কাজলদিঘী (২০৪ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

২০৪ নং কিস্তি
—————————–

চা কচুরী এলো। সোনা আন্টি জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।

তুমি কোথায় যাবে? বিধানদা বলে উঠলো।

ও ঘরে গিয়ে পাহাড়ায় বসি।

কেন!

মিত্রা, তনুর মুখ থেকে সব শোনো।

দিদিভাই আবার সোনা আন্টিকে ধরে ধরে নিয়ে গেল ওই ঘরে।

খেতে খেতে আমরা যা তোর কাছ থেকে জেনেছিলাম সব বললাম, অনিমেষদা সকাল থেকে যা যা ঘটেছে সব বললো। মাসীমনির কি অসুখ হয়েছে তাও গোপন করলো না।

বিধানদা সব শুনে হতবাক। মনটা একটু খারপ হয়েছিল। তারপর বললো।

তুমি একবার ভেবে দেখ অনিমেষ। রুমা যদি ওর আত্মীয়া না হয়ে আমার পরিচিত কেউ হতো আমার সব্বনাশ করে দিত ও। এরকম মুচ মুচে সংবাদ কে না খাবে বলো। আর কিছু হোক না হোক সোনায় একটু দাগ লাগতো। সেটাই বা কম কিসের।

একটু থেমে।

অতো ঘটনার পরও আমি যে রাজনাথকে স্নেহ করতাম সেটা ওর চোখে ধরা পড়ে গেছিল।

তারপরই অনিমেষদা বললো, বুঁচকি ফোন করেছিল।

কেন!

দুপুরের ফ্লাইটে দিল্লী যেতে বলেছে। বিকেলে মিটিং এ্যাটেণ্ড করতে হবে।

আমি আর পেরে উঠছি না অনিমেষ।

কেন! আপনি ওকে বোঝাতে পারেন নি?

কেউ যদি তার জায়গায় রিজিড থাকে কি করবো। কাল অনেক রাত পর্যন্ত ওকে বুঝিয়েছি। ঘরে গিয়ে আর খেতে ইচ্ছে করলো না। একগ্লাস জল খেয়ে শুয়ে পরলাম। মাঝে মাঝে অনির সঙ্গে নিজের অনেক মিল খুঁজে পাই। শেষে অনুজকে বলতে বাধ্য হয়েছি। অনির টিকিটা আমাদের থেকেও আরও অনেক ক্ষমতাবান মানুষের কাছে বাঁধা আছে। সেটা দেশ ছেড়ে বিদেশেও ছড়িয়ে আছে। তুমি ওকে আণ্ডার এস্টিমেট কোরো না।

আমি অনিমেষ ওকে স্নেহ করি বটে কিন্তু সেটারও নির্দিষ্ট একটা রিজিন আছে। ও আমাদের ক্ষতি চায় না। তারপর গাড়িতে আসতে আসতে অনুপ বললো, ও সকালর ফ্লাইটে দিল্লী গেছে। অনি ঘুম থেকে উঠলে একবার ওর সঙ্গে কথা বলো। ও কোনও কল কাঠি নেড়েছে কিনা। প্রবীর কিছু বলতে চায় না। শুনলাম অর্ক, অরিত্র ওর কাছে ঘুর ঘুর করছে। নির্দিষ্ট কোনও তথ্য অনুজের কাছে নিশ্চই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এতোটা জল ঘোলা, আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।

যিনি ফাইনান্স করবেন তিনি কি ভাবছেন বলো। নেহাত অনির খুব নিকট জন তাই…।

আমার কাছেও সেরকম একটা খবর এসেছে।

ওকেও আর বিরক্ত করতে ইচ্ছে করে না। বেচারা মুখ বুঁজে আমাদের যত আবদার ও শোনে। অন্য কেউ হলে শুনতো।

ওই তো সোনাদির জামাইটা। তাকে কত করে বোঝালাম। শুনলো। আমরা ওকে দেখিনি। এই কথাটা ও অস্বীকার করতে পারবে না। তা সত্ত্বেও কি করলো।

তোমার আমার অবস্থা অনেকটা শিখণ্ডির মতো।

আমি বৌদি এদিকটা সামলে নিচ্ছি। আপনারা বরং রূপায়ণকে দায়িত্ব দিন। অনুপদা বললো।

রূপায়ণ তোমার সামনে বসে আছে জিজ্ঞাসা করো, ও পর্যন্ত হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে।

আমার মতামত আমরা চুপচাপ বসে থাকি। অনিকে অনির কাজ করতে দিন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। রূপায়ণদা বললো।

তুমি প্রবীরের উদাহরণ দেবে। রূপায়ণ, প্রবীর আর অনুজ সমান নয়। বিধানদা বললো।

আপনি একবার ছেড়েই দেখুন না। আমাদের থেকেও অনির হাতে প্রচুর অপশন।

নম্রতা এসে গেটের সামন দাঁড়াল। মাসীমনি নম্রতার দিকে তাকিয়েছে।

কিরে মা। অনিমেষদা বলে উঠলো।

মশাই উঠেছে। দাদাই সবাইকে ডাকছে।

তুই এখানে আয়। অনিমেষদা ডাকল।

নম্রতা কাছে এলো।

মশাই কি বলছে?

কিছু বলছে না। দাদাই ট্যাঁক ট্যাঁক করে কথা শোনাচ্ছে। দিদাই, মা হাসছে।

মশাই কিচ্ছু বলছে না!

বললো বাড়ি শুদ্ধ সবাই ও বাড়িতে তোমরা স-পরিবারে আমাকে পাহাড়া দিচ্ছ?

মাসীমনি হেসে ফেললো।

দাঁড়াও, আমি রুমুর চেয়ার ঠেলে ও ঘরে নিয়ে যাচ্ছি তোমরা আমার পেছন পেছন এসো। দেখি ও কি বলে।

বিধানদা নিজে উঠে এলো।

মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

জানিস বুবুন তোর স্ত্রী হিসেবে আমি তনু দুজনেই ব্যাপারগুলো ভীষণ এনজয় করি।

এতে আমি কি পেলাম বল।

কি চাস বল।

একটু ঘুমতে চাই।

দুজনেই আমার ঠোঁট একবার করে ঠুকরে দিল।

তুই চাইলেও তোকে ঘুমতে দেব না। কতদিন পর আজ তোকে নিজের করে পেয়েছি।

কাল কিন্তু সারাদিন অনেক ঝামেলা ঝঞ্ঝাট আছে। তার ওপর রাতে পার্টি।

হোক, অনিমেষদা সমস্ত অনুষ্ঠানের দায়িত্ব রূপায়ণদা, অনুপদাকে দিয়েছে। হেল্পার ইকবালভাই, ইসলামভাই-এর টিম। পর্শু সকালে তোর ওখানে আফতাবভাই যাবে বলেছে। ওখান থেকে আজ বাসু, চিকনা, নীপারা আসবে। মীরচাচাকে ওখানের সমস্ত কিছুর দায়িত্ব রূপায়ণদা দিয়েছে। বার বার বলে দিয়েছে কোনও কিছুর যেন ত্রুটি না থাকে। প্রবীরদা সুকান্তকে পুরো ক্ষমতা দিয়েছে। উদয় ছেলেটা রেগুলার একবার করে তোর বাড়িতে গিয়ে হাজিরা খাতায় নাম লিখিয়ে আসে।

ভেতর ভেতর তোরা বেশ ভাল প্রোগ্রাম করে রেখেছিস।

আমাকে বলছিস কেন। তোর দুই মেয়ে, নাজমাদি সব প্রোগ্রাম করছে। বিকেলের দিকে রাঘবনের মেয়ে বনি, নাগেশ, নাতনি পিপটু আসছে। মনে হয় রাঘবনের স্ত্রীও আসবে।

নাঃ আমাকে ঘুমতেই হবে। না হলে কাল টানা যাবে না।

এর আগেও তুই দু-চারদিন না ঘুমিয়ে থেকেছিস। তারপর একবারে তিন-চারদিন ঘুমিয়ে উসুল করে নিবি।

দিদি আজকের ঘটনাটা জিজ্ঞাসা করো।

ও রে সূত্রধর। বেশ টুক টুক করে মন করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

দিলাম তনুকে একটা খোঁচা। উ করে উঠলো। ঝাঁপিয়ে পরলো আমার ওপর।

খুব ইন্টারেস্ট না।

ইন্টারেস্ট হবে না। এই সকাল বেলা দেখলাম রণং দেহি মূর্তি অমনি বিকেল বেলা কেঁদো বাঘ। তোমার কাছে যাদু কাঠি আছে তাই না। শয়তান।

দিল আমাকে অন্তর টিপুনি। আমি জলুনির চোটে আঁ আঁ করে উঠলাম।

তুমিও দেখছি সুরোর মতো হয়ে গেছ।

হব না। সারাটা জীবন দু-জনকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে মারলে।

বেশ তো জরামরি করে শুয়ে আছো। জ্বালিয়ে পুরিয়ে মারলাম কোথায়।

একটাও কথা বলবে না। দিদি যা যা জিজ্ঞাসা করবে তার ঠিক ঠিক উত্তর দেবে।

তুই কিছু বলতে পারছিস না। মিত্রার দিকে তাকালাম।

ওর অন্যায়টা কোথায় বল।

সাঁট গাঁট ভালই বেঁধেছিস। আমি হাসছি।

বল না অনুজ কেশটা কি। তোর কাছে অনেক কিছু জানার আছে। আগে অনুজের কেশটা শুনি।

অনেক কিছু মানে!

অনুজ, বিনদ….। আমরাও তোকে দুটো এক্সক্লুসিভ দেব।

আগে তোদেরটা দে।

আমাদেরটা শোনার জন্য তোকে তেল দিতে হবে না। তোরটা শোনার জন্য বড্ড তেল খরচ করতে হয়।

বলতে পারছো না। তনু দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে উঠলো।

একটু জল খাওয়াও।

তনু উঠে বসলো।

গেলাসে আনিস না। বোতালটা নিয়ে চলে আয়। মিত্রা বললো।

তনু টেবিলের ওপর থেকে জলের বোতলটা নিয়ে খাটের ওপর উঠে এলো।

গলায় ঢেলে দেব।

না তোমাকে এতোটা উপকার করতে হবে না।

তনু মুচকি মুচকি হাসছে।

জল খেলাম।

দুজনে মুখের দিকে তাকিয় আছে।

ওদের উৎসাহ দেখে হাসি পেয়ে গেল।

তুই না সত্যি….। মিত্রা বললো।

ওই জন্য মাসীমনি তেঁয়েটে বলে। তনু বললো।

জল খেয়ে আবার বালিশে মাথা দিলাম।

ওরাও নিজেদের একটু গুছিয়ে নিল। আমি ওদের রকম সকম দেখে হাসি।

হাসবি না। এবার বল।

কি বলবো।

অনুজ সেন।

অনুজটা প্রবীরদার থেকেও শেয়ানা। একচ্যুয়েলি ও ওর এলাকায় ফ্যাক্টরিটা করিয়ে কয়েকদিন পর বন্ধ করিয়ে দিত।

কেন!

এটাই ওর চাল ছিল।

ঠিক বুঝলাম না।

কামিং ইলেকসনের টাকা জোগাড় করা হয়ে গেলে ও একটা চাল চালত।

সেটা কিরকম।

ওর ইচ্ছে ছিল মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার, কিন্তু হতে পারেনি। নেক্সট ও প্রবীরদাকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবিদার প্রতিষ্ঠা করার জন্য জোর সওয়াল করতো। হাতিয়ার আমার তৈরি ফ্যক্টরি।

ফ্যাক্টরি বন্ধ করো না হলে আমাকে মুখ্যমন্ত্রীত্ব দাও।

বুবুন আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। সব মাথার ওপর দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। মিত্রা বললো।

সত্যি দিদি কি সাংঘাতিক বলো। আমি তুমি তো ওর কাছে নস্যি। তনু বললো।

আমি হাসছি।

ভেবে নাও গল্প বলছি। এটা যেন বাইরে প্রকাশ না পায়।

দুজনে আমাকে আষ্টে পৃষ্ঠে জাপটে ধরলো।

একচ্যুয়েলি একবারে প্রথম দিকে আমি ওই জায়গাতে প্রজেক্ট করার জন্য ঝুঁকে ছিলাম। প্রবীরদাই প্রস্তাবটা দিয়েছিল। প্রবীরদার সঙ্গে সেইভাবে কথাবার্তাও এগিয়েছিল। অনুজ ওর ডিস্ট্রিক্টে প্রজেক্টটা চাইছে। আমরা যদি জায়গার ব্যবস্থা করি তোর অসুবিধে কোথায়।

আমি বলেছিলাম ঠিক আছে।

তারপর আমার মুখ থেকে শ্যামরা কথাটা শুনে বেঁকে বসলো।

কেন? আমাদের এখানে করলে তোর কি অসুবিধে। আমরা একটু ভালভাবে বাঁচতে চাই, তুই চাস না?

বললাম ঠিক আছে। ঝামেলা হলে তোরা সামলাবি। ও বললো, তুই করবি কেউ ঝামেলা করবে না। অন্য কেউ করতে এলে হবে না।

শ্যামেদের বললাম প্রজেক্ট করতে গেলে তোদের ঝামেলা আগে মেটাতে হবে। ঝোলা ঝুলি করলে চলবে না। তাতে অনেক সমস্যা তৈরি হবে।

ওরা বললো, তুই পথ বার করে দে আমরা মিটিয়ে নেব।

শ্যামদের কথা মেনে নিলাম।

প্রবীরদাকে বললাম, দেখো শ্যামদের সঙ্গে নিগসিয়েসনের একটা রাস্তা বার করেছি। তবে তুমি যদি অনুমতি দাও।

প্রবীরদা সব শুনে বললো, আমি রাজি, দরকার নেই অনুজের ওখানে। ওরা যদি শান্ত হয়, আমার অনেক টেনসন কমে যাবে।

এদিকটা কে সামলাবে?

ও আমি ঠিক বুঝে নেব।

আমি সেইভাবে ঘুঁটি সাজিয়ে নিলাম। এদিকে কিন্তু গন্ধে গন্ধে অনুজ, অনাদি, সাগর গেম খেলে দিয়েছে। যা ঘুঁটি সাজাবার ওরা ততদিনে সাজিয়ে নিয়েছে। ইনভেস্ট নেহাত কম করে নি।

ব্যাপারটা এরকম পর্যায়ে চলে গেল অনুজের ওখানে প্রজেক্ট না হলে প্রজেক্টটা ক্যানসেল।

আমি কেমন যেন ধন্ধেতে পরে গেলাম।

কিছুদিন চুপচাপ। তোরা তখন দাদাকে নিয়ে তনুর ওখানে আছিস।

প্রবীরদা প্রায়ই খোঁচা লাগায়। বড্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। না পারছি ওগরাতে না পারছি গিলতে। তারপর অনুজবাবুর কথা বললো। এও বললো বেশ স্ট্রং লবি একটা তৈরি করেছে।

বিধানদা, অনিমেষদা পরিষ্কার বলে দিয়েছে। ওটা তোমাদের প্রশাসনের পার্ট। তোমরা কি করবে না করবে জানি না। প্রজেক্ট যেন স্টেটের বাইরে না যায়। বুঝলি অনি দুজনের কথায় এটুকু বুঝলাম আমাকে কোনও সাহায্য করবে না।

আমি চুপ চাপ শুনে গেলাম। বললাম অনুপদা, রূপায়ণদার সঙ্গে কথা বলেছো।

গালাগাল দিল।

হাসলাম।

অনুজবাবু ওই জায়গায় প্রজেক্টটা নিয়ে যখন এত আদা-জল খেয়ে লাগল তখন আমার কেমন যেন সন্দেহ হলো।

আমি অর্ককে বললাম ভাল করে খোঁজ নে। একটা ফাইল ওপেন কর।

অর্ক অনেক চেষ্টা চরিত্রি করে একটা নতুন নিউজ দিল, ওর সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বেশ ভাল সাঁট গাট। ওইই অনুজের মেন অপারেটর। সব কিছু ওইই দেখাশুন করে। বাইরে থেকে ও আইওয়াশ করে ওর সঙ্গে অনুজের হিঁচ আছে।

আমি বললাম তুই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নামে আর একটা ফাইল খোল।

মিত্রা, তনু আমার কথা শুনে হাসে।

নিজে অনেক ভাবলাম, গেমটা আমার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।

মাঝে মাঝে মিঃ মুখার্জীর কিছু কথা এখনও আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে।

একদিন ওনার অফিসে গিয়ে আড্ডা মারছিলাম। কথায় কথায় মিঃ মুখার্জী বলেছিল, জানেন অনিবাবু আমাদের দেশের অনেক জিওলোজিক্যাল সার্ভের রিপোর্ট দেশের বাইরে ভাল দামে বিক্রী হয়ে যাচ্ছে।

আর একটা ব্যাপার লক্ষ করবেন আমাদের দেশের টপ মোস্ট ব্যবসায়ীরা স্টেটের কাছে কয়েকটা পার্টিকুলার অঞ্চলের কয়েকটা জায়গা ব্যবসা করার জন্য চাইছে। তারা স্টেটের পছন্দ অনুযায়ী জমিতে ব্যবসা করতে চায় না। তারা নিজেদের পছন্দ মত জমিতে ব্যবসা করতে চায়। যেহেতু তারা ফাইনান্স করবে। স্টেট দিতে বাধ্য হয়। কারণ তাদের স্টেটে ইনভেস্ট হবে এখানকার লোকরা কাজ পাবে। অল আর ভোগাস বুঝেছেন।

আমি মুখার্জীর কথা মন দিয়ে শুনে যাচ্ছি।

এদের কাছে আমাদের মিনারেল রিসোর্সের স্যাটেলাইট পিকচার আছে।

এখন আমরা অনেক বেশি মর্ডানাইজ হয়েছি। খোঁড়া খুঁড়ি করে আর দেখতে লাগে না কোথায় মিনারেল আছে কোথায় নেই। মাটির তলার আট কিমি পর্যন্ত মিনারেল রিসোর্সের স্যাটেলাইট পিকচার আমরা পেয়ে যাচ্ছি। যদিও মোস্ট কনফিডেন্সিয়াল তবু বাইরে বেরিয়ে আসছে। পয়সার খেলা বুঝেছেন।

এই সব ব্যবসায়ীর কাছে আপনি সব ডকুমেন্টস পাবেন। আমরা বোবা, কালা হয়ে বসে আছি। সরকারী চাকরি করি। ওপর ওয়ালার হুকুম ছাড়া বেশি নাড়া-চড়া করতে পারি না। করলেই নিজের পেছনে নিজে নিয়ে বসে থাকবো।

এমনি উনি গল্পের ছলে কথা বলেছিলেন। তারপর ওনার এনকোয়ারি করা একটা ফাইলের জেরক্স আমাকে দিয়েছিলেন। এইরকম একটা গল্প তোদেরও হয়তো বলেছি।

হ্যাঁ। ফিরে এসে শ্যামেদের প্রসঙ্গে বলেছিলি। সেই জিওলজিস্টদের কোনও পাত্তাই আর পাওয়া যায়নি। মিত্রা বললো।

তোর মন আছে?

হ্যাঁ।

আমার মাথায় হঠাৎ ব্যাপারটা ক্লিক করলো। এরকম কিছু নয়তো? অনুজ কি আমাকে ফাঁসাতে চাইছে? দেশের ব্যবসায়ী হলে এককথা ছিল। আফতাবভাই বাইরের লোক। দেশীয় আইনে ওকে হাটিয়ে দিতে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। মাঝখান থেকে আমার সঙ্গে একটা তিক্ততার সম্পর্ক গড়ে উঠবে।

পাত্তা লাগালাম। ওই জায়গার সার্ভে রিপোর্ট জোগাড় করলাম। হ্যাঁ আমার ধারণা ঠিক।

তক্কে তক্কে থাকলাম।

শুধু আবহাওয়ার ওপর নজর রেখে গেলাম। আফতাবভাইকে বলে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। বললাম আজ নয় কাল আমাকে ঢুকিয়ো, এখন না। তুমি বরং অনিসাকে ইনভল্ভ করো। আমি পেছন থেকে খেলবো। প্রজেক্টের ভেতরে থাকলে আমি ঠিক ঠিক ভাবে খেলতে পারবো না।

ওর ইচ্ছে না থাকলেও দিদির কথায় মেনে নিল।

আমি আমার সোর্সকে বললাম তুমি শুধু আমাকে রিপোর্টটা মেল করে দাও। উনি আমার আইডিতে মেল করে দিলেন।

চুপ চাপ আছি। জল কতদূর গড়ায় দেখি।

কয়েকদিন আগে আমার সোর্স বললো, কয়েকটা ভাল ডকুমেন্টস আছে নিয়ে যান।

শুভকে পাঠালাম। নিয়ে এলো। বললাম স্ক্যান করে তোর সেকেন্ড ইমেল আইডিতে ঢুকিয়ে রাখ। একটা আমার অইডিতে ফরওয়ার্ড করে দে। ও তাই করলো।

মিত্রা তনু দুজনেই মুচকি মুচকি হাসছে।

এদিকে অর্ক খবর করলো গুরু একটা দারুণ নিউজ আছে।

বললাম কিরকম শুনি।

আয়ুর্বেদিক ডাক্তার কলকাতার কয়েকটা হাসপাতালে হাউসস্টাফের কাজ করছে। সরকারের নাকি পয়সা নেই।

গুল কম মেরে সঠিক নিউজ কালেকসন কর।

তোমার কাছে শেখা বিদ্যে কখনও বৃথা যায়।

কাল মালপত্র নিয়ে আয় দেখি।

যেদিন প্রথম মিটিং হল মেয়েদের সঙ্গে আমি ঘরে থাকলাম না। সেদিন ও ফাইলটা দিয়ে গেল।

আমি ভালকরে দেখে নিলাম।

সুমন্তকে বললাম তোর একটা নবিস চালাক-চতুর চেলুয়াকে দিয়ে মালটা ভেরিফাই করা। সাবধানে পা ফেলবি। মোস্ট কনফিডেন্সিয়াল। তাড়াতাড়ি আমাকে জানা। চিকনার ঘটনা ঘটে যাবার পরের দিন সুমন্ত, সুকান্তর হাতে ফাইল পাঠাল।

সব গুছিয়ে রাখলাম।

আগের ব্যাপারটা বুঝলাম এই ব্যাপারটা একটু বল। মিত্রা বললো।

কোনটা।

এই যে আয়ুর্বেদিক ডাক্তার জেনারেল হাসপাতালের হাউসস্টাফ।

দাঁড়াও দিদি একটু জল খেয়ে নিই। যা সব প্যাঁচ পয়জার। মাথায় ঢুকেও ঢুকছে না। তনু হাসছে।

ঢক ঢক করে দুজনে কিছুটা জল খেয়ে আমার শরীরে উঠে এলো।

আয়েস করে বললে, এবার শুরু কর।

আমি ওদের রকম-সকম দেখে হাসি। আবার শুরু করলাম।

আয়ুর্বেদিক ডাক্তারদের সংগঠনটা অনুজ দেখে। কোনও একটা আয়ুর্বেদিক হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটিতেও অনুজ আছে।

সাকুল্যে কলকাতায় হাসপাতাল গোটা কয়েক। ওয়েস্ট বেঙ্গলের অন্য কোনও ডিস্ট্রিক্ট-এ হয়তো আছে কিন্তু কোথাও সেইভাবে দানা বাঁধে নি। কতো লোক সেখানে চাকরি পাবে। তারপর মামা-দাদা আছে। কাকে ছেড়ে কাকে নেবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুজের ডিস্ট্রিক্টের লোক। তলে তলে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম একদম অনুজের পোঁ ধরা।

এখন কনিষ্কদের দয়ায় হাউস স্টাফেদের সংগঠনটা খুব একটা দুর্বল নয়। ওদেরও অনেক দাবি দাওয়া। কনিষ্ক মেন অপারেটর।

অনুজ কিন্তু বসে নেই ও ওর মতো লবিবাজি করে প্রেসার ক্রিয়েট করে চলেছে।

অর্ককে বললাম নিউজটা গুছিয়ে নামিয়ে দে। এখন হাতে রাখবি গ্রীণ সিগন্যাল দিলে অপারেশন চালু করবি। ছবি-টবি সব রেডি করেছিস।

মোবাইলে তুলেছি। খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি ওরা আয়ুর্বেদিক পাশ করা।

আফতাবভাই ইন্ডিয়ায় এসেই মিটিং-এ বসতে চাইল।

একমাত্র রাঘবনকে আমি সমস্ত ব্যাপারটা সংক্ষেপে ব্রিফ করেছিলাম। এও বলেছিলাম অনুজ যদি শেষ অবধি মানতে না চায় তুমি আলাদা ভাবে ওদের সঙ্গে কথা বলবে, আমি ঠিক সময়ে মেল পৌঁছে দেব। শুভকেও প্রিপেয়ার্ড থাকতে বললাম।

ওখানেও অনুজ হালে পানি পেল না। মেনে নিতে হল।

আমি জানতাম এর পরের স্টেপ ও রিজাইন দিয়ে একটা চাপ সৃষ্টি করবে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ। এ ছাড়া ওর কোনও গতি নেই। না হলে ওকে একঘরে হয়ে থাকতে হবে। সেটা অনুজ কিছুতেই মেনে নেবে না। ও সেটাই করলো।

আমি ঠিক এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। না হলে আমি আমার হাতের তাস ওপেন করতে পারছি না। আমারও কেমন যেন একটা জেদ চেপে বসেছিল, আমার এই প্রজেক্টের ফাইলে ওকেই শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সাইন করতে হবে।

মাঝখান থেকে কনিষ্ক একটু গুবলেট করে দিয়েছে।

কেন। মিত্রা বললো।

ধ্যুস তুমি কিগো মিত্রাদি কিচ্ছু মনে রাখতে পারো না। তখন অনিমেষদা কেমনভাবে এসে ওকে বললো দেখলে না। সবাই তোর কান ধরে এবার আমি তোর কান ধরবো। তখন কনিষ্ক ফোন করে অনিমেষদাকে জানিয়েছিল। তারপরেই তো অর্ক এলো। তারও কিছুক্ষণ পর বিধানদা ডাক্তারদাদা এসে বললো না মেঘ কেটেছে।

দাঁড়া দাঁড়া এবার মনে পড়ছে। এটা যে সেই ঘটনার সঙ্গে লিঙ্ক কি করে বুঝব।

আমার দিকে তাকিয়ে বললো, বাকিটুকু বল। তারপর তোকে ওখানে কি হয়েছিল বলছি।

অর্ককে আমি প্রবীরদা, অনুজের খুব ক্লোজে থাকতে বলেছিলাম। শুধু এটুকু বলেছিলাম একটা অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারে।

খবরটা ও প্রথম ম্যাসেজ করে। গুরু অনুজ রিজাইন লেটার দিল। প্রবীরদার চেলুয়াটা টিপ দিয়ে গেল। প্রবীরদার মাথায় হাত। এটাই কি তোমার অঘটন?

আমি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম হ্যাঁ। তুই এক কাজ কর তোর সেই নিউজটা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা কর। ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলে শুধু এই টুকু মন্ত্রী মশাইকে বুঝিয়ে চলে আয়, অনিদা কাল এই নিউজটা ছাপবে আপনি ফাঁসবেন, আপনার বসও ফাঁসবে। এই প্রজেক্টটা আটকাবার জন্য আপনারা সাঁটগাঁট করে উঠে পড়ে লেগেছেন। পুরোটা আপনাদের ঘারে দোষ চাপাবে। আর হাসপাতাল কেশটা ভাল করে ছুঁয়ে দে।

আচ্ছা আয়ুর্বেদিক ডাক্তার দিয়ে হাউসস্টাফের কাজ চালাচ্ছে ঠিক বুঝলাম না।

একটা হাউসস্টাফ রাখতে গেলে সরকারের মাসে ১৫ হাজার টাকা খরচ তার সঙ্গে আনুসাঙ্গিক আরও অনেক কিছু আছে। কিন্তু একটা আয়ুর্বেদিক হাউস্টাফ রাখলে মাসে ৫ হাজার খরচ। কে অতো খোঁজ রাখছে বলতো। দেখবি মাঝে মাঝেই হাসপাতালে পটাপট রুগী মরে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কে বুঝতে যাচ্ছে এ ব্যাটা আয়ুর্বেদিক ডাক্তার এ এমবিবিএস হাউসস্টাফ। গলায় স্টেথো ঝোলালে সবাই ডাক্তার।

যাক আমার কথা মতো অর্ক কাজ শুরু করলো। প্রথমে ওকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এন্টারটেন করেনি। ও তখন সচিবকে ডাইরেক্ট বলে, ওঁকে বলুন এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে, না হলে ওনার বিপদ আছে। একটা নিগোসিয়েসন করবো, তারপর চলে যাব।

সচিব অর্কর কথায় কি বুঝেছে। মনে হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে।

অর্ক গিয়ে মনে হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নরমে-গরমে ব্যাপারটা বলেছে। সে বেটা রেগে কাঁই। ঠিক ওই সময়ে কনিষ্ক মন্ত্রীর ঘরে ঢুকেছে। ওদের ডাক্তারদের ব্যাপর নিয়ে কি একটা মিটিং ছিল ওই সময়ে। অর্ককে দেখে ও অবাক। বুঝে গেছে কিছু একটা হয়েছে।

অর্ক তখন কনিষ্কর সামনে একতরফা খেলে গেছে। শেষে বলে এসেছে। রিজাইন উইথড্র করতে বলুন আপনার বসকে, না হলে কালকে আবার অনিদা একটা ঝড় তুলবে, আপনি এবং আপনার বস দুজনের তখন রিজাইন দেওয়ার শখ একবারে মিটে যাবে।

ও ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। কনিষ্ক তুরিদান অনিমেষদাকে ফোন। কেশটা এই।

অমনি অনিমেষদা সটাং ঘরে ঢুকে তোর কানে হাত। মিত্রা বললো।

আমি হাসছি।

তারপর বল।

অর্ক প্রবীরদার ঘরে ঢুকে প্রীরদার টেবিলে নিউজের এককপি জেরক্স দিয়ে চলে আসে।

এসেই আমাকে ম্যাসেজ করলো।

আমি বললাম দাদার অনুমতি চেয়ে নে খবরটা ছাপার জন্য। এখানে দুই মক্কেল আছে। খেলাটা ভালো করে বোঝ। আমার মনে হচ্ছে এতেই কাজ হয়ে যাবে।

কেন তোমার কাছে আরও মাল আছে!

আছে। সেটা পরের স্টেপ। প্রবীরদাকে কি বুঝলি।

মুখ গম্ভীর, চোখ হাসছে।

তারপর তো তোরা নিজের চোখেই সব দেখলি।

দুজনেই একটা করে বড়ো দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো। আমার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে। আমি একবার এর মুখের দিকে তাকাই একবার ওর মুখের দিকে তাকাই।

মুচকি হেসে মিত্রার কোমরটা টিপে বললাম ভাবছিস বুবুনটা কি বিষ।

না।

তাহলে।

কলেজ লাইফের বুবুনের সঙ্গে এই মুহূর্তের বুবুনের মিল খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি।

গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে।

সে হোক তবু মানুষটা একই আছে।

হয়তো আছে হয়তো বা নেই।

তোকে কি আমরা আর কখনও সেই ভাবে পাব না।

কেন, সেদিন গাছে উঠে আম-কঁয়েতবেল পারলাম। প্যান্ট ফাটালাম। তুই গালাগাল করলি। তনু কতক হাসলো। আর সবাই….।

সত্যি দিদি ভুলেই গেছিলাম। বলো বলো মেয়ে কি বললো। তনু চোখ বড়ো বড়ো করলো।

মিত্রা চোখে হাসছে।

সত্যি তুই মেয়েকে দেখিয়েছিস! আমি বললাম।

মিত্রা মাথা দোলাল। দেখিয়েছে।

ঠিক আছে আমিও তোর কলেজ লাইফের প্রেম-পত্র গুলো দেখাব।

দেখাস।

তনু নিশ্চই সেই সময় খুসবু নিয়েছে।

কেন, শুধু আমি কেন সবাই নিয়েছে। ছোটোমা, বড়োমা, জ্যেঠিমনি, আন্টি, মাসীমনি কাকে বাদ দেবে বলো না। তনু দাঁত মুখ খেঁচালো।

আবার মেনিবাঁদরের মতো মুখ করে।

দিলাম তনুকে অন্তর টিপুনি। তনু উ করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঝাঁপিয়ে পরলো।

আমি মিত্রাকে ঢাল বানালাম।

আবার কিছুটা ধস্তা ধস্তি। জড়াজড়ি।

তুই তো ও ঘর থেকে বেরিয়ে এলি। মিত্রা আবার কথা বলা শুরু করলো।

বিধানদা আমাকে ইশারা করে বললো, দেখতো ও ওই ঘরে গেল কিনা।

বিধানদার ইসারা করা দেখে মাসীমনির মুখ টিপে কি হাসি।

তোমরাও সত্যি….।

তুমি জানো না রুমু। মুখে কথা বলবে না, মোবাইলের কি গুলো পর্যন্ত ওর মুখস্থ। কি সব টেপাটিপি করবে ম্যাসেজ করে সব জানবে।

ঘরের সবাই দুজনের কথায় হাসে।

ও যে কতটা ধরিবাজ আপনি তো দেখছেন। বৌদি, মাসীমনির দিকে তাকিয়ে বললো।

অনিমেষদা তখন অনেকটা শান্ত। চুপচাপ সোফায় শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে।

আমি বাইরে এসে উঁকি দিলাম তুই অর্কর সঙ্গে হেসে কথা বলছিস।

আমি ঘরে ঢুকতেই বিধানদা, অনিমেষদার দিকে তাকাল।

বুঝলে অনিমেষ অনি আর একটা বিপদ ঘটিয়েছে। ওকে নিয়ে সত্যি আমরা ফেডআপ হয়ে যাব। তুমিও আজকাল মন দিয়ে সব কিছু দেখছো না। সবার সামনে বলা যাবে না। তুমি বরং সামন্তর কাছ থেকে শুনে নিও। আমি, অমিতাভবাবু অর্কর সঙ্গে কি কথা বলেছি।

তারপর মাসীমনির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো, বোনপোটি জব্বর। এক ছাঁচে ঢালা। মাসীমনির মুখের এক্সপ্রেসান তখন তোকে ঠিক বলে বোঝাতে পারব না। এতো স্যুইট লাগছিল মুখটা দেখতে।

তবে কি জানো রুমু তোমার আর ডাক্তারের কনভার্সেসন শুনে এটুকু বুঝেছি, তুমি অনেকদিন পার্টি থেকে ডিটাচ হলেও খোল-ননচেটা ভাল ধরতে পারো এখনও। রূপায়ণ, অনুপ, প্রবীর তোমাকে দেখেনি। অনিমেষ, সুতপা তোমাকে কাছ থেকে অনেকটা দেখেছে। তোমরা যেভাবে কাজ করতে, এরা সে ভাবে করে না। তাই পদে পদে বিপদ ডেকে আনে।

আর অনিটা দুনিয়ার তেঁয়েটে, ঠিক এই খবরগুলো জোগাড় করে। সময় মতো ক্যাশ করে।

তারপর শুধু তোর প্রশংসা। আফতাবভাই, দিদি শুনে অবাক।

তারপর আফতাবভাইকে জিজ্ঞাসা করলো আপনি বিনদের ব্যাপারে কিছু বার করতে পারলেন।

আফতাবভাই মাথা দোলাল। বললো আমাকে বলবে না, বললে ওর দিদিকে বলবে।

আমি কিছুটা খবর পেয়েছি।

আফতাবভাই অবাক চোখে তাকাল বিধানদার দিকে।

যে গ্যাংটা কলকাতায় এসেছিল সবকটাকে মনে হয় শ্যামের ওখানে পাঠিয়েছে।

আফতাবভাই একবার দিদির মুখের দিকে তাকায় একবার আমার মুখের দিকে তাকায়।

আমি হাসতে হাসতে বললাম, আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। দুই মেয়েকে ধরো। তবে ধরে লাভ হবে না। এখন শুভটা ওর এ্যাসিস্টেন্ট।

তখন আফতাবভাই বলে ও তো আমার সঙ্গে কথাই বলে না। তখন জিজ্ঞাসা করলাম লাস্ট আপডেটটা দে। বললো, তুমি তোমার কাজ করো, আমাদের কাজ আমাদের করতে দাও। তোমাকে কেউ ডিস্টার্ব করছে।

আফতাবভাই-এর কথা শুনে ঘরের সবার কি হাসি।

তোর দুই মেয়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে।

হাসতে হাসতেই বললো, আমরা ওখান থেকে ফিরে আসার পর পাত্তাই দিচ্ছে না।

ঘুরে ফিরে সেই এক কথা। ও যেমন আপনাদের বাঁচাচ্ছে, আমাকেও বাঁচিয়ে রেখেছে। আমার শত্রু ওর মিত্র আবার আমার মিত্ররাও ওর খুব ভাল বন্ধু। এই ক্যামিস্ট্রিটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না বুঝলেন বিধানবাবু।

মাসীমনির তখন কি হাসি।

বিশ্বাস করুণ মাসীমনি। ওখানে প্রতিদিন আমি, নাসরিন, বুঁচকি….।

একবারে ওই নামে ডাকবে না। তোর মেয়ে ঝাঁজিয়ে উঠলো।

সেই নিয়ে আবার কিছুক্ষণ হাসাহাসি।

ওখানে প্রতিদিন রাতে ডিনারেরে সময় আমি ওদের আমার কথা একটু একটু করে সব বলেছি। এও বলেছি, আমার সব চেয়ে বড়ো শত্রু বিনদ। বিনদ এখানে এসেছে সে খবর আমার কাছে ছিল। এখন তো শুনছি ও আমার মিত্র।

আচ্ছা বিনদ কেশটা একটু বল।

আগে তোদের এক্সক্লুসিভটা দে।

তোকে না বললে কাকে বলবো বল। মিত্রা আমার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল।

তনু হেসে বললো, মনে রাখবে আমারটা ডিউ স্লিপ রইল। এবার বিনদ কেশটা ছাড়ো।

কেন শুভর মুখে গল্প শুনেছো তো।

শুভ বলেছে বটে তবে সব বুড়ি ছোঁয়া। তবে অংশু কিছুটা আর নম্রতা কিছুটা বলেছে।

হ্যাঁ-রে অংশু অনুজবাবুকে কিছু বলেছে?

বলেছে হয়তো।

তখন অনিমেষদা আর বৌদিকে নরমে গরমে বেশ শুনিয়েছে।

অনিমেষদা তো অংশুর কথা শুনে অবাক। এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত অনিমেষদার সামনে মুখ তুলে কথা বলতো না। সেই অংশু….।

অংশুর আড়ালে অনিমেষদা বললো, ছেলেটাকে ভাবতাম ম্যাদা মারা। ওর দ্বারা চাকরি ছাড়া কিছু হবে না। অনি দেখছি ওর বুকেও আগুন জেলেছে। গত পাঁচ ছ-বছর ওদের বিয়ে হয়েছে। খুব বেশি হলে চব্বিশ ঘণ্টা আমার সঙ্গে কথা বলেছে।

এই প্রথম আমার চোখে চোখ রেখে কথা বললো। তাও আমার পার্টির একজন রিনাউন্ড মিনিস্টারকে নিয়ে। ও যে এরকম চাঁচাঁ-ছোলা ভাষায় কথা বলতে পারে, আমি জানতামই না।

সরাসরি অনিমেষদা, বিধানদাকে হিট করেছে।

দিদি নম্রতার কথা বলো। তনু বললো।

ওরে নম্রতার মতো মুখচোরা মেয়ে এই ক-দিনে পুরো বদলে গেছে।

মিত্রা শরীর কাঁপিয়ে হাসছে।

সেদিন দিদিভাই তোর সম্বন্ধে কি কথা বলেছে। বললো মামনি, মাকড়সার কটা চোখ বলোতো।

দিদিভাই ওর কথা শুনে একটু অবাক হয়েছে।

তনু কথা ঘোড়াবার চেষ্টা করলো। বললো, তুই জানিস।

প্রশ্ন যখন করেছি উত্তরও জানি, তাই জিজ্ঞাসা করলাম।

তুই বল।

আটটা।

আমরা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখ মুখ পাকিয়ে বলে চলেছে।

মশাইয়ের মাকড়সার মতো আটটা চোখ। তুমি বেচাল হলেই ধরা খেয়ে যাবে।

আমরা ওর কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসছি।

তুমি কি জান আমরা সব ভাইবোনেরাই কারুর না কারুর পেছনে স্পাই গিরি করি। এর থেকে তোমাকে আর বেশি কিছু খুলে বলতে হবে?

ওরে আমরা ওর কথা শুনে আকাশ থেকে পরি।

তুই কি বলছিস!

হ্যাঁগো মামনি।

তুই?

আমিও করি, বেশ মজা জানো। পিকুটা গাড়ল মশাইয়ের কাছে মাল বাগাতে পারল না। লাইফে যদি থ্রিল না থাকে বেঁচে থেকে লাভ কি। শুভটা আমাদের থেকে সবার আগে।

জানো মামনি, মগজটা কতো বড়ো অস্ত্র এতদিন জানতাম না। মশাইয়ের কাছে এসে শিখলাম, শরীরের থেকেও মগজের ক্ষমতা হাজারগুণ বেশি।

না মনি এবার যাই। উঠে চলে এলো।

দিদিভাই ওর চলন বলন দেখে অবাক। বলে কি, ছুটকি ভালোপাহাড় থেকে ঘুরে আসার পর আমি লক্ষ্য করছি নম্রতা, নয়না অনেক বেশি ডেসপারেট। আজ বুঝতে পারলাম ওর এই ডেসপারেট হওয়ার পেছনে কার হাত।

তনু বললো, সত্যি ইসিদি তুমি কি জেগে ঘুমও। আমরা বুঝতে পারছি তুমি বুঝতে পারছো না।

শুভকে সে দিন বড়োমা বললো, তোর দাদু ফোন করেছিল। দুদিন বাড়ি যাস নি, কি রাজকার্য করছিস শুনি।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর খুব গম্ভীর হয়ে বললো।

দিদান, দাদু এবার ফোন করলে বলবে এই উইকেটটা সহজে পরবে না। এই উইকেটটা নেওয়ার মতো বোলার এখনও পৃথিবীতে জন্মায় নি। আর যে নিতে পারে, বলতে পারো যার হিম্মত আছে, সে কোনওদিন আমাকে বল করবে না।

আমরা ওর কথা শুনে থ। কি কথার কি উত্তর।

বড়োমা কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।

তারপর বড়োমার দিকে তাকিয়ে বললো, অমন হাঁ করে রয়েছো কেন। দাদু-ঠাম্মার বড্ড ভয় বুঝলে। বংশে আমি একমাত্র আছি বাতি জ্বালাবার এটাই শেষ উইকেট। যদি পড়ে যাই।

ছোটোমা তেরে এলো কানটা ধরার জন্য। শুভ অমনি ঘর থেকে দে ছুট।

শেষে ঝালটা আমার আর তনুর ওপর এসে পরলো।

দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলো, সব তোদের দুটোর জন্য।

দিদি ও কিন্তু চোখ বন্ধ করছে। বিনদ কেশটা চাপা পড়ে গেল। তনু বলে উঠলো।

আমি তনুর দিকে তাকালাম।

তনু পাঞ্জাবীর ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিল।

তনু শু-শুরি লাগছে।

তনু বগলে কাতাকুতু দিল। জোড়ে হেসে উঠলাম।

তোর এখনও কাতাকুতু আছে।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে তখনও হাসছি। দুজনে আয়েশ করে আমার শরীরে ঠ্যাং তুল দিল।

বল।

শেষ পর্যন্ত কি বলেছিলাম ভুলে গেছি।

শুভ আমাদের বিনদের ইন্ট্রোটা দিয়েছে। তুই এবার তোর মত বলতে পারিস।

আমি বিরাট একটা হাই তুললাম।

হাই তুলবি না। গলার মধ্যে আঙুল চালিয়ে দেব।

আমি হাসলাম।

শুরু কর শুরু কর। মিত্রা আরও কাছে ঘেঁসে এলো।

একচ্যুয়েলি মিঃ মুখার্জীর মৃত্যুর দিন থেকে বিনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বারে। তার আগে ওদের সঙ্গে আমার দাদা ভাই-এর সম্পর্ক। কখনও কোন কাজ ওদের দিয়ে করাইনি।

মিঃ মুখার্জীকে মেরেছিল টডি। ও বুঝতে পেরে গেছিল কোন একটা সূত্রে মিঃ মুখার্জী ওর ওপর নজরদারি করছে। কিন্তু কার কথায় নজরদারি করছে সেটা ও ধরতে পারেনি। ও এটা নিশ্চিত জানতো, যে ওর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে সে মরে গেছে।

তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

টোডি আবার আফতাবভাই-এর এ্যান্টি গ্রুপের স্পনসরার।

বিনদ কাজটা করার পরই আমি ওকে ইন্ডিয়াতে পাঠিয়ে দিই। ফলে ও দল ছুট হয়ে যায়। ওকে বলি তুই ইন্ডিয়াতে নিজের দল তৈরি কর। আজ নয় কাল টোডি তোর খবর পাবে। তার আগে তুই টোডির দলে ভিড়ে যা। আমার কাজ আছে। তুই আফতাবভাই-এর এ্যান্টি হয়ে যা। তাহলে টোডি তোকে খুব তাড়াতাড়ি কাছে টেনে নেবে। বাকিটা আমি বুঝে নেব।

তখন বিনদের স্পনসর আমি। সব খরচ আমাকে জোগাড় করতে হতো। তখন আমার প্রচুর টাকার দরকার। বাধ্য হয়ে দালালি করতাম। এই দেশের সঙ্গে ওই দেশের বিজনেস ম্যানদের দালালি। এক একটা ড্রিলে ভাল টাকা রোজগার হতো। নিজের খরচ রেখে বাকিটা ওদের হাতে তুলে দিতাম। আমার ক্লায়েন্ট জোগাড় করার দায়িত্ব ছিল বিনদের।

আস্তে আস্তে এইসব বিজনেস ম্যানদের সঙ্গে বিনদের ঘনিষ্ঠতা হলো।

পাশাপাশি নিজেও বকলমে বিজনেস শুরু করলো।

চলবে —————————–



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/B0fW3Ku
via BanglaChoti

Comments