জীবন BY (ডিমপুচ) (পর্ব-৯)

জীবন

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-৯
—————————

নতুন সিরিয়াল লঞ্চ করছে সেরার প্রযোজনায়। প্রথম দিনের শুট হয়ে সেলিব্রেশন। দক্ষিন কলকাতার বিশাল এক ভাড়া বাড়ি এক দিনের জন্য নেওয়া হয়েছে। মোট ২০০ এপিসোড,পিরিয়ড সিরিয়াল । প্রধান আকর্ষণ একটি অল্প বয়েসি মেয়ে, কথায়  যেন হিন্দি টান, নাম দামিনী। অনিন্দ্যসুন্দরী। সচারাচর এই রকম সুন্দর মেয়ে সিরিয়ালে দেখা যায়না।৫ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা হবে, দোহারা চেহারা।সব থেকে সুন্দর চোখ। “পদ্ম আঁখি আজ্ঞা দিলে পদ্ম বনে আমি যাব” এই ধরনের চোখ।  তাকালে ফেরানো যায়না।একটি গোড়ালি ছোঁয়া সুন্দর স্কারট  পরে মেয়েটি। এই বাড়িটি সিরিয়ালের জন্য ভাড়া পাওয়া যায়। তার কারন বাড়িতে বেশ কয়েকটি ঘর, সব এসি। মনীষা মেয়েটিকে  দেখে গালে হাত দিয়ে আদর করলো “ আমার টুপুর বোধ হয় এখন এই রকম হবে” মেয়েটি কলেজে পড়ে। প্রায় সবাই ড্রিঙ্কস নিয়েছে। মনীষা সবার সাথে কথা বলছে হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।কিন্তু তার মন কু ডাকছে, কেননা ইশা লক্ষ করছে যে সেরা মেয়েটির পাশ থেকে কিছুতেই সরছেনা। দামিনী খুব সহজ ভাবে মন থেকে সেরার সাথে কথা বলছে, একটু আন্তরিকতার ছাপ লক্ষ করছে মনীষা। । সিরিয়ালের নায়ক, পরিচালক সবাই চেষ্টা করছে দামিনির পাশে থাকার। মনীষাকে ফটোগ্রাফার একটু আলাদা করে একা  মনীষা এইরকম ফটো তোলার জন্য অনুরোধ অনেকক্ষণ থেকে করে যাচ্ছে। শেষমেশ মনীষা হ্যাঁ করলো। সেট এর এক পাশে নানা ভাবে ছেলেটি মনীষার ফটো তুলছে। একটা ফটো তলার পর একটু মেকআপ, চুল ঠিক করা এতে সময় নষ্ট হচ্ছে।

………নিলাঞ্জন আমাকে নিয়ে কেন, ওই দামিনীর ফটো তল
…………দিদি, ওর ফটো অনেক তুলবো, কিন্তু আপনার এই গ্রেস আসতে ওকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
বেশ কিছু সময় পেরিয়ে শেষ হোল ফটো শুট।

প্রথম যে চিন্তা এল মনীষার  “সেরা কোথায়”? একটু উদ্বিগ্ন মনীষা। মেয়েটি কোথায়? কু ডাকছে মনীষার মন। যাকে সামনে পাচ্ছে জিজ্ঞাসা করছে। নিজেই দোতলা উঠে প্রতিটি ঘর খুলে , বারান্দা, ব্যালকনি সব ঘুরে ঘুরে দেখছে। কিন্তু এইবার একতলার  পিছন দিকে, মুল বাড়ির পিছনের অংশে মনীষা ঘুরে দেখে কিছু না পেয়ে “ ওই বাচ্চা মেয়েটির কোন ক্ষতি সেরা করলে, আজ ওর একদিন আর আমার একদিন”,এই ভাবনা মাথায় নিয়ে  চলে আসছে, খুব মৃদু   চিৎকার “ উফফ উফফ না না , ছোর দো, অহ অহ অহ অহ, কান্নার আওয়াজ”। থমকে দাঁড়িয়ে মনীষা,” তাহলে কি সর্বনাশ সত্যি ঘটলো’।  ছুটে ঘুরে গিয়ে পিছনের সেই ঘরের দরজার সামনে মনীষা। ভিতরে একটি মেয়ের কান্না আর ধস্তা ধস্তির শব্দ।বেশ জোরে চড়ের শব্দ সাথে সেরার আওয়ায “ চুপ যা সালি রেণ্ডি ”।  “ মা………” এই একটি আর্তনাদ  নাড়িয়ে দিল মনীষা কে। গায়ের যতো জোর, ধাক্কা দিচ্ছে মনীষা আর চিৎকার। চিৎকারে প্রথম ছুটে আসে গোলাম সাথে  আরও লোক , সবাই মিলে ধাক্কা দিতে ছিটকিনি খুলে মনীষাকে দাড় করাল নরকের সামনে । সেই অপরুপ সুন্দরী মেয়েটি একেবারে ধস্ত। তার স্কারট উঠে পুরো পা উন্মুক্ত, ওপরের ফিতে ডান দিকে ঝুলছে আর সেরা প্যান্ট পায়ের কাছে নামিয়ে বা হাতে মুখ চেপে ধর্ষণ করছে।
‘সেরা……” চিৎকার করে মনীষা ঝাপিয়ে সমস্ত গায়ের শক্তি জড়ো করে দিল ধাক্কা সেরাকে। সেরা পড়ে গিয়ে মনীষাকে দেখে চমকে উঠেছে, । ঝাপিয়ে পড়ে চড় ঘুসি, , হাতের বড় বড় নক দিয়ে মুখে আঁচড়ান যা যা সম্ভব মনীষা পাগলের মতো করে চলেছে, সাথে চিৎকার আর গালাগাল।
………শালা চুতিয়া, বেশ্যার বাচ্চা। স্কাউনড্রেল  তোর জন্য আমি আমার মেয়েদের ছেড়েছি আর শুয়ারের বাচ্চা, তুই তোর সন্তানের মতো মেয়েটাকে রেপ করছিস
………আরে ইশা, এ এক রেণ্ডি হ্যায়। শালি খানকি। মনীষার দুই চোখ আগুনের মতো জ্বলছে , সজোরে তার হিল পরা জুতোর এক লাথি। আবারও চুল ধরে মাথা মেঝেতে ঠুকে দিচ্ছে।” তুই  এতো ছোট, এতো নিচ” দু হাতে সেরাকে ধাক্কা দিয়ে,  মেয়েটিকে তুলে ধরতে
………না না। আমি খারাপ মেয়ে না। উনি আমাকে  মুখ টিপে এখানে নিয়ে এসেছেন। আই আম রেপড। হি রেপড মি। আপনি বিশ্বাস করুন, উনি আমাকে জোর করে ধর্ষণ করেছেন। আপনি আমার মায়ের মতন,  আপনি বাঁচান, কান্নায় ভেঙে পড়ছে মেয়েটি।মনীষা লজ্জায়, দুঃখে তাকাতে পারছে না। শাড়ি দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে মেয়েটির। পার্টির সব লোক নতুন সিরিয়াল দেখছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে মেয়েটি। মনীষা দুই হাতে জড়িয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কয়েক মিনিট পর
………আজ আর এই নিয়ে কোন কথা না। তুমি পরে দেখা করো আমার সাথে।
…… আই হ্যভ বিন রেপড। আমি আর সিরিয়াল করবো না
মনীষার বুক ভেঙে যাচ্ছে, তবুও সবার সামনে সেরার সম্মানের জন্য
………ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুমি এখন বাড়ি যাও। আমার ড্রাইভার তোমাকে পৌছে দেবে। আমি তোমাকে কম্পেন্সেট করে দেব………কম্পেন্সেট শুনেই জ্বলে উঠলো দামিনী। সোজা হয়ে বসে, আগুনের মতো চোখ তুলে
………কম্পেন্সেট? হি রেপড মি। কম্পেন্সেট, রেপের?
………তুমি কাল দেখা করো কেমন , এখন যাও
………ম্যাদাম , উনি আমাকে ধর্ষণ করেছেন, আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না
……… বুঝেছি বুঝেছি। এই লাইনে এই রকম হয় আবার টাকা দিয়ে মিটিয়ে ও নেয়
………লাইনে? মানে আপনি বলছেন আমি লাইনের মেয়ে, বেশ্যা?
………থাম থাম আমি বলছি না,  তুমি বলছ। তুমি যে ওকে সিডিউস করনি, তারই বা কি প্রমান?,……ছিটকে গেল মেয়েটি। দু চোখে আগুন ছড়িয়ে
………উ মিসেস মনীষা , উ উইল পে ভেরি ডিয়ারলি। আমি এর প্রতিশোধ নেব। ছারখার হয়ে যাবেন……ছুটতে শুরু করলো মেয়েটি
………এই ধরো ওকে ধরো…… ছুট লাগাল মেয়েটি। হাতের কাছে এক খালি বিয়ার বোতল, তুলে নিয়ে একটা  দিক দেয়ালে  মেরে ভেঙে নিল।
সমস্ত বাড়ি মাথায় তুলে “”আমি এর প্রতিশোধ নেব। আপনারা দেখে নেবেন। ধংস হয়ে যাবে এই মনীষা “। তারপরেই এক ছুটে হারিয়ে গেল অন্ধকারে ।মনীষা , সেরাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে ঝপিয়ে পড়ল সেরার ওপর
………উ লম্পট , জানোয়ার । আমি তোমার জন্য সব ছেড়েছি আর তুমি কোকেন নিয়ে ধর্ষণ করছ। ওই মেয়েটি টুপুরের বয়েসের। তুমি তাকে রেপ করলে? চুলের মুটি ধরে, সমানে চড়  আর সাথে গালাগাল,  যখন দম ফুরিয়ে এল তখন বুক  ফাটা কান্না” সেরা এ তুমি কি করলে? তুমি রেপ করলে সেরা, উ আর এ রেপিষ্ট  সেরা, রেপিষ্ট। সেরা তোমার বাকি জীবন ধরে তোমাকে সবাই জানবে রেপিষ্ট  । তুমি এ কি করলে  সেরা। কোকেন তোমাকে শেষ করে  দিল সেরা।
কত আর কাঁদতে পারে মনীষা? একটা সময়  ঠাণ্ডা হতে মাথায় খেয়েল হোল, পুলিশ, প্রেস কি বলবে? সাথে সাথে ফোন করলো কোম্পানির উকিলকে। উকিল সব শুনে
…………  খুব খারাপ হয়েছে খুব খারাপ। মেয়েটি যদি পুলিশে যায় বা কোন প্রেসের কাছে মুখ খোলে, তাহল নির্ঘাত  গ্রেপ্তার। ছাড় পাওয়া খুব মুশকিল। এইরকম যদি কিছু ঘটে, তাহলে আপনারা কেউ মুখ খুলবেন না বাইরে।
সেরার নেশা কেটে যাচ্ছে। এখন বুজতে পারছে কি ঘটে গেছে। এখন বুঝছে যে জীবন আর কোনদিন মিলবে না। ইশা আর তার ভিতরের ফাটল বাড়বে। বসে রইল ইশা  তার দুর্ভাবনা নিয়ে, পাশে কেউ নেই যে ওর হাত ধরবে।

সেরা আর ইশার জীবন  বয়ে চলেছে এক ছাঁদের তলায় আলাদা আলাদা ঘরে। সর্বদা  ভয় এই বুঝি পুলিশ এল, এই বুঝি মেয়েটি ফোন করলো। এই দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে মনীষাকে। কথা একেবারেই বন্ধ। কখনও কখনও খেতে বসে একটা দুটো কথা একসাথে হাঁটতে যাওয়া বেড়াতে যাওয়া সব অতীত।মনীষা অনেকবার ভেবেছে অতিন  আর শোভনদা কে খুলে বলে। কি বলবে, কিছু কি আর জানতে বাকি আছে ওদের? সেই দিনের দু একজন কি ওদের বলে নি? মনীষার খুব ইচ্ছা মৌ এর কাছে পরামর্শ নেয়। মেয়েটি খুব বুদ্ধিমতী। কিন্তু কিছু করতে পারল না মনীষা।

দিন যায় দিন আসে, এই ভাবে পুরো বছর পার হয়ে সময় এগিয়ে চলে। প্রতিদিন বাংলা কাগজ মনীষা তন্ন তন্ন করে দ্যাখে, কোন আত্মহত্যা অল্প বয়েসি মেয়ের এই সব।

একদিন  ৭ টা নাগাধ ফোন বেজে উঠলো এক অজানা নম্বরে। বুক কেঁপে উঠলো মনীষার। ফোন বেজে চলেছে, চুপ করে বসে মনীষা। ফোন থামতে মনীষার মনে হোল এইবার? আবারও ফোন বেজে উঠলো সেই অজানা নম্বর “ ধুর যা হবার হবে”
………হ্যালো,
………মনি? আমি দাদা বলছি, ফোন তুলছিস না কেন, কখন থেকে ফোন করছি?
………না এই ঘুম থেকে উঠলাম। বল তুই এতদন পর ? কেমন আছিস?, বৌদি, ছেলে মেয়েরা সব কেমন আছে?
………সবাই ভালো আছে আর সাথে একটা ভালো খবর আছে
……কি?
……আমরা সবাই ৩ দিন পর কলকাতা আসছি।তিন্নির বিয়ে আগামি ১০ তারিখ। ছেলেটি কলকাতার, কিন্তু  এখানে পড়ায়। ওর বাবা মা চায় কলকাতায় বিয়ে হোক। আমিও তাই চাই। অনেক অনেক দিন পর সবার সাথে দেখা হবে। আমি কলকাতায় গিয়ে তোর বাড়ি গিয়ে তোকে আর সৌরভ কে নিমন্ত্রণ করে আসব
……ঠিক আছে। তুই কোথায় বিয়ে জানিয়ে চিঠি দিস ওতেই হবে তবে আসলে ভালো লাগবে  রে দাদা। অনেকদিন গল্প করা হয়না তোর সাথে।  তিন্নি এতো  বড়? অবশ্য তা তো হবেই, টাপুরের থেকে ১ বছরের ছোট। দারুন হবে দাদা
……মা, টাপুর, টুপুর কোন খবর পেলি?
……নাহ। অনেক খুজেও পাইনি। তবে চেষ্টা চলছে……
কথা শেষ হলে মনীষা বুঝল যে তার ঘামে শরীর ভিজে গেছে উত্তেজনায়।  তবু মন হালকা হোল। ঠিক করে  নিল যদি কিছু বেরিয়ে পড়ে, ও নিজে প্রেস ডেকে স্বিকার করে নেবে আর মেয়েদের ওপেন আহ্বান জানাবে। ১৮ মাস পর এক ফোন তাকে নিজের সঠিক যায়গায় দাড় করাল। “ আর নিজেকে ঠকাব না। সেরা এখনও কোকেন নেয়। আমি কিছু করতে পারব না। লেট হিম সাফার। লেট হিম ফেস ট্রুথ।“

আজ পুকুর ফুলশয্যা। মাসিমার সেই ঘর যেখানে প্রথম ৪ চোখের মিলন। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে  টাপুরের পাশে বসে
………শুধু তুমি টাপুর, শুধু তুমি। আর কাউকে কোনদিন ভালোবাসতে ইচ্ছা হয়নি আর পারিনি। একবার চুমু খেতে পারি
………না। একমাস পর। তোমাকে বলেছিলাম আর তুমিও কথা দিয়েছিলে লেকের জল সাক্ষী। মনে আছে
………উফফ, কি নিষ্ঠুর তুমি টাপুর। কি নিষ্ঠুর। আজকের দিনে চুমু না খেলে পাপ হয় তা কি জান? লক্ষ্মীন্দরের  কি হয়েছিলো, তাই হয়
………কি হয়েছিলো গো, ওগো বল না কি হয়েছিলো?
………লক্ষিন্দর সবে বেহুলার ঠোঁটে এইভাবে  চুম চুম চুম। ইসস , কথা দিয়ে কথা রাখে না, উম উম ,অসভ্য,এই কি হচ্ছে, পুকু,  এ মা, চুম উউউ, উউউ, উম উম   কথা দিয়ে চুম উম উম ইসস  উম  চুম। চুম। উম ইস, ইস উম চুম …………

(  এরপর যা হোল , তা আর বলার না, সে এক হাবজি-জাবজি খেল)  

পুকুর জীবনের সব চাইতে স্মরণীয় তার বিয়ের দিন।  পুকু ঠিক করে নিয়েছে দিদু যতদিন না সম্পূর্ণ সুস্থ হচ্ছে, ততদিন সে প্রতি শুক্রবার  রাতে কলকাতায় এসে মঙ্গলবার বোম্বে যাবে। শেয়ার ব্যাবসা চালাতে পারলেও, হীরার ব্যাবসার জন্য তাকে বোম্বে থাকতেই হবে। দিদু সুস্থ হলে সবাইকে নিয়ে বোম্বে। বিয়ের ৭ দিন পর পুকু টাপুর কে নিয়ে বোম্বে তে তার নিজের ফ্লাটে উঠলো। শ্রী সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রেখেছে। নতুন বড় খাট, বিছানা,  ড্রেসিং টেবিল, খাবার টেবিল, রান্না ঘরের সব ফেলে নতুন করে কিনে নিজের মনের মতো সাজিয়ে দিয়েছে
…… বৌদি, তোমায় কি দেব? যা দেব তাও দাদার ই দেওয়া, তাই এই সব সাজিয়ে দিলাম।পছন্দ হয়েছে?
………একঘর সুন্দর শ্রী। তোমার টেস্ট আছে।  আমি পুনে তে ছেলেবেলাতে ছিলাম। কিন্তু বোম্বে  সেই ভাবে দেখিনি
………বৌদি, একটা জিনিষ চাইব?
………কি?
……… তুমি না, তুই
………ঠিক আছে, তোকে তাই বলব। জড়িয়ে নিল টাপুর
……… বোম্বে দাদা আর আমি দেখিয়ে দেব।যখন একেবারে চলে আসবে তখন দাদাকে বলে একটা বড় ফ্লাট আর একটু ভালো যায়গায় থেক ।
শ্রী,  টাপুর আসার পর পুকুর ফ্লাটেই থাকে। টাপুরকে সাথে নিয়ে বাজার করে,  ঘোরে ঠিক বন্ধুর মতো।বলে, ওর সারা জীবন,  নিজের কোন আত্মীয় স্বজন ভাই বোন, ইত্যাদি না থাকার, না পাওয়ার দুঃখ।দাদার বিয়েতে প্রথম কলকাতা দেখা,  কেমন করে প্রথম চাকরির দিনের শেষে বাড়ি ফিরে খাবার টেবিলে পুকুর কথা বলতেই ওর বাবা বলে ওঠে “ শ্রী ওই পুকু, তোর দাদা। আমি ১০০% নিশ্চিত ও পুকু” । তার পর রোজ বাবার প্রস্ন করা পুকুকে নিয়ে।

………জান বৌদি আমি প্রথম দাদার সম্পর্কে জানি ১০ ক্লাস পাশ করার পর। একদিন রাতে বাবা আর মা আমাকে “ তোকে এক আশ্চর্য রকমের সত্যি ঘটনা বলব। শক্ত হয়ে শুনবি। যে কোন প্রস্ন থাকলে করতে পারিস”  সেই আমি শুনি দাদা, ওনার মা, বুড়িদি আর একজনের কথা, অসিমদা।আমি বলেছিলাম বড় হয়ে আমি যাব। বাবা বলেছিলেন “ যাবি। কোন আপত্তি নেই।স্রীময়ি বেঁচে নেই।বুড়িদি  ও নেই। তবে ওই পাড়ার একজন পরোপকারী আছে, অসিম। তার সাথে যোগাযোগ করবি” । ডিটেকটিভ এজেন্সি দিয়ে খবর নিতেন বাবা।আমি প্রথমে খুব কেঁদেছিলাম , কেন বাবা একজনের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ করলেন। এখনও আমার মনে সেই ক্ষোভ আছে। কিন্তু শোনার পর থেকে মনে মনে দাদার সাথে কথা বলতাম, আবদার করতাম। তখন আমার ১৬-১৭ বছর বয়েস। আর ভাবতাম একদিন নিশ্চয়ই জড়িয়ে ধরতে পারব। খুব একা ছিলাম, কাউর বাড়ি যেতে খুব ইচ্ছা করত। এই চাওয়া গুলো কি খুব বেশি?? যে দিন দাদার ওখানেই চাকরি পেলাম, আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করে এইটা হোল। কোন জাদুদণ্ড কে ছুঁইয়েছিল? মনে মনে কত স্বপ্ন দেখতাম। নিশ্চয়ই বাবার মতো লম্বা আর ঝাঁকড়া চুল।তবে দাদাকে দেখতে বাবার থেকে অনেক ভালো। খুব সুন্দর মায়া ভরা চোখ। তোমার কথা কোনদিন শুনিনি। যদি শুনতাম তাহলে আগেই গিয়ে ওই অসিম দা কে ধরে তোমার খোঁজ লাগাতাম

………কি করে পেতিস, আমরা তখন লুকিয়ে বেড়াচ্ছি
………চেষ্টা তো করতাম………বৌদি জান যেদিন ওই সমুদ্রের ধারে দাদাকে পরিচয় দিলাম, কি ভয় যে করছিল কি বলব। একেবারে পাগলের মতো আচরন। খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। খুব। কিন্তু যখন বলল যে ইচ্ছা করলে চাকরি করতে পারি, বুঝলাম একেবারে বাচ্চা, কোন প্যাচ ঘোঁচ নেই।  সেইদিন সারা রাত ঘুমাইনি, কেননা আমাকে বলে দিয়েছিলো যে ভোর বেলা এসে চাবি নিতে হবে, তাই। আমার এই ২৩  বছরের জীবনের সব থেকে আনন্দের সময় যখন দাদা ফোন করে বলল যে “ তুই কাল দামি শাড়ি  নিয়ে আসবি, আমার বিয়ে”। “তুই”, এই সম্বোধন শোনার জন্য কত রাত বালিশে মাথা রেখে স্বপ্ন দেখেছি, তাই “তুই” শুনে আমি যেন সব পেয়েছির দেশে। সারা জীবন শুধু এইটাই চাইতাম। …।।
একটু থেমে
………… বৌদি, তুমি এতো সুন্দর কি করে হলে গো , তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে,………এই বলে ওতবড় মেয়ে টাপুরের গালে চুমু। টাপুর একটু লজ্জা পেলেও খুশি হোল এই ভেবে যে খোলা মেলা মেয়ে শ্রী। টাপুর ও তার নিজের জীবনের কথা শ্রী কে বলতে
………তাহলে তোমরা দুজনে তো মেড ফর ইচ আদার ………রাতে ৩ জন একসাথে খেতে বসে
………টাপুর, হনিমুন করতে কোথাও যেতে পারলাম না, তাই চলো তাজ হোটেলে ৩ দিন থেকে আসি। ওখানেই হনিমুন, যাবে?
………বৌদি, যাও, খুব সুন্দর, সামনে সমুদ্র। খুব ভালো লাগবে
তাজ হোটেলে দ্বিতীয় দিনে শ্রী এসেছে, পুকু নেই ঊর্মিলার কাছে গেছে
……বৌদি, একটা কথা বলব, গোপন রাখতে পারবে? প্লিস,  দাদাকে বলা যাবে না প্লিস………টাপুর একটু অখুশি হলেও মুখে বলল
………ঠিক আছে বলব না বল।
……।প্রমিস?
……হ্যাঁ প্রমিস……কিন্তু কি কথা?  টাপুর একটু বিরক্ত
………আমার বাবা একবার তোমাকে দেখতে চায়, দূর থেকে হলেও চলবে। শুধু দেখবে। তুমি গেট অফ ইন্ডিয়ার সামনে দাড়ালেই হবে। কথা বলতে আপত্তি থাকলে, সামনে আসবে না। শুধু বাবা আর মা তোমাকে দেখবে………একটু দোটানায় পড়ে গেল টাপুর। পুকু জানলে কি হবে?
………জানবে না। আমাদের থেকে মরে গেলেও কেউ বলবে না। শুধু ২ মিনিটের জন্য প্লিস………গম্ভীর হয়ে ভাবল। । দেখবে শুধু তো?
………ঠিক আছ…… বোম্বেতে এসে একদিনও টাপুর শাড়ি পরেনি। কি মনে করে আজ পড়ল।
দুজনে নেমে ওইখানে দাড়াতে টাপুর দেখতে পেল এক প্রৌঢ় আর এক বয়স্কা মহিলা ১০ – ১৫ ফুট দূরে এসে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাত জড় করে নমস্কার করছে। একেবারে সাবেকি বাঙ্গালি চেহারা। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল টাপুর। দুই বয়স্ক ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা ১০ হাত দূর থেকে দাঁড়িয়ে হাত জড় করে দাঁড়িয়ে আছে, লজ্জিত হয়ে টাপুর একপা একপা করে এগিয়ে গেল। শ্রী এসে হাত ধরে “ বৌদি?” । ঘাড়  নেড়ে হ্যাঁ বলে সামনে এসে
…… আমি দীপান্বিতা। ডাক নাম টাপুর……দু হাত জড়   করে নমস্কার করলো টাপুর। ভদ্রলোক অঝোর এ কেঁদে চলেছেন।দু হাত জড় করে
………মঙ্গল হোক মা, মঙ্গল মা। তোমাদের মঙ্গল হোক। পুকুর মঙ্গল হোক। আমি পুকুর হতভাগ্য পিতা, সারা জীবন তাকে বঞ্চিত করেছি।শুধু একবার, একবারই তোমাকে দেখব বলে এসেছি মা। ক্ষমা করো আমায়। তোমাদের জীবন মঙ্গলময় হোক…।।দু হাত জড় করে মাথায় ঠেকালেন। টাপুর খুব বিব্রত বোধ করছে, বাবার বয়েসি লোক তাকে ওই ভাবে নমস্কার করছেন
………টাপুর, আমি শ্রীর মা। শ্রীর বাবা আর আমি ট্রেনে করে রোজ সোনারপুর থেকে শিয়ালদাহ আসতাম। আমি ‘. ঘরের বিধবা।তাও গরিব।সামান্য মাইনের চাকরির জন্য সোনারপুর থেকে আসতাম।  শ্রীর বাবার  সাথে কখন কি হয়ে গেল জানিনা।কিন্তু আর কোন বাচার উপায় ছিল না। পাপ করেছি দুজনেই। তাই নিজেদের দেশ ছেড়ে পরিচয় লুকিয়ে এখানে থাকি। পুকুর কথা শুনেই উনি শ্রী কে বলেছিলেন যে ওই পুকু … , চুপ করে তাকিয়ে টাপুর। ভদ্রমহিলা র কথা যে প্রান থেকে উঠে আসা , বুঝতে পারছে টাপুর। কথা বলতে বলতে আঁচলে চোখ মুছছেন
………টাপুর, আমি যদি তোমাকে কিছু উপহার দি  তুমি নেবে? ………কাঁপন ধরল টাপুর। তাকে কিছু উপহার দেবে বলে মায়ের বয়েসি এক মহিলা অনুমতি চাইছেন? ভয়, নাকি অনুশোচনা? না নিলে অপমান করা হবে?
………হ্যাঁ নেব। কেন নেব না ।……এগিয়ে এসে নিজের ব্যাগ থেকে একটি চমৎকার দেখতে হার বার করে টাপুরের হাত ধরে
………সংসারে অসুবিধা হলে, পর না। রেখে দিয়ো আমাকে মনে করে। তুমি এইটি গ্রহন করলে,  এই টুকুই যথেষ্ট আমাদের দুজনের পক্ষে। গত ২৫-২৬ বছর নিজের বলে কাউকে কিছু দিতে পারিনি, ইচ্ছা থাকলেও।……  টাপুর হাতে নিয়ে …
………পরবো , ও আমাকে কিছু বলবে না। ওর সাথে আপনাদের সম্পর্ক কখনই  একেবারে নর্মাল হবে না, তবুও চেষ্টা করবো অন্তত শ্রীর বিয়েতে যাতে থাকতে পারি। শ্রীর বাবা
……… তুমি যা বললে মা, তাতেই আমাদের প্রান জুড়িয়ে গেছে। এখানে ভালো মিষ্টির দোকান নেই, খুঁজে খুঁজে এই মিষ্টি এনেছি, তুমি নিলে আমাদের ভালো লাগবে………গ্রহন করলো টাপুর মিষ্টির প্যাকেট।
আবারও হাত জড় করে চোখের জলে বিদায় নিলেন দুজন

পুকুর বোম্বেতে নিজের বন্ধু, ঊর্মিলা সঞ্জয় সবার বাড়িতেই টাপুরকে নিয়ে গেল। কিন্তু  ৭ দিনের বেশি থাকতে পারল না, কেননা টুপুর একলা আছে। ষদিও বাকিরা পাশে থাকবে তবুও পুকু থাকল না। প্লেনের সিটে গা এলিয়ে টাপুর কে যতবার জড়িয়ে ধরতে গেছে, ততবার কারেন্ট খাওয়ার মতন টাপুর ছিটকে গেছে। শেষে জোর করে হাত দিয়ে টেনে নিয়ে
………আমার বাবাকে কি রকম লাগল?
টাপুর অবাক চোখে তাকিয়ে।
……শ্রী বলেছে?… ঘাড় নেড়ে না
……তবে কি করে জানলে?
……তোমার আর শ্রীর অত গুজু গুজু  , তখনি বুঝেছি। তা কি রকম লাগল?
………১০ মিনিটে কি বোঝা যায়। দেখ হে ভালমানুষ, তুমি যে সুন্দরী শাশুড়ি দেখে গলে গিয়ে ডিনার খেতে গেছিলে, তার বেলা? বেশ করেছি দেখা করেছি। সমানে কাঁদছিলেন
………আমিও সারা জীবন কেদেছি টাপুর
………আমিও সারা জীবন কেদেছি পিনাকী…পুকুর গলা নকল করে টাপুর
……আচ্ছা ঠিক আছে। একবার দেখা করেছ।আমিও একবার দেখা করেছি।  শোধবোধ
………  মোটেই না। তুমি মনীষার সাথে অনেকবার দেখা করেছ, আর আমি একবার। এখনও আমার বাকি আছে পিনা…………কিইইই, লঘু সুর টাপুরের
……শ্রীর মা একটা হার দিয়েছেন। আমি পরবো। কেননা উনি মন থেকে ভালবেসে পরতে দিয়েছেন” এমনকি বলেছেন “ সংসারে অশান্তি করে পর না”। তাই মশাই আমি পরবো। আবারও পুকুর গলা নকল করে মুখের কাছে মুখ এনে বলল টাপুর।

আর সেখানেই বাধল গণ্ডোগোল ,  দু ইঞ্চি কাছে ওই রকম সুন্দর লোভনীয় ওষ্ঠ পুকু ছাড়ল না,পুরে নিল নিজের মুখে। পুরো ২ মিনিট পর।
………পরো। তুমি খুশি থাকলেই হোল। তোমার দিদু খুব ভালো। সেইজন্য ভালো  শিক্ষা দিয়েছেন। এইবার টাপুর টেনে নিল ঠোঁট

অনেক আগেই পুকু অফ করে দিয়ে সিটের ওপরের আলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/QZNWzjD
via BanglaChoti

Comments