কাজলদিঘী (১৬৭ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

১৬৭ নং কিস্তি
—————————–

আমি খাটে এসে রূপায়ণদাদের পাশে বসলাম। অনুপদা, প্রবীরদা তখনও প্রজেক্টের পাতা উল্টে উল্টে দেখে চলেছে।

নাতি, নাতনিরা তোকে গিয়ে কি বললো। বিধানদা বললো।

দাদাইদের সঙ্গে ঝগড়া করেছি।

বিধানদা হাসছে। সবকটার বেশ গভীরতা আছে। শেষ পর্যন্ত তলিয়ে দেখে কতটা ফিজিবিল।

তোমার কেমন মনে হলো?

এদের চুজ করলো কে?

আফতাবভাই ওদের সঙ্গে কথা বলতো। সেটা তোমরা জানতে। গত সপ্তাহে আমাকে ফোন করে বললো, তোর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে চাই। রাতের দিকে একটু ফোন কর।

রাতের দিকে ফোন করলাম। তখন সব খোলাখুলি বললো। তবে তার আগেই ও ওর ঘুঁটি ঠিক করে ফেলেছিল। এই না যে আমার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেছে।

তারপর বললো, তুই ওরা আসার আগের দিন, ওদের সঙ্গে সকলকে বসিয়ে দে। আমি একবার এক্সাম করতে চাই। কতটা নিতে পারলো।

তারপর আমার এখানে আসছে। আমার অফিসে দুজনকে বসিয়ে দেব। দেখবি তৈরি হয়ে যাবে।

পক্কে, ঘণ্টা, শুভ সুন্দরদের ব্যাপারটা।

এটা আমার কাছে এখনও ভাষা ভাষা। তবে নিশ্চই ওদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছে কাজ হবে, তাই ওদের ইনভলভমেন্ট ও চাইছে। এখানে এলে সেটা মুখোমুখি বসে জানতে পারবো।

অনিমেষদা এসে বিধানদার পাশে বসলো। রূপায়ণদারা এবার ফাইল থেকে মুখ তুলে আমাদের আলোচনার মধ্যে ঢুকে পড়লো।

রাঘবন কি তোমাদের কাউকে ফোন করেছিল?

কেন জিজ্ঞাসা করছিস। অনিমেষদা বললো।

আফতাবভাই রাঘবনকে খুব ট্রাস্ট করে। ইদানীং রাঘবনের সঙ্গে এরাও ঘনো ঘনো কথা বলছে।

প্রবীরকে ফোন করেছিল। বিধানদা হাসলো।

রাঘবন তোমাকে কি বলেছে। আমি প্রবীরদার দিকে তাকালাম।

ভালো মন্দ খবর জিজ্ঞাসা করলো, প্রজেক্ট নিয়ে আমরা কতদূর ভাবনাচিন্তা করেছি।

তোমার কিছু মনে হয়নি।

কথাবার্তা শুনে মনে হলো একটা পজিটিভ থিঙ্কিং আছে।

আর কিছু?

অনিমেষদা হাসছে।

তোর কি মনে হচ্ছে ও নিজে এই প্রজেক্টের সঙ্গে ইনভলভ থাকতে পারে?

শুধু ও নয়, আরও পাঁচজন থাকতে পারে।

অনুপদা, রূপায়ণদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

কামিং মিটিংটায় হয়তো ওরা প্রেজেন্ট থাকবে।

ওরা কারা।

সকলেই সেন্ট্রালের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সচিব পর্যায়ের লোক।

মিটিং কি কলকাতায় হবে?

কলকাতায় না হলেও দিল্লীতে রাঘবনের বাড়িতে মিটিংটা হতে পারে। তোমরা একটু নিজেদের মধ্যে আলোচনা করো।

অনিমেষদার দিকে তাকালাম।

এবার তোমাদের মতামত বলো।

তুই যে তিনটে জায়গা ঠিক করেছিস ওই তিনটে জায়গাতেই ডেভালপ করবি?

কেন প্রশ্নটা করছো!

একটা একটু সমস্যা হচ্ছে।

সেটা বাদ দিয়ে দাও। আর দুটো করো।

সঙ্গে সঙ্গে তুই অন্য রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলি।

কেন তোমাদের প্রস্তাবিত জায়গায় না হয়ে ওই জায়গায় হবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা ওই প্রজেক্টে দেওয়া আছে। শুধু মাত্র একজনের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য কেউ এতো টাকা ইনভেস্ট করবে না।

একটু ভাব এদিক ওদিক করা যায় কিনা।

তাহলে এক কাজ করো, প্রজেক্ট ভায়াবেল না হলে ইনভেস্টমেন্টের পুরো টাকা সরকার ফেরত দিয়ে দেবে, উইথ ইন্টারেস্ট।

এ তো উল্টো চাপ!

বুঝতে পারছো, পাইয়ে দেবার রাজনীতি করে ভেতরটা কতটা খোকলা হয়ে গেছে।

একটা সমস্যা তৈরি হয়ে গেছে।

হবেই। অনুজকে চিফ মিনিস্টার না বানিয়ে প্রবীরদাকে বিনিয়েছ। মেনে নেবে কেন। তার ডিস্ট্রিক্ট তোমাদের সবচেয়ে বেশি সিট দিয়েছে।

প্রবীরদা মিটি মিটি হাসছে।

তুই পার্টির এতো ভেতরের কথা জানিস কি করে?

তোমাদের প্রশাসনের যেমন গোয়েন্দা বাহিনী আছে আমারও আছে। আমার সবচেয়ে প্লাস পয়েন্ট কি জানো প্রবীরদা, আমার হাতে একটা লিডিং নিউজপার আছে।

রূপায়ণদা, অনুপদা হাসছে।

আমিন সাহেব কি বলছেন? অনিমেষদার দিকে তাকালাম।

অনুজর সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।

লাভ হবে না। কাল আমার কাছে ফাইলটা আসুক দেখবে সব জল অন্যদিকে গড়িয়ে গেছে।

আবার কি গণ্ডগোল পাকাবি! অনুপদা বলে উঠলো।

দেখো, যে মানুষটা ছাত্র-জীবনে নোংরামি করেছে সে ভাল শিল্পমন্ত্রী হয় কি করে?

প্লিজ তুই তিরিশ বছর আগেকার পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে যাস না। অনেক কষ্ট করে একটা জায়গায় নিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।

আমি তো তোমাদের ক্ষতি করতে চাই নি।

সে কথা আসছে কেন?

তাহলে মন্ত্রি সভার বৈঠকে লবি বাজি করে, তোমাকে কোনঠাসা করার কোনও দরকার ছিল না। উনি যদি মনে করেন উনিই একমাত্র চালাক আর সবাই ঘাসে মুখ দিয়ে চলে তাহলে তাকে ভুল প্রমাণিত করার একটা চেষ্টা করতে হবে।

ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আমি রূপায়ণ ব্যাপারটা দেখছি। অনুপদা বললো।

আমি পর্শু সকালে বেরবো। তুমি কিংবা রূপায়ণদা যে কেউ একজন আমার সঙ্গে থাকবে।

ক দিনের জন্য।

চারদিনের জন্য।

দেখলেন দাদা আমার কথা মিলছে। রূপায়ণদা বললো।

রূপায়ণদা, অনুপদার দিকে তাকাল।

তুই যা আমি এদিকটা সামলে নেব।     

হাতে সাত আটদিন সময়। তার মধ্যে এতটা গোছাতে পারবি?

তুই কি ওর সঙ্গে ঘুরতে যাচ্ছিস।

রূপায়ণদার কথায় প্রবীরদা হেসে ফেললো।

নিরঞ্জনদা, ইকবালভাই, ইসলামভাই ঘরে ঢুকলো।

এতক্ষণ ছিলে কোথায়?

তিনজনের দিকে তাকালাম। তিনজনেই হাসছে।

দাদা বসা যাবে? ইসলামভাই তাকাল অনিমেষদার দিকে।

বসো। তোমাদের কাজ হলো?

হ্যাঁ। পজিটিভ।

দাঁড়াও অনিকে ছেড়ে তোমাদের সঙ্গে বসবো।

অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।

তুই যাবি কোথায়?

এখনও কিছু ঠিক করিনি।

সুরো ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো। বাবা কিছু খাবে?

হল্কা কিছু নিয়ে আয় আর চা। প্রবীরদা বললো।

দাদাভাই ফ্রায়েড রাইস নিয়ে এসেছে।

নিয়ে আয়।

সুরো চলে গেল।

এখন এসব খেলে রাতে খাব কি? অনিমেষদা বললো।

কম করে খাবেন। ইসলামভাই বললো।

প্রবীর তোমার খাই খাই বাতিকটা বেরে গেছে।

সকাল থেকে কয়েকটুকরো পাঁউরুটি জুটেছিল এখানে এসে পেট ভরে খেলাম, তারপর মাঝে একটু খেয়েছি। এখন আবার খাচ্ছি। কি বেশি খেলাম।

সকলে হাসছে।

অনুপ তুমি অনির সঙ্গে গেলে তোমার কাজগুলো আমাকে বুঝিয়ে দাও। অনিমেষদা বললো।

রূপায়ণ ম্যানেজ করে নেবে। আপনি বিধানদা বরং প্রবীরের দিকটা ফিড ব্যাক দিন।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

তোর প্ল্যান প্রোগ্রামটা যদি একটু বলতিস।

ওই যে বললাম এখনও কিছু ঠিক করিনি।

ঠিক আছে তুই যা।

আমি বেরিয়ে এলাম, বারান্দা ধরে সোজা এই ঘরে। দেখলাম সোফায় বরুণদা, সুবীর, অংশু বসে খাচ্ছে। তিনজনেই একবার চোখ তুলে তাকাল।

খুব জোর খিদে পেয়েছিল, সামলাতে পারলাম না। বরুণদা বললো।

সুরো একবার রান্নাঘর থেকে মুখ বার করলো।

তুমি একটু খাবে?

না। একটু চা দে। বড়োমারা কোথায় সুরো?

ওপরে ছোটোমার ঘরে।

পুঁচকে দুটো।

খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছি।

ঘুম পারানো ছাড়া তোদের আর কোনও কাজ নেই।

বড্ড জালাচ্ছিল।

আমি বড়োমার ঘরে এসে ঢুকলাম।

সেই একই অবস্থায় দুটোতে শুয়ে আছে। মাঝে পাশ বালিশ।

আমি একটা বালিশ টেনে নিয়ে হেলান দিলাম।

মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। চোখটা সামান্য বন্ধ হয়ে এসেছিল। পায়ের তলায় শুরশুরি লাগতে চোখ মেলে তাকালাম। দেখলাম মিলি, টিনা ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে। মিটি মিটি হাসছে।

এসো এসো, বসো। তোমার মেয়ে ঘুমচ্ছে। মিলির দিকে তাকালাম।

ওটা এখন আর আমার নয়।

হাসলাম। তাহলে কার।

সুরোর। বাড়িতে নিয়ে গেলে থাকতেই চায় না। সুরোরটারও একই অবস্থা। এখানে এলে সব ঠিক আছে। কোনও ঝামেলা নেই।

পড়াশুন করে।

কখনও বৌদি বসে, কখনো ছোটোমা।

আমি মাম্পি, মিকির দিকে তাকালাম।

শুয়ে ছিলে শরীর খারাপ লাগছে না তো? মিলি বললো।

না। কখন এসেছো।

অনেকক্ষণ। ওপরে তোমার গল্প শুনছিলাম।

হাসলাম।

ওরা আসেনি।

সব ওপরে তোমার গল্প শুনছিল, এবার নামবে।

মিলি, টিনা দুজনে সোফায় হেলান দিল।

ওদিককার সব খবর ঠিক আছে?

হ্যাঁ। আজ টিয়াকে দেখতে গেছিলাম।

কেমন আছে।

আগের থেকে অনেক ভাল। ও তো বললো আর দু-একদিন রাখবো তারপর ছেড়ে দেব।

মাঝে বলেছিল যে ছেড়ে দেবে।

কি সমস্যা হয়েছিল তাই ছাড়েনি।

বিতানবাবু?

এখন টিনার দাসানুদাস।

অদিতি এলো না?

বললো ছেলে হোস্টেল থেকে এসেছে। কাল সকালে আসবে।

দেখো, টিয়ার কাছে আমার যাওয়া হলো না। কি ভাবছে বলো মেয়েটা।

কিচ্ছু ভাবছে না। বরং টিয়া বলছে দাদার এতো চাপ তবু আমার কথা মনে রেখেছে….।

তোমরা সব সময় বারিয়ে বারিয়ে বলো।

দেখা হলে তুমি নিজে জিজ্ঞাসা করবে।

টিনা ম্যাডাম তুমি চুপ চাপ কেন।

ভাবছি।

কি?

বুঁচকিদের বয়সে আমরা যে চাপ নিয়েছি তার থেকে তুমি হাজারগুণ বেশি চাপ ওদের দিলে, আর ওরা নির্দিধায় তা হজম করে ফেললো।

পরিবেশ পরিস্থিতি ওদের হজম করতে বাধ্য করেছে।

সুরো ঢুকলো, মিলি উঠে গিয়ে সুরোর হাতে থেকে চায়ের ট্রেটা নিয়ে সন্টার টেবিলে রাখলো।

মিলিদি একটু নোনতা বিস্কুট আর চেনাচুর দিই।

নিয়ে আয়।

আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।

দাদা তোমাকে ও কিছু বলেছে।

সুরোর দিকে তাকালাম।

কে বলতো?

মিলি হেসে ফেললো।

হাসলে যে।

সুরো নাম ধরতে পারবে না।

ও হো, অংশু। না রে কিছু বলে নি। কিছু হয়েছে?

আমাকে বলছিল বলতে, আমি বলেছি তুমি বলো।

কি হয়েছে একটু হিন্টস দে।

ওর আর চাকরি করতে ভালো লাগছে না।

তাহলে খাবে কি? আমি হাসছি।

আমার সাথে সাথে মিলিরাও হাসছে।

তুমি ওর সঙ্গে কথা বলো।

ঠিক আছে যা বলে নেব।

সুরো বেরিয়ে গেল। মিলি, টিনা দুজনেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে।

অংশু আমায় কয়েকদিন আগে বলেছিল। মিলি বললো।

কি?

প্রফেসারি করতে ভীষণ অসুবিধে হচ্ছে।

কেন!

সবাই ভাবছে, শ্বশুর মশাই ওইরকম একজন ব্যক্তিত্ব, তাছাড়া সুরো তোমার বোন। সুরোর বৌ-ভাতের দিন সবাই মিত্রাদিকে আমাদের দেখেছে। চাকরি ক্ষেত্রে যা হয়। কলিগরা ভাবে অংশু এই কারণে কিছু এ্যাডভান্টেজ পেয়ে যাচ্ছে।

অংশুতো ওরকম ছেলে নয়।

সে কে বোঝে বলো।

এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে কখনও ভাবিনি। আমার চাকরি লাইফটা অন্যরকম ছিল।

তোমার কথা আলাদা। তনুদির মুখ থেকে শুনেছি তুমি কাউকেই পাত্তা দিতে না। কিন্তু কাজে কোনওদিন ফাঁকি মারনি। তাছাড়া তুমি যে সব আর্টিকেল লিখতে সেই সময়কার তোমার অনেক সিনিয়ার রিপোর্টাররাও তা লিখতে সাহস করতো না।

তবে দাদার একটা প্রচ্ছন্ন সাপোর্ট পেতাম।

কেন? তোমার কথায়, যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খেতে হয়।

আমি হাসলাম।

সত্যি অনিদা। আমাদের হাউসে এখনও এরকম দু-চারজন আছে। দাদার মতো আমরাও তাদের ফেভার করি। না হলে কাজ উদ্ধার হবে না।

টিনার মুখের দিকে তাকালাম। 

যাক, তুমি বুঁচকিদের তৈরি করলে কি করে বলোতো?

সত্যি বলতে কি টিনা তুমি কিংবা মিলি জন্ম থেকে এইরকম স্ফেয়ার পাওনি। ওরা পেয়েছে। যখন একটু বুঝতে শিখলো তখন ওরা জানল ওদের বাবার ওপর দিয়ে প্রবল ঝড় বয়ে গেছে। বাবার যারা কলেজের বন্ধু বান্ধব, বাবার জুনিয়ার তারা দরাজ হাতে বাবাকে সাহায্য করেছে। কেউ এতটুকু বিশ্বাসঘাতকতা করেনি,  নিঃস্বার্থভাবে সবাই একসাথে কাজ করেছে।

চোখের সামনে দাদাকে, মল্লিকদাকে দেখেছে। দেখেছে অনিমেষদা, বিধানদাদের। ছোটো থেকে ওরা সবাইকে এক সঙ্গে চলতে দেখেছে। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ওদের ভাইবোনদের মধ্যে সেই বীজটা ঢুকিয়ে দিতে। আমি চেষ্টা করতাম। আফতাবভাই সেই ইচ্ছেটা পূরণ করে দিল।

বুঁচকির থেকেও নাসরিন অনেক বেশি এ্যাগ্রেসিভ। মিলি বললো।

ওটা ওর রক্তের দোষ। তুমি ওটা বাদ দিতে পারবে না। আমি ওকে সঠিক পরিবেশে রেখে পরিচালনা করেছি। পরিবেশের একটা প্রভাব ওর ওপর থাকবে। কিন্তু রক্ত আজ নয় কাল কথা বলবে। তুমি কিছুতেই আটকাতে পারবে না।

তুমি কিছু বলবে না?

কতদন তুমি দমিয়ে রাখবে। কেউ ছোটোটি আছে। চোখের সামনে সব কিছু দেখছে না।

ওরা দু-জনে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।

তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস অন্যায় কাজ ওরা করবে না।

সেটা আমাদেরও বিশ্বাস।

ওদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রুট মনে হচ্ছে সুন্দরকে। টিনা বললো।

ও গেম মেকার।

টিনা হাসছে।

আমি শুধু ওদের আইডিয়া দিয়েছিলাম। কি সুন্দর প্রজেক্টগুলো নামিয়েছে বলো।

আমি সিনপসিস পড়ছিলাম। কোথাও এতটুকু ফাঁক নেই। মিলি বললো।

অনিসা এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পার্টটা খুব ভাল বোঝে। আমি দু-একটা প্রশ্ন করেছিলাম, কি চোখা চোখা উত্তর দিল। টিনা বললো।

একদিন এরাই তোমাদের রিলিফ দেবে।

তুমি একটা ট্র্যাডিসন তৈরি করতে চাইছো।

না হলে তুমি টিঁকবে না। আজ এরা তোমার কিছুটা কাজের দায়িত্ব নিয়ে তোমাকে হাল্কা করবে, আবার কাল তোমার ছেলেমেয়েরা বড়ো হয়ে এদের কাজের কিছুটা দায়িত্ব নিয়ে এদের হাল্কা করবে। এই ভাবেই চলবে।

শুনলাম বুঁচকি নাকি অনিমেষদা, অনুজবাবুকে পুরো চুপ করিয়ে বসিয়ে রেখেছিল।

মিলির দিকে তাকালাম।

আমি সেই সময় ঘরে ছিলাম না। মাঠে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ওর মুখ নাড়া দেখছিলাম, তাতে মনে হচ্ছিল ও রয়ে-শয়ে কথা বলছিল না।

শুভকে আজ কোথায় পাঠিয়েছিলে।

নিজাম প্যালেসে। একজনের কাছে। কেন?

আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, জানো মনি আজ বাবা যে ঘরে বসতো সেই ঘরে গেছিলাম।

আমি তো প্রথমে বুঝতে পারিনি। তারপর বললো। আঙ্কেলকে ওরা ওই ঘরে মেরেছিল। তোমাকে কথা দিলাম মনি, সুযোগ যেদিন পাবো সবকটার ছাল ছাড়িয়ে নেব।

কনিষ্ক, নীরু, বটা ঘরে ঢুকলো। পেছনে তনু, মিত্রা, ইসি।

কিরে তোর শরীর গণ্ডগোল করছে নাকি! নীরু কাছে এগিয়ে এলো।

না এমনি শুয়ে আছি। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে।

ওষুধ কতদিন হলো শেষ হয়েছে।

একসপ্তাহ মতন।

নীরু, মিত্রার দিকে তাকাল।

ম্যাডাম কাল বুঁচকিরা বেরিয় গেলে একবার ধরে নিয়ে এসো, চেকআপ করে নিই।

নীরু মিলির দিকে তাকাল।

সরে বসো। মিলির পাশে বসে পরলো।

বটা এসে আমর হাতটা একটু টিপে ধরলো। আমি হাসলাম।

আমি ঠিক আছি। গণ্ডগোল হলে তোদের নিশ্চই বলবো।

যা শুনলাম, তোর গণ্ডগোল হলে সবাই গণ্ডগোলে পড়ে যাবে।

ওরা সবাই যে যার মতো বসলো। বটা আমার পাশে ছোটো টুলটায় বসলো।

মিত্রারা সকলে খাটে বসলো। কনিষ্ক নীরুর পাশে।

মিত্রা আমার একবারে কাছে বসলো। মাঝখানে তনু, ইসি আমার পায়ের কাছে।

নম্রতা বাড়ি যাবে বলছে। মিত্রা আমার দিকে তাকাল।

চলে যাক। আমার সঙ্গে কিছু দরকার আছে!

তুই থাকতে বলেছিলি। মিটিং শেষ হলে দু-জনকে ডাকবি বলেছিলি।

ও হো, সরি। ইসি তোর কাছে খামটা আছে না।

হ্যাঁ।

পিকুর কেশ এখনো ক্লোজ হয়নি? কনিষ্ক বললো।

আর একটু বাকি আছে।

ইসি খামটা নিয়ে আয়, আমার চশমাটা নিয়ে আসিস, আর ওদের ডাক।

আবার ঝাড়! বটা বললো।

না ঝাড়-টার কিছু নয়। একটু বোঝাতে হবে।

ইসি বেরিয়ে গেল।

ম্যাডাম ওর বোঝানোটা কেমন? কনিষ্ক বললো।

মিলিদের জিজ্ঞাসা করো, আমার থেকে ভালো উত্তর দিতে পারবে।

সে অভিজ্ঞতা ওর আছে।

কি রকম? নীরু বললো।

মিলি নীরুর থাইতে একটা থাপ্পর মারলো। শয়তান।

উঃ কনিরে কি নরম হাত।

মিলি প্লিজ আর একবার। নীরু মিলির দিকে তাকিয়েছে।

মিত্রা, তনু দুজনেই হেসে আমার দিকে ঢলে পরেছে। মিলির মুখে রং লেগেছে।

নীরু বটার বুকটায় একবার হাত দিয়ে দেখ, ধুক পুক করছে। আমি বললাম।

কেন?

ভাগ্যিস টিনা মারেনি। খুব জোড় কানের পাশ দিয়ে চলে গেল।

কেন? চুলকে ঘা না করলে চলছে না। বটা খিঁচিয়ে উঠলো।

কনিষ্ক খিক খিক করে উঠলো।

আচ্ছা তুমি অনিদার কথায় এত রেগে যাও কেন। টিনা বললো।

তুমি অনিকে কতটুকু চেন। বটা ঝাঁজিয় উঠলো।

টিনাও এবার জোড়ে হেসে উঠলো।

বটা আমার কাছেই বসে। আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম।

আজ সেভ করেছিলি।

বটা এবার হেসে ফেললো।

কিছু বুঝতে পারলে?

বটা টিনার দিকে তাকাল।

মিলি, কিনিষ্ক দু-জনেই শরীরটা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে হাসছে। নীরু একটা বিভৎস মুখভঙ্গি করলো।

সেভ করার গল্পটা তোকে বলবো টিনা। আমাকে ও বলেছে। মিলি বললো।

সেই চুলকুনি কেশ। টিনা বললো।

মিলি হাসির ঢেউ তুলে মাথা দোলাচ্ছে।

আমাকে বলেছে। অনিদা ছাড়া এইরকম বিটকেল বুদ্ধি কার হবে বল।

মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়। ব্যাপারটা এরকম এত দিনেও আমাদের বলার সময় হয়নি তোর। আর কবে হবে?

মিত্রা বটার দিকে তাকাল।

কলেজ লাইফে তোমাদের ও খুব মুরগী করতো না।

ঠিক মুরগী বললে ভুল হবে ম্যাডাম। ওকে আমরা সকলে বিশ্বাস করতাম। দশটা কথা বললে সাতটা কথা সত্যি হতো। তাই ওর কথায় আমরা বেশ গুরুত্ব দিতাম। মাঝে মাঝে ও বদমাইশি করতো, ধরতে পারতাম না। তবে কনিষ্ক ধরতে পারতো, ও কিছু বলতো না। ও মজা দেখতো।

বন্ধুদের মধ্যে একটু হাসা হাসি হতো। কিন্তু ম্যাডাম একটা কথা মানতেই হবে। সেই সময়টা আমরা খুব এনজয় করতাম। বলতে পার নির্মল আনন্দ। কতো এরকম টুকরো টুকরো ঘটনা আছে। বলে শেষ করা যাবে না। এই মুহূর্তে একটা মনে পরে গেল বলি। তাহলেই বুঝতে পারবে।

মিত্রা চোখের ইশারায় বললো, বলো।

সেকেন্ড সেমিস্টার শেষ হয়েছে। আমি, কনিষ্ক, নীরু, অনিকেত ভালোপাহাড় যাচ্ছি।

ও সঙ্গে আছে। ওটা মনে হয় সেকেন্ড টাইম যাচ্ছি। তাই না কনিষ্ক?

কনিষ্ক মাথা দুলিয়ে শায় দিল।

ঠিক হলো কখন, ট্রেন ছাড়ার ঘণ্টা দেড়েক আগে।

কলেজ হোস্টেল থেকে হেঁটে হাওড়া। ইস্পাত তখন ছটা পনেরোয় ছাড়ে। ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা নেই। বসার জায়গা দূরাশা।

আমরা সবাই বাথরুমের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে পরলাম। নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছি। কথা বলছি। ট্রেনে অনেক পাগল ছাগল মানুষ ওঠে দেখেছো। দেখলাম দরজার সামনে একটা পাগল বসে আছে। তাকে দেখে অনি উসখুস করছে।

আমাদের সঙ্গে কথা বলছে আর বার বার চোখ চলে যাচ্ছে পাগলটার দিকে। হঠাৎ বললো, তোরা কথা বল, আমি একটু ওর সঙ্গে গল্প করি।

আমরা চারজনেই একটু অবাক। তুমি থাকলে তোমরাও ওই সিচুয়েসনে একটু অবাক হতে।

ওমা সত্যি সত্যি ও ঠেলে ঠুলে গেটের কাছে চলে গেল। পাগলটার কাঁধে হাত দিয়ে ইসারা করলো একটু সরে বসতে, পাগলটাও যেন ওর কথা বুঝলো, সরে বসলো। দিব্যি ও পাশে বসে পরলো। অনেকেই ওর দিকে তাকাচ্ছে।

সেই সময় আমাদের খুব লজ্জা করছিল। যতই হোক ডাক্তারী পরা সব স্টুডেন্ট।

বিশ্বাস করবে না। ও যে আমাদের বন্ধু সেটা বলতেও রুচিতে বাধছিল।

কিছুক্ষণ পর দেখলাম, দুজনে ফিস ফিস করে কথা বলছে। ওর ওপর তখন প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে।

খড়গপুর পেরিয়েগেল ট্রেনটা ফাঁকা হলো। দেখি ওরা দুজনে ওখানে বসে আছে, বাইরের দিকে মুখ করে। আমি, কনিষ্ক বসার জায়গা পেলাম। পাগলটা ঝাড়গ্রাম নেমে গেল। তারপর ও উঠে এলো। আমরা যে ওর ওপর রাগ করতে পারি সেটা ও বিশ্বাসি করতে পারছে না, ওর চোখ মুখ তখন তাই বলছে। সেই সময় আমরা ওর সঙ্গে বিশেষ কথা বলিনি।

ভালোপাহাড় গেলাম। হৈ হৈ করে কাটালাম। ফিরে এলাম।

আবার স্বাভাবিক জীবন।

হঠাৎ একদিন বিকেলে এসে অনি হাজির। তোদের আজ কোন কাজ নেই তো?

কেনো রে?

আজ একজন ভদ্রলোক আসবে তোদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব। দেখবি বেশ জমপেশ লোক।

কিছুক্ষণ বসে গল্প করলো। নীরুর পেছনে চূড়ান্ত লাগল।

একটু সন্ধ্যের দিকে হাওয়া হয়ে গেল। মিনিট পনেরো পরে ফিরে এলো। সঙ্গে একজন ধোপদুরস্ত ভদ্রলোক। আমাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল।

উনি এইচ.পি. ঘোষ। আইবির স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চে আছেন।

শুনে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ।

যাক আলাপ হল কথা বার্তা হলো। অনেকক্ষণ আমরা গেঁজালাম।

তোমরা কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে না হঠাৎ ওকে নিয়ে এলি কেন? মিত্রা বললো।

ও এইরকম প্রায়ই কাউকে না কাউকে নিয়ে এসে আলাপ করাতো।

যাওয়ার সময় ভদ্রলোক বললেন অনি তোর বন্ধুরা আমাকে চিনতে পারলো না।

আমরা প্রথমে একটু অবাক।

কেন আপনার সঙ্গে আমাদের আগে আলাপ হয়েছিল নাকি?

আলাপ হয়নি তবে দেখেছেন।

তারপর ট্রেনের ঘটনা বললো।

আমরা সব আকাশ থেকে পরি।

এই সেই অনির ঘোষদা যাকে দিয়ে অনি অনেক এনকাউন্টার করিয়েছে। বলতে পারো অনি যে টিপ দিত ওরা হান্ড্রেড পার্সেন ঠিক মনে করতো।

ঘাষদার কতো কাজ আমরাও করে দিয়েছি সেই সময়। এখন রিটায়ার হয়ে গেছে।

আজ শুভকে ওনার কাছেই পাঠিয়েছিল। মিত্রা বললো।

তাহলে দেখো, আমাদের স্মৃতি থেকে আবঝা হয়ে গেছে। ও এখনও ধরে রেখেছে।

ইসি ঘরে ঢুকলো, পেছনে নম্রতা, পিকু। দু-জনেরি মুখ থম থমে।

ইসি খাটে বসে খামটা আমার দিকে এগিয়ে দিল।

টেবিলে রাখ।

ইসি খামটা টেবিলে রাখলো।

আমি ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে। দু-জনেই মুখ নিচু করে রয়েছে।

যা বলেছিলাম দু-জনকে তাই করেছো।

মুখ দিয়ে কারুর কথা বেরলো না। ঘার দোলাল। করেছে।

খামটা আমার সামনে খুলে ফেলে টেবিলের ওপর ঢালো।

পিকু, নম্রতার মুখের দিকে তাকাল। আমি পিকুর দিকে তাকালাম।

নম্রতা খুলবে না তুমি খোলো।

পিকু খামটা খুলে টেবিলের ওপর উল্টে দিল। বেশ বুঝলাম হাতটা সামান্য হলেও কাঁপছে।

সিডিটার আর কোনও কপি তোমাদের কাছে আছে বা অন্য কোথাও।

ঘার দোলাল। না।

আমার সামনে ওটা চারটে টুকরো কর দাও।       

সারাটা ঘর নিস্তব্ধ। সম্মোহনের মতো পিকু কাজ করে চলেছে।

কাগজগুলো খামে ভরে নাও।

ওরা তাই করলো।

কালকে হিমাংশু মামাকে ফোন করবে। ওকে সব বলা আছে, যেখানে যেখানে সই করতে বলবে দু-জনে সই করে দেবে।

দু-জনে মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে।

নম্রতা।

নম্রতা আমার মুখের দিকে তাকাল।

পিকুর সঙ্গে যেমন ভাবে মিশতে তেমন ভাবেই মিশবে। ওর চালচলনে যদি কোনও বেচাল দেখ আমাকে জানাবে। আমাকে যদি জানাতে সংকোচ হয় ইসিকে বলবে।

নম্রতা মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে।

আর একটা কথা তুমি মন দিয়ে শুনে নাও। হিমাংশুমামা যা যা করবে তা তোমরা দু-জন আমি ছাড়া তৃতীয় কোনও ব্যক্তি জানবে না।

আমি কি বললাম কানে ঢুকেছে।

দু-জনে আমার মুখের দিকে তাকাল।

নম্রতা তোমাকে ব্যক্তিগত ভাবে একটা কথা বলছি শুনে নাও।

নম্রতা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

তোমার বাবা তোমাকে দিয়ে কিছু স্ট্যাম্প পেপারে সই করাতে চাইবে। তুমি করবে না। তোমার মাকে দিয়েও করাতে চাইবে, মাকে বলে দেবে যেন না করেন।

নম্রতা চমকে আমার দিকে তাকাল।

আজ মাকে দিয়ে কয়েকটা স্ট্যাম্প পেপারে বাবা সই করিয়েছে।

সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

তুমি দেখেছো?

আমি বাড়ি যেতে মা বললো।

ঠিক আছে মা আর যেন কোনও ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প পেপারে সই না করে। তুমি আজ থেকে তোমার মার হয়ে বাবার সঙ্গে ফাইট করবে। বাকিটা আমি বুঝে নেব।

যে স্ট্যাম্প পেপারগুলয় সই করিয়ে নিল?

আমি দেখে নিচ্ছি। কাল কাজ সেরে বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে দেখা করবে।

দু-জনে ঘার দোলাল।

পিকু।

পিকু আমার দিকে তাকাল।

ওকে ছেড়ে দিয়ে এসো।

দু-জনেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

মিত্রা একবার ঘার ঘুরিয়ে দেখে নিল। ওরা কতদূর গেল। আমার দিকে তাকাল। চোখে জিজ্ঞাসা।

সব কথা জানার এতো উৎসাহ কিসের। হজম করতে পারবি।

তনু মুচকি মুচকি হাসছে।

চিমটি কেটে পেটের মাংস তুলে নেব।

তোর সম্পত্তি যা ইচ্ছে করতে পারিস।

মিত্রা হাসছে।

আমি মিত্রার শরীরে ভর দিয়ে উঠে বসলাম।

মিলিরা হাসছে।

তোরা হাসিস না। এ্যাক্টিংটা কি সুন্দর করলো দেখলি।

তুমি কি করে বুঝলে এটা এ্যাক্টিং।

মেয়ের কাছ থেকে শিখলাম।

কনিষ্ক খিক করে উঠলো।

চল খিদে লেগেছে এবার ঘুমতে হবে।

এখনও খাবার আসেনি। এলে ডাক পরতো।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

কিরে কিছু বললি না। ইসি বললো।

কি বলতো!

সকাল থেকে ছেলে দৌড়লো। খাম দিল। খুলেও দেখলি না। তারপর….।

সব একসঙ্গে জেনে ফেললে ছুটকির মতো বদ হজম হয়ে যাবে।

হবে না।

কেন বরুণদা ওষুধ দিয়েছে?

দেখছিস মিলি দেখ তোর অনিদাকে। বলিস না অনিদার মতো মানুষ হয় না।

যা বাবা বললাম বরুণদা ওষুধ দিয়েছে, আর তুই কি বললি।

বল না।

ঠিক আছে, আমি এখন কুমার আছি। বরুণদাকে ডিভোর্স করে দে, আমার গলায় ঝুলে পর….।

এই আমি এখনও তোমার বিবাহিতা স্ত্রী। তনু চেঁচিয়ে উঠলো।

হাসতে হাসতে মিত্রার গালটা টিপে দিলাম।

তুই কিছু বললি না।

আমি দেখছি, কি সুন্দর তুই মেইন লাইন থেকে গাড়িটাকে কড লাইনে নিয়ে যাচ্ছিস।

কনিষ্কর দিকে হাসতে হাসতে তাকালাম।

খেয়ে দেয়ে আমি অনেক আগেই ঘরে চলে এলাম।

মাথাটা কেমন যেন ভার ভার লাগছে।

অনিসা কালকে চলে যাবে। চিকনাও বললো আমি ভোর ভোর বেরবো। ওখানে অনেক কাজ আছে। তুই ঘুমিয়ে থাকলে তোর সঙ্গে হয়তো নাও দেখা হতে পারে।

পর্শুদিন বাড়ি থেকে বেরবার সময় ফোন করবি। আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাব।

দুপুর বেলা তোকে দেখলাম, তারপর আর দেখতে পেলাম না।

নিরঞ্জনদা পার্টি অফিসে ডেকে পাঠিয়েছিল ওখানে গেছিলাম।

কি বললো।

পুরনো কিছু দাগী মাল এসেছিল। পায়ে হাতে ধরছে ফিরিয়ে নেবার জন্য।

অমূল্য ছিল।

ছিল।

তুই কি বললি।

আমি না বলে দিয়েছি। এবার অনিমেষদা যা ভাল বুঝবেন করবেন।

হাবেভাবে আমি শুধু এইটুকু নিরঞ্জনদাকে বুঝিয়ে দিয়েছি আমার পার্টে কেউ যেন ফোঁপরদালালি না করে। তাহলে খেল জমিয়ে দেব।

মীরচাচা কি বললো।

মীরচাচা বাইরে ছিল।

মীরচাচাকে বলেছিস।

বলেছি। শুনে ফায়ার।

নিরঞ্জনদা কিছু বলেনি।

হাসে।

নিরঞ্জনদাকে মাথায় রাখ, কাজে লাগবে।

তোর ছক আমি বুঝেছি।

বাসু কি বলছে।

ঠিক আছে। ও কতকগুলো নতুন স্পট ঠিক করেছে। যেতে হবে।

আমি কোথায় যাব তুই কিছু জিজ্ঞাসা করলি না।

শ্যাম ফোন করেছিল। বললো চিকনাদা তুই আয়, তখন তো ও জানতো না, তুই আমাকে যেতে বলেছিস। সব বললাম, দারুর শ্বশুর বাড়িটা ঠিক করেছে আমাদের থাকার জন্য।

নানা কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। দমবন্ধ হয়ে যাবার জোগাড়।

দেখলাম দুই সখীতে আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আমি যেন দু-জনের পাশ বালিশ।

বহুত রাগ হচ্ছিল।

সব কিছুর মধ্যেও আমার ঘুমটা এখনও ঠিক আছে। না হলে কবে হয় তো টেঁসে যেতাম।

তাকিয়ে দেখলাম দু-জনেরি নাইটি বিপদসীমা লঙ্ঘন করেগেছে।

ঘার ঘুরিয়ে ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। কি নিশ্চিন্তে আছে দু-জনে। একজনের অনি আছে আর একজনের বুবুন আছে।

আমার নড়াচড়ার সাধ্যি নেই। চেষ্টা করলাম পারলাম না। গোপন জায়গায় হাত দিতেই দু-জনেই নড়েচড়ে উঠলো। ধরফর করে উঠে বসলো।

আমি হাসছি।

শয়তান।

আমি কি তোদের পাশ বালিশ।

দু-জনেই ঝাঁপিয়ে পরলো আমার ওপর।

ধস্তা ধস্তি শুরু হয়েগেল।

হাসতে হাসতেই বললাম, বিপদসীমা লঙ্ঘন করেছিলি তাই ঠিক করে দিচ্ছিলাম।

ঠিক করে দিচ্ছিলি।

দু-জনেই বুকের ওপর লুটোপুটি খাচ্ছে।

হাঁপিয়ে পরেছিলাম।

চুপচাপ কিছুক্ষণ শুয়ে রইলাম। ঘুমের দফারফা, বুঝলাম আর ঘুম হবে না।

দু-জনেই আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে।

আমি কাঠঠোকরার মতো দু-জনের ঠোঁটে একবার করে ঠুকরে দিলাম।

দু-জনেরি চোখে মুখে দুষ্টুমির ছোঁয়া।

কাল ঘুমিয়ে পরলি যে। মিত্রা নিস্তব্ধতা ভাঙলো।

মাথাটা ভীষণ ঝিম ঝিম করছিল।

কাটা জায়গাটা?

হ্যাঁ।

কই বলিশনি!

তোদের টেনসন দিয়ে লাভ।

সব নিজে ভোগ করবি, আমাদের কিছু ভোগ করতে দে।

না থাক। তোরা এরকম থাকলে আমার ভাল লাগে।

তনু আমার মাথার চুলে আঙুল ছুঁইয়েছে।

তোকে কালকে ওইরকম ভাবে ঘুমতে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল।

কেন?

আমরা দু-জনে কতো কথা বললাম। তোকে ঠেলে সরিয়ে তোর পাশে শুলাম। তুই একটুও বুঝতে পারিসনি। ভাবলাম হয়তো তোর আবার শরীর গন্ডগোল করলো।

সেরকম কিছু হলে তোদের দু-জনকে অবশ্যই বলতাম।

ছেলে মেয়েদের দায়িত্ব দিলি এবার আস্তে আস্তে নিজেকে রিলিফ দে।

আমার জীবনে রিলিফ বলে কিছু নেই বুঝলি মিত্রা।

জ্যোতিষদাদাও সেই কথা বলে।

জ্যোতিষদাদাকে পেলি কোথায়?

সেদিন আমি তনু গেছিলাম।

আবার!

কেন জানিনা জ্যোতিষদাদার কথাগুলো ভীষণ লেগে যায়।

কি রকম?

তুই তো বিশ্বাস করিস না।

আমি না করি, তোরা তো করিস।

ছেলে মেয়ের সম্বন্ধে যা বলেছে সব ঠিক ঠাক লেগে গেছে। এমনকী অনিকা-পক্কে-ঘণ্টা-সুন্দর সবার ঠিকুজি কুষ্টি বানিয়েছি।

নেই কাজ তো খই ভাজ।

দেখছিস তুই কেমন।

তোর জ্যোতিষদাদা ওদের ভূত ভবিষ্যত বলে দিয়েছে।

হ্যাঁ।

তনু তুমি বিশ্বাস করো?

না করে উপায় কি। ওদের অতীতটাও বলেছে, বর্তমান বলেছে, ভবিষ্যৎও বলেছে। তুমি তো আর বলতে পারবে না, ওদের আগে থেকে উনি দেখেছেন বা সব জানেন একথাও তুমি বলতে পারবে না।

ওদের নিয়ে গেছিলে?

কাউকে নিয়ে যাইনি।

কি বলেছে, ভবিষ্যতে ওদের সবার মধ্যে অনির ছায়া থাকবে। এই তো?

দূর তোমাকে বলে লাভ নেই। তুমি পীরবাবা ছাড়া কাউকে মানো না।

মানা না মানার প্রশ্ন আলাদা। তুমি জ্যোতিষদাদার কথার একটা রিজিন দেখাও।

উনি তো ডেট টাইম ধরে ব্যাখ্যা করেছেন। এটা সাইন্স।

তোর সমস্ত কথা মিলিয়ে দিলো কি করে।

মিত্রার দিকে তাকালাম।

বলে দিয়েছিল, আমি মরে যাব, আবার বেঁচে উঠবো, তারপর একটা ডন তৈরি হয়ে যাব।

তুই যে মরিসনি, এই কথাটা আর কেউ বলেনি, তবে জ্যোতিষদাদা বার বার বলেছে।

ফালতু কথা।

তুই যে আমার জীবনে অর্ধেকটা অংশ থাকবি না, তাও বলে দিয়েছিল। তোর সঙ্গে রেজিস্ট্রি হওয়ার আগে, যখন আমরা সবাই গেছিলাম তখন। বড়োমা, ছোটোমা সাক্ষী, সেই লেখা আমি তনুকেও দেখিয়েছি।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসছি।

তনুর সঙ্গে যে তোর একটা রিলেসন থাকবে এ কথাটাও জ্যোতিষদাদা উল্লেখ করেছে।

আমাকে দেখাস তো।

দেখাব। তুই তো তোরটাও দেখিসনি।

যাক ছেলে-মেয়ের ব্যাপারে কি বললো শুনি।

তোর ছায়া ওদের মধ্যে থাকবে। হয়তো কোনও কোনও ক্ষেত্রে তোকেও ছাড়িয়ে যাবে।

হুঁম। তনু তুমি কিন্তু বিপদ সীমা লঙ্ঘন করছো।

এখনও করিনি তবে করার ইচ্ছে আছে।

তনুর দিকে তাকালাম। মুচকি মুচকি হাসছে। চোখের ইশারায় বলছে একটু। তারপরই বললো।

মেয়ে, অনিকা কাল কি বলেছে শুনেছো।

কি।

তোমরা দুজনে মিলে বাবাকে নিয়ে ঠিক এনজয় করতে পারলে না। আমরা হলে দেখতে।

খিক করে হেসে উঠলাম।

তুই ওই রকমভাবে হাসছিস কেনরে। মিত্রা দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ঘুসি মারতে এলো।

আমি ওর হাতটা ধরে নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করলাম। মিত্রা বুকে ঢলে পরেছে।

জানিষ কাল ওদের পারফরমেন্সে সবচেয়ে বেশি খুশী হয়েছে অনিমেষদা।

সেটা অনিমেষদার চোখ-মুখ দেখে বুঝেছিলাম।

কালকে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল তাই না দিদি। তনু বললো।

কি বলতো। মিত্রা বললো।

ইংরাজীতে কথা বলা।

সেটা কিরকম? আমি বললাম।

তোমার ওই শিল্প দপ্তরের সচিবটা বেশি ইংরজীতে ফর ফর করছিল।

ওরা কিন্তু বাংলাতেই আলোচনা করছিল। তারপর পক্কে কোন একটা টার্মের বেশ একটা দাঁত ভাঙা বাংলা বললো। উনি বললেন প্লিজ ডিস্কাস ইন ইংলিশ। সেই যা ইংরাজী শুরু করলো, কেউ আর এক ফোঁটাও বাংলা বললো না।

অনিমেষদারা বাংলায় বলছে ওরা কিন্তু ইংরাজীতে বলছে।

সুন্দরের মুখটা তখন তুমি যদি দেখতে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

আমিন সাহেব আর কেষ্টবাবুর সে কি মুখ টিপে টিপে হাসি।

একচ্যুয়েলি ওরা অনিকাদের খুব আন্ডার এস্টিমেট করেছিল। আমি বললাম।

তোর মেয়ে কাল অনুজবাবুকে খুব ঝেড়ে দিয়েছে।

মিত্রার দিকে তাকালাম। তুই খুশী হোস নি?

ভীষণ। আমাদের থেকেও বেশি খুশী ছোটোমা।

ছোটোমা কি বলেছে বলো। তনু বললো।

মিত্রা হাসলো।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

ছোটোমা বলেছে অনি জীবনে অনেক কষ্ট করেছে, আজও যা কিছু করছে সব তোদের জন্য। ওর নিজের বলতে একমাত্র তোরা আছিস। আমি চাই তোরা ওকে একটু রিলিফ দে।

কথাটা শোনার পর অনিকা কেঁদে ফেলেছিল।

ছোটোমার কাছে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে বলেছে, জীবনে এমন কোনও কাজ করবো না, যাতে মামার মাথা হেঁট হয়ে যায়।

তারপরই ইসলামভাই-এর কাছে গিয়ে বলেছে, আজ থেকে ব্যাঙ্ক ছাড়া অন্য কোনও ব্যাপারে মাথা ঘামাবে না। তোমার যেটুকু ব্যবসা রয়েছে সব রতন আঙ্কেলকে বুঝিয় দেবে। ওখান থেকে ফিরে এসে আমি রতন আঙ্কেলদের সঙ্গে বসবো।

এরপর পিকুকে দেড়েমুশে দিল।

তোরা কি করছিলি?

দুই বোনের এলেম দেখছিলাম। বেশ মজা লাগছিল। ওরা বেশ হম্বিতম্বি করছে। আর সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

চলবে —————————–



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/vVUGELa
via BanglaChoti

Comments