টান BY (ডিমপুচ) (পর্ব-১১)

টান

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-১১
—————————

বাড়ি ফিরে তপতী ঘরে দরজা দিল। পূবা জানত এটাই হবে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা থেকে রাত ” তপু দরজা খোল, তপু খেতে আয মা , তপু ” কোনো শব্দ নেই। আবারও তপু, তপু ” কোনো উত্তর নেই। সঞ্জীব গিয়ে ” তপু মা, মা, খাবি আয , তপু ” . পূবা ভাবলো একবার বিরজুর বাড়ি ফোন করে যদি, দীপুকে পায়। পেয়েও গেল
…..দিপু, কি করব, কিছু বুজতে পারছিনা , তুই কিছু বলবি, ”
……তুমি ফোন কেটে দাও। আমি ফোন করছি, তুমি ওকে আমার নাম করে ডেকে দাও … পূবা তাই করলো। ১ মিনিট এর ভিতর দিপু ফোন করলো
….তপু, তপু, দিপু ফোন করেছে, তোকে চাইছে, তপু , আর বলতে হলো না, তপতী ছুটে এসে ফোন ধরে, ” দাদা, বল কি ব্যাপার ”
…….শোন , কাল সন্ধ্যাবেলা তুই আমার আড্ডায় একবার আয , কিছু কথা আছে, মাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে দেবে জায়গাটা।
……..ঠিক আছে, আমি আসব ।
……..কি করছিলি, খাওয়া হয়ে গেছে, ?
…….না আমি খাবনা, খিদে নেই।
……বোকা মেয়ে, না খেয়ে কদিন থাকবি, খেয়েনে, আর ভিতরের সব রাগ উগরে দে। কি ভাবে করবি, তুই ভালই জানিস। রাগ পুষে রাখলে শরীর খারাপ হবে, খেয়ে নে।
…….ঠিক আছে, তুই বলছিস, খাব।

টেবিলে ৩ জন খাচ্ছে, নিঃশব্দে , খাওয়া প্রায় শেষ,
……..তপু মা, আমি তোকে ডাকলাম তুই এলিনা , আর দিপু বলল তুই খেতে আসলি, এতে আমার খারাপ লাগেনা।
কঠিন দৃষ্টিতে তপতী সঞ্জীবের দিকে তাকালো তারপর কঠিন স্বরে , ” তার কারণ আমি আজ জেনেছি , যে তুমি আমার পিতাকে হত্যা করেছ। তোমার প্রেমিকা, আমার মাকে, পাওয়ার জন্য তুমি আমার পিতাকে হত্যা করেছ। বাবা , আমি স্বপ্নেও কোনদিন ভাবতে পারনি যে you are a murderer, তুমি একজন খুনি। সুধু প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্য। মার তবু সৎ সাহস আছে বলার যে দাদা পুলিশকে জানালে স্বীকার করে নেবে, আর তুমি বাবা কাপুরুষের মত পালিয়ে আসলে। I hate you.
…….তপু , চিত্কার করে উঠলো সঞ্জীব, mind your language, আমি এত বছরের ভিতর একবারও বুজতে দিইনি যে আমি তোর বাবা নই। তুই আমার মেয়ে।
……হাঁ, আমি তোমার মেয়ে, ঠিক, কিন্তু কিসের বিনিময়ে, আমার পিতার বিনিময়ে, যাকে তুমি খুন করেছ।
…….রাগের মাথায় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, কিন্তু আমি তোকে নিজের বলে নিয়েছি
…….তাতে হত্যার নৃশংসতা কমেনা। দাদার জীবন তুমি আর মা শেষ করেছ। কেন?তোমার desire পূরণ করার জন্য।
……দাদা, দাদা, এতদিন কোথায় ছিল তোর্ দাদা, আমি তোকে মানুষ করেছি।
…….দাদা ঠিকই ছিল, তোমারা তাকে জানতে দাওনি। আমাকেও জানাওনি। কেন? কিসের ভয়? ওই হত্যা চাপা রাখার জন্য। পাছে, কোনভাবে কেউ জানতে পারে যে তুমি, একটি খুনি, তাই দাদার খোজ করনি।
……দাদা!, আমার সুখের সংসার ভেঙ্গে দেবার জন্য ও আজ এই নাটক করেছে, আমিও দেখে নেব। চিত্কার করে সঞ্জীব বলল
…….সঞ্জীব, সাবধান, দিপুর যেন কোনো ক্ষতি না হয়। তোমাকে সাবধান করে দিলাম …. এইপ্রথম পূবা কিছু বলল, তাও রীতিমত জোরের সাথে
…….কেন, কিসের জন্য, তপু আগেও রাগ করে খেতে চায়নি, পরে খেয়েছে, তখন কাউকে ফোন করার প্রয়োজন হয়নি, আজ তুমি ফোন করতে গেলে কেন?ছেলেকে পেয়ে মাথা ঘুরে গেছে ?
…….সঞ্জীব, ঠিক করে কথা বল, তোমার জন্য, সারা জীবন দিয়েছি। আমার প্রথম সন্তান দিপু তোমার জন্য সম্পর্ক রাখিনি, তুমি পঙ্কজের সন্তানকে চাওনি বলে,ভুলে গেছ?
কান খুলে শুনে রাখো সঞ্জীব, আর না, আমি জাহান্নামে যেতে রাজি আছি তো জেল কোন ছার, আমি দিপুর সাথে সম্পর্ক রাখব। তপুকে তার ভাইয়ের ভালবাসার থেকে বঞ্চিত হতে দেব না …… চিত্কার করে পূবা সঞ্জীবের চেয়ারএর কাছে এসে বলল।
………আমিও তোমায় বলে দিলাম পূবা ,ওই দিপু আমার সুখ শান্তি কেড়ে নেবে আমি তা হতে দেবনা। সঞ্জীব চিত্কার করে উঠলো। তপতী নিঃশব্দে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো।

রাতে তপতী শুনতে পেল বাবা আর মা প্রচন্ড ঝগড়া করছে, তার পাপা দাদার নাম গালাগাল দিচ্ছে এইরকম কোনদিন শোনেনি। কি করবে সে? কাল দাদাকে বলতে হবে ,নিশ্চই বলব। কখন সুখের ঘুম এসে তাকে নিয়ে গেল কিশোরী বুজতে পারলনা।

রাধা বিছানায় সুয়ে দীপুকে বুকে টেনে নিল , যেটা সাধারণত হয় না। দীপুকে জড়িয়ে, চুমু খেতে খেতে,
……..কেন যে তুই এত ছোট, নাহলে ঠিক বিয়ে করতাম তোকে, একটা সন্তানের জন্য, তোর্ সন্তান তা ছেব্লেই হোক বা মেয়ে, ভালো হবেই। আজ তুই যখন পূবার সাথে কথা বলছিলি আমার গর্বে বুক ভরে উঠছিল। দিপু আমার।দিপু কে আমি মনে মনে স্বামী হিসাবে নিয়েছি, ও আমার আর কাউর না,তুই আমার দিপু আর কাউর না। তীব্র চুম্বন এর আবেগে দীপুকে নিজের শরীরের সাথে যেন মিশিয়ে দিতে চাইছে রাধা। দীপুও রাধাকে ব্নিজের অংশ মনে করে জাপটে ধরেছে।
……তোমার সুধু তোমার, কি ক্ষতি বিয়ে করলে, ২-৪ দিন লোকে বলবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
…….নারে হয়না, এটা হয়না, আমি যে তোকে ভালোবাসি, সেই জন্যই আমি এইটা হতে দেবনা। যতদিন না বিয়ে করিস তুই আমার হয়েই থাকবি, কথা দে ?
……মাসি, কথা দিতে হবে, তুমি কি বোঝনা আমার মন কি চায়? কথা দিলাম, আর কাউকে ভালবাসব না। হয়ত শরীরের জন্য মিলিত হব, কিন্তু ভালো সুধু তোমাকেই বেসেছি।
…..সে তুই যা খুসি কর , কিন্তু তুই আমারি হয়ে থাকবি, আমি তোর্ বিয়ে দেব। পূবা থাক্লবে সেই বিয়েতে, কিন্তু বিয়ে আমি দেব। রাজি,?
……..তুমি যা বলবে তাই করব, তাই। একদিকে পৃথিবী আর একদিকে তুমি, “তুমহি হো মাতা, পিতা ভি তুম হো ,তুমহি হো বন্ধু সখা ভি তুম হো ”

রাধা আর দিপুর সেই রাত্রির মিলন দুজনেরই অভূতপূর্ব তৃপ্তিদায়ক মনে হলো।
……..মাসি এত সুখ আগে কোনদিন হয়নি, আজ সম্পূর্ণ অন্যরকম, তোমারও কি তাই? , দিপুর মাথা নামিয়ে একটি চুমু দিয়ে মাথা নেড়ে রাধা বুঝিয়ে দিল “হাঁ “. দিপু একটু চুপ করে সিগারেট নিয়ে দুটো টান দিল তারপর “আমার মনে হচ্ছে, আমার মন বলছে মাসি , কিছু একটা ঘটবে, খুব সিগ্রী, ভয়ানক কিছু একটা। এক অজানা আশংকা মনে চেপে বসছে, কেন জানি না, সঞ্জীব কে নিয়ে। সঞ্জীব পরাজয় মেনে নিতে পারেনা, সেই মানসিকতা ওর নেই, থাকলে, ওই ঘটনা ঘটাত না”
…….ওর সেই সাহস হবেনা। তাহলে বিরজু ওকে শেষ করে দেবে। জানে মেরে দেবে। তুই ভয় পাসনা। আমরা আছি
……সেটা , সার আমাকে বলেছেন, আমি আমার জন্য না , মা কে নিয়ে ভয় হচ্ছে। দেখা যাক, এইবার কিছু করার চেষ্টা করলে ও পার পাবে না।সেটা সঞ্জীব জানে।
তিনদিন পর সন্ধ্যাবেলা দিপু আড্ডার জায়গায় গেল। দেখেই তো বন্ধুরা হই হই করে উঠলো। কি ব্যাপার কি হয়েছে, এই সব
…….শোন আজ তদের একটা সারপ্রাইস দেব। তোদের তো বলেছি আমার মায়ের কথা, তাকে খুঁজে পেয়েছি, সে কে জানিস ?
…….কে কে , তুই সেদিন থেকে আসছিসনা , সে কে?
…….পূবা মালহোত্রা। হাঁ, সত্যি, তোরা যা শুনেছিস ওনার সম্পর্কে কিছুটা হলেও সত্যি, উনি নিজেই বলেছেন। কিছু বলার হলে আমার সামনে বলিসনা, এইটা অনুরোধ।
…….চিনলি কি ভাবে,?বিষ্ণু জিজ্ঞাসা করলো। দিপু তখন সব কথা বলল যে উনি দীপুকে খোজ করার কথা অ্যালবাম এর কথা সব। এই সমেয়ই
……দাদা, দাদা , ….তাকিয়ে দেখে তপতী , এক গাল হেসে দিপু ধরে সামনে নিয়ে আসল।
…….এ কে জানিস, আমার বোন , নিজের বোন , কি রকম দেখতে বল ? দিপু খুব খুশি মনে প্রশ্ন রাখল
……..এই মেয়ে শোন, তুই লেখাপড়া ছেরে দে, নাচ সেখ, সাথে একটিং, তুই বম্বে তে সিনেমায় নির্ঘাত চান্স পাবি। দীপক খুব গম্ভীর হয়ে বলল। তপতী স্বভাব অনুযায়ী হাসতে লাগলো। একে একে সবার সাথে পরিচয় হলো। তারপর দিপু ওকে নিয়ে একটু আড়ালে গিয়ে
…….তুই প্রতি শনিবার বিকালে আর রবিবার বিকালে আমার বাড়ি আয় , অঙ্ক শেখাব, আর বাড়ির কি খবর।
…….সেইদিন থেকে বাড়ি তে সুধু অশান্তি। আমি পাপাকে খুব করে বলেছি, তবে দাদা তুই সাবধানে থাকিস, পাপাকে বলতে শুনিছি ‘আমি ওকে ছাড়বনা, ও আমার সংসার ভেঙ্গে দিতে চাইছে’.
……..এইটাই হবার জন্য আমি তোর্ সামনে বলেছি। যাতে সারা জীবন অশান্তি ভোগ করে। শোন তুই আমার বাড়ির ফোন নম্বর রেখেদে। কাউকে দিবিনা আর বলবি ও না। মাকেও না। বাড়ির ঠিকানা কাউকে দিবিনা। আর বাড়িতে কি কি হয় আমাকে জানাবি। চল তোকে খাওয়াই। এই বলে দিপু বন্ধুদের বলে তপতী কে রাজদূতে বসিয়ে নিয়ে একটা ভালো রেস্টুরান্ট এ গিয়ে দুজনেই মোগলাই খানা খেয়ে তপতী কে ওর বাড়ির থেকে হাত ৫০ দুরে ছেড়ে দিল।

রাতে তপতী কিছু খাবে না বলে জানাতেই আবারও অশান্তি।
……তপু খাবে না কেন ,কি হয়েছে? সঞ্জীব জিজ্ঞাসা করলো
…..খেয়ে এসেছে তাই খাবেনা . পূবা উত্তর দিল
……..কার সাথে খেয়ে এসেছে, আর এত রাত্রি অবধি ছিলই বা কোথায়, তপু তপু ….সঞ্জীব বেশ রুখ্য ভাবে ডাকলো।
……..কি হয়েছে, ? তপতী জিজ্ঞাসা করলো
……..তুই খাবি না কেন, কার সাথে খেয়ে এসেছিস, কোথায় গেছলি যে এত রাত হলো?
…….আমার পেট ভর্তি, দাদার সাথে খেয়ে এসেছি, কেন কি হয়েছে? দিপুর কথা শুনে সঞ্জীব যেন পাগল হয়ে গেল, চিত্কার করে
…….আবার দাদা, শুনে রাখ, ওর সাথে তুই কোথাও যেতে পারবি না, কোনো রকম দেখা করবিনা একা একা , কোনো সংস্রব রাখা চলবেনা ওর সাথে। ও আমার সংসার ভাঙ্গতে চাইছে, আমি বুজতে পারছি।
…….কেন রাখবো না, আমি সপ্তাহে দুদিন যাব অঙ্ক শিখতে , কেন আমি আমার নিজের দাদার সাথে সম্পর্ক রাখবো না, রাখব, একশবার রাখব। তপতী ও জোরের সাথেই উত্তর দিল
……তপতী, মুখে মুখে কথা বলবিনা, কোনো সম্পর্ক রাখা চলবেনা, এইটাই আমার শেষ কথা
…….সনু, তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? কেন ও সম্পর্ক রাখবেনা, নিশ্চই রাখবে, ওর নিজের দাদা, এক বাপ মায়ের সন্তান দুজন। আমাদের দুজনের পাপ কেন তপু বহন করে চলবে। পাপ করেছিলে মনে নেই ? ব্যঙ্গ করে পূবা বলল
…….না, কোনো পাপ না, nothing is unfair in love and war,, কোনো পাপ না এটা ,একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল , ব্যাস।
……দুর্ঘটনা? বলতে পারবে কোর্ট এ দাড়িয়ে , যে কোনো পাপনা , দুর্ঘটনা? আবার পূবা বিদ্রুপ করলো । ,
…….আমি বুজতে পারছি, তোমরা ৩জন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছ। আমিও দেখে নেব ওই দীপুকে , বলে দিলাম। আমার নাম সঞ্জীব মালহোত্রা।
…….সনু, কান খুলে শুনে রাখো, শেষ করে দেব তোমায়, দিপুর গায়ে যদি আঁচর লাগে। আর মনে রেখো বিরজু ওকে ছেলের মত দেখে। বিরজু কিন্তু খুব ক্ষমতাবান MP. একটু থেমে .,” ভুল করছ সনু। ওদের ভিতর সম্পর্ক গড়ে উঠতে দাও, সেটাই ভালো হবে। তুমি তপতী কে বারণ করলেও ও যাবে, দিপু ওকে পড়াবে, তপুর ব্যাপারে দিপু যা বলবে সেটাই শেষ কথা, আমি এই কথা দিয়ে এসেছি। তপু যদি চায় ও দিপুর ওখানে থাকবে।”

…….তার মানে ? তপুর ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবনা, কেন? দিপু ওর কে, এতদিন তো দাদা বাদ দিয়েই চলেছে, তাহলে আজ কেন দিপুর কথা শেষ কথা হবে, না এ হতে দেব না।
…….তার কারণ আমাদের পাপ। তুমি ওর বাবাকে হত্যা করেছ ,আর আমি তাকে গোপন করে গেছি। বিয়ের সময় যদি দীপুকে আনতে দিতে তাহলে আজ এই অবস্থ্যার সম্মুখীন হতে হতনা। তখন আনতে দাওনি, তার কারণ তোমার ভিতর পাপ বোধ ছিল তুমি দিপুর ভিতর পঙ্কজ কে দেখতে চাওনি, তাই আনতে দাওনি। আমাকে আমার ছেলের থেকে দুরে থাকতে বাধ্য করেছ। আমিও আমার পাপবোধ থেকে তোমার কোথায় চলেছি, কিন্তু আরনা । এখন থেকে তপুর ব্যাপারে দিপু শেষ কথা, সে তুমি মানতে পার ভালো, না মানতে পার তো সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমি চাই ওরা দুই ভাইবোন ভালোভাবে মিশুক, নিজেদের চিনুক, পরস্পরকে ভালোবাসুক।

……..পূবা , আমি আমার সংসারএ অন্যলোকের খবরদারি সয্য করবনা, আমি কিছুতেই দীপুকে তপুর ব্যাপারে নাক গলাতে দেবনা, তাতে যা হয় হোক।আমি ওকে বাবার স্নেহ দিয়েছি।
……..সেইজন্যই, দিপু ওকে নিজের কাছে রাখতে চায়নি, বুঝে দেখো ওই ২২ বছরের ছেলের মানসিকতা, আর তোমার ৪৮ বছরেও বুধ্হী হলনা। দিপু মানুষ হিসাবে তোমার চাইতে অনেক উপরে, তুমি অর নখের যুগ্গী নয়।

…..পূবা , আমি তোমার স্বামী,…… চিত্কার করে উঠলো সঞ্জীব
……জানি, আমার আগের স্বামীর হত্যাকারী, আর সেই স্বামীর সন্তান দিপু। তুমি দিপুর ব্যাপারে কোনো কথা বলবেনা, তোমার কোনো অধিকার নেই। পূবাও চিত্কার করেই উত্তর দিল। পূবা একটু চুপ করে থাকলো। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে , তারপর গলা নামিয়ে ভালোভাবে বলল ” সনু, একটু তপুর মনের অবস্থা ভেবে দেখো, হঠাত ও জানতে পারল যে ওর পাপা আর মা ওর পিতার হত্যাকারী। যাদের নিয়ে ওর পৃথিবী, তারাই ওর পিতাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। ও এখনো যে ভেঙ্গে পরেনি তার কারণ দিপু। এই সত্য যেমন জেনেছে, তার সাথে ও একজন নিজের লোক পেয়েছে, যে ওর পিতার সন্তান, তাকে ও স্বাবাভিক ভাবেই জড়িয়ে ধরবে। আমরা যে অন্যায় করেছি, তার ফল ভোগ করতেই হবে, আর কোনদিনই তপু আগের তপু হবেনা। এই সত্য মেনে নাও, তপুকে যে টুকু পাচ্ছ সেটাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। দীপুকে হিংসা করে নিজের ক্ষতি করনা। ” ,….তপতী সব শুনলো। একটা জিনিস তপতী লক্ষ্য করলো সঞ্জীবের মুখের চেহারা, যেন ছিড়ে খাবে দীপুকে। দুই হাতের মুঠি বন্ধ করে শক্ত করে আছে, চোয়াল শক্ত, দাঁতে দাঁত চিপে কিরমির করছে। চোখ যেন জ্বলছে। তপতীর ভয় হলো, ও ঠিক করলো কালকেই দীপুকে সব বলবে। ওর পাপা যেন অন্য মানুষ, এ সেই স্নেহসিল সঞ্জীব না।
পরের শনিবার দিপুর ফ্ল্যাট এ গেল৪ টের সময়। প্রথমে ফ্লাট ঘুরে দেখে খুব খুশি হলো। রাধা ওকে বসিয়ে বাঙালি রান্না করে রেখেছিল খাওয়ালো, যেমন আলুপস্ত, রুইমাছ এর কালিয়া, এইসব। রাধা কলকাতায় থাকতে থাকতে বাঙালিই হয়ে গেছে। তারপর তপতী বাড়ির কথা বলল। রাধার মুখ সুখিয়ে গেছে, দিপু শুনলো কিন্তু পাত্তা দিলনা।
……..শোন, ঐসব ছার, তুই IIT তে বসার জন্য কোনো কোচিং সেন্টার এ ভর্তি হোসনি । এখন যদি ভর্তি হোস, তাহলেও তুই ৭ মাস পিছিয়ে যাবি । IIT তে বসার জন্য উচিত ছিল, ১০ ক্লাস এর পরিখ্যার পরেই ভর্তি হওয়া। ওখানে কম্পিটিশন অনেক বেশি। তুই পারবি না তা বলছিনা, কিন্তু তুই পিছিয়ে আছিস। তুই পশ্চিম বাংলার জয়েন্ট এ বসবি।যাদবপুর এর ইঞ্জিনিয়ারিং IIT থেকে কম নয়। আমার স্কুলের অনেকেই বাইরে আছে। তাদের একজন আমার থেকে ৩ বছরের বড় আমার এক সহপাঠির খুড়তুত দাদা , MIT তে আছে। সে বলেছে যে আমেরিকার এমন কোনো ইউনিভার্সিটি নেই যেখানে যাদবপুর এর অন্তত একটি ছাত্র বা ছাত্রী নেই। আমার সেই সহপাঠি, কৌশিক দত্ত , iit দিল্লিতে M.TECH করছে। আমাদের ফার্স্টবয়। iisc তে চান্স পেয়েছিল কিন্তু যায়নি, কারণ ওর বাবার এখানে ট্রান্সফার হবার কথা। তবে ও আমাকে কোনদিন অঙ্কে হারাতে পারেনি। আমার থেকে অন্তত ৭-৮ নম্বর কম পেতই। কিন্তু কৌশিক physics এ দারুন, কেমিস্ট্রি খুব ভালো। ও যাদবপুরে পরার সময়েই ছাত্র পরাত। ওর ৩ টে ছাত্র ছাত্রী জয়েন্ট এ ভালো রেজাল্ট করেছে, আমি ওকে আসতে বলেছি। ওর কাছে তুই physics ,chemistry পরবি। আমি আর ও জয়েন্ট এর প্রশ্ন পত্র এনে দেব, তুই পারবি। আর যদি চাস তাহলে প্রেম করতে পারিস, ছেলে ভালো। ……. তপতী, শুনেই দুম দুম ঘুষি লাগাতে লাগলো হাসতে হাসতে। তখনি বেল বেজে উঠলো , রাধা গিয়ে দরজা খুলে কৌশিক কে নিয়ে আসলো। প্রায় ৬ ফুট লম্বা, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা, চোখ যেন ঝকমক করছে। ঢুকেই
………প্রিয়, তুই কাকে পড়াতে বলছিস, আমি তো এর মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকব, পড়াব কি করে।
……..সেটা তোর্ ব্যাপার, তুই কি করে পড়াবি , তবে জয়েন্ট এ পাস করাতে হবে যাতে তোর্ ইউনিভার্সিটি তে চান্স পায়। এর নাম তপতী, সূর্য কন্যা।
……..তপতী, তোমার দাদা যে কেন অঙ্ক নিয়ে পড়ল না তা ওই জানে। কোনদিন কোনো পরিখ্যায় হারাতে পারিনি। ওর মাথায় অঙ্ক জন্মায়। মাসি, কিছু খাবার দাও , ওই মেসের খাবার খেয়ে মুখ পচে গেছে। খুব খোলাখুলি কথা বার্তা, কোনো ফর্মালিটি নেই, সহজেই মিশতে পারে। ” শোন তপতী, খাটতে হবে, তোমার সিলেবাস আর w.BENGAL এর সিলেবাস এ তফাত আছে। কিতু সেটা সেরকম কিছু না। অঙ্ক, প্রিয়র থেকে ভালো কাউকে পাবে না।ওটা ওই করাবে, আমি তোমাকে তোমার বাড়ি গিয়ে পড়াব, একটু খেতে দিও। আর মাকে বল মাল্লু যেন একটু বেশি দেয়।“ এমন সহজ আর কৌতুক ভরে কথা বলল যে তপতীর ভাল লেগে গেল।
দিপু প্রথমেই তপতী কে জিজ্ঞাসা করলো ওর coordinate জ্যামিতি কিরকম লাগে। যখন শুনলো ভালো লাগে তখন বলল “তুই অঙ্ক ভালো পারবি, কাল থেকে তোকে অঙ্ক করাব, আজ তুই কৌশিককে নিয়ে বাড়ি যা, মার সাথে পরিচয় করিয়ে দে। কৌশিক যা খুশি কর , জয়েন্ট এ চান্স পেতেই হবে ”
…….শোন,তপতী, আমাদের ইউনিভার্সিটি ভারতে স্টেট ইউনিভার্সিটির ভিতর ১ নম্বর। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগে। প্রথম iisc ,তারপর IIT , কানপুর, বম্বে ,খরগপুর , দিল্লি ,তারপরেই যাদবপুর। আর এখানে সুধু লেখপড়া না, ইউনিয়ন বাজি চলে, রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়। বিদেশে যাওয়া যায়, আমাদের স্কুল থেকে প্রতি বছর ৫০-৬০ জন জয়েন্ট এ ভালো রেজাল্ট করে , আর এখানে পরে। তাই লেগে পর। চল, মাসি খাবার দিক ,খেয়ে তোমার বাড়ি যাই। এরপর খেয়ে দুজনে বেরিয়ে গেল। দীপুও রাধাকে নিয়ে বিরজুর বাড়ি গেল। একটু আড়ালে ও বিরজু কে সব বলল। তারপর বিরজু কে বলে রাজদূত রেখে বিরজুর “বুলেট” মোটরবাইক নিল। কারণ এতে স্পিড বেশি আর পিকআপ অনেক ভালো। দিপুর মনে একটু সন্দেহ দেখা দিয়েছে তপতীর কথা শুনে। যদি কিছু করতে চায়, তাহলে সঞ্জীব গাড়ি নিয়েই করবে।

তপতী কৌশিক কে নিয়ে বাড়ি এলো। পূবার , কৌশিককে দেখে ভালো লাগলো। বুজলো ছেলে ঠিক লোক পাঠিয়েছে। কৌশিক সঞ্জীবের সামনেই দিপুর অঙ্ক নিয়ে বলছিল
…….আন্টি, প্রিয় অসাধারণ। সার, ক্লাসে একটা নতুন চ্যাপ্টার সুরু করে একটা অঙ্ক বুঝিয়ে দিয়ে পরেরটা সুরু করেছে, প্রিয় অমনি বলে উঠলো, ‘”সার, উত্তর টা এই ”
প্রিয়, একটু frustrated হয়ে গেছিল, না হলে ও আমাদের থেকে অনেক উপরে। কারণ আপনি জানেন, ও সিম্পলি outstanding. ..তপতী লক্ষ্য করলো সঞ্জীবের মুখ শক্ত হয়ে গেল। ফের সেই হাতের মুঠো বন্ধ, দাঁত কিরমির। চিন্তিত হয়ে পড়ল তপতী।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/4K1rAYc
via BanglaChoti

Comments