কাজলদিঘী (১২৫ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

১২৫ নং কিস্তি
—————————

তোর দাদুর কাছে আমাকে নিয়ে গেছিল। সেই প্রথম ওদের বাড়িতে গেলাম। সবাইকে দেখলাম। জ্যেঠিমনি বাটিচচ্চড়ি আর লুচি খাইয়েছিল। তোর দাদুর সঙ্গে সেদিন বেশ কিছুক্ষণ কথা বললাম। উনি আমার সঙ্গে আলাদা করে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছিলেন। আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছিলেন, আমি তার যথাযথ উত্তর দিয়েছিলাম। তবে সবই আমার কেরিয়ার সম্বন্ধে। এখন ঠিক ঠিক মনেও নেই।

তখনও তুমি কিছু ধরতে পারো নি?

না। আমার এক ভাল বান্ধবীর বাড়িতে গেছি। ফেরার সময় তোর দাদু বলেছিলেন আবার আসবে। আমি মাথা দুলিয়েছিলাম। সবাইকে প্রণাম করে বেরিয়ে এসেছিলাম। তোর মা আমাকে শ্যামবাজার বাটা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। আমি হস্টেলে চলে এলাম।

কবে তুমি প্রথম অনুভব করলে?

তোর মা কখনও আমাকে অনি বলে ডাকত না। বুবুন বলতো।

কেন!

ওই নামে আমাকে আমার মা, বাবা ডাকতো। কাকার মুখ থেকে শুনেছিলাম। তারপর নামটা আমার জীবন থেকে কেমন ভাবে যেন হারিয়ে গেল।

তখন আমাদের থার্ড ইয়ার চলছে। একদিন অফ প্রিয়েডে তোর মায়ের জেদাজিদিতে দু-জনে হেঁদুয়াতে গিয়ে বসলাম। বলতে পারিস ওইই জোড় করে নিয়ে গেল। আমি তখন লাইব্রেরীরুমে ছিলাম। ও বাদাম কিনলো। কথায় কথায় ও জিজ্ঞাসা করলো, অনি তোর কোনও ডাক নাম নেই। তখন ওকে আমার সব কথা বললাম। সেদিন ও প্রথম জানলো এই পৃথিবীতে আমি একা। আমার কথা শোনার পর, ওর মনট খুব খারাপ হয়েগেছিল। ওর চোখটা ছলছল করে উঠলো, ওকে বোঝালাম। সবার যে মা-বাবা থাকতে হবে সেটার কি মানে আছে।

তারপর থেকে ও আমাকে বুবুন বলে ডাকতো। তখন তোর মার সঙ্গে সময়টা একটু বেশি কাটতো। থার্ড ইয়ার মানে পাশের ক্লাস নেই শুধু অনার্সের ক্লাস। তাও কুড়ি জনের মধ্যে আট জনের অনার্স আছে, বাকি সকলের অনার্স কেটে গেছে। বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী কলেজে আসতো না, আমরা গুটি কয়েক ছাড়া। বলতে পারিস কম বেশি সকলেই ইরেগুলার। অনার্স টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাইভেটে যে যার প্রফেসারদের কাছে পড়ছে। ক্লাসে যে দুজন রেগুলার তারা হচ্ছে তোর মা আর আমি।

ফলে এই সময়ে তোর মার সঙ্গে হৃদ্যতা একটু বেশিই হয়ে পরে। একটা মেয়ে সবসময় পাশে থাকলে যা হয়, আমারও একটু একটু করে পিপুল পাকতে শুরু করলো। তখন তোর মা একদিন না এলে নিজেকে খুব দিশেহারা লাগতো। মনে হতো কেউ যেন আমার পাশে নেই। ফাঁকা ফাঁকা লাগছে চারদিকটা। ওই সময়ে আমরা দু-জনে চুটিয়ে ইন্টার কলেজ ফেস্ট কম্পিটিসনে অনেক প্রোগ্রামও করেছি।

কচ-দেবযানী?

হ্যাঁ।

ডুয়েটে?

হাসলাম।

শ্রুতিনাটক?

হ্যাঁ।

এটাই বা বাছলে কেন?

তোর মা বেছেছিল। তার ওপর ওটা আমাদের পাঠ্য-সূচির মধ্যে ছিল।

শুনেছি তুমি মাকে ট্রেনিং দিতে?

ঠিক তা নয়। আমরা দু-জনে দু-জনের ভুল ধরতাম।

সেই সময় প্রচুর প্রাইজ পেয়েছিলে?

হ্যাঁ।

বিয়ের পর বৌভাতের দিন এটা করেছিলে?

তোকে কে বললো!

মিলি মনির কাছ থেকে ক্লিপিংসটা নিয়ে দেখেছি।

হাসলাম।

তারপর।

কলেজে সেই সময় শ্রুতিনাটকের জন্য আমাদের দুজনের বেশ নামডাক ছিল। অন্যান্য কলেজেও আমাদের আমন্ত্রণ জানান হতো এই শ্রুতিনাটকটা করার জন্য। কনিষ্কদের কলেজের ফেস্টে একবার আমরা এটা করেছিলাম। মনে হয় তখন থার্ড ইয়ার। আমরা দু-জনে প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম। সেই প্রথম কনিষ্করা তোর মাকে দেখলো। মৈনাক আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। আমরা ওদের ক্যান্টিনে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলাম।

প্রথম কবে সিনেমা দেখতে গেলে?

ওরে বদমাশ মেয়ে, তোর পেটে পেটে এতো বুদ্ধি।

বলো না প্লিজ বাবা বলো।

দিলাম মেয়ের পিঠে আলতো করে একটা ঘুসি।

প্লিজ বাবা।

মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপর লুটোপুটি খাওয়া শুরু করলো।

মার কাছ থেকে জেনে নিবি। আমার এখন ঘুম পাচ্ছে।

পাশ ফিরে শুলম।

বলবে না।

মাথা দোলালাম।

ঘেঁচু, আমি সব জানি মা আমাকে বলেছে।

আমি বালিশটা মুখের ওপর চাপা দিয়ে শুয়ে পরলাম।

আজ অনিমেষদা, বৌদি, মেয়ে লণ্ডন যাচ্ছে। সকাল থেকে সাজো সাজো রব। ওদের তুলে দিতে দমদম এয়ার পোর্টে গেলাম। দুপুর একটায় প্লেন।

বৌদি গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বারবার বললো, সাবধানে থাকবি। গোঁয়ার্তুমি করবি না। দাদার টেনশন বাড়াবি না।

আমি মাথা দুলিয়ে বললাম ঠিক আছে।

মেয়ে বললো, ওষুধটা মনে করে খাবে। বার বার দামিনীমাসিকে বললো। মাসিদিদা বাবা কথা না শুনলে কান মুলে দেবে। বেশি দুষ্টুমি করলে হাত-পা বেঁধে ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখে দেবে।

দামিনীমাসি হাসছে।

ইসিমনি তুমি কিন্তু দিদাইকে নিয়ে প্রতিদিন একবার আসবে। মশাই আর পিকুদাকে বলবে, বাবাকে যেন কোনও কাজ করতে না দেয়।

ইসি হাসছে। একবারে পাকা বুড়ী হয়ে গেছিস।

ওরা লাউঞ্জের ভেতরে চলে গেল।

আমরা সকলে দোতলার লাউঞ্জে উঠে এলাম।

বেশ কিছুক্ষণ পর দেখলাম প্লেনটা আস্তে আস্তে ডানা মেলে আকাশে উড়ে গেল তারপর ধীরে ধীরে পেঁজা পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম ওদিক পানে, যদি দেখতে পাই। আর দেখতে পেলাম না। মনটা খারাপ হয়ে গেল।

আমার নিজের বলতে এই পৃথিবীতে তিনজন। তিনজনই আজ আমার পাশে নেই।

অনুপদা হাতটা ধরে বললো, চল।

তোমরা ফিরে যাও, আমি একটু অফিসে যাই। অনেকদিন যাই নি।

আজ থাক, কাল যাস।

বাড়িতে বসেই বা কি করবো বলো, একটু অফিসে যাই।

আবিদ তোর সঙ্গে থাকবে, ও ছাড়া তুই একপাও নড়তে পারবি না।

আবিদের নিজস্ব কিছু কাজ কর্ম আছে, ওরও তো নিজের ব্যবসা দেখাশুনো করতে হয়।

ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।

বাবাঃ অনিমেষদা কি তোমাদের সব ফিট করে রেখে গেলো।

অনুপদা আমার কথা শুনে হেসে ফেললো।

তুমি এলে, রূপায়ণদা এলো না।

পুরুলিয়া গেছে।

বিধানদা।

অফিসে।

আর একজন তো মুখ্যমন্ত্রী, তাকে ছোঁয়া যাবে না। কতো প্রটোকল মেইনটেন করতে হয়।

ফোন সব সময় খোলা রাখবি। একবারে বন্ধ করবি না। অনুপদার ধমকের সুর।

তুমি বডিগার্ড দিয়ে দিলে। আমার বন্ধ থাকলে তারটা খোলা থাকবে।

অনুপদা আমার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকাল।

যা অফিসে যা, মন ভালো হয়ে যাবে। আমি এখান থেকে একটু বারাসাত যাব।

যাও।

রতনের গাড়িতে ইসি, মাসি, সুরোরা উঠলো। আমি আবিদের গাড়িতে উঠলাম।

অফিসের সামনে এসে যখন গাড়ি থেকে নামলাম তখন ভরা দুপুর।

চারদিকে লোক থই থই।

কতদিন পর আমি অফিসের সামনে গাড়ি থেকে নামলাম মনে করতে পারছি না। প্রায় সময়েই আমি বড়ো রাস্তায় নেমে এইটুকু হেঁটে আসতাম। এখনও কেমন সংকোচ বোধ হয় আমার। সত্যি আমি যোগ্য কিনা। আজ এই অফিসে আমি একা, নিকট বন্ধন বলতে কেউ নেই।

গেটের কাছে আসতেই রবীন এসে দাঁড়াল।

দাদা শরীর কেমন আছে—

ভালো। তুই কেমন আছিস?

ভালো আছি দাদা।

ওই বাড়ির সব ঠিক আছে?

হ্যাঁ দাদা।

আমার পেছন পেছন এসে গেটটা খুলে দিল।

সুবলদের কাউকেই আশেপাশে দেখতে পেলাম না।

ভেতরে আসতেই রিসেপসনিস্ট কাউন্টার থেকে পিউ উঠে দাঁড়াল।

গুড আফটারনুন স্যার।

হাসলাম।

ভালো আছো?

হ্যাঁ স্যার।

মা ভালো আছেন?

পিউ মাথা দোলালো।

পিউ রিসেপসনিস্ট কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসেছে। ভিজিটার যারা বসে আছেন, তারা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

রবীন একবার ওই বাড়িতে যাব বিকেলের দিকে।

ঠিক আছে দাদা। আমি নীচে আছি।

পিউ লিফ্ট বক্স পর্যন্ত এগিয়ে এলো।

যাও, সামনে অনেকে বসে আছেন, আমি চলে যেতে পারবো।

পিউ হেসে ফেললো।

আমি ওপরে উঠে এলাম। মিত্রার ঘরের কাছে হরিদার ছেলেটা বসে আছে। দেখে উঠে দাঁড়াল।

কেউ ভেতরে আছে?

হ্যাঁ স্যার।

কে?

বরুণ স্যার আর হিমাংশু স্যার।

দাদার ঘরটা একটু খুলে দে।

দিচ্ছি স্যার।

আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। ও পাশের ঘর থেকে চাবির তোরাটা নিয়ে এসে দাদার ঘরটা খুলে। লাইট জ্বেলেদিল।

আমাকে একটু চা খাওয়াতে পারবি।

ছেলেটি হেসে ফেললো।

যা তারাতারি নিয়ে আয়। বাবা কেমন আছে?

ভালো আছে স্যার।

হাঁটা হাঁটি করছে?

বিকেলের দিকে একটু বাড়ির পাশে একটা পার্কে গিয়ে বসে।

দেখবি যেন প্রতিদিন হাঁটা হাঁটি করে।

হরিদার ছেলে মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেল।

আমি দাদার পাশের চেয়রটায় গিয়ে বসলাম।

কিছুতেই মনটা কনসেনট্রেট করতে পারছি না।

বার বার দাদার চেয়ারটার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। শূন্য চেয়রটা টাওয়েলে ঢাকা।

যে চেয়ারটায় মল্লিকদা প্রায়ই এসে বসতো সেই চেয়রটাও টাওয়েলে মোড়া।

একবার দাদার চেয়ারটা ছুঁলাম। গন্ধ শোঁকার চেষ্টা করলাম। হ্যাঁ দাদার গায়ের গন্ধ যেন পাচ্ছি।

চোখের সামনে ভেসে উঠলো, দাদা চেয়ারে বসে আছে, আমার সঙ্গে কত কথা বলছে। একা ঘরে নিজের মধ্যে নিজে ডুব মারলাম।

কিগো একা ঘরে বসে বসে কি করছো।

ছিদাম দরজা খুলে ঢুকলো।

ঘুরে এসে টেবিলের ওপর চায়ার কাপ রেখে প্রণাম করলো।

থাক থাক।

কতদিন পর অফিসে এলে।

গলাটা ভাড়ি হয়ে গেলো।

ভালোলাগলো না বুঝলি, তাই চলে এলাম।

তুমি চা খাও, আমি গিয়ে ওদের খবর দিই। তুমি এসেছো, এখনও কেউ জানে না।

পরে বলিস। এখন একটু একা থাকি।

কি হয়েছে বলো!

কিছু হয় নি। কেমন যেন লাগছে। এদিককার খবর সব ঠিক আছে?

সমস্যা আছে, যাওয়ার সময় বলবো।

আবার কি সমস্যা হলো?

বললাম তো যাওয়ার সময় বলবো। তুমি এখন এই ঘরেই থাকবে?

ভালো না লাগলে তোর কাছে চলে যেতে পারি।

নিশ্চই, তোমার কিছু একটা হয়েছে?

না-রে আমি ঠিক আছি।

তোমার বিস্কুট পাই নি, তাই অন্য বিস্কুট নিয়ে এসেছি।

ঠিক আছে।

ছিদাম চলে গেল।

দাদার টেবিলের একপাশে, নিউজ প্রিন্টের প্যাডটা টেনে নিলাম।

চায়ে চুমুক দিলাম।

পেনদানী থেকে একটা পেন নিলাম।

কি লিখি কেন লিখি, লিখতে শুরু করলাম।

সারাটা ঘরের নিস্তব্ধতা আমাকে ধীর ধীরে গ্রাস করলো। আমি আমার মনের গহীন অন্ধকারে ডুব মারলাম, যেখানে আমি সচরাচর ঢুকি না, এক কথায় ঢুকতে সাহস হয় না। যখন নিজেকে খুব একা একা মনে হয় তখন আমি তার মুখোমুখি দাঁড়াই। নিজেকে নিজে যাচাই করার পালা শুরু হয়ে যায়। কাটা-ছেঁড়া, তর্কা-তর্কি নিজের সঙ্গে নিজে। আমি লিখতে শুরু করলাম। কতক্ষণ লিখেছি জানি না। তবে তখনও লেখাটা শেষ করে উঠতে পারি নি। এক নিঃশ্বাসে লিখে চলেছিলাম।

সত্যি তুমি একটা আজব মানুষ তো?

মুখ তুলে তাকালাম।

দেখলাম হিমাংশু, বরুণদা সামনের চেয়ারে এসে বসলো।

হাসলাম।

ইসি ফোন না করলে জানতেই পারতাম না, তুমি এসেছো।

কেন হরিদার ছেলেটা জানে।

ধ্যুস ওটা একটা গাধা। কতোবার চা আনলো, কতোবার ভেতরে গেল। একবারও বলে নি তুমি এসেছো।

তোমাদের কাজ শেষ হলে হয়তো বলতো।

দাদার টেবিলে রাখা ফোনটা কাছে টেনে নিল।

খেয়েছো?

হ্যাঁ খেয়েদেয়ে বেরিয়েছি।

সে তো সেই সাত সকালে। মেয়ে খাইয়ে-দাইয়ে বেরিয়েছে।

খিদে পায় নি।

কে ছিদাম….দাদাকে চা দিয়ে গেছিস, দাদা খেয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করেছিস….আচ্ছা আয়।

লাইনটা কেটে আবার ডায়াল করলো।

মিলি…. তোমাদের অনিদা যে অফিসে এসেছে সে খবরটা অন্ততঃ রাখো…. জোড়ে হাসলো।

ফোনটা রেখে আমার দিকে তাকাল।

দেখো শুধু আমি নয় এই অফিসের কেউ জানে না। তুমি এসেছো।

হাসলাম।

তোমাদের কাজ শেষ হয়েছে?

আগে বলো, তোমার চোখমুখটা কেন শুকনো শুকনো লাগছে?

তুমি ভুল দেখছো।

বরুণদা, হিমাংশুর দিকে তাকাল।

হিমাংশু তুমি বলো।

সবাই চলে গেলো। বড্ড একা একা লাগছে, তাই।

আমি হাসলাম।

আমি ঠিক বললাম কিনা বল। হিমাংশু বললো।

না সেরকম কিছু নয়। মাঝে মাঝে আমার এরকম হয়।

এটা আজকের নয়, অনেকের দিন রোগ, এই রোগের ট্রিটমেন্ট নেই, তাই না?

হিমাংশু কথাটা বলেই আমার চোখে চোখ রাখলো।

হুরুম-দুরুম করে সবাই নাচতে নাচতে ঘরে এসে হাজির হলো। কার কথা না বলবো।

ঘর ভড়ে গেলো।

টিনা ধমকে উঠলো, কি খাওয়া হয়েছে শুনি?

টিনাদি বলে কোনও লাভ আছে, আনন্দে পাঠিয়ে দাও ধোঁসা নিয়ে চলে আসুক। অর্ক বললো।

অরিত্র আমার লেখা কাগজ গুলো ওলটাতে শুরু করেছে।

ওরে অর্ক, তাই বলি এতো নিস্তব্ধে কি করছে!

কি-রে ওটা!

আমাদের খাবার।

অর্ক এগিয়ে এলো।

হরিদার ছেলে দরজা খুলে উঁকি মেরেছে। টিনা, মিলি এগিয়ে গেলো।

বরুণদা তোমারটাও আনতে দিচ্ছি। মিলি চেঁচালো।

তোমার ইসিদি এবার আমাকে মারবে।

টিফিন বাক্স খালি করে দেব, চিন্তা নেই।

আমি একা নাকি।

না না সবার জন্য। অর্ক, সন্দীপদাকে, দ্বীপায়নদাকে একবার ফোন করে দে পনেরো মিনিট পর আসার জন্য।

তুমি দাঁড়াও আগে লেখাটা পড়ি।

পরে পড়বি।

আমি শুধু ওদের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছি।

মিলি অরিত্রকে ঠেলে দিয়ে পাশে এসে দাঁড়াল।

আমার কপালে হাত দিল। আমার হাতের চেটোটায় হাত দিল।

চোখটা কেমন ছল ছল করছে। কি হয়েছে?

কিছু হয় নি। আমি বেশ সুস্থ।

বরুণদা হাসছে।

বরুণদা হাসছেন কেন?

শুধু তোমার চোখে নয় ,আমাদেরও চোখে পড়েছে।

এবার টিনা এগিয়ে এলো।

না না জ্বর-টর আসে নি। চোখটা একটু ছল ছল করছে। মিলি বললো।

তুমি পাঞ্জাবী পড়ে বেরিয়েছ কেন, তোমার প্যান্ট গেঞ্জি নেই। টিনা বললো।

মহা মুস্কিল, তোমরা কি জোর করে আমার শরীর খারাপ করাবে নাকি।

তোমাকে নিয়ে আমাদের বেজায় ভয়।

অর্ক, অরিত্র লেখার মধ্যে ডুবে গেছে। এদের কোনও কথা ওদের কানে ঢুকছে না।

ছিদাম ঢুকলো, পেছন পেছন অদিতি, নির্মাল্য, দেবাশিস।

তোরা দু-জন ওখানে কি করছিস? অদিতি, মিলিদের দিকে তাকাল।

চোখটা একবার লক্ষ্য করে দেখ।

একটু লালচে লালচে দেখাচ্ছে। শরীর খারাপ!

অদিতি আমার দিকে তাকিয়ে।

তোমার চশমা কোথায়?

নিয়ে আসতে ভুলে গেছি।

চশমা ছাড়া লিখছিলে! মিলি বললো।

একটু অসুবিধে হয় তবে লিখতে পারি।

তোমাকে নিয়ে যে কি করি। এখন ভাবি কেন মিত্রাদি তোমার ওপর খেপে যেত।

অদিতি টেবিলটা ঘুরে এসে আমার কাছে দাঁড়াল।

কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার এসেছে কিনা দেখেছিলি। অদিতি, মিলির দিকে তাকাল।

দেখেছি।

তবু অদিতি আমার কপালে হাত ঠেকাল।

আরে বাবা সত্যি বলছি আমি ঠিক আছি।

ঠিক থাকলেই ভালো।

দেবা, নির্মাল্য আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

সকালবেলা ওষুধ খেয়েছিলে? অদিতি বললো।

মেয়ে খাইয়ে গেছে।

অর্ক ঝুপ করে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে ফেললো।

এটা কি হলো! মিলি বললো।

মিলিদি চেষ্টা করলেও জীবনে এই লেখা লিখতে পারবো না।

কি লেখা!

বলতে পারো অনিদার জীবনের একটা জার্নি সকলের সঙ্গে শেয়ার করছে।

আমার বুকটায় হাত দিয়ে একটু ডলে দিল।

ভাষা ভাষা চোখে সামান্য জল টল টল করছে।

আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।

তোমার অনেক লেখা পড়েছি অনিদা, এতটা মন খারাপ কখনও হয় নি।

অরিত্র দেখলাম মাথা নিচু করে বসে।

তোমার বুকে এত ব্যাথা। কই দেখলে বোঝা যায় না। শেষ করো। কালই বেরবে।

দূর পাগল আমি বস্তুবাদে বিশ্বাসী ভাববাদে নয়।

বস্তুবাদে বিশ্বাসী মানুষের হাত গলে এ ধরনের লেখা বেরতে পারে না। আমি একবারে দুধের শিশু নই। আচ্ছা আমার নয় মন খারাপ হয়েছে, স্বীকার করলাম, অরিত্রকে জিজ্ঞাসা করো।

তোরা দুটোই পাগল।

সবাই কেমন ভাবে যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে।

মিলি, অদিতি, টিনার চোখে বিষ্ময়ের কাজল।

সন্দীপ, সুমন্ত, দ্বীপায়ণ ঘরে ঢুকলো, হরিদার ছেলেটা একবার মুখ বারিয়ে টিনাকে ডাকল।

ওরা তিনজন বেরিয়ে গেল।

ছিদাম সকলকে চা দিয়েছে। খাওয়া চলছে।

ছিদাম আধঘণ্টা পর আর একবার দেবে। বরুণদা বললো।

খাবার ভেতরে এলো। টিনা একটা ধোঁসা ছিদামকে দিল।

ছিদাম না না করছে।

একবারে ঝামেলা করবি না, এখানে দাঁড়িয়ে তুই হরিদার ছেলে হাফ হাফ খেয়ে নে।

ছিদাম তবু দাঁড়িয়ে রইলো।

আমরা সবাই খাচ্ছি। যা এসেছে সব ভাগাভাগি করে খাব। শুধু অনিদা একটা গোটা খাবে।

তুমি দাদাকে আগে দাও।

দিচ্ছি তো। অনিদাকে না দিয়ে আমরা কেউ খাবো না।

ছিদাম হাতে নিয়ে হরিদার ছেলেটাকে ডাকলো।

খেতে খেতে অফিসের খোঁজ খবর নিলাম।

সব ঠিক ঠাক চলছে। সবার মুখ থেকে সেই কথাই বেরিয়ে এলো।

বিতান আর টিয়া এলো। ওরাও খাবারের ভাগ পেল। অতোবড়ো ধোসা আমার একার পক্ষে খাওয়া সম্ভব হলো না। যতোটা পারলাম খেলাম বাকিটা মিলি, টিনা ভাগ করলো। অদিতি পেল না।

আমি যে স্বপ্ন দেখেছিলাম কাগজকে নিয়ে, আজ মনে হয় তার কিছুটা সফল হয়েছে। একটা পরিবার। হোক না সেটা আলাদা আলাদা। তবু সেটা পরিবার। বেশ ভালো লাগছে।

অনিদা, টিনাদি আমাকে গাড্ডায় ফেলছে। বিতান নালিশ করলো।

তোকে আরও বেশি ফেলবো। বেশি বড়বড় করলে সব বলে দেব।

প্লিজ টিনাদি, কাজ করলে ভুল হয়, কাজ না করলে কখনও ভুল ধরতে পারবে।

তাহলে অনিদাকে লাগাচ্ছিস কেন।

তুমি কাজের বাইরে কাজ দিচ্ছ।

আরও দেব, তোর বউ করে কি করে। কই সে তো বরুণদাকে নালিশ করতে যায় না।

এই তুমি হ্যাজাতে আরম্ভ করলে।

একবারে চুপ থাকবি।

সন্দীপ, সায়ন্তন লেখায় মনোযোগ দিয়েছে।

মিলি এ্যাডের খবর কি?

তোমার থিওরি এ্যাপ্লাই করে টোয়েন্টি পার্সেন্ট বাড়াতে পেরেছি।

টিনা তোমার কাগজের কিছু উপকার হয়েছে।

হবে না মানে। এখন বিতান আর পিকু কাগজ কিনতে যায়। ওটাই নাকি ওর এক্সট্রা কাজ।

মাইনে বেশি চাইছে।

বিতান জিভ বার করেছে, টিয়া হাসছে।

দেবা আমরা যে এ্যাড এজেন্সিটা করেছিলাম ওটার কি খবর?

আমি আর টানতে পারছিলাম না। শেষ মেষ অদিতিকে দায়িত্ব দিয়েছি। ওর কাছ থেকে খবর পাবি।

হিমাংশু হাসছে।

তুই হাসছিস কেন? আমি হিমাংশুর দিকে তাকালাম।

অদিতি ম্যাডামের ওটাও বার্ডেন।

ভালো লোক নাও—অদিতির দিকে তাকালাম।

কোথায় বসাবি! হিমাংশু বললো।

ওরা যখন টানতে পারছে না। লোক নিতে হবে, কাজের সেগ্রিগেসন করে দিতে হবে।

প্রাণ ধরে কেউ জায়গা ছাড়বে।

অদিতি হাসছে।

না গো অনিদা আমার কোনও কষ্ট নেই।

নির্মাল্য কিছুটা হেল্প করতে পারে তোমায়।

নির্মাল্য! অদিতি বলে উঠলো।

কেন ও তো ওই স্ফেয়ার থেকেই এসেছে।

মুতে নাম লিখতে বলো। মিলি বলে উঠলো।

মিলিদি খারাপ হয়ে যাবে। আমাকে প্রাণ ধরে দিয়ে দেখেছো।

আজকেই তোকে তিনটে ফাইল দেব। সল্‌ভ করে দিবি। অদিতি বললো।

ঠিক আছে দিও, করে দিতে পারি কিনা দেখবে।

মিলির ফোনটা বেজে উঠলো। নম্বরটা দেখেই বললো, দাঁড়া বুঁচকির ফোন।

মিলি ভয়েজ অন করেছে।

বল।

বাবা কোথায় বলো?

খুঁজে পাচ্ছিস না—

কতোবার বললাম ফোনটা বন্ধ করবে না। সেই স্যুইচ অফ।

ধরে মারতে পারিস না।

মাসিদিদা বললো বাবা অফিসে গেছে। বাবাকে একবার খুঁজে দাও না।

তোর বাবা তোর কথা শুনতে পাচ্ছে।

তোমার কাছে আছে!

আমরা সবাই দুদুনের ঘরে তোর বাবাকে পাহাড়া দিচ্ছি।

বাবা খেয়েছো?

কথা বলো।

আমি চুপ করে রইলাম।

তোর বাবাকে একটা ধোসা খাওয়ালাম। তাও পুরোটা খেতে পারলো না। তোরা কোথায়?

আমরা এবার আমস্টার্ডামের ফ্লাইটে উঠেছি।

ফোন করতে দিচ্ছে।

না প্লেনের ভেতরে যে ফোন আছে সেখান থেকে করছি।

বাবা।

মিলি ফোনটা আমার হাতে দিল।

বল।

দেখলাম মিলি ভয়েজ অফ করে দিয়েছে।

তোমার মনটা খারাপ, তাই না?

না—

তাহলে তুমি গাড়িতে বসে কাঁদছিলে কেন?

কে বললো!

আবিদ আঙ্কেল।

ভুল বলেছে। আমি পেছনে বসেছিলাম আবিদ আঙ্কেল সামনে বসে গাড়ি চালাচ্ছিল।

তুমি আবিদ আঙ্কেলকে একটা ঠাণ্ডা জলের বোতল কিনতে বলেছিলে, তুমি তো কোনওদিন ঠাণ্ডা জল খাও না।

ইচ্ছে হলো, তাই একটু খেলাম।

মেয়ে চুপ করে রইলো।

প্লেন থেকে পৃথিবীর রং দেখতে পাচ্ছিস?

ভীষণ সুন্দর, অনেক ছবি তুলেছি। তোমাকে গিয়ে মেল করবো।

করিস।

রাতে ফোনটা খুলে রেখো প্লিজ, পৌঁছে ফোন করবো।

আচ্ছা।

মিলির হাতে ফোনটা দিলাম।

মিলি হাসছে।

তুমি থাকবে না চলে যাবে।

একটু পরে বেড়োব।

কোথায় যাবে?

ঠিক নেই। দেখি।

কাকে নিয়ে এসেছো?

আবিদ আছে।

তাহলে ঠিক আছে।

হাসলাম।

রাতে যাচ্ছি, থাকবো। তারাতারি ফিরে আসবে।

সুরো আছে, খুব একটা অসুবিধে হবে না।

মিলি কিছু বললো না।

তোর কথা বলা শেষ হলো—সন্দীপ আমার দিকে তাকালো।

কেনো!

লেখাটা ছাপছি, যা লিখেছিস আজ কাল মেরে দেব। বাকিটা লিখে দিস পর্শুদিন শেষ করবো।

তোদের কি সাদা কাগজ ছাপতে হচ্ছে?

এর উত্তর সুমন্ত দেবে। লাস্টের পাঁচটা শ্লিপ তোকে দিলাম, শেষটুকু লিখে দিস।

ওরে ওটা ছাপার জন্য লিখি না। কি মনে হলো তাই লিখছিলাম।

মাঝে মাঝে যদি তোর এরকম মনে হয় আমাদের উপকার। তোকে একটু অন্যরকম ভাবে পাবো।

টিনা হাসছে।

দ্বীপায়ন কাউকে দিয়ে কমপোজে পাঠিয়ে দাও। ইলাস্ট্রেসন তুমি নিজে হাতে করবে।

কি লিখেছেগো সন্দীপদা। টিনা বললো।

কাল কাগজে পড়ে নেবে।

আজ নয় কেন?

এক্সক্লুসিভ।

সন্দীপের গাম্ভীর্য ওদের হাসির খোরাক।

বরুণদা, হিমাংশু উঠে দাঁড়াল।

হিমাংশু আমার কাজ কতদূর এগোল?

আর একটু বাকি আছে। আগামী সপ্তাহে দিল্লী যাব। অনুপের সঙ্গে একটু বসতে হবে। তারপর তোকে দেব।

আমার হাতে এখন অঢেল সময়। দিলে তারাতারি পড়ে ফেলতে পারবো।

আমার পার্টটা দিতে পারি।

তাই দে।

বরুণদার কাছে দিয়ে দেব।

আচ্ছা।

আমিও উঠে দাঁড়ালাম।

ওপরে যাবি না? সন্দীপ বললো।

না-রে, আজ থাক।

সন্দীপ একবার আমার দিকে তাকাল।

বরুণদা আর দশ মিনিট। মিলি, ছিদামকে একটু চায়ের কথা বলো।

সন্দীপ আমার দিকে তাকাল। বোস।

আবার চেয়ারে বসলাম।

তোর সঙ্গে এই হাউসে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে সবচেয়ে বেশি দিন ঘর করেছি।

সবাই সন্দীপের দিকে তাকিয়ে। কথাটা সকলের কাছে কেমন যেন অচেনা ঠেকছে।

আমি হাসলাম।

তোর লেখার টাচগুলো আমি জানি। এই অনুভূতির স্তরগুলো আমার কাছে একেবারে অপরিচিত নয়। হঠাৎ তোর লেখার মধ্যে এই চেতনাটা কাজ করছে কেন?

ঘরের সবারই দেখলাম চোখ মুখের চেহারা বদলে গেল। সবাই আমার আর সন্দীপের মুখের দিকে তাকিয়ে।

না না তুই যা ভাবছিস ঠিক তা নয়।

দাদা কিন্তু আমাদের মধ্যে এখনও আছেন। হয়তো তোর মতো দাদাকে এতটা শ্রদ্ধা কিংবা ভালোবাসতে পারিনি। কিন্তু কোনওদিন অশ্রদ্ধা করেছি বলে মনে পড়ে না।

তুই যা বলছিস আমি লেখাটার মধ্যে তা বলতে চাই নি।

লেখাটা এদের ভালো লেগেছে। আমি এর অন্য কিছু অর্থ খুঁজে পাচ্ছি। তোকে কথা দিলাম, আমি বেঁচে থাকতে তোর স্বপ্ন কোনওদিন বিফলে যাবে না।

আমি মাথা নিচু করলাম।

অনি আমি বিশ্বাস করি এর থেকেও অনেক বড়ো ঝড় তোর ওপর দিয়ে গেছে। তোকে কোনও দিন ভেঙে পড়তে দেখি নি। তুই সবার থেকে ভীষণ ক্যাজুয়েল ভাবে থেকেছিস। আমি তোকে এতোটুকু সাহায্য করতে পারিনি। কিন্তু তোর প্রত্যেকটা কাজের সাক্ষী ছিলাম।

দূর পাগল, তুই যা ভাবছিস ঠিক তা নয়।

এড়িয়ে যাস না। পৃথিবীতে অনেক না বলা কথা আছে, যা স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, গুরুজনদের বলা যায় না। বন্ধুকে বলা যায়। এটা একটা মাধ্যম, আর একটা মাধ্যম নিজের মতো করে গুছিয়ে বিষয় বস্তুটা লিখে ফেলা যায়।

আমি সন্দীপের দিকে ভাসাভাসা চোখে তাকালাম।

সুনীতদা যেদিন এই অফিসটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল, আমার পর্যন্ত চাকরি চলে যেতে বসেছে, তখন তোর চোখে দেখেছি আত্মবিশ্বাসের ছায়া। বারবার তোকে বলেছি, অনি আমার চাকরি চলে যাবে, সবে বিয়ে করেছি একেবারে পথে বসে যাব। তুই বলেছিস আমি এই কাগজের এডিটর হবো। দিনগুলো আমি ভুলে যাই নি।

ডা. ব্যানার্জী থেকে রাজনাথ সকলের কথা এদের কারুর অজানা নয়, শেষ তোর বন্ধু অনাদি। কখনও তোকে এতোটা আপসেট হতে দেখি নি। তাহলে আজ কেন?

সারাটা ঘর নিস্তব্ধ। আমি চুপ করে বসে।

এই বিল্ডিংয়ের আনাচে কানাচে ঘুঘুর বাসায় পরিণত হয়েছিল, তুই তাকে ভেঙে দুমড়ে দিয়েছিস, কারুর কোনও কথা তুই কানে তুলিসনি। তখন তুই বীভৎস একটা ঝড়। তোর তাণ্ডবে সবাই তখন ভয়ে জড়ো-সরো। তাহলে আজ কেন….?

এই ঘরের প্রত্যেকে তোর হাতে তৈরি। তুই ভীষণ যত্ন নিয়ে তাদের তৈরি করেছিস। ভাবিস না কেউ আমরা এতটুকু জায়গা বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেব।

ছিদাম চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো।

অর্ক।

বলো।

তুই, সুমন্ত, অরিত্র, দ্বীপায়ন আজকের কাগজটা সামলে দিতে পারবি?

কেন পারবো না!

সায়ন্তন।

বলো।

লেট নাইট এডিশন না বেরোন পর্যন্ত কেউ অফিস থেকে যাবি না। আমি একটু বেরচ্ছি, যদি ফিরে আসি ভালো, না হলে তোরা তোদের মতো কাগজ বার করবি। তবে অনির লেখাটা যাবে।

ঠিক আছে।

মিলি।

বলো।

ওর বাড়িতে তোমরা কেউ থাকছো না?

সুরো আছে। আমি দু-দিন থাকতে পারি নি।

বাচ্চাটা?

আমার কাছে।

ওকে যদি ওই বাড়িতে রাখো, কোনও অসুবিধে?

একবারেই না। দেখবে কে?

মাসি আছে, সুরো আছে।

সুরোও সব দিন থাকতে পারে না।

তোমাদের অসুবিধে না থাকলে, আজ থেকে ম্যাডাম যতদিন না আসবে, মাম্পি-মিকি ওর কাছে থাকবে। দায়িত্ব ওর। ও বুঝে নেবে। সুরোকে আমার হয়ে বলে দেবে।

ঠিক আছে।

সন্দীপ আমার দিকে তাকাল।

চা খেয়ে নে, আমি তোর সঙ্গে যাব।

আমার সঙ্গে তুই কোথায় যাবি?

তুই যেখানে যাবি।

কেন জানি না সন্দীপকে আজ বাধা দিতে পারলাম না। মনে হলো জীবনে প্রথম কেউ আমার মনটাকে ছুঁয়ে ফেলেছে। মিত্রাও হয়তো সেটা পারেনি।

পরিবেশটা কেমন গুরুগম্ভীর হয়ে গেল। সবাই একে একে বিদায় নিল।

আমি সন্দীপকে নিয়ে নিচে নামলাম।

আমাকে দেখতে পেয়ে রবীন এগিয়ে এলো।

দাদা গাড়ি বার করি?

আজ থাক রবীন, কাল তুই একবার দশটা নাগাদ ও বাড়িতে আসিস তোর সঙ্গে বেরবো।

আচ্ছা দাদা।

আবিদকে দেখেছিস?

ভেতরে আছে।

ওকে একবার ডাক।

রবীন চলে গেল।

আমরা দুজনে ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। কেউ কারুর সঙ্গে কথা বললাম না।

আবিদ আসতে দুজনে বেরিয়ে এলাম।

গাড়িতে ওঠার সময় আবিদ একবার জিজ্ঞাসা করলো কথায় যাব অনিদা?

সন্দীপ উত্তর দিলো।

আবিদ।

বলো।

তুমি প্রথমে একটা সিগারেটের প্যাকেট কেন। তারপর গঙ্গার ধারে অনিদা যে বেঞ্চে বসে তোমাদের সঙ্গে মিট করতো সেখানে নিয়ে চলো।

আমি সন্দীপের দিকে তাকালাম।

আবিদ ভিউইং গ্লাস দিয়ে সন্দীপকে দেখছে।

তোমার কোনও কাজ আছে আবিদ?

ছিলো, করে ফেলেছি।

ঠিক আছে, আগে ওখানে চলো।

সিগারেটের প্যাকেট যদি ওখানে গিয়ে কিনে দিই, কোনও অসুবিধে আছে?

একবারে না।

আবিদ ইডেন গার্ডেনের পাশ দিয়ে গঙ্গার ধারে চলে এলো।

কেনো জানিনা আজ মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত। মনে হচ্ছে সুইমিংপুলে বাচ্চাদের হাতের ওপর নিয়ে ট্রেনাররা যেমন সাঁতার শেখায়, বাচ্চারা ট্রেনারের হাতের ওপর ভেসেই হাত-পা ছোঁরে, আমিও আজ যেন সন্দীপের দুই হাতের ওপর ভেসে চলেছি।

আবিদ ঠিক জায়গায় এসে গাড়ি দাঁড় করাল।

আমরা দুজনে নামলাম।

আবিদ তুমি ঘণ্টা দুয়েক পর আসবে, তার বেশি সময় নিলেও আপত্তি নেই। আমরা দু-জনে এখানেই থাকবো। খুব বেশি হলে হাঁটা হাঁটি করবো।

ঠিক আছে।

তুমি একটু সিগারেটটা এনে দাও।

তোমরা বসো, ঠিক সময় পৌঁছে যাবে কোনও চিন্তা নেই।

আমি হাসলাম।

দুজনে ধীর পায়ে ভেতরে এসে আমার সেই পরিচিত জায়গায় এসে বসলাম, এখনও কেউ এসে জায়গা দখল করে নি। সূর্য সামান্য পশ্চিম দিকে হেলে পরেছে। ফিকে হয়ে এসেছে তার রং। গঙ্গায় এখন ভড়া জোয়ার। সূর্যের কমলা রংয়ে চিক চিক করছে।

সন্দীপ অনেকক্ষণ এদিক ওদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। স্বগোতক্তির সুরে বলে উঠলো, বিউটিফুল। এই জায়গাটা তুই আবিষ্কার করলি কি করে বলতো?

ইসলামভাই যেদিন প্রথম এখানে আসতে বলেছিল, সেদিন ওই শেষ প্রান্তে গিয়ে বসেছিলাম। তারপর কোনও কোনও দিন আগে চলে আসতাম, তখন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতাম। গঙ্গার এই ধারটায় যত বেঞ্চ আছে সব বেঞ্চে আমার বসা হয়ে গেছে।

কিন্তু এই বেঞ্চে বসে সূর্যটাকে যেমন ভাবে দেখা যায়, সেই ভাবে আর কোনও বেঞ্চে বসে দেখা যায় না।

একটু পরে দেখবি যত বেলা গড়িয়ে যাবে, সূর্যের রং তত বদলে যাবে, গঙ্গার বুকে আলোছায়ার খেলা দেখতে দেখতে আমার সময় কেটে যেত। দূরে ওই যে নৌকটা নোঙর করে আছে, ওতে একজোড়া প্রেমিক প্রেমিকা আছে। ওরা প্রেম করতে আসে না। শরীরের ক্ষুধা মেটাতে আসে। ইকবালভাই একসময় এই কাজ করতো।

কতদিন ঘাটে এসে নামার পর মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে তার প্রেমিকের হাত ধরে এখান থেকে বিদায় নিয়েছে। কেউ আবার হাসতে হাসতে নেমে চলে গেছে। প্রথমে বুঝতে পারতাম না, কারা প্রেমিক-প্রেমিকা, কারা সত্যি কারের ব্যবসা করে। পরে ধীরে ধীরে মানুষ চিনলাম, বুঝলাম। এখান থেকে লেখার অনেক খোরাক পেতাম।

একবারে তোর নিজস্ব, সেখানে কারুর সঙ্গে শেয়ার চলে না। সন্দীপ বললো।

ঠিক বলেছিস, তুই নিজেই বল না। তোর ফিলিংস আমার ফিলিংস সমান।

সন্দীপ মাথা দোলাল। না।

ঠিক এই জায়গাটাতে মানুষের সঙ্গে মানুষের পার্থক্য। তুই যে ভাবে জগৎটাকে দেখছিস আমি সেইভাবে দেখছি না।

দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানুষ ভাল-মন্দ, শ্লীল-অশ্লীলয়ের বিচার করে।

জানিস সন্দীপ আমার সাংবাদিকতার উত্থান ইসলামভাইয়ের হাত ধরে। আবিদ, রতন তখন কতো সাহায্য করেছে। তোরা যে সব নিউজ বিটে বিটে গিয়ে জানতিস আমি তার আগে পেয়ে যেতাম। তোরা চার লাইনের নিউজ করতিস, আমি খবরের ভেতরের খবর জোগাড় করতাম, ফিচার লিখে ফেলতাম। বেশ জমে যেত।

আবিদ একসময় যে পোষাক পরে নিষিদ্ধ নেশার বস্তু বিক্রি করতো, ঠিক সেই পোষাকে একজন এসে দাঁড়ালো।

সেই পোষাক! মাথায় সাদা টুপি। পরনে শ্বেত শুভ্র কাপর।

আমাদের হাতে দু-ঠোঙা বাদাম দিলো। একটা সিগারেট প্যাকেট আর দেশলাই।

একটু পরে এসে চা দিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটি কথা বললো।

আমি ছেলেটির দিকে তাকালাম।

একবারে ইনোসেন্ট মুখটা।

পয়সা নিয়ে যাও।

দেওয়া আছে।

ছেলেটি আর দাঁড়াল না। চলে গেল।

সন্দীপ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল।

কি দেখছিস?

একদিন তুই গল্প বলেছিলি আজ স্বচক্ষে মিলিয়ে দেখছি।

দুজনে বাদাম খাওয়া শুরু করলাম।

একজোড়া প্রেমিক প্রেমিকা এসে ওপাশের বেঞ্চে বসলো।

তোর মধ্যে হঠাৎ এই ভাবনাটা এলো কেন?

কোনটা বলতো?

মৃত্যু চেতনা।

বলতে পারবো না সন্দীপ।

এই ভাবনাটা আসার জন্য একটা রিজিন থাকবে, তুই অস্বীকার করতে পারিস না।

কখনই না।

তুই নিজেকে প্রশ্ন করেছিস?

জানিস সন্দীপ বাবা, মাকে হারিয়েছি চারবছর বয়সে। তারপর মনাকাকার আশ্রয়ে শৈশব-কৈশোর কেটেছে। যৌবনের শুরুত পেলাম মিত্রাকে, পাওয়ার পর প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেলাম, বেসামাল হয়ে গেল সব কিছু। তারপর কাগজের অফিস, তনু আমার জীবনে এলো। সব ব্যাপারটাই তুই জানিস আজ বয়স পঞ্চাশ। জীবনে কি পেলাম বল?

সবাই জানে অনির কিসের অভাব? প্রাসাদোপম বাড়ি, গাড়ি, অঢেল টাকা, ক্ষমতা, কি নেই মানুষটার বলতো। একটা মানুষের বাহ্যিক যা যা দরকার সব আছে।

নিজের মনে নিজে হাসলাম।

অনি যে ভিক্ষারী ছিল সেই ভিক্ষারীই আছে। জীবনে সময়ে যা পাওয়ার দরকার তা না পেয়ে পেয়ে, হাতের কাছে পড়ে থাকা পাওনা জিনিষটাও আঁকড়ে ধরতে পারি না। সংকোচ হয়।

দাদাকে যেদিন নার্সিংহোমে প্রথম দেখলাম মানসিক ভাবে ভীষণ আপসেট হয়ে পড়েছিলাম, যার হাতের ছোঁয়ায় আমি আজ অনি হতে পেরেছি, বলতে পারিস অনিকে নতুন ভাবে যে বাঁচতে শিখিয়েছে, তাকে কি দিলাম, পঙ্গুত্ব। কথা বলতে গেলে মুখ বেঁকে যাচ্ছে, জিভে আড়ষ্টতা। একটা হাত শরীর থেকে অসাড়ের মতো ঝুলে রয়েছে।

একটু থামলাম।

অনি নামটা পর্যন্ত শুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করতে পারে না।

এটা তুই ভাবছিস কেন?

কেন ভাববোনা বল। আমার ওই ঘটনাটা যদি না ঘটতো তাহলে কি দাদার স্ট্রোক হতো। আমার জন্যই দাদাকে অপমানিত হতে হয়েছে।

ওটা একটা সিচ্যুয়েশন তৈরি হয়েগেছিল। কি করবি, ভবিতব্য।

আমি বিশ্বাস করি না।

তুই কি বিশ্বাস করিস?

ম্যান ইজ মেকার অফ হিজ ওউন ফেট।

সব সময় যে এটা সত্যি হবে, এটা ভাবছিস কেন?

চুপ করে থাকলাম।

মেয়ের সঙ্গে কিছু হয়েছে?

সন্দীপের মুখের দিকে তাকালাম।

মাথা দোলালাম, না।

তাহলে?

ওর মার কাছে কোনওদিন হারি নি। মেয়ের কাছে মনে হয় হেরে যাব।

সন্দীপ জোড়ে হেসে উঠলো।

আমি সন্দীপের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।

এই হারের মধ্যে একটা আনন্দ আছে।

সেটা উপলব্ধি করছি। আমি….।

চুপ করে গেলাম।

ওকে দেখার পর থেকেই আমার মার মুখটা প্রায়ই চোখের সামনে ভসে ওঠে।

যে মায়ের মুখটা আমি ভুলেই গেছিলাম, সেই মা মাঝে মাঝেই আমার শয়নে স্বপনে এসে আমার দরজায় কড়া নেরে যাচ্ছে।

শিশু যেমন দুষ্টুমি করার পর মার কাছে আত্মসমর্পন করে, আমি যেন মেয়ের কাছে আত্মসমর্পন করছি। মেয়ে যেন আমার অসম্পূর্ণ জায়গাগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।

তোর ভালো লাগছে না?

ভালো লাগার থেকেও সব চেয়ে বড়োকথা ভয় পাচ্ছি। নিতে পারবো কিনা। কোনওদিন তো নিয়ে দেখিনি, যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চেয়ে বশি, তাহলে হয়তো ও আঘাত পাবে।

যতটা দিচ্ছে ততটা নে। বেশি চাইবি কেন?

ও যে প্রথমেই হাত উপুর করে দিয়েছে। আমার যে দম বন্ধ হয়ে আসছে।

আবার থামলাম।

বলবি, কেন? তোকে ঠিক বোঝাতে পারবো না।

সন্দীপ আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। সারাটা মুখ মণ্ডলে হালকা হাসির ছোঁয়া।

এতো জোড় ও কোথা থেকে পেল? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেছি, সঠিক উত্তর পাই নি।

তুই তো ওকে ছোটো থেকে দেখিস নি। একবারে বড়ো অবস্থায় দেখছিস, তাই।

হয়তো হবে। ওকে দেখলেই সুরোর বিয়ের দিনটার কথা মনে পড়ে যায়। এক মাথা ঝাঁকরা চুল। টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো কচি কচি লাল ঠোঁট। চোখের মনি দুটো অসম্ভব কালো। সেদিন ওকে প্রথম ছুঁয়েছিলাম। সে এক অনন্য অনুভূতি। চুলগুলো পরিপাটি করে আঁচড়ানো নয়। মাঝে মাঝেই ঘামে ভেঁজা চুল হাত দিয়ে কপাল থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝেই আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের ওপর আঙুল তুলে ইসারায় চুপ থাকর জন্য বলছে। আমি তখন পাগল সেজে বসে আছি গেটের পাশে। ও এলো, ইসারায় কথা বললাম, খেতে দিল….।

একটু থামলাম।

সেদিন ওর সেই গভীর চোখদুটো এখনও ছবির মতো চোখের সামনে ভাসে।

বড়োমারা চলে যাবার পর, ওর ওপর আমার দেখ ভালের দায়িত্ব পরলো। একটু একটু করে ওর ভেতরটা দেখতে পেলাম। কি ভীষণ আকর্ষণীয় শক্তি। যেন চোরাবালির তলায় ধীরে ধীরে আমি ডুবে যেতে লাগলাম। শেষের কয়েকটা দিন ও আমার কাছে শুয়েছে। একটা সোমত্ত মেয়ে, আমার বুকে লুটোপুটি খেয়েছে। আমার কাছে জানতে চেয়েছে তার মা-বাবার না জানা কাহিনী।

আমি থেমে গেলাম। গলাটা কেমন বন্ধ হয়ে আসছে।

তুই বিশ্বাস কর সন্দীপ, এতটুকু অনুভূতি আমার শরীরে জাগেনি। বার বার ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। কি সুন্দর চোখের পরিভাষা। ভেবেছি ঈশ্বরের কি অমোঘ সৃষ্টি। আমার মেয়ে, আমার শরীরের অংশ।

কখনও রাগ করেছে, কখনও অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, কখনও আমার কথা শুনে চোখ ছল ছল করে উঠেছে।

তবু নিজের শেকড়কে জানার কি প্রবল স্পৃহা ওর মনের মধ্যে।

প্রথম প্রথম হেসে উড়িয়ে দিয়েছি, এ্যাভয়েড করেছি, অন্য গল্প ফেঁদেছি। কিন্তু ভবি ভোলবার নয়, ঘুরে ফিরে সেই একজায়গায় কনটিনিউ নক করেছে। এরিয়ে যাওয়ার সাহস সঞ্চয় করতে গিয়ে বিফল হয়েছি। পারি নি। বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পন করেছি।

এটাকে কি বন্ধন বলে? পিতা-পুত্রীর সম্বন্ধ? সন্দীপ বললো।

জানিনা।

সন্দীপ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

যত বিষয়টা নিয়ে ভাববার চেষ্টা করেছি, তত যেন চোখে অন্ধকার দেখেছি। বার বার মন বলছে অনি তুই বাঁধা পড়ে গেলি, ধরা খেয়ে গেলি, তোর পালাবার পথ নেই আর।

ওর মাকে ভালোবেসেছি, মেয়েকেও ভালোবেসে ফেলেছি, দুটোর রং সম্পূর্ণ আলাদা। এই অভিজ্ঞতা আগে ছিল না। এখন উপলব্ধি করছি, যত উপলব্ধি করছি তত দিশেহারা হয়ে পরছি। ভেতর ভেতর এক উথাল-পাথাল পরিস্থিতি। বার বার মন বলছে, অনি এবার তোকে থেমে যেতে হবে, তোর লম্বা লম্বা হাত-পাগুলো সব পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে হবে, তুই আর তোর মতো করে চলতে পারবি না। ওদের তুই পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিস, ওদেরও কিছু ডিমাণ্ড আছে, তোকে দিতে হবে।

বুঝলি সন্দীপ, এই পৃথিবীতে সকলের ডিমাণ্ড আছে, শুধু আমার নেই।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/7pmZF2J
via BanglaChoti

Comments