প্রতিশোধঃ দ্যা রিভেঞ্জ (পর্ব-১১)

একাদশ পর্ব
—————————–

“তুমি আবার ওই পুরোহিত ব্যাটাকে বাড়িতে ডেকেছো?” ফোনেই মাকে জিজ্ঞেস করে এআরসি, নিজের অফিসে বসে ফোনে মায়ের সাথে কথা বলছে সে।
এই বাড়িতে পূজো দেবো না নাকি?
এত পূজো করো কেন?
ফালতু বকিস না কি জন্য ফোন করেছিস বল।
আমি একটা বড়ো প্রজেক্টের কন্ট্রাক্ট পেয়েছি ,একটা পাঁচতারা হোটেলের কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট।
কয়েকবার ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে ছেলেকে বলেন: তুই আরও উন্নতি কর.. আজ তোর বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন ছেলের এই উন্নতি দেখে।
মায়ের কথা শুনে মুখটা গম্ভীর হয়ে যায় এআরসির, সে বলে: আমি জানি বাবা যেখানেই আছেন আমাকে দেখে খুশীই হচ্ছেন।
তোর কাজ তো হয়ে গেছে মনে হচ্ছে তাহলে এবার ফিরে আয়।
আসবো আর একটু বাকি আছে সেটা শেষ করেই ফিরবো।
আমার ছেলে কি ফিরবে?
মানে? কি বলছো তুমি মা?
বলছি তুই তো ফিরবি কিন্তু আমার ছেলে কি ফিরবে?
প্রশ্নটার তাৎপর্য বুঝতে একটু সময় নেয় এআরসি, সে চুপ করে থাকে।
আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আন… আমি আর কিচ্ছু চাই না।
মা…
তুই না জানি কত কি হয়ে গেছিস তোকে আজকাল চিনতেই পারি না…..কিসব নাম রেখেছিস নিজের, কেউ ডাকে রয় নামে তো কেউ ডাকে এআরসি নামে কিন্তু এসবের মাঝে তোর বাবার দেওয়া নামটা হারিয়ে গেছে আমাদের ছেলে অ..
মা। মাকে কথাটা শেষ করতে দেয় না, তুমি যার কথা বলছো সে মারা গেছে আর মারা যাওয়া লোক ফিরে আসে না।
বাবু.. তুই
ওই নামটা নেবে না.. তুমি যাকে ফেরত চাইছো সে দুর্বল ছিল তাই নিজের বাবাকে বাঁচাতে পারেনি কিন্তু এখন যে আছে সে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর, যাকগে ওসব ছাড়ো তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
আছে.. আচ্ছা শোন কটা মেয়ের ছবি বেছে রেখেছি তুই এলে দেখবি নাকি পাঠিয়ে দেবো তোর কাছে?
মা… তোমাকে বলেছি না এইসব ফালতু চিন্তা বাদ দিতে।
একদম বাজে বকবি না, উনি বিয়ে করবেন না সারাজীবন এভাবেই থাকবি নাকি?
কারো কোনো ক্ষতি তো হচ্ছে না।
হটাৎ ছেলেকে একটা প্রশ্ন করেন এআরসির মা: আচ্ছা বাবু তুই কি এখনো ওই মেয়েটাকে..
না… মায়ের কথা শেষ করতে না দিয়েই জোরে উত্তর দেয় এআরসি।
তাহলে?
আমার জীবনে ওর জন্য আর কোনো জায়গা নেই।
তাহলে সমস্যা কিসের, কেন বিয়ে করতে চাইছিস না?
ছাড়ো ওসব।
সব‌ই তো ছাড়তে বলছিস, আচ্ছা তুই কোথায় আছিস আমাকে নিয়ে চল না তোর কাছে।
দরকার কি? আমিও তো আর কিছুদিন পরেই ফিরবো
অনেকদিন ধরেই এক কথা বলে যাচ্ছিস, সত্যি বলতো তুই কোথায় আছিস?
আমি কাজের জন্য শহরের বাইরে আছি, বলেছি তো তোমাকে।
তুই এখন আমাদের ওই শহরে আছিস তাই না?
চমকে ওঠে এআরসি, বুঝতে পারে তার মা ঠিক আন্দাজ করেছে সে চুপ করে থাকে।
কি রে বল তুই ওখানেই গেছিস না?
না, তবে কন্ট্রাক্ট টা ওই শহরের পেয়েছি তাই ওখানে যেতে হবে।
তুই মিথ্যা বলছিস, তুই ওখানেই আছিস..
এআরসি বোঝে তার মা সব আন্দাজ করেছে তাই চুপ করে থাকে।
কি রে তুই ওখানেই গেছিস না?
বললাম তো না আমি অন্য জায়গায় আছি, পরে ওখানে যেতে হবে।
আচ্ছা আমিও যাবো।
মা তুমি
আমি কোনো কথা শুনতে চাই না,আমি যাবো তোর কাছে, আমি তোর বাবাকে হারিয়েছি কিন্তু এখন তোকে হারাতে পারবো না। কেঁদে ওঠেন তিনি।
মা..
না.. আমি কোনো কথা শুনতে চাই না আমি যাবো।
ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি তবে এখন নয় আর কিছুদিন পর, তুমি এলে তোমার হাতে পূজো দিয়ে নতুন কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু করবো, এখন ছাড়ছি।

কথা বলার সময় এআরসির মায়ের পাশে এসে বসেছেন তিনি যাকে নিজের দিদি বলে সম্মান দেন এআরসির মা আর তার ছেলে মাসি বলে সম্মান দেয়, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় যখন দুই মা আর ছেলে এই নতুন শহরে আসেন তখন ইনি‌ই কাছে টেনে নেন, নিজের বস্তির ঘরে থাকতে দেন, দুনিয়ায় কেউ নেই তার এদিকে মা-ছেলের‌ও কেউ নেই তাই মিলেছিল ভালো। পরে ধীরে ধীরে যখন অভয় বড়ো বিজনেসম্যান হয়ে ওঠে নিজস্ব বাংলো তৈরি করে তখন মায়ের সাথে মাসিকেও নিয়ে আসে, যখন বস্তিতে থাকতেন তখন ওখানের অনেকেই ওনাকে বিন্দু মাসি বা বিন্দু দি বলে ডাকতো তাই উনিও প্রথমে বিন্দু দি বলে ডাকতেন পরে শুধু দিদি হয়ে যায় ডাকটা।
“কি বললো তোর ছেলে, কোথায় গেছে ও?” জিজ্ঞেস করেন বিন্দু দি।
সেখানেই গেছে যেখানে ওর যাওয়া ঠিক হয়নি।
তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না, বাবু আমাদের খুব ভালো কত লোকের আশীর্বাদ আছে ওর উপর, ওর কোনো ক্ষতি হবে না।
তাই যেন হয় দিদি, তাই যেন হয়।
আর কোন মেয়ের কথা বলছিলি যেন?
ছিল একটা মেয়ে, খুব বড়োলোকের মেয়ে…. আমার ছেলেটা খুব ভালোবাসতো ওকে, ছোটোবেলার প্রেম আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো ভুলে গেছে কিন্তু বোধহয় আমি ভুল করেছি… ছেলেটা আমার এখনো ভোলেনি ওকে।

মায়ের সাথে কথা বলে ফোনটা টেবিলে রেখে দেয় এআরসি, মায়ের কথাগুলো তাকে ভাবায়, তার কানে বাজতে থাকে মায়ের বলা কথাগুলো “তুই না জানি কত কি হয়ে গেছিস তোকে আজকাল চিনতেই পারি না…..কি সব নাম রেখেছিস নিজের, কেউ ডাকে রয় নামে তো কেউ ডাকে এআরসি নামে কিন্তু এসবের মাঝে তোর বাবার দেওয়া নামটা হারিয়ে গেছে”, সত্যিই তো সে কেন নিজের নাম লুকিয়ে বেড়াবে? সে কেন তার বাবার দেওয়া পরিচয় লুকিয়ে রাখবে…. বাবা.. মনে করতেই এআরসির চোখে এক সদাহাস্য মধ্যবয়স্ক মানুষের মুখটা ভেসে ওঠে তার সাথে কানে বাজতে থাকে ছোটো থেকে শোনা ডাক যেটা সে আর কোনোদিন শুনতে পারবে না, বাবার মুখে তার নাম “অভয়” তার বাবা রুদ্র রায় চৌধুরী তার মা অমৃতা রায় চৌধুরী আর সে অভয় রায় চৌধুরী তিনজনের কি সুন্দর জীবন ছিল, কিন্তু সব শেষ করে দিয়েছে, তার বাবাকে তার থেকে কেড়ে নিয়েছে ওই লোকটা ওই বীরেন ভট্টাচার্য… “আর তাথৈ?” অভয় ওরফে এআরসির ভিতর থেকে কেউ যেন প্রশ্নটা করে, হ্যাঁ.. তাথৈ, অভয় ভালোবেসেছিল ওকে খুব ভালোবেসেছিল কিন্তু বুঝতে পারেনি যে তাথৈ ওর সাথে খেলা করছে, টাইমপাস করছে কখনো বুঝতেই পারেনি বুঝলো সেদিন যেদিন অভয়ের ফোন তাথৈ ধরলো না বদলে হটাৎ করেই একটা ম্যাসেজ এল ফোনে “আমি চলে যাচ্ছি পড়াশোনা করতে, তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চাইনা. ভেবে দেখলাম আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হতেই পারে না তোমার সেই যোগ্যতা বা স্বচ্ছলতা কোনোটাই নেই, আমার তুলনায় তোমার স্ট্যাণ্ডার্ড অনেক নীচুতে, তোমার মতো গরীবের সাথে আমি থাকতে পারবো না আর তাছাড়া আমার বাড়িতে ঠিক বলেছে এখন কেরিয়ার গড়ার সময়, তাই আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে কন্টাক্ট করার চেষ্টা কোরো না” ম্যাসেজটা পড়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল অভয় প্রথমে ভেবেছিল তাথৈ মজা করছে, তাই ফোন করেছিল একবার.. দুবার.. পরপর বেশ কয়েকবার করেছিল কিন্তু তাথৈ ধরেনি, একটা বন্ধুর ফোন থেকে কল করেছিল নিজে কনফারেন্স কলে থেকে তখন ফোনের ওপার থেকে একটা মেয়ের উত্তর এল “কেন বারবার বিরক্ত করছো ওকে, বুঝতে পারছো না ও তোমার মতো ভিখিরির সাথে রিলেশন রাখতে চায় না তাই ফোন ধরছে না” অভয় কাতরভাবে বলেছিল একবার ওর সাথে কথা বলতে চাই, আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে, এখন হয়তো রেগে আছে প্লিজ একবার ফোনটা দিন”
এবারে এক মহিলা কথা বললেন: না, ওর সাথে কথা বলা যাবে না, কেন বুঝতে পারছো না যেটাকে তুমি ভালোবাসা ভাবছো সেটা জাস্ট টাইমপাস ছিল, তুমি ভাবলে কিকরে যে তাথৈ তোমার মতো একজন লোয়ার ক্লাস ছেলেকে পছন্দ করবে?, তুমি তাথৈ‌এর যোগ্য ন‌ও, ওকে নিজের মতো থাকতে দাও আর ওকে বিরক্ত কোরো না। ফোনটা কেটে গিয়েছিল, যে দুজন কথা বলেছিল তারা উভয়েই তাথৈ‌এর খুব কাছের মানুষ।
আমি তো ওকে ভুলে গিয়েছিলাম, তাহলে কেন… কেন আজ‌ও ওকে দেখলে দুর্বল হয়ে পরি.. সত্যিই তো তখন তাথৈদের তুলনায় অনেক গরীব ছিলাম আমরা, আর বড়োলোকের মেয়েরা এটাই করবে সেটাই তো স্বাভাবিক, বৃষ্টিও তো ওরকম একটু আর্থিকভাবে গরীব পরিবারের ছেলেদের দুচোখে সহ্য করতে পারতো না ,তাথৈ আলাদা হবে কিভাবে এক‌ই পরিবারের মেয়ে তো, তবুও কেন মনে হয় যে ও এখনো সেই ছোটোবেলার সেই সরল তাথৈ আছে কেন মনে হয় যে ওর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মিথ্যা ছিল না? না মিথ্যা নয় সত্যি ছিল কিন্তু সেটা শুধু অভয়ের কাছে, তাথৈ‌এর কাছে তো শুধু খেলা ছিল একটু টাইমপাস। না… আর ওর কথা ভাববো না নিজের কাছেই যেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় অভয় ওরফে এআরসি, আমি এখানে প্রতিশোধ নিতে এসেছি বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করতে এসেছি আর সেটাই করবো…অভয় মরে গেছে ,এখন শুধু একটা প্রেতাত্মা বেঁচে আছে, এই প্রেতাত্মা শুধু প্রতিশোধ নিতে চায় আর সেটা সে নেবেই কেউ আটকাতে পারবে না।
ফোনের শব্দে তন্ময়ভাবটা কাটে অভয়ের বিদিশা ফোন করেছে ফোনটা রিসিভ করে “হুমমম, বলো”
এটা কিভাবে করলে? বিদিশার গলায় আনন্দ অবাক দুটোই আছে।
বলেছিলাম তো যে বীরেন ভট্টাচার্য কন্ট্রাক্ট পাবে না।
কন্ট্রাক্ট এআরসি ইন্ডাস্ট্রিজ পেয়েছে, ওদের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
সম্পর্ক যাই থাকুক যেটা বললাম সেটাই হবে।
তুমি আসলে কে বলোতো?
তুমি জানো আমি কে?
সেটা তো মুখোশ, মুখোশের পিছনে তুমি কে?
সেটা নাহয় নাই জানলে, মুখোশটাই এখন আসল।
তুমি কি কোনোভাবে এআরসি ইন্ডাস্ট্রিজ এর সাথে জড়িত?
সেসব কথা থাক না, পরে নাহয় কোনো একদিন বলবো।
একটা খবর দেওয়ার আছে।
বলো
বীরেন ভট্টাচার্য একজন পুলিশ অফিসারকে ট্রান্সফার করিয়ে এখানে আনছেন।
তুমি চেনো?
অতীন সান্যাল, রকির বন্ধু, রকির মতোই ক্রিমিনাল মাইণ্ডেড বরং কিছু ক্ষেত্রে ওর থেকেও বেশী ধূর্ত আর শয়তান আজ আমাদের বাড়িতে আসছে।
ওকে নির্ঘাত আমার পিছনে লাগানো হবে।
কি করবে তুমি এবার?
যা করতে এসেছি সেটাই।
এই অতীনের থেকে সাবধানে থেকো।
ওর সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই কিন্তু যদি ও শত্রুতা শুরু করে তাহলে শেষ আমি করবো।
ঠিক আছে আমি এখন রাখছি পরে দেখা করবো।
হুমম, তুমি সাবধানে থাকবে তোমার উপর নজর রাখা হতে পারে।
বিদিশার ফোনটা রাখতেই আরেকটা ফোন ঢুকলো এআরসি ওরফে রয়ের ফোনে “খবর পেয়েছো?”
পেয়েছি বস
কোথায় আছেন?
ভদ্রমহিলা এখন এক বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন।
আর ওনার একটা চেম্বার ছিল যেখানে উনি পেশেন্ট দেখতেন সেটা?
সেটা অন্য একজন নিয়ে নিয়েছেন।
নিয়ে নিয়েছেন মানে?
আসলে বস, ওই মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পরে স্বামীর ভাইয়েরা ওনার উপর খুব জুলুম করে, মহিলা নিজে শিক্ষিত হলেও ওনার সেই লোক পরিচিতি ছিল না, আর তাছাড়া একা মহিলা, একটা মেয়ে আছে যিনি বিয়ে করে বিদেশে সেটল্‌ড্, মায়ের খবর নেন না, এদিকে ওই স্বামীর ভাই ভয় দেখিয়ে চেম্বারটা আর ওনার বাড়িটা নিজের নামে লিখিয়ে নেন আর ওনাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন।
ওই চেম্বারে এখন কে বসেন?
ওই মহিলার দেওর, উনিও ডাক্তার তবে একদম চশমখোর ডাক্তার, এছাড়াও অনেক রকম দুনম্বরি ব্যাবসা করেন সব খবর পেয়েছি প্রমাণ সহ।
বেশ, শোনো তোমাকে কি করতে হবে। বলে ফোনেই কিছু ইনস্ট্রাকশন দেন এআরসি।
হয়ে যাবে বস।
গুড।

“আনন্দময়ী” বৃদ্ধাশ্রমে সবাই চিন্তিত, উদ্বিগ্ন কারণ তাদের এই পরিবারের একজন হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাকে দেখছেন তাদেরই বৃদ্ধাশ্রমের এক বৃদ্ধা, একসময় একটা নোটপ্যাডে কিছু লিখলেন খসখস করে, লিখে ওখানের লেডি ইনচার্জ কে সেটা দিয়ে বললেন “এই ইঞ্জেকশনটা দরকার এখনই”, কিন্তু লেডি ইনচার্জ দোনোমোনো করছেন দেখে আবার বললেন “কি হলো, বললাম না ইঞ্জেকশনটা এখনই লাগবে”।
না, আগে ডাক্তার আসুক তারপর।
ডাক্তার আসতে দেরি হচ্ছে, ইঞ্জেকশনটা এখনই আনিয়ে দিন।
বললাম তো ডাক্তার না এলে কিছু হবে না, তারপর কিছু হয়ে গেলে দায় আমার উপর এসে পড়বে, ডাক্তার ডাকা হয়েছে তিনি আসছেন।
কিন্তু।
কোনো কিন্তু নয়।
“আপনি যার সাথে কথা বলছেন উনি নিজেই একজন ডাক্তার, কাজেই ওনার বলা ওষুধ আনলে কোনো প্রবলেম হবে না” হটাৎ একটা নতুন কণ্ঠস্বরে দুজনেই চমকে ওঠেন, তাকিয়ে দেখেন একটা ফর্সা সুগঠিত চেহারার যুবক দাঁড়িয়ে আছে। যুবকটা এগিয়ে গিয়ে হটাৎ বৃদ্ধাকে প্রণাম করেন।
থাক থাক বাবা।
দিন আমাকে ইঞ্জেকশনের নামটা দিন।
কাগজটা নিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা আরো একটা ছেলেকে বলে “আমির, যাও এই ইঞ্জেকশনটা তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো”। “একদম নয়” প্রায় চেঁচিয়ে ওঠেন লেডি ইনচার্জ “বললাম না ডাক্তার না এলে কিছু হবে না, আর তাছাড়া আপনি কে?”
আমি কে সেটা বলছি কিন্তু একটা কথা এখানে কেউ একজন অসুস্থ হয়েছেন বুঝতে পারছি, ঠিক আছে আমি ইঞ্জেকশনটা আনাচ্ছি না, কিন্তু ডাক্তার আসার আগে বা দেরি করে আসার জন্য যদি ওনার কিছু হয় তাহলে আপনাকে কিন্তু আমি ছাড়বো না, যাবজ্জীবন জেলের ঘানি টানাবো”
এই হুমকিতে ইনচার্জ একদম গুটিয়ে যান, ছেলেটা সঙ্গীকে বলে: যাও নিয়ে এসো।
এবারে বৃদ্ধা বলেন: তুমি কে বাবা, ঠিক চিনলাম না তো।
কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।
চেনো কিভাবে?
বলছি তবে আগে যা করছিলেন সেটা করুন চলুন।
দুজনে ভিতরে যান পেশেন্টের কাছে, একটু পরেই আমির নামের যুবকটা ইঞ্জেকশন নিয়ে এসেছে, কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এলেন যদিও প্রয়োজনে ছিল না ইঞ্জেকশনের প্রভাবে অসুস্থ বৃদ্ধা অনেকটা সুস্থ হয়েছিলেন।
“এবার বলোতো তুমি কে?” বৃদ্ধাশ্রমের পিছনদিকে একটা ছোট্ট বাগান আছে সেখানে বেতের মোড়ায় বসে আগন্তুকের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করেন বৃদ্ধা।
আপনি আমাকে মনে রেখেছেন কি না জানিনা তবে আমি বলছি দেখুন মনে করতে পারেন কি না।
তুমি আমাকে চেনো?
ডাঃ দাশগুপ্ত একরাতে অল্প কিছুক্ষণ পরিচয় হয়েছিল আমাদের হ আপনি আমার বিপদের সময় আমাকে সাহায্য করেছিলেন, যদিও তারপরে আপনার বিপদের সময় আমি আপনার পাশে থাকতে পারিনি, তার জন্য ক্ষমা চাইছি।
তুমি আমার নাম জানো? বৃদ্ধার গলায় বিস্ময়।
জানি তবে তার আগে এটা দেখুন। বলে মোবাইলে একটা ডেথ সার্টিফিকেটের ছবি দেখায়, বলে: মনে করুন তো প্রায় ষোলো বছর আগের এক রাতে একজন মহিলা তার একটা ছেলে আর তার স্বামী আপনার চেম্বারের সামনে এসেছিল, মহিলার স্বামীর গুলি লেগেছিল অনেক রক্তপাত হয়, আপনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেন, ওই চেম্বারেই সার্জারির যা ইনস্ট্রুমেন্ট ছিল তা দিয়েই কোনোমতে সার্জারি করে গুলি বার করেন কিন্তু… তারপর.. আর কিছু বলতে পারে না, যুবটির দুচোখ জলে ভরে ওঠে।
আর কিছু বলতে হলোনা ডাঃ দাশগুপ্তকে, তার‌ও দুচোখ জলে ভরে যায় “মনে পড়েছে, কত বড়ো হয়ে গেছো তুমি… তোমার মা কেমন আছেন? কি যেন নাম ছিল তোমার?”
অভয়, আর আমার বাবার নাম রুদ্র রায় চৌধুরী, আপনি তারপর আপনার স্বামীর হাসপাতাল থেকে আমার বাবার জন্য ডেথ রিজন লিখিয়ে নেন যাতে অন্তত ডেথ সার্টিফিকেট টা পাওয়া যায়, তারপর আপনি আর আপনার হাজবেন্ড মিলে আমার বাবার…অন্তিম সৎকারের ব্যবস্থা করেন।
দুঃখের কথা ওর থেকে বেশি কিছু করতে পারিনি তোমাদের জন্য।
কি বলছেন আপনি, আপনি যা করেছেন তা সেই মুহূর্তে কেউ করবে না,তখনও আমাদের পিছনে ওই শয়তানগুলো পাগলা কুকুরের মতো পরেছিল, আপনারা নিজেদের বিপদ অগ্ৰাহ্য করে আমাদের লুকিয়ে রাখেন তারপর এই শহর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
কিন্তু তুমি এই শহরে ফিরলে কেন?
কিছু ঋণ বাকি থেকে গেছে সেগুলো শোধ করতে এসেছি, সুদেআসলে শোধ করতে এসেছি।
ওই ভয়ংকর লোকটা এখন আরও ক্ষমতাশালী হয়েছে।
আমি ওর থেকেও ক্ষমতাশালী আর ভয়ংকর হয়েছি, যাকগে এটা ধরুন আপনার জিনিস আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। বলে একটা দলিল বৃদ্ধার হাতে দেয় অভয়।
ডাঃ দাশগুপ্ত অনেকক্ষণ ধরে পুরো দলিলটা বারবার পড়েন তারপর অবাক চোখে তাকান সামনে বসা অভয়ের দিকে। অনেকক্ষণ পরে কান্নাভেজা চোখে বলেন: এটা? কিভাবে করলে, কেন করলে?
কিভাবে করলাম সেটা থাক, আর কেন করলাম. ধরে নিন এটা আমার কৃতজ্ঞতার নিদর্শন ,যদিও আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন তার তুলনায় এটা কিছুই না, তবুও।
আমার দেওর যদি কোর্টে যায়?
গেলে যাবে, তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন উনি যাবেন না গেলে উনি‌ই ফেঁসে যাবেন।
কিন্তু এখন এটা নিয়ে আমি কি করবো?
আগে যা করতেন, অসহায় লোকেদের সাহায্য করা, আর আপনি চাইলে আপনার নিজের বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারেন।
না তার দরকার নেই, এখন এরাই আমার পরিবার, এটাই আমার বাড়ি, ওই চেম্বারে গিয়ে একদিন সবার সাথে দেখা করে আসবো।
বেশ আমার নাম্বার নিয়ে নিন যেদিন যেতে চাইবেন বলবেন আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবো আর যে কোনো দরকারে আমাকে ফোন করবেন।
বেঁচে থাকো বাবা, তুমি আমার স্বামীর স্মৃতিটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো তোমার এই ঋণ
এটা ঋণ নয়.. তাই শোধবোধের প্রশ্নই ওঠে না, চলি।

“তাথৈ, কি রে রুমে একা একা কি করছিস?” তাথৈ‌এর রুমে আসে বৃষ্টি, মনে মনে একটু বিরক্ত হয় তাথৈ তার মনমেজাজ আজ কদিন থেকে ভালো নেই, মিস্টার গুপ্তর ফোন সমানে বন্ধ আছে ওনার অফিসেও ফোন করে পাচ্ছে না, এদিকে আবার অভয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল পরপর দুদিন কিন্তু দুদিন‌ই তাকে এলাকার লোকেরা ঢুকতে দেয়নি ফিরিয়ে দিয়েছে তাথৈ অনেকবার বলেছে: আমি তো এর আগে এসেছিলাম, আপনারা আপনাদের বসকে জিজ্ঞেস করুন, ওরা বলেছে: এখন যেতে দেওয়ার হুকুম নেই, উনি‌ই বারণ করেছেন আপনি ফিরে যান।
তাথৈ বুঝতে পেরেছে অভয় রেগে আছে তাই সে তাথৈ‌এর সাথে দেখা করতে চাইছে না, তাই সে নিজেকে একপ্রকার গৃহবন্দী করে রেখেছে, আর এখন হটাৎ তার রুমে বৃষ্টির আগমন।
কি রে একা একা কি করছিস?
কিছু না।
কিছু না? বেশ তাহলে চল আমার সাথে।
কোথায়?
চল না।
না, আগের বার তুই সাম্যর সাথে আমাকে একা ছাদে রেখে এসেছিলি, আমি আর তোর সাথে যাচ্ছি না।

তোর আর সাম্যর মধ্যে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে? যাই নিয়ে হোক মিটিয়ে নিবি চল।
বললাম তো আমি যাবো না।
কেন যাবি না কেন? আরে কাপলস্‌দের মধ্যে একটু আধটু ঝামেলা হয় কিন্তু তাইবলে কথা বলবি না?
শোন বৃষ্টি তোকে আজ শেষবারের মতো বলছি আমার আর সাম্যর মধ্যে কোনো রিলেশন নেই, আমরা কাপলস্ ন‌ই।
কিন্তু সাম্য তোকে ভালোবাসে।
আমি বাসি না, এটা তুই নিজেও ভালো করে বুঝে নে আর ওকেও বুঝিয়ে দিস।
তুই কি বলতো সাম্যর মতো একটা ভালো ছেলেকে রিফিউজ করছিস।
তোর যদি ওকে এত ভালো লাগে তুই জুড়ে যা ওর সাথে।
তোর কপালে ওই অতীন সান্যাল আছে।
মানে, কি বলতে চাইছিস তুই?
ড্যাডি আর কাকার কথা শুনলাম ওই অতীন নাকি তোকে বিয়ে করতে চেয়েছে আর ড্যাডির আপত্তি নেই।
এইসময় তাথৈ‌এর মা সরমা দেবী ঘরে ঢুকলেন তাকে দেখে বৃষ্টি বললো: তোর বিশ্বাস না হলে কাকীকে জিজ্ঞেস কর।
তাথৈ ওর মায়ের দিকে তাকালো, সরমা দেবী ঘরে ঢুকতে ঢুকতে শুনেছেন দুই বোনের কথাবার্তা কাজেই তাথৈ‌এর দৃষ্টির মানে বুঝতে অসুবিধা হলো না, তিনি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন।
বৃষ্টি: দেখলি তো এবার বল ওই অতীনকে বিয়ে করবি নাকি সাম্যকে?
দুজনের একজনকেও নয়।
সরমা দেবী: তোর জ্যেঠুমণি কিন্তু অতীনকে প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন।
তাথৈ: কিন্তু আমি করিনি আর কখনো করবো‌ও না।
বৃষ্টি: আচ্ছা এখন চল, এমনি ঘুরে আসবো, সাম্যর সাথে কথা বলতে না চাস বলিস না।
সরমা দেবী: যা মা ঘুরে আয়।

বীরেন ভট্টাচার্যের অফিসে তার সামনে অতীন সান্যাল বসে, সুগঠিত সুঠাম চেহারা রকির মতোই লম্বা গায়ের রঙ শ্যামলা, নাকের নীচে একটা গোঁফ আছে আর অধরের নীচে ছোট্ট একটু দাঁড়ি এটুকু ছাড়া আর গালে দাঁড়ি নেই।
কোনো খোঁজ পেলে অতীন?
এখনো পাইনি, আপনি ঠিকই বলেছেন ওই বস্তিতে বাইরের লোক সহজে ঢুকতে পারবে না।
গিয়েছিলে তুমি?
হুমম, কিন্তু ঢুকতে পারিনি।
তো এবার কি করবে?
ওই বস্তিটার উল্টোদিকে কিছুটা দূরে একটা বাগানবাড়ি গোছের বাড়ি আছে না?
হ্যাঁ, আছে অনেক পুরনো বাড়ি।
যদি আমার অনুমান ভুল না হয় তাহলে আমরা যাকে খুঁজছি সে ওখানেই আছে।
কিন্তু ওখানে তো ঢুকতে পারবে না।
সেটাই তো ভাবছি, আচ্ছা ওখানে ঢোকার অন্য রাস্তা বা গলি নেই? আপনি তো ওই জায়গাটা ভালোই চেনেন।
যেকটা রাস্তা বা গলি আছে সবকটায় পাহারা থাকে।
২৪ ঘন্টাই?
হ্যাঁ,
আপনি একটা কাজ করতে পারবেন?
কি?
আমাকে একটা সার্চ ওয়ারেন্টের ব্যবস্থা করে দিন, ওটা নিয়ে লিগ্যালি ঢুকবো।
এর আগেও কিন্তু আমি এই চেষ্টা করেছি,কিন্তু তৎক্ষণাৎ উপর থেকে অর্ডার এসেছে ওয়ারেন্ট ক্যানসেল করতে হবে, আর যাকে পাঠানো হয়েছে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
আমি নিশ্চিত এবারও তাই হবে, কিন্তু এবার খবর না নিয়ে আমি ফিরবো না।
উপর থেকে অর্ডার এলে?
আমার কাছে খবর যাবে কিভাবে যদি তখন ফোন বন্ধ থাকে? একবার জানতে পারি ওখানে কে থাকে তারপর বাকীটা ভাবা যাবে আর হ্যাঁ সাথে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট নামের জায়গাটা খালি রাখবেন পরে বসিয়ে নেবো।
ঠিক আছে আমি কাল‌ই ব্যবস্থা করে দেবো।
উঁহু কাল‌ই নয় আরও কটা দিন যাক।
বেশ তুমি যখন বলবে আমি ব্যবস্থা করে দেবো।
তাথৈ‌এর সাথে কথা বলেছেন?
কি ব্যাপারে?
আপনি ভুলে গেছেন নাকি?
আগে যে কাজটা দিয়েছি সেটা করো, তারপর তাথৈ‌এর কথা ভাববে।

“তুই এইজন্য আমাকে নিয়ে এসেছিস?” বিরক্তির সুরে প্রশ্নটা করে তাথৈ উদ্দেশ্য বৃষ্টি। দুইবোন একটা শপিংমলে এসেছে এখানে কিছু শপিং করে মাল্টিপ্লেক্সে একটা সিনেমা দেখবে তারপর রাতে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করে বাড়ি ফিরবে এই ছিল পুরো দিনের প্ল্যান।
সেইমতো এসে দেখে শপিং মলের বাইরে সাম্য, সুস্মিতা এবং আরো কয়েকজন ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, দুজন যেতেই বৃষ্টি কায়দা করে সাম্য আর তাথৈকে একসাথে করে দিল বললো: তোরা এবার নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঝামেলা মিটিয়ে নে। উত্তরে তাথৈ প্রশ্ন করে বলাইবাহুল্য সেদিন সাম্য তাথৈকে ওদের পরিবার সম্পর্কে যা বলেছে সেটা তাথৈ‌ বাড়িতে কাউকে জানায়নি ফলে বৃষ্টি জানেনা যে সেদিন দুজনের মধ্যে কি হয়েছিল সে শুধু জানে কোনো কারনে দুজনের মনোমালিন্য হয়েছে।
বৃষ্টি: ঠিক আছে দুজন কথা বলে নিস, কথা বলতে তো প্রবলেম নেই।
মলে ঘুরতে ঘুরতে তাথৈকে একটু একা পেয়ে সাম্য বলে: তাথৈ আয়্যাম সরি, সেদিনের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত, সেদিন আমার একটু রাগ হয়েছিল তাই…
দেখ সাম্য আমি তোকে আগেও বলেছি আজ‌ও বলছি আমি তোকে ভালোবাসিনা, তুই কেন বুঝতে চাইছিস না?
তাহলে আমাকে ডেকেছো কেন?
আমি কাউকে ডাকিনি ইনফ্যাক্ট আমার এখানে আসার‌ই ইচ্ছা ছিল না বৃষ্টি জোর করলো বলে এলাম।
এইসময় বৃষ্টি সহ বাকিরা ওদের কাছে এলো, বৃষ্টি বললো: কি রে তোরা পিছিয়ে পরছিস কেন?
তাথৈ রাগী গলায় উত্তর দিল: তোর সাথে আর কোনোদিন বাইরে বেরোবো না, এটাই শেষ।
তাথৈ ছাড়া বাকিরা সকলেই কিছু না কিছু কিনেছে, সাম্য তাথৈকে একটা ড্রেস কিনে দিতে চেয়েছিল কিন্তু তাথৈ স্পষ্ট মানা করে দিয়েছে। সিনেমা শুরু হতে এখনো কিছুটা দেরী আছে তাই সবাই ঠিক করলো ফুডকোর্টে গিয়ে হাল্কা কিছু খেয়ে নেবে।

“তোদের কি হয়েছে বলতো” প্রশ্নটা বৃষ্টি করে সাম্যকে, সবাই এক‌ই টেবিলে বসে আছে গল্প, হাসি-ঠাট্টা চলছে শুধু তাথৈ‌এর মুখ গম্ভীর, এবার সে একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি বলে উঠে যেতেই বৃষ্টি প্রশ্নটা করে।
“ও এখনো ওই অভয়কে ভালোবাসে” দাঁত চেপে বৃষ্টিকে জানায় সাম্য,।
“অভয় কে সাম্য” উপস্থিত সকলের মধ্যে সাম্যর নিজের কয়েকজন বন্ধু ছিল তাদেরই একজন এবার প্রশ্ন করে।
সাম্য উত্তর দেবার আগেই সুস্মিতা নামের মেয়েটা বলে: এক মিনিট অভয় মানে? মানে স্কুলের সেই হ্যাণ্ডসাম ছেলেটা?
হ্যাঁ। ছোট্ট উত্তর দেয় সাম্য।
বলিস কি রে সাম্য। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সুস্মিতা।
কিন্তু ওকে এটা বুঝতে হবে যে অভয় মরে গেছে আর তাছাড়া ও কোনোদিন‌ও তাথৈ‌এর যোগ্য ছিল না। কথাটা বলে বৃষ্টি।
কিন্তু কিভাবে? সাম্যর গলায় জিজ্ঞাসা।
বৃষ্টি: তোকে যেভাবেই হোক ওর মন জিততে হবে, নাহলে ড্যাডি একটা অন্য ছেলের সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দেবে।
কে সে?
আছে দাদার বন্ধু পুলিশে চাকরি করে, ভালো না ছেলেটা আগে আমার পিছনে ছিল, এখন তাথৈ‌এর পিছনে।
তোর পিছনে?
হ্যাঁ, যখন পড়াশোনার জন্য বাইরে ছিলাম প্রায়ই ফোন করতো, কথা বলতো, ওই ক্ষেপের প্রেম যাকে বলে আরকি তারপর আমাদের ব্রেকআপ হয়ে যায়।
কিন্তু তাথৈ তো আমার সাথে কথাই বলতে চায় না।
চেষ্টা করে যা।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তাথৈ আবার মিস্টার গুপ্তকে ফোন করলো কিন্তু এবার‌ও ফোন বন্ধ , অন্যমনস্ক ভাবে তাথৈ হাঁটতে শুরু করে, ভাবতে থাকে কিভাবে সত্যিটা জানা যায়, অভয় তো দেখাই করছে না খুব রেগে আছে নিশ্চয়ই।
হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে হুঁশ ফিরলো “আয়্যাম এক্সট্রিমলি সরি, আসলে আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম”।
ইটস্ ওকে। একটা যুবকের সাথে ধাক্কা লেগেছে, বয়স তার‌ই মতো একটু বড়ো হবে ছেলেটা, একটু শ্যামবর্ণ, রোগা চেহারা, মাথায় ছোটো করে কাটা চুল। তাথৈ‌এর কেন যেন চেনা লাগলো ছেলেটার মুখটা কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না, ছেলেটাও কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।
তাথৈ: আপনাকে ভীষণ চেনা চেনা লাগছে, কোথায় দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না।
ছেলেটি: আমি দুঃখিত আমার মনে হয় না যে আমরা আগে মিট করেছি। বলে চলে গেল তাথৈ দেখলো ছেলেটার গন্তব্য ফুডকোর্ট, সে এসে বৃষ্টির পাশে নিজের চেয়ারে বসলো। লক্ষ্য করলো ছেলেটাও একটু দূরে একটা টেবিলে বসেছে সাথে আরো একজন স্যুট পরা লোক, ছেলেটা সঙ্গের লোকটিকে ল্যাপটপে কিছু একটা দেখাচ্ছে।
ছেলেটা যাই বলুক তার দৃঢ় বিশ্বাস ওই ছেলেটাকে সে আগে দেখেছে কিন্তু কোথায় সেটাই মনে পরছে না, তাথৈ মাঝে মাঝে মুখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো, সুস্মিতা ব্যাপারটা খেয়াল করলো বললো: ছেলেটার দিকে কি দেখছিস তাথৈ? পছন্দ?
ওকে ভীষণ চেনা চেনা লাগছে কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না, বৃষ্টি দেখ..
বৃষ্টি দেখলো কিন্তু কিছু বলার আগেই অন্য একটা ছেলে বললো: এক্স বয়ফ্রেন্ড নয়তো?
না.. কিন্তু। এতটা বলেই তাথৈ থেমে গেল তারপর সোজা উঠে ছেলেটার কাছে গেল ততক্ষণে তার সঙ্গের লোকটা চলে গেছে, ছেলেটা তাথৈকে দেখে হকচকিয়ে গেল বললো: আপনি?
তাথৈ: তুই অমিয় না? আমাকে চিনতে পারছিস না? আমি তাথৈ, একসাথে স্কুলে পড়তাম।
আমি দুঃখিত কিন্তু আমার মনে পরছে না, আমি চিনতে পারছি না।
ততক্ষণে বাকীরাও এগিয়ে এসেছে তাদের দেখে তাথৈ বললো: এই দেখ অমিয় এদের মনে পরেছে? বৃষ্টি, সুস্মিতা, সাম্য আমরা সবাই একসাথে পড়তাম।
অমিয় বলে ছেলেটা এবার একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে র‌ইলো, সেটা দেখে বৃষ্টি বললো: চিনতে পেরেছো তাহলে? তুমি এখানে?
এখানে আসা বারণ আছে নাকি, জানতাম না তো? অমিয় কথাটা এমনভাবে বললো যাতে স্পষ্ট বোঝা গেল যে সে এদের চিনতে পেরেছে।
তাথৈ এবার বললো: তাহলে বলছিলি কেন যে চিনতে পারিসনি?
কারণ আমি চিনতে চাইনি তাই।
কেন?
আমার ইচ্ছা।
বড্ড অহংকার হয়েছে তোমার। শেষের কথাটা বৃষ্টি বললো।
অহংকার আমার হয়নি আর হবেও না, বরং তোমার আরও বেড়েছে।
মুখ সামলে কথা বল। সাম্য প্রায় হুমকির সুরে বললো।
অমিয় শান্ত স্বরে বললো: মিস্টার সাম্য, আমি এখানে ঝামেলা করতে চাই না, আপনারা আপনাদের টাইম এনজয় করুন, আমি আসি। বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তাথৈ ডাকলো: অমিয়, তোর সাথে দেখা হয়ে ভালোই হয়েছে আমার কিছু জরুরী কথা আছে, প্লিজ তোর নাম্বারটা দে, আমি পরে যোগাযোগ করবো।
কিন্তু আপনার সাথে তো আমার কোনো কথা নেই মিস্ ভট্টাচার্য।
তুই এভাবে বলছিস কেন?
যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।
কথা আমার আছে, প্লিজ নাম্বারটা দে।
বৃষ্টি: ওর নাম্বার নিয়ে কি করবি তুই?
দরকার আছে।
ওর সাথে তোর কি দরকার?
আছে, তোর জেনে কাজ নেই তোরা যা, অমিয় নাম্বার টা দে।
না, আমার নাম্বার নিয়ে কাজ নেই আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না।
সুস্মিতা: তাথৈ ছেড়ে দে, ও বোধহয় অক‌ওয়ার্ড ফিল করছে বৃষ্টির সামনে।
কেন?
বৃষ্টি: স্কুলে থাকতে আমাকে প্রপোজ করেছিল, আমি রিফিউজ করেছিলাম। কথাটা শুনে সবাই হেসে উঠলো শুধু অমিয় আর তাথৈ বাদে।
এবার অমিয় শান্ত স্বরে বললো: বিশ্বাস করুন তারজন্য আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
বৃষ্টি অবাক হয়ে বললো: তার মানে?
তখন ছোটো ছিলাম বুঝিনি এখন বুঝি কি ভুল করেছিলাম, ভাগ্য ভালো যে আপনি রিফিউজ করেছিলেন নাহলে আমার জীবনটা শেষ হয়ে যেত।
অমিয়। রাগের সঙ্গে বললো বৃষ্টি, তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো।
একদম না, আসলে কি বলুন তো আপনার মতো মেয়েরা শুধু টাকা আর আর্থিক স্বচ্ছলতাকেই ভালোবাসে, অন্য কাউকে ভালোবাসতেগ পারে না, তাই কোনো ছেলেও আপনাদের মতো মেয়েদের সত্যি ভালোবাসতে পারে না, কাজেই যদি আপনি আমার সাথে থাকতেন তাহলে না আপনি খুশি হতেন আর না আমি তার থেকে এই ভালো আপনিও খুশী আছেন আর আমিও।
বৃষ্টি রাগী গলায় বললো: কি বলতে চাইছো আমি কাউকে ভালোবাসতে পারি না? সত্যিটা স্বীকার করছো না কেন যে তুমি আমার যোগ্য‌ই ছিলে না।
স্বীকার করলাম তো যে আমি আপনার যোগ্য ছিলাম না আর এখনো ন‌ই।
এবারে তাথৈ জিজ্ঞেস করলো: অভয়ের খবর জানিস অমিয়?
প্রশ্নটা শুনে অমিয় চুপ করে র‌ইলো কিন্তু সাম্য রেগে চলে গেল সাথে বৃষ্টি বাদে বাকীরাও গেল।
তাথৈ: কি হলো অমিয়, আমি জানি তুই অভয়ের খুব ভালো বন্ধু ছিলি ওর খবর জানিস?
জানি।
ও কোথায় জানিস?
আপনি সত্যিই জানেন না নাকি..
কি জানিস ওর সম্পর্কে?
ও ষোলো বছর আগে পরিবারসহ মারা গেছে, একটা কথা বলুন তো ওর খবর জেনে আপনার কি হবে? বেঁচে থাকতে ওর সাথে যা করেছেন তাতে শান্তি হয়নি নাকি? যে মরার পরেও ওর পিছু ছাড়ছেন না।
মানে কি বলতে চাইছিস?
কেন নাটক করছেন?
ভদ্রভাবে কথা বলো। গর্জে উঠলো বৃষ্টি।
তাথৈ ওকে থামিয়ে বললো: কি করেছি আমি, প্লিজ বল অমিয়, প্লিজ।
থাকনা ছেলেটা তো মারা গেছে, এখন আর ওকে নিয়ে টানাটানি করে কি হবে? তার থেকে আপনি আপনার লাইফে খুশি থাকুন আর আমাকে আমার লাইফে খুশি থাকতে দিন। বলে অমিয় চলে গেল, হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে তাথৈ বৃষ্টিকে বললো: তুই যা আমি আসছি, বলে দৌড় লাগালো, এস্কেলেটর দিয়ে নেমে কিছুটা দৌড়ে অমিয়কে ধরলো তাথৈ।
আবার কি হলো? বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করে অমিয়।
প্লিজ আমাকে বল আমি কি করেছি, প্লিজ বল।
কেন? এখন এতবছর বাদে অভয়ের জন্য ভেবে কি হবে তাথৈ? যখন ও বেঁচে ছিল তখন তো ওর ভালোবাসা এক ঝটকায় ভুলে চলে গিয়েছিলে তাহলে এখন ওর মৃত্যুর পরে..
অভয় বেঁচে আছে।

চলবে —————————–



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/5EmQ0rX
via BanglaChoti

Comments