❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯৭ নং কিস্তি
—————————–
জীবনে বোরনেস কি জানিষ বুঝতেই পারতাম না। আর অনি এলে কথাই নেই।
দেখ, যে ওকে নিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে আলাপ করাল, সে কিন্তু ধীরে ধীরে মাইনাস হয়ে গেল। নীরু বললো।
ও শালার কিছু করার নেই বুঝলি নীরু শেষ পর্যন্ত পেরে উঠলো না। কনিষ্ক বললো।
বলোনা একটু শুনি। ইসি বললো।
কি শুনবে। বিটকেল বুদ্ধি যাকে বলে। ইনস্ট্যান্ট আসতও ওর মাথায়।
বটা তুই নিজে তোর কথা বল। কনিষ্ক বললো।
বটা একচোট হেসে নিল।
কেসটা সেকেন্ড ইয়ারের তাই না অনি। সাত্যকি বললো।
আমি সাত্যকির দিকে তাকিয়ে হাসছি।
বটার গুহ্যদ্বারের গোড়ায় কার্বংকল? অনিকেত চেঁচিয়ে উঠলো।
ছাগল তোর এতক্ষণ পর মনে পড়েছে। নীরু বললো।
দূর শালা আমি অন্য লুঙ্গি কেস ধরেছি।
কেন একটায় হচ্ছে না আরও দশটা যোগ করতে হবে। বটা খেঁকিয়ে উঠলো।
কনিষ্ক, নীরু সারা শরীর কাঁপিয়ে হাসছে। আর সকলে ওদের হাসিতে যোগ দিয়েছে।
তোকে বলতে হবে না। আমি বলছি আমি তখন অনির হেল্পার ছিলাম। অনিকেত উঠে দাঁড়াল।
হস্টেলে আমি, বটা, নীরু, কনিষ্ক এক ঘরে, পাশের দুটো ঘর বাদ দিয়ে সাত্যকিরা।
জানো ম্যাডাম অনির ঘেন্না-পিত্তি ভীষণ কম। নেই বললেই চলে। অনিকেত বললো।
আমি প্রমাণ পেয়েছি আমার শরীর খারাপের সময়। ওই সময়টা বুবুন ডাক্তারদা না থাকলে হয়তো স্যুইসাইড করতাম।
আবার ব্যাড় ব্যাড় করে। আমি বলে উঠলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।
শোনো না। অনিকেত বললো।
ফোঁড়াটা ঠিক পেছনে না। খুব ডেঞ্জার জায়গায় হয়েছিল। অনি রেগুলার ড্রসিং করতে আসতো।
তোমরা ডাক্তাররা থাকতে…! ইসি বললো।
দূর তখন সবে মাত্র সেকেন্ড ইয়ার। একদিন বিকেলে এসে দেখি বটা উপুর হয়ে শুয়ে আছে। লুঙ্গি পড়া না পড়া দুই সমান। অনিও গেছে আমাদের সঙ্গে। ওকে ওই অবস্থায় উপুর হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললো কি হয়েছে?
বটা বললো ফোঁড়া। ডেঞ্জার পজিসন।
ওষুধ খেয়েছিস?
বললো খেয়েছি।
দেখি।
বটা কিছুতেই দেখাবে না। ও নাছড়বান্দা দেখবে।
তারপর বটা দেখাল।
বললো বেশিদিন ফেলে রাখলে কাটতে হবে গজ ভড়তে হবে।
বটা ব্যাটা ভড়কে গেল।
তুই আমাকে বাহাত্তর ঘণ্টা সময় দে মালটা সাইজ করে দেব।
শালা ডাক্তার। কনিষ্ক তরপাল।
এর মাঝে ও অবশ্য বটাকে চূড়ান্ত গালাগাল দিয়েছে। সেটা তোমাদের বললাম না।
থাক, তোকে আর উপকার করতে হবে না। বটা বললো।
ব্যাশ মিটে গেল।
বটা বটার মতো ওষুধ খায়। কনিষ্ক হাসপাতাল থেকে এনে দেয়। ও শালা কাউকে দেখায় না।
দু-তিন দিন পর হঠাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, বটা পেছনদিকের লুঙ্গি উঁচুকরে ধরে দুই ঠ্যাং দু-দিকে যতটা সম্ভব ফাঁক করে ঘরে পায়চারি করছে।
হঠাৎ বটাকে ওই অবস্থায় দেখে উঠে বসলাম।
কিরে!
কাল সারারাত ঘুম হয়নি।
কেন!
ভীষণ ষন্ত্রণা।
অনি বলেছিল, একবার রিক্স নিতে পারতিস।
তখনও কনিষ্করা ঘুমচ্ছে।
একবার মৈনাককে ফোন মার ওকে একটু খবর দিক।
আমি বরং ওর হস্টেলে চলে যাই।
তাই যা।
মুখটা কোনও প্রকারে ধুয়ে বেরিয়ে এলাম।
হস্টেলে এসে দেখি। ও পড়াচ্ছে। স্টুডেন্ট ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেরা।
আমাকে দেখে বললো কি রে এই সাত সকালে। কোনও খারাপ খবর?
তুই একবার হস্টেলে চল।
কেন, কি হয়েছে!
বটা ডাকছে।
ওষুধে কাজ হয় নি?
কাল সারারাত ঘুময় নি।
তোর পকেটে পয়সা আছে।
কতো।
দশ পনেরো টাকা।
হবে।
আড়াইশো গ্রাম আটা, দশটা বাংলা ছোট ছাঁচি পান, একটা ছোট লক্ষ্মী ঘি-এর শিশি (অরিজিন্যাল) কিনে চলে যা। আমি যাচ্ছি।
তুই কি বটার শ্রাদ্ধ করবি?
কেন!
পান, ঘি, আটা!
খোকা, কথার অবাধ্য হয়ো না। বড়রা যা বলে মন দিয়ে শুনবে, এতে উপকার।
একবার ভাবো ওই সাত সকালে শালার ডায়লগ শুনে গা-পিত্তি জলে যাচ্ছে। চলে এলাম।
আসতেই কনিষ্ক বললো, কিরে অনি এলো না!
ফর্দ দিয়েছে।
কিসের!
বটার শ্রাদ্ধ করবে।
তারপর আমার মুখ থেকে সব শুনে বলে শালা আসুক আজ সবাই মিলে রাম কেলান কেলাব।
জিনিষ গুলো? তনু বললো।
নীরু কিনে এনেছিল।
তনু হাসছে।
হাসছো যে। বুঝেছি। নীরু বললো।
ও ব্যাটা এলো পৌনে দশটা নাগাদ। হাতে দেখি লতাপাতার মতো কয়েকটা ছোট ছোট গাছ।
মারো নি? মিত্রা বললো।
নীরু হাসছে। সত্যি ম্যাডাম যতই ওর ওপর রাগ করি, কাছে এলে কেমন যেন হয়ে যেতাম। বিশ্বাস করো তনু। আজও সেই রকমটা অনুভব করি।
তাহলে রোগটা শুধু আমাদের নয় তোমাদেরও আছে।
তনু আমার মাথার চুলের মুটি ধরেছে। আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম।
তা যা বলবে।
এই শালা ইন্টারাপ্ট করলি। অনিকেত বলে উঠলো।
তুই বলে যা না।
বটা হাসছে।
ঘরে ঢুকেই নীরুকে বললো, টেনিয়ার দোকান থেকে স্যালাইনের বোতলে একটু চা নিয়ে আয়, কনিষ্ককে বললো, একটু গরম জল জোগাড় করতে পারবি।
কনিষ্ক ওর মুখের দিকে তাকিয়ে, কিছু বলতে পারছে না। মাথা দুলিয়ে বললো।
আর কি কি লাগবে।
একটু তুলো, একটা খল-নোড়া।
এটা কি তোর বাড়ি?
কমসে কম একটা বাটি দে। আর তোদের হাড়টার কি আছে তাই দে। কাজ চালিয়ে নেব।
হাড়টার মানে! মিত্রা বলো।
আমরা যে সব স্পেসিমেন নিয়ে পড়াশুন করি। সেই হাড় হচ্ছে নোড়া, আর বাটি হচ্ছে খল।
ইসি হেসে গড়িয়ে পড়ে।
এই সব গাছ নিয়ে এসেছিস। কিনিষ্ক বললো।
এটা খুঁজতেই দেরি হয়েগেল। কোনও শালার কাছে নেই। থাকলেও ব্যাটারা চেনে না।
নাম কি?
বললে বুঝতে পারবি।
বল না শুনি।
আয়াপান।
সেটা কি!
ওই তো বললাম, সব কি তোদের ডাক্তারি শাস্ত্রে লেখা আছে। তাহলে আয়ুর্বেদ উঠে যেত।
অনিকেতের কথা শুনে কনিষ্ক হাসছে।
সেই সময় কি স্মার্টলি বলেছিল বল। কনিষ্ক, অনিকেতের দিকে তাকাল।
অনিকেত হাসছে।
মিত্রা, তনু, কনিষ্কর দিকে তাকাল।
পেছন গেড়ে বসে না থেকে বরং যা বললাম ওইগুলো তাড়াতাড়ি জোগাড় করে দে, ছেলেটা বেদম কষ্ট পাচ্ছে। অনিকেত বলে চলেছে।
কে আমার বাপ রে।
নিজের পেছনে তো হয়নি। যার হয়েছে সে বুঝছে কি যন্ত্রণা।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
তোকে যে বলেছিলাম আটা, ঘি, আর পান আনতে, নিয়ে এসেছিস।
নীরু নিয়ে এসেছে।
কিরে বটা রস গড়াচ্ছে।
বটা চোখ মুখ কুঁচকে বললো, শক্ত হয়ে আছে ফাঁক করতে পারছি না।
তনুরা অনিকেতের কথা শুনে হেসে ফেললো।
নীরু একটা মোমবাতি জোগাড় কর।
কেন পেছনে ঢোকাবি।
দেখলাম কিছু বললো না। নিজেই আটা জল নিয়ে কেমন লেই বানাল। ওই যে আয়াপান না কি নিয়ে এসেছিল সেগুলো হাতেই ভাল করে চটকে রস বার করে সেই আটার সঙ্গে মাখল। নীরু একটা মোটা দেখে মোমবাতি কিনে আনল।
আমরা দেখছি।
বটাকে বললো লুঙ্গি তোল।
বটা ওই অবস্থাতেও ওকে খিস্তি করলো।
ও নির্বিকার।
নিজেই বটার লুঙ্গি তুললো।
কিছুক্ষণ দেখার পর বললো, মালটা যৌবনবতী হয়েছে বুঝলি কনিষ্ক। গরম জল লাগবেই।
কনিষ্ক আমাদের কিচেন থেকে স্যালাইনের শিশিতে গরম জল নিয়ে এলো।
আধঘণ্টা ধরে বটার পিঠের ওপর চেপে বসে ট্রিটমেন্ট চললো।
বটার প্রাণ যায় যায়। চিল চিৎকার আর গালাগাল।
নীরু লিউকোপ্লস নিয়ে এসে বটার মুখে চিপকে দে। ও চেঁচিয়ে উঠলো।
বটা চুপ করে গেল।
প্রথমে সেই আটার লেই একটু নরম করে ওখানে লাগাল। তারপর পানটায় দু-চারটে ফুটো করে ঘি মাখিয়ে রেখে দিল।
বটাকে বললো এতো যন্ত্রণা সহ্য করছিস, আর একটু সহ্য করতে পারবি।
যা পারিস কর।
দেখি মোমবাতিটা ধরাল। পানটাকে ভাল করে মোমবাতির শিখায় একটু সেঁকে সেই আটার লেই এর ওপর লাগাল। তারপর গরম মোম গালিয়ে গালিয়ে ফেলতে শুরু করল। ফোঁটা ফোঁটা করে।
যখন লাগবে বলবি থামিয়ে দেব।
বটা মিনিট পাঁচেক পরই দেখি কাতরাতে শুরে করেছে। অনি থামে না। গল গল করে মোম ঢালছে। আমাকে বললো, তুই ওর কোমরে উঠে বোস। এই মুহূর্তে থামান যাবে না, নীরু ওর হাত ধর। বটা দাঁতে দাঁত চিপে পড়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর পানটাকে তুলে মোমটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘরে যে চায়ের ভাঁড় পরেছিল তাতে রাখলো।
ওটা কি করবি?
পরে কাজে লাগবে।
নিজেই নিজের জিনিষপত্র গুছিয়ে রাখলো।
নীরু চা এনেছিল খেল।
তোরা কি কলেজে যাবি?
সাড়ে এগারটায় ক্লাস।
ঠিক আছে আমি আসছি। বটা এখন নড়াচড়া করিস না। আমি দেড়টার মধ্যে চলে আসবো।
চলে গেল। আমরা বটাকে কিছু খাইয়ে দিয়ে কলেজে চলে গেলাম। সবাই তিনটে সাড়ে তিনটের সময় ফিরে এলাম। দেখি বটা উপুর হয়ে ঘুমচ্ছে। ঘরের মেঝেতে আমাদের মর্গের একটা ডোম শুয়ে আছে।
কনিষ্ক বললো ব্যাপারটা কি বলতো। ও তো ব্যাটা কোনও দিন ওপরে আসে না।
ডেকে তুলি।
উঠে বলে, অনিদা আসে নি?
আমরা অবাক।
তুই ব্যাটা অনিকে চিনলি কি করে?
চিনি। যাওয়ার সময় বলে গেল বটাদাকে পাহাড়া দিতে। বটাদার পাছায় ফোঁড়া হয়েছে। ওষুধ লাগাল। আমাকে দুধ-পাঁউরুটি আনতে বললো। এনে দিলাম। বটাদাকে খাইয়ে চলে গেছে। বলে গেছে কনিষ্কদারা না এলে এ ঘর থেকে নরবি না।
আমরা এতো কথা বলছি, বটা কিন্তু অঘরে ঘুমচ্ছে।
ওকে দিয়ে চা আনালাম।
বটা উঠলো সন্ধ্যে হয় হয়।
দেখলাম বটার চোখ মুখটা বেশ পরিষ্কার।
কিরে কেমন আছিস? কনিষ্ক বললো।
বুঝলি কনি অনির হিট ট্রিটমেন্টটা খরাপ না। ব্যাথাটা কিন্তু সকালের থেকে অনেক কম।
অনি কি আবার ওই সব করেছিল?
হ্যাঁ।
কোথায় গেছে?
বললো একটু কাজ আছে সেরে আসি। ওকে সাহায্য করার জন্য মর্গের ডোমটাকে নিয়ে এসেছিল সঙ্গে করে। তারপর খাইয়ে দাইয়ে, আমাকে দেখার জন্য মর্গের ডোমটাকে ফিট করে দিয়ে গেল। ব্যাটা গেল কোথায়?
চলে গেছে। অনি ওকে চিনল কি করে?
কি জানি, ব্যাটা বলে আমি অনিদাকে চিনি। ভাঙল না। ওর ওই হট ট্রিটমেন্টের সময় অনিকে সাহায্য করলো। বললো, অনি নাকি ওদেরও চিকিৎসা করে।
অনি কখন আসবে বলেছে?
রাতে এসে থাকবে।
তিনদিন টানা ট্রিটমেন্ট, ফোঁড়া ফাটিং। সাতদিনের দিন বটা জাঙিয়া পরলো।
যেদিন মালটা ফাটাল দেখি চার পাঁচটা মুখ হয়েগেছে। সে কি পুঁজ রক্ত। আমরা ডাক্তারি পড়ছি তখন আমাদেরই ঘেন্না লাগছিল। ও শালা নির্বিকার।
এখনও জায়গাটায় গর্ত হয়ে আছে। বটা বললো।
টিনাকে বলিস সিমেন্ট লাগিয়ে দেবে। আমি বললাম।
আমার কথা শুনে বটা টেনে গালাগাল করতে গেল, ছোটোমা গেটের সামনে এসে দাঁড়াতে চোখ মুখ লাল করে থেমে গেল।
ঘরের সবাই মুখ টিপে হাসছে।
কিরে তোরা খাবি না?
গুণের কথা শুনছিলাম। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো।
কত শুনবো বল। ওঘরে দিদি বলে চলেছে। শেষ আর হচ্ছে না। কেঁদেও নিল কিছুটা।
মাসীমনিকে খাইয়ে একটু শুইয়ে দাও। কনিষ্ক বললো।
তিন্নীর দিকে তাকাল।
তিন্নী ম্যাম ওষুধটা দিয়েছ।
তুমি যেটা দিলে।
হ্যাঁ।
তিন্নী দৌড় দিল।
আমি ছোটোমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
তুই শুয়ে আছিস কেন?
এমনি। অনেক দিন পর তনুর কোলটা ফাঁকা পেলাম।
ঢং।
প্রবীরদারা চলে গেছে?
এবার যাবে। প্রবীর মনেহয় ছটার ফ্লাইটে দিল্লী যাবে।
কেন!
দাদা ফোন করে যেতে বললো।
ওরা পৌঁছে গেছে?
এয়ারপোর্টে নেমেই ফোন করেছিল।
সুন্দরদের খাওয়া হয়ে গেছে?
ওপরের ঘরে গিয়ে সবাই দরজা বন্ধ করেছে।
ঠিক আছে।
তার মানে ঠিক ঠিক কাজ হচ্ছে কি বল?
ছোটোমার কথায় কনিষ্ক জোড়ে হেসে উঠলো।
তুমি হাসছো কেন কনিষ্ক। মিত্রা বললো।
ছোটোমাও আজকাল একটু আধটু ধরে ফেলছে।
হ্যাঁরে কনিষ্ক, দিদি কয়েকটা কথা যা বললো না।….
তুইও এসে জমে গেছিস।
বৌদি ঘরে ঢুকল।
আমি উঠে বসলাম।
তুই শুয়ে ছিলি কেন! শরীর খারাপ লাগছে? বৌদি আমার দিকে তাকিয়েছে।
না।
বৌদি এগিয়ে এসে আমার কপালে হাত দিল।
দেখতো ছোট গা-টা কেমন গস গস করছে না?
ছোটোমা চোখ মুখ কুঁচকে এগিয়ে এল।
নীচু হয়ে আমার কপালে গাল ঠেকাল। নীরু উঠে এসে আমার হাতটা চেপে ধরেছে।
কনিষ্ক ওষুধ-টষুধ থাকলে দিয়ে দে। এই সময় কিছু বাধালে কাক উড়বে চিল পরবে। বৌদি বললো।
বৌদি কনিষ্কর দিকে তাকিয়েছে।
কনিষ্ক হাসছে।
হতে দাও, হলেই দিয়ে দেব।
হওয়ার আগে দে।
হঠাৎ দেখলাম মিত্রার মুখটা কেমন শুকিয়ে গেল।
কি দেখলি। কনিষ্ক, নীরুর দিকে তাকাল।
না। ঠিক আছে। খেয়ে নিক ঝেড়ে দিচ্ছি। নীরু তনুর দিকে তাকাল।
তনু ম্যাডাম সকালে যে ওষুধটা খাওয়ার কথা ছিল সেটা দিয়েছিলে?
এইরে! তনু একহাত জিভ বার করলো।
বুঝেছি। এখুনি দিয়ে দাও।
এটা কি ওষুধ না খাওয়ার রি-অ্যাকসন! বৌদি তাকাল নীরুর দিকে।
হ্যাঁ। এ-গুলো সব স্টেরয়েড গ্রুপের। এখন ধীরে ধীরে কমাচ্ছি।
তোরা সবাই যদি এসে জমে যাস চলে কি করে বল। বড়োমা গেটের কাছে।
থামো তোমার ছেলে বেগড়বাই করছে। বৌদি চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়োমা চোখ মুখ কুঁচকে ভেতরে ঢুকে এলো।
কি হয়েছে!
চোখটা দেখে কেমন সন্দেহ হলো। কপালে হাত দিয়ে দেখি জড়-জড় ভাব। ছোটোকে বললাম দেখতো….।
সব্বনাশ!।
সকালে ওষুধ খায় নি। তার রি-অ্যাকসন।
বড়োমা এসে আমার পাশে বসলো। মিত্রার দিকে তাকাল।
বিশ্বাস করো….।
তোদেরও বা দোষ দিই কি করে, সকাল থেকে যা চলছে।
তনু ওষুধ, জল নিয়ে এসে সামনে দাঁড়াল। আমি গিলে নিলাম।
তুইও একটু মনে করে চাইতে পারিসনি। বড়োমা আমার দিকে তাকাল।
গ্লাসটা তনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বড়োমার দিকে তাকালাম।
চা ছাড়া সকাল থেকে কিছু খাইয়েছ।
ও সুতপা চলো চলো, ওর খিদে লেগেছে।
ছোটোমা মিত্রা চোখা চুখি করে মুখ টিপে হাসছে।
আমি খাট থেকে নামলাম।
ওরা সবাই উঠে দাঁড়িয়েছে।
পকেট থেকে ফোনটা বার করে অন করতেই ম্যাসেজের শব্দ হলো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।
ঘর থেকে বেরিয়ে এ ঘরে আসতে আসতেই ম্যাসেজ পড়ে নিলাম।
বারান্দার শেষ প্রান্তে দেখলাম প্রবীরদা, অনুপদা, রূপায়ণদা দাঁড়িয়ে।
প্রবীরদা ইশারায় কাছে যেতে বললো।
সামনে এসে দাঁড়ালাম।
অনিমেষদা হঠাৎ ডেকে পাঠাল?
চলে যাও।
আবার কিছু ঘুঁটি সাজিয়েছিস?
যাওয়ার সময় অরিত্র লাস্ট যে ফাইলটা তোমাকে দিয়েছে সঙ্গে নিয়ে যাবে। জেরক্স।
অনুপদা হাসছে।
হাসছো কেন?
তুই সুস্থভাবে বাঁচতে দিবি না।
এখন আমার হাতে কিছু নেই। সব বড়বাবু, অনিকা, অনিসার হাতে। স্টেটের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে ড্রিলটা তোমার সঙ্গে বড়বাবুর হবে। সে সব সাঙ্গ পাঙ্গ সাজিয়ে নিয়ে এসে বসেছে।
সেটা জানি।
তোমাদের ওপর তলারও কিছু লোকজন আছেন।
প্রবীরদা আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে।
ফোনটা পাওয়ার পরই তোমার বুঝে যাওয়া উচিত ছিল।
দাদা অন্য কথা বললো।
তিনটে নতুন প্রজেক্ট এ্যাড করতে চায়।
রূপায়ণদা হাসছে।
বৌদি এসে পাশে দাঁড়াল।
আবার কি হলো প্রবীর!
বলছি একটু দাঁড়ান।
বৌদি দাঁড়িয়ে গেল।
ওই তিনটে টোপ? রূপায়ণদা বললো।
আমি হাসলাম।
কিরে চাঁদ তোর কি হলো, ওরকম উসখুস করছিস কেন?
অনুপদা মাঠের দিকে তাকাল। আমি পেছন ফিরলাম।
অনিদার সঙ্গে কথা বলবো।
কি হয়েছে বল।
দেখলাম রতন, আবিদও পাশে এসে দাঁড়ালো।
আমি চাঁদের মুখের দিকে তাকালাম। মুখটা ভীষণ কঠিন কঠিন লাগছে।
এবার আপনাদের কথা শুনে চুপচাপ থাকব না।
প্রবীরদার চোখমুখ কুঁচকে গেল।
ব্যাপারটা এখনও মেটে নি?
না। প্রচুর টাকা চাইছে। চিনা কাছাকাছি রয়েছে পার্মিসন চাইছে।
আমি প্রবীরদার দিকে তাকালাম। প্রবীরদা আমার মুখের দিকে তাকিয়েছে।
তুই ভেতরে যা। খওয়া-দাওয়া কর আমি সামলে দিচ্ছি।
প্রবীরদা ঠেলে আমাকে ঘরে ঢোকাতে চাইল।
বলোনা কি হয়ছে একটু শুনি।
শুনতে হবে না। বোললাম তো আমি সামলে দিচ্ছি। বিশ্বাস হচ্ছে না।
আমি কিছুক্ষণ প্রবীরদার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর চাঁদের দিকে।
প্রবীরদা পকেট থেকে ফোনটা বার করে হাতে নিয়েছে।
বৌদি আপনি ওকে নিয়ে ভেতরে যান। অনুপদা বললো।
বৌদি আমার হাতটা ধরে হিড় হিড় করে ঘরের মধ্যে টেনে নিয়ে চলে এলো।
ডাক্তারদাদা, আন্টি, দাদা, মল্লিকদা তখনও খাবার টেবিলে বসে কথা বলছে। কনিষ্করা সোফায়।
কি হলো বৌদি? তুমি একবারে ধরে বেঁধে নিয়ে এলে। নীরু বললো।
বৌদি হাসছে।
কিগো সুতপা? ডাক্তারদাদা আমাদের দিকে তাকাল।
কিছু না।
আমি বৌদির দিকে তাকালাম।
প্রবীর যখন বলছে তুই মাথা গলাচ্ছিস কেন। চল দিদির ঘরে গিয়ে বসবি।
আমি বৌদির মুখের দিকে তাকালাম। চোখেমুখে বিরক্তি।
বৌদি আমার হাত ছাড়ে নি। বড়োমার ঘরে এলাম।
মাসীমনি বড়োমার খাটে বালিসে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায়।
জ্যেঠিমনি, বড়োমা, ছোটোমা সোফায়।
বড়োমা আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
কিগো সুতপা!
কিছু না।
তাহলে?
মাসীমনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
যা রুমাদির পাশে গিয়ে বস। আমি খাওয়ার জায়গা করছি।
বৌদির গলার স্নেহের ধমক।
কি হয়েছে বলবে তো? ছোটোমা বললো।
সুতপা ওই ছেলেগুলো ওকে কিছু বলেছে? মাসীমনির চোখে হাসির ছটা।
বৌদি মাসীমনির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
বলো না, অনেকক্ষণ থেকে ওদের ঘুরঘুর করতে দেখছি। ওরা ঠিক ওকে একা পাচ্ছে না।
সত্যি বাবা আপনার চোখ।
বলেছে তাই না?
আবার কে কি বললো! বড়োমা তরপে উঠলো।
ওই যে ওর শাগরেদরা। ওই ঘর থেকে এই ঘরে যখন এসেছিল তখনও একবার পিছু নিয়েছিল।
কে গো সুতপা রতন না আবিদ? আজ সবকটাকে….। বড়োমা উঠে দাঁড়াতে গেল।
তুমি আর উঠো না। প্রবীর কথা বলছে।
বৌদি চোখের ইশারায় মাসিমনিকে হ্যাঁ বললো।
মাসীমনি আমার পিঠে হাত রেখেছে।
ছেলেটাকে এরা একটু শান্তি দেবে না। একটা না একটা লেগেই আছে। বড়োমা গজ গজ করছে।
ছোটোমা মুখ টিপে হাসছে।
এখন আর গণ্ডগোল করিস না। প্রবীর, অনুপের মুখে সব শুনলাম। ওরা চাপে পরে যাবে।
আমি মাসীমনির দিকে তাকিয়ে রইলাম। চোখে মুখে বুঝিয়ে দিলাম, তোমার কথাটা ঠিক মেনে নিতে পারছি না।
ওরা যখন বলছে ঠিক সামলে নেবে….। মাসিমনির চোখে মুখে স্নেহ চুঁইয়ে পড়ছে।
আমি কোনও কথা বললাম না। মাথাটা নীচু করে নিলাম।
বৌদি তোমাকে প্রবীরদা ডাকছে।
তনু গেটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। একবার আমার মুখের দিকে তাকাল। দুষ্টুমি চোখে হাসছে।
বৌদি বেরিয়ে গেল।
বিনয়ের সঙ্গে দেখা হল?
মাসীমনির মুখের দিকে তাকালাম।
তোর ঘরে গেছিল দেখা করতে। দরজা ভেজান ছিল।
ছোটোমা, বড়োমা, জ্যেঠিমনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
খেতে দাও।
আমি কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ছোটোমা উঠে দাঁড়াল।
মাসীমনির দিকে তাকালাম।
ওষুধ খেয়েছ?
খাওয়ার আগে খেয়েছি। পরেরটা খেতে বারন করলো।
কে?
ডাক্তারবাবু।
কেন!
বিকেলে কোথায় নিয়ে যাবে।
ও।
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
তিতাসের ফর্ম ফিলাপ হয়েছে?
হ্যাঁ।
তুমি কি বিকেলে চলে যাবে?
তুই বললে চলে যাব।
বড়োমা, জ্যেঠিমনি মুচকি হাসল। আমি চুপ করে রইলাম।
ঠিক আছে তুমি একটু বিশ্রাম নাও, আমি খেয়ে নিই।
মাসিমনি হাসছে। যা।
আমি কারুর দিকে আর তাকালাম না। ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম টেবিল সরিয়ে জায়গা করা হচ্ছে। দাদাদের দেখতে পেলাম না। মিত্রারা রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে। কনিষ্করা তখনও সোফায় বসে। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে। আমি তাকিয়েও তাকালাম না।
বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে এলাম।
দাদারা মাঠে ছাতার তলায় চেয়ারে বসে।
রতন, চাঁদ, চিনাদের কাউকে দেখতে পেলাম না।
পায়ে পায়ে আমার ঘরে এলাম। ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিলাম। বাথরুমে ঢুকে ফোনটা অন করলাম। গোটা কয়েক ফোন করে শেষ খবর নিলাম। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। জট পেকেছে। সময় নষ্ট করলাম না। নিজের কাজ সারলাম।
বাথরুমের বাইরে এসে দেখলাম বৌদি, তনু, মিত্রা খাটে বসে। তনু, মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
বৌদি আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে।
হাসলাম। ওরকম ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
তুই তো স্নান করতে ঢুকিস নি?
আমার সব কিছুতেই একটু সময় লাগে।
মাথা থেকে পোকাগুলো সরা না।
সরাতে চাই, সরছে কোথায়। নিজের কানে শুনলে।
প্রশাসনটা ওরা চালাচ্ছে।
জানি।
তাহলে?
নম্রতা ওপরে আছে?
তুই নম্রতাকে খুঁজিস নম্রতা তোকে খোঁজে। মিত্রা বললো।
চলো খেয়ে নিই।
মিত্রা, তনু হাসছে।
তুই মেয়েদুটোকে মেরে ফেলবি! বৌদি বললো।
না না, এতো সহজে মরবে না।
আমি ওদের মুখের দিকে তাকালাম।
একজনের অনি আছে আর একজনের বুবুন। দুজনের সঙ্গে আমি পাল্লা দিতে পারি। তার ওপর এখন রুমাদি এসে গেছে। একবারে ষাঁড়াসি আক্রমন।
খুব কথা শিখেছিস না, বৌদি তেড়ে এলো। মিত্রা, তনু মুচকি মুচকি হাসছে।
ফোনটা বেজে উঠলো।
মিত্রা, তনুর চোখ দুটো চনমন করে উঠলো। জিজ্ঞাসু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি মুচকি হেসে ফোনের লাউডস্পিকার অন করলাম।
হ্যালো।
বাবা, মিসন সাকসেসফুল। উই আর উইন দিস গেম।
মেয়ের গলা পেয় তনু মিত্রা দুজনের চোখ চক চক করে উঠলো। হাসছে।
তুমি খেতে বসেছো?
না। বসবো।
নম্রতাদি বললো তুমি খেতে বসেছো।
ওকে খুঁজছি, পাচ্ছি না।
তুমি কি গো। একটা ঢপ।
কথাটা শুনে বৌদি দাঁতমুখ খিঁচিয়ে গজ গজ করছে। শালুক চেনে গোপাল ঠাকুর।
ধরো দিদিভাই কথা বলবে।
মিত্রা, তনু, বৌদি হাসছে।
বাপকে চিন ফেলেছে। বৌদি বললো।
মামা। অনিকার গলা।
বল।
তোমার লাস্ট চালটা ইউনিক। অনিমেষ দাদাইকে বোঝাতে বেশ সময় লাগল।
কেন!
বুঝেও বুঝছিল না।
কিভাবে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হয় শিখলি।
শুভ, ড্যাড এ ঘরে।
তারস্বর চিৎকারে তাকিয়ে দেখলাম সুন্দর গেটের মুখে দাঁড়িয়ে।
মামা। ঘণ্টা চেঁচাচ্ছে।
হ্যাঁ।
সুন্দর, পক্কে, ঘণ্টা, অনন্য, নম্রতা, শুভ সবাই একসঙ্গে হুড়োহুড়ি করে ঘরে ঢুকলো। সবার মুখে হাসি। আমার হাতে ফোন। অনিকা কথা বলে চলেছে।
মসাই তুমি দিদিভাই-এর সাথে কথা বলছো। নম্রতা বললো।
হ্যাঁ।
দিদিভাই। নম্রতা চেঁচাল।
বল।
হিপ হিপ হুররে।
অনিকা, অনিসা দুজনেই হাসছে। হিপ হিপ হুররে।
জানিস নম্রতাদি তোরা যদি আর এক ঘণ্টা আগে পাঠাতিস এতটা সময় নিতাম না।
মেয়ের গলা পেলাম।
মসাই-এর সিগন্যাল পেয়ে শুভ দিল। সঙ্গে সঙ্গে তোকে পাঠালাম।
ওই ফাইলটা শুভর কাছে ছিল!
তুই জানতিস না!
দাঁড়া গিয়ে ওর মাথা ফাটাব। ছাগলটার পেটে পেটে এতো বুদ্ধি।
তনু, মিত্রা, বৌদি হাসছে।
বা-রে, মসাই ওকে সকালে মেল করেছে। ইনস্ট্রাকসন ছিল যখন একবারে আটকে যাবি এই তাসটা ওপেন করবি। এটা ট্রাম্পকার্ড। দেখবি সব চিৎপটাং। তার আগে ওপেন করবি না। নম্রতা বললো।
শুভ মুচকি মুচকি হাসছে।
গেটের মুখে দেখলাম ছোটোমা, বড়োমা, কনিষ্করা দাঁড়িয়ে। চোখে মুখে বিষ্ময়।
বাবা। মেয়ে চেঁচাল।
মেয়ের গলা পেয়ে সবাই ভেতরে ঢুকে আসছে।
রাতের ফ্লাইটে ফিরবো। তুমি ঘুমবে না।
সবাই।
আফুআঙ্কেল কিছুতেই থাকতে চাইছে না। রাঘবন আঙ্কেলকে বলেছে কলকাতায় চলো ওখানে বসে কথা হবে। অনিকে কতদিন দেখিনি। ভালোদাদাইকে বলেছে, আপনাদের এই মন্ত্রীটা ঠিক না। এরা কাজের লোক নয়। এদের হাটান।
ফিরে আয়, সব শুনবো।
তুমি ভালোদিদাইকে দাও।
ভালোদিদাই তোর কথা শুনছে।
ভালোদিদাই।
বল।
প্রবীর আঙ্কেল বেরিয়েছে।
অনেকক্ষণ। এখন মাঝ পথে।
সেই জন্য ফোনে পাচ্ছি না।
তোরা কোথায়?
আমি দিদিভাই এখন হোটেলের কফিশপে। সকাল থেকে যা যুদ্ধ করলাম।
কেন আবার কি হল!
সব বজ্জাত বুঝলে, তোমাকে গিয়ে বলবো। বাবা ঠিক করে।
তোর ভালদাদাই কোথায়?
ভালোদাদাইরা মিটিং করছে।
সব ভালয় ভালয় মিটেছে।
এত তাড়াতাড়ি মেটে।
আমি ফোনটা বৌদির হাতে দিয়ে ঘরের বাইরে এলাম।
নীরু, কনিষ্ক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কিরে! এরা এতো নাচানাচি করছে? নীরু বললো।
জীবনে প্রথম এ্যাচিভমেন্ট।
কনিষ্ক হাসছে।
তাই বল। আমি ভাবলাম আবার কি গণ্ডগোল হলো।
তোর বাবা ওই ঘরে চলেগেছে। মিত্রার গলা কানে এলো।
দাদা, ডাক্তারদাদা, মল্লিকদা, আন্টি আমার ঘরের দিকে তাকিয়ে।
কিরে অনি? ডাক্তারদাদা বললো।
বুঁচকি ফোন করেছে।
তাই বল। ওরা কি আজ আসছে?
ঠিক নেই। আরও ঘণ্টা খানেক বাদে জানা যাবে।
অনেক বেলা হলো এবার খেয়ে নে।
আমরা এই ঘরে এসে ঢুকলাম।
পর্দাটা সরিয়ে একবার বড়োমার ঘরে উঁকি মারলাম। দেখলাম মাসীমনি ঘুমচ্ছে।
বিকেলে মাসীমনিকে কোথাও নিয়ে যাবি? কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
নার্সিংহোমে। একবার থরো চেকআপ করবো।
কি বুঝছিস?
তুই তো সব গুছিয়ে রেখেছিস।
কনিষ্কর মুখের দিকে তাকালাম।
নীরু, জয়ন্তীর কাছ থেকে মাসির ফাইলটা নিয়ে সকাল থেকে স্টাডি করেছে।
নীরুর দিকে তাকালাম।
মনেহচ্ছে লড়ে যাওয়ার রসদ আমাদের হাতে আছে। নিজেদের গুছিয়ে নিতে তিন সপ্তাহ সময় নেব, তারপর ছুঁড়ি কাঁচি ধরবো।
তোরা করবি না অন্যকেউ।
স্যারের বন্ধু। স্যার, আন্টি দুজনেই অপারেসন থিয়েটারে থাকবে বলেছে। আমরা হেল্পার।
দেখ। আমার যদি সাহায্যের দরকার হয় বলিস।
নীরু হাসলো।
তোর জিনিষ এতো তাড়াতাড়ি হার শিকার করলে চলবে।
বড়োমারা ঘরে ঢুকলো। সবাই চোখে হাসছে।
তিতাস, বিনয়দা, তিন্নীকে এতক্ষণ বাদে দেখলাম।
তিতাস কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো।
তোমার সঙ্গে কথা বলবো না যাও।
আমি কি অন্যায় করলাম।
একঘণ্টা আগে এসেছি, খুঁজেই পাই না।
তোর মার সঙ্গে গল্প করছিলাম।
শুভদের দিকে তাকিয়ে বললাম।
এদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
ঘণ্টারা হাসছে।
মামা মাঝে মাঝে ছোটগল্প ঝাড়ে তাই না পক্কে। ঘণ্টা বললো।
সিনপসিস। পরে ওটা উপন্যাস।
শুভ বাকি মালগুলো ছাড়। তুই মামার গোডাউন। আমরা সব শো কেশ।
ঘণ্টা, পক্কের কথা শুনে সকলে হাসে।
ছুটকি এদের কথা শুনছিস। ইসি বললো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
দিদান বড্ড খিদে লেগেছে। নম্রতা চেঁচাল।
অনেকক্ষণ তোদের ডেকেছি। ছোটোমা বললো।
নম্রতা ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তুমি জানো না, এতক্ষণ কি টেনসনে ছিলাম।
এই ক-দিনে তোর মসাইকে বুঝলি না, কখনও পুর দেয় না। একটু একটু করে দেয়।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
চিকনারা এলো না।
টায়ার পাংচার।
মিত্রা এমনভাবে কথাটা বললো হেসে ফেললাম।
বড়োমার দিকে তাকালাম।
ওদের খেতে দাও আমরা পরে বসছি।
হ্যাঁ….তোমরা কোথায়….আর পাঁচ মিনিট….তোমাদের জন্য সবাই বসে আছি….ঠিক আছে।
মিত্রা ফোনটা কান থেকে নামাল।
দামিনীমাসি একগ্লাস জল নিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়েছে।
এটা কি?
চিনির জল। সকাল থেকে কিছু খাস নি। ওরা অনেক খেয়েছে।
মাসি তুমি এতোবড়ো মিথ্যে কথাটা বলতে পারলে! মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
মাসি হাসছে।
আমি জলটা খেয়ে সোফায় এসে বসলাম।
নীরু দেখলাম কি খাচ্ছে। বটারা পেছনে লেগে পরেছে। ওখানে চেঁচামিচি চলছে।
উঁকি মেরে দেখলাম বড়োমার ঘরের দরজাটা ভেজান।
মিত্রা এসে আমার হাতে ফোনটা দিল। তিতাস আমার পাশে এসে বসেছে।
ওরা রাতে ফিরে আসবে।
তোকে বললো।
মেয়ে তার দিদানকে বলেছে।
ও। সুরো কোথায়?
শ্বশুর, শাশুড়ীকে আনতে গেছে।
এই যে তখন বললো আসছে।
শ্বাশুড়ী বলেছে সুরকে যেতে।
বাচ্চাদুটো?
সঙ্গে আছে।
মিলিরা অফিসে?
ইসলামভাই-এর সঙ্গে গেছে। এখুনি ফিরে আসবে।
অংশু?
আর কার কার খোঁজ খবর নেওয়ার বাকি আছে।
তিতাস খিক খিক করে হেসে উঠলো।
তুই হাসলি কেন?
তিতাস মিত্রার মুখের দিকে তাকাল।
তোমাদের দুজনের কথা শুনতে খুব ভালো লাগছে। কেমন সুন্দর তুই তুই করে বলছো।
তোর অনিকাকাকে জিজ্ঞাসা কর।
পাগল, যা গপ্প দেবে না। গরু পুরো গাছে।
তুইও বুঝে গেছিস! মিত্রা হাসছে।
কেন তোমরা জান না?
মিত্রার হাসি থামেনি।
হ্যাঁগো। ঠাম্মাকে যখন বলতো ঠাম্মা হ্যাঁ করে বেশ মনযোগ সহকারে শুনতো। তখন কিছু বলতো না। যখন অনিকাকা চলে যেত, তখন বলতো অনি ডাঁহা মিথ্যে কথা বলে গেল।
আমি বলতাম তুমি তখন অনিকাকাকে বললে না কেন?
বলে, সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল ও সত্যি কথা বলছে। তারপর যখন একা একা বসে ভাবলাম। তখন মনে হলো কোথায় যেন ও জল মিশিয়েছে।
খেতে এখনও আধঘণ্টা ও ঘরে যাবি নাকি? কনিষ্ক বললো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ওদের সঙ্গে বারান্দায় আসতেই দেখলাম চিকনাদের গাড়ি গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকছে।
দাঁড়িয়ে পরলাম।
ভানু তারস্বরে দেশোয়ালী ভাষায় গাল দিচ্ছে। মৌসুমি মাসির গলার শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
এখান থেকে পরিষ্কার না হলেও বোঝা যাচ্ছে।
দু-দুটো গাড়ি। বাড়ি শুদ্ধু সবাই উজার করে চলে এসেছে।
গাড়ি ভেতরে আসতেই চিকনা গাড়ি থেকে নেমে খুব ধীর পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে এদিকে এগিয়ে আসছে।
আমাকে দেখে হাসছে।
আজ মাসি ভানুর সঙ্গে লেগে পরেছে। সবাইকে একবার করে স্বর্গে নিয়েগেছে আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। কি গাল কি গাল, কান পুরো পরিষ্কার।
আমি হাসতে হাসতে বারান্দা থেকে মাঠে নেমে এসেছি।
দিব না আছাড় মুখ বার করি দিব। এবার ভানুর গলা পেলাম।
অলাউঠা এউটা তোর ঘর।
তোর বাপের।
হঁ মোর বাপের।
হাসতে হাসতে আমি চিকনাকে জড়িয়ে ধরেছি। কেমন আছিস?
ব্যাথাটা কমেছে। ভেতরটা ভীষণ টাটাচ্ছে।
মলমটা লাগাচ্ছিস না?
লাগাচ্ছি। মাসীমনি কোথায়?
বড়োমার ঘরে একটু শুয়েছে।
তাহলে এখন ঝামেলা করা যাবে না।
মাঠের দিকে চোখ পড়ে গেল, দেখলাম মীরচাচা ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নামছে।
ও-মা মীরচাচাকেও নিয়ে এসেছিস!
এই কথা জানার পর কেউ থাকতে চায় বল।
ভানু মাসিকে কোলে করে গাড়ি থেকে নামাল। সবাই চলে এসেছে। পাঁচু, পচাও আছে।
শ্যামরা সন্ধ্যের দিকে আসবে।
ওদের কে খবর দিল!
গুরুমা।
আমি হাসছি।
অনির কাছেকে লিয়ে চ।
পারব নি, নিজে চলি যাও।
মুখ পোড়া ডাংয়ে সিধি করি দিব।
ক্ষ্যামতা আছে।
উঃ ভানু থামনা। বাসু চেঁচাল।
সেই তদবানু ট্যাংস ট্যাংস করতিছে।
করুক না, তোর কি।
বড়গিন্নী।
মাসির গলা পেলাম। থেবড়ে মাটিতে বসে আছে।
দেখলাম কাকীমা কাছে এগিয়ে গেছে।
মোর হাতটা টুকু ধরতো।
কাকী তুমি থাম আমি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি। বাসু বললো।
সেই কোনা বাইপাস থেকে চলছে। চিকনা বললো।
কেন?
টায়ারটায় পেরেক ঢুকেছিল। মাসির তর্জন গর্জন শুরু। সেই থেকে চলছে।
নীপা এগিয়ে এসেছে, মাসীমনি কোথায়?
ঘুমচ্ছে।
এখন তুমি আর অনাথ নও। নীপা ছল ছল চোখে জড়িয়ে ধরলো।
কাকীমা, সুরোমাসিও এসেছে।
বাসু মাসিকে তুলে দাঁড় করিয়ে হাতে লাঠি গুঁজে দিয়েছে। বুড়ি মাথা গুঁজে হাঁটতে শুরু করেছে।
ও নীপা। মাসি হাঁটতে হাঁটতেই চেঁচাল।
বলো।
অনি কাই।
এই তো এখানে।
আমি এগিয়ে গিয়ে মাসির হাতটা ধরলাম।
একটু দাঁড়িয়ে পরে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে মুখের দিকে তাকাল।
চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। ফোকলা দাঁতে হাসছে।
ছোটগিন্নী কাই?
চলো নিয়ে যাচ্ছি।
নীপা কইলো শরীল খারাপ।
হ্যাঁ।
কি হছে।
রক্তখারাপ হয়েছে।
অখন গতর লাই।
মাসির চোখে মুখে হতাশা।
বৌমা কাই।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
থামলো। একবার কোমরটা সিধে করে তাকাল। বুঝলাম চোখের আলো অতদূর পৌঁছল না।
আবার নীচু হয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে হাঁটতে শুরু করলো।
বারান্দার কাছে আসতে দেখলাম তনু, মাসীমনিকে চেয়ারে বসিয়ে ঘর থেকে বেরচ্ছে।
চিকনা দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেছে। নীপাও ছুটেছে।
মাসি এসে বারান্দায় বসলো।
আমার হাতটা ছাড়ল।
বড়োমাকে ডাক।
সবাই এখানে আছে। মাসীমনি এসেছে।
বুড়ী তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে টাল খেল। আমি ধরে ফেললাম।
কাই?
দাঁড়াও আসছে।
মোকে লিয়ে চ।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারবে।
পারবো।
মৌসুমীমাসি লাঠি ভর দিয়ে আবার উঠে দাঁড়াল। ওখানে তখন কাকীমা, সুরমাসি, নীপারা সকলে মাসীমনিকে ঘিরে ধরেছে। আমি মৌসুমী মাসিকে ধরে ধরে কাছে নিয়ে এলাম।
মাসীমনি মৌসুমীমাসির দিকে তাকিয়ে।
ও অনি।
বলো।
আমাকে এউঠি টুকু বুস করি দে।
কেন।
ছোটগিন্নীক একটু গড় করি।
এখন থাক।
নিজেই লাঠি ছেড়ে বসতে গিয়ে টাল খেল।
এই দ্যাখ দ্যাখ। বাসু চেঁচাল।
আমি আবার ধরে বসালাম।
সবাই মৌসুমি মাসির দিকে তাকিয়ে।
তুমি ছোটগিন্নীর আপন মায়ের পেটের বোন।
মৌসুমি মাসি মাসীমনির দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকাল।
মাসীমনি মাথা দোলাল।
ও অনি।
আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
ছোটগিন্নী কথা বলেনা কেন।
হ্যাঁ। মাসীমনি শব্দ করে বললো।
মৌসুমিমাসি কাঁপা কাঁপা হাতে মাসীমনির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
চলবে —————————–
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/F6Qupnj
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment