কাজলদিঘী (২১১ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

২১১ নং কিস্তি
—————————–

প্রায় এক ঘণ্টা পর আবার রওনা হলাম।

এবার ছেলে মেয়েরা আমাকে তাদের গাড়িতে টেনে নিয়ে গেল।

আমার অবস্থা দেখে মিলি মিত্রারা হেসে গড়িয়ে পরে।

নেপলা এগিয়ে এসে বললো, আগে বুকিং করলাম, চক থেকে আমার গাড়িতে। পেট ফুলে যাচ্ছে।

আমি গিয়ে ছেলে-মেয়ের গাড়িতে উঠলাম।

অনিকা, অনিসা, নম্রতা মাঝের সিটে বসে ছিল। আমি ওদের মধ্যে নিজেকে গুঁজে দিলাম।

শুভ ড্রাইভিং সিটে। অনন্য, সুন্দর সামনের সিটে পেছনে পক্কে, ঘণ্টা, বসির, পিকু।

পক্কেদা। শুভ গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বললো।

বল।

তোর কিন্তু খবর আছে।

আর খবর। জানে বেঁচে আছি এই যথেষ্ট।

অনিকা আমার মুখের দিকে তাকাল। চোখে মুখে হাসির ছটা।

আমি অনিকার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে। ভ্রু-টা এমনভাবে নাচালাম অনিসা, নম্রতা জোড়ে হেসে উঠলো।

দেব না এমন….। অনিকা তেরে এলো।

শুভ তুই দেখলি না। মেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।

কি?

অনন্য, সুন্দর পেছন দিকে ঘুরে তাকালো।

বাবা দিদিভাই-এর দিকে তাকিয়ে এমনভাবে ভ্রু-টা নাচাল না।

আমি অনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে। হাসছি। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।

পক্কে।

বলো।

দিদিভাই-এর জিনসটা দেখেছিস?

বাথরুমে গেছে কিনা বলতে পারবো না।

চিমটে শরীরে মাংস তুলে নেব। অনিকা আমাকে খিমচে ধরলো।

কি হবে কালকের থেকে পক্কে বলবে নরমাংস ভোজী।

হাসি থেমে নেই।

শুভ ছাগল-টাগল দেখে চালাস বাবা। আমি বললাম।

সে আর বলতে আন্টির কাছে গল্প শোনা হয়ে গেছে।

বাবা ঘটনাটা কোথায় ঘটেছিল। মেয়ে বললো।

চল দেখিয়ে দেব।

বসির বাংলা শিখেছিস?

কুছ কুছ

কি রকম?

নমস্কার, ভালো আছে, পানথা।

অট্টহাসিতে চারিদিক ম ম করে উঠলো। ওর পানথা কথা শুনে আমিও হাসছি।

বাবা তুই তো দামি কথাটা শিখে ফেলেছিস।

তুম মেরা সাথ গসিপ মাত করো।

কি করে বুঝলি?

ম্যায় জানতা হু, তুমারা পাস মেরে কে লিয়ে কুছ পেটেন্ট স্টোরি হ্যায় ও তুম সবকো সামনে বাতায়োগে।

তাই! বাবা বলো বলো। মেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।

বসিরভাই। নম্রতা চেঁচাল।

বাত ও নেহি ইয়ে সব মামাকো দিমাক সেহি আতা।

আমি পেছন ফিরে তাকালাম।

বসির হাসছে।

ঘণ্টা অনিকারটা দিয়ে শুরু কর।

উঁউউ। অনিকা নাকি সুরে চেঁচিয়ে উঠলো।

আমি হাসছি। ঘণ্টার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলাম।

ঘণ্টা একবারে মেরে ফেলবো বলে দিচ্ছি।

মামাকে বল। মামা বলতে বলেছে।

ম্যায়…. মোতে….। ঘণ্টা চেঁচিয়ে উঠলো।

খুব খারাপ হয়ে যাবে। অনিকা আমার মুখ চেপে ধরেছে।

হাসি কনটিনিউ।

আঙ্কেল এই মাঠটা খুব ডেঞ্জার তাই না?

শুভর কথায় জানলার দিকে চোখ রাখলাম।

হ্যাঁ।

বহুত লম্বা।

এই রাস্তায় এই মাঠটাই সবচেয়ে লম্বা। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার।

পাঁচ কিলোমিটার! অনিসা বলে উঠলো।

শুধু চাষের জমি ছাড়া কোনও লোক বসতি নেই। মাঝে মাঝে দূরে দূরে যে খড়ের চালা দেখছিস ও গুলো শ্যালো টিউবওয়েল। গ্রীষ্মকালে চাষের কাজে জল তোলা হয়।

আগেকার লোকজন এই পথে চলাফেরা করতো কি করে?

হেঁটে।

হেঁটে! অনিকা বললো।

কি করবে। গাড়ি তো হালে হয়েছে। এই বছর পঁয়ত্রিশ হবে।

আমি যখন প্রথম কলকাতা গেলাম, বাড়ি থেকে ভোর বেলা বেরিয়েছিলাম। পৌঁছলাম প্রায় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয় হয়।

ইমপসিবিল। নম্রতা বললো।

হ্যাঁরে। তখন সারাদিনে মাত্র দুটো গাড়ি চলতো। সকালে একটা, বিকেলে একটা। তাও লোক হতো না। কে চরবে। এখানকার মানুষ তখন গাড়ি চরতে ভয় পেত। যদি গাড়ির চাকা খুলে গাড়ি উল্টে যায় তাহলে বেঘরে প্রাণটা যাবে।

তুমি কি বলছো! মেয়ে বললো।

হ্যাঁরে। তার থেকে চারটি মুড়ি গামছায় বেঁধে গড়ুর গাড়িতে আসা ভাল। সকাল সকাল স্টেশনের কাছে বাজারে এসে, বিকেল বিকেল ফিরে যাওয়া যেত। তখন স্টেশনের কাছে সপ্তাহে একবার হাট বসতো। শহর থেকে ব্যাপারীরা আসতো। তখন আমাদের কাছে চকটা ছিল শহর। আমি, চিকনা, বাসু, ভানু, আমরা পাঁচ-সাতজন বন্ধু সব দল বেঁধে সপ্তাহান্তে একবার চকে আসতাম বাস দেখবো বলে। তখন আমরা ক্লাস নাইনের ছাত্র।

গ্রামে পাল্কি, গরুর গাড়ির পর দ্রুত গতির যান বলতে সাইকেল। তাও গ্রামের ঘরে যাদের একটু পয়সা আছে তারা সাইকেলে চড়তো।

ওরা আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। প্রত্যেকের চোখে মুখে বিষ্ময়ের ছটা। শুভ স্থির দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে। কান পেছনে। আমার কথা শুনছে।

আমাদের গ্রামের ঘরে তখন একটা রেওয়াজ ছিল। বিয়ের সময় মেয়ের বাবা জামাইকে যৌতুক দিত ঘড়ি, আংটি, বোতাম তার সঙ্গে একটা সাইকেল। এখনও নেই বললে ভুল হবে। হাঁড়িপাড়া, ডোমপাড়া, তাঁতীপাড়ায় এই রেওয়াজ আছে। আমরা কখনও হেঁটে কখনও সাইকেলে চেপে চকে আসতাম মটোরগাড়ি দেখার জন্য।

তখন আমরা বাস বলতাম না মটোরগাড়ি বলতাম।

সকালের মটোরগাড়ি দেখার সুযোগ হতো না। ওটা ভোর ভোর যেত। বিকেলের গাড়িটা, যেটা স্টেশন থেকে ফিরে যেত সেটা দেখতাম। আধা পিচের রাস্তা তার ওপর ধুলো উড়িয়ে ভোঁ করে মটোরগাড়ি চলে যাচ্ছে। পিছনে ধুলোর কুণ্ডলি বাসটার পেছন পেছন ছুটছে। বাসটা যতক্ষণ না আসতো ততক্ষণ বেশ উৎকণ্ঠায় সময়টা কেটে যেত, এই আসবে এই আসবে। বার বার রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়াতাম, বাসটার মুখ দেখা যায় কিনা। যখন দেখতে পেতাম তখন ভীষণ আনন্দ হতো, যতক্ষণ কাছে না আসতো রাস্তার মাঝখান থেকে সরতাম না। ড্রাইভার আমাদের চিনে নিয়েছিল। আমাদের দেখতে পেলেই দূর থেকে হর্ণ বাজাত, আমরা হই হই করে রাস্তার মাঝখান থেকে ধারে চলে আসতাম। প্রথম প্রথম বাসটা লোক না নামলে বা উঠলে দাঁড়াত না। পরে আমাদের পাগলাম দেখে দাঁড়াত। যেই বাসটা চলে যেত, মনটা খারাপ হয়ে যেত। আবার আগামী সপ্তাহ। সাতদিন।

সেই থেকে ভোলার বাবা পরিদার সঙ্গে আলাপ পরে ঘনিষ্ঠতা। কতোবার কাকার কাছে গেছে নিজের কাজের জন্য। কাকা তো তখন এই তল্লাটের মাতব্বর।

আমি জীবনে প্রথম ট্রেনে-বাসে চাপি স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষা দেওয়ার পর। যখন মৌসুমি মাসির বাড়ি ভালোপাহাড়ে গেলাম।

নম্রতা নিজের সিটে একাশি হয়ে বসে ঝুঁকে পরে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

তোরা ভাবছিস আমি গল্প বলছি? একটুও না। বাস্তব সত্য।

বাসে চেপে কোথায় যাব বল। টেন পর্যন্ত পায়ে হেঁটে স্কুল। জুতোর কোনও বালাই নেই। একটা হাওয়াই চপ্পল ছিল। সপ্তাহে একদিন চকে আসার সময় পড়ে আসতাম। আর কোচিন বলতে উনা মাস্টার। বর্ষা কালে স্কুল বন্ধ। চারদিকে জল আর জল। বন্যা হয়ে যেত। জল একটু নামলে সিং-এর ঘরের নৌক নিয়ে স্কুল যেতাম। মাঝি কখনও চিকনা, কখনও আমি, কখনও ভানু।

তুমি নৌক চালাতে পার! নম্রতা বললো।

গ্রামের ঘরে সকলে নৌক চালাতে পারে।

ওরা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।

বসির আমার ঠিক পেছনে বসে ঘারে নিঃশ্বাস ফেলছে।

এখন তবু পিঁচের রাস্তা হয়েছে। এদিক সেদিক মোরাম ফেলা হয়েছে। তোর মা যেই বার প্রথম এখানে এলো সেই বার কিংবা তার মাস খানেক আগে প্রথম মোরাম ফেলা হয়েছিল। তাও অর্ধেকটা রাস্তা। তায় আবার মনে হয় এক বর্ষার জলে মোরাম ধুয়ে রাস্তার কোথাও কোথাও মাটিও দেখা যাচ্ছিল।

তার আগে সব মাটির রাস্তা। বর্ষাকালে এক হাঁটু কাদা। আড়াই ঘণ্টার হাঁটা রাস্তা যেতে লাগত চার ঘণ্টা। তখন হাঁটার ভয়ে কেউ চকে আসতাম না।

সূর্য ডুবলে কেউ আর ঘর থেকে বেরতো না। আর দিনের বেলা কারুর যদি স্টেশন চত্বরে আসার দরকার পরতো, দশ-বারজন একসঙ্গে হেঁটে পার হতো।

কেন! অনিসা বললো।

ডাকাতের ভয়।

তখন স্টেশনে আস্তে গেলে লোকে হেঁটে আসতো! অনিকা বললো।

কি বলছো! নম্রতার চোখে বিষ্ময়।

হ্যাঁ। ঠিক বলছি।

নম্রতা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

গুটি কয়েক লোক তখন তাদের ব্যবসার কাজে এখানে আসতো। সারাদিনে একটা গাড়ি চলতো। সেই গাড়ি সকালের দিকে ওই দিক থেকে ছেড়ে আসতো, আর সূর্য ডোবার আগে ফিরে যেত।

তখন কলকাতা থেকে ট্রেনে বাসে আমাদের চকে আসতে সময় লাগতো প্রায় ন-ঘণ্টা। তারপর চক থেকে পাক্কা আড়াই ঘণ্টার হাঁটা রাস্তা।

তারমানে কলকাতা থেকে সকালে বেরলে বিকেলে বাড়ি পৌঁছতে! অনিসা বললো।

এখন সেটা সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা।

আচ্ছা তুমি যখন প্রথম কলকাতায় এলে তখন অতো লোকজন দেখে ভিরমি খেয়ে যাও নি? শুভো বললো।

সে আর বলতে। সে গল্প বললে তোরা আমাকে আস্ত একটা ছাগল বলবি।

বলো বলো, একটু শুনি। অনিসা বলে উঠলো।

আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসছি।

বলো না, ওরকম করো কেন।

একটা ক্যাণ্ডি দে।

ঘুষ?

মাথা দোলালাম।

কিতনা লাগেগা বসির বলে উঠলো।

আরি ব্যাটা তুইও তো দেখি টুক টুক করে কথা বলতে শিখেগেছিস।

হাম সব কুছ থরি থরি সামাঝতা হ্যায়। পক্কেকে পাস ট্রেনিং লিয়া।

অনিকা মুখ টিপে হাসছে। বসির একটা ক্যাণ্ডি দিল। আমি মুখে দিলাম।

শুরু করো। মেয়ে তাড়া লাগালো।

চকে চিকনারা সবাই বাসে তুলতে এসেছিল। স্টেশন পর্যন্ত সব ঠিক ঠাক ছিল। ট্রেনেও খুব একটা অসুবিধে হয়নি। কেননা ওটা আমার দ্বিতীয়বার ট্রেনে চাপা।

ট্রেনে জায়গা থাকতেও বসিনি। মনাকাকা যে টিনের বাক্সটা কিনে দিয়েছিল, গেটের ধারে রেখে সেটার ওপর বসে ছিলাম।

কেন! অনিকা বললো।

কাকা বার বার বলেছিল, ট্রেনে বাসে চোরের উপদ্রব একটু অসতর্ক হলেই চুরি যায়। তাই বলে…! অনিসা বলে উঠলো।

তারমানে একবারে বিহারীবাবু কি বলো আঙ্কেল। শুভ বললো।

হ্যাঁ মোটা মুটি ওইরকম।

অনিসা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

তারপর বলো।

প্রথম গুবলেট হলো হাওড়া স্টেশনে নেমে।

ট্রেন থেকে নেমে অতো লোকজন দেখে প্রথমে একটু ভিরমি খেলাম। বাক্সটাকে কোলের কাছে নিয়ে কিছুক্ষণ প্ল্যাট ফর্মে থেবড়ে বসলাম। ভিড়টা কমে যেতে উঠে দাঁড়ালাম। স্টেশন থেকে বেরবো কি করে! রাস্তা কোথায়? সাত পাঁচ ভাবি।

আমি যে ট্রেন থেকে নামলাম সেই ট্রেনটা লোক ভর্তি করে আবার চলে গেল।

শুনশান স্টেশন।

এদিক ওদিক তাকাই। লোক দেখি।

তারপর আবার ট্রেন এলো। লোকজন নমলো। এবার আমি উঠে দাঁড়ালাম।

ট্রেন থেকে নেমে ওরা যে দিকে হাঁটা লাগাল আমিও ওদের পেছন পেছন বাক্স কাঁধে সেই দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

তখন হাওড়াতে সাবওয়ে হয় নি। সবে তার কাজ শুরু হয়েছে। স্টেশনের সামনে বিশাল মাটির পাহাড়।

প্রথম ঠোক্কর খেলাম টিটির কাছে। আমার সামনে দিয়ে কতজন চলে গেল কাউকে ধরলো না। আমার হাতটা খপ করে চেপে ধরলো। টিকিট।

বললাম, বাথরুমে যাব।

আবার হাসি শুরু।

কেন! অনিকা বললো।

থাম না খালি বক বক। পক্কে বিরক্ত হলো।

আমি হাসছি।

ব্যাটা কি বুঝলো কে জানে। বললো চল থানায়।

হাত ধরে হিড় হিড় করে টানতে শুরু করলো। আমার তো চোখ মুখ শুকিয়ে আমসি। কি করে তাকে বোঝাই আমার কাছে টিকিট আছে বাথরুমে না গেলে বার করতে পারব না।

তারমানে! নম্রতা বলে উঠলো।

আমি হাসি।

সে এক রহস্য বুঝলি। এখন ওসব কথা মনে পরলে আমার নিজেরই হাসি পায়।

কেন পকেটে টিকিট ছিল না?

না।

বুঝলাম না।

পক্কে দেখছিস, অনিকা কিরকম হ্যাঁ করে গিলছে, পরে একটু একটু করে মামার কাহিনী ছাড়বে।

বলো না। অনিকা বলে উঠলো।

এই পার্টটা থাক।

কেন থাকবে। অনিকা চেঁচিয়ে উঠলো।

আর একটা ক্যাণ্ডি দে।

কেন।

গলা শুকিয়ে গেছে।

দিচ্ছি আগে শুরু করো।

আগে দে মুখে দিই।

অনিকা ব্যাগ থেকে একটা ক্যান্ডি বার করে আমার হাতে দিল। মুখে দিলাম।

আসার আগের দিন উনামাস্টার, অনাদিমাস্টার পাখি পড়ার মতো করে বুঝিয়েছিল। কলকাতায় চোর ছ্যাঁচড়া পকেটমার-এর শেষ নেই। টাকা পয়সা গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ এমন জায়গায় রাখবি যেন কেউ সহজে হাত দিতে না পারে। ট্রেনে ওঠার আগে টিকিট কাটবি। টিকিট যত্ন করে রাখবি। টিকিট হারিয়ে গেলে টিকিট চেকার তোকে জেল খাটিয়ে ছাড়বে। আরও কতো কি।

তখন তো এতো পাকা ছিলাম না। তখন কাঁচা মাটির তাল। কলকাতা চলে আসবো। আমার আনন্দ কিন্তু আমার বন্ধু বান্ধবদের মনটা ভাল নয়। বিশেষ করে চিকনা।

রাতে চিকনা আমার কাছে শুয়েছিল। ওর সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করলাম। বললো এক কাজ কর, তুই তো জাঙ্গিয়া পরিস না পরলে ভেতরে ঢুকিয়ে নিতিস তাহলে বেশ শেফ। মানুষের সবচেয়ে সেন্সেটিভ জায়গা ওটা।

তুমি তখন কি পরতে? নম্রতা চেঁচিয়ে উঠলো।

অনিসা জোরে হসে উঠলো। বললো।

তুমি এতদিন ঘটনাটা জানতে না?

না!

বাবা কৌপিন পরতো।

সে তো সন্ন্যাসীরা পরে!

সেই নিয়ে আর একটা ঘটনা আছে ভজুমমার সঙ্গে, তোমাকে বলবো।

সেই ছেলেদেরটা না কিনে মেয়েদেরটা কিনেছিল।

নম্রতা কথা শেষ করতে পারলো না। আবার একচোট হাসি।

হাসি থামিয়ে মেয়ে বলে উঠলো পরের টুকু বলো।

আমি আবার শুরু করলাম।

চিকনার কথায় মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।

সুঁচ সুতো বার করলাম। চিকনা বলে উঠলো সুঁচ সুতো নিয়ে কি করবি। বললাম, দাঁড়া মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। কৌপিনের কিছুটা অংশ কেটে….।

জাঙ্গিয়ার বুক পকেট। শুভ ড্রাইভ করতে করতে চেঁচিয়ে উঠলো।

আবার হাসির ঝড়। অনিকা হাসতে হাসতে আমার গায়ে ঢলে পড়েছে। চোখে জল।

বোন আর হাসতে পারছি না। অনিকা বলে উঠলো।

দাঁড়া না শুনতে দে না। পক্কে পেছন থেকে আবার বলে উঠলো।

খুব ইন্টারেস্ট না।

পক্কে চুপ করে গেল।

সত্যি মামা তুমি একটা জিনিষ। না বাজালেও বাজো। ঘণ্টা বললো।

টিকিট তার মধ্যে রেখেছিলে, সেই জন্য বাথরুম খুঁজছিলে। মেয়ে বলে উঠলো।

আমিও ওদের সঙ্গে হাসছি। হাসতে হাসতেই মাথা দোলালাম, হ্যাঁ।

তারপর বলো।

হাসি থামিয়ে আবার শুরু করলাম।

টিটি ব্যাটা আমাকে ওদের ঘরে নিয়ে এলো। দেখলাম সেখানে আরও অনেক টিটি।

যত বলি আমার কাছে টিকিট আছে কে কার কথা শোনে।

তখন আমার বুক ধুক পুক করছে।

টিকিট থাকতেও এই ব্যাটারা হয়তো আমাকে জেলে ভরে দেবে। নানা লোকের নান কথা। আমার মুখ চোখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে।

প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ভাল-খারাপ আছে। একজনের আমার মুখটা দেখে হয়তো করুণার উদ্রেক হলো। সে বললো, সত্যি তোর কাছে টিকিট আছে?

আছে।

যে ব্যাটা ধরে এনেছিল সে তরপে উঠলো।

আকাশ থেকে নিয়ে আসবি।

না। আমার কাছে আছে।

বার কর।

তখন আর লজ্জায় বাথরুম বলতে পারিনি। বললাম একটু আড়ালে যেতে দিন বার করে দিচ্ছি।

কি বুঝলো কি জানি। ওই ভাল টিটিটা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, যা ও ঘরে যা।

ধরে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম।

মিনিট খানেক সময় নিয়েছিলাম। পাজামার দড়িটা খুলে ফটাকসে টিকিটটা বার করে এনে হাতে দিলাম।

ওরা আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়।

কোথা থেকে বার করলি!

আমার কাছে ছিল।

জাঙ্গিয়ার মধ্যে?

আমি মাথা নীচু করে আছি।

ওরা হাসাহাসি করছে। এই প্রথম ওরা এরকম একটা আজব জীব দেখছে।

এবার আমার ইন্টারভিউ শুরু হলো। কোথা থেকে আসছি কি বৃতান্ত সব। সে একবারে আসামীকে জেরা করার মতো।

একটা জায়গায় আমি রাজা ছিলাম বুঝলি। পড়াশুনো। আমাকে ওদের রেজাল্ট পর্যন্ত বাক্স থেকে খুলে দেখাতে হয়েছিল।

তখন ওই ভাল টিটিটা বললো, তুই এতো ভাল ছেলে এরকম গোবর গণেশের মতো রয়েছিস। স্মার্ট হবি, না হলে এ দুনিয়ায় সকলে মাড়িয়ে চলে যাবে। কথাটা মনে ধরলো। কি খেয়েছিস?

মাথা দোলাই, কিছু খাইনি।

তারপর ওরাই আমাকে মিষ্টি, চা-বিস্কুট খাওয়াল। আমাকে ওই ভাল টিটিটা জিজ্ঞাসা করলো তুই কোথায় যাবি, সব বললাম। উনি তখন বাসে তুলে দিয়ে গেলেন।

বাসে তুলে দেওয়ার সময় কন্ডাক্টরকে বলে দিয়ে গেল আমি কোথায় নামবো।

এও বললো, ও প্রথম আজ কলকাতায় এসেছে। রাস্তাঘাট ঠিক মতো চেনে না। উল্টোপাল্টা জায়গায় নামাবি না। ঠিক জায়গায় নামিয়ে দিবি।

আমাকে পই পই করে বুঝিয়ে দিল কোথায় নামব কি বৃতান্ত। বাসের শেষ সিটে কন্ডাক্টর যেখানে দাঁড়ায় তার পেছনের সিটটায় বসিয়ে দিয়ে গেল। সিটের তলায় বাক্সটাকে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়ে তার ওপর পা রাখলাম।

প্রথম শহরের বাসে উঠলাম। পনেরো পয়সা ভাড়া দিলাম।

বাস চলছে তো চলছেই। রাস্তা আর শেষ হয় না। জীবনে প্রথম শহর দেখছি। শহরের মানুষ দেখছি। তখনও আমার কথায় গাঁয়ের টান। শহরের লোকেদের বেশ কিছু কথার শব্দ বুঝতে পারিনি।

বইতে হাওড়ার ব্রিজের গল্প পড়েছি। তাকে চাক্ষুষ দেখলাম। তার ওপর দিয়ে গাড়ি চড়ে এলাম সে এক অসাধারণ অনুভূতি। বড়বাজারের গল্প শুনেছি। স্ব-চক্ষে দেখলাম। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় নেতাজীর স্ট্যাচু। তখন জানতাম না। আমার ভাগ্য বিধাতা কাছে পিঠেই কোথাও আমার অদৃষ্টের লিখন লিখে রেখেছে। টালার ট্যাঙ্ক। এগুলো সব বইয়ে পড়েছি। আজ চাক্ষুষ দেখছি। বিটি রোড। রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটি।

বেলঘরিয়াতে গিয়ে যখন বাস থেকে নামলাম তখন সন্ধ্যে হয় হয়।

কন্ডাক্টরকেই শুভঙ্কর বাবুর ঠিকানাটা দেখালাম। সে বললো।

একটা রিক্সা নিয়ে চলে যা। চার আনা নেবে।

তখন একটু সাহস সঞ্চয় করে ফেলেছি। বললাম, আপনি একটু বলে দিন কিরকম করে যেতে হবে, আমি ঠিক চলে যাব।

উনি পথটা বলে দিলেন। বাক্সটা কাঁধে চাপিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।

পেছন থেকে একজন চেঁচিয়ে উঠলো, ব্যাটা গাঁইয়া মাল তুই ওকে রিক্সা দেখাচ্ছিস।

গোটা কয়েক ধাক্কা খেয়ে, জিজ্ঞাসা করতে করতে স্যারের বাড়িতে যখন পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। চারটে দিন স্যারের বাড়িতে ছিলাম। প্রথম রাতটা খুব কষ্ট হয়েছিল।

কেন! মেয়ে আমার মুখের দিকে তাকাল।

গ্রামের ছেলে। বেশি ভাত খেতাম। স্যারের স্ত্রী আমাকে এমন ভাত দিল ওটা আমার কাছে নস্যি। পেটে খিদে তবু মুখে কিছু বলতে পারলাম না। লজ্জায়।

পরদিন স্যারের সঙ্গে কলেজে এলাম। কলেজ দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ।

এতো বড়ো পাকা বাড়ি আমি জীবনে প্রথম দেখছি। তার ওপর অতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে কি সুন্দর সুন্দর জামা-কাপর পরেছে। আমি পরেছি একটা পাজামা আর হাফ-সার্ট। গায়ে কাঁচা মাটির গন্ধ।

এর কাছে আমার টালির চাল মাটির দেওয়ালের হাইস্কুল নস্যি।

স্যার কলেজে ঢোকার সময় বললো।

অনি।

স্যার।

এই কলেজে কারা কারা পড়েছে জানিস?

না স্যার।

বিবেকানন্দ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র আরো অনেক বড়ো বড়ো মনিষী পড়েছেন।

সে তো জেনারেল এ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউসন।

হ্যাঁ। এটাই সেই জেনারেল এ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউসন। পরে এই মহাবিদ্যালয়ই স্কটিশ চার্চ কলেজে রূপান্তরিত হয়।

ইতিহাস বইতে পড়েছি।

কেন জানি না। ওই প্রথম দিনই এদের নাম শুনে আমি কেমন চার্জড হয়ে গেছিলাম। সেদিনই মনকে বুঝিয়েছিলাম, অনি তুই কখনও এদের মতো হতে পারবি না। যদি ছিটে ফোঁটা কাছাকাছি যেতে পারিস তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করবি।

এতো বড়ো বড়ো মানুষ এই কলেজে পড়েছেন! আমি এই কলেজে পড়বো!

আমার কাছে সব যেন স্বপ্ন।

কলেজে ভর্তি হলাম। হোস্টেলে থাকার বব্যস্থা হলো। স্যারের বাড়ির পাঠ চুকিয়ে চলে এলাম হোস্টেলে। শুরু হলো নতুন জীবন। আমার জীবনের আর এক অধ্যায়।

তোমাদের রিসেপসন হয় নি? মেয়ে বললো।

সেটা কি বলতো!

নবীন বরণ।

সেরকম কিছু হয় নি। তবে প্রথম দিন কলেজে গেছিলাম নটার সময়। স্যার বলেছিল নটা পনেরো থেকে প্রেয়ার হয় তার আগে কলেজে ঢুকবি। প্রেয়ারের সময় কলেজের হলঘরে উপস্থিত থাকবি।

কলেজের এ্যাসেম্বলি হলে একটা ডায়াস ছিল। ওখানে একটা পিয়ানো ছিল। সেটা বাজিয়ে ইংরাজীতে গান হতো। প্রথম প্রথম বুঝতাম না কি হয়। ওই মাঝে মাঝে সুরের সঙ্গে সুর মেলাতাম। পরে আস্তে আস্তে রপ্ত হয়ে গেছি।

বছরে তিন চারবার ফাংসন হতো। কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের সঙ্গে নতুন ছাত্রদের মিলন হতো। আরও কতো কিছু। ওই ডায়াসে অনেকবার প্রোগ্রাম করেছি।

মায়ের সঙ্গেও। মেয়ে হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকালো।

হ্যাঁ।

আচ্ছা বাংলা নিয়ে পড়ে তুমি প্রফেসার না হয়ে সাংবাদিক হলে কেন।

মেয়ের মুখের দিকে তাকালাম।

মুচকি মুচকি হাসছে।

টুয়েলভ পাস করে যখন বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হলাম। সেই সময় আমাদের সঙ্গে একটা মেয়ে ভর্তি হয়েছিল। তার বাবা সাংবাদিক ছিলেন। তখন সেই ভদ্রলোকের কলকাতায় বেশ নামডাক।

প্রায়ই দেখতাম তাঁর লেখা কাগজে বেড়তো। নামটা কালো মোটা অক্ষরে ছাপা।

সে ক্লাসে ঢুকলেই আমাদের বন্ধুবান্ধবরা তাকে ছেঁকে ধরতো। তোর বাবার লেখাটা আজ দারুণ হয়েছে। মেয়েটার গর্বে মাটিতে পা পড়তো না।

প্রফেসাররাও ওকে একটু আলাদা চোখে দেখতো।

আমার সঙ্গে ওর খুব রেশারিশি ছিল। কিছুতেই আমাকে টপকাতে পারতো না।

আমি আমার মতো। কম বেশি কথাও শোনাতো।

ওইই প্রথম ফিস ফিস করে রটিয়েছিল। আমি ড. রায়ের কোলের ছেলে। ড. রায় হেড ডিপ থাকলে অনিকে কেউ টপকাতে পারবে না। তবে ওর বাবার ফ্লেভার টুকু ছাড়া ওর বিশেষ কিছু ছিল না।

তখন জানতে না, মা কাগজের মালিকের মেয়ে?

না। তোর মা বেশ চুপ চাপ থাকত। তবে গাড়ি করে কলেজে আসতো। বুঝতাম বেশ পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে।

ওই মেয়েটির বাবা যেহেতু সাংবাদিক তাই ওর একটা দলবল ছিল। আমার বন্ধু বান্ধব খুব সীমিত। তবে ওকেও বেশ কয়েকবার আমার নোট দিয়েছি। পয়সা নিইনি।

কেন!

যদি আমাদের শত্রুতাটা একটু কমে।

মেয়ে, অনিকা, নম্রতা তিনজনেই হাসছে।

কিন্তু ভবি ভোলবার নয়। ওপর ওপর বেশ ভাল ব্যবহার করতো, ভেতর ভেতর ছুড়ি চালাত। তোর মা এসে আমার ওপর তরপাতো, তুই এত গাধা কেন।

কেন?

তুই ওকে তোর নোট দিলি।

ও হজম করতে পারবে না।

তোকে বলেছে।

তোর মার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম।

জানিস ও টেরিফিক মুখস্থ করতে পারে। তোর থেকে নম্বর বেশি পেয়ে যাবে।

আমি আর একটা নোট বানিয়ে নেব।

তখন আমি সত্যি গাধা ছিলাম। তোর মা কেন এসব বলে বুঝতাম না।

মাঝে মাঝে আমার ওপর ভীষণ তেণ্ডাই-মেণ্ডাই করতো। কোমরে কাপরটা জড়িয়ে এমন ভাবে তেরে আসতো যেন এই গালে একটা সজোরে কষিয়ে দিল। সে অনেক ব্যাপার বুঝলি।

মেয়ে, নম্রতা, অনিকা আমার দিকে তাকিয়ে সমানে মুচকি মুচকি হাসছে।

অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেলাম। ওই মেয়টা শুনলাম সেকেণ্ড ক্লাস পেয়েছে। আমার থেকে প্রায় কুড়ি নম্বর কম। ড. রায়ের কাছে গেলাম। বললো, এম.এ-তে ভর্তি হও। আমি আমার বন্ধুকে বলে রেখেছি।

স্যারকে আমার মনের কথা জানালাম।

স্যার শুনে প্রথমটায় একটু অবাক হলেন। তারপর বললেন, তোমার যখন ইচ্ছে হয়েছে তাহলে জার্নালিজম নিয়ে পড়ো। শুভঙ্করকে বলো, ওর পরিচিত একজন সিনিয়ার জার্নালিস্ট বর্তমানে মনে হয় কাগজের সম্পাদক হয়েছেন ভাল পরিচয় আছে।

আবার শুভঙ্করবাবুকে গিয়ে ধরলাম। জার্নালিজমে ভর্তি হলাম।

আঙ্কেল চিকনাদা দাঁড়িয়ে। শুভ বললো।

সামনের দিকে তাকালাম কয়েক ফার্লং দূরে চক। গ্রামের অনেককেই দেখতে পেলাম।

ভানুর গাড়িটা একপাশে দাঁড় করান।

শুভ গাড়িটা ঘুরিয়ে পরিদার দোকান থেকে একটু এগিয়ে দাঁড় করাল।

অনিসা।

বল।

আঙ্কেলের কাছে কিন্তু ছাগলের স্পটটা দেখা হলো না।

তোর জন্য।

কত কিছু জানতে পারলি, সেটা বললি না।

সরি, থ্যাঙ্কস।

যে যার নেমে চলে গেল। আমিও গাড়ি থেকে নামলাম। বসির আমার পাশে দাঁড়িয়ে। অবাক হয়ে চারদিক দেখছে।

চিকনা এগিয়ে এলো। মিটি মিটি হাসছে।

কিরে কেমন আছিস?

ভাল।

বসির এগিয়ে গিয়ে চিকনাকে জড়িয়ে ধরলো।

চারপাশ কেমন দেখছিস?

আই কান্ট ইমাজিন।

ওইটা পরিদার চায়র দোকান।

চিকনা, বসিরকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে।

তুমুল হাসির চোটে পেছন ফিরে তাকালাম।

চলবে —————————–



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/BS47qeD
via BanglaChoti

Comments