মিষ্টি মূহুর্ত (পর্ব-৭ পরিচ্ছেদ ১)

মিষ্টি মূহুর্ত
লেখক – বিচিত্রবীর্য

পর্ব-৭
Update 1
—————————

সকাল সাড়ে ছটার দিকে সুচির ঘুম ভাঙলো। ঘুম ভাঙতে পিটপিট করে তাকিয়ে সুচি উঠে বসলো । হাত দুটো দুপাশে ছড়িয়ে , একটা লম্বা হাই তুলে আলস্য কাটানোর চেষ্টা করলো। নতুন ঘর হলেও ঘুমটা ভালোই হয়েছে তার। আলস্য কাটানোর পর , ঘুম জড়ানো চোখে , পাশে যে ছেলেটা শুয়ে আছে তার দিকে তাকালো।

মাথার দিকের জানালা দিয়ে সূর্যের মিঠে আলো বিছানায় এসে পড়ছে। না , বিছানার উপর সেই রোদ পড়ছে না। রোদটা পড়ছে সুচির স্বামীর ঘুমন্ত মুখের উপর। রোদের তেজ এখনও বাড়েনি তাই তার স্বামীর ঘুম এখনও ভাঙেনি।

সুচি মুখে একটা মিষ্টি লাজুক হাসি নিয়ে আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কি মিষ্টি লাগছে দেখতে ! চওড়া মুখে চাপ দাড়িতে হ্যান্ডসাম দেখায় খুব । আকাশের লম্বা শরীরটা দেখে সুচি বললো , ‘ উমম , আমাকে খুব তালগাছ বলে রাগাতো ! এখন নিজেই ছয় ফুটের তালগাছ হয়ে গেছে। , আরও কিছুক্ষণ আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে  থাকতেই সুচির ঠোঁটে একটা লজ্জার হাসির রেখা ফুটে উঠলো ।

কাল পর্যন্ত সে ছিল সুচিত্রা তালুকদার । আর আজ হয়ে গেছে সুচিত্রা মিত্র। একজনের স্ত্রী , একজনের বৌমা। কথাটা ভাবতেই লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে উঠলো । লজ্জায় নিজেই দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেললো । পরক্ষণেই ভাবলো , ‘ ঘরে তো শুধু সে একা জেগে । আর পাশে আকাশ ঘুমাচ্ছে। তাহলে মুখ ঢাকার কি দরকার ! , কথাটা মাথাতে আসতেই নিজের পাগলামির জন্য সে আরও লজ্জা পেল।

আরও কিছুক্ষণ খাটের উপর বসে থেকে ভাবলো স্নানটা করে নিই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। খাট থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আলনায় চোখ পড়তেই মনে পড়লো তার একটাও জামা কাপড় এই ঘরে নেই। আছে নিজের ঘরে। , ‘ কিন্তু এখন নিতে যাওয়া কি ঠিক হবে ! দিদিকে বলবো ! না , দিদি ইয়ার্কি মারবে। আকাশকে পাঠাবো ? না। কি আনতে কি এনে বসবে ! তার চেয়ে নিজে গিয়ে সব একবারেই গুছিয়ে আনাই ভালো।

এটা ভেবেই সে দরজার ছিটকিনি খুলে ঘরের বাইরে চলে এলো। ঘরের বাইরে এসে দেখলো তার শাশুড়ি অর্থাৎ আকাশের মা মুখ হাত ধুয়ে ব্রাশ করে সবে বাথরুম থেকে বেরিয়েছেন। আর কেউ মনে হয় এখনও জাগেনি । আকাশের মাকে কিছু না বলে সুচি চুপিচুপি ফ্ল্যাটের বাইরে আসতে লাগলো। বিপত্তিটা বাধলো চৌকাঠ পেরনোর সময়।

চৌকাঠের বাইরে পা রাখতেই সুচি পিছন থেকে আকাশের মায়ের গলা পেল , “ কোথায় যাচ্ছিস এখন ? „

সুচি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো । পিছন ফিরে বললো , “ শাড়ি পাল্টাবো , এখানে তো পড়ার মতো একটাও জামা নেই তাই ওই ঘর থেকে জামা কাপড় আনতে যাচ্ছি। „

“ ও , একেবারে স্নান করে নিস ।  „ বলে তিনি রান্নাঘরে চলে গেলেন। কালকের বিয়েতে বেশ অনেক খাবার বেঁচে গেছিল। তাই আকাশের বাবা একটা এনজিও কে ডেকে সব খাবার দিয়ে দিয়েছিলেন। তাই ঘরে এখন ব্রেকফাস্ট করার মতোও খাবার নেই। আকাশের মা  কি বানানো যায় ভাবতে ভাবতে লুচি বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।

এদিকে সুচি নিজের বোকামির জন্য নিজের জিভটায় একবার কামড় বসালো । তবে সে কি বোকামি করেছে সেটা সে নিজেও জানে না। ফ্ল্যাটের বাইরে এসে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে দেখলো ফ্ল্যাটের দরজাটা হাট করে খোলা। খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো লিভিংরুমে মামা মামি মামাতো ভাই বোন সব বসে আছে। আর তাদের আন্ডা বাচ্চাগুলো এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে। সুমি আর মা তাদের চা পরিবেশন করতে ব্যাস্ত।

সুচি খুব অবাক হলো। এই ঘরের প্রায় সবাই জেগে গেছে। আর ওই ঘরে শুধু আকাশের মা। হয়তো এদের তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস তাই ! এটা ভেবেই সে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগলো।

সুচি যে ফ্ল্যাটে ঢুকেছে সেটা সুমির দৃষ্টি এড়ালো না। সে সুচিকে দেখে ইয়ার্কি করে বললো , “ এখানে কি করছিস তুই ? বিয়ের পরের দিনই বাবার বাড়ি চলে এসছিস ! জানিস না , বিয়ের পর শশুর বাড়িই নিজের বাড়ি হয়ে যায়। „

দিদির ইয়ার্কি বুঝতে পেরে , সুচি নিজের জিভটা বার করে , দিদিকে ভেঙিয়ে বললো , “ আমি জামা কাপড় নিতে এসছি। নেওয়া হয়ে গেলেই চলে যাবো। তোকে আর জ্ঞান দিতে হবে না। „

সুচি নিজের ঘরে ঢুকে দেখলো খাটে এখনও তার দুজন মামাতো বোন ঘুমিয়ে আছে। সে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আলনা আর আলমারি থেকে জামা কাপড় গুলো বার করে একটা বড়ো কাপড়ের ব্যাগে ভরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

ফ্ল্যাটের বাইরে আসতে দেখলো তার ছোট মামা বাথরুম থেকে বার হচ্ছে। সুচির মনে পড়লো দাঁত মাজার ব্রাশের কথা। সে সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমে ঢুকে নিজের পিঙ্ক রঙের ব্রাশটা নিয়ে চলে এলো।

নিজের ঘরে এসে ঢুকতেই দেখলো আকাশ খাটের উপর বসে আছে। সুচি আকাশকে দেখে লজ্জা পেয়ে , নিজের ডান গালের উপর পড়ে থাকা চুল কানের পিছনে দিয়ে দিল। আকাশ সুচিকে দেখে একটা হাই বড়ো তুলতে তুলতে জিজ্ঞাসা করলো , “ কোথায় গেছিলি ? „

আকাশের তুই তোকারি শুনে সুচি রাগী চোখে তাকালো। সুচির রাগী চোখের অর্থ বুঝতে পেরে আকাশ খাটে বসেই হাত দুটো সামনের দিকে তুলে সুচির রাগ কমানোর চেষ্টা করে বললো , “ সরি , সরি , সকাল সকাল মাথায় ছিল না। কোথায় গিয়েছিলে ? „

সুচি একবার উদাস দৃষ্টিতে আকাশকে দেখে বললো , “ জামা কাপড় আনতে । „

কথাটা বলে সুচি কাপড়ের বড়ো ব্যাগটা আলনার পাশে রাখলো। ব্যাগটা রেখে ভিতর থেকে স্নান করার পর কি পড়বে সেটা ভাবতে লাগলো। ঠিক তখনই সুচি দেখলো আকাশ তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই দৃষ্টিতে সুচি একটা নিবিড় আকর্ষণ খুঁজে পেল।  এই দৃষ্টির ভিতরে লুকিয়ে থাকা তীব্র আকর্ষণ সুচির বুকের ভিতরটা পুড়িয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগের ভিতর থেকে তাড়াহুড়ো করে যেকোন একটা জামা বার করে সুচি বললো , “ আমি স্নানে চললাম। „ তারপর আকাশের দিকে না তাকিয়েই সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । ঘরের বাইরে এসে একটা বড়ো গভীর নিশ্বাস ফেলার পর সুচি আকাশের ওই দৃষ্টি থেকে শান্তি পেল।

বাথরুমে গিয়ে সুচি দেখলো যে , সে যেটা তাড়াহুড়ো করে এনেছে সেটা একটা চুড়িদার আর প্লাজো । তারপর ব্রাশ করার পর স্নান করে , চুড়িদার পড়ে বেরিয়ে এলো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো আকাশ একটা স্যান্ডো গ্যাঞ্জি পড়ে সোফায় বসে আছে। সুচিকে চুড়িদার পড়ে থাকতে দেখে আকাশ বললো , “ আমি তো ভাবছিলাম তুমি শাড়ি পড়বে। „

সুচি আকাশের কথায় রেগে গেল “ কেন ! চুড়িদার পড়লে তোমার আপত্তি আছে ? „

আকাশের মা সবে গ্যাসে আগুন ধরিয়েছেন। তিনি দুজনের কথা শুনে সুচিকে উদ্দেশ্য করে বললেন , “ তোর যা ইচ্ছা হয় তাই পড়ে থাকবি। শাড়ি পড়ে থাকতে ভালো না লাগলে পড়বি না। „

কাকির সম্মতি পেয়ে সুচি আকাশের দিকে একবার রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে তোয়ালেতে চুল মুছতে মুছতে নিজের ঘরে চলে গেল।

আকাশ সুচির রাগি দৃষ্টির মানে বুঝতে পারলো না। সে তো ভেবেছিল , ‘ মা হয়তো খারাপ বলবে । , তাই আগে থেকে সুচিকে সাবধান করছিল। আর এইটুকু বিষয়ে এতো রাগের কি আছে সেটা বুঝিনা। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের বেগে মাথায় একটা কারণ খেলে গেল । কথাটা মাথায় আসতেই আকাশ চিন্তায় পড়ে গেল। সোফা থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল।

আকাশ ঘরে এসে দেখলো সুচি আয়নার সামনে বসে আছে। মাথায় তোয়ালেটা পাগড়ীর মতো পড়ে আছে। নিজের প্রেয়সীকে আয়নার সামনে , বাড়ির বউয়ের মতো বসে সাজগোজ করতে দেখে আকাশের উতলা মন শান্ত হয়ে এলো। আকাশ চুপচাপ খাটের উপর বসে সুচিকে দেখতে লাগলো। প্রথমে সুচি একটা ছোট কালো টিপ কপালে পড়লো। তারপর মেহেন্দী পড়া হাত দিয়ে সিঁদুরের কৌটো থেকে একটা কাঠি মত বার করলো। তারপর মাথায় জড়ানো তোয়ালেটা একটু সরিয়ে সেই কাঠিটা সিঁথিতে দিয়ে টেনে দিল।

গতকাল যখন আকাশ তাকে সিঁদুর পড়াতে শুরু করেছিল তখন মনের ভিতরে এমন একটা ঝড় উঠেছিল যা আগে কখনো ওঠেনি। সেই মূহুর্তে চোখ বন্ধ করে আকাশের চাল মাপার কাঠা দিয়ে সিঁদুর পড়ানোর মিষ্টি মূহুর্তটা উপভোগ করছিল। সেই ঝড়টা যেমন হঠাৎ করে সিঁদুর পড়ানো শুরু করার সময় শুরু হয়েছিল তেমন সিঁদুর পড়ানো শেষ হলে ঝড়টা হঠাৎ থেমেও গেছিল। আর আজ জীবনে এই প্রথম নিজের হাতে সিঁদুর পড়ায় এক আলাদা পূর্ণতার স্বাদ পেলো সুচি।

ছোটবেলা থেকে মাকে সিঁদুর পড়তে দেখে আসছে সে। সিঁদুর পড়লে মাকে খুব সুন্দর দেখতে লাগে তাই একদিন সে মায়ের অলক্ষ্যে সিঁদুর পড়তে গেছিল। মা দেখতে পেয়ে খুব বকা বকেছিল। আজ নিজের হাতে সিঁদুর পড়তে গিয়ে ছোটবেলার সেই কথা মনে পড়ে গেল। আর তাই লজ্জায় ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।

সিঁদুর পড়ার পর সুচি টেবিল থেকে উঠে দাড়ালো। আকাশকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সে চুল মুছতে লাগলো। এদিকে আকাশ সুচির এই অবহেলা দেখে বললো , “ সরি আমি ওটা মিন করতে চাইনি। আমি ভেবেছিলাম মা হয়তো খারাপ ভাববে। তাই ! „

এর উত্তরে সুচি কিছু বললো না। সুচির অবহেলা দেখে আকাশ সুচির হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো , “ প্লিজ ভুল বুঝোনা। কাল আমাদের বিয়ে হয়েছে । এখনও সারাজীবন পড়ে আছে। আমি সত্যিই তোমাকে ডমিনেট করতে চাইনি , চাইওনা । মায়ের কথা ভেবে ওটা বলেছিলাম। প্লিজ ভুল বুঝোনা । „

“ হয়েছে। আমি কিছু মনে করিনি। ছাড়ো , স্নানে যাও। „ বলে আকাশের বাহু বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলো।

তখনই বাইরে থেকে মায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল , “ এই আকাশ , স্নান না করে ঘরে ঢুকে গেলি যে । „

সঙ্গে সঙ্গে আকাশ সুচিকে ছেড়ে দিলো। মায়ের উদ্দেশ্যে গলা তুলে  বললো , “ তোয়ালে নিতে এসছি । „ বলে সুচির মাথা থেকে তোয়ালে খুলতে লাগলো। সুচি মাথা থেকে তোয়ালে খুলে আকাশকে দিয়ে দিল।

আকাশ তোয়ালে আর একটা জামা প্যান্ট নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর চুপচাপ বাথরুমে ঢুকে গেল। সুচিও ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রান্নাঘরে ঢুকলো , “ কি করছো কাকি ? „

সুচির মিষ্টি মুখের দিকে তাকিয়ে আকাশের মা বললেন “ মা বলে ডাকতে অসুবিধা আছে ! „ এর উত্তরে সুচি কিছু বলছে না দেখে আকাশের মা বললেন , “ পায়েস বানাতে পারিস ? „

সুচি আকাশের মায়ের প্রথম কথাতেই লজ্জা পেয়ে গেছিল। জন্ম থেকে যে মহিলাকে ‘ কাকি , বলে ডেকে আসছে তাকে হঠাৎ ‘ মা , বলতে হবে ভেবেই সে লজ্জা পেয়েছিল। পায়েস বানানোর জিজ্ঞাসায় সে সম্মতি সূচক মাথা নেড়ে , “ হুম  „ বললো।

“ এই নে । „ বলে আকাশের মা একটা ছোট গামলা সুচির দিকে এগিয়ে দিলেন । সুচি দেখলো তাতে চাল ভেজানো আছে।

“ আর এই নে দুধ। আর যা যা লাগবে সব এখানে আছে । „ বলে আরও একটা প্লাস্টিকের পাত্র এগিয়ে দিলেন। তাতে বিভিন্ন ছোট বড়ো আকারের কৌটা রাখা আছে।

সুচি বুঝতে পারলো যে আকাশের মা তাকে আকাশের জন্য পায়েস রান্না করতে বলছে। সুচি কিছু না বলে রান্না করতে শুরু করলো।

কিছুক্ষণ পরেই আকাশের মামা মামি আর অজয় ঘুম থেকে উঠে পড়লো। আকাশের মামি এসে ব্রেকফাস্ট বানাতে সাহায্য করতে লাগলো ।

আকাশ বাথরুম থেকে বার হতেই নাকে পায়েসের মিষ্টি গন্ধ পেল। পুরো ঘরটা যেন পায়েসের গন্ধে ম ম করছে। আকাশ সোফায় বসলে এবং সুচির পায়েস রান্না হওয়ার পর সে একটা বাটিতে পায়েস তুলে আকাশকে দিল। আকাশ প্রথমে অবাক হয়ে সুচির মুখের দিকে তাকালো , তারপর পায়েসের বাটিটা নিয়ে খেতে লাগলো। সুচির হাতের রান্না আকাশ আগেও খেয়েছে। কিন্তু বউ রুপি সুচির হাতের রান্নার স্বাদ সে এই প্রথম পেল। সুচির বানানো পায়েস আকাশের কাছে অমৃতের মতো লাগলো। যদিও সে অমৃত খায়নি কিন্তু এই পায়েস খেয়ে সে এই সিদ্ধান্তে এলো যে অমৃত এই পায়েসের থেকে কোন ভাবেই বেশি সুস্বাদু নয় ।

পায়েস খাওয়া শেষ হতেই প্রজ্ঞা আর প্রজ্ঞার কাঁধে হাত দিয়ে পরপর কয়েকটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে রেলগাড়ি খেলতে খেলতে আরও কয়েকটা বাচ্চা এই ফ্ল্যাটে এসে কোলাহল করতে লাগলো। তাদের সাথে খেলতে খেলতে আর বড়দের সাথে গল্প করতে করতে বিয়ের পরের দিন সকালটা খুব আনন্দে কাটতে লাগলো । তারপর সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট করা , দুপুরের লাঞ্চ করার মধ্যে দিয়ে কতো দ্রুত সময় কাটতে লাগলো সেটা সদ্য বিবাহিত দুজনের মধ্যে কেউই আন্দাজ করতে পারলো না। তবে এই সবের মধ্যেও আকাশ ঘন ঘন  সুচির দিকে তাকাতে ভুললো না। আকাশের অসভ্যতামি দেখে একবার তো সুচি বলেই বসলো , “ কি হচ্ছে টা কি ! এতো গুলো আত্মীয়ের সামনে বারবার অসভ্যের মতো তাকাচ্ছো কেন ! „

এর উত্তরে আকাশ কিছু বললো না। কিন্তু তার নিজের বিয়ে করে আনা প্রেয়সীর দিকে তাকানোয় , অসভ্যের কি আছে ! সেটা সে বুঝেও বুঝতে চাইলো না।

সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার ঠিক আগের মূহুর্তে সুচির মা আকাশের মা-কে কিছু বলতে আকাশের মা বললেন , “ এখন এইসব কেউ মানে ? „

সুচির মা বললেন , “ অপরের সাথে আমাদের কি ? একটা রাত যদি আলাদা থাকে তাহলে অসুবিধা কোথায় ! আচারের আচারও হলো আর আমার মনের দুঃশ্চিন্তা ও থাকলো না। „

আকাশের মা সুচির মায়ের যুক্তিটা বুঝে বললেন , “ তাহলে তুমি সুচিকে তোমাদের ওখানে নিয়ে যাও । আমি আকাশকে এখানে রাখছি। „

সুচির মা সম্মতি পেয়ে সুচিকে একটা কোনায় নিয়ে গিয়ে বললেন , “ চল আমার সাথে । „

সুচি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো , “ কোথায় ? „

সুচির মা গম্ভীর হয়ে বললেন , “ আজ বিয়ের পরের দিন। মানে কালরাত্রি। তাই আলাদা থাকবি। „

সুচি হেসে ফেললো , “ এইসব তুমি মানো নাকি ! „

মেয়ের হাসিতে বিন্দুমাত্র রেগে না গিয়ে তিনি বললেন , “ হ্যাঁ মানি। আর আমার জন্যে তোকেও মানতে হবে। একটা রাতের তো ব্যাপার । কেন ! আমার জন্যে এতোটা করতে পারবি না। „

মায়ের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল এর জন্য সুচি আকাশকে কিছু না বলে নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেল। প্রায় দশ মিনিট সুচিকে চোখের দেখা দেখতে না পেয়ে আকাশ উতলা হয়ে উঠলো। মাকে চুপিচুপি জিজ্ঞাসা করলো , “ সুচি কোথায় ? „

আকাশের মা ছেলের আবেগ বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে আস্তে করে বললেন , “ ও নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেছে। আজ আর আসবে না। „

আকাশ মায়ের কথা শুনে আরও উতলা হয়ে উঠলো , “ কেন ? আজ আর আসবে না কেন ? „

“ আজ কালরাত্রি । স্বামী স্ত্রীর একে অপরের মুখ দেখতে নেই । তাই বৌদি ওকে নিয়ে গেছে। „

আকাশ মায়ের কথায় প্রতিবাদ করলো না। কিছু করার নেই ভেবে উদাস মনে নিজের আর সুচির মামাতো ভাগ্নে ভাগ্নিদের সাথে খেলতে লাগলো , টিভিতে কার্টুন দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য খবরটা চাউর হয়ে গেল । সুচিকে কেউ ইয়ার্কি মেরে কিছু না বললেও আকাশকে আকাশের মামা ইয়ার্কি মারলেন। আকাশের পিঠে হাত দিয়ে তিনি বললেন , “ দুঃখ পাস না ভাগ্নে একটা রাতের তো ব্যাপার ! „

মামা কথাটা সহানুভূতি দেখিয়ে বললো নাকি ইয়ার্কি মেরে বললো সেটা আকাশ বুঝতে পারলো না। আরও কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আকাশ আর সুচি দুজনেই একই চিন্তা করতে লাগলো , ‘ মেসেজ করবো ! নাকি কথা বলাই বারণ। হবে হয়তো। এই নিয়ম যখন বানানো হয়েছিল , তখন তো ফোন আবিষ্কার হয়নি , তাই ফোনে লুকিয়ে একে অপরকে না দেখে কথা বলা যেতে পারে এটা যারা  নিয়ম বানিয়েছে তারা ভাবতেই পারে নি। তাই ফোনে কথা বলাটাও হয়তো বারণ। না বাবা , থাক। কথা বলে লাভ নেই। একটা রাতের তো ব্যাপার। , দুজনেই এই একই কথা ভেবে ফোনে একে অপরকে মেসেজও করলো না।

রাতের ডিনার করে যখন দুজন আলাদা ঘুমাতে গেল তখন একে অপরের অনুপস্থিতি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারলো। এক রাতেই যেন একটা অভ্যাসে দাড়িয়ে গেছে। কোন এক অদৃশ্য চুম্বকের আকর্ষণে একজনের মনকে অপরজনের কথা ভাবতে বাধ্য করছে।

খাটের উপর শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে করতে দুজনে বুঝতে পারলো যে এটা শরীরের আকর্ষণ না। এটা শরীরের গন্ধের আকর্ষণ । মনে হচ্ছে যেন নাকটা অপর জনের চুলের মিষ্টি গন্ধ না পাওয়ার জন্য প্রতিবাদ করছে। অপর জনের হৃৎপিন্ডের প্রানবন্ত শব্দ শুনতে পেয়ে কানটাও নাকের মত প্রতিবাদ করছে। গত রাতে নিস্তব্ধ ঘরে অপরজনের নিশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ একটা মন মাতানো সুরের মতো শোনাচ্ছিল। আজ সেই সুরটা শোনার জন্যে মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠলো।

বিছানার উপর শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে করতেই দুজনে গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লো। এক রাতের দূরত্ব আকাশকে এতো বেশি ব্যাকুল ও উতলা করে তুলবে সেটা সে ভাবেনি। তাই কাকভোরে ওঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু দেরিতে ঘুমানোর জন্য একটু দেরিতেই ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে ঘরের বাইরে এসে আকাশ দেখলো সুচি অলরেডি এই ফ্ল্যাটে এসে মায়ের সাথে কথা বলছে ।

আকাশ বুঝতে পারলো যে শুধুমাত্র তার মনটাই সুচির জন্য উতলা হয়নি। সুচির মনটাও তাকে দেখতে পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে উঠেছিল।

আজ বৌভাত অর্থাৎ রিসেপশন। সেই মত সবাই এদিক ওদিক দৌড়া দৌড়ি করে নিজের দায়িত্বে থাকা কাজ করতে লাগলো। বিয়ে সোসাইটির কমিউনিটি হলে হলেও বৌভাত কোন অন্য বড়ো Banquet এ করার কথা চলছিল। কিন্তু লোকজন আবার কষ্ট করে এখান থেকে অতদূর যাবে ! তাই এখানেই বৌভাতের আয়জন করতে লাগলো।

দুপুর গড়াতে সুচি ভাবলো , ‘ আজ কি পড়বে ? যে গাউনটা বৌভাতের দিন পড়ার কথা ছিল সেটা তো দাগ লেগে , পুড়ে খারাপ হয়ে গেছে। , পড়ার জন্যে দামী শাড়ির অভাব নেই। সেদিন কেনাকাটার সময় অনেক এক্সট্রা শাড়ি কেনা হয়েছিল। কিন্তু ওই একটা গাউনই তো আকাশ পছন্দ করে দিয়েছিল। এইসব ভেবে সুচি আকাশকে বললো , “ চলো , শপিং করতে যাবো । „

আকাশ সুচির কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো , “ এখন। মানে আজকে ! আজ তো বৌভাত ! „

“ হ্যাঁ , তো কি হয়েছে ! গেলে বলো । না হলে আমি একা যাচ্ছি । „

সুচির কথায় আকাশ দমে গেল , “ ঠিক আছে চলো । „

দুজনকে ঘর থেকে বার হতে দেখে আকাশের মা জিজ্ঞাসা করলেন , “ আজ আবার কোথায় যাচ্ছিস ? „

সুচি বললো , “ একটু বাইরে যাচ্ছি মা , কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো। „ বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

আকাশের মা হয়তো বাঁধা দিতেন। কিন্তু এই প্রথম সুচি তাকে “ মা „ বলে ডেকেছে। তাই আবেগে তার মুখ বন্ধ হয়ে গেল।

আকাশের বাইকেই যাওয়া হলো সেই শপিংমলে। রাস্তায় একবার আকাশ জিজ্ঞাসা করেছিল , “ কি কিনতে যাচ্ছি সেটা তো বলো ? „

এর উত্তরে সুচি রেগে গিয়ে বললো , “ ওতো কৈফিয়ত দিতে পারবো না। চুপচাপ বাইক চালাও। „ এই উত্তর আকাশ চুপ করে বাইক চালাতে লাগলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনে সেই শপিংমলে পৌছে গেল। নির্দিষ্ট দোকানে গিয়ে গাউনটার খোঁজ করতেই সেলসগার্ল বললো “ হ্যাঁ ম্যাম আছে। ওটা একটু বেশি এক্সপেনশিপ , তাই এখনো স্টক আছে। „

আকাশ আবার সেই গাউনটা দেখে অবাক হলো। বুঝতে পারলো সুচি এটা ওর পছন্দের জন্যেই কিনছে। সুচি নিজের ডেভিড কার্ট দিয়ে পেমেন্ট করে গাউনটা কিনে নিল। রাস্তায় আসতে আসতে আকাশ বললো , “ তুমি ওটা আমার জন্যে কিনেলে না। „

এর উত্তরে সুচি কিছু বললো না। সুচি যে লজ্জা পেয়েছে সেটা বাইক চালানোর জন্য আকাশ বুঝতে পারলো না।

সোসাইটিতে ঢুকতে ঢুকতে বিকাল হয়ে গেল। একবার ফ্রেশ হয়ে দুজনেই রিসেপশনের জন্য নতুন জামা কাপড় পড়তে লাগলো। আকাশ পড়লো শেরওয়ানি আর সুচি গাউন। শেরওয়ানি পড়ার সময় আকাশ দেখলো যে সুচির গাউনের সাথে তার শেরওয়ানি একেবারেই মানাচ্ছে না। সুচি হেসে বললো , “ হাঁদা গঙ্গারাম ! গাউনের সাথে শেরওয়ানি মানায় কখনো ! „

আকাশ ভুরু কুঁচকে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো , “ তাহলে ! „

সুচি সন্দিহান হয়ে বললো , “ কোর্ট কিংবা ব্লেজার নেই ! „

“ আছে তো । „ বলে আকাশ আলমারির এক কোনা থেকে , প্যাক করা নতুন ব্লেজার বার করলো। “ এটা গত বছর কিনেছিলাম। একজনের বিয়ের নেমন্তন্ন ছিল। তখন মা পছন্দ করে কিনে দিয়েছিল। „

“ এটা পড়ো । „

আকাশ সেই ব্লেজারটা পড়ার পর সুচির পাশে দাড়াতেই দুজনকে ফটোজেনিক লাগলো।

দুজনেই নিচে নেমে হলে এসে রাজ সিংহাসনের মতো বড়ো সোফাতে বসলো। একে একে সব আত্মীয় আসতে লাগলো। সোসাইটির সবাই আসলো। সোসাইটির বাইরে যাদের নেমন্তন্ন করা হয়েছিল তারা সবাই এলো। একে একে সবাই বর বউয়ের হাতে উপহারের বাক্স তুলে দিয়ে , তাদের সাথে ফটো তুলছিল । হঠাৎ প্রজ্ঞা এসে মাসির কোলে চড়ে , মাসির কানে কানে বললো , “ জানো মাসি , ভাই আসবে । „

সুচি দেখলো খুশিতে প্রজ্ঞার চোখ জলজল করছে। একদম পাশে বসে থাকায় কথাটা শুধু আকাশই শুনতে পেল। আকাশ সুচিকে জিজ্ঞাসা করলো , “ তুমি প্রেগন্যান্ট ! „

“ কি আজেবাজে বকছো। আমি কেন ! ….

মাসি আর মেসোর কথা থামিয়ে প্রজ্ঞা বললো , “ আরে না। তোমরা ভুল বুঝছো । মায়ের পেটে ভাই আছে। মা বললো নয় মাস পর ভাই আসবে। „

প্রজ্ঞার কথায় সুচি হো হো করে অট্টহাসি হাসতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল। বললো , “ তোর মাকে ডাক। „

প্রজ্ঞা মাসির কোল থেকে নেমে ,  ভিড় থেকে নিজের মাকে খুঁজে নিয়ে এলো। সুচি গলাটা খাদে নামিয়ে চাপা স্বরে অভিমান ভরে বললো  , “ তুই আবার মা হতে চলেছিস আর আমাকে বলিস নি ! „

সুমি একবার নিজের দুষ্টু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে , মেয়েকে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বললো , “ কিভাবে বলবো ! আজ সকালেই তো কনফার্ম হলাম। „

সুচির চমকের আরও কিছু বাকি ছিল। আধ ঘন্টার মধ্যে বৈশাখী এসে হাজির। বৈশাখী কে দেখে সুচির ধুতনি বুকে নেমে আসার জোগাড় , “ আমি তো ভেবেছিলাম তুই আমাকে ভুলেই গেছিস । „

“ কেমন দিলাম সারপ্রাইজ ? „

“ হুম ভালো। বিয়েতে আসলে খুশি হতাম । „

“ কি করবো বল ! ইচ্ছা তো ছিল তোর বিয়েতে আসি। কিন্তু এই এনার ছুটি নিতেই দেরি হয়ে গেল। „ বলে নিজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্বামীর দিকে কটাক্ষ ভরে চাইলো।

বৈশাখীর মা বাবা , বৈশাখীর কলেজ শেষ হওয়ার পরেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। স্বামীর সাথে ও এখন থাকে ঔরঙ্গাবাদে। সুচির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে , সুচি আর আকাশের সাথে তার স্বামীকে আলাপ করিয়ে দিল।

আলাপ করার পরেই বৈশাখী আকাশের সাথে ইয়ার্কি শুরু করলো , “ তাহলে আমার বান্ধবীকে বিয়ে করেই ফেললি । „

আকাশ বৈশাখীর কথায় লজ্জা পেয়ে চুল ঠিক করতে লাগলো। আকাশের লজ্জা দেখে বৈশাখী বললো , “ হয়েছে হয়েছে। জানি আমি সব। ও তো কখনো আমার কাছে স্বীকার করেনি। কিন্তু বুঝতে পারতাম সব। „

তারপর সবাই খেয়ে দেয়ে বর বউকে আশীর্বাদ করে চলে গেল। সারাদিনের ক্লান্তির জন্য আকাশ ঘরে এসে জামা কাপড় ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সুচি নিজের গয়না , গাউন পাল্টে ক্রিম মাখছিল। হঠাৎ দেখলো আকাশ ঘুমের মধ্যে থেকেই ঠোঁট নাড়ছে। আর এমন ভাবে নাড়ছে যেন কারোর সাথে কথা বলছে।

এটা আকাশের ছোট বেলার অভ্যাস সেটা সুচি জানে। সুচি এক দৃষ্টিতে আকাশের ঠোঁটের উপর তাকিয়ে থাকায় আকাশকে খুব কিউট লাগলো। ছোটবেলার মতো দুষ্টুমি করার ইচ্ছা জাগলো। খাটে উঠে আকাশের মাথার পাশে বসে , দুই ঠোঁটের মাঝে তর্জনী দিয়ে নাড়াতে লাগলো , ঠিক যেমন ছোটবেলায় করতো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো সুচির কর্মকাণ্ড , “ কি করছো ! „

“ আজকে কি মনে নেই ? „

“ কি ? „

“ আজ ফুলসজ্জা ! „

“ তাহলে সেদিন কি ছিল ! „

“ ওটা ছিল বাসর রাত । আর আজকে ফুলসজ্জা … সুচির কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ তাকে নিজের কাছে টেনে নিল।

পরের দিন থেকে আস্তে আস্তে আত্মীয়রাও চলে যেতে লাগলো। দুই দিন পর আকাশের মামা মামি চলে গেল। দুটো ফ্ল্যাট খালি হতে চার দিনের বেশি লাগলো না। হঠাৎ করে ঘর গুলো খালি হয়ে গেল। সেই কোলাহল আর নেই। সবথেকে বড়ো কথা দুষ্টু প্রজ্ঞা নেই। তাই সবার মনে সাময়িক বিরহের সুর বেজে উঠলো।

তবে আগেও যা পরিস্থিতি ছিল এখনও তাই আছে। শুধু সুচি রাতে আকাশের ঘরে ঘুমায়। এই কয়দিনেই আকাশের ঘরের খোলনলচে পাল্টে গেছে। নিজের জামা কাপড় বার করতে গেলে মেয়েদের জামা কাপড় বেরিয়ে পড়ে। তার থেকেও বড় কথা আগে ঘরটা অগোছালো থাকলো আর অপরিষ্কার থাকতো। এখন নোংরার ছিটেফোঁটাও নেই আর সবকিছু গোছানো।

এই চারদিনে যে বিষয়টা আকাশকে সবথেকে বেশি অবাক করেছে সেটা হলো সুচির চারিত্রিক পরিবর্তন। সুচির রাগে আর আগের মতো সেই তেজ নেই। এখন বড্ড শান্ত হয়ে গেছে সে। এই তো সেদিন স্নানে যাওয়ার আগে জামা প্যান্ট খুলে খাটের উপর রেখে দিয়েছিল। এমনকি স্নানের পর ভেজা তোয়ালেটাও খাটের উপর রেখে দিয়েছিল। সুচি মায়ের সাথে গল্পো করে এসে খাটের উপর নোংরা জামা প্যান্ট আর ভেজা তোয়ালে দেখে বিন্দুমাত্র বিরক্ত না হয়ে জামা প্যান্ট গুলো আলনায় রেখে দিয়েছিল আর তোয়ালেটা শুকাতে দিয়েছিল। তবে সুচির এই চারিত্রিক পরিবর্তনের কারনটা আকাশ এখনও বুঝতে পারে নি।

সব আত্মীয় চলে যাওয়ার পরের দিন সকালে সুচি আবদার করে বললো , “ অফিস জয়েন করার আগে আমরা হানিমুনে যাবো না ! „

আকাশের মাথায় হানিমুনের কথাই আসেনি। কেন আসেনি সেটাই ভেবে অবাক হলো , “ হানিমুন ! „

“ হ্যাঁ হানিমুন ! এতে অবাক হওয়ার কি আছে ! সবাই যায় , আমরাও যাবো। „

আকাশ একটু ভেবে জিজ্ঞাসা করলো , “ কোথায় যাবো ? ঠিক করেছো কিছু ! „

“ সবই কি আমি ঠিক করবো ! „

“ হ্যাঁ , তুমিই ঠিক করো। কারন তুমিই এই ইচ্ছা টা প্রকাশ করেছো। „

সুচি আকাশ পাতাল ভেবে অনেক জায়গা পছন্দ করলো। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন জায়গা স্থির করতে পারলো না , “ কোথায় যাওয়া যায় বলো না ! „

আকাশ কিছুক্ষণ ভেবে বুদ্ধিমান সেজে বললো , “ আমি বলি কি ! এখন আমরা দুজন দেশের ভিতরেই কোন একটা ভালো জায়গায় গিয়ে ঘুরে নিই। পরে পুরো পরিবার মিলে বিদেশ যাওয়া যাবে। কেমন ! „

খুশিতে সুচির চোখ জলজল করে উঠলো , “ খুব ভালো বলেছো। বাবা মাও অনেক দিন হলো কোথায় যাইনি । „

সুচি যখন কথা বলে তখন আকাশ বুঝতে পারে না যে সে কার মা বাবার কথা বলছে। ওর নিজের মা বাবা না সুচির মা বাবা।

এখন রোজ রাতের ডিনারটা দুই পরিবার একসাথেই করে। এদিকে সুচি আকাশ আর আকাশের মা বাবা খাবে আর ওদিকে ওই ফ্ল্যাটে অন্ধকারে একা সুচির মা বাবা খাবে , এটা কেমন একটা দেখায় ! তাই আকাশের মা বলেছিলেন , “ এবার থেকে ডিনারটা আমাদের সাথে করো। একসাথে বসে খাবো । „

প্রস্তাবটা সুচির মায়ের কাছে মন্দ লাগে নি। তাই এখন রাতে ছয় জন মিলে একসাথেই খাওয়া হয়। তেমনি আজও সবাই একসাথে বসে খাচ্ছিল মাংস ভাত ।  সুচি আর আকাশ পাশাপাশি বসে খাচ্ছিল। বারবার সুচির কনুইয়ের গুতোতে বিরক্ত হয়ে আকাশ বললো , “ আমরা ভাবছিলাম কয়েক দিন বাইরে গিয়ে ঘুরে আসবো। „

আকাশের বাবা বললেন , “ সদ্য বিয়ে করেছিস। বাইরে গিয়ে ঘুরে আসবি এ তো ভালো কথা। কোথায় যাবি ? „

এই কয়দিনে সুচি খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করেছে যে আকাশ তার বাবার সাথে কথা বলে না । আকাশের বাবার , “ কোথায় যাবি ? „ প্রশ্নের উত্তরে আকাশ কিছু বলছে না দেখে সুচি বললো , “ দেশের ভিতরেই কোথাও । গোয়া কিংবা কুলু মানালি । „

“ কুলু মানালি এই মে মাসে গিয়ে লাভ নেই। তার চেয়ে গোয়া গিয়ে ঘুরে আয়। আমি সব বন্দোবস্ত করে দিচ্ছি। „

সুচির মা বললেন , “ সাবধানে যাস । „

“ তুমিও না ! এখনও কিছুই ঠিক হয়নি আর তুমি বলছো সাবধানে যাস । „

ডিনার খেয়ে , বাথরুম করে , আকাশ বিছানা এসে শুলো । সুচি আয়নার সামনে বসে হাতে পায়ে ক্রিম মাখছিল। হঠাৎ গম্ভীর স্বরে সে বলে উঠলো , “ তুমি এটা ঠিক করছো না। অন্যায় করছো। „

আকাশ বিছানায় উঠে বসে সুচির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সুচি বললো , “ বাবা তোমায় কিছু জিজ্ঞাসা করছিল। উত্তর দিচ্ছিলে না কেন ? „

“ আমার ভালো লাগে না আর ! „

“ কি ভালো লাগে না ? বাবার সাথে কথা বলতে আর ভালো লাগে না ? „

“ হ্যাঁ । „

“ কেন জানতে পারি ! „

আকাশ উত্তেজিত হয়ে বললো , “ তুমি এখনও কেন জিজ্ঞাসা করছো ! তোমার সাথে যা হলো …..

আকাশের কথার মাঝে সুচি বলে উঠলো , “ আরও বড়ো কিছু হতে পারতো। কিন্তু হয়নি । বাবা পিছিয়ে এসেছে বলেই হয়নি । „

“ আমরা কি কাপুরুষ যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো না ! „

“ বোকাদের মত কথা বলো না। আমরা কাপুরুষ নই। কিন্তু প্রতিবাদ করতে গেলে আমার আরও বড়ো ক্ষতি হতো। তাই বাবা পিছিয়ে এসছে শুধুমাত্র আমার আর তোমার কথা ভেবে। না হলে বাবা অবশ্যই কিছু করতো । „

এর উত্তরে আকাশ কিছু বলছে না দেখে সুচি বললো , “ মাঝে মাঝে নিজের ক্ষতি বুঝে পিছিয়ে আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হয়। একে কাপুরুষতা বলে না। কিন্তু তুমি বাবার সাথে কথা না বলে যেটা করছো সেটা অবশ্যই অন্যায়। „

আকাশ কিছু বললো না। কিন্তু তার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই বাবার সাথে কথা বলার। বাবার সিদ্ধান্ত কে এখনও মেনে নিতে পারে নি সে।

পাঁচ দিন পরের ফ্লাইটে গোয়ার টিকিট বুকিং হয়ে গেল। যে ট্যুর প্ল্যান করতে লাগে প্রায় চার পাঁচ মাস। নিজেদের ট্রাভেল এজেন্সির থাকায় সেটা করতে লাগলো পাঁচ দিন। দুদিন পর থেকেই গোছগাছ শুরু হয়ে গেল। সবাই নানা উপদেশ দিতে লাগলো। সুমি বারবার ফোন করে উৎসাহ দিয়ে ‘ কোথায় কোথায় ঘুরতে গেলে ভালো , সেটা বলতে লাগলো।

তিন দিনের দিন দুপুরে সুচি দুই মাকে সোফায় বসিয়ে বললো , “ শোন , এবার তোমরা নিজেদের দিকে একটু খেয়াল নাও । „

সুচির মা অবাক হয়ে বললেন , “ কি খেয়াল নেবো ! „

আকাশের মা বললেন , “ তুই কি আমাদের বুড়ি বলছিস নাকি ! „

সুচি বললো , “ বুড়ি হওনি কিন্তু বয়স বাড়ছে। এই বয়সে খাটাখাটনি কম করাই ভালো । „

আকাশের মা বললেন , “ তিনটে ঘর নিয়ে তিন জনের সংসার। এতে খাটাখাটনির কি আছে ! আর কাজ না করলে সারাদিন করবো টা কি ! „

“ কেন ! গল্পো করবে , আড্ডা দেবে। কিন্তু কাজ করা চলবে না। আমি একজন কে ডেকেছি। কাল থেকে আসবে। এবার তোমরা ছুটি নাও । „

আকাশের মা সুচির মায়ের দিকে ফিরে বললেন , “ এ মেয়ে আমাদের ছুটি নিতে বলছে ! „

“ আমি ওটা মিন করিনি ! „

এরপর আরও কিছুক্ষণ এই বিবাদ চললো। কিন্তু শেষে সুচির  একজন কাজের মহিলা রাখার সিদ্ধান্ত মানতে হলো। পরের দিন একজন মহিলা সকাল দশটায় এসে হাজির। নাম চপলা। সুচি তাকে দুই ফ্ল্যাটের ঘর ঝাট দেওয়া , মোছা আর কাপড় কাচার কথা বলেছে। থালা বাসন মাজার কথা উঠেছিল কিন্তু আকাশের মা ওতে রাজি হননি। বলেছিলেন , “ কে কিভাবে মাজবে ! বিশ্বাস নেই আমার। ওই কাজটা আমি করবো। „

দুদিন পরেই ভোরের ফ্ল্যাইটে দুজন চড়ে বসলো। আকাশ আগে প্লেন চড়লেও সুচি এই প্রথম চড়ছে । সুচির উৎসাহ , আনন্দ তাদের হানিমুন যাত্রাকে আরও মনোরম করে তুললো। বিমানবন্দরে পৌঁছে বাসে করে তারা পলোলেম বিচ সংলগ্ন নিজেদের রিসর্টে চলে এলো ।

চার পাঁচ তলা বিল্ডিং নয় , বাগানের মধ্যে পাশাপাশি একটা করে ঘর বিশিষ্ট রিসোর্ট । রিসোর্টে নিজেদের ঘরে ঢুকে সুচির নাচতে ইচ্ছা হলো । আকাশ ফ্রেস হয়ে এসে বললো , “ চলো যাবো তো এখন । „

সুচিও ফ্রেশ হয়ে এসে একটা নুডলস স্ট্রাপ টপ আর হট প্যান্ট পড়লো। পড়ার পর দেখলো আকাশ কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে। আকাশের দৃষ্টি বুঝতে পেরে সুচি বললো , “ তুমি ভেবেছিলে আমি বিকিনি পড়বো। তাইতো ! „

আকাশের দুষ্টুমি হাসি দেখে , সুচি ইয়ার্কি করে আকাশের গলা টিপে বললো , “ খুব শখ না ! আমায় বিকিনিতে দেখতে ! „

পলোলেম বিচের বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার বালি সাদা। আর এই বিচটাই গোয়ার সবথেকে বিখ্যাত বিচ। তাই এই বিচ সংলগ্ন রিসোর্ট লিজে নিতে আকাশের বাবাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল । আর দিতে হয়েছিল মোটা অংকের টাকা।

আকাশ একটা হাফ প্যান্ট পড়ে বিচে এসে , বিদেশী দেশি রমণীদের বিকিনি পড়ে থাকতে দেখে তার চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এলো। কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে থাকার পর আকাশ ভাবলো , ‘ কি হলো !  এতক্ষণ তো চড়ে আমার গাল লাল হয়ে যাওয়ার কথা। ,

এটা ভেবে আকাশ সুচির দিকে তাকাতেই দেখলো সুচি কাঁদছে। আকাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো , “ কাঁদছো কেন ? …..

সুচি কান্না ভেজা গলায় , দুই গালে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বললো , “ আমি আর কাউকে মারবো না। কাউকে না। „

আকাশ বোকা হলেও অতোটা নয়। তার কাছে এখন সব পরিষ্কার। পলাশকে চড় মারার জন্য পলাশ সুচির মুখে এ্যাসিড ছুড়েছিল। আর সুচি ওর চড় মারার বদ অভ্যাস টাকেই নিজের দোষ ভেবে নিয়েছে এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আর তাই সুচির এই চারিত্রিক পরিবর্তন। আকাশ সঙ্গে সঙ্গে সুচিকে জড়িয়ে ধরে বললো , “ কি উল্টোপাল্টা বলছো এসব ! তুমি কোন ভুল করোনি। „

এর বাইরে আর কি বলবে সেটা সে নিজেও ভেবে পেল না। সুচি শান্ত হয়ে এলে দুজনে নিজেদের হানিমুন উপভোগ করা শুরু করলো । স্কুবা ডাইভিং করে জলের নিচে মাছেদের সাথে ফটো তোলা। বিভিন্ন গির্জা , দূর্গ এবং অন্যান্য বিচে গিয়ে সেখানকার প্রাকৃতিক শোভা দেখা। জেটস্কি করা , প্যারাসুটে চড়া , সার্ফিং করা। তবে সার্ফিং দুজনের কেউই তেমন শিখতে পারলো না। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন স্বাদের খাবার খাওয়া , মনোরম বিচে শুয়ে সানবাথ নেওয়া আর রাতে একান্ত ব্যাক্তিগত মূহুর্ত তো আছেই।

দেখতে দেখতে পাঁচ দিন কিভাবে কেটে গেল দুজনে বুঝতে পারলো না। কালকেই সকালের বিমানে চলে যেতে হবে ভেবে দুজনের মন খারাপ।

তাই পলোলেম বিচে একে অপরের হাত ধরে মনমরা হয়ে হাটছিল। হঠাৎ সুচি বায়না করে বললো , “ আমায় পিঠে তোল । „

আকাশ অবাক হলো না। এমন অনেক আবদার বায়না সে এই পাঁচদিনে পুরন করেছে। তাই সুচিকে পিঠে তুলে হাটতে লাগলো। সুচি বললো , “ আমায় নিয়ে দৌড়াতে পারবে ! „

সুচির কথা শেষ হতেই আকাশ দৌড় শুরু করলো। আর সুচি চোখ বন্ধ করে নিজেদের হানিমুনের শেষ দিন উপভোগ করতে লাগলো। হঠাৎ কি একটা দেখে আকাশ আচমকা দাঁড়িয়ে পড়লো। সামনের দৃশ্য দেখে সে উৎসাহে বলে উঠলঝ , “ সামনে দেখ , সামনে দেখ ! „

এতদিন পর আবার আকাশ তুই তোকারি শুরু করেছে দেখে সুচি বিরক্ত হলো , “ হুম ! কি হচ্ছে ! „

“ সামনে দেখো । „

সুচি চোখ খুলে সামনে দেখতেই বিস্ময়ে তার থুতনি বুকে নেমে এলো। চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে এলো। সঙ্গে সঙ্গে আকাশের পিঠ থেকে নেমে দাড়িয়ে , সামনে একদৃষ্টিতে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে রইলো ।

সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে আছে লাল রঙের টু পিস বিকিনি। মেয়েটাকে আকাশ সুচি দুজনেই খুব ভালো ভাবে চেনে। মেয়েটার নাম “ লাবনী „ । হাতে তার একটা ককটেল এর গ্লাস ধরা। লাবনীর পাশে আরও একজন দাঁড়িয়ে আছে। কালো মোটা অর্ধেক মাথা টাক । আর বিভৎস ব্যাপার হলো সেই লোকটার বয়স আন্দাজ ষাট তো হবেই।

সুচি নিজের বিষ্ময় দূর করার জন্য , চোখে যেটা দেখছে সেটা স্বপ্ন কি না প্রমাণ করার জন্য সে আকাশের হাতে একটা চিমটি কাটলো। আকাশ “ আআআঃ „ বলে চিল্লিয়ে উঠতেই লাবনী আকাশের দিকে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে লাবনীর মুখে এমন একটা ভাব ফুটে উঠলো যার মধ্যে ভয় , খুশি , লজ্জা এবং কিছুটা দুঃখ মিলে মিশে আছে।

লাবনীর মুখ দেকে সুচির মোনালিসার ফটো মনে পড়লো। লিওনার্দো নিশ্চয়ই লাবনীকে দেখেই পেন্টিংটা এঁকেছিল। আকাশকে দেখেই লাবনী এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো , “ তোমরা এখানে ! „

সুচি লাবনীর সাথে আশা ওই বয়স্ক লোকটাকে দেখতে দেখতে বললো , “ হ্যাঁ , হানিমুনে এসছি । „

লাবনী বললো , “ ও ওয়াও। আমরাও। পরিচয় করিয়ে দিই ইনি আমার হাসবেন্ড । মি. অভিরুপ পাকরাশি। „ তারপর নিজের স্বামীকে বললো , “ এরা আমার কলেজ ফ্রেন্ড , আকাশ মিত্র আর….

লাবনীর কথার মাঝে সুচি বলে উঠলো , “ সুচিত্রা মিত্র। „

লোকটা অর্থাৎ লাবনীর স্বামী বললো , “ আমরা কালকেই এসছি । বেশ কিছুদিন থাকবো। দেখা হবে তাহলে। „

আকাশ বললো , “ আসলে কালকেই আমাদের ট্যুর শেষ হচ্ছে। সকালের ফ্ল্যাইট। „

“ ও স্যাড। তোমরা এঞ্জয় করো। আমরা আসি । „ বলে টাটা করে দিয়ে চলে গেল।

দুজনের পিঠের দিকে তাকিয়ে সুচি বললো , “ টাকার জন্য বিয়ে করেছে । „

আকাশ নিরস গলায় বললো , “ সুখী নয়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। „

তারপর ভুরু কুঁচকে পায়ের নিচের সাদা বালির দিকে তাকিয়ে বললো , “ এই লোকটাকে আমি কোথাও একটা দেখেছি। কিন্তু মনে করতে পারছি না। „ তারপরেই , “ ওওওও , তোমাকে বৌভাতের দিন বলেছিলাম মনে আছে ? ব্লেজার বার করার সময় । বলেছিলাম এই ব্লেজারটা মা গত বছর একজনের বিয়েতে যাওয়ার জন্য পছন্দ করে কিনে দিয়েছিল। „

“ হ্যাঁ বলেছিলে। „

“ এই অভিরুপ পাকরাশির একমাত্র ছেলের বিয়ে ছিল সেটা। ওখানেই দেখেছিলাম। এ লোকটা আমাদের পুরানো ক্লায়েন্ট । „

সুচির শোনার ইচ্ছা নেই। টাকার জন্য মানুষ এতোটা নিচে নামতে পারে ভেবেই সুচির গা গুলিয়ে উঠছে। এই লাবনীর ফাঁদেই আকাশ পড়তো। সবকিছু তছনছ হয়ে যেত। একমাসও হয়নি বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এই কয়দিনে আকাশের সাথে ঘর করে সুচি কতোটা সুখে আছে সেটা শুধু ওই জানে। এই সুখ কপালে জুটতো না যদি আকাশ লাবনীর ফাঁদে পা দিত। এটা ভেবেই ভয় পেয়ে সুচি আকাশের হাত কোষে জড়িয়ে ধরলো। অবশ্য আকাশ সুচির এই ভয়ের কিছুই বুঝতে পারলো না।

মন খারাপ করলেও পরের দিন নির্দিষ্ট সময়ে তারা বাড়ি ফিরে এলো। ঘরে ঢুকতেই দুই মা বললেন , “ কালো হয়ে গেছিস । „ তারপর সবার জন্যে আনা ফেন্সি গিফ্ট দেওয়া চলতে লাগলো। সবথেকে বেশি গিফ্ট আনা হয়েছে প্রজ্ঞার জন্য। সে তো খুব খুশি।

পরের দিন থেকে দুজনেই অফিস জয়েন করলো। বিয়ের পর এই প্রথম দুজনে অফিস গেল । আকাশের বাইকেই যাওয়া হলো অফিস। সুচি প্রথম দিনেই লক্ষ্য করলো যে অফিসের সবাই আগের থেকে অনেক বেশি ভদ্র ব্যবহার করছে। সুচি এর কারন খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারলো।

দুপুরের লাঞ্চ খেয়ে এসে আকাশ দেখলো , বাবার কেবিন থেকে এই কোম্পানির লিগাল এডভাইজার ও উকিল সিদ্ধার্থ কাকু রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছেন। আকাশের সামনাসামনি আসার পর উকিল মশাই বললো , “ তোমার বাবা পাগল হয়ে গেছে । „

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/3qtqdu9
via BanglaChoti

Comments