❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
১৬৬ নং কিস্তি
—————————–
এদের সঙ্গে কথা বললে?
বললাম। তথ্য দিয়ে কি প্রজেক্ট হয়।
এগুলো ফেলনা নয়। এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
সে ঠিক আছে। ওগুলো এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পার্ট।
এ্যাডমিনিস্ট্রেসন তৈরি হয় এই ডাটার ওপর নির্ভর করে। তোমরা স্পটগুলো দেখেছো।
দেখেছি। আলি তুমি শুরু করো।
আমি আলিসাহেবের দিকে তাকালাম। অনিমেষদা পরিচয় পর্বের প্রথমে বলেছে ইনি ল্যান্ড এন্ড এ্যাকুইজিসন দফতরের মন্ত্রী। অরিত্র ফাইলটা রাতে দেবে। এর বায়োডাটা তখন পাবো। কাছাকাছি আমারই সমবয়সী। বিশেষ একটা বয়স নয়। অনুপদাদের থেকে অনেক ছোটো।
বলুন। অনিকা নোট করে নে।
আপনি যে স্পটের কথা উল্লেখ করেছেন ওখানে এই প্রজেক্টের মতো এতো জমি নেই।
কেনো?
ওখানে সব দো-ফসলী তিন ফসলি জমি।
কবে থেকে?
সে বলা মুস্কিল তবে আমার রেকর্ড যা বলছে তাই আপনাকে বললাম।
আমার কাছে পঁচিশ বছর আগে থেক লাস্ট ইয়ার পর্যন্ত ডেটা আছে।
উনি আমার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালেন।
ও গুলো সব খাস জমি এবং অনাবাদী। বন্যার সময় প্রচুর পরিমাণে জল জমে বলে ওখানে চাষই হয় না। পার্টিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য যে যার দখল করে বসে আছে।
এটা মনে হয় বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। কেষ্টবাবু বললেন।
আপনি কখনও নিজে ওই তল্লাটে গেছিলেন?
বহুবার গেছি।
ত্রাণদিতে না মিটিং করতে?
ইলেকসেনের কাজে।
ওটা পাঁচবছরে তিনবার হয়।
ভদ্রলোক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
এখানে খাস জমির পরিমণ সাড়ে চারশো একর। যা এখন খাতা কলমে রেকর্ড হয়নি। বাকি সাড়ে সাতশো একর বছরে একবার চাষ হয়। এটার রেকর্ড আছে। টোটালটাই লো-ল্যান্ড।
অমিতেশবাবু আপনার ফাইলটা বার করুণ। কেষ্টবাবু বললেন।
বুঝলাম এই ভদ্রলোক এই দফতরের সচিব।
উনি ফাইলটা একবার দেখে নিয়ে আমার হাতে দিলেন। চোখ বুলিয়ে বুঝলাম নিচের তলার ডেটা সম্পূর্ণ ওনার হাতে এসে পৌঁছয়নি।
পক্কে তোর কালেকসন করা ডেটাগুলো দে।
পক্কে একটা স্টেপেল করা কাগজের বান্ডিল আমার হাতে দিল।
আপনি এগুলো একবার দেখে নিন। গত কুড়ি বছর মৌজা ধরে বাৎসরিক কত ফসল হয় এখানে তার হিসাব করা আছে। এক-ফসলি হলে কতো হবে দু-ফসলি হলে কতো হবে, তিন-ফসলি হলে কতো হবে। তার ডিটেলস এখানে আছে। তাহলেই আপনি জমির চরিত্র ধরতে পারবেন। বাকি আপনি জানতে চাইলে বলবো।
অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কেষ্টবাবু মনে হয় এবার বুঝতে পেরেছেন এটা পার্টির মিটিং নয়।
ভদ্রলোক একবার সিনপসিসের ওপর চোখ বুলিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালেন।
এগুলো পেলেন কোথায়!
জোগাড় করেছি। তার সাপোর্টিং ডকুমেন্টস আপনাকে দিতে পারবো।
সরকারের হাতে এসব তথ্য নেই?
আপনাদের দফতর এগুলো সাপ্লাই করেছে। আপনি একবারে নিচের তলায় খোঁজ নিলে ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।
কেষ্টবাবুর দিকে তাকালাম।
আপনি একবার ডেটাগুলো দেখে নিতে পারেন?
ভদ্রলোক থতমতো খেয়ে গেছেন।
অনিকা।
বলো।
তোরা এগুলো বোঝাস নি?
হ্যাঁ।
ঘণ্টা।
বলো।
ওখানকার পার্টির স্ট্রাকচারটা দে।
ঘণ্টা আর একটা কাগজের বান্ডিল দিল।
অনুপদা এই ডিস্ট্রিক্টটা তুমি দেখাশোনা করো।
দেখলাম বড়োমা, ছোটোমা, বৌদি গেটের বাইরে এসে দাঁড়ালো।
অনিমেষদা তাকাল বড়োমার দিকে।
কিছু বলবেন?
তোমাদের কথাবার্তা শোনার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। আপত্তি থাকলে চলে যাব।
তোমরা এখন এসো। পরে শুনে নেবে। আমি বললাম।
আমাদের আপত্তি নেই তোর আপত্তি কিসের? বিধানদা ধমকে উঠলো।
শুনে কি করবে?
বিরোধী পক্ষের কাছে গিয়ে প্রচার করবে আমরা এইরকম একটা প্রজেক্ট করতে চলেছি। মিটিংটা একটা প্রাইভেট বাড়িতে করছি।
বিধানদার কথায় সবাই মুখ নিচু করে হেসে ফেললো।
এই অনুপ, দিদি, ছোটোর সঙ্গে সকলের আলাপ করিয়ে দে। বিধানদা যেন ধমকাচ্ছে।
আমি একবার ঠান্ডা চোখে তিনজনের মুখের দিকে তাকালাম।
পরিচয়ের পর্ব শেষ হলো। বড়োমারা সবাই চেয়ার দখল করলো।
অনুপদা যা বলছিলাম, এই অঞ্চলে তোমাদের ফুটপ্রিন্ট নেই বললেই চলে।
একটা সিট আছে।
লাস্ট ইলেকসনে লোয়েস্ট মার্জিনে জিতেছ।
ঠিক খেয়াল নেই।
যিনি এখন এখানকার এমএলএ এই খাস জমির মধ্যে দেড়শো একরের পাট্টা দেবার ব্যবস্থা করেছেন। এটা তোমাদের দলীয় নীতি। এই ব্যাপারে কিছু জান?
খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে হবে।
অমিতেশবাবু আপনি কি আমাকে জানাতে পারবেন গত ছয়মাসে কারা এখানে জমি-জমা হস্তান্তর করেছেন।
জানান যাবে, তবে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
আলি আমরা কি এই জমি সরকারের পক্ষ থেকে এ্যাকোয়ার করে শিল্পদফতরের হাতে তুলে দিতে পারি না। অনিমেষদা বললেন।
কামিং ইলেকসনে আমরা যদি নিরঙ্কুশ পাই তবে হবে। কিছু আইনি পরিবর্তনের দরকার আছে।
ধরুণ আমি যদি ওখানে জমি কিনে নিই। তারপর সরকারের কাছে এ্যাপ্লাই করি।
সেখানে শিলিং আছে।
ওটা বাঁচিয়ে।
সে তো আপনি সব কিছুই পারেন।
তুই কি ওখানে জমি কেনা শুরু করে দিয়েছিস! অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
হ্যাঁ।
বিধানদা হাসছে।
আপনি হাসবেন না বিধানবাবু।
হাসবো না! তুমি তখন ওই ম্যাপটা দেখেছো। দেখো ওখানে তিনটে কালারে মার্কিং করা আছে। অনিকা সেটা তখন ঘুরিয়ে বোঝাতে চাইল, তোমরা কেউ শুনতে চাইলে না।
অনুপ আমাদের ওখানকার এমএলএ কে। অনিমেষদা বললো।
রাজীব তির্কে।
ওটা কি রিজার্ভ সিট?
হ্যাঁ।
এখন শ্যামরা অপারেট করছে।
হ্যাঁ।
রূপায়ণ?
আমার সঙ্গে শ্যামের শেষবার যা কথা হয়েছে, আমি অনুপকে বলেছি।
কি বলেছে শ্যাম?
তিরিশটা সিট ওর চাই। এর মধ্যে এই প্রজেক্টটা পড়ছে।
বাকি বারটা?
চিকনা বুঝে নেবে।
আমাদের সঙ্গে যারা এ্যালায়েন্সে আছে?
কাউকে একটা সিটও দেবে না। ইলেকসনের পর শ্যাম আমাদের সাপোর্ট করবে।
ওই ডিস্ট্রিক্টে অনাদির কটা রয়েছে?
বাইশটা।
নিরঞ্জনবাবু কি বললেন?
পার্টি অফিসে আছেন, জেলার লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন, বিকেলের দিকে আসবেন।
বিকেল হতে আর বাকি আছে নাকি। একবার ফোন করো। বিধানদা বললো।
কেষ্ট তোমার অনুজের কোনও বক্তব্য আছে। অনিমেষদা বললো।
ওনার কথা শুনে মনে হচ্ছে উনি একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান প্রোগ্রাম করে এগোচ্ছেন। কেষ্টবাবু বললেন।
সে তো সকালে আমরা যখন বসে আলোচনা করেছিলাম তখন তোমাদের সেই আভাস আমি দিয়েছি। এও বলেছি আমার টোটাল ডাটা চাই।
ডাটা আমাদের হাতে যা আছে ওনার হাতে তার থেকে বেশি আছে। অনুজবাবু বললেন।
কি অমিতেশবাবু আমি ঠিক বলছি।
অমিতেশবাবু অনুজবাবুর দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
সবচেয়ে ভালো হয় উনি আমাদের বিস্তারিত জানিয়ে একটা প্রপোজাল দিন আমরা সেটা মন্ত্রীসভায় আলোচনা করি। অনুজবাবু বললেন।
প্রপোজাল ও দেবে কি! আমি ওর মুখ থেকে গল্প শুনে ভদ্রলোককে নিজে প্রপোজাল দিয়েছি। তাতে উনি রাজি হয়েছেন। আগামী সপ্তাহে উনি অনির বাড়িতে ঘুরতে আসছেন। আমরা ওই ফাঁকে কাজ করিয়ে নেব। অনিমেষদা বললো।
এতো সব ঘটনা ঘটেছে আমি কিছুই জানি না।
কেনো প্রবীর তোমায় কিছু বলে নি!
একবার ক্যাজুয়েলি আলোচনা করেছিল।
অনুজ তোমার ঘরে ফাইলটা পনেরোদিন আগে পাঠিয়েছি একবার দেখবে। প্রবীরদা বললো।
আমি এই ছোট্ট আলোচনায় বুঝলাম কোথায় যেন হাল্কা গণ্ডগোল আছে। বিশেষ করে ইগোর ব্যাপারটা প্রখর হয়ে উঠেছে। অনুপদা আমার চোখমুখ দেখে বুঝতে পেরে গেছে।
যে ছেলেটার জন্য তোমরা পাওয়ারে এলে সে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে একটা প্রজেক্ট করতে চাইছে আর তোমরা এঘর থেকে ওঘরে ফাইল চালাচালি করে ছেলে খেলা করছো। অনিমেষদা দপ করে জলে উঠলো।
ঘরের সবাই অনিমেষদার গলার স্বরে চমকে উঠলো।
ডিসগাসটিং।
ডাক্তারদাদা, অনিমেষদার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
সুতপা একটু চা করে নিয়ে এসো।
ফ্লাক্সে আছে ঢেলে দেবো।
দাও।
আপনি একটু বোঝার চেষ্টা করুণ। অনুজবাবু বললেন।
দেখো অনুজ আমরা বিগত ছয়মাস ক্ষমতায় এসেছি।
ক্ষমতায় এসেই পার্টির কোর কমিটির মিটিংয়ে আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করেছি। মিনিটস বুক ঘাঁটলে তার হদিস পাওয়া যাবে। তখন তোমাদের নাম ধাম কিছু বলিনি। এটা অস্বীকার করতে পারবে না। তবে পজিটিভ কিছু হতে চলেছে এটা তোমাদের আমার আলোচনায় জানিয়েছি। পলিটব্যুরোতেও এই নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরও সম্মতি ছিল। আর তোমরা ব্যাপারটার কোনও গুরুত্ব দিলে না।
এই ধরণের আলোচনা এখানে না করাই ভাল। অনুজবাবু বললেন।
কি বললে!
আমার মনে হয় আমরা যে আলোচনা এখানে করছি এটা পার্টির ডেকরামের বিপক্ষে যায়।
অনিমেষদার চোখমুখ লাল হয়ে গেল। রাগের চোটে হেসে ফেললো।
অনুজ আমরা ছাড়াও এ ঘরে এমন তিন জন আছেন তাদের সদস্য পদ তোমার বয়সের সমান।
পার্টির অন্দর মহলের খবর তোমার থেকে তারা বেশি রাখেন।
তুমি যে মন্ত্রী হবে, সেটা এই ঘরে বসে প্রথমে ঠিক হয়েছিল। তুমি বুদ্ধিমান, আশারাখি আর না বললেও তোমাকে চলবে।
বৌদি নিস্তব্ধে সকলের হাতে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল।
এই তিনটে প্রজেক্ট মহারাষ্ট্র, গুজরাট সরকার নেওয়ার জন্য হাঁ করে বসে আছে।
তারা যা সুযোগ-সুবিধা দেবে, আমাদের সরকার তার কিছুই দিচ্ছে না। যদি কিয়দংশ আমরা দিতে পারি প্রজেক্টটা এখানে করতে পারব। এককথায় অনির জন্য এই প্রজেক্টটা আমরা পাচ্ছি।
শুভ, অনন্য গেটের কাছে এসে দাঁড়াল।
কুট্টিদাদাই ভেতরে আসবো।
অনিমেষদা একবার ওদের দিকে তাকাল।
আয়।
অনন্য সোজা এসে আমার হাতে রোল করা ম্যাপগুলো দিল।
মার্কিং করেছিস। অনন্যর দিকে তাকালাম।
করেছি।
শুভ তোকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম হয়ে গেছে?
পেনড্রাইভে নিয়ে এসেছি।
কিছু বলেছে?
রাতে তোমার সঙ্গে ফোনে কথা বলবে।
পেন ড্রাইভটা সুন্দরকে দে। হাতেমুখে একটু জল দিয়ে চেঞ্জ করে আয়।
দু-জনে নিস্তব্ধে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
সুন্দর।
বলো।
ম্যাপগুলোয় পয়েন্টিং করা আছে। ভালো করে দেখে আমাকে একটু নোট করে দে। পেন ড্রাইভে যে মেটিরিয়াল আছে, দেখে আমাকে ডিটেলস দে।
জানো প্রবীর ওর সঙ্গে আমাদের একটা পার্থক্য, ও নিজে কাজ করে, আমরা কাজ করাই।
সবাই অনিমেষদার কথায় চুপ করে আছে।
তোমরা বাচ্চা ভেবে ওদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলে না। আলোচনাটা আমি অন্যদিকে ঘুরিয়ে স্টপ করে দিতে চেয়েছি। অনি কিন্তু এসে ঠিক জায়গা থেকে ধরলো। এটা লক্ষ্য করেছো।
রূপায়ণদা, অনিমেষদার মুখের দিকে তাকিয়ে।
আমরা কি কাগজপত্র তৈরি করেছি প্রবীর। ফাইলটা আমাকে একটু দাও দেখি।
ওর সঙ্গে মিলবে না।
কেন? ও তো আভাস দিয়েছিল কোন কোন ডিস্ট্রিক্টে ও করবে। তুমি সেই আলোচনায় ছিলে।
মন্ত্রি সভার বৈঠকে আমরা বিষয়টা আলোচনা করেছিলাম প্রত্যেকটা জায়গায় অমিতেশবাবু যা বললেন সেই সব সমস্যা আছে, তাই আমরা তিনটে নতুন জায়গা ঠিক করেছিলাম।
এখন কি বুঝতে পারছো অনির ঠিক করা জায়গাগুলোয় কোনও সমস্যা নেই।
অনিমেষদা অমিতেশবাবুর দিকে তাকালেন।
অমিতেশবাবু আমি কি ভুল বলছি?
ওনার ডাটা বলছে ঠিক, সাপোর্টিং ডকুমেন্টস উনি অবশ্য দেবেন বলছেন। ওগুলো একবার চেক করতে হবে। তারপর বলতে পারি ভুল না ঠিক।
প্রবীর তোমরা কোন কোন স্পট ঠিক করেছো।
মামা ওই ফাইলটা বার করবো।
অনিকার কথায় অনিমেষদা হেসে ফেললো। অনিকার দিকে তাকাল।
কোন ফাইলটারে মা?
ফাইনান্সের ফাইল।
অনুপদা হাসছে।
অনুপ হেসো না। তোমরা হলে মুহূর্তের মধ্যে রেক্টিফাই করতে পারতে না। শুধু পেছন দিক ফিরে সাপ্লাই লাইনটা দেখে যাও। তোমরাও অতটা তৈরি হওনি।
বিধানদা হাসছে। অনিমেষদা, প্রবীরদার দিকে তাকাল।
প্রবীরদা একটা ফাইল অনিমেষদার হাতে দিল। অনিমেষদা বেশ কিছুক্ষণ উল্টে পাল্টে দেখে ফাইলটা অনিকার হাতে দিল।
দেখতো মা এই কাগজগুলোর কথা তুই বলতে চাইছিলি?
আমি অনিকার দিকে তাকালাম।
তুই তাকাস না। তুই এই প্রজেক্টের কেউ নোস। আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি।
ডাক্তারদাদা খুব জোড়ে হেসে উঠলো। অনিমেষদা একবার ডাক্তারদাদার দিকে তাকাল।
ডাক্তারবাবু আপনি হাসছেন।
না হেসে কি করবো বলো অনিমেষ।
অনিকা কাগজগুলোয় চোখ বুলিয়ে আমার দিকে তাকাল।
আবার ওর দিকে তাকায়, আমার দিকে তাকা।
অনিকা মুখ নিচু করে হাসছে।
শোন না, এরা কাগজ বানিয়েছে তার সাপোর্টিং ডেটা নেই। এবার ডেটা চাইবি বলবে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তোর মামার কাছে কাগজটাও আছে ডেটাও আছে।
অনিকা চোখ তুলে অনিমেষদার দিকে তাকাল।
বোচন ওই যে ম্যাপগুলো নিয়ে এলো। অনি সুন্দরক বললো নোট করে দিতে, একটু প্রিন্ট আউট বার করে দে, আমি দেখি ওরাও দেখুক।
অনিকা চোখের ইশারায় না বললো।
হবে হবে তুই মালিক মানুষ, একটু চেষ্টা করলেই হবে।
অনিকা মিটি মিটি হাসছে।
এরা কিন্তু সব মন্ত্রী, সচিব। কনফিডেন্সিয়াল ফাইলের জেরক্স তোর মামার পকেটে।
পক্কে ফাইলটা দে। অনিকা বললো।
এক নম্বর না দু-নম্বর।
অনিমেষদা, বিধানদা দুজনেই হাসলো। দেখলাম কেষ্টদা, আমিন সাহেবও হাসছেন।
প্রথমে দু-নম্বরটা দে। প্রয়োজন পরলে একনম্বর দিবি।
আমিন সাহেব হাসবেন না, শুধু চোখ কান খুলে দেখে যান। আমরা সংগঠন দেখি। ওরা দেখে এ্যাডমিনিস্ট্রেশন। অনিকে আপনি প্রথমবার দেখছেন, এরপরে দেখবেন অসুবিধে হবে না।
দেখেই যাই শেষে নিজের কথা বলবো।
অনিকা ফাইলটা আনিমেষদার দিকে এগিয়ে দিল। অনিমেষদা ফাইলটা নিয়ে দেখতে শুরু করল।
অনুজ আর একটা মেয়ে যে এই ঘরে বসে আছে তার সারা শব্দ পাচ্ছ। সে কিন্তু দু-নম্বর প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলবে। মেন্টাল প্রিপারেসন নাও। টাকা ওরা ঢালবে। কথা আমাদের বলতে হবে। ওদের সেটিসফাই করতে না পারলে প্রজেক্টটা এই স্টেট থেকে অন্য স্টেটে চলে যাবে।
অনিমেষদা স্বগতোক্তির সুরে ফাইল দেখতে দেখতে কথা বলে চলেছে।
প্রবীর।
বলুন।
তোমরা যে অঞ্চলটা দেখিয়েছ, সেগুলো সব দো-ফসলী তিন-ফসলী জমি।
অনিমেষদা মুখ তুললো।
এখানে তার ডিটেলস ডেটা দেওয়া আছে। অনিমেষদা আবার ফাইলের দিকে তাকাল।
তার মধ্যে ওয়েট ল্যান্ড আছে চারশো একর। তোমাদের মার্কিং করা জায়গার পাশে দেড়শো একর কিনে রেখেছে অনাদির কোম্পানী। দুশো একর কিনেছে সাগর দাধিয়া। বাকি যে পাঁচটা নাম দেখছি চিনতে পারছি নি। প্রত্যেকে পঞ্চাশ একর করে কিনেছে।
অনিমেষদা কিছুক্ষণ চুপ করে ফাইলটা দেখলো।
মোদ্দা কথা এইখানে ইন্ডাস্ট্রি হলে জমির ভ্যালুয়েসন বেড়ে যাবে। টাউনসিপের ব্যবসাটা খারাপ হবে না বুঝলে। তোমরা যে জমিটা বেছেছো সেটা শহর থেকে চল্লিশ কিলোমিটারের মধ্যে আর অনি যেটা ঠিক করেছে সেটা শহর থেকে নব্বই কিলোমিটার দূরে।
অনি যখন স্পটটা বেছেছে তখন বুঝতে হবে অনেক হিসেব করে ঠিক করেছে।
অনিমেষদা ফাইল থেকে মুখ তুলে প্রবীরদার দিকে তাকাল।
তুমি তো ওকে অনেকদিন থেকে দেখছো। আশা রাখছি ভুল বলছি না।
এই নাও তোমরা দেখ।
দেখার আগে আমি অভিজ্ঞতা দিয়ে যে টুকু বুঝেছি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করে নিচ্ছি। ও শুধু ফাইনান্সার এনে দিচ্ছে না। ব্যবসাটা বেশ ভালো বোঝে।
তার ওপর সবচেয়ে বড়ো প্লাস পয়েন্ট লেখার হাতটা মন্দ নয়। নিজের একটা পাঠককূলও আছে। তাছাড়া কাগজের মালকিন ওর খুব ভাল বান্ধবী।
অনুপদা, রূপায়ণদা হাসলো।
ফাইলটা দেখার সময় এই কথাগুলো মাথায় রাখবে।
অনিমেষদা, অনিকার দিকে তাকাল।
একনম্বর ফাইলটা একটু দেখাবি। ওদের দেখাব না। আমি বিধানবাবু একটু দেখবো।
না।
বাবাঃ ওরকমভাবে বলছিস কেন, আমি তো কুট্টিদাদাই।
পেছন দিকে হাসির শব্দটা একটু জোড় হতে ফিরে তাকালাম। ছোটোমা, বড়োমা মুখে কাপর চাপা দিয়েছে। বৌদি ফাইল দেখছে।
পক্কে।
আমার গলার আওয়াজ পেয়েই পক্কা বলে উঠলো, ওগুলো ওয়েস্টেজ পেপার।
এ্যাঁ! কি শয়তান ছেলেরে তোরা। বৌদি বলে উঠলো।
সুতপা, ওরা আমার হাতে তৈরি হয়নি। অনিমেষদা হাসছে। অনিকার দিক তাকাল।
হ্যাঁরে অনিকা প্রজেক্টগুলো কে বানিয়েছে।
আমরা।
ডাটা পেলি কোথায়?
মামা সাহায্য করেছে।
এইটার জন্য কতো সেংসন আছে?
সাড়েতিন, বাকিটা তোমরা।
টোটাল প্রজেক্ট কস্ট?
পাঁচ।
তারমানে সেভেন্টি পার্সেন তোরা থার্টি পার্সেন আমরা?
হ্যাঁ।
নিশ্চই রেশিও ভাগ করে দেওয়া আছে। কে কোন পোর্সনটা ডেভেলপ করবে?
অবশ্যই।
আমরা এর কপি পাবো না?
ফাইন্যাল হলে কপি পাবে।
এখন শুধু আলোচনা হচ্ছে?
হ্যাঁ।
তুই বড়ো সংক্ষেপে উত্তর দিচ্ছিস।
আর বেফাঁস কোনও কথা বার করত পারবেন না অনিমেষবাবু। আমিন সাহেব হাসতে হাসতে বলে উঠলেন।
অনিসার ফোনটা বেজে উঠলো। নম্বরটা দেখে নিয়ে বললো, তুমি কথা বলবে দিদিভাই।
আঙ্কেল?
হ্যাঁ।
তুই বল।
হ্যাঁ আঙ্কেল….মিটিং চলছে….বাবা আছে….এখন দিদির প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা চলছে…. তোমাকে এক ঘণ্টা পর ফোন করছি।
দাদা, অনিসার দিকে তাকাল। হাসছে।
মল্লিক। মল্লিকদা দাদার দিকে তাকাল।
এই বুঁচকি কেঁদে উঠলে তুই কোলে করে বাগানে ঘুরতিস কান্না থামানোর জন্য।
দাদাই খারাপ হয়ে যাবে বলেদিচ্ছি।
কেন দাদাই মিথ্যে কথা বললো। অনিমেষদা বললো।
এখানে বলতে হবে না।
সবাই কম বেশি হাসছে।
বুঝলে অনুজ কে ফোন করলো?
না।
যিনি এই প্রজেক্টের ফাইনান্সার তিনি ফোন করলেন।
অনুজবাবু অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে আছেন।
লণ্ডনে দাদাকে শরীর খারাপের জন্য চিকিৎসা করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আমি সুতপা গেছিলাম। সেখানেই ভদ্রলোকের সঙ্গে প্রথম আলাপ। প্রথমিক আলোচনার সময় সুতপা, আমি, দাদা, ডাক্তারবাবু, ছোট আর বড়দি ছিলাম। এক কথার মানুষ, শুনেই বলেছিলেন, অনি দায়িত্ব নিলে ওনার ইনভেস্ট করার ক্ষেত্রে কোনও আপত্তি থাকবে না।
সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা বিধানবাবুকে জানাই, রূপায়ণ অনুজ কাগজপত্র পাঠায়। তোমাদের সঙ্গে বিধানবাবু নিশ্চই এই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, না হলে আমাকে কাগজপত্র পাঠান কি করে, আর তুমি বললে পার্টির ডেকোরাম।
আপনি আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করুন।
তুমি যুক্তি দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করো। আমিনসাহেব বললেন।
আপনি ব্যাপারটা…।
অনুজ এই প্রজেক্টের প্রাথমিক আলচনায় কারা কারা ছিলেন, সেটা অনিমেষবাবু বহুবার আলোচনার সময় আমাদের বলেছেন। কৃতিত্বটা যে ওনার নয় সেটাও উনি স্বীকার করেছিলেন। আর সেই আলোচনায় ভদ্রলোক অনিমেষবাবুকে পাত্তা না দিয়ে সুতপা, বড়দি, ছোটদিকে যে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন সেটাও আমাদের বলেছিলেন। তুমি ভুলে গেলে চলে কি করে। আমিনসাহেব বললো।
মিত্রা এসে গেটের কাছে দাঁড়িয়েছে। অনিমেষদা তাকাল।
কিছু বলবি?
খাবার এখানে নিয়ে আসি?
দশ মিনিট অপেক্ষা কর, আমরা একটা ব্রেক নেব।
ওই ঘরের টেবিলে রেডি করি।
তাই কর।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইসারা করে চলে গেল।
প্রবীর তোমাদের দেখা হলো।
একটা কপি পেলে ভালো হতো।
অনিমেষদা অনিকার দিকে তাকাল।
ওটা রিসিভ করে দাও। কপি দিচ্ছি। অনিকা বললো।
দাঁড়া তোর মাথা ভাঙছি। প্রবীরদা বললো।
সে তুমি ভেঙো। ফাইনান্সের ব্যাপার নিয়ে কোনও কথা বলবে?
তুই তো একটা স্ট্রাকচার করেছিস?
করেছি।
টোটালটার একটা জেরক্স দে না।
সিনপসিস পাবে ডিটেলস পাবে না।
অনিমষদা হেসে ফেললো।
তাই দে। প্রবীরদা বললো।
সুন্দর প্রিন্ট আউট দে। অনিকা বললো।
ব্রেক হলো।
অনিমেষদারা সবাই বড়োমা, ছোটোমার সঙ্গে ও ঘরে চলে গেল। আমি খাটে একটু শুয়ে পরলাম।
পক্কে।
বলো।
মামীমার কাছ থেকে তুই আর ঘণ্টা আমাদের খাবারটা নিয়ে আয়।
আমি যদি সত্যি এই প্রজেক্টের মালিক হই সাগরকে তুমি ছেড়ে দিলেও আমি ছাড়বো না।
কথাটা ঝট করে আমার কানে কেমন যেন লাগলো। অনিকার দিকে তাকালাম।
কেন তুই এই কথা বলছিস!
স্টাডি করে যা বুঝলাম তাই বলছি। নম্রতাকে আমি বলেছি। আজ না হোক কাল তোর বাবা ধরা পরবে। নিজের রাস্তা এখন থেকে নিজে করে নে। না হলে মরবি।
এরইমধ্যে একটা ভুল করেছিস।
সেকেন্ড টাইম আর হবে না, তোমাকে কথা দিচ্ছি।
সুন্দর। অনিকা সুন্দরের দিকে তাকাল।
শুভ পেনড্রাইভে যা নিয়ে এলো দেখা।
বহুত মেটিরিয়াল, রেডি করতে পারিনি।
মামা যে বললো নোট করতে।
সেটা করেছি।
সেটাই দে।
পক্কে, ঘণ্টা খাবর ট্রে নিয়ে ঢুকলো। পেছনে শুভ, অনন্য।
অনিসা উঠে এগিয়ে গেল।
আঙ্কেল তুমি দেখেছো। শুভ বললো।
না-রে এখনও সময় পাইনি।
একবারে আপ টু ডেট। অনেক কিছু নতুন জিনিষ জানলম, শিখলাম।
শুভ আমাকে একটু হেল্প করবি। সুন্দর বললো।
সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। খেতে খেতেই কথা চলছে কাজও হচ্ছে। পক্কে-ঘণ্টা অনিসার ফাইল রেডি করছে। চা এসেছে। খাওয়ার পর চা খাওয়া হলো।
অনিসা তোর প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলা হয়ে গেছে? শুভ বললো।
না। দিদিরটা সবে শেষ হলো। এবার আমারটা নিয়ে বসবো।
আঙ্কেল জানো ওরা দাদুকে এখনও মনে রেখেছে। দু-জন সিনিয়ার অফিসার আমার কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে দাদুর সঙ্গে কথা বললো।
শুভ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
আজ বাবার ঘরটা দেখলাম। যেখানে বাবা বসতেন সেই জায়গাটা। স্কাউন্ড্রেলটা তোমাকে ওই ঘরে মেরেছিল?
আমি শুভর দিকে তাকিয়ে। চোখে মুখে আগুন ঝরছে।
শুভ, সুন্দরের দিকে তাকাল।
সুন্দরদা তুই কোনটা হেল্প করতে বলছিলি। শুভ সুন্দরের পাশে গিয়ে বসলো।
অনন্য তুই কি ম্যাপগুলো কারেন্ট পেয়েছিস? আমি অনন্যর দিকে তাকালাম।
না।
তাহলে।
যা পেয়েছি নিয়েছি, বাকি স্যাটেলাইট পিকচার।
অনিকার দিকে তাকালাম। তুই বোন ছবিগুলো দেখে নে। তোদের পার্ট টুকু নিজেদের ফাইলে গুছিয়ে নে। বাকিটা পক্কে, ঘণ্টার ফাইলে।
খাট থেকে নেমে টেবিলের কাছে এলাম, মোবাইল আর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ঘরের বাইরে আসতে গিয়ে অনিমেষদার সঙ্গে গেটে ধাক্কা খেলাম।
আমি, অনিমেষদা দু-জনে গেটের কাছে দাঁড়ালাম।
সকলে ঘরে ঢুকলো। দেখলাম ইসি, মিত্রা, তনু সঙ্গে আছে।
কিছুক্ষণ ফর্মাল কথাবর্তা বলার পর আমি বললাম এবার তোমারা কথাবলো আমি যাই।
অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকাল।
কাজ আছে?
সামান্য।
মেয়ের প্রজেক্টের প্রেজেন্টেসন শুনবি না।
ওই তো ওর মা এসেছে শুনে নিক। মোর অর লেস সেম। তাছাড়া তোমরা কিছুই তৈরি করোনি। সাতদিন সময় পাচ্ছ, দেখো তৈরি করতে পারো কিনা। আমি এই ফাইল পাঠিয়ে দিচ্ছি।
একটা করে কপি যদি পেতাম ভালো হতো।
পুরো পাবে না।
শেষে সেই দিবি, না না করবি।
তাহলে তোমাদের অফিসারদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দেবার কি অর্থ আছে।
সব জেনে বুঝে ন্যাকামো করিস না। ঠিক আছে সিনপসিস দে, বাকিটা তৈরি করাব।
তুমি বলো ওরা দিয়ে দেবে। হয়ে গেলে বলবে, আমি আধঘণ্টা তোমাদের সঙ্গে বসবো।
আমি ঘরের বাইরে এলাম। অনিমেষদা ভতরে গেল। অন্ধকার হয়ে এসেছে। বাগানে চিকনাদের কাউকে দেখতে পেলাম না। আমি বাগানের পেছন দিকে এলাম। এই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আমার ঘরটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
একটু আড়াল করে একটা সিগারেট ধরালাম।
অনিসা কথা বলতে শুরু করেছে। চোখে মুখের প্রকাশ ভঙ্গি যথেষ্ট সপ্রতিভ। বিধানদাকে দেখলাম এক দৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে। অনুজবাবু মনে হয় কোনও প্রশ্ন করলেন।
প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক। এটা অনুজবাবুর ডিস্ট্রিক্টের একবারে লাগোয়া প্রজেক্ট। সেই রকমই একটা জায়গা আমি প্রজেক্টের জন্য বেছেছি। অনুজবাবু চেয়ছিলেন নিজের ডিস্ট্রিক্টের মধ্যে প্রজেক্টটা করতে তাহলে পার্টিগত দিক থেকে একটা প্রভাব উনি বিস্তার করতে পারবেন।
যে তিনটে স্পট নিয়ে মন্ত্রিসভায় জোড় আলোচনা হয়েছিল এই স্পটটা তার মধ্যে অন্যতম। অনুজবাবু লবির জোড়ে তাঁর ডিস্ট্রিক্টে প্রজেক্টটা ঢোকাতে চেয়েছিলেন। ঢুকিয়েও নিয়েছেন।
এখান থেকে দেখে যে টুকু মনে হচ্ছে অনিসার সঙ্গে বেশ ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে অনুজবাবুর।
মনেহচ্ছে রূপায়ণদা বাজাচ্ছে অনিসাকে।
হ্যাঁ অনুজবাবুর সচিবও কথা বলতে শুরু করেছেন। এতক্ষণ উনি চুপচাপ ছিলেন।
আমি আর ওদিকে মনোযোগ দিলাম না। নিজের কাজে মন দিলাম।
বাগানে ঘুরছি আর একটার পর একটা ফোন করে যাচ্ছি। শেষে অর্ককে ধরলাম।
কোথায় আছিস?
তুমি কোথায় বলো।
কেন আমি বাড়িতে।
তোমাকে ওপর নিচ কোথাও খুঁজে পেলাম না।
আমি বাগানের পেছনদিকে ভাঙা গ্যারেজের সামনে।
ওই ঘুট ঘুটে অন্ধকারে কি করছো!
বসে আছি।
এসো তোমার মালপত্র নিয়ে এসেছি। আবার অফিসে ফিরে যাব কাজ আছে।
যাচ্ছি দাঁড়া।
শেষ ফোনটা করে বাগান থেকে বাইরের ঘরে এলাম। দেখলাম বড়োমা, ছোটোমা, অর্ক বসে কথা বলছে। আমাকে দেখে হাসলো।
খেলাটা ভালো খেলে দিলে। সেই জন্য এতো তাড়াহুড়ো করছিলে।
হাসলাম। অরিত্র গেল কোথায়?
বললো তুই যা। আমার আর একটু বাকি আছে। অনিদার কাছে এক দিন সময় চেয়ে নিবি।
আমি পর্শুদিন সকালে তিন চারদিনের জন্য একটু বেরবো।
কাল রাতে পৌঁছে দেব।
ওই ঘরে গেছিলি।
একবার উঁকি মেরে এলাম। অনিসা মোটমুটি কাপড় জামা খোলা শুরু করে দিয়েছে।
ঠিক ঠাক লড়ছে।
লড়ছে কি গো বিনোদবাবুর মুখের ওপর বলে দিল পয়সা আমি ইনভেস্ট করবো আপনাদের স্বার্থ দেখে নয়। পয়সাটা ইনভেস্ট করবো ব্যবসা করে তোলার জন্য। এখানে দানছত্র খুলে বসিনি। পারলে করবেন, না হলে অন্য স্টেটের অফার আছে সেখানে ট্রান্সফার করবো।
আমি হাসছি। বিনোদবাবু কে?
বিনোদ সেনগুপ্ত। শিল্পদপ্তরের সচিব। বহুত ঘাঘু মাল। এইসব ডাটা কাদের দিয়ে কালেকসন করালে?
যার যার ব্যক্তিগত টিম।
হতেই পারে না। তোমার কিছুটা হলেও হাত আছে।
একটু আধটু সাহায্য করেছি। বাকি সেভেন্টি পার্সেন্ট নিজেরা জোগাড় করেছে।
এবার ভাইঝিদের সঙ্গে বেশ মেপে-মুপে কথা বলতে হবে। সব মালকিন বনে গেছে।
হাসলাম।
এই নিউজটা ছোট্ট করে ঝেড়ে দেব?
একবার অনিমেষদার সঙ্গে কথা বলে নে।
ঝেড়ে দিলে কালকের থেকে মার্কেটটা কিছুটা গরম হবে।
আমি অর্কর হাত থেকে ফাইলটা নিলাম।
যা যা বলেছিলাম সব আছে।
সব।
তোর কাছে কপি আছে।
না রেখে তোমকে দেব ভাবলে কি করে?
অনাদির ব্যাপারটা বলেছিলাম কিছু করলি।
পর্শু থেকে তিনটে ইনস্টলমেন্ট দেব। তার সঙ্গে এটা পাঞ্চ করলে বেশ জমতো।
তাহলে মিটিং শেষ হওয়া অবধি তোকে অপেক্ষা করতে হবে।
দাঁড়াও সন্দীপদার সঙ্গে একটু কথা বলে নিই।
অর্ক উঠে গেল।
এতক্ষণ বড়োমা, ছোটোমা দু-জনে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ কথা শুনছিল। অর্ক উঠতেই বড়োমা বললো, ওরা সত্যি সত্যি তোর এই প্রজেক্টের মালিক।
কেন তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?
এখনও হচ্ছে না।
আর কিছুদিন অপেক্ষা করো বুঝতে পারবে।
ওই সব বাঘা বাঘা লোকগুলো কিভাবে মেয়ে দুটোকে ক্রস করছে।
ওরা কি তাতে ভয় পেয়ে যাচ্ছে?
সেরকম কিছু বুঝছি না।
দেখবে চাষা যখন বলদ নিয়ে মাঠে যায় তখন বলদ গুলো অলসভাবে হাঁটে। যেন মাঠে ঘুরতে যাচ্ছে। যেই কাঁধে জোয়ালটা চাপিয়ে দেয় তখন বলদের দৌড় দেখবে, চাষা নিজে হাঁপিয়ে যায়।
ছোটোমা হেসে ফেললো।
বৌদিরা কোথায়?
সবাই ও ঘরে।
নেক্সট মিটংয়ে আফতাবভাই এসে যখন ওদের সঙ্গে নিয়ে বসবে তখন দেখবে তোমাদের নাতনি আর ভাইঝির চেহারা একবারে বদলে গেছে। বুঝলে ছোটোমা, পাওয়ার এমন একটু বস্তু তুমি কথা বলবে না। তোমার মুখ দিয়ে কথা বলিয়ে নেবে। সে এটা চায়। তুমি দিতে প্রস্তুত না থাকলেও তোমাকে দিয়ে সে কাজটা করিয়ে নেব। দেখো আজ ওরা এই রোলটা প্লে করছে।
ওরা এতো সব শিখল কি করে। বড়োমা বললো।
আফতাবভাই-এর সাপোর্ট।
তাই এতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুই বোনে ফুসফুস গুজগুজ করতো। তুই জানতিস?
জানতাম।
কই বলিস নি তো!
বললে তোমরা সবাই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে, ওদের ওপর অহেতুক একটা প্রেসার পড়ে যেত। এখন তোমরা জানলেও সেই প্রেসারটা ওদের নেই, ওরা প্রুফ হয়ে গেছে। এখন ব্যাপারটা ওরা এনজয় করছে।
পড়াশুনটা গোল্লায় গেল। ছোটোমা বললো।
কিচ্ছু যাবে না। তোমাকে ওই স্ফেয়ারে চলতে গেলে। তোমার কিছু কাগজপত্র দরকার লাগবে। নিজের তাগিদে ওরা সেই সব জোগাড় করে নেবে, তোমাকে আলাদা করে বলে দিতে হবে না।
তনু, মিত্রা, ইসি ঘরে ঢুকলো। আমার চোখ চলে গেল। দেখলাম বরান্দায় অর্ক তখনও ফিস ফিস করে কথা বলে চলেছে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। পরিতৃপ্ত মুখ। এসেই দু-জনে দুই পাশে সোফার ফাঁকা জায়গা দখল করে নিল। বড়োমা, ছোটোমার দিকে তাকাচ্ছে।
বুঝলে বড়োমা বুঁচকিটা বাপকা বেটি তৈরি হয়েছে। ইসি বললো।
কেন, এখনও দাদাইদের সঙ্গে ঝগড়া করছে। ছোটোমা বললো।
না একবারে ঝগড়া করছে না। মাঝে মাঝে অনির মতো গলার মডিলিউসন চেঞ্জ করেছে।
আমি মিত্রার দিকে টেরিয়ে তাকালাম।
ফিক করে হেসে দিল।
বুঝলে ছোটোমা, বুবুনের এ্যাক্টিংটা দুই বোনে বেশ ভালো রপ্ত করেছে। আর একটা চুপচাপ থাকতে থাকতে এমন একটা কথা বলছে সব একবারে কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে যায়। শেষে গম্ভীর হয়ে বললো প্লিজ ডিসকাস দিস পয়েন্ট এগেইন। মিত্রা বললো।
ছুটকি রগড়টা দেখতে বেশ ভালো লাগছিল না।
ইসির দিকে তাকালাম।
একটু চা খাওয়াবি।
থাম, আমাদেরও মাথা ধরে গেছে। করছি।
তোর ছেলে বউ কোথায়?
জানিনা। সেই দুপুরে খাওয়ার পর একটা খাম আমার হাতে দিয়েছে। বলেছে মশাই যখন চাইবে তখন দেবে। খোলার একবারে চেষ্টা করবে না।
কোথায় রেখেছিস?
বড়োমার আলমাড়িতে।
জ্যেঠিমনি, আন্টি, দামিনীমাসি, বৌদি কাউকে দেখছি না। আমি বললাম।
কেন ওঘরে বসে আছে দেখিসনি। বড়োমা বললো।
ও ওই ঘরে ছিল নাকি? মিত্রা বললো।
তাহলে কোথায় ছিল! ছোটোমার চোখে মুখে বিষ্ময়।
জিজ্ঞাসা করো।
ছোটোমা আমার মুখের দিকে তাকাল।
মিটিং এখনও শেষ হয় নি? মিত্রার দিকে তাকালাম।
হয়েছে। কাগজ দেওয়া নেওয়া চলছে। প্রবীরদা, অনুপদা, রূপায়ণদা ফাইল গুছিয়ে দিচ্ছে।
পজিটিভ বুঝলি না নেগেটিভ।
সেরকম কিছু বুঝলাম না। কিছুটা তর্ক বিতর্ক হলো।
ইসি এবার চা বানা।
বড়োমা চা না কফি।
কফি কর, ঝামেলা কম। ওরা খাবে তো? ছোটোমা বললো।
খাবে না মানে, বৌদিকে দু-বার বলা হয়ে গেছে।
ইসি রান্নাঘরে ঢুকে পরলো।
ছোটোমা।
ছোটোমা আমার দিকে তাকাল।
চিকনা, নেপলা, ইসলামভাইদের দেখতে পাচ্ছি না। গেলো কোথায় সব?
এবার এসে পরবে।
তনু একটা কাজ করবে।
বলো।
না থাক তুমি বসো আমি আসছি।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। তনুও উঠে দাঁড়াল।
বলো না।
দাঁড়াও।
আমি বাইরের ঘরের দরজার মুখে আসতেই অনিকা-অনিসার সঙ্গে ধাক্কা খেলাম। দু-জনেই জড়িয়ে ধরলো। শুভ, অনন্য, সুন্দর, ঘণ্টা, পক্কে সব ঘারের ওপর দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।
কমসে কম একটা থ্যাঙ্কস দাও। সুন্দর বললো।
এতেই খুশি। তাই হোক। দিয়ে দিলাম।
সরি। সুন্দর হেসে ফেললো।
সব গুছিয়ে নিয়েছিস?
সব। কালকে যেগুলো দিদিভাই বোন ক্যারি করবে সেগুলো পর্যন্ত।
আচ্ছা ওগুলো বয়ে নিয়ে যাবার কি আছে। মেল করে দিলে হয় না। কতো এমবি আর হবে।
কিরে ঘণ্টা হার্ড কপি বয়ে নিয়ে যাব তাই না। তোর মাথা ভাঙব। অনিকা চেঁচাল।
কেন, আগে বলতে পারিসনি, ছুরুক ছুরুক করে বলতে হবে।
সবাই জোড়ে হেসে উঠলো।
অনিকা ঘণ্টার দিকে তেড়ে গেল।
মামা বাঁচাও সেই দুপুর থেকে দিদি গরম খেয়ে রয়েছে।
ঘণ্টা আমার পেছনে।
কেন!
মামীদের গল্পটা বলেছি।
ওখান থেকে মিত্রারা জোড়ে হেসে উঠলো।
আমি একবার পেছন ফিরে তাকালাম।
ঠিক আছে পেন ড্রাইভে ভড়ে দে।
গল্পটাও পেন ড্রাইভে ভরে দেব! ঘণ্টা বললো।
আমি হাসছি। প্রজেক্টগুলো।
সেই বলো, ভাবলাম প্রজেক্টের সঙ্গে আবার গল্পটাও ভরে দিতে বলছো।
অনিকা রাগে কটমট করে ঘণ্টার দিকে তাকাচ্ছে।
ওরা চলে গেছে? আমি অনিকার দিকে তাকালাম।
তোমায় ডাকছে। অনিসা বললো।
সবাই আছে?
হ্যাঁ।
আমি বারান্দায় এলাম। দেখলাম অনিমেষদা, অনুজবাবু, আর আলি সাহেবের সঙ্গে কথা বলছে। সচিবরা সব বাগানের লনে নেমে পড়েছে। অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
তুই বোস যাচ্ছি।
দামিনামাসিরা ধীর পায়ে হেলতে দুলতে এ ঘরের দিকে আসছে।
ঘরে ঢুকতেই দেখলাম দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা বেরিয়ে আসছে।
আমাকে দেখে দাদা বুকে জড়িয়ে ধরলো। মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা হাসছে।
এখন আমি শান্তিতে মরতে পারি।
দাদার মুখের দিকে তাকালাম। সারাটা মুখ মণ্ডল আবেগে মাখা মাখি। চোখে সামান্য জল টল টল করছে। এক অদ্ভূত প্রশান্তি।
হঠাৎ এই কথা বলছো?
তোর উত্তরসূরী তৈরি হয়ে গেছে। ওরা ঠিক তোর তৈরি করা এই সাম্রাজ্য সামলে নেবে।
তোমার বিশ্বাস হয়?
শুধু আমার নয়, সবাইকে জিজ্ঞাসা কর।
অমিতাভবাবু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। ওর কথা শোনার পর আবার আমাদের বসতে হবে।
বিধানদা সোফায় বসা অবস্থায় চেঁচিয়ে উঠলো। দাদার বুকের অর্গল থেকে মুক্তি পেলাম।
চলবে —————————–
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/zSZcviW
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment