টান BY (ডিমপুচ) (পর্ব-২১)

টান

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-২১
—————————

ভিতরে এসে , কনা অবাক হয়ে দেখল আবার তার চেনা স্নেহময়ী পুবাকে. পূবা কনার কাছে এগিয়ে এসে হাত ধরে হাসলো
…….খুব অবাক হয়েছিস, তাইত, ‘কি রকম রে বাবা নিজের ভাইদের চা পর্যন্ত দিতে দিলনা’, শোন যারা যে ভাষা বোঝে তাদের সাথে সেই ভাষায় কথা বলতে হয়. …. কনাকে পাসে বসিয়ে প্রণবের দিকে তাকিয়ে
…….পুনু, তুই ওকে পরে বুঝিয়ে বলিস আমার ভাই গুলো কি চিজ. বাবা আমার বিয়েতে খুশি ছেলেন, পঙ্কজের মত জামাই পেয়ে. কিন্তু এইগুলো কিছুতেই পঙ্কজকে সয্য করতে পারতনা. বড় দুটোত যুব কংগ্রেস এর মাস্তান ছিল. একবারই মা জামাই সষ্টি তে খেতে বলেন. আমরা দীপুকে নিয়ে যাই. দিপু তখন ৮-৯ মাস বয়েস. মদ খেয়ে এসে বড় দুটো বাড়িতে এইরকম হল্লা বাধালো, সাথে গালাগাল যে আমরা না খেয়ে চলে আসতে বাধ্য হই. পথে রেস্টুরান্ট এ খেয়ে বাড়ি ফিরি. দিপুর ওই প্রথম আর ওই শেষ বার মামাবাড়ি যাওয়া. সব টাকা চাই. ওই টাকা আমার সন্তানদের দেব. আমার এক ছেলে আর তিন মেয়েকে দেব. হাঁ, মিনি নিনি ও আমার মেয়ে. পবিত্রর মেয়েকেও অল্প কিছু দেব, বৌটা কুচুত্কুরে হলে কি হবে, পবিত্র আমাকে খুব ভালবাসত. … হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো একবার, তারপর মজা করার ভঙ্গিতে, হাসি মুখে ….”” পুনু চল আজ পুবু কে ঘাবড়ে দেব. সবাই মিলে চল ওর বাড়ি. ওর বাড়িতেই আজ খাব. দিপু, শিবুকে বল গাড়ি আনতে, দেখবি, পবিত্র খুব খুশি হবে. মিনি নিনি, তপু সাঁজগোজ করে নে, আজ মজা হবে”” …….খুশিতে ডগমগ পূবা …প্রণব হাসতে হাসতে
…………. ঠেয়্য়্রেন, আজ তোমার এত খুশি হবার কারণ আমি বুজতে পারছি. এত বছরের, ভিতরের জমে থাকা রাগ উগরে দিয়েছ আজ, তাইনা ঠেয়্য়্রেন.? ….হেসে দিল পূবা, কনা একটু বিস্ময় চোখে পুনুর দিকে তাকালো. মিনি নিজের ঠোট দুটো জোড়া করে
……বাবা, তুমি বড়মাকে, কি বললে, বুজলাম না তো ……পূবা আর পুনু হ হ করে হেসে উঠলো. ..হাসি থামিয়ে, হাত বাড়িয়ে মিনিকে কাছে টেনে নিল পূবা
……..তোর্ বাবা আর আমি সেই ১৫-১৬ বছর থেকেই ভিশন ভালো বন্ধু, তাই ও মাঝে মাঝে ঠেয়্য়্রেন বলে. ঠাকুরন থেকে অপভ্রংস হয়ে ঠেয়্য়্রেন . বাড়ির বড় বৌকে ঠাকুরন বা ঠাকুরানী বলে. আমি এই বাড়ির বড় বউ ছিলামরে …… একটা দীর্ঘনিশ্বাস পরলকি পূবার? শেষের কথায় বেদনা অনুভব হলো পুনু আর কনার ..শিবু গাড়ি নিয়ে হাজির, সবাই মিলে চাপা চাপি করে চলল গরিয়ার দিকে পবিত্রর. বাড়ি. আশ্চর্য , মানুষের মন, যে পূবা বিদেশী গাড়িতে পিছনে একা চড়ে অভ্যস্ত , সে আজ চাপা চাপি করে সবাইয়ের সাথে প্রাণ খোলা হাসিতে ভরিয়ে চলল, তার কুচুত্কুরে মেঝো দেবরের বাড়ি. গাড়ি গিয়ে পবিত্রর বাড়ির একটু দুরে রাখতে বলল পূবা, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, দেব দিবাকর অস্তাচলে যাওয়ার আগে শেষ বারের মতন লাল ছটায় চারিদিক রাঙিয়ে দিচ্ছেন. বাকিদের একটু পরে আসতে বলে হাতে এক পাঁচসেরি মাটির ভারে রসগোল্লা নিয়ে পূবা মালহোত্রা, ১৬ বছরের সবিতা বা বাড়ির বড় বউ পবিত্রর বাড়ির কলিং বেল টিপলো.
” কে,” কচি গলায় প্রশ্ন করলো কেউ, আবার বেল বাজাল পূবা, দরজা খুলে, সামনে দাড়িয়ে বুলবুলি. পুবাকে দেখে অবাক
………কি রে, তুই বুলবুলি, তাই তো, বল তো আমি কে? তোর্ বাবা মা কে ডাক,,…. বিস্মিত বুলবুলি
……….বাবা, মা একজন তোমাদের ডাকছেন.পূবা ততক্ষণে ভিতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়েছে,মুখে হাসি
…….তুই কোন ক্লাস এ পড়িস, নাচ গান কিছু করিস? কথা শেষ হতে না হতেই পবিত্র ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে
…..
…….. কে, কে এসেছেন , আপনি, কাকে খুজছেন,……আপ নি …..তু………মি, বৌদি, তুমি, বৌদি, বৌদি তুমি এসেছ আমার বাড়ি …. চিত্কার করে বলতে গিয়ে গলা বুজে আসল পবিত্রর. … পবিত্রর ওই রকম আওয়াজ পেয়ে চৈতি বেরিয়ে এসে পুবাকে দেখে
…….দিদি, তুমি, স্বপ্ন দেখছি না তো? ,
হাসিতে ভরপুর জৈষ্টর কনে দেখার আলোয় মনে প্রাণে রাঙা পূবা ওরফে সবিতা বা বৌদি
….”” পুবু, কতদিন পর দেখলাম বলত তোমায়, পিছনে সবাই আছে, একজনকে খালি তুমি চিনবে না, “” বলতে বলতে হৈ হৈ করে বাকিরা উপস্থিত. পবিত্র আর চৈতি তপুকে দেখে জড়িয়ে ধরল. পবিত্র দু হাতে কাঁধে হাত রেখে
………বৌদি, অফিস টাইম এর শিয়ালদহ স্টেশনও একে দেখলে চিনতে পারতাম যে আমার দাদার মেয়ে. এ তোমার থেকেও সুন্দর বৌদি. …..আবেগে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আশার অবস্থ্যা পুবুর. চৈতিও খুশি খুব.
” দিদি, আমি দীপুকে বলেছিলাম যে তুই ওনাকে তোর্ বাবার নাম খালি জিজ্ঞাসা করিস, কিরে দিপু দেখলি তো” দিপু আর হাসি চাপলো না. হেসেই দিলো.পূবা অবস্থা কে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিল
…….শোনো পুবু, আজ আমরা সবাই এখানে খাব. তুমি গিয়ে আগে বাজার করে আন, ভালো দেখে মাছ আনো. চৈতি শোন, কাছে আয়, ….ব্যাগ থেকে দুটো সোনার চূড় বের করে
……..মা , বলতে গেলে তার সব গয়নাই আমাকে দিয়ে ছিলেন, তুই আর কনা দীপুকে বড় করেছিস, এই দুটো নে বোন্, please না করিস না. আর আমার একটা টাকা পাবার কথা আছে, বাপের বাড়ির ভাগ, পেতে দেরী হবে, পেলে বুলবুলির বিয়ের জন্য দেব, নিবি কেমন…..চৈতি জীবনে এত অবাক হয়নি.. মুখ নিচু করে চূড় দুটো নিয়ে বসে আছে, ভিতরের লজ্যা স্ফিত হচ্ছে, কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
……………দিদি, ….চোখে জল, …জানি খারাপ ব্যবহার করেছি, করা উচিত হয়নি, বয়েস বাড়লে মানুষ বুজতে পারে. দীপুকে পর্যন্ত কিছু দিই নি, কোন মুখে নেব দিদি. দিল্লিতে দিপুর বাড়ি গিয়ে মরমে মরে ছিলাম পুরানো কথা ভেবে, কিছু বলতে পারিনি. কিচ্ছু করিনি আমি, যা করেছে ওই কনা. নেওয়ার যে কোনো মুখ নেই দিদি।
………যে মুখে এই কথা গুলো বললি, সেই মুখে হাসি ফুটিয়ে নিবি,…..পূবা যথারীতি হাস্য্যময়ী
………নাও, চৈতি, বৌদি এতদিন পর এলেন, নিজের হাতে দিচ্ছেন নাও. এখনো যে অবশিষ্ট আছে, তাই ভেবেই অবাক হচ্ছি, দাদার পার্টির জন্য কত গয়না যে দিয়েছে, কেউ জানেনা………বুলবুলি একটু অবাক হয়ে বাবাকে দেখল. বাবার স্বর এইরকম, আগে শুনিনি কেন?
………মার দেওয়া একটা হার আছে. আর ৮ গাছা চুড়ি আছে. বাউটি,দুল, টিকলি, আংটি ,সীতাহার, নেকলেস আরো অনেক গয়না আছে. সব গুলি মা দিয়েছিলেন আমায় বিয়ের পর. . একটাও ভাঙ্গিনি বা পঙ্কজকে দিইনি. যা দিয়েছি বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া. সুধু একটা চেন পান্নার লকেট বসানো রেখে দিয়েছি. আমার মার স্মৃতি হিসাবে. এই গলায় যে হারটা পরে আছি, এইটা আর মায়ের দেওয়া ওই চেন বাদে বাকি সব এই বাড়ির ৫ ছেলেমেয়ের বিয়েতে দেব, বলব কোনদিন না ভাঙ্গতে. এই যে হারটা পরে আছি, সবাই বলে পুরানো ডিসাইন, এখন অচল, মরার সময় পর্যন্ত পরে থাকব. আজ পর্যন্ত খুলিনি, একদিনের জন্য, খুলবো না বেঁচে থাকতে. আর কোনো কারণ নেই, কিন্তু যখনি হাত লাগে পুরানো দিনে ফিরে যাই, সেই স্বপ্নময় দিন গুলো. কি সুন্দর সেই দিন ,পিছু ডাকেরে সেই সব ফেলে আসা দিন. পুবু আর পুণু জানে. পুবুর আনা রাধুর দোকানের মেটের কষা, পুণুর সাথে সিনেমায় যাওয়া সব ফিরে আসে, এই হারের স্পর্শে. মরে গেলে দিপুর বৌকে দিবি তোরা. ……. একটু থেমে নিচু গলায়
……………ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছি, খোজ না রেখে, কিন্তু বিশ্বাস কর ভুলিনি সেই দিন. বাকি সব দিয়ে দিয়েছি, ধুর কি হবে ওই মদ বিক্রির টাকায় গড়া গয়নায়. এই হার আর ওই বাকি গয়নায় কোনো পাপ লেগে নেই, তাই রেখে দিয়েছি, ভালো কাজেই তো দিয়েছি, কি রে পুনু. ….. সবাই চুপ পূবার কথা শুনছে.চার মেয়ে ভিতরের ঘরে গেছে, নিজেদের মত করে গল্প করবে বলে. দিপু মন দিয়ে মাকে দেখছে. সবাই পূবা মালহোত্রা কে চেনে জানে, এই সবিতাকে দিল্লির কেউ কোনদিন চিনবেনা, সুধু আমি ছাড়া. পুবু এক দৃষ্টিতে নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে. চৈতি মুখ তুলে পুবুকে কি ইশারা করলো, পুবু ঘড়িটা খুলে নিচু স্বরে পূবার পাসে বসে, হাত ধরে আবেগ জড়ানো গলায়
……..বৌদি, দিপুর আথিতেয়তা আমাদের সত্যি লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল. চৈতি আর আমি ফিরে ঠিক করি, এই ঘড়িটা দীপুকে দেব. দাদা একদিন নিজের হাত থেকে খুলে আমাকে দিয়ে বলেছিল “” পুবু, যে কোনদিন একটা ভালো মন্দ আমার হয়ে যেতে পারে, আর এই ঘড়িটা সঙ্গে সঙ্গে চুরি হবে. এইটা বাবার ঘড়ি, omega , দাম এর জন্য না, স্মৃতি হিসাবে আমাদের কাউর কাছে থাকুক, তুই পর এটা”” তুমি না করনা বৈদি, চৈতী এটা দীপুকে দিক. পূবা ঘার নাড়িয়ে সায় দিল. চৈতী ঘড়িটা নিয়ে দিপুর হাতে দিয়ে জড়িয়ে কেঁদে দিল.
……..কোনদিন তোকে কিচ্ছু দিইনি, এইটা নে বাবা. তুই এই বাড়ির একমাত্র ছেলে, পুরানো কথা মনে রাখিস না বাবা.. দিপু ঘড়ি হাতে পরে
…….অটোমেটিক, এখন এর অনেক দাম মেঝো কাকিমা. তুমি নিজের হাতে দিলে সব সময় পরব …হাসি মুখে বলল
…….কি হলো পুবু, তুমি বাজার যাবে না, খেয়ে তারপর উঠব কিন্তু, এই বলে দিলাম …পূবার কথা বলার ভঙ্গিতে সবাই উচু স্বরে হেসে উঠলো, আর পুবু একটু অপ্রস্তুত হয়ে ” এখুনি যাচ্ছি, বৌদি, এখুনি যাচ্ছি”
পুবু ভালই বাজার করেছিল, তিন বৌ মিলেই রান্না করেছে, খাবার টেবিল এ সবাই খাচ্ছে, চার মেয়ে খেয়ে উঠে গেছে, শিবুও একসাথে খাচ্ছে. চৈতী হঠাত
………দিদি, তুমি ব্যবসা করে ভালো জায়গায় আছ শুনে যে কি ভালো লাগলো কি বলব. তুমি স্বাধীন ভাবে কিচ্ছু করতে পার, আমরা পারিনা
……….তার মানে, তুমিই তো স্বাধীন ভাবে সব কিচ্ছু কর, আমিই বরং কিচ্ছু করতে হলে তোমার অনুমতি নি , কি রে পুনু তুই কিচ্ছু বল
……..ঠিকই তো, আমরাই তো পরাধীন
……..ছাই, কোনো কিচ্ছু করতে হলেই সংসারের চিন্তা আগে আসে, করব?,মাসের খরচে কম পরে যদি, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন না হলে মেয়েদের কোনো স্বাধীনতা নেই ….কনার কথা শুনে দিপু একটু আশ্চর্য হয়ে তাকালো. কনা লক্ষ্য করে
……..কি দেখছিস ওই ভাবে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে মেয়েদের কোনো স্বাধীনতা নেই, কি দিদি ঠিক বলছি কি না ? দিপু কনাকে একটু দেখল
……..ভুল. ভুল কাকিমা,একেবারে ভুল বললে. মেয়েদের স্বাধীনতা ওই ভাবে হয়না. আচ্ছা তুমি বল ওই সিনেমার মেয়েটার কথা, ওই চিন্ময়ী সেনগুপ্তর কথা. মেয়েটি একটা ব্যাঙ্ক এ চাকরি করত, ৬ জনের সংসার তার রোজগারে চলত. সেই মেয়ে একদিন রাতে অফিস থেকে ফেরেনি, বা ফিরতে পারেনি, তার একান্ত আপনজনেরা, বাবা মা, ভাই, বোন্, পারা প্রতিবেশী কি ভাবলো, না মেয়েটা চলে গেছে কাউর সাথে, বাড়িতে না বলে. যে মেয়েকে জন্ম থেকে বড় হতে দেখেছে, যার বাড়ির প্রতি এত ভালবাসা একবার কেউ সেইসব ভাবলো না. যত কুত্সিত ইঙ্গিত, প্রতিবেশীদের, যত খারাপ চিন্তা আপন জনেদের, কিন্তু মেয়েটি তো অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন ছিল, তাইনা? একমাত্র, সেই পুরানো বাড়ির বুড়ি ঠাকুমা তাকে বুঝেছিল, একে তুমি কি ভাবে ব্যাখ্যা করবে. …দিপুর বলার ভঙ্গিতে দৃপ্ত ভাব আর উপস্থাপনায় বাকিরা তাকে দেখছে।
………দিপু তুই কি ” একদিন প্রতিদিন” মৃনাল সেন এর সিনেমার কথা বলছিস ……পূবা জিজ্ঞাসা করলো।
…….হাঁ মা, ঠিক তাই. এই যে তুমি এখন এই জায়গায় এসেছ, তুমি কি স্বাধীন, তুমি কি সমাজে পুরুষেরা যা করতে পারে তুমি করতে পারবে? পারবে না. ওই মেয়েটি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হত, তাহলে সবাই কি ওই ভাবে ভাবত? না. আমি বেশি রাত করে ফিরতে পারতাম না, কেননা কাকিমা বসে থাকবে. মানে কাকিমা ধরে নিয়েছিল, ছেলে তো, একটু এদিক ওদিক যেতেই পারে, ধরে রাখতে হবে অন্য ভাবে. স্বীকার করে নিয়েছিল যে আমার অধিকার আছে, বাড়িতে না ফেরার. কিন্তু বোনেদের বেলায় তোমরা কেউ ভাবতেই পারনা যে সে রাতে নাও ফিরতে পারে, এটাই সমাজ বেধে দিয়েছে. কিন্তু আদিম সমাজে তা ছিলনা. খুব সংক্ষেপে বলছি, সেই সমাজে এক গোষ্টির সব পুরুষ অন্য এক গোষ্টির সব নারীর স্বামী হতে পারত, আবার এক গোষ্টির সব নারী অন্য গোষ্টির সব পুরুষের স্ত্রী হতে পারত. এর ফলে যে সন্তানরা হত , নিশ্চিত ভাবে তাদের পিতাকে চিন্হিত করা যেত না. কিন্তু মাকে চিন্হিত করা যেত. তাহলে সম্পত্তি কি ভাবে এক পুরুষ তার সন্তানকে হস্তান্তর করবে, সে তো জানেনা কে তার সন্তান. সন্তান তো মায়ের. একেবারে এই কারণেই মাতৃতান্ত্রিক সমাজ এর বদলে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এলো. Engels এর কোথায় নারীদের সব চাইতে বড় পরাজয়, মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়া. আমি হয়ত বিস্তারিত ভাবে বলতে পারলাম না, সেই ভাবে বলতে গেলে ভোর হয়ে যাবে. এক মার্কিন পন্ডিতের বিশাল কাজ আছে. এই সমাজ পরিবর্তনের মূলে ” ব্যক্তিগত সম্পত্তি”. যে কোনো সমাজ পরিবর্তনের মূল কারণ প্রপার্টি. পৃথিবীর প্রতিটি যুধ্হ হয়েছে এই property র জন্য. আর সেই যুদ্ধে সব চাইতে বেশ মারা গেছে আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেয়েরা আর শিশুরা.যুধ্হ সৃস্টি করে পুরুষরা কিন্তু ক্ষতি হয় নারীদের. গর্ভে সন্তান ধারণ করে নারী. কিন্তু সেই সন্তান পরিচিত হয় বাবার পরিচয়ে. বাবার পদবি সন্তান পায় কেন? মায়ের নয় কেন? বিয়ের পর মেয়েদের কেন পদবি পাল্টাতে হয়,মেয়েরা কেন বিবাহিত বলে অঙ্গে কোনো ধারক, যেমন সিন্দুর, শাখা, এইসব পরে? সবই পুরুষরা ঠিক করে দিয়েছে. দেখো এই নারী বিবাহিত, তার প্রমান ওর শরীরে. পুরুষরা বেধে দিয়েছে নিয়ম মেয়েদের জন্য আর মেয়েরা সেই নিয়ম একনিষ্ঠ ভাবে মেনে চলেছে, এ ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই. বর্তমান সমাজে মেয়েরা যে পণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়, সেটাও পুরুষরা ঠিক করে দিয়েছে. আচ্ছা কাকিমা তুমি বলত, দাড়ি কামানোর সরঞ্জাম বিক্রি করতে কেন মেয়েদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়? কারণ পয়সা দিয়ে নারীদের কিনে নিয়েছে পুরুষরা. পুরুষরা মেয়েদের সল্পবাসে দেখতে চায় বলে যে কোনো বিজ্ঞাপনে মেয়েদের ব্যবহার করা হয়. নিজেদের অজান্তে নারীরা নিজেদের পণ্য হিসাবে ব্যবহার হতে দিছে, কেন? পুরুষরা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে তাদের সম্ভ্রম, লজ্জ্যা,নারীত্য. এইটাই পুরুষ শাসিত সমাজের নিয়ম. এই কিছুদিন আগে একটা হিন্দি সিনেমা দেখলাম সেখানে একটি মেয়ে ধর্ষণের সাক্ষী দিতে উঠে কেঁদে বলছে, “আর সঝ্য করতে পারছিনা. রোজ জিজ্ঞাসা, কাপড়টা কত খানি উঠেছিল, সায়া ছিল কিনা, এইসব. আমাকে ছেরেদিন” বা তুমি তপন সিনহার সিনেমাটার কথা ভাব, ধর্ষিতাকে মুখ লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে, তার বাবাকে বার বার জিজ্ঞাসা করছে, কি হয়েছিল, এই সবই পুরুষরা সৃস্টি করেছে নিজেদের ক্ষমতা কায়েম রাখার জন্য. কোনো মেয়ে ধর্ষিতা হলে পুরুষরা প্রশ্ন তলে ” ওই মেয়ে ওখনে অত রাত্রিতে কি করছিল, ওই রকম উগ্র জামা কাপড় মেয়েরা কেন পরে, পুরুষদের tease করার জন্য ” এইসব. যেন বোরখা পরে থাকলে কোনো মেয়ের ধর্ষণ হবার chance থাকেনা. “কেন মেয়েরা ঘরের বাইরে যাবে”. সেই ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে. অর্থাত, খারাপ মেয়েকে ধর্ষণ করা যায়. যদিও এখন কিছু কিছু পরিবর্তন হয়েছে বা হচ্ছে, কিন্তু সেটা ধর্তব্যের মধেই পরে না. কিছু কুশিক্ষিত পুরুষ, লক্ষ্য করে দেখবে, সুক্ষ ভাবে এখন free sex এর হয়ে হালকা চালে লেখা লেখি করে. কারণ আরো বেশি করে নারীদের যাতে ভোগ করতে পারে. কিন্তু নিজের মা, স্ত্রী, বউ বা বোন এর বেলায় তো ওই free sex এর কথা বলেনা. তাদের বাড়ির মেয়েদের কি পছন্দ মত পুরুষ সঙ্গী বেছে নিতে দেবে, বা একটা ছেড়ে আরেকটা বা তাকে ছেড়ে আরেকটা সঙ্গী যদি তাদের বাড়ির মেয়েরা নেয়, তখন কি মেনে নেবে. না, মুখে বলবে এক রকম কিন্তু সেই মেয়েটির জীবন শেষ করে দেবে নানা ভাবে. এরা বিকৃত, মানসিকতার ফসল. ভাগ্গি ভালো যে এদের সংখ্যা খুবই কম তুমি সুধু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে এই অসাম্যর বিরুধ্যে কি ভাবে লড়বে. হাঁ,হাতে পয়সা থাকলে তোমাকে সব ব্যাপারে ছোটকার কাছে থেকে নিতে হতনা, এইটুকুই, এর বেশি আর কি? কাকিমা,তুমিত কলেজ এ পড়াতে পারতে, কিন্তু সংসারের জন্য করনি. কিন্তু ছোটকা তো সংসারের জন্য চাকরি ছাড়েনি, যে তোমার কলেজ এ পরাতে অসুবিধা যাতে না হয়. এইটাই পুরুষ সমাজের নিয়ম. আর একটা উধাহরণ দিচ্ছি, আমার যে ৪ বোন্ আছে, তপু একটু আলাদা মায়ের জন্য, বাকিদের তোমরা নিয়ম বেধে দাওনি, ” এইটা করবেনা, ঐটা করবেনা, বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে অসুবিধা হবে ” এইসব. একটি মেয়ে ১২-১৩ বছর বয়েস হলেই, তাকে বোঝানো হয়,যে তুমি ভালো হয়ে চল, না হলে বিয়ে হতে অসুবিধা হবে. আর ছেলেদের সেখান হয়, তুমি ভালো করে লেখাপড়া কর,তোমায় চাকরি করে দাড়াতে হবে. কজন মা তার মেয়েদের সেখায় যে তোমাকে চাকরি করতে হবে,? তাই তুমি ভুল কাকিমা ভুল. ….অনেকক্ষণ একটানা কথা বলে দিপু গ্লাস থেকে জল খেল. …কনা চুপ করে দিপুর দিকে তাকিয়ে থেকে এঁট হাতেই দিপুর মাথা জড়িয়ে চুলে চুমু খেল গলা জড়িয়ে, আবেগ রুধ্হ স্বরে
……দিপু তোর্ বাবাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি, তোকে দেখে বুক ভরে গেল রে দিপু. পেটে ধরিনি, কিছুই করতে পারিনি, কিন্তু তুই আমার গর্ব দিপু.

………দিপু তুই কি Engels এর “” The origin of the Family, private property and the State “” থেকে বললি, তুই পরেছিস তাই না? আর মার্কিন পন্ডিত কি morgan …….দিপু হা করে পূবার দিকে তাকিয়ে অবাক বিস্বয়ে
……..মা, তুমি পড়েছ ওই বই, আশ্চর্য, কি ভাবে পড়লে, কে বুঝিয়েছে তোমায়? .. পূবা আস্তে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল. চুপ করে অনেক দুরে জানলা দিয়ে ঘন অন্ধকারে কাউকে খুজছে
……….মা, কি হয়েছে তোমার? সন্তানের আদরের ডাকে সম্বিত ফিরল পূবার
……..মাস্টারমশাই. তোর্ বাবাকে আমি সবার সামনে মাস্টারমশাই বলতাম, পুবু আর পুণু এই নিয়ে পিছনে লাগত খুব. … উদাস নয়নে জানলা দিয়ে তাকিয়ে, প্রথম প্রেমের ছোয়া লাগা কন্ঠে, আস্তে আস্তে নিজেকেই বলছে……
কত বয়েস তখন আমার ১৪ পেরিয়েছি সবে. সে এলো,প্রথমদিন আমাকে পড়াতে. পাজামা আর গেরুয়া রঙের পাঞ্জাবি পড়ে. ৬ ফুট লম্বা ভীষণ ফর্সা, টিকলো নাক , একমাথা কালো চুল, এসে পড়ছে কপালে, আর অমন সুন্দর চোখ. যেন কাজল পরিয়ে দিয়েছে কেউ. হাসি ঝিলিক দিচ্ছে চোখে, জোড়া ভ্রু.কথাবার্তায় কি বুদ্ধির ছাপ,অথচ সম্মান দিয়ে কথা বলছে বাবাকে.কি রুপবান!এই রূপের সামনে অঞ্জলি ভরে ফুল দিতে হয়, সমাহিত হয়ে যেতে হয়. মুগ্ধ হয়ে নিজেকে সমর্পণ করতে হয়, এইরকম পন্ডিত ভদ্র মানুষের কাছে. আর আমার কি ছিল, রূপ ছাড়া.লেখাপড়ায় সাধারণের থেকে একটু উপরে,সেই আমি সবিতা সাহা, পরের পরীক্ষায় ফার্স্ট হলাম সবাইকে চমকে দিয়ে. কেবল তিনি বললেন ” তুমি আরো ভালো করবে, সে বিশ্বাস আমার আছে”. সেই অর্ধশিক্ষিত,কেবল পয়সা আছে বাড়ির, মেয়েকে যে কখন তার ভালবাসার নৌকায় তুলে নিয়েছেন বুজতেও পারিনি. যখন বুঝলাম আমি নিজেই আঁচল ছিড়ে পাল তুলে দিয়েছিলাম নৌকার, তিনিই তো তখন থেকে আমার দেবতা. সুধু তাকে খুশি করার জন্য যা পড়াতেন শুনতাম আর পরতাম.আমার দেবতাকে আর কি নৈবদ্য সাজিয়ে দিতে পারি আমি! মন দিয়ে পরতাম. মাস্টারমশাই খুশি হবেন এই ভেবে. তিনি আমাকে বিয়ে করলেন,আমার জীবন সব কিছু পেয়ে গেল. দিপু কে পেলাম, জীবন আর কত দেবে আমায়! আমার দেবতা, চোখের বাইরের আলোয়, কাউর বড় ছেলে, কাউর দাদা, কাউর comrade , দিপুর বাবা, কিন্তু আমার অন্তরের আলোয়? সুধু স্বামী নয়, সুধু বন্ধু নয়, সুধু ভালবাসারজন না, তিনি আমার মাস্টারমশাই. সবিতা সাহা নাম একতাল কাদাকে তিনি ছেনেছেন,নিজের হাতে বানিয়েছেন সবিতাকে. যে সবিতা লেখাপড়ায় দুর্দান্ত, চৌখস, প্রচুর পড়ে, সংবেদনশীল, গয়না বিলিয়ে দিতে মুহুর্তে দেরী করেনা, আত্যবিস্বাস এ ভরপুর,সেই সবিতাকে. তিনি আমার, সুধু আমার মাস্টারমশাই , সে আমার মাস্টারমশাই ছিলেন, আজও আছেন. আজকের সবিতাকে সেই তৈরী করেছে, জানিনা সঞ্জীব কে ঠকিয়েছি কিনা, কিন্তু তাকে তো কিছুতেই ভুলতে পারিনা. তাকে যে আমি সমস্ত স্বত্তা দিয়ে অনুভব করি রে দিপু. আজও তাকে অনুভব করি. ভুলে থাকার জন্য এই বিশাল ব্যবসা বাড়িয়েছি, কিন্তু ভুলতে পারিনা. একদিনের জন্যও তোমাকে ভুলিনি মাস্টারমশাই,. মাস্টারমশাই, মাস্টারমশাই,মাস্টারমশাই তোমায় ভুলিনি আমি মাস্টারমশাই, আমি যে তোমার সৃস্টি মাস্টারমশাই, ….মাথা নিচু করে টেবিল এ রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সবিতা. দিপু দৌড়ে হাত ধুয়ে এসে মাকে জড়িয়ে মাথা নিজের কাঁধে নিয়ে মায়ের চুলে মুখ লুকালো. পূবা দীপুকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো ..পুবু আর পুণু দুই দিক দিয়ে বৌদিকে জড়িয়ে ধরল
………আমরাও তাকে ভুলিনি বৌদি, দাদা না থেকেও ভিশন ভাবে এখানে আছেন.
অশ্রু সজল চোখে চৈতী আর কনা. কনা খাবারের প্লেট এ আঙ্গুল দিয়ে আকিবুকি কাটছে, হঠাত কনা লক্ষ্য করলো সুখিয়ে যাওয়া প্লেট এ লেখা “মাস্টারমশাই”

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/1ZIm9FU
via BanglaChoti

Comments