কাজলদিঘী (১৪৪ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

১৪৪ নং কিস্তি
—————————

কোথাদিয়ে যে তিনটে দিন কেটে গেল বুঝতে পারলাম না। অনিমেষদা নাছোড় বান্দা। যেভাবেই হোক ইলেকসনের আগে প্রজেক্টটা ফাইন্যাল করতে হবে। তাহলে আমাদের এ্যাডভানটেজ।

প্রবীরদা এসেছিল। একই কথা। বলেছি, এখন না আমাকে কয়েকদিন সময় দাও।

সে তুই সময় নে, কিন্তু প্রজেক্ট যেন এখানে হয়।

আবিদের বিয়ের রিসেপশন নিয়ে সবাই ব্যস্ত।

চিনা শেষমেষ যা খবর দিল তাতে আমার আত্মারাম খাঁচা। ওরা ওদের দুজনক চোখে চোখে রাখছে। আমি যে মানসিক ভাবে ভীষণ চঞ্চল হয়ে পড়েছি সেটা ছোটোমা, বড়োমা দু-জনে ধরে ফেলেছে।

এর মধ্যে বাড়তি চাপ, আগামী সপ্তাহে কেশের ডেট।

অনুপ সব রেডি করছে। বলেছি কেশের আগেরদিন তোর সঙ্গে বসবো, এখন আমি তোর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবো না।

বনিদের আটকে দিয়েছি, বলেছি আবিদের রিসেপশনের নেমন্তন্নটা অন্তত খেয়ে যা।

ওরা থেকে গেছে।

মাঝে একদিন অফিসে গেছিলাম, কয়েকঘণ্টা ছিলাম। কাজে মন বসাতে পারিনি।

বাড়িতে সাজো সাজো রব। আগামীকাল আবিদের বিয়ের রিসেপশন। সকাল থেকে এখানে খাওয়া-দাওয়া, হই-হুল্লোড়। রাতে পার্টি হবে পার্ক হলে।

ট্যাক্সি থেকে গেটের কাছে নামতে দেখলাম, কয়েকজন একটা সাইডে চেয়ার গুছিয়ে রাখছে।

একটা হ্যালোজেন লাইট জ্বলছে। বাগানের চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়েছে।

মিকি, মাম্পি ভজুরামের সঙ্গে বারান্দায় খেলছে।

বড়োমা, ছোটোমা, দামিনীমাসিদের দেখতে পেলাম না। মিত্রা, তনু সোফায় বসেছিল।

সারাটা শরীরে ক্লান্তি।

কনিষ্ক সকালে একবার ধমক দিয়ে গেছে। আবার অত্যাচার শুরু করেছিস।

নিজের ঘরে চলে এলাম।

মিত্রা, তনু ঘরে এসে চেপে ধরলো।

তোর কি হয়েছে বল। মিত্রা বললো।

কিছু হয়নি।

তোর মুখ চোখ কেমন শুকিয়ে গেছে।

তোরা ভুল দেখছিস।

আমার নয় চোখ খারাপ তা বলে কি সবার চোখ খারাপ হয়েছে।

চুপ করে থেকেছি।

তুই কারুর সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলছিস না।

তনু আমার মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে মিত্রার কথা শুনে গেছে।

বাথরুমে গেছি, ফিরে এসে দেখলাম দু-জনেই বেরিয়ে গেছে।

এ ঘরে এসে দেখলাম বড়োমারা এসে গেছে। ওরা দুজনে সোফায় হেলান দিয়ে বসে টিভি দেখছে।

বড়োমা আমাকে দেখে কাছে এগিয়ে এলো।

একটু চা খাওয়াবে।

বোস, দিচ্ছি।

বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

যে বাড়িটা ভাড়া নেওয়া হয়েছে সেই বাড়িতে সব গেছে।

ছোটোমা কোথায়?

বাথরুমে।

বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

তোর কি হয়েছে বল?

কিছু না।

তোকে কয়েকদিন খুব অন্যমনস্ক লাগছে।

একটা সমস্যায় পড়েগেছি।

আমি এসে সোফায় বসলাম। মিত্রারা টিভিটা বন্ধ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

একটু চা খাওয়াও।

দিচ্ছি। আগে বল।

কি!

তোর সমস্যাটা কি?

হরেক সমস্যা।

বলনা, একটু শুনি।

বলা যাবে না।

বড়োমা আমার দিকে তাকিয়ে।

বললে তোমরা তার সমাধান করতে পারবে।

একটু শুনি।

আগামীকাল বলবো।

তারমানে তুই বলবি না।

হাসলাম।

যাও চা নিয়ে এসো।

বড়োমা আর দাঁড়াল না গুটি গুটি পায়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। দামিনীমাসি রান্নাঘরের সামনে থেকে একবার আমাকে উঁকি মেরে দেখলো। বড়োমা চা নিয়ে এলো। চা খেয়ে বাগানে চলে এলাম।

তখন কটা হবে সাতটা সাড়ে সাতটা।

পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম।

হাঁটতে হাঁটতে একবারে বাগানের শেষ প্রান্তে চলে এলাম। এখানটা বেশ অন্ধকার অন্ধকার। পেছন ফিরে একবার দেখে নিলাম কেউ এলো কিনা। না কেউ আসেনি।

প্রথমে চিনাকে ফোন লাগালাম।

হ্যাঁ অনিদা বলো।

লেটেস্ট খবর কি বল?

শেয়লদার পান্থনিবাসে ওরা আছে। খুব ভালো ছেলে।

নাম-ধাম সব মিলিয়েছিস?

মিলিয়েছি।

কোথায় কাজ করে?

আবিদের অফিসে।

ঠিক বলছিস?

পাক্কা।

দেখে এসেছিস?

হ্যাঁ। আমি যাই নি। তবে আমার লোক গেছিল।

চিনতে পারে নি?

না।

আবিদের বউ ওই অফিসে কিসের কাজ করে?

আবিদ বাইরেটা সামলায় বৌ অফিস।

মেয়েটা কি ওই অফিসে আগে কাজ করতো?

তোমায় একটা কথা বলবো।

বল।

কিছু মনে করবে না।

না।

কোনও সমস্যা হয়েছে, আবিদের বউকে নিয়ে?

কেন বলতো!

তোমকে নির্ভয়ে বলতে পারি?

বল।

তোমার বাড়ির লোকজন যাদের আবিদের শ্বশুর-শাশুড়ী ভাবছে তারা কিন্তু আবিদের বউয়ের কেউ নয়।

কি করে বুঝলি?

তুমি খবর নিতে বলেছ। আমি সব খবর নিয়েছি।

বল শুনি।

এরা তিনজনেই অরফ্যান। আবিদের বউ, ঘণ্টা আর পক্কে। কৃষ্ণনগরে কোনও এক চার্চে মানুষ। আমার লোক সেই চার্চ পর্যন্ত একদিন ধাওয়া করেছিল। ওখানকার ফাদার ভীষণ ভালো। এই তিনজনকে উনি মানুষ করেন। তবে আমার একটা ডাউট থেকে যাচ্ছে অনিদা।

কিরকম?

ঘণ্টা আর পক্কের সঙ্গে আমি একটা ভীষণ সুন্দরী মেয়েকে ঘুরতে দেখেছি।

সেটাকে আবার পেলি কোথায়!

একদিন আবিদের অফিসের তলায় দাঁড়িয়ে আছি। দেখি ঘণ্টা আর পক্কে বেড়োল।

তারপর?

সোজা চলে গেল বেঙ্গল ক্লাবে। ওখানে যে এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজার আছে তার ঘরে গেল। তারপর ভেতরে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখলাম একটা সুন্দরী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ওরা মিলেনিয়াম পার্কে গেল।

নামধাম জেনেছিস?

পাত্তা লাগিয়েছি এখনও পাইনি।

তারপর বল?

ওখানে বসে ওরা আড্ডা মারলো। তারপর মেয়েটা একটা ট্যাক্সি করে বেড়িয়ে গেল। ঘণ্টা, পক্কে ফিরে গেল।

মেয়েটাকে ফলো করিসনি?

না।

কেনো?

তুমি ওদের ওপর নজর রাখতে বলেছো।

সেদিন ছাড়া মেয়েটাকে আর দেখিসনি।

না।

আবিদের বউ?

আবিদের থেকে মাথায় বেশি বুদ্ধি রাখে।

কি করে বুঝলি?

টোটাল ব্যবসাটা এখন আবিদ চালায় না, আবিদের বউ চালায়।

ওর বউ ওই অফিসে কাজ করতো?

হ্যাঁ।

কতোদিন কাজ করছে?

বছর খানেকের ওপর।

তারমানে আমি কলকাতায় আসার আগে থেকে?

হ্যাঁ।

তোর সঙ্গে ওর বউয়ের আলাপ আছে?

আচ্ছা তুমি ঠিক কি জানতে চাইছো বলো, আমার মাথায় ঢুকছে না।

বলনা আলাপ আছে কিনা?

আছে।

কথাবার্তা কেমন?

ভীষণ মিশুকে। কিন্তু শ্রুট। তোমার বাড়িতেও গেছিল।

বিশ্বাস করবি আমাকে এখনও দেখায়নি। আবিদকে জিজ্ঞাসা করতে বললো, ওর বউ যখন এসেছে, আমি নাকি তখন বাড়িতে ছিলাম না।

হতে পারে।

কেমন দেখতেরে মেয়েটাকে। খুব মিষ্টি?

আচ্ছা তুমি ঠিক এইভাবে আমাকে জিজ্ঞাসা করছো কেন বলো?

তোর চোখ দিয়ে সবাইকে দেখতে চাইছি।

তুমি চাইলে আবিদ এখুনি নিয়ে গিয়ে তোমার সামনে হাজির করবে।

আমি চাইছি না।

কেন!

একটা গণ্ডগোল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আমার কেমন কেমন যেন লাগছে অনিদা।

ঘাবড়াস না। আমি ঠিক ম্যানেজ করে দেব।

আবিদের কিছু হবে না?

কেনো, সেরকম কিছু বুঝছিস নাকি?

আমার আবিদের বউটাকে ঠিক সুবিধার মনে হচ্ছে না।

তুই বার বার এক কথা বলছিস। কেন তোর মনে হচ্ছে বলবি?

তোমাকে ঠিক বলে বোঝাতে পারব না।

আচ্ছা তোর কানে কি এরকম কোনও খবর এসেছে, মেয়েটা আমার গতিবিধির ওপর চব্বিশ ঘণ্টা নজর রাখছে আবিদের মাধ্যমে?

এই তো তুমি ধরে ফেলেছো।

এবার খোলসা করে বল শুনি?

আচ্ছা তোমার সম্বন্ধে ওর বউয়ের এতো ইন্টারেস্ট হবে কেন?

কি করে বলবো!

মেয়েটা তোমাকে অনেকদিন থেকে চেনে। বলতে পারো খুব ছোট সময় থেকে।

এ খবর পেলি কোথা থেকে?

আবিদের মুখ থেকে। আবিদই বলছে তোমাকে রিসেপশনের দিন সারপ্রাইজ দেবে। তোমার পরিচিত মেয়েকে ও বিয়ে করেছে।

হাসলাম। আমার বাড়ির আর সবাই জানে?

মনেহয় জানে না।

তারমানে আবিদের ওখানে কাজ করতে গিয়ে মেয়েটা আমার সম্বন্ধে আবিদকে অনেক কথা বলেছে, যেগুলো সব মিলে গেছে।

হ্যাঁ।

সেই থেকেই আস্তে আস্তে প্রেম।

হ্যাঁ। তুমি যে বাইরে ছিলে তাও মেয়েটা জানে। এমনকি মেয়েটা তোমার বিয়ের আগের ঘটনাও জানে। কনিষ্কদাদের কথাও বলেছে আবিদকে। যেন তুমি এবং তোমার সার্কিটের সবাই ওর কতো আপনজন।

তারমানে তুই বলতে চাইছিস আবিদকে ও ফাঁসিয়েছে?

একদম ঠিক কথা।

তুই আগে এসব জানতিস?

ভাষা ভাষা। বন্ধুর বউ হিসাবে যতটুকু জানার দরকার।

শুনেছি আবিদের শ্বশুররা খুব বনেদী লোক?

একদম ভুল কথা। মেয়েটা ওই ভদ্রলোকের কাছে নিজের মেয়ের মতো থাকতো। তবে ছোটো থেকে নয়। কৃষ্ণনগর থেকে যখন কলকাতায় এলো তখন থেকে। ভদ্রলোকের সঙ্গে ফাদারের খুব ভালো রিলেশন।

পাক্কা খবর?

তুমি আমার কথা বিশ্বাস করে এগোতে পার।

কৃষ্ণনগরের কোনও খবর বার করতে পেরেছিস।

না। তবে উসমান বলে একজন ভদ্রলোক এদের দেখভাল করতো। বলতে পারো ওই ভদ্রলোক এদের পালক পিতা।

তুই এক কাজ করতে পারবি?

বলো।

কাল পক্কে আর ঘণ্টাকে তুলে নিয়ে গিয়ে তোর ডেরায় রাখ। আমি না বলা পর্যন্ত ছাড়বি না। খুব সাবধান কাকপক্ষী যেন টের না পায়। আর একটা কথা, ওদের যেন কোনও অসুবিধে না হয়।

সে তুমি বললে এখুনি তুলে নিয়ে চলে আসবো।

এখন নয় কাল অফিসে যখন বেরবে সেই সময় রাস্তা থেকে তুলবি।

আচ্ছা।

প্রয়োজন পরলে ফোন করবি।

ঠিক আছে।

চিনাকে ছেড়ে দিয়ে, অর্ককে ফোনে ধরলাম।

কোথায় আছিস?

অফিসে। এই কপি লিখে উঠলাম।

কাল কি কাজ আছে?

সকাল থেকে তোমার বাড়ি, ওখানে আবিদদার বৌভাত পেট পুরে খেঁটন।

হাসলাম।

দময়ন্তী কোথায়?

ওর জায়গায়।

ঠিক ঠাক কাজ করছে?

একবারে। পাক্কা।

বেটির সঙ্গে কথাই বলা হয় না।

হঠাৎ তুমি দময়ন্তীকে নিয়ে পরলে কেন বলো?

কি জানি মেয়েটার মুখটা হঠাৎ মনে পড়ে গেল।

সেদিন খুব মন খারাপ করছিল।

কেন?

তুমি একবারে ওর কোনও খোঁজ খবর নাও না।

সত্যি এটা আমার বদ অভ্যাস। ঠিক আছে ওকে বলিস কালকে আসতে দেখা হবে।

যাবে না।

কেন!

সে কি করে বলবো। যে টুকু জেনেছি তোমাকে বললাম।

তুই ব্যাটা বহুত ধরিবাজ, জানিস অথচ বলবি না।

আবিদদার বউয়ের সঙ্গে ওর একটু মন কষাকষি হয়েছে।

আবিদের বউয়ের সঙ্গে ওর পরিচয় হলো কি করে?

আহা তুমি যেন জানো না। ন্যাকামো করো না তো। আবিদদার বউকে ওখানে কাজটা কে জুটিয়ে দিয়ছিল। ওইই তো?

তাই নাকি!

দ্যাখো ন্যাকামো করবে না। তোমার কাছে এ খবর নেই এটা বিশ্বাস করি না।

ঠিক আছে দময়ন্তীকে বলিস আমি ওকে নেমন্তন্ন করলাম। ও যেন কাল আসে।

তুমি বলে দাও।

সত্যি কথা বলবো—

বলো।

একটু অসুবিধে আছে। এটা আবার তুই যেন বলিস না।

কেমন যেন গন্ধ গন্ধ লাগছে?

হতে পারে।

অপেক্ষা করতে হবে?

হাসলাম।

রাখিরে কাল দেখা হবে।

এখন গুডনাইট করবো, না রাতে আবার ফোন করবে?

ব্যাটা মাথায় বহুত বুদ্ধি ধরতে শিখেছিস মনে হচ্ছে…।

তোমার পাল্লায় পরলে ছাগলের মাথাতেও বুদ্ধি জন্মাবে।

ফোনটা বন্ধ করে একটা সিগারেট ধরালাম। কিছুতেই অঙ্ক মেলাতে পারছি না। একটা ফিগার সব সময় ইনভিজিবিল থেকে যাচ্ছে। সেইই সমস্ত ব্যাপারটা অপারেট করছে। বাকি সব পুতুল। ধরা খেয়েও সে ধরা দিচ্ছে না।

উসমানকে একটা ফোন করি। কাল আমার ডেটলাইন। লেখাটা আমাকে এডিটরের কাছে সাবমিট করতে হবেই। গত সাতটা দিন একটা মেয়ে আমার মাথাটাকে চিবিয়ে একবারে ছাতু বানিয়ে দিচ্ছে।

দোনো মনো করে উসমানকে ফোনে ধরলাম।

হ্যালো।

আচ্ছা তোমার ফোন সব সময় বন্ধ থাকে কেন বলো?

কেন, কি হয়েছে!

নাসরিন এসেছিল।

কখন!

এই তো ঘণ্টা দুয়েক হলো কলকাতায় ফিরে গেল।

ইস।

ইস করলে হবে।

তুই কিছু বলিস নি?

ঝেড়ে কাপর পড়িয়ে দিয়েছি। হাত-পা গজিয়েছে না।

কি করতে গেছিল?

মাইনে পেলে মাসে মাসে এখানে এসে ফাদারের হাতে কিছু টাকা দেয় তারপর সব খরচ করে।

তোকে কিছু দেয় নি?

হ্যাঁ।

কি দিলো?

আমার হাত খরচ। একবারে তোমার সব গুণ পেয়েছে।

কি করে বুঝলি?

এতো বললাম, চুপ করে শুনে গেল, একটা কথাও মুখ থেকে বেরোল না।

আমার টকার কথা কিছু বলিস নি?

ফাদারের সামনেই ধমকালো। তোমাকে কতোবার বলেছি যার টাকা তাকে ফেরত দিয়ে দাও।

ফাদার কিছু বলে নি?

হাসছে।

একা গেছিল?

হ্যাঁ, ও দুটোর নাকি কি কাজ আছে।

কিসের কাজ?

কাল নাসরিনের বৌভাত তার আয়োজন হচ্ছে।

নাসরিনকে কেমন দেখতে লাগছে রে?

দেমাকে পা মাটিতে পড়ছে না।

তোকে দেখাল বুঝি?

ঠাট্টা করছো।

হাসলাম। শোন—

বলো।

কাল আমি যাব। তুই ব্যাঙ্কের মোড়ে থাকবি। ফাদারকে থাকতে বলবি।

ফাদার কাল কলকাতা যাবে।

এখুনি গিয়ে ফাদারকে বল, আমি যাব। সেরকম হলে ফাদার আমার সঙ্গে কলকাতা আসবে।

ঠিক আছে, ফাদারের সঙ্গে কথা বলে তোমাকে পড়ে জানাচ্ছি।

জানাতে হবে না। আমি যাব।

ফোনটা পকেটে রাখলাম।

সিগারেট বার করে ধরালাম। আপন মনে লনে পায়চারি করছি।

বেঙ্গলক্লাব সুন্দরী মেয়ে?

চিনার কথাটা বার বার কানে বাজছে।

তাহলে কি ঘণ্টা, পক্কে প্রেমে পরেছে! পড়তে পারে। ওই রুটে এই মুহূর্তে কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না।

অসীম পার্ক হোটেলের ম্যানেজারের পোস্টে কাজ করে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। হয়তো ভুলেই গেছে। কবে সুজিতদার ওখানে যেতাম সুজিতদা মাঝে মাঝে পার্কে প্রোগ্রাম করতো সেই সূত্রে আলাপ। ঘনিষ্ঠতা। এখন আদৌ ওই হোটেলে আছে কিনা কে জানে। ওর ফোন নম্বরও নেই আমার কাছে। সুজিতদার সঙ্গে ভালো আলাপ আছে।

সুজিতদাকে একবার ফোন করলে কেমন হয়। বললেও বলতে পারে।

শালা এরকম সমস্যায় পরিনি কখনও, অন্ধকারে শুধু হাতড়ে বেরাচ্ছি।

সুজিতদাকে ফোন করলাম।

কিরে ব্যাটা হঠাৎ সুজিতদার কথা মনে পড়ে গেলো।

আমার চোদ্দগুষ্টির ভাগ্য আমার নম্বরটা তোমার মোবাইলে সেভ করা আছে।

হ্যাঁরে, তুই তো এখন আপার লেবেলের লোক হয়েগেছিস, লোয়ার লেবেলের সঙ্গে মিশবি কেন?

বহুত বড়ো বড়ো ভাষণ দিচ্ছ।

কেন দেব না। সকালে গেলাম দেখা করার জন্য, বাবু ফ্ল্যাটে গেছেন।

অপেক্ষা করতে পারতে।

দু-ঘণ্টা বসেছিলাম। একটা লোকের সঙ্গে দেখা করার জন্য যথেষ্ট।

এই যে বললে আপার লেবেল?

সুজিতদা হো হো করে হেসে উঠলো।

তারপর বল শরীর কেমন আছে?

চলছে আর কি।

শুনলাম মাঝে নার্সিংহোমে ছিলি?

হ্যাঁ।

আমাকে কেউ খবর-টবর দেয় না।

কে দেবে বলো। সবাই কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত।

তোর মতো ছেলে এইরকম ধস্কে যাবে ভাবতে গেলেই অবাক লাগে।

না না আমি ঠিক আছি।

দাদাকে দেখে ভীষণ ভালো লাগলো।

আমারও। ওখানে না পাঠালে দাদাকে হয়তো ফিরে পেতাম না।

তুই একবারে ঠিক ডিসিসন নিয়েছিলি।

বৌদি কোথায়?

ওদের সঙ্গে একটা নেমন্তন্ন বাড়ি গেছে।

তুমি যাও নি?

আমি পটল সেদ্ধ খাচ্ছি।

কেন সুগার কি এখনও চেক হচ্ছে না?

কমে বাড়ে এই করতে করতে একদিন টেঁসে যাব।

কাল আসছো?

দিদি বলছিল। দেখি দুপুরের দিকে যাব।

আচ্ছা তোমার অসীমকে মনে আছে?

কে বলতো!

ওই যে পার্ক হোটেলের ম্যানেজার।

অসীম ঘোষ?

টাইটেল বলতে পারবো না। নামটা মনে আছে।

ও এখন ম্যানেজার নেই।

তাহলে।

ও এখন ওখানকার অল ইন অল।

তাই নাকি?

হ্যাঁ। ছেলেটা ওর ফিল্ডে একবারে তোর মতো।

যাক তবু আমার মতো একটা ছেলে তুমি খুঁজে পেয়েছো।

অসীমকে দিয়ে কি হবে?

একটা দরকার আছে। আমাকে এখন চিনতে পারবে?

চিনতে পারবে মানে? তোকে বাই নেমে চেনে। আগামী সপ্তাহে আমার একটা প্রোগ্রাম আছে, ব্যাঙ্কোয়েট বুক করলাম। তোর কথা উঠলো।

আমাকে দেখলে এখন চিনতে পারবে না।

সে হয়তো পারবে না।

আমি যদি আমার পরিচয় দিয়ে ওকে ফোন করি ও আমার একটা কাজ করে দিতে পারবে।

কেন পারবে না। আমি এখুনি ওকে ফোন করে দিচ্ছি।

তাই দাও। আর একটা ব্যাপারে একটু হেল্প করো।

বল।

ওর ফোন নম্বর আমার কাছে নেই যদি একটু দাও।

সুজিতদা গড় গড় করে বলে গেলো।

আমি আর একটা ফোনে তুলে নিলাম।

তুমি একটু ফোন করে দাও। আমি মিনিট পাঁচেক পর ফোন করবো।

কাল তাহলে দেখা হচ্ছে। গুড নাইট।

গুড নাইট।

আবার একটা সিগারেট ধরালাম। মিনিট পাঁচেক পর ফোন করতে এনগেজ টোন পেলাম। বুঝলাম সুজিতদা হেজিয়ে চলেছে।

পকেটে ফোনটা রেখে একটু পায়চারি করলাম।

অসীমকে ব্যাপারটা বলা যাবে কিনা বার বার ভাবলাম। তরপর মনে মনে ঠিক করলাম গেম এখন আমার হাতের বাইরে, বলেই দেখা যাক।

পকেটের ফোনটা বেজে উঠলো। ধরলাম।

অসীম মিস কল দেখে রিং ব্যাক করেছে।

অনেকক্ষণ ধরে পুরনো কথাবার্তা হলো। তারপর কাজের কথায় এলাম। ছোট করে সব ব্যাপারটা বললাম। সব শুনে বললো, ছবি দেখাও বলে দিতে পারি। ওদের ক্লাবের সবাইকেই কম বেশি আমি চিনি। আমিই কয়েকজনকে ওখানে চাকরি দিয়েছি। তার মধ্যে তোমার রেফারেন্সে তিনটে মেয়ে আছে।

আমার রেফারেন্স!

কেন অবাক হচ্ছ নাকি?

না অবাক হচ্ছি না।

আমাদের এখানে আবিদ বলে একটি ছেলে আসে। এক্সপোর্ট, ইমপোর্টের ব্যবসা করে। ওইই তো বললো, ওরা তোমার খুব পরিচিত।

আবিদ আপনার কাছে কি করতে যায়?

এই দেখো আর কথা বলা যাবে না।

কেন, আবার কি হলো!

আমি তুমি বলছি তুমি আপনি বলছো।

সরি।

আবিদ আমাদের এখানে কিছু মেটিরিয়াল সাপ্লাই করে। দেবার কোম্পানীর নাম বললো।

তাই!

সুজিতদাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।

ওদের নাম তোমার মনে আছে।

না।

আচ্ছা কাল যদি একজনকে পাঠাই ছবি দেখে বলে দিতে পারবে তার নাম ধাম কি আছে।

কেন কোনও গণ্ডগোল আছে নাকি?

গণ্ডগোল কিছু না মেয়েটা আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে।

বয়স কতো?

পঁচিশ-ছাব্বিশ হবে।

বিবাহিত?

শুনলাম কাল তার বৌভাত।

নেমন্তন্ন করে নি বুঝি?

হ্যাঁ। তাই সারপ্রাইজ ভিজিট দেব।

আবিদকে বলো।

তাহলে হয়েই যেত। নাকটা এতদূর ঘোরাতাম?

ঠিক আছে কাল তুমি ফার্স্ট আওয়ারে কাউকে পাঠাও।

কখন বলো?

আটটা থেকে সাড়ে আটটা।

ব্যাপারটা গোপন রাখতে হবে।

অবশ্যই।

লাইনটা ছেড়ে দিয়েই তুরন্ত আবার চিনাকে ফোন করলাম।

ওকে ভাল করে অসীমের ব্যাপারটা বোঝালাম। সব শুনে বললো, তাহলে আমার অনেক কাজ হয়েই গেল।

শেষে বললাম দুটোর কার সঙ্গে ইন্টুমিন্টু আছে জানাবি।

ফোনটা রেখে দিলাম।

বার বার মনে হচ্ছে কোথায় যেন ভুল করে যাচ্ছি।

নাসরিন-আয়েষা-কাহকসন তিনজন এক মহিলা হতে পারে না। কোথায় যেন জল মিশে আছে—

আরও কয়েকটা ফোন করলাম। একবারে ডাস্ট্রিকট অ্যাকশন। কেমন যেন লাগছে। এখন আর ভাবতে ভালো লাগছে না। ফিরে আসছি। দেখলাম রতন, নেপলা দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

আমাকে দেখে এগিয়ে এলো।

কিগো! বড়োমা বললো তোমার মন মেজাজ খারাপ?

না।

তাহলে ওই অন্ধকারে এতক্ষণ একা একা ছিলে।

যেতে পারতিস।

আমার গলার স্বরটা মনে হয় ঠিক সুরে সুর মিললো না। ওদের কাছে অনেকটা বেসুরো ঠকলো। দু-জনেই চুপ করে আমার মুখের দিকে তাকাল।

রতনের পিঠে হাত রাখলাম।

আমার কিছু হলে তোরা জানবি না এটা হয়?

সবই জানি, তবে অনেক পরে। নেপলা বললো।

কাল সকালে তোকে নিয়ে বেরবো, একটু কাজ আছে। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে আবার ফিরে আসবো। এসে কচুরী খাব। কিরে রতন সকালটা কচুরী দিয়ে স্টার্ট তো?

দাদাভাই সব ব্যবস্থা করছে।

কেন তুই জানিস না?

তোমাকে কালকে একটা বিরাট সারপ্রাইজ দেওয়া হবে। সেই জন্য বলতে বারণ করা হয়েছে।

শুধু আমি জানবো না। সবাই জানবে এই তো?

তুমি আমাদের জন্য এতো করলে আমরা এইটুকু আনন্দ করবো না।

ঠিক আছে তাই হোক। আমার খবর?

কালকের দিনটা যাক তোমাকে পর্শুদিন সব সাবমিট করবো।

নতুন কিছু?

পেয়েছি।

নেপলাবাবু কাল ঠিক পাঁচটা।

তোমার ঘুম ভাঙবে?

না ভাঙলে তুই ডাকবি।

কোথায় যাবে?

গেলেই দেখতে পাবি। তোর পরিচিত জায়গা।

কথা বলতে বলতে তিনজনে বারান্দায় উঠে এলাম। বড়োমাকে বললাম, কিছু খেতে দেবে, বড্ড ঘুম পাচ্ছে।

দেখলাম ওরা সবাই আমার মুখের দিকে কেমন করে তাকাল।

বড়োমা কাঁচুমাচু মুখ করে এগিয়ে এলো।

কিরে তোর শরীর খারাপ লাগছে?

এই পাগলামো শুরু করে দিলে।

জিজ্ঞাসা করছি, রেগে যাচ্ছিস কেন।

চুপ করে থাকলাম।

একবারে খেয়ে ঘুমিয়ে পর।

তাই দাও।

বড়োমা তরিযুত করে খাওয়াতে চাইলো। পারলাম না। অর্ধক খেলাম, অর্ধেক খেলাম না। বুঝলাম বড়োমা মনোক্ষুন্ন হয়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই। উঠে পরলাম। মিত্রার কাছে ওষুধ চেয়ে খেলাম। তারপর নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পরলাম।

মিত্রা, তনু পেছন পেছন এলো বটে কিন্তু কিছু বলার সাহস পেল না।

মেয়ে এখনও বাড়ি ঢোকে নি। সবাই আবিদের ওখানে আছে। আমি ঘুমিয়ে পরলাম।

হঠাৎ ঘুমটা ভাঙতে দেখলাম মিত্রা, তনু দুজনে দুদিক থেকে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। গত তিনদিন আমি সোফায় শুয়েছি। অনেক ঝামেলা করেছে দু-জনে। এমনকী বড়োমার কান পর্যন্ত কথাটা চলে গেছে।

ঘড়ির দিকে তাকালাম, দেখলাম তিনটে দশ।

দুজনে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে আছে নড়াচড়ার শক্তিটুকু আমার নেই। একবার মিত্রার নিঃশ্বাসের শব্দ আর একবার তনুর নিঃশ্বাসের শব্দ কান গরম করে দিচ্ছে। দুজনে অকাতরে ঘুমিয়ে চলেছে।

কি ঘুমরে বাবা?

হাত দুটো কোনওপ্রকারে মাথার তলা থেকে বার করলাম। ঝিঁ ঝিঁ ধরে গেছে।

আমার নড়া চরাতে চিত হয়ে শুলো দু-জনে। আমি কোনও প্রকারে ওদের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হলাম। আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। দু-জনের কোনও হেল-দোল নেই।

একবার মিত্রার মুখের দিকে তাকাই একবার তনুর মুখের দিকে তাকাই। কি প্রশান্তি চোখে মুখে। এক ঘরে বহুদিন শুয়েছি। এক বিছানায় কোনওদিন শুইনি। জীবনে একটা নতুন অভিজ্ঞতা। ভাবলেই কেমন যেন হাসি পেয়ে যাচ্ছে। সবাই সব কিছু জানে তবু যেন কিছুই জানে না ভাব। তাড়িয়ে তাড়িয়ে ওদের পরিতৃপ্ত ঘুমটা উপভোগ করছিলাম।

এক বিছানায় শুয়ে কখনও ওদের সঙ্গে কথা বলিনি। গায়ে হাত দেওয়া দূরের কথা। আমার মনে মনে একটাই ভয় যদি কেউ মেনে না নেয়।

মেয়েরা এই ব্যাপারটা কখনই মন থেকে মেনে নিতে পারে না। এটা আকার ইঙ্গিতে বহুবার ওদের বুঝিয়েছি। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আইনটা ওখান থেকে ফিরে আসার পর মনে হয় বেশ জোরদার হয়েছে। ছেলে-মেয়েও কেমন দেখছি তনুকে ছোটোমা ছোটোমা বলছে। সুন্দর মিত্রাকে বড়োমা বলছে।

দু-জনেরেই নাইটি অনেকটা ওপরে উঠে গেছে। নিরাভরণ পা। বুকের কাছটা অর্গল মুক্ত। আগের থেকে দু-জনেই শরীরের ভার অনেকটা কমিয়ে ফেলেছে। দেখতে বেশ ভালো লাগছে। তনু সব সময়ই শরীর চর্চা করতো। মিত্রা ওখানে গিয়ে সেই বিদ্যেটা ভালো করে রপ্ত করেছে। বয়সের ফারাক দুজনের এমন কিছু নয় খুব বেশি হলে দুই থেকে আড়াই বছর। আমি লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে ওদের শরীর দেখছি। নিজেরই কেমন সঙ্কোচ বোধ হলো।

গায়ের চাদরটা টেনে দিলাম।

আস্তে আস্তে নিচে নামলাম।

ঘরটা আধো অন্ধকার। জিরো পাওয়ারের একটা লাইট জ্বলছে বটে, কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ নয়। বড়ো লাইটটা ইচ্ছে করেই জ্বালালাম না। টেবিলের কাছে গিয়ে ফোনটা তুলে অন করলাম। নেপলাকে ফোন করলাম। কিছুক্ষণ বাজার পর নেপলা ফোনটা ধরলো।

তুমি উঠে পরেছো!

হ্যাঁ।

কটা বাজে?

সাড়ে তিনটে।

পাঁচটায় বেরবে বললে?

রেডি হয়ে নে। কাউকে বলেছিস নাকি?

না। ছোটোমা মনেহয় একটু আঁচ পেয়েছে।

কি করে!

আমাকে আজ সকালে দাদাভাই একটা কাজ ধরাচ্ছিল। রতনদা বললো, ওকে দিও না। ওর কাজ আছে, আমি দিয়েছি।

ঠিক আছে।

ফোনটা স্যুইচ অফ করে টেবিলে রেখে বাথরুমে গেলাম। সব কাজ সেরে যখন টাওয়েল পরে বেরলাম দেখলাম দু-জনে বিছানায় মুরিশুরি দিয়ে বসে আছে।

আমি দাঁত বার করে একটু হাসলাম।

তুই এখন স্নান করলি!

হ্যাঁ বাথরুমের কাজটা একবারে সেরে ফেললাম।

শীত করছে। নিজেই আলমাড়ি খুলে আমার প্যান্ট জামা বার করে নিলাম।

ওরা চেয়ে চেয়ে অবাক হয়ে দেখছে।

আমি ফ্ল্যাট থেকে আনা সেদিনের ফাইল পত্র সব বার করলাম। টেবিল থেকে একটা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে সেগুলো ঢোকালাম।

জামাপ্যান্টটা পড়ে ফেললাম।

মিত্রা তনু দু-জনে এবার উঠে এলো। বুঝলাম ওরা আর ধৈর্য ধরে বসে থাকতে পারলো না।

উঠে এসে জড়িয়ে ধরলো।

কোথায় যাচ্ছিস বল না। তুই কি আমার বিয়ের রিসেপশনের দিন যে কেলোর কীর্তি করেছিলি তাই করতে যাচ্ছিস?

দিদি! তনু আমাকে ছেড়ে দূরে ছিটকে গেলো।

মিত্রা জিভ বার করলো।

দূর, মনেও থাকে না। এই জন্য আমাশা রুগী বলে গালাগাল খেয়ে মরি।

আমি তনুর দিকে তাকালাম। তনু মাথা নিচু করে নিয়েছে।

কাছে এসো।

তনু দাঁড়িয়ে রইলো।

আমি ওর হাত ধরে কাছে আনলাম। দু-জনকেই বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিলাম।

তোমরা দু-জনেই আমার শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে আছ এটা অস্বীকার করতে পারো?

না।

বাঙালি কাস্টমসে এই একটা রীতি আছে গা ছুঁয়ে যে কথা বলা হয়, সেটা সত্যি কথা। এটা তোমরা দুজনেই মানো?

মানি।

আমার গা ছুঁয়ে একটা সত্যি কথা বলবে?

বলো, জানা থাকলে বলবো।

মিত্রা?

তুই বিশ্বাস কর যা জানি তাই বলবো। তুই কষ্ট পাচ্ছিস সহ্য করতে পারছি না।

কি জেনেছো?

নাসরিন ইসলামভাইয়ের মেয়ে।

মিত্রা?

ও আবিদের বউ।

কোথা থেকে জানলি?

তোর ডাইরী চুরি করে বুঁচকি প্রথমে পড়েছিল, তারপর বুঁচকি ওখানে গিয়ে ইসলামভাইকে বলে, তারপরই ইসলামভাই এখানে আসার জন্য ছটফট করে। চলেও আসে। তারপর বুঁচকিকে চেপে ধরতে ও বলে।

কে কে জানে?

সবাই।

ইসলামভাই?

জানে।

কনফার্ম হলি কি করে?

তুই রাগ করবি না। তোর এই মুখ চোখ আগে দেখি নি। ভীষণ ভয় করছে।

তোদের দু-জনের সঙ্গে আমি শারীরিক সম্পর্ক করেছি। তনু মা হতে চেয়েছে, আমি মন থেকে মেনে নিতে পারি নি। তোকে মা হওয়ার সুযোগ দিয়েছি।

তুই যে দিন নার্সিংহোমে বসে ওদের গল্পটা বলেছিলি নীরু সেটা আমাদের শুনিয়েছিল।

কে কে শুনেছিল?

আমি, ছোটোমা, তনু।

রেকর্ড করেছিলি?

করেছিলাম।

আর কাকে কাকে শুনিয়েছিলি?

ডাক্তারদাদা, বড়োমা।

ওদের দুজনের ঠোঁটে একবার করে ঠোঁট ছোঁয়ালাম।

ত্রস্ত হরিণীর মতো দুজনে কাঁপে উঠলো।

হেসে ফেললাম।

তোরা যদি আমাকে ভয় পাস, আমি কার কাছে আশ্রয় নেব বলতে পারিস।

দু-জনেই আমার বুকে মুখ গুঁজে দিল।

কিছুক্ষণ চুপচাপ তিনজনে ওই অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইলাম। ওদের উষ্ণ স্পর্শ আজ আমাকে মাতাল করছে না। তবে এই নতুন অনুভূতি আমার জীবনকে রসসিক্ত করে তুলছে। আমার বন্ধ মনের জানলা-দরজাগুলো একে একে খুলে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।

মিত্রা?

বল। মিত্রা মুখ তুললো না।

আমি তোদের দু-জনকেই ঠকিয়েছি, তাই না।

মিত্রা মুখ তুললো। চোখে বিষ্ময়। তনু তখনও বুকে মুখ গুঁজে রয়েছে। মাথা দুলিয়ে বলছে না না।

মিত্রার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। তনু মুখ তুলেছে।

আমাকে দাও।

তনুর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম।

তোরা আমার পাশে আছিস তবু মাঝে মাঝে নিজেকে ভীষণ একা লাগে। আমি খারাপ-ভালো মানুষ। জীবনে….

তনু মুখে হাত রাখলো।

তোদের কাছে আবিদের বউয়ের ছবি রয়েছে।

দু-জনের কাছেই আছে। ওরা বলে উঠলো।

চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম। দেখব, না দেখব না।

চোখ খুললাম, ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

তুই দেখবি?

দেখা।

দু-জনে আমার হাতের বেষ্টনী থেকে মুক্ত হলো।

টেবিলের ওপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে এলো। আমি ভাল করে ছবিগুলো সব দেখলাম।

বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

ছোটোমা জেনেছে?

জানে। তোকে আজ সারপ্রাইজ দেবে। তুই এতো বড়ো একটা কাজ করেছিস।

আবিদ জানে?

জানে।

চোখ ফেটে জল আসছে। তবু নিজেকে সামলে নিলাম।

আর কি জেনেছিস?

ঘণ্টা, পক্কে তোর দুই পালিত ছেলে। সেই কলেজ লাইফে ওদের দত্তক নিয়েছিলি।

তোরা ওদের খোঁজ পেলি কি করে?

আবিদের ওখানে কাজ করে। খুব ভালো ছেলে। মিত্রা বললো।

নাসরিন বলেছে। তনু বললো।

তোদের সঙ্গে ওদের আলাপ হয়েছে?

না।

দরজায় টোকা মারার শব্দ হলো।

দু-জনেই আমাকে ছেড়ে দিল।

যা দরজা খোল। মিত্রার দিকে তাকালাম।

তুই যা।

চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নে।

আমি এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুললাম। ছোটোমা, নেপলা ঘরের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে।

ছোটোমা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। চোখের পাতা ভাড়ি ভাড়ি।

আমি ছোটোমার দুই কাঁধে হাত রাখলাম। চোখে জিজ্ঞাসা।

ছোটোমা আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

ওরা সবাই বলছে, আমি বিশ্বাস করি না অনি।

মিত্রা, তনুর চোখ যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। হঠাৎ এরকম একটা ঘটনা ঘটে যেতে পারে ওরা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরে আছি।

যদি তাই হতো তাহলে এই তিনদিন তুই নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিতিস না। পাগলের মতো তুই তাকে খুঁজে বেরাচ্ছিস। সে কোথায় হারিয়ে গেছে?

হারায় নি, আছে।

ছোটোমা সমানে কেঁদে চলেছে।

কাল রাতেও তুই অনেকক্ষণ কাদের সঙ্গে কথা বলেছিস, আমি অন্ধকার ঘরে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে সব শুনেছি। শেষে তুই অর্জুনকে কাকে মারার কথা বলেছিস?

ছোটোমা! মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

আমি সারারাত ঘুমোই নি। শুধু অপেক্ষা করেছি তুই কখন বেরবি।

তুমি কেঁদো না, তুমি কাঁদলে আমার ভালো লাগে না।

নেপলা কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। ভাবতে পারেনি সাত সকালে এরকম কিছু ঘটতে পারে। তার ওপর ছোটোমার মতো শক্ত সামর্থ মেয়ে ওরকম ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।

তুই কাল রাতেও ভাল করে খাস নি। বড়দি কষ্ট পেয়ছে। আমি তোর মনের অবস্থা জানি, কাউকে বলতে পারছি না। তুই সত্যি কথা বল?

কেঁদো না, সবাই উঠে পরলে কি ভাববে।

ছোটোমা ফুঁপিয়ে উঠলো।

তুই সত্যি কথা বল, আমার গা ছুঁয়ে।

তুমি আমার মা, তোমাকে মিথ্যে বলতে পারি?

তাহলে বল।

আমি সত্যি কথা বলার জন্য একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি।

তুই সব জানিস।

আমি কখনও বলিনি, আমি জানি না।

তাহলে তুই বলছিস না কেন?

বলেছি না কাঁদবে না। আমি ঘুরে আসি, এসে সব বলবো।

তুই কখন আসবি?

যতো তারাতারি সম্ভব।

আমি তোর পথ চেয়ে বসে থাকবো।

ছোটোমা আমার বুকে মাথা রেখেছে।

তনু, মিত্রা কেমন ভাবে যেন দাঁড়িয়ে। দু-জনেরই চোখ ছল ছলে।

তিন জোড়া চোখের চাহুনিতে আকাশ ভড়া বিষ্ময়। অভাবনীয় কি ঘটনা ওদের চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে। নিজের চোখকেই নিজেরা বিশ্বাস করতে পারছে না।

ছোটোমা। আমি এবার বেরবো।

ছোটোমা আমার বুক থেকে মুখ তুললো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। একরাতেই চোখের কোলে কালি পরে গেছে। চোখের পাতা ভিঁজে গেছে।

আমার একটা কথা রাখবে?

বল।

ব্যাপারটা নিয়ে আর জল ঘোলা করো না। যেমন চলছে চলুক আমাকে ফিরে আসতে দাও।

ছোটোমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কোনও কথা বলছে না।

আমি টেবিলের ওপর থেকে গুছিয়ে রাখা ফাইলের ব্যাগ হাতে নিলাম।

মিত্রা এগিয়ে এসে ওষুধের প্যাকেটটা হাতে দিল।

কিছু খেয়ে, মনে করে খেয়ে নিস।

আমি নেপলা বেরিয়ে এলাম।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/ZQBuymG
via BanglaChoti

Comments