কাজলদিঘী (২০০ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

২০০ নং কিস্তি
—————————–

অনিমেষদা, বিধানদা মুচকি মুচকি হাসছে।

বিনদের সঙ্গে আর কারা এসেছে?

টোটাল টিম।

শুভর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিস?

ও ফোন ধরছে না। একবার আমাকে আর বোনকে ম্যাসেজ করেছে। বিরক্ত করবি না।

নম্রতা?

কোনও খোঁজ খবর নেই।

আফতাবভাই আমার দিকে গণগণে চোখে তাকাল।

আলতাফকে ফোন লাগাও। আমি বললাম।

দিদি মাথা নীচু করে মুচকি হাসছে।

চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে আলতো করে সেন্টার টেবিলে কাপটা নামিয়ে রাখলাম।

মিত্রা আমার ফোনটা আফতাবভাই-এর হাতে দিল।

পাস ওয়ার্ড দেওয়া আছে। খুলতে পারবে না।

আফতাবভাই ফোনটা মিত্রার হাত থেকে নিয়ে দিদির হাতে দিল।

পাসওয়ার্ড টাইপ করো।

সবাই আফতাবভাই-এর মুখের দিকে তাকিয়ে।

আমরা আর একটু অপেক্ষা করি। তুমি আলতাফকে একটা ফোন করো। দিদি বললো।

তুমি আমার থেকে ওকে বেশি সাপোর্ট করো। আফতাবভাই ঝাঁঝিয়ে উঠলো।

অন্যায় করি। আজ পর্যন্ত তোমার গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দিয়েছে।

কিছু বললেই তোমার ওই এক কথা।

অনিকার মুখের দিকে তাকাল।

আলতাফের সঙ্গে তোর কোনও কথা হয়েছে।

আলতাফ আঙ্কেল স্বীকার করেছে ও কিছু জানে না।

ভিকু।

মামা অন্য কাজ দিয়েছে।

অনিকা, আন্টির দিকে তাকাল।

আন্টিদিদাই তুমি বলো না। তোমাকে তো সাগর আঙ্কেল ফোন করেছিল।

ঘরের সবাই এবার অবাক হয়ে আন্টির দিকে তাকিয়েছে।

কি বলি বল। ওর সঙ্গে একটু আলাদা কথা বলবো সে ফুরসৎ পাচ্ছি। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে কি করে বুঝবো। অজুকে বললাম, ও বললো চুপচাপ থাকো, পরিবেশ পরিস্থির ওপর নজর রাখো। মনেহচ্ছে এটা প্রেসার গেম। মুখে রা-টি কোরো না। প্রত্যেকটা অনির চাল, সাদাচোখে তুমি ওটা দেখছো। এর পেছনে আরও অনেক কিছু আছে।

ডাক্তার তুমি তো মহা নম্বরি। বড়োমা ধমকে উঠলো।

অনিমেষদা, বিধানদা হেসে উঠলো।

শুনলেন বিধানবাবু, বান্ধবীর কথা শুনলেন, তখন সোনা আপনার সামনেই কথাটা বলেছে।

বিশ্বাস করো সামন্ত আমি অতটা গুরুত্ব দিই নি। তবু আমি অনিমেষকে সঙ্গে সঙ্গে বলেছি এরকম একটা খবর ভাসছে, তুমি একটু খোঁজ খবর নাও। অনিমেষ আমাকে কোনও ফিডব্যাক দেয়নি। তারমানে কি বুঝবো, অনিমেষ সামলে দিয়েছে।

তোর কান ধরে ছিঁড়ে দেব। বড়োমা দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে আমার কান ধরলো।

আমি আ আ করে চেঁচিয়ে উঠলাম। দিদি, বড়োমার হাতটা চেপে ধরেছে।

তুমি ছাড় নাজমা।

শয়তানের হাড্ডি, সারাটা জীবন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারলে। থেকে থেকেই মাথায়….

প্রত্যেকেই কম বেশি রেগে আছে তবু হেসে ফেললো।

আমি বড়োমার দিকে হাসতে হাসতে তাকালাম।

এবার শান্তি। কানটা ভীষণ জ্বালা জ্বালা করছে। ফুঁ দিয়ে দাও।

সবাইকে টেনসনে রেখে তুমি মজা নিচ্ছ। ওই টুকু একটা পুঁচকে ছেলে তোমার স্যাংত হয়েছে। আসুক আজকে।

বড়োমা অনিসার দিকে তাকাল।

এই তোদের আর সবকটা কথায়?

সবাই ওপরে। যাকে যা কাজ দিয়েছে করছে।

ডাক সবকটাকে।

ওরা কিছু জানে না।

ব্যাস, তোমার দৌড় শেষ, এবার থেমে যাও। ডাক্তারদাদা বললো।

ছোটোমা মুখ নীচু করে হাসছে। বৌদি গম্ভীর।

আমি দিদির দিকে তাকালাম। পাসওয়ার্ডটা টাইপ করে দাদার হাতে দাও।

দিদি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

কিছু হবে না তুমি দাও না।

বিনোদ কেন এসেছে?

তুমি কি ভেবেছো, বিনোদ এখানে এসেছে দাদা জানে না? দাদা দাদার মতো ফিডব্যাক দিয়েছে, আমার সেটা পছন্দ হয়নি, তাই আমি আমার মতো ফিডব্যাক দিয়েছি। মাথায় রাখবে দাদারও শত্রু আছে। তোমার সঙ্গে বহুবার এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করেছি।

ওই প্রজেক্টটা স্টপ করে দে।

তাহলে তুমি হার স্বীকার করে নিচ্ছ।

তা কেন।

অনিমেষদা, বিধানদা প্রশাসনিক ভাবে এই ব্যাপারটা এই মুহূর্তে সামলাতে পারবে না। তাতে পলিটিক্যালি বায়াস তৈরি হবে। ওরা এইটাই চাইছে। তাই জন্য তোমাকে ডিস্টার্ব করছে। তাতে সামনের ইলেকসনে ওদের এ্যাডভানটেজ।

সবচেয়ে বড়ো সমস্যা ওরাও ভেতরের ব্যাপারটা জেনে ফেলেছে, আমিও জেনে ফেলেছি। ওরা প্রশাসনে আছে আমি নেই। ছেড়ে কথা বলবে কেন। আমার থেকে একটু হলেও ক্ষমতা বেশি।

শুভকে জড়ালি কেন।

দেখবে ফুটবলমাঠে স্ট্রাইকারকে সবাই চেনে। যেহেতু ওরা গোল করে। কিন্তু গেমমেকারকে কেউ চেনে না। গেমটা যে মেক করে তাকে খুব স্ট্রং মাইণ্ডের হতে হয়। মাঠে তার স্কিল সবচেয়ে বেশি। সে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত গেমটা অপারেট করে। তুমি জীবনে যত বেশি বঞ্ছনার স্বীকার হবে তত বেশি স্ট্রংমাইণ্ডের তৈরি হবে।

এরা জীবনে খুব একটা বঞ্ছনা উপভোগ করে নি, ফলে মানসিক দিক থেকে এরা খুব দুর্বল। ড্রাস্টিক এ্যাকসন নিতে এরা দশবার ভাবে, গড়িমসি করে। শুভ মা-বাপ হারা ছেলে। এদের থেকে দুনিয়াটা একটু বেশি দেখেছে। তাই দায়িত্ব দিলাম।

অনিমেষদার দিকে তাকালাম।

অনুজকে তুমি সামলাতে না পারলে আমার হাতে ছেড়ে দাও।

তোকে আমি এই ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাতে বারণ করেছি।

মাথা ঘামাই নি। তুমি, বিধানদা যদি এদের সঙ্গে একসঙ্গে চলে আসতে মাথা ঘামাতাম না। তোমাদের ফিরে না আসাটা আমাকে মাথা ঘামাতে বাধ্য করলো।

অনিমেষদা এবার হাসছে। মাসীমনির মুখেও এক চিলতে হাসির রেখা।

তোমাদের মিটিং-এর সমস্ত তথ্য আমার কাছে আছে।

এই গেমটা যে আমার হাতের বাইরে কখনই যেতে দেব না এটা তোমরা ভালো করেই জান। শুভ কলকাতায়, অনিকারা দিল্লীতে। শুভ অনিকাদের ডেটা পাঠায় কি করে? ও কি হাত গুণবে। এই পরিষ্কার বাংলাটা তোমরা ধরতে পার নি কেন, এটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

তোমাদের এটাও জানা উচিত ছিল। ওই ডাটা মোস্ট কনফিডেন্সিয়াল। কারুর পাওয়ার কথা নয়। শুভ পেয়ে গেল, আর পাঠিয়ে দিল, এটা হতে পারে না।

দিদির দিকে তাকালাম।

তুমি পাসওয়ার্ড দিয়ে দাদার হাতে ফোনটা দাও।

আমি যেটা দিই সেইটা।

হ্যাঁ।

আমি একটু আসছি। উঠে দাঁড়ালাম।

বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখে হাসি।

আমি তোর সঙ্গে একটু কথা বলবো। আন্টি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

এসো। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।

আমাকে দেখে নেপলা, রতন, সাগির, অবতার উঠে এলো।

আসার পর তোদের সঙ্গে কথা বলতে পারি নি।

তুমি যা ব্যস্ত, এরপর তোমার সঙ্গে দেখা করতে হলে ভিজিটিং স্লিপ দিয়ে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হবে।

নেপলা হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরলো।

অবতার লাস্ট আপডেট কি?

রতনদা সব বলেছে।

আন্টি এসে পাশে দাঁড়িয়েছে।

কিগো আন্টি মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে। নেপলা বললো।

তোরা সব কটা এক গোয়ালের গরু।

রতন হাসছে।

সাগির পকেট খালি না ভর্তি।

তুমি চাইলে পেয়ে যাবে। তাছাড়া দাদা, দিদি সঙ্গে আছে।

দেখলাম অনিকা, অনিসা দুজনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

আন্টি তুমি গিয়ে সোফায় বসো আমি যাচ্ছি।

এখুনি আবার কে এসে পরবে।

আসলেও তোমার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর আমি দেব।

অনিকার দিকে তাকালাম।

যা নয়না আন্টিকে ডেকে নিয়ে আয়।

দুজনেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আর দাঁড়াল না।

আন্টি ধীর পায়ে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

হিমাংশুর সঙ্গে কথা বলেছিস?

সাগিরের দিকে তাকালাম।

আজ ফাইলটা দেবে বলেছে।

বড়ো কিছু এখন ভাবিস না। ছোট ছোট ফেজে কাজ কর।

রতনদা বলেছে।

রতন, পদুর সঙ্গে কথা বলেছিস?

গতকাল টাকা এ্যাডভান্স করে এসেছি। চাঁদ ওর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছে। মাস তিনেকের মধ্যে হ্যান্ডওভার করবে বলেছে।

তোকে যে কাজ দিয়েছিলাম?

ফাইলটা আমার কাছে আছে। নিয়ে আসবো।

নিয়ে আয়। সুবীরের সঙ্গে কথা বললি।

বলেছি। অবতার বলছিল….।

কি?

কিছু টাকা যদি ব্যাঙ্কে ফিক্সড করা যেত।

হুন্ডি ?

নেপলা হাসছে। তুই বড্ড সেয়ানা রতনদা।

হিমাংশুর সঙ্গে কথা বলেছিস?

হিমাংশুদা বলেছে দেবাকে দিয়ে দে, তারপর কাজের সময় আবার নিয়ে নিবি।

ভাল বলেছে।

হবে না।

কেন!

দেবাদা সামান্য নিতে পারে পুরো নেবে না।

তাহলে কয়েকদিন কাছে রেখে দে। তারপর দেখছি।

ঠিক আছে।

তোদের সঙ্গে আমি দুপুরের দিকে বসবো। আবিদকে, ওমরকে একটু ডেকে পাঠা।

তুমি তো ওদের পাঠিয়েছ। নেপলা বললো।

সেই কাজ এখনও শেষ হয় নি!

আর একটু বাকি আছে।

আমি দাদার ঘরের দিকে এগোলাম।

নেপলা এগিয়ে এসে পথ আগলে দাঁড়াল।

কি হলো!

তুমি রাগ করলে?

কেন!

তাহলে কোনও উত্তর দিলে না।

হাসলাম।

আজকের অপারেসনটা নিখুঁত। আমাদের আর দরকার পড়বে না।

নেপলা হাসতে হাসতে চলেগেল।

ঘরে ঢুকেই দেখলাম আন্টি বড়ো সোফার এক কোনে শূন্যদৃষ্টি নিয়ে বসে আছে।

আন্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।

কাছে গিয়ে আন্টির প্রায় কোলে উঠে বসলাম।

বলো। খুব ভয় পেয়েছো।

সেইরকম না। তবে একটু পেয়েছি।

জানো আন্টি একসময় আমার মধ্যেও ভয় আর টেনসন ছিল। এখন প্রুফ হয়ে গেছি। এখন ব্যাপারটা দৈনিক কাজের অঙ্গ হিসাবে দেখি। আর দশটা কাজের মতো এটাও আমার একটা কাজ। তুমি যেমন পেসেন্ট দেখো অনেকটা সেইরকম।

আন্টি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

বোঝই তো একটা গ্রামের ছেলে আণ্ডার-ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে এতো দহরম-মহরম। শ্রেফ বাঁচার তাগিদে। না হলে তোমাকে পায়ের তলায় পিষে মেরে দেবে।

আন্টির ঠোঁটে একচিলতে হাসি।

যাক সাগর তোমায় কি বললো?

তুই জানিস না।

বিশ্বাস করো, শুভ না এলে ব্যাপারটা ঠিক পরিষ্কার হবে না। তবে তোমায় ফোন করেছে মানে আমার ওষুধে কাজ হয়েছে।

তুই শুভকে ফোন করিস নি?

এখনও করি নি।

কেন!

প্রয়োজন বোধ করি নি। আমি কনফিডেন্ট ও কাজটা বার করে নেবে। যদি তা না হতো তাহলে তোমাকে সাগর ফোন করতো না।

নয়না, অনিকা, অনিসা ঘরে ঢুকলো। নয়নার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো।

হাত দেখিয়ে তিনজনকে সোফায় বসতে বললাম। নয়না আমার পাশে এসে বসলো।

আমি নয়নার মুখের দিকে তাকালাম।

নম্রতা ফোন করেছিল।

নয়না মাথা দোলাল। হ্যাঁ।

সাগরের সঙ্গে কথা বললে।

নয়না ফের মাথা দোলাল। হ্যাঁ।

কি বললো?

ভুল হয়ে গেছে।

তুমি বিশ্বাস করো?

নয়না চুপ করে রইলো।

চুপ করে থেকো না। তুমি আন্টির মেয়ে আমাকে অনেক ভেবেচিন্তে স্টেপ নিতে হচ্ছে। তা যদি না হতে আমি এতক্ষণে ফুৎকারে সব উড়িয়ে দিতাম। সব কেমন জট পেকে আছে। আমাকে সেই জট ছাড়াতে হবে। আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো। আমার ওপর অভিমান কোরো না।

আমি তোমার ওপর অভিমান করি নি।

তাহলে তোমার মনের কথাটা বলো।

ও বেঁচে থাকুক। আমি ওর কাছে আর ফিরে যাব না।

তুমি সব জানতে, আগে ভাবনি কেন?

ভাবার মতো সুযোগ আসে নি। ঘরে বাইরে যুদ্ধ করতে করতে ফেডআপ হয়ে গেছি। মাকেও সব কথা বলতে পারতাম না। বলা যায় তুমি বলো।

অন্ততঃ কিছু কথা আন্টিকে জানাতে পারতে।

মা নিজেই নানা সমস্যায় জেরবার।

এখন কোথায় থাকবে?

মায়ের ফ্ল্যাটে।

আন্টিকে তোমার মনের কথা বলেছো?

বলেছি।

আন্টি কি বলেছে?

মা থাকতে বলেছে।

তোমাদের পারিবারিক সমস্যা?

আমার আর ভাল লাগছে না। সারাজীবন অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছি।

এটা সমস্যার সমাধান নয়।

আমার কাছে কিছু গহণা আছে, আমি তোমাকে দিচ্ছি। তুমি যা পার করো।

আমি নয়নার দিকে স্থির চোখে তাকালাম। চোখ নামিয়ে নিল।

তোমার গহনা নিয়ে আমি কি করবো?

তোমার অনেক টাকার দরকার।

হাসলাম।

তুমি আমাকে সাহায্য করলে টাকার ব্যাপারটা আমি বুঝে নেব।

তুমি সুজিতবাবুর কাছে টাকা চেয়েছ।

সুজিতদা আমার দাদা, আমি ছোটোভাই। ছোটোভাইয়ের বিপদে দাদা সাহায্য করতে পারে না?

ওই টাকাটা তুমি আমার জন্য চেয়েছ।

আন্টি আমার মায়ের মতো। তুমি আন্টির মেয়ে। আমার বোনের সমতুল্য। আমার বোনের বিপদে পাশে দাঁড়ানটা অপরাধ।

নয়না আমাকে জাপ্টে ধরে হাপুস নয়নে কেঁদে উঠলো।

অনিকা, অনিসার মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। চোখদুটো সামান্য হলেও ছলছলে।

আমি স্থির অবিচল। চোখের ভাষা দীঘির জলের মত টলটলে।

তুমি আমার জন্য আর কত নীচে নামবে?

যতটা নীচে আমাকে নামাবে। জানো নয়না, আমি যতটা নীচে নামতে পারব, ওরা ততটা নীচে নামতে পারবে না। তুমি এই কদিনে সেটা নিশ্চই বুঝতে পেড়েছ।

নয়নার কান্না থামে নি। আন্টি সামান্য হলেও অপ্রস্তুত।

কাঁদছ কেন। কেঁদে জিততে পারবে। সমস্যা একটা তৈরি হয়েছে। সেটা সমাধান করতে হবে। এর বাইরে দ্বিতীয় কোনও পথ নেই।

বাইরের বারান্দা থেকে বড়োমার গলা ভেসে এলো। কার ওপর খুব হম্বিতম্বি করছে।

অনিকার দিকে তাকালাম।

ছাড়ো তো। দিদাই সব সময় ওরকম করে। অনিসা বললো।

ও কথা বললে হবে, দেখ কার ওপর তরপাচ্ছে।

অনিকা সোফা থেকে উঠে বাইরে বেড়তে গিয়ে নম্রতার সঙ্গে ধাক্কা খেল।

তুই!

নম্রতা, অনিকাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘোষছে। অনিসা পেছন ফিরে তাকাল।

নম্রতা ওখান থেকেই আমকে দেখে ফেলেছে। হাসলো। পেছনে শুভ।

দিদাই তোমাদের বলছে! অনিসা বললো।

আবার কাকে বলবে। একটু পরে দেখবি ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। নম্রতা হাসছে।

ও ঘর থেকে সুরোর তারস্বর গলা ভেসে আসছে। বুঝলাম অংশু এসে ও ঘরে ঢুকেছে।

ওই দেখ সুরোপিসী চিল্লাচ্ছে। অনিকা বললো।

চেল্লাতে দে একটু পরে থেমে যাবে। নম্রতা বললো।

নম্রতা এসে আমার সামনে নীলডাউন হয়ে বসল। শুভ অনিকার উঠে যাওয়া শূন্য সোফা দখল করেছে।

দারুণ অভিজ্ঞতা বুঝলে মশাই। শুভর হেব-বি স্ট্যামিনা। ঠিক তোমার মতো।

আমি নম্রতার দিকে তাকালাম। খুশিতে চোখমুখ চিক চিক করছে।

অনিসা শুভর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে।

শুভ মুচকি মুচকি হাসছে।

মা কাঁদছে কেন? নম্রতা বললো।

মাকে জিজ্ঞাসা কর।

দূর।

নম্রতা, নয়নার দিকে তাকালই না।

দিদা আজ চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দিয়েছি। এবার থেকে যার যার তারতার।

আন্টি, নম্রতার দিকে তাকিয়ে।

বুঝলে দিদা মশাই-এর পাশে থেকে মশাই-এর ফ্লেভারটা দারুণ এনজয় করছি।

আন্টি, নম্রতার মুখ থেকে চোখ সরাচ্ছে না।

দূর তুমি কথাই বলো না। খালি চেয়ে থাক।

তুই তো বলছিস।

দেখো সুতপা দেখো। একটা কোলের ওপর উঠে বসেছে, আর একটা রাজার মতো সিংহাসনে বসে।

বড়োমা, বৌদি গেটের মুখে দাঁড়িয়ে।

দিদান খিদে লেগেছে। দুটো খেতে দেবে। শুভ বললো।

কেন যেখানে গেছিলে সেখানে জোটে নি।

এতো রিচ খাবার মুখে রুচল না বুঝলে। এর থেকে আমাদের কচুরী যথেষ্ট দামী।

বৌদি মুচকি মুচকি হাসছে।

ভালোদিদাই, ভালোদাদাই ও ঘরে?

বৌদি শুভর মুখের দিকে তাকিয়ে।

রেড লাইট না গ্রিণ লাইট?

তোর কোনটা দরকার? বৌদি বললো।

তোমাকে হলেই চলবে। দিদান খেতে দেবে না। তুমি দুটো খেতে দাও। নারীভুরি শুকিয়ে চচ্চরি।

শুভ অনিসার দিকে তাকাচ্ছেই না। অনিসা যে ভেতর ভেতর রাগে ফুঁসছে সেটা বুঝতে পারছি।

নম্রতাদি তোর খিদে লাগে নি?

চাইলে যদি না পাই। তার থেকে দিলে খাব, না দিলে খাব না।

খুব ট্যাংস ট্যাংস কথা ফুটেছে মনে হচ্ছে। বড়োমা খ্যাড় খ্যাড় করে উঠলো।

নম্রতা খিল খিল করে হাসছে।

আমার কাছ থেকে উঠে গিয়ে বড়োমাকে জাপ্টে ধরলো।

হ্যাঁগো দিদান, তুমি কথা বলতে না পারলে, তোমাকে সব্বাই পায়ের তলায় মাড়িয়ে পিষে মেরে দেবে।

নম্রতা বড়োমার মুখের দিকে তাকাল।

জানো দিদান, আমরা কথা বলি। মসাই কথা বলে না। মসাই-এর মগজটা কথা বলে। হাড় হিম করা অভিজ্ঞতা। তোমাকে বলবো। ব্যাটা অনুজটা যত নষ্টের গোড়া। ঠিক একটা না একটা মতলব ভেঁজেই চলেছে। মসাই কতদিকে লক্ষ্য রাখে বলো। আজ অংশুপিসাই অনুজবাবুকে আচ্ছা করে দিয়েছে। পরিষ্কার বলে দিয়েছে বাকি ব্যাপারটা আমি আমার শ্বশুর মশাই-এর সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেব। পয়সা ফেলে ব্যাবসা করতে এসেছি, ফোঁকটসে নয়।

বড়োমার চোখমুখ মুহূর্তে স্বাভাবিক হয়ে এলো। বৌদি, নম্রতার দিকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে।

ভালোদাদাই ভালো মানুষ। রূপায়ণ আঙ্কেল সলিড।

বড়োমার চোখেমুখে ফুটে উঠলো, কেন?

স্পষ্ট কথার কষ্ট নেই। হ্যাঁগো।

নম্রতা বড়োমার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখমুখ পাকিয়ে বলে চলেছে।

পিসাই পরিষ্কার বলে দিয়েছে। কতদিন পুলিশ পাহাড়ায় থাকবেন, সারাজীবন নিশ্চই নয়। সেই দিনের কথা চিন্তা করে আজ থেকে চালাফেরা করার চেষ্টা করুণ। অনিদার কাছে আমরা সবাই অর্জুন সবাই বিনোদ। আপনি কটা হায়ার করবেন।

অংশু পিসাই এতটা রাগতে পারে আজ প্রথম দেখলাম, বুঝলে।

তোরা কি করতে গেছিলি?

আমরা সব ডাটা বুঝলে। খালি তথ্য দিয়ে চলেছি।

শুভটা মিচকে পোড়ার মতো বসে আছে কেন?

ওরে বাবা! শুভ হচ্ছে মসাই-এর গোডাউন। ওর মগজাস্ত্রটা মশাই কাজে লাগাচ্ছে।

বৌদি হাসছে।

আজকে তো ওইই খেললো। পিসাই শুধু কয়েকটা গোল করেছে।

তুই!

গোলকিপার, খালি সেভ করে গেলাম।

অনিকা, অনিসা, আন্টি, বৌদি, নয়না জোড়ে হেসে উঠলো।

তুমি এদের কথা-বার্তা শুনতে পাচ্ছ সোনা। বড়োমা আন্টির দিকে তাকাল।

নম্রতা, বড়োমার গালে গাল ঠেকিয়েছে।

আর আদর দেখাতে হবে না। ভাগ।

এবার খেতে দাও।

বৌদি হাসছে।

ভালোদিদাই পিসাই ও ঘরে? শুভ চেঁচাল।

বৌদি মাথা দোলাল।

দিদি চল আমরা ওপরে যাই।

নম্রতা অনিকার দিকে তাকাল।

বোন চল।

নম্রতা, অনিসার দিকে তাকিয়েছে।

শুভ যাবে না? অনিসা কথা বললো।

দাঁড়া মসাইকে একটা একটা হিসেব দিক তবে না যাবে। নম্রতা বললো।

অনিসা, শুভর দিকে তাকিয়ে। শুভ দেখেও দেখছে না। আমি শুভর দিকে তাকালাম।

চলো দিদানের ঘরে গিয়ে বসি।

তুই বাকি কাজ সেরে নে। একবারে বসবো।

আমি সব সেরে এসেছি। নেক্সট যদি কোনও স্টেপ নেয়, তার পথও বন্ধ করে এসেছি। বাকিটা আফু আঙ্কেল কলকাতা ছেড়ে গেলে বুঝে নেব।

পারবি?

অফকোর্স, হায়াই নট। হকের জিনিষ এক কানাকরি ছারবো না।

অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে।

ওভারকাম করতে হবে।

শুভ সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। অনিসার মুখের দিকে তাকাল।

চল তোর অনেক প্রশ্ন, তখন ব্যস্ত ছিলাম উত্তর দিতে পারি নি। এখন দিয়ে দিচ্ছি।

অনিসা, শুভর দিকে তাকিয়ে কোনও কথার প্রতি উত্তর করলো না। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।

ওরা যে যার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। নয়না মুখ নীচু করে বসে।

যাও চোখে মুখে জল দিয়ে এসো।

নয়না একবার আমার মুখের দিকে তাকাল। তারপর বড়োমার ঘরের দিকে উঠে গেল।

বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

একটু চা খাওয়াও।

সোনা তোমার প্রশ্নের উত্তর পেলে?

জিজ্ঞাসাই করতে পারলাম না।

তাহলে এতক্ষণ কি করলে?

মেয়ে কিছুটা কাঁদল। তারপর শুভরা এলো। নাতনি তোমায় যা বললো শুনলাম। সেখান থেকে নিজের প্রশ্নের কিছুটা উত্তর পেলাম।

আন্টি স্বগতোক্তির সুরে বলে উঠলো।

মরগে যাক, এই বুড়ী বয়সে আমি কি করবো।

বৌদি হাসছে।

সত্যি সোনাদি তুমি এমনভাবে বলছো।

তুমি একবার ভেবে দেখো সুতপা। অজুর সঙ্গে পরিচয় না থাকলে কি ফ্যাসাদে পরতাম।

দিদি দেখো কাকে ধরে নিয়ে এসেছি।

বড়োমা, বৌদি গেটের দিকে তাকিয়েছে। আমিও তাকিয়েছি।

ইসলামভাই দাঁড়িয়ে। পাশে বছর পঁচিশের একটি ছেলে। মাথায় গল্ফ ক্যাপ, পরনে একটা গর্জাস কালারের স্যুট টাই ম্যাচ করে পরা। একজন ঝকঝকে যুবক। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

ইসলামভাই-এর হাতটা ছাড়িয়ে বড়োমা, বৌদিকে এসে নীচু হয়ে প্রণাম করলো। তারপর আমার কাছে এসে আগে আন্টিকে প্রণাম করলো। তারপর আমাকে।

আমি ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে।

ছেলেটি মুচকি মুচকি হাসছে।

জ্যেঠু, অনিমামা আমাকে চিনতে পারে নি।

তুই!

আমি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।

এবার ছেলেটি হাসছে।

ইসলামভাই জোড়ে হেসে উঠলো।

তোমাকে ফাঁকি দেওয়া সহজ কথা নয়। তোমাকে ফাঁকি দিতে পেড়েছি মানে আমি জিতে গেছি।

আমি ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম।

ব্যাটা তুই তো জব্বর সাজ সেজেছিস। কতদিন পর তোকে দেখছি।

তোমার কথা মতো সব পরিবর্তন করেছি।

দেখো দিদাইরা আমাকে এখনও চিনতে পারে নি।

অনেকদিন পর দেখছে।

বড়োমার দিকে তাকালাম। চিনতে পারছো না?

বড়োমা, বৌদি বিষ্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে।

কবিতার ছেলে।

ভিকি!

আমি হাসছি।

ওর গাল কাটা ছিল না!

মামার কথায় প্লাসটিক সার্জারি করিয়েছি। মুখটাই চেঞ্জ হয়ে গেছে।

অনিসারা হই হই করে ঘরে ঢুকে পরলো।

ভিকিদা তুই কোথা থেকে উদয় হলি?

দেখলাম ও ঘরের সবাই এ ঘরে চলে এসেছে।

জ্যেঠু ধরে নিয়ে এলো।

দাদাই জানল কি করে?

হানিফ আঙ্কেল বলেছে।

হাসতে হাসতেই শুভকে দেখে ভিকির চোখমুখ কঠিন হয়ে এলো। গলাটা গম গম করে উঠলো। সারাটা ঘর নিস্তব্ধ।

মামাকে লাস্ট আপডেট দিয়েছিস?

আঙ্কলের সঙ্গে এখনও বসতে পারি নি।

আর গড়বড় করেছিল?

না। মেনে নিয়েছে।

দাদাইদের বলেছিস?

এখনও বলিনি।

পিসাই-এর সঙ্গে আর গলা উঁচিয়ে কথা বলেছিল।

না। তুই ফোন করার পর সব মিটমাট হয়ে গেল।

ইসলামভাই অবাক হয়ে ভিকি আর শুভর কথোপকথন শুনছিল। ঘরের সবাই অবাক।

মুহূর্তের মধ্যে ভিকি স্বাভাবিক হয়ে গেল। সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে একে একে ঘরের সবাইকে প্রণাম করলো।

অনিমেষদাকে নীচু হয়ে প্রণাম করতেই অনিমেষদা ভিকির দুই কাঁধে হাত রেখে আমার দিকে তাকাল।

হ্যাঁরে অনি এটা তোর ট্রাম্প কার্ড।

না ভালোদাদাই, মামার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি। মামার সম্মান নষ্ট মানে তোমাদের সম্মান নষ্ট। বেঁচে থাকতে কখনও সেটা হতে দেব না। মাঝে মাঝে ভুল করে ফেলি, বকুনি খাই। মাও বকে।

অনিমেষদা, আফতাবভাই-এর দিকে তাকাল।

আজকের মেন অপারেটর।

একটু আগে যার কথা বলছিলেন!

হ্যাঁ।

ওর মা কালকে এসেছিল?

দেখুন হয়তো সেও আজ এই কাজের মধ্যে ইনভলভ।

না দাদাই। মা এনজিওতে, কনিষ্ক মামারা ক্যাম্প করছে।

আফতাবভাই এগিয়ে এসে ভিকির কাঁধদুটো শক্ত করে ধরে জোড়ে ঝাঁকুনি দিল।

ঠাট উর্দুতে বলে উঠলো, তোর বুকের খাঁচায় বহুত দম।

ভিকি কোনও কথা বললো না। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

যা বেটা যা, সুবে সে বহুত টেনসন লিয়া, থোরা রেস্ট লে।

আফতাবভাই ভিকির পিঠ চাপড়ে দিল।

ওরা কেউ আর দাঁড়াল না। একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

সুতপা।

বৌদি রান্নাঘরের সামনে থেকে চাঁচাল।

বলো।

অনিকে চা দিয়েছ।

সবাইকে দিচ্ছি।

অংশু আমার চোখে চোখ রেখে ইশারা করলো বড়োমার ঘরে এসো।

সবাই যে যার মতো বসেছে।

আমি ঘর থেকে বেরিয়ে একবার বারান্দায় এলাম। মাঠে অনেক লোক। সুরো ও ঘর থেকে এ ঘরে আসার পথে একবার আমার মুখের দিকে ক্যাট ক্যাট করে তাকাল।

বাচ্চা দুটোকে সকাল থেকে দেখতে পেলাম না।

কেন এনার্জি সঞ্চয় করবে।

তুই আজকাল বড্ড রেগে যাচ্ছিস, নীরুকে প্রেসারটা দেখা।

হুঁ।

লাফাত লাফাতে ভেতরে চলে গেল।

মাসীমনিকে দেখতে পাচ্ছি না। তনু, মিত্রাও এ ঘরে আসে নি। মিলিদেরও দেখা পাই নি।

আমি ঘরে ঢুকে বড়োমার ঘরের দিকে এগোলাম।

কিরে এখানে বসার জায়গা নেই। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।

আমি একবার গোলটেবিলের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

আসছি।

বড়োমার ঘরের পর্দা সরিয়ে ভেতরে এলাম।

দেখলাম অংশু খাটে বসে। দামিনীমাসি, জ্যেঠিমনি, বড়োমা সোফায়।

অংশু আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াল।

তুই কি করতে এলি? বড়োমা বললো।

তোমরা একটু বাইরে যাও।

কেন?

দরকার আছে।

আমরা শুনবো।

পরে বলবো।

অনিচ্ছা সত্বেও বড়োমা উঠে দাঁড়াল। জ্যেঠিমনি, দামিনীমাসিও উঠে দাঁড়িয়েছে।

তিনজনেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল।

অংশু সোফায় বসলো। আমি বড়োমার খাটে আধশোয়া অবস্থায়।

অনিমেষদাকে কিছু বললে?

আজ প্রথম এইভাবে কথা বললাম।

কিছু মনে করে নি?

তার জায়গা রাখি নি।

সবাই ভাবছে আমি তোমার কানে ফুস-মন্তর দিয়েছি।

তা কেন?

সুরো কি ভাবছে?

কেন আমি কোনও খারাপ কাজ করিনি।

ওরা হয়তো তোমাকে অন্যভাবে দেখতে চায়। যতই হোক তুমি জামাই।

দেখ অনিদা প্রফেসারি করতে গিয়ে অনেকের কাছে অনেক কথা শুনেছি। আমি যেহেতু অত বড় একজন লিডারের জামাই, তাই ব্যাক ডোর দিয়ে চাকরি পেয়েছি। সেখানে আমার ভাল রেজাল্টটার কোনও মূল্য নেই। সব কিছুতেই আমি অনেকের থেকে বেশি এ্যাডভান্টেজ নিচ্ছি। যেই চাকরি ছাড়লাম। কানাঘুষো সবাই যখন জানলো আমি কাগজের অফিসে একটা সাহিত্য পত্রিকার দায়িত্ব নিয়েছি, সেই লোকগুলোই তাদের নাম ছাপার জন্য হুমরি খেয়ে পরলো। দিস্তে দিস্তে লেখা আমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছে। মিষ্টির প্যাকেটে ফ্রিজ ভর্তি। মা বিরক্ত হয়ে সেদিন সুরোকে বলেই দিল, অনিকে বলিস অংশুকে চাকরি থেকে তাড়িয়ে দিক।

আমি হাসলাম।

হ্যাঁগো সুরো তো বলেই দিল, এখন কি দেখছেন মা দু-দিন পর আপনি বিরক্ত হয়ে ফোন তুলবেন না। আমি হয়তো একদিন এসে কলিং বেল বাজাব আপনি ভয়ে দরজা খুলবেন না। বলবেন ওই উপদ্রব এসে হাজির।

সেই শুনে মার কি হাসি।

সুরো বললো হ্যাঁ মা। বিশ্বাস করুণ, অনিদাকে কাছ থেকে দেখছি বলে আপনাকে বলতে পারছি। এতদিন এরাই ওকে দিন-রাত গঞ্জনা দিয়েছে ও এ্যাডভান্টেজ নিচ্ছে।

জানো অনিদা বাবার কিছু নীতি আমি ঠিক মানতে পারি না।

ওটা অনিমেষদার নয় পার্টিগত নীতি।

তুমি তোমার স্বার্থে এই কাজ করছো না। কাজটা করলে স্টেটের উন্নতি।

স্টেটের উন্নতির কথা কতজনে ভাবে বলো।

বাবা আফতাবভাই-এর সাথে পরিচিত হওয়ার পর, বার বার একটাই কথা বলছে, অতবড় মানুষ কি তার অমায়িক ব্যবহার। ভাবাই যায় না। উনি স্টেটের অতিথি, অনির কাছে থাকতে যাবেন কেন। তবু উনি রয়েছেন।

আমার কথা শুনে বিধানজ্যেঠু খুব রেগে গেছেন।

রাগবার কথা। নিঃস্বার্থভাবে সারাজীবন কাজ করলেন। কতকগুলো ভুঁইফোঁড় এসে মাতব্বরি করবে মানা যায়।

রমেশবাবু কি অনুজবাবুর বাবা।

হ্যাঁ।

মাসীমনি ঠিক বলেছেন। তোমরা রমেশদাকে দেখে অনুজকে গুলিয়ে ফেলছো।

অংশুর কথায় হাসলাম।

হ্যাঁগো অনিদা কি আইকিউ!

সেই সময় পার্টিটা ভালবেসে করেছে। কিছু পাওয়ার আশায় নয়।

বিনদভাই তোমাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করে। ওর কয়েকটা চ্যালা ভীষণ তরপাচ্ছিল। দুই ধমকে চুপ করিয়ে দিল।

কি বললো বিনদ?

প্রথমে পাত্তাই দেয়নি। আমি অনেক পরে পৌঁচেছি। তোমার দেওয়া ফোন নম্বরে শুভ প্রথম ফোন করেছিল। নিজেই ধরে ছিল। শুভর সঙ্গে প্রথমে একচোট হয়। তারপর শুভ পরিষ্কার বলে, আপনাকে আধঘণ্টা সময় দিলাম। তারপর আমি আমার স্টেপ নেব। আপনি যেখানে আছেন সেখান থেকে জীবনে আর নিজের জায়গায় ফিরে যেতে পারবেন না। প্রয়োজন মনে করলে যে নম্বর থেকে ফোন গেছে সেই নম্বরে ফোন করবেন।

কোথায় নিয়ে গিয়ে তুলেছিল?

ঠিক বলতে পারব না। ওটা ভিকি বলতে পারবে। ওই এলাকায় ভিকির বেশ ভালো হোল্ড।

তারপর?

আমাকে শুভ দমদম একনম্বর গেটে মসজিদের সামনে দাঁড়াতে বলেছিল। আমি গেছি ছ-টা নাগাদ। যেতেই বললো নম্রতাদিকে দরকার তুমি একটা ফোন করো।

আমি বললাম ফোন না করে তুই একটা ম্যাসেজ করে দে। ও তাই করল।

কালরাতে শুভ, ভিকি সারারাত জেগে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। তারপর এই জায়গার হদিস পেয়েছে।

ভিকি বলেছিল শুভ উড়িয়ে দিই।

শুভ বলেছিল, না।

আঙ্কেল বলেছে, প্রথমে পাত্তা না দিলে আমার নাম বলবি দেখবি তোদের ডেকে নেব। আমার কথা বলে ওকে রিকয়েস্ট করবি। পারলে অর্জুনের সঙ্গে কথা বলাবি।

তারমানে বিনদ আঙ্কেলকে বিলক্ষণ চেনে। না হলে আঙ্কেল এইভাবে বলতে পারে না।

তখন ভিকি তল্লাটটা ঘিরে নেয়। দেখতে পেলাম ভিকির দলের পাঁচ-ছয়জন বিনদকে কাজটা করতে সাহায্য করেছে। ওরাও জানত না। পরে জেনেছে। কাজটা করে ভাল পয়সা পেয়েছে।

ভিকি তোমাদের সঙ্গে ছিল না।

না। ও এবার মনে পড়েছে। জায়গাটার নাম নারায়নপুর। পোরো বাড়ি বুঝলে, অনেকদিন ব্যবহার হয়নি। একটা পরিবার থাকে। ওই কেয়ারটেকার গোছের। একবারে এয়ারপোর্টের পাঁচিল ঘেঁষা।

বড় রাস্তা থেকে অনেকটা ভেতরে।

নম্রতা এসেই বললো, শুভ আমাকে যেন কেউ ফলো করছে। মনে হচ্ছে ধরা খেয়েগেছি।

শুভ কি ভেবে বললো তোমরা এক কাজ করো সামনের বড় রাস্তা ধরে এগিয়ে যাও। ডানদিকে একটা রাস্তা পড়বে। ঢুকে পরবে। ডানদিক বাঁদিক কোন দিকে বেঁকবে না। সোজা হাঁটা লাগাবে তাহলেই বুঝতে পারবে কেউ তোমাদের ফলো করছে কিনা। আমি ঠিক তোমাদের খুঁজে নেব। ফোন অন রাখবে।

শুভর কথা মতো সেই রাস্তায় ঢুকে পরলাম। ব্যাস প্রায় একঘণ্টা পুরো ভুলভুলাইয়া। বড় রাস্তা আর খুঁজে পাই না। এ বলে ডানদিকে ঢুকে সোজা গিয়ে বাঁ দিকে তারপর ডানদিকে তারপর বাঁদিকে যা হয়। শুভকে ফোন করি এনগেজ। প্রায় আধঘণ্টা ঘুরপাক।

তারপর শুভকে ফোনে ধরতে পারলাম। সব বললাম। কি একটা ক্লাবের নাম বললো। হ্যাঁ তরণী সংঘ। বললো ওই ক্লাবের সামনে এসে ওখান থেকে একটা রিক্স নিয়ে বলো মাইকেলনগর মোড়ে যাব। আমি তোমাদের ওখান থেকে পিকআপ করবো।

ফোনে শুভর গলাটা ভাল শোনাল না। তবু ওকে তখন কিছু জিজ্ঞাসা করিনি। শুধু নম্রতাকে বললাম, তোমার কি মনে হচ্ছে আমাদের এখন কেউ ফলো করছে।

নম্রতা হাসতে হাসতে বললো, গলি তস্য গলি পেরিয়ে আমাদের কেউ আর ফলো করবে না। ধরা পরে যাবে। ওই জন্য শুভ আমাদের গলিতে ঢুকিয়েছে।

তখন কিন্তু আমাদের অতটা টেনসন লাগছিল না।

শুভর সঙ্গে দেখা হতে ওর চোখমুখ দেখে বুঝতে পারলাম সামথিংস হ্যাজ।

কি রে!

শালা ঢ্যামনাম। মেরে দিবি, দেখবো তোর কতটা দম।

এতদিন হলো এ বাড়িতে এসেছি শুভর মুখে এরকম কথা শুনিনি। আমি থতমত খেয়ে গেছি।

শুভর চোখে মুখে তখন হিংস্রতা ফুটে উঠেছে। কর্কশ গলায় আমায় বললো।

তোমাদের যা যা বলবো অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। আমার কথার অবাধ্য হবে না।

তখন আমার বেশ টেনসন লাগছিল।

আমরা হাঁটছি শুভ গুম হয়ে আছে।

শুধু ম্যাসেজে কথা বলে চলেছে। গলিগালার ভেতর দিয়ে হাঁটাতে হাঁটাতে আমাদের গঙ্গানগর মোড়ে নিয়ে এলো।

তারপর বড় রাস্তা পেরিয়ে খালের ধার দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। ও দিকটা একবারে গ্রাম গ্রাম। বেশ কয়েকটা পাকা বাড়ি অবশ্য আছে। খালের ধারেই একটা ঝুপরি মতো ঘরের সামন গিয়ে শুভ দাঁড়াল। কাকে ফোন করলো। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই দেখলাম চারটে ছেলে এসে হাজির।

দেখা মাত্রই শুভ বললো।

ভিকিদা কোথায়?

ঠিক জায়গায় আছে।

সব শিল করেছিস?

হ্যাঁ।

সন্দেহ হলে চেক করছিস।

লোক আছে, করছে।

তোদের ক্লাবটা কোথায়?

সামনে।

এদের নিয়ে গিয়ে ক্লাবে বসা।

তখনই বুঝে গেছি কিছু একটা ঘটছে তোমার কথাগুলো কেমন যেন মিলে যাচ্ছে।

আমার দিকে তাকিয়ে বললো, পিসাই তোমরা এদের সঙ্গে চলে যাও। ঠিক সময় তোমাদের ফোন করবো।

চলবে —————————–



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/JVWIzwi
via BanglaChoti

Comments