টান BY (ডিমপুচ) (পর্ব-২৭) [সমাপ্ত]

টান

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-২৭ & শেষ পর্ব
—————————

হঠাত এক নভেম্বর মাসের সকালে দিপুর ফোন বেজে উঠলো.
………হ্যালো, কে বলছেন ..
…….দিপু, আমি মাসি বলছি
……..কি ব্যাপার এত সকালে, কোথা থেকে বলছ
…….কলকাতা থেকে. কাল এসেছি.
…….কলকাতা? আজকেই আসছি, তুমি আগে জানাওনি কেন মাসি, আমায় কি ভুলে গেলে?
…….ধুর বোকা. তোকে শেষ দিন অবধি ভুলব না. শোন, পরশু আমার ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে, তুই সবাইকে নিয়ে আয়. সীতা গিনি সবাইকে
নিয়ে আসবি.
……নিশ্চই যাব মাসি. সীতা যাবে না, ওর পরিখ্যা সামনে, গিনি যাবে. আমি আমাদের বাড়িতেই উঠব, মা জানে?
…….পুবা তো এখন কলকাতায়, ওকে আজ সকালে বাড়ি গিয়ে বলেছি.আজ প্রথম তোর কাকিমা, কনা কে দেখলাম.আমাকে জড়িয়ে কি
কান্না ” রাধাদী, তুমি না থাকলে দিপু ভেসে যেত” এই সব. তোর মা তো দেখলাম বেশ সুখেই আছে ওখানে. বেশ দাপট. সবাই মানে ওকে.
আর শোন তপু আর কৌশিক কে বলেছি, তোর মার সামনে, ওরাও আসবে. সীতাকে নিয়ে আয়. এখানে সবাই দেখতে চাইছে.
…….বলব, যাবে বলে মনে হয়না, তবুও বলব.
…….আয়, দেখি তোর জন্য একটা মেয়ে দেখা যায় কিনা. তাকে তো পুবা, কনা, তপু, সীতা সবার পছন্দ হওয়া চাই.মুশকিল, তবু দেখি.আয়।

সীতার সেমিস্টার চলছে, তাই যেতে পারল না. গিনিকে নিয়ে দিপু বিয়ের দিন সকালে পৌছালো. ব্যাস, গিনিকে আর কে পায়. প্রথমেই শিবু
কোলে করে পারা ঘুরিয়ে আনল. তারপর নিনি আর মিনি মিলে লেক এ নিয়ে গেল. কিছু পর তপু হাজির. গিনি তপুর গা ঘেসে সারাদিন ঘুর
ঘুর করলো. পুবা গিনিকে চান করাতে নিয়ে গেলে সে এক যুদ্ধ
……..বাবা, ঠাম্মি চোখে সাবান ঢুকিয়ে দিয়েছে, ঠাম্মি আর না, উফ জালা করছে. …সাথে পূবার ধমক, আবার ভালবাসা “সোনা মেয়ে আমার, বিয়ে বাড়িতে সবাই বলবে গিনিকে কি সুন্দর দেখতে, দিপুর মেয়েকে কি সুন্দর
দেখতে, কি সুন্দর চুল,উফ, একদম দুষ্টুমি করবিনা. দেব দুই থাপ্পর” …এইসব …চান করে বেরিয়ে পরিষ্কার জামা পরিয়ে ,চুল আচড়ে, কপালে ছোট একটা টিপ পরিয়ে পুবা নিয়ে এলো বাইরের ঘরে. পূবার
শাড়ি ভিজে একাকার. চুল অবিনস্ত, কিন্তু মুখে অনাবিল প্রশান্তি. গিনিকে দেখে কেউ বলতে পারবেনা যে ওর জন্ম এই পরিবারে না. দিপু
এক দৃষ্টিতে পুবাকে দেখছিল. ” মা, সারা জীবন এই ভাবে তোমায় দেখতে চাইতাম, আর যেন হারিয়ে না ফেলি, তুমি এত সুন্দর কোনদিন ছিলে না মা.”.

সন্ধ্যাবেলা সবাই মিলে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত. বিরজু,শোভা,পুবাকে দেখেই ছুটে এসে
……..ম্যাডাম, আপনি এসেছেন. কতদিন পর দেখলাম আপনাকে. দিপু ঢুকেই রাধাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, একে তাকে জিজ্ঞাসা করতে করতে
হঠাত চোখে পড়ল,রাধা একটি মেয়ের সাথে কথা বলছে. আস্তে করে পিছন দিক দিয়ে গিয়ে
…….মাসি, ঘুরে দাড়াও …..চকিতে রাধা ঘুরে দাড়িয়ে,কান এটো করা হাসিতে মুখ ভরিয়ে,চিত্কার করে
……..দিপু , …বলে জড়িয়ে ধরল. ….এই আমার ছেলে, দিপু , পুবা, দিপু কিন্তু আমারও ছেলে, …….পুবা হাসি মুখে ঘাড় নাড়িয়ে হাঁ বলল. দিপু রাধার ঘাড়ে মুখ রেখে লক্ষ্য করলো, সেই মেয়েটি, যে রাধার সাথে কথা বলছিল, একবার
মুখ ঘুরিয়ে দীপুকে দেখেই,দ্রুত চলে গেল. কিন্তু দিপুর বুকে হেমন্তর সন্ধায় বসন্তর বাতাস বয়ে গেল. কে মেয়েটি? আগে তো কোনো মেয়েকে
দেখে এইরকম মনে হয়নি. কে এই মেয়েটি? মাসি কে জিজ্ঞাসা করব? না থাক. রাধা দিপুর হাত ধরে পাশে বসিয়ে চলে যাওয়া ৮ বছরের
জমানো কথা বলতে লাগলো.বিয়ে বাড়িতে সবাই অন্য সবার সাথে কথা বলছে, কিন্তু এক প্রায় ৫২বছরের বিগত যৌবনা নারী আর ৩২
বছরের চোখ কারা এক যুবক নিভৃতে একান্তে নিজেদের ভিতর কথা বলছে. যেন অনন্তকাল ধরে দুজনে এই ভাবে কথা বলে যেতে পারে. দু
একজন এসে মাঝে মাঝে দু একটা কথা বলছে,আবার দুজনে কথা সুরু করছে. কিন্তু মেয়েটি কে,? রাত প্রায় ১০ বাজে,পুবা, কনা মেয়েদের নিয়ে চলে গেছে. পাত্র পক্ষের লোকেরাও যাবার জন্য তোড়জোড় সুরু করেছে
……….দিপু, তুই খাবি না, কি খাবি? মাংশ ভাত খাবি, আজ করেছে, ছেলের বাড়ির হুকুম. খাবি?
…….খাব. মাসি চামচ দিতে বল, আর সাদা ভাত আর লেবু.
…….তুই একটু বস, আমি আনছি……রাধা উঠে গেল, …..এই দিপু প্রথম লক্ষ্য করলো, রাধা বেশ রোগা হয়ে গেছে, কেমন যেন বয়েসের ছাপ শরীরে. একটু পরেই রাধা ফিরে এসে দিপুর পাশে
বসলো. আবার সেই মেয়েটি, এইবার দিপু সামনা সামনি দেখল. একটি দামী লাল রঙের সিল্কের বুটিদার শাড়ি,আঁচল ঘুরিয়ে কোমরে গোজা.
ডান হাতে, একটা থালা ,আর বাঁ হাতে জলের গ্লাস. ঘাড়ের কাছে লুটিয়ে আছে বিরাট খোপা. সামনে মুখের উপর এসে পড়েছে দুটি লাট,অল্প
প্রসাধন, মিষ্টি হাসি মুখে,বেশ লম্বা.ফর্সা ,বুদ্হী দীপ্ত উজ্জ্বল চোখ,. দোহারা চেহারা, পান পাতার মত মুখের গড়ন দিপু অবাক হয়ে দেখছে.
একটা গানের কলি মনে এলো “”এক হাতে মোর পূজার থালা অন্য হাতে মালা, বাইরে আমার চাঁদের আলো,ঘরে প্রদীপ জালা,তুমি কোনটা
নেবে বল”” বুকের ভিতর ঢেউ উঠেছে কেন? অনেক সুন্দরী দেখেছে জীবনে ,এই রকম কোন দিন হয়নি,আজ কেন? সম্বিত ফিরল রাধার

ডাকে
……..দিপু, খেয়েনে, . …মেয়েটি দিপুর সামনে হাটু মুড়ে বসলো. রাধা একটা টেবিল সরিয়ে আনতে,তাতে খাবার রেখে উঠে দাড়ালো. দিপু আবার সব ভুলে
মেয়েটিকে দেখছে.মেয়েটি উঠে দাড়িয়ে
……..আর ভাত দেব, মাংশ? ….
,……না না আর লাগবেনা. এই বেশি. ….আবার মেয়েটিকে দেখল দিপু, তার চলে যাওয়া. ….মুখ ফিরিয়ে দেখল রাধা অল্প অল্প হাসছে
…….কিরে কি দেখছিস, ওই ভাবে , ভালো লেগেছে? …..দিপু একটু হেসে “হাঁ’ সূচক ঘাড় নাড়ালো. তারপর খাবার খেতে সুরু করলো. রাধা নানা রকম কথা বলে যাচ্ছে, দিপুর মাথায় কোনো
কথা ঢুকছেনা, খাবারের স্বাদ বুজতে পারছে না.খালি কে এই কন্যা? কি নাম? খাবার শেষ করে, অপেখ্যা করছে আবার যদি দেখা যায়. না.
সে নেই. অনেক রাত্রে একা একা হেটে হেটে দিপু সিগারেট ধরিয়ে বাড়ি ফিরল. কিন্তু মাথার ভিতর সেই মেয়েটি,মাথায় ঘুরছে কবিতার শব্দ “”হেমন্তের অরন্যে আমি পোস্টম্যান””. বাড়ি ফিরে ঘরে ঢুকে, দেখল গিনি পূবার সাথে শুয়েছে, নিজের ঘরে বিরাট বিছানায় দিপু শুয়ে ‘তার’ কথা ভাবতে ভাবতে
ঘুমিয়ে পড়ল. স্বপ্ন দেখল, একটা ইও ইয় নিয়ে বাচ্চা দিপু সারা বাড়ি খুশিতে ছুটে বেড়াচ্ছে. ঘুম ভাঙ্গলো গিনির ডাকে
……বাবা,বাবা, আর কত ঘুমাবে ওঠো.কত লোক এসেছে, বাড়িতে, আর তুমি ঘুমাচ্ছ……ওই অবস্থাতেই, গিনিকে তুলে বিছানায় নিয়ে দিপু
শুয়ে থাকলো.
……বাবা ছাড় , রাধা দিদা এসেছে কতক্ষণ হয়ে গেল, তোমায় খুজছে, আর খালি ঘুমাচ্ছে….গিনির ধমকে দিপু বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে
ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে, চিরকালের অভ্যাস মত বিছানা তুলে নিচে গিয়ে দেখল. জমিয়ে আড্ডা চলছে, রাধা,পুবা,কনা তপুর সবার ভিতর.
দীপুকে দেখেই সবাই চুপ করে গেল, কিন্তু হাসি টুকু থেকে গেল.
দিপু বসতে তপু উঠে গিয়ে চা নিয়ে এলো.
……..কি ব্যাপার সবাই মিলে এতো সকালে আড্ডা মারছ, নিশ্চই কোনো মতলব আছে
…….হাঁ আছে, রাধাদির সাথে উপরে যা, রাধা দি তোকে বলবে…….পূবার মুখে হাসি
…….কি কথা , এখানে বল,…..দিপুর বুকে দামামা বাজতে সুরু করেছে
…….রাধাদিকে কথা দিয়েছিলি, মনে আছে? যা উপরে যা…কনা বলল এইবার. হাসি সবার মুখে, তপু পর্যন্ত ফিচকে হাসি দিয়ে যাচ্ছে
….রাধার সাথে উপরে উঠে ঘরে ঢুকতেই, রাধা দরজা বন্ধ করে দিপুর পাশে বসে
……..কালকে ওই মেয়েটিকে ভালো লেগেছে, সত্যি করে বলবি ….রাধা যেন একটু গম্ভীর
…….হাঁ ,ভালো লেগেছে …কিন্তু কেন?
……বিয়ে করবি, আমি যদি বলি?….দিপু ঘাড় নেড়ে হাঁ বলল….রাধা দু হাতে দীপুকে জড়িয়ে মুখ নিজের কাধের কাছে নিয়ে কানে কানে আস্তে করে
……তোর সন্তান আমি নিতে পারিনি, তুই আমাকে একটা সন্তান দে. ও আমার মেয়ে বনি. তুই ওকে বিয়ে করবি……ছিটকে গেল দিপু ..
রাধার কাধ ধরে ঝাকিয়ে, বিস্মিত চোখে
…….মাসি, এটা incest এ হয় না, হওয়া উচিত না. কি বলছ তুমি….প্রায় চিত্কার করে উঠলো. রাধা আবার দীপুকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে
বসে থাকলো. দিপু বুজতে পারল, রাধা কাদছে. দু হাতে আরো জোরে জড়িয়ে ধরল দিপু,একটু পর দুজনেই নিঃশব্দে কাঁদতে থাকলো. বেশ
কিছু সময় পর
…..ঠিক আছে আর বলব না. আমি কিন্তু মন থেকেই চেয়েছিলাম. তোর আমার ভালবাসা, আমি তোর আর বনির সন্তানের ভিতর পেতামরে
দিপু. …দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে চুপ করে রইলো রাধা. …দিপু রাধাকে জড়িয়ে,
…….কাল বনিকে দেখার পর থেকে ঘুরে ফিরে খালি ঐ মুখ ভেসে আসছে, কিন্তু তোমার আমার সম্পর্ক,তার কি হবে মাসি?
……..থাকবে. চিরকাল থাকবে. বিয়ে করলে বা না করলে, দুই ক্ষেত্রেই থাকবে.তুই আমার ভালবাসা রে দিপু. আমি তুই যতই লুকিয়ে
রাখতে চাইনা,সবাই বোঝে. আমার ধারণা সব জেনেও পুবা মেনেও নিয়েছে. খালি তুই মানতে পারলি না. …দিপু আরো আবেগে রাধাকে জড়িয়ে
…….যাই হোক তোমাকে ছাড়তে পারব না. তোমার মেয়ে মানতে পারবে?
…….আর তো দৈহিক সম্পর্ক আমাদের হবে নারে, তাই ওর না মানার কি আছে!
…….গিনি, তার কি হবে, তাকে ছাড়া কি করে বাচব?
এইবার রাধা কান্না ভেজা চোখে আলতো করে চড় মারলো দীপুকে
………বনি সব জেনেই রাজি হয়েছে. বনির ও একটা ৮ বছরের ছেলে আছে, তার কি হবে?
…….সে গিনির ভাই হবে,আর আমার ছেলে
……… শ্র্রীর দিদি হবে গিনি আর বনির মেয়ে. ….রাধা উত্তর দিল.
………তুমি আমায় ভালো বাসবে তো… দিপু এইবার কিছুটা তরল ……দিপুর মুখ ধরে রাধা স্থির চোখে চেয়ে রইলো.তারপর নিজের ঠোট
দিপুর ঠোট এ লাগিয়ে একটি দীর্ঘ চুম্বন দিয়ে……..
………চির জীবন বাসব.কিন্তু এই আমাদের শেষ বন্ধ ঘরে একা একা থাকা আর শেষ চুম্বন….এইবার দিপু রাধাকে জড়িয়ে অনেকক্ষণ চুমু খেয়ে
….যাও লাগাও. তবে, একটা শর্ত আছে, বধুবরণ কিন্তু মা করবে. বিধবা বলে পারবে না, মানব না.
…….আমিও তাই চাই রে দিপু. চল নিচে চল…….এরপর পুবাকে বোঝানো প্রায় দুঃসাধ্য কাজ হলো. অবশেষে ঠিক হলো,পুবা আর কনা
এক সাথে করবে.
……..তোমার মাস্টারমশাই বেচে থাকলে, তোমায় মজা দেখাত. ……দিপু তার মাকে বলল.
…….তাহলে তো সব কিছুই অন্যরকম হত রে বোকা.
সীতা এলো একটু দেরী করে. পরীখ্যা দিয়ে সোজা এয়ারপোর্ট গিয়ে এসেছে. বিয়ে বাড়িতে রাধাকে প্রনাম করতেই, রাধা একটু হকচকিয়ে
গিয়ে তাকালো. একটু সময় মাত্র, তারপরেই চেঁচিয়ে উঠলো,
……..সীতা তুই. আয় মা আয় বুকে আয়. অসাধ্য সাধন করেছিস তুই. …তারপর সবাইকে উদেশ্য করে …..দেখো তোমরা সীতা এসেছে. আমাদের গর্ব সীতা. বনি, এই সীতা, তোর খুব কাছের বন্ধু হবে…বনি
চেয়ার থেকে উঠে এসে জড়িয়ে ধরল
………গার্জেন, তোমার সংসারে আরো দুটি প্রাণী বাড়লো. কোথাও যেতে পারবেনা. ওখানেই থাকতে হবে আমাদের সবার সাথে. কিছুতেই
ছাড়বনা তোমায়. …সীতা অবিভুত হয়ে জড়িয়ে ধরল. নিজের হাতে বোনা একটা দারুন সুন্দর টেবিল এর ঢাকনা দিল বনিকে. একটু একলা পেয়ে দীপুকে
ডেকে
……মাসি সত্যি খুব বড় হৃদয়ের, না হলে কেউ নিজের জিনিসকে অন্যের হাতে তুলে দেয়…..বলেই দিপুর দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে
হেসে দিল. দিপু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হেসে ফেলল
…….সত্যি, ভগবান মেয়েদের যে কি দিয়ে বানিয়েছেন, সুধু তিনিই জানেন.
পরের দিন, কনে বিদায়ের সময় উপস্থিত. রাধার মুখে চোখে এক অদ্ভূত প্রশান্তি বিরাজমান. সব চাইতে আখান্কিত কিছু পেলেযা হয় সেই
রকম. দিপু বনি কে নিয়ে এসে সামনে দাড়িয়ে হাসি মুখে চেয়ে রইলো একটু সময়. তারপর পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে
……..এইবার থেকে কি বলে ডাকব, মা না মাসি?
…….তুই আমার দিপু. তোর যখন যেটা মনে হবে তাই বলবি. দুটিই শুনতে মন চায়রে.

ভট্টাচার্জি বাড়িতে আজ মহা ধুমধাম. বাড়ির একমাত্র ছেলে আজ নববধুকে নিয়ে আসছে. পূবা দারুন উত্তেজিত.কিন্তু এক অজানা আশঙ্কাও
হানা দিচ্ছে মনে
………কনা, আমার বরণ করা কি ঠিক হবে, বল না রে. কি রে চৈতি কিছু বল? পূবার গলায় উদ্বেগ.
…….কিছু হবে না দিদি. ছেলের জন্য মা যা করবে তাই ঠিক, কেন অমঙ্গল হবে…….তবুও পূবার মন মানেনা. শেষমেষ তার ‘মাস্টারমশাই
‘ এর ছবির সামনে দাড়িয়ে অনেকক্ষণ কি সব বিড়বিড় করলো. তারপর একটা দামী গরদের লাল পারের শারী পরে অনেক বছর পর, বড় করে
কপালে সিন্দুর লাগিয়ে তলার ঘরে অপেখ্যা করছে. প্রণব পুবাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো. একটু যেন অপ্রস্তুত পূবা.
প্রণব ঝুকে ঝপ করে প্রনাম করে
…….ঠারেন, আজকের মত এত সুন্দর রূপ তোমার কোনদিন হয়নি. একেবারে জগত্ধাত্রী দেবী তুমি. …পাশে দাড়িয়ে পবিত্র ঘার নেড়ে সায় দিল. দীপুকে নিয়ে কৌশিক এলো, সাথে তপু. নেমেই মায়ের ওই চেহারা দেখে ,
……মা দারুন. মা দারুন……. বরণ ডালা নিয়ে পূবা এগিয়ে এলো,দু পাশে কনা আর চৈতি ধরে আছে. নববধুর কপালে ছুইয়ে দিপুর কপালে
ছুইয়ে দিল.চোখের জল ধরে রাখতে পারছেনা. দিপু ,কোথায় যেন হারিয়ে গেছে মায়ের রূপ দেখে.নিজের মনে বলছে ” সারা জীবন মা, হৃদয়ে
তোমার এই রূপ কল্পনা করেছি, আজ পেলাম” .লাল পেড়ে শারী, কপালে সিন্দুর, খোলা চুল পিঠে ছড়ানো, চোখে আনন্দের জল, সত্যি অপূর্ব সুন্দর ‘মা’ আজ পূবা. মাথা ঝুকিয়ে প্রনাম করে
……বনি, এই আমার মা. প্রনাম কর।

★★★★★সমাপ্ত★★★★★



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/4e0TlBo
via BanglaChoti

Comments