কাজলদিঘী (১২৪ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

১২৪ নং কিস্তি
—————————

এদিকে দামিনী, দিদিকে কুট কুট করে সব লাগিয়েছে। তিনি কাল রাতে ফোন করেছেন। তুমি ওখানে আছো, ও এরকম বে-আক্কেলে হয় কি করে। ধমকাতে পারো না।

এর উত্তর কি দেব। আমার এখন ওখানে যেতেই ভয় করছে। যাক তবু ইসলাম আর ইকবাল ফিরে আসছে, এই রক্ষে।

যাও যাও ঘুরে এসো। এতো ভাবতে হবে না। কোনওদিন কোথাও যাও নি। এক কাজে দু-কাজ হয়ে যাবে। আমি বললাম।

অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট হাসি হাসলো।

এই বললে ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করবো না। এই বলছো…., অনি কনোদিন খারাপ কাজ করে না।

শুধু টেনসনটা একটু বাড়িয়ে দেয়। অনিমেষদা বললো।

তোমার আবার কিসের টেনসন?

হ্যাঁ, আমি তো মানুষ নয়। দিনে দিনে বয়স কমছে।

আমার পাওনাগুলো কি করলে?

একটাও পাবি না। আগে নিজেকে শুধরোবি তারপর।

বৌদি ফুলে ফুলে হাসছে। মিলিরা আমাদের কথায় বেশ মজা পাচ্ছে।

নাও স্নান করে নাও, সকাল থেকে অনেক খাটা খাটনি করেছো, খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমিয়ে পরো।

আনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

দুপুরে রূপায়ন, অনুপ আসছে। তোর সঙ্গে বোঝাপড়া করবে।

আমি অফিসে যাব।

তোকে যাওয়াব। বৌদি বলে উঠলো।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

কোথায় যাচ্ছিস?

ও ঘরে গিয়ে একটু শুই। তোমাদের এখনও এক ঘণ্টা বাকি।

বাইরের বারান্দায় আসতেই দেখলাম মিলি মেয়েটার কান ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে আসছে। আর এক হাতে সুরোর ছেলেটাকে চেপে ধরেছে।

দুটোতেই চিল চিৎকার জুড়ে দিয়েছে।

ওদের এই হঠাৎ চিৎকারে বৌদিরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। দামিনীমাসি হুটোপটি করে ওপর থেকে নেমে এসেছে।

আমি ছুটে গিয়ে ধরলাম।

এ কি করছো!

ছাড়ো, ছাড়ো। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো।

একবারে গায়ে হাত দেবে না।

মিলি রেগে আগুন।

ওরা ছোটো, দোষ করতেই পারে।

বৌদি এগিয়ে এসে মিলির মেয়েটাকে কোলে নিল।

সে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় করে দিয়েছে।

সবাই এসে বারান্দায় ভিড় করেছে।

আমি সুরোর ছেলেটাকে কোলে নিয়েছি।

মিলির মুখ লাল হয়ে গেছে।

কি হয়েছে বলবে তো। আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম।

দেবো না পিঠে এক থাপ্পর।

মিলি এগিয়ে গেছে মেয়েকে মারার জন্য।

এতো রাগলে চলে।

কিরে মা কি হয়েছে। মিলির মেয়েটার গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে বললাম।

মা মেরেছে।

কেন মেরেছে, তুই সত্যি কথা বল, আমি মাকে মারবো।

হিসি করেছি।

বৌদি হেসে উঠলো।

এই জন্য মেরেছে।

মিলির মেয়ে ফোঁপাচ্ছে।

আমি মিলির দিকে তাকালাম।

কি হয়েছে বলবে তো।

জিজ্ঞাসা করোনা দুজনকে, কি করছিল।

দোষ ওরা করেছে, ওরা বলবে না, তুমি বলো।

হিসি করে ছবি আঁকছিল।

আমি একটা বিটকেল হাসি দিলাম, কনিষ্ক হো হো করে হেসে উঠলো।

মিলির দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকালাম।

টিনা।

টিনা হাসছে, বলো।

নির্মাল্যকে একবার ফোন করো। এই কেসটা একমাত্র নির্মাল্যই সমাধান করতে পারবে। ওর কিঞ্চিৎ এই ব্যাপারে অভিজ্ঞতা আছে।

এত রাগের মধ্যেও মিলি এবার হেসে ফেললো। আমার পেটে একটা খোঁচা মারলো।

সব সময় বিটকেল বুদ্ধি না।

মেয়ে প্রথমটা ঠিক ধরতে পারে নি। তারপর হঠাৎ জোড়ে হেসে বললো।

হিসি করে নাম লেখা।

হ্যাঁ, একেবারে বাপকা বেটি। মিলি বলে উঠলো।

কনিষ্ক হেসেই চলেছে।

মিলি একবার ডাগর চোখে আমার দিকে তাকাল।

সুরো তুই মাম্পি আর মিকিকে স্নান করিয়ে দে।

তখনও হাসি বন্ধ হয় নি।

তাহলে নির্মাল্যর কেসটা শুধু গল্প নয়। সত্যি ঘটনা বল। কনিষ্ক বললো।

তোমাকে কেউ সাউকিরি করতে বলেছে। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো।

ওরা সবাই হাসছে।

আমি, কনিষ্ক এ ঘরে চলে এলাম। ওরা ও ঘরে চলে গেলো।

দুপুরের খাওয়াটা খুব জোড়দার হলো। সবাই এসেছে। রূপায়ণদা, অনুপদা এলো আমাদের খাওয়া শেষ হবার পর।

তারপর রেডি হয়ে ওরাও খেতে বসলো।

আমি, নির্মাল্য, দেবাশিস, কনিষ্ক, নীরু এঘরে এলাম। মেয়ে ওষুধ দিয়ে গেল।

বুঁচকি, সকাল থেকে একটা ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছিস। নীরু জিজ্ঞাসা করলো।

হ্যাঁ।

আর ক দিনের আছে?

কালকের দিনটা হবে।

আমাকে একবার মনে করিয়ে দিবি। কাল রাতে নিয়ে আসবো।

ঠিক আছে।

মার সঙ্গে কথা বলেছিস?

হ্যাঁ।

বাবার কীর্তি শুনিয়েছিস?

মাসিদিদা বলেছে।

বানিয়ে বানিয়ে বাবার নামে বেশি বেশি করে বলবি।

মেয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।

ট্রেণ্ড নার্স বুঝলি অনি। ওর হাতে তোকে দিয়ে আমি নিশ্চিন্তে ছিলাম। ও চলে গেলে মাসিকে ফিট করতে হবে।

সিগারেট খাবি?

দেবাশিস বললো।

দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে আয়।

নির্মাল্য উঠে গেলো।

দেবাশিসের প্যাকেট থেকে সবাই সিগারেট নিল। আমিও একটা নিলাম।

কনিষ্ক নার্সিংহোমের হাল হকিকত কেমন।

বারাসত আর বালিগঞ্জ ফাঁড়িরটা রি-মডুলেশন শুরু করেছি। তোর তৈরি করা বোর্ডের অনুমোদন নিয়েছি। সবাই একমত হয়েছে। স্যার ওখানে গিয়ে কিছু মর্ডান মেশিন-পত্র দেখেছেন সেগুলো আনাবার মনস্থির করেছি। সব নার্সিংহোমেই পাঁচটা করে নতুন ইউনিট চালু করবো।

টাকা-পয়সা আছে?

এখনও অব্দি লাগবে না। লাগলে তোর সঙ্গে আলোচনা করবো। তবে আগের থেকে আমাদের নার্সিংহোমগুলো অনেক বেশি ইমপ্রুভ করেছে। ও হ্যাঁ রতন বলছিল, ওদের মুর্শিদাবাদের কি একটা জায়গার নাম করলো, ধ্যুস মনে পড়ছে না, আমরা যদি একটা ব্রাঞ্চ করি।

জায়গা?

বাস রাস্তার ওপর রতনদের নিজস্ব একটা জায়গা আছে। ওদের পরিবার দেবে বলেছে।

পয়সা কড়ি।

লাগবে না। শুধু সাধারণ মানুষের জন্য ফ্রি চিকিৎসার একটা ব্যবস্থা রাখতে হবে।

আমাদের সব কটা নার্সিংহোমে আউটডোর আছে না?

হ্যাঁ। মিনিমাম একটা টিকিট কেটে দেখাতে হয়।

যদি মনে করিস সামলাতে পারবি তাহলে এগো। টাকা পয়সা?

জোগাড় হয়ে যাবে।

কথা শুনে মনে হচ্ছে তোলা তুলবি।

কনিষ্ক হাসছে। ঠিক তা নয়, তবে রতনের থেকে চাঁদ বেশি উৎসাহী। দুজনে পাশাপাশি গ্রামের ছেলে। আবিদ অবশ্য একটু দূরে থাকে।

রতনটাকে ধরে বিয়ে দে।

দুটোর কেউ করবে না।

আবিদ বিয়ে করেছে?

করেছে, তবে অনুষ্ঠান কিছু হয় নি। তোর এরকম হলো, দাদার এই অবস্থা, পরিষ্কার বলে দিয়েছে, অনিদা সুস্থ হলে অনুষ্ঠান, না হলে নয়।

জায়গাটা একবার দেখে আয়। ইসলামভাই, ইকবালভাইকে সঙ্গে নিয়ে যাবি।

ওটা বল। নীরু বললো।

আমি নীরুর দিকে তাকালাম।

তুই বল।

কেনো, খিস্তি খেলে আমি খাব, তুই হাসবি।

নীরু দাঁত কেলাচ্ছে।

কি হয়েছে?

সরকারের কাছে একটা মোটা টাকার বিল পাবো। নক্কা-ছক্কা করছে।

কিসের জন্য!

আমাদের নার্সিংহোম একটা টেণ্ডার সাবমিট করেছিল। চিকিৎসার ব্যাপারে। ওরা সেটা এ্যাপ্রুভ করেছিল। সেই ভাবেই ওদের সচিব পর্যায়ের লোকের ট্রিটমেন্ট করাতো। আমাদের একটা ক্লজ ছিল যে কোন সময়ে আমাদের রেট চেঞ্জ হতে পারে। ওরা বলেছিল সিক্স মান্থের আগে করা যাবে না। আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা এখন সেই ক্লজটা মানতে চাইছে না।

নিজেরা এসে ভর্তি হয়েছিল না স্বাস্থ্য দফতরের রেফারেন্স।

স্বাস্থ্য দপ্তর এ্যাপ্রুভ করেছিল, কাগজপত্র সব রেডি কিন্তু ফাইনান্স ডিপার্টমেন্ট আটকে রেখেছে।

অনিমেষদাকে বলেছিস?

এই সব কথা বলা যায়।

অনুপদাকে বলতে পারতিস।

আমার দ্বারা হবে না। একটা কথা মাথায় রাখিস, তুই যে ভাবে অনিমেষদাকে বলিস, আমরা চেষ্টা করলেও সেই ভাবে কোনওদিন বলতে পারবো, কখনই না।

চুপ করে থাকলাম।

হাসপাতাল থেকে বেরনো ভালো ভালো ছেলেগুলোকে পিকআপ করছিস।

করছি।

টাকা পয়সা দেওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রাখিস, না হলে দেখবি ঘরের বেড়াল অন্যের বাড়িতে গিয়ে খেতে শুরু করেছে।

তোর কাছে এসব খবর আসে কি করে?

সত্যি কথা বলতে কি, অনুমান করি। আমার কাগজের লোকজনদের দিয়ে তোদের বিচার করি। জাস্ট স্ফেয়ারটা আলাদা। আমি ওই জায়গায় থাকলে কি করতাম।

সবাই চুপ করে আমার কথা শুনছে।

সবাই পেটের জন্য করে। তুই যদি তার পেটের তাগিদটা ঠিক মতো সামলাস তাহলে সমস্যা নেই। দ্বিতীয় কাজ করে স্যাটিসফেকশন। তোকে এই দুটো সামলাতে হবে।

ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

আমার ইচ্ছে আছে, আমাদের যে ট্রাস্টি বোর্ড আছে তাকে কিছুটা মডিফিকেশন করা।

কি রকম! কনিষ্ক বললো।

আঠারো বছর আগে ডাক্তারদাদা একটা ট্রাস্টি বোর্ড করে সমস্ত নার্সিংহোমগুলোকে একটা ছাদের তলায় নিয়ে এসেছিল।

এখনও সেটাই মেইনটেন হয়। আমরা কিছু করতে গেলে সেই ট্রাস্টি বোর্ডের পার্মিশন নিতে হয়। তবে প্রত্যেকটা নার্সিংহোমে কিন্তু একটা করে আলাদা আলাদা বডি আছে।

জানি। এটাকেই একটু এডিশন অল্টারেশন করবো। সরকারী কিছু কাগজপত্র তৈরি করতে দিয়েছি। করা হলে তোদের সব জানাব।

একচ্যুয়েলি আমার ইচ্ছে একটা প্রাইভেট ট্রাস্টি করা। তাও সেটা হবে কয়েকটা পরিবারের মধ্যে। বংশ পরম্পরায় তারাই এই ট্রাস্ট মেইনটেন করে যাবে। তাহলে প্রাইভেট ব্যাপারটাও থাকবে আবার ট্রাস্টিও হবে।

কনিষ্ক, নীরুর চোখ চক চক করে উঠলো।

ব্যাপারটা আর একটু খুলে বল।

দক্ষিণেশ্বর মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন প্রত্যেকটা ট্রাস্টি বোর্ড কন্ট্রোল করে। ওরা নাম দিয়েছে অছিপরিষদ। সরকার এদের ছুঁতেও পারে না। কিন্তু সরকারী নানা সুযোগ সুবিধা এরা সবার আগে পায়। কেন?

মাথায় রাখবি সবই কিন্তু প্রাইভেট ট্রাস্ট। নিজেদের ইনকাম নিজেরা খরচ করে। সেখানে দেখবি প্রপার্টি বারে, লোকের ইনভলভমেন্ট বারে। আবার নিজেদরও খুব ভালোভাবে চলে যাচ্ছে।

প্রাইভেট লিমিটেডের ক্ষেত্রে তুই একটার বেশি দুটো করতে যাবি দেখবি অনেক হেপা। রেডক্রস, রোটারি ক্লাবের কথাটা একবার মাথায় রাখ দেখবি সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। আমাকে কিছু আর বলতে হবে না।

আমি অনেক ভাবে ব্যাপারগুলোকে নিয়ে ভেবেছি। বলতে পারিস এখনও ভাবছি। তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেবো। আজ তোরা আমার ভালো বন্ধু। একদিন তুইও থাকবি না। আমিও থাকব না।

তাহলে কি এই প্রতিষ্ঠানগুলো উঠে যাবে? নিজেদের মধ্যে বিরোধ বাধতেই পারে। প্রপার্টি বিক্রিকরে যে যার ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেবে। আমি তা চাই না। অনেক রক্ত জল করে তিলে তিলে এগুলোকে রক্ষা করেছি। আমি এর দীর্ঘায়ু চাই। তার একটাই রাস্তা ট্রাস্টি। ট্রাস্টি এখানে মালিক, আমরা সবাই তার সেবাইত। অনেকটা দেবত্তর সম্পত্তির মতো। প্রপার্টিটা দেবতার। তাহলে আর কেউ টেঁ-ফুঁ করবে না। মারামারি কাটা কাটি বন্ধ। সিনিয়ারিটি বেশিসে একজন প্রধান নির্বাচিত হবে, সে যাকে যা দায়িত্ব দেবে সে তা পালন করবে। এই ভাবে ব্যাপারটা এগিয়ে চলবে।

তোর মাথায় বুদ্ধিটা এল কি করে! নীরু বললো।

আমার সঙ্গে গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের এক মহারাজের হৃদ্যতা আছে প্রায়ই যাই তাঁর কাছে। তাঁর কাছে রাণী রাসমনির তৈরি করা ট্রাস্ট ডিডটা দেখেছিলাম। মহারাজের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে ডিডটা জেরক্স করে নিয়েছিলাম। তখন কেন করেছিলাম বলতে পারবো না। বলতে পারিস জিনিসটা আমার মনে ধরেছিল তাই। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী হয়তো আজ সেটা বৃক্ষে পরিণত হতে চলেছে।

অনিমেষদার সঙ্গে আলোচনা করেছিস? কনিষ্ক বললো।

এখনও করিনি। সবাই ফিরে আসুক, তারপর কথাটা পারবো। দেখি ওদের মতামত কি।

আইডিয়াটা ভীষণ ভালো। দেবা বললো।

তোদেরগুলোও ওইরকম একটা কিছুতে নিয়ে যাবার চিন্তাভাবনা করেছি।

একটু থামলাম।

দেখ দেবা কাজের স্বাধীনতা প্রত্যেকটা মানুষ চায়, আমি যেমন চাই, তুইও চাস।

একবারে ঠিক কথা।

না হলে দেখবি সব ব্যাপারটা কেমন একঘেয়েমি হয়ে যাচ্ছে।

সত্যি কথা।

আজ আমি তুই বসে যেটা চিন্তা-ভাবনা করছি। আমার ছেলে মেয়ে, তোর ছেলে মেয়ে সেই চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করবে, এটা নাও হতে পারে। কিন্তু তুই যদি একটা গণ্ডী টেনে দিস, দেখবি ওরা কেউ তার বাইরে বেরিয়ে কাজ করবে না।

তোদের সঙ্গে বসে কেন এই সব ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছি তাই তো?

দেবা হাসছে।

ভাবছিস সবতো তোদের ফ্যামিলির প্রপার্টি।

না, এখনও এভাবে ভাবি নি।

তুই ভাবিস নি। তোর ছেলে মেয়ে যে ভাববে না তা নয়।

অনেক দূর কি বাত।

এখানেই আমরা মরেছি।

তোরাও ব্যাপারটা নিয়ে ভাব, সাজেশন দে, যদি ঠিক মতো ইমপ্লিমেন্ট করতে পারি দেখবি পরবর্তী জেনারেশনের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে একটুও অসুবিধা হচ্ছে না। সে যে স্ফেয়ারেই থাকুক না কেন আপনা থেকেই তার একটা দায়িত্ব বোধ তৈরি হয়ে যাবে।

তোর খুপরিটার দাম আছে। দেবা বললো।

আবার ফোড়ন কাটে, এই জন্য খিস্তি খাও। শোনো না কি বলে, তোমাকে তো অনিদা ভাবতে বলছে, তোমার যদি কিছু বক্তব্য থাকে সেটা বলো। নির্মাল্য বললো।

দেবা নির্মাল্যর মাথায় একটা চাঁটা মারলো। হাসছে।

অনেকগুলো সেগমেন্ট, প্রত্যেকটার আলাদা আলাদা মটিভ এক ছাতার তলায় আনবি কি করে? কনিষ্ক বললো।

হিমাংশু, অনুপকে অনেকদিন আগে আমার এই চিন্তা-ভাবনার কথা বলেছি। এও বলেছি, এখন যেমন চলছে চলুক, আলটিমেট পজিশনটা এইখানে নিয়ে যেতে হবে।

কি বলেছে ওরা?

ওরা আমার এই চিন্তা-ভাবনাটা সমর্থন করেছে।

এই ট্রাস্টের একটা আলাদা সংবিধান তৈরি করতে হবে, সেটাও ওদের বলেছি, তোরা ভেবে চিনতে একটা খাঁড়া কর। তারপর আমি দেখবো।

ওরা শুরু করেছে?

করেছে।

কাগজ?

কাগজটাকে এর বাইরে রেখেছি। ওটাকে এর সঙ্গে জড়াবো না। একবারে আলাদা বিষয়। তবে ওটাকেও একটা সুন্দর সেপে আনার ব্যবস্থা করেছি। এখন বলবো না। আগে কংক্রিট হোক আমার চিন্তা-ভাবনাটা, তারপর।

নীরু হাসছে।

হ্যাঁরে ঝিমলি ওরফে জয়ন্তী শ্রীনিবাসন আর ওর হাজবেন্ড সঞ্জয় শ্রীনিবাসনের খবর কি?

হঠাৎ করে তোর এই দুটো নাম মনে পড়লো! কনিষ্ক বললো।

তোরা সবেতেই কারণ খোঁজার চেষ্টা করিস।

তুই তো এমনি এমনি কারুর কথা হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিস না। তাই।

অনেক দিন ওদের সঙ্গে দেখা হয়নি। দেশ থেকে ফিরে এসে তোদের সঙ্গে একসঙ্গে বসবো ভেবেছিলাম। সব কেমন গোলমাল হয়ে গেল।

সঞ্জয় তোর অপারেশনের দিন টেবিলে ছিল। তারপর তোকে অনেকবার দেখতে এসেছে। ওরা দুজনেই তোর ওই অবস্থা দেখে খুব আপসেট হয়ে পড়েছিল। এখনও আমাদের সঙ্গেই এ্যাটাচ আছে। ঝিমলি বার বার বলেছে, কনিষ্কদা, অনিদা যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম উচ্চারণ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি কিছু বলবে না।

হাসলাম।

হাসছিস কেন?

প্রত্যেকটা মানুষের কিছু মান-অভিমান আছে বুঝলি কনিষ্ক, ঝিমলি ওই অভিমানের জায়গাটা থেকে তোকে কথাটা বলেছে।

এটা তুই আর ঝিমলি বুঝতে পারবি, আমি পারবো না। তবে মেয়েটা ভীষণ ভালো। মনেপ্রাণে দু-জনেই আমাদের ভালো চায়। ওদের দু-জনকে একটা নার্সিংহোমের দায়িত্ব দিয়েছি।

কোনটা?

শ্যামবাজারের টা।

খোঁজ খবর নিস?

প্রত্যেক শনিবার সবাই এক সঙ্গে বসি। কার কোথায় কি সুবিধা-অসুবিধা হচ্ছে জানি, তারপর সেই ভাবে চকআউট করে কাজ করি।

এই ব্যাপারটা ধরে রাখ দেখবি সমস্যায় পরবি না। কাজ করার স্বাধীনতা তুই যদি দিস, দেখবি সে অনেক খোলা মনে কাজ করতে পারে।

সবাইকে তো দেওয়া যায় না। তবে যাদের বুঝেছি দায়িত্ব দেওয়া যায় তাদের দিই। তুই স্যারকে সরিয়ে দিবি বলছিস, আমরা খুব সমস্যায় পড়ে যাব।

ভালো করে ব্যাপারটা বোঝ। আমি সরিয়ে দিই নি। রিলিফ দিতে চেয়েছি।

ডাক্তারদাদাকে প্রয়োজন ছাড়া বিরক্ত করিস না। তুই কি ভাবছিস এই তিনমাস ডাক্তারদাদা ওখানে গিয়ে চুপচাপ বসে আছে।

একেবারে নয়। কম বেশি আমাকে ফোন করেছে। গাইডলাইন দিয়েছে। এই সব মেশিন দেখেছেন সেগুলো আনার ব্যবস্থা করছেন।

তাহলে—আমি চাইলেও তিনি যে ঘরে বসে থাকবেন তা নয়। তবে যে প্রেসারটা এতদিন দিচ্ছিলি তার থেকে রিলিফ। দেখবি ডাক্তারদাদা অনেক রিল্যাক্সমুডে কাজ করবে। এটারাও যে একটা বিশেষ প্রয়োজন আছে, এবার বুঝতে পারবি। মাথায় রাখবি এই পৃথিবীতে সেই অর্থে তার কেউ নেই। আমরাই ডাক্তারদাদার সব।

তোর ফিলিংসটা আমাদের থেকে অনেক বেশি। তাই তুই যতটা ফিল করতে পারিস আমরা ততটা পারি না।

দরজাটা খুলে গেল।

মিলি আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

রাগ পড়েছে?

ঘরে এলো।

মিটিং শেষ হলো?

মিটিং না একটু গল্প করছিলাম।

তোমার গল্পের বিষয়বস্তু জানি—

একটু চা খাওয়াবে?

এই তো ভাত খেলে!

ভাতের সঙ্গে চায়ের সম্পর্ক কি!

দিচ্ছি। অনিমেষদা আসতে পারে কি?

সেই জন্য তুমি পর্যবেক্ষণ করতে এলে।

হ্যাঁ মশাই।

আসতে বলো।

কনিষ্ক আমার কথা শুনে হাসছে।

তুই এখনও ওকে তোর কলেজের সেই জুনিয়ার মেয়েটা বলে ভাবিস তাই না।

কেন একথা বলছিস? ও আমার বন্ধু পত্নী।

তোর কথা বার্তায় তা মনে হয় না।

তোমাকে আমাদের দুজনের ব্যাপারে মাথা গলাতে বলেছে কেউ। মিলি বললো।

তাহলে শিব যদি দুধ চায় গরু বনে গিয়েও দেয়। নীরু বলে উঠলো।

তারপরেই এমন ভাবে কঁকিয়ে উঠলো, বুঝলাম কনিষ্ক বেশ জোরেই অন্তরটিপুনি দিয়েছে।

দেখলি দেখলি অনি আমি বললেই দোষ। ম্যাডাম বললে হেসে উড়িয়ে দেয়।

তুই, ম্যাডাম সমান।

মিলি দরজার দিকে রওনা দিল।

মাম্পি, মিকি ঘুমচ্ছে?

অনেক কসরত করে ঘুম পারানো হয়েছে। কথাটা বলেই মিলি বেরিয়ে গেল।

দেবাশিস উঠে দাঁড়াল।

কোথায় যাবি?

একটু অফিসে যাব।

পাঁচটার পর কয়েকটা ভাইট্যাল মিটিং রেখেছি। আমি, নির্মাল্য একটু সামলে দিই।

আর আসবি নাকি?

মনে হয় হবে না।

অদিতিকে কে নিয়ে যাবে?

একা চলে যাবে।

আমি, নীরুও উঠি, একবার যাই দেখে আসি কেমন চলছে। রাতে আসছি।

কনিষ্ক আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

ওরা বেরিয়ে গেল। গেটের মুখে অনিমেষদাদের সঙ্গে ধাক্কা খেল।

কোথায় যাচ্ছিস সব?

কিছু কাজ আছে সেরে নিই।

অনিমেষদা হাসছে।

ওঘরে মিলি চা বসাল যে।

চা খেয়েই বেরোব।

অনুপদা, রূপায়ণদা আমার পাশে এসে বসলো। অনিমেষদা আর একটা সোফায় হেলান দিল।

অনুপদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

হাসছো কেন?

তোর আর কোথায় কোথায় পরিচিত লোকজন আছে বল—

কেন?

কালকে যেমন জানতে পারলাম।

ওটা আমার কলেজ পাড়া। ওই হস্টেলে ইলেভেন টুয়েলভে থাকতাম। তারপর ডিগ্রী কোর্স পড়ার সময় হাতিবাগানের হস্টেলে চলে আসি। কাঁচা মনে অনেক আঁকি বুকি লেগে আছে বুঝলে। কেন জানি না, এখন প্রায়ই নিজেকে পেছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে। যাচাই করতে ইচ্ছে করে, দেখি না ওরা চিনতে পারে কিনা।

কালকে তোর ফোনটা পেয়ে নিজেও যে আপসেট হই নি তা নয়।

ক্ষমা করো।

নারে, কেন জানি না, মাঝে মঝে তোর ওপর ভীষণ রাগ করে ফেলি। কালও করেছি। তারপর পর পর ফোনে খোঁজ খবর নিয়ে বুঝলাম। ব্যাপারটা বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। তার ওপর ওই এলাকাটা আমাদের নয়। ব্যাপারটা ভীষণ সেন্সেটিভ। ভদ্রলোক তোর পরিচিত। রাজনীতি করার সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না। সত্যি আমরা গেইনার।

আমি হাসছি।

অনিমেষদাকে জিজ্ঞাসা কর।

কেমন দেখলে মানুষটাকে?

পাগল নয়। আপনভোলা। কাউকে ডিস্টার্ব করে না।

ভেঁদোদার পেছনে আমরাও যে লাগি নি তা নয়। কিন্তু কেউ ভেঁদোদার গায়ে হাত দেয়নি। ও তো কারুর ক্ষতি করতো না।

সব শুনেছি, তোকে আর নতুন করে বলতে হবে না। ওকে ওর মতো থাকতে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ঝুনেকে তুই কি ইনস্ট্রাকসন দিয়েছিস তাও শুনেছি। তোর অনুধাবন শক্তিটা প্রখর।

চাঁদু লোকটাকে কেন জানি না ভালো লাগলো না।

সবাই অনি ব্যানার্জী হবে এটা ভাবছিস কেন?

মিলি চা নিয়ে এলো। সঙ্গে সামান্য স্ন্যাকস।

ওরা চলে গেছে মিলি?

বেরচ্ছে। কিছু বলতে হবে।

না, থাক। কনিষ্ক রাতে আসবে বললো?

হ্যাঁ।

ঠিক আছে।

চায়ে চুমুক দিলাম।

মিলি কিছুক্ষণ দাঁড়াল তারপর চলে গেল।

অনিমেষদাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল শ্যামেরা। তবে শ্যাম বাচ্চাগুলোকে ছেড়ে দিয়েছে। এও জানলাম অনিমেষদাদের কোনও কথাই শ্যাম মানতে চাইছে না। যতক্ষণ আমার সঙ্গে কথা না হচ্ছে।

আমাকে অনিমেষদা বার বার বললো তুই একটু দেখ, যাতে ওরা মেইনস্ট্রিমে ফিরে আসে।

আমি সময় চেয়েছি।

আজ আর বেশি রাত করলাম না। খেয়ে দেয়ে তারাতারি নিজের ঘরে চলে এলাম। মিলি, সুরো থেকে গেল, আর সবাই যে যার মতো খেয়ে দেয়ে চলে গেল। মেয়ে আজও আমার কাছ ছারলো না। আগের দিনের মতো দামিনীমাসিকে বলে দিল মাসিদিদা আজও আমি বাবার কাছে শোবো। দামিনীমাসি ওর কথায় মুচকি হাসলো।

আমার পেছন পেছন আমার ঘরে এসে দামিনীমাসি সব গোছগাছ করে দিয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর মেয়ে রাতের পোষাক পরে ঘরে এলো। প্রথমে ওষুধ আর জলের বোতলটা হাতে ধরিয়ে দিল। খেলাম।

বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বললো। ঘুমবে না।

হাসলাম।

আমি টান টান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম। মেয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে বড়ো লাইটটা নিভিয়ে আমার পাসে এসে শুলো। আমি ওর দিকে চেয়ে আছি। এলো চুল খোঁপার মতো করে বাঁধা। একটা ক্লিপ লাগান রয়েছে।

দাও মাথাটা টিপে দিই।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছি। মেয়ে মাথায় হাত রাখলো। শরু শরু আঙুলগুলো চিরুনির মতো চলছে। আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। বুঝলাম আজও আমার কপালে ছোটোখাটো কিছুটা দুঃখ লেখা আছে।

আজ আর বেশি গল্প করতে পারবো না বুঝলি, বড্ড ঘুম পাচ্ছে।

সে কি করে হয়—তোমার সঙ্গে একটু গল্প না করলে আমার ঘুম আসবে না।

আমি চোখ বন্ধ করলাম। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থাকার পর মেয়ে ডাকলো।

বাবা।

মেয়ের দিকে আলতো ভাবে তাকালাম।

আমার মুখের খুব কাছে ওর মুখটা। বড়ো মায়াবী মুখ। চশমাটা খুলে ফেললে অনেকটা মিত্রার মুখের আদল এসে পড়ে। মিত্রাকে ওই বয়সে দেখিনি। তবে….

তোমার দাদু-ঠাম্মাকে মনে পড়ে?

না।

এক্কেবারে কিচ্ছু মনে পড়ে না?

ঠিক তা নয়, শুধু শ্মশানে যাওয়ার দৃশ্যটা আবছা আবছা মনে আছে। যতদূর মনে করতে পারি, আমি প্রথমে উনা মাস্টারের কোলে ছিলাম তারপর কাকার কোলে।

দাদু-ঠাম্মার মুখাগ্নি তুমি করেছো!

আর কে করবে বল—তবে কতটা কি করতে পেরেছি মনে নেই।

তখন তোমার বয়স?

চারবছর চার মাস।

মেয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখের পলক পড়ছে না। মাথার আঙুল থেমে গেছে। মনে হয় চোখ দিয়ে যেন কিছু বলতে চায়। বলতে পারছে না।

মা, বাবাকে ঠিক কোন জায়গায় দাহ করা হয়েছিল সেটাও মনে ছিল না। একটু বড়ো হয়ে যখন হাইস্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলাম তখন থেকে শ্মশানে যাই।

একা একা!

হ্যাঁ। বড়ো হয়ে কাকাকে জিজ্ঞাসা করে জায়গাটা খুঁজে বের করেছিলাম।

মনা দাদাইকে আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমাকে দিদিভাই বলতো, দাদাকে দাদাভাই বলে ডাকতো।

আমি মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করলাম। মনেহচ্ছে ও খুব শম্বুক গতিতে এগোচ্ছে। আবার কালকের মতো কিছু…?

আচ্ছা মার সঙ্গে তোমার পরিচয় কি করে হলো?

মুচকি হাসলাম।

বলো না।

মা বলে নি?

কেমন খাপছাড়া, খাপছাড়া। শুনে মজা লাগে নি। তুমি খুব সুন্দর করে বলো।

শুনে কি করবি?

মা অতো বড়োলোকের মেয়ে, তুমি গরীবের ছেলে, অনেকটা সিনেমার মতো।

সেই জন্য জানতে ইচ্ছে করছে?

মেয়ে মাথা দোলাচ্ছে।

আমাদের কলেজে তখনও নিশ্চই তোমার থেকে অনেক বেশি পয়সাওয়ালা ঘরের ছেলে পড়তো, দেখতে শুনতেও তারা তোমার থেকে খুব একটা খারাপ ছিল না। তবু…।

সেটা তোর মা বলতে পারবে।

মা বলেছে, তোমার সঙ্গে মায়ের কথাটা মেলে কি না দেখবো।

কোনও দিন মিলবে না।

কেন!

তোর মা আমাকে এক ভাবে দেখেছে, আমি তোর মাকে আর এক ভাবে দেখেছি।

ঠিক আছে, তাই বলো।

কি হবে এসব শুনে?

উঁউঁউঁ বলো না।

বড়দের কথা ছোটোদের শুনতে নেই।

আমি এখন এ্যাডাল্ট।

হাসলাম।

তোর মা আগে তোকে কতটা বলেছে শুনি, তারপর থেকে নয় তোকে বোলবো।

মা কিছু বলে নি। তুমি প্রথম থেকে বলো।

হাসলাম।

মেয়ে আমার চোখে চোখ রেখেছে। বড়ো মায়াবী ওই চোখের চাহুনি। চোখে চোখ রেখে বলতে চাইছে, বলোনা প্লিজ।

তোর মা আমাদের কলেজে ডিগ্রী কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। তখন আমি দু-বছরের পুরনো পাপী। ফলে আমার চেনা জানা তোর মায়ের থেকে একটু বেশিই ছিল। কিন্তু সেই অর্থে আমার বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। ওই যে তুই বললি গরীবের ছেলে, তার ওপর গ্রাম থেকে উঠে এসেছি। নিজের মধ্যে একটা সেকি ভাব ছিল।

মানে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে।

ঠিক গুটিয়ে রাখা নয়, অনেকটা ওইরকম। আমার ফ্রেন্ডসার্কেল বলতে গুটি কয়েক ছেলে-মেয়ে। তাও তারা সব সার্থের বন্ধুত্ব। তবে আমাকে চেনার একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল। কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে কলাবিভাগে আমার ওপর আর কারুর নম্বর নেই। পাঁচটা সাবজেক্টের মধ্যে চারটেতে লেটার…।

ঠিক এই কারনে। তাই তো—

মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

সেই সময় কলেজে আমার অজান্তেই আমার একজন গার্জেন তৈরি হয়ে গেছিলেন। তিনি ড. রায়। তাছাড়া ভাল ছেলে বলে অনেক স্যারই চোখে চোখে রাখতেন। যাতে বকে না যাই।

ড. রায়ের নাম শুনেছি। আমাদের বাংলা ম্যাডামের কাছে।

তোর বাংলা আছে!

অপসোনাল।

ড. রায় আমার ছাত্র-জীবনের ধ্রুবতারা। কি পাইনি স্যারের কাছ থেকে। এখন ওই রকম প্রফেসার পাওয়া বিরল। সবচেয়ে বড়োকথা ওইরকম একজন অভিভাবক।

কলেজের প্রথা মেনে ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিন সব নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আমাদের অডিটোরিয়ামে নবীনবরণ উৎসব হলো। আমার ওই কলেজে দু-বছর পড়া হয়ে গেলেও নতুন বর্ষ নতুন ক্লাস আমিও নতুন ছাত্র। একে একে প্রিন্সিপাল, ভাইস-প্রিন্সিপাল, কম বেশি সব ডিপার্টমেন্টের হেডডিপ তাদের কথা বললেন। এ্যাসেম্বলি ভাঙলো। যে যার তাদের নতুন ক্লাসে চলে গেল। আমি যেহেতু পুরনো পাপী আমি আমার মতো সবার আগেই ক্লাসে পৌঁছে গেছি।

তারপর যে যার ক্লাসে এল, সেই দিন প্রথম তোর মাকে দেখলাম। আমার সঙ্গে যারা উচ্চমাধ্যমিকে পড়েছিল এমন পাঁচজন ছিল, আর পনেরোজন বাইরের। পাঁচ জনের মধ্যে আবার চারজন মেয়ে, আমিই একমাত্র ছেলে। যে মেয়েগুলো ইলেভেন টুয়েলভে আমার সঙ্গে পড়েছিল, তাদের সঙ্গেও আমি সেইভাবে কোনওদিন মিশি নি। কথাও বলি নি খুব একটা। পরবর্তী সময়ে এই নতুন পনেরো জনের সঙ্গেও আমার সেইরকম হৃদ্যতা ছিল না। দেখবি আমাদের কলেজে ছেলেদের থেকে মেয়েদের সংখ্যা একটু বেশি। আমাদের ক্লাসেও আমরা পাঁচজন ছেলে ছিলাম। বাকি পনেরোজন মেয়ে। প্রথম দিনই আমাদের কলেজের ওই চারজন মেয়ে বাকি মেয়েগুলোকে ফিসফাস করে দিয়েছিল আমার সম্বন্ধে। আমি এই, আমি তাই। তই প্রথম দিন থেকেই ভাল ছেলে হিসেবে সবার কাছে আমার একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল। স্যারেদের কথা বাদ দিলাম।

আমি ছিলাম আমার ক্লাসের সবচেয়ে নিখাগী মদনের মা।

তারমানে!

বুঝলি না?

মেয়ে চোখের ভাষায় জানাল, না।

চাল চুলো হীন একটা ছেলে। আমি পাজামার ওপর একটা শার্ট পরে কলেজে যেতাম।

তুমি পাজামার ওপর শার্ট পরে যেতে!

কি করবো। কাকা তখনও প্যান্ট কিনে দেয় নি। একবার বলেছিলাম, বললো প্যান্ট পরার বয়স হয় নি। পারলে ধুতি পাঞ্জাবী পড়ো। আমিও ওই কলেজে ধুতি পাঞ্জাবী পড়ে ক্লাস করেছি।

আমি সেটা কোনওদিন পড়তে পারিনি। তবে কিছুদিন পর কাকা একটা প্যান্ট কিনে দিয়েছিল। সেইটা পরেই তিনবছর কাটিয়ে দিয়েছিলাম।

কি বলছো তুমি!

হ্যাঁরে। তখন আমাকে সবাই তালপাতার সিপাই বলতো। লম্বুজি বলে ডাকতো। তোর মাও আমার পেছনে লাগতো।

তুমি কিছু বলতে না?

কি বলবো—শুনে যেতাম। ডেটা জোগাড় করতাম।

মেয়ে হাসছে।

তুমি খুব চালাক।

আমিও হাসছি।

তোর মা প্রথম কয়েকদিন কলেজে গাড়িতে করে এসেছিল। বনেদী বাড়ির মেয়ে। মওকা পেয়ে গেলাম। তারপর আমিও একটু আধটু পেছনে লাগা শুরু করলাম।

কিরকম করে লাগতে?

সব কি মনে আছে—

তোমার সব মনে আছে ভেবে বলো। মেয়ে ধমকালো।

আমি হাসছি।

তোর মাকে ঢঙি বলতাম, বড়োলোকের বেটি বলতাম, এই সব আর কি।

মেয়ে হাসছে।

দেখবি তোর মা যখন চলে বেশ কোমরটা দুলিয়ে দুলিয়ে চলে।

মেয়ে আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল।

তুমি মেয়েদের হাঁটা চলার দিকে খুব লক্ষ্য রাখতে?

খুব না, তবে একটু আধটু লক্ষ্য করতাম। কেন তুই ছেলেদের দিকে লক্ষ্য করিস না?

সবাই করে। তারপর বলো।

একদিন সবার আগে আমি ক্লাসে হাজির হয়েছি। ড. রায়ের ক্লাস ছিল। ফার্স্ট ক্লাস। আমি কোনওদিন ড. রায়ের ক্লাস মিস করতাম না।

স্যার সেই সময় পদ্মা নদীর মাঝি পড়াচ্ছেন। আমার তো বই কেনার পয়সা ছিল না। টেক্সট বই ড. রায় দিতেন, ওনার কাছে পাবলিশার্সরা স্পেসিমেন কপি দিয়ে যেত, সেখান থেকে আমাকে দিতেন। রেফারেন্স বই কেউ নেওয়ার আগেই আমি লাইব্রেরী থেকে লাইব্রেরীয়ান আরতিদির কাছ থেকে নিয়ে নিতাম। আরতিদি আমার ব্যাপারটা জানতেন, স্যারই বলেছিলেন, আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। নতুন কোনও রেফারেন্স বই কাউকে দেওয়ার আগে আমাকে দিতেন। সেদিন সকালে লাইব্রেরীতে যেতে আরতিদি দুটো নতুন বই দিলেন। বই দুটো নিয়ে এসে ক্লাসে বসে বসে নোট তৈরি করছিলাম।

তোর মা এসে হাজির।

বুকটা ধুকপুক করে উঠলো। এইরে আজ একা পেয়েছে, মাথা চিবিয়ে খাবে।

হোলোও ঠিক তাই। নাচতে নাচতে ঘরে ঢুকেই বলে উঠলো।

কি করছিস রে?

একবারে ঘারের কাছে এসে নিঃশ্বাস ফেললো।

একবার তাকালাম।

তাকিয়ে কোনও লাভ নেই। প্রত্যেক দিন টিজ করিস। কি নোট করছিস?

চোখে ন্যাবা হয়েছে।

হয়েছে। ওষুধ দিবি?

ডাক্তারের কাছে চলে যা।

জোড়করে আমার ঘারে উঠে বসলো। ব্যাশ আমার নোটলেখা বন্ধ হয়ে গেল। তারপর একজন, দুজন করে সবাই এলো। আমি ওই যাত্রায় কোনও প্রকারে রক্ষা পেলাম।

তখন তুমি নোট বিক্রি করতে?

তোকে কে বললো!

মা। মাকেও তুমি নোট বিক্রি করেছো।

হাসলাম।

জানিস এখন মনে পড়ে গেলে কিরকম লজ্জা করে। নিজের মনে নিজে হাসি।

কে প্রথম প্রপোজ করলো।

বলা কঠিন। তবে কেউ কাউকে প্রপোজ করেছি বলে মনে পড়ে না। হঠাৎ একদিন যেন অনুভব করলাম তোর মাকে দেখতে না পেলে আমার দিনটা ঠিক ভালো যায় না। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।

মেয়ে হাসলো।

হৃদয় দিয়ে ভালবাসা। …. সেটা কবে থেকে?

মেয়ের দিকে বাঁকা চোখে তাকালাম।

সেটা কিরকম!

মেয়ে হেসে আমার নাকটা মুলে দিল।

আমি ওর দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে।

বলো না।

ফার্স্ট ইয়ার সেকেণ্ড ইয়ার আমরা একবারে নিখাদ বন্ধু হয়েই ছিলাম। বলতে পারিস বন্ধুত্বের শর্ত যেটুকু, সেটুকু। আদব কায়দায় আমি বেশির ভাগ সময় ওদের সঙ্গে টিঁকে উঠতে পারতাম না। তবে বন্ধুরা দঙ্গল বেঁধে একসঙ্গে অফ প্রিয়েডে মাঠে বসে আড্ডা মারতাম। জুনিয়ার ছেলেদের পেছনে লাগতাম। ওই টুকু।

তবে বেশিরভাগ সময়টাই সবার থেকে একটু দূরে দূরে থাকতাম। যে টুকু না মিশলে দৃষ্টিকটু লাগবে সেটুকুই মিশতাম। একমাত্র পড়াশুনা ছাড়া আমি কোনও মতেই ওদের সঙ্গে টিঁকে উঠতে পারতাম না। তাই অফপ্রিয়েডগুলো লাইব্রেরী ছিল আমার ঠিকানা। কখনও সখনও তোর মার সঙ্গে একটু হেঁদুয়াতে গিয়ে বসতাম বা ইউনিয়ন রুমে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতাম। সেটাও বাধ্য হয়ে, না হলে ফ্রি-স্টুডেন্টসিপ পাওয়া যাবে না।

তাছাড়া তখন এই সব বিষয় আমার মাথায় নেই। গ্রামের ছেলে শহরে এসেছি, কিছু করতে হবে, না হলে গ্রামে ফিরে গিয়ে আবার চাষ-বাস করতে হবে। মনা কাকার সঙ্গে এটাই ছিল আমার কলকাতায় আসার শর্ত। মাঝে মাঝে পরোপকার আর মেডিকেল কলেজে গিয়ে কনিষ্কদের সঙ্গে আড্ডা। পড়াশুনা ছাড়া হাতে অনেক সময়, করবো কি।

পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দেব, কলেজে টেস্ট হলো। ভালো নম্বর পেলাম। যা হয়, আর একটু নাম ডাক হলো। স্যারেরা কানাকানি শুরু করলো, এবার মনে হয় আর্টস থেকে আমাদের কলেজের একটা ছাত্র ফার্স্ট ক্লাস পেতে পারে।

কথাটা ভাসতে ভাসতে আমার কানেও এলো। কেমন যেন একটা জেদ চেপে গেলো।

টেস্টের পর প্রায় দেড়মাস ছুটি। চুটিয়ে পড়াশুনা শুরু করলাম। সময় পেলেই ড. রায়, শুভঙ্করবাবুর কাছে যেতাম। নোটটা কারেকশন করাবার জন্য বা কিছু বোঝার জন্য। সেই সময় তোর মা প্রায়ই আমার হস্টেলে আসতো নোট নিতে।

তখন পয়সা নিতে?

না। তবে ও রাধা সিনেমার তলায় যে চুড়মুড় ভাজার দোকানটা ছিল সেখান থেকে প্রতিদিন চুড়মুড় ভাজা খাওয়াত। তারপর দুজনে হাঁটতে হাঁটতে শ্যামবাজার পর্যন্ত যেতাম। তখন ও প্রায় দিনই আমার কাছে আসতো। নোট দিতাম যে কোশ্চেনগুলো পরীক্ষায় আসতে পারে সেই কোশ্চেনগুলো নিয়ে আলোচনা করতাম।

কোথায় করতে?

নিচের গেস্ট রুমে।

তখন তুমি মায়ের চোখ মুখ দেখে কিছু বুঝতে না?

ওই যে বললাম, তখন আমার ধ্যানজ্ঞান পায়ের তলার মাটি শক্ত করা। কলকাতায় যে করে হোক আমাকে টিঁকে থাকতে হবে। আমি তখন ভাসছি। তারওপর তোর মা বড়ো লোকের মেয়ে, ধনীর দুলালী। ওই সব কথা মাথাতেই আনতাম না।

তুমি ভীষণ নিষ্ঠুর।

সে তুই যদি বলিস আমি মেনে নেব।

জানো, তখন তোমায় মা ভালোবেসে ফেলেছিল।

হবে হয়তো।

তুমি কারুর কাছে মুখ ফুটে কোনও দিন কিছু চাইতে না। কেউ দিলে সেটাও নিতে তুমি দ্বিধা করতে। তার ওপর তোমার এই কেয়ারলেস ব্যাপার। সবাইকে তুমি ভীষণ শ্রদ্ধা করতে। সম্মান করতে। তার ওপর তোমার মধ্যে একটা বন্যতা আছে।

এক নিঃশ্বাসে মেয়ে কথা বলে গেল। মেয়ের নাকটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিলাম।

ওর চোখে মুখে বিশ্বজয় করার আনন্দ।

রেজাল্ট বেরবার দিন তুমি অনেক দেরি করে কলেজে গেছিলে না?

হ্যাঁ।

কোথায় গেছিলে?

যতদূর মনে পড়ে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি। একটা সেমিনারে, ড. রায় যেতে বলেছিলেন।

রেজাল্ট বেরবার দিনে তোমার কোনও টেনশন ছিল না?

ভাল পরীক্ষা দিয়েছিলাম, জানতাম ফেল করবো না।

তোমার রেজাল্ট দেখে মা তোমার হস্টেলে ছুটে গেছিল। কিন্তু তুমি নেই বলে খুব মন খারাপ করে চলে এসে তোমার জন্য গেটের কাছে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিল।

হ্যাঁ মনে পড়ছে। ঠিক এইরকম কিছু একটা হয়েছিল। বিকেলের দিকে যখন কলেজে এলাম বন্ধুরা বলেছিল। তবে ও যে হস্টেলে গেছিল এটা জানতাম না। তোর মুখ থেকে শুনছি।

তোমার অন্য বন্ধুরা অনেকে কিন্তু জানতো মা তোমাকে ভালোবাসতো।

তোর মুখ থেকে প্রথম শুনছি।

তাই মা তোমায় চোখে চোখে রাখতো। কেউ যেন ভাগিয়ে নিয়ে না পালায়।

আমি জোড়ে হেসে উঠলাম।

টিনামনিও তোমাকে ভীষণ ভালোবাসতো।

তুই সব জানিস!

দেবাশিস আঙ্কেল বলেছে।

অদিতিমনির সঙ্গে তুমি দেবাশিস আঙ্কেলের ইনট্রডিউস করিয়ে দিয়েছিলে। কেন করিয়ে দিয়েছিলে সেটাও আমাকে বলেছে।

আচ্ছা বাবা দেবাশিস আঙ্কেল তোমার স্ট্রিমের স্টুডেন্ট ছিল না…

আমার একটা পাশের সাবজেক্টের সঙ্গে ওর একটা পাশের সাবজেক্ট ম্যাচ করেছিল। তাই ওই ক্লাসটা আমরা এক সঙ্গে করতাম। সেই থেকেই বন্ধুত্ব।

মৈনাক আঙ্কেলেরও তাই?

হ্যাঁ। ওর ইংলিশ আমার বাংলায় অনার্স। ওর সঙ্গে মনে হয় হিস্ট্রি ম্যাচ করেছিল।

আমার অন্যস্ট্রিমের একটাও বন্ধু নেই।

বন্ধুত্ব করবি।

দূর, সব ন্যাকাপনা ছেলে। গায়ে পরে আলাপ করবে, তিনদিন যেতে না যেতেই, আই লাভ ইউ। আনস্মার্ট।

আমি হাসছি।

এই যে তুমি কাউকে পাত্তা দিতে না। তোমার মধ্যে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব। সব সময় নিজের মনে নিজে থাকতে, মেয়েরা এদের দিকে বেশি দৌড়য়।

আমি নিজেকে বাঁচাতে এই পথ বেছে নিয়েছিলাম।

সে তো সবাই জানতো না। তার ওপর তুমি ভালো ছেলে ছিলে।

এইটাই আমার একমাত্র প্লাস পয়েন্ট ছিল। আর সব মাইনাস। তাই জন্য কলেজে আমার পড়াশুনার কোনও খরচ লাগতো না। ইউনিভার্সিটির পরীক্ষার ফিস ছাড়া সব ফ্রি।

মা সেদিন তোমায় একটা জিনিস দিয়েছিল।

কোন দিন?

যেদিন রেজাল্ট বেরলো।

মাথা দোলালাম। ওইদিন নয়, তার কয়কদিন পর।

তোমার মনে আছে?

একটা পেন দিয়েছিল। ওটা এখনও আলমাড়িতে খুঁজলে হয়তো পাওয়া যাবে।

আর কি সারপ্রাইজ দিয়েছিল?

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/SUqsJAV
via BanglaChoti

Comments