনি। তুই তো সবার ভেতরটা দেখতে পাস।

বুঝলে এই পৃথিবীতে আমার একজন শত্রু তৈরি হয়েছে। সে আবার আমার ভীষণ মিত্র। তার সামনে যদি আমার সম্বন্ধে একটু বাজে কথা বলো সে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। কে বলো?

ঠিক বুঝলাম না।

একটু ভাবো?

আমি সেরকম কাউকে দেখছি না।

তোমাকে আর একটা ক্লু দিচ্ছি।

বল শুনি।

ভালো করে শুনবে। না বলতে পারলে টাইম বেরে যাবে।

ইসলামভাই হাসছে।

আমার সম্বন্ধে তার ভীষণ ইন্টারেস্ট। খুব মেরিটোরিয়াস। পছন্দের ব্যক্তি না হলে খুব একটা বেশি কথা বলে না। ভীষণ টেনাসিটি। শেখার আগ্রহ আছে। যেটা মাথায় ঢোকায় সেটার শেষ না দেখে চট করে থেমে যায় না। আমার সত্তরভাগ সে এরই মধ্যে জেনে ফেলেছে। বিপদ যে মাঝে মধ্যে ডেকে আনেনি তা নয়, তবে আমি সামলে দিয়েছি।

বিশ্বাস কর আমি তোর কথা ঠিক ধরতে পারছি না।

লাস্ট এবং শেষ ক্লু তোমাকে দিচ্ছি। আর দেব না।

বল শেষেরটা শুনি।

তুমি যে ব্যাপারটা জেনেছ বা বলতে পারি শুনেছো। সে তুমি যার মুখ থেকেই শুনে থাক। মোদ্দা কথা আমি যার কথা তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি, যখন ঘটনাটা ঘটেছে বলে তুমি মনে করছো, তখন সে এই পৃথিবীর মুখ দেখে নি।

ব্যাপারটা শুধু মাত্র তিনজন জানে। তার মধ্যে দুজন গেইজ করেছে। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ সত্য কিনা তারা ঘুণাক্ষরেও জানে না, জানতোও না। তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যে আমি একজন। এই তৃতীয় ব্যক্তির একটা বদ অভ্যাস আছে ডাইরি লেখার। সে তার নিত্য দিনের খুঁটি নাটি লিখে রাখতো। কেউ না কেউ সেটা পড়ে ফেলেছে। সে তোমাকে ব্যাপারটা উৎসাহের বসে বলে ফেলেছে।

বিশ্বাস কর মামনি আমাকে বলে নি। এমনকী তনু পর্যন্ত কিছু জানে না।

এটা তুমি বুঝেছো, কিন্তু ওরা কিছু না কিছু জানে।

সেটা বুঝেছি।

তুমি তোমার জিনিষ ফেরত পাবে। কথা যখন দিয়েছি, নড়চড় হবে না। আমার পাওনা গণ্ডার ব্যাপারটা সেটেল করো।

তুই যা বলবি তাই দেব। যদি বলিস আমার মাথাটা কেটে তোর পায়ে রাখতে, তাই করবো।

তারপর ছোটোমাকে কে সামলাবে। তুমি মাথাটা আমার পায়ে দিয়ে ড্যাং ড্যাং করে কেটে পরলে।

ইসলামভাই হাসছে।

তুই আমাকে পাজেল করে দিচ্ছিস।

তুমিও আমাকে একসময় বহুত ভুগিয়েছ, মনে পরে?

আমি অন্যায় করেছি। তোর কাছে ক্ষমা চাইছি।

ক্ষমা-টমায় কিছু হবে না বুঝেছ। আমি কয়েকটা জিনিষ চাইব দিতে হবে।

আমি দেব। তুই যা চাইবি তাই দেব। তুই যদি বলিস ভজুর মতো আমাকে সারাজীবন থাকতে হবে, আমি তাই করবো।

সবার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যাচ্ছে। যেন নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। কি এমন জিনিষ যার জন্য ইসলামভাইয়ের এতো কাকুতি মিনতি!

তোমাকে জিনিষটা ফিরিয়ে দেবার পর, আমাকে আবার ফিরিয়ে দিতে হবে।

তাই দেব। তুই শুধু একবার আমাকে দে। আমি প্রয়শ্চিত্ত করি।

আবার কিন্তু তুমি ইমোশন্যাল হয়ে পড়ছো। তুমি ভালো করে জান, আমার কাছে বাস্তবটাই সব।

ঠিক আছে আর বলবো না।

আর একটা জিনিষ চাইবো।

বল।

কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে, চা খেয়ে, আমার কাছে চলে আসবে। তুমি আমাকে ড্রাইভ করে বাড়ি নিয়ে যাবে। সেই গাড়িতে তুমি আমি ছাড়া কেউ থাকবে না।

আমি এখুনি যাচ্ছি।

কাল সকালে।

ঠিক আছে। কটায় যাব বল।

ঠিক নটার সময়।

আমি যাব।

মন শান্তি।

শান্তি।

নামটা কিন্তু কালকে গাড়িতে বসে জানবো।

ইসলামভাই খুব জোড়ে হেসেউঠলো।

রাখি।

রাখ।

আমি ফোনটা বন্ধ করলাম। মিলি দেখলাম নিজের ফোনটাও অফ করছে।

তুমি কাকে ফোন করছিলে। কই তোমার গলা শুনতে পেলাম না।

ফোন করি নি। শোনাচ্ছিলাম।

দেখছো, যেখানেই আমি একটু বুদ্ধি এ্যাপ্লাই করতে গড়িমসি করেছি, সেখানেই সবাই জল মিশিয়ে দিয়েছে। এই মুহূর্তে তুমি জল মেশালে।

বেশ করেছি, মিত্রাদিকে হিসাব দেবে।

সব মিত্রার চামচে হয়েছো।

কনিষ্ক হাসছে।

আজকাল তোর ওপর দেখছি সবাই খবরদারি করছে।

ইসলামভাইয়ের মতো আটকে দেব। ব্যাশ তখন দৌড়ে কুল কিনারা পাবে না।

দাও না দেখি, মিত্রাদি আছে না। নাহলে মাম্পি, মিকি। দুটোকে লেলিয়ে দেব। সব রাগ গলে জল হয়ে যাবে। মিলি বললো।

তারমানে এরাও তোর দুর্বল জায়গাগুলো খুঁজে পেয়ে গেছে।

কনিষ্কর দিকে তাকিয়ে আমি হাসছি।

এবার তোমরা বাড়ি চলে যাও।

কেন তোমার খোঁজ খবর নিতে অসুবিধে হচ্ছে। সুরো কট কট করে উঠলো।

কিরে আমাকে একটু কফি দে। নিজেরা বেশ খেলি। নীরুর দিকে তাকালাম।

ওষুধ দিচ্ছি খেয়ে ঘুমিয়ে পর।

সুরোর ফোনটা টিঁ টিঁ করে বাজলো। কানে তুললো।

বলো…এখান থেকে এখনও বের হইনি…দাঁড়াও এখনও গল্প অনেক বাকি, একটু শুনি…বাবু এখন কফি চাইছেন…দুদিন ঘুমিয়েছে শক্তি সঞ্চয় করেছে…কথা বলবে… তোমরা কাল বিকেলের ফ্লাইটে উঠছো…তারমানে পর্শুদিন চলে আসবে…ঠিক আছে রাখো।

কাল বিকেলের ফ্লাইটে মানে! আমি সুরোর দিকে তাকালাম।

তোমার জন্য টিকিটটা দুদিন আগে এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

কোন ফ্লাইটে আসবে?

ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স, একটু ঘুরে আসবে। ঘণ্টা চারেক সময় বেশি লাগবে, তাতেই আসছে।

বুঝেছি যা। সবকটা একবারে যা তা।

মুখ ভেটকে বসে রইলাম।

নীরু একটা কাপে গরম দুধ ঢেলে, একটা ছোট্ট কফির পাউচ কেটে ঢেলে দিল।

নে কফি খা, মাথা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।

ওরা সবাই উঠে দাঁড়িয়েছে।

অনিদা আসছি। টিনা বললো।

এসো। আজ বাড়ি যেও না, এই বাড়িতে থেকে যাবে।

টিনা হাসছে।

ছেলে কোথায়?

হস্টেলে।

আচ্ছা যাও।

ওরা সবাই চলে গেল। চিকনা রয়ে গেল।

অনেকক্ষণ কপচেছিস, এবার একটু কাজ করতে দে। নীরু এগিয়ে এলো।

কি করবি?

একটু প্রেসারটা চেক করবো।

ওই ঘড়িটা দে?

ওতে হবে না।

ফুস ফুস।

নীরু হাসছে।

আমার হাতে ফিতে বাঁধলো।

তুই আজকাল একটুতে মাথা গরম করে ফেলছিস। আগে কিন্তু এরকম ছিলি না।

নীরুর দিকে তাকালাম।

সকলকে তোর মতো হতে হবে এটা ভাবিস কেন।

অন্তত পক্ষে মিনিমাম টুকু আশা করতে পারি?

সেটা তুই পাস।

কোন দরকার ছিল ওখানে খবর দেওয়ার।

সেটা এখানে নিয়ে আসার পর বুঝলাম। মেয়েদের মন। বুঝিস তো। এ্যাম্বুলেন্স দেখে ওরা স্বভাবতই একটু ঘাবড়ে গেছিল। তখন যা হবার হয়ে গেছে।

আমি একটা প্রশ্ন করবো, তার সঠিক উত্তর তোরা দিবি?

জানা থাকলে অবশ্য দেব।

নীরু প্রেসার দেখছে আর কথা বলে চলেছে।

আমার ঠিক কি হয়েছিল বলতে পারিস?

তুই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছিলি।

কেন!

এর সঠিক ব্যাখ্যা আমাদের ডাক্তারী শাস্ত্রে নেই। তাহলে হয়তো তোকে বলতে পারতাম। আমরা যা করেছি পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করে।

কিরকম সেটা বল?

এই যে তুই তখন বললি তোর খুব খিদে পেয়েছিল তুই মাসির কাছে খেতে চেয়েছিলি।

তুই মাসিকে জিজ্ঞাসা করিস, আমি একটুও মিথ্যে কথা বলছি না।

আবার এমনটাও হতে পারে। তোর মাথার শেলাই ওপর থেকে সব শুকিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও ভেতর থেকে শোকায় নি। এটা মিনিমাম ওয়ান ইয়ার সময় লাগে। বেশিও লাগতে পারে। মাথাটা ভীষণ সেন্সেটিভ জায়গা এটা মানিস।

অবশ্যই মানি।

আমরা যে টুকু গল্প শুনেছি ইসলামভাই তোকে জাপ্টে ধরে শূন্যে তুলে বন বন করে কয়েক পাক ঘুরেছে।

ঠিক তাই।

হয়তো বেটক্কর কোথায় লেগে যেতে পারে। ভেতর ভেতর সেটার হয়তো কোনও সমস্যা হয়েছে তাই তুই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারিস।

আবার মাথায় চোট লাগলে আমরা সব সময় লক্ষ করি সে বমি করছে কিনা, যদি তা করে তাহলে বুঝবো ইন্টারন্যাল কোথাও হেমারেজ হচ্ছে।

আবার তুই সেদিন বলেছিস তোর হঠাৎ কেমন যেন শরীর খারাপ লাগতে শুরু করলো। তুই চিকনাকে বললি বাড়ি যাব। তুই বাড়ি ফিরে এলি, একটু খাবার খেয়ে শুয়ে পরলি। তোর তখন প্রেসারটা হাই হয়েগেছিল। কেন?

তুই সেদিন যাদের সঙ্গে বসেছিলি তারা যে সব কথা বার্তা বলেছে তুই সহ্য করতে পারিস নি। তুই যদি ফিট থাকতিস, তাহলে হয়তো তোর এই সমস্যাটা আসতো না, যেহেতু তুই আনফিট, তোর সমস্যা হলো।

সারা জীবন শরীরটার ওপর অনেক অত্যাচার করেছিস। এটা অস্বীকার করতে পারবি না। আমরা চারজনেই তার সাক্ষী। হয়তো চিকনাও। এখন বয়স হয়েছে। একটু আধটু সমস্যা হবেই।

আমরা তোকে এখানে নিয়ে এসেছি। এখানে করণীয় যা যা করেছি, বাড়িতে থাকলে সেটা হতো না। থরো চেকআপ করেছি। দেখেছি কোথাও কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছে কিনা।

স্যারকে ফোন করেছি। তোকে যিনি অপারেশন করেছিলেন তাঁকে খবর পাঠিয়েছি। তিনি ভেলোর থেকে যেমন যেমন ইনস্ট্রাকশন দিয়েছেন, তাই তাই করেছি।

তাঁরা বলেছিলেন ওকে পারলে এখন ঘুম পারিয়ে রাখ। যে ভাবে ওষুধের ডোজ ঠিক করে দিয়েছেন, সেই ভাবে তোকে দিয়েছি।

আমি নীরুর দিকে তাকিয়ে রয়েছি।

এমন কথাও তারা বলেছিলেন তুই হয়তো আজ রাতে কিংবা কাল সকালে এমনিই উঠে পরবি। যদি তোর মধ্যে কোনও এ্যাবনর্মালিটি ধরা না পরে, তাহলে তুই ফিট। যদি এ্যাবনর্মালিটি ধরা পরে তাহলে অন্য ট্রিটমেন্ট।

কতোলক্ষ নার্ভ আমাদের শরীরে আছে। সব গিয়ে আমাদের মাথায় মিশেছে। তার কোনটা কখন কি সমস্যা করে বোঝা মুস্কিল। এখনও সব আবিষ্কার হয় নি।

তুই মাঝে মাঝে বলিস না। তোরা রোগ নির্নয় করতে পারিস আর না পারিস ভাইরাস কথাটা খুব ভালো রপ্ত করেছিস।

হেসে ফেললাম।

দিবাকরকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছিস?

নীরুর মুখের দিকে তাকালাম। আমার চোখ-মুখ দেখে ও বুঝতে পেরে গেছে।

অন্য কিছু ভেবে বলি নি। হঠাৎ ওর কথাটা মনে পরে গেল। তাই জিজ্ঞাসা করলাম।

বাঁচিয়ে রেখেছি।

কেন।

অনাদির সঙ্গে শেষ বোঝাপড়াটার জন্য ওকে প্রয়োজন। ওকে বাঁচিয়ে না রাখলে অনাদি চিরকালের জন্য খালাস পেয়ে যাবে। ও আমার ট্রাম্পকার্ড।

কোথায় রেখেছিস?

অন্ধ্রপ্রদেশে।

মিঃ মারানের কাছে?

মাথা দোলালাম।

গোয়ার নার্সিংহোমটা মারান কিনেছে?

মাথা দোলালাম। হ্যাঁ।

দেখাশুন করছে কে?

অন্ধ্রের টিম।

তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, সত্যি কথা বলবি—

বল।

ইসলামভাই-এর কেশটা কি। ভাষা ভাষা বললি, ঠিক বুঝতে পারলাম না।

একটু কফি খাওয়া, বলবো।

সবাই কেমন নড়ে চড়ে বসলো।

কনিষ্ক একটু কফি কর সবার জন্য, আমি বাথরুম থেকে আসছি।

নীরু বাথরুমে চলেগেল।

কনিষ্ক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

হাসছিস কেন?

তোর মুডটা মনে হয় খুব ভালো আছে।

আমারও কারুর না কারুর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে। আমার কথা বলার কে আছে বল? কে বুঝবে আমার কথা। আগে নিজে থেকে বলতে চাইতাম, কেউ শুনতো না। আজ নিজে থেকে বলতে চাই না। কিন্তু সবাই শুনতে চায়। ভারি অদ্ভূত এই দুনিয়াটা। একসময় কোনও কাজ ছিল না, কাজ খুঁজেছি। যে কাজ পেয়েছি আঁকড়ে ধরেছি। তাতে দেখলাম পাকে পাকে হাজার লোকের সঙ্গে আমি জড়িয়ে পরেছি। আস্তে আস্তে সব বন্ধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি কই। যেন মনে হচ্ছে আরও জড়িয়ে পরছি। একদিক সামাল দিতে গেলে, আর একদিক সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

অনিকেত, বটা, চিকনা আমার দিকে তাকিয়ে।

তুই তোর মতো করে বলিস তাই শুনতে চায় না। যারা তোর কথা শোনে তাদের মতো করে বল। তাহলেই দেখবি সবাই শুনবে। কনিষ্ক বললো।

ওটাই পারি না।

এতো পারিস ওটাও চেষ্টা করলে পারবি।

কেন জানিনা মনে হয় সবসময় সকলকে যেন জ্ঞান দিচ্ছি। সবাই আমার কথা সেই ভাবে নেয়।

নীরু বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো।

তুই এরকম ভাবিস কেন? কনিষ্ক কফি তৈরি করতে করতে বললো।

আমি মানুষের চোখ দেখে বুঝতে পারি। তারা আমার কথা কে কি ভাবে নিচ্ছে।

সে অভিজ্ঞতা তোর আছে। আমাদের নেই।

ঠিক অভিজ্ঞতা বললে ভুল হবে, এতো মানুষ জীবনে ঘেঁটেছি—

তা ঠিক।

প্রফেসারেরও কোনও ছাত্রীকে ভালো লাগতে পারে, ভালোবাসতে পারে, আফটার অল সে মানুষ।

আর একবার বল। নীরু বললো।

কনিষ্ক সবাইকে কফি নিয়ে নিতে বললো, আমাকে এগিয়ে দিল।

আমি আবার রিপিড করলাম।

হঠাৎ প্রফেসার ছাত্রীর ব্যাপারটা এলো কেন?

বলতে পারবো না। হঠাৎ মনে হলো তাই বললাম। তবে তোকে একটা উদাহরণ দিই।

বল শুনি।

একটা বেশ বড়ো গুজব আছে, রবীন্দ্রনাথ তার শেষ বয়সে লেডি রাণু মুখার্জীকে প্রেম করতেন। এটা তোরা বিশ্বাস করিস?

গুজব না, সত্যি। এটা সবাই বলে। এই বিষয়ে কাগজে দু-চারটে চিঠিও ছাপা হয়েছিল। দেখেছি। বিশ্বাস না করার কিছু নেই। কনিষ্ক বললো।

এই ঘটনা যদি রবীন্দ্রনাথ না ঘটাতেন, তাহলে রক্তকরবী লিখতে পারতেন না।

স্ট্রইঞ্জ। রবীন্দ্রনাথ ঘটিয়েছেন?

এটা আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অনুধাবন শক্তি দিয়ে বুঝেছি। কেউ কোথাও লেখেন নি।

কি রকম বল।

রক্তকরবী তোরা পড়েছিস।

পড়েছি। নীরু বললো। একমাত্র চিকনা বাদে সবাই মাথা দোলাল।

দেখ সেখানে রাজা একটা শক্তি, বলতে পারিস পাওয়ার, সে অন্ধকারে থাকে বা তার প্রটোকল তাকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।

মাটির কাছা কাছি যে সব মানুষ আছে। তাদের সঠিক হদিস তার কাছে নেই। তিনি তাদের চোখেও দেখেন না। তিনি কারুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। তার যতো শলা পরামর্শ মরা ব্যাঙের সঙ্গে। অর্থাৎ তিনি নিষ্প্রাণ। এটা মনে করতে পারি কি?

ঠিক।

নন্দিনী একটা প্রাণোচ্ছল গ্রামের মেয়, সহজ, সরল, নিষ্পাপ। মাঠেঘাটে হেসে খেলে বেড়ায়। তার প্রেমিক রঞ্জন। সারা বইটার কোথাও তুই রঞ্জনের দেখা পেয়েছিস?

বার বার নন্দিনী, রঞ্জনের কথা বলেছে। কিন্তু দৃশ্যায়ণের পর দৃশ্যায়ণ রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন কোথাও তিনি রঞ্জনকে পাঠক কিংবা দর্শকের সামনে উপস্থিত করেন নি। বার বার নন্দিনীর মুখ দিয়ে রঞ্জনের কথা উল্লেখ করিয়েছেন। নীরু বললো।

এমনকি রবীন্দ্রনাথ তার কোনও ডায়লগ রঞ্জনের মুখে বসান নি। শুধু নন্দিনীর মুখ দিয়ে বলিয়েছেন। রঞ্জন এই, রঞ্জন তাই। নীরুর কথার প্রতি উত্তরে আমি বললাম।

ঠিক বলেছিস।

কেন?

এটা ভেবে দেখি নি।

দেখ প্রাণের আনন্দকে তুই কখনও চার দেওয়ালের মধ্যে বন্ধ রাখতে পারবি না। ওটা মাঠে ঘাটে সব সময় লুটোপুটি খাবেই খাবে।

একটু ভেবে দেখলে এখন মনে হচ্ছে তুই ঠিক কথা বলছিস।

আমি বলছি না সবাই বলবে। যাদের একটু বোধ বুদ্ধি আছে।

রঞ্জন এখানে প্রাণের আনন্দ। নন্দিনী তার সাথী। রাজার সঙ্গে রঞ্জনের যুদ্ধ। মেকি আনন্দের সঙ্গে, প্রাণের আনন্দের যুদ্ধ। নন্দিনী তার মিডিয়েটর।

নন্দিনী মেকি আনন্দের জায়গায় রাজার মনে প্রাণের আনন্দ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

রাজা প্রাণের আনন্দের ডাকে অন্ধকার থেকে আলোয় এসেছে। এখানেই নন্দিনীর স্বার্থকতা। রাজা নতুন করে জগতটাকে দেখতে শিখলো, জানতে পারলো। বুঝতে পারলো, জীবনটাকে এতদিন কিরকম ভাবে তিনি তিলে তিলে নষ্ট করেছেন।

সেখানে লেডি রাণুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রেমের সম্পর্ক থাকল না তা প্রতিষ্ঠা হলো নাকি!

নীরুর মুখের দিকে তাকালাম।

খুব সূক্ষ্ম ব্যাপার।

কি করকম?

তুই একটু আগে বললি না। তোদের ডাক্তারী শাস্ত্রে এখনও সব আবিষ্কার হয় নি।

নীরু হাসলো।

মনের ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম। ফ্রয়েড সারা জীবন মন নিয়ে চর্চা করেছেন। ফ্রয়েড কেন আরও অনেক দার্শনিক ব্যাপারাটা নিয়ে লক্ষ লক্ষ পাতা লিখেছেন, মন কিন্তু প্রকৃতির মতো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সে তার আপন খেয়ালে চলে। আমরা এ্যাজামশান করি। সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি না। যদিও বা সিদ্ধান্তে পৌঁছই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা ভুল প্রমাণিত হয়।

একটু পেছিয়ে যাই। একবারে রবীন্দ্রনাথের ভরা যৌবনে। রবীন্দ্রনাথের জীবনে প্রথম ভালোবাসা তার বৌদি কাদম্বিনীদেবী। তবে যে যাই বলুক সেটা শরীরী ভালোবাসার পর্যায়ে কখনও যায় নি।

কোনও একটা গোপন কারনে কাদম্বিনী আত্মহত্যা করেছেন। একটু লক্ষ করলে দেখতে পাবি কাদম্বিনীর ঘরটা ছিল ঠাকুর বাড়ির ছাদে। কেন?

সেখানে একমাত্র রবীন্দ্রনাথই যেতেন, তার সঙ্গেই তার যত কথা। সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।

রবীন্দ্রনাথ কাদম্বিনীর মৃত্যু ঠিক সহ্য করতে পারেন নি। ভীষণ আঘাত পেয়েছিলেন। একটা কথা মাথায় রাখবি, যন্ত্রণার মধ্যেই সৃষ্টির অপার আনন্দ লুকিয়ে থাকে। মা শিশুকে জন্ম দেওয়ার সময় যেমন যন্ত্রণা পায় ঠিক তেমন।

রবীন্দ্রনাথের যা কিছু ভালোভালো সৃষ্টি কাদম্বিনী মারা যাওয়ার পর।

এতোটা ভেবে দেখি নি।

একটু দেখিস, দেখবি আমার অনুমান ঠিক। আমি ভুল বলছি না।

রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় যখন থাকতেন তখন তিনি পুরো বৈষয়িক জীবনযাপন করতেন। কিন্তু যখন শান্তিনিকেতনে যেতেন তখন তিনি একবারে অন্য মানুষ।

তোর কথায় নন্দিনী। কনিষ্ক বললো।

হাঁসলাম।

খাঁচার পাখিকে বনে ছেড়ে দিলে সে যেমন দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ডানা মেলে উড়তে থাকে ঠিক তেমনি রবীন্দ্রনাথ আপন মনে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেরাতেন।

কিন্তু শেষের দিকে যত নাম করেছেন, তত প্রটোকলের মধ্যে তিনি বাঁধা পড়েছেন। তার স্বাধীন চলা ফেরার ওপর নজরদারি বসেছে। প্রাণের যে আনন্দটুকু তাঁর ছিল সেটাও প্রটোকলের তাগিদে আস্তে আস্তে উবে গেল। এ মনের ব্যাথা তিনি কাকে জানাবেন। তাঁর মনটা যে যাযাবর।

রাণু মুখার্জীকে তাঁর ভালো লাগলো। আমার সেই প্রফেসারের ছাত্রীকে ভালোলাগা।

নীরু হাসলো।

ম্যাচুয়র্ড ভালোবাসার সঙ্গে আনম্যাচুয়র্ড ভালোবাসার মিলন।

একটা লোহার খাঁচায় বন্দী ভালোবাসা, আর একটা মাঠে-ঘাটে লুটোপুটি খাচ্ছে।

একাশি বছরে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের চোখে ষোলো বছরটা তখন ফিকে হয়ে গেছে। তাকে ফিরে পেতে হবে। কি করে পাবে! সম্ভব নয়। ষোল বছরের অনুভূতি পেতে গেলে সেরকম একজনকে দরকার। তায় তিনি আবার রবীন্দ্রনাথ। অনেক বাধা।

কোনও এক সূত্রে লেডি রাণু শান্তিনিকেতনে এলেন।

লেডি রাণুর তখন ওইরকম বয়স। স্ব-জ্ঞানে মাধ্যমটা তিনি হাতছাড়া করলেন না। সে এক ভারি মজা। আবার প্রবল যন্ত্রণা।

দিস্তে দিস্তে চিঠি লিখলেন লেডি রাণুকে। তার উত্তরও আস্তে লাগল। এক নতুন জগতের ধীরে ধীরে উন্মোচন হচ্ছে। একটা নতুন কিছু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো।

ম্যাচুয়র্ড মানুষ আন-ম্যাচুয়র্ডকে পাওয়ার প্রবল তাগিদ। যত তাগিদ বাড়ে, তত যন্ত্রণা বাড়ে। ধীরে ধীরে জন্মনিল রক্তকরবী। রবীন্দ্রনাথের কলম থেকে একদিন তা ভূমিষ্ঠও হল।

ওরা হাসছে।

তুই যদি প্রফেসার হোস তাহলে তোর সেই ভালোবাসার ছাত্রীটি কে? নীরু বললো।

কেন মাম্পি।

সবাই হেসে উঠলো।

তোকে সাইকিয়াটিস্ট দেখাতে হবে। অনিকেত বললো।

দেখবি সেই ডাক্তারই আমার পেসেন্ট হয়ে যাবে।

আবার কাওতালি শুরু করলি। একটু সিরিয়াস হ’ না। কনিষ্ক বললো।

সত্যি বলছি।

কেন বল?

তুই কোনওদিন চেষ্টা করলে মাম্পির জায়গায় ফিরে যেতে পারবি?

সম্ভব নাকি।

আচ্ছা তোর ওই বয়সের কোনও কথা মনে আছে।

একবারে ফর্সা।

তোর ইচ্ছে করে না। ওই বয়সে আমি কি করতাম কেমন ছিলাম, তখন আমি দিনরাত কি ভাবতাম? তখন কি ভাবতিস আমি ডাক্তার হবো? আমার নামডাক হবে….।

কখনই না।

তুই ভেবে নে তুই মিকি। তুই মাম্পির প্রেমিক। ঠিক এই এ্যাঙ্গেল থেকে তুই মাম্পির সঙ্গে কথা বল। দেখবি মাম্পি তোকে কতো মনের কথা বলবে। যা তুই কল্পনাও করতে পারবি না। ওদেরও অনেক কিছু বলার আছে। শোনার লোক কথায়। তোরা সেই ভাবে কখনও ওদের কথা শুনেছিস?

নীরু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।

এইবার সেই মাধ্যমটা ধরে নিজেকে সার্চ কর, দেখবি তুই তোর চার বছর টাকে একটু একটু করে খুঁজে পাচ্ছিস, জানতে পারছিস, একবার চেষ্টা করে দেখ, ভারি মজার জগৎ। তখন তোকে কেউ চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী করে রাখলেও তোর কোনও অসুবিধা হবে না।

নীরু হাসছে।

একচ্যুয়েলি তুই এখন যেগুলো মেমোরাইজ করে রাখিস, তার তলায় ওটা চাপা পড়ে গেছে।

আমরা মনে হয় একচ্যুয়াল জায়গা থেকে সরে গেছি। কনিষ্ক বললো।

একেবারে না। ইসলামভাইয়ের অবস্থা এখন ঠিক তাই। মায়া-মমতা-বন্ধন এই তিনটে আমাদের প্রাণের সঙ্গে অঙ্গাগি ভাবে জড়িত।

তুই যদি এই তিনটে শব্দকে নিয়ে নাড়াচাড়া করিস, দেখবি ভালোবাসাটা সেখানে সূক্ষ্মভাবে জড়িয়ে আছে। ইসলামভাই এখন তার পাগল। আর সেই ভালোবাসাকে আমি শিশিতে ভরে আলমাড়িতে তুলে রেখেছি।

আবার সকলের চোখে বিষ্ময়।

চিকনা মুচকি মুচকি হাসছে।

বুঝতে পারলি না—

কনিষ্ক, বটা, অনিকেত মাথা দোলাচ্ছে।

ইসলামভাই তোদের কিছু বলেছে।

আসলে তো বলবে, আসেই নি।

আমাকে দেখতে আসে নি!

শুধু কপাল চাপরাচ্ছে বাড়িতে বসে। সেদিন কোথায় গেছিল ফিরে আসার পর যখন শুনেছে তোকে নিয়ে নার্সিং হোমে এসেছি। সেই যে থম মেরে বসে গেল, আর বাড়ি থেকেই বেরোয় নি।

শুধু এক কথা, অনির কিছু হলে আমি কি করে দিদির কাছে মুখ দেখাব। খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিয়েছে। প্রেসার হাই হয়ে গেছে। বটা গিয়ে প্রত্যেক দিন একটা করে ইঞ্জেকসন দিয়ে আসছে। তাকে নিয়ে আবিদ, রতন, নেপলা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। কার মনে শান্তি আছে।

মেরিনাদির নাম শুনেছিস?

ওরা সবাই চমকে আমার দিকে তাকাল। ব্যাপারটা এরকম অনি কি বলতে চায়!

মাসির মুখ থেকে শুনেছি। কনিষ্ক আস্তে করে বললো।

ইসলামভাই একসময় মেরিনাদির বাঁধা কাস্টমার ছিল। শুধু বাঁধা কাস্টমার বললে ভুল হবে মেরিনাদির ঘরে অন্য কেউ ঢুকতে সাহস পেত না।

তখন কলকাতা শহরের বুকে ইসলামভাইয়ের এতটাই দাপট। আমাদের তথাকথিত সমাজের টপ টপ মাথারা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে ইসলামভাইকে পুষতো। বলতে পারিস ইসলামভাই যার, কলকাতার অর্ধেক সম্পত্তি তার। তার মধ্যে মল, রাজনাথ, ডা. ব্যানার্জীর মতো স্বনামধন্য ব্যক্তিরা ছিলেন।

আমি যেদিন প্রথম ওই বিল্ডিংয়ের চিলেকোঠার একটা ঘরে থাকার অনুমতি পেলাম। সেদিন আমার ঘরে প্রথম অতিথি ছিল মেরিনাদি। স্বাভাবিক ভেবে মেরিনাদির সঙ্গে আমার একটা আলাদা সম্পর্ক তৈরি হলো। ধীরে ধীরে সেটা ভাই-বোনের সম্পর্কে পরিণত হলো।

মেরিনাদি তখন ওই বিল্ডিংয়ের টপ রেটেড মেয়ে।

যার ঘরে একমাত্র ইসলামভাইয়ের পা রাখার অনুমতি আছে।

তখন মাসি কিন্তু পাক্কা ব্যবসায়ী। মেরিনাদির কাছ থেকেও ঘর ভাড়া নেয়। একদিনও কেউ ফাঁকি দিতে পারে না। মাসির সেই দাপট তোরা চোখে দেখিস নি।

মেরিনাদির সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিয়ে তখন অনেক কিছু হয়েছে।

সে আর এক কাহিনী। কিন্তু মেরিনাদি আমাকে আশ্রয় দিত। তাই কেউ কিছু বলতে পারতো না। ব্যাপারটা এরকম যে গরু দুধ দেয় তার লাথি মাসিকে খেতে হতো।

মেরিনাদির সঙ্গে ইসলামভাইয়ের রাখেল আর বাবুর সম্পর্ক আস্তে আস্তে ভালোবাসায় পরিণত হলো। ইসলামভাই প্রথমে আমাকে ভুল বুঝেছিল, পরে অবশ্য ব্যাপারটা নিয়ে আর জল ঘোলা করে নি। মেরিনাদি আমাকে এসে সব বলতো।

একদিন চিলেকোঠার ছাদে পড়াশুনা করছি। ভজু কুত্তার মতো আমারে পাশে কুণ্ডলি পাকিয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। রাত তখন দুটো। মেরিনাদি আমার ঘরে এলো।

কিগো এই সময়! যাও যাও মাসি দেখতে পেলে আমাকে দূর করে দেবে। তুমি তো জানো দিদি, কলকাতায় আমার থাকার জায়গা নেই। তোমার জন্য এটুকুও যাবে।

মাসি দূর করে দিলেই হলো। ওকেই সাবার করে দেব।

আমার চোখ বড়ো বড়ো।

ইসলামভাই কোথায়?

কাজ শেষ, মাল খেয়ে বেঁহুস হয়ে ঘুমচ্ছে।

জীবনটা ভারি অদ্ভূত বুঝলি কনিষ্ক, এদের এই প্রেমটা এখনও আমাকে ভীষণ নাড়া দেয়। সময় সুযোগ পেলেই ভাবতে বসি। তল খুঁজে পাই না।

ইসলামভাই বেঁহুস কথাটা আমার কানে খটকা লাগলো। মেরিনাদিকে কিছু বললাম না।

তারাতারি কথা শেষ করো। মাসিকে সত্যি আমার বেদম ভয়।

আমি বলে এসেছি। একবারে বিরক্ত করবে না। ওপরেও যাবে না। আমি একটু অনির সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। হাতে নোট গুঁজে দিয়েছি। তোর ভয় নেই।

বলো কি কথা?

ভজুটা জেগে আছে না ঘুমচ্ছে।

ঘুমচ্ছে।

ছাদে আয়। খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে কথা বলবো।

বাধ্যহয়ে বইখাতা ছেড়ে উঠলাম। চিলেকোঠা থেকে খোলা আকাশের নীচে।

আজ তোকে যা বলবো মরার আগে তুই কাউকে বলবি না, প্রতিজ্ঞা কর।

মেরিনাদির চোখমুখটা ভালো লাগলো না। ভয়ে হোক ভালোবাসায় হোক বলে ফেললাম, ঠিক আছে কাউকে বলবো না।

তোর ইসলামভাই পুলিশের তাড়া খেয়েছে। রাতে কে যেন মার্ডার হয়েছে। কালকে থেকে কিছু দিনের জন্য গা ঢাকা দেবে। আমাকে কিছু টাকা দিয়েছে। বলেছে আমার খরচ সময়মতো কারুর হাতে পাঠিয়ে দেবে। মাসি ছারনে বালা পার্টি নয় আমার ঘরে ঠিক লোক ঢোকাবে। আমি তা চাই না।

মেরিনদির কথা আমার মাথায় ঢুকছে না। আমি ওর মুখের দিকে চেয়ে আছি।

তাতে আমি কি করবো?

তারপর দেখলাম মেরিনাদির ঠোঁটদুটো কেমন ফুলে ফুলে উঠলো। মুখ চোখটা কেমন দুমড়ে মুচড়ে একাকার। আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো।

আমি অবাক।

মেরিনাদি কাঁদছে, খুব খারপ লাগছে। কিন্তু কেন কাঁদছে বুঝতে পারছি না।

তুমি কাঁদছো কেনো বলো, তুমি কাঁদলে আমার খারাপ লাগে। জেনে শুনে তুমি এই জীবনটা গ্রহণ করেছো। যদি আমার সাহায্যের দরকার লাগে, আমি তোমাকে সাহায্য করবো।

আমি সেই জন্য তোর কাছ ছুটে এসেছি অনি।

কি হয়েছে বলো।

তুই আমাকে দিদির মতো ভালোবাসিস। আমার কাছে ভাইফোঁটা নিয়েছিস।

আমি মেরিনাদির চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। কালো ডাগর চোখ, চোখের জলে ভিঁজে কাদা হয়ে গেছে। চোখে মুখে সে কি ভীষণ আর্তি। ঠোঁট দুটো থিরি থিরি কাঁপছে।

আমি মা হতে চাই অনি। তুই আমাকে সাহায্য কর।

আমার সারাটা শরীর প্রচণ্ড জোরে কেঁপে উঠলো। বিষ্ময়ে বলে উঠলাম, তুমি আমার দিদি, তুমি এ কি কথা বলছো!

তোর ইসলামভাইয়ের সন্তান আমার গর্ভে। আমি তাকে কিছুতেই নষ্ট হতে দেবো না। ওরা কেউ জানে না। জানলে নষ্ট করে দেবে।

মেরিনাদি তখনও কেঁদে চলেছে।

তুই ছাড়া এখানে আমার আপনজন কেউ নেই। তুই আমার ভাই। আমাকে দিদি বলে ডাকিস। আমার ভালোবাসার সন্তানকে আমি কিছুতেই হারাতে পারবো না।

তুমি একথা ভাবছো কেন?

তোর ইসলামভাইয়ের অবর্তমানে আমার ঘরে মাসি লোক ঢোকাবে। আমি জানি। সেই যদি হয় আমি তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো না।

আমাকে কয়েকদিন সময় দাও।

তুই যেভাবে পারিস আমাকে এখান থেকে বার করে নিয়ে চল। আমি এজীবন আর সহ্য করতে পারছি না।

তুই তখন ইসলামভাইকে কিছু বলিস নি? নীরু বললো।

এখনকার ইসলামভাইয়ের সঙ্গে তখনকার ইসলামভাইয়ের আকাশ পাতাল তফাৎ।

তারপর!

পরীক্ষা চলছিল, শেষ হল। এই কদিন মেরিনাদির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। আমি আমার তালে রয়েছি। আমাকেও তো আমার পেটটা চালাতে হয়।

দিন দশেক পর একদিন রাতে আমি ভজু ঘুমচ্ছি, মেরিনাদি এসে হাজির।

উঠলাম।

কিরে আমার কোনও ব্যবস্থা করেছিস।

না।

ছাগল, তোকে যে এতোবার করে বললাম।

মাথা নিচু করে বসে আছি।

বুঝেছি তুই আমাকে দিদি বলে মনে করিস না। তোর চোখে আমি একজন বেশ্যা। তোরা শিক্ষিত আমাদের মতো মানুষকে পাত্তা দিবি কেন।

মেরিনাদির হাতটা চেপে ধরলাম।

চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ছে।

আমায় তুমি ক্ষমা করো।

মাসি আজ ঘরে লোক ঢুকিয়েছিল। এরকম চললে আমার বাচ্চাটা মরে যাবে। তুই যদি সত্যি আমাকে দিদির মতো ভালোবাসিস তাহলে কালকের মধ্যে ব্যবস্থা কর, না হলে আমি আত্মহত্যা করবো। মেরিনাদি তখন পাগল। অনেক করে বুঝিয়ে নীচে পাঠালাম। ঘুমের বারোটার তেরোটা।

অগত্যা পরের দিন ফাদারের হাতে পায়ে গিয়ে ধরলাম।

ফাদারের সঙ্গে তোর তখন থেকে পরিচয়! নীরু বললো।

কেন তখন তো ও আমাদের ওখানে যেত। ফাদারের কাছে ও যাওয়া আসা করে সেটা আমরা জানতাম। কনিষ্ক বললো।

কিন্তু কেন যায় সে সব কথা জানতিস? না। তখন এসব গল্প করতো না।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/oOz96jv
via BanglaChoti

Comments