জীবন BY (ডিমপুচ) (পর্ব-৮)

জীবন

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-৮
—————————

এর ২০ দিন বাদে বিকাল ৫ টায় ইন্টার্ভিউ। প্রায় ৮৬ জন দরখাস্ত দিয়েছিলো, ইশা বেছে বেছে একজনকে প্রথম দিন ডেকেছে।ছেলেটি ঘরে ঢুকতেই ইশার মনে হোল উদয়ন। চাকরির ইন্টার্ভিউ দিতে এসেছে, ফিতে দেওয়া বাটার জুতো জিন্সের প্যান্ট , আর ফুল হাতা ছোট ঝুলের জামা, তার হাতা গোটান। ইশা বুঝল ছেলেটির প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস।৫ফুট ১০-১১ হাইট, মাঝারি গায়ের রঙ, ভালো স্বাস্থ্য । চুল আজকালের ছেলেদের মতো দু পাশে কামান, সুন্দর দেখতে।  হাসি মুখে,
………শুভ সন্ধ্যা ম্যাডাম. আমার নাম অতিন চ্যাটারজি
……… শুভ সন্ধ্যা বসুন। চা খাবেন তো……ঘাড় নারিয়ে সায় দিল। বেল টিপে চা দিতে বলে
………আপনি কি কলকাতায় থাকেন?
………হ্যাঁ। কিন্তু ম্যাডাম আপনার কোম্পানি, আপনি ইন্টার্ভিউ নেবেন ঠিক আছে, কিন্তু ফোন করলেন এক সাধারন কর্মচারী? আপনার কি মনে হয় এইটা আমার যোগ্যতার সাথে মানানসই?
………শোভন দা আমাদের প্রথম দিকের লোক, উনি সাধারন কেউ নন।
………না না ফোন করেছিল সমাদ্দার। আমি করতে বলেছিলাম দুঃখিত…।শোভন উত্তর দিল
………ও দুঃখিত যখন , তাহলে বাদ দিন। এখন বলুন কত দেবেন?
………ইন্টার্ভিউ আমি নেব না আপনি আমার নেবেন?…… মনীষা একটু গম্ভীর
………নিন তাহলে প্রস্ন করুন। কিন্তু আপনি কি টেকনিক্যাল ব্যাপারে প্রস্ন করবেন?করুন
……অন্য কিছু তো জিজ্ঞাসা থাকতে পারে?
………হ্যাঁ। বলুন কি জানতে চান
………আপনার কোয়ালিফিকেসন যা , তাতে আপনি তো বিদেশে কাজ করতে পারতেন। আমাদের কোম্পানি তো ব্লুচিপ কোম্পানি না, তাহলে এখানে কেন করতে চান………একটু চুপ করে
………বিদেশেই ছিলাম, জাপানে, বছরে ১,৫ কোটি মাহিনা পেতাম।  আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা আপনার সামনে আছে। কোন খুঁত পান কিনা দেখুন,  “কি কম পড়িয়াছে”? তাই ও ব্যাপারে প্রস্ন করতে চান করুন, কিন্তু সময় নষ্ট।
……জাপান থেকে চলে কেন আসছেন, এই প্রশ্নটি তো করতে পারি?
……অবশ্যই।……কান এঁটো করা হাসি দিয়ে ……” মাতৃভক্ত হনুমান। আমার বাবা আর মা কলেজ জীবন থেকে প্রেম করেছে, কলেজের ইউনিয়ন করেছে। ৭০ এর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। মারের চোটে বাবার দুটো পা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মা ওই অবস্থায়, বিশাল বড়লোকের মেয়ে, বাড়ির অমতে বাবাকে বিয়ে করে।  কি রকম শাশ্বত প্রেম বুঝুন “।………আবার সেই দুষ্টুমি মাখা হাসি…”  বাবা অঙ্কের টিউশন করে মোটামুটি ১০ কি,মি রেডিয়াস এ সব থেকে নাম করা মাস্টার। কিন্তু ক্রাচ নিয়ে চলাফেরা। মা ব্যাঙ্ক থেকে রিটায়র করেছে। পেরে উঠছে না। আমাকে দরকার তাদের।আমারও মনে হয় আপনাদের কোম্পানি ছোট কিন্তু প্রোডাক্ট বাজারে চালু। কিন্তু উন্নতি দরকার, তাই একটা চ্যালেঞ্জ নেওয়া। এ বাদে একটা খুব ইম্পরট্যান্ট ব্যাপার আছে কিন্তু বলা যাবে না” ……আবারও সেই দুষ্টুমি হাসি……” নিন চা দিয়ে গেছে কিন্তু অফার করলেন না, তাই আমি আপনাকে এগিয়ে দি” …… এক মুখ হাসি দিয়ে চায়ে চুমুখ দিল
প্রান খোলা হাসি চেপে রাখল ইশা আর শোভনে ।ইশা  ঠিক করে নিয়েছে একে রাখবেই। অন্য ধাতুতে গড়া। উদয়নের মতো বুদ্ধিদীপ্ত, উইটি,স্পষ্ট কথা আর আত্মবিশ্বাস। মাইনে নিয়ে টানাটানি। শেষ মেষ বছরে ৩০ লাখ এ দাঁড়াল। ১ বছরের পারফর্মেন্স দেখে আরও বাড়বে। মনীষা নিশ্চিত যে এর থেকে উপযুক্ত কাউকে কলকাতার বাজারে পাওয়া মুশকিল। শোভন ও এক মত।
………আপনি খুব স্পষ্ট কথা বলেন , অসুবিধায় পরেন না?
………পড়লে  দেখা যাবে। ধুর, না পোষালে টিউশন করবো। প্রচুর আয়।……চেয়ারে এমন ভাবে হাত ছড়িয়ে বসে আছে যে নিজের বৈঠক খানা
……একটা শর্ত। টেকনিক্যাল ব্যাপারে কেউ নাক গলাবে না, প্লিস। কারন আমার কাজ আর দায়িত্ব আমি জানি। সিনিয়র কেউ নাক গলালে, ক্লাশ হতে পারে, তাই বলছি।

দেড় বছরের ভিতর নতুন ভাবে প্রোডাক্ট বাজারে  ছেড়েছে আর বাজার নিয়েছে। টার্ন অভার ২০% বেড়েছে। মনীষা খুব খুশি। যে ডিপ্রেশন ছোবল মারতে যাচ্ছিলো,  এই কোম্পানির কাজ মনিশাকে তার থেকে বাঁচিয়েছে। দিনে প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা অফিসে কাটায় কাজে বা অকাজে। অকাজ মানে সন্ধ্যার পর শোভন আর অতিনের সাথে আড্ডা। এই সন্ধ্যা টুকুর জন্য মনীষা সারা দিন অপেক্ষা করে থাকে, বিশেষ করে অতিনের জন্য। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি  আর  রসবোধ। অতিন না থাকলে শোভন এর সাথে আড্ডা মারে।শোভন মনীষাকে বলেছে যে উদয়ন শেষের দিকে পাগলের মতো মদ খেত। একদিন হঠাৎ উধাও, ব্যাস তারপর আর খোঁজ পায়নি

…………কিন্তু মনীষা তুমি, মেয়েদের না দেখে থাকলে কি করে? আমি ভাবতেও পারি না। চুপ করে শোনা ছাড়া কি বা করতে পারে ইশা।  কলকাতায় এসে মনীষা আর একটা কাজ প্রথমেই করেছে। মনীষার মাসি গোল পার্কের কাছে বাড়ি। একদিন সোজা হাজির। মাসির অনেক বয়েস, ঠেস দিয়ে অনেক কথাই শোনাল আর মনীষাকে হজম করতে হোল মুখ বুঝে। কিন্তু একটা ছোট করে কাজ চলার মতো সম্পর্ক শুরু হোল নতুন করে। মাসির মেয়ে, জামাই তারাও সহজ ভাবেই নিয়েছে। আজকের প্রজন্ম ব্যাভিচার নিয়ে খুব ভাবিত নয়। কিন্তু ষার জন্য যাওয়া, সেই টাপুর আর টুপুরের খবর কেউ দিতে পারল না। মাসির দেওর পুলিশের উঁচু পদে আছে

………আমি এক বছরে কিছুই করতে পারিনি। ভোজবাজির মতন উরে গেছে একটা পরিবার।মনিদি, তুমি একটা কাজ করো।
………কি কাজ বাচ্চু?
………তুমি কাগজে এই বলে বিজ্ঞাপন দাও যে “টাপুর আর টুপুর দুই বোন, সাথে দিদিমা। বয়েস ২৩ আর ১৮। কেউ খবর দিলে ৫০০০০ টাকা পুরস্কার”। দেখ যদি কিছু হয়………মনীষা তাই করেছিল। যে দিন কলকাতার সব কটা কাগজে  এই বিজ্ঞাপন বেরয়,টুপুরের চোখে পড়ে। তার ৭ দিনের ভিতর বাসা পালটে  সোনারপুর আর বোরখা পরা শুরু।

অফিস যদি হয় শান্তির জায়গা, অশান্তির জায়গা বাড়ি। সেরা টাপুর টুপুর কে পাওয়ার জন্য করে নি  এমন কিছু নেই। অস্থির হয়ে উঠেছে। তার থেকেও বড় বিপদ অল্প বয়েসি সিরিয়ালের নামার জন্য ইন্টার্ভিউ দিতে আসা মেয়েরা। ইশা বুঝতে পারে সেরা আসক্ত হয়ে পড়ছে ওই অল্প বয়েসি মেয়ে গুলোর ওপর। বাড়িতে দুজনের সেক্স কমে গেছে। ইশা ৪৯ ছুই ছুই,সেই ভাবে আর টানে না সেক্স।

অতিন জয়েন করার ১ বছর বাদে মনীষা অতিন কে নিয়ে আসানসোল গেছে পাওনা আদায়ে। প্রায় ২২ লক্ষ টাকা ৩ বছরের কাছা কাছি বাকি, কিছুতেই দিচ্ছে না।৩-৪ বার লোক পাঠিয়ে কিছু হয়নি,  ফন্দী ৩ বছর কাটিয়ে কোর্টে গিয়ে বলবে যে “টাইমবার্ড” অর্থাৎ পাওনার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাই আজ না পেলে দু দিনের ভিতর কেস ফাইল করবে। প্রায় সারে ৩-৪ ঘণ্টার পথ।  সমস্ত পথ অতিন ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছে। মনীষা অতোটা পথ একা একা সিগারেট টেনে গেছে। ব্যাবসায়িটি ধুরন্ধর কিছুতেই মানবে না আর অতিন এক মনে কাগজ পড়ছে। ব্যাবসায়ি প্রায় মনীষাকে কাবু করে ফেলেছে
………আপনাদের এ এম সি কাদের সাথে?
………ও আছে, চিনবেন না
………না চিনলেও বার করতে ২৪ ঘণ্টা লাগবে না আর তাকে ডি লিস্ট করে দেব। দেখব আপনি কেমন ভাবে চালান। নিন ম্যাডাম উঠুন , কথা বলে লাভ নেই…কথা শেষ করে অতিন ষেই উঠে দাঁড়িয়েছে
……বসুন বসুন, আলোচনা তো শেষ হয়নি বসুন
অতিন বসলো  আর ৫ মিনিটের ভিতর পুরো ২২ লক্ষ টাকার চেক পকেটে পুরে “ আচ্ছা আসবেন  কলকাতায়”।
মনীষা বুঝল বুদ্ধিমান লোক কমকথা বলে। যেটা বলে তা বুলেট। বহুদিন বাদ এক নামকরা হোটেলে দুপুরে মাংস ভাত খেয়ে অতিন, মনীষা গাড়িতে গা এলিয়ে দিয়েছে। মনীষা সিগারেট বার করে ধরিয়েছে “ গোলাম গাড়ি থামা, ট্রেন এ যাব”
……।তার মানে, ট্রেনে কেন যাবে?
………না গিয়ে কি করবো? আপনি সমস্ত সকাল মুখের ওপর সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লেন আর আমি শুকিয়ে ছট ফট করলাম। এখন ভরপেট মাংস ভাত খেয়ে আপনি সুখ টান দেবেন আর আমি মরি আর কি? না ট্রেন এ যাব। গোটা ৩ সিগারেট খেয়ে ট্রেনে চরবো………
……অতিন আমি তোমার মায়ের বয়েসি
……মায়ের সামনে সিগারেট খাই…।মন থেকে হেঁসে মনীষা “ এই নাও। অফিসে গিয়ে আবার বল না ম্যাডামের সিগারেট খেয়ে এলাম
………এক সিগারেটের জন্য এতো কথা। উফফ ভাবতেও পারিনা মা কিন্তু কিছু বলে না
………সিগারেট দিয়ে শুরু করলে, এর পর কি খাবে কে জানে
………খাই তো। মা চেঁচায়, এই যেমন আপনি এখন বক বক করছেন
………গুনধর ছেলে। “মায়ের সামনে খাই তো”
………আপনি খাওয়াবেন একদিন? বেশ জম্পেশ করে …।। “অতিন”  কপট ধমক মনীষার। “ মায়ের সামনে খাও, আমিও তোমার মাএর বয়েসি, মনে রেখ?
…… আপনাকে মা বলে ডাকতে হবে? সে একদিন না হয় ডেকে দেব
……মারবো তোমায়
………মা ও এই ভাবে বলেন “অনি মার খাবি”…।ভিতরে ভিতরে মনীষা খুসিতে ফেটে পরছে।ঘণ্টা  খানেক সময়ের ভিতর গোটা ৪ সিগারেট খেয়ে গান ধরেছে নিজের মনে “ এই পথ যদি না শেষ হয়” মনীষা গম্ভীর হয়ে তাকাতে “ শোন বন্ধু শোন” ,  ম্যায় প্যার কি রাহি হু‘ তারপর “টাপুর টুপুর বৃষ্টি পরে” এইবার মনীষা ঘুরে “অতিন গরমে মানুষ মারা যাচ্ছে আর তুমি গাইছ টাপুর টুপুর বৃষ্টি পরে”
………গাইতে দোষ কোথায়। মন আজ খুশ। বেশ লিরিক্যাল, টাপুর টুপুর…।সুরু করলো নানা সুরে দুটি কথা কে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গান গাওয়া। মনীষা কথা না বাড়িয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে তার মনের টাপুর টুপুর কে দেখছেন।

জীবন নিরবিছিন্ন সুখ, শান্তি অথবা অসুখ অশান্তি দেয় না। জীবন তা তা থই থই করে নাচায়। সবে এখন মনীষার জীবনে শান্তি আসছে, সুখ ছিল অফুরন্ত গত ১৭-১৮ বছর কিন্তু শান্তি এই প্রথম। শান্তি মানে মনের গভীর থেকে উঠে আসা এক প্রশান্তি। মস্তিষ্কে জানান দেয়,’বাহ, জীবন কি সুন্দর, চমৎকার”।এর পিছনের কারন কোম্পানি চালাতে সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। মনীষা উপলব্ধি করে সে দুটোতেই উত্তীর্ণ হয়েছে। কোম্পানির অনেক কিছু ঝাট দিয়ে বার করে টাটকা বাতাস এনেছে। তার মধ্যমণি অতিন। আর একটি মেয়ে বছর ৩০ বয়েস। এমবিএ করা মেয়ে, কিন্তু তুখোড়। অতিন সমানে তার পিছনে লাগে কিন্তু মৌসুমি ঠিক পাল্টা উত্তর দেয়। দারুন উপভোগ্য। মনীষা বুঝেছে আগের জমানার গাম্ভীর্য বা আলাদা রাখা নিজেকে, এখন কাজ দেবে না। মৌ মাঝে মাঝে সান্ধ্য কালীন আড্ডায় থাকে। সেই সব দিন অতিন আর মৌয়ের লোকদেখান ঝগড়া মনীষা আর শোভন খুব উপভোগ করে। শোভন আলাদা করে বলেছে “ মনীষা এই অতিন আর মৌ অফিসে প্রান এনেছে।
কিন্তু এর মাঝে পিন পিন করে মশা কামড়ায় মনীষাকে। সেরা। মনীষা নিশ্চিত সেরা এখন ড্রাগ নেয়। সিরিয়ালে কাজ করতে চাওয়া প্রচুর মেয়ে আসে, সবই অল্প বয়েসি। মনীষার সন্দেহ সেরা তাদের থেকে সুযোগ নেয়। প্রমান পায়নি, সুধুই সন্দেহ। সন্দেহের অন্যতম কারন, সেরা আর মনীষার  দৈহিক সম্পর্ক তলানিতে। মাসে ২ বার হয়ত সেরা টেনে নেয়। ওই রকম সেক্স পাগল লোকের কাছ থেকে এই আচরন আনএক্সপেকটেড। মনীষার সন্দেহ অমুলক নয়।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/zEk7StQ
via BanglaChoti

Comments