❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩৬ নং কিস্তি
—————————
নীপা, সুরো ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে। সুবীর সমস্ত গল্প শুনে মুর্চ্ছা যাওয়ার অবস্থা।
তুয়া দুটো ফোন নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
পিসী তুমি ফোন রেখে এসেছিলে। বেজে বেজে থেমে গেছে।
সুরো ফোনটা হাতে নিয়ে একবার টিপে দেখলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
বাবা ফোন করেছিল। মিলিদি দেখো, তোমার ফোনেও মনেহয় বাবা রিং করেছিল।
মিলি দেখে ঘার নারলো। হ্যাঁ করেছিল।
অনিদার ফোন থেকে বাবাকে একটা ডায়াল করো।
আমি ফোনটা মিলির হাতে দিলাম।
নীপা চা খেয়ে স্নান করতে যাব। কনিষ্ক বললো।
নীপা, তুয়ার দিকে তাকাল।
ওরা কোথায়?
খেলছে।
যা সবার জন্য একটু চা করে নিয়ে আয়।
ও পারবে? আমি বললাম।
খুব পারবে।
তুয়া নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেল।
হ্যালো….হ্যাঁ বলো, আমি মিলি, তুমি ফোন করেছিলে।….অনিদার গল্প শুনছিলাম।….
ও কোথায় দে।
অনিমেষদার গলা পেলাম।
ধরো কথা বলো।
বুঝলাম মিলি ভয়েজ অন করে দিয়েছে।
মিলিই ফোনটা মুখের সামনে ধরে রইলো।
হ্যালো।
সব শুনলাম। তুই আজকেই ওদের সঙ্গে ফিরে যাবি।
এটা কি তোমাদের সম্মিলিত ডিসিশান।
অনিমেষদা হেসে ফেললো।
খবর কি বলো?
কাল অনেক রাতে শুয়েছি।
কেন!
তোর আফতাবভাইয়ের সঙ্গে মিটিং করলাম।
নিশ্চই নিজের ধান্দা।
এখানে এসে কিছু কাজ না করলে পার্টি থেকে তাড়িয়ে দেবে।
কতটাকা বাগালে?
বৌদির গলা পেলাম। বলো না। ওর গায়ে লাগছে কেন। ওকে তো দিতে হচ্ছে না।
কিগো পাশে সৈন্য সামন্ত আছে মনে হচ্ছে?
গিয়ে তোর মাথা ভাঙবো। বৌদির গলা।
গলা শুনেছিস! অনিমেষদা বললো।
তাই তো মনে হচ্ছে।
গিয়ে তোকে ডিটেলসে বলবো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা কথাই বার বার বললো, অনি যদি দায়িত্ব নেয় আমার ইনভেস্ট করতে আপত্তি নেই। অনি ছাড়া একপয়সাও ইনভেস্ট করবো না।
আমি এর মধ্যে নেই।
তা হয় কি করে। তুই চাস না তোর স্টেটের উন্নতি হোক—
তোমরা ঘি খাবে, আমি খালি শিসিটা নিয়ে গন্ধ শুঁকবো।
একবারে ঝামেলা করবে না। সুরো চেঁচিয়ে উঠলো।
দেখছো ওখানে প্রধান সেনাপতি এখানে আধা সেনাপতি।
চিকনারা হাসছে।
শোন না।
বলো।
তুই আজ বাড়ি যাচ্ছিস।
এখনও পর্যন্ত সেইরকমই প্রোগ্রাম করে রেখেছি।
ঠিক আছে কালকে আমি অনুপকে পাঠাচ্ছি।
আফতাবভাই আছে না চলে গেছে।
কাল একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে চলে গেছে। বেশ রাশভারী লোক। সুন্দর তো দেখলাম পাত্তাই দেয় না। এখন এখানেই আছে। আজ এখানকার রানীর সঙ্গে মিটিং আছে।
আর কে ছিল?
ওর সেক্রেটারি। কি সাম বুখাতির।
অনাদিকে কাল ছেড়েছে।
ওমনি অর্ককে দিয়ে একটা আর্টিকেলও লিখিয়ে দিলি। তুই কি সুস্থ ভাবে একটু বাঁচতেও দিবি না। ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
ভাববো না কিগো! কাগজ দেখেই অর্ককে ধমক মারলো। কিছু হলে তোমার মুখ্যমন্ত্রী বাঁচাবে?
বাঁচাবে। আমি প্রবীরকে বলছি।
ওটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
একবারে ঝামেলা করবি না।
কাজের কথা বলো।
তোকে তো উনি ওনার ফাইলপত্র দিয়েছেন।
দিয়েছে।
তিনটে প্রজেক্ট আছে।
মিথ্যে বলে নি।
রাঘবন ব্যাপারটা জানে।
অনেক খবর সংগ্রহ করেছো দেখছি—
তিনটেই আমাদের স্টেটে রাখ। অন্য স্টেটে নিয়ে যাস না।
তোমরা যদি অন্য স্টেটের থেকে সুযোগ সুবিধা বেশি দাও অবশ্যই করবো, না হলে যে স্টেট সুযোগ সুবিধা বেশি দেবে সেখানে নিয়ে যাব।
আমি বিধানবাবুকে বলছি। তোর সঙ্গে প্রিলিমিনারি কথা বলুক।
যাক এতদিন পরে তাহলে অনিকে দরকার পরেছে।
তোকে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছি।
তার আগে সওদার ব্যাপারটা ফাইনাল করো।
খিল খিল করে হাসির আওয়াজ হলো। বুঝলাম মিত্রা হাসছে।
তুমি মনে হচ্ছে আমার গলা সবাইকে শোনাচ্ছ।
তোর আপত্তি আছে।
একটুও না। ওখানে আমার সেক্রেটারি আছে তার সঙ্গে আগে ড্রিল ফাইন্যাল করো, তারপর ভেবে দেখবো।
তোর সেক্রেটারি কে?
মেয়ে। মিত্রার গলা পেলাম।
বুঁচকি!
আবার হাসির শব্দ। বুঝলাম ধারে কাছে তনুও আছে।
ঠিক আছে রাখছি। আগামী সপ্তাহের ফ্লাইটে ফিরছি।
এসো।
তোর বৌদির সঙ্গে কথা বল।
দাও।
তুই এতো তেঁয়েটে কেন। মানুষটা কতো আনন্দ করে বললো।
তুমি নিজের দিকে ঝোল টানবেই।
দেবো এক থাপ্পর।
ফোনে মারো আমার গালে লেগে যাবে।
শোন না।
বলো।
ভদ্রলোক কি ভালোমানুষ।
তেল মেরে লাভ নেই। আগে নোট, তারপর ভোট।
তোর এতো টাকা কি হবে, খাস তো চারটে রুটি।
আমি হাসছি।
ছাগল, আমি না সবাই বুঝেছে। হ্যাঁরে ওর কোনও ছেলে মেয়ে নেই?
আছে, একটা ছেলে। পিকুর বয়সী কিংবা তার থেকে একটু বড়ো।
কি করে?
ওখানেই আছে। কেমব্রিজে পড়াশুনা করছে। মাসে একবার যায় ছেলের সঙ্গে দেখা করতে। এবারও হয়তো সেই কারণে গেছে, তোমরা আছো তাই দেখা করলো।
তোর সঙ্গে আর কথা বলবো না। সুরোকে দে।
নাও।
মিলি, সুরোর হাতে ফোনটা দিল। সুরো বাইরে চলেগেল।
মীরচাচা থম মেরে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।
কি চাচা। একবারে চুপচাপ। আমি বললাম।
ভাবছি।
কি ভাবছো।
তুই আমার গ্রামের ছেলে। আমার ধানকুটা কলে ধানের বস্তা মাথায় করে নিয়ে যেতিস, ধান ভেঙে চাল করে দিতাম। মেসিনে হ্যান্ডেল লাগিয়ে স্টার্ট দিতিস, ফিতে লাগাতিস।
হাসলাম। এগুলো মিথ্যে নয়।
তাই ভাবছি, এই লোকগুলো যদি জানতে পারে আমিই সেই ব্যক্তি, যার ধান কলে তুই ধান কুটতে যেতিস, ধান বস্তা মাথায় করে, তাহলে হয়তো আমাকে মারধর করবে।
কনিষ্ক, নীরু খুব জোরে হেসে উঠলো।
হেসোনা ডাক্তারবাবু, তোমরা গল্প করছো আর আমি সেই দিনগুলোর কথা ভাবছি।
তখন তো অনি আর অনি হয় নি।
তা না হোক। যখন জানতে পারবে ছেলেটার প্রতি আমরা এই ভাবে অত্যাচার করেছি।
ভেবে কি করবে।
এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। অনিমেষবাবুর সঙ্গে কথা বলতে গেলে শুনেছি মন্ত্রীদের পর্যন্ত এ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হয়, আর ও কিভাবে কথা বললো।
অনিমেষদা ওকে ভীষণ ভালোবাসেন।
সে তো বুঝছি। কিন্তু এ ভালোবাসা সে ভালোবাসা নয়। চিকনার মুখ থেকে মামনির বিয়ের দিনের কথা শুনেছি। রাতে সবাই চিকনার মুখ থেকে জানতে পেরেছিল ও মামনির বিয়ের দিনে সারাদিন দরজার সামনে বসে কাটিয়েছে। আমার খুব টনা-মনাকে দেখতে ইচ্ছে করে।
ওরা শ্যামের মতো।
সে তো বুঝি। সব কেমন যেন গল্প গল্প বলে মনে হয়।
গল্পই তো। তবে সবাই বাস্তবে জীবিত আছে। অর্জুনের কথা শুনলে। আমি নিজে চোখে দেখেছি। জানিনা জীবনে আর ছেলেটাকে দেখতে পাবো কিনা। ডেডিকেশন কাকে বলে সেদিন দেখেছিলাম। তুমি বিশ্বাস করবে না। যখন ও ঘরে বসে নমাজ পড়ছিল তখন ও একবারে অন্য মানুষ। ওর জন্য সে কি গভীরভাবে প্রার্থনা।
সত্যি বলতে কি ডাক্তারবাবু আমরা ধর্মপ্রাণ মানুষ। যাকে একবার ভালোবেসে ফেলি, তাকে গভীরভাবে ভলোবাসি।
আবার দেখো তোমাদেরই গ্রামের ছেলে এখন ওর সবচেয়ে বড়ো শত্রু।
ওই ছুঁচ্চাটার কথা মুখে এনো না। কে চিনত ওকে। যদি অনি না থাকতো।
সঞ্জুর বড়ো ছেলেটা ঘরে ঢুকলো।
কিরে বাবা! চিকনা বললো।
তানকাকে ব্যাঙ্কের ঘরে বসাইছি।
ঠিক আছে। ওখানে থাকুক পরে ব্যবস্থা করছি।
চিকনা তুই ছুড়কিকে ফোন করেছিস?
যাওয়ার সময় দেখা করবে বলেছে।
তুয়া চা নিয়ে ঢুকলো। নীপা এগিয়ে গেল।
সুরো, পরের পয়সায় ফোন করতে বেশ ভালো লাগে না। আমি চেঁচালাম।
আবার ওর পেছনে লাগছ কেন—মিলি আমার থাই চিমটে ধরলো।
ও কি করছো। কনিষ্ক বলে উঠলো।
থামো। তোমার আগে থেকে অনিদাকে দেখছি।
নীরু একটা বিটকেল হাসি হাসলো।
নীরুদা খারাপ হয়ে যাবে। মিলি বলে উঠলো।
আমি কি করলাম!
তোমার হাসির অর্থ আমি বুঝিনা ভেবেছো।
অনির সহস্র গোপিনী।
তোমার তাতে কি।
যদি একটু আধটু ভাগ পাওয়া যায়।
মীরচাচা জোরে হেসে উঠলো।
নীপা মুখ টিপে হাসতে হাসতে চা নিয়ে এলো।
ড্রাইভার নিয়ে এসেছিস না নিজেরা ড্রাইভ করে এসেছিস।
কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
খবর পেলাম রাত একটার সময়। তার কিছুক্ষণ আগে নির্সিংহোম থেকে ফিরেছি।
আমরা কয়েকজন মিলে একটা টিপিক্যাল অপারেশন করছিলাম। ভীষণ ক্লান্তি লাগছিল। ফিরে এসে সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছি। চিকনার গলা শুনেই বুঝেছি কেশ জন্ডিস। চনমনে হয়ে উঠলাম। খোকনের সঙ্গে কথা বলে গেইজ করলাম কি পজিশন। যখন শুনলাম তুই অঘোরে ঘুমচ্ছিস তখন মনটা একটু শান্ত হলো। এদের মুখ শুকনো। নীরুকে ফোন করে বললাম। ও তো ফোনে একগাদা বাজে কথা বললো। যাওয়ার সময় আমাকে তুলে নিয়ে যাবি, রেডি হয়ে থাকবো।
ফোন রেখে দিল।
আর কেউ জানে না?
জানতো না। বেরিয়ে আসার পর নিশ্চই আবিদরা এসেছিল পাঁচকান হতে আর বাকি নেই।
তাহলে আর গাড়ি চালাবার রিক্স নিস না। এখান থেকে একজন ড্রাইভার নিয়ে নিই।
হলে খারাপ হয় না।
চিকনার দিকে তাকালাম।
সঞ্জু, ভানুকে একটা ফোন লাগা। চিকনা বললো।
ভানু পারবে?
পারবে মানে, দৌড়বে। কতোবার পেসেন্ট নিয়ে কলকাতা গেল। ও না গেলে পাঁচু, পচার যে কোনও একজন যাবে।
সবাই কি ড্রাইভ করতে পারে?
ভেবেছিস কি—কেউ না গেলে শেষমেষ আমি আছি।
সঞ্জু মনে হয় এরইমধ্যে ভানুর সঙ্গে কথা বলে ফেলেছে। ফোনটা বন্ধ করে পকেটে রাখছে।
কি বললো?
আসছে। গরু সামলাচ্ছে।
ওর গাড়ি? আমি বললাম।
লোক আছে, তারা সামলাচ্ছে।
সুরো ঘরে ঢুকলো।
অনিদা তখন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিল কেন মিলিদি।
তুই ফোঁকটসে ফোন করছিলি না। টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। গরিব মানুষ বলে কথা।
ধরে দিতে পারলে না। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠলো।
আমি হাসছি।
বড়োমা, ছোটোমাকে তোমার গুণের কথা বলছিলাম।
যা শুনলি বমি করে দিলি।
বেশ করেছি।
এই জন্য ওষুধ খেতে হয়, হজম যদি না হয়, লোভের মারে খাস কেন?
দেবাদা ফোন করেছিল।
কেন!
নির্মাল্যদাকে নিয়ে আসছে। জানানো হয়নি বলে খেপে লাল। অদিতিদি ওখান থেকে জানিয়েছে।
ওরা এখানে আছে?
কাল বিকেলে এসেছে। আজ নাকি এখানে আসার কথা, তোমাকে নিয়ে ফার্মে যাবে।
তাহলে ভালই হলো। মীরচাচা বললো।
কেন!
আমাদের একটু কাজ আছে।
হাসলাম।
কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
তাহলে আর ড্রাইভার খোঁজার দরকার নেই।
চিকনা হাসছে।
আসর ভাঙলো।
ওরা সবাই পুকুরে স্নান করলো। আমাকে সুরো কিছুতেই জলে নামতে দিল না। অগত্যা আমাকে বাথরুমেই স্নান সারতে হলো।
ঘরে আসতে দেখলাম মিলি দুটোকে পরিষ্কার করিয়ে মুখে ক্রিম লাগাচ্ছে।
সাজুগুজু করছো।
মাম্পি চোখ বন্ধ করে হাসলো।
কয়েকঘণ্টা চোখের আড়াল করেছি ব্যাশ।
আবার কি হলো!
আর বোলো না। খাওয়ার পর ধুলো নিয়ে রান্নাবাটি খেলছিল। আরও অনেকে জুটেছিল। কষ্ট করে স্নান করিয়ে পরিষ্কার করলাম—
ওদের কোনও হুঁস নেই সমানে নাচা নাচি করে চলেছে।
যতোটা পারে খেলে নিক গাড়িতে উঠে ঘুমিয়ে পরবে দেখবে।
সে তো ঘুমবে।
তাহলেই দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আঙ্কেল আমরা বাড়ি যাব—
মাম্পির দিকে তাকালাম।
এখানে থাকলে বেশ মজা তাই না, পড়াশুনা বন্ধ।
মাম্পি মুখ ভ্যাটকালো।
তোর থেকে মিকি ভালো।
মিকি গাছে হিসি করেছে।
মিলি মেয়ের কথায় না হেসে পারলো না।
শুধু ওর নামে নালিশ না। ও তোর নামে নালিশ করে। আমি বললাম।
তুই এতো কথা শিখলি কোথা থেকে। মিলি ধমকালো।
আমি জামাকাপর নিয়ে বাইরের বারান্দায় চলে এলাম।
ভিঁজে গামছাগুলো বারান্দায় বাঁশে টাঙিয়ে দিলাম। জিনসের প্যান্ট গেঞ্জি আর জিনসের জ্যাকটটা লাগালাম। ঘরে এলাম।
দেখলাম মাম্পিকে ছেড়ে মিলি মিকিকে ধরেছে।
মা মা। মাম্পি, মিলির মুখ ধরে নাড়াচাড়া করছে। আমি মাথার যে টুকু চুল আছে তা আঁচড়াবার চেষ্টা করলাম।
বলবি তো কি।
আঙ্কেলকে ক্রিম দাও।
মাখবে না।
তুমি মাখবে না—
মাম্পি আমার মুখের দিকে তাকালো। কোনও উত্তর দিলাম না।
মিটসেফের ওপর থেকে আমার জিনিষপত্র গুছিয়ে নিলাম।
তুমি রেডি হয়ে এসো আমি বরং ওদের নিয়ে যাই।
তাই যাও।
খাটে কিছুক্ষণ বসলাম। মিলি রেডি করে দিতে ওদের নিয়ে নীচে নেমে এলাম।
এ বাড়ির বারান্দায় আসতে দেখলাম নির্মাল্য, দেবা, কনিষ্ক, নীরুরা সব বেঞ্চে বসে কথা বলছে।
আমাকে দেখে নির্মাল্য উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এলো।
মাম্পি আমার হাতটা নাড়িয়ে বললো। নারল।
হাসলাম।
তোর বাবার বন্ধু—
মাম্পি মাথা দোলাচ্ছে। নির্মাল্য হাসছে।
তোরা এই দুটোকেও নিয়ে এসেছিস! দেবাশিস, কনিষ্কর দিকে তাকাল।
কোথায় রেখে আসবো। মাসি সামলাতে পারবে না। বয়স হয়েছে।
ছেলে?
হোস্টেলে।
কখন এলি? আমি দেবাশিসের পাশে বসলাম।
এই তো মিনিট দশেক হলো।
ফিরবি।
তাহলে কি? তোকে একা ছেড়ে যাব? অদিতি, টিনা মেরে পাট করে দেবে। তিনবার ফোন হয়ে গেছে, এখানে এসে পৌঁচেছি কিনা।
ওরা জানলো কি করে?
এদের ফোন স্যুইচ অফ। মাসিকে ফোন করেছিল। মাসি বলেছে।
মাম্পিরা খামারের দিকে গুটি গুটি পায়ে হাঁটছিল। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম। মাম্পি।
দাঁড়াল। আমার দিকে তাকাল।
মা কিন্তু পিঠে গুম গুম।
যাব না।
এখানে আয়।
একটুক্ষণ দাঁড়াল। মিকির দিকে তাকাল। তারপর দুজনেই হাত ধরা ধরি করে ফিরে এলো।
তোর কথা বেশ শোনে। দেবাশিস বললো।
আমার কথা না—
তাহলে—
ওই যে বললাম, মা পিঠে গুম গুম।
দেবাশিস হাসছে।
মীরচাচা কথা হলো।
না।
কেন।
এখন বলবেনা বলেছে।
মীরচাচার শুধু রেট নিয়ে সমস্যা, কি করি বলতো। দেবাশিস বললো।
কেন রেট কম দিচ্ছিস।
কোথায় কম। ষোলো টাকায় কিনে সরকারকে কুড়িটাকায় বেচছি। এর মাঝের খরচ দেখ। সকাল বেলা এখানে থেকে দুধ পিকআপ করছি। তাকে ফ্রিজিং করছি তারপর পাঠাচ্ছি।
দেখ কিছু করা যায় কিনা।
শুধু বলে জিনিষের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
দেবার দিকে তাকিয়ে হাসছি।
চাচাকে বলেছি নেক্সট টেন্ডারে সরকার যদি রেট বারায় তোমাদের বারিয়ে দেব।
সেটাই তুমি এতদিন বলো নি। বললে ল্যাটা চুকে যেত।
চাচা তোমরা দেবাকে ঘেরাও করো। আমাদের দাবী মানতে হবে, নইলে গদি ছাড়তে হবে।
সেটা পারি না যে। যতই হোক দুবেলা দুমুঠো অন্নের সংস্থান করে দিয়েছে।
অনেক হয়েছে, চলো, এবার বসে পরবে। নীপা বারান্দায় এসে দাঁড়াল।
তাকালাম। এরই মধ্যে স্নানটান সেরে রেডি হয়ে গেছে।
চাচা তুমি ভেতর বারান্দায় বসো। নীপা মীরচাচার দিকে তাকাল।
তাই দে।
দুটো এঁটুলে পোকার মতো আমার গায়ে সেঁটে আছে।
সবাই ভেতরে এলাম। মাম্পি, মিকি পাশেই বসলো।
খেতে খেতে দেবাশিসের সঙ্গে কথা সারলাম। কিছুটা হাওয়া বোঝার চেষ্টা করলাম।
সুবীর আমার কথা শুনে ফিক ফিক করে হাসে।
হাসছো কেনো সুবীর?
কীভাবে কথা বলতে হয় শিখছি।
আমরা চেষ্টা করেও এতদিনে পারলাম না। তুমি একবার ট্রাই করে দেখ। দেবাশিস বললো।
টুকরো টুকরো কথা, হাসাহাসি, খাওয়া দাওয়া শেষ করে তিনটের একটু আগেই বেরলাম।
কাকীমা, সুরোমাসি বেরোবার সময় একটু কাঁদছিল।
বোঝালাম, আমি আগামী সপ্তাহে আবার আসছি।
তাতে কি আর কান্না থামে। প্রণাম করে হাঁটতে হাঁটতে বাঁধের ওপর এলাম। ওরা সবাই এগিয়ে গেলো। মৌসুমীমাসির ঘরে ঢুকলাম। বুড়ী শীতে কাবু। বিছানায় গুঁড়ি শুঁড়ি মেরে শুয়ে আছে। পাশে বছর ষোলোর একটা মেয়ে।
মাসি আমার গলা পেয়ে উঠে বসার চেষ্টা করলো। শরীরের শক্তিতে কোলাল না।
পাশে গিয়ে বসলাম। আমার গায়ে মাথায় হাত বোলাল।
তুই আসছু যাইতে পারলি নি।
তাতে কি হয়েছে। আমি তো এসেছি।
ঘোলাটে চোখে আমার দিকে তাকাল। চোখের মনিদুটো চক চক করছে।
উনামাস্টার চইল্যালো, ঠাকুর আমায় নেয় নি।
কেন, তুমি বেশ ভালো আছো।
মাসির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। চুপ করে আছে।
আমি কলকাতা যাচ্ছি। আগামী সপ্তাহে আসবো।
বৌমা আসছিল?
না। ওরা তো বিদেশ গেছে।
অখনো আসে নি?
না।
তাইলে সেউ মায়ঝিগা কে?
বুঝলাম মিলি আর সুরোর কথা বলছে।
আমার বন্ধুর বউ আর বোন।
ও।
যা। যাতি আবার রাত হয়্যাবে।
বেরিয়ে এলাম।
চিকনার বাইকে উঠলাম।
আসার পথে চিকনা সোজা না এসে জানা ঘরের পাশ দিয়ে বাইক ঘোরাল।
এদিকে আবার কোথায় যাচ্ছিস?
ছুড়কির সঙ্গে দেখা করবি বললি।
ও কোথায় আছে!
চল দেখাচ্ছি।
পালের ঘরে পাশ দিয়ে সোজা ডোম পাড়ায় চলে এলাম।
ওদের এখানে রেখেছিস!
এই জায়গাটা সেফ। তুই ওদের ব্যাঙ্কে রাখতে বললি কেন?
শ্যাম ছেলেকে দিয়ে আর কোনও কাজ করাবে না। ও নিশ্চই অন্য কাউকে পাঠাবে। ছুড়কি টেরও পাবে না। ওকে তো আমি জানি। জামাইয়ের গায়ে অনাদির গন্ধ আছে। ও ছাড়বে না।
কতদিন রাখবি?
কাজটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
তারপর?
যদি শুধরে যায় ভালো। নাহলে যা হবার তা হবে। আমি কি করবো। আমি একটা সুযোগ দিলাম।
আমার কাছে যা খবর আছে শোধরাবে না। ভালো টাকা কামাই হচ্ছে, কেউ ছেড়ে দেয়।
তাহলে শ্যাম মেরে দেবে। এর মধ্যে তুই পারলে কেশটা উইথড্র করে ঋজু আর ঋজুর বৌকে বার করে নিয়ে চলে আয়। ওরা আমাদের ঘরের লোক।
সেটা আমি করে নেব। কালকে ছুড়কি তিনটেকেই বেধড়ক পিটিয়েছে।
ওরা কোনও খবর দেয় নি?
দিয়েছিল।
কেউ আসার সাহস পাচ্ছে না। তারপর যখন শুনেছে তুই আছিস এর মধ্যে, তখন সবাই না বলে দিয়েছে। বলেছে তোদের ফ্যামিলি ম্যাটার মাথা গলাব না। তারপর আজ সকাল থেকে কাগজে এইসব বেরিয়ে গেছে, সব ধ্বসে গেছে। হাওয়া পুরো উল্টো দিকে।
কোথাও বেটক্কর লেগে যায়নি?
ডাক্তার দেখিয়ে নিয়েছি।
একটা জায়গায় বাইকটা রেখে ডোমপাড়ার মধ্যে ঢুকলাম। আমি এই গ্রামে জন্মেছি, ছোটো থেকে বড়ো হয়েছি। জানি এটা ডোমপাড়া, কিন্তু কোনওদিন আসা হয় নি।
বেশ কয়েকট আঁকবাঁক ঘুরে একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। বাইরে তিন চারজন দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে হেসে ফেললো। তাদেরই একজন দরজা খুলে ছুড়কিকে ডাকলো।
ছুড়কি বেরিয়ে এলো। আমাকে দেখে মুখ নিচু করে নিল।
কিরে কাল খুব মারপিট করেছিস শুনলাম?
ছুড়কি চুপ করে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
আমি সুস্থ আছি। মাঝে মাঝে একটু শরীর খারাপ হয়। ওটা নিয়ে ভাবিস না।
ছুড়কি মাথা তোলে না।
বাবা ফোন করেছিল?
মাথা দোলাল। করেছিল।
বাবা কিছু বললে শুনবি না। বলবি অনিকাকা বারন করেছে।
মাথা দোলাল।
জোড় করলে বলবি তুমি কাকার সঙ্গে কথা বলে নাও। এখান থেকে এখন কোথাও যাবি না। আমি আগামী সপ্তাহে আবার আসবো।
মাথা দোলাল। নিচু হয়ে আমাকে প্রণাম করলো।
দিদার সঙ্গে দেখা করেছিস?
সকালে গেছলাম।
আমার ঘরে যেতে পারতিস।
তুমি ঘুমচ্ছিলে।
আমি যাই। প্রয়োজন হলে ফোন করবি।
মাথা দোলাল।
আরও গোটা পাঁচেক ছেলে এসে প্রণাম করলো।
আর সব কোথায়? কালকে অনেকগুলোকে দেখেছিলাম।
হাটে আছে।
ঠিক আছে যা।
আবার হাঁটতে হাঁটতে বাইকের কাছে এলাম। ছুড়কি পেছন পেছন এলো।
মিনিট পাঁচেক লাগলো আসতে।
চিকনা এসে ব্যাঙ্কের তলায় বাইকটাকে দাঁড় করালো। দেখলাম সুবীরের বাইক রাখা আছে।
দু-খানা গাড়ি। দুর থেকে দেখলাম মীরচাচা খুব চেঁচামিচি করছে, সঞ্জুকেও দেখলাম।
মক্কেলগুলোর সঙ্গে দেখা করবি?
চিকনার দিকে তাকালাম।
প্রয়োজন আছে?
পায়া ভারি হয়ে যাবে।
হ্যাঁ। তুইই ব্যবস্থা করে দে। বরং ঋজুর সঙ্গে দেখা করে নিই।
আমাকে দেখতে পেয়ে সঞ্জুর ছেলেটা দোকান থেকে বেরিয়ে এলো।
কাকা চলে যাচ্ছ?
যাই। আগামী সপ্তাহে আসবো। মাকে চিন্তা করতে বারণ করিস।
ঝুঁকে পরে প্রণাম করলো।
গ্রামের এই এক ঋীতি। ঋজুর দোকানে ঢুকলাম। বসেছিল। উঠে এলো।
এখন কেমন আছ?
ভালো আছি।
আমার জন্য তোমায় কষ্ট পেতে হলো।
ওই সব নিয়ে ভাবছিস কেন। আমি স্যারের কাজের দিন আসবো। পারলে ঝামেলাগুলো এর মধ্যে মিটিয়ে নে। চিকনাকে বলেছি। ওর কথামতো চলিস।
তোমাকে কথা দিলাম, ওরা না মেটালেও আমি মিটিয়ে নেব।
তাহলে ভালো।
ঋজু আমার মুখের দিকে তাকাল।
বউ কোথায়?
বাড়ি গেছে।
তোর বাড়ি না বাপের বাড়ি?
মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, আমার বাড়িতে গেছে।
কার্ড যদি ছাপতে হয় ছেপে নে। সময় বেশি নেই।
তোমায় কার্ড পাঠাবো।
আমাকে পাঠাতে হবে না।
বেরিয়ে এলাম।
গাড়ির কাছে এলাম।
দেবার গাড়ির পেছন দিকটা দুটো বড়ো বড়ো বস্তা পরে আছে। দেবা চাচার কীর্তি কলাপ দেখে হেসে গড়িয়ে পরে।
কিরে দেবা ওগুলো কি?
চাচাকে জিজ্ঞাসা কর।
তোর গাড়ি কে ড্রাইভ করবে তুই না নির্মাল্য।
ড্রাইভার আছে।
চাচা এগিয়ে এলো।
ওই গাড়িতে কিছু রাখিনি সব এই গাড়িতে।
তুমি খেত শুদ্ধু তুলে দিয়েছ?
শীতের ফসল একটু দিলাম। ওখানে সব বাসি জিনিষ খাস এগুলো টাটকা।
হাসলাম।
একটা ছেলে এগিয়ে এলো।
আমার জামাই এসেছে তোর সঙ্গে দেখা করবে।
দেখছি তো।
ঝুঁকতে যেতেই আমি হাতদুটো ধরে ফেললাম।
থাকো কোথায়?
পাশের গ্রামে।
রামপুরা না ধামসাই।
বাইশটিকী।
তাহলে আর পাশের গ্রাম কোথায়। এখান থেকে দুক্রোশ দূরে।
আগে ওখানে থাকতো এখন আমার কাছে নিয়ে এসেছি। চাচা বললো।
কাজে লাগিয়েছো?
গরুগুলো দেখাশোনা করে। ঠিকমতো যত্ন না নিলে দুধ দেবে কেন।
তোমার একবারে পাকা মাথা।
তোর চাচী বলছিল এবারও তুই গেলি না।
দেখলে তো আমার অবস্থা চাচীকে বুঝিয়ে বলতে পারো না।
ঘরের বৌকে বুঝিয়ে বললে বোঝে।
মীরচাচার কথায় হেসে ফেললাম। কনিষ্করা গেল কোথায়?
ব্যাঙ্কে গেছে, আসছে।
বাসু দোকান থেকে কয়েকটা দড়ি নিয়ে এলো।
চিকনা হেসে গড়িয়ে পরে।
এগুলো কি হবে!
বাঁধতে হবে। যদি লাফালাফি করে। নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আর একটা গাড়িতে দেখলাম মাম্পি, মিকি সামনের সিটে বসে। হাতে বাদামের পাটালি।
কিরে মাম্পি ওটা কি?
পাটালি। মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চাটছে।
মিকির মুখ গুড়ে মাখা মাখি।
মিলি হাসছে।
কে দিলো?
কে আবার, দেওয়ার লোকের অভাব আছে। বাসুদা নিয়ে এলো। তোমার ভাগেরটাও আছে।
রাখো রাখো যেতে যেতে খাবো।
তোমার ছোলা সেদ্ধ কিনে দিয়েছে।
আমি হাসছি।
মীরচাচা দুটো ডাব্বা ভর্তি করে দুধ দিয়েছে। কুড়ি লিটার।
অতো কে খাবে!
মাসিকে ফোন করলাম, মাসি বললো নিয়ে আয় কাজে লাগবে।
অংশুকে একবার ফোন করে দাও। একটু দুধ খেয়ে যাবে।
সুরো আমার দিকে কট কট করে তাকাল।
মিলি হাসছে।
দেবা, এখানে যতক্ষণ দাঁড়াবি তত ঝামেলা পরকে পর বেরেই যাবে।
চিকনা আমার হাতটা ধরে একটু দুরে টেনে নিয়ে গেল।
আবার কি হল!
শালারা বাড়ি চলে যাবে বলছে।
কেন!
জানিনা।
নিজের রিক্সে, এটা জানিয়ে দে।
আমিও ঘাড় থেকে নামাতে চাই। ঋজুর বউ পাল্টি খেয়েছে।
এ খবর তোকে কে দিল!
এই তো পাঁচু এসে দিল।
কি করে বুঝলো।
ব্যাঙ্কে আসার পর শালি, জামাইবাবুর তুমুল ঝগড়া হয়েছে।
যাচাই কর, সত্যি না মিথ্যে। পারলে রাতে গিয়ে একবার কথা বলে আয়।
তাহলে ফুটিয়ে দিই।
দে। এখন নয়। আমি বড় রাস্তায় উঠে ফোন করলে ছাড়বি। যেতে যেতে হাওয়া বুঝে যাব।
দারু ফোন করেছিল তুই বেরিয়েছিস কিনা।
তারমানে বুঝেছিস। নিশ্চই আশেপাশে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে।
চিকনা হাসছে।
তুই ওদের ডাক। দেরি করবো না। কেন জানিনা শীতটা ঠিক সহ্য করতে পারছি না।
শরীরটা এখনও নরম আছে।
হবে হয়তো।
চিকনা ফোন করলো।
আমি গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলাম।
কনিষ্করা এলো। দেখলাম নীপাও আছে।
তুমি কখন এলে?
এক সঙ্গেই এলাম।
সুবীরের পেছনে বসে?
যাঃ।
শীতকাল কি আরাম।
সুবীর মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে হাসছে।
দিতে পারছিস না। সুরো ঝগড়ুটে মেয়ের মতো দাঁতে দাঁত চিপে চেঁচিয়ে উঠলো।
চিকনা হাসছে।
নীপার গালে পশ্চিমি সূর্যের আলো।
আমি পেছনের সিটে বসি।
এই দুটোকে সঙ্গে নিয়ে। সুরোর গলা তখনো চড় চড় করছে।
আমি পেছনে বসলাম কনিষ্ক দুটোকে আমার কাছে তুলে দিল। মিলি ভিঁজে রুমাল দিয়ে হাত মুখ পরিষ্কার করে দিয়েছে। ওদের মহা আনন্দ। দেবা ড্রাইভিং সিটে নীরু, নির্মাল্য সামনের সিটে আর সবাই মাঝখানে।
বেরিয়ে এলাম। চকে আসার একটু আগে দেবা বললো পরিদার দোকানে দাঁড়াবি নাকি?
কনিষ্ক বললো, না—বরং সোজা বেরিয়ে চল।
মিলি একবার কনিষ্কর মুখের দিকে তাকাল। খুব, না।
কনিষ্ক হাসছে।
তবু চকে আসতে পরিদার ছেলে পথ আটকে দাঁড়াল। গাড়ি থামাতে হলো।
গাড়ির জানলার কাঁচ নামলাম।
চলে যাচ্ছ যে।
দেরি হয়ে গেছে। গিয়ে কয়েকটা কাজ সারতে হবে।
হবে না। এখানে এসেছো, চা না খেয়ে যাওয়া হবে না।
গাড়ি থেকে নামবো না।
দেবাদা সকালে তারাহুরা করে গেল। তোমার নাকি শরীর খারাপ?
কি জানি, হয়েছিল হয়তো, এখন ঠিক আছি।
খোকন ডাক্তারের মুখ সব শুনেছি। মিছে কথা বলবে না।
তুই তো এখন পাকা লোক।
কথা বলতে বলতেই সবার জন্য চা এল।
তোর এখন সব কিছু ঠিক আছে?
ভেবেছিলাম তোমার কাছে যাব।
কেন?
একটু দরকার ছিল।
আমি আগামী সপ্তাহে আসবো। স্যারের কাজের দিন।
ভোলা তোমার দোকানে ছানার জিলিপি নেই। মিলি বললো।
প্যাকিং হচ্ছে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। ফুরুত করে পালিয়ে যাচ্ছিলে যে—
আমি মিলির দিকে তাকালাম।
তাকিয়ো না ভোলা সব খবর রাখে।
তারমানে সকালে অর্ডার দিয়ে গেছিলে।
মিলি হাসছে।
ভোলাকে জিজ্ঞাসা করো বলেছিলাম কিনা।
মাম্পি, মিকির মুখ থেমে নেই সমানে চালিয়ে যাচ্ছে।
একটা ছেলে দুটো প্লেটে করে দুটো ছানার জিলিপি নিয়ে এসেছে। মিকি আমার হাতে পাটালিটা ধরিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল।
কিরে ওগুলো তোদের নয়।
আমার।
মিকির দেখা দেখি মাম্পিও আমার হাতে পাটালি ধরিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল।
সুরো সামলা এরা বহুত ঝামেলা শুরু করে দিল। আবার হাত-মুখ মাখামাখি করবে।
আমি এখন চা খাচ্ছি।
সুরো সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো, আমার দিকে তাকালও না।
সিটের ওপর প্লেট রেখে দুজনে বেশ কুট কুট করে খাচ্ছে।
মাম্পি কথা বলছে। ধমকে উঠলাম একবারে কথা বলবি না। গলায় রস লেগে যাবে।
মাম্পি আমাকে পাত্তাই দিল না।
পরিদার দোকান থেকে মিলি এগিয়ে এসে বাকিটুকু খাইয়ে হির হির করে টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত মুখ ধোয়াল।
সুরো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
কেমন বুঝছো।
তোকে আর বোঝাতে হবে না।
এতেই এই।
হ্যাঁ।
নিজেরগুলোর সময় কাছে ছিলে না। থাকলে দেখতে পেতে, কত ধানে কত চাল।
এদের মতো ছিল না।
এদের থেকে একটু বেশি। বোচনের থেকে বুঁচকিটা তেঁয়েটে বেশি ছিল। দোষ করতো বুঁচকি, মার খেত বোচন।
কে মারতো?
ছোটোমা। দেখনা দুটোতে ছোটোমাকে কিরকম যমের মতো ভয় পায়।
কই আমি তো বুঝতে পারি না।
বুঁচকি এখনও পর্যন্ত পার্মিশন ছাড়া বাড়ি থেকে একপাও নড়তে পারে না। তবে হ্যাঁ, মিত্রাদি মুখ ফুটে কোনওদিন কিছু বলেনি। বললেই বলেছে ওরা বুবুনের ছেলে, মেয়ে তোমাদের নাতি, নাতনী। যেমন ভাবে পার মানুষ করো। যেন বুবুনের মতো মানুষ হয়। বড়োমা, জ্যেঠু ছিল ওদের সেল্টার।
তুই তখন আসতিস না।
মানে! পারলে প্রায়ই থেকে যেতাম। তুমি তো সেই সময়কার কথা শুনতে চাও নি।
একটু থিতু হতে দে শুনবো।
আর তোমার থিতু হওয়া।
তোকে পাত্তা দেয়?
বোচনটা দেয়, বুঁচকিটা দেয় না।
যতই হোক মেয়ে তো।
কথা বলার ফাঁকেই ওরা সবাই চলে এলো। গাড়ি ছারলো। ভোলা কাছে এসে বললো।
কাজের দিন কখন আসবে?
সকালের দিকে আসবো।
স্টেশন রোডে ঢোকার মুখে সুবর্ণরেখার ব্রিজের ওপর থেকে যখন নামছি, দূর থেকে দেখলাম কয়েকজন রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে হাত দেখাচ্ছে। কনিষ্ক আমার মুখের দিকে তাকাল।
কিরে অনি পেটাপিটি করবে নাকি। দেবাশিস বললো।
নির্মাল্য হাসছে।
আরি শালা, দারু না! দেবা বললো।
কনিষ্ক হাসছে।
কিরে অনি দারু এলো কোথা থেকে?
কি করে জানবো।
দেবাশিস একবারে কাছে এসে ব্রেক মারলো।
বাপা রে বাপা, দেবুদা তুই তো একবারে মারি দিচ্ছিলি।
দারু দেবার সাইডে জানলার ধারে গেল।
অনিদা কাই গিছে দেখিলাই কেনে।
তারপরেই পেছনের দিকে তাকাল।
ওই তো পিছে বুইসে আছে।
নিজেই এসে দরজা খুললো।
তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে—
মাম্পি আমার কোলের মধ্যে ঢুকে পরেছে।
হঁ ধরে লিয়ে যাবে, তুই আটকাইতে পারবিক লাই।
এক থাপ্পর—
দারু জোরে হেসে উঠলো।
দেখেছো কি সাহস। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো।
ততক্ষণে দারু মাম্পির গাল টিপে দিয়েছে।
মাম্পি মুখ সরিয়ে নিয়ে গালে হাতের তালু ঘষছে।
কনিষ্কদা তুর মেয়েটা বড়ো টরটরি।
দেবা নেমে গেছে নীরু, নির্মাল্য, কনিষ্কও নেমেছে।
মিলিদি তুর মেয়েটারে মোকে দিয়ে দে।
তোমার অনিদার সঙ্গে বোঝা পড়া করো, আমি তোমার অনিদাকে লিখে দিয়েছি।
আমি দুটোকে ধরে বসে আছি। ওরাও আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
কনিষ্কদা, অনিদার বডিগার্ড দেখছু।
মাম্পি কট কট করে দারুর দিকে তাকিয়ে।
আঙ্কেল, চল নিচে যাই। আমি বললাম।
না। মাম্পি চেঁচিয়ে উঠলো।
তুকে আসতে হবেক লাই। অনিদাকে ছেইড়ে দে, নাইলে কাড়ি লিব।
এবার মিকি ঘুসি বাগাল।
ওরা হেসে গড়া গড়ি যায়।
লোজেন দিব, আয়।
দুজনেই না বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
শিউ পোকেটটা লিয়ে আয়।
একটা কালো মতো ছেলে এগিয়ে এলো।
একটা ক্যাটবেরির প্যাকেট আমার হেতে দিল। আমি ওদের হাতে দিলাম। কিছুতেই নেবে না।
আঙ্কেল তো।
না দুষ্টু।
দুষ্টু না। ওরা ভালো।
দু-জনকে জড়িয়ে ধরে নীচে নামলাম। দু-জনেই আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে।
কনিষ্কদা তুই শিউকে চিনতে পারিস।
কনিষ্ক ছেলেটার দিকে তাকাল।
দেখেছি হয়তো মনে থাকে নাকি।
শিবুর ছেলে। নীরুদার হাতে জন্ম লিছে। তখন তুরা ওখানে ছিলি।
শিবুর ছেলে! এতো বড়ো হয়ে গেছে! নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
দেখি সবাই প্রণাম করতে শুরু করে দিল।
ছুড়কিকে দেখছু।
নাম শুনলাম দেখা হয় নি। কনিষ্ক বললো।
তুদের দেখছে। চিনতে পারিস লাই।
চিনিয়ে না দিলে চিনব কি করে।
এরা সবকটাই তুদের চিকিৎসে বড়ো হইছে।
কনিষ্ক হাসছে।
মাম্পি, মিকি এবার যেন একটু শান্ত হয়েছে। চেয়ে চেয়ে ওদের দেখছে।
কথা বলার ফাঁকে ফাঁকেই দারু আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আমাকে চোখের ইশারায় ডাকলো। দু-তিনটে গাড়ি এরইমধ্যে আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। অনেকেই জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে আমাদের দেখল।
আমি ওদেরকে কোল থেকে নামিয়ে এগিয়ে গেলাম।
মাম্পিরা এবার ক্যাডবেরির প্যাকেট হাতে নিয়েছে।
দারু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু হেসেই যাচ্ছে।
হাসছিস কেন?
কাল তুর শরীল খারাপ হইলো কেনি—
কি করবো যদি শরীর খারাপ হয় কি করার আছে।
জামাইটাকে ছাড়িস লাই, উটা দু-ঘড়া চ্যাং আছে।
জানি। কয়েকদিন সময় দিয়েছি। চিকনাকেও বলেছি।
চিকনাদা বইলছে।
দারু আমার চোখের দিকে তাকিয়ে।
তুই কাল ওদের চিল্লামিল্লি সহ্য করতি পারিস লাই।
দারুর দিকে তাকিয়ে আছি। আদিবাসী ছেলে। বুদ্ধি রাখে। সত্যি আমাকে শুধু সম্মান করে না। ভালোবাসে। ঠিক কথাটা ধরে ফেলেছে। কাল সত্যি আমি ওদের ওই নোংরা ব্যবহার সহ্য করতে পারি নি। নেপলা, আবিদ থাকলে হয়তো একটা অন্য কাণ্ড ঘটে যেত। মাথা নিচু করলাম।
কেনি তুই নোংরা ঘাটিস।
স্যারের পরিবার বলে গেছিলাম।
স্যার ভগমান বইলে সক্কলে ভগমান হবে তার কি কুথা আইছে।
চুপ করে থাকলাম।
তুই যেউ ভাবে বুঝিস সবাই বোঝে লা।
কোনও কথা বলছি না। কি বলবো।
আমি কাইল শ্যামকে বইলছি। ঘটনা অই ঘইটছে। তুই যখন বইলছিস কটাদিন সময় দিই। লড়ন চড়ন কইরলে রাখবক লাই। আমাদের দলের কয়েকজনকে ধরাইদিছে।
এটা জানতাম না!
তুকে এখন সব কথা জানাই লাই। তুর এখন অনেক কাইজ। ছোটো ছোটো কাইজে মাথা গলাইস লাই। মোরা তো আছি। অখন তো আগের মতো লাই।
তোদের জন্য চিন্তা হয়।
চিন্তা করিস লাই, মোরা ঠিক আছি। সেই সময় কিছু হয় লাই অখন হবেক লাই।
অনিমেষদা ফিরে এলে একবার বসার কথা বলছে।
বইস কিন্তু সব মানিলিব না।
সেটা আমিও বলেছি।
প্রবীরদা, শ্যামকে একদিন ফোন কইরেছে।
কি বলেছে?
বসার কথা বইলছে। শ্যাম তুর কথা বইলে খালাস হইছে।
শ্যামের সঙ্গে একটু বসার ইচ্ছে ছিল, আগামী সপ্তাহে আসবো একবার সময় কর না।
কেনি।
একটা প্রজেক্ট করার ইচ্ছে আছে তোদের ওখানে। কিছু লোকের তো কাজ হবে।
তুই থাইকলে কুনো সমস্যা লাই।
আমি থাকবো।
তাইলে যা বইলবি তাই হবে। তুকে সবাই দেবতা মানে। তুই মোদের ক্ষতি করবি লাই। তুকে ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করান যাবেক লাই।
ওরা চলে আসতে চাইছে। চিকনাকে বলেছি ছেড়ে দে। যদি কাজটা করতেই হয় তোরা করিস না। অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে দে। তবে এখন নয়। দেখ কতটা বাড়া বাড়ি করে। দেখিস যদি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন করিস।
মুই শ্যামকে তাই কইছি। অনিদা যখন থামতে কইছে টুকু অপেক্ষা কর।
শ্যাম কি বলে?
তার কি তর সয়। তয় পচ্চিমের এসপিটা সুবিধার লয়। জামাই তার ফোরে।
ঠিক আছে আমি আগামী সপ্তাহে আসি। শ্যামকে বলিস আসতে।
দু-জনে হাঁটতে হাঁটতে এলাম। এবার মাম্পি, মিকি অনেকটা স্বাভাবিক। ওদের আঙ্কেলকে এরা আর ধরে নিয়ে যাবে না। দারুর কোলেও উঠলো।
ওদের বিদায় দিয়ে গাড়ি ছাড়লো।
ন্যাশন্যাল হাইওয়েতে এসে নীরু ড্রাইভিং সিটে বসলো। আজ আর কারুর ধাবায় বসার ইচ্ছে নেই। সোজা চলে এলাম। বাড়ির গেটে যখন এলাম তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। কনিষ্করা এতক্ষণ সবাই ঘন ঘন ফোনে কথা বলেছে। আমি মাম্পি, মিকির সঙ্গে গল্প করতে করতে চলে এসেছি। ওরা একটুও ঘুমোয় নি। আমার সঙ্গে আবার পাটালি ছোলাসেদ্ধ খেয়েছে।
গেটে এসে গাড়ি দাঁড়াতেই ভজু গেট খুললো।
বারন্দায় দেখলাম টিনা, বটা, অদিতি, অর্ক, রতন, আবিদ দাঁড়িয়ে।
গাড়ি থেকে নামতেই মাম্পি কট কট করে উঠলো।
বজু, আঙ্কেলকে ছুঁবি না। শরীর খারাপ।
ভজু দুটোকেই কোলে তুলে নিল।
বটারা এগিয়ে এসেছে।
সুরো, মিলি নেমেই ভেতরে ছুটেছে।
তোমাকে আর একা কোথাও ছাড়া যাবে না। আবিদ জড়িয়ে ধরলো।
কেনো, আমি ঠিক আছি।
সেই জন্য কনিষ্কদা, নীরুদাকে কাকভোরে ছুটতে হয়েছে। যখন খবর পেলাম তখন কনিষ্কদারা পৌঁছে গেছে। খবর নিতে বললো এখন ঠিক আছে। ঘুম থেকে উঠুক সঙ্গে নিয়ে চলে যাব।
শরীর থাকলে একটু আধটু খারাপ হবে। কি করবো।
কই আগে কখনও শরীর খারাপ হতে দেখি নি। নেপলার কাছে বেমক্কা গাল খেলাম।
ওকেও খবর দেওয়া হয়ে গেছে।
একটু আগে ফোন করেছিল ফিরেছো কিনা। কাল সকালে চলে আসবে। এখন বোম্বেতে আছে। ইকবালভাইয়ের কি কাজ আছে, সেরে কাল মর্নিং ফ্লাইটে আসছে।
বারান্দায় উঠলাম। দামিনীমাসি বাইরের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে।
কাছে এগিয়ে এসে মুখে হাত বোলায়। চোখ ছল ছল।
আবার কি হল?
তোর কিছু হয়ে গেলে দিদির কাছে মুখ দেখাতে পারব না।
জড়িয়ে ধরলো।
আমার কিছু হবে কেন!
বড়দি ফোন করেছিল ওরা এখুনি শ্যামবাজার থেকে রওনা হয়েছে।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবাইকে জানিয়ে দিয়েছ।
মুখটা একদিনে কেমন শুকিয়ে গেছে।
বেদম ঠাণ্ডা বুঝলে মাসি। শীতটা ঠিক সহ্য করতে পারছি না।
টিনারা ফোনাফুনি শুরু করে দিয়েছে। কারুর মোবাইল বন্ধ নেই।
সোফায় এসে বসলাম। অর্ক, বটা আমার দুই পাশে বসেছে।
নীরু প্রেসারটা আর চেক করেছিস। বটা চেঁচিয়ে উঠল।
এবার তুই কর। আসার সময় আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিটিং সেরে এলো।
কার সঙ্গে।
আবার কে, দারু। খবর তো পৌঁছে যায়। রাস্তা আগলে দাঁড়িয়েছিল। মাম্পি হেবি দিয়েছে। দারুকে বলে এক থাপ্পর মারবো। মিকি আবার ঘুসি তোলে। দারু আবার হাসতে হাসতে বললো, কনিষ্কদা অনিদার বডিগার্ড দেইখেছিস।
সবাই হাসছে।
ওরা কোথায়? আমি টিনার দিকে তাকালাম।
ভজুদার সঙ্গে। টিনা বললো।
অদিতি ট্রতে করে সরবতের গ্লাস নিয়ে এসেছে। সুরো, মিলি ঢুকলো।
হাসলাম।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/8dO4R1E
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment